Ajker Patrika

নাদাল পেরেছেন, জোকোভিচও আছেন

রহমান মৃধা
নাদাল পেরেছেন, জোকোভিচও আছেন

লেখাপড়া আর চাকরি করা—এই আমাদের পৃথিবী। এর বাইরেও জগৎ আছে, তা কি জানি না! যে কাজটি করার কথা ছিল গত ইউএস ওপেনে জোকোভিচের, তা সম্ভব হয়নি। সে কাজই সম্পন্ন করলেন রাফায়েল নাদাল; টেনিস দুনিয়ায় নতুন বিশ্ব রেকর্ড গড়ে। 

পৃথিবী সৃষ্টির পর থেকেই প্রতিযোগিতা শুরু। টিকে থাকার প্রতিযোগিতা দিয়েই মানুষের যাত্রা। তার পর উদ্ভাবনের প্রতিযোগিতা, ধর্মের প্রতিযোগিতা, রূপ ও গুণের প্রতিযোগিতা। বড়লোক হওয়ার প্রতিযোগিতা, ভালোবাসার প্রতিযোগিতা—এমনকি ঘৃণারও প্রতিযোগিতা বিরাজমান সারা বিশ্বে। 

খেলাধুলার প্রতিযোগিতা তো সর্বজনস্বীকৃত। খেলাধুলায় দুটি দলের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সৃষ্টি হয়, সৃষ্টি হয় বিনোদনের, গড়ে উঠে উত্তেজনা, উদ্দীপনা এবং সবশেষে জয়-পরাজয়ের মধ্য দিয়ে শেষ হয় তা। বিজয় অর্জনে দরকার সাহসিকতার এবং খেলতে দরকার সহযোগিতা। যুগ যুগ ধরে খেলাধুলোর মধ্য দিয়ে নির্ধারিত হয় সেরাদের মধ্যে সেরা কে, যাকে বলে বিশ্বসেরা। এর মধ্যে কেউ আবার বিশ্ব রেকর্ড গড়ে নিজের নামটি অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যান। 

পৃথিবী সৃষ্টির পর শুধু দৌড় প্রতিযোগিতায় কতবার বিশ্ব রেকর্ড হয়েছে তা-কি আমরা জানি? ১০০ মিটার দৌড়ে রেকর্ড গড়ে উসাইন বোল্ট তো নিজেই এক প্রতীকে পরিণত হয়েছেন। অতিসত্বর চীনে শুরু হতে যাচ্ছে উইন্টার অলিম্পিক, দেখা যাক এমন কেউ আছে কি-না, যিনি নতুন করে রেকর্ড বইয়ে নাম লেখাতে পারবেন। 

আজ আমি টেনিসের জগৎ এবং তার রেকর্ড এবং ভবিষ্যৎ রেকর্ড নিয়ে আলোচনা করব। অন্যান্য খেলাধুলোর মতো টেনিসেও বিশ্ব রেকর্ড বা খ্যাতি অর্জন করা সম্ভব। 

কথায় বলে ‘everything is impossible until someone makes it possible’. যেমন পৃথিবী সৃষ্টির পর পুরুষদের মধ্যে প্রথম যিনি টেনিসে সবচেয়ে বেশি গ্র্যান্ড স্ল্যাম জেতেন, তিনি হলেন রজার ফেদেরার। গ্র্যান্ড স্ল্যাম হলো চারটি বড় স্ল্যাম টুর্নামেন্ট। এগুলো হলো অস্ট্রেলিয়ান ওপেন, ফ্রেঞ্চ ওপেন, উইম্বলডন এবং ইউএস ওপেন। এ টুর্নামেন্টগুলোকে বেশি পয়েন্ট, ঐতিহ্য, প্রাইজমানি ও জনপ্রিয়তার ভিত্তিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ টেনিস ইভেন্ট হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই বড় টুর্নামেন্টগুলোই একের পর এক জিতে বাজিমাত করেছিলেন ফেদেরার। প্রথমে যা অবিশ্বাস্য মনে হয়েছিল, এখন তা-ই যেন সাধারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে তিনজন বিশ্বসেরা খেলোয়াড় ২০টি করে গ্র্যান্ড স্ল্যাম শিরোপা অর্জন করেছেন। এবং তাঁরা তিনজনই টেনিসের জগতে কিংবদন্তি হিসেবে স্বীকৃত, যারা এখনো খেলেই যাচ্ছেন। এবারের বছরের শুরুতে যে গ্র্যান্ড স্ল্যামটি শুরু হয়েছে, সেটা হলো অস্ট্রেলিয়ান ওপেন। ভাবতে অবাক লাগে একবার নয়, দুবার নয়, ২০ বার গ্র্যান্ড স্ল্যাম বিজয়ী বর্তমান তিনজন রয়েছেন একই সারিতে এবং তিনজনই সক্রিয় খেলোয়াড়। তাঁরা হলেন রজার ফেদেরার, রাফায়েল নাদাল ও নোভাক জোকোভিচ। এবারের অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে এই তিনজনের মধ্যে শুধু নাদাল খেলেছেন। ফেদেরার ইনজুরির কারণে যোগ দিতে পারেননি। অন্যদিকে জোকোভিচ করোনা টিকা না নেওয়ায় অস্ট্রেলিয়া সরকার তাঁর ভিসা বাতিল করে দেয়। ফল—শিরোপা নাদালের হাতে। তাঁর ঝুলিতে এখন ২১টি গ্র্যান্ড স্ল্যাম শিরোপা। 

যেহেতু খেলাধুলোয় রয়েছে প্রতিযোগিতা, সেহেতু ‘পুল অ্যান্ড পুশ’ কনসেপ্টটি ভীষণভাবে কাজ করে এখানে। টেনিসের জগতে বিশ্বের তিনজন নামকরা সুপারস্টার রজার ফেদেরার, রাফায়েল নাদাল ও নোভাক জোকোভিচ পরস্পরকে সারাক্ষণ ‘পুল অ্যান্ড পুশ’ করছেন। আর এরই ফল হিসেবে একই সময়ে তিনজন কিংবদন্তিকে পেয়েছে বিশ্ব। 

বর্তমানের টেনিসে যা বেশি লক্ষণীয়, তা হলো শারীরিক যোগ্যতা। যেহেতু রজারের বয়স ৪০-এর বেশি; শারীরিক দিক দিয়ে আগের মতো পারদর্শিতা দেখাতে পারছেন না। তারপরও তাঁকে টেনিস কোর্টে সবাই দেখতে চায়; কারণ তিনি কিংবদন্তি এবং টেনিসে সেরাদের মধ্যে সেরা। 

নাদালের বয়সও কম নয়। আবার তাঁর খেলার যে ধরন, তাতে শারীরিক দক্ষতা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। শিরোপা জয় দিয়েই দেখিয়ে দিলেন, এখনো দারুণ তিনি। কিন্তু বলা কঠিন, আসলেই কী অবস্থা তাঁর। তবে জোকোভিচের বর্তমান খেলার কৌশল, শারীরিক দক্ষতা এবং খেলার পারফরমেন্স দেখে মনে হচ্ছে, তিনিই ভবিষ্যৎ টেনিসে সবচেয়ে বেশি গ্র্যান্ড স্ল্যাম রেকর্ডধারী হয়ে থাকবেন অনেক দিন। কত দিন এই রেকর্ড ধরে রাখবেন সেটা নয়, প্রশ্ন এখন কত বছর ধরে রাখবেন? নতুন প্রজন্মের খেলা দেখে যতটুকু মনে হচ্ছে, তাতে বলতে চাই বারবার একই খেলোয়াড় সেরা ট্রফি জয়ী হবে বলে মনে হচ্ছে না। কারণ, প্রতিযোগিতার যুগে বলা মুশকিল কে, কখন, কাকে, কীভাবে পরাজিত করে! 

রজার ফেদেরার, নোভাক জোকোভিচ ও রাফায়েল নাদাল—একসঙ্গে তিন বিশ্বসেরা খেলোয়াড়কে পেয়েছে বিশ্বআমি কিছুদিন আগে লিখেছি টেনিস এবং রজার ফেদেরার ও জোকোভিচকে নিয়ে। রজার ফেদেরারের টেনিস ক্যারিয়ারও একদিন শেষ হবে। প্রশ্ন হলো কবে, কখন ও কোথায়? তবে রজার ফেদেরারের টেনিসের প্রতি যে আসক্তি, তা শুধু তাঁর খেলা দেখলেই বোঝা যায়। রজার শুধু বিশ্বের সেরা টেনিস খেলোয়াড়ই নন, তিনি টেনিস কোর্টের ‘আনন্দ’। তিনি সবার হৃদয়ের এক ভালোবাসার নাম। একদিন টেনিস জগৎ তাঁকে ছাড়া টেনিস খেলবে, হয়তো তাঁর কথাও ভুলে যাবে সময়ের সঙ্গে। নতুন চ্যাম্পিয়নের জন্ম হবে ঠিকই, তবে আমার মনে হয় রজার ফেদেরার সবার হৃদয়ে টেনিসের আইকন হয়ে বেঁচে থাকবেন অনেক দিন। 

তবে যে বিষয়টি এখন তুলে ধরব, তা হয়তো নতুন ইতিহাসের এক পূর্বাভাস। সেটা আবার কী? রজার বা নাদাল যত সহজে বিশ্ববাসীর মন জয় করেছেন, জোকোভিচের পক্ষে সেটা তত সহজ হয়নি। কারণ একটাই, সেটা হলো জোকোভিচের জন্ম হয়েছে ইস্ট ব্লকে। পশ্চিমা দেশগুলো খুব সহজে পূর্ব ইউরোপের কারও প্রতিভা মেনে নিতে এখনো অভ্যস্ত হয়নি, বিশেষ করে টেনিসে। 

কিন্তু তাতে কিছু যায়-আসে বলে মনে হয় না। কারণ, জোকোভিচ ২০টি গ্র্যান্ড স্ল্যাম শিরোপা জিতে যদি ২১ তম শিরোপাটি অর্জন করতে পারেন, তখন সব ভুলে বিশ্ব তাঁকেই বরণ করবে সর্বকালের সেরা টেনিস খেলোয়াড় হিসেবে। যদিও আপাতত ঘটনার মোড় ঘুরে গেল। জোকোভিচ নন, ফেদেরার নন, নাদাল অস্ট্রেলিয়ান ওপেন জয় করে ২১ তম শিরোপাটা অর্জন করলেন। কী দারুণ এক অর্জন! 

জোকোভিচের সময় কিন্তু ফুরিয়ে যায়নি। তিনি যদি এভাবে খেলতে থাকেন, তাহলে কম করে হলেও আরও ৪-৬টি গ্র্যান্ড স্ল্যাম শিরোপা অর্জন করবেন বলে আমার বিশ্বাস। প্রশ্ন হলো কে, কবে, কখন তাঁকে টপকে নতুন বিশ্ব রেকর্ড সৃষ্টি করবে? উত্তরটি কিংবা তার আভাস অন্তত এখন দেখা যাচ্ছে না।

এ লেখায় টেনিস কেন এত বেশি করে উঠে এল—এমন প্রশ্ন হতেই পারে। আমার ছেলেমেয়ে এর বড় কারণ। বিশেষ করে আমার ছেলে জনাথন মৃধা। খুব ইচ্ছে ছিল সে বাংলাদেশের হয়ে টেনিস খেলবে। সেখানে বাংলার পতাকা উড়বে। কিন্তু রাষ্ট্রের সহযোগিতার অভাবে সুইডেনের হয়ে খেলে চলেছে। 

প্রশ্ন হলো—আমরা কবে লাল-সবুজের পতাকা দেখতে পাব বিশ্বাঙ্গনে। কীভাবে সেটা সম্ভব! উত্তর সহজ—সৃষ্টিশীল হতে হবে। শুধু কানাডার পরিকাঠামোর দিকে তাকালেই বিষয়টি বোঝা সম্ভব। বিশেষ করে তাদের ফুটবল নিয়ে পরিকল্পনার দিকে তাকালে বিষয়টি সহজে বোঝা যাবে। যে দেশে বাংলাদেশের অর্থে বেগম পাড়া গড়ে উঠেছে এবং যারা এর পেছনে জড়িত, তাঁরা অতি সহজে কানাডাকে অনুসরণ করতে পারেন। কানাডা লেখাপড়ার সঙ্গে খেলাধুলোয় গুরুত্ব দিয়েছে এত বেশি যে, তাদের প্রতিটি জাতীয় একাডেমি থেকে সৃজনশীল খেলোয়াড় তৈরি হচ্ছে গত দশ বছর ধরে। বর্তমান বিশ্বে প্রচলিত ও জনপ্রিয় সব খেলায় কানাডার অবদান লক্ষণীয়। 

আমরা ফুটবলার হান্ট একাডেমির কাজ শুরু করেছি। ধীর গতিতে চলছে আমাদের কাজ রাষ্ট্রীয় পরিকাঠামোর দুর্বলতার কারণে। লেখাপড়ার সঙ্গে খেলাধুলার সম্পৃক্তি ঘটাতে না পারলে মানসম্পন্ন জীবন, শিক্ষা ও ফুটবলকে বিশ্বাঙ্গনে আনা সম্ভব হবে না। 

জন্মের সূচনালগ্ন থেকে বাংলাদেশ এক স্বপ্নতাড়িত দেশ। স্বাধীন দেশ হিসেবে সোনার বাংলা গড়ার যে স্বপ্ন আমরা দেখেছিলাম, স্বাধীনতার এত বছর পরও সেই স্বপ্ন অর্জিত হয়নি। এটা অনস্বীকার্য যে, দেশের বিশাল জনগোষ্ঠীর জন্য একটা দক্ষ ও সুশিক্ষিত নাগরিক সমাজ গঠন করতে হলে যে কার্যকর শিক্ষা, কর্ম, খেলাধুলাসহ নৈতিকতার প্রয়োজন, আমরা তা এখনো গড়ে তুলতে সক্ষম হইনি। দেশের প্রতিটি উন্নয়ন-রূপকল্পের ভিত্তিমূলেই রয়েছে বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নের প্রতিধ্বনি। কিন্তু স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে সবার সক্রিয় উদ্যোগ প্রয়োজন। 

২০৩৪ সালের ফুটবল বিশ্বকাপে বাংলাদেশের অংশগ্রহণের স্বপ্ন বাস্তবে পরিণত হওয়া সম্ভব। সম্ভব হবে না এমনটি না ভেবে, বরং ভাবতে হবে কীভাবে এই স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করা যায়। 

