Ajker Patrika

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতি চান ব্যবসায়ীরা

  • জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি ব্যবসায়ীদের।
  • মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকারি ব্যয়-সুদহার কমানো, চাঁদাবাজি রোধের দাবি।
  • কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনে জোর দিয়ে শিল্পে বেশি গ্যাস সরবরাহের দাবি।
  • ২০২৬ সালে এলডিসি থেকে উত্তরণ স্থগিতের পরামর্শ।
আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন, জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, ব্যবসা পরিচালন ব্যয় হ্রাস, শিল্পকারখানায় নিরবচ্ছিন্ন উৎপাদন অব্যাহত রাখা, সুশাসন, রাজস্ব ব্যবস্থাপনার অটোমেশন ও সংস্কার এবং সহায়ক বাণিজ্য নীতি সহায়তা প্রদানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন দেশের বৃহৎ শিল্প উদ্যোক্তারা। বিশেষ করে আইনশৃঙ্খলা উন্নতি ও জ্বালানি নিরাপত্তার বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ চান তাঁরা।

গতকাল শনিবার ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘প্রাইভেট সেক্টর আউটলুক: প্রত্যাশা ও অগ্রাধিকার’ শীর্ষক বাণিজ্য সম্মেলনে ব্যবসায়ীরা এ দাবি জানান। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাণিজ্য উপদেষ্টা সেখ বশির উদ্দিন।

ব্যবসায়ীরা বলেন, শিল্প খাত অনেক কঠিন সময় পার করছে। সরকার বলছে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়নের চেষ্টা করছে। কিন্তু যথেষ্ট উন্নতি হয়নি। এ ক্ষেত্রে সরকার ব্যর্থ হয়েছে বলা যায়। আইনশৃঙ্খলার উন্নয়ন না হলে এবং জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে দেশে আর কোনো বিনিয়োগ হবে না। শিল্প উৎপাদন বৃদ্ধিতে সমস্যা সমাধানে একটা রোডম্যাপ করতে হবে। কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনে জোর দিয়ে শিল্প খাতে আরও বেশি হারে গ্যাস সরবরাহ করার প্রস্তাব দেন তাঁরা।

অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, গত ১৫ বছরে অর্থনৈতিক খাতে যে ধরনের দুর্নীতি হয়েছে, তা অকল্পনীয়। সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি ছড়িয়ে পড়েছে। একটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ৫-১০ কোটি টাকা নিয়ে চলে গেছে। বিশ্বে এমন দৃষ্টান্ত বিরল। অন্তর্বর্তী সরকার এগুলো থেকে উত্তরণের প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। তবে কিছুটা সময় লাগতে পারে। ১৫ বছরের অনিয়ম-দুর্নীতি তিন-চার মাসে স্বাভাবিক করা সম্ভব নয়। তবে ক্ষয় হয়ে যেতে শুরু করা অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা আসতে শুরু করেছে এবং আরও ক্ষয় থেকে বাংলাদেশ রক্ষা পেয়েছে।

অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘গত চার মাসে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ), বিশ্বব্যাংকসহ দাতা সংস্থাগুলোর সঙ্গে ৩০টির মতো বৈঠক করেছি। তাদের কাছে অর্থ চাওয়া হয়েছে, তারা দিতে রাজিও হয়েছে। এক্সচেঞ্জ রেট স্থিতিশীল হয়েছে। মূল্যস্ফীতি একটা বড় চ্যালেঞ্জ, রিজার্ভ স্থিতিশীলতা ও সুদের হার সন্তোষজনক পর্যায়ে আনার মাধ্যমে এ অবস্থারও উত্তরণ হবে।’ তিনি বলেন, এনবিআর নিয়ে বেসরকারি খাতের অভিযোগ রয়েছে। এনবিআরের কার্যক্রমে অটোমেশন করার প্রক্রিয়া চলছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে ট্যাক্স পলিসি ও ট্যাক্স অ্যাডমিনিস্ট্রেশনকে আলাদা করা হবে, প্রক্রিয়া চলমান।

বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়নে সরকারের সঙ্গে বেসরকারি খাতের সমন্বয় আবশ্যক এবং বিদ্যমান অবস্থার দ্রুত উন্নতি হবে বলে আশা করছি।’ তিনি বলেন, ‘শুধু এলডিসি উত্তরণ-পরবর্তী সময়ের প্রস্তুতির জন্য নয়, আন্তর্জাতিক বাজারে বাণিজ্য সম্প্রসারণেও নিজেদের সক্ষমতা বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। তবে কবে নাগাদ গ্র্যাজুয়েশন করা যৌক্তিক হবে, সে বিষয়ে আরও ডায়ালগ প্রয়োজন। কেননা এলডিসি-পরবর্তী সময়ে আমরা বেশ কিছু অগ্রাধিকার হারাব।’ একই পণ্যের একাধিক বাণিজ্য সংগঠন থাকা উচিত নয় জানিয়ে এ সময় তিনি এগুলো একে অপরের সঙ্গে মার্জ করার পরামর্শ দেন।

ডিসিসিআই সভাপতি আশরাফ আহমেদ বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আগামী বছরের শুরুতেই নীতি সুদহার ক্রমান্বয়ে কমানোর পাশাপাশি সরকারি ব্যয় হ্রাস, বাজার ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন, পণ্য সরবরাহব্যবস্থায় চাঁদাবাজি রোধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারি বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। কেননা দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখনো পুরোপুরি ঠিক হয়নি; আছে জ্বালানি সমস্যা। এতে শিল্পকারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে ব্যবসা চালিয়ে নেওয়াই কঠিন।’

সম্মেলনে প্যানেল আলোচক ছিলেন বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, বিএবির সভাপতি আব্দুল হাই সরকার, বিটিএমএর শওকত আজিজ রাসেল, ফিকির সভাপতি জাভেদ আখতার, এবিবির সভাপতি সেলিম আর এফ হোসেন, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান আহসান খান চৌধুরী ও ইনসেপটা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের চেয়ারম্যান আব্দুল মোক্তাদির।

আব্দুল মোক্তাদির বলেন, ‘বাংলাদেশ কঠিন সময় পার করছে। শিল্পকারখানায় অস্থিরতা কোনোভাবেই কাম্য নয়। তাই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নে সুনির্দিষ্ট সময়সীমাসহ রোডম্যাপ থাকতে হবে। বিভিন্ন পণ্যের উচ্চ আমদানি শুল্কের কারণে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। ছোট ব্যবসায়ীরা কঠিন পরিস্থিতি পার করছে। আমাদের বেশ কয়েকটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে। তাই কয়লার মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদনে জোর দিলেই শিল্প খাতে আরও বেশি হারে গ্যাস সরবরাহ সম্ভব হবে।’

আহসান খান চৌধুরী বলেন, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন হলে ব্যবসার উন্নয়ন আসবে। এ ছাড়া এলসি সমস্যাও রয়েছে। ব্যবসায়ীরা প্রয়োজনের নিরিখে এলসি খুলতে না পারলে উৎপাদন ও কর্মসংস্থান দুটোই ব্যাহত হয়। নতুন প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে কৃষি খাতের উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি পার্শিয়াল বন্ড ইস্যু করা যেতে পারে। এ ছাড়া বিদ্যমান পরিস্থিতি বিবেচনায় ঋণের সুদের হার কমানো প্রয়োজন।

সেলিম আর এফ হোসেন বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নে সরকারের পক্ষ থেকে এখনো কার্যকর উদ্যোগ দেখা যায়নি। এ ক্ষেত্রে সরকার পুরোপুরি ব্যর্থ। প্রতিটি খাতে অনিয়ম-দুর্নীতি ছেয়ে গেছে–এগুলো থামাতে হবে। সব খাতে আরও স্বচ্ছতা আনতে হবে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে শুধু সংকোচনমূলক মুদ্রানীতিই যথেষ্ট নয়। বরং পণ্যের সরবরাহ শৃঙ্খলে চাঁদাবাজি বন্ধসহ বাজার ব্যবস্থাপনায় কঠোর নজরদারি নিশ্চিত করতে হবে। আর্থিক খাতের মামলাজট নিরসনে আরও বেশি হারে আদালত ও বিচারপতি নিয়োগ করতে হবে।

মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘২০২৬ সালে আমাদের এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন স্থগিত করা উচিত। কারণ আমরা এখনো বেঁচে থাকার চেষ্টায় রয়েছি। তা ছাড়া এ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত হয়েছিল বেশ কিছু ভুল তথ্যের ভিত্তিতে। আমাদের আমদানি ক্রমাগত কমছে, পাশাপাশি কমেছে উৎপাদিত পণ্যের মূল্য সংযোজন। গ্যাস-সংকটে আমরা ফেব্রিকস তৈরি করতে পারছি না। ফলে এ ধরনের পণ্য আমদানিতে অতিরিক্ত টাকা ব্যয় হচ্ছে।’ তিনি বাণিজ্য সংগঠনগুলোকে রাজনীতির বাইরে রাখার আহ্বান জানান।

জাভেদ আখতার বলেন, বৈদেশিক বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিশ্বাসযোগ্যতা, ধারাবাহিকতা ও সক্ষমতা একান্ত অপরিহার্য। এলডিসি উত্তরণের বিষয়ে বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় তিনি নিজেদের সক্ষমতা অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়ার আহ্বান জানান।

আব্দুল হাই সরকার বলেন, ‘জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত ছাড়া শিল্পোন্নয়ন সম্ভব নয়। এ অবস্থার উন্নয়ন জরুরি। আমাদের ইন্ডাস্ট্রিয়াল জোনগুলোয় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নের পাশাপাশি উদ্যোক্তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।’

শওকত আজিজ রাসেল বলেন, ‘বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় আমরা বেশ পিছিয়ে রয়েছি। এ ক্ষেত্রে আমাদের সক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি নীতিমালা প্রণয়ন করা প্রয়োজন। ব্যবসা পরিচালনব্যয় হ্রাসে, বিশেষ করে দুর্নীতি কমানোর ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।’

বাণিজ্য সম্মেলনে আরও অংশ নেন ডিসিসিআই ঊর্ধ্বতন সহসভাপতি মালিক তালহা ইসমাইল বারী, সহসভাপতি মো. জুনায়েদ ইবনে আলী, পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা, সাবেক সভাপতিসহ বেসরকারি খাতের প্রতিনিধিরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল: আড়াই কোটি টাকা আত্মসাতে পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

জ্বালানি তেল প্রতিষ্ঠান স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের (এসএওসিএল) প্রায় ২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল সোমবার দুদকের উপপরিচালক (মানি লন্ডারিং) মো. জাহাঙ্গীর আলম মামলাটি করেন।

মামলার আসামিরা হলেন এসএওসিএলের কর্মকর্তা (এইচআর) আব্দুল্লাহ আল মামুন (৩৭), উপব্যবস্থাপক (হিসাব) ও ডিপো ইনচার্জ মোহাম্মদ মাহমুদুল হক (৪৫), গোল্ডেন সিফাত এন্টারপ্রাইজের মালিক মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন গিয়াস (৪৬), আজহার টেলিকমের স্বত্বাধিকারী মো. সোহেল রানা (৪৪) এবং মেসার্স মদিনা কোয়ালিটির স্বত্বাধিকারী মো. মাসুদ মিয়া (৫১)।

দুদক চট্টগ্রামের উপপরিচালক সুবেল আহমেদ বলেন, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার করে স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের হিসাব থেকে প্রায় ২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা বিভিন্নভাবে স্থানান্তর ও আত্মসাৎ করেন।

এজাহার থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এসএওসিএলের এলসি-সংক্রান্ত লেনদেনের নামে প্রকৃত সরবরাহকারীর পরিবর্তে ভুয়া ও সম্পর্কহীন প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে চেক ইস্যু করার বিষয় দুদকের অনুসন্ধানে উঠে আসে। পরে এসব চেকের অর্থ বিভিন্ন ব্যক্তিগত ও বাণিজ্যিক অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর কিংবা নগদে উত্তোলন করে আত্মসাৎ করা হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে কোনো এলসি খোলা হয়নি এবং লেনদেনগুলো কোম্পানির জেভি-০৮ ও জেনারেল লেজারে অন্তর্ভুক্তও করা হয়নি।

অনুসন্ধান প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, পাঁচটি চেকের মধ্যে তিনটির অর্থ গোল্ডেন সিফাত এন্টারপ্রাইজ, আজহার টেলিকম ও মদিনা কোয়ালিটির অ্যাকাউন্টে জমা হয় এবং বাকি দুটি চেকের অর্থ নগদে উত্তোলন করা হয়। চেক জমাদানকারী হিসেবে বারবার আব্দুল্লাহ আল মামুনের নাম পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্ট পেমেন্ট ভাউচারে নিরীক্ষা বিভাগের স্বাক্ষর না থাকাও অনিয়মের প্রমাণ হিসেবে উঠে এসেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ছবি: বিজ্ঞপ্তি
ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ছবি: বিজ্ঞপ্তি

ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

গতকাল রোববার (২৮ ডিসেম্বর) ইসলামী ব্যাংক টাওয়ারে আয়োজিত এই সভায় সভাপতিত্ব করেন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান মুফতি ছাঈদ আহমাদ।

সভায় উপস্থিত ছিলেন ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির ম্যানেজিং ডাইরেক্টর মো. ওমর ফারুক খাঁন এবং শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সদস্যসচিব অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আব্দুস সামাদ। এ ছাড়া কাউন্সিলের অন্য সদস্যবৃন্দ সভায় অংশগ্রহণ করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

যশোরের খেজুর রস: লক্ষ্য ১২০ কোটি টাকার গুড় উৎপাদন

জাহিদ হাসান, যশোর
রসের জন্য খেজুরগাছ কেটে প্রস্তুত করছেন গাছি। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
রসের জন্য খেজুরগাছ কেটে প্রস্তুত করছেন গাছি। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

শীতের রাত পেরিয়ে ভোরের আলো ফোটার আগেই যশোরের গ্রামাঞ্চলে শুরু হয় ব্যস্ততা। খেজুরগাছের নিচে হাজির হন গাছিরা। আগের বিকেলে কাটা গাছের ‘চোখ’ বেয়ে সারা রাত মাটির হাঁড়িতে জমেছে সুমিষ্ট খেজুর রস। ভোরে সেই রস নামিয়ে শুরু হয় আরেক কর্মযজ্ঞ; চুলায় জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরির কাজ। বাড়ির নারীরাই মূলত এই প্রক্রিয়ায় নেতৃত্ব দেন। কয়েক ঘণ্টা জ্বালানোর পর তৈরি হয় সুস্বাদু খেজুর গুড় ও পাটালি।

শীত মৌসুম এলেই এমন দৃশ্য দেখা যায় খেজুর গুড়ের জেলা খ্যাত যশোরের প্রায় প্রতিটি গ্রামে। সম্প্রতি যশোরের খেজুর গুড় ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্যের স্বীকৃতি পাওয়ায় এর ঐতিহ্যের পাশাপাশি অর্থনৈতিক সম্ভাবনাও নতুন করে সামনে এসেছে।

উৎপাদন ও বাজারের চিত্র

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে যশোরে প্রায় ১২০ কোটি টাকার খেজুর রস ও গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই উৎপাদন গ্রামীণ অর্থনীতির চাকা আরও গতিশীল করবে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের।

বর্তমানে খেজুরের কাঁচা রস প্রতি মাটির হাঁড়ি ২০০ থেকে ৪০০ টাকা, দানা গুড় প্রতি কেজি ৩৫০-৪০০ টাকা এবং পাটালি প্রতি কেজি ৪৫০-৬০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারদর বাড়লেও গাছিরা বলছেন, শ্রম ও ঝুঁকির তুলনায় লাভ সীমিত।

গাছির সংকট বড় চ্যালেঞ্জ

যশোর সদর উপজেলার নওয়াপাড়া গ্রামের গাছি আজিবর প্রায় ৩৫ বছর ধরে খেজুর গাছ কাটছেন। তিনি বলেন, ‘আগে দেড় শ গাছ কাটতাম, এখন বয়সের কারণে ৩৫-৪০টার বেশি পারি না। রস ও গুড়ের দাম বেড়েছে ঠিকই, কিন্তু কাটার মতো গাছ কমে গেছে। আবার গাছ থাকলেও দক্ষ গাছির অভাব। এবার বেশি শীত পড়ায় রসও ভালো নামছে, গুড়ের উৎপাদনও বেশি।’

গাছ থেকে নামিয়ে আনা খেজুরের রস জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরি করছেন এক নারী। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
গাছ থেকে নামিয়ে আনা খেজুরের রস জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরি করছেন এক নারী। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

মনিরামপুর উপজেলার সরসকাটি গ্রামের গাছি অতিয়ারও প্রায় ৪০ বছর ধরে এই পেশায় যুক্ত। তিনি বলেন, এবার ৫০টা গাছ কাটছি। প্রতিদিন ৮-১০ কেজি গুড় তৈরি হয়। কাজটা খুব কষ্টের। তবে শীত মৌসুমে এই আয়েই পুরো বছরের সংসার চলে।

ই-কমার্সে বাড়ছে চাহিদা

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, যশোর জেলায় মোট খেজুরগাছের সংখ্যা ২৩ লাখ ৩০ হাজার ৬৯৫। এগুলোর মধ্যে চলতি মৌসুমে রস আহরণের উপযোগী গাছ রয়েছে ৩ লাখ ৭ হাজার ১৩০টি।

উৎপাদিত গুড় প্রথমে স্থানীয় হাটে বিক্রি হয়, পরে পাইকারদের মাধ্যমে তা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করা হয়। যশোরের খেজুর গুড় এখন বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। পাশাপাশি ই-কমার্স ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমভিত্তিক উদ্যোক্তাদের হাত ধরে গুড় ও পাটালি সরাসরি ভোক্তার ঘরে পৌঁছানো হচ্ছে। এতে বাজার যেমন সম্প্রসারিত হচ্ছে, তেমনি তৈরি হচ্ছে নতুন কর্মসংস্থান।

কৃষি বিভাগের উদ্যোগ

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোশাররফ হোসেন বলেন, যশোরের খেজুর গুড়ের স্বাদ ও মানের কারণে চাহিদা সব সময় বেশি। এবার শীত বেশি হওয়ায় রসের পরিমাণ ও মান—দুটোই ভালো। চলতি মৌসুমে প্রায় ১২০ কোটি টাকার রস ও গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। নিরাপদ খেজুর রস এবং গুড় উৎপাদনে কৃষকদের পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। উঠান বৈঠকের মাধ্যমে গাছিদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইসলামি ১০ ও সরকারি ৬ ব্যাংক: ঋণের অর্ধেকের বেশি অনাদায়ি

জয়নাল আবেদীন খান, ঢাকা 
আপডেট : ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ২৭
গ্রাফিক্স: আজকের পত্রিকা
গ্রাফিক্স: আজকের পত্রিকা

দেশের ব্যাংকিং খাতের ভেতরে জমে থাকা অনিয়ম, রাজনৈতিক আশ্রয় ও কৃত্রিম হিসাবের পর্দা চলতি বছর যেন একে একে সরে যেতে শুরু করেছে। আর তাতেই সামনে এসেছে এক ভয়াবহ বাস্তবতা। সরকারি ও শরিয়াহভিত্তিক ইসলামি ব্যাংকগুলো খেলাপি ঋণের ভারে এখন কার্যত দিশেহারা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর প্রান্তিক শেষে সরকারি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের হার দাঁড়িয়েছে ৪৯ দশমিক ৬৫ শতাংশে, আর ইসলামি ব্যাংকগুলোর ক্ষেত্রে তা আরও বেশি—৫৯ দশমিক শূন্য ২ শতাংশে পৌঁছেছে। অর্থাৎ, এই দুটি খাতেই বিতরণ করা ঋণের অর্ধেকের বেশি অনাদায়ি হয়ে পড়েছে। যেখানে বিশেষায়িত ব্যাংকের খেলাপির হার ৪১ দশমিক ৯৫ ও বিদেশি ব্যাংকগুলোর খেলাপির হার মাত্র ৪ দশমিক ৯২ শতাংশ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, শরিয়াহভিত্তিক ১০টি ইসলামি ব্যাংক মোট ৪ লাখ ৭৯ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা ঋণ বিনিয়োগ করেছে। এর মধ্যে খেলাপি হয়েছে ২ লাখ ৮৩ হাজার ৫৫ কোটি টাকা। হিসাব বলছে, প্রতি ১০ টাকার প্রায় ৬ টাকাই এখন আদায় অনিশ্চিত। সেই তুলনায় শরিয়াহসহ দেশীয় বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৪ লাখ ৬৩ হাজার ১৮৫ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৩৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ। এই তুলনাতেই স্পষ্ট, খেলাপির বোঝা এককভাবে সবচেয়ে বেশি ইসলামি ব্যাংকগুলোর ঘাড়েই।

সরকারি ছয় ব্যাংকের অবস্থাও খুব একটা ভিন্ন নয়। এসব ব্যাংকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৫৮ হাজার ৭৯২ কোটি টাকা। মোট বিতরণ করা ঋণের প্রায় অর্ধেকই সেখানে অনাদায়ি। ব্যাংকার ও বিশ্লেষকদের মতে, এই সংকট রাতারাতি তৈরি হয়নি। বছরের পর বছর ধরে দুর্বল তদারকি, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ এবং ইচ্ছাকৃত খেলাপিকে আড়াল করার প্রবণতা ধীরে ধীরে ব্যাংকগুলোকে এই জায়গায় এনে দাঁড় করিয়েছে।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন মনে করেন, খেলাপি ঋণের এত উচ্চ হার শুধু ব্যাংকিং খাতের ভেতরের সমস্যা নয়, এটি সামগ্রিক অর্থনীতির জন্য বড় ঝুঁকি। ব্যাংকগুলো নতুন ঋণ দিতে পারছে না, বিনিয়োগ কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ছে, শিল্প-কারখানার সম্প্রসারণ থেমে যাচ্ছে। এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে কর্মসংস্থানে। তাঁর মতে, খেলাপিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা এবং ঋণ আদায়ে বাস্তবসম্মত উদ্যোগ ছাড়া পরিস্থিতির উন্নতি সম্ভব নয়।

ইসলামি ব্যাংকিং খাতে এস আলম, নাসা ও বেক্সিমকো গ্রুপের নাম বারবার আলোচনায় এসেছে। সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য, দীর্ঘদিন সরকারি মদদে এসব গ্রুপ বিপুল ঋণ নিয়ে খেলাপি হলেও তা আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি পায়নি। এখন সেই বাস্তবতা দিনের আলোর মতো স্পষ্ট।

সামগ্রিকভাবে দেশের ব্যাংকিং খাতের চিত্র আরও উদ্বেগজনক। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ১৮ লাখ ৩ হাজার ৮৪০ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি হয়েছে প্রায় ৬ লাখ ৪৪ হাজার ৫১৫ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৩৫ দশমিক ৭৩ শতাংশ। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. মইনুল ইসলাম বলেন, বিগত সরকারের টানা সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে খেলাপি ঋণ কম দেখানোর যে অপচেষ্টা ছিল, তা এখন ভেঙে পড়েছে। সঠিক হিসাব সামনে আসায় হার ৩৬ শতাংশের কাছাকাছি পৌঁছেছে, যা বাস্তবতারই প্রতিফলন। তিনি আবারও শীর্ষ ১০ খেলাপির জন্য আলাদা ট্রাইব্যুনালের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান জানান, আগের সরকারের আমলে লুকিয়ে রাখা খেলাপি ঋণ প্রকাশ পাওয়ায় এই হার বেড়েছে। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখন ঋণ আদায়ে কঠোর নির্দেশনার কারণে আগের তুলনায় আদায় বেড়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত