Ajker Patrika

যুক্তরাষ্ট্র-ভেনেজুয়েলা সম্পর্কের বরফ গলছে, মাদুরোকে কাছে টানছে ওয়াশিংটন!

আপডেট : ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৪: ০১
ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে নিকোলাস মাদুরোর সঙ্গে রিচার্ড গ্রেনেল। ছবি: এএফপি
ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে নিকোলাস মাদুরোর সঙ্গে রিচার্ড গ্রেনেল। ছবি: এএফপি

যুক্তরাষ্ট্র ও লাতিন আমেরিকার দেশ ভেনেজুয়েলার মধ্যে সম্পর্কের বরফ গলছে। অন্তত সম্প্রতি দেশটির প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সঙ্গে মার্কিন দূত রিচার্ড গ্রেনেলের সাক্ষাৎ এবং কারাকাস থেকে ৬ মার্কিন নাগরিককে দেশে ফেরার অনুমতি দেওয়ার বিষয়টি এই ইঙ্গিতই দেয়।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত রিচার্ড গ্রেনেল গতকাল শুক্রবার ঘোষণা করেছেন, তিনি কারাকাস থেকে ৬ মার্কিন নাগরিককে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরছেন। বিশ্লেষকেরা এটিকে অপ্রত্যাশিত ও তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা হিসেবে দেখছেন। কারণ, গ্রেনেল এর আগেও কারাকাসে প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন।

ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারা এর আগে বলেছিলেন, গ্রেনেলের সফরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য ছিল ভেনেজুয়েলায় আটক মার্কিন নাগরিকদের মুক্ত করা। এই উদ্যোগ এমন সময়ে নেওয়া হলো, যখন ট্রাম্প প্রশাসন যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ অভিবাসন ও অপরাধী চক্র দমনে কঠোর অবস্থান নিয়েছে।

গ্রেনেল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে তাঁর অ্যাকাউন্টে বিমানের ভেতর থেকে একটি ছবি পোস্ট করেছেন। যেখানে তাঁকে ৬ জন মার্কিন নাগরিকের সঙ্গে দেখা যায়। ছবিতে দেখা যায়, তাঁরা ভেনেজুয়েলার কারাগারের হালকা নীল পোশাক পরে আছেন। তবে তিনি তাঁদের নাম প্রকাশ করেননি।

গ্রেনেল পোস্টে লেখেন, ‘আমরা এখন উড্ডয়ন করেছি এবং এই ৬ মার্কিন নাগরিককে নিয়ে দেশে ফিরছি। তাঁরা প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং বারবার তাঁকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।’ ট্রাম্প নিজেও এ ঘটনাকে স্বাগত জানিয়ে এক্সে শেয়ার করা পোস্টে লিখেন, ‘গ্রেনেল ছয় জিম্মিকে ভেনেজুয়েলা থেকে মুক্ত করে দেশে ফিরিয়ে আনছেন।’

ভেনেজুয়েলায় ঠিক কতজন মার্কিন নাগরিক আটক ছিলেন, তা স্পষ্ট নয়। তবে দেশটির কর্মকর্তারা প্রকাশ্যে অন্তত ৯ জনের কথা বলেছেন। মাদুরোর প্রশাসন তাঁদের অধিকাংশের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদের অভিযোগ এনেছে এবং কয়েকজনকে ‘ভাড়াটে সেনা’ বলে আখ্যায়িত করেছে।

মাদুরো সরকার প্রায়ই বিরোধী দল এবং বিদেশি বন্দীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলে যে, তাঁরা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মিলে ষড়যন্ত্র করছেন এবং ভেনেজুয়েলায় অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির পরিকল্পনা করছেন। তবে মার্কিন কর্মকর্তারা সব সময় এসব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন এবং দাবি করেছেন, তাঁদের নাগরিকদের আটক রাখা অবৈধ এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

এর আগে, যুক্তরাষ্ট্রের লাতিন আমেরিকার বিশেষ দূত মরিসিও ক্লেভার-ক্যারোন বলেছিলেন, ‘ভেনেজুয়েলায় আটক মার্কিন জিম্মিদের...অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে। গ্রেনেল ও মাদুরোর মধ্যে যে বৈঠক হয়েছে, সেটি কোনো বিনিময় চুক্তি নয়।’ বিশ্লেষকেরা এই বিষয়টিকে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার উদ্যোগ হিসেবে দেখছেন।

এদিকে, ২০২৩ সালের শেষ দিকে ভেনেজুয়েলা সরকার কয়েক মাস আলোচনার পর বেশ ১০ মার্কিন বন্দীকে মুক্তি দেয়। তখন যুক্তরাষ্ট্র পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে মাদুরোর ঘনিষ্ঠ এক সহযোগীকে মুক্তি দিয়েছিল।

শুক্রবার রাতে ভেনেজুয়েলার বিচার বিভাগের বার্ষিক ভাষণে মাদুরো বলেন, গ্রেনেলের সঙ্গে তাঁর বৈঠক ইতিবাচক এবং এটি দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি ‘প্রথম ধাপ’। তিনি বলেন, ‘কিছু বিষয়ে আমরা প্রাথমিক সমঝোতায় পৌঁছেছি এবং সেগুলো বাস্তবায়িত হলে আরও নতুন আলোচনা হতে পারে। আশা করি, এটি দুই দেশ ও অঞ্চলের জন্য ভালো কিছু বয়ে আনবে।’

মাদুরো আরও বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, আমরা প্রথম পদক্ষেপ নিয়েছি। আশা করি, এটি আরও এগিয়ে যাবে। আমরা চাই, আলোচনা চালিয়ে যেতে।’ এ ছাড়া, ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে মাদুরো ও গ্রেনেল অভিবাসন ও নিষেধাজ্ঞা নিয়েও আলোচনা করেছেন বলে দেশটির সরকার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে।

হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট শুক্রবার জানান, গ্রেনেলের অন্যতম লক্ষ্য ছিল ‘ট্রেন দে আরাগুয়া’ নামে পরিচিত ভেনেজুয়েলার এক কুখ্যাত অপরাধী চক্রের ৪০০ সদস্যকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো। একই বিষয়ে মার্কিন বিশেষ দূত ক্লেভার-ক্যারোন বলেন, ‘ট্রেন দে আরাগুয়ার গ্যাং সদস্যদের অবশ্যই (ভেনেজুয়েলা থেকে) বহিষ্কার করতে হবে, এটি কোনোভাবেই আলোচনার বিষয় নয়।’

ভেনেজুয়েলার অ্যাটর্নি জেনারেল তারেক সাব এক সপ্তাহ আগে বলেছিলেন, ২০২৩ সালে ভেনেজুয়েলায় এই গ্যাং পুরোপুরি নির্মূল করা হয়েছে। তবে তিনি স্বীকার করেন যে, গ্যাং সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আইনি সহযোগিতা পুনরায় শুরু করতে রাজি আছেন।

২০ জানুয়ারি ট্রাম্প পুনরায় দায়িত্ব গ্রহণ করার পর থেকেই তিনি কঠোর অভিবাসন নীতি বাস্তবায়ন শুরু করেছেন এবং গণহারে অবৈধ অভিবাসীদের বহিষ্কারের ঘোষণা দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত প্রায় ৬ লাখ ভেনেজুয়েলার অভিবাসী আগে প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের মাধ্যমে নির্বাসন থেকে রেহাই পেয়েছিলেন। কিন্তু বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিস্টি নোম ঘোষণা করেছেন যে, এই সুরক্ষা ব্যবস্থা সংক্ষিপ্ত করা হবে।

গ্রেনেলের সফর মানে এই নয় যে যুক্তরাষ্ট্র মাদুরোকে ভেনেজুয়েলার বৈধ নেতা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে বলে প্রেস সেক্রেটারি লেভিট স্পষ্ট করেছেন। দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক অনেক দিন ধরেই উত্তপ্ত। দীর্ঘদিন ধরে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন রয়েছে, নিষেধাজ্ঞা রয়েছে এবং দুই পক্ষ একে অপরের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান ষড়যন্ত্রের অভিযোগ করে আসছে।

তবে বেশ কিছু দ্বিপক্ষীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট ইস্যু রয়েছে, যার মধ্যে অন্যতম হলো—মার্কিন তেল কোম্পানি শেভরনকে ভেনেজুয়েলায় কার্যক্রম চালানোর অনুমতি দেওয়া। বাইডেন প্রশাসন এর আগে ঘোষণা করেছিল যে, মাদুরো অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছেন। এর প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে পুনরায় তেল নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে এবং মাদুরোসহ শীর্ষ নেতাদের গ্রেপ্তার বা দণ্ডিত করতে পুরস্কারের অঙ্ক বাড়ায়।

২০২৪ সালের জুলাইয়ে মাদুরোর সরকার-সমর্থিত বিজয়কে বিরোধীরা, আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকেরা এবং যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশ কয়েকটি দেশ অবৈধ বলে ঘোষণা করেছে। ভেনেজুয়েলা সব সময় যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞাকে ‘অর্থনৈতিক যুদ্ধ’ বলে আখ্যা দিয়েছে এবং বলেছে যে এটি দেশটিকে দুর্বল করার জন্য পরিকল্পিত একটি পদক্ষেপ।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমস শুক্রবার জানিয়েছে, শেভরন মার্কিন সরকারের বিশেষ অনুমোদন বজায় রাখতে চেষ্টা করছে, যাতে তারা ভেনেজুয়েলায় কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারে। শেভরনের প্রধান নির্বাহী মাইক ওয়ার্থ সংবাদমাধ্যমটিকে জানান, কোম্পানি এই বিষয়ে হোয়াইট হাউসের সঙ্গে যোগাযোগ করছে।

এর আগে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেছেন, ‘শেভরনের অনুমোদন পুনর্বিবেচনা করা উচিত (ভেনেজুয়েলার) ’। এ ছাড়া ট্রাম্প বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র সম্ভবত ভেনেজুয়েলা থেকে তেল আমদানি বন্ধ করবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ছয় মাসের পরিচয়ে বিবাহিতাকে বিয়ের প্রস্তাব, প্রত্যাখ্যান করায় গুলি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
গ্রেপ্তার তুষার ও শুভম। ছবি: সংগৃহীত
গ্রেপ্তার তুষার ও শুভম। ছবি: সংগৃহীত

ভারতের গুরগাঁওয়ে এক ভয়াবহ ঘটনা ঘটেছে। মাত্র ৬ মাসের পরিচয়ের ভিত্তিতে এক যুবক বিয়ের প্রস্তাব দেয় এক বিবাহিতা তরুণীকে। কিন্তু তিনি সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় তাঁকে গুলি করে সেই যুবক। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য জানা গেছে।

পুলিশ জানিয়েছে, গুরুগাঁওয়ের একটি ক্লাবের ভেতরে বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় ২৫ বছর বয়সী এক নারীকে গুলি করা হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে ২০ ডিসেম্বর ভোরের দিকে এমজি রোডে।

পুলিশ জানিয়েছে, গুলিবর্ষণের ঘটনায় এক নারী আহত হওয়ার খবর পেয়ে তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছায় এবং তাঁকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি অবস্থায় পায়। গুরুতর আহত হওয়ায় শুরুতে তিনি জবানবন্দি দেওয়ার মতো অবস্থায় ছিলেন না।

দিল্লির নাজাফগড়ের বাসিন্দা ওই নারীর স্বামী অভিযোগ দায়ের করেছেন। সেখানে বলা হয়েছে যে, তাঁর স্ত্রী কল্পনা (২৫) গুরুগ্রামের একটি ক্লাবে কাজ করতেন এবং তাকে দিল্লির সঙ্গম বিহারের বাসিন্দা তুষার গুলি করেছে।

অভিযোগে ওই স্বামী জানান, তাঁর স্ত্রী ১৯ ডিসেম্বর কাজে গিয়েছিলেন এবং রাত ১টার দিকে তাঁকে ফোন করে জানান, তাঁকে গুলি করা হয়েছে। অভিযোগকারী আরও যোগ করেন, ‘প্রায় এক মাস আগে তুষার আমাদের বাড়িতে এসেছিল, আমাদের সাথে ঝগড়া করেছিল এবং চলে গিয়েছিল।’

এই অভিযোগের ভিত্তিতে সেক্টর ২৯ থানায় একটি এফআইআর (FIR) দায়ের করা হয়। তদন্ত চলাকালীন, ক্রাইম ইউনিটের একটি দল উত্তরপ্রদেশের বারাউত থেকে দুই অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করেছে। তাঁরা হলো তুষার ওরফে জন্টি (২৫) এবং তার বন্ধু শুভম ওরফে জনি (২৪)। দুজনেই দিল্লির সঙ্গম বিহারের বাসিন্দা।

জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ জানতে পেরেছে, তুষার স্বীকার করেছে যে—প্রায় ছয় মাস আগে ওই নারীর সাথে তাঁর বন্ধুত্ব হয় এবং সে তাঁকে বিয়ে করতে চেয়েছিল, কিন্তু ওই নারী বারবার তা প্রত্যাখ্যান করেন।

পুলিশের অভিযোগ অনুযায়ী, ১৯ ডিসেম্বর রাতে তুষার তাঁর বন্ধু শুভমকে নিয়ে ওই ক্লাবে যায় এবং আবারও বিয়ের প্রস্তাব দেয়। প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় সে ওই নারীকে গুলি করে। পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ঘটনার আরও তদন্ত চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ট্রাম্পের নির্দেশে নাইজেরিয়ায় মার্কিন বাহিনীর হামলা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯: ২২
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এএফপি
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এএফপি

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, মার্কিন বাহিনী উত্তর-পশ্চিম নাইজেরিয়ায় সন্ত্রাসী সংগঠন আইএসআইএল (আইএসআইএস) যোদ্ধাদের ওপর বিমান হামলা চালিয়েছে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য জানা গেছে।

স্থানীয় সময় গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নিজের ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে দেওয়া এক পোস্টে ট্রাম্প বলেন, ‘আজ রাতে কমান্ডার ইন চিফ হিসেবে আমার নির্দেশে যুক্তরাষ্ট্র উত্তর-পশ্চিম নাইজেরিয়ায় আইএসআইএস সন্ত্রাসী আবর্জনার বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী এবং প্রাণঘাতী হামলা চালিয়েছে।’

ট্রাম্প বলেন, আইএসআইএল যোদ্ধারা ‘প্রাথমিকভাবে নির্দোষ খ্রিষ্টানদের লক্ষ্যবস্তু করেছে এবং নৃশংসভাবে হত্যা করেছে, যা বহু বছর এমনকি শতাব্দীর মধ্যেও দেখা যায়নি!’ তিনি আরও যোগ করেন, ‘আমি এর আগে এই সন্ত্রাসীদের সতর্ক করেছিলাম যে তারা যদি খ্রিষ্টানদের হত্যা বন্ধ না করে; তবে তাদের চরম মূল্য দিতে হবে এবং আজ রাতে সেটাই হয়েছে।’

আফ্রিকায় মার্কিন সামরিক কার্যক্রমের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা আফ্রিকা কমান্ড (AFRICOM) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক পোস্টে জানিয়েছে, এই বিমান হামলাটি ‘নাইজেরীয় কর্তৃপক্ষের অনুরোধে’ চালানো হয়েছে এবং এতে ‘একাধিক আইএসআইএস সন্ত্রাসী’ নিহত হয়েছে।

মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ বিস্তারিত কোনো তথ্য না দিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন, ‘নাইজেরীয় সরকারের সমর্থন ও সহযোগিতার জন্য কৃতজ্ঞ। সামনে আরও আসবে।

এক বিবৃতিতে আফ্রিকম জানিয়েছে, এই হামলাটি নাইজেরিয়ার সবতো রাজ্যে সংঘটিত হয়েছে, যা মূলত নাইজেরিয়ার সোকোতো রাজ্যকে নির্দেশ করছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ, নাইজেরিয়ার সবতো নামে কোনো রাজ্য নেই।

নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টান নির্যাতনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ট্রাম্প পেন্টাগনকে সম্ভাব্য সামরিক অভিযানের পরিকল্পনা শুরু করার নির্দেশ দেওয়ার কয়েক সপ্তাহ পর এই মার্কিন সামরিক পদক্ষেপটি এল।

নাইজেরিয়া সরকার এর আগে ট্রাম্পের এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছিল। তারা বলেছিল, সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো দেশের মুসলিম এবং খ্রিষ্টান উভয় সম্প্রদায়কেই লক্ষ্যবস্তু করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই দাবি একটি জটিল নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে সঠিকভাবে উপস্থাপন করে না এবং ধর্মীয় স্বাধীনতা রক্ষায় নাইজেরীয় কর্তৃপক্ষের প্রচেষ্টাকে উপেক্ষা করে।

নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আজ শুক্রবার সকালে এক বিবৃতিতে নিশ্চিত করেছে, নাইজেরীয় কর্তৃপক্ষ ‘সন্ত্রাসবাদ এবং সহিংস চরমপন্থার মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে কাঠামোগত নিরাপত্তা সহযোগিতায় নিয়োজিত রয়েছে।’ মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে, ‘এর ফলে উত্তর-পশ্চিমে বিমান হামলার মাধ্যমে সন্ত্রাসী লক্ষ্যবস্তুগুলোতে নিখুঁতভাবে আঘাত করা সম্ভব হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

তাজমহল একসময় মন্দির ছিল—মধ্যপ্রদেশের মন্ত্রীর মন্তব্যে নতুন বিতর্ক

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

মুঘল স্থাপত্যের বিস্ময় তাজমহল আসলে একসময় মন্দির ছিল—এমন দাবি করে ভারতের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে বিতর্ক উসকে দিয়েছেন মধ্যপ্রদেশের নগর প্রশাসনমন্ত্রী ও বর্ষীয়ান বিজেপি নেতা কৈলাশ বিজয়বর্গীয়। আজ বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) সাগর জেলার বিনা শহরে একটি ক্রিকেট টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।

৬৯ বছর বয়সী এ নেতার ভাষণের ভিডিও ক্লিপটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে তীব্র প্রতিক্রিয়া শুরু হয়েছে। বিজয়বর্গীয় তাঁর বক্তব্যে দাবি করেন, সম্রাট শাহজাহান একটি মন্দিরকে কবরে রূপান্তরিত করে তাজমহল নির্মাণ করেছিলেন।

বিজয়বর্গীয় বলেন, মমতাজকে প্রথমে বুরহানপুরে সমাহিত করা হয়েছিল। পরে তাঁর দেহ এমন একটি স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়, যেখানে একটি মন্দির নির্মাণ করা হচ্ছিল। সেই মন্দিরের ওপরই বর্তমান তাজমহল দাঁড়িয়ে রয়েছে।

একই অনুষ্ঠানে বিজেপির জাতীয় কার্যকরী সভাপতি নীতিন নবীনের উদ্দেশে বিজয়বর্গীয় বলেন, বিহারে জন্ম নিলেই যে একজন মানুষকে নম্র হতে হবে, তার কোনো মানে নেই, তবে নীতিন নবীন অত্যন্ত নম্রতার সঙ্গে এগিয়ে গেছেন। তাঁর এই মন্তব্যকে বিহারিদের প্রতি অবমাননাকর হিসেবে দেখছেন অনেকে।

বিজয়বর্গীয়ের এ বক্তব্যের কড়া জবাব দিয়েছে কংগ্রেস। দলের মুখপাত্র ভূপেন্দ্র গুপ্ত বলেন, বিজেপি মন্ত্রীরা সব সীমা লঙ্ঘন করছেন এবং জনমনে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন। ভূপেন্দ্র গুপ্ত বিদ্রূপ করে বলেন, একজন মন্ত্রী বলছেন ভাস্কো দা গামা ভারত আবিষ্কার করেননি, আরেকজন বলছেন তাজমহল আসলে মন্দির। তাঁদের উচিত বিশ্ববাসীর জন্য ইতিহাসের একটি নতুন বই লেখা। তাহলেই বোঝা যাবে, পৃথিবী তাঁদের সম্পর্কে কী ভাবে।

ভূপেন্দ্র প্রশ্ন তোলেন, যদি বিহারিদের সম্পর্কে বিজেপির এমন নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি থাকে, তবে কেন তারা সেখানে নীতীশ কুমারের সঙ্গে জোট বেঁধে রাজনীতি করছে?

তবে কৈলাশ বিজয়বর্গীয়ের জন্য বিতর্ক নতুন কিছু নয়। এর আগেও তিনি একাধিকবার আপত্তিকর মন্তব্য করে সমালোচিত হয়েছেন।

সম্প্রতি ইন্দোরে দুই অস্ট্রেলীয় নারী ক্রিকেটার হেনস্তার শিকার হলে তিনি দায়ীদের ধরার বদলে খেলোয়াড়দেরই ‘শিক্ষা নেওয়া’র পরামর্শ দিয়েছিলেন। নারীদের পোশাক নিয়ে অশালীন মন্তব্য করে তিনি এর আগে বলেছিলেন, ‘অল্প পোশাকে’ মেয়েদের দেখলে তাঁর ভালো লাগে না। এ ছাড়া রাহুল ও প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর আন্তরিকতাকে ‘বিদেশি মূল্যবোধ’ বলেও কটাক্ষ করেছিলেন তিনি।

অনেকে বলছেন, তাজমহল নিয়ে এমন দাবি উগ্র ডানপন্থী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে আগে থেকেই ছিল। তবে একজন দায়িত্বশীল কেবিনেট মন্ত্রীর মুখে এমন কথা সামাজিক মেরুকরণকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে।

ভারত, মধ্যপ্রদেশ, তাজমহল, বিতর্ক, মন্তব্য, মন্ত্রী, মন্দির, ইতিহাস

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বড়দিন ঘিরে খ্রিষ্টানদের ওপর চড়াও ভারতের হিন্দুত্ববাদীরা, উত্তেজনা তুঙ্গে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২: ৫৩
আসামের নলবাড়ি শহরে একটি মিশনারি স্কুলে ভাঙচুর চালান কট্টর হিন্দুত্ববাদী সংগঠন বজরং দলের একদল কর্মী। ছবি: দি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের সৌজন্যে
আসামের নলবাড়ি শহরে একটি মিশনারি স্কুলে ভাঙচুর চালান কট্টর হিন্দুত্ববাদী সংগঠন বজরং দলের একদল কর্মী। ছবি: দি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের সৌজন্যে

ভারতে বড়দিন উদ্‌যাপনের প্রাক্কালে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সাম্প্রদায়িক অস্থিরতা ও হামলার খবর পাওয়া গেছে। গতকাল বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) আসামের নলবাড়ি শহরে একটি মিশনারি স্কুলে ভাঙচুর চালান কট্টর হিন্দুত্ববাদী সংগঠন বজরং দলের একদল কর্মী। এক সপ্তাহ ধরে মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, রাজস্থান ও দিল্লিতে বড়দিনকেন্দ্রিক নানা বিশৃঙ্খল ঘটনা ঘটেছে।

নলবাড়ির সিনিয়র পুলিশ সুপার বিবেকানন্দ দাস ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে জানান, পানিগাঁওয়ের সেন্ট মেরিস ইংলিশ স্কুল কর্তৃপক্ষ এ ঘটনায় অভিযোগ করেছে। অভিযুক্ত ব্যক্তিরা স্কুলের বড়দিনের সাজসজ্জা নষ্ট করার পাশাপাশি শহরের একটি দোকানে বিক্রি হওয়া ক্রিসমাস অর্নামেন্টও ভাঙচুর করেন।

তবে বড়দিন উদ্‌যাপনের সময় সবচেয়ে বেশি উত্তেজনার খবর পাওয়া গেছে বিজেপিশাসিত রাজ্য ছত্তিশগড় ও মধ্যপ্রদেশে। ছত্তিশগড়ে রাজধানী রায়পুরের ম্যাগনেটো মলে লাঠিসোঁটা নিয়ে একদল লোক অতর্কিতে হামলা চালান এবং বড়দিনের সব সাজসজ্জা গুঁড়িয়ে দেন। কথিত ধর্মান্তরের প্রতিবাদে ‘সর্ব হিন্দু সমাজ’-এর ডাকা ধর্মঘট চলাকালে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ এফআইআর করলেও এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।

এদিকে বিজেপিশাসিত আরেক রাজ্য মধ্যপ্রদেশের জবলপুর জেলায় একটি গির্জায় প্রার্থনা চলাকালে কট্টরপন্থী বজরং দলের কর্মীরা ‘জয় শ্রী রাম’ স্লোগান দিয়ে ভেতরে ঢুকে আতঙ্ক সৃষ্টি করেন। এ ছাড়া কাটঙ্গা এলাকায় এক দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী নারীকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছে জেলা বিজেপি নেত্রী অঞ্জু ভার্গবের বিরুদ্ধে। ওই নারীর অপরাধ ছিল, তিনি বড়দিন উদ্‌যাপনে গির্জায় গিয়েছিলেন। যদিও ওই নারী স্পষ্ট করেছেন, বড়দিন পালন করা মানেই ধর্ম পরিবর্তন করা নয়।

রাজস্থানের শ্রী গঙ্গানগর জেলায় শিক্ষা বিভাগ থেকে এক বিতর্কিত নির্দেশনায় বলা হয়েছে, কোনো স্কুল শিশুদের ‘সান্তা ক্লজ’ সাজতে বাধ্য করতে পারবে না। স্থানীয় এক হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়, যেখানে দাবি করা হয়েছে—সনাতন ধর্মাবলম্বী-অধ্যুষিত এই এলাকায় শিশুদের ওপর খ্রিষ্টীয় সংস্কৃতি চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

রাজধানী দিল্লির লাজপতনগর এলাকায় বড়দিনের টুপি পরা একদল নারীকে হেনস্তা করার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। অভিযোগ উঠেছে, বজরং দলের সদস্যরা ওই নারীদের ধর্মান্তরচেষ্টার অভিযোগে এলাকা ছাড়তে বাধ্য করেন। তবে দিল্লি পুলিশ বিষয়টিকে ‘তুচ্ছ ব্যক্তিগত বিতর্ক’ হিসেবে অভিহিত করে কোনো মামলা নেয়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত