তেজগাঁওয়ের মণিপুরীপাড়ার বাসিন্দা জামিলা বেগম (৫০)। ভ্রাম্যমাণ ভ্যান থেকে সবজি কিনতে এসে মাথা খারাপ হওয়ার জোগাড় তার। গতকাল শুক্রবার যে দামে তরকারি কিনেছেন, আজ শনিবার আর সে দামে কিনতে পারেননি তিনি। জামিলা বলেন, ‘গতকাল ৯০ টাকায় বেগুন কিনেছি, আজ চাইছে এক শ টাকা। আধা কেজি শসার দাম নিয়েছে ৫০ টাকা।’
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরিজীবী রাকিব হোসেন (৪০)। কারওয়ান বাজারে সবজি কিনতে এসে তিনি বলেন, ‘সব জিনিসের এত দাম। এভাবে চললে ঢাকায় বেশি দিন টেকা যাবে না।’
শুধু জামিলা বেগম আর রাকিব না। বাজারের নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে এমন উদ্বেগ ও হতাশা রয়েছে নিম্ন, মধ্যবিত্ত সাধারণ মানুষের মধ্যে। তবে ব্যবসায়ীদের দাবি, প্রয়োজনের তুলনায় সরবরাহ কম হওয়া এবং আমদানি ও পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়ায় পণ্যের দাম বেড়েছে।
মালিবাগ-মৌচাকের ডাক্তার গলির সবজি বিক্রেতা ইয়াসিন আরাফাত বলেন, ‘রোজা শুরুর আগেই সবজির দাম বেড়েছে। রোজার দ্বিতীয় দিনে সব সবজি কেজি প্রতি ৫-১০ টাকা বেশি বিক্রি করতে হচ্ছে, কারণ পাইকারি বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। তবে বেশি দাম বেড়েছে বেগুন ও শসায়।’
মণিপুরী পাড়ার ভ্যানে সবজি বিক্রেতা শুক্কুর মোল্লা জানান, সব সবজির দাম বেড়েছে। মানুষও সবজি কেনা কমিয়ে দিয়েছে। রমজানের বেচা বিক্রি খুব খারাপ।
মোহাম্মদপুর টাউন হল কাঁচাবাজারে কথা হয় ক্রেতা নাজমুল হাসানের সঙ্গে। তিনি জানান, খরচ পোষাতে না পেরে তিনি কিছু সবজি আইটেম কিনেছেন আড়াই শ গ্রাম, কিছু কিনেছেন আধা কেজি করে। নাজমুল বলেন, ‘পরিমাণ কম হলেও কিনছি, কারণ খেয়ে বাঁচতে হবে।’
সবজির দামের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে মাছের দামও। মোহাম্মদপুর কাঁচাবাজারের মাছ বিক্রেতা জুয়েল আহমেদ জানান, রোজা শুরু পর মাছের দাম এক দফা বেড়েছে। পাবদা মাছের দাম আগে ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা ছিল, এখন ৬০০ টাকা দাম। ছোট চিংড়ির দাম প্রতি কেজি এক হাজার টাকা, বড় চিংড়ির দাম ১ হাজার ২০০ টাকা। অথচ ১০ দিন আগেও বড় চিংড়ি বিক্রি হয়েছে নয়শ থেকে এক হাজার টাকায়।
ব্যবসায়ীদের অতি মুনাফা লাভের প্রবণতার কারণে দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়ছে বলে মনে করেন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি ড. গোলাম রহমান। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের লোভ লালসা বেড়ে গেছে। মূলত ব্যবসায়ীদের অতি মুনাফা লাভের প্রবণতার কারণে জিনিসের দাম বাড়ছে। এতে দুর্ভোগে পড়ছে নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষেরা। সীমিত আয়ের মানুষেরা সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছে।’
গোলাম রহমান আরও বলেন, ‘বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারকে আরও মনিটরিং বাড়াতে হবে। অতি মুনাফা লোভী ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটকে চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। একই সঙ্গে উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থা ঠিক রাখতে হবে।’
এদিকে রাজধানীর কাঁচাবাজারগুলোতে সবজি ও মাছের দাম বেশ চড়া হলেও মাংসের দাম স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে। রোজার আগের দিন গরুর মাংস ৮০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে, এখন সেই মাংস ৭৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। মুরগির বাজারও কমতির দিকে রয়েছে। রোজার শুরুর দিন বয়লার মুরগি ২৮০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে, এখন বিক্রি হচ্ছে ২৪০ থেকে ২৫০ টাকা দামে। ডিমের হালি বিক্রি হয়েছিল ৫০ থেকে ৫৫ টাকা, এখন বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা।
কারওয়ান বাজারের মাংস বিক্রেতা মোহাম্মদ এনামুল হক বলেন, চাঁদ রাতে (রোজার আগের দিন) গরুর মাংসের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় সব বাজারে ৮০০ টাকা বিক্রি হয়েছে। এখন ৭৫০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে।
মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে