Ajker Patrika

দাবি আবার নিরাপদ সড়কের

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ০১ ডিসেম্বর ২০২১, ০৯: ৫৯
দাবি আবার নিরাপদ সড়কের

রামপুরা এলাকার শিক্ষার্থীকে গাড়িচাপা দেওয়ার ঘটনার পর সোমবার রাতে সড়কে যেসব যানবাহন জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল, গতকালও তার তাপ ছিল রাজধানীজুড়ে। বলতে গেলে কালও রাজধানীর সড়ক ছিল শিক্ষার্থীদের দখলে। অবশ্য তার খেসারত দিতে হয়েছে সাধারণ মানুষকে। দিনভর সড়কে যে জ্যাম সৃষ্টি হয়েছে, তাতে নাকাল হতে হয়েছে নগরবাসীকে। তবুও নগরবাসী শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়কের দাবিকে মৌন সমর্থন দিয়ে গেছেন।

শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনের মধ্যে মঙ্গলবার বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি জানায়, ঢাকা মহানগরে কিছু শর্তসাপেক্ষে হাফ ভাড়ায় চলতে পারবেন শিক্ষার্থীরা।

গতকাল সকাল থেকে সড়কে নেমে দেখা গেছে, সব রাস্তায় যানজট। যানবাহন আটকে আছে। এতে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকেও বাস পাননি অনেকে। মাঝেমধ্যে বাস এলেই তাড়াহুড়ো-ধাক্কাধাক্কি করে বাসে উঠতে হয়েছে।

এ অবস্থা চলে বেলা ৩টা পর্যন্ত। এতে রাজধানীর বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। রামপুরা ব্রিজ এলাকায় রাস্তা বন্ধ করে বিক্ষোভ করেছেন ঢাকা ইমপিরিয়াল কলেজের শিক্ষার্থীরা।

তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন ঢাকা কলেজ, ন্যাশনাল আইডিয়াল কলেজ, বিয়াম মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, বি এফ শাহীন কলেজ (কুর্মিটোলা), সিটি কলেজ ও সিদ্ধেশ্বরী কলেজের শিক্ষার্থীরা। পাঁচ ঘণ্টার বেশি সময় অবরোধ করে রাখার পর রাজধানীর রামপুরায় ডিআইটি সড়ক ছেড়ে দেন শিক্ষার্থীরা।

বাসচাপায় শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার ঘটনার বিচার ও নিরাপদ সড়ক দাবিতে সকাল ১০টায় রামপুরা থেকে মালিবাগ আবুল হোটেল পর্যন্ত সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় তাঁরা চলাচলরত যানবাহন ও চালকের লাইসেন্স যাচাই করতে শুরু করেন।

অন্যদিকে ধানমন্ডি ২৭ নম্বর ও মতিঝিলে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। তাঁরা কর্মসূচি শেষ করেছেন বেলা আড়াইটার দিকে। ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) একটি স্টাফ বাস ভাঙচুর করেন মতিঝিলে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

বনশ্রী-রামপুরা, রামপুরা-মালিবাগ, মেরুল বাড্ডা, গুলশান লিংক রোড, উত্তর বাড্ডা-শাহাজাদপুর, হাতিরঝিল এলাকায় গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যায় বিক্ষোভের প্রভাবে। যার রেশ পড়ে প্রগতি সরণিসহ উত্তরার রাস্তায়ও।

রাস্তা বন্ধ থাকায় নিজের ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে আটকা পড়েন ষাটোর্ধ্ব কবির চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘আমরা ছাত্রজীবনে অনেক আন্দোলন করেছি। শিক্ষার্থীরাও তাদের অধিকার আদায়ে আন্দোলন করছে। আমরা তাদের জন্য ভোগান্তি মেনে নিয়েছি।’

বারিধারা থেকে দুই সন্তানকে নিয়ে সদরঘাট যাবেন রানী দাস। টানা হাঁটতে না-পেরে বসে পড়েন রামপুরা ইউলুপ ব্রিজের নিচে। তিনি বলেন, বাসা থেকে বের হয়ে বাড্ডা পর্যন্ত আসার পর গাড়ি থেমে যায়। দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পর গাড়ির লোকজন জানাল গাড়ি আর সামনে যাবে না।

বিটিভির গেটের সামনে দাঁড়িয়ে রিকশাচালকের সঙ্গে ভাড়া নিয়ে তর্কে জড়াতে দেখা গেছে এক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাকে। তিনি যাবেন মতিঝিল। ভাড়া চাচ্ছে ৩৫০ টাকা। আরেকজন নারী চাকরিজীবীকে রিকশাচালকদের বলতে শোনা গেল, ‘সুযোগ পেয়ে গলা কাটছেন। মগবাজারের ভাড়া ১২০ টাকা চাচ্ছেন। যেখানে বাসভাড়া মাত্র ১০ টাকা।’

সারা দেশে হাফ ভাড়াসহ বিভিন্ন দাবিতে স্টেট ইউনিভার্সিটির ছাত্র ইনজামুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের প্রতিনিধিদল বিআরটিএ চেয়ারম্যানের সঙ্গে দেখা করে। তারা নয় দফা দাবি উত্থাপন করে। তবে সেসব দাবি পূরণের কোনো আশ্বাস মেলেনি। ইনজামুল বলেন, ‘শুধু ঢাকা মহানগরের মধ্যেই ছাত্ররা পড়ালেখা করে না। সারা দেশে ছাত্ররা পড়ালেখা করছে। যদি হাফ পাস ভাড়া দিতে হয়, একসঙ্গে একযোগে সারা দেশের ছাত্রদের হাফ পাস ভাড়ার দাবি মেনে নিতে হবে। শুধু মুখের কথায় হবে না। আইন করে প্রজ্ঞাপন জারি করে শিক্ষার্থীদের শান্ত করতে হবে।’

বিআরটিএ ভবনের সামনে অবস্থান নেওয়া শিক্ষার্থীরা নয় দফা দাবি করেন। দাবিগুলোর মধ্যে শিক্ষার্থীসহ সব সড়ক হত্যার বিচার, সারা দেশে সব গণপরিবহনে (সড়ক, নৌ, রেলপথ ও মেট্রোরেল) শিক্ষার্থীদের হাফ পাস, গণপরিবহনে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে এবং জনসাধারণের চলাচলের জন্য যথাস্থানে ফুটপাত, স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক ব্যবস্থা চালু করা, ফুটওভারব্রিজ বা বিকল্প নিরাপত্তাব্যবস্থা নিশ্চিত করা উল্লেখযোগ্য।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...