সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী

রাজনীতিতে মওলানার রাজনৈতিক অবস্থান পেটি বুর্জোয়াদের পক্ষে ছিল অসহ্য, কারণ তিনি যেটা চাইছিলেন, সেটি হলো সামাজিক বিপ্লব, যদিও ওই বিপ্লবের কথা পরিষ্কারভাবে তিনি বলতে পারেননি। বিপ্লবের অত্যাবশ্যকতার ধারণায় পৌঁছাতেও তাঁর সময় লেগেছে। স্থিরভাবে রাজনৈতিক সাহিত্য অধ্যয়ন করার ও লেখার কাজে মনোযোগ দেওয়ার সুযোগ তিনি পাননি। তদুপরি তিনি ছিলেন মাদ্রাসায় শিক্ষিত এবং প্রথম জীবনে লোকে তাঁকে মানত একজন পীর হিসেবে, তিনি তাদের বিশ্বাসকে আঘাত করতেন না, যদিও জানতেন যে তাঁর পানিপড়া ও ঝাড়ফুঁকে কোনো কাজ হবে না। পরামর্শ দিতেন ডাক্তারের পরামর্শ নিতে, টাকা গুঁজে দিতেন হাতে, প্রয়োজন দেখলে। সে জন্য তাঁর পক্ষে ও সঙ্গে যাঁরা ছিলেন, তাঁদের কাছেও মনে হয়েছে সমাজ পরিবর্তনের বিষয়ে তাঁর চিন্তা ছিল অত্যন্ত অস্পষ্ট। যেমনটা তাঁর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ বদরুদ্দীন উমর বলেছেন তাঁর ‘পলিটিকস অ্যান্ড সোসাইটি ইন ইস্ট পাকিস্তান অ্যান্ড বাংলাদেশ’ বইয়ে। তা ছাড়া, তাঁর বক্তব্য প্রচারের জন্য পত্রপত্রিকাও ছিল না। ইত্তেফাকের মালিকানা বদল হয়েছিল।
অন্য পত্রিকার সবগুলোই ছিল হয় সরকার-সমর্থক, নয়তো টাকাওয়ালাদের মালিকানার; তারা সবই মওলানার প্রতি বিরূপ ছিল। মওলানার মধ্যে দোদুল্যমানতা ছিল না; তবে একধরনের অস্থিরতা ছিল বলে তাঁর অনুসারীদের কেউ কেউ মনে করেন। সেটা যে অসত্য, তা-ও নয়। যে জন্য দেখা যেত তিনি আচমকা কোনো কোনো সিদ্ধান্ত দিয়ে ফেলছেন, অন্যদের না জানিয়ে। যেন পেটি বুর্জোয়া তৎপরতা। কিন্তু পরে যা প্রমাণিত হয়েছে তা হলো, তাঁর সিদ্ধান্তগুলোর কোনোটাই ভ্রান্ত ছিল না। তাঁর ধীশক্তি ছিল অসাধারণ; তিনি টের পেতেন মানুষ কী চায়, তারা কত দূর যেতে প্রস্তুত এবং প্রতিপক্ষের সবলতা কোথায়, কোথায় দুর্বলতা। কখনো কখনো মনে হতো তিনি তাঁর মতকে জোর করে চাপিয়ে দিচ্ছেন। আসলে তিনি যা করতেন তা হলো, পাছে বিলম্ব ঘটে তাই সিদ্ধান্তগুলো দ্রুত নেওয়া এবং তাঁর জন্য খুব বড় রকমের অসুবিধা ছিল এই যে তাঁর রাজনৈতিক সংগঠন সুসংগঠিত ছিল না। সংগঠনের ভেতরে বিভিন্ন মত কাজ করত; কোনো অংশ ছিল ভ্রান্ত আবার কোনো অংশ প্রতিক্রিয়াশীল।
পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার আগে তিনি মুসলিম লীগে ছিলেন, কিন্তু পাকিস্তান যখন প্রতিষ্ঠা পেল, তখন প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই তিনি টের পেলেন যে এই পাকিস্তান মানুষকে মুক্তি দেবে না; এখানে পুরোনো শাসন-শোষণই আবার নতুন চেহারায় বহাল থাকবে; তাই দ্রুতই তিনি মুসলিম লীগ ছেড়ে দিয়ে আওয়ামী মুসলিম লীগের গঠন প্রক্রিয়ায় যুক্ত হলেন এবং তাঁর প্রত্যক্ষ নেতৃত্বে তো বটেই, প্রধানত তাঁর চেষ্টাতেই আওয়ামী মুসলিম লীগ একটি শক্তিশালী গণসংগঠন হয়ে উঠল। সংগঠনের অসাম্প্রদায়িকীকরণও তাঁর আগ্রহেই ঘটল। কিন্তু আওয়ামী লীগ যখন সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রক্ষমতায় যেতে সক্ষম হলো, তখন স্বায়ত্তশাসন ও পররাষ্ট্রনীতি—এই দুই মৌলিক প্রশ্নে দলের প্রতিক্রিয়াশীল অংশ সংগঠনের প্রতিষ্ঠাকালীন অবস্থানের ব্যত্যয় ঘটিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষে চলে যেতে চাইল। ফলে দল দ্বিখণ্ডিত হয়ে গেল। এরপর প্রগতিশীল অংশটি পশ্চিম পাকিস্তানের প্রগতিশীল রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের সঙ্গে একত্র হয়ে ন্যাপ গঠন করে।
এবারও নেতৃত্ব দেন মওলানা ভাসানীই। ন্যাপের মূল শক্তি ছিলেন কমিউনিস্ট কর্মীরা; কিন্তু পূর্ববঙ্গের কমিউনিস্ট পার্টির তখনকার নেতৃত্ব ন্যাপ গঠনে খুব একটা খুশি হননি, তাঁরা আওয়ামী লীগ ভেঙে বেরিয়ে যাওয়া ঠিক হবে কি না, সে বিষয়ে নিশ্চিত ছিলেন না। কিন্তু ন্যাপ নিজেও ঐক্যবদ্ধ রইল না, ভাগ হয়ে গেল রুশপন্থী ও চীনপন্থী। চীনপন্থীদের বড় অংশটি আবার পরিণত হলো নকশালপন্থীতে। এসবের ফলে ভাসানী অনেকটা নিঃসঙ্গ হয়ে পড়লেন
এবং ন্যাপের ভেতর সুবিধাবাদীরা মশিউর রহমান যাদু মিয়ার নেতৃত্বে দলের নেতৃত্ব পেয়ে গেল। ভাসানী বদলাননি, তিনি তাঁর সমাজবিপ্লবী অবস্থানে অটল ছিলেন, তাঁর অনুসারীরাই বিচ্যুত হয়েছেন এবং বিচ্যুত হয়ে অভিযোগ করেছেন ভাসানীর বিরুদ্ধেই।
আর ওই যে তাঁর বিপ্লবমুখী অবস্থান, এর জন্যই ডানের তো বটেই, আপসপন্থী বামেরাও তাঁর বিরুদ্ধে চলে গেছে। চলে গেছে এমনকি সীমিত বুদ্ধি ও অতিউৎসাহী নকশালপন্থীরা। বিপক্ষের লোকেরা কেউ বলেছে, তিনি ‘রহস্যময়’; কেউ বলেছে, তিনি হঠকারী। উনসত্তরের অভ্যুত্থানের সময় আমেরিকার ‘টাইম’ পত্রিকা তাদের প্রচ্ছদে ভাসানীর ছবি ছাপিয়ে নিচে লিখে দিয়েছিল, ‘প্রফেট অব ভায়োলেন্স’; আর সোভিয়েত কমিউনিস্ট পার্টির মুখপত্র ‘নিউ টাইম’ লিখেছে, পূর্ব পাকিস্তানে ‘কিছু চীনপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদী নৈরাজ্যজনক কার্যকলাপ শুরু করেছে’। পরস্পরবিরুদ্ধ দুই পক্ষের দৃষ্টিভঙ্গির এই ঐক্যতে অবশ্য বিস্ময়ের কোনো কারণ ছিল না। কারণ, সোভিয়েত ইউনিয়ন তখন আর আগের অবস্থানে নেই, অপুঁজিবাদী বিকাশ ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে আস্থা স্থাপন করে এবং শ্রেণিসংগ্রাম বাদ দিয়ে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতেই সমাজতন্ত্র কায়েম সম্ভব বলে বিশ্বাসী হয়ে রীতিমতো ‘সামাজিক সাম্রাজ্যবাদী’ চেহারা নিয়ে ফেলেছে।
শুরু থেকেই পাকিস্তান সরকার কমিউনিস্টদের মনে করত পয়লা নম্বর দুশমন। ভাসানী কমিউনিস্টদের সঙ্গে আছেন, তাই তিনিও বড় মাপের দুশমন বৈকি। এমন কথা সোহরাওয়ার্দীও বলেছেন, আইয়ুব খান তো বলেছেনই। উনসত্তরের ২৫ মার্চ আইয়ুব খান ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়ার সময়ে যে ভাষণ দেন, তার একেবারে শুরুতেই ‘ঘেরাও’-এর বিরুদ্ধে নিজের বিদ্বেষ প্রকাশ করেছিলেন, আর ঘেরাওয়ের উদ্যোক্তা তো ছিলেন মওলানা ভাসানীই। আইয়ুবের এককালীন সহযোগী ইস্কান্দার মির্জা পূর্ববঙ্গের গভর্নর হয়ে প্রথম যে কাজগুলো করেছিলেন, সেগুলোর একটি ছিল মওলানা ভাসানীকে পাওয়া মাত্র গুলি করে হত্যা করার হুমকি দেওয়া। পরে প্রেসিডেন্ট হয়ে তিনি উদ্যোগ নিয়েছিলেন ভাসানীকে গ্রেপ্তারের। প্রথমে পারেননি, কিন্তু পরে সামরিক অভ্যুত্থান ঘটিয়ে একেবারে শুরুতেই যাঁদের কারাবন্দী করেছিলেন, ভাসানী ছিলেন তাঁদেরই একজন। সে সময়ে তাঁকে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে আটক করে রাখা হয়েছিল একটানা প্রায় চার বছর।
মওলানা ভাসানীকে বলা হয় কৃষকনেতা। এক অর্থে সেটা তিনি ছিলেন বৈকি। কিন্তু কেবল কৃষকের নয়, নেতা ছিলেন তিনি মৎস্যজীবী, বিড়িশ্রমিক, কারখানার শ্রমিক, চা-শ্রমিক, রিকশাশ্রমিক, পাটচাষিসহ সব মেহনতি মানুষের। তাঁদের মুক্তির জন্য তিনি লড়াই করেছেন। তাঁর সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধিতা ছিল অনমনীয়। গ্রামের মানুষ তিনি, গ্রামেই থাকতে পছন্দ করতেন, কিন্তু যোগ দিয়েছেন পৃথিবীর নানা দেশে গিয়ে সাম্রাজ্যবাদবিরোধী সম্মেলনে। ওদিকে পুঁজিবাদকে তিনি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন পুরোপুরি। তাঁর বক্তৃতায়, বিবৃতিতে তো অবশ্যই, জীবনযাপনে, বসবাসে, জামাকাপড়েও উচ্চারণ ছিল সেই প্রত্যাখ্যানের। ইংরেজি ভাষা তিনি ভালোই জানতেন, ওই ভাষায় ব্যক্ত বক্তব্য বুঝতে তাঁর বিন্দুমাত্র অসুবিধা হতো না; নিজের বক্তব্য ইংরেজিতে প্রকাশও করতে পারতেন ইচ্ছা করলে; কিন্তু বিদেশিদের সঙ্গে আলাপে সব সময় দোভাষীর সাহায্য নিতেন; সেটি ছিল তাঁর পুঁজিবাদকে পূর্ণরূপে প্রত্যাখ্যানেরই নিদর্শন।
তাঁর ভরসা ছিল জনগণের ওপরই। শ্রেণিচ্যুত মধ্যবিত্তকে তিনি সঙ্গে পেয়েছেন এবং সাদরে কাছে টেনে নিয়েছেন, কিন্তু তিনি জানতেন যে মেহনতি মানুষের জাগরণ ভিন্ন মুক্তি আসবে না; সে জন্য তিনি মেহনতিদের সংগঠন গড়ে তুলেছেন, কৃষক সমিতিতে ছিল তাঁর বিশেষ রকমের আগ্রহ; তিনি লাল টুপি বাহিনী প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছিলেন, ঘেরাও ও হাট হরতালের প্রবর্তন করেছেন। গ্রামে গ্রামে তিনি ঘুরে বেড়াতেন মানুষকে সচেতন করার জন্য। জনমুক্তির জন্য সাংস্কৃতিক প্রস্তুতিকেও তিনি অপরিহার্য বলে জানতেন। আওয়ামী মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠার পরে তাঁর একেবারে প্রাথমিক পদক্ষেপগুলোর মধ্যে ছিল বক্তব্য ও সংবাদ প্রচারের জন্য একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা বের করা। কাগমারীতে তিনি যে আন্তর্জাতিক ধরনের একটি সাংস্কৃতিক সম্মেলনের আয়োজন করেছিলেন, সেটা কোনো তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তের ব্যাপার ছিল না, ছিল একটি দৃষ্টিভঙ্গির প্রকাশ। ১৯৬৫ সালের যুদ্ধের পরে রেডিওতে যখন রবীন্দ্রসংগীত নিষিদ্ধকরণের রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ নেওয়া হয়, তখন বুদ্ধিজীবীরা প্রতিবাদ করেছেন। মওলানাও সাড়া দিয়েছিলেন সঙ্গে সঙ্গেই। কিন্তু তাঁর প্রতিবাদের ধরনটা ছিল ভিন্ন রকমের। অন্যদের মতো তাঁর আবেদন সরকারের কাছে ছিল না। ছিল জনগণের কাছে। জনগণকে তিনি আহ্বান জানিয়েছিলেন প্রতিরোধ গড়ে তুলতে। দৃষ্টিভঙ্গির এই বৈশিষ্ট্যটি খেয়াল না করলে তাঁকে বুঝে ওঠা কঠিন, বিশেষ করে এলিট শ্রেণিভুক্তদের পক্ষে।
মওলানা ভাসানী বর্তমানকে জানতেন এবং একই সঙ্গে ভবিষ্যৎকেও দেখতে পেতেন। অনেক বড় মাপের একজন কবির মতো ছিল তাঁর দেখার ক্ষমতা। তাঁর বক্তৃতাতে কেবল আগুনই থাকত না, থাকত কবিতাও। তাঁর ছিল কবির কল্পনাশক্তি। বাংলা সাহিত্যে নজরুলের যে স্থান, বাংলার রাজনীতিতে মওলানা ভাসানীর স্থানও সে রকমেরই। মৌলিক ও বিপ্লবী। নজরুল শেষ পর্যন্ত নিশ্চুপ হয়ে গিয়েছিলেন; সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের সাহায্য না পেয়ে। মওলানা ভাসানীও শেষ জীবনে যথার্থ সঙ্গীসাথি পাননি; কিন্তু তিনি নিশ্চুপ হয়ে যাননি, শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত সজীব ও সক্রিয় ছিলেন আন্দোলনে। ব্যক্তিগত সম্পত্তিতে যেহেতু বিশ্বাস করতেন না, তাঁর জন্য তাই হারানোর কোনো ভয় ছিল না। জয় করার ছিল মেহনতিদের মুক্তি।
লেখক: ইমেরিটাস অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

রাজনীতিতে মওলানার রাজনৈতিক অবস্থান পেটি বুর্জোয়াদের পক্ষে ছিল অসহ্য, কারণ তিনি যেটা চাইছিলেন, সেটি হলো সামাজিক বিপ্লব, যদিও ওই বিপ্লবের কথা পরিষ্কারভাবে তিনি বলতে পারেননি। বিপ্লবের অত্যাবশ্যকতার ধারণায় পৌঁছাতেও তাঁর সময় লেগেছে। স্থিরভাবে রাজনৈতিক সাহিত্য অধ্যয়ন করার ও লেখার কাজে মনোযোগ দেওয়ার সুযোগ তিনি পাননি। তদুপরি তিনি ছিলেন মাদ্রাসায় শিক্ষিত এবং প্রথম জীবনে লোকে তাঁকে মানত একজন পীর হিসেবে, তিনি তাদের বিশ্বাসকে আঘাত করতেন না, যদিও জানতেন যে তাঁর পানিপড়া ও ঝাড়ফুঁকে কোনো কাজ হবে না। পরামর্শ দিতেন ডাক্তারের পরামর্শ নিতে, টাকা গুঁজে দিতেন হাতে, প্রয়োজন দেখলে। সে জন্য তাঁর পক্ষে ও সঙ্গে যাঁরা ছিলেন, তাঁদের কাছেও মনে হয়েছে সমাজ পরিবর্তনের বিষয়ে তাঁর চিন্তা ছিল অত্যন্ত অস্পষ্ট। যেমনটা তাঁর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ বদরুদ্দীন উমর বলেছেন তাঁর ‘পলিটিকস অ্যান্ড সোসাইটি ইন ইস্ট পাকিস্তান অ্যান্ড বাংলাদেশ’ বইয়ে। তা ছাড়া, তাঁর বক্তব্য প্রচারের জন্য পত্রপত্রিকাও ছিল না। ইত্তেফাকের মালিকানা বদল হয়েছিল।
অন্য পত্রিকার সবগুলোই ছিল হয় সরকার-সমর্থক, নয়তো টাকাওয়ালাদের মালিকানার; তারা সবই মওলানার প্রতি বিরূপ ছিল। মওলানার মধ্যে দোদুল্যমানতা ছিল না; তবে একধরনের অস্থিরতা ছিল বলে তাঁর অনুসারীদের কেউ কেউ মনে করেন। সেটা যে অসত্য, তা-ও নয়। যে জন্য দেখা যেত তিনি আচমকা কোনো কোনো সিদ্ধান্ত দিয়ে ফেলছেন, অন্যদের না জানিয়ে। যেন পেটি বুর্জোয়া তৎপরতা। কিন্তু পরে যা প্রমাণিত হয়েছে তা হলো, তাঁর সিদ্ধান্তগুলোর কোনোটাই ভ্রান্ত ছিল না। তাঁর ধীশক্তি ছিল অসাধারণ; তিনি টের পেতেন মানুষ কী চায়, তারা কত দূর যেতে প্রস্তুত এবং প্রতিপক্ষের সবলতা কোথায়, কোথায় দুর্বলতা। কখনো কখনো মনে হতো তিনি তাঁর মতকে জোর করে চাপিয়ে দিচ্ছেন। আসলে তিনি যা করতেন তা হলো, পাছে বিলম্ব ঘটে তাই সিদ্ধান্তগুলো দ্রুত নেওয়া এবং তাঁর জন্য খুব বড় রকমের অসুবিধা ছিল এই যে তাঁর রাজনৈতিক সংগঠন সুসংগঠিত ছিল না। সংগঠনের ভেতরে বিভিন্ন মত কাজ করত; কোনো অংশ ছিল ভ্রান্ত আবার কোনো অংশ প্রতিক্রিয়াশীল।
পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার আগে তিনি মুসলিম লীগে ছিলেন, কিন্তু পাকিস্তান যখন প্রতিষ্ঠা পেল, তখন প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই তিনি টের পেলেন যে এই পাকিস্তান মানুষকে মুক্তি দেবে না; এখানে পুরোনো শাসন-শোষণই আবার নতুন চেহারায় বহাল থাকবে; তাই দ্রুতই তিনি মুসলিম লীগ ছেড়ে দিয়ে আওয়ামী মুসলিম লীগের গঠন প্রক্রিয়ায় যুক্ত হলেন এবং তাঁর প্রত্যক্ষ নেতৃত্বে তো বটেই, প্রধানত তাঁর চেষ্টাতেই আওয়ামী মুসলিম লীগ একটি শক্তিশালী গণসংগঠন হয়ে উঠল। সংগঠনের অসাম্প্রদায়িকীকরণও তাঁর আগ্রহেই ঘটল। কিন্তু আওয়ামী লীগ যখন সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রক্ষমতায় যেতে সক্ষম হলো, তখন স্বায়ত্তশাসন ও পররাষ্ট্রনীতি—এই দুই মৌলিক প্রশ্নে দলের প্রতিক্রিয়াশীল অংশ সংগঠনের প্রতিষ্ঠাকালীন অবস্থানের ব্যত্যয় ঘটিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষে চলে যেতে চাইল। ফলে দল দ্বিখণ্ডিত হয়ে গেল। এরপর প্রগতিশীল অংশটি পশ্চিম পাকিস্তানের প্রগতিশীল রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের সঙ্গে একত্র হয়ে ন্যাপ গঠন করে।
এবারও নেতৃত্ব দেন মওলানা ভাসানীই। ন্যাপের মূল শক্তি ছিলেন কমিউনিস্ট কর্মীরা; কিন্তু পূর্ববঙ্গের কমিউনিস্ট পার্টির তখনকার নেতৃত্ব ন্যাপ গঠনে খুব একটা খুশি হননি, তাঁরা আওয়ামী লীগ ভেঙে বেরিয়ে যাওয়া ঠিক হবে কি না, সে বিষয়ে নিশ্চিত ছিলেন না। কিন্তু ন্যাপ নিজেও ঐক্যবদ্ধ রইল না, ভাগ হয়ে গেল রুশপন্থী ও চীনপন্থী। চীনপন্থীদের বড় অংশটি আবার পরিণত হলো নকশালপন্থীতে। এসবের ফলে ভাসানী অনেকটা নিঃসঙ্গ হয়ে পড়লেন
এবং ন্যাপের ভেতর সুবিধাবাদীরা মশিউর রহমান যাদু মিয়ার নেতৃত্বে দলের নেতৃত্ব পেয়ে গেল। ভাসানী বদলাননি, তিনি তাঁর সমাজবিপ্লবী অবস্থানে অটল ছিলেন, তাঁর অনুসারীরাই বিচ্যুত হয়েছেন এবং বিচ্যুত হয়ে অভিযোগ করেছেন ভাসানীর বিরুদ্ধেই।
আর ওই যে তাঁর বিপ্লবমুখী অবস্থান, এর জন্যই ডানের তো বটেই, আপসপন্থী বামেরাও তাঁর বিরুদ্ধে চলে গেছে। চলে গেছে এমনকি সীমিত বুদ্ধি ও অতিউৎসাহী নকশালপন্থীরা। বিপক্ষের লোকেরা কেউ বলেছে, তিনি ‘রহস্যময়’; কেউ বলেছে, তিনি হঠকারী। উনসত্তরের অভ্যুত্থানের সময় আমেরিকার ‘টাইম’ পত্রিকা তাদের প্রচ্ছদে ভাসানীর ছবি ছাপিয়ে নিচে লিখে দিয়েছিল, ‘প্রফেট অব ভায়োলেন্স’; আর সোভিয়েত কমিউনিস্ট পার্টির মুখপত্র ‘নিউ টাইম’ লিখেছে, পূর্ব পাকিস্তানে ‘কিছু চীনপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদী নৈরাজ্যজনক কার্যকলাপ শুরু করেছে’। পরস্পরবিরুদ্ধ দুই পক্ষের দৃষ্টিভঙ্গির এই ঐক্যতে অবশ্য বিস্ময়ের কোনো কারণ ছিল না। কারণ, সোভিয়েত ইউনিয়ন তখন আর আগের অবস্থানে নেই, অপুঁজিবাদী বিকাশ ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে আস্থা স্থাপন করে এবং শ্রেণিসংগ্রাম বাদ দিয়ে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতেই সমাজতন্ত্র কায়েম সম্ভব বলে বিশ্বাসী হয়ে রীতিমতো ‘সামাজিক সাম্রাজ্যবাদী’ চেহারা নিয়ে ফেলেছে।
