Ajker Patrika

টিআইএন নেওয়ার পরে কিন্তু ঘুমাইতে পারবেন না: এনবিআর চেয়ারম্যান

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ০৬ মার্চ ২০২৫, ১৬: ৫৯
আজ বুধবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) প্রাক্‌-বাজেট আলোচনা সভা হয়। ছবি: সংগৃহীত
আজ বুধবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) প্রাক্‌-বাজেট আলোচনা সভা হয়। ছবি: সংগৃহীত

টিআইএন নেওয়ার পরে কিন্তু ঘুমাইতে পারবেন না বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান। তিনি বলেছেন, ‘দেশে ১ কোটির বেশি মানুষের টিআইএন থাকলেও আয়কর বিবরণী দেন কেবল ৪০ শতাংশের মতো। এখন থেকে কর্মকর্তারা সক্রিয় থাকায় সেই সুযোগ থাকবে না। টিআইএন নেওয়ার পরে কিন্তু ঘুমাইতে পারবেন না। আমাদের অফিসাররা আপনাকে নোটিশ করবে। তাঁকে রিটার্ন দেওয়ার জন্য বলবে।’

আজ বুধবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) প্রাক্‌-বাজেট আলোচনা সভায় এ কথা বলেন এনবিআর চেয়ারম্যান।

বিভিন্ন সেবা গ্রহণের সময় আয়কর বিবরণী বা আয়কর রিটার্ন জমার প্রমাণ (পিএসআর) দেখাতে হওয়ায় সেসব সেবার গ্রাহক কমছে—এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এনবিআর প্রধান বলেন, ‘অনলাইন রিটার্ন হওয়ার কারণে এখন খুব সিম্পলি রিটার্ন দেওয়া যায়। তারপরেও এটাকে আমরা বিবেচনায় নিলাম। আমরা যেটা করছি পিএসআরে, যাদের ই-টিআইএন দিতে হতো, তাঁদের সবাইকে পিএসআরে নিয়ে আসছি। এবার এটাকে স্প্লিট করব।’

তিনি বলেন, ‘যেগুলোর আমরা রিটার্ন এখনই চাই, না হলে হবে না, সেগুলো আমরা পিএসআরে নেব। আর কিছুতে আমরা রাখব ই-টিআইএন নেওয়ার ব্যাপারে যে, টিআইএন দেখালেই হবে।’

আগে টিআইএন থাকলেও যাঁরা আয়কর রিটার্ন দিতেন না, তাঁদেরই মূলত করের আওতায় আনতে পিএসআর চালু করা হয়েছিল তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘এখন থেকে কর্মকর্তারা সক্রিয় থাকায় সেই সুযোগ থাকবে না। বাকিটা আমাদের লোকেরা...টিআইএন নেওয়ার পরে কিন্তু তিনি ঘুমাইতে পারবেন না। আমাদের অফিসাররা আপনাকে নোটিশ করবে। তাঁকে রিটার্ন দেওয়ার জন্য বলবে। আলটিমেটলি সে একই কথা। তার থেকে পিএসআর দেওয়াই ভালো। তারপরও আপনারা বলছেন, আমরা ওইভাবে কাজ করব।’

এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, দেশে এক কোটির বেশি মানুষের টিআইএন থাকলেও আয়কর বিবরণী দেন তাঁদের মধ্যে কেবল ৪০ শতাংশের মতো।

যাঁরা কম হারে কর দেন, আসছে বাজেটে তাঁদের ওপরও করের বোঝা বাড়বে বলে সতর্ক করে দেন এনবিআর চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, এনবিআরের লক্ষ্য হচ্ছে, কর অব্যাহতি থেকে বের হয়ে আসা। কারণ, এনবিআর যে পরিমাণ কর আদায় করে সমপরিমাণ ছেড়ে দেয়, অব্যাহতি দেয়।

আবদুর রহমান খান বলেন, ‘আমাদের ওপর কিন্তু হিউজ প্রেশার তৈরি হচ্ছে, সে কারণে যাঁরা যাঁরা একজেম্পটেড ইনকামে (কর অব্যাহতির সুবিধাপ্রাপ্ত) আছেন, তাঁদের একজেম্পশন উঠে যাবে ধীরে ধীরে। এবারই একটা বড় উদাহরণ আপনারা দেখতে পাবেন। বেশ কিছু একজেম্পশন উইথড্র করেছি। বাকিগুলো আপনারা বাজেটে দেখতে পাবেন।’

‘বৈষম্যহীন বাংলাদেশে’ এত বৈষম্য থাকবে কেন প্রশ্ন তুলে আবদুর রহমান বলেন, ‘যারা রিডিউসড রেটে ট্যাক্স (হ্রাসকৃত হারে কর) দেয়, আপনি যদি বলেন যে আপনার একটা সাপোর্ট লাগবে, সেটা একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য। সারা জীবনের জন্য হতে পারে না। আপনি পাঁচ বছর সাপোর্ট পেয়েছেন বা ছয় বছর, দশ বছর সাপোর্ট পেয়েছেন, শুড বি এনাফ।’

সভায় বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা), বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্ট (বিল্ড), বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া চেম্বার অব কমার্স, উইমেন এন্ট্রাপ্রেনিউরস নেটওয়ার্ক (ওয়েন্ড), আমেরিকান চেম্বার অব কমার্স ইন বাংলাদেশের (অ্যামচেম) প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

বেপজার নির্বাহী পরিচালক তানভীর হোসেন বলেন, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি জেলা ছাড়া ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের অন্য সব জেলায় বিনিয়োগের জন্য পাঁচ বছর এবং বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি জেলাসহ অন্য বিভাগের সব জেলায় বিনিয়োগের জন্য সাত বছরের কর অবকাশ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। এতে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও এর আশপাশে এবং বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাসের সহজলভ্যতাসহ সমুদ্রবন্দর ও বিমানবন্দরের কাছের এলাকায় অধিক পরিমাণে শিল্পায়ন হচ্ছে। কিন্তু এসব সুবিধার অভাব রয়েছে এমন এলাকায় আশানুরূপ শিল্পায়ন হচ্ছে না।

তিনি বলেন, দেশের সুষম উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রত্যন্ত ও অনুন্নত এলাকাগুলোর বিনিয়োগকারীদের আরও বেশি কর অবকাশ সুবিধা দেওয়া যেতে পারে। এর ফলে সাময়িকভাবে রাজস্বের ওপর কিছুটা নেতিবাচক প্রভাব পড়লেও বিনিয়োগ ও দীর্ঘ মেয়াদে রাজস্ব আহরণের পরিমাণ বাড়াবে।

বেপজার নির্বাহী পরিচালক বলেন, বিনিয়োগ উন্নয়ন সংস্থাভেদে বিনিয়োগকারীদের দেওয়া কর অবকাশ সুবিধার ভিন্নতা দেখা যাচ্ছে, যা বিনিয়োগ আকর্ষণে সমস্যার সৃষ্টি করছে। এর ফলে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন সমমর্যাদার দুটি বিনিয়োগ উন্নয়ন সংস্থার বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অসম প্রতিযোগিতার সৃষ্টি হয়। এই অবস্থায় বেপজা, বেজা, বিডা এবং বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের অধীন সব শিল্পপ্রতিষ্ঠানের জন্য সুষম কর অবকাশ সুবিধা ও প্রণোদনার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। বিনিয়োগ সুবিধা দেওয়ার ক্ষেত্রে সামঞ্জস্য রক্ষার পাশাপাশি বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে শিল্পপ্রতিষ্ঠান পরিচালনাসংক্রান্ত প্রয়োজনীয় গাড়ি শুল্কমুক্তভাবে আমদানির সুযোগ দেওয়া যেতে পারে।

অনুষ্ঠানে বেজার পরিচালক মুহাম্মদ ইমতিয়াজ হাসান বলেন, ‘বন্ডেড ওয়্যারহাউস লাইসেন্সিং বিধিমালা, ২০০৮-এর বিধান অনুযায়ী বন্ড লাইসেন্স দেওয়া হতো। ২০১৭ সালে ওই বিধিমালার বিধি-৪ এ প্রয়োগ অনুচ্ছেদে অর্থনৈতিক অঞ্চলে স্থাপিত ওয়্যারহাউসের অনুকূলে বন্ড লাইসেন্স প্রদানের বিষয়টি সংযোজন করা হয়। এই বিধানের ফলে বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিদেশি বিনিয়োগকারী হান্টসম্যান বাংলাদেশ ওয়্যারহাউস হিসেবে বন্ড লাইসেন্স গ্রহণ করেছে। ২০২৪-২৫ সালের ও বাজেটে পূর্বের বিধিমালাটি বাতিল করে ওয়্যারহাউস লাইসেন্সিং বিধিমালা, ২০২৪ জারি করা হয়েছে। কিন্তু নতুন বিধিমালার বিধি-৪ এর প্রয়োগ অনুচ্ছেদে অর্থনৈতিক অঞ্চলে স্থাপিত ওয়‍্যারহাউসের অনুকূলে বন্ড লাইসেন্স প্রদানের বিষয়টি উল্লেখ নেই। ফলে জাপানিজ ইকোনমিক জোনে দুজন বিনিয়োগকারীসহ আরও অসংখ্য সম্ভাব্য বিনিয়োগ ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে।’

সভায় আমেরিকান চেম্বার অব কমার্স ইন বাংলাদেশের (অ্যামচেম) পক্ষে বাজেট প্রস্তাবনা তুলে ধরেন সংস্থাটির সদস্য ও ফিলিপ মরিস বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রেজাউর-রহমান-মাহমুদ। তিনি বলেন, ক্রেডিট কার্ডের ক্ষেত্রে রিটার্ন দাখিলের প্রমাণপত্র (পিএসআর) বাধ্যতামূলক না করে শুধু টিআইএন বাধ্যতামূলক করা হোক। কার্বোনেটেড বেভারেজে সাপ্লিমেন্টারি ডিউটি বা এসডি কমানো হোক। মেডিকেল ডিভাইস ও টেকনোলজিতে ভ্যাট হার কমানো হোক।

এর জবাবে এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান বলেন, কার্বোনেটেড বেভারেজ জাতীয় পণ্যে কর বাড়ানোর জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার চাপ রয়েছে। এসডি কমাবে না এনবিআর। অন্য বিষয়ে বিবেচনা করা যেতে পারে। বড়দের যদি এত সুবিধা দেওয়া হয়, তাহলে ছোটরা মারা যাবে।

এনবিআরের সদস্য (কাস্টমস নীতি ও আইসিটি) হোসেন আহমদ বলেন, এক গ্লাস বেভারেজে ১০ চা-চামচ চিনি থাকে। চিনিজাতীয় পণ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করহার বেশি থাকে।

দেশের স্থলবন্দরগুলোর সীমানা এক কিলোমিটার করে বাড়ানোর দাবি জানান ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ চেম্বারের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াহেদ। তিনি বলেন, আমদানি পর্যায়ে মিথ্যা ঘোষণায় ২০০ শতাংশ জরিমানার বিধান রয়েছে। অনেক সময় অনিচ্ছাকৃত ভুলও হয়, সে ক্ষেত্রেও ২০০ শতাংশ জরিমানা করা হয়। এ জরিমানার বিধান বিবেচনা ও নারায়ণগঞ্জ বন্দর সচলের দাবিও জানান তিনি।

বিল্ডের সিইও ফেরদৌস আরা বেগম বলেন, এলডিসি থেকে উত্তরণের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণে স্মুথ ট্রানজিশন স্ট্র্যাটেজি (এসটিএস) প্রণীত হয়েছে। এরই মধ্যে একটি কমিটি বাংলাদেশের চারটি রপ্তানি খাতের (অ্যাগ্রো এবং অ্যাগ্রো প্রসেসসিং, লেদার এবং লেদারগুডস, জুট এবং জুট প্রসেসিং, ফার্মাসিউটিক্যালস) খাতের রপ্তানি প্রসারে ডাইরেক্ট ক্যাশ-ইনটেনসিভের পরিবর্তে কী ধরনের ডব্লিউটিও কমপ্লায়েন্ট সুবিধা দেওয়া যায়, সে ব্যাপারে কাজ করছে। এগুলোর মধ্যে ডিউটি ড্র ব্যাক, স্পেসাল বন্ডেড ওয়্যারহাউস, রপ্তানির জন্য সহজ ঋণ, অবকাঠামোগত পরিস্থিতি, নতুন বাজার এবং পণ্য সৃষ্টির জন্য আরঅ্যান্ডডি, পরিবেশসংক্রান্ত এবং অন্যান্য বিষয়ে কমপ্লায়েন্ট হওয়ার ক্ষেত্রে সুবিধা দেওয়া ইত্যাদির ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।

সিইও ফেরদৌস আরা বেগম বলেন, সকল উৎসে কর্তনকৃত করের জন্য একটি রিফান্ড ব্যবস্থা আয়কর আইনের পৃথক ধারায় সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকা প্রয়োজন। সঠিক রিফান্ড প্রক্রিয়া না থাকায় প্রদানকৃত উৎসে কর বার্ষিক আয়কর রিটার্নের মাধ্যমে সমন্বয় করা হয়, কিন্তু অতিরিক্ত কর ফেরত নেওয়ার বিধান বর্তমান আইনে না থাকার ফলে কর প্রতিপালনে করদাতারা নিরুৎসাহিত হচ্ছেন। আয়কর আইনের ধারা ২১৫, উপধারা ২, ৩ বাস্তবায়নকল্পে বিধিমালা অবিলম্বে প্রণয়ন করা দরকার।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

তেল-পেঁয়াজে দাম বাড়তি, সবজিতে ফিরছে স্বস্তি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯: ৪০
টাটকা সবজি কিনছেন একজন। গতকাল রাজধানীর হাতিরপুল কাঁচাবাজারে।
টাটকা সবজি কিনছেন একজন। গতকাল রাজধানীর হাতিরপুল কাঁচাবাজারে।

বাজারে একলাফে লিটারে ৯ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে সয়াবিন তেলের দাম। আর দেশি পুরোনো পেঁয়াজের দাম বেড়েছে প্রতি কেজিতে ১০ টাকা। তবে এসব পণ্যের সরবরাহে তেমন কোনো সমস্যা নেই বাজারে। পুরোনো পেঁয়াজের সঙ্গে নতুন পেঁয়াজও পাওয়া যাচ্ছে।

ভোজ্যতেল ও পেঁয়াজ ছাড়া বাজারে সবজি, ডিম, মুরগি, আটা, চিনিসহ প্রায় অধিকাংশ পণ্যের দাম কমেছে। বিশেষ করে সবজির বাজারে গত সপ্তাহের তুলনায় অনেকটাই স্বস্তি ফিরেছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর শান্তিনগর, মালিবাগ, রামপুরাসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১২০-১৪০ টাকা, এক সপ্তাহ আগে মানভেদে দাম ছিল ১১০-১২০ টাকা কেজি। নতুন পেঁয়াজের দাম অবশ্য তুলনামূলক কম। খুচরায় পাতাসহ নতুন পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ টাকা কেজি।

জানতে চাইলে রামপুরা বাজারের সবজি বিক্রেতা শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এবার পেঁয়াজ আমদানি না করেই বাজারের চাহিদা মিটে গেছে। এখন আগের মৌসুমের পেঁয়াজের মজুত একেবারেই শেষের দিকে। এই সময় পুরোনো পেঁয়াজের দাম কিছুটা বেশিই থাকে। তবে এটা বেশি দিন থাকবে না। বাজারে পেঁয়াজের ঘাটতি নেই। চাহিদা অনুসার পেঁয়াজ রয়েছে।’

বেড়েছে ভোজ্যতেলের দামও। প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৯৮ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৮৯ টাকা। খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৭৫-১৭৯ টাকা লিটার, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৭১-১৭৪ টাকা লিটার।

বিক্রেতারা বলছেন, কোম্পানিগুলো গত এক সপ্তাহে ধীরে ধীরে বাজারে বাড়তি দামে তেল সরবরাহ করেছে। এখনো অনেক দোকানে আগের দামের তেল পাওয়া যায়। তবে বাজারের অধিকাংশ দোকানেই বাড়তি দামের তেল রয়েছে।

গত সপ্তাহ পর্যন্ত খুচরায় কাঁচা মরিচ বিক্রি হতো ১২০-১৫০ টাকা কেজি, তবে চলতি সপ্তাহে দাম কমে ৭০-১০০ টাকা কেজিতে নেমেছে। এ ছাড়া শীতের সবজি হলেও শিমের দাম হঠাৎ বেড়ে ১৫০ টাকার ওপরে উঠেছিল।

সেই শিম এখন বিক্রি হচ্ছে ৬০-৮০ টাকা কেজি। ফুলকপি, বাঁধাকপির দাম কমেছে প্রতিটিতে ১০ টাকা। দুই ধরনের কপিই পাওয়া যাচ্ছে ৩০ টাকায়। তবে ভালো মানের ফুলকপি ৫০ টাকা। গত সপ্তাহে একটি কপি কিনতে ৪০-৬০ টাকা লেগেছিল।

দাম কমেছে টমেটোরও। মান ও বাজারভেদে প্রতি কেজি টমেটো বিক্রি হচ্ছে ৮০-১০০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ১২০-১৪০ টাকা।

দেশি গাজরের সরবরাহ ব্যাপক বেড়েছে বাজারে, এতে দামও কমেছে। প্রতি কেজি গাজর বিক্রি হচ্ছে ৬০-৮০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৮০-১০০ টাকা। তবে আমদানির গাজর আগের মতোই ১২০-১৩০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহে বেগুন বিক্রি হয়েছিল ৮০-১০০ টাকা কেজি, যা চলতি সপ্তাহে কমে ৭০-৮০ টাকায় নেমেছে। বাজারে আলুর দাম আগের মতোই প্রতি কেজি ২৫ টাকা রয়েছে।

আমিষের সবচেয়ে বড় উৎস ডিমের দাম আরও কমেছে। ফার্মের মুরগির সাদা ও বাদামি ডিমের দাম কমে ১১০ থেকে ১২৫ টাকা ডজনে নেমেছে। গত সপ্তাহে ছিল ১২০-১৩০ টাকা।

ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) তথ্য বলছে, গত বছর এই সময় ফার্মের মুরগির ডিম বিক্রি হয়েছিল ১৪০-১৫০ টাকা ডজন। টিসিবি বলছে, গত বছরের তুলনায় ডিমের দাম ৩৫ শতাংশ কমেছে।

ডিমের সঙ্গে কমেছে ফার্মের মুরগির দামও। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির দাম কমে ১৫০-১৭০ টাকা কেজি, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৬০-১৮০ টাকা কেজি।

সেগুনবাগিচা বাজারের ডিম বিক্রেতা নূর ই আলম বলেন, ‘ডিম ও মুরগির বাজার স্বাভাবিক আচরণ করছে না। হঠাৎ দামের এত পতন হচ্ছে কেন, তা বোঝা যাচ্ছে না। বর্তমানে ডিমের যে দাম, তা গত কয়েক বছরের তুলনায় সবচেয়ে কম।’

ডিম-মুরগির সঙ্গে কিছুটা কমেছে রুই-কাতলা মাছের দামও। বাজারে চাষের এই মাছগুলো বিক্রি হচ্ছে ৩০০-৪০০ টাকা কেজি, যা গত সপ্তাহে ছিল ৩২০-৪৫০ টাকা কেজি।

মুদিপণ্যের মধ্যে চিনির দাম আগে থেকেই কমেছে। খোলা চিনি বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৯০-১০০ টাকা কেজি। চলতি সপ্তাহে নতুন করে কমেছে আটা, মসুর ডাল, ছোলার দাম। খোলা আটার দাম ২-৩ টাকা কমে ৪৫-৪৮ টাকা বিক্রি হচ্ছে, যা আগে ছিল ৪৮-৫০ টাকা কেজি। কেজিপ্রতি বড় দানার মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ৯০-১০০ টাকা কেজি, যা গত সপ্তাহে ছিল ৯৫-১০৫ টাকা। ছোলার দামও কেজিপ্রতি ৫ টাকা কমে ৯৫-১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

সেগুনবাগিচা কাঁচাবাজারের মামা-ভাগনে মুদিদোকানের বিক্রেতা হারুনুর রশিদ বলেন, রমজান উপলক্ষে পণ্যের আমদানি ব্যাপক বেড়েছে। তাই প্রায় সব ধরনের পণ্যের দাম কমছে। তবে ভোজ্যতেল ও পেঁয়াজের বিষয়টি কিছুটা ভিন্ন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

উত্তরা ব্যাংকের ২৫০তম শাখার উদ্বোধন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

উত্তরা ব্যাংক পিএলসির একটি নতুন শাখার উদ্বোধন করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার কুমিল্লা জেলার লাকসাম থানার ব্যাংক রোড, দৌলতগঞ্জ বাজারে ব্যাংকের ২৫০তম লাকসাম শাখার উদ্বোধন করেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী মো. আবুল হাশেম।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাকসুদুল হাসান।

এ ছাড়া অনুষ্ঠানে মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) মো. রবিউল হাসান এবং উপমহাব্যবস্থাপক ও আঞ্চলিক প্রধান (কুমিল্লা অঞ্চল) মো. জাহাঙ্গীর আলমসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

টানা চার মাস কমল রপ্তানি আয়

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

রেমিট্যান্সে প্রবাহ বাড়লেও পণ্য রপ্তানিতে ধাক্কার ধারা থামছে না। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের নভেম্বরে দেশের রপ্তানি আয় হয়েছে ৩৮৯ কোটি ১৫ লাখ ডলার। গত বছরের একই মাসে এই আয় ছিল ৪১১ কোটি ৯৬ লাখ ডলার। অর্থাৎ মাসওয়ারি হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে রপ্তানি আয় কমেছে ৫ দশমিক ৫৪ শতাংশ, টাকার অঙ্কে এই হ্রাসকৃত রপ্তানির পরিমাণ দাঁড়ায় ২২ কোটি ৮১ লাখ ডলার।

এবারই প্রথম নয়, আগস্ট থেকে শুরু হওয়া নিম্নমুখী ধারা নভেম্বরে এসে চতুর্থ মাসে পা দিল। জুলাইয়ের শক্তিশালী সূচনার পর রপ্তানি খাত যে ধারাবাহিক গতি অর্জন করেছিল, সেই গতি আগস্টেই থমকে যায়। ওই মাসে আগের বছরের তুলনায় প্রবৃদ্ধি কমে ২ দশমিক ৯৩ শতাংশে নেমে আসে। সেপ্টেম্বরেও পতন গভীর হয়—৪ দশমিক ৬১ শতাংশ। অক্টোবরে সেই হার আরও বেড়ে দাঁড়ায় ৭ দশমিক ৪৩ শতাংশে।

জুলাইয়ের ব্যতিক্রমী সাফল্যের পর পরবর্তী চার মাস যেন একটানা ঢালু পথ। সেই জুলাইয়ে রপ্তানি আয় ছিল ৪৭৭ কোটি ৫ লাখ ডলার, প্রবৃদ্ধি প্রায় ২৪ দশমিক ৯০ শতাংশ। কিন্তু এরপর প্রতি মাসেই কমতে কমতে নভেম্বরে এসে রপ্তানি আয়ের ব্যবধান স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

সার্বিক চিত্রটি বলছে, অর্থবছরের শুরুতে পাওয়া জোয়ারটি এখন চার মাসের টানা ভাটার মুখে দাঁড়িয়ে।

আজ বৃহস্পতিবার প্রকাশিত ইপিবির তথ্য পর্যালোচনায় আরও দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর মিলিয়ে পাঁচ মাসে মোট রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছে ২০০২ কোটি ৮৫ লাখ ডলার; যা আগের ২০২৪-২৫ অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রবৃদ্ধি ঘটেছে মাত্র দশমিক ৬২ শতাংশ। অর্থাৎ পাঁচ মাসের সার্বিক রপ্তানি আয়ের চিত্রও নামমাত্র।

নভেম্বরের সবচেয়ে বড় আঘাত লেগেছে পোশাক খাতে, যেটি দেশের রপ্তানির প্রধান ভরসা। ওই মাসে পোশাক রপ্তানি থেকে এসেছে ৩১৪ কোটি ৯ লাখ ডলার, যা গত বছরের তুলনায় ৫ শতাংশ কম। এ সময় নিটওয়্যার খাতে আয় নেমেছে ১৬১ কোটি ৮৪ লাখ ডলারে, আর ওভেনে এসেছে ১৫২ কোটি ২৪ লাখ ডলার। গত বছরের একই সময়ে নিটওয়্যার আয় ছিল ১৭৩ কোটি ৮২ লাখ ডলার এবং ওভেন ১৫৬ কোটি ৯২ লাখ ডলার।

পোশাকের বাইরে কৃষিপণ্যে রপ্তানি কমেছে ২৪ দশমিক ৬৮ শতাংশ, প্লাস্টিক পণ্যে কমেছে ১৫ দশমিক ৪৯ শতাংশ। এ ছাড়া রপ্তানি পতনের তালিকায় রয়েছে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, পাট ও পাটজাত সামগ্রী, হোম টেক্সটাইলস, ফার্মাসিউটিক্যালস, জাহাজ, চিংড়ি ও লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং। এর মানে হচ্ছে, প্রচলিত এসব খাতেও মন্থরতা স্পষ্ট।

তবে সব বাজারে একই চিত্র নয়। কিছু গন্তব্যে বিপরীত প্রবণতা দেখা গেছে, যা সামগ্রিক মন্দার মধ্যেও আশার সঞ্চার করেছে। যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি বেড়েছে ৪ দশমিক ২০ শতাংশ, যুক্তরাজ্যে ৩ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। উদীয়মান বাজারগুলোর মধ্যেও ইতিবাচক প্রবণতা স্পষ্ট—চীনে রপ্তানি বেড়েছে ২৩ দশমিক ৮৩ শতাংশ, পোল্যান্ডে ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ, সৌদি আরবে ১১ দশমিক ৩৪ শতাংশ এবং স্পেনে ১০ দশমিক ৪৬ শতাংশ। এ প্রবণতা সাম্প্রতিক বছরগুলোয় যেন অনেকটাই ব্যতিক্রমী সাফল্য।

সব মিলিয়ে চিত্রটি দ্বিমুখী। একদিকে ঐতিহ্যগত প্রধান খাতগুলোতে পতন; অন্যদিকে কিছু নতুন বাজারে ইতিবাচক ইঙ্গিত। তবে বড় প্রশ্ন রয়ে যায়, এই বাজার বৃদ্ধি কি পোশাকসহ প্রধান খাতের ধারাবাহিক মন্দাকে সামাল দিতে পারবে?

বর্তমান বাস্তবতা বলছে, বৈচিত্র্য বাড়ানোর পথে অনেক দূর যেতে হবে। উৎপাদন প্রতিযোগিতা, মূল্যের চাপ, বৈদেশিক অর্ডার সংকোচন এবং বিশ্ববাজারের অনিশ্চয়তা, সব মিলিয়ে রপ্তানি খাতে সামনের পথ সহজ নয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

৯ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিল সিগারেট কোম্পানি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১: ৪৮
৯ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিল  সিগারেট কোম্পানি

পাবনার ইশ্বরদীভিত্তিক সিগারেট কোম্পানি ইউনাইটেড টোব্যাকো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের প্রায় ৯ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি উদঘাটন করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। ভ্যাট গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা অভিযানে গিয়ে এই ফাঁকি ধরেছেন বলে আজ বৃহস্পতিবার এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে এনবিআর।

এনবিআর জানায়, তামাক ও তামাকজাত পণ্যের অবৈধ উৎপাদন, বাজারজাতকরণ এবং রাজস্ব ফাঁকি প্রতিরোধে সম্প্রতি কার্যক্রম আরও জোরদার করেছে এনবিআর। এরই ধারাবাহিকতায় গোপন সূত্রের ভিত্তিতে এনবিআরের ভ্যাট গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের একটি দল ঈশ্বরদীতে অবস্থিত ইউনাইটেড টোব্যাকো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের কারখানায় বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে।

গোয়েন্দা দলের পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটি ভ্যাট নিবন্ধন গ্রহণ করলেও দীর্ঘদিন ধরে আনুষ্ঠানিক উৎপাদন কার্যক্রম প্রদর্শন না করে গোপনে সিগারেট উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে আসছে। অভিযানে ৬ লাখ ৩৪ হাজার ৫৯০ শলাকা জাল ব্যান্ডরোলযুক্ত সিগারেট জব্দ করা হয়, যার বাজারমূল্য ৩৮ লাখ টাকারও বেশি। এসব সিগারেটের বিপরীতে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ২৯ লাখ টাকা রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়।

এ ছাড়া ১০ লাখ ২৯ হাজারটি অব্যবহৃত জাল ব্যান্ডরোল বা স্ট্যাম্প উদ্ধার করা হয়, যা ব্যবহার করা হলে অতিরিক্ত ৮ কোটি ৫০ লাখ টাকারও বেশি রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া সম্ভব ছিল। প্রতিষ্ঠানটি ৩ লাখ ২২ হাজার ৫০০টি বৈধ ব্যান্ডরোল সংগ্রহ করলেও তা ব্যবহার না করে জাল ব্যান্ডরোল ব্যবহার করে সিগারেট উৎপাদন ও বিক্রি করছিল।

এনবিআর জানিয়েছে, সব সিগারেট ও উপকরণ আইনানুগভাবে জব্দ করা হয়েছে এবং প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনিপ্রক্রিয়া ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। অভিযানে উদ্ধার করা দলিলাদির ভিত্তিতে শিগগিরই পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দাখিল করা হবে। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট ভ্যাট কমিশনারেটকে প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদন ও বিক্রি কার্যক্রমের ওপর কঠোর নজরদারির জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত