Ajker Patrika

ব্লুমবার্গের প্রতিবেদন /যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইতিবাচক বাণিজ্য চুক্তির ব্যাপারে আশাবাদী বাংলাদেশ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৮ জুলাই ২০২৫, ১৬: ৪৮
বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রাণকেন্দ্র চট্টগ্রাম বন্দর। ছবি: এএফপি
বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রাণকেন্দ্র চট্টগ্রাম বন্দর। ছবি: এএফপি

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নতুন করে ১৪টি দেশের ওপর শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন। এই দেশগুলোর তালিকায় আছে বাংলাদেশও। ট্রাম্প অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে চিঠি লিখে বিষয়টি জানিয়েছেন। এই চিঠিতে বাংলাদেশের ওপর ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের কথা বলা হয়েছে, যা কার্যকর হবে আগামী ১ আগস্ট থেকে। তবে তার আগেই বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি অনুকূল সমাধানের আশা করছে।

বাংলাদেশের বাণিজ্যসচিব মাহবুবুর রহমান গত সোমবার মার্কিন সম্প্রচারমাধ্যম ব্লুমবার্গকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘আমরা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারচুয়াল ও সরাসরি উপস্থিত হয়ে অন্তত ৭ দফায় আলোচনা করেছি। আমরা একটা ইতিবাচক ফলাফল প্রত্যাশা করছি।’

বাণিজ্যসচিব আরও বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ইঙ্গিত দিয়েছে যে, তারা দুটি আলাদা স্তর করবে। এর একটিতে থাকবে বাংলাদেশসহ স্বল্পোন্নত বা এলডিসিভুক্ত দেশগুলো; অপর স্তরে থাকবে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য বাণিজ্যিক অংশীদারেরা।

মাহবুবুর রহমান বলেন, স্বল্পোন্নত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ ‘দ্য মোস্ট অ্যাডভান্স বা সবচেয়ে বেশি অগ্রগামী।’ তিনি আরও জানান, মার্কিন কর্মকর্তারা ব্যক্তিগতভাবে আশ্বাস দিয়েছেন যে, বাংলাদেশের ওপর যে শাস্তিমূলক শুল্ক আরোপ করা হয়েছে, তা আলোচনা এগিয়ে গেলে হয়তো এড়ানো যাবে।

গত বছরের রাজনৈতিক অস্থিরতা থেকে ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করা বাংলাদেশের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি স্বস্তির খবরই হবে। যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির ওপর আগে নির্ধারিত ৩৭ শতাংশ শুল্ক বাংলাদেশের জন্য বড় ঝুঁকি তৈরি করছে, বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাতে। কারণ, এই খাতই দেশের মোট রপ্তানির ৮০ শতাংশের জোগান দেয় এবং এতে লক্ষাধিক মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে।

বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে বাংলাদেশকে প্রতিদ্বন্দ্বী ভিয়েতনামের চেয়ে সমান বা আরও ভালো একটি চুক্তি করতে হবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে। ভিয়েতনাম সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যে চুক্তিটি করেছে, তাতে রপ্তানির ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক ধার্য করা হয়েছে। তবে যদি কোনো পণ্য ট্রান্সশিপমেন্টের মাধ্যমে রপ্তানি হয়, তাহলে সেখানে ৪০ শতাংশ শুল্ক বসানো হবে।

বাণিজ্যসচিব জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র চাচ্ছে, বাংলাদেশে প্রবেশ করা মার্কিন পণ্যের জন্য শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার। বিশেষ করে যেসব খাতে বাংলাদেশ ইতিমধ্যে অন্য দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতামূলক বাণিজ্য চুক্তি করেছে, যেমন অটোমোবাইল খাত, সেসব ক্ষেত্রেই যুক্তরাষ্ট্র বেশি আগ্রহী।

মাহবুবুর রহমান আরও বলেন, দেশ এখনো চূড়ান্ত নথিপত্রের জন্য অপেক্ষা করছে, তাই এখনই কোনো বাধ্যবাধকতা গ্রহণ করা হবে না। তিনি বলেন, ‘আমরা একতরফা সিদ্ধান্ত নেব না। এটা হবে একটি পরামর্শভিত্তিক প্রক্রিয়া।’

উল্লেখ্য, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব জানিয়েছেন, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিনের নেতৃত্বে একটি দল ওয়াশিংটনে আছে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্ক বাণিজ্য চুক্তির বিষয়ে আলোচনা করার জন্য। উভয় পক্ষের জন্যই একটি লাভজনক চুক্তির লক্ষ্যে কাজ করছে এই প্রতিনিধিদল।

প্রেস সচিব শফিকুল আলম তাঁর ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে লিখেছেন, ‘বাংলাদেশের বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিন ওয়াশিংটনে অবস্থান করছেন। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি। জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমানও এই দলের সদস্য।’

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে ট্রাম্পের শুল্কসংক্রন্ত চিঠির বিষয়ে শফিকুল আলম বলেন, ‘গতকাল (সোমবার) মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছ থেকে একটি চিঠি এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করবে, যা কার্যকর হবে ১ আগস্ট থেকে।’

মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনার বিষয়ে প্রেস সচিব তাঁর পোস্টে বলেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বাংলাদেশি প্রতিনিধিদল এরই মধ্যে বেশ কয়েক দফা বৈঠক করেছে। আগামী ৯ জুলাই অর্থাৎ, বুধবার আরও এক দফার বৈঠক হবে। শেখ বশিরউদ্দিন এই প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেবেন। উভয় দেশের জন্য লাভজনক হবে—ওয়াশিংটনের সঙ্গে এমন একটি শুল্কচুক্তির অপেক্ষায় আছে ঢাকা।’

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

তুলা গবেষণা কেন্দ্রের ফুটি কার্পাসে নতুন সম্ভাবনা

রাতুল মণ্ডল, শ্রীপুর (গাজীপুর)  
বাংলার ঐতিহ্য মসলিনের প্রধান কাঁচামাল ফুটি কার্পাস তুলাগাছে ফুল ফুটেছে। গাজীপুরের শ্রীপুর তুলা গবেষণা কেন্দ্র থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
বাংলার ঐতিহ্য মসলিনের প্রধান কাঁচামাল ফুটি কার্পাস তুলাগাছে ফুল ফুটেছে। গাজীপুরের শ্রীপুর তুলা গবেষণা কেন্দ্র থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

একসময় বিশ্বজুড়ে বাংলার গর্ব ছিল মসলিন। এর অতুলনীয় সূক্ষ্মতা, মসৃণতা ও আরামদায়ক বৈশিষ্ট্যের কারণে রাজা-বাদশাহ থেকে ইউরোপীয় অভিজাত শ্রেণির কাছে মসলিন ছিল আভিজাত্যের প্রতীক। মসলিনের প্রাণ ফুটি কার্পাস তুলা ইংরেজ শাসনামলে ঔপনিবেশিক বাণিজ্যনীতির বলি হয়ে ধীরে ধীরে হারিয়ে যায়। দীর্ঘ বছর পর সে হারানো ঐতিহ্য পুনরুদ্ধারে নতুন করে আশার আলো দেখাচ্ছে গাজীপুরের শ্রীপুর তুলা গবেষণা কেন্দ্র।

ফুটি কার্পাসের পুনর্জাগরণকে ঘিরে গবেষক, ঐতিহ্য অনুরাগী ও শিল্পোদ্যোক্তাদের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে নতুন উদ্দীপনা। এটি শুধু একটি বিপন্ন উদ্ভিদের পুনরুদ্ধার নয়; বরং বাংলার হারানো শিল্প-ঐতিহ্য ও সম্ভাব্য উচ্চমূল্যের টেক্সটাইল খাত পুনরুজ্জীবনের চেষ্টা।

শ্রীপুর তুলা গবেষণা কেন্দ্রের পাশাপাশি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড এবং গাজীপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় যৌথভাবে গবেষণা কার্যক্রম চালাচ্ছে। গবেষণার মূল লক্ষ্য—ফুটি কার্পাস তুলা কীভাবে বাণিজ্যিকভাবে চাষযোগ্য করা যায়, উৎপাদন ব্যয় কমিয়ে সাধারণ মানুষের নাগালে আনা যায় এবং দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে মসলিনকে আবার পরিচিত করা যায়। গবেষকদের প্রত্যাশা, সঠিক নীতিগত সহায়তা ও বিনিয়োগ পেলে আগামী দিনে মসলিন আবার বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের পরিচয় বহন করবে।

সম্প্রতি তুলা গবেষণা কেন্দ্র পরিদর্শনে দেখা যায়, সারি সারি ফুটি কার্পাস তুলাগাছ। প্রায় সব গাছেই প্রচুর ফুল এসেছে, যেগুলোর অনেক ফলেও পরিণত হয়েছে। গবেষকদের তথ্যমতে, পুনরুদ্ধার করা ফুটি কার্পাস গাছের উচ্চতা ১৩ থেকে ১৪ ফুট পর্যন্ত। বীজের পরিমাণ তুলনামূলক বেশি হলেও আঁশ সূক্ষ্ম ও স্বল্প, যা মসলিন তৈরির জন্য উপযোগী।

তুলা গবেষণা কেন্দ্রের ইনচার্জ আব্দুল ওয়াহাব বলেন, ফুটি কার্পাসের অস্তিত্বের সূত্র প্রথম পাওয়া যায় দৃক গ্যালারি ও জাতীয় জাদুঘরের সংগ্রহে। সাংস্কৃতিককর্মী সাইফুল ইসলাম এর খোঁজ পান। কার্পাস তুলা থেকেই ‘কাপাসিয়া’ নামের উৎপত্তি।

ব্রিটিশ আলবার্ট মিউজিয়ামে সংরক্ষিত মোগল আমলের মসলিন শাড়ির অংশবিশেষ পরীক্ষা করে গবেষকেরা নিশ্চিত হয়েছেন, সে সময়ে ফুটি কার্পাস থেকেই এসব বস্ত্র তৈরি হতো। ইতিহাস বলছে, শীতলক্ষ্যা নদীর তীরবর্তী অঞ্চলে এই তুলার চাষ হতো এবং ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশে মসলিন রপ্তানি করা হতো।

তুলা গবেষণা কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক রেজাউল আমিন বলেন, ‘ফুটি কার্পাস শুধু একটি তুলা নয়, এটি বাংলার ঐতিহ্যের প্রতীক। ইংরেজ শাসনামলে নিজস্ব শিল্প রক্ষার জন্য ব্রিটিশরা পরিকল্পিতভাবে মসলিনশিল্প ধ্বংস করেছিল। আমরা এখন সে হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে কাজ করছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

১ জানুয়ারি কার্যকর: দেশের সব স্থলবন্দরের মাশুল বাড়ল ৫ শতাংশ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
১ জানুয়ারি কার্যকর: দেশের সব স্থলবন্দরের মাশুল বাড়ল ৫ শতাংশ

দেশের সব স্থলবন্দরের মাশুল ৫ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। সব ধরনের সেবা, কর ও টোলহারের ক্ষেত্রে এই বর্ধিত মাশুল প্রযোজ্য হবে। বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যে এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে বলেছে, এই মাশুলই বন্দরের আয়ের প্রধান উৎস। প্রতিবছরের মতো এবারও মাশুল বাড়ানো হয়েছে, যা আগামী ১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হবে। তবে অন্যান্য বন্দরের তুলনায় মাশুল বেশি হওয়ায় বেনাপোল স্থলবন্দরের জন্য বর্ধিত মাশুলের আলাদা প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।

বেনাপোল বন্দরে যাত্রীদের জন্য ২০২৫ সালের মাশুল ছিল ৪৯ টাকা ৭৯ পয়সা, যা ২০২৬ সালে বেড়ে ৫২ টাকা ২৭ পয়সা হয়েছে। আমদানি করা বাস, ট্রাক ও লরির মাশুল নতুন বছরে ১৮৪ টাকা ৭০ পয়সা, যা আগের তুলনায় প্রায় ৯ টাকা বেশি। মোটর কার, জিপ ও পিকআপের জন্য এখন নতুন মাশুল ১১০ টাকা ৮২ পয়সা এবং মোটরসাইকেল ও বাইসাইকেলের জন্য ৩৬ টাকা ৯৫ পয়সা।

বেনাপোল বন্দরে ট্রাক ও লরির জন্য ওজন মাপার যন্ত্র ব্যবহার করতে হলে ৮৮ টাকা ৬৫ পয়সা দিতে হবে। কাগজপত্র প্রক্রিয়ার মাশুল এখন ১৯৫ টাকা ০৭ পয়সা। কোনো যানবাহন যদি রাতভর বন্দরে থাকে, তবে মাশুল ১১১ টাকা ৪৯ পয়সা। গুদামে পণ্য রাখার মাশুলও পণ্যের সময় অনুযায়ী বাড়ানো হয়েছে।

বেনাপোল ছাড়াও অন্যান্য স্থলবন্দরে মাশুল ৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্য বন্দরে যাত্রীদের মাশুল ২০২৫ সালে ৪৯ টাকা ৭৯ পয়সা ছিল, যা ২০২৬ সালে বেড়ে ৫২ টাকা ২৭ পয়সা হয়েছে। আমদানি করা বাস, ট্রাক ও লরির জন্য নতুন মাশুল ১৫৯ টাকা ২২ পয়সা, মোটর কার ও জিপের জন্য ৯৫ টাকা ৫২ পয়সা এবং মোটরসাইকেল, স্কুটার ও থ্রি-হুইলারের জন্য ৪৭ টাকা ৮৩ পয়সা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর: ফসল ব্যবস্থাপনায় উত্তরের চার জেলায় কৃষির নতুন প্রকল্প

  • ২৫২ কোটির প্রকল্পে বিতরণ হবে ৩,১৮৫টি কৃষি যন্ত্রপাতি
  • উৎপাদন ৫% বৃদ্ধি ও শস্য নিবিড়তা ২৪১ শতাংশে উন্নীত হবে
  • ২০০টি পেঁয়াজ ও ৩টি সবজির সংরক্ষণাগার স্থাপন
মাহফুজুল ইসলাম, ঢাকা
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

দেশের উত্তরাঞ্চলে কৃষি খাতে টেকসই উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকারের ২৫২ কোটি টাকার একটি প্রকল্প বাস্তবায়িত হতে যাচ্ছে। চার বছরের এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য প্রকল্পের আওতাধীন চার জেলায় আধুনিক ও পরিবেশবান্ধব কৃষিপ্রযুক্তির ব্যবহার বাড়িয়ে উৎপাদন খরচ কমানো এবং কৃষিকে আরও লাভজনক পেশায় রূপান্তর করা।

বগুড়া কৃষি অঞ্চলের টেকসই উন্নয়ন নামের এই প্রকল্প ২০২৬ সালের জানুয়ারি থেকে ২০৩০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বগুড়া, জয়পুরহাট, পাবনা ও সিরাজগঞ্জ জেলায় বাস্তবায়িত হবে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই) প্রকল্পটির বাস্তবায়নকারী সংস্থা হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে এবং পুরো ব্যয়ভার বহন করবে সরকার। আধুনিক ফসল ব্যবস্থাপনা, পানিসাশ্রয়ী প্রযুক্তি এবং কৃষকের দক্ষতা উন্নয়ন—এসবের সমন্বয়ে প্রকল্পের কাঠামো তৈরি হয়েছে।

ডিএই মহাপরিচালক এস এম সোহরাব উদ্দিন বলেন, যমুনা-করতোয়া-পদ্মা-বাঙ্গালীবিধৌত বগুড়া অঞ্চলের কৃষি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ঝুঁকির মুখে পড়েছে। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়া, কম বৃষ্টিপাত, তাপমাত্রা বৃদ্ধি, বন্যা ও নদীভাঙন এবং অবকাঠামো উন্নয়নের কারণে আবাদি জমি কমছে। অপর দিকে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকের সংখ্যা বাড়ছে। সার্বিক বাস্তবতা বিবেচনায় এই প্রকল্প নেওয়া হয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) প্রকল্পসংশ্লিষ্ট নথিপত্রে দাবি করা হয়েছে, আধুনিক ফসল ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে উৎপাদন ৫ শতাংশ বাড়ানোর পাশাপাশি শস্য নিবিড়তা ২৩৬ শতাংশ থেকে ২৪১ শতাংশে উন্নীত করা হবে। এক হাজার নতুন দক্ষ কৃষি উদ্যোক্তা তৈরি এবং ৩৫ হাজার কৃষি মানবসম্পদকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। কৃষিযন্ত্রের ব্যবহার বাড়িয়ে উৎপাদন ব্যয় কমানোও প্রকল্পের লক্ষ্য।

এ ছাড়া প্রকল্পের আওতায় প্রধান কার্যক্রমের মধ্যে থাকছে বগুড়ায় উপপরিচালকের কার্যালয় ও প্রশিক্ষণকেন্দ্র নির্মাণ, ২০০টি পেঁয়াজ সংরক্ষণাগার, তিনটি আধুনিক ফল-সবজি ও কৃষিপণ্য সংরক্ষণাগার স্থাপন এবং ৩ হাজার ১৮৫টি কৃষি যন্ত্রপাতি বিতরণ। কৃষকদের জন্য মোট ৪ হাজার ৮৪০ ব্যাচ প্রশিক্ষণ আয়োজনের পাশাপাশি ৪১ হাজারের বেশি প্রযুক্তি সম্প্রসারণ প্রদর্শনী এবং ৭০০টি মাঠ দিবস ও কারিগরি আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পরিকল্পনাসচিব এস এম শাকিল আখতার আজকের পত্রিকাকে বলেন, টেকসই কৃষি উন্নয়নের স্বার্থে প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছে। তবে নির্ধারিত কর্মসূচি মাঠপর্যায়ে কার্যকরভাবে বাস্তবায়িত হয় কি না, সেটাই প্রকল্পের সাফল্য নির্ধারণ করবে।

একই বিষয়ে কৃষিসচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান আজকের পত্রিকাকে জানান, পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির ব্যবহার আবাদি জমির সঠিক ফসল ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করবে। উৎপাদিত ফসলের সংরক্ষণব্যবস্থা উন্নত হলে কৃষকের ক্ষতি কমবে এবং আয়ের সুযোগ বাড়বে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বিশেষ ট্রাইব্যুনাল যেন গুদামঘর

আসাদুজ্জামান নূর, ঢাকা
আপডেট : ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০: ০২
বিশেষ ট্রাইব্যুনাল যেন গুদামঘর

দেশের পুঁজিবাজারে বড় ধরনের অনিয়ম ও অপরাধের দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে যে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়েছিল, তা আজ এক দশক ধরে কার্যত নিষ্ক্রিয়। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) অধীনে থাকা এই স্পেশাল ট্রাইব্যুনালে গত ১০ বছরে একটি নতুন মামলাও আসেনি। ১৯৯৬ ও ২০১০ সালের বাজারধস-সংক্রান্ত ২৭টি পুরোনো মামলাই কেবল এই আদালতের অস্তিত্বের সাক্ষ্য বহন করছে। বাস্তবে রাজধানীর পল্টনে অবস্থিত ট্রাইব্যুনাল ভবনটি এখন আর বিচারকক্ষ নয়; বরং অব্যবহৃত আসবাবের গুদামঘরে পরিণত হয়েছে।

মূলত জরিমানা ও প্রশাসনিক ব্যবস্থার ওপর নির্ভর করেই এগোচ্ছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। তবে এই কাঠামোয় প্রকৃত শাস্তি আর দায় নির্ধারণের কার্যকর পথ প্রায় বন্ধই রয়ে গেছে। তদন্তে অপরাধ শনাক্ত হলেও মামলা করা হয় না, আর যেসব মামলা করা হয়েছে সেগুলোর বড় অংশ বছরের পর বছর উচ্চ আদালতে ঝুলে রয়েছে। এর ফল দাঁড়িয়েছে স্পষ্ট—ট্রাইব্যুনাল থাকলেও বিচার কার্যত অনুপস্থিত।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আইন, আদালত ও কাঠামো থাকা সত্ত্বেও পুঁজিবাজারে বিচারিকপ্রক্রিয়া অব্যাহত না থাকলে, দায়বদ্ধতা চিহ্নিত না হলে এবং শাস্তি না হলে বাজারে দায়হীনতা ও শাস্তিহীনতার সংস্কৃতি আরও উদ্বেগজনকভাবে প্রতিষ্ঠিত হবে।

পুঁজিবাজারে বড় কেলেঙ্কারির পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৫ সালে জেলা ও দায়রা জজ পদমর্যাদার বিচারকের নেতৃত্বে বিএসইসির এই স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। উদ্দেশ্য ছিল, বাজারে শাস্তির দৃষ্টান্ত স্থাপন এবং অপরাধীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনা; কিন্তু বাস্তবে সে উদ্দেশ্য পূরণ হয়নি।

তথ্য অনুযায়ী, ২৭ মামলার মধ্যে এখন পর্যন্ত মাত্র ১০টি নিষ্পত্তি হয়েছে। ১৪টি মামলা উচ্চ আদালতে ঝুলে রয়েছে, ৩টি স্থগিত। এ ছাড়া ২০১৫ সালের পর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে করা চারটি মামলাও আজ পর্যন্ত স্পেশাল ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করতে পারেনি বিএসইসি।

সরেজমিনে দেখা যায়, বিএসসির বিশেষ ট্রাইব্যুনাল একজন জেলা ও দায়রা জজসহ ছয়জন কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে নিয়ে চললেও বাস্তবে ট্রাইব্যুনালের এজলাসে কোনো বিচারিক কার্যক্রম নেই। আসামিদের জন্য নির্ধারিত কক্ষসহ পুরো বিচারিক আদালত এখন ভাঙাচোরা চেয়ার-টেবিলের গুদামঘরে পরিণত হয়েছে, ধুলাবালু ও ময়লা-আবর্জনার স্তূপ জমেছে। আবার বিনিয়োগকারীদের বড় অংশই জানেন না এমন একটি ট্রাইব্যুনাল আদৌ আছে। বাজারসংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ অংশীজনদের মধ্যেও এর কার্যক্রম সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা নেই।

এ বিষয়ে বিনিয়োগকারী সানী মাহমুদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বিএসইসির যে স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল আছে, সেটাই তো জানি না। এটা কী কাজ করে, সেটাও আমার জানা নেই।’

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাবেক জ্যেষ্ঠ ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি আহমেদ রশিদ লালী বলেন, ‘এটার সর্বশেষ অবস্থা কী, সেটাই আমরা জানি না। এখনো কার্যক্রম আছে কি না, সেটাও অনিশ্চিত।’

এদিকে বিএসইসি জরিমানা ও প্রশাসনিক ব্যবস্থার মাধ্যমে অনিয়ম দমন করছে। সংস্থাটির তথ্যমতে, চলতি বছরেই সাড়ে তিন শর বেশি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। দেড় বছরে জরিমানার পরিমাণ ছাড়িয়েছে ১ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। কিছু মধ্যস্বত্বভোগী ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের লাইসেন্সও বাতিল করা হয়েছে। তবে এসব জরিমানার বড় অংশ আদায় হচ্ছে না। আবার জরিমানা আরোপের পর সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে মামলা করার সুযোগও থাকছে না।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র আবুল কালাম বলেন, ‘মামলা ট্রান্সফার করে আনলেও সেগুলো আবার উচ্চ আদালতে চলে যাচ্ছে। দৃশ্যমান আর্থিক ক্ষতি চিহ্নিত করে জরিমানা করাই কি যথেষ্ট নয়?’

তবে বিশ্লেষকদের মতে, শুধু জরিমানা দিয়ে বাজারে শৃঙ্খলা ফেরানো সম্ভব নয়। বরং অভিযুক্ত ব্যক্তিদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘ট্রাইব্যুনাল সক্রিয় থাকলে প্রকৃত অপরাধীরা শাস্তি পেত এবং অন্যরা অপরাধে নিরুৎসাহিত হতো।’

বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, ‘হাজার হাজার কোটি টাকা জরিমানা করে লাভ নেই। জরিমানা আদায়ই হচ্ছে না; বরং বাজারে অস্বস্তি বাড়ছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত