দীপ্তি দত্ত

পুরাতন বন্দর নগরী, পুরাতন শহর, পুরাতন শীতলক্ষ্যা, জামদানির পুরাতন সূতিকাগার, পুরাতন কাঠের ঘোড়া—এই সকল পুরাতনের গল্পের রাজ্যে নারায়ণগঞ্জের বাস। সেখানে ঐতিহ্য, সেখানে জাদুঘর সব জমজমাট। টিকিট কেটে আমরা ভিড় করি এই সকল পুরাতনের দিকে একবার চোখ দিতে। অথচ সত্য হলো নারায়ণগঞ্জ পুরাতন শহর, কিন্তু মৃত নয়। সেখানে বাস প্রায় বাইশ লাখ লোকের। শীতলক্ষ্যা অসুস্থ; কিন্তু মৃত নয়। জামদানি শীতলক্ষার দিকেই তাকিয়ে আছে। জাদুঘরের দিকে নয়। ঢাকার বাইরে, ঢাকার গ্যালারিগুলোর বাইরে দাগ আর্ট স্টেশন-এর প্রদর্শনীতে গিয়ে কেবল এই ভালো লাগার অনুরণনই মনে জেগেছে।
ঐতিহ্য, লোকশিল্পের বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার প্রয়াসে নিজেদের ক্লান্ত না করে নারায়ণগঞ্জের এই শিল্পী দল বেঁচে থাকা ও বাঁচিয়ে রাখার কথা বলছে, বুনছে প্রাণের গল্প। এই গল্পে বিদ্রোহের রূপবাদী প্রবণতা লঘু হয়েছে শিল্পীদের নিজেদের জীবনঘনিষ্ঠ রূপ নির্মাণ প্রবণতার কারণে। অমল আকাশ যেমন পটগানে ও পটছবিতে যখন বলে ‘হাশেম ফুডে ঝলসানো প্রাণ’ বা শ্রমিক বিদ্রোহের গল্প, তখন তা কেবল আঙ্গিকের দুর্দান্তপনায় আক্রান্ত হয় না, শিল্পীর সহজাত অবস্থানকেও স্পষ্ট করে। এই অবস্থাটি পুরো প্রদর্শনী, তথা উদ্যোগের মূল শক্তি। শিল্পী খন্দকার নাছির বরাবরের মতোই অরগানিক ফর্মে মুগ্ধ করেছেন। তবে কাঠ মাধ্যমে তিনি সময়সাপেক্ষ এবং শ্রমসাধ্য যে রীতিতে কাজ করে থাকেন, তা এখানে ছিল না। আয়াসহীন ভাস্কর্যের বাজারের সঙ্গে যুদ্ধ করার পরও কাঠের কাজ তিনি জারি রেখেছেন। একই সঙ্গে প্রতিনিয়ত চালিয়ে যাচ্ছেন ম্যাটেরিয়াল নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা। এই নিরীক্ষা শীতলক্ষার প্রাণ টিকিয়ে রাখার সাথে ক্রমেই সম্পর্কিত হয়েছে নানাভাবে।
নাছির এই প্রদর্শনীতে কাঠের বদলে কাজ করেছেন কাগজের কাদামাটিতে (পেপার ক্লে)। মাধ্যম হিসেবে কাগজের কাদামাটি নতুন কোনো বিষয় নয়। কিন্তু প্রথাগত কাঠ, পাথর, তামা ইত্যাদির বদলে নাছির তাঁর ভাস্কর্যের উপকরণ হিসেবে যেভাবে একে নিজের জন্য প্রাসঙ্গিক করে তোলেন তা আমাদের ভাস্কর্য চর্চার জন্য জরুরি। রামকিঙ্কর তাঁর অবস্থার চাপে যেমন খোঁজ করেছিলেন একটি মাধ্যমের, শিল্পী ইমাম হোসেন সুমনও চমকে দেওয়া সম্ভাবনা নিয়ে হাজির হয়েছিলেন তাঁর প্রথম একক প্রদর্শনীতে। ভাবনা ও মাধ্যমের সমন্বয় ছিল যথাযথ। কাগজের কাদামাটিকে সুমন ভাবনার সঙ্গে মিলিয়ে দিয়েছিলেন। প্রদর্শনী কক্ষে প্রবেশের পথে মাথার ওপরে ঝুলছে 'জগদ্দল' নামে এক পাথর। শহীদ আহমেদ মিঠুর এই কাজেও উপকরণ-ভাবনার সহায় হিসেবে উপস্থিত হয়েছে। পাথরের রূপক হয়ে চিন্তা বা উত্তেজনার উদ্দীপক হয়ে আছে দর্শকের জন্য।
কিন্তু নাছির ভাবনার স্বার্থে ম্যাটেরিয়ালের দিকে যাননি। অর্থনৈতিক শর্তগুলো যাপনের প্রয়োজনে, অবস্থার চাপে নাছির বিকল্প খোঁজেন। সেই বিকল্প থেকে ক্ষণিক কাজের জন্য ব্যবহার করা থার্মোকলের মতো ম্যাটেরিয়ালের সঙ্গে কাগজের কাদামাটির যোগে প্রথমে নিজের সন্তানের জন্য খেলনা পুতুল এবং ক্রমে তা ভাস্কর্যে যুক্ত করেছেন। মাধ্যমের এই নিরীক্ষা স্থানিক সকল প্রসঙ্গ বিবেচনায় অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। গুরুত্বপূর্ণ ভাস্কর্যকে ঐশ্বর্যের ভারিক্কিপনা থেকে মুক্ত করার ক্ষেত্রে।
মাধ্যমের এই নিরীক্ষা-দাগ-গোষ্ঠী তার স্থানিক পরিসর ও পরিজন লক্ষ্যার দিকে নজর রেখে অব্যাহত রাখলে ভাস্কর্যকে গণমুখী করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারে। নাছিরের মতো একই মাধ্যমে কাজ করেছেন শিল্পী রঞ্জিত সরকার। কিন্তু অভিব্যক্তিতে দুজনের কাজ আলাদা হয়ে গেছে পুরোপুরি।
শিল্পী সুমনা আক্তার গার্মেন্টসের শহর নারায়ণগঞ্জ থেকে ওয়েস্টেজ গার্মেন্টস ম্যাটেরিয়াল দিয়ে যৌথভাবে নির্মাণ করেছেন একটি নান্দনিক দেয়াল কাঁথা। এই কাঁথাও গার্মেন্টসের ওয়েস্টেজকে কেন্দ্র করে একটি বাজার ভাবনাকে উসকে দেয়, যার সম্ভাবনা ও বাজার ইতিমধ্যেই পরীক্ষিত নানাভাবে।
শিল্পী লিটন সরকারের শিল্পকর্মের শিরোনাম নিজেই ইতিহাসের জটিলতা ও সংকটের প্রতীকী ভাষা হয়ে ওঠে। ‘পানিজল’ কাজে শীতলক্ষার সমৃদ্ধি, যা লিখিত বা মৌখিক সাহিত্যে ছড়িয়ে আছে, তাকেই আবার সামনে এনেছেন শীতলক্ষ্যাকে ফিরে পাওয়ার আশায়। এই আশা জাগার পেছনে নারায়ণগঞ্জ চারুকলা ইনস্টিটিউটের নবনির্মিত ভবন তার পাশের লেকের সংস্কার অনেক বড় প্রভাবক। এই লেকটি গিয়ে মিশেছে শীতলক্ষার সাথে। ফলে লক্ষ্যা পাড়ের চিত্রকথা এককভাবে দৃশ্যায়িত নয়। চারুকলা ইনস্টিটিউটকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন ধরে চলা আন্দোলন, তার একটি সফল পরিবেশকেন্দ্রিক রূপায়ণকে পাশে রেখে এই প্রদর্শনী দেখলে বোঝা যাবে, কোনো ঐতিহ্য-পিপাসা নয়, বরং বর্তমানকে বদলে দেওয়ার আকাঙ্ক্ষা ‘লক্ষ্যাপাড়ের চিত্রকথা-১ ’-এ উপলব্ধ হচ্ছে।
শিল্পী মুনতাসীর মঈন ইতিহাসের স্মারক হিসেবে বিভিন্ন ব্যক্তিত্বকে পাঠ করেন তাঁর ছবি ও টেক্সটের মধ্য দিয়ে। তারই একটি আংশিক উপস্থাপনা এই প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে। ভীখন লাল-নারায়ণগঞ্জের নাম যিনি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন-এঁকেছেন, তাঁর কল্পিত ছবি, ইতিহাস থেকে দৃশ্যরূপে দর্শকের সামনে এনেছেন সমাজ সেবক ফারুক মঈন, সংগীত শিল্পী আবুল সরকার, ব্যবসায়ী রণদা প্রসাদ সাহা, ক্রীড়াবিদ মোনেম মুন্না, শিল্পী মঞ্জুশ্রী নিয়োগী, চিত্রশিল্পী মাহবুব কামরান, বংশীবাদক ওস্তাদ শামসুল হক, ভাষাসৈনিক মমতাজ বেগম, শিক্ষাবিদ খগেন্দ্র নাথ চক্রবর্তীর মতো নানা গুণীজনকে। শিল্পীদের ইতিহাস পাঠের এই প্রকরণ ইতিহাসকে সহজভাবে পাঠ করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে জোরালোভাবে।
এই প্রদর্শনীর আরেকটি চমৎকার দিক হচ্ছে দ্বিমাত্রিকতা ও ত্রিমাত্রিকতার একাডেমিক চর্চার যে সীমানা, তা ভেদ করে অগ্রসর হয়েছে। ‘এই শহরে’ শিরোনামের একটি দলীয় কাজ রয়েছে। মোট নয়জন শিক্ষার্থী মিলে কিউরেটর নাছিরের তত্ত্বাবধানে ত্রিমাত্রিক স্থাপত্যিক স্পেস তৈরির কাজটা করেছে। তাঁদের মধ্যে তামান্না লিজা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এমএফএ প্রথম পর্বের শিক্ষার্থী। সুমিত দাস, সজীব ঘোষ, সজীব মণ্ডল, শিব শংকর, সানন্দা সাহা, দিপা পোদ্দার, নুর মোহাম্মদ সান্ত, মেইবু অং মারমা চারুকলার প্রি-ডিগ্রির শিক্ষার্থী। তাঁরা নারায়ণগঞ্জ শহরকে করোগেডেট বোর্ডে ত্রিমাত্রিক ফর্মে উপস্থাপন করেছেন। যা চারুকলার প্রথাগত বিশেষায়িত শিক্ষার যে স্কুলিং, তার বিপরীত প্রবণতাকে উদ্দীপ্ত করে। রয়েছে শিল্পী বদরুল আলমের উপস্থাপিত লক্ষ্যার নির্যাতনের ইতিহাস। সর্বোপরি প্রদর্শনীতে অবজেক্ট, স্পেস ও ডিসপ্লের মধ্যে যে একটা সমন্বয় ও পরিমিতিবোধ কাজ করেছে, তা দর্শককে প্রশান্তি দেয়। আর এ কারণেই কিউরেটর হিসেবেও খন্দকার নাছির আমাদের ভাবনার জোগান দেন নানা কারণে। শিল্পচর্চার সামাজিকীকরণের ভাবনা মাথায় রেখে নেওয়া এই উদ্যোগ নারায়ণগঞ্জের মধ্যবিত্ত শ্রেণির সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলকে সম্প্রসারিত করে নিঃসন্দেহে।
দাগ আর্ট স্টেশন তাদের ‘সামাজিক শিল্পচর্চা’র স্লোগান নিয়ে ২০১৮ সালে ‘নারায়ণগঞ্জ আলী আহাম্মদ চুনকা নগর মিলনায়তন ও পাঠাগার’ একটি দলীয় প্রদর্শনীর মধ্য দিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল, এই প্রদর্শনী সেই আশাবাদকে জিইয়ে রাখে। জিইয়ে রাখে ‘ছবির হাট’-এর মতো গোষ্ঠীগত সাংস্কৃতিক উদ্যোগের প্রসারমান সম্ভাবনাগুলোকে। আলী আহাম্মদ পৌর মিলনায়তন ও পাঠাগার গ্যালারিতে চলমান এ প্রদর্শনী শেষ হচ্ছে আগামীকাল শুক্রবার।

পুরাতন বন্দর নগরী, পুরাতন শহর, পুরাতন শীতলক্ষ্যা, জামদানির পুরাতন সূতিকাগার, পুরাতন কাঠের ঘোড়া—এই সকল পুরাতনের গল্পের রাজ্যে নারায়ণগঞ্জের বাস। সেখানে ঐতিহ্য, সেখানে জাদুঘর সব জমজমাট। টিকিট কেটে আমরা ভিড় করি এই সকল পুরাতনের দিকে একবার চোখ দিতে। অথচ সত্য হলো নারায়ণগঞ্জ পুরাতন শহর, কিন্তু মৃত নয়। সেখানে বাস প্রায় বাইশ লাখ লোকের। শীতলক্ষ্যা অসুস্থ; কিন্তু মৃত নয়। জামদানি শীতলক্ষার দিকেই তাকিয়ে আছে। জাদুঘরের দিকে নয়। ঢাকার বাইরে, ঢাকার গ্যালারিগুলোর বাইরে দাগ আর্ট স্টেশন-এর প্রদর্শনীতে গিয়ে কেবল এই ভালো লাগার অনুরণনই মনে জেগেছে।
ঐতিহ্য, লোকশিল্পের বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার প্রয়াসে নিজেদের ক্লান্ত না করে নারায়ণগঞ্জের এই শিল্পী দল বেঁচে থাকা ও বাঁচিয়ে রাখার কথা বলছে, বুনছে প্রাণের গল্প। এই গল্পে বিদ্রোহের রূপবাদী প্রবণতা লঘু হয়েছে শিল্পীদের নিজেদের জীবনঘনিষ্ঠ রূপ নির্মাণ প্রবণতার কারণে। অমল আকাশ যেমন পটগানে ও পটছবিতে যখন বলে ‘হাশেম ফুডে ঝলসানো প্রাণ’ বা শ্রমিক বিদ্রোহের গল্প, তখন তা কেবল আঙ্গিকের দুর্দান্তপনায় আক্রান্ত হয় না, শিল্পীর সহজাত অবস্থানকেও স্পষ্ট করে। এই অবস্থাটি পুরো প্রদর্শনী, তথা উদ্যোগের মূল শক্তি। শিল্পী খন্দকার নাছির বরাবরের মতোই অরগানিক ফর্মে মুগ্ধ করেছেন। তবে কাঠ মাধ্যমে তিনি সময়সাপেক্ষ এবং শ্রমসাধ্য যে রীতিতে কাজ করে থাকেন, তা এখানে ছিল না। আয়াসহীন ভাস্কর্যের বাজারের সঙ্গে যুদ্ধ করার পরও কাঠের কাজ তিনি জারি রেখেছেন। একই সঙ্গে প্রতিনিয়ত চালিয়ে যাচ্ছেন ম্যাটেরিয়াল নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা। এই নিরীক্ষা শীতলক্ষার প্রাণ টিকিয়ে রাখার সাথে ক্রমেই সম্পর্কিত হয়েছে নানাভাবে।
নাছির এই প্রদর্শনীতে কাঠের বদলে কাজ করেছেন কাগজের কাদামাটিতে (পেপার ক্লে)। মাধ্যম হিসেবে কাগজের কাদামাটি নতুন কোনো বিষয় নয়। কিন্তু প্রথাগত কাঠ, পাথর, তামা ইত্যাদির বদলে নাছির তাঁর ভাস্কর্যের উপকরণ হিসেবে যেভাবে একে নিজের জন্য প্রাসঙ্গিক করে তোলেন তা আমাদের ভাস্কর্য চর্চার জন্য জরুরি। রামকিঙ্কর তাঁর অবস্থার চাপে যেমন খোঁজ করেছিলেন একটি মাধ্যমের, শিল্পী ইমাম হোসেন সুমনও চমকে দেওয়া সম্ভাবনা নিয়ে হাজির হয়েছিলেন তাঁর প্রথম একক প্রদর্শনীতে। ভাবনা ও মাধ্যমের সমন্বয় ছিল যথাযথ। কাগজের কাদামাটিকে সুমন ভাবনার সঙ্গে মিলিয়ে দিয়েছিলেন। প্রদর্শনী কক্ষে প্রবেশের পথে মাথার ওপরে ঝুলছে 'জগদ্দল' নামে এক পাথর। শহীদ আহমেদ মিঠুর এই কাজেও উপকরণ-ভাবনার সহায় হিসেবে উপস্থিত হয়েছে। পাথরের রূপক হয়ে চিন্তা বা উত্তেজনার উদ্দীপক হয়ে আছে দর্শকের জন্য।
কিন্তু নাছির ভাবনার স্বার্থে ম্যাটেরিয়ালের দিকে যাননি। অর্থনৈতিক শর্তগুলো যাপনের প্রয়োজনে, অবস্থার চাপে নাছির বিকল্প খোঁজেন। সেই বিকল্প থেকে ক্ষণিক কাজের জন্য ব্যবহার করা থার্মোকলের মতো ম্যাটেরিয়ালের সঙ্গে কাগজের কাদামাটির যোগে প্রথমে নিজের সন্তানের জন্য খেলনা পুতুল এবং ক্রমে তা ভাস্কর্যে যুক্ত করেছেন। মাধ্যমের এই নিরীক্ষা স্থানিক সকল প্রসঙ্গ বিবেচনায় অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। গুরুত্বপূর্ণ ভাস্কর্যকে ঐশ্বর্যের ভারিক্কিপনা থেকে মুক্ত করার ক্ষেত্রে।
মাধ্যমের এই নিরীক্ষা-দাগ-গোষ্ঠী তার স্থানিক পরিসর ও পরিজন লক্ষ্যার দিকে নজর রেখে অব্যাহত রাখলে ভাস্কর্যকে গণমুখী করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারে। নাছিরের মতো একই মাধ্যমে কাজ করেছেন শিল্পী রঞ্জিত সরকার। কিন্তু অভিব্যক্তিতে দুজনের কাজ আলাদা হয়ে গেছে পুরোপুরি।
শিল্পী সুমনা আক্তার গার্মেন্টসের শহর নারায়ণগঞ্জ থেকে ওয়েস্টেজ গার্মেন্টস ম্যাটেরিয়াল দিয়ে যৌথভাবে নির্মাণ করেছেন একটি নান্দনিক দেয়াল কাঁথা। এই কাঁথাও গার্মেন্টসের ওয়েস্টেজকে কেন্দ্র করে একটি বাজার ভাবনাকে উসকে দেয়, যার সম্ভাবনা ও বাজার ইতিমধ্যেই পরীক্ষিত নানাভাবে।
শিল্পী লিটন সরকারের শিল্পকর্মের শিরোনাম নিজেই ইতিহাসের জটিলতা ও সংকটের প্রতীকী ভাষা হয়ে ওঠে। ‘পানিজল’ কাজে শীতলক্ষার সমৃদ্ধি, যা লিখিত বা মৌখিক সাহিত্যে ছড়িয়ে আছে, তাকেই আবার সামনে এনেছেন শীতলক্ষ্যাকে ফিরে পাওয়ার আশায়। এই আশা জাগার পেছনে নারায়ণগঞ্জ চারুকলা ইনস্টিটিউটের নবনির্মিত ভবন তার পাশের লেকের সংস্কার অনেক বড় প্রভাবক। এই লেকটি গিয়ে মিশেছে শীতলক্ষার সাথে। ফলে লক্ষ্যা পাড়ের চিত্রকথা এককভাবে দৃশ্যায়িত নয়। চারুকলা ইনস্টিটিউটকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন ধরে চলা আন্দোলন, তার একটি সফল পরিবেশকেন্দ্রিক রূপায়ণকে পাশে রেখে এই প্রদর্শনী দেখলে বোঝা যাবে, কোনো ঐতিহ্য-পিপাসা নয়, বরং বর্তমানকে বদলে দেওয়ার আকাঙ্ক্ষা ‘লক্ষ্যাপাড়ের চিত্রকথা-১ ’-এ উপলব্ধ হচ্ছে।
শিল্পী মুনতাসীর মঈন ইতিহাসের স্মারক হিসেবে বিভিন্ন ব্যক্তিত্বকে পাঠ করেন তাঁর ছবি ও টেক্সটের মধ্য দিয়ে। তারই একটি আংশিক উপস্থাপনা এই প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে। ভীখন লাল-নারায়ণগঞ্জের নাম যিনি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন-এঁকেছেন, তাঁর কল্পিত ছবি, ইতিহাস থেকে দৃশ্যরূপে দর্শকের সামনে এনেছেন সমাজ সেবক ফারুক মঈন, সংগীত শিল্পী আবুল সরকার, ব্যবসায়ী রণদা প্রসাদ সাহা, ক্রীড়াবিদ মোনেম মুন্না, শিল্পী মঞ্জুশ্রী নিয়োগী, চিত্রশিল্পী মাহবুব কামরান, বংশীবাদক ওস্তাদ শামসুল হক, ভাষাসৈনিক মমতাজ বেগম, শিক্ষাবিদ খগেন্দ্র নাথ চক্রবর্তীর মতো নানা গুণীজনকে। শিল্পীদের ইতিহাস পাঠের এই প্রকরণ ইতিহাসকে সহজভাবে পাঠ করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে জোরালোভাবে।
এই প্রদর্শনীর আরেকটি চমৎকার দিক হচ্ছে দ্বিমাত্রিকতা ও ত্রিমাত্রিকতার একাডেমিক চর্চার যে সীমানা, তা ভেদ করে অগ্রসর হয়েছে। ‘এই শহরে’ শিরোনামের একটি দলীয় কাজ রয়েছে। মোট নয়জন শিক্ষার্থী মিলে কিউরেটর নাছিরের তত্ত্বাবধানে ত্রিমাত্রিক স্থাপত্যিক স্পেস তৈরির কাজটা করেছে। তাঁদের মধ্যে তামান্না লিজা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এমএফএ প্রথম পর্বের শিক্ষার্থী। সুমিত দাস, সজীব ঘোষ, সজীব মণ্ডল, শিব শংকর, সানন্দা সাহা, দিপা পোদ্দার, নুর মোহাম্মদ সান্ত, মেইবু অং মারমা চারুকলার প্রি-ডিগ্রির শিক্ষার্থী। তাঁরা নারায়ণগঞ্জ শহরকে করোগেডেট বোর্ডে ত্রিমাত্রিক ফর্মে উপস্থাপন করেছেন। যা চারুকলার প্রথাগত বিশেষায়িত শিক্ষার যে স্কুলিং, তার বিপরীত প্রবণতাকে উদ্দীপ্ত করে। রয়েছে শিল্পী বদরুল আলমের উপস্থাপিত লক্ষ্যার নির্যাতনের ইতিহাস। সর্বোপরি প্রদর্শনীতে অবজেক্ট, স্পেস ও ডিসপ্লের মধ্যে যে একটা সমন্বয় ও পরিমিতিবোধ কাজ করেছে, তা দর্শককে প্রশান্তি দেয়। আর এ কারণেই কিউরেটর হিসেবেও খন্দকার নাছির আমাদের ভাবনার জোগান দেন নানা কারণে। শিল্পচর্চার সামাজিকীকরণের ভাবনা মাথায় রেখে নেওয়া এই উদ্যোগ নারায়ণগঞ্জের মধ্যবিত্ত শ্রেণির সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলকে সম্প্রসারিত করে নিঃসন্দেহে।
দাগ আর্ট স্টেশন তাদের ‘সামাজিক শিল্পচর্চা’র স্লোগান নিয়ে ২০১৮ সালে ‘নারায়ণগঞ্জ আলী আহাম্মদ চুনকা নগর মিলনায়তন ও পাঠাগার’ একটি দলীয় প্রদর্শনীর মধ্য দিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল, এই প্রদর্শনী সেই আশাবাদকে জিইয়ে রাখে। জিইয়ে রাখে ‘ছবির হাট’-এর মতো গোষ্ঠীগত সাংস্কৃতিক উদ্যোগের প্রসারমান সম্ভাবনাগুলোকে। আলী আহাম্মদ পৌর মিলনায়তন ও পাঠাগার গ্যালারিতে চলমান এ প্রদর্শনী শেষ হচ্ছে আগামীকাল শুক্রবার।
দীপ্তি দত্ত

