Ajker Patrika

ইংল্যান্ডের প্রথম রাজপথে ভ্রমণ

আরিফ আবেদ আদিত্য
ইংল্যান্ডের প্রথম রাজপথে ভ্রমণ

লন্ডন থেকে অদূরেই ক্যান্টাবরি শহরে আমার ইউনিভার্সিটি অবস্থিত। এখানে আসার আগে ক্যান্টাবরি শহরটিকে কেবল চিনতাম চসারের ‘ক্যান্টাবরি টেলস’-এর মাধ্যমে। পরে জেনেছি, পাশ্চাত্য রেনেসাঁর অন্যতম রূপকার নাট্যকার ক্রিস্টোফার মার্লোর (১৫৬৪-১৫৯৩) জন্ম ও বেড়ে ওঠা এই শহরেই। লন্ডনের অতি কাছে (ট্রেনে ৪৫ মিনিট, বাসে ১ ঘণ্টা ৩০ মিনিটের পথ) সমুদ্রসৈকত-সমৃদ্ধ কেন্ট কাউন্টির কেন্দ্রস্থল এই ক্যান্টাবরি শহর। বিগত কয়েক শ বছর ধরে লন্ডনের লেখক-সাহিত্যিক-দার্শনিকদের আনাগোনা ছিল এই শহরের আনাচে-কানাচে। ইংল্যান্ডের দক্ষিণ-পূর্ব দিকে অবস্থিত হওয়ায় চমৎকার আবহাওয়া, প্রাকৃতিক পরিবেশ ও সমুদ্রসৈকত এর প্রধান আকর্ষণ। কেন্টকে বলা হয় ‘গার্ডেন অব ইংল্যান্ড’। কেন্ট কাউন্টিতে ৫০টির মতো সমুদ্রসৈকত আছে। ক্যান্টাবরির চারপাশ ঘিরে সমুদ্রসৈকত অবস্থিত—যেমন: ফোকস্টোন, ডোভার, ডিল, ব্রডস্টেয়ার, মারগেট, রামসগেট, সেনউইচ, হার্ন বে ইত্যাদি। উইলিয়াম শেক্‌সপিয়ার থেকে শুরু করে টি এস ইলিয়ট এখানকার সমুদ্রসৈকতে অবকাশ যাপনে আসতেন। ইংরেজি সাহিত্যের অনেক চরিত্র এখানকার শহরে বেড়ে উঠেছে। ভিক্টোরীয় যুগে অন্যতম লেখক চার্লস ডিকেন্সের (১৮১২-১৮৭০) অনেক চরিত্র ও ঘটনাবলির ছায়া এসব স্থানে পাওয়া যায়।

আমার ডর্মেটরির কাছাকাছি ক্যান্টাবরির বিখ্যাত নদী গ্রেট স্ট বয়ে গেছে। এই নদীর পাড়ে বসেই ইংরেজ কবি থমাস হার্ডি (১৮৪০-১৯২৮) প্রিয়তমা জীবনসঙ্গিনীর বিয়োগব্যথায় লিখেছিলেন: ‘Overlooking the River Stour’ (১৯১৬)। শহরের ভেতর দিয়েই এই নদী প্রবাহিত হয়েছে; যদিও কালের বিবর্তনে শহরের অভ্যন্তরের নদীর অংশ সরু খালের আকার নিয়েছে, তথাপি জলের প্রবহমানতা বিদ্যমান আছে। এই শহরে আগত ভ্রমণপিপাসুদের অন্যতম আকর্ষণ এখানকার ‘পান্টিং’—লগি দিয়ে নৌকা চালিয়ে পর্যটকদের এই শহর দেখানো; অনেকটা ভেনিসের নৌবিহারের মতো।

একদিন সকালে গ্রেট স্ট নদীর তীর ধরে হাঁটতে বেরোলাম। তখন হঠাৎ চোখে পড়ে রাস্তার ওপর তামার অক্ষরে খোদাই করে লেখা ‘রোমান ওয়াটলিং স্ট্রিট’। পাশে সাইনবোর্ডে ছোট্ট পরিচয় লেখা ‘ইংল্যান্ডের প্রথম রাজপথ’। আকস্মিক কিছু আবিষ্কারের মতো হঠাৎ এই ফলকচিহ্ন দেখে আমার যারপরনাই অবাক হওয়ার পালা। কারণ, পরে এই ‘রোমান ওয়াটলিং স্ট্রিট’ আমাকে হাঁটতে নিয়ে যায় ইংল্যান্ডের প্রাচীন ও মধ্যযুগের ইতিহাসের পথে।

গ্রেট স্ট নদীর তীরে তামার অক্ষরে খোদাই করে লেখা ‘রোমান ওয়াটলিং স্ট্রিট’। এটি ইংল্যান্ডের প্রথম রাজপথ হিসেবে পরিচিত। ক্যান্টাবরি শহরের গল্প বা ইতিহাস লিখে আসলে শেষ হওয়ার নয়। এর পরতে পরতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে ইংল্যান্ড নামক রাষ্ট্রের গড়ে ওঠার ইতিহাস ও ঐতিহ্যের কথা। তিনটি ইউনেসকো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট, যা ‘বিগ থ্রি’ নামে পরিচিত এই শহরে অবস্থিত--ক্যান্টাবরি ক্যাথেড্রাল (মাদার চার্চ অব ইংল্যান্ড), সেন্ট অগাস্টিন এবে (অ্যাংলো-সাক্সনদের সময়ের কবরস্থান) ও সেন্ট মার্টিন চার্চ (ইংলিশ ভাষাভাষীদের প্রাচীনতম চার্চ)। গ্রেট ব্রিটেনে খ্রিষ্টধর্মের প্রচার শুরু হয় এই শহর থেকে। রোমান মিশনারিরা ২৭০-২৮০ সালে ইংলিশ চ্যানেল পার হয়ে গ্রেট স্ট নদীর পাশে এই ক্যান্টাবরি শহরের পত্তন করে। রোমানরা ইংল্যান্ডে নিজেদের শাসন কায়েম করে খ্রিষ্টীয় তৃতীয় শতকের দিকে। ভারতীয় উপমহাদেশকে ইংল্যান্ড প্রায় ২০০ বছর শাসন করেছিল, অথচ এই ইংল্যান্ডও একসময় রোমানদের কলোনি ছিল। রোমানরা চলে যাওয়ার পর অ্যাংলো-সাক্সনদের হাত ধরে আজকের ইংল্যান্ড গড়ে ওঠে।

প্রাচীন রাজপথ ও জনপথের চিত্র। যাই হোক, গল্পে ফেরা যাক। প্রায় সব ধর্মাবলম্বীর জীবিতকালে অন্তিম ইচ্ছা থাকে তাদের ধর্মীয় পবিত্র স্থান বা তীর্থসমূহ পরিদর্শনের। মধ্য ও প্রাক-আধুনিক যুগে ক্রিশ্চিয়ান বিশ্বে নান-পাদরি-যাজক ও খ্রিষ্টধর্মের অনুসারীদের গন্তব্যের অন্যতম শেষ পথ ছিল রোম! কারণ, ভ্যাটিকান রোম ছিল খ্রিষ্টানদের মূল উপাসনালয় এবং প্রধান ধর্মগুরু পোপের আবাসস্থল। এখান থেকেই খ্রিষ্টধর্মের যাবতীয় কার্যক্রম নিয়ন্ত্রিত হতো। এ ছাড়া যিশুর জন্মভূমি জেরুজালেম ছিল তাদের পরিভ্রমণের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু। ইউরোপে খ্রিষ্টানদের ক্যাথলিক-প্রোটেস্ট্যান্ট দুই ভাগে বিভাজনের আগ পর্যন্ত ইউরোপে এই ধারা অব্যাহত ছিল। তারা পরিভ্রমণের সময় যাত্রাপথের বিবরণ, ভৌগোলিক অবস্থান এবং যাত্রাপথ নির্দেশ লিখে রাখত। পাশাপাশি মানচিত্র আকারে এঁকে রাখত পরবর্তী তীর্থভ্রমণকারীদের জন্য। তাঁদের এই লিখিত ভৌগোলিক বিবরণ ও অঙ্কিত মানচিত্রই আধুনিক ‘কার্টোগ্রাফি’ বা মানচিত্রবিদ্যার প্রাথমিক মৌল নিদর্শন। ব্রিটিশ লাইব্রেরি ও চার্চে অনেক প্রাচীন মানচিত্র আজও রক্ষিত আছে, যা প্রায় নির্ভুল ছিল। ইউরোপের ‘একলেসিয়েস্টিক্যাল ইতিহাস’ তাই খ্রিষ্টধর্মের বিস্তার এবং চার্চ বা গির্জার ক্রমবিকাশের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।

এক বিকেলে গ্রেট স্ট নদীর তীরে লেখক। প্রাক-আধুনিক যুগ পর্যন্ত ইউরোপ ছাড়াও পৃথিবীর অন্যান্য স্থানে যেখানেই খ্রিষ্টধর্মের বিস্তার লাভ হয়েছিল, সেই সব জায়গা থেকে তীর্থযাত্রীদের চূড়ান্ত গন্তব্য ছিল রোম। এ জন্য মধ্যযুগে একটা কথা খুব প্রচলন ছিল, ‘সকল পথের গন্তব্য হলো রোম’। অর্থাৎ, ক্রিশ্চিয়ান বিশ্বের সব পথের মিলনস্থল হলো রোম। এখনো ক্যাথলিক অংশ রোমে (ভ্যাটিকান সিটি) যাওয়াকে জীবনের পরম আরাধ্য মনে করে। যদিও প্রোটেস্ট্যান্ট অনুসারীরা ‘ক্যান্টাবরি ক্যাথেড্রাল’ পরিদর্শনে আগ্রহী। ইংরেজি সাহিত্যের জনক জিওফ্রে চসারের (১৩৪০-১৪০০) বিখ্যাত ‘দ্য ক্যান্টাবরি টেলস’ (১৩৯২) গ্রন্থে পরিভ্রাজকদের ‘ক্যান্টাবরি ক্যাথেড্রাল’ দর্শনের উদ্দেশ্যে যাত্রারত মানুষের গল্পই বলা হয়েছে। যাই হোক, একটা সময় রোমের প্রভাব ছিল অপরিমেয়। রোমের প্রভাব ক্রিশ্চিয়ান বিশ্বে পরে আর তেমন থাকেনি। ক্যাথলিক ও প্রোটেস্ট্যান্ট বৃহৎ দুই ধারায় বিভক্ত হয়ে যায়। রোমের পোপের সঙ্গে ইংল্যান্ডের রাজাদের দূরত্ব বাড়তে থাকে। রাজা নির্বাচন ও রাষ্ট্রক্ষমতা নিয়ন্ত্রণে ধর্মগুরুদের হস্তক্ষেপ এর অন্যতম কারণ ছিল। অবশেষে ইংল্যান্ডের রাজা অষ্টম হেনরি (১৪৯১-১৫৪৭) রোমের পোপের সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ করে ইংল্যান্ডে অ্যাংলিকান চার্চ বা চার্চ অব ইংল্যান্ড প্রতিষ্ঠা করেন। এর মাধ্যমে খ্রিষ্টধর্মের সংস্কারপন্থী অংশের (প্রোটেস্ট্যান্ট) ধর্মচর্চার পথ মসৃণ হয়। ক্রিস্টোফার মার্লোর ‘ম্যাসাকার অব প্যারিস’ (১৫৯৩) নাটকে ক্যাথলিক-প্রোটেস্ট্যান্ট দুই অনুসারীদের নির্মম রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের ইতিহাস বর্ণনা আছে।

পোপের কাছ থেকে ইংল্যান্ডের রাজা অষ্টম হেনরি ক্ষমতা নিজের হাতে নিয়ে নেন। এত দিন পোপ ছিল একমাত্র ‘ডিভাইন রাইট’প্রাপ্ত। রাজা অষ্টম হেনরি নিজেকে একই সঙ্গে চার্চ ও রাষ্ট্রের প্রধান ‘ডিভাইন রাইট’ প্রাপ্ত বলে ঘোষণা করেন। এই ঘোষণা ছিল ইংল্যান্ডের ইতিহাসে যুগান্তকারী। কারণ, হাজার বছর ধরে চলা পাপাসি বা পোপ বা ধর্মগুরুদের একচ্ছত্র ক্ষমতা এতে খর্ব হয়। রাজা অষ্টম হেনরি ইংল্যান্ডে প্রতিষ্ঠা করেন নতুন চার্চ—প্রধান ধর্মগুরুর নামকরণ হয় ‘আর্চবিশপ’। ইংল্যান্ডের ইতিহাস বদলে দেওয়া মাদার অব অল  অ্যাংলিকান চার্চের অবস্থান ক্যান্টাবরি শহরে, যা ‘ক্যান্টাবরি ক্যাথেড্রাল’ নামে পরিচিত। মজার বিষয় হলো, রাজা অষ্টম হেনরির এ ঘটনার সূত্রপাত তাঁর বিয়ের বৈধতা নিয়ে। তার যুগান্তরকারী সিদ্ধান্তে রাতারাতি ইংল্যান্ডে গড়ে ওঠা হাজার হাজার ক্যাথলিক চার্চ বন্ধ হয়ে যায়। পরে এর প্রভাব (ধর্মীয় সংস্কার) ইংল্যান্ডের সমাজ-সংস্কৃতিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখে। প্রোটেস্টান্টদের পালে হাওয়া লাগে।

পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ ‘পান্টিং’। লগি দিয়ে নৌকা চালাতে চালাতে মাঝি ক্যান্টাবরির ইতিহাস বর্ণনা করেন। রাজা অষ্টম হেনরির সমসাময়িক কালেই (তাঁর জন্মের কিছু আগে ও পরে) খ্রিষ্টধর্মের কিছু মৌল ধারণা নিয়ে ধর্মীয় তাত্ত্বিকদের মধ্যে দার্শনিক আলাপ ও চর্চা শুরু হয়। ষোড়শ শতকে জার্মান অধিবাসী থিওলজিস্ট মার্টিন লুথার (১৪৮৩-১৫৪৬), সুইস থিওলজিয়ান হলড্রিক জিংলি (১৪৮৪-১৫৩১), জন ক্যালভিন (১৫০৯-১৫৬৪) প্রমুখ রোমান ক্যাথলিক চার্চের ধর্মীয় কিছু বিষয়ে ভিন্নমত দেন; যা পরে প্রোটেস্টান্ট ধারার জন্ম দেয়।

ডাচ ক্যাথলিক থিওলজিস্ট ও দার্শনিক ডেসিডেরিয়াস ইরাসমাস (১৪৬৬-১৫৩৬) ও মার্টিন লুথার ছিলেন বন্ধু। তাঁরা ওল্ড টেস্টামেন্টের কিছু বিষয় নিয়ে গভীর ধর্মতাত্ত্বিক আলোচনা করতেন। কিন্তু একসময় তাঁদের মধ্যে মতপার্থক্য তৈরি হয়। মার্টিন লুথারের ধর্মীয় সংস্কারের চিন্তাধারাই পরে ‘প্রোটেস্ট্যান্ট রিফর্মেশন’ নামে পরিচিত হয়। অন্যদিকে ইরাসমাস ল্যাটিন ও গ্রিক ভাষায় ক্রিস্টিয়ান ধর্মের অনেক বিষয় ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করে রিফর্মেশন-কাউন্টার দিতে চেষ্টা করেন। তিনি ক্যাথলিক ধারা বজায় রাখতে আমৃত্যু ব্যাপৃত ছিলেন। রেনেসাঁর সূচনাপর্বে তাঁর অন্যতম অবদান ছিল মানুষের ‘ফ্রিডম অব উইল’ বা ইচ্ছার স্বাধীনতার কথা বলা। এই সময়ে আরেকজন চিন্তাবিদ-দার্শনিক ইংল্যান্ডের সমাজ-সংস্কৃতি পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন; তিনি হলেন থমাস মোর (১৪৭৪-১৫৩৫)। ইংল্যান্ডের রাজতন্ত্র ও পলিটিক্যাল সিস্টেমের পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষায় তিনি রচনা করেছিলেন যুগান্তকারী গ্রন্থ ‘ইউটোপিয়া’ (১৫১৬)। উল্লিখিত এঁরা সবাই ছিলেন ইংল্যান্ডের রেনেসাঁর প্রথম দিকের ব্যক্তিত্ব। মধ্যযুগে ইউরোপে ধর্মতাত্ত্বিক বিতর্কের ভেতর দিয়েই মানবিক মূল্যবোধ ও মানবিকতার উন্মেষের সূচনা হয়, যা মূলত রেনেসাঁর বীজমন্ত্র। পরে অন্যান্য কবি-সাহিত্যিক-দার্শনিক এই অভিযাত্রায় শামিল হন। সময়ের পরিক্রমায় এর মধ্য দিয়ে ইংল্যান্ড প্রবেশ করে প্রাক-আধুনিক যুগে, সেখান থেকে আধুনিক যুগে।

শহরের অভ্যন্তরে সরু খালের আকার নেওয়া গ্রেট স্ট নদী। দুই তীরে ফুটে আছে নানা জাতের নানা রঙের ফুল।এবার বিষয়বস্তুতে ফিরে আস যাক। কথা হচ্ছিল ইংল্যান্ডের প্রথম রাজপথ নির্মাণের ইতিহাস বিষয়ে। আগেই উল্লেখ করা হয়েছে, ইংল্যান্ডের ক্যান্টাবরি শহর গড়ে ওঠে মূলত রোমানদের হাত ধরে। এখানে রোমান মিশনারিরা প্রতিষ্ঠা করে ইংল্যান্ডের তথা ইংলিশ ভাষাভাষীদের প্রাচীন চার্চ ‘সেন্ট মার্টিন চার্চ’ (৫৯৭ সালের পূর্বে)। ধারণা করা যায়, বাংলাদেশের একমাত্র প্রবালদ্বীপের নামকরণ করা হয় ক্যান্টাবরিতে অবস্থিত চার্চের এই ‘সেন্ট মার্টিনের’ নামে। তারা এখানে বেনেডিকটাইন মোনাস্ট্রি স্থাপন করেছিল, যা ৫৯৮ সালে প্রতিষ্ঠার পর ১৫৩৮ সাল (রিফর্মেশনকাল) পর্যন্ত ক্রিয়াশীল ছিল। এ ছাড়া তারা ক্যান্টাবরি শহরকে বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য ২৭০-২৯০ সময়কালে ‘সিটি ওয়াল’ নির্মাণ করেছিল, যা এখনো বহাল তবিয়তে দাঁড়িয়ে আছে। ষষ্ঠ শতকে রোমানরা বাড়ি ফিরে যাওয়ার আগে কেন্টের আশপাশের শহর-বন্দরের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য ও যোগাযোগ ছিল মূলত নৌপথে—স্ট নদীর পথ ধরে। তখনকার রোমান শাসকেরা যোগাযোগের জন্য একটি সড়কপথেরও প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে।

এ জন্য তারা গ্রেট স্ট নদীর তীর ধরে লন্ডনের সঙ্গে ক্যান্টাবরি শহরের সড়কপথে যোগাযোগের জন্য চুন-সুরকি দিয়ে রোমান ওয়াটলিং স্ট্রিট নির্মাণ করে। আধুনিক যুগের বিশাল রাজপথের সঙ্গে এটিকে তুলনা করলে ভুল হবে। এই রাজপথ দিয়ে মূলত দুটি গরুর গাড়ি পাশ কাটিয়ে চলার মতো প্রশস্ত। প্রায় ২ হাজার বছরের পুরোনো সেই রাজপথ এখনো টিকে আছে, যদিও বর্তমানে এটি পিচঢালাই করে ঢেকে রাখা হয়েছে। ইংল্যান্ডে এর আগে কোনো রাজপথের ধারণাই ছিল না। মজার তথ্য হলো, এই ‘রোমান ওয়াটলিং স্ট্রিট’ বা রাজপথের একদিকের অভিমুখ যেমন ছিল লন্ডনের দিকে, অপরটি ছিল পরিভ্রাজক-তীর্থযাত্রীদের শেষ গন্তব্য পথ রোমের দিকে।

প্রাচীন এই পথের একদিকে এগোলে রোম, অপরদিকে হাঁটলে লন্ডন—বিস্ময়কর এক অনুভূতি জাগ্রত হয়। মনে হচ্ছিল, হাজার বছরের পুরোনো সেই মহাসড়কে দাঁড়িয়ে মুহূর্তে ইতিহাসের অলিগলিতে হারিয়ে যেতে বসেছি।

(চলবে)

আরও পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

তৌহিদুল হকের গুচ্ছ কবিতা

তৌহিদুল হক
তৌহিদুল হকের গুচ্ছ কবিতা

রক্ত লাল

আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে

গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায়

ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের

জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।

যা স্বভাববিদ্ধ, তবে কতটা উপকারী বা বাঁচিয়ে

রাখার নিরলস অভিপ্রায়। মানুষের তরে

প্রাণীর অফুরন্ত প্রাচুর্য বিস্তৃতকরণে, কিংবা

উদ্ভিদের অন্তিম প্রেমে বসন্তের অভিষেকে।

কতটা জ্বলতে হয় পরের জন্য, কতটা ফুটন্ত

শরীর নিয়ে চালিয়ে যায় সেবার পরিধি।

এক চিরন্তন শিক্ষা, আবার উদিত হয়

দিনের শুরুতে, বিদায় প্রান্তিক অপূর্ব

মায়ায়-দিনের শেষ প্রান্তে।

এতটুকু কার্পণ্য রেখে যায়নি, হয়তো মুখ

ফিরিয়ে নিবে না কোনো দিন। তবে ভাবনার

অন্তিমে শেষ দৃশ্যের সংলাপে ভেসে

ওঠে জনদরদি রাজার মুখ। যেখানে রক্ত ঝরে

বন্যার বেগে সেখানেও প্রতিদিন ফুল ফোটে ফুল হয়ে।

যত দেখি

যত দেখি তৃপ্ত হই, শীতল হয়ে

জড়িয়ে পড়ি তোমার সমস্ত শরীরে। এক অজানা

শিহরণ ছুঁয়ে যায় হৃদয়ের সমস্ত পৃষ্ঠা জুড়ে।

যেন দীর্ঘদিনের শুষ্কতা ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে দূরে।

হারিয়ে যাওয়া রস ফিরছে মূলে, নিয়ে যাচ্ছে আদিপর্বে।

যেমন নেয় নদীর কূল, জোয়ারের ফেনা।

ভাবনার অতলে অদ্ভুত মায়া, দীর্ঘক্ষণ মোহগ্রস্ত

করে রাখে চোখের পলক, তাকিয়ে থাকি মায়ার মায়ায়। কী অপরূপ মায়া!

সেখানেও দেখি তৃষ্ণার ব্যাকুলতা নিয়ে অপেক্ষারত কান্না।

জীবনের তল্লাটে হারিয়ে খুঁজি আজ

আমারও জীবন ছিল। মায়ায় ভরা নির্বিঘ্ন আয়োজন, কলমিলতার মতো নিষ্পাপ।

তৃপ্ত হই ঘাসে, বাতাসের বেহায়া আঘাতে

অভিমানের মোড়ক ছুড়ে ফেলে হাতে তুলে নেই

কচু পাতায় টলোমলো জলের লজ্জা। এ জীবনের চাহিদা তোমায় দেখার

প্রয়োজনে তপ্ত, হয় উত্তপ্ত অথবা সহ্যের অতীত শীতল।

এ যেন কেমন

গহিন অরণ্যে সবুজ পাতার মতো, মগজে

চিন্তার রাজ্যে ভাবের উদয়, আকুল বিন্যাসে

একটু একটু করে এগিয়ে নেয়, আবার ভরা কলসির

মতো বসিয়ে রাখে-ভবের রাজ্যে। একদিন সমস্ত ভাবনা থেকে মুক্ত হয়ে

এদিক-ওদিক চলন, জীবন্ত মরণ! মানুষ

কেন বাঁচে, কীভাবে বাঁচে-প্রশ্নের সমাধা

আজ তর্কপ্রিয় সন্ধানে, মূর্ত প্রার্থনা।

সকল প্রিয়জন পরিত্যাগে, নিগূঢ় যত্নে হৃদয়ে প্রবেশ করে

নিজের অপরিচিত চেহারা, সব জিজ্ঞাসার

অন্ত-ক্রিয়ার এক উচ্চতম বিলাস।

জীবনের মানে অর্থশুন্য ভবিতব্য! এ কী হয়?

চোখের পলকে নিষ্পাপ দৃশ্যলোক-পেছন ডাকে বারবার

যেখানে থাকে আবার দেখার ইচ্ছা, নামে যে মুক্তকরণ। মিলনকান্তির আবাস।

চতুর্মুখ সমীকরণে খেলে যায় সময়ের ঝাঁজালো সিদ্ধান্ত। কেউ কী অপ্রিয় হয় কারও?

যেখানে ভেসে ওঠে নীলপদ্ম, অতীতের নিটোল কিতাব। সে-তো মানুষের ছবি!

চলে আসুন সবজি বাজারে

মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে দেখেছি অনেক কিছু

যা মানুষের নয়। অ-মানুষের জন্ম-উত্তর বাঁচার

উপায় হতে পারে। পোশাকে সজ্জিত দেহ কতভাবে

হিংস্র হয়, গোপনে, অন্ধের গহনে।

প্রবেশের আগেই পেয়েছি সংকেত। কত নোংরা, পচা, আবর্জনায় ভরা একটি থালার মতো

পড়ে আছে সম্মুখে। কেউ কি দেখেছে?

হয়তো মেনে নিয়েছে সবাই, সবার আগে সে

যে ভেবেছে, কী বা আছে উপায়!

চারপাশে কত কিছুর ঘ্রাণ, চোখ যা বলে তা কি মেনে নেয় স্বাস্থ্যবার্তা

ফুটে আছে ফুলের মতো দোকানের পসরা। খেতে বা কেনায় বারণ বালাই নেই।

যা পাচ্ছে নিচ্ছে, অনেকে। কেউ গায়ে কেউ পেটে।

আহা! দেখার কেউ নেই!

এক অন্ধকারে হাঁটছে আমাদের পা।

কেউ কি আছে কোথাও, আলো নিয়ে হাতে? ভেবেছে কি কেউ

কেন আমাদের আয়োজনে সবাই নেই?

কেউ এসে শুধু একবার বলুক, এই নিন-আপনাদের জীবন টিকিট যা উত্তরণ।

চলে আসুন সবজির বাজারে, সবুজের খোঁজে।

ইতিহাস

আজ স্পষ্ট ঘোষণা, আমার চোখের সামনে কেউ নেই

নেই কেউ ভাবের অন্তিম ঘরে। এক অস্পৃশ্য অনুভব

ছুঁয়ে চলে, ভাসিয়ে দেয় অগণিত স্রোতের তুমুল আলিঙ্গনে।

আজ কিছু ভেবে বলছি না, সরাসরি জবাব---

আমি নই কারও!

সব বাতাসের সাথে মিশে থাকা চোখের প্রেম

ভাবনার বিলাসে জড়িয়ে পড়ার বাসনা----সকলের অগোচরে

অথবা সকলের মাঝে। জীবনের অর্থে হৃদয়ের গুড়গুড় আলাপ

ঘুটঘুটে অন্ধকারে হৃদয়ে খোলা আকাশ, শুধু

এক মুখচ্ছবি।

আজ কোনো ক্ষমা নেই---নিজের প্রতি! নিজের পাপে

হাঁটি আমি, সবার মাঝে একলা হয়ে। বেদনার

কালো রং নিয়ে। শুধু দেখে যাই, শুধু দেখতে যাই।

কত রং বিরাজ করে ভাবনার গরমিলে, স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রই।

দাঁড়িয়ে থেকেও হেঁটে যাই!

আজকের না বলা কথা, কোনো দিন বলা হবে না

হবে না দাঁড়িয়ে আবার ভাবা আর একটু বসলে

ভালো হতো। যে বসিয়ে রাখে যে আশায় বসে থাকে

সবকিছুর-ই সময় থাকে---

এরপর---ইতিহাস!

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জন্মদিনের শ্রদ্ধাঞ্জলি

বিদায় নেওয়া হুমায়ূন এখনো আছেন

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৩ নভেম্বর ২০২৫, ০৮: ৪২
হুমায়ূন আহমেদ
হুমায়ূন আহমেদ

হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’ জবাবে ফারুক বললেন, ‘কী আশ্চর্য ভাই?’ হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘এই যে প্রকৃতি, জোছনা, বৃষ্টি, নদী— কী সুন্দর! একদিন হয়তো আমি এসব আর দেখতে পারব না। একুশের বইমেলা হবে। লোকেদের ভিড়, আড্ডা; আমি সেখানে থাকব না। এটা কি মেনে নেওয়া যায়! হায় রে জীবন!’

‘আমার না বলা কথা’ বইয়ে ফারুক আহমেদ এই স্মৃতিচারণ করেছেন। লিখেছেন, ‘আমি কিছু না বলে মূর্তির মতো বসে রইলাম। একসময় তাকিয়ে দেখলাম, হুমায়ূন ভাইয়ের দুচোখের কোনায় পানি।’

হুমায়ূন আহমেদ নেই। তবে তিনি রয়েছেন দেশের তরুণদের মনে। যে বইমেলায় তিনি থাকবেন না বলে আক্ষেপ, সেই বইমেলায় তাঁর বইয়ের স্টলে তরুণদের ঢলের মধ্যে আছেন।

নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে হুমায়ূন আহমেদের জন্ম এই দিনে (১৩ নভেম্বর); ভারত ভাগের এক বছর পরে ১৯৪৮ সালে। ছোট সময়ে তাঁর নাম ছিল শামসুর রহমান। তাঁর বাবা ছেলেমেয়েদের নাম পাল্টে ফেলতেন। তাঁর নাম পাল্টে রাখেন হুমায়ূন আহমেদ। হিমু, মিসির আলি, শুভ্রর মতো চরিত্রের স্রষ্টা তিনি। শুধু কথাসাহিত্যেই নয়; ‘বহুব্রীহি’, ‘অয়োময়’, ‘কোথাও কেউ নেই’,

‘আজ রবিবার’-এর মতো নাটক বানিয়েছেন, তৈরি করেছেন ‘আগুনের পরশমণি’, ‘শ্যামল ছায়া’র মতো চলচ্চিত্র।

হুমায়ূন আহমেদ বৃষ্টি, জোছনা ভালোবাসতেন। তাঁর লেখায় সেসব উঠে এসেছে বারবার। ২০১২ সালের জুলাইয়ে বর্ষাতেই তিনি পাড়ি জমিয়েছিলেন ওপারে।

তিনি নেই। কিন্তু তাঁর লেখায় উঠে আসা চান্নিপসর, বৃষ্টি বিলাস আজও আছে তরুণদের মনে। ফারুক আহমেদ তাঁর ওই বইয়ে হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে আরেকটি স্মৃতিচারণ করেছিলেন এভাবে—‘এক বিকেলে শুটিং শেষে তাঁর প্রিয় লিচুগাছের দিকে তাকিয়ে আছেন হুমায়ূন। সেখানে ঝুলছে পাকা লিচু। তিনি তাঁর কেয়ারটেকার মুশাররফকে ডেকে গ্রামের ছোট ছেলেমেয়েদের ডেকে নিয়ে এলেন। তাদের বললেন, গাছে উঠে যে যত পারে লিচু খেতে। বাচ্চারা কেউ গাছে উঠে লিচু খাচ্ছে, হইচই করছে। কেউ পকেটে ভরছে। হুমায়ূন আহমেদ অবাক হয়ে সেই লিচু খাওয়া দেখতে লাগলেন।’

ফারুক আহমেদ লিখেছেন, ‘হুমায়ূন ভাই একসময় আমাকে বললেন, এমন সুন্দর দৃশ্য তুমি কখনো দেখেছো? এমন ভালো লাগার অনুভূতি কি অন্য কোনোভাবে পাওয়া যায়? আমি কী বলব বুঝতে পারছিলাম না। হঠাৎ বললাম, না ভাই এমন ভালো লাগার অনুভূতি কোনোভাবেই পাওয়া যায় না।’

হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন ঘিরে রাজধানীসহ জন্মস্থান নেত্রকোনাতে রয়েছে নানা আয়োজন। নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার রোয়াইলবাড়ি ইউনিয়নের কুতুবপুরে হুমায়ূন আহমেদ প্রতিষ্ঠিত শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ এবং এলাকাবাসীর উদ্যোগে এসব কর্মসূচি পালন করা হবে। সকালে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কোরআন খতম করবেন। এরপর শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ প্রাঙ্গণ থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, এলাকাবাসী এবং হুমায়ূনভক্তদের আনন্দ শোভাযাত্রা বের হবে। পরে লেখকের প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ, জন্মদিনের কেক কাটা, বৃক্ষরোপণ, কুইজ, হুমায়ূন আহমেদের রচিত নাটক ও সিনেমার অংশবিশেষ নিয়ে অভিনয়, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, পুরস্কার বিতরণ এবং আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া রাজধানীতে হুমায়ূন আহমেদের চলচ্চিত্র নিয়ে চলচ্চিত্র সপ্তাহ, হুমায়ূন প্রতিযোগিতা, হুমায়ূন জন্মোৎসব, টেলিভিশন চ্যানেলে নাটক ও অনুষ্ঠান প্রচারসহ নানা আয়োজনে মুখর থাকছে দিনটি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

‘হীরক রাজার দেশে’ মঞ্চস্থ করল স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
গতকাল শুক্রবার প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
গতকাল শুক্রবার প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।

মঞ্চনাট্যটি স্কলাস্টিকার প্রতিষ্ঠাতা ইয়াসমিন মুরশেদকে উৎসর্গ করা হয়।

গতকাল শুক্রবার প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
গতকাল শুক্রবার প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

স্কুলের এসটিএম মিলনায়তন প্রতিষ্ঠার রজতজয়ন্তী উদ্‌যাপনকে সামনে রেখে আয়োজিত এ নাট্যানুষ্ঠানের সমাপনী দিনে বিশেষ অতিথি ছিলেন নাট্যব্যক্তিত্ব আবুল হায়াত, দিলারা জামান ও আফজাল হোসেন। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার অধ্যক্ষ ফারাহ্ সোফিয়া আহমেদ।

হীরক রাজার দেশে নাটকটির নির্দেশনায় ছিলেন কাজী তৌফিকুল ইসলাম ইমন। প্রোডাকশন ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেন শৈলী পারমিতা নীলপদ্ম। সংগীত পরিচালনা করেন গাজী মুন্নোফ, ইলিয়াস খান ও পলাশ নাথ লোচন। নৃত্য পরিচালনায় ছিলেন শাম্মী ইয়াসমিন ঝিনুক ও ফরহাদ আহমেদ শামিম।

নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন নাজিফা ওয়াযিহা আহমেদ, আরিয়াদ রহমান, আজিয়াদ রহমান, বাজনীন রহমান, মোহম্মদ সফির চৌধুরী, ফাহিম আহম্মেদ, সৈয়দ কাফশাত তাইয়ুশ হামদ ও তাজরীবা নওফাত প্রমুখ।

শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকেরা অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের পরিবেশিত অভিনয়, গান ও নাচ উপভোগ করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

গবেষণায় বেরিয়ে এল আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’র গল্প

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল। কিন্তু ভাষাবিদ ও সাহিত্য ইতিহাসবিদদের মতে, এই ধারণা আসলে পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি এক ‘ঔপনিবেশিক কল্পনা’ মাত্র। বাস্তবে আরবি সাহিত্য কখনোই থেমে যায়নি।

প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফাদের অধীনে বিজ্ঞান, দর্শন ও কবিতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বাগদাদ। আবু নুয়াস, আল-মুতানাব্বি, আল-ফারাবি ও ইবনে সিনার মতো কবি ও দার্শনিকদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এক স্বর্ণযুগ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় গবেষকেরা—যেমন ফরাসি চিন্তাবিদ আর্নেস্ট রেনাঁ ও ডাচ ইতিহাসবিদ রেইনহার্ট দোজি সেই আমলটিকেই আরবি বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের শিখর বলে স্বীকার করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, একাদশ শতাব্দীর পর এই ধারাবাহিকতার পতন ঘটে। তাঁদের মতে, এরপর প্রায় ৮০০ বছর আরবে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক বা দার্শনিক কাজ হয়নি—যতক্ষণ না ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু হয়।

কিন্তু আধুনিক গবেষকেরা বলছেন, এই ধারণা সরলীকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট। ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় শেখ জায়েদ বুক অ্যাওয়ার্ডের আয়োজিত এক আলোচনায় ভাষাবিদেরা দাবি করেছেন, আরবি রচনা শৈলী কখনো বিলুপ্ত হয়নি; বরং তা ধারাবাহিকভাবে কপি, অনুবাদ ও পাঠের মাধ্যমে বেঁচে ছিল।

জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলার তাঁর ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, আরবি সাহিত্যে ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে যে ধারণাটি প্রচলিত আছে তা আসলে গাল-গল্প। এই বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। গ্রুন্ডলার এতে দেখিয়েছেন, নবম শতাব্দীর বাগদাদে বইয়ের ব্যবসা, কপিকারদের প্রতিযোগিতা, জনসম্মুখে পাঠ ও লেখার প্রচলন—সবই ছিল আধুনিক প্রকাশনা সংস্কৃতির পূর্বসূরি। তিনি মত দিয়েছেন, ‘বাগদাদের রাস্তায় হাঁটলে আপনি দেখতেন লোকেরা হস্তলিপি বিক্রি করছে, বিরামচিহ্ন নিয়ে তর্ক করছে—এ যেন এক জীবন্ত প্রকাশনা বাজার।’

গবেষণা বলছে, আরবি সাহিত্য আসলে কখনো এক জায়গায় স্থির থাকেনি। এর কেন্দ্র এক সময় বাগদাদ থেকে কায়রো, দামেস্ক ও আন্দালুসিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু ধারাটি অব্যাহতই থাকে। নতুন ঘরানা তৈরি হয়, পুরোনো ঘরানা রূপান্তরিত হয়।

ফরাসি অধ্যাপক হাকান ওজকান তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ‘জাজাল’ নামের কথ্য ছন্দভিত্তিক কবিতার ধারা আব্বাসীয় যুগের পরও বিকশিত হতে থাকে। তাঁর মতে, ‘এই কবিরা নিয়ম ভেঙে নতুন রূপ দিয়েছে—তাঁদের ছন্দ ও ব্যঙ্গ আধুনিক র্যাপের মতো প্রাণবন্ত।’

জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলারের ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। ছবি: দ্য ন্যাশনাল
জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলারের ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। ছবি: দ্য ন্যাশনাল

এদিকে এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (২০ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, আবুধাবির নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘আরবি সাহিত্য লাইব্রেরি’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ‘হারানো শতাব্দী’ বলে বিবেচিত সময়ের ৬০ টিরও বেশি আরবি সাহিত্যকর্ম পুনরুদ্ধার করেছে। প্রকল্পটির সম্পাদক অধ্যাপক মরিস পোমেরান্টজ বলেছেন, ‘এই বইগুলো সম্পাদনা করা মানে এক চলমান সংলাপে অংশ নেওয়া—যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেখক, অনুবাদক ও সমালোচকেরা একে অপরকে উত্তর দিয়ে গেছেন।’

মরিস মনে করেন, আরবি সাহিত্য স্থবির হয়ে যাওয়ার ধারণাটি মূলত অনুবাদের অভাব থেকেই জন্ম নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো লেখা অনুবাদ করা হয় না, তখন সেটি বৈশ্বিক অস্তিত্ব হারায়।’

মরিসের মতে, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সাহিত্যকে আবার জনসাধারণের কল্পনায় ফিরিয়ে আনা—স্কুলে পড়ানো, মঞ্চে উপস্থাপন করা, অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। তা না হলে আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে চিহ্নিত সময়টি অধরাই থেকে যাবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত