Ajker Patrika

চার গুণ দামে এলএনজি কিনে ধুঁকছে পেট্রোবাংলা

মুহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ঢাকা
চার গুণ দামে এলএনজি কিনে ধুঁকছে পেট্রোবাংলা

তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির ক্ষেত্রে ‘দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি’ বা লং-টার্ম কন্ট্রাক্ট আন্তর্জাতিক বাজারে একটি অতি পরিচিত পদ্ধতি। এই পদ্ধতির বড় সুবিধা হলো, বাজারে স্বল্প মেয়াদে দাম ওঠানামা করলেও চুক্তিতে নির্ধারিত দামেই গ্যাস পাবে ক্রেতা। কিন্তু এই সুযোগ হেলায় ফেলে স্পট মার্কেট থেকে চার গুণ বেশি দামে এলএনজি আমদানি করছে পেট্রোবাংলা। বেশি দামে এলএনজি কেনার প্রভাব এরই মধ্যে পড়তে শুরু করেছে দেশের গ্যাস ও বিদ্যুৎ খাতে। ভর্তুকির চাপ কমাতে সরকার গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে, যার কারণে ফিরে আসছে লোডশেডিংয়ের যন্ত্রণা। শুধু তা-ই নয়, এলএনজির পেছনে ব্যয় হওয়া অতিরিক্ত খরচ পুষিয়ে নিতে গ্যাসের দামও বাড়াতে চায় সরকার।

পেট্রোবাংলার তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০২১ সালের জুলাই মাসে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায় প্রতি মিলিয়ন ব্রিটিশ থারমাল ইউনিট (এমএমবিটিইউ) এলএনজি ৯ দশমিক ২০ মার্কিন ডলারে কিনেছিল পেট্রোবাংলা। তবে চলতি বছরের এপ্রিল মাসে তা কিনতে হয়েছে ১৩ দশমিক ৩২ ডলারে। ইউনিটপ্রতি দাম বেড়েছে ৪ দশমিক ১২ ডলার। 
অন্যদিকে একই সময়ে এশিয়ার স্পট মার্কেটে এলএনজির দাম বেড়েছে প্রায় চার গুণ। স্পট মার্কেটে গত বছরের জুলাই মাসে প্রতি এমএমবিটিইউ গ্যাসের দাম ছিল ১০ দশমিক ৯৯ মার্কিন ডলার। অথচ চলতি বছরের এপ্রিল মাসে সেই দাম বেড়ে হয়েছে প্রতি ইউনিট ৩৮ দশমিক ৯৩ মার্কিন ডলার। আমদানি-নির্ভরতার কারণে এই দামেই এলএনজি কিনতে হয়েছে পেট্রোবাংলাকেও।

গ্যাসের সমস্যা সমাধানে এলএনজির ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীলতার জন্য নীতিনির্ধারকদের অদূরদর্শিতা ও পরিকল্পনার অভাবকেই দায়ী করেছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ইজাজ হোসেন। আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, ‘স্পট মার্কেটে এলএনজির দাম একসময় কম থাকায় নীতিনির্ধারকেরা দীর্ঘমেয়াদি সরবরাহ চুক্তিতে অবহেলা করেছিলেন। স্পট মার্কেটে কম দামে পেলে কেন আমরা বেশি দামে দীর্ঘমেয়াদি টার্মে এলএনজি কিনতে যাব—এমনই ছিল তাঁদের মনোভাব। তাঁরা তখন বুঝতেই পারেননি যে স্পট মার্কেটের কম দাম ক্ষণস্থায়ী। স্পট মার্কেটের দামের ওপর নির্ভর না করতে আমরা বারবার বললেও পেট্রোবাংলা আমাদের কথায় কর্ণপাত করেনি। এখন তাঁরা এলএনজি আমদানিতে ব্যয় হওয়া অতিরিক্ত খরচ ওঠাতে গ্যাসের দাম বাড়াতে চায়। কিছু কিছু বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহও বন্ধ করে দিয়েছে।’

সুযোগ থাকা সত্ত্বেও কেন দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি না করে স্পট মার্কেট থেকে বেশি দামে এলএনজি ক্রয় করছেন? এই প্রশ্নের জবাবে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা যখন এলএনজি সরবরাহের জন্য দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি করি, তখন স্পট মার্কেটের দাম দীর্ঘমেয়াদি সরবরাহের চেয়ে অনেক কম ছিল। আমাদের অভিজ্ঞতার ঘাটতি বলেন বা যা-ই বলেন স্পট মার্কেটের দাম বেড়ে আকাশে উঠবে –এটা আমাদের ধারণার বাইরে ছিল।’

স্থানীয় উৎস থেকে গ্যাস অনুসন্ধানের ব্যাপারে জানতে চাইলে নাজমুল আহসান বলেন, ‘অতীতে অফশোর ও অনশোরে গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য আমরা বিভিন্ন সময় টেন্ডার আহ্বান করলেও প্রত্যাশিত সাড়া পাইনি। অনশোরে গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য আমরা কিছু পদক্ষেপ নিয়েছি, যা শিগগিরই দৃশ্যমান হবে।’

দেশের অর্থনীতির আকার বড় হওয়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে গ্যাসের চাহিদা। গ্যাসের জোগানদাতা প্রতিষ্ঠান পেট্রোবাংলা ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণে অভ্যন্তরীণ উৎস খোঁজার পরিবর্তে ঝুঁকছে আমদানিনির্ভর এলএনজির দিকে। এই আমদানিনির্ভরতা দেশের সার্বিক অর্থনীতির ওপর ভালো ফল বয়ে আনবে না–এমন সতর্কবার্তা শুরু থেকেই দিয়ে এসেছেন বিশ্লেষকেরা। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে প্রকাশিত ইনস্টিটিউট ফর এনার্জি ইকোনমিকস অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল অ্যানালাইসিসের এক গবেষণা প্রতিবেদনে বিশ্ববাজারে এলএনজির দাম বাড়ার কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়। 

 ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘এলএনজির দাম বাড়ার কারণে গ্যাসের ওপর নির্ভরশীল দেশীয় রপ্তানিমুখী খাতগুলো আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতার সক্ষমতা হারাবে এবং সর্বোপরি জ্বালানি সরবরাহে অনিশ্চয়তা দেখা দেবে।’

বাংলাদেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়বে। বেশি দামে গ্যাস ক্রয় করতে গিয়ে একদিকে সরকারের ওপর ভর্তুকির চাপ বাড়বে, অন্যদিকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে টান পড়বে—এমন সতর্কবার্তাও দেওয়া হয়েছিল ওই প্রতিবেদনে।

বর্তমান পরিস্থিতি তাদের সতর্কবার্তারই প্রতিফলন বলা যায়। বিশ্ববাজারে এলএনজির দাম বাড়ার কারণে পেট্রোবাংলার অবস্থা এখন চিড়েচেপ্টা। সংস্থাটি একদিকে সরকারের দিক থেকে ভর্তুকির কমানোর চাপে আছে। অন্যদিকে বেশি দামে এলএনজি ক্রয় করতে হচ্ছে তাদের। ২০২১-২২ অর্থবছরে এলএনজি আমদানির জন্য পেট্রোবাংলাকে দেওয়া সরকারের ভর্তুকির পরিমাণ ছিল ৪ হাজার কোটি টাকা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে পেট্রোবাংলার এক কর্মকর্তা আজকের পত্রিকাকে বলেন, সামনের অর্থবছরে ভর্তুকির পরিমাণ আরও বাড়বে। 
স্পট মার্কেটে এলএনজির দাম বাড়ার মধ্যেই মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে এসেছে কাতারের রাসগ্যাস এবং ওমানের ওমান ট্রেডিং ইন্টারন্যাশনাল এলএনজি কর্তৃক কার্গো সরবরাহ কমানোর আভাস। মধ্যপ্রাচ্যের এই দুই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ১৫ বছর মেয়াদি এলএনজি সরবরাহ চুক্তি করেছিল পেট্রোবাংলা।

চুক্তির আওতায় প্রতিষ্ঠান দুটি পেট্রোবাংলাকে বছরে ৩২ লাখ এমএমবিটিইউ ধারণক্ষমতাসম্পন্ন ৬৪ কার্গো এলএনজি সরবরাহ করার কথা। চলতি বছরের এপ্রিল মাস পর্যন্ত সরবরাহ করেছে ৫৩ কার্গো। এর আগে এলএনজির বাজার স্থিতিশীল থাকায় ২০২০-২১ অর্থবছরে ৬৮ কার্গো এলএনজি সরবরাহ করেছিল তারা।

পেট্রোবাংলা গ্যাসের বড় অংশই সরবরাহ করে বিদ্যুৎ খাতে। বিদ্যুৎ বিভাগ জানিয়েছে, মোট উৎপাদিত বিদ্যুতের ৪২ শতাংশ আসে গ্যাসচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে। গ্যাসের ওপর চাপ কমাতে সরকার গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে। এ কারণে দেশের বিভিন্ন জায়গায় লোডশেডিং করতে হচ্ছে।

পেট্রোবাংলা এলএনজি গ্যাস আমদানি শুরু করে ২০১৮ সালের ৯ সেপ্টেম্বরে। বিশ্ববাজারে এলএনজির দাম বাড়তে শুরু করে ২০২১ সাল থেকে। গত বছরের শেষের দিকে করোনা মহামারির অভিঘাত কাটিয়ে ওঠার চেষ্টায় বিশ্ব অর্থনীতির চাকা আবারও ঘুরতে শুরু করলে এলএনজির দাম চড়তে শুরু করে।

জ্বালানি তেল ও গ্যাসের তথ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল কমোডটি ইনসাইটসের মতে, ২০২০ সালের অক্টোবরে এশিয়ার বাজারে স্পট মার্কেটে প্রতি এমএমবিটিইউ এলএনজির দাম ছিল মাত্র ৬ মার্কিন ডলার। পরবর্তী সময়ে দাম বাড়তে বাড়তে ২০২১ সালের অক্টোবরে প্রতি এমএমবিটিইউ ৫৬ দশমিক ৩২৬ মার্কিন ডলারে ঠেকে। আর ২০২২ সালের এপ্রিলে দাম বেড়ে দাঁড়ায় প্রতি এমএমবিটিইউ ৫৯ ডলার। স্পট মার্কেট থেকে গ্যাস কেনার কারণে দাম বাড়ার ঘা সইতে হচ্ছে পেট্রোবাংলাকেও।

দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতে এলএনজি ক্রয় 
পেট্রোবাংলা ২০২১ সালের জুলাই থেকে ২০২২ সালের এপ্রিল পর্যন্ত ১০ মাসে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায় কাতার রাসগ্যাস এবং ওমান ট্রেডিং ইন্টারন্যাশনাল থেকে ৫৩টি কার্গোতে করে ১৬ কোটি ৮৭ লাখ ৩৩ হাজার ৪৫৮ এমএমবিটিইউ এলএনজি আমদানি করে। এতে খরচ পড়ে ১৭৭ কোটি ৪৮ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার। এর মধ্যে কাতারের রাসগ্যাস থেকে ৩৭টি কার্গোতে করে ১১ কোটি ৭৭ লাখ ৮৫ হাজার ৯৫৪ এমএমবিটিইউ এলএনজি কেনা হয়। এতে খরচ পড়ে ১২৮ কোটি ৭৭ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার। অন্যদিকে ওমানের ওমান ট্রেডিং ইন্টারন্যাশনাল থেকে ১৬টি কার্গোতে করে ৫ কোটি ৯ লাখ ৪৭ হাজার ৫০৪ এমএমবিটিইউ গ্যাস আমদানি করা হয়। এ জন্য পেট্রোবাংলাকে গুনতে হয় ৪৮ কোটি ৭১ লাখ মার্কিন ডলার।

স্পট মার্কেট থেকে ক্রয় 
স্পট মার্কেটে ২০২১ সালের জুলাই মাসে প্রতি এমএমবিটিইউ এলএনজির মূল্য ছিল ১০ দশমিক ৯৯ মার্কিন ডলার। কিন্তু ৯ মাসের ব্যবধানে চলতি বছরের এপ্রিলে এসে প্রতি ইউনিট এলএনজির দাম বেড়ে দাঁড়ায় ৩৮ দশমিক ৯৩ মার্কিন ডলার।

 স্পট মার্কেটে পেট্রোবাংলাকে এলএনজি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে ভিটল এশিয়া, এক্সিলারেট এনার্জি এলপি, এওটি ট্রেডিং এজি এবং টোটাল এনার্জিস গ্যাস অ্যান্ড পাওয়ার। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে ৪ কোটি ২৩ লাখ ৪৮ হাজার ৩০৩ এমএমবিটিইউ এলএনজি আমদানি করেছে পেট্রোবাংলা। ১৩টি কার্গোতে করে এসব গ্যাস আসে। এতে আমদানি খরচ পড়ে ১৪৩ কোটি ৩৫ লাখ ৩০ হাজার ডলার। আরও চারটি এলএনজি কার্গো স্পট মার্কেট থেকে ক্রয় করার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করে ফেলেছে পেট্রোবাংলা। সংস্থাটি জানিয়েছে, জুন ও জুলাই মাসে এই চার কার্গো পৌঁছানোর কথা রয়েছে।

হুমকির মুখে পড়বে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি 
স্পট মার্কেট থেকে বেশি দামে এলএনজি ক্রয়ের কারণে বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হুমকির মুখে পড়তে পারে—এমন আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে ইনডিপেনডেন্ট কমোডটি ইন্টেলিজেন্স সার্ভিসেসের আইসিআইএস এলএনজি গ্লোবাল সাপ্লাই অ্যান্ড ডিমান্ড আউটলুক-২০২২ প্রতিবেদনে।

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ‘২০২২ সালে এই তিন দেশে স্পট মার্কেট থেকে এলএনজির চাহিদা ৪ দশমিক ৩ শতাংশ বেড়ে ৩৯ দশমিক ৪ মিলিয়ন টন হবে। কাতারের রাসগ্যাস ও ওমান ট্রেডিং ইন্টারন্যাশনাল চুক্তি অনুযায়ী এলএনজি সরবরাহ করতে না চাওয়ায় বাংলাদেশে গ্যাস-সংকট দেখা দেবে।’

চলতি বছরের ২৮ জানুয়ারি প্রকাশিত শুক্রবার ইন্টেলিজেন্স প্রকাশিত ‘২০২২ আউটলুক: গ্লোবাল লিকুইফাইড ন্যাচারাল গ্যাস’ রিপোর্টে বলা হয় বাংলাদেশে দিন দিন গ্যাসের মজুত কমে যাওয়ায় ও বিদ্যুৎ উৎপাদনে তেল ও কয়লার ওপর নির্ভরশীলতা কমানোর ফলে আমদানি করা গ্যাসের দাম বাড়বে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সেরা ফিল্ড ফোর্সদের বিশেষ সম্মাননা দিল নগদ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
সেরা ফিল্ড ফোর্সদের বিশেষ সম্মাননা দিয়েছে নগদ। ছবি: বিজ্ঞপ্তি
সেরা ফিল্ড ফোর্সদের বিশেষ সম্মাননা দিয়েছে নগদ। ছবি: বিজ্ঞপ্তি

সারা দেশের সাত হাজার ডিস্ট্রিবিউটর ফিল্ড ফোর্সের মধ্য থেকে সেরা পারফরম্যান্সের জন্য ৭০ জনকে বিশেষ সম্মাননা দিয়েছে ডাক বিভাগের ডিজিটাল আর্থিক লেনদেন সেবা নগদ।

রাজধানীর একটি হোটেলে গতকাল বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) ‘নগদ ফিল্ড চ্যাম্পিয়ন ২০২৫’ নামের এই সম্মাননা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

অনুষ্ঠান চলাকালে ডিস্ট্রিবিউটর ফিল্ড ফোর্সদের পারফরম্যান্সের জন্য বিশেষ বোনাসের ঘোষণা দেন বাংলাদেশ ব্যাংকনিযুক্ত নগদের প্রশাসক মো. মোতাছিম বিল্লাহ। ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে ৭০ জনের নগদ অ্যাকাউন্টে চলে যায় এই অর্থ।

দেশের প্রত্যন্ত এলাকা থেকে ঢাকায় আসা-যাওয়া, খাওয়া, হোটেলে অবস্থানসহ অন্য সব খরচ নগদের পক্ষ থেকে বহন করা হয়।

সেরা পারফর্মারদের অভিনন্দন জানিয়ে নগদের প্রশাসক মো. মোতাছিম বিল্লাহ বলেন, অনেক চ্যালেঞ্জের মাঝেও বাজারে নগদ একটা ভালো প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলেছে। বাংলাদেশে ক্যাশলেস লেনদেনের আরও প্রসার ঘটাতে নগদ ভূমিকা রাখবে বলে সরকারের নীতিনির্ধারকদের প্রত্যাশা রয়েছে। সুতরাং, যত অপপ্রচারই নগদকে নিয়ে হোক না কেন, সেসবে কান না দিয়ে নগদের সাফল্যের জন্য সবাইকে কাজ করতে হবে।

নগদের সেবার প্রসার ঘটাতে এ সময় মোতাছিম বিল্লাহ ডিস্ট্রিবিউটর ফিল্ড ফোর্সদের কাছ থেকে নগদ বিষয়ে পরামর্শ ও সুপারিশ জানতে চান। তাঁদের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে নগদ প্রশাসক বলেন, অল্প সময়ের ভেতরই সেবার কলেবর আরও বাড়বে নগদে। ফলে লেনদেনের অঙ্ক যেমন অনেক গুণ বাড়বে, একই সঙ্গে গ্রাহকেরাও অনেক বেশি উপকৃত হবেন।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকনিযুক্ত নগদের জ্যেষ্ঠ সহযোগী প্রশাসক মো. হাবিবুর রহমান, ডাক বিভাগনিযুক্ত নগদের জ্যেষ্ঠ সহযোগী প্রশাসক মো. আবু তালেব, নগদের চিফ কমার্শিয়াল অফিসার মোহাম্মদ শাহীন সারওয়ার ভূঁইয়া বক্তব্য দেন।

বক্তারা বলেন, আগামী বছরে বিদেশ থেকে আসা রেমিট্যান্স, বাংলা কিউআর, সব আর্থিক প্রতিষ্ঠানের লেনদেনের জন্য আন্তসংযোগ গেম চেঞ্জারের ভূমিকা পালন করবে নগদ। ফলে ২০২৬ সাল নগদের সেরা সাফল্যের বছর হবে বলেও মনে করেন তাঁরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইনফরমেশন হেল্প ডেস্ক চালু করল ডিএসই

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ইনফরমেশন হেল্প ডেস্ক চালু করেছে ডিএসই। ছবি: সংগৃহীত
ইনফরমেশন হেল্প ডেস্ক চালু করেছে ডিএসই। ছবি: সংগৃহীত

তথ্যসেবা আরও সহজ ও কার্যকর করার লক্ষ্যে ইনফরমেশন হেল্প ডেস্ক স্থাপন করেছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। আজ বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) ডিএসইর ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ আসাদুর রহমান এই ইনফরমেশন হেল্প ডেস্ক উদ্বোধন করেন।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ডিএসইর প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা ড. আসিফুর রহমান, প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা মো. ছামিউল ইসলাম, প্রধান রেগুলেটরি কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম ভূঁইয়াসহ ডিএসইর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এ সময় মোহাম্মদ আসাদুর রহমান বলেন, ইনফরমেশন হেল্প ডেস্কের মাধ্যমে পুঁজিবাজারসংশ্লিষ্ট তথ্য প্রদান আরও সহজ হবে এবং বিনিয়োগকারী ও অন্য অংশীজনদের বিভিন্ন জিজ্ঞাসার দ্রুত ও কার্যকর সমাধান নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। এর ফলে ডিএসইর সেবার মান আরও গ্রাহকবান্ধব ও স্বচ্ছ হবে।

ডিএসইর এমডি আশা প্রকাশ করেন, এই হেল্প ডেস্ক ডিএসইর বাজার অংশগ্রহণকারীদের আস্থা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

পুঁজিবাজারসংক্রান্ত সব ধরনের তথ্যের জন্য +৮৮-০২-৪১০৪০১৮৯, ০৯৬৬৬৭০২০৭০ নম্বরে যোগাযোগ করা যাবে বলে অনুষ্ঠানে জানানো হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ট্রাভেল ও ট্যুরিজম অ্যাওয়ার্ড: লিড স্পনসর ‘গ্যালাক্সি’, হসপিটালিটি পার্টনার ইন্টারকন্টিনেন্টাল ঢাকা

বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা
ট্রাভেল ও ট্যুরিজম অ্যাওয়ার্ড: লিড স্পনসর ‘গ্যালাক্সি’, হসপিটালিটি পার্টনার ইন্টারকন্টিনেন্টাল ঢাকা

দেশের অন্যতম ভ্রমণ ও পর্যটনবিষয়ক প্রকাশনা বাংলাদেশ মনিটর আয়োজিত ‘বাংলাদেশ ট্রাভেল, ট্যুরিজম ও হসপিটালিটি অ্যাওয়ার্ড (BTTHA) ২০২৫’-এর লিড স্পনসর হিসেবে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে দেশের ভ্রমণশিল্পের শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান গ্যালাক্সি গ্রুপ।

একই সঙ্গে পাঁচ তারকা হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল ঢাকা এই আয়োজনের হসপিটালিটি পার্টনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে।

দেশের ভ্রমণ, পর্যটন ও আতিথেয়তা শিল্পে একমাত্র স্বীকৃত এই পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানটি এবার দ্বিতীয়বারের মতো অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।

গতকাল বুধবার ইন্টারকন্টিনেন্টাল ঢাকা হোটেলে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে সংশ্লিষ্ট চুক্তিসমূহ স্বাক্ষরিত হয়।

বাংলাদেশ মনিটরের পক্ষে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন সম্পাদক কাজী ওয়াহিদুল আলম। গ্যালাক্সি গ্রুপের পক্ষে লিড স্পনসর চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহমেদ ইউসুফ ওয়ালিদ। অন্যদিকে ইন্টারকন্টিনেন্টাল ঢাকার পক্ষে হসপিটালিটি পার্টনার চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন হোটেলটির জেনারেল ম্যানেজার ডেভিড ও’ হ্যানলন।

চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ মনিটরের সম্পাদক কাজী ওয়াহিদুল আলম বলেন, গ্যালাক্সি ও ইন্টারকন্টিনেন্টাল ঢাকার সম্পৃক্ততায় অ্যাওয়ার্ড প্রোগ্রামের মর্যাদা ও পরিসর আরও বৃদ্ধি পাবে। এর মাধ্যমে দেশের ভ্রমণ ও আতিথেয়তা শিল্পে উৎকর্ষতা অর্জন এবং উত্তম চর্চা উৎসাহিত হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

গ্যালাক্সি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহমেদ ইউসুফ ওয়ালিদ বলেন, পর্যটন ও আতিথেয়তা খাতে উদ্ভাবন, সেবার মান এবং টেকসই উন্নয়নকে স্বীকৃতি প্রদানকারী একটি মহতী উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত হতে পেরে তারা গর্বিত।

ইন্টারকন্টিনেন্টাল ঢাকার জেনারেল ম্যানেজার ডেভিড ও’ হ্যানলন বিশ্বমানের আতিথেয়তা প্রদানের পাশাপাশি অসাধারণ অর্জনকে স্বীকৃতি দেওয়ার লক্ষ্যে এমন একটি আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে যুক্ত থাকার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন।

চলতি বছর ২৫টি ক্যাটাগরিতে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে পুরস্কারের জন্য মনোনীত করা হয়েছে। শুধু আবেদনকারী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানই পুরস্কারের জন্য বিবেচিত হবে। সমাজের বিভিন্ন স্তরের প্রতিনিধিত্বকারী অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের সমন্বয়ে গঠিত একটি বিচারক প্যানেল বিশেষজ্ঞদের মূল্যায়ন এবং পাবলিক ভোটিংয়ের ভিত্তিতে বিজয়ীদের চূড়ান্ত করবেন।

এবার নতুন করে যুক্ত করা হয়েছে দুটি বিশেষ ক্যাটাগরি—সর্বাধিক পর্যটনবান্ধব বিদেশি গন্তব্য, বাংলাদেশের সর্বাধিক জনপ্রিয় পর্যটন স্পট। এই দুটি ক্যাটাগরির বিজয়ী সরাসরি পাবলিক ভোটিংয়ের মাধ্যমে নির্ধারিত হবে।

বাংলাদেশের পর্যটন ইকোসিস্টেমের উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে সম্মাননা জানানোর লক্ষ্যে বাংলাদেশ মনিটর ২০২৪ সালে প্রথমবারের মতো এই পুরস্কারের প্রবর্তন করে।

প্রথম আসরের সাফল্যের ধারাবাহিকতায় এ বছর আরও বৃহৎ পরিসরে এই আয়োজন করা হচ্ছে, যেখানে অংশগ্রহণের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দৃশ্যমানতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারত থেকে আসা পণ্যবাহী ট্রাকের চলাচল নজরদারি করবে এনবিআর

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৮: ৪৩
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারত থেকে আমদানি করা পণ্যবাহী ট্রাকের চলাচল আরও স্বচ্ছ ও প্রযুক্তিনির্ভর করতে অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সিস্টেমে ‘ট্রাক মুভমেন্ট’ নামে নতুন একটি সাব-মডিউল চালু করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এর মাধ্যমে প্রতিটি ভারতীয় পণ্যবাহী ট্রাকের প্রবেশ, অবস্থানকাল এবং খালি ট্রাকের ফেরত-সংক্রান্ত তথ্য ইলেকট্রনিকভাবে সংরক্ষণ করা হবে।

আজ বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায় এনবিআর।

এনবিআর জানায়, প্রাথমিকভাবে যশোরের বেনাপোল কাস্টম হাউসে ১৫ ডিসেম্বর থেকে এই সাব-মডিউলের পাইলট কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এর আগে ট্রাক প্রবেশ ও বহির্গমনের তথ্য ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করা হতো, যা সময়সাপেক্ষ ও ত্রুটিপূর্ণ হওয়ার ঝুঁকি ছিল।

নতুন মডিউল চালুর ফলে ভারতীয় প্রতিটি ট্রাকের আগমন ও বহির্গমনের প্রকৃত তথ্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংরক্ষিত থাকবে। এতে ট্রাকের অবস্থানকাল নির্ধারণ, সীমান্ত এলাকায় ট্রাক চলাচল কার্যকরভাবে মনিটরিং এবং রিয়েল-টাইম রিপোর্ট তৈরি করা সম্ভব হবে। পাশাপাশি তথ্য ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা বাড়বে, রাজস্বহানি রোধে সহায়ক হবে এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত হবে বলে জানিয়েছে এনবিআর।

এনবিআরের বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, সীমান্ত বাণিজ্য ব্যবস্থাপনায় এই ডিজিটাল উদ্যোগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। ট্রাক চলাচলের নির্ভুল তথ্য থাকায় শুল্ক ও কর ব্যবস্থাপনায় নজরদারি জোরদার হবে, একই সঙ্গে সীমান্ত সুরক্ষাও বাড়বে।

খুব শিগগির দেশের সব স্থলবন্দরে অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সিস্টেমের ‘ট্রাক মুভমেন্ট’ সাব-মডিউলটি লাইভ অপারেশনে আনার পরিকল্পনা রয়েছে এনবিআরের। এতে স্থলবন্দরভিত্তিক আমদানি কার্যক্রম আরও গতিশীল ও আধুনিক হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত