রজত কান্তি রায়

আপনার শুরুর দিকের গল্পটা জানতে চাই।
বুলবুল টুম্পা: তখন আমি স্কুলে পড়ি। চাচ্চুর বিয়ে খেতে গিয়ে তাঁর এক বন্ধুর সঙ্গে আমার দেখা হয়। তিনি আমার চাচ্চুকে অনুরোধ করেন, আমাকে যেন মডেলিংয়ে দেওয়া হয়। ওই সময় আমার বাবা-মা মারা গেছেন। খুব হতাশায় ছিলাম আমি। এর আগে আমার দিন কাটতো খেলাধুলা, স্কুল ও আনন্দের মধ্যে দিয়ে। কিন্তু বাবা-মা মারা যাওয়ার পর আমার জীবন পরিবর্তন হয়ে যায়। আমি খুব কম কথা বলতাম। কারও সঙ্গে মিশতাম না। তারপর ১৯৯৭ সালের দিকে আমি চাচ্চুর বিয়ে খেতে যাই। সেখানে চাচ্চুর ফ্রেন্ডের সঙ্গে দেখা হয়। চাচ্চুর ফ্রেন্ড আমাকে দেখে মডেলিংয়ের জন্য পছন্দ করেন। কিন্তু আমার বড় ভাই চাননি আমি মডেলিংয়ে আসি। তার পরের বছর ১৯৯৮ সালে আমি মডেলিং শুরু করি। আমার ভাই আমাকে একটি কথা বলেছেন, আমি যেন এমন কিছু না করি, যাতে পরিবারের অসম্মান হয়।
আপনার ওই সময়ের শিক্ষক বা ট্রেনার কে ছিলেন?
বুলবুল: আমার চাচ্চুর ফ্রেন্ড আমাকে দেখিয়ে দিয়েছেন কীভাবে মেয়ে মডেলরা দাঁড়ায়। আমাদের ট্রেনিং হয়ে তারপর কাজ হতো। একটা শোয়ের জন্য দুই মাস তিন মাস ট্রেনিং হতো। তখন যারা ভালো করত, তারা কাজ করত। তখন সূচনা আপু ছিলেন। আরও সিনিয়র অনেক মডেল ছিলেন। তখন আমি নিউকামার।
কোন শোয়ের মধ্যে দিয়ে আপনার যাত্রা শুরু হয়?
বুলবুল: ‘অনামিকা ফ্যাশন শো’। সালটা ছিল ১৯৯৮। ওটা থেকে আমার যাত্রা শুরু। তখন থেকে আমি র্যাম্প মডেল।
তার মানে ১৯৯৮ থেকে ২০২১ সাল। ২৩ বছর ধরে আপনি কাজ করছেন। কেমন দেখলেন এই ২৩ বছরের যাত্রাটা?
বুলবুল: আমি বলি, আমি সব সময় পজিটিভ দেখতে পছন্দ করি। আমি সবকিছুতে পজিটিভ খুঁজতে পছন্দ করি। আমি যাত্রাটাকে ভালোই দেখেছি। পরিধি বেড়েছে। হ্যাঁ, আগে যেটা ছিল তা হলো, সবার মধ্যে ভালোবাসা, আন্তরিকতা—একজন আরেকজনকে হেল্প করা ইত্যাদি। কিন্তু এখন সবাই প্রফেশনাল। সো, আমি সবকিছুকে পজেটিভলিই দেখি।
আপনার জার্নিটা কেমন ছিল?
বুলবুল: আমি যেহেতু কাজটাকে ভালোবাসি। জার্নিটা ভালোই দেখি। আমি কখনোই খারাপ দেখব না এবং খারাপ দেখতে চাইও না। একজন পজেটিভ মানুষ নেগেটিভ মানুষের তুলনায় জীবনে অনেক কিছু করতে পারে। কারণ, নেগেটিভিটি মানুষকে সব সময় দুর্বল করে, দমিয়ে রাখে।
আপনার বিষয়ে খুব প্রচলিত কথা শোনা যায়, তা হলো, মডেলিংয়ের বাইরে আপনি টেলিভিশন নাটক, সিনেমা—এসব করতে যাননি। এটার কারণ কী?
বুলবুল: এটার অবশ্য কোনো কারণ নাই। আমি র্যাম্পটাকে ভালোবাসি। সেখান থেকে র্যাম্পেই থেকে গেলাম। র্যাম্প মডেলিং যেমন আর্ট, তেমনি নাটক-সিনেমাও আর্ট। যারা মুভি করছেন তাঁরা আর্টিস্ট। আমার মনে হয়, এই গুণটা আমার মধ্যে নাই। আমার মনে হয়, আমি এই জায়গাটাকে (মডেলিং) যদি ভালো অবস্থানে নিয়ে যাই, আমাকে দেখে কেউ যদি আসে, ভালো কিছু করে তাহলে আমার জন্য বিষয়টা গর্বের।
এ জন্য র্যাম্প ছেড়ে আর কোথাও যাননি আপনি?
বুলবুল: না, যাইনি। শখ করে টিভিসি করেছি, মিউজিক ভিডিও করেছি। নাচের প্রোগ্রাম করেছি। মিডিয়াতে থাকলে যা হয়, আরকি। টুকটাক সব কাজই করা হয়েছে। কিন্তু পেশা হিসেবে র্যাম্প মডেলিংকেই নিয়েছি।
প্রস্তাব তো পেয়েছেন?
বুলবুল: হ্যাঁ, পেয়েছি। এখনো পাই। আমার এখনো মনে আছে, একজন আমার জন্য একটা স্ক্রিপ্ট অনেক বছর রেখে দিয়েছিলেন। আমার কাছে মনে হয় আমাকে দিয়ে হবে না। এটা আমার প্রবলেম। আমি অভিনেত্রীদের রেস্পেক্ট করি। কারণ, প্রত্যেকেই সফল হওয়ার জন্য অনেক স্ট্রাগল করেন।
২৩ বছর ধরে কাজ করছেন। অনেক সময়। এই দীর্ঘ সময়ে আপনি সিনিয়র-জুনিয়র অনেকের সঙ্গে কাজ করেছেন। সিনিয়রদের সম্পর্কে কিছু বলুন। ওই সময় কাদের দেখে অনুপ্রাণিত হয়েছেন?
বুলবুল: আমি যখন আসি, তখন কোরিওগ্রাফার হিসেবে তুপা আপুকে পেয়েছি। তানিয়া আপুকে পেয়েছি। বিবি আপুকে পেয়েছি। বিবি আপু, তানিয়া আপু, তুপা আপু, এলইডি স্বপন ভাইয়ের সঙ্গে অনেক কাজ করেছি। তখনকার মডেলদের যদি আমি এখন দাঁড় করাতে পারতাম—তাঁরা অনেক ভালো কাজ করতেন। খুব হেল্পফুল ছিলেন। ট্যালেন্টেড ছিলেন। তখন তাঁরা ভালো জায়গা পাননি। তখন পত্রিকা বা টেলিভিশন কম ছিল বলে নিজেদের প্রকাশ করার সুযোগ কম ছিল। কিন্তু এখন অনেক মাধ্যম আছে। আমি সিনিয়রদের খুব মিস করি।
বিবি রাসেলের সঙ্গে কতগুলো কাজ করেছেন?
বুলবুল: হিসেব ছাড়া। বিবি আপুর অনেক কাজ আমি করেছি। উনি অনেক ভালো ভালো কাজ করেছেন। আমি তাঁকে অনেক রেস্পেক্ট করি। কারণ, ইন্টারন্যাশনালি তিনি আমাদের দেশকে প্রতিনিধিত্ব করেছেন।
শো-স্টপার হিসেবে আপনি কতগুলো কাজ করেছেন?
বুলবুল: ২০১৪ পর্যন্ত আমি র্যাম্প মডেল ছিলাম। (শো-স্টপার হিসেবে) আমার (কাজ) করা হয়। প্রতি বছর দু-তিনটা করা হয়। তবে সংখ্যাটা হিসাব করিনি। আমার শোয়ের সংখ্যাই তো হিসাব করিনি। ২০০০ সাল থেকে বাটেক্সপো শুরু হয়। টানা ২০১৪ সাল পর্যন্ত আমি শো করেছি। বাংলাদেশে টপ টপ কাজ করেছি। ঋতু কুমার এসেছেন, তাঁর কাপড় পরেছি। বাংলাদেশে সানসিল্কের শো, ল্যাকমে শো—অনেক কিছুই করেছি। আগে বাংলাদেশে অনেক ভালো শো হতো, যেগুলোকে আমি এখনো মিস করি। আগে বাটেক্সপো ছিল। এখন তো হয় না। ওই সময় ফ্যাশন শোয়ের আলাদা একটা জায়গা ছিল। কিছু এলিগ্যান্ট মানুষ শো দেখতে আসতেন। তাঁরা ডিজাইনারদের কালেকশন দেখতে আসতেন। আগের ডিজাইনারেরা প্রতি বছর নতুন কালেকশন নিয়ে আসতেন। সেগুলোই দেখতে আসত মানুষ।
এখন আমাদের ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রির কী অবস্থা?
বুলবুল: এখন পরিধি অনেক বেড়েছে। সবাই অনেক কাজ করছেন। অনেকেই ভালো করছেন। আগে যেটা ছিল—সবার মধ্যে বন্ডিং ছিল। আমরা একটা পরিবেশের মধ্যে ছিলাম। সবাই সবাইকে ভালোবাসত। এখন সবাই প্রফেশনাল হয়ে গেছে।
আড়ং ফ্যাশন, আড়ং-নোকিয়া ফ্যাশন শো—এ রকম বড় বড় অনেক ফ্যাশন শো হয়েছে ওই সময়। জাপান-বাংলাদেশ মিলে বিবি আপুর অনেক শো হয়েছে। আমরা অনেক বড় বড় অ্যাম্বাসির কাজ করেছি। অনেক ভালো কাজ করেছি। তখন আসলে প্রচার কম ছিল, মানুষেরা মডেলদের চিনত কম। কিন্তু ওই সময়ে বাংলাদেশে অনেক বড় বড় মডেল এসেছে, যেমন টাপুরটুপুর, জেসিকা, চয়নিকা, কোয়েনা মিত্র। কে আসে নাই, বলেন?
তার মানে কর্মসূত্রে আপনি কিছু আন্তর্জাতিক মডেলের সঙ্গে কাজ করেছেন। তাঁদের এবং আমাদের কোয়ালিটিতে পার্থক্যের জায়গাটা কী?
বুলবুল: হ্যাঁ, কাজ করেছি। তাঁরা প্রফেশনাল। তাঁরা যখন কাজ করেন, কাজটাকে খুব মনোযোগ দিয়ে করেন। আমাদের দেশের মডেলরা যে মন দিয়ে কাজ করেন না, তা না। আমরা একটা সার্কেলই ছিলাম, যারা মনোযোগ দিয়ে কাজ করতাম। তবে তাঁরা অনেক প্রফেশনাল। আমি তাঁদের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখেছি।
তবে বাংলাদেশের মডেলদের আমি স্যালুট দিই। কারণ বাংলাদেশে কোনো এজেন্সি নাই। বাংলাদেশে অনেক বড় বড় মডেল ছিলেন, যাঁরা ইন্টারন্যাশনালি বিট করেছেন। শাওন, সোনিয়া আপুসহ আরও অনেক মডেল ইন্টারন্যাশনাল বিউটি কনটেস্ট জিতে এসেছেন। তাঁরা নিজের যোগ্যতায় গিয়েছেন।
কিন্তু তাঁরা তো পরে মডেলিংয়ে থাকেননি। থেকেছেন কি?
বুলবুল: বেসিক্যালি, সবার তো একটা সংসার আছে। হয়তো-বা আমি বিয়ে করি নাই বলে আমি সময়টা দিতে পারছি। বিয়ে করলে বা যেকোনো মানুষের লাইফস্টাইল তো যেকোনো সময় পরিবর্তন হতে পারে। কিন্তু আমার মনে হয়, যদি ওদের নিয়ে লেখা হতো যে ওরা ভালো মডেল ছিলেন, তাহলে ভালো হতো।
আমি যখন শুরু করি তখন লোপা আপু মডেল। তিনি মারা গেছেন। উনি ডিজাইনারও ছিলেন। সোনিয়া আপু, তৃপ্তি আপু মডেল ছিলেন। আই লাভ তৃপ্তি আপু। তার শার্প চেহারা ছিল। তিনি দেখতে খুব সুন্দর ছিলেন। বাংলাদেশে আরও অনেক ভালো ভালো মডেল ছিলেন।
তাঁদের কোন গুণটা আপনাকে আকৃষ্ট করেছে?
বুলবুল: তাঁরা টাইম মেনটেইন করতেন। মানুষকে রেস্পেক্ট করতেন। আমাদের ভালোবাসতেন। ভালোবাসতেন দেখেই আজকে তাঁদের মিস করছি।
একই অবস্থা তো তখনো ছিল। ইন্ডাস্ট্রির কোনো স্ট্রাকচার ছিল না। তাঁরা প্রশিক্ষণ পেতেন কীভাবে? বাইরে থেকে ট্রেইনার আসতেন?
বুলবুল: যখন আমরা এসেছিলাম, তখন সিনিয়রদের দেখে দেখে শিখেছি। আগে আমরা অনেক বেশি সময় দিতাম। আমাদের সময়ে অডিশন ছাড়া শোয়ের জন্য মডেল নেওয়া হতো না। আমি ২০০৬ সাল পর্যন্ত অডিশন দিয়ে শো করেছি। এখন সবাই প্রফেশনাল হয়ে গেছে। এখন অডিশন ছাড়াই শো হয়। কোরিওগ্রাফারেরা জানেন, কারা মডেল। বিভিন্ন শোয়ের সময় তাঁরা মডেলদের মেইল করেন, মেসেজ করেন বা ফোন করেন। দুদিন রিহার্সাল হয়, একদিন ম্যাজারমেন্ট টাইম, একদিন ওয়ার্কশপ হয়। এভাবে কাজ হচ্ছে।
আমরা যদি বলি, সেই অর্থে এখনো কোনো প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো নাই দেশে...
বুলবুল: হ্যাঁ, দেশে এজেন্সি নাই। তবে আমি মনে করি, নিজের কাজটাকে ভালোবাসতে হবে। আপনারা কিন্তু ঠিকই আমাকে খুঁজে বের করেছেন। কারণ, আমি ২৩ বছর ধরে কাজ করছি। তেমনি নিজের কাজটাকে ভালোবেসে যেতে হবে। এক সময় একটা পর্যায়ে যাওয়া যাবে।
তানিয়া আহমেদের অনেক অবদান আছে আপনার জীবনে, যেমনটা বলছিলেন। তাঁর সম্পর্কে কিছু বলুন।
বুলবুল: আই লাভ তানিয়া আপু। তাঁর কারণেই আজ আমি ট্রেইনার। তানিয়া আপুর সঙ্গে আমি কাজ শুরু করি ১৯৯৯/ ২০০০ সালের দিকে। অনেক কাজ করেছি। তিনি অনেক ট্যালেন্টেড। তাঁর মধ্যে যে ট্যালেন্ট আছে, তার কিছু যদি আমি নিতে পারতাম, তাহলে আমার জন্য অনেক ভালো হতো।
তাঁর সঙ্গে কাজের একটা অভিজ্ঞতার গল্প শুনি।
বুলবুল: তানিয়া আপুর সঙ্গে যখন কাজ করি, তখন আমার ক্যাটওয়াক দেখে তাঁর মা বলেছিলেন, আমার মধ্যে নাকি একটা স্পার্ক আছে। আমি যখন ক্যাটওয়াক করি, তখন সবাই আমাকে বলত, তুই কেন প্যারিসে জন্মাসনি, কেন এই দেশে জন্মালি। এখানে তোকে কখনোই সম্মান দিবে না।
তানিয়া আপুর সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে একবার তিনি আমাকে অনেকগুলো কিউ ও লিড দিয়েছিলেন। তখন এক অর্গানাইজার নাকি তাঁর কাছে জানতে চেয়েছিলেন, অনেক ফরসা মেয়েকে বাদ দিয়ে কেন আমার মতো কালো মেয়েকে প্রায়োরিটি দিচ্ছেন। তখন তানিয়া আপু বলেছেন, ‘আমার এই কালো মেয়েটা যখন স্টেজে উঠবে, তখন বুঝবেন কেন প্রায়োরিটি দিচ্ছি।’ পরে সেই শোয়ের পর অর্গানাইজার ও তাঁর স্ত্রী নাকি তানিয়া আপুকে ধন্যবাদ দিয়েছিলেন আমার জন্য।
তানিয়া আপুর সঙ্গে এবারও আমি লাক্স করলাম, মাসুদ রানা করলাম। তাঁর সঙ্গে আমি আর আজরা ২০০৭ সাল থেকে লাক্স করি। মীম, মেহজাবিন থেকে শুরু করে লাস্ট লাক্সের আগের লাক্স পর্যন্ত আমি ট্রেইনার ছিলাম। আমি লাক্স করেছি, ভাটিকা করেছি, মিস ইউনিভার্স ইত্যাদি অনেক কিছুতে ট্রেইনার হিসেবে কাজ করেছি।
বিবি রাসেলের সঙ্গে কিছু স্মৃতির কথা বলুন।
বুলবুল: বিবি আপুকে অনেক পছন্দ করি। উনি বাংলা গান ব্যবহার করেন। তাঁর পোশাকগুলো সুন্দর। উনি প্রফেশনটা মেইনটেইন করেন। আমি সবার থেকে শিখতে পছন্দ করি। আমি আমার স্টুডেন্টদের কাছ থেকেও শিখি। আমি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত শিখতে চাই।
আপনি কথা প্রসঙ্গে, যখন কাজ শুরু করেন, ১৯৯৮ সালে, সেই সময় আর এই সময়ের মধ্যকার পার্থক্যগুলোর কথা বলছিলেন। সেই সময়ের মডেল ও এখনকার মডেলদের মধ্যে পার্থক্য কী—এগুলো আলাপ হচ্ছিল আমাদের মধ্যে। কোন মানদণ্ডের ওপর ভিত্তি করে এই পার্থক্যটা হচ্ছে?
বুলবুল: তখন আমরা সবাই ফ্যামিলির মতো ছিলাম। সবাই সবাইকে হেল্প করতাম। কে কীভাবে বাসায় যাবে, সেটাও ভাবতাম। মুনমুন আপুর মা খাবার রান্না করে আনতেন। একটা প্লেটে খাবার মাখিয়ে সবার মুখে মুখে খাবারের লোকমা তুলে দিতেন। এই বিষয়গুলো ছিল।
ওই সময়ে কাজ শিখিয়ে একটা মানুষকে নেওয়া হতো। যতই সুন্দর হোক না কেন, অন্য কেউ যতই পুশ করুক না কেন, যার মধ্যে গুণ না থাকত, তাঁকে নেওয়া হতো না। এখন যেটা হচ্ছে তা হলো, টিকটক, লাইকি, ফেসবুকের ছবি ও ফলোয়ার দেখে মডেল নেওয়া হচ্ছে। এই কারণে কাজের মানটা কমে যাচ্ছে।
তার মানে বলতে চাইছেন, কাজের প্রতি ভালোবাসা ছিল একটা মানদণ্ড। তবে এখনো কাজ চলছে, কোনো না কোনোভাবে। পরিধি বেড়েছে?
বুলবুল: হ্যাঁ, কাজের পরিধি বেড়েছে। তবে টিকটক, লাইকি বা ফেসবুকের ছবি দেখে ১৫ সেকেন্ডে মানুষকে জাস্টিফাই করা যায় না। তাঁর টাইম মেইনটেইনিং সেন্স, কাজ কেমন করবে—এই বিষয়গুলো জানা যায় না। এখন সময়টাই হয়ে গেছে এমন। আমি অবশ্য দোষ দেব না।
আপনি যেটা বললেন, আমাদের এখানে আগে অনেক ভালো মডেল ছিলেন। তাহলে আমরা আন্তর্জাতিকভাবে আগাচ্ছি না কেন?
বুলবুল: বাংলাদেশ থেকে অনেক মডেল আন্তর্জাতিকভাবে কাজ করেছেন। যারা যাচ্ছেন তাঁরা নিজের যোগ্যতায় যাচ্ছেন। আমি তাঁদের স্যালুট জানাই। মিস ইউনিভার্স, মিস ওয়ার্ল্ডে মেয়েরা যাচ্ছে। এজেন্সি নাই, প্রতিষ্ঠান নাই—তাও যাচ্ছে। এগুলোর জন্য উদ্যোগ প্রয়োজন, আন্তর্জাতিক এজেন্সি চেইন কেনা প্রয়োজন। সে উপায়গুলো প্রয়োজন। এটার জন্য অনেক অর্থের দরকার। একা কারও পক্ষে করা সম্ভব নয় এগুলো। আমি যখন একটা বিউটি কনটেস্ট করতে যাব, তখন একটা চ্যানেল লাগবে, গ্রুপ লাগবে, জায়গাটা কীভাবে সাজাব তা ভাবতে হবে, এতগুলো মানুষের সিকিউরিটি দিতে হবে ইত্যাদি অনেক ব্যাপার আছে। এটার জন্য অর্থের প্রয়োজন।
ভিন্ন প্রসঙ্গে আসি। আপনার স্কুল কখন করলেন?
বুলবুল: এটা আমার স্কুল না, ওয়ার্কশপ। ২০০৬ সালে এটা আমি শুরু করি। এটা করে আমি আনন্দ পাই। অ্যাটলিস্ট আমার দ্বারা কারও উপকার হচ্ছে। এই আরকি।
ওয়ার্কশপ দেওয়ার ইচ্ছে হলো কেন আপনার?
বুলবুল: আগে যেমন অনেক রিহার্সাল হতো, এটা ধীরে ধীরে কমতে থাকে। যারা নতুন আসবে, তাদের স্কোপটা কোথায়, তারা কীভাবে শিখবে, জানবে, করবে? সেগুলো থেকেই মনে হলো ওদের জন্য কিছু করি।
কারা কারা আপনার এখান থেকে বের হয়েছেন?
বুলবুল: আমার এখান থেকে বের হয়েছে অর্ষা, সাদিকা, নায়ক এবিএম সুমন, নায়ক বাপ্পি, নায়ক শরীফুল রাজ, মেঘলা মুক্তা, এখনকার জেনারেশনের নাজিয়া, নির্ঝরসহ আরও অনেকে।
পারিবারিক গল্পটা শুনতে চাই। আপনার জন্ম, বেড়ে ওঠা, বাবা-মা, ভাই-বোন সম্পর্কে জানতে চাই।
বুলবুল: আমার আব্বু আম্মু মারা গেছেন। এটা আমার অনেক দুঃখের বিষয়। আপনি যদি বলেন, আমার সবচেয়ে কষ্টের বিষয় কোনটা? আমি বলব আমি যে ইনকাম করি, তা বাবা-মাকে খাওয়াতে পারিনি। ছোটবেলা থেকেই ইচ্ছে ছিল বড় হয়ে মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে জব করে বাবা-মায়ের জন্য কিছু করব, বাবা-মাকে খাওয়াব। কিন্তু সেই আফসোসটা রয়েই গেল।
আমি সবাইকে নিয়ে খেতে পছন্দ করি। আমাকে আমার (ওয়ার্কশপের) ছেলেমেয়েরা মা বলে ডাকে। অনেক বছর ধরেই মা ডাকে। এটা তারা ভালোবাসা থেকে ডাকে। আমি আমার ছেলেমেয়েদের সেফটি না দিয়ে কাজ করি না। আমরা আট ভাইবোন। আমার ছোট ভাই আছে একজন। আর বাকি সবার বিয়ে হয়ে গেছে, বাচ্চা কাচ্চা হয়ে গেছে।
এটা অনেক কষ্টের ব্যাপার। ডেফিনেটলি কষ্টের ব্যাপার।
বুলবুল: হ্যাঁ, আমার এই আফসোসটা সারা জীবনই থেকে যাবে। আর আমি ফ্যামিলি পছন্দ করি। বন্ডিং পছন্দ করি। আমি একা মুভ করি কম। মানুষ আমাকে জিজ্ঞেস করে, অবসরে কী করো, আমি অবসরে ঘুমাই। অনেকে বই কালেক্ট করে, গান শোনে, আমি ঘুমাই। আমি প্রচুর কাজ করতে পছন্দ করি। পরিশ্রম করতে পছন্দ করি। এখন তো করোনার জন্য দুই বছর ধরে কাজ কম। নরমালি আমি অনেক ব্যস্ত থাকি। কোনো না কোনো বিউটি কনটেস্ট থাকে, আমি ট্রেইনার থাকি। কোনো স্কুল বলেন, স্পিচের জন্য বলেন আমার ক্লাস নিতে হয়।
আপনার জন্ম ও বেড়ে ওঠা তো…
বুলবুল: ঢাকায়। মিরপুরে। আমরা মিরপুরের স্থানীয়। আব্বু পাকিস্তান পিরিয়ডে জায়গা কিনলেন। স্বাধীনতার অনেক পর সেখানে বাড়ি করেন। এখনো সেখানে থাকি।
আপনার আব্বু কি ঢাকার বাইরে থেকে এসেছিলেন?
বুলবুল: হ্যাঁ। আব্বু বরিশালের। আব্বু আম্মু পাকিস্তান পিরিয়ড থেকেই ঢাকায়।
সামনে আপনার ইচ্ছা কী?
বুলবুল: আমি বর্তমান নিয়ে বিশ্বাসী। বর্তমানে যদি আমি ভালো করি, সামনে ভালো হবে।
মানুষের একটা গোল থাকে না, আমি এটা করব।
বুলবুল: আমি কখনো গোল নিয়ে আগাই না। সব সময় ভালো কাজ করার চেষ্টা করেছি। তবে এটা দেখতে চাই, বাংলাদেশের ভালো ভালো ছেলেমেয়েরা যেন ইন্টারন্যাশনালি কাজ করতে পারে। আমার ছেলেমেয়েরা যখন ভালো কাজ করে, তখন আমার এটা ভেবে ভালো লাগে যে, অ্যাটলিস্ট আমরা কিছু করছি। কিছু একটা কাউকে দিতে পারছি। আমি জীবনে অনেক অ্যাওয়ার্ড পেয়েছি। প্রতিটা অ্যাওয়ার্ড আমাকে কাজ করার উৎসাহ দেয়।
আপনার লেখাপড়া শেষ করছেন কোথা থেকে?
বুলবুল: আমি পড়াশোনা অনেক করতে পারি নাই। এটাও আমার ব্যাড লাক। এর কারণ হলো, আমার বাবা-মা মারা যাওয়ার পর আমাদের অনেক স্ট্রাগলের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে। আমি টিভি লাইভেও বলেছি, একটা সময় আমি স্বর্ণের চামচ মুখে নিয়ে জন্মেছি। কিন্তু আব্বু আম্মু মারা যাওয়ার পর অনেক বাস্তবতা দেখেছি আমরা। তখন আমরা কোনো ভাইবোন স্ট্যাব্লিশ না। সবাই ছোট ছোট। তখন আমার পড়ার টাকাই ছিল না। ভাইয়া কোচিংয়ের টাকা দিতে পারছিল না। আমার মনে আছে, আমি একজোড়া জুতা চেয়েছিলাম। সেটাও এক মাস পরে দিয়েছিল। সেটা থেকে আমি নতুনদের ভালোবাসি। সবাই তো তেলা মাথায় তেল দেয়। কিন্তু একটা মানুষ যখন নতুন অবস্থায় স্ট্রাগল করে, তখন তার অনেক কিছুই থাকে না।
এটা হয় আসলে। একটা সময় এমন থাকেই।
বুলবুল: আমি সব সময় লাইভে বলি, আমি অনেক স্ট্রাগল করেছি। পড়ার টাকা পাইনি। আমি অনেক কষ্ট করে রিহার্সাল করতাম। আমাদের যে পেমেন্টটা দিত, সেটা নিয়ে খুশি থাকতাম। আমাদের অনেক কলিগ, যারা এখন সুপারস্টার হয়েছে, তারা এখন বলে তুই আমাদের অনেক হেল্প করেছিস। আমি অনায়াসে হেল্প করতে পছন্দ করি। ভবিষ্যতে যদি আল্লাহ আমাকে আরও ক্ষমতা দেয়, তাহলে আরও কিছু করতে চাই।
আমি সামাজিক কাজ করতে পছন্দ করি। আমি আরটিভিতে অটিস্টিক শিশুদের নিয়ে শো করেছি। সেই শোতে আমাকে জিজ্ঞেস করেছিল, টুম্পা আপু আপনাকে কত টাকা দেব। আমি অটিস্টিক শিশুদের জন্য এমনি করে দেব—বলেছিলাম। আরও কিছু শো করতাম ওই টাকাটাও দিয়ে দিতাম। আমি আমার কোরিওগ্রাফির টাকা নিতাম না। গত বছর আমি একটা সংস্থার সঙ্গে জড়িত হয়েছি। ওদেরকে বলেছি, আমাকে যা দেবেন সেই টাকাটা পুরোটাই বিলিয়ে দেবেন। পরিচিত এক ছোট ভাইয়ের সংস্থা আছে। ও কুকুরদের খাওয়ায়। গরিব মানুষদের দেয়। তখন ওর সঙ্গে মাঝে মাঝে আমি শেয়ার করি। আরেকটা ছোট ভাই আছে, ওর সঙ্গেও আমি শেয়ার করি। আমি আসলে চেষ্টা করি কিছু করার।
আপনি তাহলে কুকুর পছন্দ করেন।
বুলবুল: আমি দেখতে পছন্দ করি। ছুঁতে পছন্দ করি না। আমি আসলে সবার জন্যই। আমি অনেক কষ্ট করে বুলবুল টুম্পা হয়েছি। আমার যদি ব্যবহার ভালো না থাকে, মানুষকে ভালো না বাসি, তাহলে মানুষ আমাকে কেন ভালোবাসবে।
অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন অনেক, সেটা আমরা জানি। কী কী অ্যাওয়ার্ড?
বুলবুল: আমি বেস্ট কোরিওগ্রাফার, বেস্ট মডেল অ্যাওয়ার্ড পেয়েছি। আমি অনেক ম্যাগাজিনের কাভার হয়েছি। সাপ্তাহিক ২০০০, মিরর, নারিন ম্যাগাজিনের কাভার হয়েছি। যখন আমার ক্যারিয়ারের আঠারো বছর হলো, তখন ইন্ডিয়া থেকে ফোন করে সফল নারী হিসেবে আমাকে কাভার করা হলো। একটা ম্যাগাজিন আছে, যেটা ইউকে, ইউএসএ ও জাপানে বের হয়। ওই ম্যাগাজিনে আমি কাজ করেছি। সেখানে ইউকের মডেল, ইউএসএর মডেল, জাপানের মডেল এবং একমাত্র আমি বাংলাদেশের মডেল হিসেবে ছিলাম। ম্যাগাজিনটি একসঙ্গে তিনটি দেশে প্রকাশিত হয়। এই কাজটা হয়েছিল ২০০৭ বা ২০০৮ সালের দিকে।
নয়টা অপ্রিয় সত্য কথা জানতে চাই আপনার কাছে।
বুলবুল: অপ্রিয় সত্য হলো আমি দ্বিমুখী মানুষ পছন্দ করি না। মিথ্যা কথা বলা পছন্দ করি না, মানুষের সঙ্গে চালাকি পছন্দ করি না, মানুষকে ঠকাতে পছন্দ করি না, আমি রান্না করতে পছন্দ করি না। আমি ফুড লাভার না। আমার ক্ষুধা লাগলে যেকোনো খাবার হলেই হয়। অনেকে বলে, ও রান্না করতে জানে না, ওর বিয়ে হবে না। আমার ভাবিরা খুব ভালো উত্তর দেয়। বলে, আমরাও তো রান্না করতে জানি না, আমাদের কি বিয়ে হয়নি।
সমাজে একটা কালো মেয়ে অনেক নেগেটিভ কথা শুনছে। আমিও অনেক শুনেছি। মিডিয়াতে কাজ করতে এসেও নেগেটিভ কথা শুনেছি। মানুষ বলত, মিডিয়াতে ভালো মানুষ কাজ করে না। আমার কাছে অনেক থ্রেটও আসত। তবে এটা আমি সব সময় বলতে চাই, নিজে ভালো তো জগৎ ভালো।
কারা থ্রেট করত?
বুলবুল: কারা করত জানি না। তারা বলত, আমাকে গুলি করে মেরে ফেলবে, এটা করব-সেটা করব ইত্যাদি। ভাইয়াকে ফোন দিয়ে বলত, ওকে মডেলিং করতে দিলেই মারব। একদিন আমার ফুপু ফোন ধরেছে, তাকেও এসব বলেছে। তারপর আমি ফোনটা ধরে বলেছি, ‘আমি দরজা খুলে রেখেছি। কে আসবে গুলি করতে আয়। আর আমার ফোন রেকর্ড হচ্ছে। কে ফোন দিছিস আমি বের করে ফেলব।’ এর পর থেকে আর এমন থ্রেট আসেনি।
এটা কোন সালের ঘটনা?
বুলবুল: এটা মেবি ২০০১/ ০২ সালের ঘটনা।
গসিপ বিষয়ে আপনার মতামত কী?
বুলবুল: আমি অন্য কাউকে নিয়ে গসিপ করি না। এটা আমার অপছন্দের। অন্য কাউকে নিয়ে গসিপ করে তাকে স্ট্যাব্লিশ করার কী আছে?
নিজের সম্পর্কে গসিপ শুনতে আপনার কেমন লাগে?
বুলবুল: প্রথম অনেক খারাপ লাগত। এখন ভাবি, আমি একটা পজিশনে চলে গেছি। আমাকে নিয়ে তো মানুষ গসিপ করবেই।
মানে গসিপ নিয়ে আপনার মাথা ব্যথা নেই।
বুলবুল: না। একটা মানুষ সবার প্রিয় হয় না। আমাকে অপছন্দ করে—এমন কেউ থাকতে পারে। ওরা নিজেদের ঘুম হারাম করে আমাকে স্ট্যাব্লিশ করে, টুম্পাকে কেন এত বেশি ভালোবাসে, টুম্পার কেন এত ছেলেমেয়ে, এসব নিয়ে ভাবে। এটা তাদের সমস্যা। একজন নায়িকাকে সবাই চেনে। কিন্তু আমি একজন মডেল হয়েও সবাই আমাকে চেনে। এটা আমার ক্রেডিট। আমার অর্জন।
আপনার মন খারাপ হয় কখন?
বুলবুল: আমার মন খারাপ হয় আব্বু আম্মুকে মিস করলে। ফ্যামিলির খারাপ কিছু দেখলে এবং মিথ্যা কথা শুনলে।
এই দীর্ঘ ক্যারিয়ারে আপনার সবচেয়ে সুন্দর মুহূর্ত কোনটা?
বুলবুল: যদি কাজের ক্ষেত্রে বলেন, তাহলে বলব প্রতিটা কাজই আমাকে সুন্দর মুহূর্ত উপহার দিয়েছে। আমি শিশুদের সঙ্গে, আমার স্টুডেন্টদের সঙ্গে সময় কাটাতে পছন্দ করি। গত ৫ বছর ধরে আমি স্টুডেন্টদের সঙ্গে জন্মদিন পালন করি। ওরা আমাকে সারপ্রাইজ দেয়। আমার ছবি বড় করে, আমার জন্য কেক আনে, রুম সাজায়, খাবার দাবার আনায়। ওদের সঙ্গে সময় কাটাতে পছন্দ করি।
এই ২৩ বছরের জার্নিকে আপনি কীভাবে দেখেন?
বুলবুল: ২৩ বছরে অনেক সুখ-দুঃখ আছে। উত্থান-পতন বলব না। কারণ, পতন দেখিনি। পজেটিভলি কাজ করেছি। সবাই যখন পজেটিভ কাজ করবে, তখন আমাদের দেশটা সুন্দর হয়ে যাবে। সবকিছুর নেগেটিভ দিক আছে। আমরা যদি পজিটিভটা নিই, তাহলে আমার মনে হয় সবার জন্য ভালো।
আপনাকে ধন্যবাদ।
বুলবুল: আপনাকেও ধন্যবাদ।

আপনার শুরুর দিকের গল্পটা জানতে চাই।
বুলবুল টুম্পা: তখন আমি স্কুলে পড়ি। চাচ্চুর বিয়ে খেতে গিয়ে তাঁর এক বন্ধুর সঙ্গে আমার দেখা হয়। তিনি আমার চাচ্চুকে অনুরোধ করেন, আমাকে যেন মডেলিংয়ে দেওয়া হয়। ওই সময় আমার বাবা-মা মারা গেছেন। খুব হতাশায় ছিলাম আমি। এর আগে আমার দিন কাটতো খেলাধুলা, স্কুল ও আনন্দের মধ্যে দিয়ে। কিন্তু বাবা-মা মারা যাওয়ার পর আমার জীবন পরিবর্তন হয়ে যায়। আমি খুব কম কথা বলতাম। কারও সঙ্গে মিশতাম না। তারপর ১৯৯৭ সালের দিকে আমি চাচ্চুর বিয়ে খেতে যাই। সেখানে চাচ্চুর ফ্রেন্ডের সঙ্গে দেখা হয়। চাচ্চুর ফ্রেন্ড আমাকে দেখে মডেলিংয়ের জন্য পছন্দ করেন। কিন্তু আমার বড় ভাই চাননি আমি মডেলিংয়ে আসি। তার পরের বছর ১৯৯৮ সালে আমি মডেলিং শুরু করি। আমার ভাই আমাকে একটি কথা বলেছেন, আমি যেন এমন কিছু না করি, যাতে পরিবারের অসম্মান হয়।
আপনার ওই সময়ের শিক্ষক বা ট্রেনার কে ছিলেন?
বুলবুল: আমার চাচ্চুর ফ্রেন্ড আমাকে দেখিয়ে দিয়েছেন কীভাবে মেয়ে মডেলরা দাঁড়ায়। আমাদের ট্রেনিং হয়ে তারপর কাজ হতো। একটা শোয়ের জন্য দুই মাস তিন মাস ট্রেনিং হতো। তখন যারা ভালো করত, তারা কাজ করত। তখন সূচনা আপু ছিলেন। আরও সিনিয়র অনেক মডেল ছিলেন। তখন আমি নিউকামার।
কোন শোয়ের মধ্যে দিয়ে আপনার যাত্রা শুরু হয়?
বুলবুল: ‘অনামিকা ফ্যাশন শো’। সালটা ছিল ১৯৯৮। ওটা থেকে আমার যাত্রা শুরু। তখন থেকে আমি র্যাম্প মডেল।
তার মানে ১৯৯৮ থেকে ২০২১ সাল। ২৩ বছর ধরে আপনি কাজ করছেন। কেমন দেখলেন এই ২৩ বছরের যাত্রাটা?
বুলবুল: আমি বলি, আমি সব সময় পজিটিভ দেখতে পছন্দ করি। আমি সবকিছুতে পজিটিভ খুঁজতে পছন্দ করি। আমি যাত্রাটাকে ভালোই দেখেছি। পরিধি বেড়েছে। হ্যাঁ, আগে যেটা ছিল তা হলো, সবার মধ্যে ভালোবাসা, আন্তরিকতা—একজন আরেকজনকে হেল্প করা ইত্যাদি। কিন্তু এখন সবাই প্রফেশনাল। সো, আমি সবকিছুকে পজেটিভলিই দেখি।
আপনার জার্নিটা কেমন ছিল?
বুলবুল: আমি যেহেতু কাজটাকে ভালোবাসি। জার্নিটা ভালোই দেখি। আমি কখনোই খারাপ দেখব না এবং খারাপ দেখতে চাইও না। একজন পজেটিভ মানুষ নেগেটিভ মানুষের তুলনায় জীবনে অনেক কিছু করতে পারে। কারণ, নেগেটিভিটি মানুষকে সব সময় দুর্বল করে, দমিয়ে রাখে।
আপনার বিষয়ে খুব প্রচলিত কথা শোনা যায়, তা হলো, মডেলিংয়ের বাইরে আপনি টেলিভিশন নাটক, সিনেমা—এসব করতে যাননি। এটার কারণ কী?
বুলবুল: এটার অবশ্য কোনো কারণ নাই। আমি র্যাম্পটাকে ভালোবাসি। সেখান থেকে র্যাম্পেই থেকে গেলাম। র্যাম্প মডেলিং যেমন আর্ট, তেমনি নাটক-সিনেমাও আর্ট। যারা মুভি করছেন তাঁরা আর্টিস্ট। আমার মনে হয়, এই গুণটা আমার মধ্যে নাই। আমার মনে হয়, আমি এই জায়গাটাকে (মডেলিং) যদি ভালো অবস্থানে নিয়ে যাই, আমাকে দেখে কেউ যদি আসে, ভালো কিছু করে তাহলে আমার জন্য বিষয়টা গর্বের।
এ জন্য র্যাম্প ছেড়ে আর কোথাও যাননি আপনি?
বুলবুল: না, যাইনি। শখ করে টিভিসি করেছি, মিউজিক ভিডিও করেছি। নাচের প্রোগ্রাম করেছি। মিডিয়াতে থাকলে যা হয়, আরকি। টুকটাক সব কাজই করা হয়েছে। কিন্তু পেশা হিসেবে র্যাম্প মডেলিংকেই নিয়েছি।
প্রস্তাব তো পেয়েছেন?
বুলবুল: হ্যাঁ, পেয়েছি। এখনো পাই। আমার এখনো মনে আছে, একজন আমার জন্য একটা স্ক্রিপ্ট অনেক বছর রেখে দিয়েছিলেন। আমার কাছে মনে হয় আমাকে দিয়ে হবে না। এটা আমার প্রবলেম। আমি অভিনেত্রীদের রেস্পেক্ট করি। কারণ, প্রত্যেকেই সফল হওয়ার জন্য অনেক স্ট্রাগল করেন।
২৩ বছর ধরে কাজ করছেন। অনেক সময়। এই দীর্ঘ সময়ে আপনি সিনিয়র-জুনিয়র অনেকের সঙ্গে কাজ করেছেন। সিনিয়রদের সম্পর্কে কিছু বলুন। ওই সময় কাদের দেখে অনুপ্রাণিত হয়েছেন?
বুলবুল: আমি যখন আসি, তখন কোরিওগ্রাফার হিসেবে তুপা আপুকে পেয়েছি। তানিয়া আপুকে পেয়েছি। বিবি আপুকে পেয়েছি। বিবি আপু, তানিয়া আপু, তুপা আপু, এলইডি স্বপন ভাইয়ের সঙ্গে অনেক কাজ করেছি। তখনকার মডেলদের যদি আমি এখন দাঁড় করাতে পারতাম—তাঁরা অনেক ভালো কাজ করতেন। খুব হেল্পফুল ছিলেন। ট্যালেন্টেড ছিলেন। তখন তাঁরা ভালো জায়গা পাননি। তখন পত্রিকা বা টেলিভিশন কম ছিল বলে নিজেদের প্রকাশ করার সুযোগ কম ছিল। কিন্তু এখন অনেক মাধ্যম আছে। আমি সিনিয়রদের খুব মিস করি।
বিবি রাসেলের সঙ্গে কতগুলো কাজ করেছেন?
বুলবুল: হিসেব ছাড়া। বিবি আপুর অনেক কাজ আমি করেছি। উনি অনেক ভালো ভালো কাজ করেছেন। আমি তাঁকে অনেক রেস্পেক্ট করি। কারণ, ইন্টারন্যাশনালি তিনি আমাদের দেশকে প্রতিনিধিত্ব করেছেন।
শো-স্টপার হিসেবে আপনি কতগুলো কাজ করেছেন?
বুলবুল: ২০১৪ পর্যন্ত আমি র্যাম্প মডেল ছিলাম। (শো-স্টপার হিসেবে) আমার (কাজ) করা হয়। প্রতি বছর দু-তিনটা করা হয়। তবে সংখ্যাটা হিসাব করিনি। আমার শোয়ের সংখ্যাই তো হিসাব করিনি। ২০০০ সাল থেকে বাটেক্সপো শুরু হয়। টানা ২০১৪ সাল পর্যন্ত আমি শো করেছি। বাংলাদেশে টপ টপ কাজ করেছি। ঋতু কুমার এসেছেন, তাঁর কাপড় পরেছি। বাংলাদেশে সানসিল্কের শো, ল্যাকমে শো—অনেক কিছুই করেছি। আগে বাংলাদেশে অনেক ভালো শো হতো, যেগুলোকে আমি এখনো মিস করি। আগে বাটেক্সপো ছিল। এখন তো হয় না। ওই সময় ফ্যাশন শোয়ের আলাদা একটা জায়গা ছিল। কিছু এলিগ্যান্ট মানুষ শো দেখতে আসতেন। তাঁরা ডিজাইনারদের কালেকশন দেখতে আসতেন। আগের ডিজাইনারেরা প্রতি বছর নতুন কালেকশন নিয়ে আসতেন। সেগুলোই দেখতে আসত মানুষ।
এখন আমাদের ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রির কী অবস্থা?
বুলবুল: এখন পরিধি অনেক বেড়েছে। সবাই অনেক কাজ করছেন। অনেকেই ভালো করছেন। আগে যেটা ছিল—সবার মধ্যে বন্ডিং ছিল। আমরা একটা পরিবেশের মধ্যে ছিলাম। সবাই সবাইকে ভালোবাসত। এখন সবাই প্রফেশনাল হয়ে গেছে।
আড়ং ফ্যাশন, আড়ং-নোকিয়া ফ্যাশন শো—এ রকম বড় বড় অনেক ফ্যাশন শো হয়েছে ওই সময়। জাপান-বাংলাদেশ মিলে বিবি আপুর অনেক শো হয়েছে। আমরা অনেক বড় বড় অ্যাম্বাসির কাজ করেছি। অনেক ভালো কাজ করেছি। তখন আসলে প্রচার কম ছিল, মানুষেরা মডেলদের চিনত কম। কিন্তু ওই সময়ে বাংলাদেশে অনেক বড় বড় মডেল এসেছে, যেমন টাপুরটুপুর, জেসিকা, চয়নিকা, কোয়েনা মিত্র। কে আসে নাই, বলেন?
তার মানে কর্মসূত্রে আপনি কিছু আন্তর্জাতিক মডেলের সঙ্গে কাজ করেছেন। তাঁদের এবং আমাদের কোয়ালিটিতে পার্থক্যের জায়গাটা কী?
বুলবুল: হ্যাঁ, কাজ করেছি। তাঁরা প্রফেশনাল। তাঁরা যখন কাজ করেন, কাজটাকে খুব মনোযোগ দিয়ে করেন। আমাদের দেশের মডেলরা যে মন দিয়ে কাজ করেন না, তা না। আমরা একটা সার্কেলই ছিলাম, যারা মনোযোগ দিয়ে কাজ করতাম। তবে তাঁরা অনেক প্রফেশনাল। আমি তাঁদের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখেছি।
তবে বাংলাদেশের মডেলদের আমি স্যালুট দিই। কারণ বাংলাদেশে কোনো এজেন্সি নাই। বাংলাদেশে অনেক বড় বড় মডেল ছিলেন, যাঁরা ইন্টারন্যাশনালি বিট করেছেন। শাওন, সোনিয়া আপুসহ আরও অনেক মডেল ইন্টারন্যাশনাল বিউটি কনটেস্ট জিতে এসেছেন। তাঁরা নিজের যোগ্যতায় গিয়েছেন।
কিন্তু তাঁরা তো পরে মডেলিংয়ে থাকেননি। থেকেছেন কি?
বুলবুল: বেসিক্যালি, সবার তো একটা সংসার আছে। হয়তো-বা আমি বিয়ে করি নাই বলে আমি সময়টা দিতে পারছি। বিয়ে করলে বা যেকোনো মানুষের লাইফস্টাইল তো যেকোনো সময় পরিবর্তন হতে পারে। কিন্তু আমার মনে হয়, যদি ওদের নিয়ে লেখা হতো যে ওরা ভালো মডেল ছিলেন, তাহলে ভালো হতো।
আমি যখন শুরু করি তখন লোপা আপু মডেল। তিনি মারা গেছেন। উনি ডিজাইনারও ছিলেন। সোনিয়া আপু, তৃপ্তি আপু মডেল ছিলেন। আই লাভ তৃপ্তি আপু। তার শার্প চেহারা ছিল। তিনি দেখতে খুব সুন্দর ছিলেন। বাংলাদেশে আরও অনেক ভালো ভালো মডেল ছিলেন।
তাঁদের কোন গুণটা আপনাকে আকৃষ্ট করেছে?
বুলবুল: তাঁরা টাইম মেনটেইন করতেন। মানুষকে রেস্পেক্ট করতেন। আমাদের ভালোবাসতেন। ভালোবাসতেন দেখেই আজকে তাঁদের মিস করছি।
একই অবস্থা তো তখনো ছিল। ইন্ডাস্ট্রির কোনো স্ট্রাকচার ছিল না। তাঁরা প্রশিক্ষণ পেতেন কীভাবে? বাইরে থেকে ট্রেইনার আসতেন?
বুলবুল: যখন আমরা এসেছিলাম, তখন সিনিয়রদের দেখে দেখে শিখেছি। আগে আমরা অনেক বেশি সময় দিতাম। আমাদের সময়ে অডিশন ছাড়া শোয়ের জন্য মডেল নেওয়া হতো না। আমি ২০০৬ সাল পর্যন্ত অডিশন দিয়ে শো করেছি। এখন সবাই প্রফেশনাল হয়ে গেছে। এখন অডিশন ছাড়াই শো হয়। কোরিওগ্রাফারেরা জানেন, কারা মডেল। বিভিন্ন শোয়ের সময় তাঁরা মডেলদের মেইল করেন, মেসেজ করেন বা ফোন করেন। দুদিন রিহার্সাল হয়, একদিন ম্যাজারমেন্ট টাইম, একদিন ওয়ার্কশপ হয়। এভাবে কাজ হচ্ছে।
আমরা যদি বলি, সেই অর্থে এখনো কোনো প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো নাই দেশে...
বুলবুল: হ্যাঁ, দেশে এজেন্সি নাই। তবে আমি মনে করি, নিজের কাজটাকে ভালোবাসতে হবে। আপনারা কিন্তু ঠিকই আমাকে খুঁজে বের করেছেন। কারণ, আমি ২৩ বছর ধরে কাজ করছি। তেমনি নিজের কাজটাকে ভালোবেসে যেতে হবে। এক সময় একটা পর্যায়ে যাওয়া যাবে।
তানিয়া আহমেদের অনেক অবদান আছে আপনার জীবনে, যেমনটা বলছিলেন। তাঁর সম্পর্কে কিছু বলুন।
বুলবুল: আই লাভ তানিয়া আপু। তাঁর কারণেই আজ আমি ট্রেইনার। তানিয়া আপুর সঙ্গে আমি কাজ শুরু করি ১৯৯৯/ ২০০০ সালের দিকে। অনেক কাজ করেছি। তিনি অনেক ট্যালেন্টেড। তাঁর মধ্যে যে ট্যালেন্ট আছে, তার কিছু যদি আমি নিতে পারতাম, তাহলে আমার জন্য অনেক ভালো হতো।
তাঁর সঙ্গে কাজের একটা অভিজ্ঞতার গল্প শুনি।
বুলবুল: তানিয়া আপুর সঙ্গে যখন কাজ করি, তখন আমার ক্যাটওয়াক দেখে তাঁর মা বলেছিলেন, আমার মধ্যে নাকি একটা স্পার্ক আছে। আমি যখন ক্যাটওয়াক করি, তখন সবাই আমাকে বলত, তুই কেন প্যারিসে জন্মাসনি, কেন এই দেশে জন্মালি। এখানে তোকে কখনোই সম্মান দিবে না।
তানিয়া আপুর সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে একবার তিনি আমাকে অনেকগুলো কিউ ও লিড দিয়েছিলেন। তখন এক অর্গানাইজার নাকি তাঁর কাছে জানতে চেয়েছিলেন, অনেক ফরসা মেয়েকে বাদ দিয়ে কেন আমার মতো কালো মেয়েকে প্রায়োরিটি দিচ্ছেন। তখন তানিয়া আপু বলেছেন, ‘আমার এই কালো মেয়েটা যখন স্টেজে উঠবে, তখন বুঝবেন কেন প্রায়োরিটি দিচ্ছি।’ পরে সেই শোয়ের পর অর্গানাইজার ও তাঁর স্ত্রী নাকি তানিয়া আপুকে ধন্যবাদ দিয়েছিলেন আমার জন্য।
তানিয়া আপুর সঙ্গে এবারও আমি লাক্স করলাম, মাসুদ রানা করলাম। তাঁর সঙ্গে আমি আর আজরা ২০০৭ সাল থেকে লাক্স করি। মীম, মেহজাবিন থেকে শুরু করে লাস্ট লাক্সের আগের লাক্স পর্যন্ত আমি ট্রেইনার ছিলাম। আমি লাক্স করেছি, ভাটিকা করেছি, মিস ইউনিভার্স ইত্যাদি অনেক কিছুতে ট্রেইনার হিসেবে কাজ করেছি।
বিবি রাসেলের সঙ্গে কিছু স্মৃতির কথা বলুন।
বুলবুল: বিবি আপুকে অনেক পছন্দ করি। উনি বাংলা গান ব্যবহার করেন। তাঁর পোশাকগুলো সুন্দর। উনি প্রফেশনটা মেইনটেইন করেন। আমি সবার থেকে শিখতে পছন্দ করি। আমি আমার স্টুডেন্টদের কাছ থেকেও শিখি। আমি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত শিখতে চাই।
আপনি কথা প্রসঙ্গে, যখন কাজ শুরু করেন, ১৯৯৮ সালে, সেই সময় আর এই সময়ের মধ্যকার পার্থক্যগুলোর কথা বলছিলেন। সেই সময়ের মডেল ও এখনকার মডেলদের মধ্যে পার্থক্য কী—এগুলো আলাপ হচ্ছিল আমাদের মধ্যে। কোন মানদণ্ডের ওপর ভিত্তি করে এই পার্থক্যটা হচ্ছে?
বুলবুল: তখন আমরা সবাই ফ্যামিলির মতো ছিলাম। সবাই সবাইকে হেল্প করতাম। কে কীভাবে বাসায় যাবে, সেটাও ভাবতাম। মুনমুন আপুর মা খাবার রান্না করে আনতেন। একটা প্লেটে খাবার মাখিয়ে সবার মুখে মুখে খাবারের লোকমা তুলে দিতেন। এই বিষয়গুলো ছিল।
ওই সময়ে কাজ শিখিয়ে একটা মানুষকে নেওয়া হতো। যতই সুন্দর হোক না কেন, অন্য কেউ যতই পুশ করুক না কেন, যার মধ্যে গুণ না থাকত, তাঁকে নেওয়া হতো না। এখন যেটা হচ্ছে তা হলো, টিকটক, লাইকি, ফেসবুকের ছবি ও ফলোয়ার দেখে মডেল নেওয়া হচ্ছে। এই কারণে কাজের মানটা কমে যাচ্ছে।
তার মানে বলতে চাইছেন, কাজের প্রতি ভালোবাসা ছিল একটা মানদণ্ড। তবে এখনো কাজ চলছে, কোনো না কোনোভাবে। পরিধি বেড়েছে?
বুলবুল: হ্যাঁ, কাজের পরিধি বেড়েছে। তবে টিকটক, লাইকি বা ফেসবুকের ছবি দেখে ১৫ সেকেন্ডে মানুষকে জাস্টিফাই করা যায় না। তাঁর টাইম মেইনটেইনিং সেন্স, কাজ কেমন করবে—এই বিষয়গুলো জানা যায় না। এখন সময়টাই হয়ে গেছে এমন। আমি অবশ্য দোষ দেব না।
আপনি যেটা বললেন, আমাদের এখানে আগে অনেক ভালো মডেল ছিলেন। তাহলে আমরা আন্তর্জাতিকভাবে আগাচ্ছি না কেন?
বুলবুল: বাংলাদেশ থেকে অনেক মডেল আন্তর্জাতিকভাবে কাজ করেছেন। যারা যাচ্ছেন তাঁরা নিজের যোগ্যতায় যাচ্ছেন। আমি তাঁদের স্যালুট জানাই। মিস ইউনিভার্স, মিস ওয়ার্ল্ডে মেয়েরা যাচ্ছে। এজেন্সি নাই, প্রতিষ্ঠান নাই—তাও যাচ্ছে। এগুলোর জন্য উদ্যোগ প্রয়োজন, আন্তর্জাতিক এজেন্সি চেইন কেনা প্রয়োজন। সে উপায়গুলো প্রয়োজন। এটার জন্য অনেক অর্থের দরকার। একা কারও পক্ষে করা সম্ভব নয় এগুলো। আমি যখন একটা বিউটি কনটেস্ট করতে যাব, তখন একটা চ্যানেল লাগবে, গ্রুপ লাগবে, জায়গাটা কীভাবে সাজাব তা ভাবতে হবে, এতগুলো মানুষের সিকিউরিটি দিতে হবে ইত্যাদি অনেক ব্যাপার আছে। এটার জন্য অর্থের প্রয়োজন।
ভিন্ন প্রসঙ্গে আসি। আপনার স্কুল কখন করলেন?
বুলবুল: এটা আমার স্কুল না, ওয়ার্কশপ। ২০০৬ সালে এটা আমি শুরু করি। এটা করে আমি আনন্দ পাই। অ্যাটলিস্ট আমার দ্বারা কারও উপকার হচ্ছে। এই আরকি।
ওয়ার্কশপ দেওয়ার ইচ্ছে হলো কেন আপনার?
বুলবুল: আগে যেমন অনেক রিহার্সাল হতো, এটা ধীরে ধীরে কমতে থাকে। যারা নতুন আসবে, তাদের স্কোপটা কোথায়, তারা কীভাবে শিখবে, জানবে, করবে? সেগুলো থেকেই মনে হলো ওদের জন্য কিছু করি।
কারা কারা আপনার এখান থেকে বের হয়েছেন?
বুলবুল: আমার এখান থেকে বের হয়েছে অর্ষা, সাদিকা, নায়ক এবিএম সুমন, নায়ক বাপ্পি, নায়ক শরীফুল রাজ, মেঘলা মুক্তা, এখনকার জেনারেশনের নাজিয়া, নির্ঝরসহ আরও অনেকে।
পারিবারিক গল্পটা শুনতে চাই। আপনার জন্ম, বেড়ে ওঠা, বাবা-মা, ভাই-বোন সম্পর্কে জানতে চাই।
বুলবুল: আমার আব্বু আম্মু মারা গেছেন। এটা আমার অনেক দুঃখের বিষয়। আপনি যদি বলেন, আমার সবচেয়ে কষ্টের বিষয় কোনটা? আমি বলব আমি যে ইনকাম করি, তা বাবা-মাকে খাওয়াতে পারিনি। ছোটবেলা থেকেই ইচ্ছে ছিল বড় হয়ে মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে জব করে বাবা-মায়ের জন্য কিছু করব, বাবা-মাকে খাওয়াব। কিন্তু সেই আফসোসটা রয়েই গেল।
আমি সবাইকে নিয়ে খেতে পছন্দ করি। আমাকে আমার (ওয়ার্কশপের) ছেলেমেয়েরা মা বলে ডাকে। অনেক বছর ধরেই মা ডাকে। এটা তারা ভালোবাসা থেকে ডাকে। আমি আমার ছেলেমেয়েদের সেফটি না দিয়ে কাজ করি না। আমরা আট ভাইবোন। আমার ছোট ভাই আছে একজন। আর বাকি সবার বিয়ে হয়ে গেছে, বাচ্চা কাচ্চা হয়ে গেছে।
এটা অনেক কষ্টের ব্যাপার। ডেফিনেটলি কষ্টের ব্যাপার।
বুলবুল: হ্যাঁ, আমার এই আফসোসটা সারা জীবনই থেকে যাবে। আর আমি ফ্যামিলি পছন্দ করি। বন্ডিং পছন্দ করি। আমি একা মুভ করি কম। মানুষ আমাকে জিজ্ঞেস করে, অবসরে কী করো, আমি অবসরে ঘুমাই। অনেকে বই কালেক্ট করে, গান শোনে, আমি ঘুমাই। আমি প্রচুর কাজ করতে পছন্দ করি। পরিশ্রম করতে পছন্দ করি। এখন তো করোনার জন্য দুই বছর ধরে কাজ কম। নরমালি আমি অনেক ব্যস্ত থাকি। কোনো না কোনো বিউটি কনটেস্ট থাকে, আমি ট্রেইনার থাকি। কোনো স্কুল বলেন, স্পিচের জন্য বলেন আমার ক্লাস নিতে হয়।
আপনার জন্ম ও বেড়ে ওঠা তো…
বুলবুল: ঢাকায়। মিরপুরে। আমরা মিরপুরের স্থানীয়। আব্বু পাকিস্তান পিরিয়ডে জায়গা কিনলেন। স্বাধীনতার অনেক পর সেখানে বাড়ি করেন। এখনো সেখানে থাকি।
আপনার আব্বু কি ঢাকার বাইরে থেকে এসেছিলেন?
বুলবুল: হ্যাঁ। আব্বু বরিশালের। আব্বু আম্মু পাকিস্তান পিরিয়ড থেকেই ঢাকায়।
সামনে আপনার ইচ্ছা কী?
বুলবুল: আমি বর্তমান নিয়ে বিশ্বাসী। বর্তমানে যদি আমি ভালো করি, সামনে ভালো হবে।
মানুষের একটা গোল থাকে না, আমি এটা করব।
বুলবুল: আমি কখনো গোল নিয়ে আগাই না। সব সময় ভালো কাজ করার চেষ্টা করেছি। তবে এটা দেখতে চাই, বাংলাদেশের ভালো ভালো ছেলেমেয়েরা যেন ইন্টারন্যাশনালি কাজ করতে পারে। আমার ছেলেমেয়েরা যখন ভালো কাজ করে, তখন আমার এটা ভেবে ভালো লাগে যে, অ্যাটলিস্ট আমরা কিছু করছি। কিছু একটা কাউকে দিতে পারছি। আমি জীবনে অনেক অ্যাওয়ার্ড পেয়েছি। প্রতিটা অ্যাওয়ার্ড আমাকে কাজ করার উৎসাহ দেয়।
আপনার লেখাপড়া শেষ করছেন কোথা থেকে?
বুলবুল: আমি পড়াশোনা অনেক করতে পারি নাই। এটাও আমার ব্যাড লাক। এর কারণ হলো, আমার বাবা-মা মারা যাওয়ার পর আমাদের অনেক স্ট্রাগলের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে। আমি টিভি লাইভেও বলেছি, একটা সময় আমি স্বর্ণের চামচ মুখে নিয়ে জন্মেছি। কিন্তু আব্বু আম্মু মারা যাওয়ার পর অনেক বাস্তবতা দেখেছি আমরা। তখন আমরা কোনো ভাইবোন স্ট্যাব্লিশ না। সবাই ছোট ছোট। তখন আমার পড়ার টাকাই ছিল না। ভাইয়া কোচিংয়ের টাকা দিতে পারছিল না। আমার মনে আছে, আমি একজোড়া জুতা চেয়েছিলাম। সেটাও এক মাস পরে দিয়েছিল। সেটা থেকে আমি নতুনদের ভালোবাসি। সবাই তো তেলা মাথায় তেল দেয়। কিন্তু একটা মানুষ যখন নতুন অবস্থায় স্ট্রাগল করে, তখন তার অনেক কিছুই থাকে না।
এটা হয় আসলে। একটা সময় এমন থাকেই।
বুলবুল: আমি সব সময় লাইভে বলি, আমি অনেক স্ট্রাগল করেছি। পড়ার টাকা পাইনি। আমি অনেক কষ্ট করে রিহার্সাল করতাম। আমাদের যে পেমেন্টটা দিত, সেটা নিয়ে খুশি থাকতাম। আমাদের অনেক কলিগ, যারা এখন সুপারস্টার হয়েছে, তারা এখন বলে তুই আমাদের অনেক হেল্প করেছিস। আমি অনায়াসে হেল্প করতে পছন্দ করি। ভবিষ্যতে যদি আল্লাহ আমাকে আরও ক্ষমতা দেয়, তাহলে আরও কিছু করতে চাই।
আমি সামাজিক কাজ করতে পছন্দ করি। আমি আরটিভিতে অটিস্টিক শিশুদের নিয়ে শো করেছি। সেই শোতে আমাকে জিজ্ঞেস করেছিল, টুম্পা আপু আপনাকে কত টাকা দেব। আমি অটিস্টিক শিশুদের জন্য এমনি করে দেব—বলেছিলাম। আরও কিছু শো করতাম ওই টাকাটাও দিয়ে দিতাম। আমি আমার কোরিওগ্রাফির টাকা নিতাম না। গত বছর আমি একটা সংস্থার সঙ্গে জড়িত হয়েছি। ওদেরকে বলেছি, আমাকে যা দেবেন সেই টাকাটা পুরোটাই বিলিয়ে দেবেন। পরিচিত এক ছোট ভাইয়ের সংস্থা আছে। ও কুকুরদের খাওয়ায়। গরিব মানুষদের দেয়। তখন ওর সঙ্গে মাঝে মাঝে আমি শেয়ার করি। আরেকটা ছোট ভাই আছে, ওর সঙ্গেও আমি শেয়ার করি। আমি আসলে চেষ্টা করি কিছু করার।
আপনি তাহলে কুকুর পছন্দ করেন।
বুলবুল: আমি দেখতে পছন্দ করি। ছুঁতে পছন্দ করি না। আমি আসলে সবার জন্যই। আমি অনেক কষ্ট করে বুলবুল টুম্পা হয়েছি। আমার যদি ব্যবহার ভালো না থাকে, মানুষকে ভালো না বাসি, তাহলে মানুষ আমাকে কেন ভালোবাসবে।
অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন অনেক, সেটা আমরা জানি। কী কী অ্যাওয়ার্ড?
বুলবুল: আমি বেস্ট কোরিওগ্রাফার, বেস্ট মডেল অ্যাওয়ার্ড পেয়েছি। আমি অনেক ম্যাগাজিনের কাভার হয়েছি। সাপ্তাহিক ২০০০, মিরর, নারিন ম্যাগাজিনের কাভার হয়েছি। যখন আমার ক্যারিয়ারের আঠারো বছর হলো, তখন ইন্ডিয়া থেকে ফোন করে সফল নারী হিসেবে আমাকে কাভার করা হলো। একটা ম্যাগাজিন আছে, যেটা ইউকে, ইউএসএ ও জাপানে বের হয়। ওই ম্যাগাজিনে আমি কাজ করেছি। সেখানে ইউকের মডেল, ইউএসএর মডেল, জাপানের মডেল এবং একমাত্র আমি বাংলাদেশের মডেল হিসেবে ছিলাম। ম্যাগাজিনটি একসঙ্গে তিনটি দেশে প্রকাশিত হয়। এই কাজটা হয়েছিল ২০০৭ বা ২০০৮ সালের দিকে।
নয়টা অপ্রিয় সত্য কথা জানতে চাই আপনার কাছে।
বুলবুল: অপ্রিয় সত্য হলো আমি দ্বিমুখী মানুষ পছন্দ করি না। মিথ্যা কথা বলা পছন্দ করি না, মানুষের সঙ্গে চালাকি পছন্দ করি না, মানুষকে ঠকাতে পছন্দ করি না, আমি রান্না করতে পছন্দ করি না। আমি ফুড লাভার না। আমার ক্ষুধা লাগলে যেকোনো খাবার হলেই হয়। অনেকে বলে, ও রান্না করতে জানে না, ওর বিয়ে হবে না। আমার ভাবিরা খুব ভালো উত্তর দেয়। বলে, আমরাও তো রান্না করতে জানি না, আমাদের কি বিয়ে হয়নি।
সমাজে একটা কালো মেয়ে অনেক নেগেটিভ কথা শুনছে। আমিও অনেক শুনেছি। মিডিয়াতে কাজ করতে এসেও নেগেটিভ কথা শুনেছি। মানুষ বলত, মিডিয়াতে ভালো মানুষ কাজ করে না। আমার কাছে অনেক থ্রেটও আসত। তবে এটা আমি সব সময় বলতে চাই, নিজে ভালো তো জগৎ ভালো।
কারা থ্রেট করত?
বুলবুল: কারা করত জানি না। তারা বলত, আমাকে গুলি করে মেরে ফেলবে, এটা করব-সেটা করব ইত্যাদি। ভাইয়াকে ফোন দিয়ে বলত, ওকে মডেলিং করতে দিলেই মারব। একদিন আমার ফুপু ফোন ধরেছে, তাকেও এসব বলেছে। তারপর আমি ফোনটা ধরে বলেছি, ‘আমি দরজা খুলে রেখেছি। কে আসবে গুলি করতে আয়। আর আমার ফোন রেকর্ড হচ্ছে। কে ফোন দিছিস আমি বের করে ফেলব।’ এর পর থেকে আর এমন থ্রেট আসেনি।
এটা কোন সালের ঘটনা?
বুলবুল: এটা মেবি ২০০১/ ০২ সালের ঘটনা।
গসিপ বিষয়ে আপনার মতামত কী?
বুলবুল: আমি অন্য কাউকে নিয়ে গসিপ করি না। এটা আমার অপছন্দের। অন্য কাউকে নিয়ে গসিপ করে তাকে স্ট্যাব্লিশ করার কী আছে?
নিজের সম্পর্কে গসিপ শুনতে আপনার কেমন লাগে?
বুলবুল: প্রথম অনেক খারাপ লাগত। এখন ভাবি, আমি একটা পজিশনে চলে গেছি। আমাকে নিয়ে তো মানুষ গসিপ করবেই।
মানে গসিপ নিয়ে আপনার মাথা ব্যথা নেই।
বুলবুল: না। একটা মানুষ সবার প্রিয় হয় না। আমাকে অপছন্দ করে—এমন কেউ থাকতে পারে। ওরা নিজেদের ঘুম হারাম করে আমাকে স্ট্যাব্লিশ করে, টুম্পাকে কেন এত বেশি ভালোবাসে, টুম্পার কেন এত ছেলেমেয়ে, এসব নিয়ে ভাবে। এটা তাদের সমস্যা। একজন নায়িকাকে সবাই চেনে। কিন্তু আমি একজন মডেল হয়েও সবাই আমাকে চেনে। এটা আমার ক্রেডিট। আমার অর্জন।
আপনার মন খারাপ হয় কখন?
বুলবুল: আমার মন খারাপ হয় আব্বু আম্মুকে মিস করলে। ফ্যামিলির খারাপ কিছু দেখলে এবং মিথ্যা কথা শুনলে।
এই দীর্ঘ ক্যারিয়ারে আপনার সবচেয়ে সুন্দর মুহূর্ত কোনটা?
বুলবুল: যদি কাজের ক্ষেত্রে বলেন, তাহলে বলব প্রতিটা কাজই আমাকে সুন্দর মুহূর্ত উপহার দিয়েছে। আমি শিশুদের সঙ্গে, আমার স্টুডেন্টদের সঙ্গে সময় কাটাতে পছন্দ করি। গত ৫ বছর ধরে আমি স্টুডেন্টদের সঙ্গে জন্মদিন পালন করি। ওরা আমাকে সারপ্রাইজ দেয়। আমার ছবি বড় করে, আমার জন্য কেক আনে, রুম সাজায়, খাবার দাবার আনায়। ওদের সঙ্গে সময় কাটাতে পছন্দ করি।
এই ২৩ বছরের জার্নিকে আপনি কীভাবে দেখেন?
বুলবুল: ২৩ বছরে অনেক সুখ-দুঃখ আছে। উত্থান-পতন বলব না। কারণ, পতন দেখিনি। পজেটিভলি কাজ করেছি। সবাই যখন পজেটিভ কাজ করবে, তখন আমাদের দেশটা সুন্দর হয়ে যাবে। সবকিছুর নেগেটিভ দিক আছে। আমরা যদি পজিটিভটা নিই, তাহলে আমার মনে হয় সবার জন্য ভালো।
আপনাকে ধন্যবাদ।
বুলবুল: আপনাকেও ধন্যবাদ।

নাট্যদল বিবেকানন্দ থিয়েটারের ২৫তম প্রযোজনা ‘ভাসানে উজান’। গত নভেম্বরে মঞ্চে এসেছে নাটকটি। ২৯ ডিসেম্বর রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমির স্টুডিও থিয়েটার হলে সন্ধ্যা ৭টায় মঞ্চস্থ হবে নাটকটির চতুর্থ প্রদর্শনী। অপূর্ব কুমার কুণ্ডুর নাট্যরূপ এবং শুভাশীষ দত্ত তন্ময়ের নির্দেশনায় একক অভিনয় করেছেন মো. এরশাদ হাসান।
১৪ মিনিট আগে
টেলিভিশন চ্যানেল বাংলা ভিশনের জনপ্রিয় সংবাদ উপস্থাপক মামুন আব্দুল্লাহর সাবলীল উপস্থাপনার পেছনে রয়েছে দীর্ঘ অনুশীলন, দক্ষতা ও অবিচল আত্মবিশ্বাস। তাঁর সঙ্গে কথোপকথনে উঠে এসেছে সংবাদ উপস্থাপনার কৌশল, লাইভ সম্প্রচারের চাপ সামলানোর বাস্তব অভিজ্ঞতা এবং এ পেশায় আগ্রহীদের জন্য মূল্যবান পরামর্শ।
১৩ দিন আগে
দীর্ঘদিন আটকে থাকার পর রায়হান রাফী পরিচালিত ‘অমীমাংসিত’ ওয়েব ফিল্মের মুক্তির ঘোষণা এসেছে। ৪ ডিসেম্বর ওটিটি প্ল্যাটফর্ম আইস্ক্রিনে মুক্তি পাবে সিনেমাটি। এতে অভিনয় করেছেন ইমতিয়াজ বর্ষণ। এ ছাড়া আসছে ডিসেম্বরে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাবে তাঁর অভিনীত ‘এখানে রাজনৈতিক আলাপ জরুরি’।
০১ ডিসেম্বর ২০২৫
ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগ থেকে সিজিপিএ–৪ এর মধ্যে ৪ পেয়েছেন ইউসুফ ইবনে কামাল নিলয়। গত ২৭ অক্টোবর অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়টির ৩৭তম সমাবর্তনে এমন সাফল্যের স্বীকৃতি স্বরূপ তাকে ওআইসি স্বর্ণপদক দেওয়া হয়।
১৫ নভেম্বর ২০২৫
নাট্যদল বিবেকানন্দ থিয়েটারের ২৫তম প্রযোজনা ‘ভাসানে উজান’। গত নভেম্বরে মঞ্চে এসেছে নাটকটি। ২৯ ডিসেম্বর রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমির স্টুডিও থিয়েটার হলে সন্ধ্যা ৭টায় মঞ্চস্থ হবে নাটকটির চতুর্থ প্রদর্শনী। অপূর্ব কুমার কুণ্ডুর নাট্যরূপ এবং শুভাশীষ দত্ত তন্ময়ের নির্দেশনায় একক অভিনয় করেছেন মো. এরশাদ হাসান। নাটকটি নিয়ে বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেছেন এই অভিনেতা।
বিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকা

‘ভাসানে উজান’ নাটকের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার অভিজ্ঞতাটা কেমন?
দস্তয়ভস্কির বিখ্যাত ছোটগল্প দ্য জেন্টেল স্পিরিট অবলম্বনে এই নাটক। দস্তয়ভস্কি মানেই মানুষের অন্তর্লোকের গভীরতম স্তরে প্রবেশ। ভাসানে উজান আমার জন্য শুধুই একটি নাটক নয়, এটি একধরনের আত্মসংলাপ। এই গল্পে ঢুকতে গিয়ে আমাকে বারবার নিজের ভেতরের অচেনা কোণগুলোর মুখোমুখি হতে হয়েছে। এ ছাড়া অপূর্বদার নাট্যরূপে সাহিত্যের সৌন্দর্য যেমন অটুট আছে, তেমনি আছে মঞ্চের ভাষা। আর শুভাশীষদার নির্দেশনা ছিল ধ্যানের মতো—নীরব, গভীর এবং সংযত। এই দুজনের সমন্বয় আমাকে অভিনয়ে আরও সংযমী করেছে।
ভাসানে উজানের চরিত্রটি উপস্থাপনে মানসিকভাবে কতটা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছেন?
এই চরিত্রটি বাহিরের নয়, ভেতরের অভিনয় দাবি করে। এখানে কান্না নেই, চিৎকার নেই—আছে চাপা অপরাধবোধ আর নীরব অনুশোচনা। এই নীরবতাই ছিল সবচেয়ে কঠিন। আমি মনে করি, আজকের মানুষ ভেতরে ভেতরে খুব একা। ভাসানে উজান সেই একাকিত্বের আয়না। দর্শক যদি নিজের ছায়াটা একটু দেখতে পান, সেটাই আমাদের সাফল্য।
চতুর্থ প্রদর্শনীতে এসে ভাসানে উজান নাটকে কি কোনো পরিবর্তন বা পরিণতি এসেছে?
প্রতিটি প্রদর্শনীতেই নাটকটা একটু একটু করে বদলায়। আমি নিজেও বদলাই। দর্শকের নিশ্বাস, নীরবতা—সবকিছু মিলিয়ে নাটকটি আরও পরিণত হয়ে ওঠে।
একক অভিনয়ে দীর্ঘ সময় মঞ্চে থাকতে হয়, সঙ্গ দেওয়ার কেউ থাকে না। এই একাকিত্বকে কীভাবে অনুভব করেন?
একাকিত্ব এখানে শূন্যতা নয়, বরং একধরনের গভীর উপস্থিতি। দর্শক, আলো, নীরবতা—সবকিছু মিলিয়ে এক অদৃশ্য সংলাপ তৈরি হয়। সেই সংলাপই আমাকে টেনে নেয় পুরো সময়জুড়ে।
দীর্ঘ দুই দশকের নাট্যচর্চার পরেও কি নাট্যমঞ্চে অভিনয়ের ক্ষেত্রে নতুন করে ভয় বা উত্তেজনা কাজ করে?
ভয় না থাকলে অভিনয় মৃত হয়ে যায়। প্রতিটি প্রদর্শনীর আগে আমি নতুন করে ভয় পাই, এই ভয় আমাকে সৎ রাখে, জীবিত রাখে একজন অভিনেতা হিসেবে।
ভবিষ্যতে একক নাটক ও থিয়েটার নিয়ে আপনার স্বপ্ন কী?
আমি চাই, থিয়েটার আরও স্থির হোক, আরও গভীর হোক। একক নাটক নিয়ে আরও গবেষণাধর্মী কাজ করতে চাই, যেখানে অভিনয় হবে আত্মানুসন্ধানের একটি মাধ্যম।
মঞ্চ ও টেলিভিশনের আসন্ন কাজ নিয়ে দর্শকদের জন্য কী বলতে চান?
আমার অভিনীত নাটকগুলোর নিয়মিত প্রদর্শনী চলছে। পাশাপাশি নতুন একটি রেপার্টরি নাটকে যুক্ত হচ্ছি। এ ছাড়া কয়েকটি টেলিভিশন নাটকের কাজও শেষের পথে। নাটকগুলো শিগগির দর্শকদের সামনে আসবে।
‘ভাসানে উজান’ নাটকের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার অভিজ্ঞতাটা কেমন?
দস্তয়ভস্কির বিখ্যাত ছোটগল্প দ্য জেন্টেল স্পিরিট অবলম্বনে এই নাটক। দস্তয়ভস্কি মানেই মানুষের অন্তর্লোকের গভীরতম স্তরে প্রবেশ। ভাসানে উজান আমার জন্য শুধুই একটি নাটক নয়, এটি একধরনের আত্মসংলাপ। এই গল্পে ঢুকতে গিয়ে আমাকে বারবার নিজের ভেতরের অচেনা কোণগুলোর মুখোমুখি হতে হয়েছে। এ ছাড়া অপূর্বদার নাট্যরূপে সাহিত্যের সৌন্দর্য যেমন অটুট আছে, তেমনি আছে মঞ্চের ভাষা। আর শুভাশীষদার নির্দেশনা ছিল ধ্যানের মতো—নীরব, গভীর এবং সংযত। এই দুজনের সমন্বয় আমাকে অভিনয়ে আরও সংযমী করেছে।
ভাসানে উজানের চরিত্রটি উপস্থাপনে মানসিকভাবে কতটা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছেন?
এই চরিত্রটি বাহিরের নয়, ভেতরের অভিনয় দাবি করে। এখানে কান্না নেই, চিৎকার নেই—আছে চাপা অপরাধবোধ আর নীরব অনুশোচনা। এই নীরবতাই ছিল সবচেয়ে কঠিন। আমি মনে করি, আজকের মানুষ ভেতরে ভেতরে খুব একা। ভাসানে উজান সেই একাকিত্বের আয়না। দর্শক যদি নিজের ছায়াটা একটু দেখতে পান, সেটাই আমাদের সাফল্য।
চতুর্থ প্রদর্শনীতে এসে ভাসানে উজান নাটকে কি কোনো পরিবর্তন বা পরিণতি এসেছে?
প্রতিটি প্রদর্শনীতেই নাটকটা একটু একটু করে বদলায়। আমি নিজেও বদলাই। দর্শকের নিশ্বাস, নীরবতা—সবকিছু মিলিয়ে নাটকটি আরও পরিণত হয়ে ওঠে।
একক অভিনয়ে দীর্ঘ সময় মঞ্চে থাকতে হয়, সঙ্গ দেওয়ার কেউ থাকে না। এই একাকিত্বকে কীভাবে অনুভব করেন?
একাকিত্ব এখানে শূন্যতা নয়, বরং একধরনের গভীর উপস্থিতি। দর্শক, আলো, নীরবতা—সবকিছু মিলিয়ে এক অদৃশ্য সংলাপ তৈরি হয়। সেই সংলাপই আমাকে টেনে নেয় পুরো সময়জুড়ে।
দীর্ঘ দুই দশকের নাট্যচর্চার পরেও কি নাট্যমঞ্চে অভিনয়ের ক্ষেত্রে নতুন করে ভয় বা উত্তেজনা কাজ করে?
ভয় না থাকলে অভিনয় মৃত হয়ে যায়। প্রতিটি প্রদর্শনীর আগে আমি নতুন করে ভয় পাই, এই ভয় আমাকে সৎ রাখে, জীবিত রাখে একজন অভিনেতা হিসেবে।
ভবিষ্যতে একক নাটক ও থিয়েটার নিয়ে আপনার স্বপ্ন কী?
আমি চাই, থিয়েটার আরও স্থির হোক, আরও গভীর হোক। একক নাটক নিয়ে আরও গবেষণাধর্মী কাজ করতে চাই, যেখানে অভিনয় হবে আত্মানুসন্ধানের একটি মাধ্যম।
মঞ্চ ও টেলিভিশনের আসন্ন কাজ নিয়ে দর্শকদের জন্য কী বলতে চান?
আমার অভিনীত নাটকগুলোর নিয়মিত প্রদর্শনী চলছে। পাশাপাশি নতুন একটি রেপার্টরি নাটকে যুক্ত হচ্ছি। এ ছাড়া কয়েকটি টেলিভিশন নাটকের কাজও শেষের পথে। নাটকগুলো শিগগির দর্শকদের সামনে আসবে।

তখন আমি স্কুলে পড়ি। চাচ্চুর বিয়ে খেতে গিয়ে তাঁর এক বন্ধুর সঙ্গে আমার দেখা হয়। তিনি আমার চাচ্চুকে অনুরোধ করেন, আমাকে যেন মডেলিংয়ে দেওয়া হয়। ওই সময় আমার বাবা-মা মারা গেছেন। খুব হতাশায় ছিলাম আমি। এর আগে আমার দিন কাটত খেলাধুলা, স্কুল ও আনন্দের মধ্যে দিয়ে। কিন্তু বাবা-মা মারা যাওয়ার পর আমার জীবন পরিবর্তন
২৮ নভেম্বর ২০২১
টেলিভিশন চ্যানেল বাংলা ভিশনের জনপ্রিয় সংবাদ উপস্থাপক মামুন আব্দুল্লাহর সাবলীল উপস্থাপনার পেছনে রয়েছে দীর্ঘ অনুশীলন, দক্ষতা ও অবিচল আত্মবিশ্বাস। তাঁর সঙ্গে কথোপকথনে উঠে এসেছে সংবাদ উপস্থাপনার কৌশল, লাইভ সম্প্রচারের চাপ সামলানোর বাস্তব অভিজ্ঞতা এবং এ পেশায় আগ্রহীদের জন্য মূল্যবান পরামর্শ।
১৩ দিন আগে
দীর্ঘদিন আটকে থাকার পর রায়হান রাফী পরিচালিত ‘অমীমাংসিত’ ওয়েব ফিল্মের মুক্তির ঘোষণা এসেছে। ৪ ডিসেম্বর ওটিটি প্ল্যাটফর্ম আইস্ক্রিনে মুক্তি পাবে সিনেমাটি। এতে অভিনয় করেছেন ইমতিয়াজ বর্ষণ। এ ছাড়া আসছে ডিসেম্বরে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাবে তাঁর অভিনীত ‘এখানে রাজনৈতিক আলাপ জরুরি’।
০১ ডিসেম্বর ২০২৫
ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগ থেকে সিজিপিএ–৪ এর মধ্যে ৪ পেয়েছেন ইউসুফ ইবনে কামাল নিলয়। গত ২৭ অক্টোবর অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়টির ৩৭তম সমাবর্তনে এমন সাফল্যের স্বীকৃতি স্বরূপ তাকে ওআইসি স্বর্ণপদক দেওয়া হয়।
১৫ নভেম্বর ২০২৫
টেলিভিশন চ্যানেল বাংলা ভিশনের জনপ্রিয় সংবাদ উপস্থাপক মামুন আব্দুল্লাহর সাবলীল উপস্থাপনার পেছনে রয়েছে দীর্ঘ অনুশীলন, দক্ষতা ও অবিচল আত্মবিশ্বাস। তাঁর সঙ্গে কথোপকথনে উঠে এসেছে সংবাদ উপস্থাপনার কৌশল, লাইভ সম্প্রচারের চাপ সামলানোর বাস্তব অভিজ্ঞতা এবং এ পেশায় আগ্রহীদের জন্য মূল্যবান পরামর্শ। তাঁর সঙ্গে কথা বলে পর্দার আড়ালের সেই অভিজ্ঞতাগুলোই তুলে ধরেছেন মনিরুল ইসলাম।
মনিরুল ইসলাম

কীভাবে আপনি সংবাদ উপস্থাপক হওয়ার অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন?
প্রতিটি স্বপ্নের পেছনে একটি করে গল্প থাকে। আমার সংবাদ উপস্থাপক হওয়ার অনুপ্রেরণারও তেমনি একটি গল্প আছে। সংবাদ উপস্থাপক হওয়ার আগেও ছোটবেলা থেকে আমার বড় মামাকে দেখেছি, তাঁর কথা বলার স্টাইল ছিল ভীষণ হৃদয়গ্রাহী, যা মানুষকে খুব কাছে টানত। ঠিক তখন থেকেই বড় মামা হয়ে যান আমার সুপার হিরো। আমিও চেষ্টা করতাম তেমন করে মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে। তারপর দেখলাম এর সেরা উপায় হলো সংবাদ উপস্থাপক হওয়া। তাঁদের সুন্দর করে কথা বলাটা আমার পছন্দ হতো। সেখান থেকেই মূলত অনুপ্রাণিত হওয়া। তা ছাড়া আমার মরহুম আব্বুর প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। তাঁর উৎসাহ আর অনুপ্রেরণা এবং আমার আম্মুর নীরব সমর্থন আমাকে এ পেশায় আসতে সহযোগিতা করেছে।
শুরুতে সংবাদ উপস্থাপনার প্রশিক্ষণ বা প্রস্তুতি কেমন ছিল?
ছোটবেলা থেকেই কবিতা আবৃত্তি করতাম। সেটাও বড় মামার হাত ধরেই। বুদ্ধি হওয়ার পর থেকেই যখন নিউজ প্রেজেন্টার হওয়ার স্বপ্ন দেখতাম, তখন থেকেই চিন্তা করতাম এখানে শুদ্ধ উচ্চারণের বিকল্প নেই। তাই উচ্চমাধ্যমিক শেষ করে টিএসসিভিত্তিক একটি আবৃত্তি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হই। সেখানেও নিউজ প্রেজেন্টেশনের ক্লাস হতো। তারপর শুধু নিউজ প্রেজেন্টেশনের জন্য একটা একাডেমিতে ভর্তি হই। সেখানে ভর্তি ফি ছিল ৭ হাজার টাকা। পুরোটা দেওয়ার সামর্থ্য তখন ছিল না। তাই তাদের বলেছিলাম, ইনশা আল্লাহ একদিন নিউজ প্রেজেন্টার হয়ে আপনাদের এখানে ফ্রি ক্লাস নেব। সেই থেকে মনের মধ্যে ইচ্ছাটাও প্রবল হয়েছিল।
প্রথমবার লাইভ নিউজ উপস্থাপন করার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
প্রথমবার একটা অনলাইন টিভিতে নিউজ পড়েছিলাম। তাদেরও অভিষেক হয়েছিল আমাকে দিয়ে। তাই উচ্ছ্বাসটা দু’পক্ষেরই একটু বেশি ছিল। আমি তাদের গ্রুমিং করা প্রেজেন্টারদের মধ্যে প্রথম ছিলাম। নিজেকে প্রথম কোনো পর্দায় দেখে কি যে ভালো লেগেছিল, তা বলার ভাষা নেই।
উপস্থাপনায় ভাষা, উচ্চারণ ও টোন কতটা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন?
এ পেশাটা অন্য যেকোনো পেশার চেয়ে একটু আলাদা। এমনকি বাচিক যেকোনো পেশার চেয়েও। যেমন কাস্টমার কেয়ার, কিংবা কল সেন্টার থেকেও। এখানে ভুল উচ্চারণের কোনো মার্সি বা ক্ষমা নেই। তবে এখানে সংবাদের ভিন্নতার কারণে টোনের পরিবর্তন করতে হয়। নিউজের ভিন্ন ভিন্ন আবেদন টোনের ওঠানামায় ফুটিয়ে তুলতে হয়। টোনের ভেরিয়েশনের কারণে দর্শকের কানও প্রশান্তি পায়।
সংবাদ উপস্থাপনায় সময় ব্যবস্থাপনা বা কলাকৌশল কীভাবে পালন করেন?
এখানে সময় ব্যবস্থাপনাটা সবার আগে। প্রতিটি ন্যানো সেকেন্ডের মূল্য এখানে দিতে হয়। নিউজ শুরুর অনেক আগেই একজন প্রেজেন্টারকে স্টেশনে হাজির থাকতে হয়। সবকিছু বুঝে নিতে হয়। নিউজ শুরু হলে তো তাঁকে আরও বেশি প্রস্তুত থাকতে হয় সময় সম্পর্কে। কারণ প্রতিটি টাইমফ্রেম এখানে গুরুত্বপূর্ণ।
লাইভ সম্প্রচারে হঠাৎ সময় পরিবর্তন হলে কীভাবে সামলান?
লাইভ নিউজে যেকোনো কিছুর জন্যই প্রস্তুত থাকতে হয়। প্রেজেন্টারদের কানে একটা গোপন টকব্যাক লাগানো থাকে। যার সঙ্গে পিসিআর অর্থাৎ প্রডিউসার কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখতে হয়। প্রডিউসার যেকোনো আপডেট নিউজ টকব্যাকে জানিয়ে দেন। সেটার জন্য সব সময় প্রস্তুত থাকতে হয়। খুব ঠান্ডা মাথায় যেকোনো ব্রেকিং বুঝে তারপর ডেলিভারি দিতে হয়।
উপস্থাপনার সময় ঘড়ি বা প্রম্পটার দেখে কীভাবে সময় নিয়ন্ত্রণ করেন?
পুরো নিউজটা একটা টাইমফ্রেমে বাঁধা থাকে। বিশেষ কারণ ছাড়া এর বাইরে যাওয়া সম্ভব নয়। প্রতিটি নিউজের জন্য আলাদা সময় নির্ধারণ থাকে। সেটা বিবেচনা করেই নিউজ পড়ার গতি নির্ধারণ করতে হয়। সময় কন্ট্রোল করার জন্য পিসিআর এবং এমসিআর-মাস্টার কন্ট্রোল রুম সদা তৎপর থাকে। সেভাবেই একজন নিউজ প্রেজেন্টারকে চলতে হয়।
ক্যামেরার সামনে আত্মবিশ্বাস ধরে রাখার কৌশল কী?
আত্মবিশ্বাসটা অনেক কিছুর সমন্বিত একটা রূপ। যেকোনো ভালো প্রিপারেশন আত্মবিশ্বাস বাড়ায়। এখানে একজন নিউজ প্রেজেন্টারের ভালো প্রিপারেশন অনেক কিছুর সমন্বয়ে হয়ে থাকে। যেমন তাঁর উচ্চারণ, নিউজ সম্পর্কে সঠিক ধারণা। নিউজ রুম, পিসিআর, এমসিআর, রানডাউন (যেখানে নিউজের ধারাবাহিকতা সাজানো থাকে) সম্পর্কে ধারণা থাকলে তাঁর আত্মবিশ্বাস অটুট থাকে।
ভুল হয়ে গেলে কীভাবে পরিস্থিতি সামলান?
লাইভ নিউজে ভুল হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক। তবে বারবার একই ভুল যাতে না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হয়। ভুল হলে দর্শকের কাছে বিনয়ের সঙ্গে সেটি উপস্থাপন করাটাও ভালো প্রেজেন্টারের কাজ। দর্শকের সঙ্গে সব সময় যোগাযোগ রাখতে হয়।
লাইভ নিউজে হঠাৎ অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতি এলে আপনার মানসিক কৌশল কেমন থাকে?
লাইভ নিউজে প্রতিটি সেকেন্ডই চ্যালেঞ্জের। যেকোনো অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হলে মাথা সম্পূর্ণ ঠান্ডা রেখে সামলাতে হয়। মানসিকভাবে সব সময় প্রস্তুত থাকতে হয়। আমি সব সময় একটা কথা বলি, একজন নিউজ প্রেজেন্টারকে একটা লোকাল বাসের ড্রাইভারের ভূমিকা পালন করতে হয়। লোকাল বাসের ড্রাইভারকে যেমনিভাবে হরেক রকমের যাত্রীর কথা শুনেও হেলপারের সহযোগিতায় সঠিকভাবে গাড়ি চালাতে হয়, তেমনি প্রেজেন্টারকেও পিসিআরের শত কথা কানে নিয়েও প্রডিউসারের সঠিক দিকনির্দেশনায় টিভি স্টেশন চালাতে হয়। মনে রাখতে হয়, একজন নিউজ প্রেজেন্টার একটি নিউজ বুলেটিনের লাস্ট গেটওয়ে। তাই তাঁকে অনেক সতর্ক থাকতে হয়।
দর্শকদের আগ্রহ ধরে রাখতে আপনি কীভাবে সংবাদ উপস্থাপন করেন?
আমি তো ভাবি, আমি একজন দর্শকের ঘরের লোক। ভাবি নিউজের মাধ্যমে আমি গ্রামের একজন চাষি থেকে শুরু করে দেশের প্রধানের সঙ্গেও নিউজের মাধ্যমে যোগাযোগ করে থাকি। প্রতিটি সংবাদের আলাদা আবেদন আছে। চেষ্টা করি সেটাকে সেভাবেই উপস্থাপনের। দর্শক যেমন আমাদের সবচেয়ে কাছের মানুষ মনে করে, তেমনি সেভাবেই তার মনোজগতের কথা চিন্তা করে সংবাদ পরিবেশনের চেষ্টা করি।
সংবাদ উপস্থাপক হিসেবে আপনি কতটা নিরপেক্ষ থাকার চেষ্টা করেন?
শিশু আর পাগল ছাড়া সবারই নিজস্ব মতাদর্শ আছে। এটা যেমন সঠিক, তেমনি সংবাদিকদেরও নিজস্ব মতাদর্শ থাকাটা স্বাভাবিক। কিন্তু পেশাগত দায়িত্ব পালনে তাঁকে শতভাগ সেটি নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। কারণ দর্শক পক্ষপাতদুষ্ট নিউজ প্রেজেন্টার কিংবা সাংবাদিক কাউকেই পছন্দ করেন না। সচেতন দর্শকও চান না তাঁর দলের হয়ে সাংবাদিক কথা বলুক। তিনিও চান সাংবাদিক তাঁর নিউজে বস্তুনিষ্ঠতা বজায় রাখুক। তাই এসব ব্যাপার মাথায় রেখেই আমাদের চলতে হয়।
যারা ভবিষ্যতে সংবাদ উপস্থাপক হতে চান, তাঁদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?
অধ্যবসায়ের কোনো বিকল্প নেই। আমার মনে আছে, যখন থেকে সংবাদ উপস্থাপক হওয়ার জন্য মনস্থির করেছি, তখন রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতেও নিউজের লিংক পড়তাম। চেষ্টা করতাম কতটা হৃদয়গ্রাহী করে একটা সংবাদ উপস্থাপন করা যায়। তাই আমার কাছে মনে হয়, সঠিক রাস্তা চিনে লেগে থাকতে পারলে সফলতা আসবেই। সেটা ভিন্নভাবে হলেও। তবে পরিশ্রম কখনো বৃথা যায় না। সেটা কোনো না কোনোভাবে কাজে লাগে।
সংবাদ উপস্থাপক হওয়ার জন্য কোন গুণ বা দক্ষতা সবচেয়ে প্রয়োজনীয় বলে মনে করেন?
সবার আগে এটাকে পেশা হিসেবে নিতে মনস্থির করা। শখের বসে নয়। আপনাকে কোনো একটি পেশায় টিকে থাকতে হলে সে পেশার উপযোগী যত গুণ আছে, সেগুলো রপ্ত করার চেষ্টা করতে হবে। যেমন নিজের উচ্চারণ ঠিক রাখ, আঞ্চলিকতা পরিহার করা। সর্বোপরি নিজেকে একজন ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা।
কীভাবে আপনি সংবাদ উপস্থাপক হওয়ার অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন?
প্রতিটি স্বপ্নের পেছনে একটি করে গল্প থাকে। আমার সংবাদ উপস্থাপক হওয়ার অনুপ্রেরণারও তেমনি একটি গল্প আছে। সংবাদ উপস্থাপক হওয়ার আগেও ছোটবেলা থেকে আমার বড় মামাকে দেখেছি, তাঁর কথা বলার স্টাইল ছিল ভীষণ হৃদয়গ্রাহী, যা মানুষকে খুব কাছে টানত। ঠিক তখন থেকেই বড় মামা হয়ে যান আমার সুপার হিরো। আমিও চেষ্টা করতাম তেমন করে মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে। তারপর দেখলাম এর সেরা উপায় হলো সংবাদ উপস্থাপক হওয়া। তাঁদের সুন্দর করে কথা বলাটা আমার পছন্দ হতো। সেখান থেকেই মূলত অনুপ্রাণিত হওয়া। তা ছাড়া আমার মরহুম আব্বুর প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। তাঁর উৎসাহ আর অনুপ্রেরণা এবং আমার আম্মুর নীরব সমর্থন আমাকে এ পেশায় আসতে সহযোগিতা করেছে।
শুরুতে সংবাদ উপস্থাপনার প্রশিক্ষণ বা প্রস্তুতি কেমন ছিল?
ছোটবেলা থেকেই কবিতা আবৃত্তি করতাম। সেটাও বড় মামার হাত ধরেই। বুদ্ধি হওয়ার পর থেকেই যখন নিউজ প্রেজেন্টার হওয়ার স্বপ্ন দেখতাম, তখন থেকেই চিন্তা করতাম এখানে শুদ্ধ উচ্চারণের বিকল্প নেই। তাই উচ্চমাধ্যমিক শেষ করে টিএসসিভিত্তিক একটি আবৃত্তি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হই। সেখানেও নিউজ প্রেজেন্টেশনের ক্লাস হতো। তারপর শুধু নিউজ প্রেজেন্টেশনের জন্য একটা একাডেমিতে ভর্তি হই। সেখানে ভর্তি ফি ছিল ৭ হাজার টাকা। পুরোটা দেওয়ার সামর্থ্য তখন ছিল না। তাই তাদের বলেছিলাম, ইনশা আল্লাহ একদিন নিউজ প্রেজেন্টার হয়ে আপনাদের এখানে ফ্রি ক্লাস নেব। সেই থেকে মনের মধ্যে ইচ্ছাটাও প্রবল হয়েছিল।
প্রথমবার লাইভ নিউজ উপস্থাপন করার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
প্রথমবার একটা অনলাইন টিভিতে নিউজ পড়েছিলাম। তাদেরও অভিষেক হয়েছিল আমাকে দিয়ে। তাই উচ্ছ্বাসটা দু’পক্ষেরই একটু বেশি ছিল। আমি তাদের গ্রুমিং করা প্রেজেন্টারদের মধ্যে প্রথম ছিলাম। নিজেকে প্রথম কোনো পর্দায় দেখে কি যে ভালো লেগেছিল, তা বলার ভাষা নেই।
উপস্থাপনায় ভাষা, উচ্চারণ ও টোন কতটা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন?
এ পেশাটা অন্য যেকোনো পেশার চেয়ে একটু আলাদা। এমনকি বাচিক যেকোনো পেশার চেয়েও। যেমন কাস্টমার কেয়ার, কিংবা কল সেন্টার থেকেও। এখানে ভুল উচ্চারণের কোনো মার্সি বা ক্ষমা নেই। তবে এখানে সংবাদের ভিন্নতার কারণে টোনের পরিবর্তন করতে হয়। নিউজের ভিন্ন ভিন্ন আবেদন টোনের ওঠানামায় ফুটিয়ে তুলতে হয়। টোনের ভেরিয়েশনের কারণে দর্শকের কানও প্রশান্তি পায়।
সংবাদ উপস্থাপনায় সময় ব্যবস্থাপনা বা কলাকৌশল কীভাবে পালন করেন?
এখানে সময় ব্যবস্থাপনাটা সবার আগে। প্রতিটি ন্যানো সেকেন্ডের মূল্য এখানে দিতে হয়। নিউজ শুরুর অনেক আগেই একজন প্রেজেন্টারকে স্টেশনে হাজির থাকতে হয়। সবকিছু বুঝে নিতে হয়। নিউজ শুরু হলে তো তাঁকে আরও বেশি প্রস্তুত থাকতে হয় সময় সম্পর্কে। কারণ প্রতিটি টাইমফ্রেম এখানে গুরুত্বপূর্ণ।
লাইভ সম্প্রচারে হঠাৎ সময় পরিবর্তন হলে কীভাবে সামলান?
লাইভ নিউজে যেকোনো কিছুর জন্যই প্রস্তুত থাকতে হয়। প্রেজেন্টারদের কানে একটা গোপন টকব্যাক লাগানো থাকে। যার সঙ্গে পিসিআর অর্থাৎ প্রডিউসার কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখতে হয়। প্রডিউসার যেকোনো আপডেট নিউজ টকব্যাকে জানিয়ে দেন। সেটার জন্য সব সময় প্রস্তুত থাকতে হয়। খুব ঠান্ডা মাথায় যেকোনো ব্রেকিং বুঝে তারপর ডেলিভারি দিতে হয়।
উপস্থাপনার সময় ঘড়ি বা প্রম্পটার দেখে কীভাবে সময় নিয়ন্ত্রণ করেন?
পুরো নিউজটা একটা টাইমফ্রেমে বাঁধা থাকে। বিশেষ কারণ ছাড়া এর বাইরে যাওয়া সম্ভব নয়। প্রতিটি নিউজের জন্য আলাদা সময় নির্ধারণ থাকে। সেটা বিবেচনা করেই নিউজ পড়ার গতি নির্ধারণ করতে হয়। সময় কন্ট্রোল করার জন্য পিসিআর এবং এমসিআর-মাস্টার কন্ট্রোল রুম সদা তৎপর থাকে। সেভাবেই একজন নিউজ প্রেজেন্টারকে চলতে হয়।
ক্যামেরার সামনে আত্মবিশ্বাস ধরে রাখার কৌশল কী?
আত্মবিশ্বাসটা অনেক কিছুর সমন্বিত একটা রূপ। যেকোনো ভালো প্রিপারেশন আত্মবিশ্বাস বাড়ায়। এখানে একজন নিউজ প্রেজেন্টারের ভালো প্রিপারেশন অনেক কিছুর সমন্বয়ে হয়ে থাকে। যেমন তাঁর উচ্চারণ, নিউজ সম্পর্কে সঠিক ধারণা। নিউজ রুম, পিসিআর, এমসিআর, রানডাউন (যেখানে নিউজের ধারাবাহিকতা সাজানো থাকে) সম্পর্কে ধারণা থাকলে তাঁর আত্মবিশ্বাস অটুট থাকে।
ভুল হয়ে গেলে কীভাবে পরিস্থিতি সামলান?
লাইভ নিউজে ভুল হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক। তবে বারবার একই ভুল যাতে না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হয়। ভুল হলে দর্শকের কাছে বিনয়ের সঙ্গে সেটি উপস্থাপন করাটাও ভালো প্রেজেন্টারের কাজ। দর্শকের সঙ্গে সব সময় যোগাযোগ রাখতে হয়।
লাইভ নিউজে হঠাৎ অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতি এলে আপনার মানসিক কৌশল কেমন থাকে?
লাইভ নিউজে প্রতিটি সেকেন্ডই চ্যালেঞ্জের। যেকোনো অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হলে মাথা সম্পূর্ণ ঠান্ডা রেখে সামলাতে হয়। মানসিকভাবে সব সময় প্রস্তুত থাকতে হয়। আমি সব সময় একটা কথা বলি, একজন নিউজ প্রেজেন্টারকে একটা লোকাল বাসের ড্রাইভারের ভূমিকা পালন করতে হয়। লোকাল বাসের ড্রাইভারকে যেমনিভাবে হরেক রকমের যাত্রীর কথা শুনেও হেলপারের সহযোগিতায় সঠিকভাবে গাড়ি চালাতে হয়, তেমনি প্রেজেন্টারকেও পিসিআরের শত কথা কানে নিয়েও প্রডিউসারের সঠিক দিকনির্দেশনায় টিভি স্টেশন চালাতে হয়। মনে রাখতে হয়, একজন নিউজ প্রেজেন্টার একটি নিউজ বুলেটিনের লাস্ট গেটওয়ে। তাই তাঁকে অনেক সতর্ক থাকতে হয়।
দর্শকদের আগ্রহ ধরে রাখতে আপনি কীভাবে সংবাদ উপস্থাপন করেন?
আমি তো ভাবি, আমি একজন দর্শকের ঘরের লোক। ভাবি নিউজের মাধ্যমে আমি গ্রামের একজন চাষি থেকে শুরু করে দেশের প্রধানের সঙ্গেও নিউজের মাধ্যমে যোগাযোগ করে থাকি। প্রতিটি সংবাদের আলাদা আবেদন আছে। চেষ্টা করি সেটাকে সেভাবেই উপস্থাপনের। দর্শক যেমন আমাদের সবচেয়ে কাছের মানুষ মনে করে, তেমনি সেভাবেই তার মনোজগতের কথা চিন্তা করে সংবাদ পরিবেশনের চেষ্টা করি।
সংবাদ উপস্থাপক হিসেবে আপনি কতটা নিরপেক্ষ থাকার চেষ্টা করেন?
শিশু আর পাগল ছাড়া সবারই নিজস্ব মতাদর্শ আছে। এটা যেমন সঠিক, তেমনি সংবাদিকদেরও নিজস্ব মতাদর্শ থাকাটা স্বাভাবিক। কিন্তু পেশাগত দায়িত্ব পালনে তাঁকে শতভাগ সেটি নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। কারণ দর্শক পক্ষপাতদুষ্ট নিউজ প্রেজেন্টার কিংবা সাংবাদিক কাউকেই পছন্দ করেন না। সচেতন দর্শকও চান না তাঁর দলের হয়ে সাংবাদিক কথা বলুক। তিনিও চান সাংবাদিক তাঁর নিউজে বস্তুনিষ্ঠতা বজায় রাখুক। তাই এসব ব্যাপার মাথায় রেখেই আমাদের চলতে হয়।
যারা ভবিষ্যতে সংবাদ উপস্থাপক হতে চান, তাঁদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?
অধ্যবসায়ের কোনো বিকল্প নেই। আমার মনে আছে, যখন থেকে সংবাদ উপস্থাপক হওয়ার জন্য মনস্থির করেছি, তখন রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতেও নিউজের লিংক পড়তাম। চেষ্টা করতাম কতটা হৃদয়গ্রাহী করে একটা সংবাদ উপস্থাপন করা যায়। তাই আমার কাছে মনে হয়, সঠিক রাস্তা চিনে লেগে থাকতে পারলে সফলতা আসবেই। সেটা ভিন্নভাবে হলেও। তবে পরিশ্রম কখনো বৃথা যায় না। সেটা কোনো না কোনোভাবে কাজে লাগে।
সংবাদ উপস্থাপক হওয়ার জন্য কোন গুণ বা দক্ষতা সবচেয়ে প্রয়োজনীয় বলে মনে করেন?
সবার আগে এটাকে পেশা হিসেবে নিতে মনস্থির করা। শখের বসে নয়। আপনাকে কোনো একটি পেশায় টিকে থাকতে হলে সে পেশার উপযোগী যত গুণ আছে, সেগুলো রপ্ত করার চেষ্টা করতে হবে। যেমন নিজের উচ্চারণ ঠিক রাখ, আঞ্চলিকতা পরিহার করা। সর্বোপরি নিজেকে একজন ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা।

তখন আমি স্কুলে পড়ি। চাচ্চুর বিয়ে খেতে গিয়ে তাঁর এক বন্ধুর সঙ্গে আমার দেখা হয়। তিনি আমার চাচ্চুকে অনুরোধ করেন, আমাকে যেন মডেলিংয়ে দেওয়া হয়। ওই সময় আমার বাবা-মা মারা গেছেন। খুব হতাশায় ছিলাম আমি। এর আগে আমার দিন কাটত খেলাধুলা, স্কুল ও আনন্দের মধ্যে দিয়ে। কিন্তু বাবা-মা মারা যাওয়ার পর আমার জীবন পরিবর্তন
২৮ নভেম্বর ২০২১
নাট্যদল বিবেকানন্দ থিয়েটারের ২৫তম প্রযোজনা ‘ভাসানে উজান’। গত নভেম্বরে মঞ্চে এসেছে নাটকটি। ২৯ ডিসেম্বর রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমির স্টুডিও থিয়েটার হলে সন্ধ্যা ৭টায় মঞ্চস্থ হবে নাটকটির চতুর্থ প্রদর্শনী। অপূর্ব কুমার কুণ্ডুর নাট্যরূপ এবং শুভাশীষ দত্ত তন্ময়ের নির্দেশনায় একক অভিনয় করেছেন মো. এরশাদ হাসান।
১৪ মিনিট আগে
দীর্ঘদিন আটকে থাকার পর রায়হান রাফী পরিচালিত ‘অমীমাংসিত’ ওয়েব ফিল্মের মুক্তির ঘোষণা এসেছে। ৪ ডিসেম্বর ওটিটি প্ল্যাটফর্ম আইস্ক্রিনে মুক্তি পাবে সিনেমাটি। এতে অভিনয় করেছেন ইমতিয়াজ বর্ষণ। এ ছাড়া আসছে ডিসেম্বরে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাবে তাঁর অভিনীত ‘এখানে রাজনৈতিক আলাপ জরুরি’।
০১ ডিসেম্বর ২০২৫
ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগ থেকে সিজিপিএ–৪ এর মধ্যে ৪ পেয়েছেন ইউসুফ ইবনে কামাল নিলয়। গত ২৭ অক্টোবর অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়টির ৩৭তম সমাবর্তনে এমন সাফল্যের স্বীকৃতি স্বরূপ তাকে ওআইসি স্বর্ণপদক দেওয়া হয়।
১৫ নভেম্বর ২০২৫
দীর্ঘদিন আটকে থাকার পর রায়হান রাফী পরিচালিত ‘অমীমাংসিত’ ওয়েব ফিল্মের মুক্তির ঘোষণা এসেছে। ৪ ডিসেম্বর ওটিটি প্ল্যাটফর্ম আইস্ক্রিনে মুক্তি পাবে সিনেমাটি। এতে অভিনয় করেছেন ইমতিয়াজ বর্ষণ। এ ছাড়া আসছে ডিসেম্বরে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাবে তাঁর অভিনীত ‘এখানে রাজনৈতিক আলাপ জরুরি’। আগামী জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে বাংলাদেশে প্যানোরামা বিভাগে জায়গা করে নিয়েছে বর্ষণ অভিনীত দুটি সিনেমা। ইমতিয়াজ বর্ষণের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শিহাব আহমেদ।
শিহাব আহমেদ

দীর্ঘদিন আটকে থাকার পর অবশেষে মুক্তি পাচ্ছে ওয়েব ফিল্ম অমীমাংসিত। কেমন লাগছে?
আমরা অভিনয়শিল্পীরা কাজ করি দর্শকের জন্য। সেই কাজটা অনেক দিন আটকে থাকা অবশ্যই কষ্টের। অবশেষে ওয়েব ফিল্মটি দর্শক দেখতে পারবেন, এটাই সবচেয়ে ভালো লাগার। সিনেমাটিতে রহস্যের গন্ধ রয়েছে। রহস্যজনকভাবে কে বা কারা খুন করেছে, এর প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে না। এটি বানিয়েছেন রায়হান রাফী। ভিজ্যুয়াল লুকেও দর্শক নতুনত্ব পাবেন।
ওটিটি কনটেন্ট হওয়ার পরেও গত বছর তৎকালীন সেন্সর বোর্ড আটকে দিয়েছিল সিনেমাটি। অনেকেই বলছেন এটি নির্মিত হয়েছে সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড নিয়ে। আপনিও কি মনে করেন এই কারণেই এটি আটকে দেওয়া হয়েছিল?
একদম তাই। সবাই যেটা ধারণা করেছে, সেই কারণেই সিনেমাটি এত দিন আটকে ছিল। তৎকালীন সেন্সর বোর্ড গল্পটি সেনসেটিভ ভেবে সিনেমাটি আটকে দিয়েছিল। মুক্তির আগে এর বেশি এখন বলতে চাই না।
এটা নিয়ে প্রথম থেকেই অনেক আলোচনা। দর্শকেরও আলাদা আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। এ নিয়ে কোনো চাপ অনুভব করছেন?
প্রতিটি কাজই শিল্পী ও নির্মাতাদের একধরনের প্রেশার ক্রিয়েট করে। আমি নিজেও যেকোনো কাজ মুক্তির আগে চাপ অনুভব করি। দর্শক কীভাবে নেবেন, তাঁদের প্রতিক্রিয়া কেমন হবে। আমরা তো আসলে দর্শকদের ভালো লাগার জন্য, তাঁদের বিনোদন দেওয়ার জন্য কাজ করি। দর্শকের সন্তুষ্টি আমাদের জন্য আশীর্বাদ। অভিনেতা হিসেবে সব সময় আশা রাখি আমার কাজটি যেন দর্শকের ভালো লাগে, গুণে মানে যেন সবার মনঃপূত হয়।
ডিসেম্বরে প্রেক্ষাগৃহেও আপনার সিনেমা মুক্তি পাচ্ছে। সেই সিনেমা নিয়ে কিছু বলুন।
‘এখানে রাজনৈতিক আলাপ জরুরি’ নামের সিনেমাটি বানিয়েছেন আহমেদ হাসান সানি। ২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলন, এর পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সময়ের গল্প নিয়ে সিনেমা। আমাদের দেশের রাজনীতির হালচাল দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে। ফুটে উঠেছে রাজনীতি নিয়ে মানুষের ভাবনা। আমাদের দেশে অনেক রেস্টুরেন্ট বা আড্ডার স্থানে লেখা থাকে এখানে রাজনৈতিক আলাপ নিষিদ্ধ বা করা যাবে না। আমি মনে করি, এটা মিস কনসেপ্ট। রাজনৈতিক আলাপ প্রতিটি জায়গায় হওয়া উচিত। কারণ, আমরা কেউ রাজনীতির বাইরে নই। প্রতিটি মানুষ রাজনীতির অংশ। সেটা সচেতনভাবে হোক কিংবা অসচেতনভাবে। যারা সচেতন, তারা একটু দায়িত্বশীলতার সঙ্গে সক্রিয় থাকে। কিন্তু যারা রাজনৈতিকভাবে অসচেতন বা কেয়ারলেস, তাদেরও একটা ভূমিকা থাকে।
এটা আহমেদ হাসান সানির প্রথম সিনেমা। নির্মাতা হিসেবে কেমন লাগল তাঁকে?
এর আগে আহমেদ হাসান সানির নির্দেশনায় বিজ্ঞাপনে কাজ করেছি। তবে নির্মাতা হিসেবে আগে থেকেই তাঁকে চিনি। উনি একজন আধুনিক নির্মাতা, তাঁর ভাবনাও আধুনিক। ছোটখাটো বিষয়েও সমান খেয়াল রাখেন তিনি। চিত্রনাট্য, অ্যাক্টিং, সেট—সব ব্যাপারেই তিনি খুঁতখুঁতে। এখানে রাজনৈতিক আলাপ জরুরি সিনেমাটি দেখার সময় দর্শক তাঁর যত্নের ছাপ দেখতে পাবেন। আমি বিশ্বাস করি, ওনার কাছ থেকে ভালো মানের আরও কাজ পাওয়া যাবে।
সম্প্রতি ছাড়পত্র পেয়েছে আপনার আরেক সিনেমা ‘যাপিত জীবন’। সেই সিনেমার গল্প কী নিয়ে?
এটি একটি পিরিয়ডিকাল সিনেমা। ১৯৪৭ থেকে ১৯৫২ সাল পর্যন্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে গল্প। এই সিনেমায় আরও অভিনয় করেছেন আফজাল হোসেন, রোকেয়া প্রাচী, আশনা হাবিব ভাবনা প্রমুখ। পরিচালনা করেছেন হাবিবুল ইসলাম হাবিব।
এখানে রাজনৈতিক আলাপ জরুরি এবং যাপিত জীবন সিনেমা দুটি ঢাকা ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের বাংলাদেশ প্যানোরামা বিভাগে প্রদর্শিত হবে। কেমন অনুভূতি?
২০২০ সাল থেকে প্রায় প্রতিবছর ঢাকা ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে আমার কোনো না কোনো সিনেমা প্রদর্শিত হয়। এটা আমার জন্য আনন্দের ও গর্বের। এ বছর দুটি পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমা জায়গা পেয়েছে বাংলাদেশ প্যানোরামা বিভাগে। শুনছি দুটি সিনেমাই ডিসেম্বরে মুক্তি পাবে। এটা নিয়ে আমার আপত্তি আছে। ভিন্ন সময়ে সিনেমা দুটি মুক্তি পেলে ভালো হতো।
সিনেমা মুক্তি নিয়ে এই আপত্তির কথা জানিয়েছেন নির্মাতাদের?
এখানে রাজনৈতিক আলাপ জরুরি নিয়ে নির্মাতার সঙ্গে আলাপ হয়েছে। ওনারা সিনেমার মুক্তি ও প্রমোশন নিয়ে তাঁদের পরিকল্পনার কথা আমাকে জানিয়েছেন। যাপিত জীবন নিয়ে আমি অফিশিয়ালি এখনো কিছু জানি না। তাই কথা হয়নি।
‘রবি ইন ঢাকা’ নামের সিনেমার শুটিং করছেন। এ সিনেমাটি নিয়ে বলুন।
ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত এই সিনেমার শুটিং শিডিউল আছে। এরপর একটা বিরতি নিয়ে শুরু হবে পরের লটের শুটিং। এই সিনেমার গল্পটিও সমকালীন। নতুন প্রজন্মের কথা আছে। আসলে আমরা যেই সময়েই বসবাস করি না কেন, দুঃখ-কষ্ট, আনন্দ-বেদনা আমাদের জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকে। এই শহরে অনেক মানুষ দেখি যাদের দূর থেকে দেখলে মনে হয় সুখে আছে। কিন্তু আসলে তাদের ভেতরে অনেক কষ্ট। নানা ধরনের কষ্টের মাঝেও আমরা এই শহরে আনন্দ খুঁজে বেড়াই। এমন একটা গল্প নিয়েই রবি ইন ঢাকা। গল্পে মিস্ট্রি আছে, সাসপেন্সও আছে। পরিচালনা করছেন রাজীব সালেহীন।
দীর্ঘদিন আটকে থাকার পর অবশেষে মুক্তি পাচ্ছে ওয়েব ফিল্ম অমীমাংসিত। কেমন লাগছে?
আমরা অভিনয়শিল্পীরা কাজ করি দর্শকের জন্য। সেই কাজটা অনেক দিন আটকে থাকা অবশ্যই কষ্টের। অবশেষে ওয়েব ফিল্মটি দর্শক দেখতে পারবেন, এটাই সবচেয়ে ভালো লাগার। সিনেমাটিতে রহস্যের গন্ধ রয়েছে। রহস্যজনকভাবে কে বা কারা খুন করেছে, এর প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে না। এটি বানিয়েছেন রায়হান রাফী। ভিজ্যুয়াল লুকেও দর্শক নতুনত্ব পাবেন।
ওটিটি কনটেন্ট হওয়ার পরেও গত বছর তৎকালীন সেন্সর বোর্ড আটকে দিয়েছিল সিনেমাটি। অনেকেই বলছেন এটি নির্মিত হয়েছে সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড নিয়ে। আপনিও কি মনে করেন এই কারণেই এটি আটকে দেওয়া হয়েছিল?
একদম তাই। সবাই যেটা ধারণা করেছে, সেই কারণেই সিনেমাটি এত দিন আটকে ছিল। তৎকালীন সেন্সর বোর্ড গল্পটি সেনসেটিভ ভেবে সিনেমাটি আটকে দিয়েছিল। মুক্তির আগে এর বেশি এখন বলতে চাই না।
এটা নিয়ে প্রথম থেকেই অনেক আলোচনা। দর্শকেরও আলাদা আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। এ নিয়ে কোনো চাপ অনুভব করছেন?
প্রতিটি কাজই শিল্পী ও নির্মাতাদের একধরনের প্রেশার ক্রিয়েট করে। আমি নিজেও যেকোনো কাজ মুক্তির আগে চাপ অনুভব করি। দর্শক কীভাবে নেবেন, তাঁদের প্রতিক্রিয়া কেমন হবে। আমরা তো আসলে দর্শকদের ভালো লাগার জন্য, তাঁদের বিনোদন দেওয়ার জন্য কাজ করি। দর্শকের সন্তুষ্টি আমাদের জন্য আশীর্বাদ। অভিনেতা হিসেবে সব সময় আশা রাখি আমার কাজটি যেন দর্শকের ভালো লাগে, গুণে মানে যেন সবার মনঃপূত হয়।
ডিসেম্বরে প্রেক্ষাগৃহেও আপনার সিনেমা মুক্তি পাচ্ছে। সেই সিনেমা নিয়ে কিছু বলুন।
‘এখানে রাজনৈতিক আলাপ জরুরি’ নামের সিনেমাটি বানিয়েছেন আহমেদ হাসান সানি। ২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলন, এর পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সময়ের গল্প নিয়ে সিনেমা। আমাদের দেশের রাজনীতির হালচাল দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে। ফুটে উঠেছে রাজনীতি নিয়ে মানুষের ভাবনা। আমাদের দেশে অনেক রেস্টুরেন্ট বা আড্ডার স্থানে লেখা থাকে এখানে রাজনৈতিক আলাপ নিষিদ্ধ বা করা যাবে না। আমি মনে করি, এটা মিস কনসেপ্ট। রাজনৈতিক আলাপ প্রতিটি জায়গায় হওয়া উচিত। কারণ, আমরা কেউ রাজনীতির বাইরে নই। প্রতিটি মানুষ রাজনীতির অংশ। সেটা সচেতনভাবে হোক কিংবা অসচেতনভাবে। যারা সচেতন, তারা একটু দায়িত্বশীলতার সঙ্গে সক্রিয় থাকে। কিন্তু যারা রাজনৈতিকভাবে অসচেতন বা কেয়ারলেস, তাদেরও একটা ভূমিকা থাকে।
এটা আহমেদ হাসান সানির প্রথম সিনেমা। নির্মাতা হিসেবে কেমন লাগল তাঁকে?
এর আগে আহমেদ হাসান সানির নির্দেশনায় বিজ্ঞাপনে কাজ করেছি। তবে নির্মাতা হিসেবে আগে থেকেই তাঁকে চিনি। উনি একজন আধুনিক নির্মাতা, তাঁর ভাবনাও আধুনিক। ছোটখাটো বিষয়েও সমান খেয়াল রাখেন তিনি। চিত্রনাট্য, অ্যাক্টিং, সেট—সব ব্যাপারেই তিনি খুঁতখুঁতে। এখানে রাজনৈতিক আলাপ জরুরি সিনেমাটি দেখার সময় দর্শক তাঁর যত্নের ছাপ দেখতে পাবেন। আমি বিশ্বাস করি, ওনার কাছ থেকে ভালো মানের আরও কাজ পাওয়া যাবে।
সম্প্রতি ছাড়পত্র পেয়েছে আপনার আরেক সিনেমা ‘যাপিত জীবন’। সেই সিনেমার গল্প কী নিয়ে?
এটি একটি পিরিয়ডিকাল সিনেমা। ১৯৪৭ থেকে ১৯৫২ সাল পর্যন্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে গল্প। এই সিনেমায় আরও অভিনয় করেছেন আফজাল হোসেন, রোকেয়া প্রাচী, আশনা হাবিব ভাবনা প্রমুখ। পরিচালনা করেছেন হাবিবুল ইসলাম হাবিব।
এখানে রাজনৈতিক আলাপ জরুরি এবং যাপিত জীবন সিনেমা দুটি ঢাকা ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের বাংলাদেশ প্যানোরামা বিভাগে প্রদর্শিত হবে। কেমন অনুভূতি?
