মো. তায়্যিব-উল-ইসলাম সৌরভ

নাজিম সাহেব আয়েশ করে কফিতে চুমুক দিচ্ছেন, পাশে বডিগার্ড জয়নাল তাঁর জন্য টাওয়েল আর পাইপ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তিনি কফিটা শেষ করেই পাইপ নেবেন, গুনে গুনে ৬টা টান দেবেন, তারপর টাওয়েল নিয়ে বাথরুমের দিকে যাবেন। প্রতি শনিবার তাঁর এই একই নিয়ম।
নাজিম সাহেবের কফি খাওয়া, বডিগার্ডের তাঁর জন্য অধীর হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা, পাইপ টানা—এ সবই তাঁর বাসার গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা ডজন দুইয়েক লোক আগ্রহ নিয়ে দেখছে। এদের চোখের খিদা মেটানোই নাজিম সাহেবের ঝুল বারান্দায় বসার মূল কারণ; তা না হলে পাইপের চেয়ে বেনসনই তাঁর বেশি পছন্দ। অবশ্য পার্টির সেক্রেটারি বোর্ডের সদস্য হওয়ার পর থেকে তিনি মানুষের সামনে আর সিগারেট খান না, মাঝে মাঝে পাইপ টানেন। তাঁর ভালো লাগে, আরাম লাগে। এই আরাম যে পাইপ টানার আরাম নয়, সেটাও তিনি বোঝেন। বোঝেন বলেই আরামটা তাঁর আরও বেশি লাগে।
নাজিম সাহেব টাওয়েলটা নিয়ে বাথরুমে ঢুকলেন। তাঁর বাথরুম করতে সময় লাগে কিছুটা। তিনি বেনসন টেনে টেনে বড় কাজ সারেন, ততক্ষণে গিজারে পানি গরম হয়। তারপর শেভ করে, হট শাওয়ার নিয়ে তিনি বাথরুম থেকে বের হন। শনিবার দিন তিনি গোসল না করে বের হন না, তাঁর পীর সাহেবের মানা আছে।
মাথা মুছতে মুছতে নাজিম সাহেব জয়নালকে গাড়ি রেডি করার জন্য নিচে খবর দিতে বললেন। তিনি তাঁর নির্বাচনী এলাকায় যাবেন। গেটের সামনে যে ডজন দুইয়েক লোক, তাদের মধ্যে বেশির ভাগই তাঁর সঙ্গে যাবে, দু-একজন অবশ্য গাড়িতে জায়গা না হওয়ায় বাদ পড়বে; প্রতিবারই এমন হয়। গাড়ির সংখ্যা বাড়াতে বাড়াতে এখন চারটা হয়েছে, কিন্তু তা-ও প্রতিবারই কেউ না কেউ বাদ পড়েই। মুশকিল!
সামনে দুইটা আর পেছনে দুইটা মাইক্রো নিয়ে যাত্রা শুরু করলেন নাজিম সাহেব। তিনি আগামীবার পার্টির নমিনেশন চাইবেন, তাই এলাকায় তাঁর প্রভাব পাকাপোক্ত করতেই ঘনঘন এলাকায় যাতায়াত করছেন। তাঁর নমিনেশন যদিও প্রায় নিশ্চিত, তা-ও তিনি রিস্ক নিতে চান না। ইতিমধ্যে অবশ্য তাঁর ক্ষমতার আঁচ লেগেছে অনেক জায়গায়ই। গতবার থানায় গিয়েই তিনি সেটা বুঝতে পেরেছেন। থানাওয়ালা যেভাবে তাঁকে খাতির-যত্ন করল, তিনি তো প্রায় বিব্রত অবস্থায়ই পড়েছিলেন। অবশ্য এলাকার লোকজনও এখন তাঁকে অন্য চোখে দেখে। চেয়ারম্যান-মেম্বার থেকে শুরু করে সবাই তাঁর আসার অপেক্ষায় বসে থাকে। নাজিম সাহেব ব্যাপারটা খুব উপভোগ করেন, তাঁর অনেক ভালো লাগে।
গাড়ির বহর ইস্কাটন পার হতেই মানুষের জটলা। আগের শনিবারগুলোয় এত জটলা থাকত না, কদিন ধরে জ্যাম লেগে যাচ্ছে। টিসিবির গাড়ির পেছনের জটলা দেখতে আগে তাঁর খারাপ লাগত, আজকাল তেমন খারাপ লাগে না। কদিন ধরে তিনি একটা অদ্ভুত ব্যাপার খেয়াল করছেন, টিসিবির লাইনের লোকগুলোর কাপড়-চোপড় বেশ ভালো। হয়তো এ কারণেই এদের দেখতে এত খারাপ লাগে না।
গাড়িতে ড্রাইভার ও নাজিম সাহেব ছাড়া আর একজন আছে, জমির। নাজিম সাহেবের দূর সম্পর্কের আত্মীয় জমির, তিনি তাকে পিএসের চাকরি দিয়েছেন। শিক্ষিত ভদ্র ছেলে সে, চুপচাপ। আগে একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে কাজ করত। কিছুদিন আগে তাঁর কাছে চাকরির জন্য এসেছিল। নাজিম সাহেব ইংরেজিতে একটু কাচা, ইদানীং আবার অনেক চিঠিপত্র আসে তাঁর কাছে, যেগুলো ইংরেজিতে লেখা। সাতপাঁচ না ভেবে তাই তিনি জমিরকে নিজ পিএসের চাকরিটা দিয়ে দিয়েছেন।
‘বুঝলে জমির?’—নাজিম সাহেবের ডাকে ড্রাইভারের পাশের সিট থেকে ঘাড় বাঁকা করে পেছনে তাকায় জমির। ‘দেশ যে এত উন্নত হচ্ছে, লোকে বুঝতে পারে না। কথায় কথায় খালি সরকাররে গালায়। সুশীল ব্যাটাদের তো খাইয়্যা কাম নাই, শালার ব্যাটারা খালি ভুল ধরে। বিদেশিদের টাকা খায় আর গালগপ্প বলে বেড়ায় ব্যাটারা।’ যদিও নাজিম সাহেব সারাক্ষণই এমন খিস্তি করতে থাকেন, তবু জমির অবাক হলো। শনিবার দিন সাধারণত তিনি আজেবাজে কথা বলেন না, তাঁর পীর সাহেবের মানা।
নাজিম সাহেব কোন প্রসঙ্গে বলছেন তার কিছুই না বুঝে জমির বলল ‘জি স্যার!’ নাজিম সাহেব সায় পেয়ে খুশি হলেন। তাঁর গালাগালির ঝুড়ি তিনি একেবারে খুলে দিলেন। সুশীলদের গুষ্টি উদ্ধার করে মিনিট দশেক বক্তব্য দিলেন, জমির শুধু জি স্যার, জি স্যার করতে লাগল। এতক্ষণে অবশ্য জমির প্রসঙ্গটা ধরতে পেরেছে। তাঁর এখন আর ‘জি স্যার, জি স্যার’ করতে ভালো লাগছে না। ‘দেখো না, দেখো কত মানুষ এখানে লাইন ধরে জিনিস কিনছে। বলো কখনো দেখেছ আগে এমন শৃঙ্খলাবদ্ধ লাইন? আর দেখো, এই সব লোকেরা কত ভালো ভালো কাপড় পরা। জুতাগুলো দেখো, ওই যে দেখছ, ওই মেয়েটা। দেখো কী সুন্দর কাপড় পরা। আর এই যে ক্রিকেট ব্যাট হাতে ছেলেটা। কী অদ্ভুত! আগামী পার্টি মিটিংয়ে বলতেই হবে ব্যাপারটা।’ নাজিম সাহেব বকবক করেই যাচ্ছেন। জমির বিরক্তি আর আড়াল করতে না পেরে জিজ্ঞেস করে, ‘কী বলবেন স্যার, পার্টি মিটিংয়ে?’
জমির কখনোই কিছু জিজ্ঞেস করে না, এইবার জিজ্ঞেস করাতে নাজিম সাহেব খুব আনন্দ পেলেন। বদ্ধ গাড়িতে এসি চলছে, এর মধ্যেই তিনি সিগারেট ধরালেন। ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে তিনি বলতে লাগলেন—‘কী আর? এই যে ব্যাটা সুশীলেরা দেখে না এইগুলো। এই যে গরিবদের লাইনের দিকে তারা তাকায় না, দেখে না যে এদের কাপড়-চোপড়ের উন্নতি হয়েছে। কত ভালো ভালো কাপড় তারা পরা শুরু করেছে। আয় না বাড়লে কি আর তারা এসব কাপড় পরত? কত সুন্দর সুশৃঙ্খলভাবে লাইনে দাঁড়ায়ে জিনিস কিনতেছে লোকে। সরকারের এই সব উন্নয়ন না দেখে তারা খালি এই নাই, ওই নাই করে। এসবই বলব আর কি।’
জমির চুপ করে থাকে। পেছন থেকে প্রচুর হর্নের শব্দ আসছে। ড্রাইভার উৎকণ্ঠা নিয়ে বলল, ‘স্যার, পেছনে মনে হয় গন্ডগোল।’ গন্ডগোলে নাজিম সাহেব আর ভয় পান না। তাঁর গাড়িতে পার্টির সিল লাগানো আছে। তিনি জমিরকে ব্যাপারটা দেখে আসতে বললেন, লাগলে পাশের থানার ওসিকে কল করতে বলে দেন।
জমির গাড়ি থেকে নেমে যায়। সে ভিড়ের মধ্যে হারিয়ে যায়। টিসিবির লাইনটা বেশ লম্বা, কিলোমিটার খানেক হবে। লাইনের সবাইকে তার অনেক আপন লাগে। সবাই যেন তার চেনা, অতি পরিচিত। হঠাৎ একটা চেহারায় জমিরের চোখ আটকে যায়, চমকে ওঠে সে। লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন তার শিক্ষক নাজমুল স্যার; চেহারা ঢাকার ব্যর্থ চেষ্টায় ব্যস্ত তিনি। সেই আগের মতোই সাদা শার্ট আর ছাই রঙের প্যান্ট পরনে। নাজমুল স্যারের সাদা শার্ট আর সাদা নেই, কেমন ধূসর হয়ে গেছে।
জমিরের মনে পড়ে যায় তাঁর মায়ের চিকিৎসার অভাবে মারা যাওয়ার কথা। পরপর কয়েক ঈদে তাঁর স্ত্রী-সন্তানদের কাপড় কিনে দিতে না পারার কথা। মোটামুটি ভালো বেতন পেয়েও কোনোভাবেই সংসার চালিয়ে নিয়ে যেতে না পারার কথা। বেতন বাড়াতে বলায় তাঁর চাকরি চলে যাওয়ার কথা।
আচমকাই জমির ফুসে ওঠে। ভালো কাপড়-চোপড়, উন্নয়ন, সুশীল, নাজমুল স্যার, মায়ের ওষুধ, সন্তানের কান্না—সব তাঁকে চেপে ধরে। নাজমুল স্যারের পায়ের কাছে পড়ে থাকা একটা ইট নিয়ে সে নাজিম সাহেবের গাড়ির দিকে রওনা দেয়। পেছনে হট্টগোল বাড়তে থাকে, টিসিবির ট্রাকের পণ্য শেষ, বেশির ভাগ লোকই পায়নি কিছুই।
নাজমুল স্যার চেয়ে আছেন জমিরের দিকে। জমির নাজিম সাহেবের গাড়ির কাচ ভেঙে দিয়েছে ইট দিয়ে। লাইন থেকে তার সঙ্গে যোগ দিয়েছে আরও অনেকজন। সামনের আর পেছনের মাইক্রো থেকে নাজিম সাহেবের সহযাত্রীরা সব পালিয়েছে। নাজিম সাহেব জমিরের চোখের দিকে চেয়ে আছেন। শিক্ষিত, ভদ্র, চুপচাপ জমিরের চোখে যেন আগুন লেগেছে।
নাজিম সাহেব ভয় পেয়েছেন। আজ বহু বছর পর তিনি ভয় পেয়েছেন।

নাজিম সাহেব আয়েশ করে কফিতে চুমুক দিচ্ছেন, পাশে বডিগার্ড জয়নাল তাঁর জন্য টাওয়েল আর পাইপ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তিনি কফিটা শেষ করেই পাইপ নেবেন, গুনে গুনে ৬টা টান দেবেন, তারপর টাওয়েল নিয়ে বাথরুমের দিকে যাবেন। প্রতি শনিবার তাঁর এই একই নিয়ম।
নাজিম সাহেবের কফি খাওয়া, বডিগার্ডের তাঁর জন্য অধীর হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা, পাইপ টানা—এ সবই তাঁর বাসার গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা ডজন দুইয়েক লোক আগ্রহ নিয়ে দেখছে। এদের চোখের খিদা মেটানোই নাজিম সাহেবের ঝুল বারান্দায় বসার মূল কারণ; তা না হলে পাইপের চেয়ে বেনসনই তাঁর বেশি পছন্দ। অবশ্য পার্টির সেক্রেটারি বোর্ডের সদস্য হওয়ার পর থেকে তিনি মানুষের সামনে আর সিগারেট খান না, মাঝে মাঝে পাইপ টানেন। তাঁর ভালো লাগে, আরাম লাগে। এই আরাম যে পাইপ টানার আরাম নয়, সেটাও তিনি বোঝেন। বোঝেন বলেই আরামটা তাঁর আরও বেশি লাগে।
নাজিম সাহেব টাওয়েলটা নিয়ে বাথরুমে ঢুকলেন। তাঁর বাথরুম করতে সময় লাগে কিছুটা। তিনি বেনসন টেনে টেনে বড় কাজ সারেন, ততক্ষণে গিজারে পানি গরম হয়। তারপর শেভ করে, হট শাওয়ার নিয়ে তিনি বাথরুম থেকে বের হন। শনিবার দিন তিনি গোসল না করে বের হন না, তাঁর পীর সাহেবের মানা আছে।
মাথা মুছতে মুছতে নাজিম সাহেব জয়নালকে গাড়ি রেডি করার জন্য নিচে খবর দিতে বললেন। তিনি তাঁর নির্বাচনী এলাকায় যাবেন। গেটের সামনে যে ডজন দুইয়েক লোক, তাদের মধ্যে বেশির ভাগই তাঁর সঙ্গে যাবে, দু-একজন অবশ্য গাড়িতে জায়গা না হওয়ায় বাদ পড়বে; প্রতিবারই এমন হয়। গাড়ির সংখ্যা বাড়াতে বাড়াতে এখন চারটা হয়েছে, কিন্তু তা-ও প্রতিবারই কেউ না কেউ বাদ পড়েই। মুশকিল!
সামনে দুইটা আর পেছনে দুইটা মাইক্রো নিয়ে যাত্রা শুরু করলেন নাজিম সাহেব। তিনি আগামীবার পার্টির নমিনেশন চাইবেন, তাই এলাকায় তাঁর প্রভাব পাকাপোক্ত করতেই ঘনঘন এলাকায় যাতায়াত করছেন। তাঁর নমিনেশন যদিও প্রায় নিশ্চিত, তা-ও তিনি রিস্ক নিতে চান না। ইতিমধ্যে অবশ্য তাঁর ক্ষমতার আঁচ লেগেছে অনেক জায়গায়ই। গতবার থানায় গিয়েই তিনি সেটা বুঝতে পেরেছেন। থানাওয়ালা যেভাবে তাঁকে খাতির-যত্ন করল, তিনি তো প্রায় বিব্রত অবস্থায়ই পড়েছিলেন। অবশ্য এলাকার লোকজনও এখন তাঁকে অন্য চোখে দেখে। চেয়ারম্যান-মেম্বার থেকে শুরু করে সবাই তাঁর আসার অপেক্ষায় বসে থাকে। নাজিম সাহেব ব্যাপারটা খুব উপভোগ করেন, তাঁর অনেক ভালো লাগে।
গাড়ির বহর ইস্কাটন পার হতেই মানুষের জটলা। আগের শনিবারগুলোয় এত জটলা থাকত না, কদিন ধরে জ্যাম লেগে যাচ্ছে। টিসিবির গাড়ির পেছনের জটলা দেখতে আগে তাঁর খারাপ লাগত, আজকাল তেমন খারাপ লাগে না। কদিন ধরে তিনি একটা অদ্ভুত ব্যাপার খেয়াল করছেন, টিসিবির লাইনের লোকগুলোর কাপড়-চোপড় বেশ ভালো। হয়তো এ কারণেই এদের দেখতে এত খারাপ লাগে না।
গাড়িতে ড্রাইভার ও নাজিম সাহেব ছাড়া আর একজন আছে, জমির। নাজিম সাহেবের দূর সম্পর্কের আত্মীয় জমির, তিনি তাকে পিএসের চাকরি দিয়েছেন। শিক্ষিত ভদ্র ছেলে সে, চুপচাপ। আগে একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে কাজ করত। কিছুদিন আগে তাঁর কাছে চাকরির জন্য এসেছিল। নাজিম সাহেব ইংরেজিতে একটু কাচা, ইদানীং আবার অনেক চিঠিপত্র আসে তাঁর কাছে, যেগুলো ইংরেজিতে লেখা। সাতপাঁচ না ভেবে তাই তিনি জমিরকে নিজ পিএসের চাকরিটা দিয়ে দিয়েছেন।
‘বুঝলে জমির?’—নাজিম সাহেবের ডাকে ড্রাইভারের পাশের সিট থেকে ঘাড় বাঁকা করে পেছনে তাকায় জমির। ‘দেশ যে এত উন্নত হচ্ছে, লোকে বুঝতে পারে না। কথায় কথায় খালি সরকাররে গালায়। সুশীল ব্যাটাদের তো খাইয়্যা কাম নাই, শালার ব্যাটারা খালি ভুল ধরে। বিদেশিদের টাকা খায় আর গালগপ্প বলে বেড়ায় ব্যাটারা।’ যদিও নাজিম সাহেব সারাক্ষণই এমন খিস্তি করতে থাকেন, তবু জমির অবাক হলো। শনিবার দিন সাধারণত তিনি আজেবাজে কথা বলেন না, তাঁর পীর সাহেবের মানা।
নাজিম সাহেব কোন প্রসঙ্গে বলছেন তার কিছুই না বুঝে জমির বলল ‘জি স্যার!’ নাজিম সাহেব সায় পেয়ে খুশি হলেন। তাঁর গালাগালির ঝুড়ি তিনি একেবারে খুলে দিলেন। সুশীলদের গুষ্টি উদ্ধার করে মিনিট দশেক বক্তব্য দিলেন, জমির শুধু জি স্যার, জি স্যার করতে লাগল। এতক্ষণে অবশ্য জমির প্রসঙ্গটা ধরতে পেরেছে। তাঁর এখন আর ‘জি স্যার, জি স্যার’ করতে ভালো লাগছে না। ‘দেখো না, দেখো কত মানুষ এখানে লাইন ধরে জিনিস কিনছে। বলো কখনো দেখেছ আগে এমন শৃঙ্খলাবদ্ধ লাইন? আর দেখো, এই সব লোকেরা কত ভালো ভালো কাপড় পরা। জুতাগুলো দেখো, ওই যে দেখছ, ওই মেয়েটা। দেখো কী সুন্দর কাপড় পরা। আর এই যে ক্রিকেট ব্যাট হাতে ছেলেটা। কী অদ্ভুত! আগামী পার্টি মিটিংয়ে বলতেই হবে ব্যাপারটা।’ নাজিম সাহেব বকবক করেই যাচ্ছেন। জমির বিরক্তি আর আড়াল করতে না পেরে জিজ্ঞেস করে, ‘কী বলবেন স্যার, পার্টি মিটিংয়ে?’
জমির কখনোই কিছু জিজ্ঞেস করে না, এইবার জিজ্ঞেস করাতে নাজিম সাহেব খুব আনন্দ পেলেন। বদ্ধ গাড়িতে এসি চলছে, এর মধ্যেই তিনি সিগারেট ধরালেন। ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে তিনি বলতে লাগলেন—‘কী আর? এই যে ব্যাটা সুশীলেরা দেখে না এইগুলো। এই যে গরিবদের লাইনের দিকে তারা তাকায় না, দেখে না যে এদের কাপড়-চোপড়ের উন্নতি হয়েছে। কত ভালো ভালো কাপড় তারা পরা শুরু করেছে। আয় না বাড়লে কি আর তারা এসব কাপড় পরত? কত সুন্দর সুশৃঙ্খলভাবে লাইনে দাঁড়ায়ে জিনিস কিনতেছে লোকে। সরকারের এই সব উন্নয়ন না দেখে তারা খালি এই নাই, ওই নাই করে। এসবই বলব আর কি।’
জমির চুপ করে থাকে। পেছন থেকে প্রচুর হর্নের শব্দ আসছে। ড্রাইভার উৎকণ্ঠা নিয়ে বলল, ‘স্যার, পেছনে মনে হয় গন্ডগোল।’ গন্ডগোলে নাজিম সাহেব আর ভয় পান না। তাঁর গাড়িতে পার্টির সিল লাগানো আছে। তিনি জমিরকে ব্যাপারটা দেখে আসতে বললেন, লাগলে পাশের থানার ওসিকে কল করতে বলে দেন।
জমির গাড়ি থেকে নেমে যায়। সে ভিড়ের মধ্যে হারিয়ে যায়। টিসিবির লাইনটা বেশ লম্বা, কিলোমিটার খানেক হবে। লাইনের সবাইকে তার অনেক আপন লাগে। সবাই যেন তার চেনা, অতি পরিচিত। হঠাৎ একটা চেহারায় জমিরের চোখ আটকে যায়, চমকে ওঠে সে। লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন তার শিক্ষক নাজমুল স্যার; চেহারা ঢাকার ব্যর্থ চেষ্টায় ব্যস্ত তিনি। সেই আগের মতোই সাদা শার্ট আর ছাই রঙের প্যান্ট পরনে। নাজমুল স্যারের সাদা শার্ট আর সাদা নেই, কেমন ধূসর হয়ে গেছে।
জমিরের মনে পড়ে যায় তাঁর মায়ের চিকিৎসার অভাবে মারা যাওয়ার কথা। পরপর কয়েক ঈদে তাঁর স্ত্রী-সন্তানদের কাপড় কিনে দিতে না পারার কথা। মোটামুটি ভালো বেতন পেয়েও কোনোভাবেই সংসার চালিয়ে নিয়ে যেতে না পারার কথা। বেতন বাড়াতে বলায় তাঁর চাকরি চলে যাওয়ার কথা।
আচমকাই জমির ফুসে ওঠে। ভালো কাপড়-চোপড়, উন্নয়ন, সুশীল, নাজমুল স্যার, মায়ের ওষুধ, সন্তানের কান্না—সব তাঁকে চেপে ধরে। নাজমুল স্যারের পায়ের কাছে পড়ে থাকা একটা ইট নিয়ে সে নাজিম সাহেবের গাড়ির দিকে রওনা দেয়। পেছনে হট্টগোল বাড়তে থাকে, টিসিবির ট্রাকের পণ্য শেষ, বেশির ভাগ লোকই পায়নি কিছুই।
নাজমুল স্যার চেয়ে আছেন জমিরের দিকে। জমির নাজিম সাহেবের গাড়ির কাচ ভেঙে দিয়েছে ইট দিয়ে। লাইন থেকে তার সঙ্গে যোগ দিয়েছে আরও অনেকজন। সামনের আর পেছনের মাইক্রো থেকে নাজিম সাহেবের সহযাত্রীরা সব পালিয়েছে। নাজিম সাহেব জমিরের চোখের দিকে চেয়ে আছেন। শিক্ষিত, ভদ্র, চুপচাপ জমিরের চোখে যেন আগুন লেগেছে।
নাজিম সাহেব ভয় পেয়েছেন। আজ বহু বছর পর তিনি ভয় পেয়েছেন।
মো. তায়্যিব-উল-ইসলাম সৌরভ

নাজিম সাহেব আয়েশ করে কফিতে চুমুক দিচ্ছেন, পাশে বডিগার্ড জয়নাল তাঁর জন্য টাওয়েল আর পাইপ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তিনি কফিটা শেষ করেই পাইপ নেবেন, গুনে গুনে ৬টা টান দেবেন, তারপর টাওয়েল নিয়ে বাথরুমের দিকে যাবেন। প্রতি শনিবার তাঁর এই একই নিয়ম।
নাজিম সাহেবের কফি খাওয়া, বডিগার্ডের তাঁর জন্য অধীর হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা, পাইপ টানা—এ সবই তাঁর বাসার গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা ডজন দুইয়েক লোক আগ্রহ নিয়ে দেখছে। এদের চোখের খিদা মেটানোই নাজিম সাহেবের ঝুল বারান্দায় বসার মূল কারণ; তা না হলে পাইপের চেয়ে বেনসনই তাঁর বেশি পছন্দ। অবশ্য পার্টির সেক্রেটারি বোর্ডের সদস্য হওয়ার পর থেকে তিনি মানুষের সামনে আর সিগারেট খান না, মাঝে মাঝে পাইপ টানেন। তাঁর ভালো লাগে, আরাম লাগে। এই আরাম যে পাইপ টানার আরাম নয়, সেটাও তিনি বোঝেন। বোঝেন বলেই আরামটা তাঁর আরও বেশি লাগে।
নাজিম সাহেব টাওয়েলটা নিয়ে বাথরুমে ঢুকলেন। তাঁর বাথরুম করতে সময় লাগে কিছুটা। তিনি বেনসন টেনে টেনে বড় কাজ সারেন, ততক্ষণে গিজারে পানি গরম হয়। তারপর শেভ করে, হট শাওয়ার নিয়ে তিনি বাথরুম থেকে বের হন। শনিবার দিন তিনি গোসল না করে বের হন না, তাঁর পীর সাহেবের মানা আছে।
মাথা মুছতে মুছতে নাজিম সাহেব জয়নালকে গাড়ি রেডি করার জন্য নিচে খবর দিতে বললেন। তিনি তাঁর নির্বাচনী এলাকায় যাবেন। গেটের সামনে যে ডজন দুইয়েক লোক, তাদের মধ্যে বেশির ভাগই তাঁর সঙ্গে যাবে, দু-একজন অবশ্য গাড়িতে জায়গা না হওয়ায় বাদ পড়বে; প্রতিবারই এমন হয়। গাড়ির সংখ্যা বাড়াতে বাড়াতে এখন চারটা হয়েছে, কিন্তু তা-ও প্রতিবারই কেউ না কেউ বাদ পড়েই। মুশকিল!
সামনে দুইটা আর পেছনে দুইটা মাইক্রো নিয়ে যাত্রা শুরু করলেন নাজিম সাহেব। তিনি আগামীবার পার্টির নমিনেশন চাইবেন, তাই এলাকায় তাঁর প্রভাব পাকাপোক্ত করতেই ঘনঘন এলাকায় যাতায়াত করছেন। তাঁর নমিনেশন যদিও প্রায় নিশ্চিত, তা-ও তিনি রিস্ক নিতে চান না। ইতিমধ্যে অবশ্য তাঁর ক্ষমতার আঁচ লেগেছে অনেক জায়গায়ই। গতবার থানায় গিয়েই তিনি সেটা বুঝতে পেরেছেন। থানাওয়ালা যেভাবে তাঁকে খাতির-যত্ন করল, তিনি তো প্রায় বিব্রত অবস্থায়ই পড়েছিলেন। অবশ্য এলাকার লোকজনও এখন তাঁকে অন্য চোখে দেখে। চেয়ারম্যান-মেম্বার থেকে শুরু করে সবাই তাঁর আসার অপেক্ষায় বসে থাকে। নাজিম সাহেব ব্যাপারটা খুব উপভোগ করেন, তাঁর অনেক ভালো লাগে।
গাড়ির বহর ইস্কাটন পার হতেই মানুষের জটলা। আগের শনিবারগুলোয় এত জটলা থাকত না, কদিন ধরে জ্যাম লেগে যাচ্ছে। টিসিবির গাড়ির পেছনের জটলা দেখতে আগে তাঁর খারাপ লাগত, আজকাল তেমন খারাপ লাগে না। কদিন ধরে তিনি একটা অদ্ভুত ব্যাপার খেয়াল করছেন, টিসিবির লাইনের লোকগুলোর কাপড়-চোপড় বেশ ভালো। হয়তো এ কারণেই এদের দেখতে এত খারাপ লাগে না।
গাড়িতে ড্রাইভার ও নাজিম সাহেব ছাড়া আর একজন আছে, জমির। নাজিম সাহেবের দূর সম্পর্কের আত্মীয় জমির, তিনি তাকে পিএসের চাকরি দিয়েছেন। শিক্ষিত ভদ্র ছেলে সে, চুপচাপ। আগে একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে কাজ করত। কিছুদিন আগে তাঁর কাছে চাকরির জন্য এসেছিল। নাজিম সাহেব ইংরেজিতে একটু কাচা, ইদানীং আবার অনেক চিঠিপত্র আসে তাঁর কাছে, যেগুলো ইংরেজিতে লেখা। সাতপাঁচ না ভেবে তাই তিনি জমিরকে নিজ পিএসের চাকরিটা দিয়ে দিয়েছেন।
‘বুঝলে জমির?’—নাজিম সাহেবের ডাকে ড্রাইভারের পাশের সিট থেকে ঘাড় বাঁকা করে পেছনে তাকায় জমির। ‘দেশ যে এত উন্নত হচ্ছে, লোকে বুঝতে পারে না। কথায় কথায় খালি সরকাররে গালায়। সুশীল ব্যাটাদের তো খাইয়্যা কাম নাই, শালার ব্যাটারা খালি ভুল ধরে। বিদেশিদের টাকা খায় আর গালগপ্প বলে বেড়ায় ব্যাটারা।’ যদিও নাজিম সাহেব সারাক্ষণই এমন খিস্তি করতে থাকেন, তবু জমির অবাক হলো। শনিবার দিন সাধারণত তিনি আজেবাজে কথা বলেন না, তাঁর পীর সাহেবের মানা।
নাজিম সাহেব কোন প্রসঙ্গে বলছেন তার কিছুই না বুঝে জমির বলল ‘জি স্যার!’ নাজিম সাহেব সায় পেয়ে খুশি হলেন। তাঁর গালাগালির ঝুড়ি তিনি একেবারে খুলে দিলেন। সুশীলদের গুষ্টি উদ্ধার করে মিনিট দশেক বক্তব্য দিলেন, জমির শুধু জি স্যার, জি স্যার করতে লাগল। এতক্ষণে অবশ্য জমির প্রসঙ্গটা ধরতে পেরেছে। তাঁর এখন আর ‘জি স্যার, জি স্যার’ করতে ভালো লাগছে না। ‘দেখো না, দেখো কত মানুষ এখানে লাইন ধরে জিনিস কিনছে। বলো কখনো দেখেছ আগে এমন শৃঙ্খলাবদ্ধ লাইন? আর দেখো, এই সব লোকেরা কত ভালো ভালো কাপড় পরা। জুতাগুলো দেখো, ওই যে দেখছ, ওই মেয়েটা। দেখো কী সুন্দর কাপড় পরা। আর এই যে ক্রিকেট ব্যাট হাতে ছেলেটা। কী অদ্ভুত! আগামী পার্টি মিটিংয়ে বলতেই হবে ব্যাপারটা।’ নাজিম সাহেব বকবক করেই যাচ্ছেন। জমির বিরক্তি আর আড়াল করতে না পেরে জিজ্ঞেস করে, ‘কী বলবেন স্যার, পার্টি মিটিংয়ে?’
জমির কখনোই কিছু জিজ্ঞেস করে না, এইবার জিজ্ঞেস করাতে নাজিম সাহেব খুব আনন্দ পেলেন। বদ্ধ গাড়িতে এসি চলছে, এর মধ্যেই তিনি সিগারেট ধরালেন। ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে তিনি বলতে লাগলেন—‘কী আর? এই যে ব্যাটা সুশীলেরা দেখে না এইগুলো। এই যে গরিবদের লাইনের দিকে তারা তাকায় না, দেখে না যে এদের কাপড়-চোপড়ের উন্নতি হয়েছে। কত ভালো ভালো কাপড় তারা পরা শুরু করেছে। আয় না বাড়লে কি আর তারা এসব কাপড় পরত? কত সুন্দর সুশৃঙ্খলভাবে লাইনে দাঁড়ায়ে জিনিস কিনতেছে লোকে। সরকারের এই সব উন্নয়ন না দেখে তারা খালি এই নাই, ওই নাই করে। এসবই বলব আর কি।’
জমির চুপ করে থাকে। পেছন থেকে প্রচুর হর্নের শব্দ আসছে। ড্রাইভার উৎকণ্ঠা নিয়ে বলল, ‘স্যার, পেছনে মনে হয় গন্ডগোল।’ গন্ডগোলে নাজিম সাহেব আর ভয় পান না। তাঁর গাড়িতে পার্টির সিল লাগানো আছে। তিনি জমিরকে ব্যাপারটা দেখে আসতে বললেন, লাগলে পাশের থানার ওসিকে কল করতে বলে দেন।
জমির গাড়ি থেকে নেমে যায়। সে ভিড়ের মধ্যে হারিয়ে যায়। টিসিবির লাইনটা বেশ লম্বা, কিলোমিটার খানেক হবে। লাইনের সবাইকে তার অনেক আপন লাগে। সবাই যেন তার চেনা, অতি পরিচিত। হঠাৎ একটা চেহারায় জমিরের চোখ আটকে যায়, চমকে ওঠে সে। লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন তার শিক্ষক নাজমুল স্যার; চেহারা ঢাকার ব্যর্থ চেষ্টায় ব্যস্ত তিনি। সেই আগের মতোই সাদা শার্ট আর ছাই রঙের প্যান্ট পরনে। নাজমুল স্যারের সাদা শার্ট আর সাদা নেই, কেমন ধূসর হয়ে গেছে।
জমিরের মনে পড়ে যায় তাঁর মায়ের চিকিৎসার অভাবে মারা যাওয়ার কথা। পরপর কয়েক ঈদে তাঁর স্ত্রী-সন্তানদের কাপড় কিনে দিতে না পারার কথা। মোটামুটি ভালো বেতন পেয়েও কোনোভাবেই সংসার চালিয়ে নিয়ে যেতে না পারার কথা। বেতন বাড়াতে বলায় তাঁর চাকরি চলে যাওয়ার কথা।
আচমকাই জমির ফুসে ওঠে। ভালো কাপড়-চোপড়, উন্নয়ন, সুশীল, নাজমুল স্যার, মায়ের ওষুধ, সন্তানের কান্না—সব তাঁকে চেপে ধরে। নাজমুল স্যারের পায়ের কাছে পড়ে থাকা একটা ইট নিয়ে সে নাজিম সাহেবের গাড়ির দিকে রওনা দেয়। পেছনে হট্টগোল বাড়তে থাকে, টিসিবির ট্রাকের পণ্য শেষ, বেশির ভাগ লোকই পায়নি কিছুই।
নাজমুল স্যার চেয়ে আছেন জমিরের দিকে। জমির নাজিম সাহেবের গাড়ির কাচ ভেঙে দিয়েছে ইট দিয়ে। লাইন থেকে তার সঙ্গে যোগ দিয়েছে আরও অনেকজন। সামনের আর পেছনের মাইক্রো থেকে নাজিম সাহেবের সহযাত্রীরা সব পালিয়েছে। নাজিম সাহেব জমিরের চোখের দিকে চেয়ে আছেন। শিক্ষিত, ভদ্র, চুপচাপ জমিরের চোখে যেন আগুন লেগেছে।
নাজিম সাহেব ভয় পেয়েছেন। আজ বহু বছর পর তিনি ভয় পেয়েছেন।

নাজিম সাহেব আয়েশ করে কফিতে চুমুক দিচ্ছেন, পাশে বডিগার্ড জয়নাল তাঁর জন্য টাওয়েল আর পাইপ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তিনি কফিটা শেষ করেই পাইপ নেবেন, গুনে গুনে ৬টা টান দেবেন, তারপর টাওয়েল নিয়ে বাথরুমের দিকে যাবেন। প্রতি শনিবার তাঁর এই একই নিয়ম।
নাজিম সাহেবের কফি খাওয়া, বডিগার্ডের তাঁর জন্য অধীর হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা, পাইপ টানা—এ সবই তাঁর বাসার গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা ডজন দুইয়েক লোক আগ্রহ নিয়ে দেখছে। এদের চোখের খিদা মেটানোই নাজিম সাহেবের ঝুল বারান্দায় বসার মূল কারণ; তা না হলে পাইপের চেয়ে বেনসনই তাঁর বেশি পছন্দ। অবশ্য পার্টির সেক্রেটারি বোর্ডের সদস্য হওয়ার পর থেকে তিনি মানুষের সামনে আর সিগারেট খান না, মাঝে মাঝে পাইপ টানেন। তাঁর ভালো লাগে, আরাম লাগে। এই আরাম যে পাইপ টানার আরাম নয়, সেটাও তিনি বোঝেন। বোঝেন বলেই আরামটা তাঁর আরও বেশি লাগে।
নাজিম সাহেব টাওয়েলটা নিয়ে বাথরুমে ঢুকলেন। তাঁর বাথরুম করতে সময় লাগে কিছুটা। তিনি বেনসন টেনে টেনে বড় কাজ সারেন, ততক্ষণে গিজারে পানি গরম হয়। তারপর শেভ করে, হট শাওয়ার নিয়ে তিনি বাথরুম থেকে বের হন। শনিবার দিন তিনি গোসল না করে বের হন না, তাঁর পীর সাহেবের মানা আছে।
মাথা মুছতে মুছতে নাজিম সাহেব জয়নালকে গাড়ি রেডি করার জন্য নিচে খবর দিতে বললেন। তিনি তাঁর নির্বাচনী এলাকায় যাবেন। গেটের সামনে যে ডজন দুইয়েক লোক, তাদের মধ্যে বেশির ভাগই তাঁর সঙ্গে যাবে, দু-একজন অবশ্য গাড়িতে জায়গা না হওয়ায় বাদ পড়বে; প্রতিবারই এমন হয়। গাড়ির সংখ্যা বাড়াতে বাড়াতে এখন চারটা হয়েছে, কিন্তু তা-ও প্রতিবারই কেউ না কেউ বাদ পড়েই। মুশকিল!
সামনে দুইটা আর পেছনে দুইটা মাইক্রো নিয়ে যাত্রা শুরু করলেন নাজিম সাহেব। তিনি আগামীবার পার্টির নমিনেশন চাইবেন, তাই এলাকায় তাঁর প্রভাব পাকাপোক্ত করতেই ঘনঘন এলাকায় যাতায়াত করছেন। তাঁর নমিনেশন যদিও প্রায় নিশ্চিত, তা-ও তিনি রিস্ক নিতে চান না। ইতিমধ্যে অবশ্য তাঁর ক্ষমতার আঁচ লেগেছে অনেক জায়গায়ই। গতবার থানায় গিয়েই তিনি সেটা বুঝতে পেরেছেন। থানাওয়ালা যেভাবে তাঁকে খাতির-যত্ন করল, তিনি তো প্রায় বিব্রত অবস্থায়ই পড়েছিলেন। অবশ্য এলাকার লোকজনও এখন তাঁকে অন্য চোখে দেখে। চেয়ারম্যান-মেম্বার থেকে শুরু করে সবাই তাঁর আসার অপেক্ষায় বসে থাকে। নাজিম সাহেব ব্যাপারটা খুব উপভোগ করেন, তাঁর অনেক ভালো লাগে।
গাড়ির বহর ইস্কাটন পার হতেই মানুষের জটলা। আগের শনিবারগুলোয় এত জটলা থাকত না, কদিন ধরে জ্যাম লেগে যাচ্ছে। টিসিবির গাড়ির পেছনের জটলা দেখতে আগে তাঁর খারাপ লাগত, আজকাল তেমন খারাপ লাগে না। কদিন ধরে তিনি একটা অদ্ভুত ব্যাপার খেয়াল করছেন, টিসিবির লাইনের লোকগুলোর কাপড়-চোপড় বেশ ভালো। হয়তো এ কারণেই এদের দেখতে এত খারাপ লাগে না।
গাড়িতে ড্রাইভার ও নাজিম সাহেব ছাড়া আর একজন আছে, জমির। নাজিম সাহেবের দূর সম্পর্কের আত্মীয় জমির, তিনি তাকে পিএসের চাকরি দিয়েছেন। শিক্ষিত ভদ্র ছেলে সে, চুপচাপ। আগে একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে কাজ করত। কিছুদিন আগে তাঁর কাছে চাকরির জন্য এসেছিল। নাজিম সাহেব ইংরেজিতে একটু কাচা, ইদানীং আবার অনেক চিঠিপত্র আসে তাঁর কাছে, যেগুলো ইংরেজিতে লেখা। সাতপাঁচ না ভেবে তাই তিনি জমিরকে নিজ পিএসের চাকরিটা দিয়ে দিয়েছেন।
‘বুঝলে জমির?’—নাজিম সাহেবের ডাকে ড্রাইভারের পাশের সিট থেকে ঘাড় বাঁকা করে পেছনে তাকায় জমির। ‘দেশ যে এত উন্নত হচ্ছে, লোকে বুঝতে পারে না। কথায় কথায় খালি সরকাররে গালায়। সুশীল ব্যাটাদের তো খাইয়্যা কাম নাই, শালার ব্যাটারা খালি ভুল ধরে। বিদেশিদের টাকা খায় আর গালগপ্প বলে বেড়ায় ব্যাটারা।’ যদিও নাজিম সাহেব সারাক্ষণই এমন খিস্তি করতে থাকেন, তবু জমির অবাক হলো। শনিবার দিন সাধারণত তিনি আজেবাজে কথা বলেন না, তাঁর পীর সাহেবের মানা।
নাজিম সাহেব কোন প্রসঙ্গে বলছেন তার কিছুই না বুঝে জমির বলল ‘জি স্যার!’ নাজিম সাহেব সায় পেয়ে খুশি হলেন। তাঁর গালাগালির ঝুড়ি তিনি একেবারে খুলে দিলেন। সুশীলদের গুষ্টি উদ্ধার করে মিনিট দশেক বক্তব্য দিলেন, জমির শুধু জি স্যার, জি স্যার করতে লাগল। এতক্ষণে অবশ্য জমির প্রসঙ্গটা ধরতে পেরেছে। তাঁর এখন আর ‘জি স্যার, জি স্যার’ করতে ভালো লাগছে না। ‘দেখো না, দেখো কত মানুষ এখানে লাইন ধরে জিনিস কিনছে। বলো কখনো দেখেছ আগে এমন শৃঙ্খলাবদ্ধ লাইন? আর দেখো, এই সব লোকেরা কত ভালো ভালো কাপড় পরা। জুতাগুলো দেখো, ওই যে দেখছ, ওই মেয়েটা। দেখো কী সুন্দর কাপড় পরা। আর এই যে ক্রিকেট ব্যাট হাতে ছেলেটা। কী অদ্ভুত! আগামী পার্টি মিটিংয়ে বলতেই হবে ব্যাপারটা।’ নাজিম সাহেব বকবক করেই যাচ্ছেন। জমির বিরক্তি আর আড়াল করতে না পেরে জিজ্ঞেস করে, ‘কী বলবেন স্যার, পার্টি মিটিংয়ে?’
জমির কখনোই কিছু জিজ্ঞেস করে না, এইবার জিজ্ঞেস করাতে নাজিম সাহেব খুব আনন্দ পেলেন। বদ্ধ গাড়িতে এসি চলছে, এর মধ্যেই তিনি সিগারেট ধরালেন। ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে তিনি বলতে লাগলেন—‘কী আর? এই যে ব্যাটা সুশীলেরা দেখে না এইগুলো। এই যে গরিবদের লাইনের দিকে তারা তাকায় না, দেখে না যে এদের কাপড়-চোপড়ের উন্নতি হয়েছে। কত ভালো ভালো কাপড় তারা পরা শুরু করেছে। আয় না বাড়লে কি আর তারা এসব কাপড় পরত? কত সুন্দর সুশৃঙ্খলভাবে লাইনে দাঁড়ায়ে জিনিস কিনতেছে লোকে। সরকারের এই সব উন্নয়ন না দেখে তারা খালি এই নাই, ওই নাই করে। এসবই বলব আর কি।’
জমির চুপ করে থাকে। পেছন থেকে প্রচুর হর্নের শব্দ আসছে। ড্রাইভার উৎকণ্ঠা নিয়ে বলল, ‘স্যার, পেছনে মনে হয় গন্ডগোল।’ গন্ডগোলে নাজিম সাহেব আর ভয় পান না। তাঁর গাড়িতে পার্টির সিল লাগানো আছে। তিনি জমিরকে ব্যাপারটা দেখে আসতে বললেন, লাগলে পাশের থানার ওসিকে কল করতে বলে দেন।
জমির গাড়ি থেকে নেমে যায়। সে ভিড়ের মধ্যে হারিয়ে যায়। টিসিবির লাইনটা বেশ লম্বা, কিলোমিটার খানেক হবে। লাইনের সবাইকে তার অনেক আপন লাগে। সবাই যেন তার চেনা, অতি পরিচিত। হঠাৎ একটা চেহারায় জমিরের চোখ আটকে যায়, চমকে ওঠে সে। লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন তার শিক্ষক নাজমুল স্যার; চেহারা ঢাকার ব্যর্থ চেষ্টায় ব্যস্ত তিনি। সেই আগের মতোই সাদা শার্ট আর ছাই রঙের প্যান্ট পরনে। নাজমুল স্যারের সাদা শার্ট আর সাদা নেই, কেমন ধূসর হয়ে গেছে।
জমিরের মনে পড়ে যায় তাঁর মায়ের চিকিৎসার অভাবে মারা যাওয়ার কথা। পরপর কয়েক ঈদে তাঁর স্ত্রী-সন্তানদের কাপড় কিনে দিতে না পারার কথা। মোটামুটি ভালো বেতন পেয়েও কোনোভাবেই সংসার চালিয়ে নিয়ে যেতে না পারার কথা। বেতন বাড়াতে বলায় তাঁর চাকরি চলে যাওয়ার কথা।
আচমকাই জমির ফুসে ওঠে। ভালো কাপড়-চোপড়, উন্নয়ন, সুশীল, নাজমুল স্যার, মায়ের ওষুধ, সন্তানের কান্না—সব তাঁকে চেপে ধরে। নাজমুল স্যারের পায়ের কাছে পড়ে থাকা একটা ইট নিয়ে সে নাজিম সাহেবের গাড়ির দিকে রওনা দেয়। পেছনে হট্টগোল বাড়তে থাকে, টিসিবির ট্রাকের পণ্য শেষ, বেশির ভাগ লোকই পায়নি কিছুই।
নাজমুল স্যার চেয়ে আছেন জমিরের দিকে। জমির নাজিম সাহেবের গাড়ির কাচ ভেঙে দিয়েছে ইট দিয়ে। লাইন থেকে তার সঙ্গে যোগ দিয়েছে আরও অনেকজন। সামনের আর পেছনের মাইক্রো থেকে নাজিম সাহেবের সহযাত্রীরা সব পালিয়েছে। নাজিম সাহেব জমিরের চোখের দিকে চেয়ে আছেন। শিক্ষিত, ভদ্র, চুপচাপ জমিরের চোখে যেন আগুন লেগেছে।
নাজিম সাহেব ভয় পেয়েছেন। আজ বহু বছর পর তিনি ভয় পেয়েছেন।

আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায় ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
২৩ নভেম্বর ২০২৫
হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’
১৩ নভেম্বর ২০২৫
প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
০৮ নভেম্বর ২০২৫
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
২০ অক্টোবর ২০২৫তৌহিদুল হক

রক্ত লাল
আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে
গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায়
ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের
জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
যা স্বভাববিদ্ধ, তবে কতটা উপকারী বা বাঁচিয়ে
রাখার নিরলস অভিপ্রায়। মানুষের তরে
প্রাণীর অফুরন্ত প্রাচুর্য বিস্তৃতকরণে, কিংবা
উদ্ভিদের অন্তিম প্রেমে বসন্তের অভিষেকে।
কতটা জ্বলতে হয় পরের জন্য, কতটা ফুটন্ত
শরীর নিয়ে চালিয়ে যায় সেবার পরিধি।
এক চিরন্তন শিক্ষা, আবার উদিত হয়
দিনের শুরুতে, বিদায় প্রান্তিক অপূর্ব
মায়ায়-দিনের শেষ প্রান্তে।
এতটুকু কার্পণ্য রেখে যায়নি, হয়তো মুখ
ফিরিয়ে নিবে না কোনো দিন। তবে ভাবনার
অন্তিমে শেষ দৃশ্যের সংলাপে ভেসে
ওঠে জনদরদি রাজার মুখ। যেখানে রক্ত ঝরে
বন্যার বেগে সেখানেও প্রতিদিন ফুল ফোটে ফুল হয়ে।
যত দেখি
যত দেখি তৃপ্ত হই, শীতল হয়ে
জড়িয়ে পড়ি তোমার সমস্ত শরীরে। এক অজানা
শিহরণ ছুঁয়ে যায় হৃদয়ের সমস্ত পৃষ্ঠা জুড়ে।
যেন দীর্ঘদিনের শুষ্কতা ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে দূরে।
হারিয়ে যাওয়া রস ফিরছে মূলে, নিয়ে যাচ্ছে আদিপর্বে।
যেমন নেয় নদীর কূল, জোয়ারের ফেনা।
ভাবনার অতলে অদ্ভুত মায়া, দীর্ঘক্ষণ মোহগ্রস্ত
করে রাখে চোখের পলক, তাকিয়ে থাকি মায়ার মায়ায়। কী অপরূপ মায়া!
সেখানেও দেখি তৃষ্ণার ব্যাকুলতা নিয়ে অপেক্ষারত কান্না।
জীবনের তল্লাটে হারিয়ে খুঁজি আজ
আমারও জীবন ছিল। মায়ায় ভরা নির্বিঘ্ন আয়োজন, কলমিলতার মতো নিষ্পাপ।
তৃপ্ত হই ঘাসে, বাতাসের বেহায়া আঘাতে
অভিমানের মোড়ক ছুড়ে ফেলে হাতে তুলে নেই
কচু পাতায় টলোমলো জলের লজ্জা। এ জীবনের চাহিদা তোমায় দেখার
প্রয়োজনে তপ্ত, হয় উত্তপ্ত অথবা সহ্যের অতীত শীতল।
এ যেন কেমন
গহিন অরণ্যে সবুজ পাতার মতো, মগজে
চিন্তার রাজ্যে ভাবের উদয়, আকুল বিন্যাসে
একটু একটু করে এগিয়ে নেয়, আবার ভরা কলসির
মতো বসিয়ে রাখে-ভবের রাজ্যে। একদিন সমস্ত ভাবনা থেকে মুক্ত হয়ে
এদিক-ওদিক চলন, জীবন্ত মরণ! মানুষ
কেন বাঁচে, কীভাবে বাঁচে-প্রশ্নের সমাধা
আজ তর্কপ্রিয় সন্ধানে, মূর্ত প্রার্থনা।
সকল প্রিয়জন পরিত্যাগে, নিগূঢ় যত্নে হৃদয়ে প্রবেশ করে
নিজের অপরিচিত চেহারা, সব জিজ্ঞাসার
অন্ত-ক্রিয়ার এক উচ্চতম বিলাস।
জীবনের মানে অর্থশুন্য ভবিতব্য! এ কী হয়?
চোখের পলকে নিষ্পাপ দৃশ্যলোক-পেছন ডাকে বারবার
যেখানে থাকে আবার দেখার ইচ্ছা, নামে যে মুক্তকরণ। মিলনকান্তির আবাস।
চতুর্মুখ সমীকরণে খেলে যায় সময়ের ঝাঁজালো সিদ্ধান্ত। কেউ কী অপ্রিয় হয় কারও?
যেখানে ভেসে ওঠে নীলপদ্ম, অতীতের নিটোল কিতাব। সে-তো মানুষের ছবি!
চলে আসুন সবজি বাজারে
মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে দেখেছি অনেক কিছু
যা মানুষের নয়। অ-মানুষের জন্ম-উত্তর বাঁচার
উপায় হতে পারে। পোশাকে সজ্জিত দেহ কতভাবে
হিংস্র হয়, গোপনে, অন্ধের গহনে।
প্রবেশের আগেই পেয়েছি সংকেত। কত নোংরা, পচা, আবর্জনায় ভরা একটি থালার মতো
পড়ে আছে সম্মুখে। কেউ কি দেখেছে?
হয়তো মেনে নিয়েছে সবাই, সবার আগে সে
যে ভেবেছে, কী বা আছে উপায়!
চারপাশে কত কিছুর ঘ্রাণ, চোখ যা বলে তা কি মেনে নেয় স্বাস্থ্যবার্তা
ফুটে আছে ফুলের মতো দোকানের পসরা। খেতে বা কেনায় বারণ বালাই নেই।
যা পাচ্ছে নিচ্ছে, অনেকে। কেউ গায়ে কেউ পেটে।
আহা! দেখার কেউ নেই!
এক অন্ধকারে হাঁটছে আমাদের পা।
কেউ কি আছে কোথাও, আলো নিয়ে হাতে? ভেবেছে কি কেউ
কেন আমাদের আয়োজনে সবাই নেই?
কেউ এসে শুধু একবার বলুক, এই নিন-আপনাদের জীবন টিকিট যা উত্তরণ।
চলে আসুন সবজির বাজারে, সবুজের খোঁজে।
ইতিহাস
আজ স্পষ্ট ঘোষণা, আমার চোখের সামনে কেউ নেই
নেই কেউ ভাবের অন্তিম ঘরে। এক অস্পৃশ্য অনুভব
ছুঁয়ে চলে, ভাসিয়ে দেয় অগণিত স্রোতের তুমুল আলিঙ্গনে।
আজ কিছু ভেবে বলছি না, সরাসরি জবাব---
আমি নই কারও!
সব বাতাসের সাথে মিশে থাকা চোখের প্রেম
ভাবনার বিলাসে জড়িয়ে পড়ার বাসনা----সকলের অগোচরে
অথবা সকলের মাঝে। জীবনের অর্থে হৃদয়ের গুড়গুড় আলাপ
ঘুটঘুটে অন্ধকারে হৃদয়ে খোলা আকাশ, শুধু
এক মুখচ্ছবি।
আজ কোনো ক্ষমা নেই---নিজের প্রতি! নিজের পাপে
হাঁটি আমি, সবার মাঝে একলা হয়ে। বেদনার
কালো রং নিয়ে। শুধু দেখে যাই, শুধু দেখতে যাই।
কত রং বিরাজ করে ভাবনার গরমিলে, স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রই।
দাঁড়িয়ে থেকেও হেঁটে যাই!
আজকের না বলা কথা, কোনো দিন বলা হবে না
হবে না দাঁড়িয়ে আবার ভাবা আর একটু বসলে
ভালো হতো। যে বসিয়ে রাখে যে আশায় বসে থাকে
সবকিছুর-ই সময় থাকে---
এরপর---ইতিহাস!

রক্ত লাল
আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে
গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায়
ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের
জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
যা স্বভাববিদ্ধ, তবে কতটা উপকারী বা বাঁচিয়ে
রাখার নিরলস অভিপ্রায়। মানুষের তরে
প্রাণীর অফুরন্ত প্রাচুর্য বিস্তৃতকরণে, কিংবা
উদ্ভিদের অন্তিম প্রেমে বসন্তের অভিষেকে।
কতটা জ্বলতে হয় পরের জন্য, কতটা ফুটন্ত
শরীর নিয়ে চালিয়ে যায় সেবার পরিধি।
এক চিরন্তন শিক্ষা, আবার উদিত হয়
দিনের শুরুতে, বিদায় প্রান্তিক অপূর্ব
মায়ায়-দিনের শেষ প্রান্তে।
এতটুকু কার্পণ্য রেখে যায়নি, হয়তো মুখ
ফিরিয়ে নিবে না কোনো দিন। তবে ভাবনার
অন্তিমে শেষ দৃশ্যের সংলাপে ভেসে
ওঠে জনদরদি রাজার মুখ। যেখানে রক্ত ঝরে
বন্যার বেগে সেখানেও প্রতিদিন ফুল ফোটে ফুল হয়ে।
যত দেখি
যত দেখি তৃপ্ত হই, শীতল হয়ে
জড়িয়ে পড়ি তোমার সমস্ত শরীরে। এক অজানা
শিহরণ ছুঁয়ে যায় হৃদয়ের সমস্ত পৃষ্ঠা জুড়ে।
যেন দীর্ঘদিনের শুষ্কতা ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে দূরে।
হারিয়ে যাওয়া রস ফিরছে মূলে, নিয়ে যাচ্ছে আদিপর্বে।
যেমন নেয় নদীর কূল, জোয়ারের ফেনা।
ভাবনার অতলে অদ্ভুত মায়া, দীর্ঘক্ষণ মোহগ্রস্ত
করে রাখে চোখের পলক, তাকিয়ে থাকি মায়ার মায়ায়। কী অপরূপ মায়া!
সেখানেও দেখি তৃষ্ণার ব্যাকুলতা নিয়ে অপেক্ষারত কান্না।
জীবনের তল্লাটে হারিয়ে খুঁজি আজ
আমারও জীবন ছিল। মায়ায় ভরা নির্বিঘ্ন আয়োজন, কলমিলতার মতো নিষ্পাপ।
তৃপ্ত হই ঘাসে, বাতাসের বেহায়া আঘাতে
অভিমানের মোড়ক ছুড়ে ফেলে হাতে তুলে নেই
কচু পাতায় টলোমলো জলের লজ্জা। এ জীবনের চাহিদা তোমায় দেখার
প্রয়োজনে তপ্ত, হয় উত্তপ্ত অথবা সহ্যের অতীত শীতল।
এ যেন কেমন
গহিন অরণ্যে সবুজ পাতার মতো, মগজে
চিন্তার রাজ্যে ভাবের উদয়, আকুল বিন্যাসে
একটু একটু করে এগিয়ে নেয়, আবার ভরা কলসির
মতো বসিয়ে রাখে-ভবের রাজ্যে। একদিন সমস্ত ভাবনা থেকে মুক্ত হয়ে
এদিক-ওদিক চলন, জীবন্ত মরণ! মানুষ
কেন বাঁচে, কীভাবে বাঁচে-প্রশ্নের সমাধা
আজ তর্কপ্রিয় সন্ধানে, মূর্ত প্রার্থনা।
সকল প্রিয়জন পরিত্যাগে, নিগূঢ় যত্নে হৃদয়ে প্রবেশ করে
নিজের অপরিচিত চেহারা, সব জিজ্ঞাসার
অন্ত-ক্রিয়ার এক উচ্চতম বিলাস।
জীবনের মানে অর্থশুন্য ভবিতব্য! এ কী হয়?
চোখের পলকে নিষ্পাপ দৃশ্যলোক-পেছন ডাকে বারবার
যেখানে থাকে আবার দেখার ইচ্ছা, নামে যে মুক্তকরণ। মিলনকান্তির আবাস।
চতুর্মুখ সমীকরণে খেলে যায় সময়ের ঝাঁজালো সিদ্ধান্ত। কেউ কী অপ্রিয় হয় কারও?
যেখানে ভেসে ওঠে নীলপদ্ম, অতীতের নিটোল কিতাব। সে-তো মানুষের ছবি!
চলে আসুন সবজি বাজারে
মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে দেখেছি অনেক কিছু
যা মানুষের নয়। অ-মানুষের জন্ম-উত্তর বাঁচার
উপায় হতে পারে। পোশাকে সজ্জিত দেহ কতভাবে
হিংস্র হয়, গোপনে, অন্ধের গহনে।
প্রবেশের আগেই পেয়েছি সংকেত। কত নোংরা, পচা, আবর্জনায় ভরা একটি থালার মতো
পড়ে আছে সম্মুখে। কেউ কি দেখেছে?
হয়তো মেনে নিয়েছে সবাই, সবার আগে সে
যে ভেবেছে, কী বা আছে উপায়!
চারপাশে কত কিছুর ঘ্রাণ, চোখ যা বলে তা কি মেনে নেয় স্বাস্থ্যবার্তা
ফুটে আছে ফুলের মতো দোকানের পসরা। খেতে বা কেনায় বারণ বালাই নেই।
যা পাচ্ছে নিচ্ছে, অনেকে। কেউ গায়ে কেউ পেটে।
আহা! দেখার কেউ নেই!
এক অন্ধকারে হাঁটছে আমাদের পা।
কেউ কি আছে কোথাও, আলো নিয়ে হাতে? ভেবেছে কি কেউ
কেন আমাদের আয়োজনে সবাই নেই?
কেউ এসে শুধু একবার বলুক, এই নিন-আপনাদের জীবন টিকিট যা উত্তরণ।
চলে আসুন সবজির বাজারে, সবুজের খোঁজে।
ইতিহাস
আজ স্পষ্ট ঘোষণা, আমার চোখের সামনে কেউ নেই
নেই কেউ ভাবের অন্তিম ঘরে। এক অস্পৃশ্য অনুভব
ছুঁয়ে চলে, ভাসিয়ে দেয় অগণিত স্রোতের তুমুল আলিঙ্গনে।
আজ কিছু ভেবে বলছি না, সরাসরি জবাব---
আমি নই কারও!
সব বাতাসের সাথে মিশে থাকা চোখের প্রেম
ভাবনার বিলাসে জড়িয়ে পড়ার বাসনা----সকলের অগোচরে
অথবা সকলের মাঝে। জীবনের অর্থে হৃদয়ের গুড়গুড় আলাপ
ঘুটঘুটে অন্ধকারে হৃদয়ে খোলা আকাশ, শুধু
এক মুখচ্ছবি।
আজ কোনো ক্ষমা নেই---নিজের প্রতি! নিজের পাপে
হাঁটি আমি, সবার মাঝে একলা হয়ে। বেদনার
কালো রং নিয়ে। শুধু দেখে যাই, শুধু দেখতে যাই।
কত রং বিরাজ করে ভাবনার গরমিলে, স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রই।
দাঁড়িয়ে থেকেও হেঁটে যাই!
আজকের না বলা কথা, কোনো দিন বলা হবে না
হবে না দাঁড়িয়ে আবার ভাবা আর একটু বসলে
ভালো হতো। যে বসিয়ে রাখে যে আশায় বসে থাকে
সবকিছুর-ই সময় থাকে---
এরপর---ইতিহাস!

নাজিম সাহেব আয়েশ করে কফিতে চুমুক দিচ্ছেন, পাশে বডিগার্ড জয়নাল তাঁর জন্য টাওয়েল আর পাইপ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তিনি কফিটা শেষ করেই পাইপ নেবেন, গুনে গুনে ৬টা টান দেবেন, তারপর টাওয়েল নিয়ে বাথরুমের
৩১ আগস্ট ২০২২
হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’
১৩ নভেম্বর ২০২৫
প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
০৮ নভেম্বর ২০২৫
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
২০ অক্টোবর ২০২৫জন্মদিনের শ্রদ্ধাঞ্জলি
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’ জবাবে ফারুক বললেন, ‘কী আশ্চর্য ভাই?’ হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘এই যে প্রকৃতি, জোছনা, বৃষ্টি, নদী— কী সুন্দর! একদিন হয়তো আমি এসব আর দেখতে পারব না। একুশের বইমেলা হবে। লোকেদের ভিড়, আড্ডা; আমি সেখানে থাকব না। এটা কি মেনে নেওয়া যায়! হায় রে জীবন!’
‘আমার না বলা কথা’ বইয়ে ফারুক আহমেদ এই স্মৃতিচারণ করেছেন। লিখেছেন, ‘আমি কিছু না বলে মূর্তির মতো বসে রইলাম। একসময় তাকিয়ে দেখলাম, হুমায়ূন ভাইয়ের দুচোখের কোনায় পানি।’
হুমায়ূন আহমেদ নেই। তবে তিনি রয়েছেন দেশের তরুণদের মনে। যে বইমেলায় তিনি থাকবেন না বলে আক্ষেপ, সেই বইমেলায় তাঁর বইয়ের স্টলে তরুণদের ঢলের মধ্যে আছেন।
নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে হুমায়ূন আহমেদের জন্ম এই দিনে (১৩ নভেম্বর); ভারত ভাগের এক বছর পরে ১৯৪৮ সালে। ছোট সময়ে তাঁর নাম ছিল শামসুর রহমান। তাঁর বাবা ছেলেমেয়েদের নাম পাল্টে ফেলতেন। তাঁর নাম পাল্টে রাখেন হুমায়ূন আহমেদ। হিমু, মিসির আলি, শুভ্রর মতো চরিত্রের স্রষ্টা তিনি। শুধু কথাসাহিত্যেই নয়; ‘বহুব্রীহি’, ‘অয়োময়’, ‘কোথাও কেউ নেই’,
‘আজ রবিবার’-এর মতো নাটক বানিয়েছেন, তৈরি করেছেন ‘আগুনের পরশমণি’, ‘শ্যামল ছায়া’র মতো চলচ্চিত্র।
হুমায়ূন আহমেদ বৃষ্টি, জোছনা ভালোবাসতেন। তাঁর লেখায় সেসব উঠে এসেছে বারবার। ২০১২ সালের জুলাইয়ে বর্ষাতেই তিনি পাড়ি জমিয়েছিলেন ওপারে।
তিনি নেই। কিন্তু তাঁর লেখায় উঠে আসা চান্নিপসর, বৃষ্টি বিলাস আজও আছে তরুণদের মনে। ফারুক আহমেদ তাঁর ওই বইয়ে হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে আরেকটি স্মৃতিচারণ করেছিলেন এভাবে—‘এক বিকেলে শুটিং শেষে তাঁর প্রিয় লিচুগাছের দিকে তাকিয়ে আছেন হুমায়ূন। সেখানে ঝুলছে পাকা লিচু। তিনি তাঁর কেয়ারটেকার মুশাররফকে ডেকে গ্রামের ছোট ছেলেমেয়েদের ডেকে নিয়ে এলেন। তাদের বললেন, গাছে উঠে যে যত পারে লিচু খেতে। বাচ্চারা কেউ গাছে উঠে লিচু খাচ্ছে, হইচই করছে। কেউ পকেটে ভরছে। হুমায়ূন আহমেদ অবাক হয়ে সেই লিচু খাওয়া দেখতে লাগলেন।’
ফারুক আহমেদ লিখেছেন, ‘হুমায়ূন ভাই একসময় আমাকে বললেন, এমন সুন্দর দৃশ্য তুমি কখনো দেখেছো? এমন ভালো লাগার অনুভূতি কি অন্য কোনোভাবে পাওয়া যায়? আমি কী বলব বুঝতে পারছিলাম না। হঠাৎ বললাম, না ভাই এমন ভালো লাগার অনুভূতি কোনোভাবেই পাওয়া যায় না।’
হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন ঘিরে রাজধানীসহ জন্মস্থান নেত্রকোনাতে রয়েছে নানা আয়োজন। নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার রোয়াইলবাড়ি ইউনিয়নের কুতুবপুরে হুমায়ূন আহমেদ প্রতিষ্ঠিত শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ এবং এলাকাবাসীর উদ্যোগে এসব কর্মসূচি পালন করা হবে। সকালে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কোরআন খতম করবেন। এরপর শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ প্রাঙ্গণ থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, এলাকাবাসী এবং হুমায়ূনভক্তদের আনন্দ শোভাযাত্রা বের হবে। পরে লেখকের প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ, জন্মদিনের কেক কাটা, বৃক্ষরোপণ, কুইজ, হুমায়ূন আহমেদের রচিত নাটক ও সিনেমার অংশবিশেষ নিয়ে অভিনয়, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, পুরস্কার বিতরণ এবং আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া রাজধানীতে হুমায়ূন আহমেদের চলচ্চিত্র নিয়ে চলচ্চিত্র সপ্তাহ, হুমায়ূন প্রতিযোগিতা, হুমায়ূন জন্মোৎসব, টেলিভিশন চ্যানেলে নাটক ও অনুষ্ঠান প্রচারসহ নানা আয়োজনে মুখর থাকছে দিনটি।

হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’ জবাবে ফারুক বললেন, ‘কী আশ্চর্য ভাই?’ হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘এই যে প্রকৃতি, জোছনা, বৃষ্টি, নদী— কী সুন্দর! একদিন হয়তো আমি এসব আর দেখতে পারব না। একুশের বইমেলা হবে। লোকেদের ভিড়, আড্ডা; আমি সেখানে থাকব না। এটা কি মেনে নেওয়া যায়! হায় রে জীবন!’
‘আমার না বলা কথা’ বইয়ে ফারুক আহমেদ এই স্মৃতিচারণ করেছেন। লিখেছেন, ‘আমি কিছু না বলে মূর্তির মতো বসে রইলাম। একসময় তাকিয়ে দেখলাম, হুমায়ূন ভাইয়ের দুচোখের কোনায় পানি।’
হুমায়ূন আহমেদ নেই। তবে তিনি রয়েছেন দেশের তরুণদের মনে। যে বইমেলায় তিনি থাকবেন না বলে আক্ষেপ, সেই বইমেলায় তাঁর বইয়ের স্টলে তরুণদের ঢলের মধ্যে আছেন।
নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে হুমায়ূন আহমেদের জন্ম এই দিনে (১৩ নভেম্বর); ভারত ভাগের এক বছর পরে ১৯৪৮ সালে। ছোট সময়ে তাঁর নাম ছিল শামসুর রহমান। তাঁর বাবা ছেলেমেয়েদের নাম পাল্টে ফেলতেন। তাঁর নাম পাল্টে রাখেন হুমায়ূন আহমেদ। হিমু, মিসির আলি, শুভ্রর মতো চরিত্রের স্রষ্টা তিনি। শুধু কথাসাহিত্যেই নয়; ‘বহুব্রীহি’, ‘অয়োময়’, ‘কোথাও কেউ নেই’,
‘আজ রবিবার’-এর মতো নাটক বানিয়েছেন, তৈরি করেছেন ‘আগুনের পরশমণি’, ‘শ্যামল ছায়া’র মতো চলচ্চিত্র।
হুমায়ূন আহমেদ বৃষ্টি, জোছনা ভালোবাসতেন। তাঁর লেখায় সেসব উঠে এসেছে বারবার। ২০১২ সালের জুলাইয়ে বর্ষাতেই তিনি পাড়ি জমিয়েছিলেন ওপারে।
তিনি নেই। কিন্তু তাঁর লেখায় উঠে আসা চান্নিপসর, বৃষ্টি বিলাস আজও আছে তরুণদের মনে। ফারুক আহমেদ তাঁর ওই বইয়ে হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে আরেকটি স্মৃতিচারণ করেছিলেন এভাবে—‘এক বিকেলে শুটিং শেষে তাঁর প্রিয় লিচুগাছের দিকে তাকিয়ে আছেন হুমায়ূন। সেখানে ঝুলছে পাকা লিচু। তিনি তাঁর কেয়ারটেকার মুশাররফকে ডেকে গ্রামের ছোট ছেলেমেয়েদের ডেকে নিয়ে এলেন। তাদের বললেন, গাছে উঠে যে যত পারে লিচু খেতে। বাচ্চারা কেউ গাছে উঠে লিচু খাচ্ছে, হইচই করছে। কেউ পকেটে ভরছে। হুমায়ূন আহমেদ অবাক হয়ে সেই লিচু খাওয়া দেখতে লাগলেন।’
ফারুক আহমেদ লিখেছেন, ‘হুমায়ূন ভাই একসময় আমাকে বললেন, এমন সুন্দর দৃশ্য তুমি কখনো দেখেছো? এমন ভালো লাগার অনুভূতি কি অন্য কোনোভাবে পাওয়া যায়? আমি কী বলব বুঝতে পারছিলাম না। হঠাৎ বললাম, না ভাই এমন ভালো লাগার অনুভূতি কোনোভাবেই পাওয়া যায় না।’
হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন ঘিরে রাজধানীসহ জন্মস্থান নেত্রকোনাতে রয়েছে নানা আয়োজন। নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার রোয়াইলবাড়ি ইউনিয়নের কুতুবপুরে হুমায়ূন আহমেদ প্রতিষ্ঠিত শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ এবং এলাকাবাসীর উদ্যোগে এসব কর্মসূচি পালন করা হবে। সকালে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কোরআন খতম করবেন। এরপর শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ প্রাঙ্গণ থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, এলাকাবাসী এবং হুমায়ূনভক্তদের আনন্দ শোভাযাত্রা বের হবে। পরে লেখকের প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ, জন্মদিনের কেক কাটা, বৃক্ষরোপণ, কুইজ, হুমায়ূন আহমেদের রচিত নাটক ও সিনেমার অংশবিশেষ নিয়ে অভিনয়, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, পুরস্কার বিতরণ এবং আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া রাজধানীতে হুমায়ূন আহমেদের চলচ্চিত্র নিয়ে চলচ্চিত্র সপ্তাহ, হুমায়ূন প্রতিযোগিতা, হুমায়ূন জন্মোৎসব, টেলিভিশন চ্যানেলে নাটক ও অনুষ্ঠান প্রচারসহ নানা আয়োজনে মুখর থাকছে দিনটি।

নাজিম সাহেব আয়েশ করে কফিতে চুমুক দিচ্ছেন, পাশে বডিগার্ড জয়নাল তাঁর জন্য টাওয়েল আর পাইপ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তিনি কফিটা শেষ করেই পাইপ নেবেন, গুনে গুনে ৬টা টান দেবেন, তারপর টাওয়েল নিয়ে বাথরুমের
৩১ আগস্ট ২০২২
আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায় ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
২৩ নভেম্বর ২০২৫
প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
০৮ নভেম্বর ২০২৫
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
২০ অক্টোবর ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
মঞ্চনাট্যটি স্কলাস্টিকার প্রতিষ্ঠাতা ইয়াসমিন মুরশেদকে উৎসর্গ করা হয়।

স্কুলের এসটিএম মিলনায়তন প্রতিষ্ঠার রজতজয়ন্তী উদ্যাপনকে সামনে রেখে আয়োজিত এ নাট্যানুষ্ঠানের সমাপনী দিনে বিশেষ অতিথি ছিলেন নাট্যব্যক্তিত্ব আবুল হায়াত, দিলারা জামান ও আফজাল হোসেন। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার অধ্যক্ষ ফারাহ্ সোফিয়া আহমেদ।
হীরক রাজার দেশে নাটকটির নির্দেশনায় ছিলেন কাজী তৌফিকুল ইসলাম ইমন। প্রোডাকশন ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেন শৈলী পারমিতা নীলপদ্ম। সংগীত পরিচালনা করেন গাজী মুন্নোফ, ইলিয়াস খান ও পলাশ নাথ লোচন। নৃত্য পরিচালনায় ছিলেন শাম্মী ইয়াসমিন ঝিনুক ও ফরহাদ আহমেদ শামিম।
নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন নাজিফা ওয়াযিহা আহমেদ, আরিয়াদ রহমান, আজিয়াদ রহমান, বাজনীন রহমান, মোহম্মদ সফির চৌধুরী, ফাহিম আহম্মেদ, সৈয়দ কাফশাত তাইয়ুশ হামদ ও তাজরীবা নওফাত প্রমুখ।
শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকেরা অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের পরিবেশিত অভিনয়, গান ও নাচ উপভোগ করেন।

প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
মঞ্চনাট্যটি স্কলাস্টিকার প্রতিষ্ঠাতা ইয়াসমিন মুরশেদকে উৎসর্গ করা হয়।

স্কুলের এসটিএম মিলনায়তন প্রতিষ্ঠার রজতজয়ন্তী উদ্যাপনকে সামনে রেখে আয়োজিত এ নাট্যানুষ্ঠানের সমাপনী দিনে বিশেষ অতিথি ছিলেন নাট্যব্যক্তিত্ব আবুল হায়াত, দিলারা জামান ও আফজাল হোসেন। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার অধ্যক্ষ ফারাহ্ সোফিয়া আহমেদ।
হীরক রাজার দেশে নাটকটির নির্দেশনায় ছিলেন কাজী তৌফিকুল ইসলাম ইমন। প্রোডাকশন ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেন শৈলী পারমিতা নীলপদ্ম। সংগীত পরিচালনা করেন গাজী মুন্নোফ, ইলিয়াস খান ও পলাশ নাথ লোচন। নৃত্য পরিচালনায় ছিলেন শাম্মী ইয়াসমিন ঝিনুক ও ফরহাদ আহমেদ শামিম।
নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন নাজিফা ওয়াযিহা আহমেদ, আরিয়াদ রহমান, আজিয়াদ রহমান, বাজনীন রহমান, মোহম্মদ সফির চৌধুরী, ফাহিম আহম্মেদ, সৈয়দ কাফশাত তাইয়ুশ হামদ ও তাজরীবা নওফাত প্রমুখ।
শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকেরা অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের পরিবেশিত অভিনয়, গান ও নাচ উপভোগ করেন।

নাজিম সাহেব আয়েশ করে কফিতে চুমুক দিচ্ছেন, পাশে বডিগার্ড জয়নাল তাঁর জন্য টাওয়েল আর পাইপ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তিনি কফিটা শেষ করেই পাইপ নেবেন, গুনে গুনে ৬টা টান দেবেন, তারপর টাওয়েল নিয়ে বাথরুমের
৩১ আগস্ট ২০২২
আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায় ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
২৩ নভেম্বর ২০২৫
হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’
১৩ নভেম্বর ২০২৫
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
২০ অক্টোবর ২০২৫আজকের পত্রিকা ডেস্ক

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল। কিন্তু ভাষাবিদ ও সাহিত্য ইতিহাসবিদদের মতে, এই ধারণা আসলে পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি এক ‘ঔপনিবেশিক কল্পনা’ মাত্র। বাস্তবে আরবি সাহিত্য কখনোই থেমে যায়নি।
প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফাদের অধীনে বিজ্ঞান, দর্শন ও কবিতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বাগদাদ। আবু নুয়াস, আল-মুতানাব্বি, আল-ফারাবি ও ইবনে সিনার মতো কবি ও দার্শনিকদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এক স্বর্ণযুগ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় গবেষকেরা—যেমন ফরাসি চিন্তাবিদ আর্নেস্ট রেনাঁ ও ডাচ ইতিহাসবিদ রেইনহার্ট দোজি সেই আমলটিকেই আরবি বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের শিখর বলে স্বীকার করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, একাদশ শতাব্দীর পর এই ধারাবাহিকতার পতন ঘটে। তাঁদের মতে, এরপর প্রায় ৮০০ বছর আরবে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক বা দার্শনিক কাজ হয়নি—যতক্ষণ না ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু হয়।
কিন্তু আধুনিক গবেষকেরা বলছেন, এই ধারণা সরলীকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট। ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় শেখ জায়েদ বুক অ্যাওয়ার্ডের আয়োজিত এক আলোচনায় ভাষাবিদেরা দাবি করেছেন, আরবি রচনা শৈলী কখনো বিলুপ্ত হয়নি; বরং তা ধারাবাহিকভাবে কপি, অনুবাদ ও পাঠের মাধ্যমে বেঁচে ছিল।
জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলার তাঁর ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, আরবি সাহিত্যে ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে যে ধারণাটি প্রচলিত আছে তা আসলে গাল-গল্প। এই বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। গ্রুন্ডলার এতে দেখিয়েছেন, নবম শতাব্দীর বাগদাদে বইয়ের ব্যবসা, কপিকারদের প্রতিযোগিতা, জনসম্মুখে পাঠ ও লেখার প্রচলন—সবই ছিল আধুনিক প্রকাশনা সংস্কৃতির পূর্বসূরি। তিনি মত দিয়েছেন, ‘বাগদাদের রাস্তায় হাঁটলে আপনি দেখতেন লোকেরা হস্তলিপি বিক্রি করছে, বিরামচিহ্ন নিয়ে তর্ক করছে—এ যেন এক জীবন্ত প্রকাশনা বাজার।’
গবেষণা বলছে, আরবি সাহিত্য আসলে কখনো এক জায়গায় স্থির থাকেনি। এর কেন্দ্র এক সময় বাগদাদ থেকে কায়রো, দামেস্ক ও আন্দালুসিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু ধারাটি অব্যাহতই থাকে। নতুন ঘরানা তৈরি হয়, পুরোনো ঘরানা রূপান্তরিত হয়।
ফরাসি অধ্যাপক হাকান ওজকান তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ‘জাজাল’ নামের কথ্য ছন্দভিত্তিক কবিতার ধারা আব্বাসীয় যুগের পরও বিকশিত হতে থাকে। তাঁর মতে, ‘এই কবিরা নিয়ম ভেঙে নতুন রূপ দিয়েছে—তাঁদের ছন্দ ও ব্যঙ্গ আধুনিক র্যাপের মতো প্রাণবন্ত।’

এদিকে এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (২০ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, আবুধাবির নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘আরবি সাহিত্য লাইব্রেরি’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ‘হারানো শতাব্দী’ বলে বিবেচিত সময়ের ৬০ টিরও বেশি আরবি সাহিত্যকর্ম পুনরুদ্ধার করেছে। প্রকল্পটির সম্পাদক অধ্যাপক মরিস পোমেরান্টজ বলেছেন, ‘এই বইগুলো সম্পাদনা করা মানে এক চলমান সংলাপে অংশ নেওয়া—যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেখক, অনুবাদক ও সমালোচকেরা একে অপরকে উত্তর দিয়ে গেছেন।’
মরিস মনে করেন, আরবি সাহিত্য স্থবির হয়ে যাওয়ার ধারণাটি মূলত অনুবাদের অভাব থেকেই জন্ম নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো লেখা অনুবাদ করা হয় না, তখন সেটি বৈশ্বিক অস্তিত্ব হারায়।’
মরিসের মতে, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সাহিত্যকে আবার জনসাধারণের কল্পনায় ফিরিয়ে আনা—স্কুলে পড়ানো, মঞ্চে উপস্থাপন করা, অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। তা না হলে আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে চিহ্নিত সময়টি অধরাই থেকে যাবে।

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল। কিন্তু ভাষাবিদ ও সাহিত্য ইতিহাসবিদদের মতে, এই ধারণা আসলে পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি এক ‘ঔপনিবেশিক কল্পনা’ মাত্র। বাস্তবে আরবি সাহিত্য কখনোই থেমে যায়নি।
প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফাদের অধীনে বিজ্ঞান, দর্শন ও কবিতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বাগদাদ। আবু নুয়াস, আল-মুতানাব্বি, আল-ফারাবি ও ইবনে সিনার মতো কবি ও দার্শনিকদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এক স্বর্ণযুগ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় গবেষকেরা—যেমন ফরাসি চিন্তাবিদ আর্নেস্ট রেনাঁ ও ডাচ ইতিহাসবিদ রেইনহার্ট দোজি সেই আমলটিকেই আরবি বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের শিখর বলে স্বীকার করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, একাদশ শতাব্দীর পর এই ধারাবাহিকতার পতন ঘটে। তাঁদের মতে, এরপর প্রায় ৮০০ বছর আরবে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক বা দার্শনিক কাজ হয়নি—যতক্ষণ না ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু হয়।
কিন্তু আধুনিক গবেষকেরা বলছেন, এই ধারণা সরলীকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট। ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় শেখ জায়েদ বুক অ্যাওয়ার্ডের আয়োজিত এক আলোচনায় ভাষাবিদেরা দাবি করেছেন, আরবি রচনা শৈলী কখনো বিলুপ্ত হয়নি; বরং তা ধারাবাহিকভাবে কপি, অনুবাদ ও পাঠের মাধ্যমে বেঁচে ছিল।
জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলার তাঁর ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, আরবি সাহিত্যে ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে যে ধারণাটি প্রচলিত আছে তা আসলে গাল-গল্প। এই বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। গ্রুন্ডলার এতে দেখিয়েছেন, নবম শতাব্দীর বাগদাদে বইয়ের ব্যবসা, কপিকারদের প্রতিযোগিতা, জনসম্মুখে পাঠ ও লেখার প্রচলন—সবই ছিল আধুনিক প্রকাশনা সংস্কৃতির পূর্বসূরি। তিনি মত দিয়েছেন, ‘বাগদাদের রাস্তায় হাঁটলে আপনি দেখতেন লোকেরা হস্তলিপি বিক্রি করছে, বিরামচিহ্ন নিয়ে তর্ক করছে—এ যেন এক জীবন্ত প্রকাশনা বাজার।’
গবেষণা বলছে, আরবি সাহিত্য আসলে কখনো এক জায়গায় স্থির থাকেনি। এর কেন্দ্র এক সময় বাগদাদ থেকে কায়রো, দামেস্ক ও আন্দালুসিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু ধারাটি অব্যাহতই থাকে। নতুন ঘরানা তৈরি হয়, পুরোনো ঘরানা রূপান্তরিত হয়।
ফরাসি অধ্যাপক হাকান ওজকান তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ‘জাজাল’ নামের কথ্য ছন্দভিত্তিক কবিতার ধারা আব্বাসীয় যুগের পরও বিকশিত হতে থাকে। তাঁর মতে, ‘এই কবিরা নিয়ম ভেঙে নতুন রূপ দিয়েছে—তাঁদের ছন্দ ও ব্যঙ্গ আধুনিক র্যাপের মতো প্রাণবন্ত।’

এদিকে এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (২০ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, আবুধাবির নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘আরবি সাহিত্য লাইব্রেরি’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ‘হারানো শতাব্দী’ বলে বিবেচিত সময়ের ৬০ টিরও বেশি আরবি সাহিত্যকর্ম পুনরুদ্ধার করেছে। প্রকল্পটির সম্পাদক অধ্যাপক মরিস পোমেরান্টজ বলেছেন, ‘এই বইগুলো সম্পাদনা করা মানে এক চলমান সংলাপে অংশ নেওয়া—যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেখক, অনুবাদক ও সমালোচকেরা একে অপরকে উত্তর দিয়ে গেছেন।’
মরিস মনে করেন, আরবি সাহিত্য স্থবির হয়ে যাওয়ার ধারণাটি মূলত অনুবাদের অভাব থেকেই জন্ম নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো লেখা অনুবাদ করা হয় না, তখন সেটি বৈশ্বিক অস্তিত্ব হারায়।’
মরিসের মতে, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সাহিত্যকে আবার জনসাধারণের কল্পনায় ফিরিয়ে আনা—স্কুলে পড়ানো, মঞ্চে উপস্থাপন করা, অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। তা না হলে আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে চিহ্নিত সময়টি অধরাই থেকে যাবে।

নাজিম সাহেব আয়েশ করে কফিতে চুমুক দিচ্ছেন, পাশে বডিগার্ড জয়নাল তাঁর জন্য টাওয়েল আর পাইপ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তিনি কফিটা শেষ করেই পাইপ নেবেন, গুনে গুনে ৬টা টান দেবেন, তারপর টাওয়েল নিয়ে বাথরুমের
৩১ আগস্ট ২০২২
আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায় ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
২৩ নভেম্বর ২০২৫
হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’
১৩ নভেম্বর ২০২৫
প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
০৮ নভেম্বর ২০২৫