Ajker Patrika

নিকাব বিতর্ক: মুখ্যমন্ত্রী ও মন্ত্রীর বিরুদ্ধে সমাজবাদী পার্টির নেত্রীর থানায় অভিযোগ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ভারতের বিহার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার ও উত্তর প্রদেশের মন্ত্রী সঞ্জয় নিষাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন সমাজবাদী পার্টির নেত্রী সুমাইয়া রানা। ছবি: সংগৃহীত
ভারতের বিহার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার ও উত্তর প্রদেশের মন্ত্রী সঞ্জয় নিষাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন সমাজবাদী পার্টির নেত্রী সুমাইয়া রানা। ছবি: সংগৃহীত

সরকারি এক অনুষ্ঠানে মুসলিম নারী চিকিৎসকের মুখ দেখতে নিকাব টান দিয়ে সরিয়ে নেওয়ার ঘটনায় ভারতের বিহার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার ও উত্তর প্রদেশের মন্ত্রী সঞ্জয় নিষাদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। সমাজবাদী পার্টির নেত্রী সুমাইয়া রানা তাঁর আইনজীবীদের সঙ্গে লখনৌয়ের কাইজারবাগ থানায় এই অভিযোগ দাখিল করেন বলে টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে জানা গেছে।

অভিযোগে দুই নেতার বিরুদ্ধে মামলা (এফআইআর) রুজু এবং কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান সুমাইয়া রানা।

সংবাদ সংস্থা এএনআইকে সুমাইয়া রানা বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে, যেখানে দেখা যায় তিনি এক নারীর নিকাব টান দিয়ে নামিয়ে দিয়েছেন।

রানা আরও বলেন, ‘সাংবিধানিক পদে থাকা একজন ব্যক্তি যদি এভাবে আচরণ করেন, তাহলে তা তাঁর অধীনস্থদেরও একই ধরনের কাজ করতে উৎসাহিত করে।’

উল্লেখ্য, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, পাটনায় এক সরকারি অনুষ্ঠানে এক আয়ুষ (আয়ুর্বেদ, যোগ ও ন্যাচারোপ্যাথি, ইউনানি, সিদ্ধা ও হোমিওপ্যাথি) চিকিৎসকের হাতে সনদপত্র তুলে দিচ্ছেন ৭৪ বছর বয়সী জেডিইউর প্রধান নীতীশ কুমার।

সে সময় তিনি ওই নারী চিকিৎসককে ইশারায় নিকাব সরাতে বলেন। নারী চিকিৎসক নিকাব না সরালে নীতীশ নিজেই হাত বাড়িয়ে তাঁর নিকাব নিচের দিকে নামিয়ে দেন, যাতে তাঁর মুখ ও থুতনি দৃশ্যমান হয়।

ভিডিওতে পেছনে উপস্থিত কয়েকজনকে হাসতে দেখা যায়। একই সঙ্গে বিহারের উপমুখ্যমন্ত্রী সম্রাট চৌধুরীকেও নীতীশকে থামানোর চেষ্টা করতে দেখা যায়।

এ নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়। এ সময় উত্তর প্রদেশ সরকারের মন্ত্রী সঞ্জয় নিষাদ এক সাক্ষাৎকারে মুখ্যমন্ত্রীর পক্ষে কথা বললে বিতর্ক আরও বেড়ে যায়। তাঁর মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা হয়।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যম ‘ভারত সংবাদ’-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ প্রসঙ্গে নিষাদ বলেন, সঠিক ব্যক্তির হাতে নিয়োগপত্র দেওয়া হচ্ছে কি না যাচাই করতে নীতীশ কুমার ওই নারীর নিকাব সরিয়েছিলেন। তিনি প্রশ্ন তোলেন, মুখ্যমন্ত্রী যদি শরীরের অন্য কোনো অংশে স্পর্শ করতেন, তাহলে ঘটনাটি কীভাবে দেখা হতো।

সাক্ষাৎকারে মন্ত্রী নিষাদকে আরও বলতে শোনা যায়, ‘নিকাব টেনে নেওয়া হয়নি, সরানো হয়েছে। যাচাই করার জন্যই এটি করা হয়েছে, যাতে সঠিক ব্যক্তিকেই নিয়োগপত্র দেওয়া হয়। এ নিয়ে মানুষের হৈচৈ করা উচিত নয়। তিনিও তো একজন মানুষ। তাঁর পেছনে লেগে থাকা ঠিক নয়। শুধু নিকাব ছুঁয়েছেন বলেই এত কিছু হয়ে গেল। অন্য কোথাও ছুঁলে তাহলে কী হতো?

থানায় করা অভিযোগে বলা হয়, তিনি হাসতে হাসতে ‘নির্লজ্জ’ মন্তব্য করেছেন। তাঁর বলার ভঙ্গি ও কুটিল হাসি তাঁর ‘ঘৃণ্য, অযৌক্তিক ও নারীবিদ্বেষী মানসিকতা’ প্রকাশ করে।

নিষাদের মন্তব্য নিয়ে সুমাইয়া রানা বলেন, ‘তিনি (নিষাদ) বলেছেন, “বোরকা সরানো নিয়ে এত বিতর্ক কেন? তার হাত তো কেবল ওই নারীর মুখ স্পর্শ করেছে মাত্র। যদি তার (নীতীশ কুমারের) হাত অন্য কোথাও স্পর্শ করত, তবে কী হতো? ” মূলত এই বিষয়ের ওপর ভিত্তি করেই আমি অভিযোগ দায়ের করেছি।’

রানার সাথে থাকা আইনজীবী মিশাম জাইদি বলেন, এই ঘটনা এবং পরবর্তী মন্তব্যগুলো গুরুতর দণ্ডনীয় অপরাধের আওতায় পড়ে। তাঁর ভাষ্য অনুযায়ী, এতে এক নারীর শালীনতা ক্ষুণ্ন হয়েছে। পাশাপাশি সঞ্জয় নিষাদের বক্তব্য ধর্মীয় অনুভূতিতে উসকানি দেওয়ার শামিল।

মিশাম জাইদি আরও বলেন, এটি দণ্ডবিধির ১৫৩এ ধারার স্পষ্ট লঙ্ঘন। কারণ, জেনেশুনে এমন কাজ করা হয়েছে, যা দাঙ্গা উসকে দিতে পারে, অশান্তি সৃষ্টি করতে পারে এবং রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিঘ্নিত করতে পারে।

তিনি আরও যোগ করেন, ‘নিকাব ধরে টানাটানি করার জন্য তার (নীতীশ কুমার) বিরুদ্ধে সরাসরি ৩৫৪ ধারা প্রয়োগ করা হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