২০২০ সাল থেকে প্রায় প্রতিবছর ঢাকা ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে আমার কোনো না কোনো সিনেমা প্রদর্শিত হয়। এটা আমার জন্য আনন্দের ও গর্বের। এ বছর দুটি পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমা জায়গা পেয়েছে বাংলাদেশ প্যানোরামা বিভাগে। শুনছি দুটি সিনেমাই ডিসেম্বরে মুক্তি পাবে। এটা নিয়ে আমার আপত্তি আছে। ভিন্ন সময়ে সিনেমা দুটি মুক্তি পেলে ভালো হতো।
সিনেমা মুক্তি নিয়ে এই আপত্তির কথা জানিয়েছেন নির্মাতাদের?
এখানে রাজনৈতিক আলাপ জরুরি নিয়ে নির্মাতার সঙ্গে আলাপ হয়েছে। ওনারা সিনেমার মুক্তি ও প্রমোশন নিয়ে তাঁদের পরিকল্পনার কথা আমাকে জানিয়েছেন। যাপিত জীবন নিয়ে আমি অফিশিয়ালি এখনো কিছু জানি না। তাই কথা হয়নি।
‘রবি ইন ঢাকা’ নামের সিনেমার শুটিং করছেন। এ সিনেমাটি নিয়ে বলুন।
ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত এই সিনেমার শুটিং শিডিউল আছে। এরপর একটা বিরতি নিয়ে শুরু হবে পরের লটের শুটিং। এই সিনেমার গল্পটিও সমকালীন। নতুন প্রজন্মের কথা আছে। আসলে আমরা যেই সময়েই বসবাস করি না কেন, দুঃখ-কষ্ট, আনন্দ-বেদনা আমাদের জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকে। এই শহরে অনেক মানুষ দেখি যাদের দূর থেকে দেখলে মনে হয় সুখে আছে। কিন্তু আসলে তাদের ভেতরে অনেক কষ্ট। নানা ধরনের কষ্টের মাঝেও আমরা এই শহরে আনন্দ খুঁজে বেড়াই। এমন একটা গল্প নিয়েই রবি ইন ঢাকা। গল্পে মিস্ট্রি আছে, সাসপেন্সও আছে। পরিচালনা করছেন রাজীব সালেহীন।

তখন আমি স্কুলে পড়ি। চাচ্চুর বিয়ে খেতে গিয়ে তাঁর এক বন্ধুর সঙ্গে আমার দেখা হয়। তিনি আমার চাচ্চুকে অনুরোধ করেন, আমাকে যেন মডেলিংয়ে দেওয়া হয়। ওই সময় আমার বাবা-মা মারা গেছেন। খুব হতাশায় ছিলাম আমি। এর আগে আমার দিন কাটত খেলাধুলা, স্কুল ও আনন্দের মধ্যে দিয়ে। কিন্তু বাবা-মা মারা যাওয়ার পর আমার জীবন পরিবর্তন
২৮ নভেম্বর ২০২১
নাট্যদল বিবেকানন্দ থিয়েটারের ২৫তম প্রযোজনা ‘ভাসানে উজান’। গত নভেম্বরে মঞ্চে এসেছে নাটকটি। ২৯ ডিসেম্বর রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমির স্টুডিও থিয়েটার হলে সন্ধ্যা ৭টায় মঞ্চস্থ হবে নাটকটির চতুর্থ প্রদর্শনী। অপূর্ব কুমার কুণ্ডুর নাট্যরূপ এবং শুভাশীষ দত্ত তন্ময়ের নির্দেশনায় একক অভিনয় করেছেন মো. এরশাদ হাসান।
১৪ মিনিট আগে
টেলিভিশন চ্যানেল বাংলা ভিশনের জনপ্রিয় সংবাদ উপস্থাপক মামুন আব্দুল্লাহর সাবলীল উপস্থাপনার পেছনে রয়েছে দীর্ঘ অনুশীলন, দক্ষতা ও অবিচল আত্মবিশ্বাস। তাঁর সঙ্গে কথোপকথনে উঠে এসেছে সংবাদ উপস্থাপনার কৌশল, লাইভ সম্প্রচারের চাপ সামলানোর বাস্তব অভিজ্ঞতা এবং এ পেশায় আগ্রহীদের জন্য মূল্যবান পরামর্শ।
১৩ দিন আগে
ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগ থেকে সিজিপিএ–৪ এর মধ্যে ৪ পেয়েছেন ইউসুফ ইবনে কামাল নিলয়। গত ২৭ অক্টোবর অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়টির ৩৭তম সমাবর্তনে এমন সাফল্যের স্বীকৃতি স্বরূপ তাকে ওআইসি স্বর্ণপদক দেওয়া হয়।
১৫ নভেম্বর ২০২৫
ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগ থেকে সিজিপিএ–৪ এর মধ্যে ৪ পেয়েছেন ইউসুফ ইবনে কামাল নিলয়। গত ২৭ অক্টোবর অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়টির ৩৭তম সমাবর্তনে এমন সাফল্যের স্বীকৃতি স্বরূপ তাকে ওআইসি স্বর্ণপদক দেওয়া হয়। নিলয় বিশ্ববিদ্যালয়টির ২০তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি নিজের অসামান্য কৃতিত্বের নেপথ্যের গল্প জানিয়েছেন আজকের পত্রিকাকে। তার কথাগুলো শুনেছেন ইলিয়াস শান্ত।
ইলিয়াস শান্ত

গত ২৭ অক্টোবর আইইউটির ৩৭ তম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়েছে। আপনি এতে অংশ নিয়েছেন। আপনার বিভাগ ও ফলাফল সম্পর্কে বলুন।
কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগ থেকে আমি গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করেছি। প্রথম সেমিস্টারে একটি কোর্সে এ+ পাইনি। তাই সেই সেমিস্টারে আমার জিপিএ ছিল ৩.৯৭। তবে এরপরের সাতটি সেমিস্টারেই আমি ধারাবাহিকভাবে ৪.০০ পেয়েছি।
দ্বিতীয় সেমিস্টারে ৪ পাওয়ার পর আমার সিজিপিএ দাঁড়ায় ৩.৯৮। তৃতীয় সেমিস্টারের পর হয় ৩.৯৯। চতুর্থ, পঞ্চম ও ষষ্ঠ সেমিস্টারে ৪ ধরে রাখতে পারলেও সিজিপিএ তখনও ৩.৯৯ ছিল। শেষ পর্যন্ত সপ্তম সেমিস্টারে ৪ পাওয়ার পর সিজিপিএ অবশেষে ৪–এ পৌঁছায়। তখন সত্যিই আমি খুব খুশি হয়েছিলাম। এরপর শেষ বা অষ্টম সেমিস্টারেও একই পারফরম্যান্স ধরে রাখার চেষ্টা করি। আলহামদুলিল্লাহ সেটাও সম্ভব হয়। ফলে আমি সিজিপিএ ৪ নিয়ে স্নাতক সম্পন্ন করতে পেরেছি।
এমন সাফল্যের কৃতিত্ব কাকে দিতে চান?
সবার আগে আমি আমার পরিবারের প্রতি কৃতজ্ঞ জানাচ্ছি। তারা সবসময় আমার পাশে থেকেছে। প্রতিটি মুহূর্তে আমাকে সাহস আর অনুপ্রেরণা দিয়েছে। এরপর আমার শিক্ষকদের কথা, যাদের দিকনির্দেশনা ও আন্তরিক সহযোগিতা আমাকে প্রতিটি ধাপে এগিয়ে যেতে সাহায্য করেছে। আর আমার বন্ধুদের কথাও বলতে হবে। এই চার বছরের যাত্রায় আমার বন্ধুরা সবসময় পাশে থেকেছে–কখনো সহায়তায়, কখনো বা মোটিভেশনে। সবার সম্মিলিত সহযোগিতা আর আমার প্রচেষ্টায় এ জায়গায় পৌঁছানো সম্ভব হয়েছে।
আপনার বড় বোনের কথা শুনেছি। তাঁর অবদান কতটুকু?
হ্যাঁ, আমার দুজন বড় বোন আছেন। একজন ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি থেকে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়াশোনা শেষ করেছেন। অন্যজন আইইউটির ছাত্রী ছিলেন। তিনি আইইউটির ১৭ তম ব্যাচের বিজনেস টেকনোলজি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ছাত্রী ছিলেন। তিনি শুরু থেকেই আমার সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণার একজন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই তিনি আমাকে পড়াশোনার প্রতি সিরিয়াস থাকতে উৎসাহ দিয়েছেন। বিশেষ করে তিনি আমাকে বোঝাতেন নিয়মিত উপস্থিতি বজায় রাখা, কুইজ ও মিডটার্মের মতো মূল্যায়নগুলো গুরুত্ব সহকারে দেওয়া কতটা জরুরি। এগুলোই আসলে একটি ভালো ফলের ভিত্তি তৈরি করেছে। তার দেওয়া পরামর্শ ও দিকনির্দেশনা আমার পুরো চার বছরের যাত্রায় দারুণভাবে কাজে দিয়েছে।
স্বর্ণপদক পাওয়ার খবরে আপনার বাবা–মা কী বলেছিলেন?
তারা উভয়েই খুব খুশি হয়েছিলেন। তাঁদের মুখে আনন্দের হাসিটা দেখে মনে হয়েছিল, এই মুহূর্তের জন্যই হয়তো তারা এত বছর ধরে পরিশ্রম আর ত্যাগ স্বীকার করে এসেছেন। আমার বাবা একজন অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার। জীবনে তিনি সবসময় নিয়ম, অধ্যবসায় আর সততার মূল্য শিখিয়েছেন। আর মা একজন গৃহিণী। মা আমাদের পরিবারের মূল শক্তি। ছোটবেলা থেকেই তিনি আমাদেরকে শিক্ষার প্রতি গুরুত্বারূপ করেছেন। সবসময় পাশে থেকেছেন, কখনো ক্লান্ত হননি।
এমন অসামান্য ফলাফল অর্জনে নিজেকে কীভাবে প্রস্তুত করেছিলেন, পড়ালেখার ধরন কেমন ছিল?
প্রথম থেকেই আমি জানতাম সিএসই এমন একটি বিষয়, যেখানে ধারাবাহিক পরিশ্রম ও মনোযোগ ছাড়া ভালো ফল করা সম্ভব নয়। যেহেতু ভর্তি হওয়ার আগে আমার কোডিং নিয়ে তেমন কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা ছিল না, তাই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর থেকেই আমি নিজের ঘাটতি পূরণ করার চেষ্টা শুরু করেছি। ইউটিউবে বিভিন্ন টিউটোরিয়াল দেখে প্রোগ্রামিংয়ের বেসিকগুলো ভালোভাবে আয়ত্ত্ব করে নিয়েছি। আর সেগুলোর ওপর ভিত্তি করে ধীরে ধীরে নিজের দক্ষতা বাড়িয়েছি।
আমার পড়ালেখার ধরনটা ছিল বেশ দলভিত্তিক। আমি সবসময় বন্ধুদের সঙ্গে গ্রুপ স্টাডি করতাম। এতে করে অনেক কঠিন বিষয় সহজে বোঝা যেত। আর কাউকে কোনো বিষয় বুঝিয়ে বলতে গিয়ে নিজের বোঝাটাও আরও মজবুত হতো। এই সহযোগিতামূলক পরিবেশটাই আসলে আমাকে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করেছে। এ ছাড়া আমি ক্লাসের উপস্থিতি, কুইজ ও মিডটার্ম পরীক্ষাগুলোতে বেশ গুরুত্ব দিয়েছি। কারণ এগুলোই মূলত চূড়ান্ত ফলে বড় ভূমিকা রাখে। সিনিয়র ভাইদের তৈরি করা নোটগুলোও অনেক সময় কাজে দিয়েছে, বিশেষ করে প্রস্তুতির শেষ মুহূর্তে। সবশেষে, প্রতিটি প্রজেক্টও আমি সমান গুরুত্ব দিয়ে করতাম। যেন শুধু নম্বরের জন্য নয়, শেখার জন্যও কাজটা সঠিকভাবে সম্পন্ন হয়।
সিজিপিএ–৪ এর মধ্যে ৪ পেয়ে আপনি এখন গ্র্যাজুয়েট। আপনি ওআইসি স্বর্ণপদক পেয়েছেন। অন্য শিক্ষার্থীরা কীভাবে প্রস্তুতি নিলে এমন ফল করতে পারতেন, তাদের প্রস্তুতির কোন কোন জায়গায় ঘাটতি ছিল বলে মনে হয়?
আসলে প্রত্যেকের পড়ার ধরনটা আলাদা হয়। এখানে যে ধরন একজনের জন্য সবচেয়ে কার্যকর, সেটা অন্য কারও জন্য নাও হতে পারে। তাই একেবারে নির্দিষ্টভাবে বলা কঠিন যে, কে কীভাবে পড়লে এমন ফল করতে পারতেন। তবুও আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, কয়েকটা জিনিস নিয়মিতভাবে মেনে চললে ভালো ফলাফল পাওয়া সম্ভব। সবচেয়ে আগে, ক্লাসের উপস্থিতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তারপর কুইজ আর মিডটার্ম। অনেকে এগুলোকে হালকাভাবে নেন। আমি মনে করি ফলাফলে এগুলোই আসলে মূল ভিত্তি তৈরি করে দেয়। যদি আগে থেকেই কুইজ ও মিডটার্মে ভালো করা যায়, তাহলে ফাইনাল পরীক্ষার সময় চাপ অনেকটাই কমে যায়। আমার গ্রুপ স্টাডির কথা তো আগেই বলেছি। গ্রুপ স্টাডি শেখার পরিবেশটাকে আরও আনন্দদায়ক করে তোলে। কেউ নির্দিষ্ট কোনো বিষয় না বুঝলে অন্য সেটা কেউ বুঝিয়ে দিতে পারছে। এতে পারস্পরিকভাবে সবারই উপকার হয়।
আপনার শৈশব, মাধ্যমিক–উচ্চ মাধ্যমিক ও পরিবার সম্পর্কে জানতে চাই।
আমাদের পারিবারিক শেকড় বরিশালে। তবে আমার শৈশবের একটা অংশ কেটেছে ফরিদপুরে। সেখানে আমি সানরাইজ স্কুলে পড়ালেখা করেছি। পরে পরিবারসহ ঢাকায় চলে আসি। উত্তরায় আসার পর আমি ক্লাস ৩–৫ শ্রেণি পর্যন্ত মাইলস্টোন স্কুল এন্ড কলেজে পড়েছি। এরপর ৬–৯ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছি রাজউক উত্তরা মডেল কলেজে। পরবর্তীতে আমি আবার মাইলস্টোন কলেজে ভর্তি হই এবং সেখান থেকে মাধ্যমিক সম্পন্ন করি। নটর ডেম কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক সম্পন্ন করেছি। এখানে আমার কলেজ জীবনের সুন্দর দুইটি বছর কেটেছে।
ছোটবেলায় আপনার কি হওয়ার স্বপ্ন ছিল?
ছোটবেলায় আকাশে প্লেন উড়তে দেখলেই মনে হতো, ‘ইশ! একদিন যদি আমিও এমন করে উড়তে পারতাম!’ তখন পাইলট হওয়ার স্বপ্নটাই ছিল সবচেয়ে বড়। তবে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে, আর বাস্তবতা একটু একটু করে বুঝতে শুরু করার পর সেই স্বপ্নটা বদলে গেছে। এটা অনেকের ক্ষেত্রেই হয়। এখন আমার স্বপ্ন একটু অন্যরকম।
পরবর্তী লক্ষ্য কী, কেমন জব অফার পাচ্ছেন?
এখন আমার মূল লক্ষ্য হলো আইইউটির কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করা। এজন্যই আমি নিজেকে ধীরে ধীরে প্রস্তুত করছি। যাতে ক্লাসে পড়ানো এবং গবেষণার কাজ–দুটোই ভালোভাবে করতে পারি। একইসঙ্গে গবেষণার মাধ্যমে নতুন কিছু আবিষ্কার করতে চাই। শেখা আর শেখানোর এই প্রক্রিয়াটার ভেতরেই আমি এখন সবচেয়ে বেশি আনন্দ খুঁজে পাই। দূরদৃষ্টি হিসেবে আমার আরও বড় লক্ষ্য হলো–ভবিষ্যতে বিদেশে গিয়ে উচ্চশিক্ষা, বিশেষ করে পিএইচডি করা। আমি গবেষণার মাধ্যমে নতুন নতুন বিষয় জানা ও শেখার সুযোগকে আরও প্রসারিত করতে চাই। আমার বিশ্বাস, এই প্রচেষ্টা আমাদের শিক্ষার্থীদের কাজে দেবে।
আইইউটিতে ফ্যাকাল্টি হিসেবে যোগদানে আগ্রহীদের কোন কোন বিষয়গুলো বেশি বিবেচনায় নেওয়া হয়?
আমার জানা মতে, নির্দিষ্ট কিছু বিষয়কে বিশেষভাবে বিবেচনা করা হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো: একাডেমিক রেজাল্ট, অর্থাৎ শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং পূর্ববর্তী ফলাফল। এছাড়া গবেষণার অভিজ্ঞতা, প্রকাশনা ও সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোতেও গুরুত্ব দেওয়া হয়।
দেশের বাস্তবতায় সিএসই গ্র্যাজুয়েটদের চাকরির সুযোগ কেমন?
বর্তমান বাজারে সিএসই গ্র্যাজুয়েটদের জন্য চাকরি সুযোগ খুবই প্রশস্ত। তবে এতে প্রতিযোগিতা রয়েছে। আমি বলবো, প্রয়োজনীয় দক্ষতা থাকলে চাকরি পাওয়া কঠিন কিছু নয়। আমার বন্ধুবান্ধবের মধ্যে অনেকেই আছেন, যারা তাদের গ্র্যাজুয়েশন শেষ হওয়ার আগেই চাকরি পেয়ে গেছেন। এটা আইইউটির ঐতিহ্য। আইইউটি শিক্ষার্থীদের গ্র্যাজুয়েশন শেষ করার আগেই চাকরির অফার পাওয়ার বেশ নজির আছে। এটা ভালো একাডেমিক পরিবেশ, যুগোপযোগী সিলেবাস এবং শিক্ষার্থীদের প্রচেষ্টার কারণে সম্ভব হয়েছে। বিভিন্ন কোম্পানি এন্ট্রি লেভেলের চাকরির জন্যেও আইইউটি গ্র্যাজুয়েটদের ভালো বেতন অফার করে থাকে।
উচ্চশিক্ষার জন্য আপনি আইইউটিকে কেন বেছে নিয়েছিলেন?
কলেজ লাইফ শুরুর আগে আমার স্বপ্ন ছিল বুয়েটে পড়ার। তবে তখনো নির্দিষ্ট করে ভাবিনি কোন বিষয়ে পড়বো। এইচএসসির পর আইইউটিতে পরীক্ষা দিয়ে সিএসই বিভাগে চান্স পাই। এরপর বুয়েটের ভর্তি পরীক্ষায়ও সাফল্য আসে। সেখানে পেয়েছিলাম ইইই বিভাগ। কিন্তু ততদিন বুয়েটের ক্লাস শুরু করতে করতে আইইউটিতে আমার প্রথম সেমিস্টারের বেশিরভাগ সময় পার যায়। ওই সময়টায় আমি উপলব্ধি করি, কম্পিউটার সায়েন্সের প্রতি আমার গভীর ভালোবাসা তৈরি হয়েছে। আমি এতে ভালোও করছি। আইইউটির সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, এখানে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মতো দীর্ঘ সেশনজট নেই। তাই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ডিগ্রি সম্পন্ন করা যায়। একাডেমিক জীবনটা অনেক বেশি সুসংগঠিত থাকে। সবমিলিয়ে আমি বুঝতে পারি, একটি বিষয়ের প্রতি ভালোবাসা এবং একটি অনুকূল একাডেমিক পরিবেশই সর্বিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। তাই বুয়েটের ইইই–এর পরিবর্তে আইইউটির সিএসইতে স্থির হয়ে যাই।
স্নাতকের পুরো জার্নিতে পড়ালেখার পাশাপাশি আপনি আর কি কি করেছিলেন?
পড়ালেখার পাশাপাশি আমি বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরে বেড়িয়েছি। নতুন নতুন জায়গা ঘুরে দেখেছি। মাঝে মাঝে ফুটবল, ক্যারমের মতো খেলা খেলেছি। এছাড়া কম্পিউটারে গেমও খেলেছি। পড়ালেখার পাশাপাশি কিছু সময় টিউশনি করেছি। যা নিজের ধারণাকে পরিষ্কার করতে এবং আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হতে সহায়ক হয়েছে।
সিএসই নিয়ে পড়তে আসা নবীন শিক্ষার্থীদের প্রতি আপনার কি বার্তা থাকবে?
নিজেকে শুধুমাত্র একাডেমিক সিলেবাসের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা যাবে না। প্রথম থেকেই নিজের মধ্যে বাড়তি শেখার আগ্রহ জাগিয়ে তুলতে হবে। কোড ফোর্স, হ্যাকার র্যাঙ্ক–এর মতো প্ল্যাটফর্মের কনটেস্টে নিয়মিত অংশ নিতে হবে। এ ছাড়া কম্পেটিটিভ প্রোগ্রামিংয়ে মনোযোগ দিলে সমস্যা সমাধানের দক্ষতা যেমন বৃদ্ধি পাবে, তেমনি যুক্তির গভীরতাও শাণিত হবে। ইউটিউবেও পছন্দের বিষয়গুলোর অসংখ্য টিউটোরিয়াল রয়েছে। সেগুলো কাজে লাগিয়ে শেখার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। মনে রাখতে হবে, চাকরির ক্ষেত্রে যে স্কিলগুলো সবচেয়ে বেশি কাজে লাগে, তা অনেক সময় একাডেমিক পড়ালেখার চেয়ে কিছুটা আলাদা। একাডেমিক প্রোজেক্টগুলোও কখনই হালকাভাবে নেওয়া যাবে না। এগুলো যতটা সম্ভব ভালোভাবে করতে হবে। কারণ ভবিষ্যতে সেগুলোই সিভিতে স্থান করবে এবং দক্ষতার প্রমাণ হিসেবে কাজ করবে।
আপনার গুরুত্বপূর্ণ সময়ের জন্য ধন্যবাদ।
আজকের পত্রিকার জন্যেও শুভকামনা রইলো।
গত ২৭ অক্টোবর আইইউটির ৩৭ তম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়েছে। আপনি এতে অংশ নিয়েছেন। আপনার বিভাগ ও ফলাফল সম্পর্কে বলুন।
কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগ থেকে আমি গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করেছি। প্রথম সেমিস্টারে একটি কোর্সে এ+ পাইনি। তাই সেই সেমিস্টারে আমার জিপিএ ছিল ৩.৯৭। তবে এরপরের সাতটি সেমিস্টারেই আমি ধারাবাহিকভাবে ৪.০০ পেয়েছি।
দ্বিতীয় সেমিস্টারে ৪ পাওয়ার পর আমার সিজিপিএ দাঁড়ায় ৩.৯৮। তৃতীয় সেমিস্টারের পর হয় ৩.৯৯। চতুর্থ, পঞ্চম ও ষষ্ঠ সেমিস্টারে ৪ ধরে রাখতে পারলেও সিজিপিএ তখনও ৩.৯৯ ছিল। শেষ পর্যন্ত সপ্তম সেমিস্টারে ৪ পাওয়ার পর সিজিপিএ অবশেষে ৪–এ পৌঁছায়। তখন সত্যিই আমি খুব খুশি হয়েছিলাম। এরপর শেষ বা অষ্টম সেমিস্টারেও একই পারফরম্যান্স ধরে রাখার চেষ্টা করি। আলহামদুলিল্লাহ সেটাও সম্ভব হয়। ফলে আমি সিজিপিএ ৪ নিয়ে স্নাতক সম্পন্ন করতে পেরেছি।
এমন সাফল্যের কৃতিত্ব কাকে দিতে চান?
সবার আগে আমি আমার পরিবারের প্রতি কৃতজ্ঞ জানাচ্ছি। তারা সবসময় আমার পাশে থেকেছে। প্রতিটি মুহূর্তে আমাকে সাহস আর অনুপ্রেরণা দিয়েছে। এরপর আমার শিক্ষকদের কথা, যাদের দিকনির্দেশনা ও আন্তরিক সহযোগিতা আমাকে প্রতিটি ধাপে এগিয়ে যেতে সাহায্য করেছে। আর আমার বন্ধুদের কথাও বলতে হবে। এই চার বছরের যাত্রায় আমার বন্ধুরা সবসময় পাশে থেকেছে–কখনো সহায়তায়, কখনো বা মোটিভেশনে। সবার সম্মিলিত সহযোগিতা আর আমার প্রচেষ্টায় এ জায়গায় পৌঁছানো সম্ভব হয়েছে।
আপনার বড় বোনের কথা শুনেছি। তাঁর অবদান কতটুকু?
হ্যাঁ, আমার দুজন বড় বোন আছেন। একজন ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি থেকে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়াশোনা শেষ করেছেন। অন্যজন আইইউটির ছাত্রী ছিলেন। তিনি আইইউটির ১৭ তম ব্যাচের বিজনেস টেকনোলজি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ছাত্রী ছিলেন। তিনি শুরু থেকেই আমার সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণার একজন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই তিনি আমাকে পড়াশোনার প্রতি সিরিয়াস থাকতে উৎসাহ দিয়েছেন। বিশেষ করে তিনি আমাকে বোঝাতেন নিয়মিত উপস্থিতি বজায় রাখা, কুইজ ও মিডটার্মের মতো মূল্যায়নগুলো গুরুত্ব সহকারে দেওয়া কতটা জরুরি। এগুলোই আসলে একটি ভালো ফলের ভিত্তি তৈরি করেছে। তার দেওয়া পরামর্শ ও দিকনির্দেশনা আমার পুরো চার বছরের যাত্রায় দারুণভাবে কাজে দিয়েছে।
স্বর্ণপদক পাওয়ার খবরে আপনার বাবা–মা কী বলেছিলেন?
তারা উভয়েই খুব খুশি হয়েছিলেন। তাঁদের মুখে আনন্দের হাসিটা দেখে মনে হয়েছিল, এই মুহূর্তের জন্যই হয়তো তারা এত বছর ধরে পরিশ্রম আর ত্যাগ স্বীকার করে এসেছেন। আমার বাবা একজন অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার। জীবনে তিনি সবসময় নিয়ম, অধ্যবসায় আর সততার মূল্য শিখিয়েছেন। আর মা একজন গৃহিণী। মা আমাদের পরিবারের মূল শক্তি। ছোটবেলা থেকেই তিনি আমাদেরকে শিক্ষার প্রতি গুরুত্বারূপ করেছেন। সবসময় পাশে থেকেছেন, কখনো ক্লান্ত হননি।
এমন অসামান্য ফলাফল অর্জনে নিজেকে কীভাবে প্রস্তুত করেছিলেন, পড়ালেখার ধরন কেমন ছিল?
প্রথম থেকেই আমি জানতাম সিএসই এমন একটি বিষয়, যেখানে ধারাবাহিক পরিশ্রম ও মনোযোগ ছাড়া ভালো ফল করা সম্ভব নয়। যেহেতু ভর্তি হওয়ার আগে আমার কোডিং নিয়ে তেমন কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা ছিল না, তাই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর থেকেই আমি নিজের ঘাটতি পূরণ করার চেষ্টা শুরু করেছি। ইউটিউবে বিভিন্ন টিউটোরিয়াল দেখে প্রোগ্রামিংয়ের বেসিকগুলো ভালোভাবে আয়ত্ত্ব করে নিয়েছি। আর সেগুলোর ওপর ভিত্তি করে ধীরে ধীরে নিজের দক্ষতা বাড়িয়েছি।
আমার পড়ালেখার ধরনটা ছিল বেশ দলভিত্তিক। আমি সবসময় বন্ধুদের সঙ্গে গ্রুপ স্টাডি করতাম। এতে করে অনেক কঠিন বিষয় সহজে বোঝা যেত। আর কাউকে কোনো বিষয় বুঝিয়ে বলতে গিয়ে নিজের বোঝাটাও আরও মজবুত হতো। এই সহযোগিতামূলক পরিবেশটাই আসলে আমাকে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করেছে। এ ছাড়া আমি ক্লাসের উপস্থিতি, কুইজ ও মিডটার্ম পরীক্ষাগুলোতে বেশ গুরুত্ব দিয়েছি। কারণ এগুলোই মূলত চূড়ান্ত ফলে বড় ভূমিকা রাখে। সিনিয়র ভাইদের তৈরি করা নোটগুলোও অনেক সময় কাজে দিয়েছে, বিশেষ করে প্রস্তুতির শেষ মুহূর্তে। সবশেষে, প্রতিটি প্রজেক্টও আমি সমান গুরুত্ব দিয়ে করতাম। যেন শুধু নম্বরের জন্য নয়, শেখার জন্যও কাজটা সঠিকভাবে সম্পন্ন হয়।
সিজিপিএ–৪ এর মধ্যে ৪ পেয়ে আপনি এখন গ্র্যাজুয়েট। আপনি ওআইসি স্বর্ণপদক পেয়েছেন। অন্য শিক্ষার্থীরা কীভাবে প্রস্তুতি নিলে এমন ফল করতে পারতেন, তাদের প্রস্তুতির কোন কোন জায়গায় ঘাটতি ছিল বলে মনে হয়?
আসলে প্রত্যেকের পড়ার ধরনটা আলাদা হয়। এখানে যে ধরন একজনের জন্য সবচেয়ে কার্যকর, সেটা অন্য কারও জন্য নাও হতে পারে। তাই একেবারে নির্দিষ্টভাবে বলা কঠিন যে, কে কীভাবে পড়লে এমন ফল করতে পারতেন। তবুও আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, কয়েকটা জিনিস নিয়মিতভাবে মেনে চললে ভালো ফলাফল পাওয়া সম্ভব। সবচেয়ে আগে, ক্লাসের উপস্থিতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তারপর কুইজ আর মিডটার্ম। অনেকে এগুলোকে হালকাভাবে নেন। আমি মনে করি ফলাফলে এগুলোই আসলে মূল ভিত্তি তৈরি করে দেয়। যদি আগে থেকেই কুইজ ও মিডটার্মে ভালো করা যায়, তাহলে ফাইনাল পরীক্ষার সময় চাপ অনেকটাই কমে যায়। আমার গ্রুপ স্টাডির কথা তো আগেই বলেছি। গ্রুপ স্টাডি শেখার পরিবেশটাকে আরও আনন্দদায়ক করে তোলে। কেউ নির্দিষ্ট কোনো বিষয় না বুঝলে অন্য সেটা কেউ বুঝিয়ে দিতে পারছে। এতে পারস্পরিকভাবে সবারই উপকার হয়।
আপনার শৈশব, মাধ্যমিক–উচ্চ মাধ্যমিক ও পরিবার সম্পর্কে জানতে চাই।
আমাদের পারিবারিক শেকড় বরিশালে। তবে আমার শৈশবের একটা অংশ কেটেছে ফরিদপুরে। সেখানে আমি সানরাইজ স্কুলে পড়ালেখা করেছি। পরে পরিবারসহ ঢাকায় চলে আসি। উত্তরায় আসার পর আমি ক্লাস ৩–৫ শ্রেণি পর্যন্ত মাইলস্টোন স্কুল এন্ড কলেজে পড়েছি। এরপর ৬–৯ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছি রাজউক উত্তরা মডেল কলেজে। পরবর্তীতে আমি আবার মাইলস্টোন কলেজে ভর্তি হই এবং সেখান থেকে মাধ্যমিক সম্পন্ন করি। নটর ডেম কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক সম্পন্ন করেছি। এখানে আমার কলেজ জীবনের সুন্দর দুইটি বছর কেটেছে।
ছোটবেলায় আপনার কি হওয়ার স্বপ্ন ছিল?
ছোটবেলায় আকাশে প্লেন উড়তে দেখলেই মনে হতো, ‘ইশ! একদিন যদি আমিও এমন করে উড়তে পারতাম!’ তখন পাইলট হওয়ার স্বপ্নটাই ছিল সবচেয়ে বড়। তবে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে, আর বাস্তবতা একটু একটু করে বুঝতে শুরু করার পর সেই স্বপ্নটা বদলে গেছে। এটা অনেকের ক্ষেত্রেই হয়। এখন আমার স্বপ্ন একটু অন্যরকম।
পরবর্তী লক্ষ্য কী, কেমন জব অফার পাচ্ছেন?
এখন আমার মূল লক্ষ্য হলো আইইউটির কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করা। এজন্যই আমি নিজেকে ধীরে ধীরে প্রস্তুত করছি। যাতে ক্লাসে পড়ানো এবং গবেষণার কাজ–দুটোই ভালোভাবে করতে পারি। একইসঙ্গে গবেষণার মাধ্যমে নতুন কিছু আবিষ্কার করতে চাই। শেখা আর শেখানোর এই প্রক্রিয়াটার ভেতরেই আমি এখন সবচেয়ে বেশি আনন্দ খুঁজে পাই। দূরদৃষ্টি হিসেবে আমার আরও বড় লক্ষ্য হলো–ভবিষ্যতে বিদেশে গিয়ে উচ্চশিক্ষা, বিশেষ করে পিএইচডি করা। আমি গবেষণার মাধ্যমে নতুন নতুন বিষয় জানা ও শেখার সুযোগকে আরও প্রসারিত করতে চাই। আমার বিশ্বাস, এই প্রচেষ্টা আমাদের শিক্ষার্থীদের কাজে দেবে।
আইইউটিতে ফ্যাকাল্টি হিসেবে যোগদানে আগ্রহীদের কোন কোন বিষয়গুলো বেশি বিবেচনায় নেওয়া হয়?
আমার জানা মতে, নির্দিষ্ট কিছু বিষয়কে বিশেষভাবে বিবেচনা করা হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো: একাডেমিক রেজাল্ট, অর্থাৎ শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং পূর্ববর্তী ফলাফল। এছাড়া গবেষণার অভিজ্ঞতা, প্রকাশনা ও সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোতেও গুরুত্ব দেওয়া হয়।
দেশের বাস্তবতায় সিএসই গ্র্যাজুয়েটদের চাকরির সুযোগ কেমন?
বর্তমান বাজারে সিএসই গ্র্যাজুয়েটদের জন্য চাকরি সুযোগ খুবই প্রশস্ত। তবে এতে প্রতিযোগিতা রয়েছে। আমি বলবো, প্রয়োজনীয় দক্ষতা থাকলে চাকরি পাওয়া কঠিন কিছু নয়। আমার বন্ধুবান্ধবের মধ্যে অনেকেই আছেন, যারা তাদের গ্র্যাজুয়েশন শেষ হওয়ার আগেই চাকরি পেয়ে গেছেন। এটা আইইউটির ঐতিহ্য। আইইউটি শিক্ষার্থীদের গ্র্যাজুয়েশন শেষ করার আগেই চাকরির অফার পাওয়ার বেশ নজির আছে। এটা ভালো একাডেমিক পরিবেশ, যুগোপযোগী সিলেবাস এবং শিক্ষার্থীদের প্রচেষ্টার কারণে সম্ভব হয়েছে। বিভিন্ন কোম্পানি এন্ট্রি লেভেলের চাকরির জন্যেও আইইউটি গ্র্যাজুয়েটদের ভালো বেতন অফার করে থাকে।
উচ্চশিক্ষার জন্য আপনি আইইউটিকে কেন বেছে নিয়েছিলেন?
কলেজ লাইফ শুরুর আগে আমার স্বপ্ন ছিল বুয়েটে পড়ার। তবে তখনো নির্দিষ্ট করে ভাবিনি কোন বিষয়ে পড়বো। এইচএসসির পর আইইউটিতে পরীক্ষা দিয়ে সিএসই বিভাগে চান্স পাই। এরপর বুয়েটের ভর্তি পরীক্ষায়ও সাফল্য আসে। সেখানে পেয়েছিলাম ইইই বিভাগ। কিন্তু ততদিন বুয়েটের ক্লাস শুরু করতে করতে আইইউটিতে আমার প্রথম সেমিস্টারের বেশিরভাগ সময় পার যায়। ওই সময়টায় আমি উপলব্ধি করি, কম্পিউটার সায়েন্সের প্রতি আমার গভীর ভালোবাসা তৈরি হয়েছে। আমি এতে ভালোও করছি। আইইউটির সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, এখানে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মতো দীর্ঘ সেশনজট নেই। তাই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ডিগ্রি সম্পন্ন করা যায়। একাডেমিক জীবনটা অনেক বেশি সুসংগঠিত থাকে। সবমিলিয়ে আমি বুঝতে পারি, একটি বিষয়ের প্রতি ভালোবাসা এবং একটি অনুকূল একাডেমিক পরিবেশই সর্বিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। তাই বুয়েটের ইইই–এর পরিবর্তে আইইউটির সিএসইতে স্থির হয়ে যাই।
স্নাতকের পুরো জার্নিতে পড়ালেখার পাশাপাশি আপনি আর কি কি করেছিলেন?
পড়ালেখার পাশাপাশি আমি বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরে বেড়িয়েছি। নতুন নতুন জায়গা ঘুরে দেখেছি। মাঝে মাঝে ফুটবল, ক্যারমের মতো খেলা খেলেছি। এছাড়া কম্পিউটারে গেমও খেলেছি। পড়ালেখার পাশাপাশি কিছু সময় টিউশনি করেছি। যা নিজের ধারণাকে পরিষ্কার করতে এবং আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হতে সহায়ক হয়েছে।
সিএসই নিয়ে পড়তে আসা নবীন শিক্ষার্থীদের প্রতি আপনার কি বার্তা থাকবে?
নিজেকে শুধুমাত্র একাডেমিক সিলেবাসের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা যাবে না। প্রথম থেকেই নিজের মধ্যে বাড়তি শেখার আগ্রহ জাগিয়ে তুলতে হবে। কোড ফোর্স, হ্যাকার র্যাঙ্ক–এর মতো প্ল্যাটফর্মের কনটেস্টে নিয়মিত অংশ নিতে হবে। এ ছাড়া কম্পেটিটিভ প্রোগ্রামিংয়ে মনোযোগ দিলে সমস্যা সমাধানের দক্ষতা যেমন বৃদ্ধি পাবে, তেমনি যুক্তির গভীরতাও শাণিত হবে। ইউটিউবেও পছন্দের বিষয়গুলোর অসংখ্য টিউটোরিয়াল রয়েছে। সেগুলো কাজে লাগিয়ে শেখার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। মনে রাখতে হবে, চাকরির ক্ষেত্রে যে স্কিলগুলো সবচেয়ে বেশি কাজে লাগে, তা অনেক সময় একাডেমিক পড়ালেখার চেয়ে কিছুটা আলাদা। একাডেমিক প্রোজেক্টগুলোও কখনই হালকাভাবে নেওয়া যাবে না। এগুলো যতটা সম্ভব ভালোভাবে করতে হবে। কারণ ভবিষ্যতে সেগুলোই সিভিতে স্থান করবে এবং দক্ষতার প্রমাণ হিসেবে কাজ করবে।
আপনার গুরুত্বপূর্ণ সময়ের জন্য ধন্যবাদ।
আজকের পত্রিকার জন্যেও শুভকামনা রইলো।

তখন আমি স্কুলে পড়ি। চাচ্চুর বিয়ে খেতে গিয়ে তাঁর এক বন্ধুর সঙ্গে আমার দেখা হয়। তিনি আমার চাচ্চুকে অনুরোধ করেন, আমাকে যেন মডেলিংয়ে দেওয়া হয়। ওই সময় আমার বাবা-মা মারা গেছেন। খুব হতাশায় ছিলাম আমি। এর আগে আমার দিন কাটত খেলাধুলা, স্কুল ও আনন্দের মধ্যে দিয়ে। কিন্তু বাবা-মা মারা যাওয়ার পর আমার জীবন পরিবর্তন
২৮ নভেম্বর ২০২১
নাট্যদল বিবেকানন্দ থিয়েটারের ২৫তম প্রযোজনা ‘ভাসানে উজান’। গত নভেম্বরে মঞ্চে এসেছে নাটকটি। ২৯ ডিসেম্বর রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমির স্টুডিও থিয়েটার হলে সন্ধ্যা ৭টায় মঞ্চস্থ হবে নাটকটির চতুর্থ প্রদর্শনী। অপূর্ব কুমার কুণ্ডুর নাট্যরূপ এবং শুভাশীষ দত্ত তন্ময়ের নির্দেশনায় একক অভিনয় করেছেন মো. এরশাদ হাসান।
১৪ মিনিট আগে
টেলিভিশন চ্যানেল বাংলা ভিশনের জনপ্রিয় সংবাদ উপস্থাপক মামুন আব্দুল্লাহর সাবলীল উপস্থাপনার পেছনে রয়েছে দীর্ঘ অনুশীলন, দক্ষতা ও অবিচল আত্মবিশ্বাস। তাঁর সঙ্গে কথোপকথনে উঠে এসেছে সংবাদ উপস্থাপনার কৌশল, লাইভ সম্প্রচারের চাপ সামলানোর বাস্তব অভিজ্ঞতা এবং এ পেশায় আগ্রহীদের জন্য মূল্যবান পরামর্শ।
১৩ দিন আগে
দীর্ঘদিন আটকে থাকার পর রায়হান রাফী পরিচালিত ‘অমীমাংসিত’ ওয়েব ফিল্মের মুক্তির ঘোষণা এসেছে। ৪ ডিসেম্বর ওটিটি প্ল্যাটফর্ম আইস্ক্রিনে মুক্তি পাবে সিনেমাটি। এতে অভিনয় করেছেন ইমতিয়াজ বর্ষণ। এ ছাড়া আসছে ডিসেম্বরে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাবে তাঁর অভিনীত ‘এখানে রাজনৈতিক আলাপ জরুরি’।
০১ ডিসেম্বর ২০২৫