Ajker Patrika

মামলা জটিল, সমাধান অনেক দূর

মারুফ কিবরিয়া ও সাজ্জাদ মাহমুদ খান, ঢাকা
মামলা জটিল, সমাধান অনেক দূর

২০১৯ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর রাজধানীর চারটি ক্যাসিনোতে একযোগে অভিযান চালায় র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব) ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। অভিযানে ওই দিনই আটক করা হয় ১৮২ জনকে। এরই ধারাবাহিকতায় পরবর্তী সময়ে আরও অভিযান চালায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এসব অভিযানে সরকারদলীয় রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে ঠিকাদার, ব্যবসায়ীসহ অনেকের নাম উঠে আসে। মামলাও হয় অনেকগুলো।

বেরিয়ে আসে তাঁদের অবৈধ ব্যবসা ও সম্পদের তথ্য। পরে ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে অনুসন্ধানে নামে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। কিন্তু দুই বছরেও শেষ হচ্ছে না সংস্থাটির তদন্ত। দুদক বলছে, জটিল মামলা হওয়ায় তদন্ত শেষ হতে সময় লাগছে। অন্যদিকে ক্যাসিনো-কাণ্ডে সিআইডির দায়ের করা বিদেশে অর্থ পাচারের মামলার তদন্তও চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে।

দুই বছর আগে প্রাথমিকভাবে ৪৩ জনের তালিকা নিয়ে অনুসন্ধানে নামে দুদক। ধীরে ধীরে এই তালিকা দীর্ঘ হয়। ২০০ পেরিয়ে যায় অভিযুক্ত ব্যক্তির সংখ্যা। সর্বশেষ ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের সাবেক অতিরিক্ত উপকমিশনার এস এম শিবলী নোমানসহ ১৬ জনের একটি তালিকা যুক্ত হয়। বর্তমানে কমিশনে অভিযুক্ত ব্যক্তির তালিকায় রয়েছে পাঁচ সাংসদের নামও। এঁরা হলেন সুনামগঞ্জ-১ আসনের সরকারদলীয় সাংসদ মোয়াজ্জেম হোসেন রতন, ভোলা-৩ আসনের নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন, চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনের সামশুল হক চৌধুরী, বরিশাল-৪ আসনের পঙ্কজ দেবনাথ এবং নারায়ণগঞ্জ-২ আসনের নজরুল ইসলাম বাবু। এ ছাড়া ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটসহ বেশ কয়েকজন সাবেক নেতা-কর্মী, ব্যবসায়ী, গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রকৌশলী, ঠিকাদার, কাস্টমস ও পুলিশ কর্মকর্তার নামও রয়েছে এই তালিকায়। 
এসব ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ, ক্যাসিনো ব্যবসাসহ অবৈধ কর্মকাণ্ড পরিচালনা, সরকারি কর্মকর্তাসহ প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ঘুষ দিয়ে বড় বড় ঠিকাদারি কাজ বাগিয়ে নিয়ে অর্থ আত্মসাৎ এবং পরে তা বিদেশে পাচার এবং জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন। 

দুদক সূত্র জানায়, দুই বছর আগে শুরু হওয়া অনুসন্ধানের বেশির ভাগই শেষ হয়নি। তবে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে ডজনখানেক। এর বাইরে তেমন কোনো অগ্রগতি নেই বললেই চলে।

ক্যাসিনো-কাণ্ডে দুদকের সর্বশেষ তথ্য বলছে, এ পর্যন্ত এই ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট, জি কে শামীমসহ শীর্ষ ২৪ জনের বিরুদ্ধে ২৩টি মামলা করেছে সংস্থাটি। এর মধ্যে ১২ মামলায় অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ-সংশ্লিষ্ট ২৪ আসামির প্রায় ৫৮২ কোটি টাকার সম্পদও জব্দ করেছে দুদক। তবে অভিযোগের আওতায় থাকা সাংসদদের বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি কমিশন।

এখন পর্যন্ত যাঁদের বিরুদ্ধে মামলা ও অভিযোগপত্র দিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তাঁরা হলেন ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট, খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, কাজী আনিছুর রহমান ও তাঁর স্ত্রী সুমি রহমান, জাকির হোসেন, ঠিকাদার জি কে শামীম, অনলাইন ক্যাসিনোর হোতা সেলিম প্রধান, গেন্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের নেতা এনামুল হক এনু, রুপন ভুঁইয়া, এবং কলাবাগান ক্রীড়াচক্রের সভাপতি শফিকুল আলম ফিরোজ। এ ছাড়া মামলা তদন্তাধীন থাকা ব্যক্তিরা হলেন বিসিবির পরিচালক লোকমান হোসেন ভুঁইয়া, ডিএসসিসির কাউন্সিলর এ কে এম মমিনুল হক সাঈদ, ডিএনসিসির কাউন্সিলর তারেকুজ্জামান রাজীব, হাবিবুর রহমান মিজান ওরফে পাগলা মিজান, যুবলীগের বহিষ্কৃত সহসভাপতি এনামুল হক আরমান, এনআরবি গ্লোবালের সাবেক এমডি প্রশান্ত কুমার হালদার, গণপূর্তের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী উৎপল কুমার দে ও তাঁর স্ত্রী গোপা দে এবং জি কে শামীমের অন্যতম সহযোগী মুমিতুর রহমান।

মামলার তদন্তের ধীরগতির বিষয়ে জানতে চাইলে দুদক চেয়ারম্যান মঈনুদ্দীন আবদুল্লাহ আজকের পত্রিকাকে বলেন, এগুলো তো জটিল মামলা। অনেক কাজ আছে। তাই সময় লেগে যাচ্ছে। 

সিআইডির তদন্তও চলছে ধীরগতিতে 
ক্যাসিনো-কাণ্ডে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) কাছে যাওয়া মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের ১৩টি মামলার ১১টিতেই তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দিয়েছে। তবে আটকে আছে রমনা ও মতিঝিল থানায় দায়ের হওয়া সম্রাট, আরমান ও খালেদের বিরুদ্ধে হওয়া অর্থ পাচারের দুইটি মামলার তদন্ত।

সিআইডির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, গত বৃহস্পতিবার ক্যাসিনো-কাণ্ডের বিদেশে অর্থ পাচারের মামলার অগ্রগতি নিয়ে সিআইডি কার্যালয়ে বৈঠক হয়। সিআইডি প্রধান মামলার তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে তথ্য চান। তবে মামলার তদন্তে সাম্প্রতিক সময়ে তেমন কোনো অগ্রগতি নেই। কারণ, পাচার হওয়া অর্থের গন্তব্যস্থল মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ড। মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স রিকোয়েস্ট (এমএলএআর) আওতায় এই তিনটি দেশে টাকার ব্যাপারে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তবে দেশগুলো এখন পর্যন্ত সিআইডিকে কোনো তথ্য না দেওয়ায় মামলার তদন্তকাজ শেষ হচ্ছে না। গন্তব্য দেশগুলোর আন্তরিক সহযোগিতা ছাড়া টাকা ফিরিয়ে আনা কঠিন হয়ে পড়বে।

পুলিশ ও ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, `সম্রাট ও খালেদের টাকার ৯৫ শতাংশই গেছে বিদেশের ক্যাসিনোতে। টাকাগুলো পাঠানো হয়েছে হুন্ডির মাধ্যমে। ক্যাসিনো কিংবা জুয়ার কোর্টে টাকা গেলে সেটি ফিরিয়ে আনা খুবই কঠিন ব্যাপার। দীর্ঘ সময় টাকার গন্তব্য দেশ বাংলাদেশ থেকে পাঠানো চিঠির উত্তর না দেওয়ায় মামলার তদন্তও শেষ করা যাচ্ছে না। মামলার তদন্তের আনুষঙ্গিক সব কাজ প্রায় শেষ। এখন দেশগুলো চিঠির উত্তর দিলেই অভিযোগপত্র জমা দিতে পারব।’

মামলার এজাহারে বলা হয়, সম্রাট ২০১১ সালের ২৭ ডিসেম্বর থেকে ২০১৯ সালের ৯ আগস্ট পর্যন্ত ৩৫ বার সিঙ্গাপুর, ৩ বার মালয়েশিয়া, ২ বার দুবাই, ১ বার হংকং গেছেন। আর এনামুল হক আরমান ২০১১ সালের ১২ ডিসেম্বর থেকে ২০১৯ সালের ১৮ মে পর্যন্ত ২৩ বার সিঙ্গাপুর গেছেন।

গত বছরের ৭ জুন মতিঝিল থানায় খালেদ মাহমুদের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে দায়ের হওয়া মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পুলিশ পরিদর্শক মো. মনিরুজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ডে সাড়ে আট কোটি টাকা পাচারের তথ্য পেয়েছে সিআইডি।

মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কাছ থেকে জানা গেছে, খালেদের নামে মালয়েশিয়ার মেব্যাংক ও আরএইচবির কেএলসিসি শাখার চারটি হিসাবে মোট ২৫ লাখ ৫৭ হাজার মালয়েশিয়ান রিঙ্গিত পাওয়া গেছে। এর মধ্যে দুইটি সঞ্চয়ী হিসাবে পাওয়া গেছে ২২ লাখ ৫৭ হাজার এবং দুইটি এফডিআরে ৩ লাখ মালয়েশিয়ান রিঙ্গিত। তিনি সিঙ্গাপুরে ৫ লাখ ৫ হাজার ডলার হুন্ডির মাধ্যমে পাচার করেছেন। এ ছাড়া তাঁর নামে থাইল্যান্ডের ব্যাংকক ব্যাংকের একটি হিসাবে ১০ লাখ থাই বাথ রয়েছে। 

বিষয়:

ক্যাসিনো
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে তলব করে যা বলল ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

দুই মামলা থেকে মির্জা আব্বাস-আমান-গয়েশ্বরসহ ৪৫ জনকে অব্যাহতি

ওসমান হাদির অবস্থা অত্যন্ত সংকটাপন্ন

হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেল, হেলমেট ও ভুয়া নম্বরপ্লেট উদ্ধার

বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সাংবাদিক আনিস আলমগীরের মুক্তি চায় অ্যামনেস্টি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আনিস আলমগীর। ছবি: সংগৃহীত
আনিস আলমগীর। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের সন্ত্রাসবিরোধী আইনে (এটিএ) গ্রেপ্তার হওয়া সাংবাদিক আনিস আলমগীরের অবিলম্বে মুক্তির দাবি জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।

আজ বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) প্রকাশিত এক বিবৃতিতে অ্যামনেস্টি জানায়, গত সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) আনিস আলমগীরকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে, তিনি ও আরও চারজন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং অন্যান্য মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে আওয়ামী লীগের পক্ষে প্রচারণা চালিয়েছেন। এই অভিযোগের পর ঢাকার একটি মহানগর ম্যাজিস্ট্রেট আদালত তাঁকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে পাঠান।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের গবেষক রিহ্যাব মাহামুর বলেন, আনিস আলমগীরের গ্রেপ্তার একটি উদ্বেগজনক ধারাবাহিকতার অংশ, যেখানে নিষিদ্ধঘোষিত আওয়ামী লীগের কার্যক্রমে সমর্থন রয়েছে—এমন ধারণার ভিত্তিতে ব্যক্তিদের লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা দমন করতে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের অপব্যবহার না করে অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত এসব অধিকার নিশ্চিত করা, বিশেষ করে নির্বাচনের প্রাক্কালে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, আন্তর্জাতিক নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার সনদের (আইসিসিপিআর) অধীনে নিজেদের দায়বদ্ধতার সম্মান জানিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারকে অবিলম্বে আনিস আলমগীরকে মুক্তি দিতে হবে।

আদালতে শুনানির সময় আনিস আলমগীর বলেন, ‘আমি একজন সাংবাদিক। আমি ক্ষমতাসীনদের প্রশ্ন করি। গত দুই দশক ধরে আমি এই কাজই করছি। কারও কাছে মাথা নত করা আমার কাজ নয়।’

উল্লেখ্য, চলতি বছরের মে মাসে অন্তর্বর্তী সরকার সন্ত্রাসবিরোধী আইন সংশোধন করে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে। সংশোধনের পর থেকে দলটির প্রতি সমর্থনের অভিযোগে একাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে এই আইন প্রয়োগ করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে সাংবাদিক মঞ্জুরুল আলম পান্নাও রয়েছেন।

অ্যামনেস্টির বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। এ প্রেক্ষাপটে অন্তর্বর্তী সরকারকে এমন পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে, যেখানে রাজনৈতিক মতাদর্শ-নির্বিশেষে সবার মানবাধিকার সুরক্ষিত ও বিকশিত হয়। একটি মানবাধিকারসম্মত সমাজের জন্য অপরিহার্য স্বাধীনতাগুলো খর্ব করতে দমনমূলক আইনপ্রয়োগ বন্ধ করতে হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে তলব করে যা বলল ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

দুই মামলা থেকে মির্জা আব্বাস-আমান-গয়েশ্বরসহ ৪৫ জনকে অব্যাহতি

ওসমান হাদির অবস্থা অত্যন্ত সংকটাপন্ন

হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেল, হেলমেট ও ভুয়া নম্বরপ্লেট উদ্ধার

বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

জিয়াউলের বিরুদ্ধে শতাধিক ব্যক্তিকে গুম-খুনের অভিযোগ আমলে নিলেন ট্রাইব্যুনাল

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
জিয়াউল আহসান। ফাইল ছবি
জিয়াউল আহসান। ফাইল ছবি

গুমের পর শতাধিক ব্যক্তিকে হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক সেনা কর্মকর্তা জিয়াউল আহসানের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। আজ বুধবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১ এই অভিযোগ আমলে নিয়ে ২১ ডিসেম্বর জিয়াউল আহসানকে হাজির করার নির্দেশ দিয়েছেন।

এর আগে সকালে এই মামলায় ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে প্রসিকিউশন। মামলায় জিয়াউল আহসানের বিরুদ্ধে তিনটি অভিযোগ এনেছে প্রসিকিউশন।

অভিযোগের বিষয়ে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, গুম-খুনের কালচার শেখ হাসিনার আমলে শুরু হয়েছিল। সেটা সরাসরি শেখ হাসিনার নির্দেশে হতো। পরে নির্দেশ আসত তাঁর নিরাপত্তা উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিকের মাধ্যমে। এসব কিছুর বাস্তবায়নের মাস্টারমাইন্ড ছিলেন জিয়াউল আহসান। বাংলাদেশে এ রকম বীভৎস, নারকীয় হত্যাকাণ্ড চালানোর ব্যাপারে তাঁর যে স্পর্ধা, সে জন্য তাঁকে একক আসামি হিসেবে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে।

অভিযোগ-১: ২০১১ সালের ১১ জুলাই রাতে গাজীপুরের পুবাইলের ঢাকা বাইপাস সড়কের পাশে জিয়াউল আহসানের পরিকল্পনায় ও প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণে সজল ও অজ্ঞাতনামা তিনজনকে গুলি করে হত্যা।

অভিযোগ-২: ২০১০ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত বরগুনার পাথরঘাটা থানার চরদুয়ানীর নিকটবর্তী বলেশ্বর নদের মোহনায় নজরুল ইসলাম মল্লিক, আলকাছ মল্লিকসহ কমপক্ষে ৫০ জনকে গুলি করে হত্যা ও লাশ গুম।

অভিযোগ-৩: ২০১০ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত বরগুনার বলেশ্বর নদ ও বাগেরহাটের শরণখোলার সুন্দরবনের বিভিন্ন অঞ্চলে তথাকথিত বনদস্যু দমনের নামে মাসুদসহ ৫০ জনকে গুলি করে হত্যা।

ট্রাইব্যুনালে দাখিল করা অভিযোগে বলা হয়, ২০০৯ সালে মেজর থাকাকালে র‍্যাবে পোস্টিং হওয়ার পর থেকে জিয়াউল আহসান বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে শেখ হাসিনার আস্থাভাজন হয়ে ওঠেন। ফলে ২০২৪ সালে মেজর জেনারেল হিসেবে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানোর আগপর্যন্ত কখনোই তাঁকে সেনাবাহিনীতে ফেরত যেতে হয়নি। ২০০৯ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত জিয়াউল আহসান র‍্যাবের গোয়েন্দা শাখার পরিচালক ও এডিজি (অপস) হিসেবে কর্মরত থাকাকালে অসংখ্য গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশগ্রহণ করেন। অগণিত হত্যাকাণ্ড, গুমসহ অন্যান্য মানবতাবিরোধী অপরাধ তাঁর সরাসরি নির্দেশে বিশ্বস্ত র‍্যাব সদস্যরা ঘটাতেন।

