প্রধানমন্ত্রীকে ‘হত্যার হুমকি’ দিয়ে আত্মগোপনে গেছেন রাজশাহী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদ। গতকাল রোববার বিকেলে তাঁর বক্তব্যের ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই তাঁর কোনো খোঁজ মিলছে না। মামলার পর পুলিশ তাঁকে খুঁজে বেড়াচ্ছে। এখন এ ধরনের বক্তব্যের ব্যাপারে তাঁর হয়ে ক্ষমা চাইছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু।
১৯ মে বিকেলে রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার শিবপুর উচ্চবিদ্যালয় মাঠে জেলা ও মহানগর বিএনপি আয়োজিত এক সমাবেশে চাঁদ বলেন, ‘আর ২৭ দফা, ১০ দফার মধ্যে আমরা নাই। এক দফা—শেখ হাসিনাকে কবরস্থানে পাঠাতে হবে। শেখ হাসিনাকে কবরস্থানে পাঠাতে হবে। শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করার জন্য যা যা করার দরকার আমরা করব।’
এই বক্তব্যের ভিডিও গতকাল বিকেলে ছড়িয়ে পড়লে নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। মঙ্গলবার দেশব্যাপী প্রতিবাদের ডাক দিয়েছে আওয়ামী লীগ। এর আগে গতকাল দিবাগত রাতেই পুঠিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা আবুল কালাম আজাদ চাঁদের বিরুদ্ধে থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে একটি মামলা করেছেন।
এদিকে আজ সোমবার সকালে বিষয়টি বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লা ও বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামানের হাইকার্ট বেঞ্চে নজরে আনা হয়। এ সময় চাঁদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা জানতে চান হাইকোর্ট। পরে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হওয়ার বিষয়টি হাইকোর্টকে জানানো হয়।
চাঁদের ওই বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু বলেছেন, ‘এটি চাঁদের ব্যক্তিগত বক্তব্য। তাঁর এই বক্তব্যের কারণে তাঁরা বিব্রত। এ জন্য দুঃখ প্রকাশ করছেন।’
মিজানুর রহমান মিনু বলেন, ‘রাজনৈতিক মঞ্চে বক্তব্য দিতে গেলে এ ধরনের “স্লিপ অব টাং” হয়ে যায়। আমাদেরও এ রকম হয়। কিন্তু ভুল করার সঙ্গে সঙ্গে আমরা সংশোধন করে দিই। দরকার হলে সংবাদ সম্মেলন করে ভুল সংশোধন করি, ক্ষমা চাই। চাঁদ এটা মিস করেছে। তাঁরও সঙ্গে সঙ্গে সংশোধন আনা উচিত ছিল।’
মিনু বলেন, ‘চাঁদের বক্তব্য আমাদের দলের কথা নয়। এ ধরনের বক্তব্য না দেওয়ার ব্যাপারেই আমাদের দলের নির্দেশনা। আমরা তত্ত্বাবধায়ক সরকার চাই, শুধু এই বক্তব্যই দেওয়ার কথা আমাদের। কিন্তু চাঁদ আবেগপ্রবণ ছেলে। সে জন্য হয়তো এ ধরনের কথা বলে ফেলেছে। তাঁর বড় ভাই হিসেবে আমি দুঃখ প্রকাশ করছি। তাঁর হয়ে ক্ষমা চাইছি সবার কাছে।’
তবে এটি বিএনপির বক্তব্য বলেই মনে করেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন। আজ দুপুরে নিজের মনোনয়নপত্র দাখিল করতে গিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে রাজশাহী সিটি নির্বাচনের আওয়ামী লীগের এই মেয়র প্রার্থী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার হুমকি চাঁদের ব্যক্তিগত বক্তব্য নয়। বিএনপি যা ভাবে, ছাত্রদল-যুবদল সব সময় যা ভাবে, সেটি তাঁর মুখ দিয়ে বেরিয়ে এসেছে। তিনি অশিক্ষিত মানুষ, কীভাবে কথা বলতে হয় তা জানেন না। তাই বলে কোনো ছাড় নয়। ইতিমধ্যে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। আরও মামলা হবে। আমরা আবু সাঈদ চাঁদকে রাজপথেই মোকাবিলা করব।’
বিভিন্ন সময় দেওয়া নির্বাচনী হলফনামায় চাঁদ নিজের শিক্ষাগত যোগ্যতা লেখেন এসএসসি পাস। তবে তাঁর এই শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সদ্য সাবেক সিটি মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ‘প্রাতিষ্ঠানিক কোনো শিক্ষা আবু সাঈদ চাঁদের নেই। তিনি জেলা বিএনপির আহ্বায়ক, তাঁর বক্তব্য খুবই খারাপ। প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে হত্যার ইঙ্গিত দিয়ে কথা বলা আওয়ামী লীগ শক্তভাবে দেখছে।’
এদিকে চাঁদকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন পুঠিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফারুক হোসেন। তিনি বলেন, ‘গ্রেপ্তারের জন্য সব ধরনের চেষ্টা চলছে। তিনি বাড়িতে নেই। বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালানো হচ্ছে। কোথাও তাঁকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তবে তিনি লুকিয়ে থাকতে পারবেন না। গোয়েন্দা নজরদারি চলছে। দ্রুত সময়ের মধ্যেই তাঁকে গ্রেপ্তার করা যাবে।’
মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে