Ajker Patrika

নতুন দিনের জন্য চাই ডিজিটাল মানুষ

মোস্তাফা জব্বার
আপডেট : ২৭ জুন ২০২১, ১৬: ০০
নতুন দিনের জন্য চাই ডিজিটাল মানুষ

যদি বলা হয়, ২০০৯ সাল থেকেই একটি ডিজিটাল সরকার গড়ে তুলতে কোনো পর্যায়েই প্রচেষ্টার কমতি রাখা হয়নি, তবে ভুল বলা হবে না। একসময় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীন ও বর্তমানে তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের সঙ্গে সম্পৃক্ত এটুআই নিরলসভাবে সরকারের সর্বাঙ্গ ডিজিটাল করার প্রচেষ্টা চালিয়ে এসেছে এবং এখনো চালিয়ে যাচ্ছে। সংস্থাটির জন্মের পর থেকেই তাদের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে মতামত দেওয়া থেকে অংশ নেওয়া–কোনোটাতেই আমি পিছিয়ে ছিলাম না। ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে এক মাস বিরতি ছাড়া ২০১৯ সালের ১৯ মে পর্যন্ত তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার ফলে আমি খুব স্পষ্ট করেই বলতে পারি, অন্তত ২০০৯ সাল থেকে সরকার তার সব কর্মকাণ্ড ডিজিটাল করার জন্য তার পক্ষে সম্ভব সব কাজই করেছে। এই করোনাকালে সরকারি অফিসগুলো সবচেয়ে বড় যে সমর্থনটা পেয়েছে, সেটি হচ্ছে ই-নথি। ২০২০ সালে সরকারের যেকোনো প্রতিষ্ঠান ই–নথির সহায়তায় কাগজের জগৎ থেকে বের হয়ে আসতে পারার সক্ষমতা অর্জন করেছে। ২০১৮ সালে যখন আমার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিই, তখন আমার কাছে ৯৫ ভাগ হাতে লেখা ফাইল আসত। এখন কাগজের কোনো ফাইল আসে না। এর ফলে করোনাকালে ঘরে বসে আমার বিভাগের সব কাজ করতে পেরেছি। আমার হাতে একটি ফাইলও পেন্ডিং নেই। সংগত কারণেই কাগজের ব্যাকআপ থাকলেও সরকারের সব ডেটা ডিজিটাল হতে বাধ্য হয়েছে। চিঠিপত্র থেকে ফাইলের নোট, সবই ডিজিটাল হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে জাতীয় পরিচয়পত্র, মেশিন রিডেবল পাসপোর্টসহ সব কাজেই ডিজিটালের ছোঁয়া লেগেছে। ব্যাংক-বিমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান ডিজিটাল হওয়ার পাশাপাশি সাধারণ মানুষের কাছে ডিজিটাল অর্থব্যবস্থা পৌঁছানোর জন্য মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সেবা ব্যাপকভাবে প্রচলিত হয়েছে। প্রণোদনা ভাতা, উপবৃত্তি, বৃত্তিসহ অসংখ্য অর্থ বিতরণ ডিজিটাল পদ্ধতিতে হয়েছে এবং প্রতিদিনই তার পরিমাণ বাড়ছে।

অন্যদিকে সরকারের শিক্ষাব্যবস্থার ডিজিটাল প্রযুক্তির প্রয়োগ ব্যাপকভাবে বেড়েছে। আমরা আমাদের ক্লাসরুম সেভাবে ডিজিটাল করতে পারিনি। প্রাথমিক স্তর ছাড়া অন্য পর্যায়ে ডিজিটাল কনটেন্ট দিতে পারিনি আমরা। আমাদের পাঠক্রম বদলায়নি, পাঠদানপদ্ধতিও বদলায়নি। দেশের সব শিক্ষককে ডিজিটাল শিক্ষার উপযোগী করা সম্ভব হয়নি। প্রাথমিক-মাধ্যমিক তো দূরের কথা, উচ্চশিক্ষার শিক্ষকেরা ডিজিটালপদ্ধতির শিক্ষাদানে অক্ষম। বহু বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইন টিভিভিত্তিক সাধারণ চক-ডাস্টারের শিক্ষা চালু করতে পারেনি। শিক্ষকদের বিরোধিতা, প্রশাসনের বা মালিকদের অনীহা ছাড়াও এমনকি ছাত্রছাত্রীদের বিরোধিতার মুখোমুখি হয়েছি আমরা। একটি দূরদর্শী পরিকল্পনায় শিক্ষার ডিজিটাল রূপান্তর ঘটানো যায়নি। কিছু কম্পিউটার ল্যাব বা ডিজিটাল ক্লাসরুম করে আমরা যা করেছি, তা যে প্রয়োজনের সময় অপ্রতুল, সেটি এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি। তবে এবার ডিজিটাল রূপান্তরের মহাসড়ক ডিজিটাল সংযোগ তার দক্ষতা দেখাতে পেরেছে।

এই সুদীর্ঘ সময়ে আমরা খুবই গুরুত্ব দিয়ে ভূমিব্যবস্থা ডিজিটাল করার চেষ্টা করেছি। আমার মনে আছে, সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বছরের পর বছর চেষ্টা করেও ভূমিব্যবস্থার ডিজিটাইজেশন করার উদ্যোগই নিতে পারেননি। যতবারই তিনি বলিষ্ঠ পদক্ষেপ নিতে চেয়েছেন, ততবারই ভূমি মন্ত্রণালয়ে সেটি আটকে গেছে। বলা যায়, আমরা ভূমি মন্ত্রণালয়ের আমলাতন্ত্রের কাছে হেরে গেছি।

এভাবে প্রায় প্রতিটি মন্ত্রণালয়ের কথাই বলা যাবে যে সরকারের ডিজিটাইজেশন পরিকল্পনা কেমন করে ঘাটে ঘাটে আটকে রাখতে হয়েছে। সর্বশেষ যে উদ্যোগটি আমি চালু করে এসেছিলাম, সেটি ছিল এটুআইয়ের ডিজিটাল সার্ভিস অ্যাকসিলেরাটর নামক একটি কর্মসূচির আওতায় সরকারের সব মন্ত্রণালয়ের ডিজিটাইজেশন এবং সেসব মন্ত্রণালয়ের সেবাগুলো তার পরিকল্পনা ও বাজেট তৈরির কাজ শুরু করেছিলাম। আমি থাকার সময় পর্যন্ত ১ হাজার ৯৬০টি সেবাকে ডিজিটাল করার জন্য চিহ্নিত করতে সক্ষম হই। আমাদের তখনই ধারণা ছিল, প্রায় ৩ হাজার সেবা ডিজিটাল করা যাবে। এটি একদিকে সরকারকে ডিজিটাল করবে, অন্যদিকে দেশের সফটওয়্যার শিল্পকে একটি বিশাল অভ্যন্তরীণ বাজার তৈরি করতে সহায়ক হবে। এবার করোনা-পরবর্তীকালে সরকারের এই সেবাগুলো আমাদের ডিজিটাল শিল্প খাতকে ব্যাপকভাবে সহায়তা করবে। অন্যদিকে সরকারকে সত্যিকারের একটি ডিজিটাল সরকারে পরিণত করবে।

এবার করোনাকালে আমরা অনুভব করলাম যে স্বাস্থ্য খাতে আমাদের ডিজিটাইজেশনের অবস্থা মোটেই উল্লেখ করার মতো নয়। আমাদের হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা, পেশেন্ট ডেটাবেইস, ডক্টরস ডেটাবেইস ও হাসপাতালগুলোর তথ্যের সমন্বয়ের অভাব প্রকটভাবে দেখা দিয়েছে। প্রযুক্তি ব্যবহারে আমরা যে পিছিয়ে, সেটি বলার অপেক্ষা রাখে না।
আমাদের জন্য একটি বড় কামনা ছিল বিচার বিভাগকে ডিজিটাইজ করা। এ জন্য পুলিশ, আইন বিভাগ, উচ্চ আদালত ও নিম্ন আদালতকে ডিজিটাল করতে হবে। এবার যখন আমরা দীর্ঘ সময় আদালত চালাতে পারলাম না, তখন সরকার তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে আদালত পরিচালনার জন্য অধ্যাদেশ জারি করল। সেই অনুপাতে জরুরি মামলার ডিজিটাল শুনানি চলছে। কিন্তু দুঃখজনক দুটি ঘটনা আমাদের আশার প্রদীপটা নিভিয়ে দিয়েছে। প্রথম ঘটনাটি বাগেরহাটে। একটি পত্রিকা থেকে খবরটি উদ্ধৃত করছি।

লজিস্টিক সাপোর্ট ও প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ না থাকায় ভার্চ্যুয়াল শুনানিতে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আইনজীবী সমিতির সদস্যরা। বুধবার (১৩ মে, ২০২০) দুপুরে বাগেরহাট জেলা আইনজীবী সমিতির এক জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

 গত সোমবার থেকে ভার্চ্যুয়াল শুনানি শুরু হওয়ার কথা থাকলেও বুধবার পর্যন্ত এই কার্যক্রম শুরু হয়নি বাগেরহাট জেলা জজ আদালতে। বাগেরহাট জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ড. এ কে আজাদ ফিরোজ টিপু বলেন, ভিডিও কনফারেন্সের সহায়তায় চালু করা নতুন এই পদ্ধতি সম্পর্কে আইনজীবীরা দক্ষ নন।

তিনি আরও বলেন, আদালতের ভার্চ্যুয়াল শুনানিতে অংশ নিতে কম্পিউটার, ল্যাপটপ, অ্যান্ড্রয়েড ফোন ও ইন্টারনেট সংযোগ থাকা এবং ব্যবহার জানা জরুরি। আমাদের সমিতির অধিকাংশ সদস্যের তা নেই। এই পদ্ধতির শুনানিতে অংশ নিতে হলে সদস্যকে প্রথমে নিবন্ধন করতে হবে। সরকারের চালু করা আধুনিক এই পদ্ধতিতে ভার্চ্যুয়াল কোর্টে অংশ নেওয়া আমাদের জন্য দুরূহ। তাই সমিতির সদস্যদের নিয়ে সাধারণ সভা করে সর্বসম্মতিক্রমে ভার্চ্যুয়াল শুনানিতে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। সেই সঙ্গে করোনা পরিস্থিতিতে সামাজিক দূরত্ব বজায় ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে সব আদালত চালু করার জন্য আবেদন জানানো হয়েছে।

বাগেরহাট জেলা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি মোহাম্মাদ আলী বলেন, ‘আমরা সরকারি এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই। আমাদের আইনজীবীদের প্রশিক্ষণ ও প্রয়োজনীয় উপকরণ নেই। আধুনিক এই পদ্ধতি চালুর জন্য সবার আগে আইনজীবী ও আদালতের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও লজিস্টিক সাপোর্ট দিতে হবে।’ তাহলে সরকারের এই প্রক্রিয়া সফল হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

আমরা ২০০৯ সাল থেকে ডিজিটাল বাংলাদেশ আন্দোলন করতে গিয়ে কোনোকালে ভাবতেই পারি না যে উকিলদের মতো কোনো জনগোষ্ঠী ডিজিটাইজেশনের জন্য মোটেই প্রস্তুত নয়। ১১ বছর পার করার পর যদি আমাদের উচ্চশিক্ষিতরা ডিজিটাল প্রযুক্তির কাছে অসহায়ত্ব অনুভব করেন, তখন আশার প্রদীপটি জ্বালিয়ে রাখতে পারি না। আইনজীবীদের এই সিদ্ধান্তের পর আরও একটি খবর মিডিয়ার আসে। সেটি আরও ভয়ংকর। এই খবরে কেবল যে বিচারব্যবস্থা ডিজিটাল করার বিপক্ষে অবস্থান নেওয়া হয়েছে সেটিই নয়, বরং যাঁরা এই ডিজিটাল বিচারব্যবস্থায় অংশ নিয়েছেন, তাঁদের বহিষ্কার করা হয়েছে।

ভার্চ্যুয়াল কোর্টে মামলা পরিচালনা করায় ১৭ জন আইনজীবীকে বহিষ্কার করেছে গাইবান্ধা বার। ২০২০ সালের ২ জুন বারের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের স্বাক্ষরিত এক নোটিশে ১৭ জন আইনজীবীর নাম উল্লেখ করে তাঁদের বার থেকে বহিষ্কার করার আদেশ প্রদান করা হয়েছে এবং পরবর্তী সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত তাঁদের সদস্যপদ স্থগিত থাকবে বলে নোটিশে বলা হয়েছে। ওই ১৭ জনের মধ্যে কার্যনির্বাহী পরিষদের দুজন সহসভাপতি এবং একজন সাহিত্য সম্পাদক ও সহসম্পাদক রয়েছেন। বারের বর্তমান কমিটির সহ-সমাজকল্যাণ সম্পাদক পীযূষ কান্তি পাল বলেন, ‘ভার্চ্যুয়াল কোর্ট পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম আমরা।’

জেলা বারের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ২০২০ সালের ১২ মে কার্যনির্বাহী পরিষদের সভা ডেকে সিদ্ধান্ত নেন এবং আমাদের মৌখিকভাবে ভার্চ্যুয়াল কোর্টে মামলা পরিচালনা করতে নিষেধ করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্রপতির জারিকৃত অধ্যাদেশ এবং প্রধান বিচারপতি কর্তৃক প্র্যাকটিস ডিরেকশন অনুযায়ী ভার্চ্যুয়াল কোর্ট সিস্টেমকে সমর্থন দিয়ে আমরা মামলা পরিচালনা করি।

এতে বারের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ক্ষুব্ধ হয়ে ২০২০ সালের ১৭ মে সাধারণ সভা ডাকেন এবং এককভাবে সিদ্ধান্ত নেন, যাঁরা ভার্চ্যুয়াল কোর্টে শুনানিতে অংশ নেবেন, তাঁদের বার থেকে বহিষ্কার করা হবে। পরবর্তী সময়ে ২০২০ সালের ২ জুন এই বহিষ্কার নোটিশ জারি করেছেন।

বহিষ্কার আদেশ পাওয়া আইনজীবীরা আরও বলেন, ‘সম্পূর্ণ অবৈধ সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা বার। তারা প্রধান বিচারপতির আদেশ অমান্য করেছে। আমাদের বিরুদ্ধে বারের এই আদেশের বিষয়ে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের নেতা এবং সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও সম্পাদকের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’

তবে ২০২১ সালের সুখবর হলো, এখন উচ্চ আদালতসহ জেলা আদালতগুলো পুরোপুরি ভার্চ্যুয়াল পদ্ধতিতেই চলছে। এক বছরে এই অগ্রগতি প্রশংসা করার মতো। এই বিষয়ে প্রধান বিচারপতির ইতিবাচক পদক্ষেপ প্রশংসাযোগ্য।

আমার নিজের কাছে দুটি খবরই এত হতাশার যে বাংলাদেশের ডিজিটাল–যাত্রার যে অসাধারণ স্বপ্নটা আমরা দেখছি, সেটিতে কালিমা লেপন করে দিচ্ছে। আমি আশা করব আইনজীবীরা যা করেছেন, অন্য পেশার মানুষ কোনোভাবেই তা সমর্থন করবে না বা তাঁদের পথে পা বাড়াবে না। দুনিয়াতে যখন যন্ত্র চালু হয়, তখন হরতাল–ভাঙচুর হয়েছে, কম্পিউটার চালু হওয়ার পর হরতাল–আন্দোলন হয়েছে। কিন্তু পরবর্তী সময়ে দেখা গেছে, যারা নেতিবাচক পথে হেঁটেছে, তারাই হেরেছে। আমরা তো তিনটি শিল্পবিপ্লব পায়ে মাড়িয়ে এলাম। এখন যদি চতুর্থ শিল্পবিপ্লবে শরিক হতে না পারি, তবে এই জাতির সামনে চলা থেমে যাবে। এটি একেবারেই বাস্তবতা যে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলতে মানুষকে ডিজিটাল হতে হবে। করোনা চলাকালে বা তারপর আমাদের জনগণ এই বিষয়ে সতর্ক থাকবে, সেটিই আমাদের কামনা। আসুন, আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলি।

মোস্তাফা জব্বার
মন্ত্রী, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ক্রেডিট কার্ড নিয়ে বিশেষ আয়োজন

গ্রাহক অভিজ্ঞতা ও সন্তুষ্টিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার

ক্রেডিট কার্ড, ইন্টারনেট ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিং, কিউআর কোড পেমেন্ট ও ডিজিটাল ওয়ালেটের মতো আধুনিক প্রযুক্তির সংযোজন ক্যাশলেস সমাজ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এসব বিষয়ে প্রাইম ব্যাংকের ইভিপি ও হেড অব কার্ডস অ্যান্ড রিটেইল অ্যাসেট জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সালের সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক নাদিম নেওয়াজ।

নাদিম নেওয়াজ
আপডেট : ২০ মার্চ ২০২৫, ১৮: ৪৮
গ্রাহক অভিজ্ঞতা ও সন্তুষ্টিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার

দেশে দিন দিন ক্যাশলেস লেনদেন বাড়ছে। এ বিষয়ে আপনার মত জানতে চাই।

জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও মানুষ ধীরে ধীরে ক্যাশলেস লেনদেনের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে, যা অর্থনীতির আধুনিকায়নের পথে গুরুত্বপূর্ণ একটি অগ্রগতি। এটি শুধু সময় সাশ্রয় করে না, বরং নিরাপদ, স্বচ্ছ ও কার্যকর অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

প্রাইম ব্যাংক সব সময় গ্রাহকদের সুবিধার কথা চিন্তা করে উদ্ভাবনী ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা প্রদান করছে। আমাদের ইন্টারনেট ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিং, কিউআর কোড পেমেন্ট ও ডিজিটাল ওয়ালেট সেবা গ্রাহকদের সহজ, দ্রুত ও নিরাপদ লেনদেনের সুযোগ দিচ্ছে। প্রাইম ব্যাংক গ্রাহকদের ডিজিটাল লেনদেন ব্যবস্থার সঙ্গে সংযুক্ত হতে অনুপ্রাণিত করছে, যাতে তাঁরা নিরাপদ, ঝামেলামুক্ত ও আধুনিক ব্যাংকিং সুবিধা উপভোগ করতে পারেন।

কার্ড ব্যবহারে দেশের মানুষের আগ্রহ কেমন?

জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: দেশে মানুষের কার্ড ব্যবহারের প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে। ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের কার্ড ব্যবহারে উৎসাহিত করতে নানা সুবিধা দিচ্ছে। প্রাইম ব্যাংকের কার্ডের চাহিদাও দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত তিন বছরে আমাদের ব্যাংকের কার্ড ব্যবহার দ্বিগুণ হয়েছে, যা গ্রাহকদের আস্থা ও ডিজিটাল পেমেন্টের প্রতি তাঁদের আগ্রহকে প্রতিফলিত করে। সহজলভ্যতা, নিরাপত্তা ও আধুনিক সুবিধার কারণে গ্রাহকেরা আমাদের কার্ড ব্যবহারে আগ্রহী হচ্ছেন।

প্রাইম ব্যাংকের কর্মীরা শুধু কার্ড সরবরাহে সীমাবদ্ধ নন, বরং সরকারের ক্যাশলেস অর্থনীতি বাস্তবায়নে সক্রিয় ভূমিকা রাখছেন। দৈনন্দিন লেনদেনকে আরও সহজ ও সুরক্ষিত করতে আমরা ডিজিটাল চ্যানেলের ব্যবহার বাড়াতে সচেতনতা বৃদ্ধি ও শিক্ষামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছি।

পবিত্র রমজান ও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে গ্রাহকদের জন্য কী ধরনের অফার দিচ্ছেন?

জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: গ্রাহকদের উৎসবমুখর অভিজ্ঞতা আরও আনন্দদায়ক করতে আমরা বিভিন্ন খাতে আকর্ষণীয় মূল্যছাড় ও ক্যাশব্যাক অফার করছি। ইফতার ও সেহরির জন্য শীর্ষস্থানীয় রেস্তোরাঁগুলোতে এক্সক্লুসিভ ডাইনিং অফার, বাই ওয়ান গেট ওয়ান/টু/থ্রি সুবিধা রয়েছে। এ ছাড়া গ্রোসারি ও রিটেইল দোকানগুলোতে বিশেষ ছাড় এবং ক্যাশব্যাক সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। আমাদের কার্ডহোল্ডাররা যাতে পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারেন, সে জন্য জনপ্রিয় টিকিটিং প্ল্যাটফর্মগুলোতে এক্সক্লুসিভ ক্যাশব্যাক অফার রাখা হয়েছে। গ্রাহক অভিজ্ঞতা ও সন্তুষ্টিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে আমরা দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক গড়ে তুলতে চাই।

প্রাইম ব্যাংকের কার্ডের চাহিদা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিন বছরে আমাদের ব্যাংকের কার্ড ব্যবহার দ্বিগুণ হয়েছে, যা গ্রাহকদের আস্থা ও ডিজিটাল পেমেন্টের প্রতি তাঁদের আগ্রহকে প্রতিফলিত করে। সহজলভ্যতা, নিরাপত্তা ও আধুনিক সুবিধার কারণে গ্রাহকেরা আমাদের কার্ড ব্যবহারে আগ্রহী হচ্ছেন।

এ ছাড়া আমাদের অনলাইন ব্যাংকিং অ্যাপ ‘মাইপ্রাইম’-এর মাধ্যমে গ্রাহকেরা ক্রেডিট কার্ড থেকে যেকোনো অ্যাকাউন্টে সহজে ফান্ড ট্রান্সফার করতে পারেন। সুদমুক্ত সময়সীমার সুবিধাসহ কোনো অতিরিক্ত চার্জ ছাড়া ওয়ালেট ট্রান্সফার ও টপ-আপ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্ডভেদে গ্রাহকেরা দেশে-বিদেশে ১ হাজার ৪০০-এর বেশি এয়ারপোর্ট লাউঞ্জ সুবিধা উপভোগ করতে পারেন।

ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

কার্ডের ব্যবহার বাড়াতে আরও কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া দরকার?

জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: আমাদের নির্বাচিত অ্যাকাউন্টধারী ও ঋণগ্রহীতাদের জন্য বান্ডেল ক্রেডিট কার্ডসহ বিশেষ সুবিধা প্রদান করছি। এ ছাড়া ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের জন্য নতুন ধরনের ক্রেডিট কার্ড চালু করা হয়েছে, যা ডিজিটাল লেনদেনের প্রসার ঘটাবে এবং গ্রাহক সন্তুষ্টি নিশ্চিত করবে। সর্বোচ্চ আর্থিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে প্রতিটি অ্যাকাউন্টের সঙ্গে ডেবিট কার্ড দেওয়া হচ্ছে, যা ডিজিটাল লেনদেনকে আরও সহজ ও আকর্ষণীয় করে তুলবে। সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষের জন্য ব্যাংকিং সুবিধা নিশ্চিত করতে করপোরেট প্রিপেইড কার্ড চালু করা হয়েছে, বিশেষত গার্মেন্টসের কর্মীদের জন্য, যাঁরা এখনো নগদে মজুরি পেয়ে থাকেন। গার্মেন্টস কারখানার সঙ্গে অংশীদারত্বের মাধ্যমে আমরা কর্মীদের ব্যাংকিং ব্যবস্থার আওতায় আনছি। পাশাপাশি যেসব এলাকায় ব্যাংকিং সুবিধা সীমিত, সেখানে আমাদের এজেন্ট ব্যাংকিং নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ডেবিট কার্ড ইস্যু ও অন্যান্য ব্যাংকিং সেবা দেওয়া হচ্ছে।

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ক্রেডিট কার্ড নিয়ে বিশেষ আয়োজন

নিরাপত্তা ও সেবায় মার্কেট শেয়ারে এগিয়ে সিটি ব্যাংক

দেশের ক্রেডিট কার্ড বাজারে সিটি ব্যাংক এক নির্ভরযোগ্য নাম, বিশেষ করে একমাত্র আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) ক্রেডিট কার্ড ইস্যু এবং অ্যাকুয়ারের ক্ষেত্রে। উদ্ভাবন এবং গ্রাহককেন্দ্রিক সেবা দিয়ে নেতৃত্বের আসন মজবুত করেছে। এ বিষয়ে ব্যাংকটির কার্ড বিভাগের প্রধান তৌহিদুল আলমের সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার আসাদুজ্জামান নূর।

আসাদুজ্জামান নূর
আপডেট : ২০ মার্চ ২০২৫, ১৮: ৪৮
তৌহিদুল আলম
তৌহিদুল আলম

সিটি ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের সাফল্যের মূল কারণ কী এবং গ্রাহকসংখ্যা ও লেনদেনের ভিত্তিতে ব্যাংকটি কোন অবস্থায় রয়েছে?

তৌহিদুল আলম: সিটি ব্যাংক ২০০৪ সালে প্রথম ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে এবং ২০০৯ সালে আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) কার্ড ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। প্রথম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লাউঞ্জ-সুবিধা চালু করার মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ড খাতে উদ্ভাবনী সেবা প্রদান করে, যা সিটি ব্যাংককে শীর্ষ স্থানে নিয়ে আসে। বর্তমানে, সিটি ব্যাংক প্রায় ৭ লাখ ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করেছে এবং দেশের ৪৪টি ব্যাংকের মধ্যে ১৫-২০ শতাংশ লেনদেন পরিচালিত হয় আমাদের কার্ডের মাধ্যমে। এর পেছনে রয়েছে মানসম্মত সেবা, উদ্ভাবনী অফার এবং গ্রাহকের প্রতি দায়বদ্ধতা।

এই ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড প্রোডাক্টগুলোর মধ্যে কোনটি সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং গ্রাহকেরা কেন এটি বেশি ব্যবহার করছেন?

তৌহিদুল আলম: সিটি ব্যাংক অ্যামেক্স এবং ভিসা—দুটি পেমেন্ট স্কিমের ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে। তবে বাংলাদেশে আমরা একমাত্র অ্যামেক্স ক্রেডিট কার্ড ইস্যু কর্তা, যা বিশেষ গুরুত্ব পায়। এর ট্রাভেল, ডাইনিং ও লাইফস্টাইল অফারের কারণে অ্যামেক্স কার্ডই আমাদের গ্রাহকদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং বেশি ব্যবহৃত।

ক্রেডিট কার্ড গ্রাহকদের জন্য বিশেষ অফার বা সুবিধা প্রদান করছে কি? কেন গ্রাহকেরা এই ব্যাংকের কার্ডে বেশি আগ্রহী?

তৌহিদুল আলম: অবশ্যই। সিটি ব্যাংক গ্রাহকদের জন্য বিভিন্ন সুবিধা প্রদান করছে, যেমন অ্যামেক্স কার্ডে রিওয়ার্ড পয়েন্ট, ভিসা ইনফাইনাইট কার্ডে ক্যাশব্যাক এবং এয়ারপোর্ট লাউঞ্জ, মিট অ্যান্ড গ্রিট, হোটেল-রেস্টুরেন্ট ডিসকাউন্ট অফার। আমরা একমাত্র অ্যামেক্স ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হওয়ায়, গ্রাহকদের জন্য কাস্টমাইজড সুবিধা দিতে পারি, যা তাদের আরও আকৃষ্ট করছে।

মোবাইল অ্যাপে ক্রেডিট কার্ড সেবার বিশেষত্ব কী?

তৌহিদুল আলম: সিটি ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড সেবায় ডিজিটাল সুবিধার মাধ্যমে প্রতিনিয়ত নতুন ফিচার যুক্ত করছে। আমাদের সিটিটাচ অ্যাপ্লিকেশনটি এখন দেশের অন্যতম জনপ্রিয় ব্যাংকিং অ্যাপ। গ্রাহকেরা অ্যাপের মাধ্যমে বিল পেমেন্ট, কার্ড টু অ্যাকাউন্ট ট্রান্সফার, এমএফএস টু কার্ড ট্রান্সফার, কিউআর পেমেন্ট, সরকারি ও বেসরকারি ইউটিলিটি সার্ভিস পেমেন্টসহ বিভিন্ন কার্যক্রম সহজে সম্পন্ন করতে পারেন। এ ছাড়া মেম্বারশিপ রিওয়ার্ড পয়েন্ট দিয়ে পারচেইজ, পারসোনাল ডিটেইল চেঞ্জ এবং ইন্টারন্যাশনাল ট্রানজেকশন ম্যানেজমেন্টও এই প্ল্যাটফর্মে উপলব্ধ। গ্রাহকদের সুবিধা ও চাহিদা অনুযায়ী আমরা নিয়মিত নতুন নতুন সেবা যোগ করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ক্রেডিট কার্ড নিয়ে বিশেষ আয়োজন

১৫০০‍-এর বেশি এয়ারপোর্ট লাউঞ্জে সুবিধা দেয় ঢাকা ব্যাংক

ক্রেডিট কার্ডের জগতে প্রতিযোগিতার ছড়াছড়ি। সেখানে কীভাবে ঢাকা ব্যাংক তার অবস্থান ধরে রেখেছে, ভবিষ্যৎ কী পরিকল্পনা, জানিয়েছেন ঢাকা ব্যাংকের এমডি শেখ মোহাম্মদ মারুফ। তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার মাহফুজুল ইসলাম

মাহফুজুল ইসলাম, ঢাকা
আপডেট : ২০ মার্চ ২০২৫, ১৮: ৪৯
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড সেবা ও বাজারে প্রতিযোগিতা সম্পর্কে কিছু বলুন?

শেখ মোহাম্মদ মারুফ: আমাদের ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের চাহিদা দ্রুত বাড়ছে। আমরা কন্টাক্টলেস ও ডুয়াল কারেন্সি কার্ড, ক্যাশব্যাক, ডিসকাউন্ট, রিওয়ার্ড পয়েন্টস এবং কম বা শূন্য বার্ষিক ফির সুবিধা প্রদান করি। দ্রুত কার্ড ইস্যু, ২৪/৭ কাস্টমার কেয়ার এবং মোবাইল অ্যাপে সহজ তথ্য অ্যাকসেসের সুবিধা রয়েছে। বিভিন্ন উৎসব অফার, কো-ব্র্যান্ড কার্ড এবং ১৫০০+ এয়ারপোর্ট লাউঞ্জে প্রবেশের সুবিধা থাকায় আমাদের কার্ডের চাহিদা বাড়ছে।

অন্যান্য ব্যাংকের তুলনায় ঢাকা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড কীভাবে আলাদা বা বিশেষ সুবিধা প্রদান করে?

শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ঢাকা ব্যাংক পিএলসির ক্রেডিট কার্ডে ক্যাশব্যাক, ডিসকাউন্ট, রিওয়ার্ড পয়েন্টস, কম লেনদেন ও বার্ষিক ফি, কন্টাক্টলেস সুবিধা এবং উন্নত সুরক্ষা যেমন ওটিপি ও ফ্রড ডিটেকশন রয়েছে। ব্যবহারবান্ধব মোবাইল অ্যাপ এবং ২৪/৭ কাস্টমার কেয়ার সেবা গ্রাহকদের নিরাপদ অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করে।

দেশে ক্রেডিট কার্ডধারীদের মধ্যে কোন ধরনের লেনদেন প্রবণতা বেশি দেখা যায়?

শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ক্রেডিট কার্ডধারীরা ফ্যাশন, ইলেকট্রনিকস, গৃহসজ্জা, দৈনন্দিন পণ্য, রেস্টুরেন্ট, ফুড ডেলিভারি, হোটেল ও ভ্রমণ বুকিং এবং ইউটিলিটি বিল পরিশোধে বেশি ব্যবহার করেন। ডিজিটালাইজেশন ও অনলাইন সেবার সহজলভ্যতা এই প্রবণতাগুলোকে ক্রমাগত বাড়াচ্ছে।

ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারে সুদের হার ও ফি-সংক্রান্ত নীতি কীভাবে নির্ধারণ করা হচ্ছে, এটি কি গ্রাহকবান্ধব?

শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ব্যাংকগুলো সাধারণত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা বা বাজার পরিস্থিতি অনুযায়ী রেট নির্ধারণ করে, তবে ক্রেডিট কার্ডের সুদের হার ২৫ শতাংশের বেশি হতে পারে না। বেশির ভাগ কার্ডে ৪৫ দিন বিনা সুদে কেনাকাটার সুযোগ থাকে। বার্ষিক ফি, লেট পেমেন্ট ফি এবং ক্যাশ উত্তোলন ফি প্রযোজ্য হতে পারে এবং অনেক কার্ডে রিওয়ার্ড পয়েন্ট বা ক্যাশব্যাক সুবিধা থাকে। তবে অতিরিক্ত ব্যবহার ও বিলম্বিত পেমেন্টে ঋণের বোঝা বাড়তে পারে।

গ্রাহককে ব্যাংকের গ্রাহক সেবা বিভাগে অভিযোগ জমা দিতে হবে। অনেক প্রতিষ্ঠান ট্র্যাকিং নম্বর দেয়, যা দিয়ে অভিযোগের অবস্থা ট্র্যাক করা যায়। সাধারণত ৭-১০ কর্মদিবসের মধ্যে প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া এবং ৩০-৪৫ দিন পর সম্পূর্ণ সমাধান পাওয়া যায়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ ক্রেডিট কার্ডসংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়ন করে এবং ব্যাংকগুলোকে ফি, সুদের হার এবং শর্তাবলি সম্পর্কে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে হবে

ঢাকা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড কতটা নিরাপদ?

শেখ মোহাম্মদ মারুফ: আমাদের ব্যাংক লেনদেনের নিরাপত্তায় পিসিআই-ডিএসএস এবং আইএসও ২৭০০৩২ কমপ্লায়েন্ট। অনলাইন ট্রানজেকশনে ডেটা এনক্রিপশন ও দুই-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন ব্যবহৃত হয়। লেনদেন রিয়েল-টাইমে মনিটর করা হয় এবং গ্রাহকদের নিরাপত্তা টিপস দেওয়া হয়। সন্দেহজনক লেনদেন হলে ২৪/৭ সেবা হটলাইনে যোগাযোগ করতে পারেন।

ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

যেসব গ্রাহক প্রথমবারের মতো ক্রেডিট কার্ড নিতে চান, তাঁদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?

শেখ মোহাম্মদ মারুফ: প্রথমবার ক্রেডিট কার্ড নেওয়ার আগে ক্রেডিট অবস্থা ও আয়প্রবাহ চেক করুন। সঠিক কার্ড নির্বাচন করে সুদ, ফি এবং অফার বুঝে ব্যবহার করুন। ক্রেডিট লিমিট অতিক্রম না করার চেষ্টা করুন, সময়মতো পেমেন্ট করুন এবং অটো পেমেন্ট সেট আপ করুন।

ঢাকা ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড সেবায় ভবিষ্যতে কী ধরনের নতুন উদ্ভাবন বা প্রযুক্তি সংযুক্ত করার পরিকল্পনা করছে?

শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ক্রেডিট কার্ড সুরক্ষা বাড়াতে বায়োমেট্রিক অথেন্টিকেশন, এআই ও মেশিন লার্নিংয়ের মাধ্যমে ব্যয় প্যাটার্ন বিশ্লেষণ এবং ব্লকচেইন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হতে পারে। ঢাকা ব্যাংক তাদের মোবাইল অ্যাপে এআই-ভিত্তিক গ্রাহকসেবা এবং চ্যাটবট সংযুক্ত করতে পারে।

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ক্রেডিট কার্ড নিয়ে বিশেষ আয়োজন

মাস্টারকার্ডেই সহজ ও নিরাপদ লেনদেন

বাংলাদেশে যাত্রা শুরুর পর মাস্টারকার্ড এখন কোন অবস্থানে রয়েছে, গ্রাহকের সেবার মান ও নিরাপত্তার ধরন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন মাস্টারকার্ডের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সিনিয়র রিপোর্টার জয়নাল আবেদীন খান

জয়নাল আবেদীন খান, ঢাকা
আপডেট : ২০ মার্চ ২০২৫, ১৮: ৫০
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

মাস্টারকার্ডের যাত্রা কীভাবে শুরু হয়েছিল?

সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: আমরা বাংলাদেশে ১৯৯১ সালে যাত্রা শুরু করি, যখন বিশ্বে ডিজিটাল পেমেন্টের প্রয়োজনীয়তা বাড়ছিল। ১৯৯৭ সালে এএনজেড গ্রিনলেজ (পরে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড) ব্যাংকের সঙ্গে মিলে দেশে প্রথম ক্রেডিট কার্ড চালু করি, যা স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক গ্রাহকদের জন্য নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করে। ২০১৩ সালে বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত ও ই-কমার্স খাতকে লক্ষ্য রেখে প্রথম অফিস চালু করা হয়। বর্তমানে ডিজিটাল প্রযুক্তি ও ই-কমার্সের বিকাশের সঙ্গে ডিজিটাল পেমেন্টের চাহিদা বেড়েছে, যেখানে মাস্টারকার্ড গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।

গ্রাহকসেবার মান নিয়ে কিছু বলুন।

সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড সব সময় সর্বোচ্চ মানের গ্রাহকসেবা নিশ্চিত করে, যাতে নিরাপদ ও সহজ লেনদেন সম্ভব হয়। আমাদের উদ্ভাবনী সলিউশন গ্রাহকদের দৈনন্দিন আর্থিক কার্যক্রম সহজ করে, বিশেষ করে কন্টাক্টলেস পেমেন্ট দ্রুত ও নিরাপদ অভিজ্ঞতা দেয়। কোভিড মহামারির সময় এটি আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। মাস্টারকার্ড সরাসরি কার্ড ইস্যু না করে, বিশ্বব্যাপী ব্যবসা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রযুক্তিগত সহায়তা দেয়।

গ্রাহকের আস্থা অর্জনে কতটা সফল?

সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: বাংলাদেশে গ্রাহকদের আস্থা অর্জনে মাস্টারকার্ড আশাতীত সফল হয়েছে, যা প্রযুক্তিগত নিরাপত্তা ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে সম্ভব হয়েছে। কারণ, আমাদের টোকেনাইজেশন প্রযুক্তি কার্ড তথ্য সুরক্ষিত রাখে, আর নানা অফার ও সুবিধা গ্রাহকদের আকৃষ্ট করে সম্পর্ক মজবুত করে। গ্রাহক সন্তুষ্টি নিশ্চিত করতে আমরা নিরন্তর কাজ করছি।

দেশি ও বিদেশি গ্রাহকদের সেবায় কি কোনো পার্থক্য আছে?

সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড বিশ্বব্যাপী একই মানের সেবা নিশ্চিত করে। তবে অফারগুলো দেশের বাজার ও গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারে। বাংলাদেশসহ প্রতিটি দেশে আর্থিক নীতিমালা ও বাজার পরিস্থিতির ভিত্তিতে সেবাগুলো নির্ধারিত হয়।

নিরাপত্তার ক্ষেত্রে মাস্টারকার্ডের বিশেষত্ব কী?

সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তা প্রযুক্তির জন্য পরিচিত এবং বাংলাদেশেও গ্রাহকদের সুরক্ষিত লেনদেন নিশ্চিত করছে। আমাদের বিভিন্ন নিরাপত্তা প্রযুক্তি; যেমন চিপ ও পিন প্রযুক্তি, টোকেনাইজেশন, উন্নত এনক্রিপশন ও ‘সিকিউর কোড’ সিস্টেম অনলাইন ফ্রড ও তথ্য চুরির ঝুঁকি কমায়। মাস্টারকার্ড ইএমভি ও পিসিআই ডিএসএস প্রটোকল মেনে চলে, যা গ্লোবাল লেনদেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এবং গ্রাহকদের আস্থা বাড়ায়।

মাস্টারকার্ড বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তা প্রযুক্তির জন্য পরিচিত এবং বাংলাদেশেও গ্রাহকদের সুরক্ষিত লেনদেন নিশ্চিত করছে। আমাদের বিভিন্ন নিরাপত্তা প্রযুক্তি; যেমন চিপ ও পিন প্রযুক্তি, টোকেনাইজেশন, উন্নত এনক্রিপশন ও ‘সিকিউর কোড’ সিস্টেম অনলাইন ফ্রড ও তথ্য চুরির ঝুঁকি কমায়। মাস্টারকার্ড ইএমভি ও পিসিআই ডিএসএস প্রটোকল মেনে চলে, যা গ্লোবাল লেনদেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এবং গ্রাহকদের আস্থা বাড়ায়।

মাস্টারকার্ড ব্যবহারের জনপ্রিয়তা কেন বাড়ছে?

সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: বাংলাদেশে মাস্টারকার্ডের জনপ্রিয়তা বেড়েছে ডিজিটাল পেমেন্টের প্রসার, উন্নত নিরাপত্তা, রিওয়ার্ড ও অফার এবং ই-কমার্সের বিকাশের কারণে। নগদ লেনদেনের বদলে ডিজিটাল লেনদেনের প্রবণতা বাড়লেও কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য এখনো অর্জিত হয়নি, যেখানে আরও সহযোগিতা প্রয়োজন। উন্নত নিরাপত্তা প্রযুক্তি গ্রাহকদের আস্থা বাড়িয়েছে এবং বিভিন্ন রিওয়ার্ড ও ডিসকাউন্ট তাঁদের নিয়মিত লেনদেনে সুবিধা দিচ্ছে। ই-কমার্সের প্রসারও মাস্টারকার্ড ব্যবহারের চাহিদা বাড়ার একটি বড় কারণ, যা অনলাইন কেনাকাটায় নিরাপত্তা ও সুবিধা নিশ্চিত করে।

গ্রাহকদের জন্য বিশেষ কী অফার রয়েছে?

সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড সারা বছর গ্রাহকদের জন্য নানা অফার ও সুবিধা দেয়, যা কেনাকাটা ও লেনদেনকে সহজ ও আকর্ষণীয় করে তোলে। ঈদ, পূজা, ক্রিসমাসসহ বিভিন্ন উৎসবে বিশেষ ছাড় ও ক্যাশব্যাক অফার থাকে। এবার পবিত্র রমজান ও ঈদ উপলক্ষে ৪০টি শীর্ষস্থানীয় ব্র্যান্ডের ১৭৫টির বেশি আউটলেটে ২৫ শতাংশ ছাড়, ৫০টি হোটেল ও রেস্টুরেন্টে বোগো অফার, ট্রাভেল প্যাকেজে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় এবং ইলেকট্রনিকসে অতিরিক্ত ডিসকাউন্ট দেওয়া হচ্ছে। দেশের ৯০০০+ মার্চেন্ট আউটলেটে বিশেষ পেমেন্ট সুবিধাও মিলছে, যা গ্রাহকদের কেনাকাটার আনন্দ বাড়াবে।

ভবিষ্যতে মাস্টারকার্ডের নতুন কোনো অভিনব সেবা আসছে কি?

সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড সব সময় নতুন সেবা যোগ করে আসছে, যেমন মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে অ্যাকাউন্ট ম্যানেজমেন্ট। ভবিষ্যতে আরও উদ্ভাবনী ও গ্রাহককেন্দ্রিক সলিউশন দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে, যেমন এআই প্রযুক্তি দিয়ে লেনদেনের নিরাপত্তা বাড়ানো ও ফ্রড শনাক্তকরণ। ক্রস-বর্ডার পেমেন্ট ও রেমিট্যান্স সেবায় স্বচ্ছতা ও দ্রুততা আনা এবং ডিজিটাল ওয়ালেট সলিউশন বাড়ানো লক্ষ্য। এসব উদ্যোগ মাস্টারকার্ডকে বাংলাদেশের ডিজিটাল অর্থনীতির অগ্রদূত হিসেবে প্রতিষ্ঠা করবে।

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত