Ajker Patrika

ফোর্বসের তালিকায় ভারতীয় বংশোদ্ভূত শীর্ষ ১০ মার্কিন ধনকুবের

আপডেট : ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১৬: ৫৯
ফোর্বসের তালিকায় ভারতীয় বংশোদ্ভূত শীর্ষ ১০ মার্কিন ধনকুবের

যুক্তরাষ্ট্রে ভারতীয় বংশোদ্ভূত শীর্ষ বিলিয়নিয়ার জয় চৌধুরী। ২০১৮ সালে ৩৪০ কোটি ডলার থেকে ২০২১ সালে তার সম্পদ বেড়ে দাঁড়ায় ১ হাজার ২০০ কোটি ডলারে। ফোর্বস জানিয়েছে, ২০২২ সালে স্টক মার্কেটের বিপর্যয়ের কারণে তাঁর মোট সম্পদ ৮৩০ কোটি ডলারে নেমে গিয়েছিল।

ফোর্বস এ রকম বেশ কয়েকজন মার্কিন ধনকুবেরের তালিকা প্রকাশ করেছে, যাঁরা ভারতীয় বংশোদ্ভূত। এখানে দেওয়া হলো শীর্ষ ১০ ধনকুবেরের পরিচিতি। 

জয় চৌধুরী১. জয় চৌধুরী (মোট সম্পদ ১১৩০ কোটি ডলার)

জেডস্ক্যালারের সিইও জয় চৌধুরী হিমাচল প্রদেশের ছোট শহর পানোহতে জন্ম গ্রহণ করেন। যুক্তরাষ্ট্রে তিনি ভারতীয় বংশোদ্ভূতদের মধ্যে শীর্ষ ধনকুবের। হিমালয়ের প্রত্যন্ত শহর থেকে ওয়াল স্ট্রিটে তাঁর উত্থান একটি প্রেরণামূলক গল্প। চৌধুরী সান ফ্রান্সিসকো বে এরিয়ার সাইবার সিকিউরিটি শিল্পের অন্যতম সফল ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্যবসায়ী। 

আইবিএমের মতো কোম্পানিতে বিক্রয় এবং বিপণনের ভূমিকায় সংক্ষিপ্ত কর্মজীবনের পর তিনি ক্যালিফোর্নিয়ার সান জোসেতে সাইবার ঝুঁকির সম্মুখীন ব্যবসাগুলোর জন্য একটি ভার্চুয়াল নিরাপত্তা চেকপয়েন্ট জেডস্ক্যালার প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি সিনসিনাটি বিশ্ববিদ্যালয় এবং হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক। তাঁর দাবি, তাঁর সাফল্যের পেছনে অর্থের প্রতি মোহ খুব একটা কাজ করেনি। 

বিনোদ খোসলা২. বিনোদ খোসলা (মোট সম্পদ ৬৭০ কোটি ডলার)

বিনোদ খোসলার মোট সম্পদ ২০২০ সালে ২৩০ কোটি ডলার থেকে বেড়ে ২০২২ সালে হয়েছে ৫৩০ কোটি ডলার। ফোর্বস অনুসারে, সান মাইক্রোসিস্টেমের সাবেক এই সহপ্রতিষ্ঠাতা বর্তমানে দ্বিতীয় শীর্ষ ভারতীয় আমেরিকান ধনকুবের। নয়াদিল্লির মাউন্ট সেন্ট মেরি স্কুল থেকে স্নাতক হওয়ার পর কার্নেগি মেলন বিশ্ববিদ্যালয় এবং স্ট্যানফোর্ড গ্র্যাজুয়েট স্কুল অব বিজনেসে ভর্তির আগে তিনি আইআইটি দিল্লিতে পড়াশোনা করেছেন। 

রাকেশ গাংওয়াল৩. রাকেশ গাংওয়াল (মোট সম্পদ ৫৩০ কোটি ডলার) 

রাকেশ গাংওয়ালের জন্ম কলকাতায়। এখন তিনি ফ্লোরিডার মিয়ামিতে বাস করেন। গাংওয়ালের মোট সম্পত্তি ৪০০ কোটি ডলারেরও বেশি। ভারতের বৃহত্তম কম খরচের এয়ারলাইন ইন্ডিগোর সহপ্রতিষ্ঠাতা। মহামারির কারণে বিমান শিল্পে লোকসান দেখা দিলে গাংওয়ালের সম্পদের পরিমাণেও তার প্রভাব পড়েছিল। 

মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে আইআইএম লক্ষ্ণৌয়ের এই প্রাক্তন ছাত্র পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়ার্টন স্কুলে এমবিএ পড়েছেন। ১৯৮৪ সালে ইউনাইটেড এয়ারলাইনসের জন্য কৌশলগত পরিকল্পনার কাজ করার পর ইউএস এয়ারওয়েজ গ্রুপের চেয়ারম্যান হন তিনি। অভ্যন্তরীণ বাজার শেয়ারের ওপর ভিত্তি করে, ইন্ডিগো এখন ভারতের বৃহত্তম কম খরচের এয়ারলাইনস। 

রমেশ টি ওয়াধওয়ানি৪. রমেশ টি ওয়াধওয়ানি (মোট সম্পদ ৫১০ কোটি ডলার) 

১৯৪৭ সালের দেশভাগের সময় রমেশ টি ওয়াধওয়ানির পরিবার পাকিস্তান থেকে ভারতে চলে আসে। আজ ওয়াধওয়ানি আমেরিকার সবচেয়ে ধনী গুজরাটি। সিম্ফনি টেকনোলজি গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা এবং সিইও ওয়াধওয়ানি একজন স্বনির্মিত উদ্যোক্তা। ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা ওয়াধওয়ানি ফোর্বসের মতে, যুক্তরাষ্ট্রে ভারতীয় বংশোদ্ভূত তৃতীয় শীর্ষ ধনকুবের। তাঁর মোট সম্পদ ২০২০ সালে ৩.৪ বিলিয়ন থেকে ৫.১ বিলিয়ন হয়েছে। ২০২০ সালে ৩৪০ কোটি ডলার থেকে ২০২২ সালে তাঁর সম্পদ বেড়ে দাঁড়ায় ৫১০ কোটি ডলারে। 

ওয়াধওয়ানি একজন জনহিতৈষী হিসেবে পরিচিত। ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে আইআইটি বম্বের এই প্রাক্তন ছাত্র কার্নেগি মেলন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন। তিনি ভারতের মতো দেশে আর্থসামাজিক উন্নয়নের জন্য জাতীয় উদ্যোক্তা নেটওয়ার্কসহ বেশ কয়েকটি উদ্যোগ নিয়ে ওয়াধওয়ানি ফাউন্ডেশন স্থাপন করেছেন। 

জয়শ্রী উল্লাল৫. জয়শ্রী উল্লাল (মোট সম্পদ ৩৪০ কোটি ডলার)

জয়শ্রী উল্লাল ফোর্বস বিলিয়নিয়ার ক্লাবে ভারতীয় বংশোদ্ভূত একমাত্র নারী। কম্পিউটার নেটওয়ার্কিং কোম্পানি আরিস্তা নেটওয়ার্কের প্রেসিডেন্ট এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। জয়শ্রীর বাবা সুদারঞ্জন বেদান্থম একজন পদার্থবিজ্ঞানী। 

জয়শ্রী তাঁর জীবনের প্রথম দিকে পাঁচ বছর লন্ডনে কাটিয়েছেন এবং পরে ভারতে স্থানান্তরিত হন। নয়াদিল্লির কভেন্ট অব জেসাস অ্যান্ড ম্যারি স্কুলে পড়াশোনা করেছেন তিনি। ১৬ বছর বয়সে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে সান ফ্রান্সিসকো স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে বৈদ্যুতিক প্রকৌশল ডিগ্রি অর্জন করেন। সিসকো সিস্টেমস ক্রেসেন্ডো কমিউনিকেশনসকে অধিগ্রহণ করার পর জয়শ্রীকে ডেটা সেন্টার অ্যান্ড সুইচিংয়ের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে উন্নীত করে।

অনিল ভুসরি৬. অনিল ভুসরি (মোট সম্পদ ৩১০ কোটি ডলার)

ওয়ার্কডে ইনকরপোরশনের সহপ্রতিষ্ঠাতা এবং সিইও অনিল ভুসরি ভারতীয় বংশোদ্ভূত একজন শীর্ষ ধনকুবের। তিনি ব্রাউন ইউনিভার্সিটি থেকে বৈদ্যুতিক প্রকৌশলে বিজ্ঞানের স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর স্ট্যানফোর্ড গ্র্যাজুয়েট স্কুল অব বিজনেস থেকে এমবিএ করেছেন। স্ট্যানফোর্ড থেকে এমবিএ করার পর মরগান স্ট্যানলিতে করপোরেট ফিন্যান্স অ্যানালিস্ট হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন তিনি।

অনিল ভুসরি ইন্টেলের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য। এ ছাড়া তিনি গ্রেলকের অংশীদার হিসেবে ফেসবুক, এয়ারবিএনবির মতো সুপরিচিত ব্র্যান্ডে বিনিয়োগ করেছে। ২০১৮ সালে ১৮৫ কোটি ডলার থেকে ২০২০ সালে সম্পদ বেড়ে দাঁড়ায় ২৩০ কোটি ডলার। তিনি বর্তমানে ক্যালিফোর্নিয়ার সান ফ্রান্সিসকোতে অবস্থান করছেন। 

নিরাজ শাহ৭. নিরাজ শাহ (মোট সম্পদ ২৮০ কোটি ডলার) 

ভারতীয় অভিবাসী মা-বাবার সন্তান শাহ। তিনি ১৯৯৫ সালে কর্নেল ইউনিভার্সিটি থেকে প্রকৌশলে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন এবং বর্তমানে মার্কিন ই-কমার্স কোম্পানি ওয়েলফেয়ারের সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ২০০২ সালে তিনি সহপ্রতিষ্ঠিত গৃহস্থালি জিনিসপত্র অনলাইনে লেনদেন করা প্রতিষ্ঠানটির সহপ্রতিষ্ঠাতা নিরাজ শাহ। তাঁর দাদা ভারতে স্টিল ম্যানুফ্যাকচারিং ব্যবসা করতেন। বোস্টনে বাস করেন নিরাজ শাহ। 

জিল শাহকে বিয়ে করেছেন নিরাজ। তাঁদের দুটি সন্তান আছে। নিরাজ শাহ ২০১৭ সালে জিলের সঙ্গে শাহ ফ্যামিলি ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন। এই ফাউন্ডেশন শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবাবিষয়ক কার্যক্রম পরিচালনা করে। (ফোর্বসের ২০২৩ সালের তথ্য অনুযায়ী)

কবিতার্ক রাম শ্রীরাম৮. কবিতার্ক রাম শ্রীরাম (মোট সম্পদ ২৭০ কোটি ডলার)

ভারতের চেন্নাইতে জন্মগ্রহণকারী কবিতার্ক রাম শ্রীরাম ক্যালিফোর্নিয়ায় ভারতীয় বংশোদ্ভূত বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অন্যতম। তাঁর মোট সম্পদের মূল্য ২৩০ কোটি ডলার। গুগলের মূল বিনিয়োগকারীদের মধ্যে তিনি একজন। কবিতার্ক চেন্নাইয়ের লয়োলা কলেজ থেকে গণিতে ডিগ্রি অর্জন করেছেন। 

গুগলে আড়াই লাখ ডলার বিনিয়োগের আগে তিনি আমাজনের প্রতিষ্ঠাতা, সিইও এবং বিশ্বের অন্যতম ধনী ব্যক্তি জেফ বেজোসের সঙ্গে কাজ করেছেন। ২০০০ সালে প্রযুক্তি উদ্যোক্তাদের জন্য একটি ভেঞ্চার ফাইনান্সিং কোম্পানি হিসেবে শেরপালো প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। 

ব্রায়ান শেঠ৯. ব্রায়ান শেঠ (মোট সম্পদ ২৩০ কোটি ডলার) 

টেক্সাসভিত্তিক প্রাইভেট ইকুইটি ফার্ম ভিস্তা ইকুইটি পার্টনারের প্রেসিডেন্ট এবং সাবেক সিইও ব্রায়ান এন শেঠ। তাঁর বাবা ছিলেন ভারত থেকে আসা একজন অভিবাসী এবং মা ছিলেন আইরিশ-ক্যাথলিক। মা একজন বিমা বিশ্লেষক হিসেবে কাজ করতেন। 

ফোর্বসের ২০১৯ সালের ৪০০ ধনী আমেরিকানদের তালিকায় তিনি সর্বকনিষ্ঠ ভারতীয় আমেরিকান ধনকুবের। তিনি একজন সংরক্ষণবাদী এবং পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়ার্টন স্কুলের স্নাতক। শেঠ পরিবেশ ও প্রাণী রক্ষায় নিবেদিত দল গ্লোবাল ওয়াইল্ডলাইফ কনজারভেশনের সহসভাপতি। নিজের ব্যবসা শুরু করার আগে শেঠ বেইন ক্যাপিটাল, ডয়েচে মরগান গ্রেনফেল এবং গোল্ডম্যান শ্যাক্সের বিভিন্ন পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। 

ভরত দেসাই১০. ভরত দেসাই (১৬০ কোটি ডলার) 

ভরত দেসাই কেনিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন এবং ভারতের আহমেদাবাদে বেড়ে ওঠেন। তিনি আইআইটি বোম্বে থেকে বৈদ্যুতিক প্রকৌশল ডিগ্রি অর্জন করেন এবং মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টিফেন এম রস স্কুল অব বিজনেস থেকে ফাইনান্সে এমবিএ সম্পন্ন করেন। তিনি সিনটেলের সহপ্রতিষ্ঠাতা এবং ২০১৮ সালে ১০তম ধনী ভারতীয় আমেরিকান ধনকুবের হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। 

দেসাই দুই হাজার ডলার দিয়ে সিন্টেল শুরু করেন এবং শুরুতে তার মিশিগানের অ্যাপার্টমেন্ট থেকেই কাজ চালান। তিনি এখন ফ্লোরিডায় অবস্থান করছেন। হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি জন এফ কেনেডি স্কুল অব গভর্নমেন্টসহ বেশ কয়েকটি সংস্থার বোর্ডের পদে আছেন তিনি।

সূত্র: ফোর্বস, এপ্রিল ২০২৪

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ট্রাম্পের বাঁ হাতে নতুন কালশিটে দাগ, ফের আলোচনায় প্রেসিডেন্টের স্বাস্থ্য

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
গত ২৪ ডিসেম্বর ফ্লোরিডার পাম বিচে অবস্থিত মার-এ-লাগোতে ‘সান্তা ট্র্যাকার ফোন কল’ অনুষ্ঠানে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এএফপি
গত ২৪ ডিসেম্বর ফ্লোরিডার পাম বিচে অবস্থিত মার-এ-লাগোতে ‘সান্তা ট্র্যাকার ফোন কল’ অনুষ্ঠানে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এএফপি

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাম হাতে কালশিটে বা কালচে দাগ দেখা দেওয়ায় তাঁর শারীরিক অবস্থা নিয়ে নতুন করে জল্পনা শুরু হয়েছে। শপথ নেওয়ার এক বছরের মাথায় ও ৮০ বছরে পা দেওয়ার ঠিক আগমুহূর্তে প্রেসিডেন্টের এই শারীরিক পরিবর্তনগুলো নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন চিকিৎসা বিশেষজ্ঞ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা।

কয়েক মাস ধরে ট্রাম্পের ডান হাতে কালশিটে দাগ দেখা গেলেও সম্প্রতি বেশ কিছু অনুষ্ঠানে তাঁর বাম হাতের পেছনেও একই ধরনের দাগ লক্ষ করা গেছে। হোয়াইট হাউস এর আগে ডান হাতের দাগের কারণ হিসেবে ‘অতিরিক্ত করমর্দন’ ও নিয়মিত ‘অ্যাসপিরিন’ সেবনের কথা বলেছিল। তবে এই নতুন দাগ হোয়াইট হাউসের আগের ব্যাখ্যাকে আরও জটিল করে তুলেছে।

চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা অবশ্য বলছেন, নতুন এই দাগ নিয়ে তাৎক্ষণিক উদ্বেগের কোনো কারণ নেই। তাঁদের মতে, এটি বয়সজনিত সাধারণ একটি অবস্থা হতে পারে। তবে তাঁরা সতর্ক করে বলেছেন, ট্রাম্প তাঁর স্বাস্থ্য নিয়ে বিস্তারিত তথ্য দিতে অনিচ্ছুক থাকায় বিষয়টি নিয়ে যে নজরদারি চলছে, তা আরও বাড়তে পারে।

নর্থওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির ফাইনবার্গ স্কুল অব মেডিসিনের জেনারেল ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক জেফ্রি লিন্ডার মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে বলেন, তাঁরা কৌতূহলের এই চক্রটাকেই আরও উসকে দিচ্ছেন। তিনি সব সময় মানুষের সামনে যান, তাঁর একটা ভাবমূর্তি আছে। এমন ছোট বিষয়ও সেই ভাবমূর্তিকে ক্ষুণ্ন করে।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে ফেরার পর থেকে তাঁর স্বাস্থ্য নিয়ে নানা জল্পনা চলছে। বিষয়টি তাঁর জন্য সংবেদনশীল। কারণ, তিনি প্রায়ই নিজের কর্মশক্তি ও উদ্যমের কথা বলেন।

গত বছরের নির্বাচনের আগে তিনি সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের বয়স ও মানসিক-শারীরিক সক্ষমতা নিয়ে ভোটারদের উদ্বেগ উসকে দিয়েছিলেন। ৮৩ বছর বয়সী বাইডেনকে তিনি এখনো তুলনার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেন এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠানে প্রায়ই বলেন, ‘আপনি কি মনে করেন, বাইডেন এটা করতে পারতেন?’

তবে তুলনামূলকভাবে ব্যস্ত সূচি বজায় রাখলেও ট্রাম্প নিজেও স্বাস্থ্যসংক্রান্ত প্রশ্ন এড়াতে পারেননি। গ্রীষ্মকালে তাঁর পা ফুলে যাওয়ার ছবি প্রকাশের পর হোয়াইট হাউস জানায়, ট্রাম্প ‘ক্রনিক ভেনাস ইনসাফিসিয়েন্সি’ নামে একধরনের শিরার রোগে আক্রান্ত। এটি সাধারণত বয়স্কদের মধ্যে দেখা যায়।

চলতি সপ্তাহে ট্রাম্পের বাঁ হাতের দাগ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে হোয়াইট হাউস নতুন কোনো ব্যাখ্যা দিতে অস্বীকৃতি জানায়। হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জনগণের মানুষ। তিনি প্রতিদিন ইতিহাসের যেকোনো প্রেসিডেন্টের চেয়ে বেশি মানুষের সঙ্গে দেখা করেন ও হাত মেলান।

কিন্তু একাধিক চিকিৎসা বিশেষজ্ঞ সিএনএনকে বলেছেন, ট্রাম্প যেহেতু ডানহাতি, তাই বাঁ হাতের দাগ কেবল হাত মেলানোর কারণেই হয়েছে—এমন সম্ভাবনা কম। তবে হ্যাঁ, বয়স ও অ্যাসপিরিন সেবনের কারণে এমন দাগ দেখা দিতে পারে।

জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির স্কুল অব মেডিসিনের অধ্যাপক ও সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট ডিক চেনির দীর্ঘদিনের চিকিৎসক জোনাথন রাইনার বলেন, কখনো কখনো সামান্য আঘাত বা কোথাও ধাক্কা লাগলেও এমন দাগ হতে পারে।

রাইনার জানান, তিনি ব্যক্তিগতভাবে ট্রাম্পকে কখনো পরীক্ষা করেননি। তবে তিনি বলেন, অ্যাসপিরিনের চেয়ে শক্তিশালী ওষুধ সেবনকারীদের মধ্যেও এমন দাগ দেখা যায়। এতে প্রশ্ন উঠেছে—ট্রাম্প কি তাঁর সব ওষুধের তথ্য প্রকাশ করেছেন?

রাইনার অবশ্য বলেছেন, এমন ওষুধ সেবন করা খুবই সাধারণ এবং এটি বড় কোনো স্বাস্থ্যঝুঁকির ইঙ্গিত নয়। উদাহরণ হিসেবে তিনি অফিসে থাকাকালে বাইডেনের ‘ইলিকুইস’ নামে রক্ত পাতলা করার ওষুধ ব্যবহারের তথ্য প্রকাশের কথা উল্লেখ করেন।

রাইনার বলেন, এখন প্রশ্নটা চিকিৎসার চেয়ে স্বচ্ছতা নিয়ে বেশি। হোয়াইট হাউস ট্রাম্পের ওষুধসংক্রান্ত প্রশ্নের জবাব না দিয়ে স্বাস্থ্য নিয়ে অতিরিক্ত নজরদারির সমালোচনাই বেশি করে।

এদিকে হোয়াইট হাউসে ফেরার আগে থেকে ট্রাম্পের ডান হাতে কালশিটে দাগ ছিল। তিনি সেটি ভারী মেকআপ বা ব্যান্ডেজ দিয়ে ঢাকতে শুরু করলে এবং ক্যামেরা থেকে আড়াল করতে অন্য হাত ব্যবহার করলে বিষয়টি আরও আলোচনায় আসে।

ক্রনিক ভেনাস ইনসাফিসিয়েন্সি রোগের তথ্য জানানোর সময়ই হোয়াইট হাউস ডান হাতের দাগের প্রসঙ্গ তোলে। সে সময় তাঁর চিকিৎসকের চিঠিতে বলা হয়, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সুস্বাস্থ্যের অধিকারী। তিনি সব দিক থেকে সুস্থ আছেন।

গত এপ্রিলে করা শারীরিক পরীক্ষার পর অক্টোবরে হঠাৎ আবার ওয়াল্টার রিড হাসপাতালে যান ট্রাম্প। হোয়াইট হাউস তখন এটিকে ‘রুটিন’ পরীক্ষা বললেও পরে ট্রাম্প নিজেই জানান, তাঁর এমআরআই করা হয়েছিল। শুরুতে তিনি বলেন, ফলাফল ‘ভালো’, তবে কোন অংশের স্ক্যান হয়েছে—তা তিনি জানেন না বলে জানান। এই অস্পষ্টতায় নতুন করে প্রশ্ন ওঠে।

কয়েক সপ্তাহ পর ট্রাম্পের চিকিৎসক শন বারবাবেলা জানান, তাঁর হৃদ্‌যন্ত্র ও পেটের অংশের ইমেজিং করা হয়েছে এবং ফলাফল ‘সম্পূর্ণ স্বাভাবিক’। তিনি বলেন, এই বয়সী পুরুষদের ক্ষেত্রে এমন পরীক্ষা উপকারী।

তবে জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির স্কুল অব মেডিসিনের অধ্যাপক রাইনার তখন বলেন, এ ধরনের পরীক্ষা সাধারণ নিয়ম নয় এবং এটি সম্ভবত কোনো চিকিৎসাজনিত উদ্বেগ থেকেই করা হয়েছে। কিন্তু হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তারা এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশের দাবিকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মনে করেন।

গত মাসে ওভাল অফিসের এক অনুষ্ঠানে ট্রাম্পকে কিছু সময়ের জন্য ঘুমিয়ে পড়তে দেখা যায়। কিন্তু এমন দাবি নাকচ করে হোয়াইট হাউস একে ‘ভিত্তিহীন গল্প’ বলে উড়িয়ে দেয়। পরে এটি নিয়ে নিউইয়র্ক টাইমসে প্রতিবেদন ছাপা হলে ট্রাম্প ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। তবে চলতি মাসে মন্ত্রিসভার এক বৈঠকে তাঁকে আবারও তন্দ্রাচ্ছন্ন দেখা যায়।

এখন বাঁ হাতের দাগের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় ট্রাম্পের স্বাস্থ্য নিয়ে আবার আলোচনা শুরু হয়েছে।

কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেনশিয়াল ইতিহাসবিদ টিমোথি নাফতালি বলেন, প্রেসিডেন্ট তরুণ নন। যখন শক্তির ভাবমূর্তি অতিরিক্তভাবে তুলে ধরা হয়, তখন সামান্য দুর্বলতাও বড় হয়ে ধরা দেয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

দক্ষিণ আফ্রিকায় ঐতিহ্যবাহী গণখতনা, সংক্রমণ ও পানিশূন্যতায় মৃত্যু ৪১

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
দক্ষিণ আফ্রিকায় সাবালক হওয়ার ঐতিহ্যবাহী আচার-অনুষ্ঠানগুলো অত্যন্ত গোপনীয়। ছবি: এএফপি
দক্ষিণ আফ্রিকায় সাবালক হওয়ার ঐতিহ্যবাহী আচার-অনুষ্ঠানগুলো অত্যন্ত গোপনীয়। ছবি: এএফপি

দক্ষিণ আফ্রিকায় সাবালক হওয়ার ঐতিহ্যবাহী ধর্মীয় উৎসব (খতনা) পালন করতে গিয়ে গত দুই মাসে অন্তত ৪১ জন তরুণের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) দেশটির সংস্কৃতিবিষয়কমন্ত্রী ভেলেনকোসিনি হ্লাবিসা এ তথ্য জানিয়েছেন। মৃত তরুণদের অধিকাংশই খতনাপরবর্তী সংক্রমণ ও ডিহাইড্রেশন বা পানিশূন্যতার কারণে প্রাণ হারিয়েছে বলে জানা গেছে।

বার্তা সংস্থা এপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতিবছর নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে দক্ষিণ আফ্রিকার খোসা, এনদেবেলে, সোথো ও ভেন্ডা সম্প্রদায়ের কিশোর ও তরুণেরা ঐতিহ্যবাহী এই উৎসবে অংশ নেয়। দক্ষিণ আফ্রিকার শিশু আইন (২০০৫) অনুযায়ী, সাধারণত ১৬ বছরের বেশি বয়সীদের খতনা করানো হয়। এর নিচে খতনা করানো দেশটিতে আইনত নিষিদ্ধ।

মন্ত্রী ভেলেনকোসিনি হ্লাবিসা স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে জানান, ৪১ তরুণের মৃত্যুর পেছনে স্কুলগুলোর চরম অবহেলা ও অভিভাবকদের অসচেতনতাই দায়ী। তিনি জানান, যেসব স্কুলে খতনার অনুষ্ঠান হয়, তারা অনেক সময় তরুণদের পানি পান করতে বাধা দেয়। তাদের ধারণা, পানি না খেলে ক্ষত দ্রুত শুকাবে। কিন্তু অতিরিক্ত গরমে পানিশূন্যতার কারণে এটি মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

দক্ষিণ আফ্রিকার আইন অনুযায়ী, যেসব স্কুলে খতনা করানো হয়, তাদের নিবন্ধন করা বাধ্যতামূলক। কিন্তু দেশটিতে প্রচুর অবৈধ স্কুল গড়ে উঠেছে, যেখানে ১৬ বছরের নিচেও খতনা করানোর প্রমাণ পাওয়া গেছে। আর অধিকাংশ মৃত্যু এসব অনিবন্ধিত স্কুলেই ঘটেছে। এ ছাড়া অনেক অভিভাবক তাঁদের সন্তানদের স্কুলে পাঠানোর পর আর কোনো খোঁজ নেন না বা স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে কি না, তা-ও তদারকি করেন না।

দক্ষিণ আফ্রিকার ইস্টার্ন কেপ প্রদেশকে এই মৃত্যুর ‘হটস্পট’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সেখানে ২১ জন তরুণ মারা গেছে। এ ছাড়া ফ্রি স্টেট প্রদেশে ১৩ জন এবং অন্যান্য এলাকায় আরও সাতজনের মৃত্যু রেকর্ড করা হয়েছে।

মন্ত্রী ভেলেনকোসিনি হ্লাবিসা আরও জানান, অবৈধ স্কুলগুলোতে অভিযান চালিয়ে এখন পর্যন্ত ৪১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে দেশটির পুলিশ। সংক্রমণের শিকার হয়ে আরও প্রায় ২০০ জন তরুণ বর্তমানে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।

আফ্রিকান সংস্কৃতিতে ছেলেদের ঘর থেকে দূরে নির্জন স্থানে নিয়ে গিয়ে সামাজিক মূল্যবোধ, দায়িত্ব ও যুদ্ধের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এর একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হলো অস্ত্রোপচার ছাড়াই ঐতিহ্যবাহী পদ্ধতিতে খতনা। উৎসব শেষে তরুণেরা যখন বাড়ি ফেরে, তখন বড় ধরনের উদ্‌যাপন করা হয়। তবে প্রতিবছরই এই ‘ম্যানহুড’ বা পুরুষত্ব প্রমাণের পরীক্ষায় শত শত তরুণ পঙ্গুত্ববরণ করে কিংবা প্রাণ হারায়।

তবে দেশটির সরকার এবার ঘোষণা করেছে, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে সব অংশীদারকে নিয়ে একটি জাতীয় সম্মেলন ডাকা হবে, যাতে এই উৎসবের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে ভবিষ্যতে মৃত্যুর হার শূন্যে নামিয়ে আনা যায়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ব্রিটেনের রানি ক্যামিলাও যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছিলেন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ব্রিটেনের রানি ক্যামিলা। ফাইল ছবি
ব্রিটেনের রানি ক্যামিলা। ফাইল ছবি

ব্রিটেনের রানি ক্যামিলা কিশোর বয়সে ট্রেনে এক ব্যক্তির হামলার শিকার হওয়ার অভিজ্ঞতার কথা প্রথমবারের মতো প্রকাশ্যে বলেছেন। বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, ওই হামলার ঘটনা তাঁকে তীব্র ক্ষোভে ভরিয়ে দিয়েছিল।

আজ বুধবার নারী নির্যাতন বিষয়ে প্রচারিত এক আলোচনায় ক্যামিলা বলেন, ‘আমি যখন কিশোরী ছিলাম, তখন ট্রেনে আমার ওপর হামলা হয়েছিল। সেই সময় আমি ভীষণ রেগে গিয়েছিলাম। এটা এখনো মনে আছে। আমি তখন বই পড়ছিলাম। হঠাৎ এই ছেলেটি বা বলা ভালো লোকটি আমার ওপর হামলা করে। আমি তার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করেছিলাম।’

রাজা তৃতীয় চার্লসের স্ত্রী জানান, যিনি তাঁর ওপর হামলা করেছিলেন, তাঁকে তিনি চিনতেন না।

৭৮ বছর বয়সী ক্যামিলা দীর্ঘদিন ধরে যৌন ও পারিবারিক সহিংসতা বন্ধে কাজ করা বিভিন্ন দাতব্য সংস্থা ও উদ্যোগের পৃষ্ঠপোষকতা করে আসছেন এবং ভুক্তভোগীদের সহায়তায় সক্রিয় ভূমিকা রাখছেন।

এই হামলার ঘটনা প্রথম প্রকাশ পায় গত সেপ্টেম্বরে, যখন রাজপরিবার নিয়ে লেখা একটি বই দ্য টাইমস পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে ছাপা হয়। তবে এর আগে বাকিংহাম প্যালেস থেকে বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করা হয়নি।

বিবিসিকে ক্যামিলা বলেন, ‘আমি ট্রেন থেকে নামার পর আমার মা আমার দিকে তাকিয়ে বলেছিলেন, “তোমার চুল এমন এলোমেলো কেন? আর তোমার কোটের বোতাম কোথায়?’”

ক্যামিলা বলেন, ‘ঘটনাটি আমাকে ভীষণ ক্ষুব্ধ করেছিল। সেই অনুভূতি বহু বছর ধরে মনের ভেতর কোথাও রয়ে গেছে।’

ওই বইয়ে বলা হয়, ঘটনাটি ঘটে লন্ডনের প্যাডিংটন স্টেশনের দিকে যাওয়া একটি ট্রেনে। তখন ক্যামিলার বয়স ছিল প্রায় ১৬ বা ১৭ বছর। জুতা খুলে হামলাকারীর যৌনাঙ্গে আঘাত করেছিলেন তিনি।

বইটিতে বলা হয়, প্যাডিংটন স্টেশনে পৌঁছানোর পর তিনি এক কর্মকর্তাকে হামলাকারীকে দেখিয়ে দেন এবং পরে ওই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়। তবে সাক্ষাৎকারে ক্যামিলা এসব বিস্তারিত তথ্য নিশ্চিত করেননি।

তথ্যসূত্র: রয়টার্স

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নির্বাচনে প্রথম ধাপে ভোট পড়েছে ৫২ শতাংশ, দাবি মিয়ানমারের জান্তা সরকারের

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
গত রোববার মিয়ানমারে প্রথম ধাপের ভোট গ্রহণ শেষ হয়েছে। ছবি: রয়টার্সের সৌজন্যে
গত রোববার মিয়ানমারে প্রথম ধাপের ভোট গ্রহণ শেষ হয়েছে। ছবি: রয়টার্সের সৌজন্যে

মিয়ানমারে সাধারণ নির্বাচনের প্রথম ধাপে ৫২ দশমিক ১৩ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে দাবি করেছে দেশটির ক্ষমতাসীন জান্তা সরকার। ২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর এই প্রথম দেশটিতে তিন ধাপে বিতর্কিত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তবে আগের দুটি নির্বাচনের তুলনায় এবারের ভোটার উপস্থিতি কম।

জান্তা সরকারের মুখপাত্র জাও মিন তুন রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমকে জানান, ১০২টি টাউনশিপের প্রায় ৬০ লাখ মানুষ প্রথম ধাপে ভোট দিয়েছেন। তিনি এই উপস্থিতিকে ‘গর্বের বিষয়’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের প্রায় পাঁচ বছর পর তিন ধাপে নির্বাচনের আয়োজন করেছে জান্তা সরকার। গত রোববার (২৮ ডিসেম্বর) প্রথম ধাপের ভোট গ্রহণ শেষ হয়।

আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর তথ্যমতে, ২০১৫ ও ২০২০ সালের নির্বাচনে মিয়ানমারে প্রায় ৭০ শতাংশ ভোট পড়েছিল। এবার তা ৫২ শতাংশে নেমে আসায় নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। জাতিসংঘ, পশ্চিমের দেশগুলো এবং হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এই নির্বাচনকে ‘প্রহসন’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছে।

বিরোধী দলগুলোকে অংশ নিতে না দেওয়া এবং নির্বাচনের সমালোচনা করাকে বেআইনি ঘোষণা করায় আন্তর্জাতিক মহলে এই ভোট কোনো গ্রহণযোগ্যতা পায়নি।

তবে জান্তা মুখপাত্র জাও মিন তুন বলেন, ‘অনেক উন্নত গণতান্ত্রিক দেশেও ভোটার উপস্থিতি ৫০ শতাংশের বেশি হয় না। সেই তুলনায় আমাদের এই হার অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক।’

নির্বাচনের গতিবিধি বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, অবসরপ্রাপ্ত জেনারেলদের নেতৃত্বাধীন ‘ইউনিয়ন সলিডারিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টির’ (ইউএসডিপি) হাতেই এবার ক্ষমতা যাবে। কারণ, জনপ্রিয় বিরোধী দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসিকে (এনএলডি) বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে।

পরবর্তী রাউন্ডের ভোট গ্রহণ হবে আগামী ১১ জানুয়ারি এবং ২৫ জানুয়ারি। মোট ৩৩০টি শহরের মধ্যে ২৬৫টিতে ভোট হবে। যদিও এর অনেক অঞ্চলেই জান্তা সরকারের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেই।

এদিকে ২০২০ সালের নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয়ী এনএলডি নেত্রী অং সান সু চি এখনো বন্দী অবস্থায় আছেন। তখন থেকেই মিয়ানমারের জান্তা সরকারের অধীনে ব্যাপক গৃহযুদ্ধ চলছে। বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো অনেক গুরুত্বপূর্ণ সীমান্ত এলাকা দখল করে নিয়েছে।

এই অস্থিতিশীলতার মধ্যেই নির্বাচন আয়োজন করে আন্তর্জাতিক বৈধতা পাওয়ার চেষ্টা করছে সামরিক সরকার। তবে এশিয়ান নেটওয়ার্ক ফর ফ্রি ইলেকশনস জানিয়েছে, জান্তা সরকারের নির্বাচনী আইনে ভোটার উপস্থিতির কোনো ন্যূনতম সীমা নেই। এটি তাদের ভোটার উপস্থিতির যেকোনো হারকেই বৈধতা দেওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত