Ajker Patrika

ওয়ার্নার ব্রাদার্স বিক্রি: নেটফ্লিক্সের বিপরীতে প্যারামাউন্টের আকাশছোঁয়া প্রস্তাব, নেপথ্যে ট্রাম্প-কুশনার

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০: ৪৬
হলিউডের ইতিহাসে অন্যতম বৃহৎ চুক্তিতে বাগড়া দিতে পারেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: সংগৃহীত
হলিউডের ইতিহাসে অন্যতম বৃহৎ চুক্তিতে বাগড়া দিতে পারেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: সংগৃহীত

ওয়ার্নার ব্র’স বা ওয়ার্নার ব্রাদার্স ডিসকভারি কিনতে বাজারে নেটফ্লিক্সের নতুন প্রতিদ্বন্দ্বী হাজির হয়েছে। তারা আর কেউই না, প্যারামাউন্ট স্কাইড্যান্স। নেটফ্লিক্স ওয়ার্নার ব্রাদার্স কেনার জন্য দাম হাঁকিয়েছিল ৭২ বিলিয়ন ডলার। তবে বিপরীতে প্যারামাউন্ট হাঁকিয়েছে ১০৮ বিলিয়ন ডলারের বেশি। বিশ্লেষকেরা বলছেন, স্ট্রিমিং জায়ান্ট নেটফ্লিক্সের একচ্ছত্র আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ জানাতে এবং শক্তিশালী মিডিয়া সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে এটি তাদের শেষ চেষ্টা।

সপ্তাহজুড়ে প্যারামাউন্ট এবং কমকাস্টের সঙ্গে দর-কষাকষির শেষে গত শুক্রবারই নেটফ্লিক্স ৭২ বিলিয়ন ডলারের ইক্যুইটি চুক্তিতে ওয়ার্নার ব্রাদার্স ডিসকভারির টিভি, ফিল্ম স্টুডিও ও স্ট্রিমিং সম্পত্তি নিজেদের দখলে নিতে চলেছে বলে খবর রটেছিল। তবে প্যারামাউন্টের এই নতুন চালে স্পষ্ট যে, ওয়ার্নার ব্রাদার্স এবং তাদের অমূল্য সম্পদ এইচবিও ও ডিসি কমিকসের দখল নিয়ে এই দড়ি টানাটানি এত সহজে শেষ হবে না।

ওয়ার্নার ব্রাদার্স ডিসকভারির পরিচালকমণ্ডলী সোমবার বিকেলে জানান, তাঁরা প্যারামাউন্টের প্রস্তাবটি খতিয়ে দেখবেন। তবে নেটফ্লিক্সের ব্যাপারে তাঁদের আগের সুপারিশে কোনো বদল আসছে না। তাঁরা নিজ কোম্পানিকে পরামর্শ দিয়েছেন, প্যারামাউন্ট স্কাইড্যান্সের প্রস্তাবের বিষয়ে আপাতত ‘কোনো পদক্ষেপ না নিতে।’

প্যারামাউন্টের শেয়ারপ্রতি ৩০ ডলারের এই নগদ প্রস্তাবে অর্থ জোগান দিচ্ছে মার্কিন সাবেক রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের জামাতা জ্যারেড কুশনারের বিনিয়োগ সংস্থা অ্যাফিনিটি পার্টনার্স, কয়েকটি মধ্যপ্রাচ্যের রাষ্ট্র পরিচালিত বিনিয়োগ তহবিল এবং এলিসন পরিবার। প্যারামাউন্টের কর্ণধার ডেভিড এলিসনের বাবা ল্যারি এলিসন বিশ্বের দ্বিতীয় ধনী ব্যক্তি এবং হোয়াইট হাউসের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে।

হোয়াইট হাউসের এক কর্তা ও এই বিষয়ে ওয়াকিবহাল এক ব্যক্তির সূত্র ধরে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানিয়েছে, নেটফ্লিক্সের চুক্তির খবর প্রকাশিত হওয়ার পর ল্যারি এলিসন ট্রাম্পকে ফোন করে জানিয়েছিলেন যে এই লেনদেন প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রটিকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।

প্যারামাউন্টের দাবি, গোটা ওয়ার্নার ব্রাদার্স ডিসকভারির জন্য তাদের দর নেটফ্লিক্সের চেয়ে অনেক বেশি সুবিধাজনক। এটি শেয়ারহোল্ডারদের ১৮ বিলিয়ন ডলার বেশি নগদ অর্থ দেবে এবং আইনি অনুমোদন পেতেও সুবিধা হবে। তাদের মতে, প্যারামাউন্ট ও ওয়ার্নার ব্রাদার্সের জোট, যা কিনা ইতিহাসের অন্যতম বৃহত্তম মিডিয়া চুক্তি হতে চলেছে, তা শিল্পী সমাজ, সিনেমা হল এবং সাধারণ গ্রাহকদের জন্য মঙ্গলজনক হবে। কারণ, এতে প্রতিযোগিতা বাড়বে।

প্যারামাউন্টের সিইও ডেভিড এলিসন এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আমাদের বিশ্বাস—এই প্রস্তাব হলিউডকে আরও শক্তিশালী করে তুলবে।’ আলাদাভাবে তিনি আরও জানান, প্যারামাউন্টের প্রস্তাবে ‘উচ্চতর হেডলাইন ভ্যালু, সেই ভ্যালুর ক্ষেত্রে বর্ধিত নিশ্চয়তা, আইনি অনুমোদনের বৃহত্তর নিশ্চয়তা, এবং হলিউড, গ্রাহক ও প্রতিযোগিতা-বান্ধব এক ভবিষ্যৎ’ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

উল্লেখ্য, প্যারামাউন্টের প্রস্তাবে ওয়ার্নার ব্রাদার্স ডিসকভারির কেবল টেলিভিশন সম্পত্তিগুলোও অন্তর্ভুক্ত, যেখানে নেটফ্লিক্সের দর শুধু ওয়ার্নার ব্রাদার্স ফিল্ম ও টেলিভিশন স্টুডিও, এইচবিও এবং এইচবিও ম্যাক্স স্ট্রিমিং পরিষেবার জন্য সীমিত।

এদিকে এক সম্মেলনে নেটফ্লিক্সের কো-সিইও টেড স্যান্ডোস জানালেন, ওয়ার্নার ব্রাদার্সের জন্য প্যারামাউন্টের এই ‘শত্রুতামূলক’ দর ‘সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত ছিল না।’ তবে তিনি এই চুক্তি সম্পন্ন করার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী। স্যান্ডোস বলেন, ‘প্যারামাউন্ট আজ যে প্রস্তাব নিয়ে কথা বলছে, তাতে এলিসনরা ৬ বিলিয়ন ডলারের সিনার্জির কথা বলছেন। আপনার কী মনে হয় এই সিনার্জি কোথা থেকে আসবে? কর্মী ছাঁটাই করে? আমরা কিন্তু চাকরি কাটছি না, বরং কাজের সুযোগ তৈরি করছি।’

নিয়ন্ত্রক সংস্থায় দেওয়া নথিতে প্যারামাউন্ট জানিয়েছে, প্যারামাউন্টের মালিক এলিসন পরিবার এবং বেসরকারি ইক্যুইটি সংস্থা রেডবার্ড ক্যাপিটাল ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ইক্যুইটি মূলধনের জোগান দিতে রাজি হয়েছে। এই প্রস্তাবে আরও অর্থ জোগান আসছে কুশনারের অ্যাফিনিটি পার্টনার্স, সৌদি ও কাতারের সভরেন ওয়েলথ ফান্ড এবং আবুধাবি সরকারের মালিকানাধীন এল’ইমাদ হোল্ডিং কোং-এর থেকে।

ওয়ার্নার ব্রাদার্স প্যারামাউন্টের প্রস্তাব মেনে নিলে তাদের নেটফ্লিক্সকে ২ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার ব্রেকআপ ফি দিতে হবে। অন্যদিকে যদি নেটফ্লিক্সের চুক্তি ভেস্তে যায়, তবে এই স্ট্রিমিং সংস্থাকে ৫ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার জরিমানা দিতে হবে। নেটফ্লিক্সের দর ইতিমধ্যে কড়া অ্যান্টিট্রাস্ট তদন্তের মুখোমুখি হতে পারে, এবং ট্রাম্পও তাদের প্রস্তাব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

ট্রাম্প সোমবার বলেন, দরদাতা উভয় পক্ষই ‘আমার বন্ধু নন’, এবং তিনি ‘যা ঠিক তাই করতে চান।’ তিনি আরও যোগ করেন যে প্যারামাউন্টের দর নিয়ে তিনি কুশনারের সঙ্গে কথা বলেননি। তবে গতকাল সোমবার সিএনবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ডেভিড এলিসন বলেছিলেন, এই দর-কষাকষিতে একটি ‘স্বাভাবিক পক্ষপাতিত্ব’ রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