Ajker Patrika

আইডিআরএর প্রতিবেদন

নিয়ম ভেঙে বাকিতে ব্যবসা কন্টিনেন্টাল ইনস্যুরেন্সের

  • মোট পলিসি ইস্যু ৩৪ হাজার ৩টি।
  • বাকিতে পলিসি বিক্রি ১২ হাজার ৪৭৬টি।
  • প্রিমিয়াম জমা হয়নি নির্দিষ্ট সময়ে।
  • ব্যাংক গ্যারান্টি অনুপস্থিত অনেক পলিসির।
  • কঠোর ব্যবস্থা নিতে পারে আইডিআরএ।
মাজফুজুল ইসলাম, ঢাকা
প্রতীকী
প্রতীকী

বিমা খাতের নিয়মকানুন উপেক্ষা করে কন্টিনেন্টাল ইনস্যুরেন্স পিএলসি দীর্ঘদিন ধরে ‘বাকিতে’ বিমা ব্যবসা করছে। অর্থাৎ প্রিমিয়াম হাতে পাওয়ার আগেই পলিসি ইস্যু করেছে। বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) সর্বশেষ পরিদর্শন প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। প্রিমিয়াম হাতে পাওয়ার আগেই পলিসি ইস্যু করাকে বিমা আইন সরাসরি নিষিদ্ধ। কারণ, এতে কোম্পানির আর্থিক ঝুঁকি বাড়ে এবং বাজারে অনৈতিক প্রতিযোগিতা তৈরি হয়।

আইডিআরএর সহকারী পরিচালক আব্দুর রহিমের ২১ সেপ্টেম্বরের প্রতিবেদনে দেখা যায়, কন্টিনেন্টাল ইনস্যুরেন্স ২০২৪ সালে মোট ৩৪ হাজার ৩টি পলিসি ইস্যু করেছে। এর মধ্যে ১২ হাজার ৪৭৬টি পলিসি ‘বাকিতে’ ইস্যু করা হয়েছে। এই ব্যবসার প্রিমিয়ামের পরিমাণ ২৬ কোটি ৪ লাখ ৭২ হাজার ৮১৩ টাকা। এর মধ্যে বিলম্বে জমা পড়া প্রিমিয়াম ২৫ কোটি ৫৬ লাখ ৮৯ হাজার ৪০০ টাকা।

পরিদর্শকেরা ১০০ দিনের বেশি দেরিতে জমা হওয়া কয়েকটি কাভার নোট ও পলিসির নথি পরীক্ষা করে দেখেছেন, ১৫টির মধ্যে ১২টির কোনো ব্যাংক গ্যারান্টি ছিল না। ফলে এগুলো সরাসরি ‘বাকিতে ব্যবসা’ বলে প্রমাণিত। এ ছাড়া ২০২৪ সালে ইস্যু করা কিছু পলিসির বিপরীতে ২০২৫ সালের ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ৪৭ লাখ ৮৩ হাজার টাকার কোনো প্রিমিয়াম জমা হয়নি।

প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, হেলথকেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের একটি ব্যাংক গ্যারান্টি থাকলেও তার পরিমাণ মাত্র ৩ লাখ টাকা, অথচ কোম্পানিটি ২০২৪ সালে তাদের সঙ্গে ১ কোটি ৭৯ লাখ ১৭ হাজার টাকার বাকিতে ব্যবসা করেছে। শুধু মে মাসেই ২১ লাখ টাকার বেশি বাকিতে পলিসি করা হয়েছে। এ ছাড়া লীরা গ্রুপ ও সম্রাট গ্রুপের কিছু ব্যাংক গ্যারান্টির মেয়াদ ২০২২ সালে শেষ হলেও ২০২৪ সালে কোম্পানিটি তাদের পলিসি বাকিতে ইস্যু করেছে।

আইডিআরএ জানিয়েছে, ২১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংক গ্যারান্টির নথি চাওয়া হলেও কোম্পানিটি তা জমা দিতে পারেনি।

বিমা খাতের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রিমিয়াম হাতে পাওয়ার আগেই পলিসি ইস্যু করলে কোম্পানির আর্থিক ঝুঁকি বৃদ্ধি পায় এবং খাতটিতে অনৈতিক প্রতিযোগিতা তৈরি হয়। তাঁদের মতে, ‘বাকিতে বিমা বিক্রি’ বন্ধে আইডিআরএর কঠোর ভূমিকা জরুরি। কারণ, এতে কোম্পানির আর্থিক হিসাব বিকৃত হয়, ক্ষতির ঝুঁকি বাড়ে এবং ন্যায্য প্রতিযোগিতা নষ্ট হয়। তাঁরা মনে করেন, আইডিআরএ চাইলে এর বিরুদ্ধে আর্থিক জরিমানা থেকে শুরু করে লাইসেন্স-সংক্রান্ত কঠোর ব্যবস্থা নিতে পারে।

কন্টিনেন্টাল ইনস্যুরেন্সের সিইও মোশাররফ হোসেন এ বিষয়ে আজকের পত্রিকাকে বলেন, রিপোর্টে দেখানো চিত্র সম্পূর্ণ সঠিক নয়। তথ্য সংশোধনের জন্য আইডিআরএর সঙ্গে আলোচনা চলছে। তিনি আরও বলেন, বাকিতে বিমা ব্যবসা শুধু তাদের কোম্পানিতেই নয়, খাতের সব কোম্পানি কমবেশি করছে। জানুয়ারির প্রথম দিন থেকে চেষ্টা করবেন, যাতে এ ধরনের ব্যবসা বন্ধ করা যায়।

আইন অনুযায়ী, ২০১১ সালের আইডিআরএ সার্কুলার অনুযায়ী ৫ হাজার টাকার বেশি প্রিমিয়াম ডিমান্ড ড্রাফট, পে-অর্ডার, ইএফটি বা চেক আগে জমা না হলে কোনো পলিসি বা কাভার নোট ইস্যু করা যাবে না। চেক এনক্যাশ হওয়ার আগেও নথি ইস্যু করা নিষিদ্ধ। কিন্তু কন্টিনেন্টাল ইনস্যুরেন্স এই নির্দেশনা মানেনি। আইডিআরএ জানিয়েছে, প্রতিষ্ঠানটি বিমা আইন, ২০১০-এর ধারা ১৮(২) এবং সার্কুলার নং ২৯/২০১১ সরাসরি লঙ্ঘন করেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...