হত্যাকাণ্ডের অন্যতম হটস্পট ছিল বরগুনার পাথরঘাটার চরদুয়ানী ইউনিয়নের চরদুয়ানী খাল বেয়ে অগ্রসর হয়ে বলেশ্বর নদের বিভিন্ন পয়েন্ট ও মোহনা। প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণ অনুযায়ী, সড়কপথে পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া হয়ে বরগুনার চরদুয়ানীতে রাত ১১টা কিংবা তারও পরে কালো কাচের মাইক্রোবাস, জিপ, ডাবল কেবিন পিকআপসহ বিভিন্ন গাড়িবহরে র‍্যাব সদস্যরা সাদা পোশাকে আসতেন। তাঁদের সঙ্গে দু-একজন করে বন্দী থাকতেন, কখনো বন্দীর সংখ্যা অনেক বেশিও হতো। বন্দীদের ট্রলারে উঠিয়ে মাঝ নদীতে নিয়ে শরীরের সঙ্গে (মাথা বা বুকে) বালিশ ঠেকিয়ে পিস্তল দিয়ে গুলি করে হত্যা করা হতো। এরপর পেট ছুরি দিয়ে ফেড়ে শরীরে (মাথা ও পায়ে) সিমেন্টের ব্লক বেঁধে পানিতে ডুবিয়ে দেওয়া হতো।

অভিযোগে আরও বলা হয়, ঢাকার বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা এবং চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর মোহনা ও পতেঙ্গা উপকূলবর্তী বঙ্গোপসাগরেও এ ধরনের অপারেশন পরিচালিত হয়েছে। এ ধরনের অপারেশনের অনেকগুলোয় জিয়াউল আহসান সশরীরে অংশ নেন এবং অনেকগুলোয় তাঁর প্রত্যক্ষ নির্দেশনার আলোকে র‍্যাবের গোয়েন্দা শাখার সদস্যরা অথবা তাঁর নিয়ন্ত্রণে থাকা অন্যান্য ব্যাটালিয়নের বাছাই করা সদস্যরা হত্যাকাণ্ড ঘটান।

অভিযোগে বলা হয়, গুম থাকা ব্যক্তিদের নিয়ে গভীর রাতে পাথরঘাটার চরদুয়ানী থেকে ট্রলারে করে বলেশ্বর নদ হয়ে সুন্দরবনের পূর্বনির্ধারিত নিজেদের সাজানো কথিত বনদস্যুদের আস্তানায় নিয়ে যাওয়া হতো। ভুক্তভোগীদের চোখ, হাত-পা বেঁধে নিয়ে গুলি করে হত্যার পর উপর্যুপরি গুলিবর্ষণের মাধ্যমে বন্দুকযুদ্ধের আবহ তৈরি করা হতো। অনেক ক্ষেত্রে এ ধরনের অভিযানের সাক্ষী হিসেবে নিয়ে যাওয়া হতো কিছু অনুগত সাংবাদিককে। তবে তাঁদের ঘটনাস্থলে না নিয়ে দৃষ্টিসীমার বাইরে ক্রসফায়ারের নামে ভুক্তভোগীদের হত্যা করা হতো। পরে তাঁদের ঘটনাস্থলে নিয়ে নিজেদের মনমতো ঘটনার বর্ণনা দিত। দস্যুনিধনের নামে অধিকাংশ ক্ষেত্রে আগে থেকে আটক রাখা নিরপরাধ বন্দীদের হত্যা করা হতো।

অধিকাংশ অভিযানে জিয়াউল আহসান নিজেই অংশ নিতেন। এ ছাড়া তদন্তে শীতলক্ষ্যা ও বুড়িগঙ্গা নদীতে ২০১০-১৩ সাল পর্যন্ত কমপক্ষে ২০০ জনকে হত্যা, ২০১৩ সালের ৫ মে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশ ছত্রভঙ্গ করার নামে কমপক্ষে ৬১ জনকে হত্যাসহ আরও অসংখ্য হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জিয়াউল আহসানের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যাচ্ছে। এ বিষয়ে পৃথক তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে তলব করে যা বলল ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

দুই মামলা থেকে মির্জা আব্বাস-আমান-গয়েশ্বরসহ ৪৫ জনকে অব্যাহতি

ওসমান হাদির অবস্থা অত্যন্ত সংকটাপন্ন

হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেল, হেলমেট ও ভুয়া নম্বরপ্লেট উদ্ধার

বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীকে হত্যা করা হয়েছে: চিফ প্রসিকিউটর

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীকে হত্যা করা হয়েছে: চিফ প্রসিকিউটর

বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীকে হত্যা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম। আজ বুধবার সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ইলিয়াস আলীকে উঠিয়ে নেওয়া এবং পরে হত্যা করা হয়েছে বলে তদন্তে জানা গেছে।

আজ বুধবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১ জিয়াউল আহসানের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নেওয়ার পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন চিফ প্রসিকিউটর।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তাজুল ইসলাম বলেন, বিএনপির নেতা সাজিদুল ইসলাম সুমনসহ আটজনকে তুলে নেওয়ার কাজটি জিয়াউল আহসানের নির্দেশ ও তাঁর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে হয়েছে। ইলিয়াস আলীকে উঠিয়ে নেওয়া এবং পরে হত্যা করা হয়েছে বলে তদন্তে জানা গেছে। ছাত্রশিবিরের নেতা গোলাম কিবরিয়া, হাফেজ জাকির, চৌধুরী আলম—এ রকম উল্লেখযোগ্য গুমের ঘটনার প্রতিটির পেছনের পরিকল্পনাকারী হচ্ছেন জিয়াউল আহসান।

চিফ প্রসিকিউটর আরও বলেন, বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন আহমদকে তুলে নেওয়া এবং পরে ভারতে পাচার করে দেওয়ার পেছনেও জিয়াউল আহসান ছিলেন। বিচারের স্বার্থে এগুলোকে আলাদা করা হয়েছে, যাতে আরও সুষ্ঠুভাবে সাক্ষী উপস্থাপন করা যায়। তিনি বলেন, ‘আপাতত আমরা শতাধিক মানুষের হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে চার্জ দাখিল করেছি। বাকি আরও পাঁচ শতাধিক হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে তথ্যপ্রমাণ আমাদের হাতে আছে। এগুলোকে আলাদাভাবে দাখিল করা হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে তলব করে যা বলল ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

দুই মামলা থেকে মির্জা আব্বাস-আমান-গয়েশ্বরসহ ৪৫ জনকে অব্যাহতি

ওসমান হাদির অবস্থা অত্যন্ত সংকটাপন্ন

হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেল, হেলমেট ও ভুয়া নম্বরপ্লেট উদ্ধার

বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ওসমান হাদির অবস্থা অত্যন্ত সংকটাপন্ন

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২: ৫৩
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি। ফাইল ছবি
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি। ফাইল ছবি

শরিফ ওসমান হাদির অবস্থা অত্যন্ত সংকটাপন্ন। প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসকে ফোন করে এ তথ্য জানিয়েছেন সিঙ্গাপুরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. ভিভিয়ান বালাকৃষ্ণান।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এক বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আজ বুধবার সিঙ্গাপুরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. ভিভিয়ান বালাকৃষ্ণান দেশটিতে চিকিৎসাধীন জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সম্মুখভাগের অকুতোভয় যোদ্ধা ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে দেখতে গিয়েছিলেন।

রাত ৯টা ৪০ মিনিটে ড. ভিভিয়ান বালাকৃষ্ণান প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসকে ফোন করেন এবং হাদির চিকিৎসা কার্যক্রম সম্পর্কে তাঁকে অবহিত করেন। তিনি জানান, হাদির অবস্থা অত্যন্ত সংকটাপন্ন।

প্রধান উপদেষ্টা দেশবাসীকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে হাদির জন্য দোয়া ও প্রার্থনা করার অনুরোধ করেছেন।

১২ ডিসেম্বর রাজধানীর বিজয়নগর এলাকায় চলন্ত অটোরিকশায় হাদিকে মোটরসাইকেল থেকে গুলি করা হয়। সংকটাপন্ন অবস্থায় তাঁকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওই দিন তাঁকে এভারকেয়ার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। এরপর উন্নত চিকিৎসার জন্য ১৫ ডিসেম্বর এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে তাঁকে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে তলব করে যা বলল ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

দুই মামলা থেকে মির্জা আব্বাস-আমান-গয়েশ্বরসহ ৪৫ জনকে অব্যাহতি

ওসমান হাদির অবস্থা অত্যন্ত সংকটাপন্ন

হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেল, হেলমেট ও ভুয়া নম্বরপ্লেট উদ্ধার

বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত