রুমা মোদক

টিভিতে একটা বিজ্ঞাপন দেখানো হয়। প্রৌঢ় মা একে ডাকছেন, ওকে ডাকছেন, ছেলেকে-নাতনিকে। কারও সে ডাক শোনার সময় নেই, সবাই ব্যস্ত। বিজ্ঞাপনে পরে বলা হচ্ছে, আপনার সব কথা শোনার জন্য আমরা আছি। সে তারা আসলেই আছে কি না, এটা আমাদের আলোচ্য বিষয় নয়।
বিষয় হলো আমাদের মা-বাবার জীবন কী করে কাটে? তাঁরা সমাজের সবচেয়ে উপেক্ষিত অংশ। আমরা আজীবন তাঁদের আঙুল ধরে উঠে দাঁড়িয়েছি, হাঁটতে শিখেছি, জীবন গড়ে নিয়েছি। তাঁরা কখনো অপত্যে, কখনো প্রাচ্যদেশীয় সংস্কৃতির কারণে, কখনো ব্যক্তিক দায়িত্বে, কখনো সামাজিক দায়িত্বে সন্তানদের লালনপালন করেন, শিক্ষা-দীক্ষা প্রতিষ্ঠার পথ দেখিয়ে দেন। নিজেদের জীবনের শখ-আহ্লাদ অপূর্ণ রেখে সঞ্চয় করেন, অতঃপর সন্তানদের হাতে তুলে দেন জীবনের সর্বস্ব। বয়স হয়ে গেলে সেই সন্তানের কাছেই পিতা-মাতা হয়ে ওঠেন বোঝা। পিতা-মাতাকে সম্মান আর সময় দেওয়ার মতো অবকাশ থাকে না অধিকাংশ সন্তানের।
মা-বাবা সন্তানকে ভাবেন তাঁদেরই সম্পদ। গর্ভে ধারণ থেকে শুরু করে জন্মদানের জীবনপণ প্রক্রিয়া, কোলের ওমে বড় করা, আধো বুলি থেকে জীবনের মহাযজ্ঞের জন্য তৈরি করে তোলা—সবই যে তাঁদের হাত ধরে হয়। সবই যে তাঁদের নিজের নিশ্বাসের মতো চেনা। এই সন্তানদের যে নিজের জগৎ হয়, তাদের সেই জগতে ছেড়ে দিতে হয়, আমাদের প্রাচ্যের মা-বাবা তা জানেন না মোটেই। উন্নত দেশের মতো এই প্রৌঢ় মা-বাবার দায়িত্ব যেমন রাষ্ট্র বা সমাজ নেয় না, শিশুর দায়িত্বও নেয় না।
এই শিশুর যুবক বেলায় তার ওপর অধিকার ছেড়ে দেওয়া মা-বাবার কাছে মৃত্যুর মতোই নিরুপায় আর নির্মম সত্য। তাঁরা সহজে তা মানতে পারেন না। আগের জীবনে যে শারীরিক-মানসিক, আর্থিক সমর্থন দিয়ে তিনি নিঃস্ব হয়েছেন, শেষ বয়সে সেসব ফিরে পাওয়ার ক্ষমতাও আর নেই। টের পান তাঁর সন্তান আর তাঁর নেই, এক অসহায়ত্বের কাছে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হন তাঁরা।
আমাদের অধিকাংশ সন্তান কখনোই বিষয়টি তলিয়ে ভাবে না। মা-বাবার কাছে যা আজীবনের অধিকার আঁকড়ে থাকার লড়াই, সন্তানদের কাছে তা হয়ে ওঠে উপেক্ষা আর অবহেলা প্রদর্শন। এই সংকটে পিতা-মাতার ভূমিকা কখনো অযৌক্তিকও হয়ে ওঠে, অস্বীকার করি না। কিন্তু সমগ্র জীবনের বিনিময়ে সন্তানকে তৈরি করার পর এই বার্ধক্যে তাঁদের অধিকার আঁকড়ে থাকার অযৌক্তিকতাকে মেনে ও মানিয়ে চলার দায়িত্ব সর্বাংশে সন্তানের ওপরই বর্তায়। কারণ মূলত তাঁদের তখন আর কোনো উপায় থাকে না। না থাকে নিজেদের আয়-রোজগারের মতো শারীরিক সামর্থ্য, না থাকে আশ্রয় নেওয়ার মতো কোনো জায়গা। অধিকার, সংসার, আশ্রিতের মতো অপমানজনক অবস্থান মেনে নিয়েও আশ্রয় হারানোর ভয়ে কুণ্ঠিত তাঁদের জীবন হয়ে ওঠে দুর্বিষহ।
আমার চারপাশে আমি কয়েকটি পরিবার দেখেছি, পিতা-মাতার প্রতি এমন অমানবিক আচরণ; যা পাড়া-পড়শি, সালিস বৈঠক পর্যন্ত গড়িয়েছে। অনেকে অভিভাবকেরও দোষ দেবেন, উচ্চাকাঙ্ক্ষার পেছনে দৌড়াতে শিখিয়ে স্বার্থপর করে গড়ে তুলেছেন তো অভিভাবকেরাই। এ কথা অস্বীকার করার জো নেই। একটা ভালো রেজাল্টের জন্য ফাঁস হয়ে যাওয়া প্রশ্নপত্র কিনতেও দ্বিধা করেননি তিনি। নিশ্চয়ই সে অভিভাবকেরই দোষ। কিন্তু আপাদমস্তক অনৈতিকতা আর দুর্নীতিতে ডুবে থাকা একটা
সিস্টেমে অভিভাবকেরাই বা কোথায় নীতি-নৈতিকতা শিক্ষা পান?
বলছিলাম আমাদের প্রৌঢ় অভিভাবকদের সময় কিংবা জীবন কাটানোর কথা। নিঃসঙ্গ দিনে বসে বসে সিরিয়াল দেখা আর দুবেলা অন্ন জোগানোর দিন থেকে আমরা কি তাঁদের মুক্তি দিতে পারি না? সামান্য একটু সময়ই তো!
লেখক: কথাসাহিত্যিক।

টিভিতে একটা বিজ্ঞাপন দেখানো হয়। প্রৌঢ় মা একে ডাকছেন, ওকে ডাকছেন, ছেলেকে-নাতনিকে। কারও সে ডাক শোনার সময় নেই, সবাই ব্যস্ত। বিজ্ঞাপনে পরে বলা হচ্ছে, আপনার সব কথা শোনার জন্য আমরা আছি। সে তারা আসলেই আছে কি না, এটা আমাদের আলোচ্য বিষয় নয়।
বিষয় হলো আমাদের মা-বাবার জীবন কী করে কাটে? তাঁরা সমাজের সবচেয়ে উপেক্ষিত অংশ। আমরা আজীবন তাঁদের আঙুল ধরে উঠে দাঁড়িয়েছি, হাঁটতে শিখেছি, জীবন গড়ে নিয়েছি। তাঁরা কখনো অপত্যে, কখনো প্রাচ্যদেশীয় সংস্কৃতির কারণে, কখনো ব্যক্তিক দায়িত্বে, কখনো সামাজিক দায়িত্বে সন্তানদের লালনপালন করেন, শিক্ষা-দীক্ষা প্রতিষ্ঠার পথ দেখিয়ে দেন। নিজেদের জীবনের শখ-আহ্লাদ অপূর্ণ রেখে সঞ্চয় করেন, অতঃপর সন্তানদের হাতে তুলে দেন জীবনের সর্বস্ব। বয়স হয়ে গেলে সেই সন্তানের কাছেই পিতা-মাতা হয়ে ওঠেন বোঝা। পিতা-মাতাকে সম্মান আর সময় দেওয়ার মতো অবকাশ থাকে না অধিকাংশ সন্তানের।
মা-বাবা সন্তানকে ভাবেন তাঁদেরই সম্পদ। গর্ভে ধারণ থেকে শুরু করে জন্মদানের জীবনপণ প্রক্রিয়া, কোলের ওমে বড় করা, আধো বুলি থেকে জীবনের মহাযজ্ঞের জন্য তৈরি করে তোলা—সবই যে তাঁদের হাত ধরে হয়। সবই যে তাঁদের নিজের নিশ্বাসের মতো চেনা। এই সন্তানদের যে নিজের জগৎ হয়, তাদের সেই জগতে ছেড়ে দিতে হয়, আমাদের প্রাচ্যের মা-বাবা তা জানেন না মোটেই। উন্নত দেশের মতো এই প্রৌঢ় মা-বাবার দায়িত্ব যেমন রাষ্ট্র বা সমাজ নেয় না, শিশুর দায়িত্বও নেয় না।
এই শিশুর যুবক বেলায় তার ওপর অধিকার ছেড়ে দেওয়া মা-বাবার কাছে মৃত্যুর মতোই নিরুপায় আর নির্মম সত্য। তাঁরা সহজে তা মানতে পারেন না। আগের জীবনে যে শারীরিক-মানসিক, আর্থিক সমর্থন দিয়ে তিনি নিঃস্ব হয়েছেন, শেষ বয়সে সেসব ফিরে পাওয়ার ক্ষমতাও আর নেই। টের পান তাঁর সন্তান আর তাঁর নেই, এক অসহায়ত্বের কাছে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হন তাঁরা।
আমাদের অধিকাংশ সন্তান কখনোই বিষয়টি তলিয়ে ভাবে না। মা-বাবার কাছে যা আজীবনের অধিকার আঁকড়ে থাকার লড়াই, সন্তানদের কাছে তা হয়ে ওঠে উপেক্ষা আর অবহেলা প্রদর্শন। এই সংকটে পিতা-মাতার ভূমিকা কখনো অযৌক্তিকও হয়ে ওঠে, অস্বীকার করি না। কিন্তু সমগ্র জীবনের বিনিময়ে সন্তানকে তৈরি করার পর এই বার্ধক্যে তাঁদের অধিকার আঁকড়ে থাকার অযৌক্তিকতাকে মেনে ও মানিয়ে চলার দায়িত্ব সর্বাংশে সন্তানের ওপরই বর্তায়। কারণ মূলত তাঁদের তখন আর কোনো উপায় থাকে না। না থাকে নিজেদের আয়-রোজগারের মতো শারীরিক সামর্থ্য, না থাকে আশ্রয় নেওয়ার মতো কোনো জায়গা। অধিকার, সংসার, আশ্রিতের মতো অপমানজনক অবস্থান মেনে নিয়েও আশ্রয় হারানোর ভয়ে কুণ্ঠিত তাঁদের জীবন হয়ে ওঠে দুর্বিষহ।
আমার চারপাশে আমি কয়েকটি পরিবার দেখেছি, পিতা-মাতার প্রতি এমন অমানবিক আচরণ; যা পাড়া-পড়শি, সালিস বৈঠক পর্যন্ত গড়িয়েছে। অনেকে অভিভাবকেরও দোষ দেবেন, উচ্চাকাঙ্ক্ষার পেছনে দৌড়াতে শিখিয়ে স্বার্থপর করে গড়ে তুলেছেন তো অভিভাবকেরাই। এ কথা অস্বীকার করার জো নেই। একটা ভালো রেজাল্টের জন্য ফাঁস হয়ে যাওয়া প্রশ্নপত্র কিনতেও দ্বিধা করেননি তিনি। নিশ্চয়ই সে অভিভাবকেরই দোষ। কিন্তু আপাদমস্তক অনৈতিকতা আর দুর্নীতিতে ডুবে থাকা একটা
সিস্টেমে অভিভাবকেরাই বা কোথায় নীতি-নৈতিকতা শিক্ষা পান?
বলছিলাম আমাদের প্রৌঢ় অভিভাবকদের সময় কিংবা জীবন কাটানোর কথা। নিঃসঙ্গ দিনে বসে বসে সিরিয়াল দেখা আর দুবেলা অন্ন জোগানোর দিন থেকে আমরা কি তাঁদের মুক্তি দিতে পারি না? সামান্য একটু সময়ই তো!
লেখক: কথাসাহিত্যিক।

তিনবারের প্রধানমন্ত্রী, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আর নেই। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস থেকে নিভে গেল আরেকটি আলো। এত দীর্ঘ লড়াই, এত প্রতিকূলতার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা অসমসাহসী এই নারী শেষ বাঁকে এসে আর পারলেন না।
২০ ঘণ্টা আগে
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া গতকাল ৩০ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সময় সকাল ৬টায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। বাংলাদেশের রাজনীতির আকাশে বহু তারকা জ্বলে উঠেছে, বহু তারা আবার নিভে গেছে ক্ষমতার কালো ধোঁয়ায়।
২০ ঘণ্টা আগে
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে বাংলাদেশ হারাল একজন দেশপ্রেমী, অকুতোভয়, নির্ভীক ও আপসহীন নেত্রীকে। ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে তিনি ভালোবাসতেন এই দেশকে, এ দেশের মাটি ও মানুষকে। তিনি ন্যায়পরায়ণতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন ২০০৩ সালে (মরণোত্তর) স্বাধীনতা পুরস্কার...
২০ ঘণ্টা আগে
আরও একটি বছরের যবনিকাপাত ঘটল। শেষ হয়ে গেল ২০২৫ সাল। নানা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক টানাপোড়েন, উত্থান-পতন, প্রত্যাশা-হতাশার মাঝে সমাপ্তি ঘটেছে বছরটির। সময় এখন পেছন ফিরে তাকানোর—কী পেয়েছি, কী পাইনি; কী আশা করেছিলাম, কোথায় হতাশ হয়েছি, কী কী করতে চেয়েছি, কী কী করতে পারিনি—স্বাভাবিকভাবেই...
২০ ঘণ্টা আগে