Ajker Patrika

‘আগে জানত না, বিশ্বকাপের পর এখন বাংলাদেশকে সবাই চেনে’

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
বিশ্বকাপ খেলে দেশে ফিরেছে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-২১ হকি দল। ছবি: বিএইচএফ
বিশ্বকাপ খেলে দেশে ফিরেছে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-২১ হকি দল। ছবি: বিএইচএফ

হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে সংবাদকর্মীদের ভিড়। শেষ কবে হকির ক্ষেত্রে এমনটা দেখা গিয়েছিল মনে করা কঠিন। দেশের হকি আলোচনায় আসে বিতর্কিত ঘটনায়। এবার নেতিবাচক কিছু নয়, ভালো খেলে সুনাম বয়ে আনল অনূর্ধ্ব-২১ হকি দল। জুনিয়র হকি বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো অংশ নিয়ে ইতিহাস গড়েছে তারা। মাথা উঁচু করেই ভারত থেকে আজ ফিরেছে দেশে।

২৪ দলের বিশ্বকাপ বাংলাদেশ শেষ করেছে ১৭ নম্বরে থেকে। এই অবস্থান দেখে অর্জনটা পরিষ্কার হবে না। বাংলাদেশ অস্ট্রিয়াকে হারিয়ে জিতেছে চ্যালেঞ্জার ট্রফি। অস্ট্রেলিয়া-ফ্রান্সের মতো শক্তিশালী দলের বিপক্ষে হারলেও লড়াই করেছে চোখে চোখ রেখে। বিশেষ করে আমিরুল ইসলাম তো তাঁর ড্রাগ অ্যান্ড ফ্লিকের ক্ষমতা দিয়ে নজর কেড়েছেন পুরো হকি বিশ্বের। ৬ ম্যাচে ৫ হ্যাটট্রিকে ১৮ গোল করে জিতেছেন সর্বোচ্চ গোলদাতার পুরস্কার।

আজ আমিরুল বলেন, ‘আমাদের যে লক্ষ্য ছিল, তা আমরা পূরণ করে এসেছি। খুব ভালো খেলেছি।’ আমিরুলের প্রশংসায় পঞ্চমুখ কোচ সিগফ্রাইড আইকম্যানও, ‘অবশ্যই সে স্পেশাল। কিন্তু আমরা তার গুণগুলো কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছি। পুরো দল তার শক্তির জন্য খেলেছে, তাকে গোল করার অবস্থায় নিয়ে গিয়েছে। আমরা পেনাল্টি কর্নার নিয়ে কঠোরভাবে কাজ করেছি। ফরোয়ার্ডরা পিসি আদায়ের চেষ্টা করেছে।’

বাংলাদেশের সাফল্যের রহস্য জানতে উদ্গ্রীব ছিল অন্য দলগুলোও। আইকম্যান বলেন, ‘বাংলাদেশ শুধু চ্যালেঞ্জার কাপ জেতেনি, পুরো বিশ্বকে চমকে দিয়েছে। টুর্নামেন্টে থাকা সব দলই বাংলাদেশের কথা বলছিল। হঠাৎ করে সবাই বাংলাদেশকে চিনেছে। আগে খুব একটা জানত না, এখন জানে। আর আমাদের খেলোয়াড়দের তারা ভালোবেসেছে। জিজ্ঞেস করছে, তোমাদের রহস্য কী? এমনটা আগে কখনো হয়নি। বড় বড় দেশও জানতে চাইছে, বাংলাদেশের খেলোয়াড়েরা কীভাবে এমনটা করল।’

সাফল্য এখন জমা পড়েছে অতীতের খাতায়। আইকম্যান আর চুক্তি নবায়ন করছেন না। তবে ঠিকই পরামর্শ দিয়েছেন সামনে এগোতে হলে কী করতে হবে। ডাচ কোচ বলেন, ‘আমি চাই তারা আরও অনুশীলন করুক, এই যাত্রা চালিয়ে যাক। কিন্তু অর্থের প্রয়োজন। আর যদি এগুলো না আসে, তিন সপ্তাহ বা এক মাসের মধ্যে সবকিছু থেমে যাবে। এখন যে গতি তৈরি হয়েছে, সেটা হারানো যাবে না।’

সেই ছন্দ ধরে রাখতে খেলোয়াড়দের রাখতে হবে খেলার মধ্যে। অতীত পেছনে ফেলে আমিরুলরা ভাবতে চান বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নিয়ে, ‘যদি খেলাটা নিয়মিত থাকে, তাহলে আমাদের পারফরম্যান্স আরও ভালো হবে। ভবিষ্যতে আরও ভালো ফল আনব। লিগে সবচেয়ে বেশি জোর দেব। লিগের কোনো বিকল্প নেই। এই প্রিমিয়ার লিগ, ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ—এই টুর্নামেন্টগুলো যখন হবে, তখন বিদেশি যারা বা টপ লেভেলের খেলোয়াড়েরা আসবে, তখন তাদের থেকে আমরা নতুন নতুন বিষয় শিখতে পারব।’

অনিশ্চয়তার ছায়া দূর করতে পারছেন ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) রিয়াজুল হাসানও। তিনি বলেন, ‘আমরা প্রায় তিন মাস আগে একটা মিটিং করছিলাম প্রথম বিভাগের ক্লাবদের ডেকে। আমরা লিগটা শুরু করতে চাই। তারা আমাদের জানাল যে এখন টাকাপয়সার অভাব আছে। তিন-চার মাস করে সময় চেয়েছিল। এই ডিসেম্বর মাসের শেষ পর্যন্ত সময় চাইছিল। এ মাসে আমরা একটা চিঠি দেব।’

হকির এত বড় সাফল্য আসার পরও আজ পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে কোনো পুরস্কারের ঘোষণা আসেনি। রিয়াজুল বলেন, ‘আমি অপেক্ষায় আছি যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় আমাদের কী জানায়। সচিবের কাছে বলব যে এগিয়ে আসুন, আমরাও কিছু এগিয়ে আসি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...