চিররঞ্জন সরকার

প্রথমেই একটি পুরোনো গল্প দিয়ে শুরু করা যাক।
বহু বছর আগের কথা। একবার এক বড়লোক বাবা ছেলেকে নিয়ে ভ্রমণে বের হয়েছেন। একটা সরু রাস্তায় বাবা ঘোড়ার পিঠে আর ছেলে ঘোড়ার দড়ি ধরে হেঁটে যাচ্ছেন। এই দৃশ্য দেখে লোকজন বলাবলি করতে লাগল, কেমন পাষাণ বাবা! নাবালক ছেলেকে হাঁটিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন আর নিজে শাহেনশাহের মতো ঘোড়ার পিঠে আরাম করে যাচ্ছেন।
এ কথা শুনে বাবা ছেলেকে ঘোড়ার পিঠে বসিয়ে দড়ি ধরে হাঁটতে লাগলেন। তখন লোকেরা বলাবলি শুরু করল, কেমন বেয়াদব ছেলেরে বাবা! বুড়ো বাপটা হেঁটে যাচ্ছেন আর জোয়ান ছেলে নবাবের মতো ঘোড়ার পিঠে বসে আছে।
লোকেদের কথা শুনে বাপ-ছেলে একত্রে ঘোড়ার পিঠে উঠে বসলেন। তখন লোকেরা বলতে লাগল, মানুষ এত নিষ্ঠুর হয় কী করে! একটি অবোধ প্রাণীর পিঠে দুজন উঠে বসেছে! আরেকটু হলে তো বেচারা ঘোড়াটা অক্কা পাবে।
তখন রেগে গিয়ে বাপ-ছেলে দুজনই ঘোড়ার দড়ি ধরে হাঁটতে লাগলেন। তখন লোকে বলাবলি করতে লাগল, মানুষ এত বোকা হয় কী করে! সঙ্গে ঘোড়া থাকতে কেউ হেঁটে যায় নাকি? এমন আহাম্মকের সংখ্যা বাড়লে দুনিয়াটাই অচল হয়ে যাবে।
মানুষের স্বভাবই আসলে খুঁত ধরা, সমালোচনা করা। আপনি যে কাজই করুন, যত সততা, নিষ্ঠা আর আন্তরিকতা দিয়ে করুন, কিছু মানুষ ভুল ধরবেই। সমালোচনা করবেই। তবে বাঙালি হলে সেই সমালোচনা, হিংসা, ঈর্ষা হয়ে আপনার সর্বনাশ কামনার মধ্য দিয়ে শেষ হবে।
বাঙালির স্বভাব বড়ই বিচিত্র। ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’তে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালির স্বভাব সম্পর্কে লিখেছেন, ‘আমাদের বাঙালির মধ্যে দুইটা দিক আছে। একটা হলো “আমরা মুসলমান, আরেকটা হলো, আমরা বাঙালি।” পরশ্রীকাতরতা এবং বিশ্বাসঘাতকতা আমাদের রক্তের মধ্যে রয়েছে। বোধ হয় দুনিয়ার কোনো ভাষায়ই এই কথাটা পাওয়া যাবে না, “পরশ্রীকাতরতা”। পরের শ্রী দেখে যে কাতর হয় তাকে “পরশ্রীকাতর” বলে। ঈর্ষা, দ্বেষ সকল ভাষায়ই পাবেন, সকল জাতির মধ্যেই কিছু কিছু আছে, কিন্তু বাঙালিদের মধ্যে আছে পরশ্রীকাতরতা। ভাইয়ের উন্নতি দেখলে ভাই খুশি হয় না। এই জন্যই বাঙালি জাতির সকল রকম গুণ থাকা সত্ত্বেও জীবনভর অন্যের অত্যাচার সহ্য করতে হয়েছে। সুজলা, সুফলা বাংলাদেশ সম্পদে ভর্তি। এমন উর্বর জমি দুনিয়ার খুব অল্প দেশেই আছে। তবুও এরা গরিব। কারণ যুগ যুগ ধরে এরা শোষিত হয়েছে নিজের দোষে। নিজকে এরা চেনে না, আর যত দিন চিনবে না এবং বুঝবে না, তত দিন এদের মুক্তি আসবে না। অনেক সময় দেখা গেছে, একজন অশিক্ষিত লোক লম্বা কাপড়, সুন্দর চেহারা, ভালো দাড়ি, সামান্য আরবি-ফারসি বলতে পারে, বাংলাদেশে এসে পীর হয়ে গেছে। বাঙালি হাজার হাজার টাকা তাকে দিয়েছে একটু দোয়া পাওয়ার লোভে। ভালো করে খবর নিয়ে দেখলে দেখা যাবে এ লোকটা কলকাতার কোন ফলের দোকানের কর্মচারী অথবা ডাকাতি বা খুনের মামলার আসামি। অন্ধ কুসংস্কার ও অলৌকিক বিশ্বাসও বাঙালির দুঃখের আর একটা কারণ।’
শুধু বঙ্গবন্ধুই নন, বাংলা সাহিত্যে স্বভাবকবি নামে পরিচিত গোবিন্দ চন্দ্র দাস এক কবিতায় বাঙালির ‘স্বভাব’ নিয়ে একটি বিখ্যাত কবিতা লিখেছিলেন। কবিতাটির একটি অংশ হচ্ছে:
‘‘যত মুসলমান হিন্দু,
পতনের মহাসিন্ধু,
নাহিধর্ম এক বিন্দু অতি নীচাশয়!
বৃথা ও তিলক ফোটা,
পাঁচ-ওক্ত মাথা কোটা,
ধূর্ত্তমি ভণ্ডামি ওটা নিশ্চয় নিশ্চয়!
একমেবাদ্বিতীয়ং,
সেও থিয়েটারি সং,
কলেজি নলেজি ঢং আর কিছু নয়।
শত ভাল কীট কৃমি,
এরা নরকের তিমি,
ইহাদের আদি অন্ত অনন্ত নিরয়!
অধম পিশাচগুলি,
গর্দ্দভের পদধূলি,
মাথায় মাখিয়া ছি ছি বড়লোক হয়!
বাঙালী মানুষ যদি, প্রেত কারে কয়?’’
(বাঙালী)
পদস্থ মানুষকে অপদস্থ করায় বাঙালির জুড়ি নেই। টেনে নামানোর খেলায় সে ওপরে উঠেছে অনেক। যুগ যুগ ধরেই তার এক হাতে কাঠি, অন্য হাতে চুনকালির ভাঁড়। বাঙালির হতাশা আছে, নিরাপত্তাহীনতা-অনিশ্চয়তা আছে, কিন্তু সেসব ছাপিয়ে আছে অপরকে হেয় করার মজ্জাগত স্বভাব। বাঙালি কেউ কারও ভালো দেখতে পারে না। সারাক্ষণ চলে যে এগিয়ে গেছে তাকে পেছনে টেনে ধরার বিদ্যার চর্চা। একই সঙ্গে চলে ঠেলা, ধাক্কা, গুঁতো, ল্যাং। যে একটু ওপরে উঠে গিয়েছে, অথবা তাকে ছাপিয়ে ওপরে উঠতে পারে, তার ব্যাপারে বাঙালি অতিশয় সংবেদনশীল। চিন্তাশীলও। এক প্ল্যাটফর্মে থেকেও ওই ব্যাটা ওপরে উঠে গেল কেমনে? এ কি কপাল-জোর না ব্যাকডোর! আমি অধম মানছি। কিন্তু ও ব্যাটা উত্তম সাজবে কেন? অতএব, টেনে নামাও। পেছনে লাগো। হ্যারাস করো। অপমান করো। বদনাম করো। কলঙ্ক রটাও। পারলে বাসার সামনে নর্দমার ময়লা ঢেলে এসো।
রবীন্দ্রনাথকেও বাঙালি ছেড়ে কথা বলেনি। ‘পায়রা কবি’ অভিধা জুড়েছে তাঁর সঙ্গে—
‘‘উড়িস নে রে পায়রা কবি
খোপের ভিতর থাক ঢাকা।
তোর বকবকম আর ফোঁসফোঁসানি
তাও কবিত্বের ভাব মাখা!’’
(কালীপ্রসন্ন কাব্যবিশারদ, রাহু)
নজরুলকেও বাঙালি কখনো কাফের বানিয়েছে, কখনো প্যারোডি বানিয়ে তীব্র অপমান করেছে। নজরুলের বিখ্যাত কবিতা ‘বিদ্রোহী’ প্রকাশের পর সেই সময়ের অন্য কবিরা যারপরনাই ঈর্ষাকাতর হয়ে ওঠে। নজরুলের ‘বল বীর-/বল উন্নত মম শির,/ শির নেহারি আমারি নত-শির ওই শিখর হিমাদ্রির!/বল বীর-/বল মহাবিশ্বের মহাকাশ ফাড়ি/ চন্দ্র সূর্য গ্রহ তারা ছাড়ি/ ভূলোক দ্যুলোক গোলক ভেদিয়া/ খোদার আসন আরশ ছেদিয়া,/ উঠিয়াছি চির-বিস্ময় আমি বিশ্ব-বিধাত্রীর!/ মম ললাটে রুদ্র ভগবান জ্বলে রাজ-রাজটীকা দীপ্ত জয়শ্রীর!/বল বীর-/আমি চির উন্নত শির...’। কবিতার বিপরীতে ‘ভবকুমার প্রধান’ নামে ব্যঙ্গ করে লেখা হয় ‘অসমছন্দ’ কবিতাটি—
‘‘আমি ব্যাঙ
লম্বা আমার ঠ্যাং
ভৈরব রভসে বর্ষা আসিলে ডাকি যে গ্যাঙোর গ্যাং।
আমি ব্যাঙ
আমি পথ হতে পথে দিয়ে চলি লাফ;
শ্রাবণ নিশায় পরশে আমার সাহসিকা
অভিসারিকা
ডেকে ওঠে, বাপ বাপ।’’
বাঙালি নেতা মানে না। মনীষী-মহাপুরুষ কাউকেই ছাড় দেয় না। বিবেকানন্দ, রামমোহন, ঈশ্বরচন্দ্র, বেগম রোকেয়া সবার নামেই বাঙালি কলঙ্ক দিয়েছে। শেরেবাংলা-সোহরাওয়ার্দী-ভাসানী সবার বিরুদ্ধেই নানা কুৎসা ও অপপ্রচার চালিয়েছে। এমনকি সুযোগ দেওয়া হলে বঙ্গবন্ধুকে নিয়েও বাঙালি প্রতিদিন পাঁচ শ পৃষ্ঠার গিবত রচনা করবে।
এখানে ‘সর্বজনমান্য’ বলে কেউ নেই। থাকার কারণও নেই। সবাইকে একটা ট্যাগ দিয়ে দেওয়া হয়। এ নতজানু, ও মেরুদণ্ডহীন, সে সুবিধাবাদী, ওরা দলদাস। এখানে কেউ সাচ্চা নয়। সব ঝুটা, সব নষ্ট। হলেও নষ্ট। না হলেও। হিংসা, ঈর্ষা সারাক্ষণ শিকারি কুকুরের মতো একে-ওকে ধাওয়া করছে।
কেউ নিজের মতো, স্বাধীন মতো চলতে পারবে না, চলতে দেওয়া হবে না। স্বাধীন জীবনযাপন করতে গিয়ে বাঙালির হাতে ‘জিনা-হারাম’ হওয়ার আরেক উদাহরণ সৈয়দ মুজতবা আলী। ষাটের দশকের শুরুর দিকে মুজতবা আলী দ্বিতীয় দফায় গেছেন শান্তিনিকেতনে, তখন তিনি খ্যাতির শীর্ষে। স্বভাবতই বেরিয়ে পড়ল ঈর্ষার ঝুলি। ঠিকমতো ক্লাসে না যাওয়া, গবেষণার কাজ না করা, অনিয়মিত জীবনযাপন, মদ্যপান এসবের অভিযোগ উঠতে লাগল। একেবারে কোণঠাসা করে দেওয়া হলো তাঁকে। মুজতবা আলী এ সময় কাউকে চিঠি লিখলে, চিঠির মাথায় লিখতেন: ‘শ্মশান, শান্তিনিকেতন’! অন্নদাশঙ্কর রায় মুজতবা আলীকে উদ্ধৃত করেছেন: ‘যত দিন আমার চাকরি ছিল না সকলে আমার বন্ধু ছিল, এখন আমি সকলের ঈর্ষার পাত্র।’ তিনি পাকিস্তানের গুপ্তচর এমন কথাও রটে। শেষে গোয়েন্দা পুলিশের জেরার মুখোমুখিও হতে হয় তাঁকে।
এখনো বাঙালির তির কখনো তসলিমা নাসরিন, কখনো মুহম্মদ জাফর ইকবাল, মুনতাসীর মামুন, শাহরিয়ার কবিরকে বিদ্ধ করে। একটু কেউ প্রতিবাদী হলেই, উচিত কথা বললেই তাঁকে নিশানা করা হয়।
আমরা আসলে সেই বাঙালি, যারা সামনে আসার মুরোদ নেই বলে ‘পেছনে’ লাগি। ‘ঘুঘু দেখানো’ ও ‘বাঁশ দেওয়া’ যাদের প্রিয় শখ! সত্যিই ‘বাঙালী মানুষ যদি, প্রেত কারে কয়!’
লেখক: চিররঞ্জন সরকার

প্রথমেই একটি পুরোনো গল্প দিয়ে শুরু করা যাক।
বহু বছর আগের কথা। একবার এক বড়লোক বাবা ছেলেকে নিয়ে ভ্রমণে বের হয়েছেন। একটা সরু রাস্তায় বাবা ঘোড়ার পিঠে আর ছেলে ঘোড়ার দড়ি ধরে হেঁটে যাচ্ছেন। এই দৃশ্য দেখে লোকজন বলাবলি করতে লাগল, কেমন পাষাণ বাবা! নাবালক ছেলেকে হাঁটিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন আর নিজে শাহেনশাহের মতো ঘোড়ার পিঠে আরাম করে যাচ্ছেন।
এ কথা শুনে বাবা ছেলেকে ঘোড়ার পিঠে বসিয়ে দড়ি ধরে হাঁটতে লাগলেন। তখন লোকেরা বলাবলি শুরু করল, কেমন বেয়াদব ছেলেরে বাবা! বুড়ো বাপটা হেঁটে যাচ্ছেন আর জোয়ান ছেলে নবাবের মতো ঘোড়ার পিঠে বসে আছে।
লোকেদের কথা শুনে বাপ-ছেলে একত্রে ঘোড়ার পিঠে উঠে বসলেন। তখন লোকেরা বলতে লাগল, মানুষ এত নিষ্ঠুর হয় কী করে! একটি অবোধ প্রাণীর পিঠে দুজন উঠে বসেছে! আরেকটু হলে তো বেচারা ঘোড়াটা অক্কা পাবে।
তখন রেগে গিয়ে বাপ-ছেলে দুজনই ঘোড়ার দড়ি ধরে হাঁটতে লাগলেন। তখন লোকে বলাবলি করতে লাগল, মানুষ এত বোকা হয় কী করে! সঙ্গে ঘোড়া থাকতে কেউ হেঁটে যায় নাকি? এমন আহাম্মকের সংখ্যা বাড়লে দুনিয়াটাই অচল হয়ে যাবে।
মানুষের স্বভাবই আসলে খুঁত ধরা, সমালোচনা করা। আপনি যে কাজই করুন, যত সততা, নিষ্ঠা আর আন্তরিকতা দিয়ে করুন, কিছু মানুষ ভুল ধরবেই। সমালোচনা করবেই। তবে বাঙালি হলে সেই সমালোচনা, হিংসা, ঈর্ষা হয়ে আপনার সর্বনাশ কামনার মধ্য দিয়ে শেষ হবে।
বাঙালির স্বভাব বড়ই বিচিত্র। ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’তে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালির স্বভাব সম্পর্কে লিখেছেন, ‘আমাদের বাঙালির মধ্যে দুইটা দিক আছে। একটা হলো “আমরা মুসলমান, আরেকটা হলো, আমরা বাঙালি।” পরশ্রীকাতরতা এবং বিশ্বাসঘাতকতা আমাদের রক্তের মধ্যে রয়েছে। বোধ হয় দুনিয়ার কোনো ভাষায়ই এই কথাটা পাওয়া যাবে না, “পরশ্রীকাতরতা”। পরের শ্রী দেখে যে কাতর হয় তাকে “পরশ্রীকাতর” বলে। ঈর্ষা, দ্বেষ সকল ভাষায়ই পাবেন, সকল জাতির মধ্যেই কিছু কিছু আছে, কিন্তু বাঙালিদের মধ্যে আছে পরশ্রীকাতরতা। ভাইয়ের উন্নতি দেখলে ভাই খুশি হয় না। এই জন্যই বাঙালি জাতির সকল রকম গুণ থাকা সত্ত্বেও জীবনভর অন্যের অত্যাচার সহ্য করতে হয়েছে। সুজলা, সুফলা বাংলাদেশ সম্পদে ভর্তি। এমন উর্বর জমি দুনিয়ার খুব অল্প দেশেই আছে। তবুও এরা গরিব। কারণ যুগ যুগ ধরে এরা শোষিত হয়েছে নিজের দোষে। নিজকে এরা চেনে না, আর যত দিন চিনবে না এবং বুঝবে না, তত দিন এদের মুক্তি আসবে না। অনেক সময় দেখা গেছে, একজন অশিক্ষিত লোক লম্বা কাপড়, সুন্দর চেহারা, ভালো দাড়ি, সামান্য আরবি-ফারসি বলতে পারে, বাংলাদেশে এসে পীর হয়ে গেছে। বাঙালি হাজার হাজার টাকা তাকে দিয়েছে একটু দোয়া পাওয়ার লোভে। ভালো করে খবর নিয়ে দেখলে দেখা যাবে এ লোকটা কলকাতার কোন ফলের দোকানের কর্মচারী অথবা ডাকাতি বা খুনের মামলার আসামি। অন্ধ কুসংস্কার ও অলৌকিক বিশ্বাসও বাঙালির দুঃখের আর একটা কারণ।’
শুধু বঙ্গবন্ধুই নন, বাংলা সাহিত্যে স্বভাবকবি নামে পরিচিত গোবিন্দ চন্দ্র দাস এক কবিতায় বাঙালির ‘স্বভাব’ নিয়ে একটি বিখ্যাত কবিতা লিখেছিলেন। কবিতাটির একটি অংশ হচ্ছে:
‘‘যত মুসলমান হিন্দু,
পতনের মহাসিন্ধু,
নাহিধর্ম এক বিন্দু অতি নীচাশয়!
বৃথা ও তিলক ফোটা,
পাঁচ-ওক্ত মাথা কোটা,
ধূর্ত্তমি ভণ্ডামি ওটা নিশ্চয় নিশ্চয়!
একমেবাদ্বিতীয়ং,
সেও থিয়েটারি সং,
কলেজি নলেজি ঢং আর কিছু নয়।
শত ভাল কীট কৃমি,
এরা নরকের তিমি,
ইহাদের আদি অন্ত অনন্ত নিরয়!
অধম পিশাচগুলি,
গর্দ্দভের পদধূলি,
মাথায় মাখিয়া ছি ছি বড়লোক হয়!
বাঙালী মানুষ যদি, প্রেত কারে কয়?’’
(বাঙালী)
পদস্থ মানুষকে অপদস্থ করায় বাঙালির জুড়ি নেই। টেনে নামানোর খেলায় সে ওপরে উঠেছে অনেক। যুগ যুগ ধরেই তার এক হাতে কাঠি, অন্য হাতে চুনকালির ভাঁড়। বাঙালির হতাশা আছে, নিরাপত্তাহীনতা-অনিশ্চয়তা আছে, কিন্তু সেসব ছাপিয়ে আছে অপরকে হেয় করার মজ্জাগত স্বভাব। বাঙালি কেউ কারও ভালো দেখতে পারে না। সারাক্ষণ চলে যে এগিয়ে গেছে তাকে পেছনে টেনে ধরার বিদ্যার চর্চা। একই সঙ্গে চলে ঠেলা, ধাক্কা, গুঁতো, ল্যাং। যে একটু ওপরে উঠে গিয়েছে, অথবা তাকে ছাপিয়ে ওপরে উঠতে পারে, তার ব্যাপারে বাঙালি অতিশয় সংবেদনশীল। চিন্তাশীলও। এক প্ল্যাটফর্মে থেকেও ওই ব্যাটা ওপরে উঠে গেল কেমনে? এ কি কপাল-জোর না ব্যাকডোর! আমি অধম মানছি। কিন্তু ও ব্যাটা উত্তম সাজবে কেন? অতএব, টেনে নামাও। পেছনে লাগো। হ্যারাস করো। অপমান করো। বদনাম করো। কলঙ্ক রটাও। পারলে বাসার সামনে নর্দমার ময়লা ঢেলে এসো।
রবীন্দ্রনাথকেও বাঙালি ছেড়ে কথা বলেনি। ‘পায়রা কবি’ অভিধা জুড়েছে তাঁর সঙ্গে—
‘‘উড়িস নে রে পায়রা কবি
খোপের ভিতর থাক ঢাকা।
তোর বকবকম আর ফোঁসফোঁসানি
তাও কবিত্বের ভাব মাখা!’’
(কালীপ্রসন্ন কাব্যবিশারদ, রাহু)
নজরুলকেও বাঙালি কখনো কাফের বানিয়েছে, কখনো প্যারোডি বানিয়ে তীব্র অপমান করেছে। নজরুলের বিখ্যাত কবিতা ‘বিদ্রোহী’ প্রকাশের পর সেই সময়ের অন্য কবিরা যারপরনাই ঈর্ষাকাতর হয়ে ওঠে। নজরুলের ‘বল বীর-/বল উন্নত মম শির,/ শির নেহারি আমারি নত-শির ওই শিখর হিমাদ্রির!/বল বীর-/বল মহাবিশ্বের মহাকাশ ফাড়ি/ চন্দ্র সূর্য গ্রহ তারা ছাড়ি/ ভূলোক দ্যুলোক গোলক ভেদিয়া/ খোদার আসন আরশ ছেদিয়া,/ উঠিয়াছি চির-বিস্ময় আমি বিশ্ব-বিধাত্রীর!/ মম ললাটে রুদ্র ভগবান জ্বলে রাজ-রাজটীকা দীপ্ত জয়শ্রীর!/বল বীর-/আমি চির উন্নত শির...’। কবিতার বিপরীতে ‘ভবকুমার প্রধান’ নামে ব্যঙ্গ করে লেখা হয় ‘অসমছন্দ’ কবিতাটি—
‘‘আমি ব্যাঙ
লম্বা আমার ঠ্যাং
ভৈরব রভসে বর্ষা আসিলে ডাকি যে গ্যাঙোর গ্যাং।
আমি ব্যাঙ
আমি পথ হতে পথে দিয়ে চলি লাফ;
শ্রাবণ নিশায় পরশে আমার সাহসিকা
অভিসারিকা
ডেকে ওঠে, বাপ বাপ।’’
বাঙালি নেতা মানে না। মনীষী-মহাপুরুষ কাউকেই ছাড় দেয় না। বিবেকানন্দ, রামমোহন, ঈশ্বরচন্দ্র, বেগম রোকেয়া সবার নামেই বাঙালি কলঙ্ক দিয়েছে। শেরেবাংলা-সোহরাওয়ার্দী-ভাসানী সবার বিরুদ্ধেই নানা কুৎসা ও অপপ্রচার চালিয়েছে। এমনকি সুযোগ দেওয়া হলে বঙ্গবন্ধুকে নিয়েও বাঙালি প্রতিদিন পাঁচ শ পৃষ্ঠার গিবত রচনা করবে।
এখানে ‘সর্বজনমান্য’ বলে কেউ নেই। থাকার কারণও নেই। সবাইকে একটা ট্যাগ দিয়ে দেওয়া হয়। এ নতজানু, ও মেরুদণ্ডহীন, সে সুবিধাবাদী, ওরা দলদাস। এখানে কেউ সাচ্চা নয়। সব ঝুটা, সব নষ্ট। হলেও নষ্ট। না হলেও। হিংসা, ঈর্ষা সারাক্ষণ শিকারি কুকুরের মতো একে-ওকে ধাওয়া করছে।
কেউ নিজের মতো, স্বাধীন মতো চলতে পারবে না, চলতে দেওয়া হবে না। স্বাধীন জীবনযাপন করতে গিয়ে বাঙালির হাতে ‘জিনা-হারাম’ হওয়ার আরেক উদাহরণ সৈয়দ মুজতবা আলী। ষাটের দশকের শুরুর দিকে মুজতবা আলী দ্বিতীয় দফায় গেছেন শান্তিনিকেতনে, তখন তিনি খ্যাতির শীর্ষে। স্বভাবতই বেরিয়ে পড়ল ঈর্ষার ঝুলি। ঠিকমতো ক্লাসে না যাওয়া, গবেষণার কাজ না করা, অনিয়মিত জীবনযাপন, মদ্যপান এসবের অভিযোগ উঠতে লাগল। একেবারে কোণঠাসা করে দেওয়া হলো তাঁকে। মুজতবা আলী এ সময় কাউকে চিঠি লিখলে, চিঠির মাথায় লিখতেন: ‘শ্মশান, শান্তিনিকেতন’! অন্নদাশঙ্কর রায় মুজতবা আলীকে উদ্ধৃত করেছেন: ‘যত দিন আমার চাকরি ছিল না সকলে আমার বন্ধু ছিল, এখন আমি সকলের ঈর্ষার পাত্র।’ তিনি পাকিস্তানের গুপ্তচর এমন কথাও রটে। শেষে গোয়েন্দা পুলিশের জেরার মুখোমুখিও হতে হয় তাঁকে।
এখনো বাঙালির তির কখনো তসলিমা নাসরিন, কখনো মুহম্মদ জাফর ইকবাল, মুনতাসীর মামুন, শাহরিয়ার কবিরকে বিদ্ধ করে। একটু কেউ প্রতিবাদী হলেই, উচিত কথা বললেই তাঁকে নিশানা করা হয়।
আমরা আসলে সেই বাঙালি, যারা সামনে আসার মুরোদ নেই বলে ‘পেছনে’ লাগি। ‘ঘুঘু দেখানো’ ও ‘বাঁশ দেওয়া’ যাদের প্রিয় শখ! সত্যিই ‘বাঙালী মানুষ যদি, প্রেত কারে কয়!’
লেখক: চিররঞ্জন সরকার
চিররঞ্জন সরকার

প্রথমেই একটি পুরোনো গল্প দিয়ে শুরু করা যাক।
বহু বছর আগের কথা। একবার এক বড়লোক বাবা ছেলেকে নিয়ে ভ্রমণে বের হয়েছেন। একটা সরু রাস্তায় বাবা ঘোড়ার পিঠে আর ছেলে ঘোড়ার দড়ি ধরে হেঁটে যাচ্ছেন। এই দৃশ্য দেখে লোকজন বলাবলি করতে লাগল, কেমন পাষাণ বাবা! নাবালক ছেলেকে হাঁটিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন আর নিজে শাহেনশাহের মতো ঘোড়ার পিঠে আরাম করে যাচ্ছেন।
এ কথা শুনে বাবা ছেলেকে ঘোড়ার পিঠে বসিয়ে দড়ি ধরে হাঁটতে লাগলেন। তখন লোকেরা বলাবলি শুরু করল, কেমন বেয়াদব ছেলেরে বাবা! বুড়ো বাপটা হেঁটে যাচ্ছেন আর জোয়ান ছেলে নবাবের মতো ঘোড়ার পিঠে বসে আছে।
লোকেদের কথা শুনে বাপ-ছেলে একত্রে ঘোড়ার পিঠে উঠে বসলেন। তখন লোকেরা বলতে লাগল, মানুষ এত নিষ্ঠুর হয় কী করে! একটি অবোধ প্রাণীর পিঠে দুজন উঠে বসেছে! আরেকটু হলে তো বেচারা ঘোড়াটা অক্কা পাবে।
তখন রেগে গিয়ে বাপ-ছেলে দুজনই ঘোড়ার দড়ি ধরে হাঁটতে লাগলেন। তখন লোকে বলাবলি করতে লাগল, মানুষ এত বোকা হয় কী করে! সঙ্গে ঘোড়া থাকতে কেউ হেঁটে যায় নাকি? এমন আহাম্মকের সংখ্যা বাড়লে দুনিয়াটাই অচল হয়ে যাবে।
মানুষের স্বভাবই আসলে খুঁত ধরা, সমালোচনা করা। আপনি যে কাজই করুন, যত সততা, নিষ্ঠা আর আন্তরিকতা দিয়ে করুন, কিছু মানুষ ভুল ধরবেই। সমালোচনা করবেই। তবে বাঙালি হলে সেই সমালোচনা, হিংসা, ঈর্ষা হয়ে আপনার সর্বনাশ কামনার মধ্য দিয়ে শেষ হবে।
বাঙালির স্বভাব বড়ই বিচিত্র। ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’তে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালির স্বভাব সম্পর্কে লিখেছেন, ‘আমাদের বাঙালির মধ্যে দুইটা দিক আছে। একটা হলো “আমরা মুসলমান, আরেকটা হলো, আমরা বাঙালি।” পরশ্রীকাতরতা এবং বিশ্বাসঘাতকতা আমাদের রক্তের মধ্যে রয়েছে। বোধ হয় দুনিয়ার কোনো ভাষায়ই এই কথাটা পাওয়া যাবে না, “পরশ্রীকাতরতা”। পরের শ্রী দেখে যে কাতর হয় তাকে “পরশ্রীকাতর” বলে। ঈর্ষা, দ্বেষ সকল ভাষায়ই পাবেন, সকল জাতির মধ্যেই কিছু কিছু আছে, কিন্তু বাঙালিদের মধ্যে আছে পরশ্রীকাতরতা। ভাইয়ের উন্নতি দেখলে ভাই খুশি হয় না। এই জন্যই বাঙালি জাতির সকল রকম গুণ থাকা সত্ত্বেও জীবনভর অন্যের অত্যাচার সহ্য করতে হয়েছে। সুজলা, সুফলা বাংলাদেশ সম্পদে ভর্তি। এমন উর্বর জমি দুনিয়ার খুব অল্প দেশেই আছে। তবুও এরা গরিব। কারণ যুগ যুগ ধরে এরা শোষিত হয়েছে নিজের দোষে। নিজকে এরা চেনে না, আর যত দিন চিনবে না এবং বুঝবে না, তত দিন এদের মুক্তি আসবে না। অনেক সময় দেখা গেছে, একজন অশিক্ষিত লোক লম্বা কাপড়, সুন্দর চেহারা, ভালো দাড়ি, সামান্য আরবি-ফারসি বলতে পারে, বাংলাদেশে এসে পীর হয়ে গেছে। বাঙালি হাজার হাজার টাকা তাকে দিয়েছে একটু দোয়া পাওয়ার লোভে। ভালো করে খবর নিয়ে দেখলে দেখা যাবে এ লোকটা কলকাতার কোন ফলের দোকানের কর্মচারী অথবা ডাকাতি বা খুনের মামলার আসামি। অন্ধ কুসংস্কার ও অলৌকিক বিশ্বাসও বাঙালির দুঃখের আর একটা কারণ।’
শুধু বঙ্গবন্ধুই নন, বাংলা সাহিত্যে স্বভাবকবি নামে পরিচিত গোবিন্দ চন্দ্র দাস এক কবিতায় বাঙালির ‘স্বভাব’ নিয়ে একটি বিখ্যাত কবিতা লিখেছিলেন। কবিতাটির একটি অংশ হচ্ছে:
‘‘যত মুসলমান হিন্দু,
পতনের মহাসিন্ধু,
নাহিধর্ম এক বিন্দু অতি নীচাশয়!
বৃথা ও তিলক ফোটা,
পাঁচ-ওক্ত মাথা কোটা,
ধূর্ত্তমি ভণ্ডামি ওটা নিশ্চয় নিশ্চয়!
একমেবাদ্বিতীয়ং,
সেও থিয়েটারি সং,
কলেজি নলেজি ঢং আর কিছু নয়।
শত ভাল কীট কৃমি,
এরা নরকের তিমি,
ইহাদের আদি অন্ত অনন্ত নিরয়!
অধম পিশাচগুলি,
গর্দ্দভের পদধূলি,
মাথায় মাখিয়া ছি ছি বড়লোক হয়!
বাঙালী মানুষ যদি, প্রেত কারে কয়?’’
(বাঙালী)
পদস্থ মানুষকে অপদস্থ করায় বাঙালির জুড়ি নেই। টেনে নামানোর খেলায় সে ওপরে উঠেছে অনেক। যুগ যুগ ধরেই তার এক হাতে কাঠি, অন্য হাতে চুনকালির ভাঁড়। বাঙালির হতাশা আছে, নিরাপত্তাহীনতা-অনিশ্চয়তা আছে, কিন্তু সেসব ছাপিয়ে আছে অপরকে হেয় করার মজ্জাগত স্বভাব। বাঙালি কেউ কারও ভালো দেখতে পারে না। সারাক্ষণ চলে যে এগিয়ে গেছে তাকে পেছনে টেনে ধরার বিদ্যার চর্চা। একই সঙ্গে চলে ঠেলা, ধাক্কা, গুঁতো, ল্যাং। যে একটু ওপরে উঠে গিয়েছে, অথবা তাকে ছাপিয়ে ওপরে উঠতে পারে, তার ব্যাপারে বাঙালি অতিশয় সংবেদনশীল। চিন্তাশীলও। এক প্ল্যাটফর্মে থেকেও ওই ব্যাটা ওপরে উঠে গেল কেমনে? এ কি কপাল-জোর না ব্যাকডোর! আমি অধম মানছি। কিন্তু ও ব্যাটা উত্তম সাজবে কেন? অতএব, টেনে নামাও। পেছনে লাগো। হ্যারাস করো। অপমান করো। বদনাম করো। কলঙ্ক রটাও। পারলে বাসার সামনে নর্দমার ময়লা ঢেলে এসো।
রবীন্দ্রনাথকেও বাঙালি ছেড়ে কথা বলেনি। ‘পায়রা কবি’ অভিধা জুড়েছে তাঁর সঙ্গে—
‘‘উড়িস নে রে পায়রা কবি
খোপের ভিতর থাক ঢাকা।
তোর বকবকম আর ফোঁসফোঁসানি
তাও কবিত্বের ভাব মাখা!’’
(কালীপ্রসন্ন কাব্যবিশারদ, রাহু)
নজরুলকেও বাঙালি কখনো কাফের বানিয়েছে, কখনো প্যারোডি বানিয়ে তীব্র অপমান করেছে। নজরুলের বিখ্যাত কবিতা ‘বিদ্রোহী’ প্রকাশের পর সেই সময়ের অন্য কবিরা যারপরনাই ঈর্ষাকাতর হয়ে ওঠে। নজরুলের ‘বল বীর-/বল উন্নত মম শির,/ শির নেহারি আমারি নত-শির ওই শিখর হিমাদ্রির!/বল বীর-/বল মহাবিশ্বের মহাকাশ ফাড়ি/ চন্দ্র সূর্য গ্রহ তারা ছাড়ি/ ভূলোক দ্যুলোক গোলক ভেদিয়া/ খোদার আসন আরশ ছেদিয়া,/ উঠিয়াছি চির-বিস্ময় আমি বিশ্ব-বিধাত্রীর!/ মম ললাটে রুদ্র ভগবান জ্বলে রাজ-রাজটীকা দীপ্ত জয়শ্রীর!/বল বীর-/আমি চির উন্নত শির...’। কবিতার বিপরীতে ‘ভবকুমার প্রধান’ নামে ব্যঙ্গ করে লেখা হয় ‘অসমছন্দ’ কবিতাটি—
‘‘আমি ব্যাঙ
লম্বা আমার ঠ্যাং
ভৈরব রভসে বর্ষা আসিলে ডাকি যে গ্যাঙোর গ্যাং।
আমি ব্যাঙ
আমি পথ হতে পথে দিয়ে চলি লাফ;
শ্রাবণ নিশায় পরশে আমার সাহসিকা
অভিসারিকা
ডেকে ওঠে, বাপ বাপ।’’
বাঙালি নেতা মানে না। মনীষী-মহাপুরুষ কাউকেই ছাড় দেয় না। বিবেকানন্দ, রামমোহন, ঈশ্বরচন্দ্র, বেগম রোকেয়া সবার নামেই বাঙালি কলঙ্ক দিয়েছে। শেরেবাংলা-সোহরাওয়ার্দী-ভাসানী সবার বিরুদ্ধেই নানা কুৎসা ও অপপ্রচার চালিয়েছে। এমনকি সুযোগ দেওয়া হলে বঙ্গবন্ধুকে নিয়েও বাঙালি প্রতিদিন পাঁচ শ পৃষ্ঠার গিবত রচনা করবে।
এখানে ‘সর্বজনমান্য’ বলে কেউ নেই। থাকার কারণও নেই। সবাইকে একটা ট্যাগ দিয়ে দেওয়া হয়। এ নতজানু, ও মেরুদণ্ডহীন, সে সুবিধাবাদী, ওরা দলদাস। এখানে কেউ সাচ্চা নয়। সব ঝুটা, সব নষ্ট। হলেও নষ্ট। না হলেও। হিংসা, ঈর্ষা সারাক্ষণ শিকারি কুকুরের মতো একে-ওকে ধাওয়া করছে।
কেউ নিজের মতো, স্বাধীন মতো চলতে পারবে না, চলতে দেওয়া হবে না। স্বাধীন জীবনযাপন করতে গিয়ে বাঙালির হাতে ‘জিনা-হারাম’ হওয়ার আরেক উদাহরণ সৈয়দ মুজতবা আলী। ষাটের দশকের শুরুর দিকে মুজতবা আলী দ্বিতীয় দফায় গেছেন শান্তিনিকেতনে, তখন তিনি খ্যাতির শীর্ষে। স্বভাবতই বেরিয়ে পড়ল ঈর্ষার ঝুলি। ঠিকমতো ক্লাসে না যাওয়া, গবেষণার কাজ না করা, অনিয়মিত জীবনযাপন, মদ্যপান এসবের অভিযোগ উঠতে লাগল। একেবারে কোণঠাসা করে দেওয়া হলো তাঁকে। মুজতবা আলী এ সময় কাউকে চিঠি লিখলে, চিঠির মাথায় লিখতেন: ‘শ্মশান, শান্তিনিকেতন’! অন্নদাশঙ্কর রায় মুজতবা আলীকে উদ্ধৃত করেছেন: ‘যত দিন আমার চাকরি ছিল না সকলে আমার বন্ধু ছিল, এখন আমি সকলের ঈর্ষার পাত্র।’ তিনি পাকিস্তানের গুপ্তচর এমন কথাও রটে। শেষে গোয়েন্দা পুলিশের জেরার মুখোমুখিও হতে হয় তাঁকে।
এখনো বাঙালির তির কখনো তসলিমা নাসরিন, কখনো মুহম্মদ জাফর ইকবাল, মুনতাসীর মামুন, শাহরিয়ার কবিরকে বিদ্ধ করে। একটু কেউ প্রতিবাদী হলেই, উচিত কথা বললেই তাঁকে নিশানা করা হয়।
আমরা আসলে সেই বাঙালি, যারা সামনে আসার মুরোদ নেই বলে ‘পেছনে’ লাগি। ‘ঘুঘু দেখানো’ ও ‘বাঁশ দেওয়া’ যাদের প্রিয় শখ! সত্যিই ‘বাঙালী মানুষ যদি, প্রেত কারে কয়!’
লেখক: চিররঞ্জন সরকার

প্রথমেই একটি পুরোনো গল্প দিয়ে শুরু করা যাক।
বহু বছর আগের কথা। একবার এক বড়লোক বাবা ছেলেকে নিয়ে ভ্রমণে বের হয়েছেন। একটা সরু রাস্তায় বাবা ঘোড়ার পিঠে আর ছেলে ঘোড়ার দড়ি ধরে হেঁটে যাচ্ছেন। এই দৃশ্য দেখে লোকজন বলাবলি করতে লাগল, কেমন পাষাণ বাবা! নাবালক ছেলেকে হাঁটিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন আর নিজে শাহেনশাহের মতো ঘোড়ার পিঠে আরাম করে যাচ্ছেন।
এ কথা শুনে বাবা ছেলেকে ঘোড়ার পিঠে বসিয়ে দড়ি ধরে হাঁটতে লাগলেন। তখন লোকেরা বলাবলি শুরু করল, কেমন বেয়াদব ছেলেরে বাবা! বুড়ো বাপটা হেঁটে যাচ্ছেন আর জোয়ান ছেলে নবাবের মতো ঘোড়ার পিঠে বসে আছে।
লোকেদের কথা শুনে বাপ-ছেলে একত্রে ঘোড়ার পিঠে উঠে বসলেন। তখন লোকেরা বলতে লাগল, মানুষ এত নিষ্ঠুর হয় কী করে! একটি অবোধ প্রাণীর পিঠে দুজন উঠে বসেছে! আরেকটু হলে তো বেচারা ঘোড়াটা অক্কা পাবে।
তখন রেগে গিয়ে বাপ-ছেলে দুজনই ঘোড়ার দড়ি ধরে হাঁটতে লাগলেন। তখন লোকে বলাবলি করতে লাগল, মানুষ এত বোকা হয় কী করে! সঙ্গে ঘোড়া থাকতে কেউ হেঁটে যায় নাকি? এমন আহাম্মকের সংখ্যা বাড়লে দুনিয়াটাই অচল হয়ে যাবে।
মানুষের স্বভাবই আসলে খুঁত ধরা, সমালোচনা করা। আপনি যে কাজই করুন, যত সততা, নিষ্ঠা আর আন্তরিকতা দিয়ে করুন, কিছু মানুষ ভুল ধরবেই। সমালোচনা করবেই। তবে বাঙালি হলে সেই সমালোচনা, হিংসা, ঈর্ষা হয়ে আপনার সর্বনাশ কামনার মধ্য দিয়ে শেষ হবে।
বাঙালির স্বভাব বড়ই বিচিত্র। ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’তে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালির স্বভাব সম্পর্কে লিখেছেন, ‘আমাদের বাঙালির মধ্যে দুইটা দিক আছে। একটা হলো “আমরা মুসলমান, আরেকটা হলো, আমরা বাঙালি।” পরশ্রীকাতরতা এবং বিশ্বাসঘাতকতা আমাদের রক্তের মধ্যে রয়েছে। বোধ হয় দুনিয়ার কোনো ভাষায়ই এই কথাটা পাওয়া যাবে না, “পরশ্রীকাতরতা”। পরের শ্রী দেখে যে কাতর হয় তাকে “পরশ্রীকাতর” বলে। ঈর্ষা, দ্বেষ সকল ভাষায়ই পাবেন, সকল জাতির মধ্যেই কিছু কিছু আছে, কিন্তু বাঙালিদের মধ্যে আছে পরশ্রীকাতরতা। ভাইয়ের উন্নতি দেখলে ভাই খুশি হয় না। এই জন্যই বাঙালি জাতির সকল রকম গুণ থাকা সত্ত্বেও জীবনভর অন্যের অত্যাচার সহ্য করতে হয়েছে। সুজলা, সুফলা বাংলাদেশ সম্পদে ভর্তি। এমন উর্বর জমি দুনিয়ার খুব অল্প দেশেই আছে। তবুও এরা গরিব। কারণ যুগ যুগ ধরে এরা শোষিত হয়েছে নিজের দোষে। নিজকে এরা চেনে না, আর যত দিন চিনবে না এবং বুঝবে না, তত দিন এদের মুক্তি আসবে না। অনেক সময় দেখা গেছে, একজন অশিক্ষিত লোক লম্বা কাপড়, সুন্দর চেহারা, ভালো দাড়ি, সামান্য আরবি-ফারসি বলতে পারে, বাংলাদেশে এসে পীর হয়ে গেছে। বাঙালি হাজার হাজার টাকা তাকে দিয়েছে একটু দোয়া পাওয়ার লোভে। ভালো করে খবর নিয়ে দেখলে দেখা যাবে এ লোকটা কলকাতার কোন ফলের দোকানের কর্মচারী অথবা ডাকাতি বা খুনের মামলার আসামি। অন্ধ কুসংস্কার ও অলৌকিক বিশ্বাসও বাঙালির দুঃখের আর একটা কারণ।’
শুধু বঙ্গবন্ধুই নন, বাংলা সাহিত্যে স্বভাবকবি নামে পরিচিত গোবিন্দ চন্দ্র দাস এক কবিতায় বাঙালির ‘স্বভাব’ নিয়ে একটি বিখ্যাত কবিতা লিখেছিলেন। কবিতাটির একটি অংশ হচ্ছে:
‘‘যত মুসলমান হিন্দু,
পতনের মহাসিন্ধু,
নাহিধর্ম এক বিন্দু অতি নীচাশয়!
বৃথা ও তিলক ফোটা,
পাঁচ-ওক্ত মাথা কোটা,
ধূর্ত্তমি ভণ্ডামি ওটা নিশ্চয় নিশ্চয়!
একমেবাদ্বিতীয়ং,
সেও থিয়েটারি সং,
কলেজি নলেজি ঢং আর কিছু নয়।
শত ভাল কীট কৃমি,
এরা নরকের তিমি,
ইহাদের আদি অন্ত অনন্ত নিরয়!
অধম পিশাচগুলি,
গর্দ্দভের পদধূলি,
মাথায় মাখিয়া ছি ছি বড়লোক হয়!
বাঙালী মানুষ যদি, প্রেত কারে কয়?’’
(বাঙালী)
পদস্থ মানুষকে অপদস্থ করায় বাঙালির জুড়ি নেই। টেনে নামানোর খেলায় সে ওপরে উঠেছে অনেক। যুগ যুগ ধরেই তার এক হাতে কাঠি, অন্য হাতে চুনকালির ভাঁড়। বাঙালির হতাশা আছে, নিরাপত্তাহীনতা-অনিশ্চয়তা আছে, কিন্তু সেসব ছাপিয়ে আছে অপরকে হেয় করার মজ্জাগত স্বভাব। বাঙালি কেউ কারও ভালো দেখতে পারে না। সারাক্ষণ চলে যে এগিয়ে গেছে তাকে পেছনে টেনে ধরার বিদ্যার চর্চা। একই সঙ্গে চলে ঠেলা, ধাক্কা, গুঁতো, ল্যাং। যে একটু ওপরে উঠে গিয়েছে, অথবা তাকে ছাপিয়ে ওপরে উঠতে পারে, তার ব্যাপারে বাঙালি অতিশয় সংবেদনশীল। চিন্তাশীলও। এক প্ল্যাটফর্মে থেকেও ওই ব্যাটা ওপরে উঠে গেল কেমনে? এ কি কপাল-জোর না ব্যাকডোর! আমি অধম মানছি। কিন্তু ও ব্যাটা উত্তম সাজবে কেন? অতএব, টেনে নামাও। পেছনে লাগো। হ্যারাস করো। অপমান করো। বদনাম করো। কলঙ্ক রটাও। পারলে বাসার সামনে নর্দমার ময়লা ঢেলে এসো।
রবীন্দ্রনাথকেও বাঙালি ছেড়ে কথা বলেনি। ‘পায়রা কবি’ অভিধা জুড়েছে তাঁর সঙ্গে—
‘‘উড়িস নে রে পায়রা কবি
খোপের ভিতর থাক ঢাকা।
তোর বকবকম আর ফোঁসফোঁসানি
তাও কবিত্বের ভাব মাখা!’’
(কালীপ্রসন্ন কাব্যবিশারদ, রাহু)
নজরুলকেও বাঙালি কখনো কাফের বানিয়েছে, কখনো প্যারোডি বানিয়ে তীব্র অপমান করেছে। নজরুলের বিখ্যাত কবিতা ‘বিদ্রোহী’ প্রকাশের পর সেই সময়ের অন্য কবিরা যারপরনাই ঈর্ষাকাতর হয়ে ওঠে। নজরুলের ‘বল বীর-/বল উন্নত মম শির,/ শির নেহারি আমারি নত-শির ওই শিখর হিমাদ্রির!/বল বীর-/বল মহাবিশ্বের মহাকাশ ফাড়ি/ চন্দ্র সূর্য গ্রহ তারা ছাড়ি/ ভূলোক দ্যুলোক গোলক ভেদিয়া/ খোদার আসন আরশ ছেদিয়া,/ উঠিয়াছি চির-বিস্ময় আমি বিশ্ব-বিধাত্রীর!/ মম ললাটে রুদ্র ভগবান জ্বলে রাজ-রাজটীকা দীপ্ত জয়শ্রীর!/বল বীর-/আমি চির উন্নত শির...’। কবিতার বিপরীতে ‘ভবকুমার প্রধান’ নামে ব্যঙ্গ করে লেখা হয় ‘অসমছন্দ’ কবিতাটি—
‘‘আমি ব্যাঙ
লম্বা আমার ঠ্যাং
ভৈরব রভসে বর্ষা আসিলে ডাকি যে গ্যাঙোর গ্যাং।
আমি ব্যাঙ
আমি পথ হতে পথে দিয়ে চলি লাফ;
শ্রাবণ নিশায় পরশে আমার সাহসিকা
অভিসারিকা
ডেকে ওঠে, বাপ বাপ।’’
বাঙালি নেতা মানে না। মনীষী-মহাপুরুষ কাউকেই ছাড় দেয় না। বিবেকানন্দ, রামমোহন, ঈশ্বরচন্দ্র, বেগম রোকেয়া সবার নামেই বাঙালি কলঙ্ক দিয়েছে। শেরেবাংলা-সোহরাওয়ার্দী-ভাসানী সবার বিরুদ্ধেই নানা কুৎসা ও অপপ্রচার চালিয়েছে। এমনকি সুযোগ দেওয়া হলে বঙ্গবন্ধুকে নিয়েও বাঙালি প্রতিদিন পাঁচ শ পৃষ্ঠার গিবত রচনা করবে।
এখানে ‘সর্বজনমান্য’ বলে কেউ নেই। থাকার কারণও নেই। সবাইকে একটা ট্যাগ দিয়ে দেওয়া হয়। এ নতজানু, ও মেরুদণ্ডহীন, সে সুবিধাবাদী, ওরা দলদাস। এখানে কেউ সাচ্চা নয়। সব ঝুটা, সব নষ্ট। হলেও নষ্ট। না হলেও। হিংসা, ঈর্ষা সারাক্ষণ শিকারি কুকুরের মতো একে-ওকে ধাওয়া করছে।
কেউ নিজের মতো, স্বাধীন মতো চলতে পারবে না, চলতে দেওয়া হবে না। স্বাধীন জীবনযাপন করতে গিয়ে বাঙালির হাতে ‘জিনা-হারাম’ হওয়ার আরেক উদাহরণ সৈয়দ মুজতবা আলী। ষাটের দশকের শুরুর দিকে মুজতবা আলী দ্বিতীয় দফায় গেছেন শান্তিনিকেতনে, তখন তিনি খ্যাতির শীর্ষে। স্বভাবতই বেরিয়ে পড়ল ঈর্ষার ঝুলি। ঠিকমতো ক্লাসে না যাওয়া, গবেষণার কাজ না করা, অনিয়মিত জীবনযাপন, মদ্যপান এসবের অভিযোগ উঠতে লাগল। একেবারে কোণঠাসা করে দেওয়া হলো তাঁকে। মুজতবা আলী এ সময় কাউকে চিঠি লিখলে, চিঠির মাথায় লিখতেন: ‘শ্মশান, শান্তিনিকেতন’! অন্নদাশঙ্কর রায় মুজতবা আলীকে উদ্ধৃত করেছেন: ‘যত দিন আমার চাকরি ছিল না সকলে আমার বন্ধু ছিল, এখন আমি সকলের ঈর্ষার পাত্র।’ তিনি পাকিস্তানের গুপ্তচর এমন কথাও রটে। শেষে গোয়েন্দা পুলিশের জেরার মুখোমুখিও হতে হয় তাঁকে।
এখনো বাঙালির তির কখনো তসলিমা নাসরিন, কখনো মুহম্মদ জাফর ইকবাল, মুনতাসীর মামুন, শাহরিয়ার কবিরকে বিদ্ধ করে। একটু কেউ প্রতিবাদী হলেই, উচিত কথা বললেই তাঁকে নিশানা করা হয়।
আমরা আসলে সেই বাঙালি, যারা সামনে আসার মুরোদ নেই বলে ‘পেছনে’ লাগি। ‘ঘুঘু দেখানো’ ও ‘বাঁশ দেওয়া’ যাদের প্রিয় শখ! সত্যিই ‘বাঙালী মানুষ যদি, প্রেত কারে কয়!’
লেখক: চিররঞ্জন সরকার

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

প্রথমেই একটি পুরোনো গল্প দিয়ে শুরু করা যাক। বহু বছর আগের কথা। একবার এক বড়লোক বাবা ছেলেকে নিয়ে ভ্রমণে বের হয়েছেন। একটা সরু রাস্তায় বাবা ঘোড়ার...
২৬ এপ্রিল ২০২২
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

প্রথমেই একটি পুরোনো গল্প দিয়ে শুরু করা যাক। বহু বছর আগের কথা। একবার এক বড়লোক বাবা ছেলেকে নিয়ে ভ্রমণে বের হয়েছেন। একটা সরু রাস্তায় বাবা ঘোড়ার...
২৬ এপ্রিল ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

প্রথমেই একটি পুরোনো গল্প দিয়ে শুরু করা যাক। বহু বছর আগের কথা। একবার এক বড়লোক বাবা ছেলেকে নিয়ে ভ্রমণে বের হয়েছেন। একটা সরু রাস্তায় বাবা ঘোড়ার...
২৬ এপ্রিল ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

প্রথমেই একটি পুরোনো গল্প দিয়ে শুরু করা যাক। বহু বছর আগের কথা। একবার এক বড়লোক বাবা ছেলেকে নিয়ে ভ্রমণে বের হয়েছেন। একটা সরু রাস্তায় বাবা ঘোড়ার...
২৬ এপ্রিল ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