শুরু থেকেই পাকিস্তান সরকার কমিউনিস্টদের মনে করত পয়লা নম্বর দুশমন। ভাসানী কমিউনিস্টদের সঙ্গে আছেন, তাই তিনিও বড় মাপের দুশমন বৈকি। এমন কথা সোহরাওয়ার্দীও বলেছেন, আইয়ুব খান তো বলেছেনই। উনসত্তরের ২৫ মার্চ আইয়ুব খান ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়ার সময়ে যে ভাষণ দেন, তার একেবারে শুরুতেই ‘ঘেরাও’-এর বিরুদ্ধে নিজের বিদ্বেষ প্রকাশ করেছিলেন, আর ঘেরাওয়ের উদ্যোক্তা তো ছিলেন মওলানা ভাসানীই। আইয়ুবের এককালীন সহযোগী ইস্কান্দার মির্জা পূর্ববঙ্গের গভর্নর হয়ে প্রথম যে কাজগুলো করেছিলেন, সেগুলোর একটি ছিল মওলানা ভাসানীকে পাওয়া মাত্র গুলি করে হত্যা করার হুমকি দেওয়া। পরে প্রেসিডেন্ট হয়ে তিনি উদ্যোগ নিয়েছিলেন ভাসানীকে গ্রেপ্তারের। প্রথমে পারেননি, কিন্তু পরে সামরিক অভ্যুত্থান ঘটিয়ে একেবারে শুরুতেই যাঁদের কারাবন্দী করেছিলেন, ভাসানী ছিলেন তাঁদেরই একজন। সে সময়ে তাঁকে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে আটক করে রাখা হয়েছিল একটানা প্রায় চার বছর।
মওলানা ভাসানীকে বলা হয় কৃষকনেতা। এক অর্থে সেটা তিনি ছিলেন বৈকি। কিন্তু কেবল কৃষকের নয়, নেতা ছিলেন তিনি মৎস্যজীবী, বিড়িশ্রমিক, কারখানার শ্রমিক, চা-শ্রমিক, রিকশাশ্রমিক, পাটচাষিসহ সব মেহনতি মানুষের। তাঁদের মুক্তির জন্য তিনি লড়াই করেছেন। তাঁর সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধিতা ছিল অনমনীয়। গ্রামের মানুষ তিনি, গ্রামেই থাকতে পছন্দ করতেন, কিন্তু যোগ দিয়েছেন পৃথিবীর নানা দেশে গিয়ে সাম্রাজ্যবাদবিরোধী সম্মেলনে। ওদিকে পুঁজিবাদকে তিনি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন পুরোপুরি। তাঁর বক্তৃতায়, বিবৃতিতে তো অবশ্যই, জীবনযাপনে, বসবাসে, জামাকাপড়েও উচ্চারণ ছিল সেই প্রত্যাখ্যানের। ইংরেজি ভাষা তিনি ভালোই জানতেন, ওই ভাষায় ব্যক্ত বক্তব্য বুঝতে তাঁর বিন্দুমাত্র অসুবিধা হতো না; নিজের বক্তব্য ইংরেজিতে প্রকাশও করতে পারতেন ইচ্ছা করলে; কিন্তু বিদেশিদের সঙ্গে আলাপে সব সময় দোভাষীর সাহায্য নিতেন; সেটি ছিল তাঁর পুঁজিবাদকে পূর্ণরূপে প্রত্যাখ্যানেরই নিদর্শন।
তাঁর ভরসা ছিল জনগণের ওপরই। শ্রেণিচ্যুত মধ্যবিত্তকে তিনি সঙ্গে পেয়েছেন এবং সাদরে কাছে টেনে নিয়েছেন, কিন্তু তিনি জানতেন যে মেহনতি মানুষের জাগরণ ভিন্ন মুক্তি আসবে না; সে জন্য তিনি মেহনতিদের সংগঠন গড়ে তুলেছেন, কৃষক সমিতিতে ছিল তাঁর বিশেষ রকমের আগ্রহ; তিনি লাল টুপি বাহিনী প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছিলেন, ঘেরাও ও হাট হরতালের প্রবর্তন করেছেন। গ্রামে গ্রামে তিনি ঘুরে বেড়াতেন মানুষকে সচেতন করার জন্য। জনমুক্তির জন্য সাংস্কৃতিক প্রস্তুতিকেও তিনি অপরিহার্য বলে জানতেন। আওয়ামী মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠার পরে তাঁর একেবারে প্রাথমিক পদক্ষেপগুলোর মধ্যে ছিল বক্তব্য ও সংবাদ প্রচারের জন্য একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা বের করা। কাগমারীতে তিনি যে আন্তর্জাতিক ধরনের একটি সাংস্কৃতিক সম্মেলনের আয়োজন করেছিলেন, সেটা কোনো তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তের ব্যাপার ছিল না, ছিল একটি দৃষ্টিভঙ্গির প্রকাশ। ১৯৬৫ সালের যুদ্ধের পরে রেডিওতে যখন রবীন্দ্রসংগীত নিষিদ্ধকরণের রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ নেওয়া হয়, তখন বুদ্ধিজীবীরা প্রতিবাদ করেছেন। মওলানাও সাড়া দিয়েছিলেন সঙ্গে সঙ্গেই। কিন্তু তাঁর প্রতিবাদের ধরনটা ছিল ভিন্ন রকমের। অন্যদের মতো তাঁর আবেদন সরকারের কাছে ছিল না। ছিল জনগণের কাছে। জনগণকে তিনি আহ্বান জানিয়েছিলেন প্রতিরোধ গড়ে তুলতে। দৃষ্টিভঙ্গির এই বৈশিষ্ট্যটি খেয়াল না করলে তাঁকে বুঝে ওঠা কঠিন, বিশেষ করে এলিট শ্রেণিভুক্তদের পক্ষে।
মওলানা ভাসানী বর্তমানকে জানতেন এবং একই সঙ্গে ভবিষ্যৎকেও দেখতে পেতেন। অনেক বড় মাপের একজন কবির মতো ছিল তাঁর দেখার ক্ষমতা। তাঁর বক্তৃতাতে কেবল আগুনই থাকত না, থাকত কবিতাও। তাঁর ছিল কবির কল্পনাশক্তি। বাংলা সাহিত্যে নজরুলের যে স্থান, বাংলার রাজনীতিতে মওলানা ভাসানীর স্থানও সে রকমেরই। মৌলিক ও বিপ্লবী। নজরুল শেষ পর্যন্ত নিশ্চুপ হয়ে গিয়েছিলেন; সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের সাহায্য না পেয়ে। মওলানা ভাসানীও শেষ জীবনে যথার্থ সঙ্গীসাথি পাননি; কিন্তু তিনি নিশ্চুপ হয়ে যাননি, শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত সজীব ও সক্রিয় ছিলেন আন্দোলনে। ব্যক্তিগত সম্পত্তিতে যেহেতু বিশ্বাস করতেন না, তাঁর জন্য তাই হারানোর কোনো ভয় ছিল না। জয় করার ছিল মেহনতিদের মুক্তি।
লেখক: ইমেরিটাস অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী

রাজনীতিতে মওলানার রাজনৈতিক অবস্থান পেটি বুর্জোয়াদের পক্ষে ছিল অসহ্য, কারণ তিনি যেটা চাইছিলেন, সেটি হলো সামাজিক বিপ্লব, যদিও ওই বিপ্লবের কথা পরিষ্কারভাবে তিনি বলতে পারেননি। বিপ্লবের অত্যাবশ্যকতার ধারণায় পৌঁছাতেও তাঁর সময় লেগেছে। স্থিরভাবে রাজনৈতিক সাহিত্য অধ্যয়ন করার ও লেখার কাজে মনোযোগ দেওয়ার সুযোগ তিনি পাননি। তদুপরি তিনি ছিলেন মাদ্রাসায় শিক্ষিত এবং প্রথম জীবনে লোকে তাঁকে মানত একজন পীর হিসেবে, তিনি তাদের বিশ্বাসকে আঘাত করতেন না, যদিও জানতেন যে তাঁর পানিপড়া ও ঝাড়ফুঁকে কোনো কাজ হবে না। পরামর্শ দিতেন ডাক্তারের পরামর্শ নিতে, টাকা গুঁজে দিতেন হাতে, প্রয়োজন দেখলে। সে জন্য তাঁর পক্ষে ও সঙ্গে যাঁরা ছিলেন, তাঁদের কাছেও মনে হয়েছে সমাজ পরিবর্তনের বিষয়ে তাঁর চিন্তা ছিল অত্যন্ত অস্পষ্ট। যেমনটা তাঁর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ বদরুদ্দীন উমর বলেছেন তাঁর ‘পলিটিকস অ্যান্ড সোসাইটি ইন ইস্ট পাকিস্তান অ্যান্ড বাংলাদেশ’ বইয়ে। তা ছাড়া, তাঁর বক্তব্য প্রচারের জন্য পত্রপত্রিকাও ছিল না। ইত্তেফাকের মালিকানা বদল হয়েছিল।
অন্য পত্রিকার সবগুলোই ছিল হয় সরকার-সমর্থক, নয়তো টাকাওয়ালাদের মালিকানার; তারা সবই মওলানার প্রতি বিরূপ ছিল। মওলানার মধ্যে দোদুল্যমানতা ছিল না; তবে একধরনের অস্থিরতা ছিল বলে তাঁর অনুসারীদের কেউ কেউ মনে করেন। সেটা যে অসত্য, তা-ও নয়। যে জন্য দেখা যেত তিনি আচমকা কোনো কোনো সিদ্ধান্ত দিয়ে ফেলছেন, অন্যদের না জানিয়ে। যেন পেটি বুর্জোয়া তৎপরতা। কিন্তু পরে যা প্রমাণিত হয়েছে তা হলো, তাঁর সিদ্ধান্তগুলোর কোনোটাই ভ্রান্ত ছিল না। তাঁর ধীশক্তি ছিল অসাধারণ; তিনি টের পেতেন মানুষ কী চায়, তারা কত দূর যেতে প্রস্তুত এবং প্রতিপক্ষের সবলতা কোথায়, কোথায় দুর্বলতা। কখনো কখনো মনে হতো তিনি তাঁর মতকে জোর করে চাপিয়ে দিচ্ছেন। আসলে তিনি যা করতেন তা হলো, পাছে বিলম্ব ঘটে তাই সিদ্ধান্তগুলো দ্রুত নেওয়া এবং তাঁর জন্য খুব বড় রকমের অসুবিধা ছিল এই যে তাঁর রাজনৈতিক সংগঠন সুসংগঠিত ছিল না। সংগঠনের ভেতরে বিভিন্ন মত কাজ করত; কোনো অংশ ছিল ভ্রান্ত আবার কোনো অংশ প্রতিক্রিয়াশীল।
পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার আগে তিনি মুসলিম লীগে ছিলেন, কিন্তু পাকিস্তান যখন প্রতিষ্ঠা পেল, তখন প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই তিনি টের পেলেন যে এই পাকিস্তান মানুষকে মুক্তি দেবে না; এখানে পুরোনো শাসন-শোষণই আবার নতুন চেহারায় বহাল থাকবে; তাই দ্রুতই তিনি মুসলিম লীগ ছেড়ে দিয়ে আওয়ামী মুসলিম লীগের গঠন প্রক্রিয়ায় যুক্ত হলেন এবং তাঁর প্রত্যক্ষ নেতৃত্বে তো বটেই, প্রধানত তাঁর চেষ্টাতেই আওয়ামী মুসলিম লীগ একটি শক্তিশালী গণসংগঠন হয়ে উঠল। সংগঠনের অসাম্প্রদায়িকীকরণও তাঁর আগ্রহেই ঘটল। কিন্তু আওয়ামী লীগ যখন সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রক্ষমতায় যেতে সক্ষম হলো, তখন স্বায়ত্তশাসন ও পররাষ্ট্রনীতি—এই দুই মৌলিক প্রশ্নে দলের প্রতিক্রিয়াশীল অংশ সংগঠনের প্রতিষ্ঠাকালীন অবস্থানের ব্যত্যয় ঘটিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষে চলে যেতে চাইল। ফলে দল দ্বিখণ্ডিত হয়ে গেল। এরপর প্রগতিশীল অংশটি পশ্চিম পাকিস্তানের প্রগতিশীল রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের সঙ্গে একত্র হয়ে ন্যাপ গঠন করে।
এবারও নেতৃত্ব দেন মওলানা ভাসানীই। ন্যাপের মূল শক্তি ছিলেন কমিউনিস্ট কর্মীরা; কিন্তু পূর্ববঙ্গের কমিউনিস্ট পার্টির তখনকার নেতৃত্ব ন্যাপ গঠনে খুব একটা খুশি হননি, তাঁরা আওয়ামী লীগ ভেঙে বেরিয়ে যাওয়া ঠিক হবে কি না, সে বিষয়ে নিশ্চিত ছিলেন না। কিন্তু ন্যাপ নিজেও ঐক্যবদ্ধ রইল না, ভাগ হয়ে গেল রুশপন্থী ও চীনপন্থী। চীনপন্থীদের বড় অংশটি আবার পরিণত হলো নকশালপন্থীতে। এসবের ফলে ভাসানী অনেকটা নিঃসঙ্গ হয়ে পড়লেন
এবং ন্যাপের ভেতর সুবিধাবাদীরা মশিউর রহমান যাদু মিয়ার নেতৃত্বে দলের নেতৃত্ব পেয়ে গেল। ভাসানী বদলাননি, তিনি তাঁর সমাজবিপ্লবী অবস্থানে অটল ছিলেন, তাঁর অনুসারীরাই বিচ্যুত হয়েছেন এবং বিচ্যুত হয়ে অভিযোগ করেছেন ভাসানীর বিরুদ্ধেই।
আর ওই যে তাঁর বিপ্লবমুখী অবস্থান, এর জন্যই ডানের তো বটেই, আপসপন্থী বামেরাও তাঁর বিরুদ্ধে চলে গেছে। চলে গেছে এমনকি সীমিত বুদ্ধি ও অতিউৎসাহী নকশালপন্থীরা। বিপক্ষের লোকেরা কেউ বলেছে, তিনি ‘রহস্যময়’; কেউ বলেছে, তিনি হঠকারী। উনসত্তরের অভ্যুত্থানের সময় আমেরিকার ‘টাইম’ পত্রিকা তাদের প্রচ্ছদে ভাসানীর ছবি ছাপিয়ে নিচে লিখে দিয়েছিল, ‘প্রফেট অব ভায়োলেন্স’; আর সোভিয়েত কমিউনিস্ট পার্টির মুখপত্র ‘নিউ টাইম’ লিখেছে, পূর্ব পাকিস্তানে ‘কিছু চীনপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদী নৈরাজ্যজনক কার্যকলাপ শুরু করেছে’। পরস্পরবিরুদ্ধ দুই পক্ষের দৃষ্টিভঙ্গির এই ঐক্যতে অবশ্য বিস্ময়ের কোনো কারণ ছিল না। কারণ, সোভিয়েত ইউনিয়ন তখন আর আগের অবস্থানে নেই, অপুঁজিবাদী বিকাশ ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে আস্থা স্থাপন করে এবং শ্রেণিসংগ্রাম বাদ দিয়ে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতেই সমাজতন্ত্র কায়েম সম্ভব বলে বিশ্বাসী হয়ে রীতিমতো ‘সামাজিক সাম্রাজ্যবাদী’ চেহারা নিয়ে ফেলেছে।
শুরু থেকেই পাকিস্তান সরকার কমিউনিস্টদের মনে করত পয়লা নম্বর দুশমন। ভাসানী কমিউনিস্টদের সঙ্গে আছেন, তাই তিনিও বড় মাপের দুশমন বৈকি। এমন কথা সোহরাওয়ার্দীও বলেছেন, আইয়ুব খান তো বলেছেনই। উনসত্তরের ২৫ মার্চ আইয়ুব খান ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়ার সময়ে যে ভাষণ দেন, তার একেবারে শুরুতেই ‘ঘেরাও’-এর বিরুদ্ধে নিজের বিদ্বেষ প্রকাশ করেছিলেন, আর ঘেরাওয়ের উদ্যোক্তা তো ছিলেন মওলানা ভাসানীই। আইয়ুবের এককালীন সহযোগী ইস্কান্দার মির্জা পূর্ববঙ্গের গভর্নর হয়ে প্রথম যে কাজগুলো করেছিলেন, সেগুলোর একটি ছিল মওলানা ভাসানীকে পাওয়া মাত্র গুলি করে হত্যা করার হুমকি দেওয়া। পরে প্রেসিডেন্ট হয়ে তিনি উদ্যোগ নিয়েছিলেন ভাসানীকে গ্রেপ্তারের। প্রথমে পারেননি, কিন্তু পরে সামরিক অভ্যুত্থান ঘটিয়ে একেবারে শুরুতেই যাঁদের কারাবন্দী করেছিলেন, ভাসানী ছিলেন তাঁদেরই একজন। সে সময়ে তাঁকে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে আটক করে রাখা হয়েছিল একটানা প্রায় চার বছর।
মওলানা ভাসানীকে বলা হয় কৃষকনেতা। এক অর্থে সেটা তিনি ছিলেন বৈকি। কিন্তু কেবল কৃষকের নয়, নেতা ছিলেন তিনি মৎস্যজীবী, বিড়িশ্রমিক, কারখানার শ্রমিক, চা-শ্রমিক, রিকশাশ্রমিক, পাটচাষিসহ সব মেহনতি মানুষের। তাঁদের মুক্তির জন্য তিনি লড়াই করেছেন। তাঁর সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধিতা ছিল অনমনীয়। গ্রামের মানুষ তিনি, গ্রামেই থাকতে পছন্দ করতেন, কিন্তু যোগ দিয়েছেন পৃথিবীর নানা দেশে গিয়ে সাম্রাজ্যবাদবিরোধী সম্মেলনে। ওদিকে পুঁজিবাদকে তিনি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন পুরোপুরি। তাঁর বক্তৃতায়, বিবৃতিতে তো অবশ্যই, জীবনযাপনে, বসবাসে, জামাকাপড়েও উচ্চারণ ছিল সেই প্রত্যাখ্যানের। ইংরেজি ভাষা তিনি ভালোই জানতেন, ওই ভাষায় ব্যক্ত বক্তব্য বুঝতে তাঁর বিন্দুমাত্র অসুবিধা হতো না; নিজের বক্তব্য ইংরেজিতে প্রকাশও করতে পারতেন ইচ্ছা করলে; কিন্তু বিদেশিদের সঙ্গে আলাপে সব সময় দোভাষীর সাহায্য নিতেন; সেটি ছিল তাঁর পুঁজিবাদকে পূর্ণরূপে প্রত্যাখ্যানেরই নিদর্শন।
তাঁর ভরসা ছিল জনগণের ওপরই। শ্রেণিচ্যুত মধ্যবিত্তকে তিনি সঙ্গে পেয়েছেন এবং সাদরে কাছে টেনে নিয়েছেন, কিন্তু তিনি জানতেন যে মেহনতি মানুষের জাগরণ ভিন্ন মুক্তি আসবে না; সে জন্য তিনি মেহনতিদের সংগঠন গড়ে তুলেছেন, কৃষক সমিতিতে ছিল তাঁর বিশেষ রকমের আগ্রহ; তিনি লাল টুপি বাহিনী প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছিলেন, ঘেরাও ও হাট হরতালের প্রবর্তন করেছেন। গ্রামে গ্রামে তিনি ঘুরে বেড়াতেন মানুষকে সচেতন করার জন্য। জনমুক্তির জন্য সাংস্কৃতিক প্রস্তুতিকেও তিনি অপরিহার্য বলে জানতেন। আওয়ামী মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠার পরে তাঁর একেবারে প্রাথমিক পদক্ষেপগুলোর মধ্যে ছিল বক্তব্য ও সংবাদ প্রচারের জন্য একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা বের করা। কাগমারীতে তিনি যে আন্তর্জাতিক ধরনের একটি সাংস্কৃতিক সম্মেলনের আয়োজন করেছিলেন, সেটা কোনো তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তের ব্যাপার ছিল না, ছিল একটি দৃষ্টিভঙ্গির প্রকাশ। ১৯৬৫ সালের যুদ্ধের পরে রেডিওতে যখন রবীন্দ্রসংগীত নিষিদ্ধকরণের রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ নেওয়া হয়, তখন বুদ্ধিজীবীরা প্রতিবাদ করেছেন। মওলানাও সাড়া দিয়েছিলেন সঙ্গে সঙ্গেই। কিন্তু তাঁর প্রতিবাদের ধরনটা ছিল ভিন্ন রকমের। অন্যদের মতো তাঁর আবেদন সরকারের কাছে ছিল না। ছিল জনগণের কাছে। জনগণকে তিনি আহ্বান জানিয়েছিলেন প্রতিরোধ গড়ে তুলতে। দৃষ্টিভঙ্গির এই বৈশিষ্ট্যটি খেয়াল না করলে তাঁকে বুঝে ওঠা কঠিন, বিশেষ করে এলিট শ্রেণিভুক্তদের পক্ষে।
মওলানা ভাসানী বর্তমানকে জানতেন এবং একই সঙ্গে ভবিষ্যৎকেও দেখতে পেতেন। অনেক বড় মাপের একজন কবির মতো ছিল তাঁর দেখার ক্ষমতা। তাঁর বক্তৃতাতে কেবল আগুনই থাকত না, থাকত কবিতাও। তাঁর ছিল কবির কল্পনাশক্তি। বাংলা সাহিত্যে নজরুলের যে স্থান, বাংলার রাজনীতিতে মওলানা ভাসানীর স্থানও সে রকমেরই। মৌলিক ও বিপ্লবী। নজরুল শেষ পর্যন্ত নিশ্চুপ হয়ে গিয়েছিলেন; সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের সাহায্য না পেয়ে। মওলানা ভাসানীও শেষ জীবনে যথার্থ সঙ্গীসাথি পাননি; কিন্তু তিনি নিশ্চুপ হয়ে যাননি, শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত সজীব ও সক্রিয় ছিলেন আন্দোলনে। ব্যক্তিগত সম্পত্তিতে যেহেতু বিশ্বাস করতেন না, তাঁর জন্য তাই হারানোর কোনো ভয় ছিল না। জয় করার ছিল মেহনতিদের মুক্তি।
লেখক: ইমেরিটাস অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

রাজনীতিতে মওলানার রাজনৈতিক অবস্থান পেটি বুর্জোয়াদের পক্ষে ছিল অসহ্য, কারণ তিনি যেটা চাইছিলেন, সেটি হলো সামাজিক বিপ্লব, যদিও ওই বিপ্লবের কথা পরিষ্কারভাবে তিনি বলতে পারেননি। বিপ্লবের অত্যাবশ্যকতার ধারণায় পৌঁছাতেও তাঁর সময় লেগেছে। স্থিরভাবে রাজনৈতিক সাহিত্য অধ্যয়ন করার ও লেখার কাজে মনোযোগ দেওয়ার সুযোগ তিনি পাননি। তদুপরি তিনি ছিলেন মাদ্রাসায় শিক্ষিত এবং প্রথম জীবনে লোকে তাঁকে মানত একজন পীর হিসেবে, তিনি তাদের বিশ্বাসকে আঘাত করতেন না, যদিও জানতেন যে তাঁর পানিপড়া ও ঝাড়ফুঁকে কোনো কাজ হবে না। পরামর্শ দিতেন ডাক্তারের পরামর্শ নিতে, টাকা গুঁজে দিতেন হাতে, প্রয়োজন দেখলে। সে জন্য তাঁর পক্ষে ও সঙ্গে যাঁরা ছিলেন, তাঁদের কাছেও মনে হয়েছে সমাজ পরিবর্তনের বিষয়ে তাঁর চিন্তা ছিল অত্যন্ত অস্পষ্ট। যেমনটা তাঁর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ বদরুদ্দীন উমর বলেছেন তাঁর ‘পলিটিকস অ্যান্ড সোসাইটি ইন ইস্ট পাকিস্তান অ্যান্ড বাংলাদেশ’ বইয়ে। তা ছাড়া, তাঁর বক্তব্য প্রচারের জন্য পত্রপত্রিকাও ছিল না। ইত্তেফাকের মালিকানা বদল হয়েছিল।
