মামুনুর রশীদ

বাজারে দ্রব্যমূল্যের আগুন জ্বলছে বেশ কিছুদিন ধরে। অকারণে এই আগুন ছড়িয়ে পড়েছে সারা দেশে। মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের নাভিশ্বাস উঠেছে এই দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে। যেকোনো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে গেলেই কয়েক দিন আগের দামের সঙ্গে একেবারেই অন্যায়ভাবে শতকরা ২০ থেকে ৫০ ভাগ দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সরকার নানা কথা বললেও কোনো লাভ হচ্ছে না, দাম বেড়েই চলেছে।
এর মধ্যেই চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে কনটেইনার ডিপোতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে গেল। ইতিমধ্যে ৪৪ জন মানুষ মৃত্যুবরণ করেছে এবং অপেক্ষায় আছে মারাত্মকভাবে দগ্ধ আরও কয়েকজন। আগুন নেভাতে গিয়ে অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করে ফায়ার সার্ভিসের নয়জন কর্মী বীরের মৃত্যু আলিঙ্গন করেছেন। এর আগে তাজরীন গার্মেন্টস, নিমতলী ও চুড়িহাট্টায় অগ্নিকাণ্ডে শত শত প্রাণ হারিয়ে গেছে। আগুনে পুড়ে মৃত্যু সে এক ভয়ংকর যন্ত্রণাদায়ক মৃত্যু। মৃত্যুগুলোর একটিই কারণ—দায়িত্বহীনতা।
আমরা কারখানা গড়ব, মুনাফা নেব আর যাঁদের কারণে কলকারখানার উৎপাদন হয়, তাঁদের প্রতি চরম অবহেলা দেখাব! রাষ্ট্রে আইনের অভাব নেই, অনেক আইন রাষ্ট্রকে করতেও হয় না। ব্রিটিশ আমল থেকে রয়ে গেছে। কিন্তু সেই আইনের প্রয়োগ নেই এবং না মানলেও কিছু যায়-আসে না। যে সংস্থা এই আইনের যথাযোগ্য প্রয়োগ করবে, সে সক্রিয় নয়, কিছু মাসোহারাতেই তারা সন্তুষ্ট। বহুবার নির্মাণ আইনের কথা বলা হয়েছে এবং বাসভবন বা যেকোনো স্থাপনার নিরাপত্তার জন্য আইন আছে। সেসব আইনেরও বাস্তবিক প্রয়োগ নেই। ৩০-৪০ বছর ধরে যেভাবে ঢাকাসহ সারা দেশে অ্যাপার্টমেন্ট নির্মাণের হিড়িক পড়েছে, তাতে যথার্থ অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থা আছে কি না, তা কেউ পরীক্ষা করছে না। আগুন ধরে গেলে ওই ভবনের যাঁরা বাসিন্দা তাঁরা কী করে দ্রুত বের হবেন, তার কোনো ব্যবস্থা নেই।
একাধিক তলাবিশিষ্ট দালানে সাধারণত আমরা পেছনের দিকে একটি লোহার সিঁড়ি দেখতে পাই, ইংরেজিতে যাকে বলে ‘ফায়ার এক্সিট’। আজকাল কোনো ভবনেই এই লোহার সিঁড়িটি দেখা যায় না। তার বদলে নাকি আরও আধুনিক ব্যবস্থা এসেছে। সেই ব্যবস্থাও দৃশ্যমান হয় না। সব জায়গাতেই কর্তৃপক্ষ রয়েছে, ভবনের নকশা অনুমোদনের ক্ষমতাপ্রাপ্ত লোক আছে, সিটি করপোরেশনের হাতে ক্ষমতা আছে। আজ অবধি শুধু ট্যাক্স কালেক্টরকে দেখতে পাই আর রাস্তায় আবর্জনার স্তূপ দেখতে পাই। কিন্তু সিটি করপোরেশনের ভবন তদারককারী কোনো বিল্ডিং ইন্সপেক্টরকে দেখতে পাই না।
উন্নত দেশগুলোতে এবং তৃতীয় বিশ্বের কিছু দেশেও এই বিল্ডিং ইন্সপেক্টরের অস্তিত্ব সব সময় পাওয়া যায়। স্বাধীনতার ৫১ বছর হয়ে গেল, অথচ এই সব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করার জন্য লোকজনের দেখা মেলে না আমাদের দেশে। মাঝে মাঝে মনে হয় আমরা সিটি করপোরেশনের ট্যাক্স কেন দিই? এই ট্যাক্সের টাকা, সরকারের অনুদান—এসব মিলিয়ে বেশ একটা মোটা অঙ্কের টাকা সিটি করপোরেশনের হাতে থাকে। কিন্তু তার বিনিময়ে আমরা নগরবাসী কী সেবাটা পাই?
কলকারখানা নির্মাণের ক্ষেত্রে বহু ধরনের আইন আছে। কোথাও যদি দাহ্য পদার্থ রাখা হয়, তার সুরক্ষার জন্য নানা ধরনের ব্যবস্থার কথা সেই আইনে উল্লেখ আছে। কিন্তু তা মানা হচ্ছে কি না, তা দেখার জন্য কোনো দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষকে দেখা যায় না। যদি দেখাই যেত তাহলে তাজরীন বা রানা প্লাজায় এত বড় ঘটনা ঘটত না। পুরান ঢাকায় অনেক দালানকোঠা আছে, যেগুলো বহু বছর যাবৎ অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে আছে। কোনো কোনো জায়গায় অগ্নিকাণ্ড হলে বা দালান ভেঙে পড়লে সেখানকার মানুষজনকে বাঁচানোর জন্য ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি বা অ্যাম্বুলেন্স ঢুকতে পারবে না। এসব তদারকির জন্য সিটি করপোরেশনের নির্বাচিত প্রতিনিধি আছেন এবং জনবলও আছে।
গত ৫১ বছরে এবং তার সঙ্গে যদি আরও ২৪ বছর যোগ করি তাহলে ৭৫ বছর সিটি করপোরেশনের কোনো লোক শুধু ট্যাক্স গ্রহণের জন্য বাড়িতে আসা ছাড়া তাঁদের কোনো কাজে দেখি না। কাউন্সিলর নির্বাচনের সময় কখনো কখনো খোদ প্রার্থী নন, তাঁর চ্যালাচামুন্ডার দেখা পাওয়া গেছে। সরকার জনগণের ট্যাক্সের অর্থে পরিচালিত হয়। এই ট্যাক্স বিভিন্নভাবে সরকারের কোষাগারে যায়। ফ্যাক্টরি, ব্যবসা-বাণিজ্য এসব থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ পেয়ে থাকে সরকার। এই অর্থ ব্যয়ের জন্য জনবল নিয়োগ করা আছে। এই জনবলের আবার দেশি-বিদেশি প্রশিক্ষণও আছে। কিন্তু কার্যক্রমে একেবারেই অসাড়। কখনো কখনো সিটি করপোরেশন ও কারখানা সুরক্ষার জন্য নিয়োজিত কোনো ব্যক্তি সত্যিকার অর্থে তাঁর যদি ক্ষমতা বাস্তবায়ন করতে যান, তাহলে তাঁর অসাধু সহকর্মীদের চাপে অসহায় হয়ে পড়েন। রাষ্ট্রের আইনে মানুষের নিরাপত্তা খুব অল্প দামেই বিক্রি হয়ে যায়। কিন্তু তার খেসারত দিতে হয় শত শত, হাজার হাজার নিরীহ আদম সন্তানকে।
রানা প্লাজায় যা দেখেছি, একই দৃশ্যের অবতারণা চট্টগ্রামের কনটেইনার ডিপোতে অগ্নিদুর্ঘটনায় মানুষ তাদের স্বজনদের ছবি নিয়ে খুঁজে বেড়াচ্ছে। আগুনে এমনভাবে চেহারা বিকৃত হয়েছে যে চেনা যাচ্ছে না। কী মর্মান্তিক! লাশগুলো সারিবদ্ধভাবে পড়ে আছে এবং তাদের কোনো পরিচয় পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে ডিএনএ পরীক্ষা করা হচ্ছে। মৃত্যুর চেয়েও তা নিষ্ঠুর। এই সবকিছু এড়ানোর জন্য শুধু আইন মেনে এবং নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করলেই এ রকম হওয়ার কথা নয়।
বাংলাদেশে মানুষের জীবনের মূল্য খুবই কম। প্রতিদিন ব্যবসায়ীদের চক্করে পড়ে যেভাবে পণ্যের দাম বাড়ে, মানুষের জীবনের দাম তেমন বাড়ে না; বরং নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগে, কর্তৃপক্ষের অবহেলা, আইনের শাসনের অনুপস্থিতি—এসব কারণে এমন একটা দিন যায় না, যেখানে আর কিছু না হলেও সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় না। সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু সে তো প্রাকৃতিক কারণে হয় না, একেবারেই মানুষের তৈরি। কতগুলো দায়িত্বহীন মানুষের স্বেচ্ছাচারিতার কারণে আমাদের উন্নয়ন আশীর্বাদের বদলে অভিশাপে পরিণত হয়েছে।
রাষ্ট্র নাগরিকের এবং এই নাগরিক নিজেরা তাঁদের শাসক নির্বাচন করে থাকেন। যাঁরা শাসক হন, তাঁদের কাছে সবচেয়ে বড় দায় হলো—নাগরিক দায়। নাগরিকদের কল্যাণ, তাঁদের জীবনযাপন, শৃঙ্খলা এসবকে দেখভাল করার জন্য নির্বাচিত প্রতিনিধিরা সরকার গঠন করে থাকেন। সরকারের কর্মী বাহিনী রাষ্ট্রের প্রতি অনুগত থেকে তাঁদের দায়িত্ব পালন করেন। এই কর্মী বাহিনী আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় জাতীয় উন্নয়নে, শৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত থাকার কথা। কিন্তু কর্তৃপক্ষের অবহেলায়, দুর্নীতির বেড়াজালে, স্বজনপ্রীতিতে ক্রমেই প্রশাসন নামে যন্ত্রটির অঙ্গপ্রত্যঙ্গ নির্জীব হতে থাকে। নাগরিক সেবার চেয়ে খবরদারি, ক্ষমতার অপব্যবহার—এসবই মুখ্য হয়ে পড়ে। সরকারের যে নাগরিক দায়, বিষয়টা ক্রমাগত আমরা ভুলতে বসেছি। সর্বত্র সেবার বিনিময়ে অর্থ। অর্থ ছাড়া সরকারি অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা দেয়ালের সঙ্গেও কথা বলেন না। দেয়াল এবং ইট-কাঠও নাকি টাকাখেকো।
আমরা বড় বড় দুর্ঘটনার পর প্রত্যাশা করি, এবারে একটা কিছু হবে। কিন্তু দেখা যায় কিছুই হয় না, আইন-আদালতে সেসব পৌঁছায় না। টাকার অভাবনীয় শক্তিতে সব মিটমাট হয়ে যায়। ৩০ বছর ধরে নির্মাণ, উন্নয়ন, অসংখ্য কলকারখানা স্থাপন হচ্ছে। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আধুনিক ব্যবস্থাপনা কত দূর এগিয়েছে, তাতে যথেষ্ট সন্দেহের অবকাশ রয়েছে। রাষ্ট্রের আয় বেড়েছে, কিন্তু নাগরিক নিরাপত্তার বিষয়টি কত দূর এগিয়েছে, তা সব সময়ই প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে আছে।
অনেক স্থানেই, বিশেষ করে কারখানাগুলোতে বলা থাকে ‘নিরাপত্তাই প্রথম’। কিন্তু নিরাপত্তা প্রথম তো নয়ই, শেষও নয়। বিপুল বেকারত্বের দেশে মানুষ খুব সহজেই একটা চাকরিতে রাজি হয়ে যান। লাখ টাকা খরচ করে, ঘরবাড়ি বিক্রি করে একটা ছোট্ট পিয়নের চাকরি নিয়ে থাকেন। এরপর বাড়িঘর বিক্রি করে সর্বস্বান্ত হয়ে মধ্যপ্রাচ্য গিয়ে আশার ছলনে ভুলে আবার দেশে ফিরে আসেন। যেসব শ্রমিক ভয়ংকর আগুনে ভস্মীভূত হলেন, তাঁদের জীবনের মূল্য নির্ধারিত হলো কয়েক লাখ টাকায়। আর আগুন নেভাতে গিয়ে ফায়ার সার্ভিসের যে তরুণেরা শহীদ হলেন, তাঁদের জীবনের মূল্য হয়তো সরকারি আইনেই নির্ধারিত হবে। কিন্তু দেশের কোটি কোটি মানুষের হৃদয়ে যে রক্তক্ষরণ হলো, তার মূল্য কে দেবে?

বাজারে দ্রব্যমূল্যের আগুন জ্বলছে বেশ কিছুদিন ধরে। অকারণে এই আগুন ছড়িয়ে পড়েছে সারা দেশে। মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের নাভিশ্বাস উঠেছে এই দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে। যেকোনো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে গেলেই কয়েক দিন আগের দামের সঙ্গে একেবারেই অন্যায়ভাবে শতকরা ২০ থেকে ৫০ ভাগ দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সরকার নানা কথা বললেও কোনো লাভ হচ্ছে না, দাম বেড়েই চলেছে।
এর মধ্যেই চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে কনটেইনার ডিপোতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে গেল। ইতিমধ্যে ৪৪ জন মানুষ মৃত্যুবরণ করেছে এবং অপেক্ষায় আছে মারাত্মকভাবে দগ্ধ আরও কয়েকজন। আগুন নেভাতে গিয়ে অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করে ফায়ার সার্ভিসের নয়জন কর্মী বীরের মৃত্যু আলিঙ্গন করেছেন। এর আগে তাজরীন গার্মেন্টস, নিমতলী ও চুড়িহাট্টায় অগ্নিকাণ্ডে শত শত প্রাণ হারিয়ে গেছে। আগুনে পুড়ে মৃত্যু সে এক ভয়ংকর যন্ত্রণাদায়ক মৃত্যু। মৃত্যুগুলোর একটিই কারণ—দায়িত্বহীনতা।
আমরা কারখানা গড়ব, মুনাফা নেব আর যাঁদের কারণে কলকারখানার উৎপাদন হয়, তাঁদের প্রতি চরম অবহেলা দেখাব! রাষ্ট্রে আইনের অভাব নেই, অনেক আইন রাষ্ট্রকে করতেও হয় না। ব্রিটিশ আমল থেকে রয়ে গেছে। কিন্তু সেই আইনের প্রয়োগ নেই এবং না মানলেও কিছু যায়-আসে না। যে সংস্থা এই আইনের যথাযোগ্য প্রয়োগ করবে, সে সক্রিয় নয়, কিছু মাসোহারাতেই তারা সন্তুষ্ট। বহুবার নির্মাণ আইনের কথা বলা হয়েছে এবং বাসভবন বা যেকোনো স্থাপনার নিরাপত্তার জন্য আইন আছে। সেসব আইনেরও বাস্তবিক প্রয়োগ নেই। ৩০-৪০ বছর ধরে যেভাবে ঢাকাসহ সারা দেশে অ্যাপার্টমেন্ট নির্মাণের হিড়িক পড়েছে, তাতে যথার্থ অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থা আছে কি না, তা কেউ পরীক্ষা করছে না। আগুন ধরে গেলে ওই ভবনের যাঁরা বাসিন্দা তাঁরা কী করে দ্রুত বের হবেন, তার কোনো ব্যবস্থা নেই।
একাধিক তলাবিশিষ্ট দালানে সাধারণত আমরা পেছনের দিকে একটি লোহার সিঁড়ি দেখতে পাই, ইংরেজিতে যাকে বলে ‘ফায়ার এক্সিট’। আজকাল কোনো ভবনেই এই লোহার সিঁড়িটি দেখা যায় না। তার বদলে নাকি আরও আধুনিক ব্যবস্থা এসেছে। সেই ব্যবস্থাও দৃশ্যমান হয় না। সব জায়গাতেই কর্তৃপক্ষ রয়েছে, ভবনের নকশা অনুমোদনের ক্ষমতাপ্রাপ্ত লোক আছে, সিটি করপোরেশনের হাতে ক্ষমতা আছে। আজ অবধি শুধু ট্যাক্স কালেক্টরকে দেখতে পাই আর রাস্তায় আবর্জনার স্তূপ দেখতে পাই। কিন্তু সিটি করপোরেশনের ভবন তদারককারী কোনো বিল্ডিং ইন্সপেক্টরকে দেখতে পাই না।
উন্নত দেশগুলোতে এবং তৃতীয় বিশ্বের কিছু দেশেও এই বিল্ডিং ইন্সপেক্টরের অস্তিত্ব সব সময় পাওয়া যায়। স্বাধীনতার ৫১ বছর হয়ে গেল, অথচ এই সব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করার জন্য লোকজনের দেখা মেলে না আমাদের দেশে। মাঝে মাঝে মনে হয় আমরা সিটি করপোরেশনের ট্যাক্স কেন দিই? এই ট্যাক্সের টাকা, সরকারের অনুদান—এসব মিলিয়ে বেশ একটা মোটা অঙ্কের টাকা সিটি করপোরেশনের হাতে থাকে। কিন্তু তার বিনিময়ে আমরা নগরবাসী কী সেবাটা পাই?
কলকারখানা নির্মাণের ক্ষেত্রে বহু ধরনের আইন আছে। কোথাও যদি দাহ্য পদার্থ রাখা হয়, তার সুরক্ষার জন্য নানা ধরনের ব্যবস্থার কথা সেই আইনে উল্লেখ আছে। কিন্তু তা মানা হচ্ছে কি না, তা দেখার জন্য কোনো দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষকে দেখা যায় না। যদি দেখাই যেত তাহলে তাজরীন বা রানা প্লাজায় এত বড় ঘটনা ঘটত না। পুরান ঢাকায় অনেক দালানকোঠা আছে, যেগুলো বহু বছর যাবৎ অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে আছে। কোনো কোনো জায়গায় অগ্নিকাণ্ড হলে বা দালান ভেঙে পড়লে সেখানকার মানুষজনকে বাঁচানোর জন্য ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি বা অ্যাম্বুলেন্স ঢুকতে পারবে না। এসব তদারকির জন্য সিটি করপোরেশনের নির্বাচিত প্রতিনিধি আছেন এবং জনবলও আছে।
গত ৫১ বছরে এবং তার সঙ্গে যদি আরও ২৪ বছর যোগ করি তাহলে ৭৫ বছর সিটি করপোরেশনের কোনো লোক শুধু ট্যাক্স গ্রহণের জন্য বাড়িতে আসা ছাড়া তাঁদের কোনো কাজে দেখি না। কাউন্সিলর নির্বাচনের সময় কখনো কখনো খোদ প্রার্থী নন, তাঁর চ্যালাচামুন্ডার দেখা পাওয়া গেছে। সরকার জনগণের ট্যাক্সের অর্থে পরিচালিত হয়। এই ট্যাক্স বিভিন্নভাবে সরকারের কোষাগারে যায়। ফ্যাক্টরি, ব্যবসা-বাণিজ্য এসব থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ পেয়ে থাকে সরকার। এই অর্থ ব্যয়ের জন্য জনবল নিয়োগ করা আছে। এই জনবলের আবার দেশি-বিদেশি প্রশিক্ষণও আছে। কিন্তু কার্যক্রমে একেবারেই অসাড়। কখনো কখনো সিটি করপোরেশন ও কারখানা সুরক্ষার জন্য নিয়োজিত কোনো ব্যক্তি সত্যিকার অর্থে তাঁর যদি ক্ষমতা বাস্তবায়ন করতে যান, তাহলে তাঁর অসাধু সহকর্মীদের চাপে অসহায় হয়ে পড়েন। রাষ্ট্রের আইনে মানুষের নিরাপত্তা খুব অল্প দামেই বিক্রি হয়ে যায়। কিন্তু তার খেসারত দিতে হয় শত শত, হাজার হাজার নিরীহ আদম সন্তানকে।
রানা প্লাজায় যা দেখেছি, একই দৃশ্যের অবতারণা চট্টগ্রামের কনটেইনার ডিপোতে অগ্নিদুর্ঘটনায় মানুষ তাদের স্বজনদের ছবি নিয়ে খুঁজে বেড়াচ্ছে। আগুনে এমনভাবে চেহারা বিকৃত হয়েছে যে চেনা যাচ্ছে না। কী মর্মান্তিক! লাশগুলো সারিবদ্ধভাবে পড়ে আছে এবং তাদের কোনো পরিচয় পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে ডিএনএ পরীক্ষা করা হচ্ছে। মৃত্যুর চেয়েও তা নিষ্ঠুর। এই সবকিছু এড়ানোর জন্য শুধু আইন মেনে এবং নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করলেই এ রকম হওয়ার কথা নয়।
বাংলাদেশে মানুষের জীবনের মূল্য খুবই কম। প্রতিদিন ব্যবসায়ীদের চক্করে পড়ে যেভাবে পণ্যের দাম বাড়ে, মানুষের জীবনের দাম তেমন বাড়ে না; বরং নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগে, কর্তৃপক্ষের অবহেলা, আইনের শাসনের অনুপস্থিতি—এসব কারণে এমন একটা দিন যায় না, যেখানে আর কিছু না হলেও সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় না। সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু সে তো প্রাকৃতিক কারণে হয় না, একেবারেই মানুষের তৈরি। কতগুলো দায়িত্বহীন মানুষের স্বেচ্ছাচারিতার কারণে আমাদের উন্নয়ন আশীর্বাদের বদলে অভিশাপে পরিণত হয়েছে।
রাষ্ট্র নাগরিকের এবং এই নাগরিক নিজেরা তাঁদের শাসক নির্বাচন করে থাকেন। যাঁরা শাসক হন, তাঁদের কাছে সবচেয়ে বড় দায় হলো—নাগরিক দায়। নাগরিকদের কল্যাণ, তাঁদের জীবনযাপন, শৃঙ্খলা এসবকে দেখভাল করার জন্য নির্বাচিত প্রতিনিধিরা সরকার গঠন করে থাকেন। সরকারের কর্মী বাহিনী রাষ্ট্রের প্রতি অনুগত থেকে তাঁদের দায়িত্ব পালন করেন। এই কর্মী বাহিনী আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় জাতীয় উন্নয়নে, শৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত থাকার কথা। কিন্তু কর্তৃপক্ষের অবহেলায়, দুর্নীতির বেড়াজালে, স্বজনপ্রীতিতে ক্রমেই প্রশাসন নামে যন্ত্রটির অঙ্গপ্রত্যঙ্গ নির্জীব হতে থাকে। নাগরিক সেবার চেয়ে খবরদারি, ক্ষমতার অপব্যবহার—এসবই মুখ্য হয়ে পড়ে। সরকারের যে নাগরিক দায়, বিষয়টা ক্রমাগত আমরা ভুলতে বসেছি। সর্বত্র সেবার বিনিময়ে অর্থ। অর্থ ছাড়া সরকারি অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা দেয়ালের সঙ্গেও কথা বলেন না। দেয়াল এবং ইট-কাঠও নাকি টাকাখেকো।
আমরা বড় বড় দুর্ঘটনার পর প্রত্যাশা করি, এবারে একটা কিছু হবে। কিন্তু দেখা যায় কিছুই হয় না, আইন-আদালতে সেসব পৌঁছায় না। টাকার অভাবনীয় শক্তিতে সব মিটমাট হয়ে যায়। ৩০ বছর ধরে নির্মাণ, উন্নয়ন, অসংখ্য কলকারখানা স্থাপন হচ্ছে। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আধুনিক ব্যবস্থাপনা কত দূর এগিয়েছে, তাতে যথেষ্ট সন্দেহের অবকাশ রয়েছে। রাষ্ট্রের আয় বেড়েছে, কিন্তু নাগরিক নিরাপত্তার বিষয়টি কত দূর এগিয়েছে, তা সব সময়ই প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে আছে।
অনেক স্থানেই, বিশেষ করে কারখানাগুলোতে বলা থাকে ‘নিরাপত্তাই প্রথম’। কিন্তু নিরাপত্তা প্রথম তো নয়ই, শেষও নয়। বিপুল বেকারত্বের দেশে মানুষ খুব সহজেই একটা চাকরিতে রাজি হয়ে যান। লাখ টাকা খরচ করে, ঘরবাড়ি বিক্রি করে একটা ছোট্ট পিয়নের চাকরি নিয়ে থাকেন। এরপর বাড়িঘর বিক্রি করে সর্বস্বান্ত হয়ে মধ্যপ্রাচ্য গিয়ে আশার ছলনে ভুলে আবার দেশে ফিরে আসেন। যেসব শ্রমিক ভয়ংকর আগুনে ভস্মীভূত হলেন, তাঁদের জীবনের মূল্য নির্ধারিত হলো কয়েক লাখ টাকায়। আর আগুন নেভাতে গিয়ে ফায়ার সার্ভিসের যে তরুণেরা শহীদ হলেন, তাঁদের জীবনের মূল্য হয়তো সরকারি আইনেই নির্ধারিত হবে। কিন্তু দেশের কোটি কোটি মানুষের হৃদয়ে যে রক্তক্ষরণ হলো, তার মূল্য কে দেবে?
মামুনুর রশীদ

বাজারে দ্রব্যমূল্যের আগুন জ্বলছে বেশ কিছুদিন ধরে। অকারণে এই আগুন ছড়িয়ে পড়েছে সারা দেশে। মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের নাভিশ্বাস উঠেছে এই দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে। যেকোনো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে গেলেই কয়েক দিন আগের দামের সঙ্গে একেবারেই অন্যায়ভাবে শতকরা ২০ থেকে ৫০ ভাগ দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সরকার নানা কথা বললেও কোনো লাভ হচ্ছে না, দাম বেড়েই চলেছে।
এর মধ্যেই চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে কনটেইনার ডিপোতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে গেল। ইতিমধ্যে ৪৪ জন মানুষ মৃত্যুবরণ করেছে এবং অপেক্ষায় আছে মারাত্মকভাবে দগ্ধ আরও কয়েকজন। আগুন নেভাতে গিয়ে অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করে ফায়ার সার্ভিসের নয়জন কর্মী বীরের মৃত্যু আলিঙ্গন করেছেন। এর আগে তাজরীন গার্মেন্টস, নিমতলী ও চুড়িহাট্টায় অগ্নিকাণ্ডে শত শত প্রাণ হারিয়ে গেছে। আগুনে পুড়ে মৃত্যু সে এক ভয়ংকর যন্ত্রণাদায়ক মৃত্যু। মৃত্যুগুলোর একটিই কারণ—দায়িত্বহীনতা।
আমরা কারখানা গড়ব, মুনাফা নেব আর যাঁদের কারণে কলকারখানার উৎপাদন হয়, তাঁদের প্রতি চরম অবহেলা দেখাব! রাষ্ট্রে আইনের অভাব নেই, অনেক আইন রাষ্ট্রকে করতেও হয় না। ব্রিটিশ আমল থেকে রয়ে গেছে। কিন্তু সেই আইনের প্রয়োগ নেই এবং না মানলেও কিছু যায়-আসে না। যে সংস্থা এই আইনের যথাযোগ্য প্রয়োগ করবে, সে সক্রিয় নয়, কিছু মাসোহারাতেই তারা সন্তুষ্ট। বহুবার নির্মাণ আইনের কথা বলা হয়েছে এবং বাসভবন বা যেকোনো স্থাপনার নিরাপত্তার জন্য আইন আছে। সেসব আইনেরও বাস্তবিক প্রয়োগ নেই। ৩০-৪০ বছর ধরে যেভাবে ঢাকাসহ সারা দেশে অ্যাপার্টমেন্ট নির্মাণের হিড়িক পড়েছে, তাতে যথার্থ অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থা আছে কি না, তা কেউ পরীক্ষা করছে না। আগুন ধরে গেলে ওই ভবনের যাঁরা বাসিন্দা তাঁরা কী করে দ্রুত বের হবেন, তার কোনো ব্যবস্থা নেই।
একাধিক তলাবিশিষ্ট দালানে সাধারণত আমরা পেছনের দিকে একটি লোহার সিঁড়ি দেখতে পাই, ইংরেজিতে যাকে বলে ‘ফায়ার এক্সিট’। আজকাল কোনো ভবনেই এই লোহার সিঁড়িটি দেখা যায় না। তার বদলে নাকি আরও আধুনিক ব্যবস্থা এসেছে। সেই ব্যবস্থাও দৃশ্যমান হয় না। সব জায়গাতেই কর্তৃপক্ষ রয়েছে, ভবনের নকশা অনুমোদনের ক্ষমতাপ্রাপ্ত লোক আছে, সিটি করপোরেশনের হাতে ক্ষমতা আছে। আজ অবধি শুধু ট্যাক্স কালেক্টরকে দেখতে পাই আর রাস্তায় আবর্জনার স্তূপ দেখতে পাই। কিন্তু সিটি করপোরেশনের ভবন তদারককারী কোনো বিল্ডিং ইন্সপেক্টরকে দেখতে পাই না।
উন্নত দেশগুলোতে এবং তৃতীয় বিশ্বের কিছু দেশেও এই বিল্ডিং ইন্সপেক্টরের অস্তিত্ব সব সময় পাওয়া যায়। স্বাধীনতার ৫১ বছর হয়ে গেল, অথচ এই সব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করার জন্য লোকজনের দেখা মেলে না আমাদের দেশে। মাঝে মাঝে মনে হয় আমরা সিটি করপোরেশনের ট্যাক্স কেন দিই? এই ট্যাক্সের টাকা, সরকারের অনুদান—এসব মিলিয়ে বেশ একটা মোটা অঙ্কের টাকা সিটি করপোরেশনের হাতে থাকে। কিন্তু তার বিনিময়ে আমরা নগরবাসী কী সেবাটা পাই?
কলকারখানা নির্মাণের ক্ষেত্রে বহু ধরনের আইন আছে। কোথাও যদি দাহ্য পদার্থ রাখা হয়, তার সুরক্ষার জন্য নানা ধরনের ব্যবস্থার কথা সেই আইনে উল্লেখ আছে। কিন্তু তা মানা হচ্ছে কি না, তা দেখার জন্য কোনো দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষকে দেখা যায় না। যদি দেখাই যেত তাহলে তাজরীন বা রানা প্লাজায় এত বড় ঘটনা ঘটত না। পুরান ঢাকায় অনেক দালানকোঠা আছে, যেগুলো বহু বছর যাবৎ অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে আছে। কোনো কোনো জায়গায় অগ্নিকাণ্ড হলে বা দালান ভেঙে পড়লে সেখানকার মানুষজনকে বাঁচানোর জন্য ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি বা অ্যাম্বুলেন্স ঢুকতে পারবে না। এসব তদারকির জন্য সিটি করপোরেশনের নির্বাচিত প্রতিনিধি আছেন এবং জনবলও আছে।
গত ৫১ বছরে এবং তার সঙ্গে যদি আরও ২৪ বছর যোগ করি তাহলে ৭৫ বছর সিটি করপোরেশনের কোনো লোক শুধু ট্যাক্স গ্রহণের জন্য বাড়িতে আসা ছাড়া তাঁদের কোনো কাজে দেখি না। কাউন্সিলর নির্বাচনের সময় কখনো কখনো খোদ প্রার্থী নন, তাঁর চ্যালাচামুন্ডার দেখা পাওয়া গেছে। সরকার জনগণের ট্যাক্সের অর্থে পরিচালিত হয়। এই ট্যাক্স বিভিন্নভাবে সরকারের কোষাগারে যায়। ফ্যাক্টরি, ব্যবসা-বাণিজ্য এসব থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ পেয়ে থাকে সরকার। এই অর্থ ব্যয়ের জন্য জনবল নিয়োগ করা আছে। এই জনবলের আবার দেশি-বিদেশি প্রশিক্ষণও আছে। কিন্তু কার্যক্রমে একেবারেই অসাড়। কখনো কখনো সিটি করপোরেশন ও কারখানা সুরক্ষার জন্য নিয়োজিত কোনো ব্যক্তি সত্যিকার অর্থে তাঁর যদি ক্ষমতা বাস্তবায়ন করতে যান, তাহলে তাঁর অসাধু সহকর্মীদের চাপে অসহায় হয়ে পড়েন। রাষ্ট্রের আইনে মানুষের নিরাপত্তা খুব অল্প দামেই বিক্রি হয়ে যায়। কিন্তু তার খেসারত দিতে হয় শত শত, হাজার হাজার নিরীহ আদম সন্তানকে।
রানা প্লাজায় যা দেখেছি, একই দৃশ্যের অবতারণা চট্টগ্রামের কনটেইনার ডিপোতে অগ্নিদুর্ঘটনায় মানুষ তাদের স্বজনদের ছবি নিয়ে খুঁজে বেড়াচ্ছে। আগুনে এমনভাবে চেহারা বিকৃত হয়েছে যে চেনা যাচ্ছে না। কী মর্মান্তিক! লাশগুলো সারিবদ্ধভাবে পড়ে আছে এবং তাদের কোনো পরিচয় পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে ডিএনএ পরীক্ষা করা হচ্ছে। মৃত্যুর চেয়েও তা নিষ্ঠুর। এই সবকিছু এড়ানোর জন্য শুধু আইন মেনে এবং নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করলেই এ রকম হওয়ার কথা নয়।
বাংলাদেশে মানুষের জীবনের মূল্য খুবই কম। প্রতিদিন ব্যবসায়ীদের চক্করে পড়ে যেভাবে পণ্যের দাম বাড়ে, মানুষের জীবনের দাম তেমন বাড়ে না; বরং নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগে, কর্তৃপক্ষের অবহেলা, আইনের শাসনের অনুপস্থিতি—এসব কারণে এমন একটা দিন যায় না, যেখানে আর কিছু না হলেও সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় না। সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু সে তো প্রাকৃতিক কারণে হয় না, একেবারেই মানুষের তৈরি। কতগুলো দায়িত্বহীন মানুষের স্বেচ্ছাচারিতার কারণে আমাদের উন্নয়ন আশীর্বাদের বদলে অভিশাপে পরিণত হয়েছে।
রাষ্ট্র নাগরিকের এবং এই নাগরিক নিজেরা তাঁদের শাসক নির্বাচন করে থাকেন। যাঁরা শাসক হন, তাঁদের কাছে সবচেয়ে বড় দায় হলো—নাগরিক দায়। নাগরিকদের কল্যাণ, তাঁদের জীবনযাপন, শৃঙ্খলা এসবকে দেখভাল করার জন্য নির্বাচিত প্রতিনিধিরা সরকার গঠন করে থাকেন। সরকারের কর্মী বাহিনী রাষ্ট্রের প্রতি অনুগত থেকে তাঁদের দায়িত্ব পালন করেন। এই কর্মী বাহিনী আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় জাতীয় উন্নয়নে, শৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত থাকার কথা। কিন্তু কর্তৃপক্ষের অবহেলায়, দুর্নীতির বেড়াজালে, স্বজনপ্রীতিতে ক্রমেই প্রশাসন নামে যন্ত্রটির অঙ্গপ্রত্যঙ্গ নির্জীব হতে থাকে। নাগরিক সেবার চেয়ে খবরদারি, ক্ষমতার অপব্যবহার—এসবই মুখ্য হয়ে পড়ে। সরকারের যে নাগরিক দায়, বিষয়টা ক্রমাগত আমরা ভুলতে বসেছি। সর্বত্র সেবার বিনিময়ে অর্থ। অর্থ ছাড়া সরকারি অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা দেয়ালের সঙ্গেও কথা বলেন না। দেয়াল এবং ইট-কাঠও নাকি টাকাখেকো।
আমরা বড় বড় দুর্ঘটনার পর প্রত্যাশা করি, এবারে একটা কিছু হবে। কিন্তু দেখা যায় কিছুই হয় না, আইন-আদালতে সেসব পৌঁছায় না। টাকার অভাবনীয় শক্তিতে সব মিটমাট হয়ে যায়। ৩০ বছর ধরে নির্মাণ, উন্নয়ন, অসংখ্য কলকারখানা স্থাপন হচ্ছে। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আধুনিক ব্যবস্থাপনা কত দূর এগিয়েছে, তাতে যথেষ্ট সন্দেহের অবকাশ রয়েছে। রাষ্ট্রের আয় বেড়েছে, কিন্তু নাগরিক নিরাপত্তার বিষয়টি কত দূর এগিয়েছে, তা সব সময়ই প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে আছে।
অনেক স্থানেই, বিশেষ করে কারখানাগুলোতে বলা থাকে ‘নিরাপত্তাই প্রথম’। কিন্তু নিরাপত্তা প্রথম তো নয়ই, শেষও নয়। বিপুল বেকারত্বের দেশে মানুষ খুব সহজেই একটা চাকরিতে রাজি হয়ে যান। লাখ টাকা খরচ করে, ঘরবাড়ি বিক্রি করে একটা ছোট্ট পিয়নের চাকরি নিয়ে থাকেন। এরপর বাড়িঘর বিক্রি করে সর্বস্বান্ত হয়ে মধ্যপ্রাচ্য গিয়ে আশার ছলনে ভুলে আবার দেশে ফিরে আসেন। যেসব শ্রমিক ভয়ংকর আগুনে ভস্মীভূত হলেন, তাঁদের জীবনের মূল্য নির্ধারিত হলো কয়েক লাখ টাকায়। আর আগুন নেভাতে গিয়ে ফায়ার সার্ভিসের যে তরুণেরা শহীদ হলেন, তাঁদের জীবনের মূল্য হয়তো সরকারি আইনেই নির্ধারিত হবে। কিন্তু দেশের কোটি কোটি মানুষের হৃদয়ে যে রক্তক্ষরণ হলো, তার মূল্য কে দেবে?

বাজারে দ্রব্যমূল্যের আগুন জ্বলছে বেশ কিছুদিন ধরে। অকারণে এই আগুন ছড়িয়ে পড়েছে সারা দেশে। মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের নাভিশ্বাস উঠেছে এই দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে। যেকোনো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে গেলেই কয়েক দিন আগের দামের সঙ্গে একেবারেই অন্যায়ভাবে শতকরা ২০ থেকে ৫০ ভাগ দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সরকার নানা কথা বললেও কোনো লাভ হচ্ছে না, দাম বেড়েই চলেছে।
এর মধ্যেই চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে কনটেইনার ডিপোতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে গেল। ইতিমধ্যে ৪৪ জন মানুষ মৃত্যুবরণ করেছে এবং অপেক্ষায় আছে মারাত্মকভাবে দগ্ধ আরও কয়েকজন। আগুন নেভাতে গিয়ে অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করে ফায়ার সার্ভিসের নয়জন কর্মী বীরের মৃত্যু আলিঙ্গন করেছেন। এর আগে তাজরীন গার্মেন্টস, নিমতলী ও চুড়িহাট্টায় অগ্নিকাণ্ডে শত শত প্রাণ হারিয়ে গেছে। আগুনে পুড়ে মৃত্যু সে এক ভয়ংকর যন্ত্রণাদায়ক মৃত্যু। মৃত্যুগুলোর একটিই কারণ—দায়িত্বহীনতা।
আমরা কারখানা গড়ব, মুনাফা নেব আর যাঁদের কারণে কলকারখানার উৎপাদন হয়, তাঁদের প্রতি চরম অবহেলা দেখাব! রাষ্ট্রে আইনের অভাব নেই, অনেক আইন রাষ্ট্রকে করতেও হয় না। ব্রিটিশ আমল থেকে রয়ে গেছে। কিন্তু সেই আইনের প্রয়োগ নেই এবং না মানলেও কিছু যায়-আসে না। যে সংস্থা এই আইনের যথাযোগ্য প্রয়োগ করবে, সে সক্রিয় নয়, কিছু মাসোহারাতেই তারা সন্তুষ্ট। বহুবার নির্মাণ আইনের কথা বলা হয়েছে এবং বাসভবন বা যেকোনো স্থাপনার নিরাপত্তার জন্য আইন আছে। সেসব আইনেরও বাস্তবিক প্রয়োগ নেই। ৩০-৪০ বছর ধরে যেভাবে ঢাকাসহ সারা দেশে অ্যাপার্টমেন্ট নির্মাণের হিড়িক পড়েছে, তাতে যথার্থ অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থা আছে কি না, তা কেউ পরীক্ষা করছে না। আগুন ধরে গেলে ওই ভবনের যাঁরা বাসিন্দা তাঁরা কী করে দ্রুত বের হবেন, তার কোনো ব্যবস্থা নেই।
একাধিক তলাবিশিষ্ট দালানে সাধারণত আমরা পেছনের দিকে একটি লোহার সিঁড়ি দেখতে পাই, ইংরেজিতে যাকে বলে ‘ফায়ার এক্সিট’। আজকাল কোনো ভবনেই এই লোহার সিঁড়িটি দেখা যায় না। তার বদলে নাকি আরও আধুনিক ব্যবস্থা এসেছে। সেই ব্যবস্থাও দৃশ্যমান হয় না। সব জায়গাতেই কর্তৃপক্ষ রয়েছে, ভবনের নকশা অনুমোদনের ক্ষমতাপ্রাপ্ত লোক আছে, সিটি করপোরেশনের হাতে ক্ষমতা আছে। আজ অবধি শুধু ট্যাক্স কালেক্টরকে দেখতে পাই আর রাস্তায় আবর্জনার স্তূপ দেখতে পাই। কিন্তু সিটি করপোরেশনের ভবন তদারককারী কোনো বিল্ডিং ইন্সপেক্টরকে দেখতে পাই না।
উন্নত দেশগুলোতে এবং তৃতীয় বিশ্বের কিছু দেশেও এই বিল্ডিং ইন্সপেক্টরের অস্তিত্ব সব সময় পাওয়া যায়। স্বাধীনতার ৫১ বছর হয়ে গেল, অথচ এই সব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করার জন্য লোকজনের দেখা মেলে না আমাদের দেশে। মাঝে মাঝে মনে হয় আমরা সিটি করপোরেশনের ট্যাক্স কেন দিই? এই ট্যাক্সের টাকা, সরকারের অনুদান—এসব মিলিয়ে বেশ একটা মোটা অঙ্কের টাকা সিটি করপোরেশনের হাতে থাকে। কিন্তু তার বিনিময়ে আমরা নগরবাসী কী সেবাটা পাই?
কলকারখানা নির্মাণের ক্ষেত্রে বহু ধরনের আইন আছে। কোথাও যদি দাহ্য পদার্থ রাখা হয়, তার সুরক্ষার জন্য নানা ধরনের ব্যবস্থার কথা সেই আইনে উল্লেখ আছে। কিন্তু তা মানা হচ্ছে কি না, তা দেখার জন্য কোনো দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষকে দেখা যায় না। যদি দেখাই যেত তাহলে তাজরীন বা রানা প্লাজায় এত বড় ঘটনা ঘটত না। পুরান ঢাকায় অনেক দালানকোঠা আছে, যেগুলো বহু বছর যাবৎ অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে আছে। কোনো কোনো জায়গায় অগ্নিকাণ্ড হলে বা দালান ভেঙে পড়লে সেখানকার মানুষজনকে বাঁচানোর জন্য ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি বা অ্যাম্বুলেন্স ঢুকতে পারবে না। এসব তদারকির জন্য সিটি করপোরেশনের নির্বাচিত প্রতিনিধি আছেন এবং জনবলও আছে।
গত ৫১ বছরে এবং তার সঙ্গে যদি আরও ২৪ বছর যোগ করি তাহলে ৭৫ বছর সিটি করপোরেশনের কোনো লোক শুধু ট্যাক্স গ্রহণের জন্য বাড়িতে আসা ছাড়া তাঁদের কোনো কাজে দেখি না। কাউন্সিলর নির্বাচনের সময় কখনো কখনো খোদ প্রার্থী নন, তাঁর চ্যালাচামুন্ডার দেখা পাওয়া গেছে। সরকার জনগণের ট্যাক্সের অর্থে পরিচালিত হয়। এই ট্যাক্স বিভিন্নভাবে সরকারের কোষাগারে যায়। ফ্যাক্টরি, ব্যবসা-বাণিজ্য এসব থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ পেয়ে থাকে সরকার। এই অর্থ ব্যয়ের জন্য জনবল নিয়োগ করা আছে। এই জনবলের আবার দেশি-বিদেশি প্রশিক্ষণও আছে। কিন্তু কার্যক্রমে একেবারেই অসাড়। কখনো কখনো সিটি করপোরেশন ও কারখানা সুরক্ষার জন্য নিয়োজিত কোনো ব্যক্তি সত্যিকার অর্থে তাঁর যদি ক্ষমতা বাস্তবায়ন করতে যান, তাহলে তাঁর অসাধু সহকর্মীদের চাপে অসহায় হয়ে পড়েন। রাষ্ট্রের আইনে মানুষের নিরাপত্তা খুব অল্প দামেই বিক্রি হয়ে যায়। কিন্তু তার খেসারত দিতে হয় শত শত, হাজার হাজার নিরীহ আদম সন্তানকে।
রানা প্লাজায় যা দেখেছি, একই দৃশ্যের অবতারণা চট্টগ্রামের কনটেইনার ডিপোতে অগ্নিদুর্ঘটনায় মানুষ তাদের স্বজনদের ছবি নিয়ে খুঁজে বেড়াচ্ছে। আগুনে এমনভাবে চেহারা বিকৃত হয়েছে যে চেনা যাচ্ছে না। কী মর্মান্তিক! লাশগুলো সারিবদ্ধভাবে পড়ে আছে এবং তাদের কোনো পরিচয় পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে ডিএনএ পরীক্ষা করা হচ্ছে। মৃত্যুর চেয়েও তা নিষ্ঠুর। এই সবকিছু এড়ানোর জন্য শুধু আইন মেনে এবং নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করলেই এ রকম হওয়ার কথা নয়।
বাংলাদেশে মানুষের জীবনের মূল্য খুবই কম। প্রতিদিন ব্যবসায়ীদের চক্করে পড়ে যেভাবে পণ্যের দাম বাড়ে, মানুষের জীবনের দাম তেমন বাড়ে না; বরং নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগে, কর্তৃপক্ষের অবহেলা, আইনের শাসনের অনুপস্থিতি—এসব কারণে এমন একটা দিন যায় না, যেখানে আর কিছু না হলেও সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় না। সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু সে তো প্রাকৃতিক কারণে হয় না, একেবারেই মানুষের তৈরি। কতগুলো দায়িত্বহীন মানুষের স্বেচ্ছাচারিতার কারণে আমাদের উন্নয়ন আশীর্বাদের বদলে অভিশাপে পরিণত হয়েছে।
রাষ্ট্র নাগরিকের এবং এই নাগরিক নিজেরা তাঁদের শাসক নির্বাচন করে থাকেন। যাঁরা শাসক হন, তাঁদের কাছে সবচেয়ে বড় দায় হলো—নাগরিক দায়। নাগরিকদের কল্যাণ, তাঁদের জীবনযাপন, শৃঙ্খলা এসবকে দেখভাল করার জন্য নির্বাচিত প্রতিনিধিরা সরকার গঠন করে থাকেন। সরকারের কর্মী বাহিনী রাষ্ট্রের প্রতি অনুগত থেকে তাঁদের দায়িত্ব পালন করেন। এই কর্মী বাহিনী আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় জাতীয় উন্নয়নে, শৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত থাকার কথা। কিন্তু কর্তৃপক্ষের অবহেলায়, দুর্নীতির বেড়াজালে, স্বজনপ্রীতিতে ক্রমেই প্রশাসন নামে যন্ত্রটির অঙ্গপ্রত্যঙ্গ নির্জীব হতে থাকে। নাগরিক সেবার চেয়ে খবরদারি, ক্ষমতার অপব্যবহার—এসবই মুখ্য হয়ে পড়ে। সরকারের যে নাগরিক দায়, বিষয়টা ক্রমাগত আমরা ভুলতে বসেছি। সর্বত্র সেবার বিনিময়ে অর্থ। অর্থ ছাড়া সরকারি অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা দেয়ালের সঙ্গেও কথা বলেন না। দেয়াল এবং ইট-কাঠও নাকি টাকাখেকো।
আমরা বড় বড় দুর্ঘটনার পর প্রত্যাশা করি, এবারে একটা কিছু হবে। কিন্তু দেখা যায় কিছুই হয় না, আইন-আদালতে সেসব পৌঁছায় না। টাকার অভাবনীয় শক্তিতে সব মিটমাট হয়ে যায়। ৩০ বছর ধরে নির্মাণ, উন্নয়ন, অসংখ্য কলকারখানা স্থাপন হচ্ছে। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আধুনিক ব্যবস্থাপনা কত দূর এগিয়েছে, তাতে যথেষ্ট সন্দেহের অবকাশ রয়েছে। রাষ্ট্রের আয় বেড়েছে, কিন্তু নাগরিক নিরাপত্তার বিষয়টি কত দূর এগিয়েছে, তা সব সময়ই প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে আছে।
অনেক স্থানেই, বিশেষ করে কারখানাগুলোতে বলা থাকে ‘নিরাপত্তাই প্রথম’। কিন্তু নিরাপত্তা প্রথম তো নয়ই, শেষও নয়। বিপুল বেকারত্বের দেশে মানুষ খুব সহজেই একটা চাকরিতে রাজি হয়ে যান। লাখ টাকা খরচ করে, ঘরবাড়ি বিক্রি করে একটা ছোট্ট পিয়নের চাকরি নিয়ে থাকেন। এরপর বাড়িঘর বিক্রি করে সর্বস্বান্ত হয়ে মধ্যপ্রাচ্য গিয়ে আশার ছলনে ভুলে আবার দেশে ফিরে আসেন। যেসব শ্রমিক ভয়ংকর আগুনে ভস্মীভূত হলেন, তাঁদের জীবনের মূল্য নির্ধারিত হলো কয়েক লাখ টাকায়। আর আগুন নেভাতে গিয়ে ফায়ার সার্ভিসের যে তরুণেরা শহীদ হলেন, তাঁদের জীবনের মূল্য হয়তো সরকারি আইনেই নির্ধারিত হবে। কিন্তু দেশের কোটি কোটি মানুষের হৃদয়ে যে রক্তক্ষরণ হলো, তার মূল্য কে দেবে?

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

বাজারে দ্রব্যমূল্যের আগুন জ্বলছে বেশ কিছুদিন ধরে। অকারণে এই আগুন ছড়িয়ে পড়েছে সারা দেশে। মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের নাভিশ্বাস উঠেছে এই দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে। যেকোনো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে গেলেই কয়েক দিন আগের দামের সঙ্গে একেবারেই অন্যায়ভাবে...
০৯ জুন ২০২২
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

বাজারে দ্রব্যমূল্যের আগুন জ্বলছে বেশ কিছুদিন ধরে। অকারণে এই আগুন ছড়িয়ে পড়েছে সারা দেশে। মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের নাভিশ্বাস উঠেছে এই দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে। যেকোনো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে গেলেই কয়েক দিন আগের দামের সঙ্গে একেবারেই অন্যায়ভাবে...
০৯ জুন ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

বাজারে দ্রব্যমূল্যের আগুন জ্বলছে বেশ কিছুদিন ধরে। অকারণে এই আগুন ছড়িয়ে পড়েছে সারা দেশে। মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের নাভিশ্বাস উঠেছে এই দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে। যেকোনো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে গেলেই কয়েক দিন আগের দামের সঙ্গে একেবারেই অন্যায়ভাবে...
০৯ জুন ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

বাজারে দ্রব্যমূল্যের আগুন জ্বলছে বেশ কিছুদিন ধরে। অকারণে এই আগুন ছড়িয়ে পড়েছে সারা দেশে। মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের নাভিশ্বাস উঠেছে এই দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে। যেকোনো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে গেলেই কয়েক দিন আগের দামের সঙ্গে একেবারেই অন্যায়ভাবে...
০৯ জুন ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