এই মুহূর্তে দূর থেকে আমি ৬৮ হাজার গ্রামের কথা ভাবছি। ভাবছি, ৬৪টি জেলার কথা। আমি নতুন প্রজন্মের কথা ভাবছি, আমি সোনার বাংলার কথা ভাবছি। আমি মানুষের কথা ভাবছি। আমি ক্রীড়া জগতে লাল-সবুজের পতাকা উড়তে দেখতে চাই। আমি শুনতে চাই আমার জাতীয় সংগীত—‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’। 

লেখক: সাবেক পরিচালক, প্রোডাকশন অ্যান্ড সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট, ফাইজার, সুইডেন
ই-মেইল: [email protected]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনএসআইয়ের ১৩ কর্মকর্তার দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক

বিএনপির সময় গণমাধ্যম তুলনামূলক বেশি স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল: প্রথম আলো সম্পাদক

‘আমি ওর সঙ্গে এক মিনিট কথা বলতে চাই, শুধু এক মিনিট’

আন্দোলনের মুখে রাবিতে আওয়ামীপন্থী ছয় ডিনের পদত্যাগ

হাদি হত্যা: ফয়সালসহ সংশ্লিষ্টদের অ্যাকাউন্টে ১২৭ কোটি টাকার লেনদেন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

রহনপুর গণকবর

সম্পাদকীয়
রহনপুর গণকবর

চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর রেলস্টেশনের কাছেই রয়েছে একটি বধ্যভূমি। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে সহযোগীদের সহায়তায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী রহনপুর ও আশপাশের এলাকার মুক্তিযোদ্ধা এবং অনেক সাধারণ বাঙালিকে এই বধ্যভূমিতে বিভিন্ন সময় ধরে এনে হত্যা করে। শহীদদের সংখ্যাটা প্রায় ১০ হাজার! রহনপুর সরকারি এ বি উচ্চবিদ্যালয়ে ছিল পাকিস্তানিদের ক্যাম্প। এখানেও শত শত মানুষকে ধরে এনে হত্যা করা হয়। বধ্যভূমির যে স্থানে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে, সেখানেই শহীদদের সম্মানে নির্মিত হয়েছে একটি স্মৃতিস্তম্ভ। এই বধ্যভূমিটি রহনপুর শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের গণকবর নামে পরিচিত।

ছবি: সংগৃহীত

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনএসআইয়ের ১৩ কর্মকর্তার দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক

বিএনপির সময় গণমাধ্যম তুলনামূলক বেশি স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল: প্রথম আলো সম্পাদক

‘আমি ওর সঙ্গে এক মিনিট কথা বলতে চাই, শুধু এক মিনিট’

আন্দোলনের মুখে রাবিতে আওয়ামীপন্থী ছয় ডিনের পদত্যাগ

হাদি হত্যা: ফয়সালসহ সংশ্লিষ্টদের অ্যাকাউন্টে ১২৭ কোটি টাকার লেনদেন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ইলিয়াসের সাক্ষাৎকার প্রসঙ্গে শাহাদুজ্জামান

সম্পাদকীয়
ইলিয়াসের সাক্ষাৎকার প্রসঙ্গে শাহাদুজ্জামান

আমার সৌভাগ্য হয়েছিল আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ঘনিষ্ঠ হওয়ার। হাসান আজিজুল হকের সূত্রেই পরিচয় হয়েছিল তাঁর সঙ্গে। পরে তাঁর সঙ্গে প্রচুর আড্ডা দেওয়ার সুযোগ হয়েছিল। তিনি ছিলেন তুমুল আড্ডাবাজ মানুষ। আর তাঁর সঙ্গে জগৎ সংসারের যেকোনো বিষয়ে আলাপ করা যেত। এমন কোনো বিষয় নেই যাতে তাঁর আগ্রহ নেই। তাঁর সাক্ষাৎকারে এমন কিছু প্রসঙ্গে আলাপ করেছি, যা হয়তো অত স্বচ্ছন্দে হাসান আজিজুল হকের সঙ্গে করতে পারতাম না। যেমন ধরেন যৌনতা-সংক্রান্ত প্রশ্নগুলো। তবে আড্ডাবাজ ব্যক্তিত্বের জন্যও তাঁর সাক্ষাৎকারটি হয়েছে অনেক প্রাণবন্ত। তাঁকে তো বাম ঘরানার লেখকই ধরা হয়, মার্ক্সবাদে তাঁর বিশ্বাস ছিল। তবে তিনি কিন্তু গোঁড়া মার্ক্সবাদী ছিলেন না।

আমি এ ব্যাপারটিও তাঁর সঙ্গে খোলাসা করার জন্য আলাপ করেছি। সোশ্যালিস্ট রিয়েলিজমের নামে একসময় একধরনের যান্ত্রিক মার্ক্সবাদ চর্চা হয়েছে সাহিত্যে। তিনি এর ঘোর বিরোধী ছিলেন। তিনি এ সাক্ষাৎকারেই বলেছেন, এ দেশের মার্ক্সবাদীদের অনেক জ্ঞান থাকলেও কাণ্ডজ্ঞান নেই। তিনি তাঁর লেখায় জীবনকে একেবারে ভেতর থেকে ধরার চেষ্টা করেছেন। অহেতুক শ্রমিকশ্রেণির জয়গান গাননি, লাল পতাকা ওঠাননি। আমার সাক্ষাৎকারে সেক্সের সঙ্গে ক্লাস পজিশনের সম্পর্ক নিয়ে কথা আছে। তিনি এও বলছেন, তাঁর চিলেকোঠার সেপাইয়ের রিকশাশ্রমিক হাড্ডি খিজির যে চরিত্র, তাকে তিনি মহান করে দেখাননি, শুধু শ্রমিকশ্রেণির বিজয়গাথা তিনি দেখাননি।

বরং হাড্ডি খিজির যে একটি লুম্পেন চরিত্র, তার ভেতর যে নানা জোচ্চুরি আছে, সেটাকেও দেখিয়েছেন। এই যে মানুষকে টোটালিটিতে দেখতে এবং দেখাতে পারা, এটাই আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের শক্তি।

তো এগুলো নিয়ে বিভিন্ন সময় কথা হতো তাঁর সঙ্গে, সেটাকেই আমি সাক্ষাৎকারে ধরতে চেষ্টা করেছি।

সূত্র: মঞ্জুরুল আজিম পলাশ কর্তৃক কথাসাহিত্যিক শাহাদুজ্জামানের সাক্ষাৎকার গ্রহণ, ‘দূরগামী কথার ভেতর’, পৃষ্ঠা: ২৭-২৮।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনএসআইয়ের ১৩ কর্মকর্তার দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক

বিএনপির সময় গণমাধ্যম তুলনামূলক বেশি স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল: প্রথম আলো সম্পাদক

‘আমি ওর সঙ্গে এক মিনিট কথা বলতে চাই, শুধু এক মিনিট’

আন্দোলনের মুখে রাবিতে আওয়ামীপন্থী ছয় ডিনের পদত্যাগ

হাদি হত্যা: ফয়সালসহ সংশ্লিষ্টদের অ্যাকাউন্টে ১২৭ কোটি টাকার লেনদেন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শিয়ালবাড়ি বধ্যভূমি

সম্পাদকীয়
শিয়ালবাড়ি বধ্যভূমি

১৯৭১ সালে পুরো বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন হয়েছিল ১৬ ডিসেম্বর। কিন্তু রাজধানীর মিরপুর তখনো শত্রুদের দখলে। পরের বছর জানুয়ারিতে শত্রুমুক্ত হলে একে একে সন্ধান পাওয়া যেতে থাকে বধ্যভূমিগুলোর। ঢাকায় সবচেয়ে বেশি বধ্যভূমি মিরপুর অঞ্চলে। আর মিরপুরের বধ্যভূমিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লাশ পাওয়া যায় শিয়ালবাড়ি এলাকায়। মিরপুরের প্রশিকা ভবন থেকে কমার্স কলেজের দিকে যেতে একটি কালভার্ট ছিল। এখন যদিও রাস্তার মাঝে ঢাকা পড়েছে। সেখানেই ৬০টি বস্তায় প্রায় ৩৫০টি মাথার খুলি পাওয়া গিয়েছিল। সৈয়দ আলী জামে মসজিদের পাশের কুয়ায় পাওয়া গিয়েছিল অসংখ্য লাশ। ৬ নম্বর লেনের শেষ প্রান্তের মাঠে স্তূপাকারে পড়ে থাকা দুই শতাধিক লাশ শিয়ালবাড়ি গণকবরে কবর দেওয়া হয়। এটি ছিল ১০ কাঠা জমির ওপর। বেশির ভাগই দখল হয়ে গেছে। যেটুকু অংশ বাকি আছে, তা বর্তমানে মাতবরবাড়ি পারিবারিক কবরস্থান। শিয়ালবাড়ির যেসব কুয়ায় শহীদদের লাশ পাওয়া গিয়েছিল, সেখানে এখন বহুতল ভবন, কারখানা, শপিং মল।

তথ্য ও ছবি: মিরপুরের ১০টি বধ্যভূমি, মিরাজ মিজু

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনএসআইয়ের ১৩ কর্মকর্তার দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক

বিএনপির সময় গণমাধ্যম তুলনামূলক বেশি স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল: প্রথম আলো সম্পাদক

‘আমি ওর সঙ্গে এক মিনিট কথা বলতে চাই, শুধু এক মিনিট’

আন্দোলনের মুখে রাবিতে আওয়ামীপন্থী ছয় ডিনের পদত্যাগ

হাদি হত্যা: ফয়সালসহ সংশ্লিষ্টদের অ্যাকাউন্টে ১২৭ কোটি টাকার লেনদেন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

কোচির ইহুদি পরিবারের ঐতিহ্য যেভাবে বাঁচিয়ে রাখছেন এক মুসলিম

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
কোচির ইহুদি পাড়ায় সারা আন্টির রেখে যাওয়া দোকানের সামনে ইব্রাহিম থাহা। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে
কোচির ইহুদি পাড়ায় সারা আন্টির রেখে যাওয়া দোকানের সামনে ইব্রাহিম থাহা। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে

দক্ষিণ ভারতের কোচি শহরের সরু, নুড়ি-পাথর বিছানো রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ চোখে পড়ে ছোট্ট একটি ফলক। তাতে লেখা, ‘সারা কোহেনের বাড়ি।’ জনাকীর্ণ এই রাস্তাটির নাম জু টাউন। কয়েক দশক আগেও এখানকার প্রায় প্রতিটি বাড়িতে বসবাস করত ইহুদি পরিবার। প্রাচীন সামগ্রী, পারস্যের কার্পেট আর মসলার দোকানে ঠাসা এই এলাকাই একসময় পরিচিত ছিল কোচির ইহুদি পাড়া হিসেবে।

এই রাস্তাতেই রয়েছে থাহা ইব্রাহিমের দোকান। কোচির শেষ ইহুদি নকশার দোকান। এক তপ্ত দুপুরে কয়েকজন মার্কিন পর্যটক দোকানে ঢুকতেই দেখা গেল, ৫৫ বছর বয়সী থাহা মনোযোগ দিয়ে একটি কিপ্পা (ইহুদি পুরুষদের ঐতিহ্যবাহী ছোট, বৃত্তাকার টুপি যা তারা ঈশ্বরকে সম্মান জানাতে এবং নিজেদের ধর্মীয় পরিচয় প্রকাশ করতে পরে থাকে) সেলাই করছেন। দোকানের দেয়ালে ঝোলানো একটি ছবির সামনে পর্যটকেরা ভিড় জমালেন। ছবিটি ২০১৩ সালের। তৎকালীন ব্রিটিশ যুবরাজ (বর্তমানে রাজা) চার্লস জু টাউনের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলছেন।

ছবির দিকে আঙুল তুলে থাহা বললেন, ‘ওই ইনিই সারা আন্টি।’ এরপর যোগ করলেন, ‘এটা ছিল সারা কোহেনের বাড়ি ও তাঁর সেলাইয়ের দোকান।’

আরব সাগরের রানি নামে পরিচিত কোচি একসময় ছিল বন্দর আর মসলার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। কয়েক শতাব্দী আগে এখানেই গড়ে উঠেছিল ইহুদিদের একটি নিবিড় জনগোষ্ঠী। সেই জনগোষ্ঠীর একজন ছিলেন সারা কোহেন। ২০০০ সাল থেকে এই দোকান চালাচ্ছেন থাহা। সারা জীবিত থাকাকালে তাঁর পক্ষ থেকে, আর ২০১৯ সালে সারা ৯৬ বছর বয়সে মারা যাওয়ার পর পুরোপুরি দায়িত্ব নেন তিনি।

থাহা বলেন, ‘আমি ছিলাম তাঁর ছেলের মতো। নিজের মায়ের চেয়েও বেশি সময় তাঁর দেখাশোনা করেছি। আমি তাঁর জন্য কোশার (ইহুদিদের এক ধরনের খাবার) আর মাছ কিনে আনতাম। সময় কাটাতাম আর দোকান বন্ধ করার পরই কেবল ফিরতাম।’

এক ইহুদি নারী আর ভিন্ন সামাজিক ও অর্থনৈতিক পটভূমির এক মুসলমান পুরুষের এই বন্ধুত্ব প্রায় চার দশক ধরে টিকে ছিল। মৃত্যুর আগে সারা তাঁর দোকানটি থাহার নামে উইল করে যান। থাহা প্রতিজ্ঞা করেন, জু টাউনে তিনি সারার স্মৃতি আর ঐতিহ্য বাঁচিয়ে রাখবেন। যেখানে আঠারো শতকে প্রায় আড়াই হাজার ইহুদি বাস করতেন, সেখানে এখন কেবল একজন অবশিষ্ট। থাহা বলেন, ‘এক দিক থেকে, এখানকার ইহুদি সম্প্রদায় যাতে বিস্মৃত না হয়, আমিও সেই চেষ্টাই করছি।’

কেরালায় ইহুদিদের আগমনের সবচেয়ে প্রচলিত কাহিনি বাইবেলের ওল্ড টেস্টামেন্টে উল্লিখিত রাজা সোলোমনের সময়ের, প্রায় দুই হাজার বছর আগেকার। প্রথমে তাঁরা মালাবার উপকূলে ক্রাঙ্গানোরে, বর্তমান কোডুঙ্গাল্লুরের কাছে প্রাচীন বন্দরের আশপাশে বণিক হিসেবে বসতি গড়েন। পরে তাঁরা কোচিতে চলে আসেন। এই প্রাচীন বসতির কারণে তাঁরা পরিচিত হন মালাবারি ইহুদি নামে।

এর বহু পরে, ১৫৯২ সালে, স্প্যানিশ নিপীড়ন থেকে পালিয়ে আসা সেফার্ডিক ইহুদিরা কেরালায় পৌঁছান। পর্তুগাল, তুরস্ক আর বাগদাদ হয়ে তাঁরা কোচিতে বসতি গড়ে তোলেন এবং পরিচিত হন পারাদেসি বা বিদেশি ইহুদি নামে। মালাবারি ও পারাদেসি—এই দুই ধারার মানুষ মিলেই পরিচিত হন কোচিন ইহুদি নামে।

ইব্রাহিম থাহার সারা আন্টি তাঁর পরিণত বয়সে। ছবি: ইব্রাহিম থাহার সৌজন্যে
ইব্রাহিম থাহার সারা আন্টি তাঁর পরিণত বয়সে। ছবি: ইব্রাহিম থাহার সৌজন্যে

পর্তুগিজ, আরব, ব্রিটিশ আর ওলন্দাজদের দীর্ঘদিনের বাণিজ্যকেন্দ্র কোচিতে তাঁরা রাজাদের সুরক্ষায় নিরাপদে বসবাস করতেন। বিশ শতকের গোড়ায় সারা কোহেনের জন্ম। তখন জু টাউন ছিল প্রাণবন্ত। সারা আর তাঁর স্বামী জ্যাকব—যাঁর জন্মও এখানেই—১৯৪৪ সালে বিয়ে করেন।

আশির দশকের গোড়ায় আচমকাই থাহার সঙ্গে কোহেন দম্পতির পরিচয় হয়। তেরো বছর বয়সে স্কুল ছেড়ে দেওয়া থাহা তখন পর্যটকদের কাছে পোস্টকার্ড বিক্রি করে জীবিকা চালাতেন। জু টাউনে আসা পর্যটকেরা নিয়মিতই যেতেন পারাদেসি সিনাগগে, যা ১৫৬৮ সালে কোচিনের রাজার দেওয়া জমিতে নির্মিত।

থাহা বলেন, ‘তখন প্রচুর পর্যটক আসত আর আমি সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পোস্টকার্ড বেচতাম।’ এক রোববার, যে গুদামঘরে থাহা পোস্টকার্ড রাখতেন, তার মালিক না আসায় জ্যাকব তাঁকে তাঁদের বাড়িতে জায়গা দেন। সারা এতে খুশি ছিলেন না। থাহার মনে আছে, প্রায় তিন বছর তিনি তাঁর সঙ্গে তেমন কথা বলেননি।

ইব্রাহিম থাহা বলেন, ‘মাঝে মাঝে আমি তাঁর স্বামীর ছোটখাটো কাজ করে দিতাম। অথবা যখন তাঁদের জানালার বাইরে থেকে টিভিতে ক্রিকেট দেখতাম, তিনি আমাকে ভেতরে আসতে বলতেন।’ একদিন সারা তাঁকে সিনাগগের জন্য একটি কুশন কভার সেলাই করতে সাহায্য করতে বলেন। তখনই বোঝা যায়, থাহার মধ্যে সেলাই ও নকশার সহজাত দক্ষতা আছে। সম্ভবত দরজি বাবাকে ছোটবেলা থেকে সাহায্য করার ফলেই। তিনি বলেন, ‘আমি যে নকশা আঁকতে আর সেলাই করতে পারি, তা জানতামই না।’

উনিশ বছর বয়সে থাহা সারাকে সাহায্য করেন তাঁদের বৈঠকখানা থেকে ‘সারার হস্ত-সেলাই’ নামে একটি দোকান খুলতে। দোকানটি আজও সেই নামেই পরিচিত। সেখানে বিক্রি হতো কিপ্পাহ, চাল্লাহ কভার আর মেনোরাহ। তিনি বলেন, ‘তিনিই আমাকে সব শিখিয়েছেন।’

এই বন্ধুত্ব নিয়ে থাহা বেশ দার্শনিক। তিনি বলেন, ‘জু টাউনে ইহুদি আর মুসলমানেরা একে অপরের সঙ্গে তেমন মিশতেন না। তাঁরা একে অপরের প্রতি সন্দিহান ছিলেন। কিন্তু সারা আন্টি আর জ্যাকব আংকেল কখনোই আমাকে বহিরাগত মনে করতে দেননি, যদিও আমাদের পটভূমি আলাদা ছিল।’

সারা আন্টির দোকানে কিপ্পা সেলাই করছেন ইব্রাহিম থাহা। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে
সারা আন্টির দোকানে কিপ্পা সেলাই করছেন ইব্রাহিম থাহা। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে

থাহার বাবা-মা এই সম্পর্কে আপত্তি করেননি। তাঁরা দেখেছিলেন, কোহেন পরিবার তাঁদের ছেলেকে জীবনের একটি উদ্দেশ্য খুঁজে পেতে সাহায্য করছে। কিন্তু এই ঘনিষ্ঠতার সময়েই কোচির ইহুদি জনসংখ্যা দ্রুত কমতে থাকে। চল্লিশের দশকে যেখানে ছিল প্রায় ২৫০ জন, নব্বইয়ের দশকে তা নেমে আসে ২০ জনে। এখন মাত্র একজন আছেন—৬৭ বছর বয়সী কিথ হ্যালেগুয়া।

১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর অনেক পরিবার সেখানে চলে যায়। কেরালার ইহুদিদের ওপর ডক্টরেট থিসিস করা আনা জাখারিয়াস বলেন, ‘কোচিন ইহুদিরা হয়তো স্বদেশে ফিরে যাওয়ার ধারণায় ইসরায়েলে গিয়েছিলেন। তবে উন্নত জীবনের আকর্ষণের মতো অর্থনৈতিক কারণও ছিল। তাঁরা এটাও অনুভব করেছিলেন যে কেরালায় উপযুক্ত জীবনসঙ্গীর অভাব ছিল।’

ধর্মীয় নিপীড়ন কখনোই তাঁদের কোচি ছাড়ার কারণ ছিল না। শহরটি শত শত বছর ধরে তাঁদের স্বাগত জানিয়েছে। কিছু বয়স্ক ইহুদি থেকে গিয়েছিলেন, যাঁদের মধ্যে নিঃসন্তান কোহেন দম্পতিও ছিলেন। ১৯৯৯ সালে জ্যাকব মারা যাওয়ার আগে থাহাকে সারার দেখাশোনার দায়িত্ব দিয়ে যান। তখন থাহা বিবাহিত, তিন সন্তানের জনক।

থাহা বলেন, ‘আমি জ্যাকব আংকেলকে বলেছিলাম, সারা আন্টি যদি আমাকে সুযোগ দেন, তবে আমি তাঁর দেখাশোনা করব। আমি তাঁকে সুযোগ দিতে বলেছিলাম, কারণ ইসলামে মৃতপ্রায় ব্যক্তির শেষ ইচ্ছা পূরণ করা গুরুত্বপূর্ণ। না করলে পাপ হয়।’

সারার স্বাস্থ্যের অবনতি হলে থাহা তাঁর পরিবারকে জু টাউনের কাছাকাছি নিয়ে আসেন। সারা মারা গেলে তিনি তাঁর কফিনের জন্য স্টার অব ডেভিড (ইসরায়েলি পতাকায় অঙ্কিত তারকা) আঁকা একটি কফিন কভার তৈরি করান। আজও তিনি নিয়মিত ইহুদি কবরস্থানে তাঁর সমাধিতে যান। প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক কোচি ঘুরতে আসেন। তাঁদের মধ্যে অনেক ইহুদিও থাকেন। আনা জাখারিয়াস বলেন, ‘বিশ্বজুড়ে ইহুদিরা জু টাউনে আসেন এক ধরনের আপন অনুভব করার জন্য।’

তিনি বলেন, এখানকার ইহুদিরা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু সমাজের মধ্যেও নিজেদের পরিচয় বজায় রেখেছিলেন। একই সঙ্গে সমাজের সঙ্গে মিশে গিয়েছিলেন। স্থানীয় ভাষা মালয়ালমই ছিল তাঁদের দৈনন্দিন ভাষা। থাহা যেভাবে সারা কোহেনের ঐতিহ্য আগলে রেখেছেন, তা তাঁকে মুগ্ধ করে। তিনি বলেন, ‘একজন মুসলমান কীভাবে এক ইহুদি নারীর যত্ন নিয়েছেন, তা দৃষ্টান্তস্বরূপ। তিনি এখনো সারা-র ধর্মীয় ঐতিহ্যগুলো বজায় রেখেছেন।’

থাহা দোকানটিকে ঠিক সেভাবেই রেখেছেন, যেমনটি সারা চালাতেন। ইহুদিদের সাব্বাথ উপলক্ষে তিনি শনিবার দোকান বন্ধ রাখেন। ইব্রাহিম থাহা আরও বলেন, ‘আমি ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা মুসলমান, কিন্তু সারা আন্টির জন্য এটা খুব জরুরি ছিল বলে আমি শুক্রবার সন্ধ্যায় একটি প্রদীপ জ্বালাই। কারণ, এই ক্ষণ সাব্বাথের শুরু হওয়াকে চিহ্নিত করে। এই বিষয়টি আমার কাছে এটা ধর্ম সংক্রান্ত নয়, পুরোটাই মানবিক।’

বিবিসি থেকে অনূদিত

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনএসআইয়ের ১৩ কর্মকর্তার দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক

বিএনপির সময় গণমাধ্যম তুলনামূলক বেশি স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল: প্রথম আলো সম্পাদক

‘আমি ওর সঙ্গে এক মিনিট কথা বলতে চাই, শুধু এক মিনিট’

আন্দোলনের মুখে রাবিতে আওয়ামীপন্থী ছয় ডিনের পদত্যাগ

হাদি হত্যা: ফয়সালসহ সংশ্লিষ্টদের অ্যাকাউন্টে ১২৭ কোটি টাকার লেনদেন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত