Ajker Patrika

ভারতে শেখ হাসিনার পরিণতি নিয়ে ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশনের তদন্ত সংস্থাকে যা বলেছেন বদরুদ্দীন উমর

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৯: ০১
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার সাক্ষী সদ্যপ্রয়াত বদরুদ্দীন উমর ট্রাইব্যুনালের তদন্ত দলের কাছে লিখিত জবানবন্দি দিয়ে গেছেন। ছবি: সংগৃহীত
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার সাক্ষী সদ্যপ্রয়াত বদরুদ্দীন উমর ট্রাইব্যুনালের তদন্ত দলের কাছে লিখিত জবানবন্দি দিয়ে গেছেন। ছবি: সংগৃহীত

সদ্যপ্রয়াত লেখক ও গবেষক বদরুদ্দীন উমর বলেছেন, আওয়ামী লীগের শাসনামলে শেখ হাসিনা বড় বড় ধরনের সব অপরাধ করেছেন। আর তাঁকে এ সময় ভারত সমর্থন দিয়ে গেছে। ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা র-এর সঙ্গে তাঁর যে গভীর সম্পর্ক ছিল, তা কোনো নতুন ব্যাপার ছিল না। এ সম্পর্কের ভিত্তি ছিল যে, ভারতই একমাত্র রাষ্ট্র, যেটা তাঁকে ক্ষমতায় বসিয়েছে। ফলে পতনের পরে তিনি ভারতে পালিয়েছেন।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন সংস্থার তদন্ত কর্মকর্তার কাছে দেওয়া বক্তব্যে বদরুদ্দীন উমর এসব কথা বলেছেন বলে প্রসিকিউশন সূত্র জানিয়েছে।

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় সারা দেশে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ট্রাইব্যুনালে গিয়ে তাঁর সাক্ষ্য দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এর আগেই আজ রোববার (৭ সেপ্টেম্বর) সকালে মারা যান তিনি। তাঁর সাক্ষ্যের বিষয়ে প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামিম আজ সাংবাদিকদের বলেন, ট্রাইব্যুনাল আইনের ১৯(২) ধারা অনুযায়ী, কোনো সাক্ষী তদন্ত কর্মকর্তার কাছে সাক্ষ্য দিয়ে মারা গেলে প্রসিকিউশনের আবেদনে ট্রাইব্যুনাল তা গ্রহণ করতে পারেন।

লিখিত বক্তব্যে বদরুদ্দীন উমর শেখ হাসিনার ভারতে অবস্থান প্রসঙ্গে বলেন, ‘সে ওখানেই থাকবে। ওখানে থাকাটাই একধরনের শাস্তি—সেখানে সে জ্বলে-পুড়ে মরবে। আরেকটা শাস্তি হতে পারে—যেটা আমি মনে করি, ভারত সরকার তাকে মেরে ফেলবে, নিজেদের বিব্রতকর পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে। তারা যত দিন তাকে রাখবে, বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো হবে না। আর সেই সম্পর্ক ভালো করতে গেলে তার ব্যাপারে একটা ফয়সালা করতে হবে। তাকে ওখানে রাখা যায় কি যায় না—সে প্রশ্ন না। তবে যদি মেরে ফেলে নরেন্দ্র মোদি, আশ্চর্য হবেন না। তাঁরা এমনভাবে বিষয়টা সাজাবে যে মনে হবে বাংলাদেশি কেউ তাকে মেরেছে। এ রকম একটি সংগঠিত প্রচার চালাবে।’

তদন্ত কর্মকর্তার কাছে দেওয়া বক্তব্যে বদরুদ্দীন উমর বলেছেন, শেখ হাসিনা বাংলাদেশে ক্ষমতায় ছিলেন নির্বাচনগুলো নিয়ন্ত্রণ করার মাধ্যমে। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত প্রতিটি নির্বাচন—এগুলো প্রতিটা তিনি ম্যানিপুলেট করেছেন। এগুলো সম্ভব হয়েছে কারণ রাষ্ট্রের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের ওপর, নির্বাচন কমিশন থেকে শুরু করে পুলিশ ও আমলাতন্ত্র—সবকিছুর ওপর তিনি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। প্রথম থেকেই শেখ হাসিনা ঠিক করেছিলেন যে নির্বাচন নিয়ন্ত্রণ করবেন। সেটি করতে গেলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার রাখা সম্ভব নয়। অথচ ১৯৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে তিনি আন্দোলন করেছিলেন, সংশোধনী এনেছিলেন। কোনো নীতিবোধ বা নৈতিক লজ্জাবোধ তাঁর ছিল না। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে তিনিই সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করে দিলেন। কারণ, তিনি বুঝেছিলেন, নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে পরের বার তাঁরা আর জিততে পারবেন না। সুতরাং, নির্বাচনে জিততে হলে তাঁকে সবকিছু নিজের নিয়ন্ত্রণে আনতেই হবে।

বদরুদ্দীন উমর বলেন, শেখ হাসিনা প্রশাসনকে দুভাবে নিয়ন্ত্রণ করেছেন। প্রথমত ঘুষ, টাকা-পয়সা ও সুযোগ-সুবিধা দিয়ে। দ্বিতীয়ত হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে। ২০০৯ সালের মধ্যে এ নিয়ন্ত্রণ স্থাপন করেন। এ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে তিনি ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনগুলো করেছেন। ২০১৪ সালে ভোটকেন্দ্রে কাউকে ঢুকতেই দেননি। ২০১৮ সালে ‘রাতের ভোট’ হয়েছে। দিনে ভোট হলেও আসলে ভোট হয়ে গেছে আগের রাতে। ২০২৪ সালেও একই ঘটনা। এভাবে নির্বাচন করেও তিনি জয়লাভ করেছেন, যদিও জনসমর্থনের কোনো ভিত্তি ছিল না। এসব নির্বাচনে দেখা গেছে, তাঁর দল ৩০০ সিটের মধ্যে চার-পাঁচটি সিটও পাবে কি না সন্দেহ। এরপরও তিনি জয়ী হয়েছেন শুধু প্রশাসনের ওপর চূড়ান্ত নিয়ন্ত্রণের কারণে। এটা গোপন কিছু নয়—সবাই জানেন। একটি সরকার যদি চায় যে তারা এভাবে নির্বাচন নিয়ন্ত্রণ করবে, তাহলে সেটা ঠেকানো কঠিন।

বদরুদ্দীন উমর আরও বলেন, শুধু নির্বাচনের কারচুপিই নয়, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ওপর নিষ্ঠুর দমন চালিয়েছেন শেখ হাসিনা। কোনো রাজনৈতিক দল যাতে কার্যকরভাবে নড়াচড়া করতে না পারে, সে জন্যও নির্যাতন করা হয়েছে। প্রচুর মানুষকে গ্রেপ্তার করে বছরের পর বছর আটকে রাখা হয়েছে বিনা কারণে। ‘আয়নাঘর’ নামে টর্চার সেল তৈরি করা হয়েছে—যেটা শেখ মুজিবের আমলেও ছিল না। শেখ মুজিব বিরোধীদের সরাসরি হত্যা করতেন; শেখ হাসিনা শুধু হত্যা করতেন না, নির্যাতনও করতেন এবং এতে একধরনের বিকৃত আনন্দ পেতেন। এভাবে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহার করে তিনি নির্বাচনব্যবস্থাকে নিজের করায়ত্ত করেছেন এবং প্রকৃতপক্ষে জনগণের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক একেবারেই ছিন্ন হয়ে গেছে।

গুম–খুন নিয়ে তিনি বলেন, গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড —এ ধরনের কাজ কেবল সে ব্যক্তি করতে পারেন, যাঁর হাতে রাষ্ট্রক্ষমতা রয়েছে। যাঁর অধীনে ইন্টেলিজেন্স বিভাগ, ডিজিএফআইয়ের মতো সংস্থা থাকে। ’আয়নাঘর’-এর মতো গোপন নির্যাতন সেল কিংবা গুমের মতো অপরাধ—এসব তো ডিজিএফআইয়ের মাধ্যমে ঘটানো হয়েছে। যতগুলো অপহরণের ঘটনা দেখা যায়, এর পেছনে ডিজিএফআইয়ের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডও সংঘটিত করেছে। তারা এসব করেছে বিরোধী দল, বিশেষ করে বিএনপিকে নিষ্ক্রিয় করে রাখার লক্ষ্যে। শেখ হাসিনা তাঁর শাসনামলে বিএনপিসহ সমস্ত বিরোধী রাজনৈতিক দলকে অকার্যকর করে ফেলেছেন। তাঁর বিরোধিতা যাতে না হয়, সে জন্য। প্রশাসন ও পুলিশব্যবস্থার ওপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ এবং তা নিজের স্বার্থে ব্যবহার করার মাধ্যমে তিনি ক্ষমতায় টিকে থেকেছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

খালেদা জিয়ার জানাজায় তারেক রহমানকে সান্ত্বনা জানালেন প্রধান উপদেষ্টা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আজ বুধবার খালেদা জিয়ার জানাজায় তারেক রহমানকে সান্ত্বনা জানান প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: প্রেস উইং
আজ বুধবার খালেদা জিয়ার জানাজায় তারেক রহমানকে সান্ত্বনা জানান প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: প্রেস উইং

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) চেয়ারপারসন, তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও গণতান্ত্রিক রাজনীতির শীর্ষ নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জানাজায় উপস্থিত হয়ে তাঁর শোকাহত জ্যেষ্ঠ পুত্র ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে সান্ত্বনা জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

জানাজা শেষে প্রধান উপদেষ্টা তারেক রহমানের সঙ্গে কথা বলেন এবং এই কঠিন সময়ে তাঁর ও পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করেন। তিনি বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক অবদান স্মরণ করে বলেন, দেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে তাঁর ভূমিকা ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

এ সময় বিএনপির শীর্ষ নেতা, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি, কূটনৈতিক মহল এবং সর্বস্তরের মানুষ জানাজায় অংশ নেন। সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর মৃত্যুতে দেশজুড়ে শোকের আবহ বিরাজ করছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

পোস্টাল ভোট দিতে ১১ লাখ নিবন্ধন, ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় বাড়াল ইসি

বাসস, ঢাকা  
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটে পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে ভোট দিতে এখন পর্যন্ত ১১ লাখ ২৫ হাজার ২৬৩ জন ভোটার নিবন্ধন করেছেন। ভোটারদের অনুরোধের প্রেক্ষিতে নিবন্ধনের সময়সীমা আগামী ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত বাড়িয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

আজ বুধবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, মোট নিবন্ধিত ভোটারের মধ্যে পুরুষ ৯ লাখ ৮০ হাজার ৪২৪ জন এবং নারী ১ লাখ ৪৪ হাজার ৮৩৭ জন।

ইসি সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ জানান, পূর্বঘোষিত সময়সীমা আজ ৩১ ডিসেম্বর শেষ হওয়ার কথা থাকলেও প্রবাস ও দেশের অভ্যন্তরের ভোটারদের বিশেষ অনুরোধে নিবন্ধনের সময় আরও পাঁচ দিন বাড়ানো হয়েছে। ‘পোস্টাল ভোট বিডি’ অ্যাপের মাধ্যমে প্রবাসী বাংলাদেশি, নির্বাচনী দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং নিজ এলাকার বাইরে কর্মরত সরকারি চাকরিজীবীরা এই নিবন্ধনের সুযোগ পাচ্ছেন। এছাড়া আইনি হেফাজতে (কারাগারে) থাকা ভোটাররাও পোস্টাল ভোটের এই সুবিধা নিতে পারবেন।

প্রবাসী ভোটারদের পরিসংখ্যান

প্রবাসী ভোটারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি নিবন্ধন করেছেন সৌদি আরব থেকে, যার সংখ্যা ১ লাখ ৯৭ হাজার ১২ জন। এরপর কাতারে ৬৮ হাজার ৬৬৮, মালয়েশিয়ায় ৬৩ হাজার ৮৩, ওমানে ৫০ হাজার ৩৯ এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতে ৩১ হাজার ৫৫৫ জন ভোটার নিবন্ধন সম্পন্ন করেছেন। গত ১৮ নভেম্বর থেকে চালু হওয়া এই অ্যাপের মাধ্যমে বিশ্বের ১৪৮টি দেশের প্রবাসীরা নিবন্ধনের সুযোগ পাচ্ছেন।

দেশের অভ্যন্তরে নিবন্ধন

দেশের ভেতরে ‘ইন-কান্ট্রি পোস্টাল ভোট’ ক্যাটাগরিতে নিবন্ধন করেছেন ৪ লাখ ৭১ হাজার ৭৮৪ জন। জেলাভিত্তিক তালিকায় শীর্ষে রয়েছে কুমিল্লা, যার সংখ্যা ৮৮ হাজার ৬৮২ জন। এরপর ঢাকায় ৮২ হাজার ১৮৫ ও চট্টগ্রামে ৭৫ হাজার ৫৮৯ জন। আসনভিত্তিক হিসেবে ফেনী-৩ আসনে সর্বোচ্চ ১৪ হাজার ১৩৯ জন নিবন্ধন করেছেন। এরপর চট্টগ্রাম-১৫ আসনে ১১ হাজার ৫৮৯ জন ও নোয়াখালী-১ আসনে ১১ হাজার ৪৭৬ জন নিবন্ধন করেছেন।

ব্যালট প্রেরণ কার্যক্রম

প্রবাসী ভোটারদের নিবন্ধন বিষয়ক ‘ওসিভি-এসডিআই’ প্রকল্পের টিম লিডার সালীম আহমাদ খান বাসসকে নিশ্চিত করেছেন, গত ১২ দিনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ৪ লাখ ৪৫ হাজার ৭২৫ জন প্রবাসী ভোটারের ঠিকানায় পোস্টাল ব্যালট পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে গতকাল মঙ্গলবার এক দিনেই পাঠানো হয়েছে ২৭ হাজার ৪৪২টি ব্যালট।

নির্বাচন কমিশন জানায়, নিবন্ধনের জন্য প্রবাসী ভোটারদের অবশ্যই সংশ্লিষ্ট দেশের মোবাইল নম্বর ব্যবহার করতে হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

খালেদা জিয়ার জানাজায় এসে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পাকিস্তানের স্পিকারের কুশল বিনিময়

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭: ৪৩
আজ বুধবার বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জানাজা ও দাফন অনুষ্ঠানের আগে ঢাকায় কুশল বিনিময় করেন পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের স্পিকার সরদার আয়াজ সাদিক ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর। ছবি: প্রেস উইং
আজ বুধবার বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জানাজা ও দাফন অনুষ্ঠানের আগে ঢাকায় কুশল বিনিময় করেন পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের স্পিকার সরদার আয়াজ সাদিক ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর। ছবি: প্রেস উইং

সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জানাজা ও দাফন অনুষ্ঠানের আগে ঢাকায় কুশল বিনিময় করেছেন পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের স্পিকার সরদার আয়াজ সাদিক ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর।

আজ বুধবার ঢাকায় অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানের প্রাক্কালে দুই দেশের শীর্ষ এই প্রতিনিধির মধ্যে শুভেচ্ছা বিনিময় হয়। খালেদা জিয়ার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় অংশ নিতে তাঁরা উভয়েই ঢাকায় অবস্থান করছেন।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক মহল গভীর শোক প্রকাশ করেছে এবং তাঁর জানাজায় অংশ নিতে একাধিক দেশের প্রতিনিধিরা ঢাকায় এসেছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

২০২৫ সালজুড়ে আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে ‘মব সন্ত্রাস’: আইন ও সালিশ কেন্দ্র

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
২০২৫ সালজুড়ে আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে ‘মব সন্ত্রাস’: আইন ও সালিশ কেন্দ্র

২০২৫ সাল জুড়ে ‘মব সন্ত্রাস’ আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। কোনো ধরনের প্রমাণ, তদন্ত বা আইনিপ্রক্রিয়া অনুসরণ না করে, সন্দেহ, গুজব সৃষ্টি করে মানুষকে মারধর ও হত্যা করা হয়েছে। ‘তওহীদি জনতা’র নামে বেআইনিভাবে মব তৈরি করে শিল্প-সংস্কৃতি কেন্দ্র ভাঙচুর, বাউল সম্প্রদায়ের ওপর হামলা, এমনকি কবর থেকে তুলে লাশ পুড়িয়ে দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে। মুক্তিযোদ্ধাসহ বিরুদ্ধ মতের মানুষকে নানাভাবে হেনস্তা করা হয়েছে। এসব ঘটনায় অনেক ক্ষেত্রেই আইন প্রয়োগকারী সংস্থার নিষ্ক্রিয়তা এবং অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনার ক্ষেত্রে উদাসীনতার প্রবণতা লক্ষ্য করা গিয়েছে, যা দেশে আইনের শাসনের জন্য চূড়ান্ত হুমকিস্বরূপ এবং সমাজে নজিরবিহীন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে।

বেসরকারি সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) ‘বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি ২০২৫’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ সব কথা বলা হয়েছে। আজ বুধবার এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।

আসকের তথ্যানুযায়ী, ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত মব সন্ত্রাসে কমপক্ষে ১৯৭ জন নিহত হয়েছে। ২০২৪ সালে এই সংখ্যা ছিল ১২৮ জন।

আসকের বিশ্লেষণে দেখা গেছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়কালে কমপক্ষে ২৯৩ জন নাগরিক মব সন্ত্রাসের শিকার হয়ে নিহত হয়েছে। মবের শিকার হয়ে ২০২৫ সালে ঢাকা জেলায় সর্বাধিক ২৭, গাজীপুরে ১৭, নারায়ণগঞ্জে ১১ জন নির্মমভাবে নিহত হয়েছে। ২০২৫ সালের আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে গণপিটুনির সংখ্যা তুলনামূলকভাবে অন্যান্য মাসের থেকে বেশি ঘটেছে। এই সময়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা কর্মীরাও গণপিটুনিতে নিহত হয়েছেন, যদিও অধিকাংশ ভুক্তভোগী ছিলেন দল-মত নিরপেক্ষ সাধারণ নাগরিক।

আসকের তথ্য সংরক্ষণ ইউনিটের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, ২০২৫ সালে কমপক্ষে ৩৮ জন ব্যক্তি বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হয়েছে। এ সব ঘটনা সংঘটিত হয়েছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে, নির্যাতনে, কথিত ‘গুলিতে’ বা ‘বন্দুকযুদ্ধের’ নামে। ২০২৫ সালে কমপক্ষে ১০৭ জন ব্যক্তি দেশের বিভিন্ন কারাগারে মৃত্যুবরণ করেছে। এর মধ্যে ৬৯ জন হাজতি এবং কয়েদি ৩৮ জন। ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে দেশে অন্তত ৪০১টি রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় প্রায় ৪ হাজার ৭৪৪ জন আহত এবং ১০২ জন নিহত হয়েছে। সহিংসতার এই চিত্র কেবল প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যকার সংঘাতে সীমাবদ্ধ নয়; বরং দলীয় অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও বিভক্তিও সহিংসতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।

আসকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৫ সালে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সহিংসতা, ভয়ভীতি প্রদর্শন ও আইনি নিপীড়নের ঘটনা একটি উদ্বেগজনক ধারায় পৌঁছেছে। ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে অন্তত ৩৮১ জন সাংবাদিক নির্যাতন ও হয়রানির তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দ্বারা নির্যাতন, হয়রানি বা হুমকির শিকার হয়েছেন অন্তত ২৩ জন সাংবাদিক। প্রাণনাশের হুমকি পেয়েছেন ২০ জন। প্রকাশিত সংবাদ বা মতামতকে কেন্দ্র করে মামলার সম্মুখীন হয়েছেন কমপক্ষে ১২৩ জন সাংবাদিক। পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় সরাসরি হামলার শিকার হয়েছেন ১১৮ জন সাংবাদিক। এ সময়কালে দুর্বৃত্ত কর্তৃক হত্যার শিকার হয়েছেন ৩ জন সাংবাদিক এবং দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে রহস্যজনকভাবে ৪ জন সাংবাদিকের লাশ উদ্ধারের ঘটনা ঘটে।

আসকের তথ্যানুযায়ী, ২০২৫ সালে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর কমপক্ষে ৪২টি হামলার ঘটনা ঘটেছে। এই হামলাসমূহে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৩৩টি বাড়িঘর, অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে ৩৬টি বসত ঘরে। এ ছাড়া ৪টি মন্দিরে হামলা, ৬৪টি প্রতিমা ভাঙচুর, ৯টি জমি দখলের ঘটনা ঘটেছে। এ সব ঘটনায় নিহত হয়েছে ১ জন, আহত হয়েছে কমপক্ষে ১৫ জন। এ বছর দেশে ২১৭ জন নারী স্বামীর মাধ্যমে হত্যার শিকার হয়েছেন এবং ৬৩ জন নারীকে স্বামীর পরিবারের সদস্যরা হত্যা করেছে। নিজের পরিবারের সদস্যদের হাতেও ৫১ জন নারী প্রাণ হারিয়েছেন। পারিবারিক সহিংসতা থেকে মুক্তির পথ খুঁজে না পেয়ে অন্তত ১৬৮ জন নারী আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছেন। ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে ধর্ষণের ৭৪৯টি ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ৫৬৯টি ছিল একক ধর্ষণ এবং ১৮০টি দলবদ্ধ ধর্ষণ। ধর্ষণের পর অন্তত ৩৬ জন নারীকে হত্যা করা হয়েছে, ৭ জন নারী আত্মহত্যা করেছেন এবং ধর্ষণের চেষ্টার পর প্রাণ হারিয়েছেন আরও ৬ জন নারী।

আসকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত অন্তত ৪১০ জন শিশু বিভিন্ন ধরনের সহিংসতায় প্রাণ হারিয়েছে। এসব ঘটনার মধ্যে রয়েছে ধর্ষণের পর হত্যা, শারীরিক নির্যাতন, অপহরণ, আত্মহত্যা এবং বিস্ফোরণে মৃত্যু।

আসক মনে করে, দেশে নতুন রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রতি জনগণের মধ্যে আশা ও প্রত্যাশা সৃষ্টি হলেও বাস্তব পর্যায়ে বৈষম্য, নিপীড়ন ও দমন-পীড়নের চিত্রে আশানুরূপ ইতিবাচক পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়নি। বরং কিছু ক্ষেত্রে মানবাধিকারের সামগ্রিক পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে বলে লক্ষ্য করা গেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত