Ajker Patrika

পাথরগুলো এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যায় কীভাবে

ইশতিয়াক হাসান
আপডেট : ০৮ জুন ২০২৩, ১৩: ৪৪
পাথরগুলো এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যায় কীভাবে

পৃথিবীর সবচেয়ে উষ্ণ ও শুকনো জায়গাগুলোর একটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডেথ ভ্যালি। বছরে দুই ইঞ্চিরও কম বৃষ্টিপাত হয় এখানকার ঊষর জমিতে। বুঝতেই পারছেন জায়গাটায় মানুষের পক্ষে বাস করা কঠিন। তার পরও ডেথ ভ্যালি ন্যাশনাল পার্কে কাজ করেন এ রকম কিছু মানুষ ও পর্যটকদের জন্য যে কয়েকটি হোটেল আছে, সেগুলোর কর্মচারীরা থাকেন এখানে। এ ছাড়া আসেন পর্যটকেরা। আর এখানে দেখা মেলে গরমের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারে এমন কিছু বন্যপ্রাণীর।

ডেথ ভ্যালির সবচেয়ে বড় আকর্ষণগুলোর একটি জীবিত কোনো প্রাণী নয়, বরং পাথর। এগুলোর দেখা পেতে হলে আপনাকে যেতে হবে রেইসট্র্যাক প্লায়ায়। ডেথ ভ্যালি ন্যাশনাল পার্কের ফার্নেস ক্রিক ভিজিটর সেন্টার থেকে মোটামুটি ৮০ মাইল পথ পেরোতে হবে গাড়িতে চেপে। তবেই পৌঁছে যাবেন মোটামুটি মাইল তিনেক লম্বা রেইসট্র্যাক প্লায়ায়। আশ্চর্যজনক হলেও এখানকার পাথরগুলো জায়গা বদলায়, মানে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় সরে যায়।

কখনো এ ধরনের কোনো পাথর এক মিনিটে ১৫ ফুট পর্যন্ত চলে যায়আবার এগুলো যে একেবারে ছোট পাথর, তা-ও নয়। কখনো কখনো এ ধরনের পাথরের ওজন ২০০ কেজির বেশিও হয়। এগুলো যে খুব আস্তে-ধীরে জায়গা বদলায় তা নয়। এ ধরনের কোনো কোনো পাথর এক মিনিটে ১৫ ফুট পর্যন্ত চলে যায়। এভাবে ১০০০ ফুট পর্যন্ত দূরে যাওয়ার ঘটনাও ঘটে। তবে সমস্যা হলো, কেউ এদের নড়তে বা চলাচল করতে দেখার বিষয়টি একেবারেই বিরল। তাই বিষয়টা নিয়ে রহস্য ডালপালা মেলতে থাকে।

রেইসট্র্যাক প্লায়ায় এমন কয়েক ডজন পাথরের দেখা পেতে পারেন। একেবারে কম্পিউটারের মাউসের আকারের পাথর থেকে মাইক্রোওয়েভ বা তারও বড় আকারের পাথরও পাবেন। প্রতিটিই বালুর ওপর দেখবেন ট্রেইল রেখে গেছে। কোনোটা সোজা, কেবল কয়েক ফুট লম্বা। কোনোটা আবার একটা ফুটবল মাঠের সমান দূরত্ব পেরিয়েছে, সেটা সোজা না গিয়ে হয়তো হালকা বাঁক কিংবা কড়া মোচর নিয়েছে।

এই পাথরগুলোর এভাবে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যাওয়ার কারণে এদের নাম হয়ে গেছে সেইলিং স্টোন। আজ থেকে ১০০ বছরেরও বেশি আগে প্রথম এসব পাথরের ব্যাপারে জানতে পারে মানুষ। সালটা ১৯১৫, জোসেফ ক্রুক নামের একজন খনিজ সন্ধানী জাতীয় উদ্যানের রেইসট্র্যাক পায়া এলাকায় যান খনিজ অনুসন্ধানে। এ সময়ই যা দেখলেন তাতে রীতিমতো স্তম্ভিত হয়ে যান।

সেইলিং স্টোনের পাশে এক পর্যটকসেইলিং বা ঘোরাফেরা করে এমন পাথরের কথা বলেন ফিরে এসে তিনি। এগুলোর কোনো কোনোটা দুই ফুট চওড়া। এগুলো নিজে থেকেই এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় সরে গেছে এমনটাই মনে হয় তাঁর। গল্প ছড়িয়ে পড়লে দেশের নানা প্রান্ত থেকে ভূতাত্ত্বিকেরা ভিড় জমাতে থাকেন এমন ঘুরে বেড়ানো পাথরদের একনজর দেখতে। মরুভূমির মধ্যে এভাবে চলাফেরা করে বেড়ানোয় এসব পাথরের নাম দেন তাঁরা সেইলিং স্টোন।

মজার ঘটনা, রহস্যজনকভাবে এই পাথরগুলো সরার সময় বালুতে চিহ্ন রেখে যায়। ওপর থেকে দেখলে এদের এই চলায় আরও কিছু আশ্চর্য বৈশিষ্ট্য চোখে পড়ে। মরুভূমির মধ্যে এলোমেলো ঘুরে বেড়ানোর বদলে এগুলো যেন একটি আরেকটির পদাঙ্ক অনুসরণ করে। কখনো কখনো একই দিকে বাঁক নেয় এমনকি বালুর মধ্যে একটির সমান্তরালে আরেকটি যায়।

ঘুরে বেড়ানো এ ধরনের পাথরের কোনো কোনোটি বেশ ওজনদারও হয়এই পাথরগুলোর চলার গতিও চমক জাগানো। দিনে কয়েক ইঞ্চি এগোনোর বদলে মিনিটে ১৫-১৬ ফুট গতিতে এগিয়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটে এদের বেলায়। বলা চলে, যুগের পর যুগ ধরে এখানকার পাথরের অদ্ভুত এই আচরণ ভূতাত্ত্বিকদের বিহ্বল করে রাখে।

কোনো রহস্যের সমাধান না হলে নানা ব্যাখ্যাই মেলে। চুম্বকের প্রভাবকে শুরুতে এর জন্য দায়ী করেন অনেকে। তবে এখানকার পাথরের মধ্যে চৌম্বক পদার্থের অনুপস্থিতি তত্ত্বটাকে বেশি দূর এগোতে দেয়নি। অতি উৎসাহী কেউ কেউ দাবি করলেন, ভিনগ্রহের প্রাণীরাই এসব পাথরের জায়গা বদলের পেছনে আছে। কোনো কোনো গবেষক ঘূর্ণি বাতাস, পুরু বরফের চাঁই, ঝোড়ো বাতাসের মতো বিষয়কে দায়ী করলেন। তবে শেষ পর্যন্ত তত্ত্বগুলো বিজ্ঞানের আলোকে সত্যি প্রমাণ করা গেল না।

পাথরের চলার ট্রেইলের দেখা পাওয়াটা খুব কঠিন নয়, তবে পাথর নড়তে দেখাটা খুব ভাগ্যের ব্যাপারঅবশ্য একপর্যায়ে এই পাথরগুলোর আশ্চর্য আচরণের যুক্তিসংগত ব্যাখ্যা মেলে। একাধিক গবেষকের থেকেই এটা এসেছে। যেমন পেলিওবায়োলজিস্ট রিচার্ড নরিস ও তাঁর চাচাতো ভাই জিম নরিস ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে প্লায়া এলাকা ভ্রমণ করে একটা ছোট পুকুরের সন্ধান পান। এর পরে তাঁরা পাথর নড়তে দেখেন। তাঁরা আবিষ্কার করেন, পাথর নড়ার পেছনে কয়েকটি বিষয় ভূমিকা রাখে। বৃষ্টির কারণে গর্তের মধ্যে পানি জমে ছোট পুকুরের জন্ম হয়। রাতে তাপমাত্রা কমায় এই পানি জমে বরফে পরিণত হয়। সূর্যের তাপে এই বরফ পরে গলতে শুরু করে। তখন পাতলা বরফের চাঙর বাতাসে বালুর ওপর দিয়ে চলতে শুরু করে। এগুলোই সামনে থাকা পাথরকে ধাক্কা দেয়। এতে এগুলো মিনিটে দুই থেকে ছয় মিটার পর্যন্ত জায়গা বদলায়। এ সময় পাথর সরার ফলে নরম মাটিতে চিহ্ন রয়ে যায়।

২০১৪ সালে টাইম–ল্যাপস আলোকচিত্রের মাধ্যমেও বিজ্ঞানীরা মোটামুটি একই ফলাফল পান। এতেও উঠে আসে বরফ, পানি আর বাতাসের কারণে এ ঘটনা ঘটে। ২০১৪ সালের শীতে যেমন বৃষ্টি ছোট্ট এক পুকুরের জন্ম দেয়। রাতে এটি জমে যায়। পরের দিন দুপুরের রোদে বরফটা গলতে শুরু করে পাতলা এক চাঙরে পরিণত হয়। হালকা বাতাসে এটা ভেঙে কয়েক টুকরো হয়ে পাথরদের ঠেলে সামনের দিকে নিতে থাকে।

কেউ কেউ দাব করেছিলেন ভিনগ্রহের প্রাণীরাই এই পাথরদের জায়গা বদলের জন্য দায়ীএ ধরনের ঘটনা সাধারণত শীতে বৃষ্টির পর ঘটে। ডেথ ভ্যালি যেহেতু খুব শুকনো এক জায়গা, তাই এ ধরনের ঘটনা দুষ্প্রাপ্য। দেখা তো আরও কঠিন। ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারিতে যেতে পারেন। বৃষ্টির পূর্বাভাস আছে কি না, তাও জেনে যেতে হবে। তবে একটি পাথরকে নড়তে দেখার সম্ভাবনা খুব কম। তবে শীত মৌসুমে গেলে নড়ার ট্রেইল বা চিহ্ন দেখতে পাবেন তাতে সন্দেহ নেই।

ডেথ ভ্যালির পাথর রহস্যের মোটামুটি একটা সমাধানে পৌঁছা গেলেও পর্যটক ও বিজ্ঞানীদের জন্য এখনো এটা এক বড় বিস্ময়। তা ছাড়া ডেথ ভ্যালি জায়গাটার ভূপ্রকৃতি একেবারেই আলাদা। ক্যালিফোর্নিয়ার প্রচণ্ড উষ্ণ জায়গাটিতে একটিবার ভ্রমণ করতেই পারেন, সেই সঙ্গে পাথরের নড়ার বিষয়ে নিজের কোনো তত্ত্ব দাঁড় করানোর চেষ্টাও করতে পারেন।

সূত্র: ন্যাশনাল পার্ক. অর্গ, স্মিথসোনিয়ান ম্যাগাজিন, থ্রিলিস্ট ডট কম, এল দেট ইন্টারেস্টিং, স্মিথসোনিয়ান ম্যাগাজিন, হিন্দুস্তান টাইমস

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মদের দোকানে তাণ্ডব, বাথরুমে পাওয়া গেল মাতাল র‍্যাকুন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ১৯
মদ খেয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে ছিল একটি র‍্যাকুন। ছবি: সংগৃহীত
মদ খেয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে ছিল একটি র‍্যাকুন। ছবি: সংগৃহীত

সকালে দোকানের শাটার খুলতেই চক্ষু চড়কগাছ যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ার অ্যাশল্যান্ডের একটি সরকারি মদের দোকানের কর্মীদের। দোকানের মেঝেতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে শত শত ভাঙা কাচের টুকরা। মেঝে ভেসে গেছে দামি বিলেতি মদে! প্রাথমিকভাবে সবাই বড় কোনো চুরির আশঙ্কা করলেও কোনো দামি জিনিস খোয়া যায়নি; বরং দোকানের বাথরুমের কমোড আর ডাস্টবিনের চিপায় উদ্ধার হলো আসল ‘অপরাধী’। সেখানে অঘোরে নাক ডেকে ঘুমাচ্ছিল এক বুনো র‍্যাকুন!

ঘটনার সূত্রপাত হয় থ্যাংকসগিভিংয়ের ছুটিতে। দোকান বন্ধ থাকার সুযোগে এই ‘মুখোশধারী ডাকাত’ সিলিংয়ের টাইলস ভেঙে দোকানের ভেতরে প্রবেশ করে। পশুপালন দপ্তরের কর্মকর্তা সামান্থা মার্টিন গণমাধ্যমকে জানান, ভেতরে ঢুকেই র‍্যাকুনটি পুরোদস্তুর তাণ্ডব শুরু করে। তবে তার প্রধান আকর্ষণ ছিল নিচের দিকের তাকগুলোতে সাজিয়ে রাখা স্কচ হুইস্কির বোতলগুলো। বেশ কয়েকটি বোতল ভেঙে, প্রচুর পরিমাণে স্কচ সাবাড় করে র‍্যাকুনটি মাতাল হয়ে পড়ে। একপর্যায়ে নেশার ঘোরে সে বাথরুমে আশ্রয় নেয় এবং সেখানেই জ্ঞান হারায়।

খবর পেয়ে সামান্থা মার্টিন ঘটনাস্থলে পৌঁছে র‍্যাকুনটিকে উদ্ধার করেন। তিনি কৌতুক করে বলেন, ‘পশু সুরক্ষা ও নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তার জীবনে এটা আর দশটা দিনের মতোই একটি সাধারণ দিন!’

পুরো মদের দোকান তছনছ করেছিল বুনো র‍্যাকুন। ছবি: সংগৃহীত
পুরো মদের দোকান তছনছ করেছিল বুনো র‍্যাকুন। ছবি: সংগৃহীত

র‍্যাকুনটি এতটাই নেশাগ্রস্ত ছিল যে সেটিকে ‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য’ হ্যানোভার কাউন্টি অ্যানিমেল প্রটেকশন শেল্টারে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে পুলিশি কাস্টডিতে নয়, বরং তার নেশা কাটানোর জন্যই এই ব্যবস্থা।

বেশ কয়েক ঘণ্টা একটানা ঘুমের পর যখন র‍্যাকুনটি হ্যাংওভার কাটে। শারীরিক কোনো চোট পাওয়া যায়নি। এটি নিশ্চিত হয়েই তাকে সসম্মানে জঙ্গলে ছেড়ে দেওয়া হয়।

দোকানের সিসিটিভি ফুটেজে এক রহস্যময় ছায়ামূর্তির তাণ্ডব দেখা গেলেও র‍্যাকুনটি ঠিক কতটা স্কচ হজম করেছিল, তা অজানাই রয়ে গেছে। দোকানের পক্ষ থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি মজার পোস্ট দিয়ে জানানো হয়, র‍্যাকুনটিকে নিরাপদে ‘সোবার রাইড’, অর্থাৎ নেশামুক্ত অবস্থায় বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার জন্য তারা প্রশাসনের কাছে কৃতজ্ঞ!

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতে প্রায় কোটি টাকার এক হিরা খুঁজে পেলেন ‘শৈশবের দুই বন্ধু’

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
সতীশ ও সাজিদের পাওয়া এই হিরাটি ১৫.৩৪ ক্যারেটের। ছবি: বিবিসি
সতীশ ও সাজিদের পাওয়া এই হিরাটি ১৫.৩৪ ক্যারেটের। ছবি: বিবিসি

ভারতের মধ্যাঞ্চলের একটি প্রত্যন্ত এলাকায় হঠাৎ পাওয়া একটি হিরার খোঁজ দুই বন্ধুর জীবনে আশার আলো জ্বালিয়েছে। মধ্যপ্রদেশের পান্না জেলায় সম্প্রতি এক শীতের সকালে শৈশবের বন্ধু সতীশ খাটিক ও সাজিদ মোহাম্মদের হাতে ধরা পড়েছে ১৫.৩৪ ক্যারেটের মূল্যবান ওই হিরাটি। এটির বাজারমূল্য বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় পৌনে এক কোটি টাকা।

বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) বিবিসি জানিয়েছে, পান্না জেলা ভারতের অন্যতম হিরা উত্তোলন অঞ্চল। সেখানেই কয়েক সপ্তাহ আগে লিজ নেওয়া একটি জমিতে কাজ করতে গিয়ে চকচকে পাথরটির সন্ধান পান সতীশ ও সাজিদ। পরে সেটি শহরের সরকারি হিরা মূল্যায়ন কর্মকর্তার কাছে নিয়ে গেলে নিশ্চিত হওয়া যায়—এটি উৎকৃষ্ট মানের প্রাকৃতিক হিরা।

সতীশের হাতে খুঁজে পাওয়া হিরাটি, পাশে সাজিদ। ছবি: বিবিসি
সতীশের হাতে খুঁজে পাওয়া হিরাটি, পাশে সাজিদ। ছবি: বিবিসি

মূল্যায়ন কর্মকর্তা অনুপম সিং জানান, হিরাটির সম্ভাব্য দাম ৭০ থেকে ৮০ লাখ টাকা। শিগগিরই এটিকে সরকারি নিলামে তোলা হবে। এই নিলামে দেশ-বিদেশের ক্রেতারা অংশ নেবেন। তিনি আরও জানান, হিরার দাম নির্ভর করে ডলারের বিনিময় হার ও আন্তর্জাতিক রাপাপোর্ট রিপোর্টের মানদণ্ডের ওপর।

২৪ বছর বয়সী সতীশ খাটিক একটি মাংসের দোকান চালান, আর ২৩ বছরের সাজিদ মোহাম্মদ ফল বিক্রি করেন। দুজনই দরিদ্র পরিবারের সন্তান এবং পরিবারের কনিষ্ঠ সদস্য। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে তাঁদের পরিবার পান্নায় হিরা খোঁজার চেষ্টা করেছে। কিন্তু এত দিন কোনো বড় সাফল্য আসেনি।

উন্নয়ন সূচকে পান্না জেলা পিছিয়ে থাকা একটি এলাকা। এখানে দারিদ্র্য, পানির সংকট ও বেকারত্ব নিত্যদিনের বাস্তবতা। তবে এই জেলাতেই ভারতের অধিকাংশ হিরা মজুত রয়েছে, যা স্থানীয়দের ভাগ্য বদলের স্বপ্ন দেখায়।

সাজিদের বাবা নাফিস জানান, বছরের পর বছর খোঁড়াখুঁড়ি করেও তাঁরা পেয়েছেন শুধু ধুলো আর কাঁচের টুকরো। তিনি বলেন, ‘ঈশ্বর অবশেষে আমাদের ধৈর্য আর পরিশ্রমের ফল দিয়েছেন।’ সংসারের ক্রমবর্ধমান খরচ ও বিয়ের ব্যয় মেটাতে না পেরে হতাশা থেকেই জমিটি লিজ নিয়েছিলেন সাজিদ।

হিরা খোঁজার কাজ সহজ নয়। দিনের কাজ শেষে সন্ধ্যায় কিংবা ছুটির সময় মাটি খুঁড়ে, পাথর ধুয়ে, চালুনিতে ছেঁকে হাজারো কণার ভিড় থেকে সম্ভাব্য হিরা আলাদা করতেন সতীশ ও সাজিদ। পান্নার জেলা খনি কর্মকর্তা রবি প্যাটেল বলেন, ‘গত ১৯ নভেম্বর তারা জমিটি লিজ নেয়। কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই এমন মানের হিরা পাওয়া সৌভাগ্যের ব্যাপার।’

এখনো নিলামের টাকা হাতে না পেলেও দুই বন্ধু আশাবাদী। বড় শহরে চলে যাওয়া বা ব্যবসা বাড়ানোর চিন্তা আপাতত তাঁরা বাদ দিয়েছেন। তাঁদের একটাই লক্ষ্য—এই অর্থ দিয়ে নিজেদের বোনদের বিয়ে দেওয়া।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

লিংকডইনে গার্লফ্রেন্ড চেয়ে বিজ্ঞাপন দেওয়ার পর যা ঘটল

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ১২
‘গার্লফ্রেন্ড’ বা নারীবন্ধুর খোঁজে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন ভারতের এক ব্যক্তি। ছবি: লিংকডইন থেকে নেওয়া।
‘গার্লফ্রেন্ড’ বা নারীবন্ধুর খোঁজে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন ভারতের এক ব্যক্তি। ছবি: লিংকডইন থেকে নেওয়া।

চাকরি খোঁজার জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্ম লিংকডইন। সেখানে কর্মীরা চাকরি খোঁজেন এবং অনেক প্রতিষ্ঠান সেখান থেকে কর্মীদের বাছাই করে থাকে। এই প্ল্যাটফর্মে এবার ‘গার্লফ্রেন্ড’ বা নারীবন্ধুর খোঁজে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন ভারতের এক ব্যক্তি। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে হাসি-ঠাট্টা ও বিদ্রুপ।

ভারতের হরিয়ানার গুরুগ্রামের দীনেশ বৈরাগী। ‘পূর্ণকালীন’ চাকরির অফার দিয়ে নারীবন্ধু খুঁজেছেন লিংকডইনে। ওই বিজ্ঞাপনের বিবরণে সম্ভাব্য ‘গার্লফ্রেন্ড’-এর জন্য প্রয়োজনীয় নানা গুণাবলির কথাও উল্লেখ করেছেন দীনেশ।

টেক মাহিন্দ্রার সাবেক সিনিয়র অ্যাসোসিয়েট দীনেশ চাকরির বিজ্ঞাপনে লিখেছেন, ‘গুরগাঁওয়ে পূর্ণকালীন গার্লফ্রেন্ডের পদ খালি আছে। সরাসরি দেখা করা এবং দূর থেকে দায়িত্ব পালন দুটোই করতে হবে।’

প্রযুক্তিখাতে অভিজ্ঞ এই যুবক চাকরির বিজ্ঞাপনে আরও লিখেছেন, ‘এই ভূমিকায় শক্তিশালী আবেগগত সম্পর্ক গড়ে তোলা ও তা বজায় রাখা, অর্থবহ কথোপকথনে অংশ নেওয়া, সঙ্গ দেওয়া, পারস্পরিক সমর্থন এবং সঙ্গীর সঙ্গে বিভিন্ন কার্যক্রম বা শখে যুক্ত থাকার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত থাকবে।’

তিনি আরও লেখেন, ‘সক্রিয় যোগাযোগ, পারস্পরিক সম্মান ও বোঝাপড়া এই ভূমিকাটির ভিত্তি হবে। পাশাপাশি যৌথ সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং ইতিবাচক ও সহায়ক সম্পর্কের পরিবেশ গড়ে তোলাও এর অন্তর্ভুক্ত।’

দীনেশ চাকরিপ্রার্থীর যোগ্যতার ক্ষেত্রে উচ্চমাত্রার আবেগগত বুদ্ধিমত্তা, শোনার সক্ষমতা, সহমর্মিতা ও আন্তঃব্যক্তিক দক্ষতার কথা উল্লেখ করেছেন। এ ছাড়া তিনি জানান, এমন একজনকে তিনি খুঁজছেন, যাঁর মধ্যে রসবোধ, দয়া এবং ইতিবাচক মানসিকতা থাকবে।

তিনি আরও যোগ করেন, ‘সম্পর্কের ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত ও যৌথ লক্ষ্যগুলোর মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করার সক্ষমতা থাকতে হবে। শখ, কার্যক্রমে আগ্রহ বা একসঙ্গে নতুন অভিজ্ঞতা গড়ে তোলার মানসিকতারও প্রয়োজন রয়েছে। পাশাপাশি সম্পর্কের ভেতরে পারস্পরিক সমর্থন ও বিকাশে আগ্রহী হতে হবে।’

লিংকডইনে দেওয়া এই চাকরি খোঁজার মতো করে গার্লফ্রেন্ড খোঁজার পোস্টটি দ্রুতই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এটি নিয়ে রসিকতার বন্যা বইয়ে দেন নেটিজেনরা। অনেকেই এই অদ্ভুত চাকরির বিজ্ঞাপন নিয়ে ঠাট্টা–মশকরা করেন, আবার কেউ কেউ সরাসরি পারিশ্রমিক বা বেতন প্যাকেজ সম্পর্কে জানতে চান।

একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘ওহ, এখন সব পরিষ্কার! তাহলে আমার প্রাক্তন আমার সঙ্গে ছয় মাস গার্লফ্রেন্ড হিসেবে ইন্টার্নশিপ করেছিল, এরপর অন্য কোথাও ফুলটাইম গার্লফ্রেন্ডের চাকরি পেয়ে চলে গেছে।’

আরেকজন মন্তব্য করেন, ‘আপনি যদি আসলেই ভারতীয় হন, তাহলে যেকোনো অ্যাপই ডেটিং অ্যাপ বানিয়ে ফেলবেন।’

তৃতীয় একজন লিখেছেন, ‘পদের বিবরণ দেখে বেশ চমকপ্রদই লাগছে, কিন্তু স্যালারি কত?’

একজন ব্যবহারকারী প্রশ্ন করেন, ‘তিনি কি লিংকডইনের পোস্টের মাধ্যমে কোনো পরীক্ষা চালাচ্ছেন?’ উত্তরে দীনেশ বলেন, ‘একেবারেই না। এটি একটি প্রকৃত শূন্যপদ। প্রোফাইলটি ভালোভাবে বোঝার জন্য আমি চাকরির বিবরণ দেখার পরামর্শ দিচ্ছি। এছাড়া কেউ যদি আগ্রহী ও যোগ্য হন, তাদেরও নির্দেশনা দেওয়া যেতে পারে।’

শেষ আপডেট অনুযায়ী দীনেশ জানিয়েছেন, এই ‘চাকরির’ জন্য এরইমধ্যে ২৬ জন আবেদন করেছেন। এখন নতুন কোনো আবেদন গ্রহণ করা হচ্ছে না বলেও জানান তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

অফিসে ঘন ঘন টয়লেটে যাওয়ায় চাকরি হারালেন প্রকৌশলী

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬: ৪৯
প্রতীকী ছবি। ছবি: পিক্সাবে
প্রতীকী ছবি। ছবি: পিক্সাবে

কাজের মধ্যে ঘন ঘন টয়লেটে যাওয়ার জন্য বিরতি নিয়ে চাকরি খুইয়েছেন এক চীনা প্রকৌশলী। চীনের পূর্বাঞ্চলের জিয়াংসু প্রদেশের ওই প্রকৌশলী ঘন ঘন এবং প্রতিবার এক ঘণ্টার বেশি সময় টয়লেটে কাটাচ্ছিলেন। যদিও তাঁর দাবি ছিল, তিনি অর্শ বা পাইলসের সমস্যায় ভুগছেন।

হংকং থেকে প্রকাশিত ইংরেজি ভাষার দৈনিক সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের খবরে বলা হয়েছে জিয়াংসু প্রদেশের লি নামক ওই ব্যক্তি গত বছর এপ্রিল থেকে মে মাসের মধ্যে এক মাসে ১৪ বার টয়লেটে যাওয়ার জন্য বিরতি নেন। এর মধ্যে একবার তিনি চার ঘণ্টা টয়লেটে কাটান। এর জেরে তাঁকে চাকরি হারাতে হয়।

এই খবর সম্প্রতি সাংহাই ফেডারেশন অব ট্রেড ইউনিয়নসের মাধ্যমে প্রকাশিত হয়।

ওই ব্যক্তি বেআইনিভাবে চুক্তি বাতিলের জন্য কোম্পানির বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করলে বিষয়টি সামনে আসে। লি প্রমাণ হিসেবে গত বছর মে ও জুন মাসে তাঁর সঙ্গীর কেনা অর্শের ওষুধ এবং চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে তাঁর হাসপাতালে ভর্তি ও অস্ত্রোপচারের নথিও পেশ করেন।

এরপর লি ওই কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলা করে বেআইনিভাবে চুক্তি বাতিলের দায়ে ৩ লাখ ২০ হাজার ইউয়ান ক্ষতিপূরণ দাবি করেন। অন্যদিকে কোম্পানি লি-এর ঘন ঘন এবং দীর্ঘ সময় ধরে বিরতিতে থাকার প্রমাণস্বরূপ সিসিটিভি ফুটেজ আদালতে জমা দেয়।

আদালতের বিশ্বাস, লি টয়লেটে যে সময় ব্যয় করেছেন, তা তাঁর ‘শারীরিক প্রয়োজনের চেয়ে অনেক বেশি’ ছিল। এ ছাড়া লি যে ডাক্তারি নথি জমা দিয়েছেন, তা তাঁর বহুবার দীর্ঘ পানির বিরতি নেওয়ার পরের সময়ের। চুক্তিতে প্রয়োজন থাকা সত্ত্বেও লি তাঁর অসুস্থতার কথা কোম্পানিকে আগে জানাননি বা অসুস্থতাজনিত ছুটির জন্য আবেদনও করেননি।

কোম্পানি লি-কে তাঁর অনুপস্থিতি লক্ষ্য করে প্রথমে একটি চ্যাট অ্যাপের মাধ্যমে যোগাযোগ করে, কিন্তু কোনো উত্তর পায়নি। লি-এর পদে কাজ করার জন্য তাঁকে সব সময় কাজের অনুরোধে সাড়া দিতে হয়। সিসিটিভি ফুটেজ পরীক্ষা করার পর কোম্পানি তাঁকে বরখাস্ত করে।

লি ২০১০ সালে কোম্পানিতে যোগ দেন এবং ২০১৪ সালে একটি উন্মুক্ত-মেয়াদি চুক্তি নবায়ন করেন। চুক্তি অনুযায়ী, অনুমতি ছাড়া নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নিজের কর্মস্থল ত্যাগ করাকে অনুপস্থিতি বলে গণ্য করা হবে এবং ১৮০ দিনের মধ্যে মোট তিন কার্যদিবস অনুপস্থিত থাকলে চুক্তি সঙ্গে সঙ্গে বাতিল হয়ে যাবে।

বরখাস্ত করার আগে কোম্পানি ট্রেড ইউনিয়নের অনুমতিও নিয়েছিল। দুই দফা বিচার পর্বের পর আদালত অবশেষে দুই পক্ষের মধ্যে মধ্যস্থতা করেন এবং লি-এর কোম্পানিতে অবদানের কথা এবং বেকারত্বের পর তাঁর অসুবিধার কথা বিবেচনা করে কোম্পানিকে ৩০ হাজার ইউয়ান ভাতা দিয়ে মামলাটি মিটিয়ে নিতে রাজি করান।

চীনে এ ধরনের বিরতি নিয়ে বিতর্ক এই প্রথম নয়। এর আগে ২০২৩ সালেও জিয়াংসু প্রদেশের আরেক ব্যক্তিকে একই অভিযোগে বরখাস্ত করা হয়েছিল। তাঁর দীর্ঘতম বিরতি ছিল এক দিনে ছয় ঘণ্টা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত