Ajker Patrika

গোপনে জ‌মি-সম্পদ বি‌ক্রির চেষ্টা করছে এস আলম গ্রুপ, কেউ কিনবেন না: ‌গভর্নর

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২৮ আগস্ট ২০২৪, ১৭: ৫৬
গোপনে জ‌মি-সম্পদ বি‌ক্রির চেষ্টা করছে এস আলম গ্রুপ, কেউ কিনবেন না: ‌গভর্নর

বাজেয়াপ্ত হওয়ার ভয়ে এস আলম গ্রুপ নামে-বেনামে থাকা জ‌মি-সম্পদ গোপনে বি‌ক্রি করার চেষ্টা করছে জানিয়ে সেগুলো না কিনতে জনসাধারণকে হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ‌গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। আজ বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।

আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘এস আলম গ্রু‌প ও তা‌দের স্বার্থসং‌শ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সব ব্যাংকের লেন‌দেন ঋণ স্থগিত করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এখন প্রতিষ্ঠান‌টি নামে-বেনামে থাকা বি‌ভিন্ন জ‌মি-সম্পদ বি‌ক্রি করার চেষ্টা করছে। এগুলো ঠেকাতে আইনি প্রক্রিয়া দরকার। তাই রাষ্ট্রীয় স্বার্থে এই মুহূর্তে এস আলম গ্রুপের জ‌মি ও সম্পদ কিনবেন না।’

তিনি বলেন, ‘বাজেয়াপ্ত হওয়ার ভয়ে গোপনে সম্পদ বিক্রি করে দিচ্ছে এস আলম গ্রুপ। আইনি জটিলতার কারণে এখনি হস্তক্ষেপ করতে পারছে না বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে শিগগিরই আইনি উপায় খুঁজে বের করা হবে। তাই সর্বসাধারণকে সাবধান করা হচ্ছে, এস আলম গ্রুপের সম্পদ কেউ কিনবেন না। সাংবাদিকদের মাধ্যমে আমি হুঁশিয়ার করে দিচ্ছি। এসব সম্পদ জনগণের। এখানে কেউ হাত দেবেন না।’ 

ইসলামী ব্যাংকে ঘটে যাওয়া কেলেঙ্কারি এবং পরিচালনা পর্ষদ নিয়ে তিনি বলেন, ‘এ রকমভাবে, এত বিস্তৃতভাবে, সুপরিকল্পিত এবং রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে ব্যাংক কেলেঙ্কারির ঘটনা আমি আগে কখনো দেখিনি। বিশ্বে আমি এর চেয়ে বড় ব্যাংক কেলেঙ্কারি আর দেখিনি। সম্ভবত এটাই সবচেয়ে বড় ব্যাংক কেলেঙ্কারি। আমাদের জন্য এটা একটি শিক্ষণীয় মডেল। তবে এটা এড়িয়ে চলতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ইসলামী ব্যাংকের যে নতুন বোর্ড গঠন করা হয়েছে, তাদের সঙ্গে বসব। তাদের আমি এক সপ্তাহ সময় দিয়েছি। তারা আমাদের একটি কর্মপরিকল্পনা দেবে। এখন আর বসে থাকার সময় নেই, কাজ করতে হবে এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গেই কাজ করতে হবে। বোর্ড এখানে কোনো মালিক নয়, তাই তাদের সরকারের স্বার্থে, ব্যাংকের স্বার্থে এবং আমানতকারীদের স্বার্থে কাজ করতে হবে। বোর্ড দিয়েছি, দরকার হলে বোর্ড চেঞ্জ করব। প্রত্যেকেই যেন ইফেক্টিভলি এবং নির্মোহভাবে তাদের কাজ করে।’

গভর্নর আরও বলেন, আপাতত কাজ চালানোর জন্য এর মধ্যে ছয়টি ব্যাংকের পর্ষদ পুনর্গঠন করা হয়েছে। খুব শিগগিরই আরও কয়েকটি পুনর্গঠন করা হবে। তারা রাষ্ট্রের প্রতিনিধি হিসেবে এখন ব্যাংক পরিচালনা করবে। ঠিকমতো কাজ না করলে, সেগুলোতেও প্রয়োজনীয় পরিবর্তন করা হবে। 

ব্যাংকের একীভূতকরণ প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘ওই প্রক্রিয়ায় এখন বাতিল। ভবিষ্যতে ব্যাংকিং কমিশন বা ট্রাস্কফোর্স এসে যে রকম পরামর্শ দেবে, সেভাবে কাজ হবে।’

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে গভর্নর বলেন, ‘যেহেতু দেশে একটি বড় বন্যা হয়ে গেছে। তাই আগামী দুই তিন মাস মূল্যস্ফীতি না–ও কমতে পারে। তবে আমি আশাবাদী আগামী ছয় থেকে আট মাসের মধ্যে ইনফ্লেশন কমে যাবে। কারণ, মূল্যস্ফীতি কমাতে দুই দিক থেকেই কাজ করতে হয়—বাংলাদেশ ব্যাংক এবং সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা। আমরা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ পদক্ষেপ নিয়েছি। সাপ্লাই সাইড ঠিক হলে মূল্যস্ফীতি এমনিতেই কমে আসবে।’

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখন বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে আর এক ডলারও বিক্রি করা হবে না। তবে সরকারি পেমেন্ট পরিশোধ করার জন্য মার্কেট থেকে ডলার সংগ্রহ করে আমরা সোনালীসহ অন্য ব্যাংকগুলোকে দিচ্ছি। যেসব এলসি আগে খোলা হয়েছে, সেসব দায় পরিশোধ, বিদ্যুতের দেনা পরিশোধ এবং সার আমদানির বিষয় গুরুত্ব দিয়ে মার্কেট থেকেই আমরা ডলার ব্যবস্থাপনা করছি। কিন্তু রিজার্ভ থেকে এক ডলারও বিক্রির কোনো পরিকল্পনা নেই।’

আমানতকারীদের ধৈর্য ধারণ করার পরামর্শ দিয়ে গভর্নর বলেন, একসঙ্গে সব টাকা তুলতে গেলে পৃথিবীর কোনো ব্যাংক টাকা দিতে পারবে না। তাই যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু ছাড়া অতিরিক্ত টাকা ব্যাংক থেকে তুলবেন না। 

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যেই সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছি। আশা করি ব্যাংকগুলো ঘুরে দাঁড়াবে. তবে একটু সময় লাগবে। এত দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। অতিরিক্ত সুদের লোভেই হোক বা যেকোনো কারণেই হোক, আপনারা এসব ব্যাংকে টাকা রেখেছিলেন। এখন একসঙ্গে সবাই মিলে টাকা তুলতে গেলে হবে না।’

আগের মতো ব্যাংকগুলোকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সহায়তা দেওয়া হবে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সরকার টাকা ছেপে আর কোনো ব্যাংককে অবৈধ সুবিধা দেবে না। আমানতকারীদের আস্থা ব্যাংকগুলোকেই ফেরাতে হবে। এখন টাকা ছেপে আমানতকারীদের সহযোগিতা দিলে পুরো বাংলাদেশ এটার জন্য ইফেক্টেড হবে। তাই এখন আমানতকারীদের ধৈর্য ধরার কোনো বিকল্প নেই।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রিজার্ভ চুরি: ৯১ বারের মতো পেছাল তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫: ২৪
রিজার্ভ চুরি: ৯১ বারের মতো পেছাল তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় করা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ ৯১ বারের মতো পিছিয়েছে। নতুন তারিখ আগামী ১৩ জানুয়ারি ধার্য করেছেন আদালত।

আজ সোমবার ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জশিতা ইসলাম প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নতুন দিন ধার্য করেন।

আজ তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য ছিল। কিন্তু মামলার তদন্ত সংস্থা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) প্রতিবেদন দাখিল না করায় আদালত নতুন তারিখ ধার্য করেন।

২০১৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক থেকে জালিয়াতি করে বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি করা হয়। পরে ওই টাকা ফিলিপাইনের একটি ব্যাংকে পাঠানো হয়। দেশের অভ্যন্তরে কোনো একটি চক্রের সহায়তায় হ্যাকার গ্রুপ রিজার্ভের অর্থ পাচার করেছে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

রিজার্ভের অর্থ চুরির ওই ঘটনায় একই বছরের ১৫ মার্চ বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড বাজেটিং ডিপার্টমেন্টের উপপরিচালক জোবায়ের বিন হুদা বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে মতিঝিল থানায় মামলা করেন। মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন-২০১২ (সংশোধনী ২০১৫)-এর ৪-সহ তথ্য ও প্রযুক্তি আইন-২০০৬-এর ৫৪ ও ৩৭৯ ধারায় মামলাটি করা হয়। কিন্তু নয় বছরেও রিজার্ভে অর্থ পাচারের সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শেয়ারবাজারে তথ্যের স্বচ্ছতায় এআই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে: বিআইসিএম নির্বাহী প্রেসিডেন্ট

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্টস ফোরামের (সিএমজেএফ) সদস্যদের জন্য আয়োজিত ‘এআই অ্যাসেনসিয়াল ফর ক্যাপিটাল মার্কেট’ শীর্ষক কর্মশালা। ছবি: আজকের পত্রিকা
ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্টস ফোরামের (সিএমজেএফ) সদস্যদের জন্য আয়োজিত ‘এআই অ্যাসেনসিয়াল ফর ক্যাপিটাল মার্কেট’ শীর্ষক কর্মশালা। ছবি: আজকের পত্রিকা

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার পুঁজিবাজারে তথ্যের স্বচ্ছতা ও নির্ভরযোগ্যতা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ক্যাপিটাল মার্কেটের (বিআইসিএম) নির্বাহী প্রেসিডেন্ট ওয়াজিদ হাসান শাহ।

আজ সোমবার বিআইসিএমের মাল্টিপারপাস হলে ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্টস ফোরামের (সিএমজেএফ) সদস্যদের জন্য আয়োজিত ‘এআই অ্যাসেনসিয়াল ফর ক্যাপিটাল মার্কেট’ শীর্ষক দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

কর্মশালাটি যৌথভাবে আয়োজন করে সিএমজেএফ ও বিআইসিএম। সেশনটি সঞ্চালনা করেন বিআইসিএমের উপপরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সিএমজেএফ সভাপতি গোলাম সামদানী ভূঁইয়া ও সাধারণ সম্পাদক আবু আলী। এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) নাজমুছ সালেহীন।

বিআইসিএমের নির্বাহী প্রেসিডেন্ট ওয়াজিদ হাসান শাহ বলেন, ‘সম্প্রতি পুঁজিবাজারে পাঁচটি তালিকাভুক্ত ব্যাংক একীভূত করা হয়েছে এবং আরও নয়টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান অবসান হতে যাচ্ছে। এআই ব্যবহারের মাধ্যমে এসব প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণ করা সম্ভব। শুধু এসব কোম্পানিই নয়, পুঁজিবাজার-সম্পর্কিত যেকোনো তথ্য বিশ্লেষণে এআই ভবিষ্যতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।’

সিএমজেএফ সভাপতি গোলাম সামদানী ভূঁইয়া বলেন, বর্তমান সময়ে এআই খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। শেয়ারবাজারের জন্যও এটি গুরুত্বপূর্ণ। বিষয়টি বিবেচনা করে সিএমজেএফের সদস্যদের জন্য এআইয়ের ওপর এ প্রশিক্ষণ কর্মশালাটি আয়োজন করা হয়েছে। এটি সদস্যদের পেশাগত দক্ষতা আরও বৃদ্ধি করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

সিএমজেএফ সাধারণ সম্পাদক আবু আলী বলেন, সিএমজেএফের সদস্যদের পেশাগত মানোন্নয়নের জন্য নিয়মিতভাবে বিভিন্ন প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়। এরই অংশ হিসেবে আজ বিআইসিএমের সঙ্গে যৌথভাবে এ প্রশিক্ষণটি আয়োজন করা হয়েছে।

প্রশিক্ষণ কর্মশালাটি পরিচালনা করেন বিআইসিএমের প্রভাষক ইমরান মাহমুদ ও গৌরব রায়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

প্রথমবার চীনের বাণিজ্য উদ্বৃত্ত ১ ট্রিলিয়ন ডলার ছাড়াল

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
এই প্রথম চীনের বাণিজ্য উদ্বৃত্ত ১ ট্রিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। প্রতীকী ছবি
এই প্রথম চীনের বাণিজ্য উদ্বৃত্ত ১ ট্রিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। প্রতীকী ছবি

চীনের বার্ষিক বাণিজ্য উদ্বৃত্ত এই প্রথম এক ট্রিলিয়ন বা ১০০০ বিলিয়ন ডলারের অঙ্ক ছাড়িয়ে গেল। এর পেছনে রয়েছে গত নভেম্বরে রপ্তানির ক্ষেত্রে আগের মাসের মন্দাভাব কাটিয়ে ওঠা। তবে এই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক তলানিতে নেমে আসতে থাকলেও সেটা সামগ্রিক রপ্তানি প্রবৃদ্ধিতে খুব একটা প্রভাব ফেলেনি।

চীন সরকার আজ সোমবার এই বিষয়ক তথ্য প্রকাশ করেছে বলে জানিয়েছে জাপানি সংবাদমাধ্যম নিক্কেই এশিয়া। সরকারি তথ্যে দেখা গেছে, বছরের প্রথম এগারো মাসে চিনের মোট রপ্তানি আগের বছরের তুলনায় ৫ দশমিক ৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, অথচ আমদানি কমেছে দশমিক ৬ শতাংশ। এর ফলে বাণিজ্য উদ্বৃত্ত দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ০৭ ট্রিলিয়ন ডলারে। ট্রেড ডেটা মনিটরের হিসেব অনুযায়ী, এই সংখ্যা এরই মধ্যে গত বছরের রেকর্ড ৯৯২ বিলিয়ন ডলারকে ছাড়িয়ে গিয়েছে।

ডলারের মানদণ্ডে নভেম্বরে বাইরে পাঠানো পণ্য চালানের পরিমাণ আগের বছরের তুলনায় ৫ দশমিক ৯ শতাংশ বেড়েছে, যার মূল চালিকাশক্তি ছিল দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও ইউরোপের বাজারে চীনা পণ্যের চাহিদা। এই পরিসংখ্যান অক্টোবরের ১ দশমিক ১ শতাংশ সংকোচনের সময়ের চেয়ে উল্লেখযোগ্যভাবে ভালো। রয়টার্স জরিপের ভিত্তিতে পূর্বাভাস দিয়েছিল যে, চীনা রপ্তানি আড়াই শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে। তবে বাস্তবে তার দ্বিগুণেরও বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছে। তবে মোট ডলার-মূল্যের আমদানি বৃদ্ধি পেয়েছে ১ দশমিক ৯ শতাংশ, যা রয়টার্সের দেওয়া পূর্বাভাস ৪ শতাংশ বৃদ্ধির চেয়ে কম।

বাজার বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান নমুরার ম্যানেজিং ডিরেক্টর এবং প্রধান চীনা অর্থনীতিবিদ লু টিং এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘মাসিক তথ্য খুবই পরিবর্তনশীল। যেমন, অক্টোবরের সংখ্যা ছিল অস্বাভাবিকভাবে কম এবং সেপ্টেম্বরের সংখ্যা ছিল অস্বাভাবিকভাবে বেশি। তবে, এই একক মাসের ওঠা-নামা নিয়ে বেশি কাটাছেঁড়া করা ঠিক হবে না।’

সরকারি তথ্য বলছে, নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রে চীনা রপ্তানি ২৮ শতাংশ কমেছে, যা টানা অষ্টম মাসিক পতন এবং অক্টোবরের ২৫ শতাংশ পতনের চেয়েও বেশি। গত অক্টোবরের শেষে চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দক্ষিণ কোরিয়ায় সাক্ষাৎ করে বাণিজ্য যুদ্ধ বিরতি বাড়াতে সম্মত হলেও মার্কিন বাজারে চীনা পণ্য রপ্তানি ধারাবাহিকভাবেই কমছে। এই দুই নেতা ২৪ নভেম্বরের ফোনালাপে আবারও ঐক্যের কথাটি নিশ্চিত করেন, যার মাধ্যমে সম্পর্ক স্থিতিশীল করার একটি সদিচ্ছার ইঙ্গিত মেলে।

সারা বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অস্থির সম্পর্ক বজায় থাকা সত্ত্বেও, চিনের অর্থনীতির জন্য সামগ্রিক রপ্তানি একটি প্রধান বৃদ্ধির উপাদান হিসেবে টিকে আছে। কারণ, আবাসন সম্পত্তি খাতে মন্দা অব্যাহত থাকায় ঘরোয়া ব্যয় এখনো পর্যন্ত কমে রয়েছে।

নমুরার লু টিং আরও জানালেন, ‘সব মিলিয়ে, চিনের রপ্তানি বৃদ্ধি তুলনামূলকভাবে ভালোভাবেই ধরে রেখেছে। এই স্থিতিশীলতাই আমাদের আগামী বছরের মোট রপ্তানি বৃদ্ধির পূর্বাভাস প্রায় ৪ শতাংশে স্থির করার ভিত্তি তৈরি করেছে। এটি সামান্য মন্থরতা দেখালেও, ৪ শতাংশ রপ্তানি বৃদ্ধির হার বৈশ্বিক বাণিজ্যের গড় বৃদ্ধির হারের চেয়ে বেশি থাকবে।’

লু বললেন যে ২০২৬ সালে চিনের রপ্তানি বৃদ্ধি দেশটির উৎপাদন ক্ষেত্রে অতুলনীয় শক্তির ওপরই নির্ভর করবে, কিন্তু কেবল যুক্তরাষ্ট্র নয়, ইউরোপের পক্ষ থেকেও আরোপিত বাণিজ্য বাধার কারণে এই বৃদ্ধির গতি কিছুটা কমে আসতে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন: কোটিপতি হিসাব বাড়ছেই

  • জুন প্রান্তিকে বৃদ্ধি ৫,৯৭৪টি।
  • সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে বেড়েছে ৭৩৪টি।
  • হিসাবে জমা কমেছে ৫৯,২০৯ কোটি।
‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ০৪
বাংলাদেশ ব্যাংক। ফাইল ছবি
বাংলাদেশ ব্যাংক। ফাইল ছবি

দেশের আর্থিক খাত চাপের মধ্যে থাকলেও ব্যাংকগুলোতে কোটিপতি গ্রাহকের হিসাব সংখ্যা বাড়ছেই। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্যে দেখা যায়, এক প্রান্তিক থেকে আরেক প্রান্তিকে এই গ্রাহকের হিসাব ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে। চলতি বছরের মার্চ-জুনে কোটিপতি গ্রাহক বেড়েছিল ৫ হাজার ৯৭৪টি। এরপর ইসলামি ধারার পাঁচটি ব্যাংক একীভূত হওয়া, আমানত তোলার হিড়িক এবং আস্থার ঘাটতির পরিবেশ তৈরি হলেও এই বৃদ্ধির ধারা থেমে যায়নি। গতি কিছুটা কমলেও প্রবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। জুন-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকেও ব্যাংক খাতে কোটিপতি গ্রাহকের সংখ্যা বেড়েছে আরও ৭৩৪টি।

তথ্যমতে, চলতি বছরের জুন প্রান্তিক শেষে মোট কোটি টাকার বেশি আমানত থাকা হিসাবধারীর সংখ্যা ছিল ১ লাখ ২৭ হাজার ৩৩৬টি, যা সেপ্টেম্বর প্রান্তিক শেষে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ২৮ হাজার ৭০টি। এর আগে চলতি বছরের মার্চ প্রান্তিকে কোটি টাকার বেশি আমানত থাকা হিসাবধারী ১ লাখ ২১ হাজার ৩৬২টি, যা জুন প্রান্তিকে দাঁড়ায় ১ লাখ ২৭ হাজার ৩৩৬টি।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ব্যাংক খাতের এ হিসাবই বলে দিচ্ছে, দেশে বড় রকমের আয় বৈষম্য তৈরি হচ্ছে; যা মোটেও ভালো লক্ষণ নয়। বৈষম্য না কমলে অর্থনীতির গতি বাধাগ্রস্ত হবে।

এদিকে কোটিপতি গ্রাহকের সংখ্যা বাড়লেও আগের তুলনায় কমেছে ওই সব হিসাবে জমা টাকার পরিমাণ। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুসারে, চলতি বছরের জুন শেষে কোটি টাকার হিসাবে জমা টাকার পরিমাণ ছিল ৮ লাখ ৮০ হাজার ৭৭২ কোটি টাকা। সেপ্টেম্বর শেষে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৮ লাখ ২১ হাজার ৫৬২ কোটি টাকা। অর্থাৎ তিন মাসের ব্যবধানে এসব হিসাবে জমা কমেছে ৫৯ হাজার ২০৯ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলেছেন, কোটি টাকার হিসাব মানেই কোটিপতি ব্যক্তির হিসাব নয়। কারণ, ব্যাংকে এক কোটি টাকার বেশি অর্থ রাখার তালিকায় ব্যক্তি ছাড়া অনেক প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। আবার ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান কতটি ব্যাংক হিসাব খুলতে পারবে, তার কোনো নির্দিষ্ট সীমা নেই। ফলে এক প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির একাধিক অ্যাকাউন্টও রয়েছে। এর মধ্যে সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার কোটি টাকার হিসাবও রয়েছে।

তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জুন শেষে ব্যাংক খাতে মোট হিসাব সংখ্যা ছিল ১৬ কোটি ৯০ লাখ ২ হাজার ৬৭১টি। সেপ্টেম্বর শেষে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭ কোটি ৪৫ লাখ ৯৬ হাজার ৭০০টি। অর্থাৎ

তিন মাসে ব্যাংক খাতের মোট হিসাব সংখ্যা বেড়েছে ৫৫ লাখ ৯৪ হাজার ২৯টি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান বলেন, দেশের অর্থনীতি বৃদ্ধি পাচ্ছে। মানুষের আয় বাড়ছে। ব্যাংকের সংখ্যা বেড়েছে। এসবের সঙ্গে তাল মিলিয়ে তো কোটিপতির সংখ্যা বেড়েছে। সামনে আরও বাড়তে পারে। এমন প্রবণতা অর্থনীতির জন্য ভালো।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত