Ajker Patrika

দিল্লির উদ্দেশে আমাদের যাত্রা

ফারজানা লিজা
দিল্লির উদ্দেশে আমাদের যাত্রা

ক্রিং ক্রিং সকাল সাতটার অ্যালার্মে ঘুম ভাঙল। দ্রুত ফ্রেশ হয়ে রেডি হলাম। বিওআইডির টি-শার্ট পরা ম্যান্ডেটরি ছিল। এত সকালে খাওয়ার অভ্যাস না থাকায় শুধু তিনটা খেজুর খেয়ে সকালের নাশতা শেষ করলাম। ইতিমধ্যে ফোন এল গাড়ি চলে এসেছে, ড্রাইভার নিচে অপেক্ষা করছেন। রুমমেটদের বিদায় জানিয়ে বের হয়ে গেলাম। নির্ঝর ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট থেকে বিমানবন্দর পৌঁছাতে মাত্র ১৫ মিনিট সময় লেগেছে। সকাল সকাল রাস্তা একদম খালি ছিল। ২ নম্বর গেটে ঢোকার সময় দেখা হলো ত্রিদিব দাদার সঙ্গে। উনি ইন্ডিয়া হাইকমিশনের একজন কর্মকর্তা। সঙ্গে ছিলেন নাম না-জানা আরও দুজন বিওআইডি মেম্বার। ভেতরে ঢুকে চোখে পড়ল সাদা আর ব্লু কম্বিনেশন টি-শার্ট পরিহিত একঝাঁক তরুণ।

অনেকে চলে এসেছেন। কিছু সময় বাদে আমাদের গ্রুপলিডার রুদ্র দাদা হাতে একটা লিস্ট ধরিয়ে বললেন, গ্রুপের পাঁচজন একসঙ্গে গিয়ে বোর্ডিং পাস নেবেন, যার দায়িত্ব দেওয়া হলো আমাকে। ইতিমধ্যে তিনজন গ্রুপ মেম্বার চলে এসেছেন, বাকি আরও দুজন। বসে অপেক্ষা করছিলাম আর উত্তম কুমার দাদার সঙ্গে পরিচয়পর্ব শেষ করলাম।। মাথায় ঝাঁকড়া চুল, মঞ্চনাটক করেন। সিলেট জেলায় বেশ সুনাম আছে তাঁর। আরও পরিচিত হলাম তারকা সমতুল্য সজল দাদার সঙ্গে। তিনি নিউজ ২৪ টেলিভিশনে কাজ করেন। বেশ হাস্যরসাত্মক একজন মানুষ। পাশাপাশি ব্লগ করেন, ১০০ জন ডেলিগেটের মধ্যে অনেকেই দেখলাম ব্লগ করেন।

বিমানের ভেতরে আমি, সুর্মি, সুপ্তা আপু আর মুক্তাদেখা হলো সুর্মি আর নন্দিতার সঙ্গে। এই দুজন আমার সঙ্গে শুরু থেকেই আছে। সবার সঙ্গে কথা বলে সময় পার করছিলাম। চারজন মেম্বার চলে এসেছেন, বাকি রইল নম্রতা বর্মন দিদি। উনার জন্য এখন অপেক্ষা। বাকি গ্রুপের সবাই আস্তে আস্তে বোর্ডিং পাস নিয়ে ইমিগ্রেশন করছেন। পরিচিত হলাম সৌমিত্র দাদার সঙ্গে, তিনি একজন সরকারি কর্মকর্তা, নানা দেশ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা শেয়ার করলেন। বেশ ভালো একজন মানুষ। এর সঙ্গে বিমানে জানালার পাশে সিট পাওয়ার একটা বিশেষ টেকনিক শিখিয়ে দিলেন। ১০টা বাজার অনেক পরে এলেন নম্রতা বর্মন দিদি। ওনাকে অনেকবার ফোন করা হয়েছে কিন্তু ফোন রিসিভ করলেন না। ভাবছিলাম হয়তো ফ্লাইট মিস করবেন কি না। অবশেষে পাঁচজন গেলাম বোর্ডিং পাস নিতে। সৌমিত্র দাদা শিখিয়ে দিয়েছিলেন বোর্ডিং পাস নেওয়ার সময় বলবে, তোমার প্রথম বিমান ভ্রমণ, যেন জানালার পাশে সিট দেয়। অফিসারকে বলার পর উনি বলেন, দুঃখিত, ইতিমধ্যে সব সিট বুক হয়ে গেছে, আরও আগে এলে দেওয়া যেত।

প্রধানমন্ত্রী সংগ্রহশালাতে আমরা শত তরুণমনটা ভিশন খারাপ হয়ে গেল, আর দিদির ওপর অনেক রাগ লাগছিল। উনি লেট করে না এলে আমি জানালার পাশে সিটটা পেতাম। ইমিগ্রেশন সেন্টারে গিয়ে লাইনে দাঁড়ালাম। অনেক লম্বা লাইন, একাধিক ফ্লাইটের মানুষ একসঙ্গে। অনেক সময় বাদে আমার পালা এল, ইমিগ্রেশন অফিসারকে পাসপোর্টটা এগিয়ে দিলাম। উনি ছোট ছোট কিছু প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করছিলেন, সবশেষে একটা সিল বসিয়ে দিলেন। এই দৃশ্যটা আমি অনেক সিনেমার আর শর্ট ভিডিওতে দেখেছি। আজ নিজেই অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হলাম, অন্য রকম এক ভালো লাগার অনুভূতি। সামনে এগিয়ে গেলাম, আশপাশে সব বিওআইডি মেম্বার। ওই পাশে দেখা যাচ্ছে বড় বড় বিমান। এত কাছ থেকে আগে কখনো বিমান দেখিনি। বিমানবন্দরের ভেতরে আসা হয়নি। সবাই ফটোসেশনে অংশ নিচ্ছেন, সিঙ্গেল ছবি, গ্রুপ ছবি নানা ভঙ্গিতে ছবি তুলছেন। আমিও কিছু তুলেছি। শেষবার মাকে ফোন দিয়ে দোয়া ও বিদায় নিলাম। ফ্লাইটের টাইম হয়ে গেছে, সবাই লাইন ধরে নিচে নামতে থাকলাম। আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিল কতগুলো বাস, সেই বাস একদম বিমানের সামনে গিয়ে থামল। টার্মিনাল থেকে বিমান অনেক দূরে থাকে, বৃষ্টি হয়েছিল, পানি জমে আছে। বাস থেকে নেমে সবাই সিঁড়ি ধরে বিমানে উঠছে। প্রথমবার বিমানে উঠছি, অন্য রকম অনুভূতি। জানি না বাকিদের কেমন লাগছে। আস্তে আস্তে সামনে এগিয়ে নাম্বার দেখে সিট খুঁজে বের করলাম। আমি সুর্মি আর সুপ্তা আপু একসঙ্গে বসলাম। সুপ্তা আপু বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের খেলোয়াড়। বাংলাদেশের এক রত্ন। সবাই সিটে বসার পর এয়ার হোস্ট কিছু গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দিলেন। বিমানজুড়ে শুধু বিওআইডি মেম্বারদের দেখা যাচ্ছে, ফাঁকে ফাঁকে অন্য যাত্রী। বিমানের ভেতরে এক অন্য রকম উৎসবমুখর পরিবেশ। ১০০ জন একসঙ্গে থাকলে এমনই হওয়ার কথা। অনেক সময় পর বিমান রানওয়েতে এল। হঠাৎ করে সম্পূর্ণ বিমান কেঁপে উঠল আর প্রচণ্ড গতিতে সামনে যেতে লাগল। সবাই পেছনের দিকে ঝুঁকে সিটের সঙ্গে চুম্বকের মতো লেগে আছে। আমি ছোট জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছি। মুহূর্তে বিমান বাতাসে ভাসছে, উত্তরার বড় বড় বিল্ডিং ক্রমেই ছোট হয়ে যাচ্ছে। সাদা তুলার মতো মেঘ দেখা যাচ্ছে। আমি ভীষণ এক্সাইটেড ছিলাম। সুপ্তা আপু আমার এক্সাইটেড দেখে বললেন, ‘তুমি কি জানালার পাশে বসবা?’ আমি বললাম, জি আপু, আমার প্রথম বিমান ভ্রমণ। আপু বললেন, ঠিক আছে বিমান পুরোপুরি ওপরে উঠুক, যখন সিটবেল খুলতে বলবে তখন এসো। আমি তখন অনেক খুশি হয়ে পড়েছিলাম। উনার হাতে দুইটা পাসপোর্ট, কত দেশ-বিদেশ ভ্রমণ করেছেন। বিমান পুরোপুরি ওপরে ওঠার পর আমাকে জানালার পাশে বসতে দিলেন।

আকাশটা গাঢ় নীল, এখন আর কোনো বিল্ডিং দেখা যাচ্ছে না, নিচে বড় বড় মেঘের পাহাড় দেখা যাচ্ছে। জানালার ফাঁক দিয়ে সূর্যটা চোখে পড়ছিল, প্রচণ্ড তাপ। ইতিমধ্যে জানালার গ্লাসটা গরম হয়ে গেছে। আমার জায়গাটা ছিল ঠিক উইংসের ওপর। তাকিয়ে থেকে বিমানের মেকানিজমটা চিন্তা করছিলাম।

দিল্লি ইন্দিরা গান্ধী ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে আমি, নন্দিতা, সুর্মি এবং পায়েলকোনোভাবে মাথায় ঢুকছিল না। সামনে, পেছনে, পাশে সব আমাদের বিওআইডি ডেলিগেটস। তাদের সঙ্গে গল্প করছিলাম, সবাই সবার সঙ্গে সেলফি তুলছেন, বিমানের ভেতরটা সত্যিই বেশ আমেজ লাগছিল। সবাইকে একটা ওয়েলকাম ড্রিংকস দিল, প্রায় ১০ মিনিট পর দুপুরের খাবার সার্ভ করল। আমরা তিনজন একজন আরেকজনের সঙ্গে গল্প করছিলাম। লাঞ্চ আইটেমটা একটু ভিন্ন ভিন্ন ছিল। প্রায় ২ ঘণ্টা ৩০ মিনিট পর দিল্লিতে পৌঁছে গেলাম। দিল্লি ইন্দিরা গান্ধী ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট বেশ বড় আর সুন্দর। সবাই লাইন ধরে ইমিগ্রেশন সেন্টারে দাঁড়িয়ে আছি। ইংরেজি আর হিন্দি মিলে ইমিগ্রেশন অফিসারের প্রশ্নের উত্তর দিলাম। এয়ারপোর্টের বাইরে আমাদের জন্য ইন্ডিয়া হাইকমিশনের কর্মকর্তারা অপেক্ষা করছেন, সবাইকে গোলাপ ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হচ্ছিল। বেশ সুন্দর একটা অনুভূতি। পাঁচটা গ্রুপের জন্য তিনটা এসি বাস দেওয়া হয়েছে, গ্রুপ অনুযায়ী বাসে ওঠা হলো। আমি আর সুর্মি এক নাম্বার বাসে। বাসে করে বিমানবন্দর থেকে রওনা হলাম। চারপাশটা অনেক সুন্দর। রাস্তাগুলো বেশ পরিচ্ছন্ন আর চওড়া। বাসের ভেতরে সবাই অনেক আনন্দ-উল্লাস করছেন, বিনয় দাদা আর সাহস ভাই দুজনে গান ধরেছেন। বাকিরা সবাই সুর দিচ্ছেন। গানে গানে মুখরিত বাস। আমাদের সঙ্গে যুক্ত হলেন ইন্ডিয়া হাইকমিশনারের এক দাদা। তিনিও গান গাইছিলেন, বাংলা না বোঝার জন্য শুধু হিন্দি গানের সঙ্গে সুর দিচ্ছেন। প্রায় দেড় ঘণ্টা পর আমরা পৌঁছে গেলাম প্রধানমন্ত্রী সংগ্রহশালায়।

প্রধানমন্ত্রীর সংগ্রহশালাতে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ছবিএটা জাদুঘর বলতে পারেন। পুরোনো ভবনের পাশে উঠেছে নতুন ভবন। ভেতরটা খুবই সুন্দর আলোকসজ্জায় সাজানো হয়েছে। ভারত ইতিহাসের বেশ কিছু নিদর্শন ছবি, ভিডিও, প্রত্যেক প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির ছবি দিয়ে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। আরও আছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ছবি। বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের ছবি। অনেকটা আমাদের বাংলাদেশের স্বাধীনতা আর মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের মতো। দিল্লির তিন মূর্তি ভবন আগে, যা নেহরু মেমোরিয়াল মিউজিয়াম নামে পরিচিত ছিল কিন্তু এখন নাম পরিবর্তন করে প্রধানমন্ত্রী সংগ্রহশালা নামে পরিচিত। এখন পর্যন্ত ভারতের সব প্রধানমন্ত্রীর জীবন দর্শন তুলে ধরা হয়েছে এ সংগ্রহশালায়। সংগ্রহশালাটি প্রায় ১০ হাজার বর্গমিটার জমিতে নির্মিত, যা নির্মাণে ব্যয় হয়েছে প্রায় ২৭১ কোটি টাকা। ২০১৮ সালে অনুমোদিত হয়ে চার বছরের মধ্যে নির্মিত হয়েছে। গত ১৪ এপ্রিল উদ্বোধন করেন নরেন্দ্র মোদি, যা ভারতে সংবিধান ও প্রধানমন্ত্রী সংগ্রহশালা স্থান পেয়েছে। এই সংগ্রহশালা প্রধানমন্ত্রীদের জীবন ও অবদানের মাধ্যমে স্বাধীনতা-পরবর্তী ভারতের গল্প বলবে—তরুণ প্রজন্মকে নেতৃত্বদান, দেশ গড়ার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা এবং প্রত্যেক প্রধানমন্ত্রীর সাফল্যের কথা সবাইকে জানানোর জন্য। সংগ্রহশালা বিভিন্ন তথ্য প্রসার ভারতী দূরদর্শন, ফিল্ম মিডিয়া, সংসদ টিভি, দেশ-বিদেশের সংবাদমাধ্যম ইত্যাদি থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। আর বিভিন্ন সাহিত্যে নিদর্শন প্রধানমন্ত্রীদের চিঠিপত্র, ব্যক্তিগত ব্যবহারসামগ্রী, উপহার, বিভিন্ন সম্মাননা, মুদ্রা ইত্যাদি তুলে ধরা হয়েছে। এ ছাড়া এখানে ডিসপ্লে বোর্ডে নানা তথ্য প্রদর্শনী আছে। হলোগ্রাম মাল্টিমিডিয়া সংগ্রহ সংঘটিতে মোট ৪৩টি প্রদর্শনশালা আছে। অসম্ভব সুন্দর একটা সংগ্রহশালা। বাইরে বেরিয়ে দেখি বেলা ডুবে যাচ্ছে। আমাদের অল্প সময়ের মধ্যেই বের হতে হবে, বিওআইডির ব্যানার দিয়ে গ্রুপ ছবি তোলা হলো। মেইন গেটের কাছে আসতেই দেখি খোলা মাঠে ময়ূর হাঁটছে, আশপাশে গাছগুলোতে অনেক ময়ূর। এত কাছ থেকে আগে কখনো ময়ূর দেখিনি। কী সুন্দর দেখতে!

দিল্লি হোটেল সুরিয়ার হল রুমেসবাই আস্তে আস্তে বাসে উঠতে লাগলেন। আমাদের আজকের শেষ গন্তব্য হোটেল সুরিয়া। বাসে বসেই বিকেলের নাশতা করা হলো। সন্ধ্যায় দিল্লিতে ভালোই ট্রাফিক থাকে। আবার শুরু হলো গানের পালা। সাহস ভাই গান ধরেন, বাকিরা সঙ্গে সুর মেলাচ্ছেন। আমি কাচঘেরা জানালা দিয়ে দেখছি অচেনা এক নতুন শহরের রঙিন সব বাতি। প্রায় দুই ঘণ্টা পর আমরা পৌঁছে গেলাম ফ্রেন্ড কলোনি হোটেল সুরিয়াতে। হোটেলের কর্মকর্তা আমাদের সাদরে আমন্ত্রণ জানালেন। সবাই মিলে লবিতে বসলাম। বিশাল বড় একটা হলরুম। হোটেল কর্তৃপক্ষ আর ভারতীয় হাইকমিশনের কর্মকর্তারা আমাদের সেবাদানে মহাব্যস্ত।

পাশেই ছিল ডিনারের আয়োজন। গোলটেবিলে বসে একে অপরের সঙ্গে পরিচিত হতে লাগলাম, একটা অন্য রকম আমেজ কাজ করছিল। ডিনারে বিশাল আয়োজন, নাম না-জানা অনেক খাবার। লাইন ধরে আস্তে আস্তে খাবার নেওয়া শুরু করলাম। খাবারের স্বাদ অনেক ভিন্ন, আমাদের বাঙালি স্বাদ একদমই নেই। নাহ্‌! খাবার খেয়ে তৃপ্তি পাওয়া যাচ্ছে না। একটা ভেজিটেবল সুপ ছিল, বেশ ভালো খেতে। দুই বাটি খাওয়া হলো, এনার্জি স্টোর করার জন্য যথেষ্ট।

বিমানে ত্রিদিব দাদার সেলফিতে আমরাখানিক বাদে ব্রিফিং দেওয়া হচ্ছে কে কোন রুমে। এক রুমে দুজন নাম ডেকে সামনে নেওয়া হচ্ছে, সঙ্গে রুমের কি কার্ড দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আমার সঙ্গে রুমমেট আশা আপু। সুর্মির সঙ্গে মুক্তা, সুর্মি আমার সঙ্গে থাকতে চায়, মুক্তা আবার তার বান্ধবী ইফফাতের সঙ্গে থাকতে চায়। এখন দেখা যাচ্ছে তিন রুমে মোট ছয়জন পরিবর্তন করতে হচ্ছে। বিষয়টা কোনোভাবেই অথরিটিকে জানানো যাবে না। ছয়জনের সঙ্গে নানা আলোচনা করার পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো একজন করে চেঞ্জ করব। অবশেষে আমি আর সুর্মি এক রুম। ইফফাত আর মুক্তা এক রুমে যাবে। দুজন অন্য রুমে। দীর্ঘ এক ঘণ্টা সময় লাগল এই সিদ্ধান্ত নিতে। নানাভাবে কনভেন্স করতে হলো, এমন সমস্যা আরও অনেকেরই হচ্ছিল। রুমটা মূলত সিরিয়াল নাম্বার অনুযায়ী দেওয়া হচ্ছিল। অবশেষে রুমের ভেতরে যাওয়া গেল। বেশ পরিপাটি একটা রুম, টিভি দেখা, চা-কফি খাওয়া, ঠান্ডা প্রায় সব ধরনের ব্যবস্থা আছে। জিনিসপত্র বের করে গোসল করে ফ্রেশ হতে হতে প্রায় ১২টা বেজে গেল। বাসায় মা আর ভাইয়ের সঙ্গে কথা বললাম। আগামীকাল সকালে আগ্রা যাওয়া হবে। অনেক দূরের পথ, সকাল সকাল ওঠা লাগবে, ক্লান্ত শরীর নরম বিছানায় এলিয়ে দিতেই ঘুমের সমুদ্রে তলিয়ে গেলাম...।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

তৌহিদুল হকের গুচ্ছ কবিতা

তৌহিদুল হক
তৌহিদুল হকের গুচ্ছ কবিতা

রক্ত লাল

আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে

গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায়

ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের

জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।

যা স্বভাববিদ্ধ, তবে কতটা উপকারী বা বাঁচিয়ে

রাখার নিরলস অভিপ্রায়। মানুষের তরে

প্রাণীর অফুরন্ত প্রাচুর্য বিস্তৃতকরণে, কিংবা

উদ্ভিদের অন্তিম প্রেমে বসন্তের অভিষেকে।

কতটা জ্বলতে হয় পরের জন্য, কতটা ফুটন্ত

শরীর নিয়ে চালিয়ে যায় সেবার পরিধি।

এক চিরন্তন শিক্ষা, আবার উদিত হয়

দিনের শুরুতে, বিদায় প্রান্তিক অপূর্ব

মায়ায়-দিনের শেষ প্রান্তে।

এতটুকু কার্পণ্য রেখে যায়নি, হয়তো মুখ

ফিরিয়ে নিবে না কোনো দিন। তবে ভাবনার

অন্তিমে শেষ দৃশ্যের সংলাপে ভেসে

ওঠে জনদরদি রাজার মুখ। যেখানে রক্ত ঝরে

বন্যার বেগে সেখানেও প্রতিদিন ফুল ফোটে ফুল হয়ে।

যত দেখি

যত দেখি তৃপ্ত হই, শীতল হয়ে

জড়িয়ে পড়ি তোমার সমস্ত শরীরে। এক অজানা

শিহরণ ছুঁয়ে যায় হৃদয়ের সমস্ত পৃষ্ঠা জুড়ে।

যেন দীর্ঘদিনের শুষ্কতা ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে দূরে।

হারিয়ে যাওয়া রস ফিরছে মূলে, নিয়ে যাচ্ছে আদিপর্বে।

যেমন নেয় নদীর কূল, জোয়ারের ফেনা।

ভাবনার অতলে অদ্ভুত মায়া, দীর্ঘক্ষণ মোহগ্রস্ত

করে রাখে চোখের পলক, তাকিয়ে থাকি মায়ার মায়ায়। কী অপরূপ মায়া!

সেখানেও দেখি তৃষ্ণার ব্যাকুলতা নিয়ে অপেক্ষারত কান্না।

জীবনের তল্লাটে হারিয়ে খুঁজি আজ

আমারও জীবন ছিল। মায়ায় ভরা নির্বিঘ্ন আয়োজন, কলমিলতার মতো নিষ্পাপ।

তৃপ্ত হই ঘাসে, বাতাসের বেহায়া আঘাতে

অভিমানের মোড়ক ছুড়ে ফেলে হাতে তুলে নেই

কচু পাতায় টলোমলো জলের লজ্জা। এ জীবনের চাহিদা তোমায় দেখার

প্রয়োজনে তপ্ত, হয় উত্তপ্ত অথবা সহ্যের অতীত শীতল।

এ যেন কেমন

গহিন অরণ্যে সবুজ পাতার মতো, মগজে

চিন্তার রাজ্যে ভাবের উদয়, আকুল বিন্যাসে

একটু একটু করে এগিয়ে নেয়, আবার ভরা কলসির

মতো বসিয়ে রাখে-ভবের রাজ্যে। একদিন সমস্ত ভাবনা থেকে মুক্ত হয়ে

এদিক-ওদিক চলন, জীবন্ত মরণ! মানুষ

কেন বাঁচে, কীভাবে বাঁচে-প্রশ্নের সমাধা

আজ তর্কপ্রিয় সন্ধানে, মূর্ত প্রার্থনা।

সকল প্রিয়জন পরিত্যাগে, নিগূঢ় যত্নে হৃদয়ে প্রবেশ করে

নিজের অপরিচিত চেহারা, সব জিজ্ঞাসার

অন্ত-ক্রিয়ার এক উচ্চতম বিলাস।

জীবনের মানে অর্থশুন্য ভবিতব্য! এ কী হয়?

চোখের পলকে নিষ্পাপ দৃশ্যলোক-পেছন ডাকে বারবার

যেখানে থাকে আবার দেখার ইচ্ছা, নামে যে মুক্তকরণ। মিলনকান্তির আবাস।

চতুর্মুখ সমীকরণে খেলে যায় সময়ের ঝাঁজালো সিদ্ধান্ত। কেউ কী অপ্রিয় হয় কারও?

যেখানে ভেসে ওঠে নীলপদ্ম, অতীতের নিটোল কিতাব। সে-তো মানুষের ছবি!

চলে আসুন সবজি বাজারে

মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে দেখেছি অনেক কিছু

যা মানুষের নয়। অ-মানুষের জন্ম-উত্তর বাঁচার

উপায় হতে পারে। পোশাকে সজ্জিত দেহ কতভাবে

হিংস্র হয়, গোপনে, অন্ধের গহনে।

প্রবেশের আগেই পেয়েছি সংকেত। কত নোংরা, পচা, আবর্জনায় ভরা একটি থালার মতো

পড়ে আছে সম্মুখে। কেউ কি দেখেছে?

হয়তো মেনে নিয়েছে সবাই, সবার আগে সে

যে ভেবেছে, কী বা আছে উপায়!

চারপাশে কত কিছুর ঘ্রাণ, চোখ যা বলে তা কি মেনে নেয় স্বাস্থ্যবার্তা

ফুটে আছে ফুলের মতো দোকানের পসরা। খেতে বা কেনায় বারণ বালাই নেই।

যা পাচ্ছে নিচ্ছে, অনেকে। কেউ গায়ে কেউ পেটে।

আহা! দেখার কেউ নেই!

এক অন্ধকারে হাঁটছে আমাদের পা।

কেউ কি আছে কোথাও, আলো নিয়ে হাতে? ভেবেছে কি কেউ

কেন আমাদের আয়োজনে সবাই নেই?

কেউ এসে শুধু একবার বলুক, এই নিন-আপনাদের জীবন টিকিট যা উত্তরণ।

চলে আসুন সবজির বাজারে, সবুজের খোঁজে।

ইতিহাস

আজ স্পষ্ট ঘোষণা, আমার চোখের সামনে কেউ নেই

নেই কেউ ভাবের অন্তিম ঘরে। এক অস্পৃশ্য অনুভব

ছুঁয়ে চলে, ভাসিয়ে দেয় অগণিত স্রোতের তুমুল আলিঙ্গনে।

আজ কিছু ভেবে বলছি না, সরাসরি জবাব---

আমি নই কারও!

সব বাতাসের সাথে মিশে থাকা চোখের প্রেম

ভাবনার বিলাসে জড়িয়ে পড়ার বাসনা----সকলের অগোচরে

অথবা সকলের মাঝে। জীবনের অর্থে হৃদয়ের গুড়গুড় আলাপ

ঘুটঘুটে অন্ধকারে হৃদয়ে খোলা আকাশ, শুধু

এক মুখচ্ছবি।

আজ কোনো ক্ষমা নেই---নিজের প্রতি! নিজের পাপে

হাঁটি আমি, সবার মাঝে একলা হয়ে। বেদনার

কালো রং নিয়ে। শুধু দেখে যাই, শুধু দেখতে যাই।

কত রং বিরাজ করে ভাবনার গরমিলে, স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রই।

দাঁড়িয়ে থেকেও হেঁটে যাই!

আজকের না বলা কথা, কোনো দিন বলা হবে না

হবে না দাঁড়িয়ে আবার ভাবা আর একটু বসলে

ভালো হতো। যে বসিয়ে রাখে যে আশায় বসে থাকে

সবকিছুর-ই সময় থাকে---

এরপর---ইতিহাস!

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

জন্মদিনের শ্রদ্ধাঞ্জলি

বিদায় নেওয়া হুমায়ূন এখনো আছেন

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৩ নভেম্বর ২০২৫, ০৮: ৪২
হুমায়ূন আহমেদ
হুমায়ূন আহমেদ

হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’ জবাবে ফারুক বললেন, ‘কী আশ্চর্য ভাই?’ হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘এই যে প্রকৃতি, জোছনা, বৃষ্টি, নদী— কী সুন্দর! একদিন হয়তো আমি এসব আর দেখতে পারব না। একুশের বইমেলা হবে। লোকেদের ভিড়, আড্ডা; আমি সেখানে থাকব না। এটা কি মেনে নেওয়া যায়! হায় রে জীবন!’

‘আমার না বলা কথা’ বইয়ে ফারুক আহমেদ এই স্মৃতিচারণ করেছেন। লিখেছেন, ‘আমি কিছু না বলে মূর্তির মতো বসে রইলাম। একসময় তাকিয়ে দেখলাম, হুমায়ূন ভাইয়ের দুচোখের কোনায় পানি।’

হুমায়ূন আহমেদ নেই। তবে তিনি রয়েছেন দেশের তরুণদের মনে। যে বইমেলায় তিনি থাকবেন না বলে আক্ষেপ, সেই বইমেলায় তাঁর বইয়ের স্টলে তরুণদের ঢলের মধ্যে আছেন।

নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে হুমায়ূন আহমেদের জন্ম এই দিনে (১৩ নভেম্বর); ভারত ভাগের এক বছর পরে ১৯৪৮ সালে। ছোট সময়ে তাঁর নাম ছিল শামসুর রহমান। তাঁর বাবা ছেলেমেয়েদের নাম পাল্টে ফেলতেন। তাঁর নাম পাল্টে রাখেন হুমায়ূন আহমেদ। হিমু, মিসির আলি, শুভ্রর মতো চরিত্রের স্রষ্টা তিনি। শুধু কথাসাহিত্যেই নয়; ‘বহুব্রীহি’, ‘অয়োময়’, ‘কোথাও কেউ নেই’,

‘আজ রবিবার’-এর মতো নাটক বানিয়েছেন, তৈরি করেছেন ‘আগুনের পরশমণি’, ‘শ্যামল ছায়া’র মতো চলচ্চিত্র।

হুমায়ূন আহমেদ বৃষ্টি, জোছনা ভালোবাসতেন। তাঁর লেখায় সেসব উঠে এসেছে বারবার। ২০১২ সালের জুলাইয়ে বর্ষাতেই তিনি পাড়ি জমিয়েছিলেন ওপারে।

তিনি নেই। কিন্তু তাঁর লেখায় উঠে আসা চান্নিপসর, বৃষ্টি বিলাস আজও আছে তরুণদের মনে। ফারুক আহমেদ তাঁর ওই বইয়ে হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে আরেকটি স্মৃতিচারণ করেছিলেন এভাবে—‘এক বিকেলে শুটিং শেষে তাঁর প্রিয় লিচুগাছের দিকে তাকিয়ে আছেন হুমায়ূন। সেখানে ঝুলছে পাকা লিচু। তিনি তাঁর কেয়ারটেকার মুশাররফকে ডেকে গ্রামের ছোট ছেলেমেয়েদের ডেকে নিয়ে এলেন। তাদের বললেন, গাছে উঠে যে যত পারে লিচু খেতে। বাচ্চারা কেউ গাছে উঠে লিচু খাচ্ছে, হইচই করছে। কেউ পকেটে ভরছে। হুমায়ূন আহমেদ অবাক হয়ে সেই লিচু খাওয়া দেখতে লাগলেন।’

ফারুক আহমেদ লিখেছেন, ‘হুমায়ূন ভাই একসময় আমাকে বললেন, এমন সুন্দর দৃশ্য তুমি কখনো দেখেছো? এমন ভালো লাগার অনুভূতি কি অন্য কোনোভাবে পাওয়া যায়? আমি কী বলব বুঝতে পারছিলাম না। হঠাৎ বললাম, না ভাই এমন ভালো লাগার অনুভূতি কোনোভাবেই পাওয়া যায় না।’

হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন ঘিরে রাজধানীসহ জন্মস্থান নেত্রকোনাতে রয়েছে নানা আয়োজন। নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার রোয়াইলবাড়ি ইউনিয়নের কুতুবপুরে হুমায়ূন আহমেদ প্রতিষ্ঠিত শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ এবং এলাকাবাসীর উদ্যোগে এসব কর্মসূচি পালন করা হবে। সকালে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কোরআন খতম করবেন। এরপর শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ প্রাঙ্গণ থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, এলাকাবাসী এবং হুমায়ূনভক্তদের আনন্দ শোভাযাত্রা বের হবে। পরে লেখকের প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ, জন্মদিনের কেক কাটা, বৃক্ষরোপণ, কুইজ, হুমায়ূন আহমেদের রচিত নাটক ও সিনেমার অংশবিশেষ নিয়ে অভিনয়, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, পুরস্কার বিতরণ এবং আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া রাজধানীতে হুমায়ূন আহমেদের চলচ্চিত্র নিয়ে চলচ্চিত্র সপ্তাহ, হুমায়ূন প্রতিযোগিতা, হুমায়ূন জন্মোৎসব, টেলিভিশন চ্যানেলে নাটক ও অনুষ্ঠান প্রচারসহ নানা আয়োজনে মুখর থাকছে দিনটি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

‘হীরক রাজার দেশে’ মঞ্চস্থ করল স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
গতকাল শুক্রবার প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
গতকাল শুক্রবার প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।

মঞ্চনাট্যটি স্কলাস্টিকার প্রতিষ্ঠাতা ইয়াসমিন মুরশেদকে উৎসর্গ করা হয়।

গতকাল শুক্রবার প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
গতকাল শুক্রবার প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

স্কুলের এসটিএম মিলনায়তন প্রতিষ্ঠার রজতজয়ন্তী উদ্‌যাপনকে সামনে রেখে আয়োজিত এ নাট্যানুষ্ঠানের সমাপনী দিনে বিশেষ অতিথি ছিলেন নাট্যব্যক্তিত্ব আবুল হায়াত, দিলারা জামান ও আফজাল হোসেন। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার অধ্যক্ষ ফারাহ্ সোফিয়া আহমেদ।

হীরক রাজার দেশে নাটকটির নির্দেশনায় ছিলেন কাজী তৌফিকুল ইসলাম ইমন। প্রোডাকশন ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেন শৈলী পারমিতা নীলপদ্ম। সংগীত পরিচালনা করেন গাজী মুন্নোফ, ইলিয়াস খান ও পলাশ নাথ লোচন। নৃত্য পরিচালনায় ছিলেন শাম্মী ইয়াসমিন ঝিনুক ও ফরহাদ আহমেদ শামিম।

নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন নাজিফা ওয়াযিহা আহমেদ, আরিয়াদ রহমান, আজিয়াদ রহমান, বাজনীন রহমান, মোহম্মদ সফির চৌধুরী, ফাহিম আহম্মেদ, সৈয়দ কাফশাত তাইয়ুশ হামদ ও তাজরীবা নওফাত প্রমুখ।

শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকেরা অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের পরিবেশিত অভিনয়, গান ও নাচ উপভোগ করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

গবেষণায় বেরিয়ে এল আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’র গল্প

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল। কিন্তু ভাষাবিদ ও সাহিত্য ইতিহাসবিদদের মতে, এই ধারণা আসলে পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি এক ‘ঔপনিবেশিক কল্পনা’ মাত্র। বাস্তবে আরবি সাহিত্য কখনোই থেমে যায়নি।

প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফাদের অধীনে বিজ্ঞান, দর্শন ও কবিতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বাগদাদ। আবু নুয়াস, আল-মুতানাব্বি, আল-ফারাবি ও ইবনে সিনার মতো কবি ও দার্শনিকদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এক স্বর্ণযুগ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় গবেষকেরা—যেমন ফরাসি চিন্তাবিদ আর্নেস্ট রেনাঁ ও ডাচ ইতিহাসবিদ রেইনহার্ট দোজি সেই আমলটিকেই আরবি বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের শিখর বলে স্বীকার করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, একাদশ শতাব্দীর পর এই ধারাবাহিকতার পতন ঘটে। তাঁদের মতে, এরপর প্রায় ৮০০ বছর আরবে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক বা দার্শনিক কাজ হয়নি—যতক্ষণ না ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু হয়।

কিন্তু আধুনিক গবেষকেরা বলছেন, এই ধারণা সরলীকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট। ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় শেখ জায়েদ বুক অ্যাওয়ার্ডের আয়োজিত এক আলোচনায় ভাষাবিদেরা দাবি করেছেন, আরবি রচনা শৈলী কখনো বিলুপ্ত হয়নি; বরং তা ধারাবাহিকভাবে কপি, অনুবাদ ও পাঠের মাধ্যমে বেঁচে ছিল।

জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলার তাঁর ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, আরবি সাহিত্যে ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে যে ধারণাটি প্রচলিত আছে তা আসলে গাল-গল্প। এই বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। গ্রুন্ডলার এতে দেখিয়েছেন, নবম শতাব্দীর বাগদাদে বইয়ের ব্যবসা, কপিকারদের প্রতিযোগিতা, জনসম্মুখে পাঠ ও লেখার প্রচলন—সবই ছিল আধুনিক প্রকাশনা সংস্কৃতির পূর্বসূরি। তিনি মত দিয়েছেন, ‘বাগদাদের রাস্তায় হাঁটলে আপনি দেখতেন লোকেরা হস্তলিপি বিক্রি করছে, বিরামচিহ্ন নিয়ে তর্ক করছে—এ যেন এক জীবন্ত প্রকাশনা বাজার।’

গবেষণা বলছে, আরবি সাহিত্য আসলে কখনো এক জায়গায় স্থির থাকেনি। এর কেন্দ্র এক সময় বাগদাদ থেকে কায়রো, দামেস্ক ও আন্দালুসিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু ধারাটি অব্যাহতই থাকে। নতুন ঘরানা তৈরি হয়, পুরোনো ঘরানা রূপান্তরিত হয়।

ফরাসি অধ্যাপক হাকান ওজকান তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ‘জাজাল’ নামের কথ্য ছন্দভিত্তিক কবিতার ধারা আব্বাসীয় যুগের পরও বিকশিত হতে থাকে। তাঁর মতে, ‘এই কবিরা নিয়ম ভেঙে নতুন রূপ দিয়েছে—তাঁদের ছন্দ ও ব্যঙ্গ আধুনিক র্যাপের মতো প্রাণবন্ত।’

জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলারের ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। ছবি: দ্য ন্যাশনাল
জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলারের ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। ছবি: দ্য ন্যাশনাল

এদিকে এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (২০ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, আবুধাবির নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘আরবি সাহিত্য লাইব্রেরি’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ‘হারানো শতাব্দী’ বলে বিবেচিত সময়ের ৬০ টিরও বেশি আরবি সাহিত্যকর্ম পুনরুদ্ধার করেছে। প্রকল্পটির সম্পাদক অধ্যাপক মরিস পোমেরান্টজ বলেছেন, ‘এই বইগুলো সম্পাদনা করা মানে এক চলমান সংলাপে অংশ নেওয়া—যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেখক, অনুবাদক ও সমালোচকেরা একে অপরকে উত্তর দিয়ে গেছেন।’

মরিস মনে করেন, আরবি সাহিত্য স্থবির হয়ে যাওয়ার ধারণাটি মূলত অনুবাদের অভাব থেকেই জন্ম নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো লেখা অনুবাদ করা হয় না, তখন সেটি বৈশ্বিক অস্তিত্ব হারায়।’

মরিসের মতে, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সাহিত্যকে আবার জনসাধারণের কল্পনায় ফিরিয়ে আনা—স্কুলে পড়ানো, মঞ্চে উপস্থাপন করা, অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। তা না হলে আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে চিহ্নিত সময়টি অধরাই থেকে যাবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত