ফজলুল কবির

স্কুলে যাওয়া-আসার পথে এক সটান রেললাইন। তার ওপর দিয়ে পদচারী-সেতু; শুধু এপার থেকে ওপারে যাওয়া। পার হলেই মাঝারি গড়নের একটি রাস্তা এঁকেবেঁকে চলে গেছে কলোনির ভেতর দিয়ে সোজা শাহজাহানপুর মোড়ের দিকে। সেখানে গিয়ে সোজা বড় চোখ করে তাকালে যে সাইনবোর্ড—সেটিই মতিঝিল সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয়। শুনতে যতই সহজ রাস্তা মনে হোক না কেন, সটান স্কুলে চলে যাওয়াটা এত সহজ ছিল না। কারণ, ওই পদচারী-সেতু, আর তার নিচে নিরীহ মুখ করে বসে থাকা পত্রিকার স্টল। সেখানে থাকা ছোট তাক থেকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে—সেবা প্রকাশনীর সেই মনোহর প্রজাপতি। আর দড়িতে তখন রেখায় ও লেখার মোহন আকর্ষণ হয়ে ঝুলছে—নন্টে ফন্টে।
চিরচেনা সেবা ও কমিকসের ছিল এক অপ্রতিরোধ্য আকর্ষণীয় ক্ষমতা। কত বিচিত্র বই যে সেবা হাতে তুলে দিয়েছে! বিশ্বসাহিত্যের কতশত অনুবাদ যে হাতে এসেছে শুধু সেবার কল্যাণে। আর ‘কুয়াশা’, ‘মাসুদ রানা’, ‘তিন গোয়েন্দা’ তো আছেই। এসবের প্রতি আকর্ষণ যখন কমে এসেছে, তখনো সামনে হাজির ‘কিশোর ক্ল্যাসিক’ সিরিজ, যেখানে ছিল বিশ্বখ্যাত সব লেখকের সঙ্গে পরিচয়ের হাতছানি। কত কত নাম বলা যাবে? এরিক মারিয়া রেমার্ক, আলেক্সান্ডার দ্যুমা, আলেক্সান্ডার বেলায়েভ, স্যার ওয়াল্টার স্কট, জুল ভার্ন, রবার্ট লুই স্টিভেনসন বা জেন অস্টিন—কতজনের নাম বলা যাবে? সেদিকে না গিয়ে শুধু একটি নামই বলা যায়—কাজী আনোয়ার হোসেন।
আর কমিকস? সেখানে ফ্যান্টম, হি-ম্যান, চাচা চৌধুরী (আরেক কিংবদন্তি—প্রাণ), টিনটিন, টারজান ইত্যাদির ভিড়ে দেশের চেনা গল্প নিয়ে ছিল ‘বাঁটুল দ্য গ্রেট’, হাঁদা-ভোঁদা’, আর ‘নন্টে ফন্টে’। নন্টের সঙ্গে ফন্টে মিলে কেল্টুদাকে অবিরাম হেনস্তার যে একের পর এক দৃশ্য এবং বর্ণনা, তা নিয়ে যেত এক নির্মল আনন্দের জগতে। সেখানে শৈশবই সত্য একমাত্র। সেখানে হাসি আছে, আছে কল্পনা। আর এই কল্পনার জগতে যিনি নিয়ে যেতেন, যিনি এর রচয়িতা, তিনি আর কেউ নন—নারায়ণ দেবনাথ।
হ্যাঁ, আমাদের প্রজন্মের জন্য এমন দু-একটি দরজাই ছিল, যা দিয়ে অনায়াসে বিশ্বসাহিত্যের দরবারে হাজির হওয়া যেত। শুনতে যেমনই লাগুক, এ তো সত্য যে, রবার্ট লুই স্টিভেনসন নন, আমরা ট্রেজার আইল্যান্ডে প্রবেশাধিকার পেয়েছিলাম সবার প্রিয় কিন্তু অনেকেরই অদেখা জাদুকর কাজী আনোয়ার হোসেনের কল্যাণে। এমন নয় যে, তিনিই এই সব বইয়ের রচয়িতা বা অনুবাদক। কিন্তু আমাদের কাছে তিনি এমন একজন—যিনি গল্পে শোনা সেই গল্প-বুড়ো, যিনি অনায়াসে একের পর এক রাজ্যের গল্প বলে যেতে পারেন।
আমাদের অভিভাবকেরা এসব ঠিক পছন্দ করতেন না, তবে প্রচ্ছন্ন আশকারা পেতাম ঠিকই। কেউ না কেউ এই আশকারা দিতেন। আর সেই আশকারার কারণে অনায়াসে পড়ার টেবিলে পাঠ্যবইয়ের তলায় লুকিয়ে ঢুকে পড়তেন কাজী আনোয়ার হোসেন ও নারায়ণ দেবনাথ। কী দারুণ শক্তি ছিল তাঁদের? অনায়াসে তাঁরা আমাদের নেশায় (সু অর্থে পড়ুন) বুঁদ করে ফেলতেন। খুলে দিতেন ‘অঢেল আলোকধাম’।
আমরা সেই অঢেল আলোর জগতে একটু একটু করে হেঁটে যেতাম। কখনো নন্টে ফন্টের সঙ্গে রাজ্যের দুষ্টুমিতে মেতে উঠতাম, কখনো সেবার প্রজাপতিতে ভর করে ছুটতাম দিগ্বিজয়ে। সেই কমিকসে যা আঁকা থাকত, তার চেয়ে ঢের বড় কল্পনার জগতে আমরা ঢুকে পড়তাম, যা আঁকা নেই তার জোরে। সেবার বইয়ে যে বর্ণনা লেখা থাকত, তা খুলে দিত কত অজস্র অবর্ণনীয় কল্পজগৎকে, সে বলে শেষ করার নয়। তাঁরাই ছিলেন সেই গুটিকয় মানুষের একজন, যারা আমাদের চোখে মেখে দিয়েছিলেন মোহন অঞ্জন, যা সব সীমাকে মুছে দিতে পারে অনায়াসে।
আমাদের কালের ‘আউট বইয়ের’ জোগানদাতা এই কাজীদা (কোনো দিন দেখা বা কথা না হলেও অনেকটা শুনে শুনেই কেন যেন এভাবেই তাঁকে সম্বোধনের ইচ্ছা জাগে) আমাদের নিয়ে গেছেন সমুদ্রমন্থনে। বইয়ের ওপর নাম দেখেছি অন্য কারও, অনুবাদকের নাম দেখেছি আরেকজনের। কিন্তু ওই যে বিস্ময়জাগানিয়া প্রজাপতি, হলদেটে যার রং, যে একতাড়া নিউজপ্রিন্টের জাদুর পাতা নিয়ে হাজির হয়, সে-ই কেবল সত্য ছিল যেন। আমাদের কাছে অন্য কোনো কিছু নয়, ওই প্রজাপতিই ছিল গল্পের খনি।
‘ওল্ড ম্যান অ্যান্ড দ্য সি’-এর সেই মারলিন মাছ, আর সেই বৃদ্ধ জেলের গল্পের সঙ্গে সমুদ্রে আমরা ভেসেছি যতটা আর্নেস্ট হেমিংওয়ের সঙ্গে, ঠিক ততটাই কাজী আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে। কিংবা বলা যায় ‘বাউন্টিতে বিদ্রোহ’ কিংবা ‘হ্যাঞ্চ ব্যাক অব নটর ড্যাম’-এর কথা। বলা যায় জ্যাঁ ভলজার সেই আখ্যান ‘লা মিজারেবল’-এর কথা। এই সবই আমাদের সামনে হাজির করেছিল সেবা।
স্কুলজীবনটা রাঙিয়ে দেওয়ার জন্য সেই হলদে প্রজাপতির, সেই রেখায় আঁকা চরিত্রগুলোর যে কত বড় অবদান, তা বলবার নয়। পাড়ায় তখন স্টেশনারি দোকান মানেই সেবার বই আছে, আছে নারায়ণ দেবনাথের কমিকস। ফ্রেন্ডস নামের এক স্টেশনারি দোকান তো রীতিমতো বন্ধু হয়ে সামনে এল। তারা দু টাকায় বই ভাড়ার ব্যবসা শুরু করল। কমিকস ও বইয়ে বুঁদ হতে আর কী লাগে! এমনিতেও সেবার বইয়ের দাম ছিল খুব কম, আমাদের নাগালের মধ্যে। এর মধ্যে ছিল পুরোনো বইয়ের আখড়া। সুনীলের কবিতার পঙ্ক্তিতে যেমনটা আছে—গোপন সব ছোট ছোট নরকের কথা, ঠিক তেমন ছিল এগুলো।
কমলাপুর রেলস্টেশনে ছিল দুটি দোকান, ঠিক টিকিট কাউন্টারের পাশেই। ডাই করে সাজানো থাকত বই, যার আশি ভাগই সেবা প্রকাশনীর। আর দড়িতে ঝোলানো কমিকসে কার রাজত্ব, তা কি বলতে হবে মুখ ফুটে? স্কুলে হেঁটে যাওয়া-আসা করে টাকা জমিয়ে পছন্দের বই কিনতে ভিড় করতাম। আর অবধারিতভাবে মন খারাপ করেই বেরিয়ে আসতাম। কারণ, পছন্দের বই কেনায় যতটা আনন্দ হলো, তার চেয়ে ঢের বেশি মন খারাপ হলো আরও এমন অজস্র বই কিনতে না পারায়। আউট বইয়ের জন্য তো আর ঘর থেকে মাসে মাসে প্রণোদনা নেওয়া যায় না।
ছিল বাংলাবাজার, পুরানা পল্টন, যেখানে এর নিদান ছিল অনেকটাই। সেখানে সেবার অল্প দামের বই পুরোনো বলে আরও অল্প দামে কেনার সুযোগ ছিল। আর পাঁচ টাকা দিলে গুচ্ছের কমিকসের মালিকানা পাওয়া যেত। তখনো গুলিস্তান হল ওঠেনি। সেখানে হলের পেছন দিকে সিঁড়ির তলায় ছিলেন এক বিস্ময়কর মানুষ। তাঁর সঙ্গেও তো পরিচয়ের সূত্র সেবা তথা কাজীদার কল্যাণে। ভালো ভালো পুরোনো বই পাওয়া যায় বলে বাংলাবাজারে শুনেছিলাম বলেই না তাঁর খোঁজ করেছিলাম। আহা কত মধুর ছিলেন তিনি। বই বিক্রি করে ফেরার সময় বই উপহার দিতেন। আমাদের গোগ্রাসে গেলার সেই বয়সে তাঁর মতো অনেকেরই স্নেহ পেয়েছিলাম।
আমাদের শৈশব ও কৈশোরের সেই সময়ে একজন কাজী আনোয়ার হোসেন আমাদের পথ দেখিয়েছেন, একজন নারায়ণ দেবনাথ আমাদের আনন্দে ভাসিয়েছেন। নিজের অজ্ঞাতেই তাঁদের ছায়ার নিচ দিয়ে হেঁটে গেছি আমরা। সেই ছায়া ঠিক কত বড়, সে বয়সে বোঝা সম্ভব হয়নি। সেই রাঙিয়ে দেওয়া শৈশব ও কৈশোরের দিকে তাকালে মাঝেমধ্যেই মন কেমন করে। আজ আরও বেশি করে করছে। কেন করছে কাজীদা? কেন করছে প্রিয় নারায়ণ দেবনাথ?

স্কুলে যাওয়া-আসার পথে এক সটান রেললাইন। তার ওপর দিয়ে পদচারী-সেতু; শুধু এপার থেকে ওপারে যাওয়া। পার হলেই মাঝারি গড়নের একটি রাস্তা এঁকেবেঁকে চলে গেছে কলোনির ভেতর দিয়ে সোজা শাহজাহানপুর মোড়ের দিকে। সেখানে গিয়ে সোজা বড় চোখ করে তাকালে যে সাইনবোর্ড—সেটিই মতিঝিল সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয়। শুনতে যতই সহজ রাস্তা মনে হোক না কেন, সটান স্কুলে চলে যাওয়াটা এত সহজ ছিল না। কারণ, ওই পদচারী-সেতু, আর তার নিচে নিরীহ মুখ করে বসে থাকা পত্রিকার স্টল। সেখানে থাকা ছোট তাক থেকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে—সেবা প্রকাশনীর সেই মনোহর প্রজাপতি। আর দড়িতে তখন রেখায় ও লেখার মোহন আকর্ষণ হয়ে ঝুলছে—নন্টে ফন্টে।
চিরচেনা সেবা ও কমিকসের ছিল এক অপ্রতিরোধ্য আকর্ষণীয় ক্ষমতা। কত বিচিত্র বই যে সেবা হাতে তুলে দিয়েছে! বিশ্বসাহিত্যের কতশত অনুবাদ যে হাতে এসেছে শুধু সেবার কল্যাণে। আর ‘কুয়াশা’, ‘মাসুদ রানা’, ‘তিন গোয়েন্দা’ তো আছেই। এসবের প্রতি আকর্ষণ যখন কমে এসেছে, তখনো সামনে হাজির ‘কিশোর ক্ল্যাসিক’ সিরিজ, যেখানে ছিল বিশ্বখ্যাত সব লেখকের সঙ্গে পরিচয়ের হাতছানি। কত কত নাম বলা যাবে? এরিক মারিয়া রেমার্ক, আলেক্সান্ডার দ্যুমা, আলেক্সান্ডার বেলায়েভ, স্যার ওয়াল্টার স্কট, জুল ভার্ন, রবার্ট লুই স্টিভেনসন বা জেন অস্টিন—কতজনের নাম বলা যাবে? সেদিকে না গিয়ে শুধু একটি নামই বলা যায়—কাজী আনোয়ার হোসেন।
আর কমিকস? সেখানে ফ্যান্টম, হি-ম্যান, চাচা চৌধুরী (আরেক কিংবদন্তি—প্রাণ), টিনটিন, টারজান ইত্যাদির ভিড়ে দেশের চেনা গল্প নিয়ে ছিল ‘বাঁটুল দ্য গ্রেট’, হাঁদা-ভোঁদা’, আর ‘নন্টে ফন্টে’। নন্টের সঙ্গে ফন্টে মিলে কেল্টুদাকে অবিরাম হেনস্তার যে একের পর এক দৃশ্য এবং বর্ণনা, তা নিয়ে যেত এক নির্মল আনন্দের জগতে। সেখানে শৈশবই সত্য একমাত্র। সেখানে হাসি আছে, আছে কল্পনা। আর এই কল্পনার জগতে যিনি নিয়ে যেতেন, যিনি এর রচয়িতা, তিনি আর কেউ নন—নারায়ণ দেবনাথ।
হ্যাঁ, আমাদের প্রজন্মের জন্য এমন দু-একটি দরজাই ছিল, যা দিয়ে অনায়াসে বিশ্বসাহিত্যের দরবারে হাজির হওয়া যেত। শুনতে যেমনই লাগুক, এ তো সত্য যে, রবার্ট লুই স্টিভেনসন নন, আমরা ট্রেজার আইল্যান্ডে প্রবেশাধিকার পেয়েছিলাম সবার প্রিয় কিন্তু অনেকেরই অদেখা জাদুকর কাজী আনোয়ার হোসেনের কল্যাণে। এমন নয় যে, তিনিই এই সব বইয়ের রচয়িতা বা অনুবাদক। কিন্তু আমাদের কাছে তিনি এমন একজন—যিনি গল্পে শোনা সেই গল্প-বুড়ো, যিনি অনায়াসে একের পর এক রাজ্যের গল্প বলে যেতে পারেন।
আমাদের অভিভাবকেরা এসব ঠিক পছন্দ করতেন না, তবে প্রচ্ছন্ন আশকারা পেতাম ঠিকই। কেউ না কেউ এই আশকারা দিতেন। আর সেই আশকারার কারণে অনায়াসে পড়ার টেবিলে পাঠ্যবইয়ের তলায় লুকিয়ে ঢুকে পড়তেন কাজী আনোয়ার হোসেন ও নারায়ণ দেবনাথ। কী দারুণ শক্তি ছিল তাঁদের? অনায়াসে তাঁরা আমাদের নেশায় (সু অর্থে পড়ুন) বুঁদ করে ফেলতেন। খুলে দিতেন ‘অঢেল আলোকধাম’।
আমরা সেই অঢেল আলোর জগতে একটু একটু করে হেঁটে যেতাম। কখনো নন্টে ফন্টের সঙ্গে রাজ্যের দুষ্টুমিতে মেতে উঠতাম, কখনো সেবার প্রজাপতিতে ভর করে ছুটতাম দিগ্বিজয়ে। সেই কমিকসে যা আঁকা থাকত, তার চেয়ে ঢের বড় কল্পনার জগতে আমরা ঢুকে পড়তাম, যা আঁকা নেই তার জোরে। সেবার বইয়ে যে বর্ণনা লেখা থাকত, তা খুলে দিত কত অজস্র অবর্ণনীয় কল্পজগৎকে, সে বলে শেষ করার নয়। তাঁরাই ছিলেন সেই গুটিকয় মানুষের একজন, যারা আমাদের চোখে মেখে দিয়েছিলেন মোহন অঞ্জন, যা সব সীমাকে মুছে দিতে পারে অনায়াসে।
আমাদের কালের ‘আউট বইয়ের’ জোগানদাতা এই কাজীদা (কোনো দিন দেখা বা কথা না হলেও অনেকটা শুনে শুনেই কেন যেন এভাবেই তাঁকে সম্বোধনের ইচ্ছা জাগে) আমাদের নিয়ে গেছেন সমুদ্রমন্থনে। বইয়ের ওপর নাম দেখেছি অন্য কারও, অনুবাদকের নাম দেখেছি আরেকজনের। কিন্তু ওই যে বিস্ময়জাগানিয়া প্রজাপতি, হলদেটে যার রং, যে একতাড়া নিউজপ্রিন্টের জাদুর পাতা নিয়ে হাজির হয়, সে-ই কেবল সত্য ছিল যেন। আমাদের কাছে অন্য কোনো কিছু নয়, ওই প্রজাপতিই ছিল গল্পের খনি।
‘ওল্ড ম্যান অ্যান্ড দ্য সি’-এর সেই মারলিন মাছ, আর সেই বৃদ্ধ জেলের গল্পের সঙ্গে সমুদ্রে আমরা ভেসেছি যতটা আর্নেস্ট হেমিংওয়ের সঙ্গে, ঠিক ততটাই কাজী আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে। কিংবা বলা যায় ‘বাউন্টিতে বিদ্রোহ’ কিংবা ‘হ্যাঞ্চ ব্যাক অব নটর ড্যাম’-এর কথা। বলা যায় জ্যাঁ ভলজার সেই আখ্যান ‘লা মিজারেবল’-এর কথা। এই সবই আমাদের সামনে হাজির করেছিল সেবা।
স্কুলজীবনটা রাঙিয়ে দেওয়ার জন্য সেই হলদে প্রজাপতির, সেই রেখায় আঁকা চরিত্রগুলোর যে কত বড় অবদান, তা বলবার নয়। পাড়ায় তখন স্টেশনারি দোকান মানেই সেবার বই আছে, আছে নারায়ণ দেবনাথের কমিকস। ফ্রেন্ডস নামের এক স্টেশনারি দোকান তো রীতিমতো বন্ধু হয়ে সামনে এল। তারা দু টাকায় বই ভাড়ার ব্যবসা শুরু করল। কমিকস ও বইয়ে বুঁদ হতে আর কী লাগে! এমনিতেও সেবার বইয়ের দাম ছিল খুব কম, আমাদের নাগালের মধ্যে। এর মধ্যে ছিল পুরোনো বইয়ের আখড়া। সুনীলের কবিতার পঙ্ক্তিতে যেমনটা আছে—গোপন সব ছোট ছোট নরকের কথা, ঠিক তেমন ছিল এগুলো।
কমলাপুর রেলস্টেশনে ছিল দুটি দোকান, ঠিক টিকিট কাউন্টারের পাশেই। ডাই করে সাজানো থাকত বই, যার আশি ভাগই সেবা প্রকাশনীর। আর দড়িতে ঝোলানো কমিকসে কার রাজত্ব, তা কি বলতে হবে মুখ ফুটে? স্কুলে হেঁটে যাওয়া-আসা করে টাকা জমিয়ে পছন্দের বই কিনতে ভিড় করতাম। আর অবধারিতভাবে মন খারাপ করেই বেরিয়ে আসতাম। কারণ, পছন্দের বই কেনায় যতটা আনন্দ হলো, তার চেয়ে ঢের বেশি মন খারাপ হলো আরও এমন অজস্র বই কিনতে না পারায়। আউট বইয়ের জন্য তো আর ঘর থেকে মাসে মাসে প্রণোদনা নেওয়া যায় না।
ছিল বাংলাবাজার, পুরানা পল্টন, যেখানে এর নিদান ছিল অনেকটাই। সেখানে সেবার অল্প দামের বই পুরোনো বলে আরও অল্প দামে কেনার সুযোগ ছিল। আর পাঁচ টাকা দিলে গুচ্ছের কমিকসের মালিকানা পাওয়া যেত। তখনো গুলিস্তান হল ওঠেনি। সেখানে হলের পেছন দিকে সিঁড়ির তলায় ছিলেন এক বিস্ময়কর মানুষ। তাঁর সঙ্গেও তো পরিচয়ের সূত্র সেবা তথা কাজীদার কল্যাণে। ভালো ভালো পুরোনো বই পাওয়া যায় বলে বাংলাবাজারে শুনেছিলাম বলেই না তাঁর খোঁজ করেছিলাম। আহা কত মধুর ছিলেন তিনি। বই বিক্রি করে ফেরার সময় বই উপহার দিতেন। আমাদের গোগ্রাসে গেলার সেই বয়সে তাঁর মতো অনেকেরই স্নেহ পেয়েছিলাম।
আমাদের শৈশব ও কৈশোরের সেই সময়ে একজন কাজী আনোয়ার হোসেন আমাদের পথ দেখিয়েছেন, একজন নারায়ণ দেবনাথ আমাদের আনন্দে ভাসিয়েছেন। নিজের অজ্ঞাতেই তাঁদের ছায়ার নিচ দিয়ে হেঁটে গেছি আমরা। সেই ছায়া ঠিক কত বড়, সে বয়সে বোঝা সম্ভব হয়নি। সেই রাঙিয়ে দেওয়া শৈশব ও কৈশোরের দিকে তাকালে মাঝেমধ্যেই মন কেমন করে। আজ আরও বেশি করে করছে। কেন করছে কাজীদা? কেন করছে প্রিয় নারায়ণ দেবনাথ?
ফজলুল কবির

স্কুলে যাওয়া-আসার পথে এক সটান রেললাইন। তার ওপর দিয়ে পদচারী-সেতু; শুধু এপার থেকে ওপারে যাওয়া। পার হলেই মাঝারি গড়নের একটি রাস্তা এঁকেবেঁকে চলে গেছে কলোনির ভেতর দিয়ে সোজা শাহজাহানপুর মোড়ের দিকে। সেখানে গিয়ে সোজা বড় চোখ করে তাকালে যে সাইনবোর্ড—সেটিই মতিঝিল সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয়। শুনতে যতই সহজ রাস্তা মনে হোক না কেন, সটান স্কুলে চলে যাওয়াটা এত সহজ ছিল না। কারণ, ওই পদচারী-সেতু, আর তার নিচে নিরীহ মুখ করে বসে থাকা পত্রিকার স্টল। সেখানে থাকা ছোট তাক থেকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে—সেবা প্রকাশনীর সেই মনোহর প্রজাপতি। আর দড়িতে তখন রেখায় ও লেখার মোহন আকর্ষণ হয়ে ঝুলছে—নন্টে ফন্টে।
চিরচেনা সেবা ও কমিকসের ছিল এক অপ্রতিরোধ্য আকর্ষণীয় ক্ষমতা। কত বিচিত্র বই যে সেবা হাতে তুলে দিয়েছে! বিশ্বসাহিত্যের কতশত অনুবাদ যে হাতে এসেছে শুধু সেবার কল্যাণে। আর ‘কুয়াশা’, ‘মাসুদ রানা’, ‘তিন গোয়েন্দা’ তো আছেই। এসবের প্রতি আকর্ষণ যখন কমে এসেছে, তখনো সামনে হাজির ‘কিশোর ক্ল্যাসিক’ সিরিজ, যেখানে ছিল বিশ্বখ্যাত সব লেখকের সঙ্গে পরিচয়ের হাতছানি। কত কত নাম বলা যাবে? এরিক মারিয়া রেমার্ক, আলেক্সান্ডার দ্যুমা, আলেক্সান্ডার বেলায়েভ, স্যার ওয়াল্টার স্কট, জুল ভার্ন, রবার্ট লুই স্টিভেনসন বা জেন অস্টিন—কতজনের নাম বলা যাবে? সেদিকে না গিয়ে শুধু একটি নামই বলা যায়—কাজী আনোয়ার হোসেন।
আর কমিকস? সেখানে ফ্যান্টম, হি-ম্যান, চাচা চৌধুরী (আরেক কিংবদন্তি—প্রাণ), টিনটিন, টারজান ইত্যাদির ভিড়ে দেশের চেনা গল্প নিয়ে ছিল ‘বাঁটুল দ্য গ্রেট’, হাঁদা-ভোঁদা’, আর ‘নন্টে ফন্টে’। নন্টের সঙ্গে ফন্টে মিলে কেল্টুদাকে অবিরাম হেনস্তার যে একের পর এক দৃশ্য এবং বর্ণনা, তা নিয়ে যেত এক নির্মল আনন্দের জগতে। সেখানে শৈশবই সত্য একমাত্র। সেখানে হাসি আছে, আছে কল্পনা। আর এই কল্পনার জগতে যিনি নিয়ে যেতেন, যিনি এর রচয়িতা, তিনি আর কেউ নন—নারায়ণ দেবনাথ।
হ্যাঁ, আমাদের প্রজন্মের জন্য এমন দু-একটি দরজাই ছিল, যা দিয়ে অনায়াসে বিশ্বসাহিত্যের দরবারে হাজির হওয়া যেত। শুনতে যেমনই লাগুক, এ তো সত্য যে, রবার্ট লুই স্টিভেনসন নন, আমরা ট্রেজার আইল্যান্ডে প্রবেশাধিকার পেয়েছিলাম সবার প্রিয় কিন্তু অনেকেরই অদেখা জাদুকর কাজী আনোয়ার হোসেনের কল্যাণে। এমন নয় যে, তিনিই এই সব বইয়ের রচয়িতা বা অনুবাদক। কিন্তু আমাদের কাছে তিনি এমন একজন—যিনি গল্পে শোনা সেই গল্প-বুড়ো, যিনি অনায়াসে একের পর এক রাজ্যের গল্প বলে যেতে পারেন।
আমাদের অভিভাবকেরা এসব ঠিক পছন্দ করতেন না, তবে প্রচ্ছন্ন আশকারা পেতাম ঠিকই। কেউ না কেউ এই আশকারা দিতেন। আর সেই আশকারার কারণে অনায়াসে পড়ার টেবিলে পাঠ্যবইয়ের তলায় লুকিয়ে ঢুকে পড়তেন কাজী আনোয়ার হোসেন ও নারায়ণ দেবনাথ। কী দারুণ শক্তি ছিল তাঁদের? অনায়াসে তাঁরা আমাদের নেশায় (সু অর্থে পড়ুন) বুঁদ করে ফেলতেন। খুলে দিতেন ‘অঢেল আলোকধাম’।
আমরা সেই অঢেল আলোর জগতে একটু একটু করে হেঁটে যেতাম। কখনো নন্টে ফন্টের সঙ্গে রাজ্যের দুষ্টুমিতে মেতে উঠতাম, কখনো সেবার প্রজাপতিতে ভর করে ছুটতাম দিগ্বিজয়ে। সেই কমিকসে যা আঁকা থাকত, তার চেয়ে ঢের বড় কল্পনার জগতে আমরা ঢুকে পড়তাম, যা আঁকা নেই তার জোরে। সেবার বইয়ে যে বর্ণনা লেখা থাকত, তা খুলে দিত কত অজস্র অবর্ণনীয় কল্পজগৎকে, সে বলে শেষ করার নয়। তাঁরাই ছিলেন সেই গুটিকয় মানুষের একজন, যারা আমাদের চোখে মেখে দিয়েছিলেন মোহন অঞ্জন, যা সব সীমাকে মুছে দিতে পারে অনায়াসে।
আমাদের কালের ‘আউট বইয়ের’ জোগানদাতা এই কাজীদা (কোনো দিন দেখা বা কথা না হলেও অনেকটা শুনে শুনেই কেন যেন এভাবেই তাঁকে সম্বোধনের ইচ্ছা জাগে) আমাদের নিয়ে গেছেন সমুদ্রমন্থনে। বইয়ের ওপর নাম দেখেছি অন্য কারও, অনুবাদকের নাম দেখেছি আরেকজনের। কিন্তু ওই যে বিস্ময়জাগানিয়া প্রজাপতি, হলদেটে যার রং, যে একতাড়া নিউজপ্রিন্টের জাদুর পাতা নিয়ে হাজির হয়, সে-ই কেবল সত্য ছিল যেন। আমাদের কাছে অন্য কোনো কিছু নয়, ওই প্রজাপতিই ছিল গল্পের খনি।
‘ওল্ড ম্যান অ্যান্ড দ্য সি’-এর সেই মারলিন মাছ, আর সেই বৃদ্ধ জেলের গল্পের সঙ্গে সমুদ্রে আমরা ভেসেছি যতটা আর্নেস্ট হেমিংওয়ের সঙ্গে, ঠিক ততটাই কাজী আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে। কিংবা বলা যায় ‘বাউন্টিতে বিদ্রোহ’ কিংবা ‘হ্যাঞ্চ ব্যাক অব নটর ড্যাম’-এর কথা। বলা যায় জ্যাঁ ভলজার সেই আখ্যান ‘লা মিজারেবল’-এর কথা। এই সবই আমাদের সামনে হাজির করেছিল সেবা।
স্কুলজীবনটা রাঙিয়ে দেওয়ার জন্য সেই হলদে প্রজাপতির, সেই রেখায় আঁকা চরিত্রগুলোর যে কত বড় অবদান, তা বলবার নয়। পাড়ায় তখন স্টেশনারি দোকান মানেই সেবার বই আছে, আছে নারায়ণ দেবনাথের কমিকস। ফ্রেন্ডস নামের এক স্টেশনারি দোকান তো রীতিমতো বন্ধু হয়ে সামনে এল। তারা দু টাকায় বই ভাড়ার ব্যবসা শুরু করল। কমিকস ও বইয়ে বুঁদ হতে আর কী লাগে! এমনিতেও সেবার বইয়ের দাম ছিল খুব কম, আমাদের নাগালের মধ্যে। এর মধ্যে ছিল পুরোনো বইয়ের আখড়া। সুনীলের কবিতার পঙ্ক্তিতে যেমনটা আছে—গোপন সব ছোট ছোট নরকের কথা, ঠিক তেমন ছিল এগুলো।
কমলাপুর রেলস্টেশনে ছিল দুটি দোকান, ঠিক টিকিট কাউন্টারের পাশেই। ডাই করে সাজানো থাকত বই, যার আশি ভাগই সেবা প্রকাশনীর। আর দড়িতে ঝোলানো কমিকসে কার রাজত্ব, তা কি বলতে হবে মুখ ফুটে? স্কুলে হেঁটে যাওয়া-আসা করে টাকা জমিয়ে পছন্দের বই কিনতে ভিড় করতাম। আর অবধারিতভাবে মন খারাপ করেই বেরিয়ে আসতাম। কারণ, পছন্দের বই কেনায় যতটা আনন্দ হলো, তার চেয়ে ঢের বেশি মন খারাপ হলো আরও এমন অজস্র বই কিনতে না পারায়। আউট বইয়ের জন্য তো আর ঘর থেকে মাসে মাসে প্রণোদনা নেওয়া যায় না।
ছিল বাংলাবাজার, পুরানা পল্টন, যেখানে এর নিদান ছিল অনেকটাই। সেখানে সেবার অল্প দামের বই পুরোনো বলে আরও অল্প দামে কেনার সুযোগ ছিল। আর পাঁচ টাকা দিলে গুচ্ছের কমিকসের মালিকানা পাওয়া যেত। তখনো গুলিস্তান হল ওঠেনি। সেখানে হলের পেছন দিকে সিঁড়ির তলায় ছিলেন এক বিস্ময়কর মানুষ। তাঁর সঙ্গেও তো পরিচয়ের সূত্র সেবা তথা কাজীদার কল্যাণে। ভালো ভালো পুরোনো বই পাওয়া যায় বলে বাংলাবাজারে শুনেছিলাম বলেই না তাঁর খোঁজ করেছিলাম। আহা কত মধুর ছিলেন তিনি। বই বিক্রি করে ফেরার সময় বই উপহার দিতেন। আমাদের গোগ্রাসে গেলার সেই বয়সে তাঁর মতো অনেকেরই স্নেহ পেয়েছিলাম।
আমাদের শৈশব ও কৈশোরের সেই সময়ে একজন কাজী আনোয়ার হোসেন আমাদের পথ দেখিয়েছেন, একজন নারায়ণ দেবনাথ আমাদের আনন্দে ভাসিয়েছেন। নিজের অজ্ঞাতেই তাঁদের ছায়ার নিচ দিয়ে হেঁটে গেছি আমরা। সেই ছায়া ঠিক কত বড়, সে বয়সে বোঝা সম্ভব হয়নি। সেই রাঙিয়ে দেওয়া শৈশব ও কৈশোরের দিকে তাকালে মাঝেমধ্যেই মন কেমন করে। আজ আরও বেশি করে করছে। কেন করছে কাজীদা? কেন করছে প্রিয় নারায়ণ দেবনাথ?

স্কুলে যাওয়া-আসার পথে এক সটান রেললাইন। তার ওপর দিয়ে পদচারী-সেতু; শুধু এপার থেকে ওপারে যাওয়া। পার হলেই মাঝারি গড়নের একটি রাস্তা এঁকেবেঁকে চলে গেছে কলোনির ভেতর দিয়ে সোজা শাহজাহানপুর মোড়ের দিকে। সেখানে গিয়ে সোজা বড় চোখ করে তাকালে যে সাইনবোর্ড—সেটিই মতিঝিল সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয়। শুনতে যতই সহজ রাস্তা মনে হোক না কেন, সটান স্কুলে চলে যাওয়াটা এত সহজ ছিল না। কারণ, ওই পদচারী-সেতু, আর তার নিচে নিরীহ মুখ করে বসে থাকা পত্রিকার স্টল। সেখানে থাকা ছোট তাক থেকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে—সেবা প্রকাশনীর সেই মনোহর প্রজাপতি। আর দড়িতে তখন রেখায় ও লেখার মোহন আকর্ষণ হয়ে ঝুলছে—নন্টে ফন্টে।
চিরচেনা সেবা ও কমিকসের ছিল এক অপ্রতিরোধ্য আকর্ষণীয় ক্ষমতা। কত বিচিত্র বই যে সেবা হাতে তুলে দিয়েছে! বিশ্বসাহিত্যের কতশত অনুবাদ যে হাতে এসেছে শুধু সেবার কল্যাণে। আর ‘কুয়াশা’, ‘মাসুদ রানা’, ‘তিন গোয়েন্দা’ তো আছেই। এসবের প্রতি আকর্ষণ যখন কমে এসেছে, তখনো সামনে হাজির ‘কিশোর ক্ল্যাসিক’ সিরিজ, যেখানে ছিল বিশ্বখ্যাত সব লেখকের সঙ্গে পরিচয়ের হাতছানি। কত কত নাম বলা যাবে? এরিক মারিয়া রেমার্ক, আলেক্সান্ডার দ্যুমা, আলেক্সান্ডার বেলায়েভ, স্যার ওয়াল্টার স্কট, জুল ভার্ন, রবার্ট লুই স্টিভেনসন বা জেন অস্টিন—কতজনের নাম বলা যাবে? সেদিকে না গিয়ে শুধু একটি নামই বলা যায়—কাজী আনোয়ার হোসেন।
আর কমিকস? সেখানে ফ্যান্টম, হি-ম্যান, চাচা চৌধুরী (আরেক কিংবদন্তি—প্রাণ), টিনটিন, টারজান ইত্যাদির ভিড়ে দেশের চেনা গল্প নিয়ে ছিল ‘বাঁটুল দ্য গ্রেট’, হাঁদা-ভোঁদা’, আর ‘নন্টে ফন্টে’। নন্টের সঙ্গে ফন্টে মিলে কেল্টুদাকে অবিরাম হেনস্তার যে একের পর এক দৃশ্য এবং বর্ণনা, তা নিয়ে যেত এক নির্মল আনন্দের জগতে। সেখানে শৈশবই সত্য একমাত্র। সেখানে হাসি আছে, আছে কল্পনা। আর এই কল্পনার জগতে যিনি নিয়ে যেতেন, যিনি এর রচয়িতা, তিনি আর কেউ নন—নারায়ণ দেবনাথ।
হ্যাঁ, আমাদের প্রজন্মের জন্য এমন দু-একটি দরজাই ছিল, যা দিয়ে অনায়াসে বিশ্বসাহিত্যের দরবারে হাজির হওয়া যেত। শুনতে যেমনই লাগুক, এ তো সত্য যে, রবার্ট লুই স্টিভেনসন নন, আমরা ট্রেজার আইল্যান্ডে প্রবেশাধিকার পেয়েছিলাম সবার প্রিয় কিন্তু অনেকেরই অদেখা জাদুকর কাজী আনোয়ার হোসেনের কল্যাণে। এমন নয় যে, তিনিই এই সব বইয়ের রচয়িতা বা অনুবাদক। কিন্তু আমাদের কাছে তিনি এমন একজন—যিনি গল্পে শোনা সেই গল্প-বুড়ো, যিনি অনায়াসে একের পর এক রাজ্যের গল্প বলে যেতে পারেন।
আমাদের অভিভাবকেরা এসব ঠিক পছন্দ করতেন না, তবে প্রচ্ছন্ন আশকারা পেতাম ঠিকই। কেউ না কেউ এই আশকারা দিতেন। আর সেই আশকারার কারণে অনায়াসে পড়ার টেবিলে পাঠ্যবইয়ের তলায় লুকিয়ে ঢুকে পড়তেন কাজী আনোয়ার হোসেন ও নারায়ণ দেবনাথ। কী দারুণ শক্তি ছিল তাঁদের? অনায়াসে তাঁরা আমাদের নেশায় (সু অর্থে পড়ুন) বুঁদ করে ফেলতেন। খুলে দিতেন ‘অঢেল আলোকধাম’।
আমরা সেই অঢেল আলোর জগতে একটু একটু করে হেঁটে যেতাম। কখনো নন্টে ফন্টের সঙ্গে রাজ্যের দুষ্টুমিতে মেতে উঠতাম, কখনো সেবার প্রজাপতিতে ভর করে ছুটতাম দিগ্বিজয়ে। সেই কমিকসে যা আঁকা থাকত, তার চেয়ে ঢের বড় কল্পনার জগতে আমরা ঢুকে পড়তাম, যা আঁকা নেই তার জোরে। সেবার বইয়ে যে বর্ণনা লেখা থাকত, তা খুলে দিত কত অজস্র অবর্ণনীয় কল্পজগৎকে, সে বলে শেষ করার নয়। তাঁরাই ছিলেন সেই গুটিকয় মানুষের একজন, যারা আমাদের চোখে মেখে দিয়েছিলেন মোহন অঞ্জন, যা সব সীমাকে মুছে দিতে পারে অনায়াসে।
আমাদের কালের ‘আউট বইয়ের’ জোগানদাতা এই কাজীদা (কোনো দিন দেখা বা কথা না হলেও অনেকটা শুনে শুনেই কেন যেন এভাবেই তাঁকে সম্বোধনের ইচ্ছা জাগে) আমাদের নিয়ে গেছেন সমুদ্রমন্থনে। বইয়ের ওপর নাম দেখেছি অন্য কারও, অনুবাদকের নাম দেখেছি আরেকজনের। কিন্তু ওই যে বিস্ময়জাগানিয়া প্রজাপতি, হলদেটে যার রং, যে একতাড়া নিউজপ্রিন্টের জাদুর পাতা নিয়ে হাজির হয়, সে-ই কেবল সত্য ছিল যেন। আমাদের কাছে অন্য কোনো কিছু নয়, ওই প্রজাপতিই ছিল গল্পের খনি।
‘ওল্ড ম্যান অ্যান্ড দ্য সি’-এর সেই মারলিন মাছ, আর সেই বৃদ্ধ জেলের গল্পের সঙ্গে সমুদ্রে আমরা ভেসেছি যতটা আর্নেস্ট হেমিংওয়ের সঙ্গে, ঠিক ততটাই কাজী আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে। কিংবা বলা যায় ‘বাউন্টিতে বিদ্রোহ’ কিংবা ‘হ্যাঞ্চ ব্যাক অব নটর ড্যাম’-এর কথা। বলা যায় জ্যাঁ ভলজার সেই আখ্যান ‘লা মিজারেবল’-এর কথা। এই সবই আমাদের সামনে হাজির করেছিল সেবা।
স্কুলজীবনটা রাঙিয়ে দেওয়ার জন্য সেই হলদে প্রজাপতির, সেই রেখায় আঁকা চরিত্রগুলোর যে কত বড় অবদান, তা বলবার নয়। পাড়ায় তখন স্টেশনারি দোকান মানেই সেবার বই আছে, আছে নারায়ণ দেবনাথের কমিকস। ফ্রেন্ডস নামের এক স্টেশনারি দোকান তো রীতিমতো বন্ধু হয়ে সামনে এল। তারা দু টাকায় বই ভাড়ার ব্যবসা শুরু করল। কমিকস ও বইয়ে বুঁদ হতে আর কী লাগে! এমনিতেও সেবার বইয়ের দাম ছিল খুব কম, আমাদের নাগালের মধ্যে। এর মধ্যে ছিল পুরোনো বইয়ের আখড়া। সুনীলের কবিতার পঙ্ক্তিতে যেমনটা আছে—গোপন সব ছোট ছোট নরকের কথা, ঠিক তেমন ছিল এগুলো।
কমলাপুর রেলস্টেশনে ছিল দুটি দোকান, ঠিক টিকিট কাউন্টারের পাশেই। ডাই করে সাজানো থাকত বই, যার আশি ভাগই সেবা প্রকাশনীর। আর দড়িতে ঝোলানো কমিকসে কার রাজত্ব, তা কি বলতে হবে মুখ ফুটে? স্কুলে হেঁটে যাওয়া-আসা করে টাকা জমিয়ে পছন্দের বই কিনতে ভিড় করতাম। আর অবধারিতভাবে মন খারাপ করেই বেরিয়ে আসতাম। কারণ, পছন্দের বই কেনায় যতটা আনন্দ হলো, তার চেয়ে ঢের বেশি মন খারাপ হলো আরও এমন অজস্র বই কিনতে না পারায়। আউট বইয়ের জন্য তো আর ঘর থেকে মাসে মাসে প্রণোদনা নেওয়া যায় না।
ছিল বাংলাবাজার, পুরানা পল্টন, যেখানে এর নিদান ছিল অনেকটাই। সেখানে সেবার অল্প দামের বই পুরোনো বলে আরও অল্প দামে কেনার সুযোগ ছিল। আর পাঁচ টাকা দিলে গুচ্ছের কমিকসের মালিকানা পাওয়া যেত। তখনো গুলিস্তান হল ওঠেনি। সেখানে হলের পেছন দিকে সিঁড়ির তলায় ছিলেন এক বিস্ময়কর মানুষ। তাঁর সঙ্গেও তো পরিচয়ের সূত্র সেবা তথা কাজীদার কল্যাণে। ভালো ভালো পুরোনো বই পাওয়া যায় বলে বাংলাবাজারে শুনেছিলাম বলেই না তাঁর খোঁজ করেছিলাম। আহা কত মধুর ছিলেন তিনি। বই বিক্রি করে ফেরার সময় বই উপহার দিতেন। আমাদের গোগ্রাসে গেলার সেই বয়সে তাঁর মতো অনেকেরই স্নেহ পেয়েছিলাম।
আমাদের শৈশব ও কৈশোরের সেই সময়ে একজন কাজী আনোয়ার হোসেন আমাদের পথ দেখিয়েছেন, একজন নারায়ণ দেবনাথ আমাদের আনন্দে ভাসিয়েছেন। নিজের অজ্ঞাতেই তাঁদের ছায়ার নিচ দিয়ে হেঁটে গেছি আমরা। সেই ছায়া ঠিক কত বড়, সে বয়সে বোঝা সম্ভব হয়নি। সেই রাঙিয়ে দেওয়া শৈশব ও কৈশোরের দিকে তাকালে মাঝেমধ্যেই মন কেমন করে। আজ আরও বেশি করে করছে। কেন করছে কাজীদা? কেন করছে প্রিয় নারায়ণ দেবনাথ?

আরব সাগরের রানি নামে পরিচিত কোচি একসময় ছিল বন্দর আর মসলার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। কয়েক শতাব্দী আগে এখানেই গড়ে উঠেছিল ইহুদিদের একটি নিবিড় জনগোষ্ঠী। সেই জনগোষ্ঠীর একজন ছিলেন সারা কোহেন। ২০০০ সাল থেকে এই দোকান চালাচ্ছেন থাহা। সারা জীবিত থাকাকালে তাঁর পক্ষ থেকে, আর ২০১৯ সালে সারা ৯৬
৩ দিন আগে
মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল...
৪ দিন আগে
সৃজনশীল সাহিত্য কিন্তু দেয়াললিখন বা স্লোগান দেওয়া নয়। জীবন এতই জটিল যে তাকে কোনো ফর্মুলায় বেঁধে ফেলা যায় না। মানুষের মূল্যবোধ নানা রকমের। আর সেগুলো দিয়ে যে সিস্টেমগুলো পাওয়া যেতে পারে, তা-ও নানা রকমের। একেক লেখকের কমিটমেন্ট একেক রকম মূল্যবোধের কাছে।
৫ দিন আগে
বর্তমান ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ীর আশ্রম। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল। কথিত আছে, শংকরাচার্যের অনুগামী দর্শনার্থী সম্প্রদায় এ কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে।
১১ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

দক্ষিণ ভারতের কোচি শহরের সরু, নুড়ি-পাথর বিছানো রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ চোখে পড়ে ছোট্ট একটি ফলক। তাতে লেখা, ‘সারা কোহেনের বাড়ি।’ জনাকীর্ণ এই রাস্তাটির নাম জু টাউন। কয়েক দশক আগেও এখানকার প্রায় প্রতিটি বাড়িতে বসবাস করত ইহুদি পরিবার। প্রাচীন সামগ্রী, পারস্যের কার্পেট আর মসলার দোকানে ঠাসা এই এলাকাই একসময় পরিচিত ছিল কোচির ইহুদি পাড়া হিসেবে।
এই রাস্তাতেই রয়েছে থাহা ইব্রাহিমের দোকান। কোচির শেষ ইহুদি নকশার দোকান। এক তপ্ত দুপুরে কয়েকজন মার্কিন পর্যটক দোকানে ঢুকতেই দেখা গেল, ৫৫ বছর বয়সী থাহা মনোযোগ দিয়ে একটি কিপ্পা (ইহুদি পুরুষদের ঐতিহ্যবাহী ছোট, বৃত্তাকার টুপি যা তারা ঈশ্বরকে সম্মান জানাতে এবং নিজেদের ধর্মীয় পরিচয় প্রকাশ করতে পরে থাকে) সেলাই করছেন। দোকানের দেয়ালে ঝোলানো একটি ছবির সামনে পর্যটকেরা ভিড় জমালেন। ছবিটি ২০১৩ সালের। তৎকালীন ব্রিটিশ যুবরাজ (বর্তমানে রাজা) চার্লস জু টাউনের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলছেন।
ছবির দিকে আঙুল তুলে থাহা বললেন, ‘ওই ইনিই সারা আন্টি।’ এরপর যোগ করলেন, ‘এটা ছিল সারা কোহেনের বাড়ি ও তাঁর সেলাইয়ের দোকান।’
আরব সাগরের রানি নামে পরিচিত কোচি একসময় ছিল বন্দর আর মসলার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। কয়েক শতাব্দী আগে এখানেই গড়ে উঠেছিল ইহুদিদের একটি নিবিড় জনগোষ্ঠী। সেই জনগোষ্ঠীর একজন ছিলেন সারা কোহেন। ২০০০ সাল থেকে এই দোকান চালাচ্ছেন থাহা। সারা জীবিত থাকাকালে তাঁর পক্ষ থেকে, আর ২০১৯ সালে সারা ৯৬ বছর বয়সে মারা যাওয়ার পর পুরোপুরি দায়িত্ব নেন তিনি।
থাহা বলেন, ‘আমি ছিলাম তাঁর ছেলের মতো। নিজের মায়ের চেয়েও বেশি সময় তাঁর দেখাশোনা করেছি। আমি তাঁর জন্য কোশার (ইহুদিদের এক ধরনের খাবার) আর মাছ কিনে আনতাম। সময় কাটাতাম আর দোকান বন্ধ করার পরই কেবল ফিরতাম।’
এক ইহুদি নারী আর ভিন্ন সামাজিক ও অর্থনৈতিক পটভূমির এক মুসলমান পুরুষের এই বন্ধুত্ব প্রায় চার দশক ধরে টিকে ছিল। মৃত্যুর আগে সারা তাঁর দোকানটি থাহার নামে উইল করে যান। থাহা প্রতিজ্ঞা করেন, জু টাউনে তিনি সারার স্মৃতি আর ঐতিহ্য বাঁচিয়ে রাখবেন। যেখানে আঠারো শতকে প্রায় আড়াই হাজার ইহুদি বাস করতেন, সেখানে এখন কেবল একজন অবশিষ্ট। থাহা বলেন, ‘এক দিক থেকে, এখানকার ইহুদি সম্প্রদায় যাতে বিস্মৃত না হয়, আমিও সেই চেষ্টাই করছি।’
কেরালায় ইহুদিদের আগমনের সবচেয়ে প্রচলিত কাহিনি বাইবেলের ওল্ড টেস্টামেন্টে উল্লিখিত রাজা সোলোমনের সময়ের, প্রায় দুই হাজার বছর আগেকার। প্রথমে তাঁরা মালাবার উপকূলে ক্রাঙ্গানোরে, বর্তমান কোডুঙ্গাল্লুরের কাছে প্রাচীন বন্দরের আশপাশে বণিক হিসেবে বসতি গড়েন। পরে তাঁরা কোচিতে চলে আসেন। এই প্রাচীন বসতির কারণে তাঁরা পরিচিত হন মালাবারি ইহুদি নামে।
এর বহু পরে, ১৫৯২ সালে, স্প্যানিশ নিপীড়ন থেকে পালিয়ে আসা সেফার্ডিক ইহুদিরা কেরালায় পৌঁছান। পর্তুগাল, তুরস্ক আর বাগদাদ হয়ে তাঁরা কোচিতে বসতি গড়ে তোলেন এবং পরিচিত হন পারাদেসি বা বিদেশি ইহুদি নামে। মালাবারি ও পারাদেসি—এই দুই ধারার মানুষ মিলেই পরিচিত হন কোচিন ইহুদি নামে।

পর্তুগিজ, আরব, ব্রিটিশ আর ওলন্দাজদের দীর্ঘদিনের বাণিজ্যকেন্দ্র কোচিতে তাঁরা রাজাদের সুরক্ষায় নিরাপদে বসবাস করতেন। বিশ শতকের গোড়ায় সারা কোহেনের জন্ম। তখন জু টাউন ছিল প্রাণবন্ত। সারা আর তাঁর স্বামী জ্যাকব—যাঁর জন্মও এখানেই—১৯৪৪ সালে বিয়ে করেন।
আশির দশকের গোড়ায় আচমকাই থাহার সঙ্গে কোহেন দম্পতির পরিচয় হয়। তেরো বছর বয়সে স্কুল ছেড়ে দেওয়া থাহা তখন পর্যটকদের কাছে পোস্টকার্ড বিক্রি করে জীবিকা চালাতেন। জু টাউনে আসা পর্যটকেরা নিয়মিতই যেতেন পারাদেসি সিনাগগে, যা ১৫৬৮ সালে কোচিনের রাজার দেওয়া জমিতে নির্মিত।
থাহা বলেন, ‘তখন প্রচুর পর্যটক আসত আর আমি সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পোস্টকার্ড বেচতাম।’ এক রোববার, যে গুদামঘরে থাহা পোস্টকার্ড রাখতেন, তার মালিক না আসায় জ্যাকব তাঁকে তাঁদের বাড়িতে জায়গা দেন। সারা এতে খুশি ছিলেন না। থাহার মনে আছে, প্রায় তিন বছর তিনি তাঁর সঙ্গে তেমন কথা বলেননি।
ইব্রাহিম থাহা বলেন, ‘মাঝে মাঝে আমি তাঁর স্বামীর ছোটখাটো কাজ করে দিতাম। অথবা যখন তাঁদের জানালার বাইরে থেকে টিভিতে ক্রিকেট দেখতাম, তিনি আমাকে ভেতরে আসতে বলতেন।’ একদিন সারা তাঁকে সিনাগগের জন্য একটি কুশন কভার সেলাই করতে সাহায্য করতে বলেন। তখনই বোঝা যায়, থাহার মধ্যে সেলাই ও নকশার সহজাত দক্ষতা আছে। সম্ভবত দরজি বাবাকে ছোটবেলা থেকে সাহায্য করার ফলেই। তিনি বলেন, ‘আমি যে নকশা আঁকতে আর সেলাই করতে পারি, তা জানতামই না।’
উনিশ বছর বয়সে থাহা সারাকে সাহায্য করেন তাঁদের বৈঠকখানা থেকে ‘সারার হস্ত-সেলাই’ নামে একটি দোকান খুলতে। দোকানটি আজও সেই নামেই পরিচিত। সেখানে বিক্রি হতো কিপ্পাহ, চাল্লাহ কভার আর মেনোরাহ। তিনি বলেন, ‘তিনিই আমাকে সব শিখিয়েছেন।’
এই বন্ধুত্ব নিয়ে থাহা বেশ দার্শনিক। তিনি বলেন, ‘জু টাউনে ইহুদি আর মুসলমানেরা একে অপরের সঙ্গে তেমন মিশতেন না। তাঁরা একে অপরের প্রতি সন্দিহান ছিলেন। কিন্তু সারা আন্টি আর জ্যাকব আংকেল কখনোই আমাকে বহিরাগত মনে করতে দেননি, যদিও আমাদের পটভূমি আলাদা ছিল।’

থাহার বাবা-মা এই সম্পর্কে আপত্তি করেননি। তাঁরা দেখেছিলেন, কোহেন পরিবার তাঁদের ছেলেকে জীবনের একটি উদ্দেশ্য খুঁজে পেতে সাহায্য করছে। কিন্তু এই ঘনিষ্ঠতার সময়েই কোচির ইহুদি জনসংখ্যা দ্রুত কমতে থাকে। চল্লিশের দশকে যেখানে ছিল প্রায় ২৫০ জন, নব্বইয়ের দশকে তা নেমে আসে ২০ জনে। এখন মাত্র একজন আছেন—৬৭ বছর বয়সী কিথ হ্যালেগুয়া।
১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর অনেক পরিবার সেখানে চলে যায়। কেরালার ইহুদিদের ওপর ডক্টরেট থিসিস করা আনা জাখারিয়াস বলেন, ‘কোচিন ইহুদিরা হয়তো স্বদেশে ফিরে যাওয়ার ধারণায় ইসরায়েলে গিয়েছিলেন। তবে উন্নত জীবনের আকর্ষণের মতো অর্থনৈতিক কারণও ছিল। তাঁরা এটাও অনুভব করেছিলেন যে কেরালায় উপযুক্ত জীবনসঙ্গীর অভাব ছিল।’
ধর্মীয় নিপীড়ন কখনোই তাঁদের কোচি ছাড়ার কারণ ছিল না। শহরটি শত শত বছর ধরে তাঁদের স্বাগত জানিয়েছে। কিছু বয়স্ক ইহুদি থেকে গিয়েছিলেন, যাঁদের মধ্যে নিঃসন্তান কোহেন দম্পতিও ছিলেন। ১৯৯৯ সালে জ্যাকব মারা যাওয়ার আগে থাহাকে সারার দেখাশোনার দায়িত্ব দিয়ে যান। তখন থাহা বিবাহিত, তিন সন্তানের জনক।
থাহা বলেন, ‘আমি জ্যাকব আংকেলকে বলেছিলাম, সারা আন্টি যদি আমাকে সুযোগ দেন, তবে আমি তাঁর দেখাশোনা করব। আমি তাঁকে সুযোগ দিতে বলেছিলাম, কারণ ইসলামে মৃতপ্রায় ব্যক্তির শেষ ইচ্ছা পূরণ করা গুরুত্বপূর্ণ। না করলে পাপ হয়।’
সারার স্বাস্থ্যের অবনতি হলে থাহা তাঁর পরিবারকে জু টাউনের কাছাকাছি নিয়ে আসেন। সারা মারা গেলে তিনি তাঁর কফিনের জন্য স্টার অব ডেভিড (ইসরায়েলি পতাকায় অঙ্কিত তারকা) আঁকা একটি কফিন কভার তৈরি করান। আজও তিনি নিয়মিত ইহুদি কবরস্থানে তাঁর সমাধিতে যান। প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক কোচি ঘুরতে আসেন। তাঁদের মধ্যে অনেক ইহুদিও থাকেন। আনা জাখারিয়াস বলেন, ‘বিশ্বজুড়ে ইহুদিরা জু টাউনে আসেন এক ধরনের আপন অনুভব করার জন্য।’
তিনি বলেন, এখানকার ইহুদিরা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু সমাজের মধ্যেও নিজেদের পরিচয় বজায় রেখেছিলেন। একই সঙ্গে সমাজের সঙ্গে মিশে গিয়েছিলেন। স্থানীয় ভাষা মালয়ালমই ছিল তাঁদের দৈনন্দিন ভাষা। থাহা যেভাবে সারা কোহেনের ঐতিহ্য আগলে রেখেছেন, তা তাঁকে মুগ্ধ করে। তিনি বলেন, ‘একজন মুসলমান কীভাবে এক ইহুদি নারীর যত্ন নিয়েছেন, তা দৃষ্টান্তস্বরূপ। তিনি এখনো সারা-র ধর্মীয় ঐতিহ্যগুলো বজায় রেখেছেন।’
থাহা দোকানটিকে ঠিক সেভাবেই রেখেছেন, যেমনটি সারা চালাতেন। ইহুদিদের সাব্বাথ উপলক্ষে তিনি শনিবার দোকান বন্ধ রাখেন। ইব্রাহিম থাহা আরও বলেন, ‘আমি ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা মুসলমান, কিন্তু সারা আন্টির জন্য এটা খুব জরুরি ছিল বলে আমি শুক্রবার সন্ধ্যায় একটি প্রদীপ জ্বালাই। কারণ, এই ক্ষণ সাব্বাথের শুরু হওয়াকে চিহ্নিত করে। এই বিষয়টি আমার কাছে এটা ধর্ম সংক্রান্ত নয়, পুরোটাই মানবিক।’
বিবিসি থেকে অনূদিত

দক্ষিণ ভারতের কোচি শহরের সরু, নুড়ি-পাথর বিছানো রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ চোখে পড়ে ছোট্ট একটি ফলক। তাতে লেখা, ‘সারা কোহেনের বাড়ি।’ জনাকীর্ণ এই রাস্তাটির নাম জু টাউন। কয়েক দশক আগেও এখানকার প্রায় প্রতিটি বাড়িতে বসবাস করত ইহুদি পরিবার। প্রাচীন সামগ্রী, পারস্যের কার্পেট আর মসলার দোকানে ঠাসা এই এলাকাই একসময় পরিচিত ছিল কোচির ইহুদি পাড়া হিসেবে।
এই রাস্তাতেই রয়েছে থাহা ইব্রাহিমের দোকান। কোচির শেষ ইহুদি নকশার দোকান। এক তপ্ত দুপুরে কয়েকজন মার্কিন পর্যটক দোকানে ঢুকতেই দেখা গেল, ৫৫ বছর বয়সী থাহা মনোযোগ দিয়ে একটি কিপ্পা (ইহুদি পুরুষদের ঐতিহ্যবাহী ছোট, বৃত্তাকার টুপি যা তারা ঈশ্বরকে সম্মান জানাতে এবং নিজেদের ধর্মীয় পরিচয় প্রকাশ করতে পরে থাকে) সেলাই করছেন। দোকানের দেয়ালে ঝোলানো একটি ছবির সামনে পর্যটকেরা ভিড় জমালেন। ছবিটি ২০১৩ সালের। তৎকালীন ব্রিটিশ যুবরাজ (বর্তমানে রাজা) চার্লস জু টাউনের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলছেন।
ছবির দিকে আঙুল তুলে থাহা বললেন, ‘ওই ইনিই সারা আন্টি।’ এরপর যোগ করলেন, ‘এটা ছিল সারা কোহেনের বাড়ি ও তাঁর সেলাইয়ের দোকান।’
আরব সাগরের রানি নামে পরিচিত কোচি একসময় ছিল বন্দর আর মসলার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। কয়েক শতাব্দী আগে এখানেই গড়ে উঠেছিল ইহুদিদের একটি নিবিড় জনগোষ্ঠী। সেই জনগোষ্ঠীর একজন ছিলেন সারা কোহেন। ২০০০ সাল থেকে এই দোকান চালাচ্ছেন থাহা। সারা জীবিত থাকাকালে তাঁর পক্ষ থেকে, আর ২০১৯ সালে সারা ৯৬ বছর বয়সে মারা যাওয়ার পর পুরোপুরি দায়িত্ব নেন তিনি।
থাহা বলেন, ‘আমি ছিলাম তাঁর ছেলের মতো। নিজের মায়ের চেয়েও বেশি সময় তাঁর দেখাশোনা করেছি। আমি তাঁর জন্য কোশার (ইহুদিদের এক ধরনের খাবার) আর মাছ কিনে আনতাম। সময় কাটাতাম আর দোকান বন্ধ করার পরই কেবল ফিরতাম।’
এক ইহুদি নারী আর ভিন্ন সামাজিক ও অর্থনৈতিক পটভূমির এক মুসলমান পুরুষের এই বন্ধুত্ব প্রায় চার দশক ধরে টিকে ছিল। মৃত্যুর আগে সারা তাঁর দোকানটি থাহার নামে উইল করে যান। থাহা প্রতিজ্ঞা করেন, জু টাউনে তিনি সারার স্মৃতি আর ঐতিহ্য বাঁচিয়ে রাখবেন। যেখানে আঠারো শতকে প্রায় আড়াই হাজার ইহুদি বাস করতেন, সেখানে এখন কেবল একজন অবশিষ্ট। থাহা বলেন, ‘এক দিক থেকে, এখানকার ইহুদি সম্প্রদায় যাতে বিস্মৃত না হয়, আমিও সেই চেষ্টাই করছি।’
কেরালায় ইহুদিদের আগমনের সবচেয়ে প্রচলিত কাহিনি বাইবেলের ওল্ড টেস্টামেন্টে উল্লিখিত রাজা সোলোমনের সময়ের, প্রায় দুই হাজার বছর আগেকার। প্রথমে তাঁরা মালাবার উপকূলে ক্রাঙ্গানোরে, বর্তমান কোডুঙ্গাল্লুরের কাছে প্রাচীন বন্দরের আশপাশে বণিক হিসেবে বসতি গড়েন। পরে তাঁরা কোচিতে চলে আসেন। এই প্রাচীন বসতির কারণে তাঁরা পরিচিত হন মালাবারি ইহুদি নামে।
এর বহু পরে, ১৫৯২ সালে, স্প্যানিশ নিপীড়ন থেকে পালিয়ে আসা সেফার্ডিক ইহুদিরা কেরালায় পৌঁছান। পর্তুগাল, তুরস্ক আর বাগদাদ হয়ে তাঁরা কোচিতে বসতি গড়ে তোলেন এবং পরিচিত হন পারাদেসি বা বিদেশি ইহুদি নামে। মালাবারি ও পারাদেসি—এই দুই ধারার মানুষ মিলেই পরিচিত হন কোচিন ইহুদি নামে।

পর্তুগিজ, আরব, ব্রিটিশ আর ওলন্দাজদের দীর্ঘদিনের বাণিজ্যকেন্দ্র কোচিতে তাঁরা রাজাদের সুরক্ষায় নিরাপদে বসবাস করতেন। বিশ শতকের গোড়ায় সারা কোহেনের জন্ম। তখন জু টাউন ছিল প্রাণবন্ত। সারা আর তাঁর স্বামী জ্যাকব—যাঁর জন্মও এখানেই—১৯৪৪ সালে বিয়ে করেন।
আশির দশকের গোড়ায় আচমকাই থাহার সঙ্গে কোহেন দম্পতির পরিচয় হয়। তেরো বছর বয়সে স্কুল ছেড়ে দেওয়া থাহা তখন পর্যটকদের কাছে পোস্টকার্ড বিক্রি করে জীবিকা চালাতেন। জু টাউনে আসা পর্যটকেরা নিয়মিতই যেতেন পারাদেসি সিনাগগে, যা ১৫৬৮ সালে কোচিনের রাজার দেওয়া জমিতে নির্মিত।
থাহা বলেন, ‘তখন প্রচুর পর্যটক আসত আর আমি সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পোস্টকার্ড বেচতাম।’ এক রোববার, যে গুদামঘরে থাহা পোস্টকার্ড রাখতেন, তার মালিক না আসায় জ্যাকব তাঁকে তাঁদের বাড়িতে জায়গা দেন। সারা এতে খুশি ছিলেন না। থাহার মনে আছে, প্রায় তিন বছর তিনি তাঁর সঙ্গে তেমন কথা বলেননি।
ইব্রাহিম থাহা বলেন, ‘মাঝে মাঝে আমি তাঁর স্বামীর ছোটখাটো কাজ করে দিতাম। অথবা যখন তাঁদের জানালার বাইরে থেকে টিভিতে ক্রিকেট দেখতাম, তিনি আমাকে ভেতরে আসতে বলতেন।’ একদিন সারা তাঁকে সিনাগগের জন্য একটি কুশন কভার সেলাই করতে সাহায্য করতে বলেন। তখনই বোঝা যায়, থাহার মধ্যে সেলাই ও নকশার সহজাত দক্ষতা আছে। সম্ভবত দরজি বাবাকে ছোটবেলা থেকে সাহায্য করার ফলেই। তিনি বলেন, ‘আমি যে নকশা আঁকতে আর সেলাই করতে পারি, তা জানতামই না।’
উনিশ বছর বয়সে থাহা সারাকে সাহায্য করেন তাঁদের বৈঠকখানা থেকে ‘সারার হস্ত-সেলাই’ নামে একটি দোকান খুলতে। দোকানটি আজও সেই নামেই পরিচিত। সেখানে বিক্রি হতো কিপ্পাহ, চাল্লাহ কভার আর মেনোরাহ। তিনি বলেন, ‘তিনিই আমাকে সব শিখিয়েছেন।’
এই বন্ধুত্ব নিয়ে থাহা বেশ দার্শনিক। তিনি বলেন, ‘জু টাউনে ইহুদি আর মুসলমানেরা একে অপরের সঙ্গে তেমন মিশতেন না। তাঁরা একে অপরের প্রতি সন্দিহান ছিলেন। কিন্তু সারা আন্টি আর জ্যাকব আংকেল কখনোই আমাকে বহিরাগত মনে করতে দেননি, যদিও আমাদের পটভূমি আলাদা ছিল।’

থাহার বাবা-মা এই সম্পর্কে আপত্তি করেননি। তাঁরা দেখেছিলেন, কোহেন পরিবার তাঁদের ছেলেকে জীবনের একটি উদ্দেশ্য খুঁজে পেতে সাহায্য করছে। কিন্তু এই ঘনিষ্ঠতার সময়েই কোচির ইহুদি জনসংখ্যা দ্রুত কমতে থাকে। চল্লিশের দশকে যেখানে ছিল প্রায় ২৫০ জন, নব্বইয়ের দশকে তা নেমে আসে ২০ জনে। এখন মাত্র একজন আছেন—৬৭ বছর বয়সী কিথ হ্যালেগুয়া।
১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর অনেক পরিবার সেখানে চলে যায়। কেরালার ইহুদিদের ওপর ডক্টরেট থিসিস করা আনা জাখারিয়াস বলেন, ‘কোচিন ইহুদিরা হয়তো স্বদেশে ফিরে যাওয়ার ধারণায় ইসরায়েলে গিয়েছিলেন। তবে উন্নত জীবনের আকর্ষণের মতো অর্থনৈতিক কারণও ছিল। তাঁরা এটাও অনুভব করেছিলেন যে কেরালায় উপযুক্ত জীবনসঙ্গীর অভাব ছিল।’
ধর্মীয় নিপীড়ন কখনোই তাঁদের কোচি ছাড়ার কারণ ছিল না। শহরটি শত শত বছর ধরে তাঁদের স্বাগত জানিয়েছে। কিছু বয়স্ক ইহুদি থেকে গিয়েছিলেন, যাঁদের মধ্যে নিঃসন্তান কোহেন দম্পতিও ছিলেন। ১৯৯৯ সালে জ্যাকব মারা যাওয়ার আগে থাহাকে সারার দেখাশোনার দায়িত্ব দিয়ে যান। তখন থাহা বিবাহিত, তিন সন্তানের জনক।
থাহা বলেন, ‘আমি জ্যাকব আংকেলকে বলেছিলাম, সারা আন্টি যদি আমাকে সুযোগ দেন, তবে আমি তাঁর দেখাশোনা করব। আমি তাঁকে সুযোগ দিতে বলেছিলাম, কারণ ইসলামে মৃতপ্রায় ব্যক্তির শেষ ইচ্ছা পূরণ করা গুরুত্বপূর্ণ। না করলে পাপ হয়।’
সারার স্বাস্থ্যের অবনতি হলে থাহা তাঁর পরিবারকে জু টাউনের কাছাকাছি নিয়ে আসেন। সারা মারা গেলে তিনি তাঁর কফিনের জন্য স্টার অব ডেভিড (ইসরায়েলি পতাকায় অঙ্কিত তারকা) আঁকা একটি কফিন কভার তৈরি করান। আজও তিনি নিয়মিত ইহুদি কবরস্থানে তাঁর সমাধিতে যান। প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক কোচি ঘুরতে আসেন। তাঁদের মধ্যে অনেক ইহুদিও থাকেন। আনা জাখারিয়াস বলেন, ‘বিশ্বজুড়ে ইহুদিরা জু টাউনে আসেন এক ধরনের আপন অনুভব করার জন্য।’
তিনি বলেন, এখানকার ইহুদিরা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু সমাজের মধ্যেও নিজেদের পরিচয় বজায় রেখেছিলেন। একই সঙ্গে সমাজের সঙ্গে মিশে গিয়েছিলেন। স্থানীয় ভাষা মালয়ালমই ছিল তাঁদের দৈনন্দিন ভাষা। থাহা যেভাবে সারা কোহেনের ঐতিহ্য আগলে রেখেছেন, তা তাঁকে মুগ্ধ করে। তিনি বলেন, ‘একজন মুসলমান কীভাবে এক ইহুদি নারীর যত্ন নিয়েছেন, তা দৃষ্টান্তস্বরূপ। তিনি এখনো সারা-র ধর্মীয় ঐতিহ্যগুলো বজায় রেখেছেন।’
থাহা দোকানটিকে ঠিক সেভাবেই রেখেছেন, যেমনটি সারা চালাতেন। ইহুদিদের সাব্বাথ উপলক্ষে তিনি শনিবার দোকান বন্ধ রাখেন। ইব্রাহিম থাহা আরও বলেন, ‘আমি ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা মুসলমান, কিন্তু সারা আন্টির জন্য এটা খুব জরুরি ছিল বলে আমি শুক্রবার সন্ধ্যায় একটি প্রদীপ জ্বালাই। কারণ, এই ক্ষণ সাব্বাথের শুরু হওয়াকে চিহ্নিত করে। এই বিষয়টি আমার কাছে এটা ধর্ম সংক্রান্ত নয়, পুরোটাই মানবিক।’
বিবিসি থেকে অনূদিত

বিশ্বসাহিত্যের কতশত অনুবাদ যে হাতে এসেছে শুধু সেবার কল্যাণে। আর ‘কুয়াশা’, ‘মাসুদ রানা’, ‘তিন গোয়েন্দা’ তো আছেই। এসবের প্রতি আকর্ষণ যখন কমে এসেছে, তখনো সামনে হাজির ‘কিশোর ক্ল্যাসিক’ সিরিজ, যেখানে ছিল বিশ্বখ্যাত সব লেখকের সঙ্গে পরিচয়ের হাতছানি। কত কত নাম বলা যাবে? এরিক মারিয়া রেমার্ক, আলেক্সান্ডার দ্য
১৯ জানুয়ারি ২০২২
মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল...
৪ দিন আগে
সৃজনশীল সাহিত্য কিন্তু দেয়াললিখন বা স্লোগান দেওয়া নয়। জীবন এতই জটিল যে তাকে কোনো ফর্মুলায় বেঁধে ফেলা যায় না। মানুষের মূল্যবোধ নানা রকমের। আর সেগুলো দিয়ে যে সিস্টেমগুলো পাওয়া যেতে পারে, তা-ও নানা রকমের। একেক লেখকের কমিটমেন্ট একেক রকম মূল্যবোধের কাছে।
৫ দিন আগে
বর্তমান ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ীর আশ্রম। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল। কথিত আছে, শংকরাচার্যের অনুগামী দর্শনার্থী সম্প্রদায় এ কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে।
১১ দিন আগেসম্পাদকীয়

মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল পাশবিক হত্যাযজ্ঞ। ঢাকার গাবতলীর পাশের তুরাগ নদের উত্তর পারেই সাভারের কাউন্দিয়া ইউনিয়নের ইসাকাবাদ গ্রাম অবস্থিত। গ্রামটি থেকে স্পষ্ট দেখা যেত গাবতলী সেতু। সেই গ্রামেরই বয়স্ক এক ব্যক্তি মুক্তিযুদ্ধের সময়ের হত্যাযজ্ঞের বর্ণনা করেছেন এভাবে, প্রতিদিন রাতের বেলা মিলিটারি আর বিহারিরা শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে ট্রাকে করে এই সেতুতে মানুষদের নিয়ে আসত। রাত গভীর হলে সেতুর দুই পাশের বাতি নিভিয়ে গুলি চালানো হতো। পুরো যুদ্ধের সময় এখানে এমন রাত ছিল না, যে রাতের বেলা সেখানে লাশ ফেলানো হয়নি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পাঁচ দশকের বেশি সময় পার হলেও এখনো এ জায়গাকে বধ্যভূমি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। ছবি: সংগৃহীত

মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল পাশবিক হত্যাযজ্ঞ। ঢাকার গাবতলীর পাশের তুরাগ নদের উত্তর পারেই সাভারের কাউন্দিয়া ইউনিয়নের ইসাকাবাদ গ্রাম অবস্থিত। গ্রামটি থেকে স্পষ্ট দেখা যেত গাবতলী সেতু। সেই গ্রামেরই বয়স্ক এক ব্যক্তি মুক্তিযুদ্ধের সময়ের হত্যাযজ্ঞের বর্ণনা করেছেন এভাবে, প্রতিদিন রাতের বেলা মিলিটারি আর বিহারিরা শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে ট্রাকে করে এই সেতুতে মানুষদের নিয়ে আসত। রাত গভীর হলে সেতুর দুই পাশের বাতি নিভিয়ে গুলি চালানো হতো। পুরো যুদ্ধের সময় এখানে এমন রাত ছিল না, যে রাতের বেলা সেখানে লাশ ফেলানো হয়নি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পাঁচ দশকের বেশি সময় পার হলেও এখনো এ জায়গাকে বধ্যভূমি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। ছবি: সংগৃহীত

বিশ্বসাহিত্যের কতশত অনুবাদ যে হাতে এসেছে শুধু সেবার কল্যাণে। আর ‘কুয়াশা’, ‘মাসুদ রানা’, ‘তিন গোয়েন্দা’ তো আছেই। এসবের প্রতি আকর্ষণ যখন কমে এসেছে, তখনো সামনে হাজির ‘কিশোর ক্ল্যাসিক’ সিরিজ, যেখানে ছিল বিশ্বখ্যাত সব লেখকের সঙ্গে পরিচয়ের হাতছানি। কত কত নাম বলা যাবে? এরিক মারিয়া রেমার্ক, আলেক্সান্ডার দ্য
১৯ জানুয়ারি ২০২২
আরব সাগরের রানি নামে পরিচিত কোচি একসময় ছিল বন্দর আর মসলার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। কয়েক শতাব্দী আগে এখানেই গড়ে উঠেছিল ইহুদিদের একটি নিবিড় জনগোষ্ঠী। সেই জনগোষ্ঠীর একজন ছিলেন সারা কোহেন। ২০০০ সাল থেকে এই দোকান চালাচ্ছেন থাহা। সারা জীবিত থাকাকালে তাঁর পক্ষ থেকে, আর ২০১৯ সালে সারা ৯৬
৩ দিন আগে
সৃজনশীল সাহিত্য কিন্তু দেয়াললিখন বা স্লোগান দেওয়া নয়। জীবন এতই জটিল যে তাকে কোনো ফর্মুলায় বেঁধে ফেলা যায় না। মানুষের মূল্যবোধ নানা রকমের। আর সেগুলো দিয়ে যে সিস্টেমগুলো পাওয়া যেতে পারে, তা-ও নানা রকমের। একেক লেখকের কমিটমেন্ট একেক রকম মূল্যবোধের কাছে।
৫ দিন আগে
বর্তমান ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ীর আশ্রম। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল। কথিত আছে, শংকরাচার্যের অনুগামী দর্শনার্থী সম্প্রদায় এ কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে।
১১ দিন আগেসম্পাদকীয়

সৃজনশীল সাহিত্য কিন্তু দেয়াললিখন বা স্লোগান দেওয়া নয়। জীবন এতই জটিল যে তাকে কোনো ফর্মুলায় বেঁধে ফেলা যায় না। মানুষের মূল্যবোধ নানা রকমের। আর সেগুলো দিয়ে যে সিস্টেমগুলো পাওয়া যেতে পারে, তা-ও নানা রকমের। একেক লেখকের কমিটমেন্ট একেক রকম মূল্যবোধের কাছে।
অনেক লেখকই আছেন যাঁরা খুব ধর্মপ্রাণ, কেউবা আবার কমিউনিস্ট ৷ হিউম্যানিস্ট লেখক যেমন আছেন, তেমনই আছেন অথোরিটারিয়ান লেখক।
তবে সে যা-ই হোক, ভালো সাহিত্যিকের মধ্যে দুটো কমিটমেন্ট থাকতেই হবে—সততা আর স্টাইলের দক্ষতা। নিজের কাছেই যে-লেখক অসৎ, যা লেখেন তা যদি তিনি নিজেই না বিশ্বাস করেন, তাহলে সেই লেখকের পতন অনিবার্য।
কোনো লেখক আবার যদি নিজের ভাষার ঐশ্বর্যকে ছেঁকে তুলতে ব্যর্থ হন, একজন সংগীতশিল্পীকে ঠিক যেভাবে তাঁর যন্ত্রটিকে নিজের বশে আনতে হয়, ভাষার ক্ষেত্রেও তেমনটা যদি কোনো লেখক করতে না পারেন, তাহলে একজন সাংবাদিক ছাড়া আর কিছুই হতে পারবেন না তিনি। সত্য এবং স্টাইল—একজন সাহিত্যিকের বেসিক কমিটমেন্ট হলো শুধু এই দুটো।
সূত্র: সাক্ষাৎকারটি প্রকাশিত হয়েছিল ‘বাংলাদেশ টুডে’ পত্রিকার মার্চ, ১৯৮৪ সংখ্যায়, সাক্ষাৎকার গ্রহীতা সেরাজুল ইসলাম কাদির, অনুবাদক নীলাজ্জ দাস, শিবনারায়ণ রায়ের সাক্ষাৎকার সংগ্রহ, পৃষ্ঠা-২৭।

সৃজনশীল সাহিত্য কিন্তু দেয়াললিখন বা স্লোগান দেওয়া নয়। জীবন এতই জটিল যে তাকে কোনো ফর্মুলায় বেঁধে ফেলা যায় না। মানুষের মূল্যবোধ নানা রকমের। আর সেগুলো দিয়ে যে সিস্টেমগুলো পাওয়া যেতে পারে, তা-ও নানা রকমের। একেক লেখকের কমিটমেন্ট একেক রকম মূল্যবোধের কাছে।
অনেক লেখকই আছেন যাঁরা খুব ধর্মপ্রাণ, কেউবা আবার কমিউনিস্ট ৷ হিউম্যানিস্ট লেখক যেমন আছেন, তেমনই আছেন অথোরিটারিয়ান লেখক।
তবে সে যা-ই হোক, ভালো সাহিত্যিকের মধ্যে দুটো কমিটমেন্ট থাকতেই হবে—সততা আর স্টাইলের দক্ষতা। নিজের কাছেই যে-লেখক অসৎ, যা লেখেন তা যদি তিনি নিজেই না বিশ্বাস করেন, তাহলে সেই লেখকের পতন অনিবার্য।
কোনো লেখক আবার যদি নিজের ভাষার ঐশ্বর্যকে ছেঁকে তুলতে ব্যর্থ হন, একজন সংগীতশিল্পীকে ঠিক যেভাবে তাঁর যন্ত্রটিকে নিজের বশে আনতে হয়, ভাষার ক্ষেত্রেও তেমনটা যদি কোনো লেখক করতে না পারেন, তাহলে একজন সাংবাদিক ছাড়া আর কিছুই হতে পারবেন না তিনি। সত্য এবং স্টাইল—একজন সাহিত্যিকের বেসিক কমিটমেন্ট হলো শুধু এই দুটো।
সূত্র: সাক্ষাৎকারটি প্রকাশিত হয়েছিল ‘বাংলাদেশ টুডে’ পত্রিকার মার্চ, ১৯৮৪ সংখ্যায়, সাক্ষাৎকার গ্রহীতা সেরাজুল ইসলাম কাদির, অনুবাদক নীলাজ্জ দাস, শিবনারায়ণ রায়ের সাক্ষাৎকার সংগ্রহ, পৃষ্ঠা-২৭।

বিশ্বসাহিত্যের কতশত অনুবাদ যে হাতে এসেছে শুধু সেবার কল্যাণে। আর ‘কুয়াশা’, ‘মাসুদ রানা’, ‘তিন গোয়েন্দা’ তো আছেই। এসবের প্রতি আকর্ষণ যখন কমে এসেছে, তখনো সামনে হাজির ‘কিশোর ক্ল্যাসিক’ সিরিজ, যেখানে ছিল বিশ্বখ্যাত সব লেখকের সঙ্গে পরিচয়ের হাতছানি। কত কত নাম বলা যাবে? এরিক মারিয়া রেমার্ক, আলেক্সান্ডার দ্য
১৯ জানুয়ারি ২০২২
আরব সাগরের রানি নামে পরিচিত কোচি একসময় ছিল বন্দর আর মসলার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। কয়েক শতাব্দী আগে এখানেই গড়ে উঠেছিল ইহুদিদের একটি নিবিড় জনগোষ্ঠী। সেই জনগোষ্ঠীর একজন ছিলেন সারা কোহেন। ২০০০ সাল থেকে এই দোকান চালাচ্ছেন থাহা। সারা জীবিত থাকাকালে তাঁর পক্ষ থেকে, আর ২০১৯ সালে সারা ৯৬
৩ দিন আগে
মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল...
৪ দিন আগে
বর্তমান ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ীর আশ্রম। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল। কথিত আছে, শংকরাচার্যের অনুগামী দর্শনার্থী সম্প্রদায় এ কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে।
১১ দিন আগেসম্পাদকীয়

বর্তমান ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ীর আশ্রম। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল। কথিত আছে, শংকরাচার্যের অনুগামী দর্শনার্থী সম্প্রদায় এ কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে। প্রায় ৫০০ বছর আগে বদ্রী নারায়ণের যোশী মঠের সন্ন্যাসী গোপাল গিরি ঢাকায় এসে রমনায় প্রথমে একটি আখড়া স্থাপন করেন। তখন এ আখড়াটি কাঠঘর নামে পরিচিত ছিল।
পরে সম্ভবত ১৭ শতকের প্রথম দিকে এ স্থানেই হরিচরণ গিরি মূল মন্দিরটি নির্মাণ করেন। কালীবাড়ি মন্দিরটি ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আক্রমণে বিধ্বস্ত হয়। তারা মন্দির ও আশ্রমটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। মন্দিরের সেবায়েতসহ প্রায় ১০০ সন্ন্যাসী, ভক্ত এবং সেখানে বসবাসরত সাধারণ মানুষ নিহত হন। যদিও এখন বধ্যভূমির কোনো চিহ্ন নেই। তবে সেটাকে বধ্যভূমি হিসেবে অস্বীকার করার সুযোগ নেই। ছবি: সংগৃহীত

বর্তমান ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ীর আশ্রম। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল। কথিত আছে, শংকরাচার্যের অনুগামী দর্শনার্থী সম্প্রদায় এ কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে। প্রায় ৫০০ বছর আগে বদ্রী নারায়ণের যোশী মঠের সন্ন্যাসী গোপাল গিরি ঢাকায় এসে রমনায় প্রথমে একটি আখড়া স্থাপন করেন। তখন এ আখড়াটি কাঠঘর নামে পরিচিত ছিল।
পরে সম্ভবত ১৭ শতকের প্রথম দিকে এ স্থানেই হরিচরণ গিরি মূল মন্দিরটি নির্মাণ করেন। কালীবাড়ি মন্দিরটি ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আক্রমণে বিধ্বস্ত হয়। তারা মন্দির ও আশ্রমটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। মন্দিরের সেবায়েতসহ প্রায় ১০০ সন্ন্যাসী, ভক্ত এবং সেখানে বসবাসরত সাধারণ মানুষ নিহত হন। যদিও এখন বধ্যভূমির কোনো চিহ্ন নেই। তবে সেটাকে বধ্যভূমি হিসেবে অস্বীকার করার সুযোগ নেই। ছবি: সংগৃহীত

বিশ্বসাহিত্যের কতশত অনুবাদ যে হাতে এসেছে শুধু সেবার কল্যাণে। আর ‘কুয়াশা’, ‘মাসুদ রানা’, ‘তিন গোয়েন্দা’ তো আছেই। এসবের প্রতি আকর্ষণ যখন কমে এসেছে, তখনো সামনে হাজির ‘কিশোর ক্ল্যাসিক’ সিরিজ, যেখানে ছিল বিশ্বখ্যাত সব লেখকের সঙ্গে পরিচয়ের হাতছানি। কত কত নাম বলা যাবে? এরিক মারিয়া রেমার্ক, আলেক্সান্ডার দ্য
১৯ জানুয়ারি ২০২২
আরব সাগরের রানি নামে পরিচিত কোচি একসময় ছিল বন্দর আর মসলার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। কয়েক শতাব্দী আগে এখানেই গড়ে উঠেছিল ইহুদিদের একটি নিবিড় জনগোষ্ঠী। সেই জনগোষ্ঠীর একজন ছিলেন সারা কোহেন। ২০০০ সাল থেকে এই দোকান চালাচ্ছেন থাহা। সারা জীবিত থাকাকালে তাঁর পক্ষ থেকে, আর ২০১৯ সালে সারা ৯৬
৩ দিন আগে
মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল...
৪ দিন আগে
সৃজনশীল সাহিত্য কিন্তু দেয়াললিখন বা স্লোগান দেওয়া নয়। জীবন এতই জটিল যে তাকে কোনো ফর্মুলায় বেঁধে ফেলা যায় না। মানুষের মূল্যবোধ নানা রকমের। আর সেগুলো দিয়ে যে সিস্টেমগুলো পাওয়া যেতে পারে, তা-ও নানা রকমের। একেক লেখকের কমিটমেন্ট একেক রকম মূল্যবোধের কাছে।
৫ দিন আগে