অন্য পত্রিকার সবগুলোই ছিল হয় সরকার-সমর্থক, নয়তো টাকাওয়ালাদের মালিকানার; তারা সবই মওলানার প্রতি বিরূপ ছিল। মওলানার মধ্যে দোদুল্যমানতা ছিল না; তবে একধরনের অস্থিরতা ছিল বলে তাঁর অনুসারীদের কেউ কেউ মনে করেন। সেটা যে অসত্য, তা-ও নয়। যে জন্য দেখা যেত তিনি আচমকা কোনো কোনো সিদ্ধান্ত দিয়ে ফেলছেন, অন্যদের না জানিয়ে। যেন পেটি বুর্জোয়া তৎপরতা। কিন্তু পরে যা প্রমাণিত হয়েছে তা হলো, তাঁর সিদ্ধান্তগুলোর কোনোটাই ভ্রান্ত ছিল না। তাঁর ধীশক্তি ছিল অসাধারণ; তিনি টের পেতেন মানুষ কী চায়, তারা কত দূর যেতে প্রস্তুত এবং প্রতিপক্ষের সবলতা কোথায়, কোথায় দুর্বলতা। কখনো কখনো মনে হতো তিনি তাঁর মতকে জোর করে চাপিয়ে দিচ্ছেন। আসলে তিনি যা করতেন তা হলো, পাছে বিলম্ব ঘটে তাই সিদ্ধান্তগুলো দ্রুত নেওয়া এবং তাঁর জন্য খুব বড় রকমের অসুবিধা ছিল এই যে তাঁর রাজনৈতিক সংগঠন সুসংগঠিত ছিল না। সংগঠনের ভেতরে বিভিন্ন মত কাজ করত; কোনো অংশ ছিল ভ্রান্ত আবার কোনো অংশ প্রতিক্রিয়াশীল।
পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার আগে তিনি মুসলিম লীগে ছিলেন, কিন্তু পাকিস্তান যখন প্রতিষ্ঠা পেল, তখন প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই তিনি টের পেলেন যে এই পাকিস্তান মানুষকে মুক্তি দেবে না; এখানে পুরোনো শাসন-শোষণই আবার নতুন চেহারায় বহাল থাকবে; তাই দ্রুতই তিনি মুসলিম লীগ ছেড়ে দিয়ে আওয়ামী মুসলিম লীগের গঠন প্রক্রিয়ায় যুক্ত হলেন এবং তাঁর প্রত্যক্ষ নেতৃত্বে তো বটেই, প্রধানত তাঁর চেষ্টাতেই আওয়ামী মুসলিম লীগ একটি শক্তিশালী গণসংগঠন হয়ে উঠল। সংগঠনের অসাম্প্রদায়িকীকরণও তাঁর আগ্রহেই ঘটল। কিন্তু আওয়ামী লীগ যখন সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রক্ষমতায় যেতে সক্ষম হলো, তখন স্বায়ত্তশাসন ও পররাষ্ট্রনীতি—এই দুই মৌলিক প্রশ্নে দলের প্রতিক্রিয়াশীল অংশ সংগঠনের প্রতিষ্ঠাকালীন অবস্থানের ব্যত্যয় ঘটিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষে চলে যেতে চাইল। ফলে দল দ্বিখণ্ডিত হয়ে গেল। এরপর প্রগতিশীল অংশটি পশ্চিম পাকিস্তানের প্রগতিশীল রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের সঙ্গে একত্র হয়ে ন্যাপ গঠন করে।
এবারও নেতৃত্ব দেন মওলানা ভাসানীই। ন্যাপের মূল শক্তি ছিলেন কমিউনিস্ট কর্মীরা; কিন্তু পূর্ববঙ্গের কমিউনিস্ট পার্টির তখনকার নেতৃত্ব ন্যাপ গঠনে খুব একটা খুশি হননি, তাঁরা আওয়ামী লীগ ভেঙে বেরিয়ে যাওয়া ঠিক হবে কি না, সে বিষয়ে নিশ্চিত ছিলেন না। কিন্তু ন্যাপ নিজেও ঐক্যবদ্ধ রইল না, ভাগ হয়ে গেল রুশপন্থী ও চীনপন্থী। চীনপন্থীদের বড় অংশটি আবার পরিণত হলো নকশালপন্থীতে। এসবের ফলে ভাসানী অনেকটা নিঃসঙ্গ হয়ে পড়লেন
এবং ন্যাপের ভেতর সুবিধাবাদীরা মশিউর রহমান যাদু মিয়ার নেতৃত্বে দলের নেতৃত্ব পেয়ে গেল। ভাসানী বদলাননি, তিনি তাঁর সমাজবিপ্লবী অবস্থানে অটল ছিলেন, তাঁর অনুসারীরাই বিচ্যুত হয়েছেন এবং বিচ্যুত হয়ে অভিযোগ করেছেন ভাসানীর বিরুদ্ধেই।
আর ওই যে তাঁর বিপ্লবমুখী অবস্থান, এর জন্যই ডানের তো বটেই, আপসপন্থী বামেরাও তাঁর বিরুদ্ধে চলে গেছে। চলে গেছে এমনকি সীমিত বুদ্ধি ও অতিউৎসাহী নকশালপন্থীরা। বিপক্ষের লোকেরা কেউ বলেছে, তিনি ‘রহস্যময়’; কেউ বলেছে, তিনি হঠকারী। উনসত্তরের অভ্যুত্থানের সময় আমেরিকার ‘টাইম’ পত্রিকা তাদের প্রচ্ছদে ভাসানীর ছবি ছাপিয়ে নিচে লিখে দিয়েছিল, ‘প্রফেট অব ভায়োলেন্স’; আর সোভিয়েত কমিউনিস্ট পার্টির মুখপত্র ‘নিউ টাইম’ লিখেছে, পূর্ব পাকিস্তানে ‘কিছু চীনপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদী নৈরাজ্যজনক কার্যকলাপ শুরু করেছে’। পরস্পরবিরুদ্ধ দুই পক্ষের দৃষ্টিভঙ্গির এই ঐক্যতে অবশ্য বিস্ময়ের কোনো কারণ ছিল না। কারণ, সোভিয়েত ইউনিয়ন তখন আর আগের অবস্থানে নেই, অপুঁজিবাদী বিকাশ ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে আস্থা স্থাপন করে এবং শ্রেণিসংগ্রাম বাদ দিয়ে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতেই সমাজতন্ত্র কায়েম সম্ভব বলে বিশ্বাসী হয়ে রীতিমতো ‘সামাজিক সাম্রাজ্যবাদী’ চেহারা নিয়ে ফেলেছে।
শুরু থেকেই পাকিস্তান সরকার কমিউনিস্টদের মনে করত পয়লা নম্বর দুশমন। ভাসানী কমিউনিস্টদের সঙ্গে আছেন, তাই তিনিও বড় মাপের দুশমন বৈকি। এমন কথা সোহরাওয়ার্দীও বলেছেন, আইয়ুব খান তো বলেছেনই। উনসত্তরের ২৫ মার্চ আইয়ুব খান ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়ার সময়ে যে ভাষণ দেন, তার একেবারে শুরুতেই ‘ঘেরাও’-এর বিরুদ্ধে নিজের বিদ্বেষ প্রকাশ করেছিলেন, আর ঘেরাওয়ের উদ্যোক্তা তো ছিলেন মওলানা ভাসানীই। আইয়ুবের এককালীন সহযোগী ইস্কান্দার মির্জা পূর্ববঙ্গের গভর্নর হয়ে প্রথম যে কাজগুলো করেছিলেন, সেগুলোর একটি ছিল মওলানা ভাসানীকে পাওয়া মাত্র গুলি করে হত্যা করার হুমকি দেওয়া। পরে প্রেসিডেন্ট হয়ে তিনি উদ্যোগ নিয়েছিলেন ভাসানীকে গ্রেপ্তারের। প্রথমে পারেননি, কিন্তু পরে সামরিক অভ্যুত্থান ঘটিয়ে একেবারে শুরুতেই যাঁদের কারাবন্দী করেছিলেন, ভাসানী ছিলেন তাঁদেরই একজন। সে সময়ে তাঁকে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে আটক করে রাখা হয়েছিল একটানা প্রায় চার বছর।
মওলানা ভাসানীকে বলা হয় কৃষকনেতা। এক অর্থে সেটা তিনি ছিলেন বৈকি। কিন্তু কেবল কৃষকের নয়, নেতা ছিলেন তিনি মৎস্যজীবী, বিড়িশ্রমিক, কারখানার শ্রমিক, চা-শ্রমিক, রিকশাশ্রমিক, পাটচাষিসহ সব মেহনতি মানুষের। তাঁদের মুক্তির জন্য তিনি লড়াই করেছেন। তাঁর সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধিতা ছিল অনমনীয়। গ্রামের মানুষ তিনি, গ্রামেই থাকতে পছন্দ করতেন, কিন্তু যোগ দিয়েছেন পৃথিবীর নানা দেশে গিয়ে সাম্রাজ্যবাদবিরোধী সম্মেলনে। ওদিকে পুঁজিবাদকে তিনি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন পুরোপুরি। তাঁর বক্তৃতায়, বিবৃতিতে তো অবশ্যই, জীবনযাপনে, বসবাসে, জামাকাপড়েও উচ্চারণ ছিল সেই প্রত্যাখ্যানের। ইংরেজি ভাষা তিনি ভালোই জানতেন, ওই ভাষায় ব্যক্ত বক্তব্য বুঝতে তাঁর বিন্দুমাত্র অসুবিধা হতো না; নিজের বক্তব্য ইংরেজিতে প্রকাশও করতে পারতেন ইচ্ছা করলে; কিন্তু বিদেশিদের সঙ্গে আলাপে সব সময় দোভাষীর সাহায্য নিতেন; সেটি ছিল তাঁর পুঁজিবাদকে পূর্ণরূপে প্রত্যাখ্যানেরই নিদর্শন।
তাঁর ভরসা ছিল জনগণের ওপরই। শ্রেণিচ্যুত মধ্যবিত্তকে তিনি সঙ্গে পেয়েছেন এবং সাদরে কাছে টেনে নিয়েছেন, কিন্তু তিনি জানতেন যে মেহনতি মানুষের জাগরণ ভিন্ন মুক্তি আসবে না; সে জন্য তিনি মেহনতিদের সংগঠন গড়ে তুলেছেন, কৃষক সমিতিতে ছিল তাঁর বিশেষ রকমের আগ্রহ; তিনি লাল টুপি বাহিনী প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছিলেন, ঘেরাও ও হাট হরতালের প্রবর্তন করেছেন। গ্রামে গ্রামে তিনি ঘুরে বেড়াতেন মানুষকে সচেতন করার জন্য। জনমুক্তির জন্য সাংস্কৃতিক প্রস্তুতিকেও তিনি অপরিহার্য বলে জানতেন। আওয়ামী মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠার পরে তাঁর একেবারে প্রাথমিক পদক্ষেপগুলোর মধ্যে ছিল বক্তব্য ও সংবাদ প্রচারের জন্য একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা বের করা। কাগমারীতে তিনি যে আন্তর্জাতিক ধরনের একটি সাংস্কৃতিক সম্মেলনের আয়োজন করেছিলেন, সেটা কোনো তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তের ব্যাপার ছিল না, ছিল একটি দৃষ্টিভঙ্গির প্রকাশ। ১৯৬৫ সালের যুদ্ধের পরে রেডিওতে যখন রবীন্দ্রসংগীত নিষিদ্ধকরণের রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ নেওয়া হয়, তখন বুদ্ধিজীবীরা প্রতিবাদ করেছেন। মওলানাও সাড়া দিয়েছিলেন সঙ্গে সঙ্গেই। কিন্তু তাঁর প্রতিবাদের ধরনটা ছিল ভিন্ন রকমের। অন্যদের মতো তাঁর আবেদন সরকারের কাছে ছিল না। ছিল জনগণের কাছে। জনগণকে তিনি আহ্বান জানিয়েছিলেন প্রতিরোধ গড়ে তুলতে। দৃষ্টিভঙ্গির এই বৈশিষ্ট্যটি খেয়াল না করলে তাঁকে বুঝে ওঠা কঠিন, বিশেষ করে এলিট শ্রেণিভুক্তদের পক্ষে।
মওলানা ভাসানী বর্তমানকে জানতেন এবং একই সঙ্গে ভবিষ্যৎকেও দেখতে পেতেন। অনেক বড় মাপের একজন কবির মতো ছিল তাঁর দেখার ক্ষমতা। তাঁর বক্তৃতাতে কেবল আগুনই থাকত না, থাকত কবিতাও। তাঁর ছিল কবির কল্পনাশক্তি। বাংলা সাহিত্যে নজরুলের যে স্থান, বাংলার রাজনীতিতে মওলানা ভাসানীর স্থানও সে রকমেরই। মৌলিক ও বিপ্লবী। নজরুল শেষ পর্যন্ত নিশ্চুপ হয়ে গিয়েছিলেন; সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের সাহায্য না পেয়ে। মওলানা ভাসানীও শেষ জীবনে যথার্থ সঙ্গীসাথি পাননি; কিন্তু তিনি নিশ্চুপ হয়ে যাননি, শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত সজীব ও সক্রিয় ছিলেন আন্দোলনে। ব্যক্তিগত সম্পত্তিতে যেহেতু বিশ্বাস করতেন না, তাঁর জন্য তাই হারানোর কোনো ভয় ছিল না। জয় করার ছিল মেহনতিদের মুক্তি।
লেখক: ইমেরিটাস অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

রাজনীতিতে মওলানার রাজনৈতিক অবস্থান পেটি বুর্জোয়াদের পক্ষে ছিল অসহ্য, কারণ তিনি যেটা চাইছিলেন, সেটি হলো সামাজিক বিপ্লব, যদিও ওই বিপ্লবের কথা পরিষ্কারভাবে তিনি বলতে পারেননি। বিপ্লবের অত্যাবশ্যকতার ধারণায় পৌঁছাতেও...
১৬ নভেম্বর ২০২২
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

রাজনীতিতে মওলানার রাজনৈতিক অবস্থান পেটি বুর্জোয়াদের পক্ষে ছিল অসহ্য, কারণ তিনি যেটা চাইছিলেন, সেটি হলো সামাজিক বিপ্লব, যদিও ওই বিপ্লবের কথা পরিষ্কারভাবে তিনি বলতে পারেননি। বিপ্লবের অত্যাবশ্যকতার ধারণায় পৌঁছাতেও...
১৬ নভেম্বর ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

রাজনীতিতে মওলানার রাজনৈতিক অবস্থান পেটি বুর্জোয়াদের পক্ষে ছিল অসহ্য, কারণ তিনি যেটা চাইছিলেন, সেটি হলো সামাজিক বিপ্লব, যদিও ওই বিপ্লবের কথা পরিষ্কারভাবে তিনি বলতে পারেননি। বিপ্লবের অত্যাবশ্যকতার ধারণায় পৌঁছাতেও...
১৬ নভেম্বর ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

রাজনীতিতে মওলানার রাজনৈতিক অবস্থান পেটি বুর্জোয়াদের পক্ষে ছিল অসহ্য, কারণ তিনি যেটা চাইছিলেন, সেটি হলো সামাজিক বিপ্লব, যদিও ওই বিপ্লবের কথা পরিষ্কারভাবে তিনি বলতে পারেননি। বিপ্লবের অত্যাবশ্যকতার ধারণায় পৌঁছাতেও...
১৬ নভেম্বর ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