পুরাতন বন্দর নগরী, পুরাতন শহর, পুরাতন শীতলক্ষ্যা, জামদানির পুরাতন সূতিকাগার, পুরাতন কাঠের ঘোড়া—এই সকল পুরাতনের গল্পের রাজ্যে নারায়ণগঞ্জের বাস। সেখানে ঐতিহ্য, সেখানে জাদুঘর সব জমজমাট। টিকিট কেটে আমরা ভিড় করি এই সকল পুরাতনের দিকে একবার চোখ দিতে। অথচ সত্য হলো নারায়ণগঞ্জ পুরাতন শহর, কিন্তু মৃত নয়। সেখানে বাস প্রায় বাইশ লাখ লোকের। শীতলক্ষ্যা অসুস্থ; কিন্তু মৃত নয়। জামদানি শীতলক্ষার দিকেই তাকিয়ে আছে। জাদুঘরের দিকে নয়। ঢাকার বাইরে, ঢাকার গ্যালারিগুলোর বাইরে দাগ আর্ট স্টেশন-এর প্রদর্শনীতে গিয়ে কেবল এই ভালো লাগার অনুরণনই মনে জেগেছে।
ঐতিহ্য, লোকশিল্পের বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার প্রয়াসে নিজেদের ক্লান্ত না করে নারায়ণগঞ্জের এই শিল্পী দল বেঁচে থাকা ও বাঁচিয়ে রাখার কথা বলছে, বুনছে প্রাণের গল্প। এই গল্পে বিদ্রোহের রূপবাদী প্রবণতা লঘু হয়েছে শিল্পীদের নিজেদের জীবনঘনিষ্ঠ রূপ নির্মাণ প্রবণতার কারণে। অমল আকাশ যেমন পটগানে ও পটছবিতে যখন বলে ‘হাশেম ফুডে ঝলসানো প্রাণ’ বা শ্রমিক বিদ্রোহের গল্প, তখন তা কেবল আঙ্গিকের দুর্দান্তপনায় আক্রান্ত হয় না, শিল্পীর সহজাত অবস্থানকেও স্পষ্ট করে। এই অবস্থাটি পুরো প্রদর্শনী, তথা উদ্যোগের মূল শক্তি। শিল্পী খন্দকার নাছির বরাবরের মতোই অরগানিক ফর্মে মুগ্ধ করেছেন। তবে কাঠ মাধ্যমে তিনি সময়সাপেক্ষ এবং শ্রমসাধ্য যে রীতিতে কাজ করে থাকেন, তা এখানে ছিল না। আয়াসহীন ভাস্কর্যের বাজারের সঙ্গে যুদ্ধ করার পরও কাঠের কাজ তিনি জারি রেখেছেন। একই সঙ্গে প্রতিনিয়ত চালিয়ে যাচ্ছেন ম্যাটেরিয়াল নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা। এই নিরীক্ষা শীতলক্ষার প্রাণ টিকিয়ে রাখার সাথে ক্রমেই সম্পর্কিত হয়েছে নানাভাবে।
নাছির এই প্রদর্শনীতে কাঠের বদলে কাজ করেছেন কাগজের কাদামাটিতে (পেপার ক্লে)। মাধ্যম হিসেবে কাগজের কাদামাটি নতুন কোনো বিষয় নয়। কিন্তু প্রথাগত কাঠ, পাথর, তামা ইত্যাদির বদলে নাছির তাঁর ভাস্কর্যের উপকরণ হিসেবে যেভাবে একে নিজের জন্য প্রাসঙ্গিক করে তোলেন তা আমাদের ভাস্কর্য চর্চার জন্য জরুরি। রামকিঙ্কর তাঁর অবস্থার চাপে যেমন খোঁজ করেছিলেন একটি মাধ্যমের, শিল্পী ইমাম হোসেন সুমনও চমকে দেওয়া সম্ভাবনা নিয়ে হাজির হয়েছিলেন তাঁর প্রথম একক প্রদর্শনীতে। ভাবনা ও মাধ্যমের সমন্বয় ছিল যথাযথ। কাগজের কাদামাটিকে সুমন ভাবনার সঙ্গে মিলিয়ে দিয়েছিলেন। প্রদর্শনী কক্ষে প্রবেশের পথে মাথার ওপরে ঝুলছে 'জগদ্দল' নামে এক পাথর। শহীদ আহমেদ মিঠুর এই কাজেও উপকরণ-ভাবনার সহায় হিসেবে উপস্থিত হয়েছে। পাথরের রূপক হয়ে চিন্তা বা উত্তেজনার উদ্দীপক হয়ে আছে দর্শকের জন্য।
কিন্তু নাছির ভাবনার স্বার্থে ম্যাটেরিয়ালের দিকে যাননি। অর্থনৈতিক শর্তগুলো যাপনের প্রয়োজনে, অবস্থার চাপে নাছির বিকল্প খোঁজেন। সেই বিকল্প থেকে ক্ষণিক কাজের জন্য ব্যবহার করা থার্মোকলের মতো ম্যাটেরিয়ালের সঙ্গে কাগজের কাদামাটির যোগে প্রথমে নিজের সন্তানের জন্য খেলনা পুতুল এবং ক্রমে তা ভাস্কর্যে যুক্ত করেছেন। মাধ্যমের এই নিরীক্ষা স্থানিক সকল প্রসঙ্গ বিবেচনায় অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। গুরুত্বপূর্ণ ভাস্কর্যকে ঐশ্বর্যের ভারিক্কিপনা থেকে মুক্ত করার ক্ষেত্রে।
মাধ্যমের এই নিরীক্ষা-দাগ-গোষ্ঠী তার স্থানিক পরিসর ও পরিজন লক্ষ্যার দিকে নজর রেখে অব্যাহত রাখলে ভাস্কর্যকে গণমুখী করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারে। নাছিরের মতো একই মাধ্যমে কাজ করেছেন শিল্পী রঞ্জিত সরকার। কিন্তু অভিব্যক্তিতে দুজনের কাজ আলাদা হয়ে গেছে পুরোপুরি।
শিল্পী সুমনা আক্তার গার্মেন্টসের শহর নারায়ণগঞ্জ থেকে ওয়েস্টেজ গার্মেন্টস ম্যাটেরিয়াল দিয়ে যৌথভাবে নির্মাণ করেছেন একটি নান্দনিক দেয়াল কাঁথা। এই কাঁথাও গার্মেন্টসের ওয়েস্টেজকে কেন্দ্র করে একটি বাজার ভাবনাকে উসকে দেয়, যার সম্ভাবনা ও বাজার ইতিমধ্যেই পরীক্ষিত নানাভাবে।
শিল্পী লিটন সরকারের শিল্পকর্মের শিরোনাম নিজেই ইতিহাসের জটিলতা ও সংকটের প্রতীকী ভাষা হয়ে ওঠে। ‘পানিজল’ কাজে শীতলক্ষার সমৃদ্ধি, যা লিখিত বা মৌখিক সাহিত্যে ছড়িয়ে আছে, তাকেই আবার সামনে এনেছেন শীতলক্ষ্যাকে ফিরে পাওয়ার আশায়। এই আশা জাগার পেছনে নারায়ণগঞ্জ চারুকলা ইনস্টিটিউটের নবনির্মিত ভবন তার পাশের লেকের সংস্কার অনেক বড় প্রভাবক। এই লেকটি গিয়ে মিশেছে শীতলক্ষার সাথে। ফলে লক্ষ্যা পাড়ের চিত্রকথা এককভাবে দৃশ্যায়িত নয়। চারুকলা ইনস্টিটিউটকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন ধরে চলা আন্দোলন, তার একটি সফল পরিবেশকেন্দ্রিক রূপায়ণকে পাশে রেখে এই প্রদর্শনী দেখলে বোঝা যাবে, কোনো ঐতিহ্য-পিপাসা নয়, বরং বর্তমানকে বদলে দেওয়ার আকাঙ্ক্ষা ‘লক্ষ্যাপাড়ের চিত্রকথা-১ ’-এ উপলব্ধ হচ্ছে।
শিল্পী মুনতাসীর মঈন ইতিহাসের স্মারক হিসেবে বিভিন্ন ব্যক্তিত্বকে পাঠ করেন তাঁর ছবি ও টেক্সটের মধ্য দিয়ে। তারই একটি আংশিক উপস্থাপনা এই প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে। ভীখন লাল-নারায়ণগঞ্জের নাম যিনি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন-এঁকেছেন, তাঁর কল্পিত ছবি, ইতিহাস থেকে দৃশ্যরূপে দর্শকের সামনে এনেছেন সমাজ সেবক ফারুক মঈন, সংগীত শিল্পী আবুল সরকার, ব্যবসায়ী রণদা প্রসাদ সাহা, ক্রীড়াবিদ মোনেম মুন্না, শিল্পী মঞ্জুশ্রী নিয়োগী, চিত্রশিল্পী মাহবুব কামরান, বংশীবাদক ওস্তাদ শামসুল হক, ভাষাসৈনিক মমতাজ বেগম, শিক্ষাবিদ খগেন্দ্র নাথ চক্রবর্তীর মতো নানা গুণীজনকে। শিল্পীদের ইতিহাস পাঠের এই প্রকরণ ইতিহাসকে সহজভাবে পাঠ করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে জোরালোভাবে।
এই প্রদর্শনীর আরেকটি চমৎকার দিক হচ্ছে দ্বিমাত্রিকতা ও ত্রিমাত্রিকতার একাডেমিক চর্চার যে সীমানা, তা ভেদ করে অগ্রসর হয়েছে। ‘এই শহরে’ শিরোনামের একটি দলীয় কাজ রয়েছে। মোট নয়জন শিক্ষার্থী মিলে কিউরেটর নাছিরের তত্ত্বাবধানে ত্রিমাত্রিক স্থাপত্যিক স্পেস তৈরির কাজটা করেছে। তাঁদের মধ্যে তামান্না লিজা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এমএফএ প্রথম পর্বের শিক্ষার্থী। সুমিত দাস, সজীব ঘোষ, সজীব মণ্ডল, শিব শংকর, সানন্দা সাহা, দিপা পোদ্দার, নুর মোহাম্মদ সান্ত, মেইবু অং মারমা চারুকলার প্রি-ডিগ্রির শিক্ষার্থী। তাঁরা নারায়ণগঞ্জ শহরকে করোগেডেট বোর্ডে ত্রিমাত্রিক ফর্মে উপস্থাপন করেছেন। যা চারুকলার প্রথাগত বিশেষায়িত শিক্ষার যে স্কুলিং, তার বিপরীত প্রবণতাকে উদ্দীপ্ত করে। রয়েছে শিল্পী বদরুল আলমের উপস্থাপিত লক্ষ্যার নির্যাতনের ইতিহাস। সর্বোপরি প্রদর্শনীতে অবজেক্ট, স্পেস ও ডিসপ্লের মধ্যে যে একটা সমন্বয় ও পরিমিতিবোধ কাজ করেছে, তা দর্শককে প্রশান্তি দেয়। আর এ কারণেই কিউরেটর হিসেবেও খন্দকার নাছির আমাদের ভাবনার জোগান দেন নানা কারণে। শিল্পচর্চার সামাজিকীকরণের ভাবনা মাথায় রেখে নেওয়া এই উদ্যোগ নারায়ণগঞ্জের মধ্যবিত্ত শ্রেণির সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলকে সম্প্রসারিত করে নিঃসন্দেহে।
দাগ আর্ট স্টেশন তাদের ‘সামাজিক শিল্পচর্চা’র স্লোগান নিয়ে ২০১৮ সালে ‘নারায়ণগঞ্জ আলী আহাম্মদ চুনকা নগর মিলনায়তন ও পাঠাগার’ একটি দলীয় প্রদর্শনীর মধ্য দিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল, এই প্রদর্শনী সেই আশাবাদকে জিইয়ে রাখে। জিইয়ে রাখে ‘ছবির হাট’-এর মতো গোষ্ঠীগত সাংস্কৃতিক উদ্যোগের প্রসারমান সম্ভাবনাগুলোকে। আলী আহাম্মদ পৌর মিলনায়তন ও পাঠাগার গ্যালারিতে চলমান এ প্রদর্শনী শেষ হচ্ছে আগামীকাল শুক্রবার।

পুরাতন বন্দর নগরী, পুরাতন শহর, পুরাতন শীতলক্ষ্যা, জামদানির পুরাতন সূতিকাগার, পুরাতন কাঠের ঘোড়া—এই সকল পুরাতনের গল্পের রাজ্যে নারায়ণগঞ্জের বাস। সেখানে ঐতিহ্য, সেখানে জাদুঘর সব জমজমাট। টিকিট কেটে আমরা ভিড় করি এই সকল পুরাতনের দিকে একবার চোখ দিতে। অথচ সত্য হলো নারায়ণগঞ্জ পুরাতন শহর, কিন্তু মৃত নয়। সেখানে বাস প্রায় বাইশ লাখ লোকের। শীতলক্ষ্যা অসুস্থ; কিন্তু মৃত নয়। জামদানি শীতলক্ষার দিকেই তাকিয়ে আছে। জাদুঘরের দিকে নয়। ঢাকার বাইরে, ঢাকার গ্যালারিগুলোর বাইরে দাগ আর্ট স্টেশন-এর প্রদর্শনীতে গিয়ে কেবল এই ভালো লাগার অনুরণনই মনে জেগেছে।
ঐতিহ্য, লোকশিল্পের বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার প্রয়াসে নিজেদের ক্লান্ত না করে নারায়ণগঞ্জের এই শিল্পী দল বেঁচে থাকা ও বাঁচিয়ে রাখার কথা বলছে, বুনছে প্রাণের গল্প। এই গল্পে বিদ্রোহের রূপবাদী প্রবণতা লঘু হয়েছে শিল্পীদের নিজেদের জীবনঘনিষ্ঠ রূপ নির্মাণ প্রবণতার কারণে। অমল আকাশ যেমন পটগানে ও পটছবিতে যখন বলে ‘হাশেম ফুডে ঝলসানো প্রাণ’ বা শ্রমিক বিদ্রোহের গল্প, তখন তা কেবল আঙ্গিকের দুর্দান্তপনায় আক্রান্ত হয় না, শিল্পীর সহজাত অবস্থানকেও স্পষ্ট করে। এই অবস্থাটি পুরো প্রদর্শনী, তথা উদ্যোগের মূল শক্তি। শিল্পী খন্দকার নাছির বরাবরের মতোই অরগানিক ফর্মে মুগ্ধ করেছেন। তবে কাঠ মাধ্যমে তিনি সময়সাপেক্ষ এবং শ্রমসাধ্য যে রীতিতে কাজ করে থাকেন, তা এখানে ছিল না। আয়াসহীন ভাস্কর্যের বাজারের সঙ্গে যুদ্ধ করার পরও কাঠের কাজ তিনি জারি রেখেছেন। একই সঙ্গে প্রতিনিয়ত চালিয়ে যাচ্ছেন ম্যাটেরিয়াল নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা। এই নিরীক্ষা শীতলক্ষার প্রাণ টিকিয়ে রাখার সাথে ক্রমেই সম্পর্কিত হয়েছে নানাভাবে।
নাছির এই প্রদর্শনীতে কাঠের বদলে কাজ করেছেন কাগজের কাদামাটিতে (পেপার ক্লে)। মাধ্যম হিসেবে কাগজের কাদামাটি নতুন কোনো বিষয় নয়। কিন্তু প্রথাগত কাঠ, পাথর, তামা ইত্যাদির বদলে নাছির তাঁর ভাস্কর্যের উপকরণ হিসেবে যেভাবে একে নিজের জন্য প্রাসঙ্গিক করে তোলেন তা আমাদের ভাস্কর্য চর্চার জন্য জরুরি। রামকিঙ্কর তাঁর অবস্থার চাপে যেমন খোঁজ করেছিলেন একটি মাধ্যমের, শিল্পী ইমাম হোসেন সুমনও চমকে দেওয়া সম্ভাবনা নিয়ে হাজির হয়েছিলেন তাঁর প্রথম একক প্রদর্শনীতে। ভাবনা ও মাধ্যমের সমন্বয় ছিল যথাযথ। কাগজের কাদামাটিকে সুমন ভাবনার সঙ্গে মিলিয়ে দিয়েছিলেন। প্রদর্শনী কক্ষে প্রবেশের পথে মাথার ওপরে ঝুলছে 'জগদ্দল' নামে এক পাথর। শহীদ আহমেদ মিঠুর এই কাজেও উপকরণ-ভাবনার সহায় হিসেবে উপস্থিত হয়েছে। পাথরের রূপক হয়ে চিন্তা বা উত্তেজনার উদ্দীপক হয়ে আছে দর্শকের জন্য।
কিন্তু নাছির ভাবনার স্বার্থে ম্যাটেরিয়ালের দিকে যাননি। অর্থনৈতিক শর্তগুলো যাপনের প্রয়োজনে, অবস্থার চাপে নাছির বিকল্প খোঁজেন। সেই বিকল্প থেকে ক্ষণিক কাজের জন্য ব্যবহার করা থার্মোকলের মতো ম্যাটেরিয়ালের সঙ্গে কাগজের কাদামাটির যোগে প্রথমে নিজের সন্তানের জন্য খেলনা পুতুল এবং ক্রমে তা ভাস্কর্যে যুক্ত করেছেন। মাধ্যমের এই নিরীক্ষা স্থানিক সকল প্রসঙ্গ বিবেচনায় অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। গুরুত্বপূর্ণ ভাস্কর্যকে ঐশ্বর্যের ভারিক্কিপনা থেকে মুক্ত করার ক্ষেত্রে।
মাধ্যমের এই নিরীক্ষা-দাগ-গোষ্ঠী তার স্থানিক পরিসর ও পরিজন লক্ষ্যার দিকে নজর রেখে অব্যাহত রাখলে ভাস্কর্যকে গণমুখী করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারে। নাছিরের মতো একই মাধ্যমে কাজ করেছেন শিল্পী রঞ্জিত সরকার। কিন্তু অভিব্যক্তিতে দুজনের কাজ আলাদা হয়ে গেছে পুরোপুরি।
শিল্পী সুমনা আক্তার গার্মেন্টসের শহর নারায়ণগঞ্জ থেকে ওয়েস্টেজ গার্মেন্টস ম্যাটেরিয়াল দিয়ে যৌথভাবে নির্মাণ করেছেন একটি নান্দনিক দেয়াল কাঁথা। এই কাঁথাও গার্মেন্টসের ওয়েস্টেজকে কেন্দ্র করে একটি বাজার ভাবনাকে উসকে দেয়, যার সম্ভাবনা ও বাজার ইতিমধ্যেই পরীক্ষিত নানাভাবে।
শিল্পী লিটন সরকারের শিল্পকর্মের শিরোনাম নিজেই ইতিহাসের জটিলতা ও সংকটের প্রতীকী ভাষা হয়ে ওঠে। ‘পানিজল’ কাজে শীতলক্ষার সমৃদ্ধি, যা লিখিত বা মৌখিক সাহিত্যে ছড়িয়ে আছে, তাকেই আবার সামনে এনেছেন শীতলক্ষ্যাকে ফিরে পাওয়ার আশায়। এই আশা জাগার পেছনে নারায়ণগঞ্জ চারুকলা ইনস্টিটিউটের নবনির্মিত ভবন তার পাশের লেকের সংস্কার অনেক বড় প্রভাবক। এই লেকটি গিয়ে মিশেছে শীতলক্ষার সাথে। ফলে লক্ষ্যা পাড়ের চিত্রকথা এককভাবে দৃশ্যায়িত নয়। চারুকলা ইনস্টিটিউটকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন ধরে চলা আন্দোলন, তার একটি সফল পরিবেশকেন্দ্রিক রূপায়ণকে পাশে রেখে এই প্রদর্শনী দেখলে বোঝা যাবে, কোনো ঐতিহ্য-পিপাসা নয়, বরং বর্তমানকে বদলে দেওয়ার আকাঙ্ক্ষা ‘লক্ষ্যাপাড়ের চিত্রকথা-১ ’-এ উপলব্ধ হচ্ছে।
শিল্পী মুনতাসীর মঈন ইতিহাসের স্মারক হিসেবে বিভিন্ন ব্যক্তিত্বকে পাঠ করেন তাঁর ছবি ও টেক্সটের মধ্য দিয়ে। তারই একটি আংশিক উপস্থাপনা এই প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে। ভীখন লাল-নারায়ণগঞ্জের নাম যিনি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন-এঁকেছেন, তাঁর কল্পিত ছবি, ইতিহাস থেকে দৃশ্যরূপে দর্শকের সামনে এনেছেন সমাজ সেবক ফারুক মঈন, সংগীত শিল্পী আবুল সরকার, ব্যবসায়ী রণদা প্রসাদ সাহা, ক্রীড়াবিদ মোনেম মুন্না, শিল্পী মঞ্জুশ্রী নিয়োগী, চিত্রশিল্পী মাহবুব কামরান, বংশীবাদক ওস্তাদ শামসুল হক, ভাষাসৈনিক মমতাজ বেগম, শিক্ষাবিদ খগেন্দ্র নাথ চক্রবর্তীর মতো নানা গুণীজনকে। শিল্পীদের ইতিহাস পাঠের এই প্রকরণ ইতিহাসকে সহজভাবে পাঠ করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে জোরালোভাবে।
এই প্রদর্শনীর আরেকটি চমৎকার দিক হচ্ছে দ্বিমাত্রিকতা ও ত্রিমাত্রিকতার একাডেমিক চর্চার যে সীমানা, তা ভেদ করে অগ্রসর হয়েছে। ‘এই শহরে’ শিরোনামের একটি দলীয় কাজ রয়েছে। মোট নয়জন শিক্ষার্থী মিলে কিউরেটর নাছিরের তত্ত্বাবধানে ত্রিমাত্রিক স্থাপত্যিক স্পেস তৈরির কাজটা করেছে। তাঁদের মধ্যে তামান্না লিজা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এমএফএ প্রথম পর্বের শিক্ষার্থী। সুমিত দাস, সজীব ঘোষ, সজীব মণ্ডল, শিব শংকর, সানন্দা সাহা, দিপা পোদ্দার, নুর মোহাম্মদ সান্ত, মেইবু অং মারমা চারুকলার প্রি-ডিগ্রির শিক্ষার্থী। তাঁরা নারায়ণগঞ্জ শহরকে করোগেডেট বোর্ডে ত্রিমাত্রিক ফর্মে উপস্থাপন করেছেন। যা চারুকলার প্রথাগত বিশেষায়িত শিক্ষার যে স্কুলিং, তার বিপরীত প্রবণতাকে উদ্দীপ্ত করে। রয়েছে শিল্পী বদরুল আলমের উপস্থাপিত লক্ষ্যার নির্যাতনের ইতিহাস। সর্বোপরি প্রদর্শনীতে অবজেক্ট, স্পেস ও ডিসপ্লের মধ্যে যে একটা সমন্বয় ও পরিমিতিবোধ কাজ করেছে, তা দর্শককে প্রশান্তি দেয়। আর এ কারণেই কিউরেটর হিসেবেও খন্দকার নাছির আমাদের ভাবনার জোগান দেন নানা কারণে। শিল্পচর্চার সামাজিকীকরণের ভাবনা মাথায় রেখে নেওয়া এই উদ্যোগ নারায়ণগঞ্জের মধ্যবিত্ত শ্রেণির সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলকে সম্প্রসারিত করে নিঃসন্দেহে।
দাগ আর্ট স্টেশন তাদের ‘সামাজিক শিল্পচর্চা’র স্লোগান নিয়ে ২০১৮ সালে ‘নারায়ণগঞ্জ আলী আহাম্মদ চুনকা নগর মিলনায়তন ও পাঠাগার’ একটি দলীয় প্রদর্শনীর মধ্য দিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল, এই প্রদর্শনী সেই আশাবাদকে জিইয়ে রাখে। জিইয়ে রাখে ‘ছবির হাট’-এর মতো গোষ্ঠীগত সাংস্কৃতিক উদ্যোগের প্রসারমান সম্ভাবনাগুলোকে। আলী আহাম্মদ পৌর মিলনায়তন ও পাঠাগার গ্যালারিতে চলমান এ প্রদর্শনী শেষ হচ্ছে আগামীকাল শুক্রবার।

আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায় ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
২৩ নভেম্বর ২০২৫
হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’
১৩ নভেম্বর ২০২৫
প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
০৮ নভেম্বর ২০২৫
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
২০ অক্টোবর ২০২৫তৌহিদুল হক

রক্ত লাল
আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে
গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায়
ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের
জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
যা স্বভাববিদ্ধ, তবে কতটা উপকারী বা বাঁচিয়ে
রাখার নিরলস অভিপ্রায়। মানুষের তরে
প্রাণীর অফুরন্ত প্রাচুর্য বিস্তৃতকরণে, কিংবা
উদ্ভিদের অন্তিম প্রেমে বসন্তের অভিষেকে।
কতটা জ্বলতে হয় পরের জন্য, কতটা ফুটন্ত
শরীর নিয়ে চালিয়ে যায় সেবার পরিধি।
এক চিরন্তন শিক্ষা, আবার উদিত হয়
দিনের শুরুতে, বিদায় প্রান্তিক অপূর্ব
মায়ায়-দিনের শেষ প্রান্তে।
এতটুকু কার্পণ্য রেখে যায়নি, হয়তো মুখ
ফিরিয়ে নিবে না কোনো দিন। তবে ভাবনার
অন্তিমে শেষ দৃশ্যের সংলাপে ভেসে
ওঠে জনদরদি রাজার মুখ। যেখানে রক্ত ঝরে
বন্যার বেগে সেখানেও প্রতিদিন ফুল ফোটে ফুল হয়ে।
যত দেখি
যত দেখি তৃপ্ত হই, শীতল হয়ে
জড়িয়ে পড়ি তোমার সমস্ত শরীরে। এক অজানা
শিহরণ ছুঁয়ে যায় হৃদয়ের সমস্ত পৃষ্ঠা জুড়ে।
যেন দীর্ঘদিনের শুষ্কতা ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে দূরে।
হারিয়ে যাওয়া রস ফিরছে মূলে, নিয়ে যাচ্ছে আদিপর্বে।
যেমন নেয় নদীর কূল, জোয়ারের ফেনা।
ভাবনার অতলে অদ্ভুত মায়া, দীর্ঘক্ষণ মোহগ্রস্ত
করে রাখে চোখের পলক, তাকিয়ে থাকি মায়ার মায়ায়। কী অপরূপ মায়া!
সেখানেও দেখি তৃষ্ণার ব্যাকুলতা নিয়ে অপেক্ষারত কান্না।
জীবনের তল্লাটে হারিয়ে খুঁজি আজ
আমারও জীবন ছিল। মায়ায় ভরা নির্বিঘ্ন আয়োজন, কলমিলতার মতো নিষ্পাপ।
তৃপ্ত হই ঘাসে, বাতাসের বেহায়া আঘাতে
অভিমানের মোড়ক ছুড়ে ফেলে হাতে তুলে নেই
কচু পাতায় টলোমলো জলের লজ্জা। এ জীবনের চাহিদা তোমায় দেখার
প্রয়োজনে তপ্ত, হয় উত্তপ্ত অথবা সহ্যের অতীত শীতল।
এ যেন কেমন
গহিন অরণ্যে সবুজ পাতার মতো, মগজে
চিন্তার রাজ্যে ভাবের উদয়, আকুল বিন্যাসে
একটু একটু করে এগিয়ে নেয়, আবার ভরা কলসির
মতো বসিয়ে রাখে-ভবের রাজ্যে। একদিন সমস্ত ভাবনা থেকে মুক্ত হয়ে
এদিক-ওদিক চলন, জীবন্ত মরণ! মানুষ
কেন বাঁচে, কীভাবে বাঁচে-প্রশ্নের সমাধা
আজ তর্কপ্রিয় সন্ধানে, মূর্ত প্রার্থনা।
সকল প্রিয়জন পরিত্যাগে, নিগূঢ় যত্নে হৃদয়ে প্রবেশ করে
নিজের অপরিচিত চেহারা, সব জিজ্ঞাসার
অন্ত-ক্রিয়ার এক উচ্চতম বিলাস।
জীবনের মানে অর্থশুন্য ভবিতব্য! এ কী হয়?
চোখের পলকে নিষ্পাপ দৃশ্যলোক-পেছন ডাকে বারবার
যেখানে থাকে আবার দেখার ইচ্ছা, নামে যে মুক্তকরণ। মিলনকান্তির আবাস।
চতুর্মুখ সমীকরণে খেলে যায় সময়ের ঝাঁজালো সিদ্ধান্ত। কেউ কী অপ্রিয় হয় কারও?
যেখানে ভেসে ওঠে নীলপদ্ম, অতীতের নিটোল কিতাব। সে-তো মানুষের ছবি!
চলে আসুন সবজি বাজারে
মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে দেখেছি অনেক কিছু
যা মানুষের নয়। অ-মানুষের জন্ম-উত্তর বাঁচার
উপায় হতে পারে। পোশাকে সজ্জিত দেহ কতভাবে
হিংস্র হয়, গোপনে, অন্ধের গহনে।
প্রবেশের আগেই পেয়েছি সংকেত। কত নোংরা, পচা, আবর্জনায় ভরা একটি থালার মতো
পড়ে আছে সম্মুখে। কেউ কি দেখেছে?
হয়তো মেনে নিয়েছে সবাই, সবার আগে সে
যে ভেবেছে, কী বা আছে উপায়!
চারপাশে কত কিছুর ঘ্রাণ, চোখ যা বলে তা কি মেনে নেয় স্বাস্থ্যবার্তা
ফুটে আছে ফুলের মতো দোকানের পসরা। খেতে বা কেনায় বারণ বালাই নেই।
যা পাচ্ছে নিচ্ছে, অনেকে। কেউ গায়ে কেউ পেটে।
আহা! দেখার কেউ নেই!
এক অন্ধকারে হাঁটছে আমাদের পা।
কেউ কি আছে কোথাও, আলো নিয়ে হাতে? ভেবেছে কি কেউ
কেন আমাদের আয়োজনে সবাই নেই?
কেউ এসে শুধু একবার বলুক, এই নিন-আপনাদের জীবন টিকিট যা উত্তরণ।
চলে আসুন সবজির বাজারে, সবুজের খোঁজে।
ইতিহাস
আজ স্পষ্ট ঘোষণা, আমার চোখের সামনে কেউ নেই
নেই কেউ ভাবের অন্তিম ঘরে। এক অস্পৃশ্য অনুভব
ছুঁয়ে চলে, ভাসিয়ে দেয় অগণিত স্রোতের তুমুল আলিঙ্গনে।
আজ কিছু ভেবে বলছি না, সরাসরি জবাব---
আমি নই কারও!
সব বাতাসের সাথে মিশে থাকা চোখের প্রেম
ভাবনার বিলাসে জড়িয়ে পড়ার বাসনা----সকলের অগোচরে
অথবা সকলের মাঝে। জীবনের অর্থে হৃদয়ের গুড়গুড় আলাপ
ঘুটঘুটে অন্ধকারে হৃদয়ে খোলা আকাশ, শুধু
এক মুখচ্ছবি।
আজ কোনো ক্ষমা নেই---নিজের প্রতি! নিজের পাপে
হাঁটি আমি, সবার মাঝে একলা হয়ে। বেদনার
কালো রং নিয়ে। শুধু দেখে যাই, শুধু দেখতে যাই।
কত রং বিরাজ করে ভাবনার গরমিলে, স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রই।
দাঁড়িয়ে থেকেও হেঁটে যাই!
আজকের না বলা কথা, কোনো দিন বলা হবে না
হবে না দাঁড়িয়ে আবার ভাবা আর একটু বসলে
ভালো হতো। যে বসিয়ে রাখে যে আশায় বসে থাকে
সবকিছুর-ই সময় থাকে---
এরপর---ইতিহাস!

রক্ত লাল
আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে
গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায়
ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের
জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
যা স্বভাববিদ্ধ, তবে কতটা উপকারী বা বাঁচিয়ে
রাখার নিরলস অভিপ্রায়। মানুষের তরে
প্রাণীর অফুরন্ত প্রাচুর্য বিস্তৃতকরণে, কিংবা
উদ্ভিদের অন্তিম প্রেমে বসন্তের অভিষেকে।
কতটা জ্বলতে হয় পরের জন্য, কতটা ফুটন্ত
শরীর নিয়ে চালিয়ে যায় সেবার পরিধি।
এক চিরন্তন শিক্ষা, আবার উদিত হয়
দিনের শুরুতে, বিদায় প্রান্তিক অপূর্ব
মায়ায়-দিনের শেষ প্রান্তে।
এতটুকু কার্পণ্য রেখে যায়নি, হয়তো মুখ
ফিরিয়ে নিবে না কোনো দিন। তবে ভাবনার
অন্তিমে শেষ দৃশ্যের সংলাপে ভেসে
ওঠে জনদরদি রাজার মুখ। যেখানে রক্ত ঝরে
বন্যার বেগে সেখানেও প্রতিদিন ফুল ফোটে ফুল হয়ে।
যত দেখি
যত দেখি তৃপ্ত হই, শীতল হয়ে
জড়িয়ে পড়ি তোমার সমস্ত শরীরে। এক অজানা
শিহরণ ছুঁয়ে যায় হৃদয়ের সমস্ত পৃষ্ঠা জুড়ে।
যেন দীর্ঘদিনের শুষ্কতা ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে দূরে।
হারিয়ে যাওয়া রস ফিরছে মূলে, নিয়ে যাচ্ছে আদিপর্বে।
যেমন নেয় নদীর কূল, জোয়ারের ফেনা।
ভাবনার অতলে অদ্ভুত মায়া, দীর্ঘক্ষণ মোহগ্রস্ত
করে রাখে চোখের পলক, তাকিয়ে থাকি মায়ার মায়ায়। কী অপরূপ মায়া!
সেখানেও দেখি তৃষ্ণার ব্যাকুলতা নিয়ে অপেক্ষারত কান্না।
জীবনের তল্লাটে হারিয়ে খুঁজি আজ
আমারও জীবন ছিল। মায়ায় ভরা নির্বিঘ্ন আয়োজন, কলমিলতার মতো নিষ্পাপ।
তৃপ্ত হই ঘাসে, বাতাসের বেহায়া আঘাতে
অভিমানের মোড়ক ছুড়ে ফেলে হাতে তুলে নেই
কচু পাতায় টলোমলো জলের লজ্জা। এ জীবনের চাহিদা তোমায় দেখার
প্রয়োজনে তপ্ত, হয় উত্তপ্ত অথবা সহ্যের অতীত শীতল।
এ যেন কেমন
গহিন অরণ্যে সবুজ পাতার মতো, মগজে
চিন্তার রাজ্যে ভাবের উদয়, আকুল বিন্যাসে
একটু একটু করে এগিয়ে নেয়, আবার ভরা কলসির
মতো বসিয়ে রাখে-ভবের রাজ্যে। একদিন সমস্ত ভাবনা থেকে মুক্ত হয়ে
এদিক-ওদিক চলন, জীবন্ত মরণ! মানুষ
কেন বাঁচে, কীভাবে বাঁচে-প্রশ্নের সমাধা
আজ তর্কপ্রিয় সন্ধানে, মূর্ত প্রার্থনা।
সকল প্রিয়জন পরিত্যাগে, নিগূঢ় যত্নে হৃদয়ে প্রবেশ করে
নিজের অপরিচিত চেহারা, সব জিজ্ঞাসার
অন্ত-ক্রিয়ার এক উচ্চতম বিলাস।
জীবনের মানে অর্থশুন্য ভবিতব্য! এ কী হয়?
চোখের পলকে নিষ্পাপ দৃশ্যলোক-পেছন ডাকে বারবার
যেখানে থাকে আবার দেখার ইচ্ছা, নামে যে মুক্তকরণ। মিলনকান্তির আবাস।
চতুর্মুখ সমীকরণে খেলে যায় সময়ের ঝাঁজালো সিদ্ধান্ত। কেউ কী অপ্রিয় হয় কারও?
যেখানে ভেসে ওঠে নীলপদ্ম, অতীতের নিটোল কিতাব। সে-তো মানুষের ছবি!
চলে আসুন সবজি বাজারে
মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে দেখেছি অনেক কিছু
যা মানুষের নয়। অ-মানুষের জন্ম-উত্তর বাঁচার
উপায় হতে পারে। পোশাকে সজ্জিত দেহ কতভাবে
হিংস্র হয়, গোপনে, অন্ধের গহনে।
প্রবেশের আগেই পেয়েছি সংকেত। কত নোংরা, পচা, আবর্জনায় ভরা একটি থালার মতো
পড়ে আছে সম্মুখে। কেউ কি দেখেছে?
হয়তো মেনে নিয়েছে সবাই, সবার আগে সে
যে ভেবেছে, কী বা আছে উপায়!
চারপাশে কত কিছুর ঘ্রাণ, চোখ যা বলে তা কি মেনে নেয় স্বাস্থ্যবার্তা
ফুটে আছে ফুলের মতো দোকানের পসরা। খেতে বা কেনায় বারণ বালাই নেই।
যা পাচ্ছে নিচ্ছে, অনেকে। কেউ গায়ে কেউ পেটে।
আহা! দেখার কেউ নেই!
এক অন্ধকারে হাঁটছে আমাদের পা।
কেউ কি আছে কোথাও, আলো নিয়ে হাতে? ভেবেছে কি কেউ
কেন আমাদের আয়োজনে সবাই নেই?
কেউ এসে শুধু একবার বলুক, এই নিন-আপনাদের জীবন টিকিট যা উত্তরণ।
চলে আসুন সবজির বাজারে, সবুজের খোঁজে।
ইতিহাস
আজ স্পষ্ট ঘোষণা, আমার চোখের সামনে কেউ নেই
নেই কেউ ভাবের অন্তিম ঘরে। এক অস্পৃশ্য অনুভব
ছুঁয়ে চলে, ভাসিয়ে দেয় অগণিত স্রোতের তুমুল আলিঙ্গনে।
আজ কিছু ভেবে বলছি না, সরাসরি জবাব---
আমি নই কারও!
সব বাতাসের সাথে মিশে থাকা চোখের প্রেম
ভাবনার বিলাসে জড়িয়ে পড়ার বাসনা----সকলের অগোচরে
অথবা সকলের মাঝে। জীবনের অর্থে হৃদয়ের গুড়গুড় আলাপ
ঘুটঘুটে অন্ধকারে হৃদয়ে খোলা আকাশ, শুধু
এক মুখচ্ছবি।
আজ কোনো ক্ষমা নেই---নিজের প্রতি! নিজের পাপে
হাঁটি আমি, সবার মাঝে একলা হয়ে। বেদনার
কালো রং নিয়ে। শুধু দেখে যাই, শুধু দেখতে যাই।
কত রং বিরাজ করে ভাবনার গরমিলে, স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রই।
দাঁড়িয়ে থেকেও হেঁটে যাই!
আজকের না বলা কথা, কোনো দিন বলা হবে না
হবে না দাঁড়িয়ে আবার ভাবা আর একটু বসলে
ভালো হতো। যে বসিয়ে রাখে যে আশায় বসে থাকে
সবকিছুর-ই সময় থাকে---
এরপর---ইতিহাস!

পুরাতন বন্দর নগরী, পুরাতন শহর, পুরাতন শীতলক্ষ্যা, জামদানির পুরাতন সূতিকাগার, পুরাতন কাঠের ঘোড়া—এই সকল পুরাতনের গল্পের রাজ্যে নারায়ণগঞ্জের বাস। সেখানে ঐতিহ্য, সেখানে জাদুঘর সব জমজমাট। টিকিট কেটে আমরা ভিড় করি এই সকল পুরাতনের দিকে একবার চোখ দিতে। অথচ সত্য হলো নারায়ণগঞ্জ পুরাতন শহর, কিন্তু মৃত নয়। সেখান
২৫ আগস্ট ২০২২
হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’
১৩ নভেম্বর ২০২৫
প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
০৮ নভেম্বর ২০২৫
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
২০ অক্টোবর ২০২৫জন্মদিনের শ্রদ্ধাঞ্জলি
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’ জবাবে ফারুক বললেন, ‘কী আশ্চর্য ভাই?’ হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘এই যে প্রকৃতি, জোছনা, বৃষ্টি, নদী— কী সুন্দর! একদিন হয়তো আমি এসব আর দেখতে পারব না। একুশের বইমেলা হবে। লোকেদের ভিড়, আড্ডা; আমি সেখানে থাকব না। এটা কি মেনে নেওয়া যায়! হায় রে জীবন!’
‘আমার না বলা কথা’ বইয়ে ফারুক আহমেদ এই স্মৃতিচারণ করেছেন। লিখেছেন, ‘আমি কিছু না বলে মূর্তির মতো বসে রইলাম। একসময় তাকিয়ে দেখলাম, হুমায়ূন ভাইয়ের দুচোখের কোনায় পানি।’
হুমায়ূন আহমেদ নেই। তবে তিনি রয়েছেন দেশের তরুণদের মনে। যে বইমেলায় তিনি থাকবেন না বলে আক্ষেপ, সেই বইমেলায় তাঁর বইয়ের স্টলে তরুণদের ঢলের মধ্যে আছেন।
নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে হুমায়ূন আহমেদের জন্ম এই দিনে (১৩ নভেম্বর); ভারত ভাগের এক বছর পরে ১৯৪৮ সালে। ছোট সময়ে তাঁর নাম ছিল শামসুর রহমান। তাঁর বাবা ছেলেমেয়েদের নাম পাল্টে ফেলতেন। তাঁর নাম পাল্টে রাখেন হুমায়ূন আহমেদ। হিমু, মিসির আলি, শুভ্রর মতো চরিত্রের স্রষ্টা তিনি। শুধু কথাসাহিত্যেই নয়; ‘বহুব্রীহি’, ‘অয়োময়’, ‘কোথাও কেউ নেই’,
‘আজ রবিবার’-এর মতো নাটক বানিয়েছেন, তৈরি করেছেন ‘আগুনের পরশমণি’, ‘শ্যামল ছায়া’র মতো চলচ্চিত্র।
হুমায়ূন আহমেদ বৃষ্টি, জোছনা ভালোবাসতেন। তাঁর লেখায় সেসব উঠে এসেছে বারবার। ২০১২ সালের জুলাইয়ে বর্ষাতেই তিনি পাড়ি জমিয়েছিলেন ওপারে।
তিনি নেই। কিন্তু তাঁর লেখায় উঠে আসা চান্নিপসর, বৃষ্টি বিলাস আজও আছে তরুণদের মনে। ফারুক আহমেদ তাঁর ওই বইয়ে হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে আরেকটি স্মৃতিচারণ করেছিলেন এভাবে—‘এক বিকেলে শুটিং শেষে তাঁর প্রিয় লিচুগাছের দিকে তাকিয়ে আছেন হুমায়ূন। সেখানে ঝুলছে পাকা লিচু। তিনি তাঁর কেয়ারটেকার মুশাররফকে ডেকে গ্রামের ছোট ছেলেমেয়েদের ডেকে নিয়ে এলেন। তাদের বললেন, গাছে উঠে যে যত পারে লিচু খেতে। বাচ্চারা কেউ গাছে উঠে লিচু খাচ্ছে, হইচই করছে। কেউ পকেটে ভরছে। হুমায়ূন আহমেদ অবাক হয়ে সেই লিচু খাওয়া দেখতে লাগলেন।’
ফারুক আহমেদ লিখেছেন, ‘হুমায়ূন ভাই একসময় আমাকে বললেন, এমন সুন্দর দৃশ্য তুমি কখনো দেখেছো? এমন ভালো লাগার অনুভূতি কি অন্য কোনোভাবে পাওয়া যায়? আমি কী বলব বুঝতে পারছিলাম না। হঠাৎ বললাম, না ভাই এমন ভালো লাগার অনুভূতি কোনোভাবেই পাওয়া যায় না।’
হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন ঘিরে রাজধানীসহ জন্মস্থান নেত্রকোনাতে রয়েছে নানা আয়োজন। নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার রোয়াইলবাড়ি ইউনিয়নের কুতুবপুরে হুমায়ূন আহমেদ প্রতিষ্ঠিত শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ এবং এলাকাবাসীর উদ্যোগে এসব কর্মসূচি পালন করা হবে। সকালে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কোরআন খতম করবেন। এরপর শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ প্রাঙ্গণ থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, এলাকাবাসী এবং হুমায়ূনভক্তদের আনন্দ শোভাযাত্রা বের হবে। পরে লেখকের প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ, জন্মদিনের কেক কাটা, বৃক্ষরোপণ, কুইজ, হুমায়ূন আহমেদের রচিত নাটক ও সিনেমার অংশবিশেষ নিয়ে অভিনয়, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, পুরস্কার বিতরণ এবং আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া রাজধানীতে হুমায়ূন আহমেদের চলচ্চিত্র নিয়ে চলচ্চিত্র সপ্তাহ, হুমায়ূন প্রতিযোগিতা, হুমায়ূন জন্মোৎসব, টেলিভিশন চ্যানেলে নাটক ও অনুষ্ঠান প্রচারসহ নানা আয়োজনে মুখর থাকছে দিনটি।

হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’ জবাবে ফারুক বললেন, ‘কী আশ্চর্য ভাই?’ হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘এই যে প্রকৃতি, জোছনা, বৃষ্টি, নদী— কী সুন্দর! একদিন হয়তো আমি এসব আর দেখতে পারব না। একুশের বইমেলা হবে। লোকেদের ভিড়, আড্ডা; আমি সেখানে থাকব না। এটা কি মেনে নেওয়া যায়! হায় রে জীবন!’
‘আমার না বলা কথা’ বইয়ে ফারুক আহমেদ এই স্মৃতিচারণ করেছেন। লিখেছেন, ‘আমি কিছু না বলে মূর্তির মতো বসে রইলাম। একসময় তাকিয়ে দেখলাম, হুমায়ূন ভাইয়ের দুচোখের কোনায় পানি।’
হুমায়ূন আহমেদ নেই। তবে তিনি রয়েছেন দেশের তরুণদের মনে। যে বইমেলায় তিনি থাকবেন না বলে আক্ষেপ, সেই বইমেলায় তাঁর বইয়ের স্টলে তরুণদের ঢলের মধ্যে আছেন।
নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে হুমায়ূন আহমেদের জন্ম এই দিনে (১৩ নভেম্বর); ভারত ভাগের এক বছর পরে ১৯৪৮ সালে। ছোট সময়ে তাঁর নাম ছিল শামসুর রহমান। তাঁর বাবা ছেলেমেয়েদের নাম পাল্টে ফেলতেন। তাঁর নাম পাল্টে রাখেন হুমায়ূন আহমেদ। হিমু, মিসির আলি, শুভ্রর মতো চরিত্রের স্রষ্টা তিনি। শুধু কথাসাহিত্যেই নয়; ‘বহুব্রীহি’, ‘অয়োময়’, ‘কোথাও কেউ নেই’,
‘আজ রবিবার’-এর মতো নাটক বানিয়েছেন, তৈরি করেছেন ‘আগুনের পরশমণি’, ‘শ্যামল ছায়া’র মতো চলচ্চিত্র।
হুমায়ূন আহমেদ বৃষ্টি, জোছনা ভালোবাসতেন। তাঁর লেখায় সেসব উঠে এসেছে বারবার। ২০১২ সালের জুলাইয়ে বর্ষাতেই তিনি পাড়ি জমিয়েছিলেন ওপারে।
তিনি নেই। কিন্তু তাঁর লেখায় উঠে আসা চান্নিপসর, বৃষ্টি বিলাস আজও আছে তরুণদের মনে। ফারুক আহমেদ তাঁর ওই বইয়ে হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে আরেকটি স্মৃতিচারণ করেছিলেন এভাবে—‘এক বিকেলে শুটিং শেষে তাঁর প্রিয় লিচুগাছের দিকে তাকিয়ে আছেন হুমায়ূন। সেখানে ঝুলছে পাকা লিচু। তিনি তাঁর কেয়ারটেকার মুশাররফকে ডেকে গ্রামের ছোট ছেলেমেয়েদের ডেকে নিয়ে এলেন। তাদের বললেন, গাছে উঠে যে যত পারে লিচু খেতে। বাচ্চারা কেউ গাছে উঠে লিচু খাচ্ছে, হইচই করছে। কেউ পকেটে ভরছে। হুমায়ূন আহমেদ অবাক হয়ে সেই লিচু খাওয়া দেখতে লাগলেন।’
ফারুক আহমেদ লিখেছেন, ‘হুমায়ূন ভাই একসময় আমাকে বললেন, এমন সুন্দর দৃশ্য তুমি কখনো দেখেছো? এমন ভালো লাগার অনুভূতি কি অন্য কোনোভাবে পাওয়া যায়? আমি কী বলব বুঝতে পারছিলাম না। হঠাৎ বললাম, না ভাই এমন ভালো লাগার অনুভূতি কোনোভাবেই পাওয়া যায় না।’
হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন ঘিরে রাজধানীসহ জন্মস্থান নেত্রকোনাতে রয়েছে নানা আয়োজন। নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার রোয়াইলবাড়ি ইউনিয়নের কুতুবপুরে হুমায়ূন আহমেদ প্রতিষ্ঠিত শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ এবং এলাকাবাসীর উদ্যোগে এসব কর্মসূচি পালন করা হবে। সকালে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কোরআন খতম করবেন। এরপর শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ প্রাঙ্গণ থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, এলাকাবাসী এবং হুমায়ূনভক্তদের আনন্দ শোভাযাত্রা বের হবে। পরে লেখকের প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ, জন্মদিনের কেক কাটা, বৃক্ষরোপণ, কুইজ, হুমায়ূন আহমেদের রচিত নাটক ও সিনেমার অংশবিশেষ নিয়ে অভিনয়, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, পুরস্কার বিতরণ এবং আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া রাজধানীতে হুমায়ূন আহমেদের চলচ্চিত্র নিয়ে চলচ্চিত্র সপ্তাহ, হুমায়ূন প্রতিযোগিতা, হুমায়ূন জন্মোৎসব, টেলিভিশন চ্যানেলে নাটক ও অনুষ্ঠান প্রচারসহ নানা আয়োজনে মুখর থাকছে দিনটি।

পুরাতন বন্দর নগরী, পুরাতন শহর, পুরাতন শীতলক্ষ্যা, জামদানির পুরাতন সূতিকাগার, পুরাতন কাঠের ঘোড়া—এই সকল পুরাতনের গল্পের রাজ্যে নারায়ণগঞ্জের বাস। সেখানে ঐতিহ্য, সেখানে জাদুঘর সব জমজমাট। টিকিট কেটে আমরা ভিড় করি এই সকল পুরাতনের দিকে একবার চোখ দিতে। অথচ সত্য হলো নারায়ণগঞ্জ পুরাতন শহর, কিন্তু মৃত নয়। সেখান
২৫ আগস্ট ২০২২
আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায় ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
২৩ নভেম্বর ২০২৫
প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
০৮ নভেম্বর ২০২৫
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
২০ অক্টোবর ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
মঞ্চনাট্যটি স্কলাস্টিকার প্রতিষ্ঠাতা ইয়াসমিন মুরশেদকে উৎসর্গ করা হয়।

স্কুলের এসটিএম মিলনায়তন প্রতিষ্ঠার রজতজয়ন্তী উদ্যাপনকে সামনে রেখে আয়োজিত এ নাট্যানুষ্ঠানের সমাপনী দিনে বিশেষ অতিথি ছিলেন নাট্যব্যক্তিত্ব আবুল হায়াত, দিলারা জামান ও আফজাল হোসেন। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার অধ্যক্ষ ফারাহ্ সোফিয়া আহমেদ।
হীরক রাজার দেশে নাটকটির নির্দেশনায় ছিলেন কাজী তৌফিকুল ইসলাম ইমন। প্রোডাকশন ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেন শৈলী পারমিতা নীলপদ্ম। সংগীত পরিচালনা করেন গাজী মুন্নোফ, ইলিয়াস খান ও পলাশ নাথ লোচন। নৃত্য পরিচালনায় ছিলেন শাম্মী ইয়াসমিন ঝিনুক ও ফরহাদ আহমেদ শামিম।
নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন নাজিফা ওয়াযিহা আহমেদ, আরিয়াদ রহমান, আজিয়াদ রহমান, বাজনীন রহমান, মোহম্মদ সফির চৌধুরী, ফাহিম আহম্মেদ, সৈয়দ কাফশাত তাইয়ুশ হামদ ও তাজরীবা নওফাত প্রমুখ।
শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকেরা অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের পরিবেশিত অভিনয়, গান ও নাচ উপভোগ করেন।

প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
মঞ্চনাট্যটি স্কলাস্টিকার প্রতিষ্ঠাতা ইয়াসমিন মুরশেদকে উৎসর্গ করা হয়।

স্কুলের এসটিএম মিলনায়তন প্রতিষ্ঠার রজতজয়ন্তী উদ্যাপনকে সামনে রেখে আয়োজিত এ নাট্যানুষ্ঠানের সমাপনী দিনে বিশেষ অতিথি ছিলেন নাট্যব্যক্তিত্ব আবুল হায়াত, দিলারা জামান ও আফজাল হোসেন। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার অধ্যক্ষ ফারাহ্ সোফিয়া আহমেদ।
হীরক রাজার দেশে নাটকটির নির্দেশনায় ছিলেন কাজী তৌফিকুল ইসলাম ইমন। প্রোডাকশন ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেন শৈলী পারমিতা নীলপদ্ম। সংগীত পরিচালনা করেন গাজী মুন্নোফ, ইলিয়াস খান ও পলাশ নাথ লোচন। নৃত্য পরিচালনায় ছিলেন শাম্মী ইয়াসমিন ঝিনুক ও ফরহাদ আহমেদ শামিম।
নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন নাজিফা ওয়াযিহা আহমেদ, আরিয়াদ রহমান, আজিয়াদ রহমান, বাজনীন রহমান, মোহম্মদ সফির চৌধুরী, ফাহিম আহম্মেদ, সৈয়দ কাফশাত তাইয়ুশ হামদ ও তাজরীবা নওফাত প্রমুখ।
শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকেরা অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের পরিবেশিত অভিনয়, গান ও নাচ উপভোগ করেন।

পুরাতন বন্দর নগরী, পুরাতন শহর, পুরাতন শীতলক্ষ্যা, জামদানির পুরাতন সূতিকাগার, পুরাতন কাঠের ঘোড়া—এই সকল পুরাতনের গল্পের রাজ্যে নারায়ণগঞ্জের বাস। সেখানে ঐতিহ্য, সেখানে জাদুঘর সব জমজমাট। টিকিট কেটে আমরা ভিড় করি এই সকল পুরাতনের দিকে একবার চোখ দিতে। অথচ সত্য হলো নারায়ণগঞ্জ পুরাতন শহর, কিন্তু মৃত নয়। সেখান
২৫ আগস্ট ২০২২
আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায় ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
২৩ নভেম্বর ২০২৫
হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’
১৩ নভেম্বর ২০২৫
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
২০ অক্টোবর ২০২৫আজকের পত্রিকা ডেস্ক

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল। কিন্তু ভাষাবিদ ও সাহিত্য ইতিহাসবিদদের মতে, এই ধারণা আসলে পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি এক ‘ঔপনিবেশিক কল্পনা’ মাত্র। বাস্তবে আরবি সাহিত্য কখনোই থেমে যায়নি।
প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফাদের অধীনে বিজ্ঞান, দর্শন ও কবিতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বাগদাদ। আবু নুয়াস, আল-মুতানাব্বি, আল-ফারাবি ও ইবনে সিনার মতো কবি ও দার্শনিকদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এক স্বর্ণযুগ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় গবেষকেরা—যেমন ফরাসি চিন্তাবিদ আর্নেস্ট রেনাঁ ও ডাচ ইতিহাসবিদ রেইনহার্ট দোজি সেই আমলটিকেই আরবি বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের শিখর বলে স্বীকার করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, একাদশ শতাব্দীর পর এই ধারাবাহিকতার পতন ঘটে। তাঁদের মতে, এরপর প্রায় ৮০০ বছর আরবে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক বা দার্শনিক কাজ হয়নি—যতক্ষণ না ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু হয়।
কিন্তু আধুনিক গবেষকেরা বলছেন, এই ধারণা সরলীকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট। ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় শেখ জায়েদ বুক অ্যাওয়ার্ডের আয়োজিত এক আলোচনায় ভাষাবিদেরা দাবি করেছেন, আরবি রচনা শৈলী কখনো বিলুপ্ত হয়নি; বরং তা ধারাবাহিকভাবে কপি, অনুবাদ ও পাঠের মাধ্যমে বেঁচে ছিল।
জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলার তাঁর ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, আরবি সাহিত্যে ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে যে ধারণাটি প্রচলিত আছে তা আসলে গাল-গল্প। এই বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। গ্রুন্ডলার এতে দেখিয়েছেন, নবম শতাব্দীর বাগদাদে বইয়ের ব্যবসা, কপিকারদের প্রতিযোগিতা, জনসম্মুখে পাঠ ও লেখার প্রচলন—সবই ছিল আধুনিক প্রকাশনা সংস্কৃতির পূর্বসূরি। তিনি মত দিয়েছেন, ‘বাগদাদের রাস্তায় হাঁটলে আপনি দেখতেন লোকেরা হস্তলিপি বিক্রি করছে, বিরামচিহ্ন নিয়ে তর্ক করছে—এ যেন এক জীবন্ত প্রকাশনা বাজার।’
গবেষণা বলছে, আরবি সাহিত্য আসলে কখনো এক জায়গায় স্থির থাকেনি। এর কেন্দ্র এক সময় বাগদাদ থেকে কায়রো, দামেস্ক ও আন্দালুসিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু ধারাটি অব্যাহতই থাকে। নতুন ঘরানা তৈরি হয়, পুরোনো ঘরানা রূপান্তরিত হয়।
ফরাসি অধ্যাপক হাকান ওজকান তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ‘জাজাল’ নামের কথ্য ছন্দভিত্তিক কবিতার ধারা আব্বাসীয় যুগের পরও বিকশিত হতে থাকে। তাঁর মতে, ‘এই কবিরা নিয়ম ভেঙে নতুন রূপ দিয়েছে—তাঁদের ছন্দ ও ব্যঙ্গ আধুনিক র্যাপের মতো প্রাণবন্ত।’

এদিকে এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (২০ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, আবুধাবির নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘আরবি সাহিত্য লাইব্রেরি’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ‘হারানো শতাব্দী’ বলে বিবেচিত সময়ের ৬০ টিরও বেশি আরবি সাহিত্যকর্ম পুনরুদ্ধার করেছে। প্রকল্পটির সম্পাদক অধ্যাপক মরিস পোমেরান্টজ বলেছেন, ‘এই বইগুলো সম্পাদনা করা মানে এক চলমান সংলাপে অংশ নেওয়া—যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেখক, অনুবাদক ও সমালোচকেরা একে অপরকে উত্তর দিয়ে গেছেন।’
মরিস মনে করেন, আরবি সাহিত্য স্থবির হয়ে যাওয়ার ধারণাটি মূলত অনুবাদের অভাব থেকেই জন্ম নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো লেখা অনুবাদ করা হয় না, তখন সেটি বৈশ্বিক অস্তিত্ব হারায়।’
মরিসের মতে, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সাহিত্যকে আবার জনসাধারণের কল্পনায় ফিরিয়ে আনা—স্কুলে পড়ানো, মঞ্চে উপস্থাপন করা, অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। তা না হলে আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে চিহ্নিত সময়টি অধরাই থেকে যাবে।

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল। কিন্তু ভাষাবিদ ও সাহিত্য ইতিহাসবিদদের মতে, এই ধারণা আসলে পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি এক ‘ঔপনিবেশিক কল্পনা’ মাত্র। বাস্তবে আরবি সাহিত্য কখনোই থেমে যায়নি।
প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফাদের অধীনে বিজ্ঞান, দর্শন ও কবিতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বাগদাদ। আবু নুয়াস, আল-মুতানাব্বি, আল-ফারাবি ও ইবনে সিনার মতো কবি ও দার্শনিকদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এক স্বর্ণযুগ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় গবেষকেরা—যেমন ফরাসি চিন্তাবিদ আর্নেস্ট রেনাঁ ও ডাচ ইতিহাসবিদ রেইনহার্ট দোজি সেই আমলটিকেই আরবি বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের শিখর বলে স্বীকার করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, একাদশ শতাব্দীর পর এই ধারাবাহিকতার পতন ঘটে। তাঁদের মতে, এরপর প্রায় ৮০০ বছর আরবে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক বা দার্শনিক কাজ হয়নি—যতক্ষণ না ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু হয়।
কিন্তু আধুনিক গবেষকেরা বলছেন, এই ধারণা সরলীকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট। ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় শেখ জায়েদ বুক অ্যাওয়ার্ডের আয়োজিত এক আলোচনায় ভাষাবিদেরা দাবি করেছেন, আরবি রচনা শৈলী কখনো বিলুপ্ত হয়নি; বরং তা ধারাবাহিকভাবে কপি, অনুবাদ ও পাঠের মাধ্যমে বেঁচে ছিল।
জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলার তাঁর ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, আরবি সাহিত্যে ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে যে ধারণাটি প্রচলিত আছে তা আসলে গাল-গল্প। এই বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। গ্রুন্ডলার এতে দেখিয়েছেন, নবম শতাব্দীর বাগদাদে বইয়ের ব্যবসা, কপিকারদের প্রতিযোগিতা, জনসম্মুখে পাঠ ও লেখার প্রচলন—সবই ছিল আধুনিক প্রকাশনা সংস্কৃতির পূর্বসূরি। তিনি মত দিয়েছেন, ‘বাগদাদের রাস্তায় হাঁটলে আপনি দেখতেন লোকেরা হস্তলিপি বিক্রি করছে, বিরামচিহ্ন নিয়ে তর্ক করছে—এ যেন এক জীবন্ত প্রকাশনা বাজার।’
গবেষণা বলছে, আরবি সাহিত্য আসলে কখনো এক জায়গায় স্থির থাকেনি। এর কেন্দ্র এক সময় বাগদাদ থেকে কায়রো, দামেস্ক ও আন্দালুসিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু ধারাটি অব্যাহতই থাকে। নতুন ঘরানা তৈরি হয়, পুরোনো ঘরানা রূপান্তরিত হয়।
ফরাসি অধ্যাপক হাকান ওজকান তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ‘জাজাল’ নামের কথ্য ছন্দভিত্তিক কবিতার ধারা আব্বাসীয় যুগের পরও বিকশিত হতে থাকে। তাঁর মতে, ‘এই কবিরা নিয়ম ভেঙে নতুন রূপ দিয়েছে—তাঁদের ছন্দ ও ব্যঙ্গ আধুনিক র্যাপের মতো প্রাণবন্ত।’

এদিকে এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (২০ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, আবুধাবির নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘আরবি সাহিত্য লাইব্রেরি’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ‘হারানো শতাব্দী’ বলে বিবেচিত সময়ের ৬০ টিরও বেশি আরবি সাহিত্যকর্ম পুনরুদ্ধার করেছে। প্রকল্পটির সম্পাদক অধ্যাপক মরিস পোমেরান্টজ বলেছেন, ‘এই বইগুলো সম্পাদনা করা মানে এক চলমান সংলাপে অংশ নেওয়া—যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেখক, অনুবাদক ও সমালোচকেরা একে অপরকে উত্তর দিয়ে গেছেন।’
মরিস মনে করেন, আরবি সাহিত্য স্থবির হয়ে যাওয়ার ধারণাটি মূলত অনুবাদের অভাব থেকেই জন্ম নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো লেখা অনুবাদ করা হয় না, তখন সেটি বৈশ্বিক অস্তিত্ব হারায়।’
মরিসের মতে, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সাহিত্যকে আবার জনসাধারণের কল্পনায় ফিরিয়ে আনা—স্কুলে পড়ানো, মঞ্চে উপস্থাপন করা, অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। তা না হলে আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে চিহ্নিত সময়টি অধরাই থেকে যাবে।

পুরাতন বন্দর নগরী, পুরাতন শহর, পুরাতন শীতলক্ষ্যা, জামদানির পুরাতন সূতিকাগার, পুরাতন কাঠের ঘোড়া—এই সকল পুরাতনের গল্পের রাজ্যে নারায়ণগঞ্জের বাস। সেখানে ঐতিহ্য, সেখানে জাদুঘর সব জমজমাট। টিকিট কেটে আমরা ভিড় করি এই সকল পুরাতনের দিকে একবার চোখ দিতে। অথচ সত্য হলো নারায়ণগঞ্জ পুরাতন শহর, কিন্তু মৃত নয়। সেখান
২৫ আগস্ট ২০২২
আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায় ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
২৩ নভেম্বর ২০২৫
হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’
১৩ নভেম্বর ২০২৫
প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
০৮ নভেম্বর ২০২৫