Ajker Patrika

সয়াবিনের বিকল্প হতে পারে সূর্যমুখী

রোকন উদ্দীন, ঢাকা
গ্রাফিক্স: আজকের পত্রিকা
গ্রাফিক্স: আজকের পত্রিকা

যখন সবুজের মাঝে হলুদের জ্যোতি ছড়িয়ে পড়ে, প্রকৃতি যেন এক অনন্য কবিতায় রূপ নেয়। সেই দৃশ্য এড়ানো অসম্ভব—মুগ্ধ চোখ সেখানে থেমে যায়, কেউ কাছে গিয়ে জড়িয়ে ধরে, কেউবা মুহূর্তটিকে ধরে রাখে ছবির ফ্রেমে। অগ্রহায়ণ-পৌষের শেষ বিকেলে সূর্যের আলো যখন মিশে যায় পুষ্পমঞ্জরির রঙে, মাঝখানে ছোট কালো বীজগুলো যেন রত্নখচিত মুকুট হয়ে ওঠে। মনে হয়, ফসলের মাঠে সৌরভ ছড়িয়ে পড়ছে, আগুন হয়ে ঝলমল করছে। এসব বর্ণিল গল্পের নায়ক সূর্যমুখী ফুল।

সারা দেশের ফসলের মাঠে হরহামেশাই এখন দেখা মেলে সূর্যমুখীর। এর সৌরভ ছড়ানোর নেপথ্যে আছেন গ্রাম-বাংলার কৃষাণেরা। তবে তাঁরা মুগ্ধতার টানে নয়, চাষ করেন মুনাফার টানে—বীজ থেকে উৎপাদিত তেলের বাড়তি দামের আশায়। গুণের কারণে বাজারে সূর্যমুখী তেলের চাহিদা বেড়েই চলেছে, দামেও রয়েছে বাড়তি কদর। প্রায় একই খরচে বেশি লাভের হাতছানি কে উপেক্ষা করবে! তাই সূর্যমুখী এখন শুধু শস্য নয়, কৃষকের চোখে এক সম্ভাবনার আলোকময় ক্ষেত্র।

খাতসংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, সঠিক পরিকল্পনা এবং প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিলে দেশে সরিষার পাশাপাশি সূর্যমুখী তেলের উৎপাদন উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ানো সম্ভব। সূর্যমুখী তেলের চাষ বৃদ্ধি পেলে সয়াবিন তেলের ওপর নির্ভরশীলতা অনেকটাই কমে আসবে, যা শুধু বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয়ই করবে না, দেশের ভোজ্যতেলের চাহিদাও অনেকাংশে স্থানীয়ভাবে পূরণ করা সম্ভব হবে। এর ফলে কৃষক থেকে শুরু করে ভোক্তা—সবাই উপকৃত হবে এবং দেশের কৃষি অর্থনীতিতেও ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে। তাই ভোজ্যতেলের ক্ষেত্রে স্বনির্ভরতা অর্জনে সূর্যমুখীর উৎপাদন বাড়ানো একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে।

বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কয়েক বছর আগে সূর্যমুখী তেল ছিল শুধু অভিজাত হোটেল বা ধনিক শ্রেণির লোকদের রান্নার অংশ। তবে করোনার পর সাধারণ মানুষের মধ্যে এর স্বাস্থ্যকর গুণের প্রতি আগ্রহ বেড়েছে। চাহিদা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তেলের আমদানির পাশাপাশি দেশে এর উৎপাদনও দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। সম্প্রতি দেশের কৃষাণেরা আগ্রহের সঙ্গে সূর্যমুখীর চাষ করছেন।

কৃষাণেরা বলছেন, প্রতি বিঘা জমিতে সূর্যমুখী চাষের জন্য এক কেজি বীজই যথেষ্ট এবং সারের পরিমাণও খুবই কম লাগে। অন্যান্য ফসলের তুলনায় সূর্যমুখী চাষে শ্রমের পরিমাণ অনেক কম থাকে। এতে উৎপাদন হয় বেশি এবং লাভও অনেক ভালো।

আছে হরেক উপকারিতা
পুষ্টিবিদদের মতে, সূর্যমুখী বীজে ৪০-৪৫ শতাংশ লিনোলিক অ্যাসিড ও মানবদেহের জন্য উপকারী ওমেগা ৯ ও ৬ রয়েছে, যা শতভাগ উপকারী ফ্যাট। এতে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, পানি, ভিটামিন ই, ক এবং মিনারেলও রয়েছে। সূর্যমুখী তেল হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও কিডনি রোগীদের জন্য নিরাপদ। তা ছাড়া, সূর্যমুখীর খৈল গরু ও মহিষের খাদ্য এবং গাছ ও পুষ্পস্তবক জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এসব কারণে দেশে সূর্যমুখী তেলের চাহিদা বাড়ছে।

বাড়ছে আবাদ
একদিকে আছে হরেক রকমের উপকারিতা, অন্যদিকে ফসল হিসেবেও বেশ লাভজনক। এ কারণে কৃষাণেরা এখন সূর্যমুখী চাষে বেশ আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। ফলে প্রতিবছর দেশে সূর্যমুখী চাষের পরিধি বাড়ছে। এই আগ্রহের বৃদ্ধির ফলে সূর্যমুখী আবাদে ফসলি জমির আওতা এবং উৎপাদন দুটোই বেড়ে চলেছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮-১৯ মৌসুমে দেশে মাত্র ১ হাজার ৯২০ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী চাষ হয়েছিল এবং ওই বছর সূর্যমুখী বীজের উৎপাদন ছিল মাত্র ৩ হাজার ৫২ টন। তবে মাত্র পাঁচ বছরের মধ্যে সূর্যমুখী চাষের উৎপাদন ১০ গুণেরও বেশি বেড়েছে। ২০২৩-২৪ মৌসুমে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ১৬ হাজার ২৩০ হেক্টর জমিতে মোট ৩১ হাজার ৮৯৭ টন সূর্যমুখী উৎপাদন হয়েছে, যা দেশের কৃষির জন্য একটি উল্লেখযোগ্য সাফল্য।

ডিএইর তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯-২০ সালে দেশে ২ হাজার ৭২৬ হেক্টর জমিতে ৫ হাজার ৭২৫ টন সূর্যমুখী বীজ উৎপাদন হয়। পরের বছর, ২০২০-২১ সালে এটি বেড়ে ১৫ হাজার ৪০৩ হেক্টর জমিতে ২৫ হাজার ৬৫৪ টনে পৌঁছায়। ২০২১-২২ সালে ৯ হাজার ১৬৩ হেক্টর জমিতে প্রায় ১৬ হাজার টন সূর্যমুখী উৎপাদিত হয় এবং ২০২২-২৩ সালে এই পরিমাণ বেড়ে ১৪ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে ২৭ হাজার ৮৪২ টনে দাঁড়ায়।

খরচ কম, আয় বেশি
কুড়িগ্রামের পলাশবাড়ী হালমাঝিপাড়া গ্রামের কৃষক নুরুল হক জানান, আগে তিনি বিভিন্ন মৌসুমি ফসল চাষ করতেন। ২০২৩ সালে কৃষি অফিস থেকে বিনা মূল্যে সূর্যমুখী বীজ ও সার পেয়ে ২৫ শতক জমিতে চাষ করেন। এতে খরচ হয়েছিল ৮ হাজার টাকা এবং বীজ বিক্রি করে ৩০ হাজার টাকা আয় করেন। পরের বছর বেশি বীজ সংগ্রহ করে ১ একর জমিতে সূর্যমুখী চাষ করেন, যা থেকে প্রায় ১ লাখ টাকা আয় হয়।

দেশের বরগুনা, পটুয়াখালী, খুলনা, শরীয়তপুর, ফরিদপুর, নোয়াখালীসহ বিভিন্ন অঞ্চলে সূর্যমুখী চাষ সবচেয়ে বেশি হয়। এসব জায়গায় প্রধানত ডি এস-১ এবং বারি সূর্যমুখী-২ জাতের সূর্যমুখী চাষ করা হয়।

থাকছে প্রণোদনা
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরিচালক (সরেজমিন উইং) সরকার শফি উদ্দীন আহমদ জানান, কৃষকদের বীজ সরবরাহসহ বিভিন্ন প্রণোদনা দিয়ে চাষ বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। এতে করে প্রতিবছর আবাদের আওতাও বাড়ছে। সরকারের এ চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। তবে সূর্যমুখীর জমির সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এটা একটা বড় সমস্যা। ভুট্টা, সরিষা ও অন্যান্য ফসলের চাহিদা বাড়ছে, তাই সূর্যমুখীর জন্য পর্যাপ্ত জমি পাওয়া কঠিন। এ ছাড়া বীজের অধিকাংশই বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়; যা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হলে কৃষকের জন্য সহজলভ্য ও অধিক আয়ের ফসল হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে উঠবে।

তবু আমদানি বেশি
যে পরিমাণ সূর্যমুখী তেল দেশের চাহিদা পূরণে উৎপাদিত হয়, তার থেকে অনেক বেশি আমদানি করা হয় প্রতিবছর। চট্টগ্রাম বন্দরের কাস্টমস তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে বন্ডের আওতায় ও বাণিজ্যিকভাবে সূর্যমুখী তেল আমদানি হয়েছিল ১১ হাজার ৩২৭ টন। আর ২০২৪ সালে তা বেড়ে ১৪ হাজার ৪০০ টনে পৌঁছেছে। ট্যারিফ কমিশনের তথ্যমতে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে পরিশোধিত সূর্যমুখী তেল আমদানি হয়েছিল ২ হাজার ৬০৭ টন এবং ২০২৩-২৪ সালে পরিশোধিত ও অপরিশোধিত মিলিয়ে আমদানি বেড়ে ১৩ হাজার ০৭৯ টন হয়েছে।

বাজারে চাহিদা
গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেশে ২৩ হাজার ৭১১ টন সূর্যমুখী তেলের ব্যবহার হয়েছে, যা ওই সময়ের চাহিদা হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। কৃষিবিশেষজ্ঞদের মতে, তিন কেজি সূর্যমুখী ফুলের বীজ থেকে এক কেজি সূর্যমুখী তেল উৎপন্ন হয়। এই হিসাবে, ২০২৩-২৪ মৌসুমে উৎপাদিত ৩১ হাজার ৮৯৭ টন সূর্যমুখী বীজ থেকে ১০ হাজার ৬৩২ টন তেল পাওয়া গেছে। এ ছাড়া ওই সময় বিদেশ থেকে ১৩ হাজার ৭৯ টন সূর্যমুখী তেল আমদানি করা হয়। দেশে বর্তমানে মাথাপিছু ৪০ গ্রাম তেলের চাহিদা রয়েছে, যা মোট ১৭ কোটি ১৫ লাখ ৯০ হাজার জনসংখ্যার মধ্যে ১৬ লাখ ২৪ হাজার ৪১ জনের জন্য যথেষ্ট। এটি দেশের মোট জনসংখ্যার মাত্র ০.৯৫ শতাংশ।

ব্র্যান্ডনির্ভর বাজার
বাজারে দেশি ও বিদেশি বেশ কিছু ব্র্যান্ডের সূর্যমুখী তেল পাওয়া যায়। এর মধ্যে রয়েছে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত ও পরিশোধিত ফেয়ার গ্রুপের ওলিটালিয়া এবং বাংলাদেশ এডিবল অয়েলের জনপ্রিয় কিংস ব্র্যান্ড। গ্লোব এডিবল অয়েলও সূর্যমুখী তেলের কারখানা স্থাপন করে শেফ ব্র্যান্ডে তেল বিক্রি করছে। স্কয়ার গ্রুপের রাঁধুনী ব্র্যান্ড এবং বাংলাদেশ এডিবল ওয়েলের ফরচুন ব্র্যান্ডও বাজারে পাওয়া যায়। তবে বর্তমানে ব্যবহৃত সূর্যমুখী তেলের বড় অংশ এখনো বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়, যার অধিকাংশ আসে ইতালি থেকে। পাশাপাশি মালয়েশিয়া, ইউক্রেন, তুরস্ক, স্পেন, গ্রিস, সাইপ্রাস ও রাশিয়া থেকেও আসে। বিদেশি ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে রয়েছে ক্যান্ট, বর্গেস, কার্নেল, লা ইস্পানোলা, গোল্ডেন ড্রপ, সানলিকো, অর্কিডসহ বেশ কিছু ব্র্যান্ড।

দামও নাগালের বাইরে
সূর্যমুখী তেল বর্তমানে দৃষ্টিনন্দন প্যাকেজিংয়ের মাধ্যমে ভোক্তার হাতে পৌঁছাচ্ছে। বিশেষত শহরের স্টোরগুলোতে এর উপস্থিতি বেশ স্পষ্ট। তবে এর দাম অনেকটাই সাধারণের নাগালের বাইরে। যাঁদের সূর্যমুখী তেলের প্রতি আগ্রহ আছে, তাঁরা মূলত দামের কারণে তা কিনতে অনীহা প্রকাশ করেন, বিশেষত স্বল্প আয়ের মানুষ। তবু ধনিক শ্রেণির পরিবারগুলোতে এই তেলের ব্যবহার রয়েছে। প্রতি লিটার ফর্টিফায়েড সানফ্লাওয়ার তেল ৪০০ থেকে ৪২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, আর দুই লিটারের বোতল ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকায় এবং পাঁচ লিটার বোতল ১ হাজার ৯৫০ থেকে ২ হাজার ২৯৫ টাকায় পাওয়া যায়। তুলনা করলে সয়াবিন তেলের দাম অনেক কম, মাত্র ১৭৫ টাকা প্রতি লিটার এবং পাঁচ লিটার সয়াবিন তেল ৮৯০ টাকায় মেলে, যা সূর্যমুখী তেলের চেয়ে অনেক সাশ্রয়ী। তবে দেশে মধ্যবিত্ত শ্রেণির বড় উত্থান ঘটায় রুচির পরিবর্তনের প্রভাব পড়েছে সূর্যমুখী তেলে। উচ্চমূল্য সত্ত্বেও এঁদের অনেকেই এখন নিয়মিত এই তেল ব্যবহার করছেন। ফলে দোকানগুলোতে এই তেলের সরবরাহ আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। বিক্রেতারা জানিয়েছেন, আগে শুধু রাজধানীর সুপারশপে সূর্যমুখী তেল বিক্রি হতো, কিন্তু এখন এটি অভিজাত এলাকার মুদি দোকান, চেইনশপ, সুপারশপ ও মিনিমার্টে বিক্রি হচ্ছে।

সেগুনবাগিচা বাজারের ব্যবসায়ী মোস্তাফিজ জানান, এক-দেড় বছর আগে পর্যন্ত তাঁর দোকানে সূর্যমুখী তেল ছিল না, তবে এখন ক্রেতাদের চাহিদা পূরণের জন্য এটি রাখছেন। অর্ডার দিলে সরবরাহকারীরা সরাসরি দোকানে সরবরাহ করেন এবং লিটারে ২৫ টাকা মুনাফা হয়।

সয়াবিনের বিকল্প সূর্যমুখী!
আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন ও সূর্যমুখী তেলের দাম এখন প্রায় একই এবং চাহিদা মেটাতে পর্যাপ্ত পরিমাণে পাওয়া যাচ্ছে। এতে সূর্যমুখী তেল দেশে সয়াবিন ও পাম তেলের বিকল্প হয়ে উঠতে পারে। দরকার শুধু সরকারের নীতি সহায়তা।

বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, গত নভেম্বর মাসে আন্তর্জাতিক বাজারে বিভিন্ন ভোজ্যতেলের এফওবি (ফ্রি অন বোর্ড) মূল্য ছিল অপরিশোধিত পাম তেল প্রতি টন ১ হাজার ১৬০ মার্কিন ডলার, অপরিশোধিত সয়াবিন তেল ১ হাজার ৪৯ মার্কিন ডলার। এ ছাড়া অপরিশোধিত ক্যানোলা তেল (রেপসিড তেল) ১ হাজার ১২০ মার্কিন ডলার এবং অপরিশোধিত সূর্যমুখী তেল ১ হাজার ১৬৫ মার্কিন ডলার প্রতি টন।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরকার যদি সয়াবিন ও সূর্যমুখী তেলের ভ্যাট ও ট্যাক্সের হার সমান করে, তবে দামও সমান হতে পারে।

দেশে সূর্যমুখী তেলের অন্যতম আমদানিকারক টি কে গ্রুপের পরিচালক শফিউল আতহার তাসলিম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘যেহেতু দেশে সূর্যমুখী তেলের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে, সরকার চাইলে এটি সয়াবিন ও পাম তেলের বিকল্প হতে পারে। তবে এর জন্য প্রয়োজন ট্যারিফ ভ্যালু ও শুল্ক হারকে সমান পর্যায়ে রাখা।’

আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন, পাম ও সূর্যমুখী তেলের দাম প্রায় সমান হওয়ায় ট্যারিফ কমিশন মনে করছে, যদি শুল্ক কাঠামো সমান করা হয়, তবে সূর্যমুখী তেল বিকল্প হিসেবে জনপ্রিয় হতে পারে।

ট্যারিফ কমিশনের পর্যবেক্ষণ
ট্যারিফ কমিশন তাদের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে সয়াবিন, পাম, সূর্যমুখী ও ক্যানোলা তেলের শুল্ক কাঠামো পর্যালোচনা করে সূর্যমুখী তেলের শুল্ক কমানোর সুপারিশ করেছে। এতে পরিশোধিত তেলে ২০% এবং অপরিশোধিত তেলে ১৫% শুল্ক কমানোর সুপারিশ করা হয়। আশার কথা হচ্ছে, এনবিআর এই সুপারিশ গ্রহণ করে, সূর্যমুখী তেলের আমদানিতে ১৫% শুল্ক ও ভ্যাট ৫% করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যার ফলে লিটারপ্রতি দাম প্রায় ৫০ টাকা কমে আসবে। তবে সূর্যমুখী তেল সাধারণের নাগালে আনতে শুল্কহার আরও কমিয়ে আনার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সেরা ফিল্ড ফোর্সদের বিশেষ সম্মাননা দিল নগদ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
সেরা ফিল্ড ফোর্সদের বিশেষ সম্মাননা দিয়েছে নগদ। ছবি: বিজ্ঞপ্তি
সেরা ফিল্ড ফোর্সদের বিশেষ সম্মাননা দিয়েছে নগদ। ছবি: বিজ্ঞপ্তি

সারা দেশের সাত হাজার ডিস্ট্রিবিউটর ফিল্ড ফোর্সের মধ্য থেকে সেরা পারফরম্যান্সের জন্য ৭০ জনকে বিশেষ সম্মাননা দিয়েছে ডাক বিভাগের ডিজিটাল আর্থিক লেনদেন সেবা নগদ।

রাজধানীর একটি হোটেলে গতকাল বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) ‘নগদ ফিল্ড চ্যাম্পিয়ন ২০২৫’ নামের এই সম্মাননা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

অনুষ্ঠান চলাকালে ডিস্ট্রিবিউটর ফিল্ড ফোর্সদের পারফরম্যান্সের জন্য বিশেষ বোনাসের ঘোষণা দেন বাংলাদেশ ব্যাংকনিযুক্ত নগদের প্রশাসক মো. মোতাছিম বিল্লাহ। ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে ৭০ জনের নগদ অ্যাকাউন্টে চলে যায় এই অর্থ।

দেশের প্রত্যন্ত এলাকা থেকে ঢাকায় আসা-যাওয়া, খাওয়া, হোটেলে অবস্থানসহ অন্য সব খরচ নগদের পক্ষ থেকে বহন করা হয়।

সেরা পারফর্মারদের অভিনন্দন জানিয়ে নগদের প্রশাসক মো. মোতাছিম বিল্লাহ বলেন, অনেক চ্যালেঞ্জের মাঝেও বাজারে নগদ একটা ভালো প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলেছে। বাংলাদেশে ক্যাশলেস লেনদেনের আরও প্রসার ঘটাতে নগদ ভূমিকা রাখবে বলে সরকারের নীতিনির্ধারকদের প্রত্যাশা রয়েছে। সুতরাং, যত অপপ্রচারই নগদকে নিয়ে হোক না কেন, সেসবে কান না দিয়ে নগদের সাফল্যের জন্য সবাইকে কাজ করতে হবে।

নগদের সেবার প্রসার ঘটাতে এ সময় মোতাছিম বিল্লাহ ডিস্ট্রিবিউটর ফিল্ড ফোর্সদের কাছ থেকে নগদ বিষয়ে পরামর্শ ও সুপারিশ জানতে চান। তাঁদের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে নগদ প্রশাসক বলেন, অল্প সময়ের ভেতরই সেবার কলেবর আরও বাড়বে নগদে। ফলে লেনদেনের অঙ্ক যেমন অনেক গুণ বাড়বে, একই সঙ্গে গ্রাহকেরাও অনেক বেশি উপকৃত হবেন।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকনিযুক্ত নগদের জ্যেষ্ঠ সহযোগী প্রশাসক মো. হাবিবুর রহমান, ডাক বিভাগনিযুক্ত নগদের জ্যেষ্ঠ সহযোগী প্রশাসক মো. আবু তালেব, নগদের চিফ কমার্শিয়াল অফিসার মোহাম্মদ শাহীন সারওয়ার ভূঁইয়া বক্তব্য দেন।

বক্তারা বলেন, আগামী বছরে বিদেশ থেকে আসা রেমিট্যান্স, বাংলা কিউআর, সব আর্থিক প্রতিষ্ঠানের লেনদেনের জন্য আন্তসংযোগ গেম চেঞ্জারের ভূমিকা পালন করবে নগদ। ফলে ২০২৬ সাল নগদের সেরা সাফল্যের বছর হবে বলেও মনে করেন তাঁরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ইনফরমেশন হেল্প ডেস্ক চালু করল ডিএসই

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ইনফরমেশন হেল্প ডেস্ক চালু করেছে ডিএসই। ছবি: সংগৃহীত
ইনফরমেশন হেল্প ডেস্ক চালু করেছে ডিএসই। ছবি: সংগৃহীত

তথ্যসেবা আরও সহজ ও কার্যকর করার লক্ষ্যে ইনফরমেশন হেল্প ডেস্ক স্থাপন করেছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। আজ বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) ডিএসইর ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ আসাদুর রহমান এই ইনফরমেশন হেল্প ডেস্ক উদ্বোধন করেন।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ডিএসইর প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা ড. আসিফুর রহমান, প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা মো. ছামিউল ইসলাম, প্রধান রেগুলেটরি কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম ভূঁইয়াসহ ডিএসইর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এ সময় মোহাম্মদ আসাদুর রহমান বলেন, ইনফরমেশন হেল্প ডেস্কের মাধ্যমে পুঁজিবাজারসংশ্লিষ্ট তথ্য প্রদান আরও সহজ হবে এবং বিনিয়োগকারী ও অন্য অংশীজনদের বিভিন্ন জিজ্ঞাসার দ্রুত ও কার্যকর সমাধান নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। এর ফলে ডিএসইর সেবার মান আরও গ্রাহকবান্ধব ও স্বচ্ছ হবে।

ডিএসইর এমডি আশা প্রকাশ করেন, এই হেল্প ডেস্ক ডিএসইর বাজার অংশগ্রহণকারীদের আস্থা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

পুঁজিবাজারসংক্রান্ত সব ধরনের তথ্যের জন্য +৮৮-০২-৪১০৪০১৮৯, ০৯৬৬৬৭০২০৭০ নম্বরে যোগাযোগ করা যাবে বলে অনুষ্ঠানে জানানো হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ট্রাভেল ও ট্যুরিজম অ্যাওয়ার্ড: লিড স্পনসর ‘গ্যালাক্সি’, হসপিটালিটি পার্টনার ইন্টারকন্টিনেন্টাল ঢাকা

বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা
ট্রাভেল ও ট্যুরিজম অ্যাওয়ার্ড: লিড স্পনসর ‘গ্যালাক্সি’, হসপিটালিটি পার্টনার ইন্টারকন্টিনেন্টাল ঢাকা

দেশের অন্যতম ভ্রমণ ও পর্যটনবিষয়ক প্রকাশনা বাংলাদেশ মনিটর আয়োজিত ‘বাংলাদেশ ট্রাভেল, ট্যুরিজম ও হসপিটালিটি অ্যাওয়ার্ড (BTTHA) ২০২৫’-এর লিড স্পনসর হিসেবে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে দেশের ভ্রমণশিল্পের শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান গ্যালাক্সি গ্রুপ।

একই সঙ্গে পাঁচ তারকা হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল ঢাকা এই আয়োজনের হসপিটালিটি পার্টনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে।

দেশের ভ্রমণ, পর্যটন ও আতিথেয়তা শিল্পে একমাত্র স্বীকৃত এই পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানটি এবার দ্বিতীয়বারের মতো অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।

গতকাল বুধবার ইন্টারকন্টিনেন্টাল ঢাকা হোটেলে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে সংশ্লিষ্ট চুক্তিসমূহ স্বাক্ষরিত হয়।

বাংলাদেশ মনিটরের পক্ষে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন সম্পাদক কাজী ওয়াহিদুল আলম। গ্যালাক্সি গ্রুপের পক্ষে লিড স্পনসর চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহমেদ ইউসুফ ওয়ালিদ। অন্যদিকে ইন্টারকন্টিনেন্টাল ঢাকার পক্ষে হসপিটালিটি পার্টনার চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন হোটেলটির জেনারেল ম্যানেজার ডেভিড ও’ হ্যানলন।

চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ মনিটরের সম্পাদক কাজী ওয়াহিদুল আলম বলেন, গ্যালাক্সি ও ইন্টারকন্টিনেন্টাল ঢাকার সম্পৃক্ততায় অ্যাওয়ার্ড প্রোগ্রামের মর্যাদা ও পরিসর আরও বৃদ্ধি পাবে। এর মাধ্যমে দেশের ভ্রমণ ও আতিথেয়তা শিল্পে উৎকর্ষতা অর্জন এবং উত্তম চর্চা উৎসাহিত হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

গ্যালাক্সি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহমেদ ইউসুফ ওয়ালিদ বলেন, পর্যটন ও আতিথেয়তা খাতে উদ্ভাবন, সেবার মান এবং টেকসই উন্নয়নকে স্বীকৃতি প্রদানকারী একটি মহতী উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত হতে পেরে তারা গর্বিত।

ইন্টারকন্টিনেন্টাল ঢাকার জেনারেল ম্যানেজার ডেভিড ও’ হ্যানলন বিশ্বমানের আতিথেয়তা প্রদানের পাশাপাশি অসাধারণ অর্জনকে স্বীকৃতি দেওয়ার লক্ষ্যে এমন একটি আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে যুক্ত থাকার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন।

চলতি বছর ২৫টি ক্যাটাগরিতে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে পুরস্কারের জন্য মনোনীত করা হয়েছে। শুধু আবেদনকারী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানই পুরস্কারের জন্য বিবেচিত হবে। সমাজের বিভিন্ন স্তরের প্রতিনিধিত্বকারী অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের সমন্বয়ে গঠিত একটি বিচারক প্যানেল বিশেষজ্ঞদের মূল্যায়ন এবং পাবলিক ভোটিংয়ের ভিত্তিতে বিজয়ীদের চূড়ান্ত করবেন।

এবার নতুন করে যুক্ত করা হয়েছে দুটি বিশেষ ক্যাটাগরি—সর্বাধিক পর্যটনবান্ধব বিদেশি গন্তব্য, বাংলাদেশের সর্বাধিক জনপ্রিয় পর্যটন স্পট। এই দুটি ক্যাটাগরির বিজয়ী সরাসরি পাবলিক ভোটিংয়ের মাধ্যমে নির্ধারিত হবে।

বাংলাদেশের পর্যটন ইকোসিস্টেমের উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে সম্মাননা জানানোর লক্ষ্যে বাংলাদেশ মনিটর ২০২৪ সালে প্রথমবারের মতো এই পুরস্কারের প্রবর্তন করে।

প্রথম আসরের সাফল্যের ধারাবাহিকতায় এ বছর আরও বৃহৎ পরিসরে এই আয়োজন করা হচ্ছে, যেখানে অংশগ্রহণের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দৃশ্যমানতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভারত থেকে আসা পণ্যবাহী ট্রাকের চলাচল নজরদারি করবে এনবিআর

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৮: ৪৩
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারত থেকে আমদানি করা পণ্যবাহী ট্রাকের চলাচল আরও স্বচ্ছ ও প্রযুক্তিনির্ভর করতে অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সিস্টেমে ‘ট্রাক মুভমেন্ট’ নামে নতুন একটি সাব-মডিউল চালু করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এর মাধ্যমে প্রতিটি ভারতীয় পণ্যবাহী ট্রাকের প্রবেশ, অবস্থানকাল এবং খালি ট্রাকের ফেরত-সংক্রান্ত তথ্য ইলেকট্রনিকভাবে সংরক্ষণ করা হবে।

আজ বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায় এনবিআর।

এনবিআর জানায়, প্রাথমিকভাবে যশোরের বেনাপোল কাস্টম হাউসে ১৫ ডিসেম্বর থেকে এই সাব-মডিউলের পাইলট কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এর আগে ট্রাক প্রবেশ ও বহির্গমনের তথ্য ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করা হতো, যা সময়সাপেক্ষ ও ত্রুটিপূর্ণ হওয়ার ঝুঁকি ছিল।

নতুন মডিউল চালুর ফলে ভারতীয় প্রতিটি ট্রাকের আগমন ও বহির্গমনের প্রকৃত তথ্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংরক্ষিত থাকবে। এতে ট্রাকের অবস্থানকাল নির্ধারণ, সীমান্ত এলাকায় ট্রাক চলাচল কার্যকরভাবে মনিটরিং এবং রিয়েল-টাইম রিপোর্ট তৈরি করা সম্ভব হবে। পাশাপাশি তথ্য ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা বাড়বে, রাজস্বহানি রোধে সহায়ক হবে এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত হবে বলে জানিয়েছে এনবিআর।

এনবিআরের বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, সীমান্ত বাণিজ্য ব্যবস্থাপনায় এই ডিজিটাল উদ্যোগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। ট্রাক চলাচলের নির্ভুল তথ্য থাকায় শুল্ক ও কর ব্যবস্থাপনায় নজরদারি জোরদার হবে, একই সঙ্গে সীমান্ত সুরক্ষাও বাড়বে।

খুব শিগগির দেশের সব স্থলবন্দরে অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সিস্টেমের ‘ট্রাক মুভমেন্ট’ সাব-মডিউলটি লাইভ অপারেশনে আনার পরিকল্পনা রয়েছে এনবিআরের। এতে স্থলবন্দরভিত্তিক আমদানি কার্যক্রম আরও গতিশীল ও আধুনিক হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত