Ajker Patrika

অন্তর্জালের বন্দী

কামরুল হাসান
আপডেট : ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২২, ২১: ৪৫
অন্তর্জালের বন্দী

নতুন ফোন কিনে ঘরে আনার পর চোখ থেকে ঘুম উবে গেছে হাফিজুলের। গ্যালাক্সি এম০২ মডেলের স্মার্টফোন। কেনার পর কিছুদিন গেছে সামনের আর পেছনের প্রটেক্টর পছন্দ করতে। রং পছন্দ হয় তো দামে মেলে না। যেটার দাম কম, সেটা আবার পছন্দ হয় না। শেষমেশ মোতালিব প্লাজা থেকে লাল রঙের চায়নিজ প্রটেক্টর কিনে ফোনে লাগিয়েছে। ঘরে ফিরে একটু পরপর ফোনটা হাতে নিয়ে নাড়াচাড়া করছে, এটা-সেটা দেখছে, আবার রেখে দিচ্ছে। এখন ফোনটার দিকে তাকিয়ে থাকতে বেশ আরাম লাগছে হাফিজুলের।

মোবাইল ফোন নিয়ে এই মাতামাতির ব্যাপারটা হাফিজুল নিজেও ভেতরে-ভেতরে টের পাচ্ছে। মনে হচ্ছে, কোনো একটা নেশায় পড়েছে সে। হাতে আর মাত্র দুই দিন সময়, তারপরই মালিক আসবেন বিদেশ থেকে। তখন সকাল-রাত টানা ডিউটি করতে হবে। নাওয়া-খাওয়ার উপায় থাকবে না। গাড়ি চালানোর চাকরি যে কতটা কঠিন, হাফিজুল সেটা হাড়ে হাড়ে জানে। কিন্তু এ ছাড়া যে তার আর কোনো পথ নেই। তবে মালিক খুব ভালো। করোনার দেড় বছরে তিনি বসে বসে ড্রাইভারের বেতন দিয়ে গেছেন। সেই টাকার কিছু অংশ গ্রামের নতুন বউ ও মায়ের জন্য পাঠিয়েছিল হাফিজুল। সে সময় মালিক বেতন না দিলে কী দুর্দশাই না হতো! হাফিজুলের মনে পড়ে, করোনার সময় গরিব আর বড়লোকের ফারাকটা তার কাছে কী রকম উলঙ্গ হয়ে পড়েছিল। যার আছে তার অনেক আছে, যার নেই তার কিছুই নেই।

হাফিজুলের অনেক দিনের শখ একটা স্মার্টফোন কেনার। ইস্কাটনের কারিগর অ্যাপার্টমেন্টের সব ড্রাইভারের হাতে টাচফোন। শুধু হাফিজুলের হাতে নকিয়ার পুরোনো বোতাম লাগানো বেসিক ফোন। এই কমপ্লেক্সের ড্রাইভার মালেক এ নিয়ে খুব হাসাহাসি করে। লোকজনের সামনে ঠাট্টা করে বলে, ‘এই মাল তো জাদুঘরে ছিল, পাইলে ক্যামনে…।’ মালেকের বস কাস্টমস অফিসার আলহাজ হায়দার আলী নতুন মডেলের আইফোন ১০ কেনার পর তাঁর নিজের ব্যবহার করা পুরোনো ফোনটি ড্রাইভারকে দিয়েছেন। মালেকের তা নিয়ে গর্বের শেষ নেই। এসব শুনে হাফিজুলের মন খারাপ হয়। কিন্তু হাতে কোনো বাড়তি টাকা নেই। শেষ পর্যন্ত ঈদ বোনাসের সঙ্গে তুলে রাখা কিছু টাকা যোগ করে স্যামসাংয়ের এই সেটটা কিনেছে। ফোন নিয়ে মনের ভেতরে এত যে গোপন ব্যথা ছিল তা আগে বুঝতেই পারেনি হাফিজুল।

অ্যাপার্টমেন্টের শতাধিক ড্রাইভারের মধ্যে নজুকে সবাই ওস্তাদ মানে। ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, ইনস্টাগ্রাম, ইমোর মতো অ্যাপের সবকিছু তার হাতের তালুতে। কারও ফোনে কোনো ঝামেলা হলেই নজুর ডাক পড়ে। নজু বিজ্ঞের মতো সমাধান করে দেয়, বিনিময়ে চা-বিড়ি। নতুন ফোন কেনার পর হাফিজুলও নজুর কাছে গিয়েছিল। নজু একটা ফেসবুক আইডি খুলে দিয়েছে। বলেছে, ‘আগে ফেসবুকটা ভালো কইরা শিখ্যা ল।’ সেই থেকে ফেসবুকই হাফিজুলের ধ্যান-জ্ঞান।

ফেসবুক আইডি খোলার সময় নজু প্রোফাইল পিকচার হিসেবে হাফিজুলের একটি ছবি সেঁটে দিয়েছে। তাতে তোবড়ানো গাল, খোঁচা খোঁচা দাড়ি দেখা যাচ্ছে। ছবি তোলার সময় আশপাশের ড্রাইভাররা বারণ করেছিল। বলেছিল, ‘গলির সেলুনে গিয়ে আগে শেভ কর, তারপর ছবি তুলিস।’ হাফিজুলের এখন খুব আফসোস হচ্ছে। গলির মুখের লাভলি হেয়ার ড্রেসারের নরসুন্দর রতনও সে কথা বলেছিল। রতনের কথা তখন শোনেনি হাফিজুল। এখন নিজেকে বেশ বোকা বোকা মনে হচ্ছে। তার ধারণা, এই ছবির কারণেই কেউ তাকে মেসেঞ্জারে নক করছে না। অথচ তার চেয়েও ভাঙা চেহারার অনেক ড্রাইভার প্রতিদিন নতুন নতুন চ্যাট করে। একজন তো ভিডিও চ্যাটও করে।

ড্রাইভাররা একে বলে মুরগি ধরা। রতন ড্রাইভার একদিন রেস্টরুমে বলেছিল, ভালো মুরগিগুলো রাতের বেলা সহজে ধরা দেয়। এরা হলো বড়লোকদের বউ-মেয়ে। রাতে বড়লোকেরা মদ গিলে বিছানায় মড়ার মতো পড়ে থাকে আর তাদের বউয়েরা অন্য লোকের সঙ্গে ফেসবুক-মেসেঞ্জারে চ্যাট করে। সেই চ্যাটের কথা মনে করলে ভেতরে কেমন যেন শিহরণ জাগে হাফিজুলের। তার মনে হয়, পৃথিবীটা যে এত সুন্দর, ফেসবুকে না এলে সেটা বুঝতেই পারত না।

গত দুই রাতে না ঘুমিয়ে মুরগি ধরার অনেক চেষ্টা করেছে হাফিজুল; কিন্তু কেউ তার ডাকে সাড়া দেয়নি। আজ রাতেও সে এভাবেই চেষ্টা করে যাবে, যদি কেউ আসে। সন্ধ্যা থেকে ক্রমাগত ফোন হাতিয়ে যাচ্ছে হাফিজুল। এতে কোনো ক্লান্তি নেই। এর মধ্যে হঠাৎ টপ করে একটি শব্দ হলো। হাফিজুল তার ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে দেখে, একটা কমেন্ট এসেছে। ‘সুনয়না’ নামের একজন লিখেছে, ‘দেখতে একদম শাকিব খান’। হাফিজুলের বুকটা ধপাস করে ওঠে।

সুনয়নার প্রোফাইল পিকচারে হাত ছোঁয়ায় হাফিজুল। এখানে কোনো মানুষ নেই, শুধু ফুলের ছবি। সুনয়না কেন নিজের ছবি না দিয়ে ফুলের ছবি দিল? হাফিজুলের খুব রাগ হয়। এই ফুলের ভেতর থেকে কীভাবে সে সুনয়নাকে বের করে আনবে?

ফুলের ছবি দেখতে দেখতে হাফিজুলের ছোটবেলার কথা মনে পড়ে যায়। সকালে গ্রামের পথ ধরে হেঁটে স্কুলে যাওয়ার সময় তার বয়সী একটি মেয়ে রোজ ফুল তুলে আনত। ডালা ভরে জুঁই, বেলি আর জবা। মেয়েটির চলে যাওয়ার সময় তার পথের দিকে তাকিয়ে থাকত হাফিজুল। খুব ইচ্ছে করত তাকে নিজের সাইকেলের রডে তুলে এগিয়ে দেওয়ার। তারপর কোথাও একটু নিরিবিলি পেলে মেয়েটির কানের ডগায় আলতো করে কামড়ে দেবে। অলৌকিক উচ্চারণে সে বলে উঠবে, ধ্যাত। সাইকেল ছুটে যাবে কাশবনের ছায়াঘেরা নিরুদ্দেশের দিকে।

হাফিজুলের জীবনে এসবের কিছুই হয়নি। ছোটবেলায় তার প্রায় সব বন্ধু সাইকেলে করে স্কুলে গেলেও তাকে যেতে হতো পদাতিক সৈনিকের মতো, হেঁটে। তারপর একদিন অকালে বাপটাও মরে গেল। স্কুলে যাওয়া বন্ধ। বড় হয়ে সে এখন হাউজ ড্রাইভার। ফুলের সাজি হাতে বাড়িফেরা মেয়েটিকে সে আর কোনো দিনই ছুঁতে পারবে না।

আজ কোনো ডিউটি নেই হাফিজুলের। তবু সকাল সকাল মেস থেকে বেরিয়ে অ্যাপার্টমেন্টের নিচে এসেছে নজুকে ধরতে। অ্যাপার্টমেন্টের ট্যাক্সিওয়েতে স্টার্ট করা গাড়িতে বসে আছে নজু। তার হাতে সময় নেই। নজুর বস একটু পরই বের হবেন। কিন্তু হাফিজুল নাছোড়। তার ফোনটা দেখতেই হবে। নজু ফোনটা হাতে নিয়ে বলে, তোর সমস্যাডা কী? হাফিজুল বলে, ফেসবুকের এই সুনয়নাটা কে, খুঁজে দাও। নজু খানিকক্ষণ মোবাইল ঘাঁটে। কিছু পায় না। বলে, এই মুরগির তো কোনো কিছু পাই না মামা। প্রভাতি বিদ্যালয়ে পড়েছে, এটুকুই শুধু লেখা আছে। হাফিজুল তার পরও সুনয়নার সবকিছু জানতে চায়। নজু বিরক্ত হয়ে বলে, তুই এক কাজ কর, মোড়ের হাবিব ফার্মেসির রাহাতের কাছে যা। ওর কাছে ১৫-২০টা সিম আছে। সে সারা দিন মোবাইলের দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসে। সব মুরগি তার হাতের তালুতে থাকে।

হাফিজুল কারিগর কমপ্লেক্স থেকে বেরিয়ে ওষুধের দোকানে গিয়ে দেখে, রাহাত তখনো আসেনি। অন্য একজন কর্মচারী কেবল ঝাঁপ খুলে ঝাড়মোছ করছে। আধা ঘণ্টা পরে রাহাত আসে। হাফিজুলকে দেখেই রাহাত বলে ওঠে, ‘কী রে ড্রাইভার, তুই নাকি নতুন ফোন কিন্‌ছস?’ ‘হ, এই দ্যাখো’, বলেই ফোনটা রাহাতের হাতে দেয় হাফিজুল। তার কাছে জানতে চায়, ‘তুই কি সুনয়নাকে চিনস?’ রাহাত ফোনের ফেসবুক খুলে হাফিজুলের প্রোফাইল পিকচারের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলে, ‘মামা, ছবিতে তো তোমাকে শাহরুখ খানের মতো লাগছে।’ হাফিজুল চমকে ওঠে। বলে কী? শাহরুখ খান! রাহাতের হাত থেকে ফোনটা নিয়ে নিজের ছবি নিজেই দেখে। একবার, বারবার। তোবড়ানো গাল। খোঁচা খোঁচা দাড়ি। নিজেকে বেশ গ্ল্যামারাস লাগছে। সুনয়না তো ভুল বলেনি।

রাহাতের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে একটা বিড়ি ধরাল হাফিজুল। তারা মাথা কাজ করছে না। বিড়িতে কয়েকটা সুখটান দিয়েই সে সোজা হাঁটা দিল গলির আবুলের দোকানের দিকে। ইস্কাটন মসজিদের মুখে মুরাদের সঙ্গে দেখা। সবজি বিক্রেতা মুরাদ হাফিজুলকে দেখে একটা হাঁক দিয়ে বলে, ‘ড্রাইভার সাব, যাও কই?’ হাফিজুল দুবার বলে ‘সুনয়না, সুনয়না।’ মুরাদ কিছু না বুঝে বলে ওঠে, ‘কি রে, মাথাডা গেল নাকি! কী কস?’

হাফিজুলের ফোনে আবার টুস শব্দ। নতুন মেসেজ এসেছে। ফোনে হাত ছোঁয়াতেই একটা কমেন্ট ভেসে ওঠে, ‘চুম্মা’। লিখেছে ‘আলো তুমি আলেয়া’। হাফিজুল সঙ্গে সঙ্গে আলো তুমি আলেয়ার ছবিতে হাত ছোঁয়ায়। একটা পান্ডার ছবি ভেসে ওঠে। কিন্তু হাফিজুল দমে যায় না। এত সহজে দমবার পাত্র সে নয়।

ইস্কাটন মসজিদ মার্কেটের নিচতলায় নতুন একটি ফোনের দোকান। সস্তা ধরনের ফোনই বেশি। সেই দোকানের কর্মচারী বাবুল ফোনের সবকিছু জানে। সানমার অ্যাপার্টমেন্টের ড্রাইভার মইদুল সে কথা একদিন হাফিজুলকে বলেছিল। হাফিজুল যায় মইদুলের কাছে। সকালের দিকে দোকানে কোনো খদ্দের নেই। মইদুল দোকানে বসে আছে একা। কাছে গিয়ে ফোনটা দিয়ে জানতে চায়—‘মামা, দেখো তো, এই সুনয়নাটা কে? তাকে খুঁজে বের করে দাও।’ মইদুল তার মুখের দিকে তাকিয়ে হেসে ফেলে। বলে, ‘আরে বোকাচোদা, তুই রূপসী নুরজাহান, নিতুমনি, বিবি রাহেলা, সুন্দরী আয়েশা—এসব আইডি চিনস?’ হাফিজুল হাঁ করে তাকিয়ে থাকে। মইদুলের দোকান থেকে বেরিয়ে পথে নামতেই আবার সুনয়নার কমেন্ট, ‘ঘুম কেড়ে নিয়েছ আমার।’ হাফিজুল কী করবে বুঝতে পারছে না। কারিগর অ্যাপার্টমেন্টের নিচতলায় ড্রাইভারদের বিশ্রামের যে ঘর আছে, সেখানে গিয়ে মাথায় হাত দিয়ে বসে থাকে।

এই দুই দিনে কমপ্লেক্সটির সব ড্রাইভারের মুখে মুখে রটে গেছে, মুরগি ধরতে গিয়ে হাফিজুল পাগল হয়ে গেছে। সবাই তাকে এ নিয়ে ঠাট্টা-রসিকতা করছে। ড্রাইভারদের মধ্যে ফজল আলী আজেবাজে কথাও বলেছে। আজ সামনে পেয়ে বলে, ‘কি রে মামা, তুই নাকি মুরগি ধরতে গিয়া পাগল হইয়া গেছস! তা গেরামে যে বিয়াটা করছস, তার কী হইব?’ ফজলের কথা হাফিজুলের কানে ঢোকে না। কিছু না বলে সে বেরিয়ে যায়।

গাড়ির মালিকের স্ত্রী আজ তাকে একগাদা কাপড় ধরিয়ে দিয়েছে। সেগুলো এখনই কবিতা লন্ড্রিতে দিয়ে আসতে হবে। কাপড় হাতে নিয়ে গলিতে লন্ড্রির দিকে যেতে থাকে হাফিজুল। লন্ড্রির মালিক রঞ্জিত রায় খুবই ব্যস্ত। তার সামনে কাপড়ের স্তূপ। পাশের বাড়িতে নতুন এক ভাড়াটে এসেছে। তাদের জানালার সব পর্দা এসেছে। বিকেলের মধ্যে সেগুলো ডেলিভারি দিতে হবে। রঞ্জিত পর্দাগুলো ইস্ত্রি করছে মনোযোগ দিয়ে। হাফিজুল দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে আছে, কিন্তু রঞ্জিতের চোখ গরম ইস্ত্রির দিকে। এ সময় কুরিয়ারের পার্সেল হাতে এক তরুণ এসে জানতে চায়, ‘এখানে সুনয়না রায় নামে কেউ আছেন? তার নামে পার্সেল আছে।’ রঞ্জিত কুরিয়ারের ছেলের দিকে তাকিয়ে বলে, ‘সে তো আমার বউ। কী আছে, দাও।’

নামটা শুনেই চমকে ওঠে হাফিজুল। কী নাম—সুনয়না? বাকি আর কিছু না শুনেই সে দৌড় দেয়। মনে মনে ভাবে, রঞ্জিতের স্ত্রী তাকে লিখেছে, ‘শাকিব খানের মতো লাগছে।’ এ কথা বিশ্বাসই হয় না হাফিজুলের। রঞ্জিতের স্ত্রীকে একদিন লন্ড্রিতে দেখেছিল সে। রূপ যেন গলে পড়ে। সুন্দরী বলে দেমাগে কারও সঙ্গে কথা বলে না। সেই সুনয়না তাকে নক করেছে। কাপড়ের স্লিপটা হাতে নিয়ে দৌড়াতে থাকে হাফিজুল। দৌড়াতে দৌড়াতে চলে যায় গলির মাস্টারের মুদি দোকানে। দোকানের ছেলেটিকে বলে, ‘মামা, সুনয়নার খোঁজ পাইছি।’ দোকানের ছেলেটা হাঁ করে শুনে বলে, ‘কার খোঁজ?’ হাফিজুল হেসে বলে, ‘ও তুমি বুঝবা না। আমাকে একটা দামি সাবান আর মিনি শ্যাম্পু দাও।’ এরপর চলে যায় ওষুধের দোকানের রাহাতের কাছে। তাকে বলে, ‘তুই নাকি ওই সব ট্যাবলেট বিক্রি করস? দে আমারে এক পাতা।’ রাহাত খুব অবাক হয়। হাফিজুল আরও অবাক। তার মোবাইল ফোনে একের পর এক কমেন্ট আসছে, ‘আজ কিছু হতে চলছে, বুক জ্বলে যায়, ঢেলে দেব...।’

ওষুধের দোকান থেকে বেরোতেই হাফিজুলের ফোন বেজে ওঠে। স্ত্রী লুৎফার ফোন। ফোনের দিকে তাকায় হাফিজুল। ফোনটা বেজেই চলেছে। এখন লুৎফার ফোন ধরার কোনো ইচ্ছে নেই হাফিজুলের। ফোনটা হাতে নিয়ে কমপ্লেক্সের দিকে দৌড়াতে থাকে। এত দিনে সত্যিকারের মুরগি পেয়েছে। দ্রুত পা চালিয়ে কারিগর অ্যাপার্টমেন্টের দিকে যেতে থাকে। সেখানে ড্রাইভারদের বিশ্রামাগারে বসে সুনয়নার সঙ্গে সুখের সাগরে ভাসবে।

হাফিজুলের মনে হচ্ছে, সে হাঁটছে না, দৌড়াচ্ছে না—উড়ছে, হাওয়ায় ভাসছে। ভেসে ভেসে কোনো এক অজানার দিকে চলে যাচ্ছে। যে পথ আগে সে কখনো চোখেও দেখেনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

তৌহিদুল হকের গুচ্ছ কবিতা

তৌহিদুল হক
তৌহিদুল হকের গুচ্ছ কবিতা

রক্ত লাল

আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে

গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায়

ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের

জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।

যা স্বভাববিদ্ধ, তবে কতটা উপকারী বা বাঁচিয়ে

রাখার নিরলস অভিপ্রায়। মানুষের তরে

প্রাণীর অফুরন্ত প্রাচুর্য বিস্তৃতকরণে, কিংবা

উদ্ভিদের অন্তিম প্রেমে বসন্তের অভিষেকে।

কতটা জ্বলতে হয় পরের জন্য, কতটা ফুটন্ত

শরীর নিয়ে চালিয়ে যায় সেবার পরিধি।

এক চিরন্তন শিক্ষা, আবার উদিত হয়

দিনের শুরুতে, বিদায় প্রান্তিক অপূর্ব

মায়ায়-দিনের শেষ প্রান্তে।

এতটুকু কার্পণ্য রেখে যায়নি, হয়তো মুখ

ফিরিয়ে নিবে না কোনো দিন। তবে ভাবনার

অন্তিমে শেষ দৃশ্যের সংলাপে ভেসে

ওঠে জনদরদি রাজার মুখ। যেখানে রক্ত ঝরে

বন্যার বেগে সেখানেও প্রতিদিন ফুল ফোটে ফুল হয়ে।

যত দেখি

যত দেখি তৃপ্ত হই, শীতল হয়ে

জড়িয়ে পড়ি তোমার সমস্ত শরীরে। এক অজানা

শিহরণ ছুঁয়ে যায় হৃদয়ের সমস্ত পৃষ্ঠা জুড়ে।

যেন দীর্ঘদিনের শুষ্কতা ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে দূরে।

হারিয়ে যাওয়া রস ফিরছে মূলে, নিয়ে যাচ্ছে আদিপর্বে।

যেমন নেয় নদীর কূল, জোয়ারের ফেনা।

ভাবনার অতলে অদ্ভুত মায়া, দীর্ঘক্ষণ মোহগ্রস্ত

করে রাখে চোখের পলক, তাকিয়ে থাকি মায়ার মায়ায়। কী অপরূপ মায়া!

সেখানেও দেখি তৃষ্ণার ব্যাকুলতা নিয়ে অপেক্ষারত কান্না।

জীবনের তল্লাটে হারিয়ে খুঁজি আজ

আমারও জীবন ছিল। মায়ায় ভরা নির্বিঘ্ন আয়োজন, কলমিলতার মতো নিষ্পাপ।

তৃপ্ত হই ঘাসে, বাতাসের বেহায়া আঘাতে

অভিমানের মোড়ক ছুড়ে ফেলে হাতে তুলে নেই

কচু পাতায় টলোমলো জলের লজ্জা। এ জীবনের চাহিদা তোমায় দেখার

প্রয়োজনে তপ্ত, হয় উত্তপ্ত অথবা সহ্যের অতীত শীতল।

এ যেন কেমন

গহিন অরণ্যে সবুজ পাতার মতো, মগজে

চিন্তার রাজ্যে ভাবের উদয়, আকুল বিন্যাসে

একটু একটু করে এগিয়ে নেয়, আবার ভরা কলসির

মতো বসিয়ে রাখে-ভবের রাজ্যে। একদিন সমস্ত ভাবনা থেকে মুক্ত হয়ে

এদিক-ওদিক চলন, জীবন্ত মরণ! মানুষ

কেন বাঁচে, কীভাবে বাঁচে-প্রশ্নের সমাধা

আজ তর্কপ্রিয় সন্ধানে, মূর্ত প্রার্থনা।

সকল প্রিয়জন পরিত্যাগে, নিগূঢ় যত্নে হৃদয়ে প্রবেশ করে

নিজের অপরিচিত চেহারা, সব জিজ্ঞাসার

অন্ত-ক্রিয়ার এক উচ্চতম বিলাস।

জীবনের মানে অর্থশুন্য ভবিতব্য! এ কী হয়?

চোখের পলকে নিষ্পাপ দৃশ্যলোক-পেছন ডাকে বারবার

যেখানে থাকে আবার দেখার ইচ্ছা, নামে যে মুক্তকরণ। মিলনকান্তির আবাস।

চতুর্মুখ সমীকরণে খেলে যায় সময়ের ঝাঁজালো সিদ্ধান্ত। কেউ কী অপ্রিয় হয় কারও?

যেখানে ভেসে ওঠে নীলপদ্ম, অতীতের নিটোল কিতাব। সে-তো মানুষের ছবি!

চলে আসুন সবজি বাজারে

মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে দেখেছি অনেক কিছু

যা মানুষের নয়। অ-মানুষের জন্ম-উত্তর বাঁচার

উপায় হতে পারে। পোশাকে সজ্জিত দেহ কতভাবে

হিংস্র হয়, গোপনে, অন্ধের গহনে।

প্রবেশের আগেই পেয়েছি সংকেত। কত নোংরা, পচা, আবর্জনায় ভরা একটি থালার মতো

পড়ে আছে সম্মুখে। কেউ কি দেখেছে?

হয়তো মেনে নিয়েছে সবাই, সবার আগে সে

যে ভেবেছে, কী বা আছে উপায়!

চারপাশে কত কিছুর ঘ্রাণ, চোখ যা বলে তা কি মেনে নেয় স্বাস্থ্যবার্তা

ফুটে আছে ফুলের মতো দোকানের পসরা। খেতে বা কেনায় বারণ বালাই নেই।

যা পাচ্ছে নিচ্ছে, অনেকে। কেউ গায়ে কেউ পেটে।

আহা! দেখার কেউ নেই!

এক অন্ধকারে হাঁটছে আমাদের পা।

কেউ কি আছে কোথাও, আলো নিয়ে হাতে? ভেবেছে কি কেউ

কেন আমাদের আয়োজনে সবাই নেই?

কেউ এসে শুধু একবার বলুক, এই নিন-আপনাদের জীবন টিকিট যা উত্তরণ।

চলে আসুন সবজির বাজারে, সবুজের খোঁজে।

ইতিহাস

আজ স্পষ্ট ঘোষণা, আমার চোখের সামনে কেউ নেই

নেই কেউ ভাবের অন্তিম ঘরে। এক অস্পৃশ্য অনুভব

ছুঁয়ে চলে, ভাসিয়ে দেয় অগণিত স্রোতের তুমুল আলিঙ্গনে।

আজ কিছু ভেবে বলছি না, সরাসরি জবাব---

আমি নই কারও!

সব বাতাসের সাথে মিশে থাকা চোখের প্রেম

ভাবনার বিলাসে জড়িয়ে পড়ার বাসনা----সকলের অগোচরে

অথবা সকলের মাঝে। জীবনের অর্থে হৃদয়ের গুড়গুড় আলাপ

ঘুটঘুটে অন্ধকারে হৃদয়ে খোলা আকাশ, শুধু

এক মুখচ্ছবি।

আজ কোনো ক্ষমা নেই---নিজের প্রতি! নিজের পাপে

হাঁটি আমি, সবার মাঝে একলা হয়ে। বেদনার

কালো রং নিয়ে। শুধু দেখে যাই, শুধু দেখতে যাই।

কত রং বিরাজ করে ভাবনার গরমিলে, স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রই।

দাঁড়িয়ে থেকেও হেঁটে যাই!

আজকের না বলা কথা, কোনো দিন বলা হবে না

হবে না দাঁড়িয়ে আবার ভাবা আর একটু বসলে

ভালো হতো। যে বসিয়ে রাখে যে আশায় বসে থাকে

সবকিছুর-ই সময় থাকে---

এরপর---ইতিহাস!

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

জন্মদিনের শ্রদ্ধাঞ্জলি

বিদায় নেওয়া হুমায়ূন এখনো আছেন

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৩ নভেম্বর ২০২৫, ০৮: ৪২
হুমায়ূন আহমেদ
হুমায়ূন আহমেদ

হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’ জবাবে ফারুক বললেন, ‘কী আশ্চর্য ভাই?’ হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘এই যে প্রকৃতি, জোছনা, বৃষ্টি, নদী— কী সুন্দর! একদিন হয়তো আমি এসব আর দেখতে পারব না। একুশের বইমেলা হবে। লোকেদের ভিড়, আড্ডা; আমি সেখানে থাকব না। এটা কি মেনে নেওয়া যায়! হায় রে জীবন!’

‘আমার না বলা কথা’ বইয়ে ফারুক আহমেদ এই স্মৃতিচারণ করেছেন। লিখেছেন, ‘আমি কিছু না বলে মূর্তির মতো বসে রইলাম। একসময় তাকিয়ে দেখলাম, হুমায়ূন ভাইয়ের দুচোখের কোনায় পানি।’

হুমায়ূন আহমেদ নেই। তবে তিনি রয়েছেন দেশের তরুণদের মনে। যে বইমেলায় তিনি থাকবেন না বলে আক্ষেপ, সেই বইমেলায় তাঁর বইয়ের স্টলে তরুণদের ঢলের মধ্যে আছেন।

নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে হুমায়ূন আহমেদের জন্ম এই দিনে (১৩ নভেম্বর); ভারত ভাগের এক বছর পরে ১৯৪৮ সালে। ছোট সময়ে তাঁর নাম ছিল শামসুর রহমান। তাঁর বাবা ছেলেমেয়েদের নাম পাল্টে ফেলতেন। তাঁর নাম পাল্টে রাখেন হুমায়ূন আহমেদ। হিমু, মিসির আলি, শুভ্রর মতো চরিত্রের স্রষ্টা তিনি। শুধু কথাসাহিত্যেই নয়; ‘বহুব্রীহি’, ‘অয়োময়’, ‘কোথাও কেউ নেই’,

‘আজ রবিবার’-এর মতো নাটক বানিয়েছেন, তৈরি করেছেন ‘আগুনের পরশমণি’, ‘শ্যামল ছায়া’র মতো চলচ্চিত্র।

হুমায়ূন আহমেদ বৃষ্টি, জোছনা ভালোবাসতেন। তাঁর লেখায় সেসব উঠে এসেছে বারবার। ২০১২ সালের জুলাইয়ে বর্ষাতেই তিনি পাড়ি জমিয়েছিলেন ওপারে।

তিনি নেই। কিন্তু তাঁর লেখায় উঠে আসা চান্নিপসর, বৃষ্টি বিলাস আজও আছে তরুণদের মনে। ফারুক আহমেদ তাঁর ওই বইয়ে হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে আরেকটি স্মৃতিচারণ করেছিলেন এভাবে—‘এক বিকেলে শুটিং শেষে তাঁর প্রিয় লিচুগাছের দিকে তাকিয়ে আছেন হুমায়ূন। সেখানে ঝুলছে পাকা লিচু। তিনি তাঁর কেয়ারটেকার মুশাররফকে ডেকে গ্রামের ছোট ছেলেমেয়েদের ডেকে নিয়ে এলেন। তাদের বললেন, গাছে উঠে যে যত পারে লিচু খেতে। বাচ্চারা কেউ গাছে উঠে লিচু খাচ্ছে, হইচই করছে। কেউ পকেটে ভরছে। হুমায়ূন আহমেদ অবাক হয়ে সেই লিচু খাওয়া দেখতে লাগলেন।’

ফারুক আহমেদ লিখেছেন, ‘হুমায়ূন ভাই একসময় আমাকে বললেন, এমন সুন্দর দৃশ্য তুমি কখনো দেখেছো? এমন ভালো লাগার অনুভূতি কি অন্য কোনোভাবে পাওয়া যায়? আমি কী বলব বুঝতে পারছিলাম না। হঠাৎ বললাম, না ভাই এমন ভালো লাগার অনুভূতি কোনোভাবেই পাওয়া যায় না।’

হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন ঘিরে রাজধানীসহ জন্মস্থান নেত্রকোনাতে রয়েছে নানা আয়োজন। নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার রোয়াইলবাড়ি ইউনিয়নের কুতুবপুরে হুমায়ূন আহমেদ প্রতিষ্ঠিত শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ এবং এলাকাবাসীর উদ্যোগে এসব কর্মসূচি পালন করা হবে। সকালে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কোরআন খতম করবেন। এরপর শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ প্রাঙ্গণ থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, এলাকাবাসী এবং হুমায়ূনভক্তদের আনন্দ শোভাযাত্রা বের হবে। পরে লেখকের প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ, জন্মদিনের কেক কাটা, বৃক্ষরোপণ, কুইজ, হুমায়ূন আহমেদের রচিত নাটক ও সিনেমার অংশবিশেষ নিয়ে অভিনয়, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, পুরস্কার বিতরণ এবং আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া রাজধানীতে হুমায়ূন আহমেদের চলচ্চিত্র নিয়ে চলচ্চিত্র সপ্তাহ, হুমায়ূন প্রতিযোগিতা, হুমায়ূন জন্মোৎসব, টেলিভিশন চ্যানেলে নাটক ও অনুষ্ঠান প্রচারসহ নানা আয়োজনে মুখর থাকছে দিনটি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

‘হীরক রাজার দেশে’ মঞ্চস্থ করল স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
গতকাল শুক্রবার প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
গতকাল শুক্রবার প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।

মঞ্চনাট্যটি স্কলাস্টিকার প্রতিষ্ঠাতা ইয়াসমিন মুরশেদকে উৎসর্গ করা হয়।

গতকাল শুক্রবার প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
গতকাল শুক্রবার প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

স্কুলের এসটিএম মিলনায়তন প্রতিষ্ঠার রজতজয়ন্তী উদ্‌যাপনকে সামনে রেখে আয়োজিত এ নাট্যানুষ্ঠানের সমাপনী দিনে বিশেষ অতিথি ছিলেন নাট্যব্যক্তিত্ব আবুল হায়াত, দিলারা জামান ও আফজাল হোসেন। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার অধ্যক্ষ ফারাহ্ সোফিয়া আহমেদ।

হীরক রাজার দেশে নাটকটির নির্দেশনায় ছিলেন কাজী তৌফিকুল ইসলাম ইমন। প্রোডাকশন ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেন শৈলী পারমিতা নীলপদ্ম। সংগীত পরিচালনা করেন গাজী মুন্নোফ, ইলিয়াস খান ও পলাশ নাথ লোচন। নৃত্য পরিচালনায় ছিলেন শাম্মী ইয়াসমিন ঝিনুক ও ফরহাদ আহমেদ শামিম।

নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন নাজিফা ওয়াযিহা আহমেদ, আরিয়াদ রহমান, আজিয়াদ রহমান, বাজনীন রহমান, মোহম্মদ সফির চৌধুরী, ফাহিম আহম্মেদ, সৈয়দ কাফশাত তাইয়ুশ হামদ ও তাজরীবা নওফাত প্রমুখ।

শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকেরা অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের পরিবেশিত অভিনয়, গান ও নাচ উপভোগ করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

গবেষণায় বেরিয়ে এল আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’র গল্প

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল। কিন্তু ভাষাবিদ ও সাহিত্য ইতিহাসবিদদের মতে, এই ধারণা আসলে পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি এক ‘ঔপনিবেশিক কল্পনা’ মাত্র। বাস্তবে আরবি সাহিত্য কখনোই থেমে যায়নি।

প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফাদের অধীনে বিজ্ঞান, দর্শন ও কবিতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বাগদাদ। আবু নুয়াস, আল-মুতানাব্বি, আল-ফারাবি ও ইবনে সিনার মতো কবি ও দার্শনিকদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এক স্বর্ণযুগ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় গবেষকেরা—যেমন ফরাসি চিন্তাবিদ আর্নেস্ট রেনাঁ ও ডাচ ইতিহাসবিদ রেইনহার্ট দোজি সেই আমলটিকেই আরবি বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের শিখর বলে স্বীকার করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, একাদশ শতাব্দীর পর এই ধারাবাহিকতার পতন ঘটে। তাঁদের মতে, এরপর প্রায় ৮০০ বছর আরবে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক বা দার্শনিক কাজ হয়নি—যতক্ষণ না ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু হয়।

কিন্তু আধুনিক গবেষকেরা বলছেন, এই ধারণা সরলীকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট। ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় শেখ জায়েদ বুক অ্যাওয়ার্ডের আয়োজিত এক আলোচনায় ভাষাবিদেরা দাবি করেছেন, আরবি রচনা শৈলী কখনো বিলুপ্ত হয়নি; বরং তা ধারাবাহিকভাবে কপি, অনুবাদ ও পাঠের মাধ্যমে বেঁচে ছিল।

জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলার তাঁর ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, আরবি সাহিত্যে ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে যে ধারণাটি প্রচলিত আছে তা আসলে গাল-গল্প। এই বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। গ্রুন্ডলার এতে দেখিয়েছেন, নবম শতাব্দীর বাগদাদে বইয়ের ব্যবসা, কপিকারদের প্রতিযোগিতা, জনসম্মুখে পাঠ ও লেখার প্রচলন—সবই ছিল আধুনিক প্রকাশনা সংস্কৃতির পূর্বসূরি। তিনি মত দিয়েছেন, ‘বাগদাদের রাস্তায় হাঁটলে আপনি দেখতেন লোকেরা হস্তলিপি বিক্রি করছে, বিরামচিহ্ন নিয়ে তর্ক করছে—এ যেন এক জীবন্ত প্রকাশনা বাজার।’

গবেষণা বলছে, আরবি সাহিত্য আসলে কখনো এক জায়গায় স্থির থাকেনি। এর কেন্দ্র এক সময় বাগদাদ থেকে কায়রো, দামেস্ক ও আন্দালুসিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু ধারাটি অব্যাহতই থাকে। নতুন ঘরানা তৈরি হয়, পুরোনো ঘরানা রূপান্তরিত হয়।

ফরাসি অধ্যাপক হাকান ওজকান তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ‘জাজাল’ নামের কথ্য ছন্দভিত্তিক কবিতার ধারা আব্বাসীয় যুগের পরও বিকশিত হতে থাকে। তাঁর মতে, ‘এই কবিরা নিয়ম ভেঙে নতুন রূপ দিয়েছে—তাঁদের ছন্দ ও ব্যঙ্গ আধুনিক র্যাপের মতো প্রাণবন্ত।’

জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলারের ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। ছবি: দ্য ন্যাশনাল
জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলারের ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। ছবি: দ্য ন্যাশনাল

এদিকে এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (২০ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, আবুধাবির নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘আরবি সাহিত্য লাইব্রেরি’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ‘হারানো শতাব্দী’ বলে বিবেচিত সময়ের ৬০ টিরও বেশি আরবি সাহিত্যকর্ম পুনরুদ্ধার করেছে। প্রকল্পটির সম্পাদক অধ্যাপক মরিস পোমেরান্টজ বলেছেন, ‘এই বইগুলো সম্পাদনা করা মানে এক চলমান সংলাপে অংশ নেওয়া—যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেখক, অনুবাদক ও সমালোচকেরা একে অপরকে উত্তর দিয়ে গেছেন।’

মরিস মনে করেন, আরবি সাহিত্য স্থবির হয়ে যাওয়ার ধারণাটি মূলত অনুবাদের অভাব থেকেই জন্ম নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো লেখা অনুবাদ করা হয় না, তখন সেটি বৈশ্বিক অস্তিত্ব হারায়।’

মরিসের মতে, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সাহিত্যকে আবার জনসাধারণের কল্পনায় ফিরিয়ে আনা—স্কুলে পড়ানো, মঞ্চে উপস্থাপন করা, অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। তা না হলে আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে চিহ্নিত সময়টি অধরাই থেকে যাবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত