Ajker Patrika

মস্তিষ্কখেকো অ্যামিবার সংক্রমণ বিরল কিন্তু প্রাণঘাতী: জেনে নিন এর লক্ষণ ও প্রতিরোধের উপায়

ফিচার ডেস্ক, ঢাকা 
নেগলেরিয়া ফাওলেরি নামের একটি এককোষী অ্যামিবা ‘মস্তিষ্কখেকো’ নামে পরিচিত। ছবি: সংগৃহীত
নেগলেরিয়া ফাওলেরি নামের একটি এককোষী অ্যামিবা ‘মস্তিষ্কখেকো’ নামে পরিচিত। ছবি: সংগৃহীত

‘মস্তিষ্কখেকো অ্যামিবা’ নামটি যেমন ভয়ংকর, তেমনি চরিত্রে এটি বিপজ্জনক। নেগলেরিয়া ফাওলেরি নামের একটি এককোষী অ্যামিবা ‘মস্তিষ্কখেকো’ নামে পরিচিত। এই অ্যামিবা সাধারণত উষ্ণ মিঠাপানির উৎস; যেমন হ্রদ, নদী, উষ্ণ প্রস্রবণ এবং দীর্ঘদিন পরিষ্কার না করা সুইমিংপুলে বসবাস করে। এটি মানুষের মস্তিষ্ক আক্রমণ করে প্রাইমারি অ্যামিবিক মেনিনজোএনসেফালাইটিস নামের একটি রোগ তৈরি করে।

কীভাবে এটি সংক্রমিত হয়

নেগলেরিয়া ফাওলেরি মানুষের বা অন্য কোনো জীবের দেহের বাইরে বেঁচে থাকতে পারে। এটি সাধারণত ৪৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উষ্ণ মিঠাপানিতে পাওয়া যায়।

নেগলেরিয়া ফাওলেরি নামের এই অ্যামিবা সংক্রমিত হয় নাকের মাধ্যমে দূষিত পানি শরীরে ঢুকলে। অ্যামিবাটি নাকের অভ্যন্তরীণ স্তর বা অলফ্যাক্টরি মিউকোসা দিয়ে ওলফ্যাক্টরি নার্ভ বা ঘ্রাণ নার্ভের মাধ্যমে মস্তিষ্কে পৌঁছায় এবং মস্তিষ্কের টিস্যু ধ্বংস করা শুরু করে। এটি বায়ু বা ড্রপলেটের মাধ্যমে ছড়ায় না। পাকস্থলীর অম্লতা এই অ্যামিবাকে ধ্বংস করার উপযুক্ত বলে দূষিত পানি পান করলে সাধারণত এটি সংক্রমিত হয় না।

লক্ষণ

নেগলেরিয়া ফাওলেরি মানুষের শরীরে সংক্রমিত হওয়ার পর ২ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে (গড়ে ৫ দিন) লক্ষণগুলো প্রকাশ পায়। এর প্রাথমিক লক্ষণ অনেকটা ভাইরাল মেনিনজাইটিসের মতো হতে পারে। যেমন—

  • তীব্র মাথাব্যথা
  • জ্বর
  • বমি বমি ভাব ও বমি
  • গলা শক্ত হওয়া

পরবর্তী ও আরও গুরুতর লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে—

  • খিঁচুনি
  • বিভ্রান্তি, মনোযোগের অভাব
  • ভারসাম্য হারানো
  • মতিভ্রম বা হ্যালুসিনেশন
  • কোমায় চলে যাওয়া

নেগলেরিয়া ফাওলেরি নামের অ্যামিবার সংক্রমণে তৈরি হওয়া প্রাইমারি অ্যামিবিক মেনিনজোএনসেফালাইটিস রোগটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। সাধারণত এর লক্ষণ শুরু হওয়ার পর ১ থেকে ১৮ দিনের মধ্যে রোগীর মৃত্যু ঘটে।

কেন এটি এত মারাত্মক

  • দ্রুত বৃদ্ধি: রোগটি খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে বলে এর নির্ণয় ও চিকিৎসা কঠিন। এর উপসর্গগুলো ভাইরাল মেনিনজাইটিস মতো বলে অনেক সময় এর ভুল চিকিৎসা হয়। যখন সে ভুল ধরা পড়ে, তখন আর কিছু করার থাকে না।
  • মস্তিষ্কে পৌঁছানোর ক্ষমতা: অ্যামিবাটি স্নায়ুর মাধ্যমে সরাসরি মস্তিষ্কে আক্রমণ করে।
  • চিকিৎসার সীমিত সুযোগ: খুব কম ওষুধ এই অ্যামিবার বিরুদ্ধে কার্যকর। চিকিৎসা সত্ত্বেও বেঁচে থাকার হার অত্যন্ত কম।

চিকিৎসা

প্রাইমারি অ্যামিবিক মেনিনজোএনসেফালাইটিস রোগে আক্রান্ত মানুষের বেঁচে থাকার ঘটনা অত্যন্ত বিরল। এর চিকিৎসা সাধারণত অ্যামিবাসহ বিভিন্ন প্যারাসাইটের বিরুদ্ধে কার্যকর ওষুধ, কার্যকর অ্যান্টিফাঙ্গাল ওষুধ, অ্যান্টিবায়োটিক এবং অন্যান্য ওষুধের সমন্বয়ে করা হয়। তবে এর সফল চিকিৎসার প্রধান বিষয় হলো, অত্যন্ত দ্রুত রোগ শনাক্তকরণ ও দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা।

প্রতিরোধ

প্রাইমারি অ্যামিবিক মেনিনজোএনসেফালাইটিস যেহেতু রোগটি প্রায়শই মারাত্মক, তাই প্রতিরোধই একমাত্র উপায়। এ জন্য যা করা যেতে পারে—

  • হ্রদ, নদী বা জলাশয়ের মতো উষ্ণ মিঠাপানির উৎসে সাঁতার কাটা বা ডুব দেওয়া থেকে বিরত থাকা; বিশেষ করে গ্রীষ্মকালে যখন পানির তাপমাত্রা বেশি থাকে।
  • যদি আপনাকে হ্রদ, নদী বা জলাশয়ে গোসল করতেই হয়, তাহলে নাক চেপে রাখুন বা নাকের ক্লিপ ব্যবহার করুন। অর্থাৎ নাক দিয়ে যেন পানি ভেতরে যেতে না পারে, সেই ব্যবস্থা করুন।
  • পুকুর, নদী বা হ্রদে গোসল করার সময় মাথা ডোবানোর ক্ষেত্রেও সতর্কতা অবলম্বন করুন।
  • নলকূপের পানি বা নিশ্চিতভাবে ক্লোরিনযুক্ত করা পানি ব্যবহার করুন। ঘরের নলের পানি পুরোপুরি নিরাপদ বা ঝুঁকিমুক্ত না হলে তা সেদ্ধ বা ফিল্টার করে ব্যবহার করুন।
  • বাড়িতে ওয়াটার হিটারে পানি গরম করার সময় তাপমাত্রা ৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে সেট করবেন না। গরম পানি ব্যবহারের সময় ঠান্ডা পানি মেশান।

মস্তিষ্কখেকো অ্যামিবার সংক্রমণ অত্যন্ত ভয়ংকর কিন্তু অত্যন্ত বিরল ঘটনা। তবে সম্প্রতি ভারতের কেরালায় ১৮ জন ও পশ্চিমবঙ্গে এর সংক্রমণ ১৬ জনের মৃত্যুর খবরে বিষয়টি বেশ আলোচিত হচ্ছে। করোনা মহামারির পর এবার পশ্চিমবঙ্গ ও কেরালায় নতুন আতঙ্ক হয়ে উঠেছে এই মস্তিষ্কখেকো অ্যামিবা। তাই সতর্কতার কোনো বিকল্প নেই।

সূত্র

⦁ w ww.cdc.gov/parasites/naegleria/index

⦁ w ww.who.int/water_sanitation_health/emerging/naegleria/en/

⦁ doi. org/10.1128/AAC.01293-15

⦁ doi. org/10.1093/cid/cis626

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ডেঙ্গুতে আরও ৫ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ১১৩৯

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৬ নভেম্বর ২০২৫, ১৬: ৪৫
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে আরও পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ১ হাজার ১৩৯ জন।

আজ রোববার (১৬ নভেম্বর) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে গতকাল শনিবার সকাল ৮টা থেকে আজ সকাল ৮টা পর্যন্ত তথ্য জানিয়েছে অধিদপ্তর।

এতে বলা হয়েছে, গত এক দিনে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ১ হাজার ১৩৯ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। তাদের মধ্যে বরিশাল বিভাগে ১৮১ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১৪১, ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ২৪৬, ঢাকা উত্তর সিটিতে ১৮২, ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ১১৮, খুলনা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১১৯, ময়মনসিংহ বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৯৬, রাজশাহী বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৪৬, রংপুর বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৯ ও সিলেট বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) একজন নতুন রোগী ভর্তি হয়েছে।

এদিকে গত এক দিনে সারা দেশে ১ হাজার ১৯৯ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছর ছাড়পত্র পেয়েছে ৮১ হাজার ৪৪২ জন।

গত ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া পাঁচজনের মধ্যে নারী তিনজন ও পরুষ দুজন রয়েছেন। তাঁদের বয়স যথাক্রমে ১৮, ৩০, ১৮, ৫০ ও ৬০ বছর।

এ বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ৮৪ হাজার ৯৯৭ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। চলতি বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে ৩৩৬ জনের।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ডেঙ্গুতে এক দিনে ৫ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ৭৯২

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৫ নভেম্বর ২০২৫, ১৮: ৩৫
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

সারা দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৭৯২ জন।

আজ শনিবার (১৫ নভেম্বর) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে গতকাল শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে আজ সকাল ৮টা পর্যন্ত তথ্য জানিয়েছে অধিদপ্তর।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গত এক দিনে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ৭৯২ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। তাদের মধ্যে বরিশাল বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১২৫, চট্টগ্রাম বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১৩৬, ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১০৭, ঢাকা উত্তর সিটিতে (ডিএনসিসি) ২২৬, ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে (ডিএসসিসি) ১২১, খুলনা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১৫, ময়মনসিংহ বিভাগে ৬০ (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ও সিলেট বিভাগে দুজন (সিটি করপোরেশনের বাইরে) নতুন রোগী ভর্তি হয়েছে।

এদিকে গত এক দিনে সারা দেশে ৭৮৩ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছর ছাড়পত্র পেয়েছে ৮০ হাজার ২৪৩ জন।

২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া পাঁচজনের নারী তিনজন ও পুরুষ দুজন রয়েছেন। তাঁদের বয়স যথাক্রমে ৪০, ৫৫, ৫৩, ৫৬ ও ৫৫ বছর। মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও ডিএনসিসি ডেডিকেটেড কোভিড-১৯ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন তাঁরা।

এ বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত সব মিলিয়ে ৮৩ হাজার ৮৫৮ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। চলতি বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে ৩৩১ জনের।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শিশুর মেধাবিকাশে বাদাম ও খেজুর অপরিহার্য নয়

মো. ইকবাল হোসেন
শিশুর মেধাবিকাশে বাদাম ও খেজুর অপরিহার্য নয়

এখন বেশির ভাগ মা মনে করেন, বাদাম ও খেজুর হচ্ছে শিশুদের জন্য উৎকৃষ্ট খাবার। তাঁদের ধারণা, এগুলো না খেলে তাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ ব্যাহত হবে। তাই কিছু পরিমাণ খেজুর ও বাদাম শিশুদের প্রতিদিন খাওয়াতেই হবে। তবে বাদাম ও খেজুর খাবার হিসেবে ভালো হলেও এই ভাবনার জোরালো কোনো ভিত্তি নেই।

খেজুর ও বাদাম খাওয়ানোর প্রক্রিয়া বেশ বিচিত্র। অনেকে ৪ থেকে ৫ ধরনের বাদাম একসঙ্গে গুঁড়া করে খাওয়ান। অনেকে শুকনো খেজুর গুঁড়া করে খাওয়ান বা নরম খেজুর ব্লেন্ড করে খাওয়ান। সুজির মধ্যে খেজুর কিংবা বাদামও মিশিয়ে দিচ্ছেন অনেকে, আবার কেউ কেউ সাগুর মধ্যে খেজুর ও বাদাম মিশিয়ে খাওয়াচ্ছেন। খেজুর, বাদাম এবং বিভিন্ন রকমের শস্য দিয়ে একসঙ্গে খিচুড়ি বানিয়েও খাওয়াচ্ছেন অনেকে। যদিও অনেক মায়ের চাওয়া, শিশুদের প্রতিটি খাবারেই যেন খেজুর ও বাদামের উপস্থিতি থাকে।

বাদাম ও খেজুর না খাওয়ালে শিশু মেধাবী হবে না, সেটা ভাবা ঠিক নয়। খেজুর ও বাদাম খাওয়ার সঙ্গে মেধাবী হওয়ার প্রত্যক্ষ কোনো যোগাযোগ এখনো আবিষ্কৃত হয়নি। আপনার শিশুর জন্য উপযোগী হচ্ছে বাড়ির খুব স্বাভাবিক খাবারগুলো। বাড়িতে তৈরি খাবারগুলো সুষম খাবার হিসেবে খাওয়ালেই শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশ ত্বরান্বিত হবে।

বাদাম ও খেজুর—দুটোই দামি খাবার, যা সবার পক্ষে কেনা সম্ভব হয় না। দামি খাবার মানেই সেটা সবচেয়ে ভালো, সেটিরও কোনো প্রমাণ নেই। যেকোনো জিনিসের মূল্য নির্ধারণ করা হয় সেই জিনিসের জোগানের ওপর ভিত্তি করে। একসময় বিদেশি ড্রাগন ফল অনেক দামি ছিল। দেশে এই ফলের উৎপাদন বেশি হওয়ার কারণে এখন দাম কমেছে এবং প্রায় সবার নাগালের মধ্যে। তবে হ্যাঁ, বাদাম ও খেজুরের কিছু গুণ রয়েছে। নিয়মিত খাওয়ালে সেসব গুণ শরীরের কাজে লাগে।

বাদাম

এটি প্রোটিনজাতীয় খাবার। প্রোটিনের সঙ্গে অনেক ধরনের ভিটামিন ও মিনারেলও পাওয়া যায়। কিন্তু বাদামের প্রোটিনের মান সেকেন্ড ক্লাস। এতে সব ধরনের প্রয়োজনীয় অ্যামিনো অ্যাসিড থাকে না। বাদামের প্রোটিনের চেয়ে ডিম বা মাছ-মাংসের প্রোটিন অনেক উন্নত মানের, এগুলো ফার্স্ট ক্লাস কিংবা প্রথম শ্রেণির প্রোটিন।

আবার বাদামে যে ভিটামিন ও মিনারেল রয়েছে, সেগুলোও আমরা প্রায় সব ধরনের শাকসবজি ও ফলমূল থেকে পাওয়া যায়। তবে বাদাম ও দুধ ক্যালসিয়ামের ভালো উৎস। আমরা বাদামের ক্যালসিয়াম ও অন্যান্য ভিটামিন ও মিনারেলগুলো দুধ থেকেই পেতে পারি। শিশুদের বাদামের চেয়ে দুধ খাওয়ানো সহজ।

তবে বাদামে থাকা ভালো চর্বি অথবা গুড ফ্যাট অনেক উপকারী। বাদামের এই গুড ফ্যাটও আমরা বিভিন্ন মাছ থেকে পেতে পারি; বিশেষ করে সামুদ্রিক কিংবা যেকোনো তৈলাক্ত মাছ থেকে। শিশুদের বাদাম খাওয়ানোর চেয়ে মাছ খাওয়ানো সহজ। সে ক্ষেত্রে শিশু ফার্স্ট ক্লাস প্রোটিনের পাশাপাশি গুড ফ্যাট (ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড) এবং অন্যান্য ভিটামিন ও মিনারেলও পাবে।

৬ মাস বয়সের পরই শিশুর খাবারে বাদাম দিলে কিছু বিপত্তি ঘটতে পারে। বাদাম গুঁড়া করে দিলেও কিছু দানা থাকতে পারে, যা শিশুর খাদ্য বা শ্বাসনালিতে আটকে যেতে পারে অথবা দুর্ঘটনাবশত ফুসফুসের নালিতে ঢুকতে পারে। তাই শিশু যখন খাবার ভালোমতো চিবিয়ে খাওয়া শিখবে, তখন হালকা খাবার হিসেবে দিনে একবার বাদাম খাওয়াতে পারেন। বাদামের পরিবর্তে বাদাম দিয়ে তৈরি খাবারও খাওয়ানো যাবে। বাদাম চিবিয়ে খেলে শিশু বাদাম থেকে পরিপূর্ণ পুষ্টি পাবে।

খেজুর

অন্যান্য ফলের মতো খেজুর একটি বিদেশি ফল। এতে আয়রন, জিংক, পটাশিয়াম, ভিটামিন এ, বি, সিসহ অন্যান্য ভিটামিন ও মিনারেল রয়েছে। পরিমাণে কিছুটা কমবেশি করে প্রায় একই উপাদান কলাতেও পাওয়া যায়। খেজুর ক্যালসিয়াম ও আয়রনের ভালো উৎস।

কলা ছাড়া অন্যান্য ফল থেকেও খেজুরের উপকারিতা পাওয়া যায়। মানভেদে খেজুরের দাম অনেক বেশি। ভালো মানের খেজুর আমাদের দেশে খুব কম আসে। তাই খেজুরের পরিবর্তে শিশুকে কলা বা অন্যান্য সহজলভ্য ফল খাওয়াতে পারেন।

খেজুর শর্করাসমৃদ্ধ খাবার। এর গ্লাইসিমিক ইনডেক্স ও গ্লাইসিমিক লোড অনেক বেশি। শিশুর খাবারে এক বেলা একটু বেশি খেজুর যোগ করলে তাদের অন্যান্য খাবার খাওয়ার

প্রতি আগ্রহ কমে যাবে। কিন্তু চিনিযুক্ত খাবারের প্রতি আকর্ষণ বাড়তে পারে। সে ক্ষেত্রে শিশু অন্যান্য পুষ্টি উপাদান থেকে বঞ্চিত হবে। তাই তাদের সব খাবারে খেজুর না দিয়ে ফল হিসেবে দিনে একবার পরিমিত খেজুর খেতে দিন।

শিশুকে খেজুর ও বাদাম খাওয়াতে তেমন নিষেধাজ্ঞা নেই। এগুলো খাবার হিসেবে ভালো। তবে শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য

এগুলোকে অপরিহার্য নয়। শিশুর বয়স, ওজন এবং উচ্চতা অনুযায়ী পরিমিত পরিমাণে এসব খাবার দিতে হবে। তবে মনে রাখা দরকার, বাদাম

গুঁড়া করলে আর খেজুর ব্লেন্ড করলে এগুলোর গুণ অনেকটা কমে যায়। এগুলো খাওয়ানোর ক্ষেত্রে প্রয়োজনে একজন পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিতে পারেন।

জ্যেষ্ঠ পুষ্টি কর্মকর্তা, চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতাল

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হাঁটুব্যথার কারণ ও লক্ষণ: আধুনিক ফিজিওথেরাপি সমাধান

উম্মেছালমা
হাঁটুব্যথার কারণ ও লক্ষণ: আধুনিক ফিজিওথেরাপি সমাধান

আমাদের জীবনযাত্রার গতি ধরে রাখার ক্ষেত্রে হাঁটু অপরিহার্য জয়েন্ট বা অস্থিসন্ধি। শরীরের সম্পূর্ণ ভার বহনকারী এই সন্ধিতে যখন ব্যথা শুরু হয়, তখন সিঁড়ি ভাঙা, বসা বা হাঁটাচলা, এমনকি নামাজ পড়াও কঠিন হয়ে পড়ে। হাঁটুব্যথা বর্তমানে শুধু বয়স্কদের সমস্যা নয়; আঘাত, ভুল জীবনধারা এবং অসচেতনতার কারণে তরুণ-তরুণীরাও এই যন্ত্রণাদায়ক সমস্যার শিকার হচ্ছেন।

সাধারণ কারণ

  • হাঁটুব্যথার কারণ বহুবিধ। সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—
  • বয়সজনিত ক্ষয় ও রোগ: অস্টিওআর্থ্রাইটিস
  • রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস
  • গাউট
  • আঘাতজনিত বা কাঠামোগত সমস্যা
  • লিগামেন্টের আঘাত
  • মেনিস্কাস ছিঁড়ে যাওয়া
  • ফ্র্যাকচার বা (অস্ত্রোপচারের পরে ক্রমাগত ব্যথা)
  • পেশির দুর্বলতা
  • অতিরিক্ত ওজন
  • পুরুষের তুলনায় নারীর হাঁটুব্যথায় ভোগার হার বেশি।

সাধারণ কারণ

  • হাঁটুব্যথার কারণ বহুবিধ। সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—
  • বয়সজনিত ক্ষয় ও রোগ: অস্টিওআর্থ্রাইটিস
  • রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস
  • গাউট
  • আঘাতজনিত বা কাঠামোগত সমস্যা
  • লিগামেন্টের আঘাত
  • মেনিস্কাস ছিঁড়ে যাওয়া
  • ফ্র্যাকচার বা (অস্ত্রোপচারের পরে ক্রমাগত ব্যথা)
  • পেশির দুর্বলতা
  • অতিরিক্ত ওজন
  • পুরুষের তুলনায় নারীর হাঁটুব্যথায় ভোগার হার বেশি।

সাধারণ লক্ষণগুলো

  • ব্যথার পাশাপাশি রোগীর হাঁটু ফুলে যাওয়া কিংবা লালচে হয়ে যাওয়া
  • হাঁটুর সন্ধি শক্ত হয়ে যাওয়া এবং পুরোপুরি ভাঁজ করতে বা সোজা করতে না পারা।
  • হাঁটুতে গরম অনুভব করা
  • হাঁটাচলা বা দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকলে ব্যথা বেড়ে যাওয়া
  • হাঁটুতে ঘষা লাগার মতো বা ‘কটকট’ শব্দ অনুভূত হওয়া
  • হাঁটুর শক্তি কমে যাওয়া। ফলে সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করতে গিয়ে প্রচণ্ড ব্যথা হতে পারে।

কেন ফিজিওথেরাপিই আধুনিক সমাধান

ফিজিওথেরাপি কেবল ব্যথানাশক ওষুধ কিংবা অস্ত্রোপচারের বিকল্প নয়, বরং অনেক ক্ষেত্রে এটি প্রাথমিক এবং সর্বোত্তম চিকিৎসা পদ্ধতি। গবেষণায় প্রমাণিত যে সঠিক ফিজিওথেরাপি গ্রহণ করলে অনেক ক্ষেত্রে অস্টিওআর্থ্রাইটিসের মতো দীর্ঘমেয়াদি রোগে অস্ত্রোপচারের প্রয়োজনীয়তা বহুলাংশে কমে আসে।

ফিজিওথেরাপির ভূমিকা

ফিজিওথেরাপি শুধু ব্যথা কমায় না, এটি হাঁটুর ফাংশন উন্নত করে, হাঁটুর স্থিতিশীলতা বাড়ায়, জয়েন্ট সচল রাখে, পেশি শক্ত করে এবং ভবিষ্যতের জটিলতা প্রতিরোধ করে। তাই হাঁটুতে ব্যথা অনুভব করলে সময় নষ্ট না করে বিশেষজ্ঞ ফিজিওথেরাপিস্টের পরামর্শ নেওয়াই ভালো।

ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা

একজন বিশেষজ্ঞ ফিজিওথেরাপিস্ট রোগীর হাঁটুব্যথার কারণ এবং এর তীব্রতা বিশ্লেষণের মাধ্যমে একটি সঠিক চিকিৎসা পরিকল্পনা তৈরি করেন:

হাঁটুব্যথার চিকিৎসায় কিছু ফিজিওথেরাপি টেকনিক ব্যবহার করা হয়, যেমন—

  • থেরাপিউটিক ব্যায়াম
  • ম্যানুয়াল থেরাপি
  • মোবিলাইজেশন থেরাপি
  • ইলেকট্রো থেরাপি; যেমন ট্রান্সকিউটেনিয়াস ইলেকট্রিকালনার্ভ স্টিমুলেশন (টেনস)
  • আলট্রাসাউন্ড থেরাপি
  • পালসড শর্টওয়েব থেরাপি
  • শারীরিক ভঙ্গি এবং হাঁটাচলার প্রশিক্ষণ
  • হিট বা কোল্ড থেরাপি

সতর্কতা

  • দীর্ঘ সময় একই ভঙ্গিতে বসে থাকবেন না।
  • ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
  • আরামদায়ক জুতা ব্যবহার করুন
  • হাঁটুতে অতিরিক্ত চাপ না দেওয়া
  • সিঁড়ি ওঠানামা বা ভারী বোঝা বহনে সতর্কতা অবলম্বন করুন
  • নিয়মিত হালকা ব্যায়াম করুন।

শেষ কথা

হাঁটুর ব্যথাকে কখনোই অবহেলা করা যাবে না। হাঁটুর ব্যথা থেকে সাময়িক উপশমের জন্য আপনি আইস থেরাপি অথবা হিট থেরাপি বেছে নিতে পারেন। ব্যথা দীর্ঘস্থায়ী হলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। নিয়মিত ব্যায়াম, পুষ্টিকর খাবার এবং সচেতন থাকলে হাঁটুব্যথা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। মনে রাখা দরকার যে সুস্থ হাঁটু মানেই সক্রিয় জীবন।

লেখক: বাত-ব্যথা, প্যারালাইসিস, স্পোর্টস ইনজুরি ও ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞ।

চেম্বার: আলোক হেলথ কেয়ার, মিরপুর, পল্লবী

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত