Ajker Patrika

অক্সফোর্ডের বর্ষসেরার তালিকায় স্থান পেল যে শব্দ

অক্সফোর্ডের বর্ষসেরার তালিকায় স্থান পেল যে শব্দ

আপনি যদি চ্যাটিংয়ে খুব ভালো হয়ে থাকেন বা সঙ্গীকে খুব দ্রুত পটিয়ে ফেলতে পারেন—তবে বুঝতে হবে আপনার মধ্যে ‘রিজ’ রয়েছে। 

অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেসের বর্ষসেরা শব্দ নির্বাচিত হওয়া ‘রিজ’ বলতে রোম্যান্টিক আবেদন বা আকর্ষণ বোঝায়। সাধারণত আজকালকার তরুণদের মধ্যে এ শব্দের ব্যবহার খুব বেশি চোখে পড়ে। 

২০২৩ সালে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত আটটি শব্দের একটি তালিকা প্রকাশ করেছে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস। নির্বাচিত এ আটটি শব্দ ২০২৩ সালে মানুষের মেজাজ, নীতি বা কোনো ধরনের কাজে বেশি জড়িত ছিল তাই প্রতিফলিত করে। 

অক্সফোর্ডের অভিধানবিদেরা চূড়ান্ত শব্দ বাছাই করার আগে এ অভিধার জন্য উপযোগী শব্দ বেছে নেওয়ার জন্য সাধারণ মানুষদের সুযোগ দেওয়া হয়। 

রিজ কী?
জেনারেশন জি না হলে ‘রিজ’ শব্দটি আপনার কাছে অর্থহীন মনে হতে পারে। তবে অনলাইন জগতে এটি বহুল ব্যবহৃত একটি শব্দ। এমনকি টিকটকে রিজ হ্যাশট্যাগের ভিডিও দেখেছেন কয়েকশ কোটি ব্যবহারকারী। 

অক্সফোর্ড ইংলিশ ডিকশনারির (ওইডি) প্রকাশক অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস (ওইউপি) শব্দটিকে সংজ্ঞায়িত করেছে—শৈলী, কমনীয়তা, দৃষ্টি আকর্ষণের ক্ষমতা এবং রোম্যান্টিক বা যৌন সঙ্গীকে আকর্ষণ করার ক্ষমতা হিসেবে। 

বলা হয় ইংরেজি ক্যারিশমা (charisma) শব্দটি থেকে ‘rizz’ শব্দটি এসেছে। 

শব্দটি কেবল বিশেষণ হিসেবেই নয় বরং ব্যবহার করা যায় ক্রিয়া হিসেবেও। ইংরেজিতে ‘to rizz up’ বলতে কাউকে আকর্ষণ করা, প্রলুব্ধ করা বা কাউকে চ্যাট করায় আগ্রহী করে তোলা বোঝাতে পারে। 

তালিকাভুক্ত অন্য শব্দগুলো হলো—
বিজ ফ্ল্যাগ (Beige flag) : এ শব্দটি দিয়ে এক ধরনের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য বোঝায়, যার অর্থ হলো সঙ্গী বা সম্ভাব্য সঙ্গী একঘেয়ে বা যার মধ্যে কোনো ধরনের মৌলিকতা নেই। এ ছাড়া এটি দ্বারা সঙ্গী বা সম্ভাব্য সঙ্গীর বৈশিষ্ট্য বা অভ্যাস ও বোঝানো হয়, যা স্পষ্টভাবে ভালোও নয় বা খারাপও নয়। 

সিচুয়েশনশিপ (Situationship) : এটি এমন ধরনের রোম্যান্টিক বা যৌনতা ভিত্তিক সম্পর্ককে বোঝায় যা স্বীকৃত বা প্রতিষ্ঠিত নয়। 
প্যারাসোশ্যাল (Parasocial) : এ শব্দটি একতরফা সম্পর্ককে নির্দেশ করে। সাধারণত ভক্ত ও জনপ্রিয় ব্যক্তি বা তারকাদের মধ্যে এ ধরনের সম্পর্ক দেখা যায়। এতে ভক্তের মনে হয় জনপ্রিয় ব্যক্তিটির সঙ্গে তার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। 

হিট ডোম (Heat dome) : একটি নির্দিষ্ট এলাকায় অতিরিক্ত তাপমাত্রা তৈরি হওয়া।

সুইফটি (Swiftie) : আমেরিকান সংগীত শিল্পী টেলর সুইফটের অতি উৎসাহী ভক্ত। 

প্রম্পট (Prompt) : কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রোগ্রাম বা অ্যালগরিদমকে দেওয়া নির্দেশনা, যা অনুসারে এটি কনটেন্ট তৈরি করে। 

ডি–ইনফ্লুয়েন্সিং (De-influencing) : সামাজিক যোগযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে মানুষকে কোনো বিশেষ পণ্য কিনতে নিরুৎসাহিত করার ক্ষেত্রে বা বস্তুগত ভোগ কমাতে উৎসাহিত করার ক্ষেত্রে এ শব্দটি ব্যবহৃত হয়। 
 
এ ছাড়া অন্য যেসব শব্দ রয়েছে সেগুলোও অভিধানে যুক্ত করা হতে পারে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে শব্দগুলোর ব্যবহারের প্রবণতা বিবেচনা করা হবে। 

অক্সফোর্ড ল্যাঙ্গুয়েজেজের প্রেসিডেন্ট ক্যাসপার গ্র্যাথওল বলেন, ‘গবলিন মোড’ শব্দটি মহামারির পর বেশির ভাগ মানুষের সঙ্গে বেশ সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল। এখন আবার এর বিপরীত ভাব সম্পন্ন রিজ শব্দের আবির্ভাবের বিষয়টি বেশ মজার। 

তিনি বলেন, এ শব্দটি ২০২৩ সালে আমাদের মনমেজাজকে প্রতিফলিত করে। অর্থাৎ চ্যালেঞ্জিং কয়েক বছর কাটানোর পর মানুষ এখন অন্যের কাছে নিজেকে তুলনামূলক বেশি প্রকাশ করছে এবং নিজের মধ্যে আত্মবিশ্বাস খুঁজে পেয়েছে। 

গ্র্যাথওল আরও বলেন, রিজ শব্দটির ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় প্রমাণিত হয় যে, ইন্টারনেট সংস্কৃতি থেকে আসা শব্দ ও শব্দগুচ্ছ ক্রমেই আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অংশ হয়ে উঠছে। 

তালিকার আটটি শব্দ বাছাই করেছেন অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেসের ভাষা বিশেষজ্ঞরা। 

গত জুনে হলিউড অভিনেতা টম হল্যান্ডকে তাঁর ‘রিজ’–এর রহস্য সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়। হল্যান্ড তখন বলেন, ‘আমার কোনো রিজ নেই। আমার রিজ খুবই সীমিত।’ পরে তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন, প্রেমিকা জেন্ডায়ার মন জয় করার জন্য বেশ দীর্ঘসময় লেগেছিলই তাঁর।

গত বছর অক্সফোর্ডের নির্বাচিত সেরা শব্দ ছিল ‘গবলিন মোড’। এর মানে হলো, আপসহীনভাবে আনন্দহীন, অলস বা লোভী আচরণ করে যাওয়া।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

রাজবাড়ী বধ্যভূমি

সম্পাদকীয়
রাজবাড়ী বধ্যভূমি

রাজবাড়ী শহরেই অবস্থিত বিনোদপুর লোকোশেড। বলা হয় রাজবাড়ী জেলার সবচেয়ে বড় বধ্যভূমি এটি—রাজবাড়ী বধ্যভূমি বা বিনোদপুর লোকোশেড বধ্যভূমি নামে পরিচিত। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বিনোদপুরের লোকোশেড এলাকায় ক্যাম্প বসিয়েছিল। তারা শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে অসংখ্য মানুষকে ধরে এনে হত্যা করে লোকোশেডের পুকুরে ফেলে দিত। এমনকি রাজবাড়ী রেলওয়ে স্টেশনে যাত্রীবাহী ট্রেন থামলে সেই ট্রেন থেকেও সন্দেহভাজন মুক্তিকামী বাঙালিদের ধরে নিয়ে আসত লোকোশেড ক্যাম্পে। তাদের সহায়তা করতে দোসররা তো ছিলই। আর ক্যাম্পে আনা বাঙালিদের ভাগ্যে জুটত নির্মম নির্যাতন। এরপর হত্যা। এবং মৃতদেহগুলোর জায়গা হতো সেই পুকুরেই। দুই দশক আগে সরকারি অর্থায়নে সেই শহীদদের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য বধ্যভূমি এলাকায় নির্মিত হয়েছে একটি স্মৃতিশৌধ।

ছবি: মো. সাকিবুল হাসান, উইকিপিডিয়া

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

লেখা ছেড়ে দেওয়া বিষয়ে

সম্পাদকীয়
লেখা ছেড়ে দেওয়া বিষয়ে

ভালো-মন্দ সব জায়গাতেই আছে। সাহিত্য জগতেও যে ভালো মানুষ পাইনি, তা তো নয়। একজন লেখক অসম্ভব স্পর্শকাতর এবং সংবেদনশীল মানুষ। লেখালেখি বিষয়টাই তো সাংঘাতিক স্পর্শকাতর—লেখক এবং লেখা উভয়েই সামান্য কারণে আহত হয়!

...লেখালেখি বিষয়টি একজন লেখকের কাছে সবচেয়ে কোমল আর সূক্ষ্ম অনুভূতি দাবি করে, সবচেয়ে গভীর মনোযোগ দাবি করে, আমার তো এ-ও মনে হয় যে ধ্যানমগ্নতা ছাড়া একজনের পক্ষে লেখকই হওয়া সম্ভব নয়। তো সতীর্থদের নোংরামি দেখে, ভণ্ডামি দেখে, বদমায়েশি দেখে কি একজন প্রকৃত লেখকের আহত হওয়ার কথা নয়?

...আমি তো সব সময় বিশ্বাস করে এসেছি—শিল্পীদের লোভ থাকতে নেই। লোভ থাকলে শিল্প হয় না, যেমন হয় না অসৎ মানুষেরও। শিল্পীর সততা থাকাটা খুব জরুরি, আমি বলব অপরিহার্য। যাই হোক, আমি শুধু সাহিত্য জগতের ভণ্ডামি দেখে লেখালেখি থেকে দূরে সরে এসেছি, সেটা বলা ঠিক হবে না। এটা একটা কারণ ছিল বটে, তবে আরও কারণ নিশ্চয়ই আছে।

আগেই তো তোমাকে বলেছি, আমি শেষের দিকে এসে একঘেয়েমিতে ভুগছিলাম। তা ছাড়া একটা সময় এসব কিছুকেই ভীষণ অর্থহীন মনে হলো আমার কাছে। কী করছি, কেন করছি, এসবের ফলাফল কী, আদৌ এসব করার কোনো অর্থ হয় কি না—এই সব আরকি! সব মিলিয়ে লেখালেখিটা আর ভালো লাগেনি। অবশ্য একবারে পরিকল্পনা করে, সিদ্ধান্ত নিয়ে লেখালেখি বন্ধ করেছিলাম, তা নয়। এ রকম তো সব লেখকেরই হয় যে মাঝে মাঝে ক্লান্তি আসে, মাঝে মাঝে বিশ্রাম নিতে ইচ্ছে করে, মাঝে মাঝে বন্ধ্যত্বও দেখা দেয়। আমার সেটাই হয়েছিল। কিন্তু সব লেখকই সেই সময়টি পেরিয়ে আবার লেখালেখিতে আসেন। আমার আর ফিরে আসা সম্ভব হয়নি। আর এখন তো শারীরিক কারণেই অনেক কিছু করা সম্ভব হয় না। যে উদ্দাম জীবন আমি যাপন করেছি, সেটা শুনলে তোমরা অবাক হয়ে যাবে, আর এখন তো দিনের পর দিন ঘরে বন্দী হয়ে থাকি, বেরুতেই পারি না...

সূত্র: আহমাদ মোস্তফা কামাল কর্তৃক মাহমুদুল হকের সাক্ষাৎকার গ্রহণ, ‘হিরণ্ময় কথকতা’, পৃষ্ঠা ৯০-৯১

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ন্যাশনাল জুট মিলস বধ্যভূমি

সম্পাদকীয়
ন্যাশনাল জুট মিলস বধ্যভূমি

একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের শেষ প্রহর। গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ উপজেলায় ১ ডিসেম্বর চলে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বর্বর গণহত্যা। শীতলক্ষ্যার পশ্চিম পারে খলাপাড়া গ্রামে ‘ন্যাশনাল জুট মিলস লি.’ নামে যে কারখানাটি অবস্থিত, সেখানেই নারকীয়ভাবে হত্যা করা হয় মুক্তিযোদ্ধাসহ মিলের মুক্তিকামী শ্রমিক-কর্মচারীদের। শতাধিক বাঙালিকে লাইনে দাঁড় করিয়ে ব্রাশফায়ার করে পাকিস্তানি সেনারা। তাঁদের অপরাধ ছিল একটাই—মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণের পরিকল্পনা করা। গণহত্যার পর হানাদার বাহিনী মিলের দক্ষিণ দিকের দেয়াল ভেঙে চলে যায়। মরদেহগুলো তিন-চার দিন মিলের সুপারিবাগানে পড়ে থাকে। শিয়াল-শকুন খুবলে খায় সেগুলো। দেশ স্বাধীন হলে গ্রামবাসী মিলের ভেতরে গিয়ে ১৩৬ জনের লাশ পান। মিলের দক্ষিণ পাশে ১০৬ জনের মৃতদেহকে গণকবরে শায়িত করা হয়। বাকিদের মরদেহ নিয়ে যান স্বজনেরা। ১৯৯৬ সালে শহীদদের সম্মানে মিল কর্তৃপক্ষ ‘শহীদ স্মরণে’ স্মৃতিফলকটি নির্মাণ করে গণকবরের জায়গাটিতে।

ছবি: সংগৃহীত

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বধ্যভূমি ৭১

সম্পাদকীয়
বধ্যভূমি ৭১

মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলের ভানুগাছ সড়কে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সেক্টর হেডকোয়ার্টার্স-সংলগ্ন ভুরভুরিয়াছড়ার পাশেই বধ্যভূমি ৭১ পার্ক অবস্থিত। সেখানে প্রাচীন একটি বটগাছ রয়েছে, যা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সাক্ষ্য বহন করে। পাকিস্তান আমলে গাছটির নিচে ছিল এক সাধুর আস্তানা। চা-শ্রমিক ও বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন এখানে এসে পূজা দিত, মনোবাসনা পূরণে মানত করত। সবাই জায়গাটিকে চিনত ‘সাধু বাবার থলি’ নামে। যুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের ধরে এখানে এনে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। হত্যার আগে বটগাছের ডালে ঝুলিয়ে তাঁদের ওপর অমানবিক অত্যাচার চালানো হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের স্বজন ও মুক্তিকামী সাধারণ মানুষও বাদ যাননি। গাছের ডালে উল্টো করে বেঁধে রাখা হতো তাঁদের। নির্যাতনের যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে তাঁরা শহীদ হন। সেই সব শহীদের ত্যাগকে অমর করে রাখতে এখানে নির্মিত হয় ‘বধ্যভূমি ৭১’ নামের স্মৃতিস্তম্ভটি। একাত্তরের স্মৃতিবিজড়িত বধ্যভূমিটিতে আরও রয়েছে ‘মৃত্যুঞ্জয়ী ৭১’ নামে একটি ভাস্কর্য।

ছবি: সংগৃহীত

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত