Ajker Patrika

পাকিস্তানে ‘সন্ত্রাসীদের ঘাঁটি’ গুঁড়িয়ে দিয়েছে ক্ষেপণাস্ত্র, ভারতীয় দাবির সত্যতা কতটুকু

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৯ মে ২০২৫, ১১: ২১
ভারতের হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত মুরিদকের সেই কমপ্লেক্সের একটি ভবন। ছবি: আল-জাজিরার সৌজন্যে
ভারতের হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত মুরিদকের সেই কমপ্লেক্সের একটি ভবন। ছবি: আল-জাজিরার সৌজন্যে

পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের মুরিদকে ভারতের চালানো ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ৩ প্রশাসনিক কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন। পাকিস্তান জানিয়েছে, হামলায় বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে। ভারতের দাবি, লক্ষ্য ছিল সন্ত্রাসী অবকাঠামো। তবে আল-জাজিরা সরেজমিনে গিয়ে দেখতে পেয়েছে এটি মূলত একটি কমপ্লেক্স। যেখানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, আবাসিক ভবন ও মসজিদ রয়েছে। হামলায় একটি মসজিদও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

গত ৬ মে দিবাগত রাতে মুরিদকেতে চালানো এই হামলাটি ছিল ভারতীয় সামরিক অভিযান ‘অপারেশন সিন্দুর’—এর অংশ। ভারত বলছে, এটি ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পেহেলগামে চালানো প্রাণঘাতী হামলার প্রতিশোধ। ওই হামলায় ২৬ পর্যটক নিহত হন। ভারত সরাসরি পাকিস্তানকে দায়ী করলেও ইসলামাবাদ এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

মুরিদকে শহরটি লাহোর থেকে মাত্র ৩০ কিলোমিটার দূরে। ইসলামাবাদ থেকে চার ঘণ্টার পথ। শহরটির জনসংখ্যা আড়াই লাখের বেশি। দীর্ঘদিন ধরেই ভারত দাবি করে আসছে, এখানেই লস্কর-ই-তৈয়্যবার (এলইটি) সদর দপ্তর অবস্থিত।

হামলার মূল লক্ষ্য ছিল ‘সরকারি স্বাস্থ্য ও শিক্ষা কমপ্লেক্স’ নামে পরিচিত একটি বিশাল এলাকা, যেখানে একটি হাসপাতাল, দুটি স্কুল, একটি হোস্টেল ও একটি বড় মাদ্রাসা রয়েছে। ৮০টি আবাসিক ভবনের এই কমপ্লেক্সে সরকারি কর্মচারী ও তাদের পরিবারসহ প্রায় ৩০০ মানুষ বসবাস করেন। মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে তিন হাজারের বেশি শিক্ষার্থী পড়াশোনা করেন।

পাকিস্তানি কর্মকর্তারা জানান, হামলার পরপরই কমপ্লেক্সের একটি প্রশাসনিক ভবনে তিনজন নিহত হন। তাঁরা সবাই ২০ থেকে ৩০ বছর বয়সী এবং প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত ছিলেন। নিহতদের মধ্যে কেউ কেউ সেখানে জরুরি দায়িত্ব পালনের জন্য অবস্থান করছিলেন। এক কর্মকর্তা আহত হয়েছেন।

বুধবার ভারতীয় হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় একটি মসজিদও। ঘটনাস্থলে থাকা এক উদ্ধারকারী কর্মকর্তা আল-জাজিরাকে বলেন, হামলার আধঘণ্টার মধ্যেই তিনি সেখানে পৌঁছেছিলেন। প্রশাসনিক ভবনের একটি ঘরের দিকে নির্দেশ করে তিনি বলেন, ‘প্রথম মরদেহ আমিই খুঁজে পেয়েছিলাম।’

সরকারি কর্মকর্তা তৌসিফ হাসান আল-জাজিরাকে বলেন, ‘সেদিন রাতে ভারতীয় ক্ষেপণাস্ত্র প্রথম মুরিদকেতেই আঘাত হানে।’ তিনি জানান, মাঝরাতের কিছুক্ষণ পর তিনি বিকট দুটি শব্দ শোনেন। শব্দ দুটি দুই মিনিটের ব্যবধানে হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘আমরা এর জন্য আগে থেকেই প্রস্তুত ছিলাম। কী ঘটেছে, আমি ঠিক বুঝতে পেরেছিলাম।’

এই কমপ্লেক্সের মসজিদটির নাম উম্মুল কুরা। এর বিশাল প্রার্থনা কক্ষের ছাদের কিছু অংশ ধসে পড়েছে ভারতীয় হামলায়। ছাদের দুটি বিশাল গর্ত ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানার স্থান নির্দেশ করে। তৌসিফ হাসান এবং তাঁর সহকর্মী উসমান জালিস জানান, দুই সপ্তাহ আগে পেহেলগাম হামলার পর পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ মুরিদকে হামলার ঝুঁকির মূল্যায়ন করেছিল। ভারত দীর্ঘদিন ধরে এই শহর ও কমপ্লেক্সটিকে এলইটির সদর দপ্তর বলে দাবি করে আসছে। এই দাবির কারণে হামলার আশঙ্কা ছিল।

উসমান জালিস আল-জাজিরাকে বলেন, ‘আমাদের জানানো হয়েছিল, মুরিদকে হামলার লক্ষ্যবস্তু হতে পারে। এ কারণেই আমরা কমপ্লেক্সের কর্মী ও বাসিন্দাদের সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলাম।’ যারা নিহত হয়েছেন, তারা জরুরি কাজের জন্য থেকে যাওয়া সীমিতসংখ্যক কর্মীর অংশ ছিলেন।

মসজিদের বারান্দার একপাশে একটি বড় টেবিলে ভবনগুলোতে আঘাত হানা ক্ষেপণাস্ত্রের টুকরাগুলো রাখা ছিল। বিস্ফোরকের গন্ধ এবং ধাতব খণ্ডগুলোতে তখনো তপ্ত ছিল। তৌসিফ হাসান ও উসমান জালিস জোর দিয়ে বলেছেন, মাদ্রাসা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো সম্পূর্ণ সরকারি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তবে কমপ্লেক্সটির প্রতিষ্ঠার ইতিহাস আরও জটিল।

কমপ্লেক্সটি ১৯৮৮ সালে প্রতিষ্ঠা করেন হাফিজ সাঈদ। তিনি জামাত-উদ-দাওয়া (জেইউডি) নামের একটি দাতব্য প্রতিষ্ঠানেরও প্রতিষ্ঠাতা। জেইউডি দাতব্য সংস্থা হলেও এটি ব্যাপকভাবে এলইটি-এর ছায়া সংগঠন হিসেবে পরিচিত। কমপ্লেক্সের মাদ্রাসাটির নাম জামিয়া দাওয়া ইসলামি। এই নামটি জেইউডি-র নামে রাখা হয়েছে।

ভারতের অভিযোগ, হাফিজ সাঈদ ও এলইটি ভারতের ভূখণ্ডে বেশ কয়েকটি হামলা চালিয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ২০০৮ সালের নভেম্বরের মুম্বাই হামলা। ওই হামলায় কয়েক দিনে ১৬০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছিলেন।

আবিদ হোসেন নামের ৫১ বছর শিক্ষক এই কমপ্লেক্সেই বসবাস করেন। তিনি জোর গলায় ভারতের দাবি অস্বীকার করেন। ভারত দাবি করেছিল, এটি ‘প্রশিক্ষণ কেন্দ্র’ বা ‘কোনো সন্ত্রাসী সংগঠনের সদর দপ্তর।’ তিনি আল-জাজিরাকে বলেন, ‘এই কমপ্লেক্সটি সব সময়ই ছেলে-মেয়েদের জন্য একটি শিক্ষাকেন্দ্র ছিল। আমি গত ৩০ বছর ধরে এখানে বসবাস করছি এবং নিজেই এখানে শিক্ষকতা করি।’

ওই শিক্ষক আরও বলেন, এই এলাকা যোদ্ধাদের প্রশিক্ষণের জন্য ব্যবহৃত হতো—এমন অভিযোগও সঠিক নয়। তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘আমাদের শিক্ষার্থীদের সাঁতার, ঘোড়া চালানো বা শারীরিক প্রশিক্ষণের সুযোগ দেওয়ার মতো মাঠ ও সুবিধা যদি থাকে, তবে কেন এর মানে হবে যে এখানে সন্ত্রাসীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়?’

২০১৯ সালে পাকিস্তানি সরকার জেইউডি-এর কাছ থেকে এই কমপ্লেক্সটির নিয়ন্ত্রণ নেয়। সে সময় সাঈদ ও এলইটি-র বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য দেশটির ওপর আন্তর্জাতিক চাপ ছিল। নিষিদ্ধ সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর অর্থায়ন বন্ধে যথেষ্ট পদক্ষেপ না নেওয়া দেশগুলোর ‘ধূসর তালিকায়’ (গ্রে লিস্ট) অন্তর্ভুক্ত হওয়ার ঝুঁকিও ছিল পাকিস্তানের।

মসজিদের পেছনে একটি রাস্তা রয়েছে। সেখানে দুটি বাড়ি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। চারদিকে সোলার প্যানেল ও ভাঙা ইট ছড়িয়ে ছিল। হামলার রাতের কথা মনে করে বাসিন্দা আলী জাফর ধ্বংস হওয়া ভবনগুলোর পেছনের নিজের বাড়িটির দিকে নির্দেশ করেন। তিনি বলেন, ‘বিস্ফোরণের শব্দ অন্তত সাত কিলোমিটার দূরে থেকেও শোনা গিয়েছিল।’ তিনি পরিবারের সঙ্গে এক আত্মীয়ের বাড়িতে চলে গিয়েছিলেন। সেই বাড়ির কাছ থেকেও বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়।

জাফর বলেন, ‘কয়েক দিন আগে কর্তৃপক্ষ আমাদের জায়গাটি ছেড়ে দিতে বলেছিল। তাই আমরা কমপ্লেক্সের বাইরে চলে গিয়েছিলাম।’ জাফর আরও বলেন, ‘এটা নিশ্চিত ছিল যে, ভারত এই এলাকায় হামলা চালাবে। কারণ, তাদের মিডিয়া বারবার মুরিদকেকে তুলে ধরছিল।’

তৌসিফ হাসান বলেন, শিক্ষাবর্ষ শেষ হওয়ায় মাদ্রাসা ও স্কুল বন্ধ ছিল। তবে পুরো কমপ্লেক্সটি কঠোর সরকারি নজরদারিতে ছিল। তিনি বলেন, ‘২০১৯ সালে সরকার প্রতিষ্ঠানটির প্রশাসন নিজের হাতে নেওয়ার পর আমরা নিশ্চিত করেছি যে এখানকার পাঠ্যক্রম ও শিক্ষাদান সম্পূর্ণভাবে তদারকি করা হয়।’

শিক্ষক আবিদ হোসেন জানান, সরকার নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর সাঈদ আর কমপ্লেক্সে আসেননি। তিনি বলেন, ‘নব্বইয়ের দশকের শেষ দিকে ও ২০০০ সালের শুরুর দিকে তিনি নিয়মিত আসতেন।’ সাঈদের বয়স এখন সত্তরের বেশি। ২০১৯ সালে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। ২০২২ সালে পাকিস্তানের একটি আদালত দুটি ‘সন্ত্রাসে অর্থায়ন’ মামলায় তাঁকে ৩১ বছরের কারাদণ্ড দেন। একই ধরনের অভিযোগে ২০২০ সালে তাঁকে আলাদা ১৫ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদন

হাদির খুনিদের দুই সাহায্যকারীকে আটকের দাবি নাকচ করল মেঘালয় পুলিশ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ। ছবি: এএনআই
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ। ছবি: এএনআই

ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) জানিয়েছে, শরিফ ওসমান বিন হাদি হত্যাকাণ্ডে মূল দুই আসামি ফয়সাল করিম ওরফে মাসুদ ওরফে রাহুল, মোটরসাইকেলচালক আলমগীর শেখ দুজনেই ভারতে পালিয়ে গেছেন। ব্যক্তিগত সম্পর্কের সূত্র ধরে মেঘালয় পুলিশ পুর্তি ও সামী নামে ভারতের দুই নাগরিককে আটক করেছে।

তবে মেঘালয় পুলিশের বরাত দিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের পুলিশের এই দাবি সঠিক নয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের কিছু সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত ‘ভিত্তিহীন ও বানোয়াট’ খবরের প্রতিবাদ জানিয়েছে ভারতের মেঘালয় পুলিশ ও সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। ওসমান হাদি হত্যা মামলার দুই প্রধান আসামি অবৈধভাবে সীমান্ত পার হয়ে ভারতে প্রবেশ করেছে—এমন দাবি ‘সম্পূর্ণ মিথ্যা’। ভারতের জ্যেষ্ঠ নিরাপত্তা কর্মকর্তার বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যাচাই-বাছাই ছাড়া এ ধরনের সংবেদনশীল তথ্য প্রচার সীমান্তের শান্তি ও স্থিতিশীলতাকে বিঘ্নিত করার পাশাপাশি প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যকার নিরাপত্তামূলক আস্থায় ফাটল ধরাতে পারে।

বাংলাদেশ পুলিশের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ওসমান হাদি হত্যা মামলায় অভিযুক্ত ফয়সাল করিম মাসুদ ও আলমগীর শেখ ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে মেঘালয়ে প্রবেশ করেছে এবং বর্তমানে তাঁরা ভারতের অভ্যন্তরে অবস্থান করছেন। ‘পুর্তি’ নামক এক স্থানীয় সহায়তাকারী এবং ‘সামী’ নামে এক ট্যাক্সি চালক তাঁদের মেঘালয়ের তুরা শহরে পৌঁছে দিয়েছেন।

হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আজ রোববার এই দাবির বিষয়ে মেঘালয় পুলিশ সদর দপ্তরের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বলেন, ‘বাংলাদেশ পুলিশের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক বা অনানুষ্ঠানিক কোনো তথ্যই আমাদের জানানো হয়নি। আমাদের গোয়েন্দা তৎপরতা ও মাঠ পর্যায়ের ভেরিফিকেশনে ওই অভিযুক্তদের গারো হিলস বা মেঘালয়ের কোথাও কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।’ তিনি আরও বলেন, প্রতিবেদনে উল্লিখিত ‘পুর্তি’ বা ‘সামী’ নামক কোনো ব্যক্তিরও হদিস পাওয়া যায়নি এবং কাউকে গ্রেপ্তার করার খবরটিও বানোয়াট।

মেঘালয় পুলিশের পাশাপাশি বিএসএফ-ও এই অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছে বলে জানিয়েছে হিন্দুস্তান টাইমস। বিএসএফের মেঘালয় ফ্রন্টিয়ারের ইন্সপেক্টর জেনারেল (আইজি) ও. পি. উপাধ্যায়ের বিবৃতির বরাত দিয়ে জানানো হয়েছে, হালুয়াঘাট সেক্টর দিয়ে কোনো অপরাধী বা সন্দেহভাজন ব্যক্তির ভারতে প্রবেশের কোনো প্রমাণ বা ইন্টেলিজেন্স ইনপুট তাঁদের কাছে নেই। বিএসএফ অত্যন্ত কঠোর প্রটোকল মেনে সীমান্ত পাহারা দেয় এবং এমন কোনো অনুপ্রবেশ আমাদের নজরে আসেনি। তিনি এই ধরনের দাবিকে ‘বিভ্রান্তিকর’ বলে অভিহিত করেছেন।

ভারতীয় কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, জ্যেষ্ঠ নিরাপত্তা কর্মকর্তারা মনে করেন, মেঘালয় একটি সংবেদনশীল সীমান্ত রাজ্য হওয়ার কারণে এখানে নিয়মিত আন্তসীমান্ত অপরাধ ও ছোটখাটো সংঘর্ষের মোকাবিলা করতে হয়। এমন পরিস্থিতিতে সংবাদমাধ্যমে যাচাই না করা তথ্য ছড়ালে সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে বিভ্রান্তি ও উত্তেজনা সৃষ্টি হতে পারে।

অনুপ্রবেশের খবরটি নাকচ করা হলেও, বাড়তি সতর্কতা হিসেবে মেঘালয় পুলিশ ও বিএসএফ সীমান্তে নজরদারি আরও জোরদার করেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, সীমান্তে নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা একটি স্বাভাবিক প্রশাসনিক পদক্ষেপ এবং এটি কোনোভাবেই বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত ওই ভুল খবরের সত্যতা নিশ্চিত করে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সহিংসতা ও প্রত্যাখ্যানের মধ্যে মিয়ানমারে চলছে ‘প্রহসনের’ নির্বাচন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

গৃহযুদ্ধে বিধ্বস্ত মিয়ানমারে শুরু হয়েছে এক বিতর্কিত নির্বাচন, যা দেশ-বিদেশে ‘প্রহসন’ হিসেবে প্রত্যাখ্যাত। প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর অনুপস্থিতি, শীর্ষ নেতাদের কারাবাস এবং চলমান সংঘাতের কারণে প্রায় অর্ধেক জনগোষ্ঠীর ভোটাধিকারবঞ্চিত হওয়ার প্রেক্ষাপটে এই নির্বাচন হচ্ছে।

সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের প্রায় পাঁচ বছর পর তিন ধাপে নির্বাচনের আয়োজন করেছে সামরিক জান্তা সরকার। ওই অভ্যুত্থান দেশজুড়ে ব্যাপক প্রতিবাদের জন্ম দিয়েছিল, যা পরে গৃহযুদ্ধে রূপ নেয়।

পর্যবেক্ষকদের মতে, চীনের সমর্থনে জান্তা সরকার তাদের ক্ষমতাকে বৈধতা দিতে চাইছে, তা সুসংহত করতে চাইছে, যাতে তারা চলমান অস্থিতিশীলতা থেকে উত্তরণের পথ খুঁজে পায়।

বিবিসি জানিয়েছে, মিয়ানমারে আজ রোববার শুরু হওয়া ভোট গ্রহণের মধ্যে দেশটির একাধিক অঞ্চলে বিস্ফোরণ ও বিমান হামলার খবর পাওয়া গেছে।

মান্দালয় অঞ্চলের মুখ্যমন্ত্রী বিবিসিকে নিশ্চিত করেন, আজ ভোরে ওই অঞ্চলের একটি জনশূন্য বাড়িতে রকেট হামলার পর তিনজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

এর আগে গতকাল রাতে থাইল্যান্ড সীমান্তের কাছে মায়াওয়াদ্দি শহরে ধারাবাহিক বিস্ফোরণে ১০টির বেশি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। স্থানীয় এক বাসিন্দা বিবিসিকে জানান, ওই হামলায় এক শিশু নিহত হয়েছে এবং তিনজনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া অন্যান্য বিস্ফোরণের ঘটনায় আরও হতাহতের খবর পাওয়া গেছে।

তবে কিছু ভোটার বিবিসির কাছে দাবি করেছেন, এবারের নির্বাচন আগের চেয়ে অনেক বেশি ‘সুশৃঙ্খল’।

মান্দালয় অঞ্চলের বাসিন্দা মা সু জারচি বলেন, ‘ভোট দেওয়ার অভিজ্ঞতা এবার অনেক বদলে গেছে। ভোট দেওয়ার আগে আমি ভয়ে ছিলাম। এখন ভোট দিয়ে স্বস্তি পাচ্ছি। দেশের জন্য নিজের সেরাটা দিতে চেষ্টা করেছি—এমন একজন নাগরিক হিসেবে আমি আমার ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছি।’

২২ বছর বয়সে প্রথমবার ভোট দিয়ে পেয়ি ফিয়ো মাউং বিবিসিকে জানান, তিনি ভোট দিয়েছেন। কারণ, তিনি বিশ্বাস করেন ভোট দেওয়া ‘প্রত্যেক নাগরিকের দায়িত্ব’।

মাউং বলেন, ‘আমার প্রত্যাশা নিম্নবিত্ত মানুষের জন্য। নিত্যপণ্যের দাম আকাশচুম্বী। আমি এমন কাউকে সমর্থন করতে চাই, যিনি লড়াই করা এসব মানুষের জন্য নিত্যপণ্যের দাম কমিয়ে আনতে পারবেন। আমি এমন একজন প্রেসিডেন্ট চাই, যিনি সব মানুষের জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করবেন।’

এদিকে মিয়ানমারের জান্তা সরকার এই নির্বাচন ঘিরে সব সমালোচনা প্রত্যাখ্যান করে দাবি করেছে, তাদের লক্ষ্য দেশকে ‘বহুদলীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরিয়ে আনা’।

রাজধানী নেপিডোর এক কঠোর নিরাপত্তাবেষ্টিত ভোটকেন্দ্রে আজ ভোট দিয়ে জান্তাপ্রধান মিন অং হ্লাইং বিবিসিকে বলেন, নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে।

জান্তাপ্রধান জোর দিয়ে বলেন, ‘আমি সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান। একজন সরকারি চাকরিজীবী। আমি চাইলেই বলতে পারি না, আমি প্রেসিডেন্ট হতে চাই।’

এর আগে চলতি সপ্তাহের শুরুতে তিনি বলেছিলেন, যারা ভোট প্রত্যাখ্যান করছে, তারা আসলে ‘গণতন্ত্রের পথে অগ্রগতিকে’ প্রত্যাখ্যান করছে।

মিয়ানমারে নতুন এক আইনের অধীনে নির্বাচনে বাধা দেওয়া বা বিরোধিতা করার অভিযোগে দুই শতাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। এই আইনে মৃত্যুদণ্ডসহ কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ধর্ষণের শিকার নারীকে বিজেপি নেত্রীর স্বামী বললেন, ‘আমার কিছুই হবে না’

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম অশোক সিং। ছবি: এনডিটিভি
অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম অশোক সিং। ছবি: এনডিটিভি

এক নারীকে ছুরির মুখে ধর্ষণ, সেই ঘটনার ভিডিও ধারণ ও ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে পরে বারবার যৌন সম্পর্কে বাধ্য করার অভিযোগ উঠেছে ভারতের মধ্যপ্রদেশের সাতনা জেলার এক বিজেপি কাউন্সিলরের স্বামীর বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগী ওই নারী যখন ক্যামেরার সামনে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন এবং তাঁদের কথোপকথনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশের কথা বলেন তখন ওই ব্যক্তি হুমকি দিয়ে বলেন, ‘আমার কিছুই হবে না।’

অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম অশোক সিং। তিনি রামপুর বাঘেলান নগর পরিষদের এক বিজেপি কাউন্সিলরের স্বামী। সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে অশোক সিংকে এক পুলিশ কর্মকর্তাকে গালিগালাজ করতে এবং ভুক্তভোগী নারীকে হুমকি দিতে দেখা যায়। এ ঘটনায় তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

ভাইরাল হওয়া ওই ক্লিপটিতে অভিযুক্তকে বলতে শোনা যায়, ‘আমার কী হবে? কিছুই হবে না। যেখানে খুশি অভিযোগ করো, আমার কিছুই হবে না।’ ভিডিওর নেপথ্যে ভুক্তভোগী নারীকে কাঁদতে কাঁদতে অভিযোগ দায়েরের কথা বলতে শোনা যায়।

গত সোমবার সাতনার পুলিশ সুপার (এসপি) হংসরাজ সিংয়ের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন ওই নারী। অভিযোগে তিনি বলেন, প্রায় ছয় মাস আগে ওই ঘটনা ঘটেছে। নিজের ও পরিবারের প্রাণনাশের হুমকির কারণে এতদিন তিনি মুখ খোলেননি। অভিযোগ পাওয়ার পরপরই এসপি তদন্তের দায়িত্ব ডেপুটি সুপারিনটেনডেন্ট অব পুলিশ (ডিএসপি) মনোজ ত্রিবেদীর কাছে হস্তান্তর করেন।

ভুক্তভোগী নারীর অভিযোগ অনুযায়ী, কারহি এলাকার বাসিন্দা অশোক সিং তাঁর বাড়িতে ঢুকে ছুরির মুখে তাঁকে ধর্ষণ করে। মোবাইল ফোনে সেই ঘটনার ভিডিও ধারণ করে এবং এই বিষয়ে মুখ খুললে নারী ও তাঁর পরিবারকে মেরে ফেলার হুমকি দেন।

ওই নারী অভিযোগে আরও বলেন, গত ২০ ডিসেম্বর অশোক সিং আবার তাঁর কাছে আসেন, তাঁর শ্লীলতাহানি করেন এবং আবারও ভিডিওটি প্রকাশ করে দেওয়ার হুমকি দেন। বলেন, তাঁর কথামতো না চললে ওই ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়া হবে।

ভুক্তভোগীর দাবি, অশোক সিংয়ের বিরুদ্ধে আগেও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ ছিল এবং একসময় তাঁকে জেলা থেকে বহিষ্কারও করা হয়েছিল। এই কারণেই সে নিজেকে আইনের ঊর্ধ্বে মনে করে প্রকাশ্যে তাঁকে হুমকি দিতে সাহস পেয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।

ভুক্তভোগী নারী জানান, অশোক সিং নিয়মিত তাঁর দোকানে এসে তাঁকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে এবং বারবার হুমকি দেন। এতে তিনি ও তাঁর পরিবার ভীতি ও হয়রানির মধ্যে রয়েছেন বলে অভিযোগ করেন।

ওই নারী আরও অভিযোগ করেছেন, পাঁচ দিন আগে পুলিশের কাছে যাওয়ার পরও এখনো পর্যন্ত কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। নিজের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত তিনি। তিনি বলেন, তাঁর বা তাঁর পরিবারের কোনো ক্ষতি হলে এর জন্য পুলিশই দায়ী থাকবে।

এদিকে পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটির সত্যতা যাচাই করা হচ্ছে এবং সব প্রমাণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

এখনো পর্যন্ত কোনো গ্রেপ্তারের বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করা হয়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জাপানে তুষারপাতে পিচ্ছিল রাস্তায় ৫০টি গাড়ির সংঘর্ষ, নিহত ২

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ৫১
পরপর অনেকগুলো গাড়ির সংঘর্ষের অন্তত ১০টি গাড়িতে আগুন ধরে যায়। ছবি: সংগৃহীত
পরপর অনেকগুলো গাড়ির সংঘর্ষের অন্তত ১০টি গাড়িতে আগুন ধরে যায়। ছবি: সংগৃহীত

তীব্র তুষারপাত ও পিচ্ছিল রাস্তার কারণে জাপানের মধ্যাঞ্চলে এক ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় অন্তত ২ জন নিহত এবং ২৬ জন আহত হয়েছেন। দেশটির কান-এৎসু এক্সপ্রেসওয়েতে অন্তত ৫০টি গাড়ির স্তূপ তৈরি হয়েছে। সংঘর্ষের ফলে বেশ কয়েকটি যানবাহনে আগুন ধরে যায়।

স্থানীয় পুলিশের বরাত দিয়ে জানানো হয়েছে, ২৬ ডিসেম্বর স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে টোকিও থেকে প্রায় ১৬০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে গুনমা প্রিফেকচারের মিনাকামিতে এই দুর্ঘটনা ঘটে। প্রাথমিকভাবে দুটি ট্রাকের মধ্যে সংঘর্ষ হলে পেছনে থাকা গাড়িগুলো একের পর এক ধাক্কা খেতে থাকে। এই চেইন রিঅ্যাকশনের ফলে অন্তত ১০টি গাড়িতে দাউ দাউ করে আগুন ধরে যায়। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের সাড়ে সাত ঘণ্টার প্রচেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।

পুলিশ জানিয়েছে, নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে টোকিওর একজন ৭৭ বছর বয়সী নারী রয়েছেন। এ ছাড়া একটি পুড়ে যাওয়া ট্রাকের চালকের আসন থেকে আরও একটি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। আহত ২৬ জনের মধ্যে পাঁচজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। বাকি ২১ জন সামান্য আঘাত পেয়েছেন।

দুর্ঘটনার সময় ওই এলাকায় ভারী তুষারপাতের সতর্কতা জারি ছিল। পুলিশের ধারণা, রাস্তার ওপর বরফ জমে পিচ্ছিল হয়ে যাওয়ায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ট্রাকগুলো পিছলে যায়। যার ফলে এই ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।

ষাটোর্ধ্ব এক প্রত্যক্ষদর্শী জাপানি সংবাদমাধ্যম এনএইচকে-কে জানান, সংঘর্ষের সময় তিনি বিকট বিস্ফোরণের শব্দ শোনেন এবং দেখেন সামনের গাড়িগুলোতে আগুন ধরে গেছে। দ্রুত সেই আগুন অন্যান্য গাড়িতে ছড়িয়ে পড়ে। তিনি আরও জানান, তাঁকেসহ প্রায় ৫০ জনকে নিকটবর্তী একটি টোল প্লাজায় সরিয়ে নেওয়া হয় এবং সেখানে তাঁরা সারা রাত অবস্থান করেন।

দুর্ঘটনার পর এক্সপ্রেসওয়ের একটি অংশ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পুড়ে যাওয়া এবং ক্ষতিগ্রস্ত গাড়িগুলো সরিয়ে নেওয়ার কাজ চলছে। রাস্তা পরিচালনাকারী সংস্থা নেক্সকো জানিয়েছে, আগুনের তাপে রাস্তার কোনো ক্ষতি হয়েছে কি না, তা পরীক্ষা করা হচ্ছে। সংস্থাটি আপাতত ওই রুট ব্যবহার না করার জন্য ভ্রমণকারীদের সতর্ক করেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত