Ajker Patrika

রাষ্ট্রায়ত্ত পাটশিল্প রক্ষায় আসন্ন বাজেটে মহাপরিকল্পনা গ্রহণসহ ৭ দফা সুপারিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
রাষ্ট্রায়ত্ত পাটশিল্প রক্ষায় আসন্ন বাজেটে মহাপরিকল্পনা গ্রহণসহ ৭ দফা সুপারিশ

আসন্ন বাজেট বাংলাদেশের মৌলিক শিল্প রক্ষায় বন্ধ সব পাটকল-চিনিকল চালু ও তার বিকাশের লক্ষ্যে মহাপরিকল্পনা গ্রহণসহ সাত দফা সুপারিশ করেছে দেশের প্রথিতযশা রাজনীতিবিদ, অর্থনীতিবিদ, গবেষক, সাংবাদিক ও শ্রমিক নেতারা। আজ শনিবার বিকেলে রাজধানীতে আয়োজিত এক সেমিনারে এ সুপারিশ তুলে ধরা হয়।

শনিবার রাজধানীর সেগুন বাগিচার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে পাটকল চিনিকল রক্ষায় শ্রমিক-কৃষক-ছাত্র-জনতা ঐক্যের উদ্যোগে ‘২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট বাংলাদেশের মৌলিক শিল্প রক্ষায় বন্ধ সকল পাটকল চিনিকল চালু ও তার বিকাশে আমাদের প্রস্তাবনা’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। 

দেশের অর্থনীতি, মৌলিক শিল্প, জনগণের সম্পদ, শ্রমিকের কর্মসংস্থান, স্থানীয় অর্থনীতি ও চিনি এবং পাটচাষিদের কথা বিবেচনা করে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল ও চিনিকল রাষ্ট্রীয়ভাবে চালু করার লক্ষ্যে আসন্ন বাজেটে মহাপরিকল্পনা গ্রহণের সুপারিশ জানানো হয় সেমিনারে। এ ছাড়া মাথাভারী প্রশাসনের আকার ছোট করে জবাবদিহি নিশ্চিত করা, পাটকলগুলোকে অতি দ্রুত আধুনিকায়ন করে চালু করা, রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোকে সচল করতে এককালীন বরাদ্দ দেওয়া, সরকারি দপ্তরের সব খাতে পাটজাত দ্রবের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা, যন্ত্রপাতি নষ্ট হতে না দিয়ে অবিলম্বে মিলগুলো চালুর উদ্যোগ নেওয়া এবং বকেয়া বেতন-ভাতা, পিএফ বকেয়া ও গ্র্যাচুইটি বকেয়া পরিশোধে বাজেটে বরাদ্দ দেওয়ার সুপারিশ জানানো হয়। 

সেমিনারে উত্থাপিত মূল প্রবন্ধে বলা হয়, স্বাধীনতার পর রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলের সংখ্যা ক্রমাগত কমেছে। করোনার মধ্যে লোকসানের অজুহাতে ২৬টি পাটকল বন্ধ করা হয়। অন্যদিকে বেসরকারি পাটকলের সংখ্যা বাড়ছে। বর্তমানে বেসরকারি পাটকলের সংখ্যা ২৮১টি। পাটকল বন্ধের সময় পাটমন্ত্রী দুই মাসের মধ্যে শ্রমিকদের সব বকেয়া পরিশোধ করে তিন মাসের মধ্যে মিল চালুর কথা বললেও এখনো পর্যন্ত পাঁচটি জুটমিলের ৮,৪৬৩ অস্থায়ী শ্রমিক একটি টাকাও পাননি। ২০টি জুটমিলের প্রায় ১৮ হাজার শ্রমিকের বকেয়া এরিয়ার টাকা অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে ছাড় হলেও এখনো শ্রমিকদের দেওয়া হয়নি। অন্যদিকে ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১৫টি চিনিকলে ৮২ হাজার টন উৎপাদন হয়েছিল। ছয়টি মিল বন্ধের পর ২০২০-২১ অর্থবছরে ৪৮ হাজার টন এবং ২০২১-২২ অর্থবছরে উৎপাদন কমে ২৪ হাজার টনে এসে নেমেছে। 

সেমিনারে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটশিল্প রক্ষায় আসন্ন বাজেটে মহাপরিকল্পনা গ্রহণসহ ৭ দফা সুপারিশ করা হয়। ছবি: আজকের পত্রিকাসেমিনারে লেখক ও গবেষক ড. মাহা মির্জা বাংলাদেশ প্রাইভেটাইজেশন কমিশনের একটি প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে বলেন, ‘বিভিন্ন সময়ে বেসরকারি মালিকানায় ছেড়ে দেওয়া দেশের ৭৫টি সরকারি শিল্প প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অর্ধেকের বেশি প্রতিষ্ঠান পরবর্তীতে আর চালুই করা যায়নি। বেসরকারিকরণ করলেই শিল্পের বিকাশ হবে এবং প্রচুর কর্মসংস্থান তৈরি হবে-বাংলাদেশের বেসরকারিকরণের ইতিহাস তা বলে না।’ 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এম এম আকাশ বলেন, ‘পাটকল-চিনিকলগুলো পুনরায় চালু করলেই হবে না এগুলো দক্ষতার সঙ্গে চালাতে হবে। সে জন্য যন্ত্রপাতি নবায়ন এবং নতুনভাবে বিনিয়োগ করতে হবে। মাথাভারী প্রশাসন ও দুর্নীতি কমাতে হবে।’ 

রাষ্ট্রীয় ছয়টি চিনিকল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল উৎপাদন খরচ বৃদ্ধির কথা বলে উল্লেখ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোশাহিদা সুলতানা বলেন, ‘এই উৎপাদন খরচ বৃদ্ধির বড় কারণ ছিল পুঞ্জীভূত ঋণ। অথচ যথেষ্ট পদক্ষেপ নিলেই উৎপাদন খরচ কমানো যেত। এখনো চেষ্টা করলে এবং সরকার উদ্যোগী হলে চিনিকলগুলোকে সাফল্যের সঙ্গে পরিচালনা করা সম্ভব।’ 

গত এক যুগে পাটশিল্প থেকে দশ হাজার কোটি টাকা রপ্তানিমূলক আয় হয়েছে জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. তানজিমউদ্দিন খান বলেন, ‘পাটকল এবং চিনিকল বন্ধ হয়ে যাওয়ার এই সমস্যা শ্রমিকের সমস্যা নয়। এখানে সরকারি প্রতিষ্ঠানের কোনো প্রকার জবাবদিহি নেই। তাই শ্রমিকের আন্দোলনকে বিশৃঙ্খলা হিসেবে না দেখে এটিকে সরকারের সংকট এবং শ্রমজীবী মানুষের অধিকার হরণ হিসেবে দেখে উদ্যোগ নেওয়া উচিত। সরকার এই শিল্প টিকিয়ে রাখার জন্য ভর্তুকি দিতে বাধ্য।’ 

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘পাটকল-চিনিকলগুলোতে শ্রমিকের কারণে নয়, রাষ্ট্র এবং সরকারের অব্যবস্থাপনার কারণে লোকসান হচ্ছে। পাটকল চিনিকল চালুসহ শ্রমিকদের অধিকার রক্ষা করতে হলে এই সরকারকে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে উৎখাত করতে হবে।’ 

প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক এবং বিশিষ্ট কলামিস্ট সোহরাব হোসেন বলেন, ‘পাটকল, চিনিকল বন্ধ করার আগে বিজেএমসিসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে জবাবদিহি করতে হবে। কেন পাটকলগুলোতে লোকসান হচ্ছে, শ্রমিকেরা ঠিকমতো তাদের পাওনা পাচ্ছে না, তা খুঁজে বের করতে অবিলম্বে একটি গণতদন্ত কমিশন গঠন এবং কমিশনের প্রতিবেদন জনসম্মুখে উন্মোচন করতে হবে।’ 

বাসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সহকারী সাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, ‘পাটকল আধুনিকায়নের জন্য ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়নি, কিন্তু ৫ হাজার কোটি টাকা দিয়ে মিল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কারণ, সরকারের চোখ পড়েছে জমির দিকে। এই মহামূল্যবান পাটকল এবং চিনিকলের জমি ব্যবসায়ীদের হাতে দিয়ে দেওয়ায় সরকারের লক্ষ্য।’ 

পাটের বিশাল সম্ভাবনার দিকগুলো তুলে ধরে সারা পৃথিবীতে পাটজাত শিল্পের চাহিদা দিন দিন বাড়বে জানিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘এমন একটি সম্ভাবনাময় এবং কৌশলগত খাত বেসরকারি খাতে ছেড়ে দিলে বেসরকারি মালিক নিশ্চিত ভাবেই মুনাফার দিকে যাবে। পাটশিল্প শক্তিশালী ভিত্তির ওপর দাঁড় করালে গার্মেন্টস শিল্পের মতো অন্য দেশের ওপর নির্ভরশীল হতে হতো না। কিন্তু রাষ্ট্র, সরকার নাগরিকের প্রতি দায়িত্ব পালন করছে না। পাটকলে লোকসানের জন্য যারা দায়ী তাদেরই আবার পাটকলগুলো বেসরকারিভাবে দেওয়া হচ্ছে।’ 

পাটকল চিনিকল রক্ষায় শ্রমিক-কৃষক-ছাত্র-জনতা ঐক্যের সমন্বয়ক রুহুল আমিনের সঞ্চালনায় সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়নের সভাপতি শহীদুল্লাহ্ চৌধুরী, বাংলাদেশ সাম্যবাদী আন্দোলনের সমন্বয়ক শুভ্রাংশু চক্রবর্তী, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ফয়জুল হাকিম লালাসহ পাটকল ও চিনিকল শ্রমিক নেতারা। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

প্রথম আলো, ডেইলি স্টারে হামলা ও নূরুল কবীরকে হেনস্তার ঘটনায় বিপিজেএর নিন্দা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
প্রথম আলো, ডেইলি স্টারে হামলা ও নূরুল কবীরকে হেনস্তার ঘটনায় বিপিজেএর নিন্দা

দেশের পাঠকপ্রিয় দুই সংবাদমাধ্যম দৈনিক প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টার কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা এবং প্রবীণ সাংবাদিক ও দ্য নিউ এজ সম্পাদক নূরুল কবীরকে নাজেহাল ও হেনস্তা করার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ পার্লামেন্ট জার্নালিস্টস অ্যাসোসিয়েশন (বিপিজেএ)।

আজ শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) এক যৌথ বিবৃতিতে সংগঠনের সভাপতি হারুন জামিল ও সাধারণ সম্পাদক শওকত আলী লিথো এই প্রতিবাদ জানান।

বিপিজেএ নেতারা বলেন, সংবাদপত্রের ওপর যেকোনো ধরনের হামলা স্বাধীন মতপ্রকাশের মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী। একটি গণতান্ত্রিক সমাজে এ ধরনের সহিংসতা অগ্রহণযোগ্য।

বিবৃতিতে তাঁরা উল্লেখ করেন, সমাজে ভিন্নমত থাকবেই এবং মতের ভিন্নতা একটি সুস্থ সমাজ বিনির্মাণে সহায়তা করে। সাংবাদিকতা কোনো অপরাধমূলক কাজ নয়, বরং এটি রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ।

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির ওপর হামলার দায় দুষ্কৃতকারীদের। নেতারা বলেন, অপরাধীদের আইনের আওতায় আনার দায়িত্ব সরকারের। কিন্তু এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ঢালাওভাবে সংবাদপত্র ও সাংবাদিকদের লক্ষ্যবস্তু করা চরম অন্যায়।

বিবৃতিতে নেতারা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, দেশে যখন একটি সুস্থ ধারার রাজনৈতিক পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছে, ঠিক সেই মুহূর্তে সংবাদপত্র ও সাংবাদিকদের ওপর এ ধরনের বর্বরোচিত হামলা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার একটি অপচেষ্টা হতে পারে।

বিপিজেএ অবিলম্বে এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে। একই সঙ্গে গণমাধ্যমকর্মীদের পেশাগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারের প্রতি কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

প্রথম আলো-ডেইলি স্টারে হামলায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চায় সম্পাদক পরিষদ ও নোয়াব

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২: ১৬
প্রথম আলো-ডেইলি স্টারে হামলায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চায় সম্পাদক পরিষদ ও নোয়াব

দেশের শীর্ষস্থানীয় দৈনিক প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টারের কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের ন্যক্কারজনক ঘটনায় গভীর উদ্বেগ, ক্ষোভ এবং তীব্র নিন্দা জানিয়েছে সম্পাদক পরিষদ ও সংবাদপত্র মালিকদের সংগঠন নোয়াব। একই সঙ্গে এসব ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছে সংগঠন দুটি।

আজ শুক্রবার এক বিজ্ঞপ্তিতে এই নিন্দা জ্ঞাপন ও শাস্তি দাবি করেন তাঁরা।

এতে বলা হয়, ‘এই হামলা শুধু গণমাধ্যমের ওপর নয়, এটা আমাদের সমাজের ওপর, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের ওপর আক্রমণ। সর্বোপরি বাংলাদেশের ওপর আক্রমণ। গভীর রাতের ওই হামলায় প্রতিষ্ঠান দুটির গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ও সম্পদহানির পাশাপাশি সংবাদকর্মীদের জীবনের ঝুঁকি তৈরি হয়েছিল। এটি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতির পাশাপাশি রাষ্ট্রের দায় এবং দায়িত্বহীনতারও স্পষ্ট বহিঃপ্রকাশ।’

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ‘সম্পাদক পরিষদ ও নোয়াব মনে করে, এটা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। শুরু থেকেই মব ভায়োলেন্স (সংগঠিত) প্রতিরোধে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যর্থতার যে ধারাবাহিকতা আমরা প্রত্যক্ষ করেছি, সর্বশেষ ঘটনা তার আরেকটি ভয়াবহ উদাহরণ। গণমাধ্যম কার্যালয়ে হামলা প্রমাণ করে যে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো অপরাধ দমনে কার্যকর ভূমিকা রাখতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে।’

একই সঙ্গে সম্পাদক পরিষদ ও নোয়াব ছায়ানটে হামলার ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে।

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান এবং দ্য ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনামকে ফোন করে নিরাপত্তার বিষয়ে আশ্বস্ত করেন এবং পাশে আছেন বলে জানান। তবে এই হামলা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার দায় অন্তর্বর্তী সরকারকেই নিতে হবে। বিবৃতি বা আশ্বাস নয়, অবিলম্বে হামলাকারীদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তারসহ সম্পাদক পরিষদের সভাপতি নূরুল কবীরকে হেনস্তায় ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছে সম্পাদক পরিষদ ও নোয়াব।

পেশাজীবী সংগঠন, ব্যবসায়ী, নাগরিক সমাজ, রাজনৈতিক দলসহ সাংবাদিক সংগঠনগুলোকে এ দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশের জন্য আহ্বান জানাচ্ছে সম্পাদক পরিষদ ও নোয়াব।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হাদির মৃত্যুতে উদ্বেগ, নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানালেন জাতিসংঘের ফলকার তুর্ক

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১: ১৭
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার তুর্ক। ছবি: সংগৃহীত
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার তুর্ক। ছবি: সংগৃহীত

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম যোদ্ধা ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার-বিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার তুর্ক। আজ শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) এক বিবৃতিতে তিনি এ ঘটনার দ্রুত ও নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়েছেন।

১২ ডিসেম্বর ঢাকার পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী ওসমান হাদিকে গুলি করা হয়। প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও পরে এভারকেয়ার হাসপাতালে তাঁকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে ১৫ ডিসেম্বর এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তাঁকে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১০টার দিকে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

জাতিসংঘের মানবাধিকার-বিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার তুর্ক এক বিবৃতিতে বলেন, ‘হাদির মৃত্যুর ঘটনায় যারা দায়ী, তাদের চিহ্নিত করে দ্রুত, নিরপেক্ষ, পুঙ্খানুপুঙ্খ এবং স্বচ্ছ তদন্ত করার জন্য আমি কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। একই সঙ্গে দায়ীদের জবাবদিহি এবং আইনি প্রক্রিয়া নিশ্চিত করার অনুরোধ করছি।’

বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হাদির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে টানা দ্বিতীয় দিনের মতো বাংলাদেশে বিক্ষোভ চলছে। এই পরিস্থিতিতে ফলকার তুর্ক সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি সতর্ক করে বলেছেন, ‘প্রতিহিংসা এবং প্রতিশোধ কেবল বিভাজন বাড়াবে এবং পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলবে।’

আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলাদেশে সংসদীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এই সময়টিকে অত্যন্ত সংবেদনশীল উল্লেখ করে ফলকার তুর্ক বলেন, ‘এই সময়ে এমন একটি পরিবেশ নিশ্চিত করা জরুরি, যেখানে জনজীবনে সবার নিরাপদ অংশগ্রহণ এবং স্বাধীনভাবে ভিন্নমত প্রকাশের সুযোগ থাকবে।’

ফলকার তুর্ক আরও বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার এবং সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কর্তৃপক্ষের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’ অস্থিরতা যাতে আর না বাড়ে, সে বিষয়ে সরকারকে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হাদি হত্যার প্রতিবাদে গণমাধ্যমের ওপর হামলার দায় সরকার এড়াতে পারে না: টিআইবি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান বিন হাদিকে পরিকল্পিত ও নির্মম হত্যাকাণ্ডে গভীর উদ্বেগ ও তীব্র নিন্দা জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। একই সঙ্গে, এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদকে কেন্দ্র করে মুক্ত গণমাধ্যম, ভিন্নমত ও বাক্‌স্বাধীনতার ওপর সংঘটিত ও অভূতপূর্ব ধ্বংসাত্মক হামলার ঘটনাকে রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক ভিত্তি, নাগরিক নিরাপত্তা ও স্বাধীনতার চেতনার বিরুদ্ধে সরাসরি আঘাত বলে মন্তব্য করেছে সংস্থাটি।

আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় টিআইবির আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন পরিচালক মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক লিখিত বিবৃতিতে এসব কথা জানানো হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, ওসমান হাদির হত্যাকাণ্ডে জড়িত সবাইকে বিচারের আওতায় আনতে সরকার ব্যর্থ হয়েছে।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, টার্গেটেড শুটিংয়ে জড়িতদের গ্রেপ্তারে ব্যর্থতা এবং পার্শ্ববর্তী দেশে পালিয়ে যেতে সহায়তার অভিযোগ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অদূরদর্শিতা ও অদক্ষতারই প্রতিফলন। এর ফলে গণরোষ থেকে সৃষ্ট অস্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তাহীনতার ঝুঁকি আরও বেড়েছে, যার দায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোনোভাবেই এড়াতে পারে না।

ড. ইফতেখারুজ্জামান আরও বলেন, কর্তৃত্ববাদী শাসনের পতনের পর বিজয়ের দাবিদার কিছু শক্তির আক্রোশপূর্ণ ও প্রতিশোধপ্রবণ আচরণ রাষ্ট্র ও সমাজে নতুন ধরনের দমনমূলক প্রবণতা তৈরি করছে। এর সরাসরি শিকার হচ্ছে মুক্ত গণমাধ্যম, ভিন্নমত ও বাক্‌স্বাধীনতা। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার কার্যকর অবস্থান নিতে ব্যর্থ হয়েছে; বরং অতীতে অনুরূপ সংকটে নতজানু অবস্থান গ্রহণ করে রাষ্ট্র নিজেই অসহিষ্ণুতা ও সহিংসতার ক্ষেত্র প্রসারিত করেছে।

টিআইবি জানায়, প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের মতো শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যমে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ, দৈনিক নিউ এজের সম্পাদক নূরুল কবীরের ওপর হামলা, সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানটে আক্রমণ এবং কথিত ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে দীপু চন্দ্র দাসকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনা কোনোভাবেই বিচ্ছিন্ন নয়। বরং এসবই মুক্তচিন্তা, ভিন্নমত ও স্বাধীন মতপ্রকাশকে পরিকল্পিতভাবে দমনের জ্বলন্ত উদাহরণ।

ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, কর্তৃত্ববাদী শাসনামলে যেভাবে মানবিক মূল্যবোধ ও মৌলিক মানবাধিকার পদদলিত হয়েছিল, আজ সেই একই দমনমূলক বাস্তবতা নতুন রূপে ফিরে আসছে। যারা বিগত ১৬ বছর অধিকার হরণের শিকার হয়েছেন এবং জুলাই আন্দোলনের বিজয়ী হিসেবে নিজেদের দাবি করছেন, তাঁদেরই একাংশের হাতে আজ মুক্ত গণমাধ্যম ও ভিন্নমতের অধিকার ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে।

ড. ইফতেখারুজ্জামান সতর্ক করে বলেন, এসব ঘটনার ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা, জুলাই অভ্যুত্থানের চেতনা ও মূল্যবোধ চরম হুমকির মুখে পড়ছে। বৈষম্যমুক্ত সমাজ, সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক ন্যায়বিচার, ধর্মীয় স্বাধীনতা, সম্প্রীতি ও বহু সংস্কৃতির সহাবস্থানের যে স্বপ্ন একাত্তর ও জুলাই ধারণ করেছিল, তা আজ গভীর সংকটে।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক আরও বলেন, ওসমান হাদির হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট আবেগকে কাজে লাগিয়ে মুক্ত গণমাধ্যম ও নাগরিক অধিকারের বিরোধী স্বার্থান্বেষী মহল পতিত শক্তির ইন্ধনে সহিংসতা উসকে দিচ্ছে। তিনি হত্যাকারীদের দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক বিচার, উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় ব্যর্থতার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জবাবদিহি এবং মুক্ত গণমাধ্যম ও নাগরিক অধিকারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অবিলম্বে কার্যকর, সমন্বিত ও দৃশ্যমান পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানান।

ড. ইফতেখারুজ্জামান হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, এসব পদক্ষেপ না নিলে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ, রাষ্ট্র সংস্কারের প্রত্যাশা, সামাজিক স্থিতিশীলতা এবং একাত্তর ও জুলাইয়ের মৌলিক আদর্শ আরও গভীর সংকটে পড়বে, যার দায় সরকার কোনোভাবেই এড়াতে পারবে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত