Ajker Patrika

নিষেধাজ্ঞা ভেঙে আল-আকসায় ঢুকে পড়ল ইসরায়েলিরা, ফিলিস্তিনিদের মারধর

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৭ মে ২০২৫, ১৩: ৩১
জেরুজালেম মার্চে ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী ও কট্টর ডানপন্থী নেতা ইতামার বেন-গভির। ছবি: এএফপি
জেরুজালেম মার্চে ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী ও কট্টর ডানপন্থী নেতা ইতামার বেন-গভির। ছবি: এএফপি

আবারও নিষেধাজ্ঞা ভেঙে আল-আকসা মসজিদ কম্পাউন্ডে প্রবেশ করল ইসরায়েলিরা। গতকাল সোমবার এ ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘জেরুজালেম দিবস’-এর মিছিল চলাকালীন উগ্রবাদী ইহুদিরা এ কাণ্ড করেছে।

উল্লেখ্য, ১৯৬৭ সালে ছয় দিনের যুদ্ধের পর জেরুজালেমের নিয়ন্ত্রণ ইসরায়েলের হাতে চলে যাওয়ার দিনকে ‘জেরুজালেম দিবস’ হিসেবে উদ্‌যাপন করে কট্টরপন্থী ইহুদিরা।

স্থানীয় গণমাধ্যমগুলোর তথ্যমতে, আল-আকসা মসজিদ কম্পাউন্ডের ভেতরে প্রবেশ করে কমপক্ষে ২ হাজার ইসরায়েলি। এর মধ্যে ছিলেন ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী কট্টর ডানপন্থী নেতা ইতামার বেন-গভিরও। ইসলাম ধর্মে তৃতীয় পবিত্র স্থান হিসেবে বিবেচিত এই মসজিদে উপস্থিত হয়ে সামাজিক মাধ্যম এক্সে একটি ভিডিও পোস্ট করেন তিনি। ওই ভিডিওতে তাঁর সঙ্গে ইসরায়েলি পার্লামেন্টের সদস্য ইৎজাক ক্রুজার এবং নেগেভ ও গালিলি অঞ্চলের মন্ত্রী ইৎজাক ভাসেরলফকেও দেখা যায়। ভিডিওতে বেন-গভির বলেন, ‘প্রার্থনা করেছি যেন এই যুদ্ধে আমরা জয়লাভ করতে পারি। পাশাপাশি হামাসের হাতে জিম্মি সবাইকে ইসরায়েলি ভূখণ্ডে ফেরত আনা এবং শিন বেতের নতুন প্রধানের সফলতা চেয়েছি।’

আল-জাজিরার প্রতিবেদন অনুযায়ী, পুরাতন জেরুজালেমের মুসলিম কোয়ার্টারের পাশ দিয়ে ‘জেরুজালেম মার্চ’ নামে শোভাযাত্রা করে ইসরায়েলিরা। এ সময় তারা ‘আরব নিপাত যাক’, ‘তোদের বসতি জ্বলুক’—এ ধরনের স্লোগান দেয়। শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণকারীদের বেশির ভাগই জেরুজালেম ও পশ্চিম তীরে বসবাসকারী দখলদার ইসরায়েলি। আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে তারা ওই অঞ্চলের অবৈধ বাসিন্দা হিসেবে চিহ্নিত।

এর আগেও পুলিশি নিরাপত্তায় আল-আকসা কম্পাউন্ডের ভেতরে প্রবেশ করেছিলেন বেন-গভির। বেন-গভিরের এ ধরনের কর্মকাণ্ডকে উসকানিমূলক আখ্যা দিয়েছে বিভিন্ন মহল।

১৯৬৭ সালের যুদ্ধের পর ইসরায়েল পূর্ব জেরুজালেম দখল করলেও, আন্তর্জাতিক চাপের কারণে ইসরায়েল ঘোষণা দেয়, ইসলাম ধর্মীয় স্থানগুলোর প্রশাসন মুসলিম কর্তৃপক্ষের অধীনেই থাকবে, যদিও নিরাপত্তার দায়িত্ব থাকবে ইসরায়েলের হাতে। এই ব্যবস্থাকে বলা হয় ‘স্থিতাবস্থার নীতি’। এর আওতায়, আল-আকসা চত্বরে শুধু মুসলিমদেরই প্রার্থনার অনুমতি আছে, সেখানে অমুসলিমদের প্রবেশ সীমিত এবং প্রার্থনা নিষিদ্ধ। এই চত্বরের প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ রয়েছে জর্ডান সরকারের নিযুক্ত ইসলামিক ওয়াকফ কাউন্সিলের হাতে। ওয়াকফ কর্তৃপক্ষ এর তত্ত্বাবধান করে থাকে। এই মসজিদ চত্বরকে ধর্মীয় পবিত্রতা ও মুসলিম অধিকার রক্ষার অংশ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ১৯৯৪ সালে ইসরায়েল ও জর্ডানের মধ্যকার শান্তিচুক্তিতেও এই দায়িত্বের স্বীকৃতি দেওয়া হয়।

ইসরায়েলি সুপ্রিম কোর্টও আল-আকসা চত্বরে ইহুদিদের প্রার্থনায় নিষেধাজ্ঞার পক্ষে রায় দিয়েছে। এ ছাড়া, জাতিসংঘসহ অধিকাংশ আন্তর্জাতিক সংস্থা পূর্ব জেরুজালেমকে অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড হিসেবে বিবেচনা করে এবং সেখানে ইসরায়েলের হস্তক্ষেপকে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন হিসেবে বিবেচিত হয়।

গতকালের শোভাযাত্রা থেকে হামলা করা হয়েছে জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএর সদর দপ্তরেও। ইউএনআরডব্লিউএর পশ্চিম তীরের সমন্বয়ক রোলান্ড ফ্রেডরিক বলেন, ‘পুলিশের সামনেই কয়েক ডজন ইসরায়েলি বিক্ষোভকারী সদর দরজা টপকে ইউএনআরডব্লিউএ কম্পাউন্ডে প্রবেশ করে। বিক্ষোভকারীদের মধ্যে ছিলেন পার্লামেন্ট সদস্য ইউলিয়া মালিনভস্কি। ইউএনআরডব্লিউএর ওপর ইসরায়েলি নিষেধাজ্ঞা কার্যকরের মূল হোতা তিনিই।’

এ ছাড়া, স্থানীয় ফিলিস্তিনিদের ওপরও আক্রমণ চালিয়েছে দখলদার ইসরায়েলিরা। সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়েছে বেশ কয়েকটি ভিডিও—যেগুলোতে দেখা যায়, ইসরায়েলি পতাকা হাতে বেশ কয়েকজন কিশোর ফিলিস্তিনি দোকানিদের হয়রানি করছে। এ ঘটনায় দু’জনকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি।

ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ দাবি করছে, অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে পুরো এলাকায় মোতায়েন ছিল অতিরিক্ত কয়েক হাজার সশস্ত্র পুলিশ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

যুক্তরাষ্ট্র–চীনও মোদিকে ভয় পায়, বাংলাদেশ নিয়ে চুপ থাকবেন না তিনি: বিজেপি নেতার হুঁশিয়ারি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
বিজেপি নেতা সুনীল শর্মা বলেছেন—বাংলাদেশ ইস্যুতে মোদি চুপ করে থাকবেন না বলেই মনে করেন তিনি। ছবি: সংগৃহীত
বিজেপি নেতা সুনীল শর্মা বলেছেন—বাংলাদেশ ইস্যুতে মোদি চুপ করে থাকবেন না বলেই মনে করেন তিনি। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানের ইস্যুতে চুপ থাকবেন না ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এমনকি তাঁকে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশও ভয় পায়। এমনটাই হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ভারতের এক হিন্দু নেতা। জম্মু-কাশ্মীরের কিশতওয়ারে হিন্দু সংগঠনগুলোর ডাকা এক প্রতিবাদ কর্মসূচিতে এই মন্তব্য করেন বিজেপি বিধায়ক ও জম্মু-কাশ্মীর বিধানসভার বিরোধীদলীয় নেতা সুনীল শর্মা।

সনাতন ধর্ম সভার সভাপতি মহন্ত রাম শরণ দাস আচার্যের নেতৃত্বে আয়োজিত এই প্রতিবাদ মিছিলে অংশ নেন বিজেপি নেতারা। বাংলাদেশে এক হিন্দু শ্রমিককে হত্যা ও সহিংসতার প্রতিবাদে এই বিক্ষোভের আয়োজন করা হয়। মিছিলে সুনীল শর্মা বলেন, বাংলাদেশে যা ঘটছে তা ভারতকে উসকানি দেওয়ার এবং দেশটিকে যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার জন্য বেশ কয়েকটি রাষ্ট্রের একটি ষড়যন্ত্র।

কিশতওয়ার শহরের প্রতিবাদ সমাবেশে ভাষণ দেওয়ার সময় শর্মা বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ও চীন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ভয় পায়, যিনি বিশ্বজুড়ে বিশেষ করে বাংলাদেশে হিন্দুদের আশা-ভরসার প্রতীক। ২০৪৭ সালের মধ্যে ভারত যেহেতু সামরিক ও অর্থনৈতিক পরাশক্তিতে পরিণত হওয়ার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, তাই ভারতকে দুর্বল করার জন্য একদল দেশের ষড়যন্ত্র চলছে।’

পরে বিক্ষোভকারীদের একটি দল ডেপুটি কমিশনারের কাছে স্মারকলিপি জমা দিয়ে বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে। এ ছাড়া তারা ভারতের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রীর কাছেও স্মারকলিপি দেবেন, যাতে কেন্দ্র বাংলাদেশে হিন্দু রক্ষা এবং তাদের সম্পত্তি ও উপাসনালয় সুরক্ষায় হস্তক্ষেপ করে। বিক্ষোভকারীরা বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস এবং মুসলিমদের বিরুদ্ধে স্লোগান দেন। সনাতন ধর্ম সভার ডাকা বন্ধের কারণে বেশ কিছু দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল।

শর্মা বলেন, বাংলাদেশে হত্যার শিকার ‘দিপুর একমাত্র অপরাধ ছিল, সে একজন হিন্দু। আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলোতে হিন্দু সংখ্যালঘুদের লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে এবং আমরা এখানেও এই চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছি।’ তিনি আরও যোগ করেন, ‘দুই কোটি বাংলাদেশি অনুপ্রবেশ করেছে। এ ছাড়া বার্মা (মিয়ানমার) ও পাকিস্তান থেকেও অনুপ্রবেশকারীরা এখানে এসেছে এবং তাদের অনেকে পরিচয়পত্র পেয়ে ভোটার হয়ে গেছে।’

তিনি বলেন, হিন্দুরা তাদের ‘সংস্কৃতি ও সনাতন’ টিকিয়ে রাখার জন্য প্রতিদিন লড়াই করছে। শর্মা প্রশ্ন তোলেন, ‘আমরা মোগল ও ব্রিটিশ আক্রমণ থেকে বেঁচে ফিরেছি এবং সাম্প্রতিক এই চ্যালেঞ্জ থেকেও টিকে থাকব। কেউ আমাদের মুছে ফেলতে পারবে না...বাংলাদেশে যা ঘটছে তা নিয়ে জাতিসংঘ বা সংখ্যালঘু অধিকার সংস্থার মতো বিশ্ব সংস্থাগুলো কেন চুপ?’

বিজেপি এই নেতার দাবি, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশে যে নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল, তা পিছিয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যেই সেখানে বিক্ষোভের নেপথ্যে ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমি নিশ্চিত যে—মোদিজি চুপ করে থাকবেন না, তা সে পাকিস্তান হোক বা বাংলাদেশ।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

গ্রিনল্যান্ড ‘আমাদের পেতেই হবে’, ‘অভিযান’ চালাতে দূত পাঠাচ্ছেন ট্রাম্প

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: সংগৃহীত
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: সংগৃহীত

গ্রিনল্যান্ড নিয়ে ডেনমার্কের সাথে নতুন করে বিবাদে জড়িয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। বিশাল এই সুমেরু দ্বীপটি দখলের ইচ্ছা তিনি আগেও প্রকাশ করেছিলেন, আর এবার সেখানে একজন বিশেষ দূত নিয়োগ দিয়ে সেই বিতর্ককে আবার উসকে দিলেন।

লুইজিয়ানা অঙ্গরাজ্যের রিপাবলিকান গভর্নর জেফ ল্যান্ড্রিকে এই নতুন পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে বিবিসির এক প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ‘জাতীয় সুরক্ষার’ জন্য গ্রিনল্যান্ড প্রয়োজন এবং ‘এটি আমাদের পেতেই হবে।’ ডেনমার্কের অধীনে থাকা এই আধা-স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলটিতে ল্যান্ড্রি ‘অভিযানের নেতৃত্ব দেবেন’ বলে ট্রাম্প উল্লেখ করেন।

ওয়াশিংটনের এই পদক্ষেপে ক্ষুব্ধ কোপেনহেগেন জানিয়েছে, তারা ‘ব্যাখ্যার’ জন্য মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে তলব করবে। গ্রিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, দ্বীপটির ভবিষ্যৎ ‘নিজেদেরই নির্ধারণ করতে হবে’ এবং এর ‘আঞ্চলিক অখণ্ডতাকে অবশ্যই সম্মান জানাতে হবে।’

গভর্নর ল্যান্ড্রি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে জানান, গ্রিনল্যান্ডকে যুক্তরাষ্ট্রের অংশ করার এই ‘স্বেচ্ছাসেবী পদে’ সেবা করা তাঁর জন্য সম্মানের। গত জানুয়ারিতে হোয়াইট হাউসে ফেরার পর থেকেই ট্রাম্প গ্রিনল্যান্ডের ব্যাপারে তাঁর দীর্ঘদিনের আগ্রহ পুনরুজ্জীবিত করেছেন। দ্বীপটির কৌশলগত অবস্থান এবং খনিজ সম্পদের প্রাচুর্যের কথা তিনি বারবার বলে আসছেন।

দ্বীপটির নিয়ন্ত্রণ নিতে সামরিক শক্তি ব্যবহারের সম্ভাবনাও তিনি উড়িয়ে দেননি। ট্রাম্পের এমন অবস্থানে স্তম্ভিত ডেনমার্ক। ন্যাটো মিত্র হিসেবে ওয়াশিংটনের সাথে ডেনমার্কের দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। ট্রাম্প বলেন, ‘আমাদের এটি সমাধান করতে হবে। খনিজ সম্পদের জন্য নয়, জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে গ্রিনল্যান্ড আমাদের প্রয়োজন।’ সাগরের নিকটবর্তী অঞ্চলে চীন ও রাশিয়ার জাহাজগুলোকে সম্ভাব্য হুমকি হিসেবেও তিনি বিশেষভাবে উল্লেখ করেন।

প্রায় ৫৭ হাজার মানুষের বসতি গ্রিনল্যান্ডে ১৯৭৯ সাল থেকে ব্যাপক স্বায়ত্তশাসন ব্যবস্থা চালু রয়েছে। যদিও প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্রনীতি এখনো ডেনমার্কের হাতে। অধিকাংশ গ্রিনল্যান্ডবাসী ডেনমার্ক থেকে চূড়ান্ত স্বাধীনতার পক্ষে থাকলেও, জনমত জরিপ বলছে যে তারা যুক্তরাষ্ট্রের অংশ হওয়ার ঘোর বিরোধী।

ডেনমার্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লার্ক লোকে রাসমুসেন ল্যান্ড্রির নিয়োগকে ‘গভীর হতাশাজনক’ বলে বর্ণনা করেছেন এবং মার্কিন সার্বভৌমত্বকে সম্মান করার জন্য ওয়াশিংটনকে সতর্ক করেছেন। ড্যানিশ সম্প্রচার মাধ্যম টিভি২-কে তিনি বলেন, ‘যতক্ষণ পর্যন্ত ডেনমার্ক, ফ্যারো দ্বীপপুঞ্জ এবং গ্রিনল্যান্ড নিয়ে আমাদের এই রাজত্ব টিকে আছে, ততক্ষণ আমরা আঞ্চলিক অখণ্ডতা ক্ষুণ্ণকারী কোনো পদক্ষেপ মেনে নিতে পারি না।’

গ্রিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেন্স-ফ্রেডেরিক নিলসেন জানিয়েছেন, তাঁরা যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশের সাথে সহযোগিতা করতে ইচ্ছুক, তবে তা হতে হবে পারস্পরিক শ্রদ্ধার ভিত্তিতে। তিনি বলেন, ‘বিশেষ দূত নিয়োগের ফলে আমাদের জন্য কিছুই বদলে যাচ্ছে না। আমরা আমাদের ভবিষ্যৎ নিজেরাই নির্ধারণ করি। গ্রিনল্যান্ড কেবল গ্রিনল্যান্ডবাসীর জন্য, আর এর আঞ্চলিক অখণ্ডতাকে অবশ্যই সম্মান করতে হবে।’

ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডার লেয়ন এক্সে দেওয়া পোস্টে বলেছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ‘ডেনমার্ক এবং গ্রিনল্যান্ডের জনগণের সাথে পূর্ণ সংহতি প্রকাশ করছে।’ এর আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছিলেন, ল্যান্ড্রি বোঝেন যে ‘জাতীয় নিরাপত্তার জন্য গ্রিনল্যান্ড কতটা অপরিহার্য’ এবং তিনি মার্কিন স্বার্থকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন।

এই নিয়োগের তাৎপর্য দুটি জায়গায়—প্রথমত, যুক্তরাষ্ট্র ধরে নিয়েছে যে গ্রিনল্যান্ড ডেনমার্ক থেকে আলাদা; এবং দ্বিতীয়ত, নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত দূতের দাবি যে তিনি দ্বীপটিকে যুক্তরাষ্ট্রের অংশ হতে সাহায্য করবেন। বিশেষ দূত সাধারণত অনানুষ্ঠানিক নিয়োগ এবং প্রাতিষ্ঠানিক কূটনীতিকদের মতো তাঁদের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দেশের অনুমোদনের প্রয়োজন হয় না। এই নিয়োগ এটিই প্রমাণ করে যে, গ্রিনল্যান্ড দখলের উচ্চাকাঙ্ক্ষা ট্রাম্পের মনে এখনো অটুট রয়েছে।

ভেনেজুয়েলার প্রতি তাঁর সামরিক ও তাত্ত্বিক আগ্রাসনের মতো এটিও ইঙ্গিত দেয় যে, ট্রাম্প তাঁর সাম্প্রতিক জাতীয় নিরাপত্তা কৌশলে উল্লিখিত ‘পশ্চিম গোলার্ধের’ ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় বদ্ধপরিকর। তিনি চান পুরো আমেরিকা জুড়ে তাঁর এই প্রভাব বলয় বিস্তৃত হোক। ট্রাম্প তাঁর প্রথম মেয়াদে গ্রিনল্যান্ড কেনার চেষ্টা করেছিলেন। ডেনমার্ক ও গ্রিনল্যান্ড উভয় সরকারই ২০১৯ সালের সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বলেছিল, ‘গ্রিনল্যান্ড বিক্রির জন্য নয়।’

ল্যান্ড্রি আগেও গ্রিনল্যান্ড নিয়ে তাঁর মতামত দিয়েছিলেন। গত জানুয়ারিতে নিজের ব্যক্তিগত এক্স অ্যাকাউন্টে তিনি লিখেছিলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড জে ট্রাম্প একদম ঠিক বলেছেন! আমাদের নিশ্চিত করতে হবে যেন গ্রিনল্যান্ড যুক্তরাষ্ট্রের সাথে যুক্ত হয়। তাদের জন্য দারুণ হবে, আমাদের জন্যও দারুণ হবে! চলুন এটা করে ফেলি!’

সামরিক বাহিনীতে কাজ করা এবং সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা ল্যান্ড্রি ২০২৩ সালে গভর্নর নির্বাচিত হওয়ার আগে মার্কিন কংগ্রেস সদস্য এবং লুইজিয়ানা অঙ্গরাজ্যের অ্যাটর্নি জেনারেল ছিলেন। তিনি জানিয়েছেন, তাঁর এই নতুন দায়িত্ব গভর্নর হিসেবে তাঁর কর্তব্যে কোনো ব্যাঘাত ঘটাবে না।

মেরু অঞ্চলে যখন কৌশলগত প্রতিযোগিতা বাড়ছে, ঠিক তখনই এই নিয়োগ ঘিরে বিতর্ক তৈরি হলো। বরফ গলার ফলে সেখানে নতুন নৌপথ উন্মোচিত হচ্ছে এবং মূল্যবান খনিজ সম্পদে প্রবেশের সুযোগ বাড়ছে। উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপের মাঝে সুমেরু অঞ্চলে গ্রিনল্যান্ডের অবস্থান, যা যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোর নিরাপত্তা পরিকল্পনার কেন্দ্রে রয়েছে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নাৎসিরা ডেনমার্ক দখল করলে যুক্তরাষ্ট্র সেখানে হানা দেয় এবং সামরিক ও রেডিও স্টেশন স্থাপনের মাধ্যমে ঘাঁটি গড়ে তোলে। সেই সময় থেকেই গ্রিনল্যান্ডে মার্কিন ঘাঁটি টিকে আছে। গত মার্চে ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স গ্রিনল্যান্ডের সেই ঘাঁটি পরিদর্শন করেন এবং সেখানকার মানুষকে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ‘একটি চুক্তিতে আসার’ আহ্বান জানান। ১৯৫৩ সালে বন্ধ করে দেওয়ার পর ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে ২০২০ সালে গ্রিনল্যান্ডের রাজধানী নুক-এ মার্কিন কনস্যুলেট পুনরায় চালু করা হয়। বেশ কয়েকটি ইউরোপীয় দেশ এবং কানাডারও গ্রিনল্যান্ডে অনারারি কনস্যুলেট রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নতুন করে শতাধিক আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করেছে চীন: পেন্টাগন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০: ২৫
চীনের তৈরি ডিএফ–৩১ সিরিজের একটি আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র। ছবি: সংগৃহীত
চীনের তৈরি ডিএফ–৩১ সিরিজের একটি আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র। ছবি: সংগৃহীত

চীন সাম্প্রতিক সময়ে তিনটি সাইলোতে (সাধারণত সাইলো বলতে অস্ত্র বিশেষ করে ক্ষেপণাস্ত্র মজুত করার জায়গাকে বোঝানো হয়)। ১০০ টিরও বেশি আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র (আইসিবিএম) মোতায়েন করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। মার্কিন প্রতিরক্ষা সদর দপ্তর পেন্টাগনের এক খসড়া প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বেইজিং ক্রমবর্ধমান সামরিকভাবে উচ্চাকাঙ্ক্ষী হয়ে উঠছে এবং অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আলোচনার বিষয়ে দেশটির কোনো আগ্রহ নেই।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, শিকাগোভিত্তিক অলাভজনক সংস্থা বুলেটিন অব দ্য অ্যাটমিক সায়েন্টিস্টসের মতে, অন্য যেকোনো পারমাণবিক শক্তিধর দেশের তুলনায় চীন তাদের অস্ত্রভান্ডার দ্রুত সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়ন করছে। তবে বেইজিং সামরিক শক্তি বৃদ্ধির এই প্রতিবেদনগুলোকে ‘চীনকে কলঙ্কিত’ করার ও দেশটির ‘মানহানি’ করার লক্ষ্যে ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ইচ্ছাকৃতভাবে বিভ্রান্ত করার প্রচেষ্টা’ হিসেবে অভিহিত করেছে।

গত মাসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছিলেন, তিনি চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করতে পারেন। তবে রয়টার্সের দেখা পেন্টাগনের ওই খসড়া প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বেইজিং এতে আগ্রহী বলে মনে হচ্ছে না। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ‘আমরা বেইজিংয়ের পক্ষ থেকে এই ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ বা আরও ব্যাপক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আলোচনার বিষয়ে কোনো আগ্রহ দেখতে পাচ্ছি না।’

বিশেষ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মঙ্গোলিয়া সীমান্তের কাছে চীনের নতুন সাইলো ক্ষেত্রগুলোতে তারা সম্ভবত ১০০ টিরও বেশি সলিড-ফুয়েল চালিত ডিএফ–৩১ আইসিবিএম মোতায়েন করেছে। পেন্টাগন এর আগে এই সাইলো ক্ষেত্রগুলোর অস্তিত্বের কথা জানালেও সেখানে কতগুলো ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে, তা এই প্রথম জানাল। পেন্টাগন অবশ্য এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।

ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থিত চীনা দূতাবাস জানিয়েছে, চীন একটি ‘প্রতিরক্ষামূলক পারমাণবিক কৌশল বজায় রেখেছে, পারমাণবিক শক্তিকে জাতীয় নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় ন্যূনতম স্তরে রেখেছে এবং পারমাণবিক পরীক্ষা বন্ধ রাখার অঙ্গীকার মেনে চলছে।’

পেন্টাগনের খসড়া প্রতিবেদনে নতুন বসানো এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর সম্ভাব্য লক্ষ্যবস্তু সম্পর্কে কিছু জানানো হয়নি। মার্কিন কর্মকর্তারা উল্লেখ করেছেন যে, আইনপ্রণেতাদের কাছে পাঠানোর আগে এই প্রতিবেদনে পরিবর্তন আসতে পারে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ২০২৪ সালে চীনের পারমাণবিক ওয়ারহেডের মজুত ছিল ৬০০-এর কোঠায়, যা পূর্ববর্তী বছরগুলোর তুলনায় ‘উৎপাদনের মন্থর গতি’ নির্দেশ করে। তবে চীনের পারমাণবিক সম্প্রসারণ অব্যাহত রয়েছে এবং ২০৩০ সালের মধ্যে দেশটির ১ হাজারেরও বেশি ওয়ারহেড থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। চীন অবশ্য দাবি করেছে, তারা ‘আত্মরক্ষার পারমাণবিক কৌশল এবং প্রথমে ব্যবহার না করার নীতি’ মেনে চলে।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, তিনি চান—যুক্তরাষ্ট্র আবারও পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা শুরু করুক, তবে তা কী আকারে হবে তা স্পষ্ট নয়। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং ট্রাম্প তাঁর প্রথম মেয়াদে ‘নিউ স্টার্ট’ চুক্তির পরিবর্তে চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে একটি ত্রিপক্ষীয় কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তির চেষ্টা করেছিলেন।

পেন্টাগনের এই বিস্তৃত প্রতিবেদনে চীনের সামরিক প্রস্তুতির বিস্তারিত বর্ণনা দিয়ে বলা হয়েছে, ‘চীন আশা করছে ২০২৭ সালের শেষ নাগাদ তারা তাইওয়ানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয়ী হতে পারবে।’ তাইওয়ানকে নিজ ভূখণ্ড বলে দাবি করা চীন কখনোই এই দ্বীপটিকে ‘পুনরেকত্রীকরণ’ করতে শক্তি প্রয়োগের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়নি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বেইজিং তাইওয়ান দখলের জন্য ‘পাশবিক শক্তি’ ব্যবহারের সামরিক বিকল্পগুলো নিয়ে কাজ করছে। এর মধ্যে একটি বিকল্প হতে পারে চীন থেকে ১ থেকে ২ হাজার নটিক্যাল মাইল দূরে আঘাত হানা। এতে আরও বলা হয়, ‘পর্যাপ্ত পরিমাণে এই ধরনের হামলা এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের উপস্থিতিকে মারাত্মক চ্যালেঞ্জ এবং বিঘ্নিত করতে পারে।’

২০১০ সালের ‘নিউ স্টার্ট’ চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার দুই মাসেরও কম সময় আগে এই প্রতিবেদনটি এল। এটিই যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে সর্বশেষ পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তি, যা উভয় পক্ষকে ১ হাজার ৫৫০ টির বেশি কৌশলগত পারমাণবিক ওয়ারহেড এবং ৭০০টি ডেলিভারি সিস্টেম মোতায়েনে সীমাবদ্ধ রাখে। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং বাইডেন ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে এই চুক্তির মেয়াদ পাঁচ বছর বাড়িয়েছিলেন, তবে চুক্তির শর্ত অনুযায়ী এর আর কোনো আনুষ্ঠানিক মেয়াদ বাড়ানোর সুযোগ নেই।

অনেক বিশেষজ্ঞ আশঙ্কা করছেন, এই চুক্তির মেয়াদ শেষ হলে তা ত্রিপক্ষীয় পারমাণবিক অস্ত্র প্রতিযোগিতাকে উসকে দিতে পারে। পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ নিয়ে কাজ করা সংস্থা আর্মস কন্ট্রোল অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাহী পরিচালক ড্যারিল কিম্বল বলেন, ‘অধিক পারমাণবিক অস্ত্র এবং কূটনীতির অনুপস্থিতি চীন, রাশিয়া বা যুক্তরাষ্ট্র—কাউকেই নিরাপদ করবে না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

গাজায় ৭৩ দিনে ইসরায়েলি হত্যাকাণ্ডের শিকার ৪১১ ফিলিস্তিনি, যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন ৮৭৫ বার

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯: ৪৫
গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনে বিধ্বস্ত একটি এলাকা। ছবি: আনাদোলু
গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনে বিধ্বস্ত একটি এলাকা। ছবি: আনাদোলু

ফিলিস্তিনি অবরুদ্ধ ছিটমহল গাজায় ইসরায়েল গত ৭৩ দিনে অন্তত ৮৭৫ বার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে। এই সময়ের মধ্যে দেশটি অন্তত ৪১১ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে। গাজার সরকারি জনসংযোগ বিভাগের বরাতে লেবানিজ সংবাদমাধ্যম আল-মায়েদিনের প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য জানা গেছে।

গাজা সরকারি জনসংযোগ বিভাগ জানিয়েছে, গত ১০ অক্টোবর যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর থেকে ইসরায়েলি বাহিনী ৭৩ দিন ধরে ক্রমাগত এবং পরিকল্পিতভাবে তা লঙ্ঘন করে চলেছে। তাদের এই কর্মকাণ্ড আন্তর্জাতিক মানবিক আইন এবং চুক্তির মানবিক প্রটোকলকে চরমভাবে অবজ্ঞা করছে।

সোমবার এক বিবৃতিতে দপ্তর জানায়, সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থাগুলো ‘ইসরায়েল’-এর পক্ষ থেকে মোট ৮৭৫টি লঙ্ঘনের ঘটনা নথিভুক্ত করেছে। এর মধ্যে সামরিক নাগরিকদের ওপর সরাসরি গুলির ঘটনা ২৬৫টি, আবাসিক এলাকায় সামরিক যানের অনুপ্রবেশ ৪৯টি, ফিলিস্তিনি ও তাদের ঘরবাড়ি লক্ষ্য করে ৪২১টি গোলাবর্ষণ ও হামলার ঘটনা এবং বেসামরিক ভবন ও স্থাপনা ধ্বংস ও গুঁড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা ১৫০টি।

বিবৃতি অনুযায়ী, এসব যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের ঘটনায় ৪১১ ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১ হাজার ১১২ জন আহত হয়েছে। এ ছাড়া ৪৫ জনকে বেআইনিভাবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এদিকে মানবিক সহায়তার বিষয়ে জনসংযোগ বিভাগ জানিয়েছে, সহায়তা প্রবেশের ক্ষেত্রে ইসরায়েল প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছে। নির্ধারিত ৪৩ হাজার ৮০০টি ট্রাকের বদলে ওই সময়ে গাজায় মাত্র ১৭ হাজার ৮১৯টি সহায়তার ট্রাক প্রবেশ করতে পেরেছে, যা মোট প্রতিশ্রুতির মাত্র ৪১ শতাংশ।

জ্বালানি সরবরাহেও মারাত্মক কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। তফসিল অনুযায়ী ৩ হাজার ৬৫০টি ট্রাক আসার কথা থাকলেও এসেছে মাত্র ৩৯৪টি, যা মাত্র ১০ শতাংশ। এর ফলে হাসপাতাল, বেকারি, পানি শোধনাগার এবং পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা প্রায় অচল হয়ে পড়েছে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।

জনসংযোগ বিভাগ আরও সতর্ক করেছে, তাঁবু ও ভ্রাম্যমাণ ঘর (মোবাইল হোম) প্রবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি থাকায় আশ্রয় সংকট আরও ঘনীভূত হয়েছে। সাম্প্রতিক শীতকালীন ঝোড়ো হাওয়ায় এর আগে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া ৪৬টি ঘর ধসে পড়েছে এবং ভেতরে আশ্রয় নেওয়া ১৫ জন মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন।

এ ছাড়া, বাস্তুচ্যুতদের তাঁবুতে প্রচণ্ড ঠান্ডায় দুই শিশুর মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। ১ লাখ ২৫ হাজারের বেশি তাঁবু ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে, যার ফলে প্রায় ১৫ লাখেরও বেশি বাস্তুচ্যুত মানুষ কোনো প্রকার সুরক্ষা ছাড়াই মানবেতর জীবন যাপন করছেন। বিশেষ করে সামনে যখন হাড়কাঁপানো ঠান্ডার সময় তথা ‘চল্লিশ দিনের’ সময় ঘনিয়ে আসছে, তখন পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

জনসংযোগ বিভাগ জানিয়েছে, এই চলমান লঙ্ঘনগুলো যুদ্ধবিরতি চুক্তির সঙ্গে এক বিপজ্জনক প্রতারণা। তারা ইসরায়েলকে অবদমন, অনাহার এবং জবরদস্তির নীতি চাপিয়ে দেওয়ার জন্য অভিযুক্ত করেছে। একটি দীর্ঘস্থায়ী শান্তি বজায় রাখার কথা থাকলেও এই মানবিক বিপর্যয়ের সময় যে পরিমাণ প্রাণহানি এবং পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে, তার জন্য ইসরায়েলকেই সম্পূর্ণ দায়ী করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত