Ajker Patrika

মায়ের নামে মুক্তার ‘নাহার কুটির’

মন্টি বৈষ্ণব
মায়ের নামে মুক্তার ‘নাহার কুটির’

স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসেন ফারহানা আফরোজ মুক্তা। খুব ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন দেখতেন নিজে কিছু করার। হয় বড় হয়ে ডাক্তার হবেন, নয়তো বাবার মতো শিক্ষক হবেন। কিন্তু উদ্যোক্তা হবেন সেটা কখনো ভাবেননি তিনি। জীবনযুদ্ধে টিকে থাকার জন্য ২০২০ সালে শুরু করেন অনলাইন ভিত্তিক শপিং প্ল্যাটফর্ম ‘নাহার কুটির’।

‘মেয়েদের বেশি পড়ালেখা করতে নেই’, ‘পড়াশোনা করে কি হবে’, ‘মেয়ের চাকরি হবে না বিয়ের বয়স শেষ হয়ে যাবে'—মেয়েদের ক্ষেত্রে এ কথাগুলো এখনো আমাদের দেশের অনেক গ্রামের প্রচলিত কিছু কথা। তাই ক্ষেত্রবিশেষে গ্রামের মেয়েদের লেখাপড়া করাটা বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। ফারহানা আফরোজ মুক্তা যে গ্রামে বসবাস করতেন, সেই গ্রামের পরিবেশ ছিল রক্ষণশীল চিন্তা চেতনার। তবে, তাঁর বাবা স্থানীয় হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক হওয়ায় লেখাপড়া করার সুযোগটা পান তিনি। তা না হলে শৈশবেই লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যেত মুক্তার।

কুশির তৈরি বিভিন্ন ধরনের ফুলদিনাজপুরের এক ছোট্ট গ্রামে জন্ম মুক্তার। চার ভাইবোনের মধ্যে সবার ছোট তিনি। বাড়ির পাশে চিন্তামন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে উত্তীর্ণ হয়ে ভর্তি হয়েছিলেন চৌরাইট মহেশপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে। এরপর বঙ্গবন্ধু সরকারি ডিগ্রি কলেজ থেকে এসএসসি পাস করে ভর্তি হন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে কৃতিত্বের সঙ্গে ২য় স্থান অধিকার করে শেষ করেন শিক্ষাজীবন।

নিজের সম্পর্কে বলতে গিয়ে মুক্তা বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে পড়াশোনার পাশাপাশি আমি টুকটাক হাতের কাজ করতাম। এ কাজগুলো আমার কাছে নেশার মতো ছিল। যে সময় খেলাধুলার বয়স ছিল, সে সময় আমি এই কাজগুলো নিয়ে বসে থাকতাম। নতুন নতুন জিনিস তৈরি করতে খুব আনন্দ লাগত। এক সময় হারিয়ে গেল আমার ভালো লাগার কাজগুলো। অ্যাডমিশন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস, প্রেজেন্টেশন, ভাইবা, ফিল্ডওয়ার্ক—এসব কাজে নিজেকে একসময় হারিয়ে ফেললাম। ২০১৯ সালে মাস্টার্স পরীক্ষা শেষে বিয়ে হয়। রংপুরে ছোট্ট একটা সংসার শুরু হয় আমাদের। সংসার চলত নিজেদের টিউশনির টাকায়।’

টিস্যু কভারকিন্তু এর মাঝে শুরু হয় মহামারি করোনা। আর থেমে যায় সবকিছু। কিন্তু চাকরির জন্য নির্ধারিত বয়স তো আর থেমে থাকে না। এ সময়টা ছিল মুক্তার জন্য সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং। তখন তিনি কি করবেন, তা বুঝে উঠতে পারছিলেন না। আত্মীয়স্বজনরাও বলাবলি শুরু করে, ‘এত পড়ালেখা করে কি আর হলো, একটা চাকরিও তো হলো না’! মুক্তা বলছিলেন, ‘এ কারণে বাড়িতে যাওয়া বন্ধ করে দিলাম। বাড়িতে গেলেই সবার একই প্রশ্ন কবে চাকরি হবে? এই কথা শুনে খুব খারাপ লাগত।’

তবে বাবা-মা সব সময় মুক্তাকে অনুপ্রেরণা দিতেন। তাঁর কথায়, ‘বাবা–মা আমাকে কখনো হতাশ হতে দিতেন না। এ প্রসঙ্গে একটা ঘটনার কথা বলি, যখন আমি মাস্টার্স সেকেন্ড সেমিস্টারের ছাত্রী ছিলাম। তখন একদিন ক্লাস এইটের আমার এক ভাতিজির বিয়ের খবর শুনে খুব অবাক হয়েছিলাম। মানে আমাদের গ্রামের মেয়েরা পড়ালেখা শেষ না করেই কম বয়সে সংসারের বোঝা কাঁধে নিয়ে নিত। আমার এই এত দূর আসার পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান আমার বাবা-মায়ের। মেয়ের পড়াশোনার জন্য তাদের গ্রামবাসীদের কাছ থেকে প্রতিনিয়ত শুনতে হয়েছে কটু কথা। কিন্তু আমার বাবা–মা কখনো এসব কথা কানে নিতেন না। আর আমাকেও কোনো কথা শুনতেও দিতেন না।’

শিশুদের জামার গলাউদ্যোক্তা হওয়ার গল্পটা জানতে চাইলে মুক্তা বলেন, ‘করোনা মহামারিতে মানসিকভাবে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলাম। তখন শৈশবের সেই ভালো লাগার কাজগুলো নিয়ে ভাবতে লাগলাম। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিভিন্ন গ্রুপে দেখতাম কীভাবে নারীরা এগিয়ে যাচ্ছেন। দেখে ভালো লাগত। দেখতে দেখতে একদিন সিদ্ধান্ত নিলাম আমাকে কিছু একটা করতে হবে, যে কাজে মানুষ আমাকে চিনবে, আর নিজের একটা পরিচয় হবে। এরপর ২০২০ সালেই জমানো মাত্র ৩০০০ হাজার টাকা দিয়ে শুরু করলাম নাহার কুটির।’

মুক্তা জানান, মায়ের নাম নুরনাহার থেকেই ‘নাহার কুটির’ নামটি নেওয়া। তিনি বলেন, ‘আমি চেয়েছি আমার মায়ের নামে আমাকে সবাই চিনবে। আমার সিগনেচার পণ্য কুশির তৈরি পণ্য। এ ছাড়া আমি কুশির তৈরি বুক কভার, টিস্যু কভার, বিভিন্ন ধরনের টুপি, জুতা, সোয়েটার, মাফলার, বাচ্চাদের জামার গলা, কাঠের গয়না, হ্যান্ড পেইন্ট কুর্তি ইত্যাদি তৈরি করি। এ কাজে সহযোগিতা পেয়েছি জীবনসঙ্গী রাশেদুল ইসলামের কাছে। সে প্রথম থেকেই আমার অনুপ্রেরণা হয়ে পাশে আছে। সুতা কেনা, পণ্য ডেলিভারি, প্যাকেজিং, কালার ম্যাচিং সব কাজেই তাঁকে আমি পাশে পাই। এ ছাড়া আমার ভাইবোন, শ্বশুর-শাশুড়ি ও ননদ সব সময় আমার পাশে আছেন। একটা মেয়ের এগিয়ে যাওয়ার জন্য এটি অনেক বড় শক্তি।’

মুক্তার বর্তমানে মাসে আয় হয় পাঁচ থেকে আট হাজার টাকা। আবার সে টাকা দিয়ে বিক্রির জন্য কেনেন নতুন কোনো পণ্য। এইভাবে চলছে তাঁর ‘নাহার কুটির’–এর কাজ।

শিশুদের জামার গলানিজের কাজ সম্পর্কে ‘নাহার কুটির’–এর এই কর্ণধার বলেন, ‘উদ্যোক্তা হওয়ার ইচ্ছেটা আমার প্রয়োজন ও ভালো লাগা থেকে। নিজের প্রয়োজনেই উদ্যোক্তা হয়েছি। বর্তমানে কোনো কর্মী নেই আমার। সব কাজ নিজের হাতেই করি। আর আমার কাজগুলো হাতের তৈরি বলে প্রচুর সময় লাগে। সংসারের কাজ সামলে ঠিক সময়ে পণ্য সরবরাহ করা বেশ কষ্টের হয়ে যায়। তবে আমার ক্রেতারা আমাকে পর্যাপ্ত সময় দেন। আবার আমার কাজের কাঁচামালগুলো কাছাকাছি সব সময় পাওয়া যায় না। বাইরে থেকে আসল কাঁচামাল আনাটাও এক ধরনের চ্যালেঞ্জ।’

মুক্তা মনে করেন, উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হলেই চাকরি করতে হবে—এমন ধারণা থেকে বের হয়ে আসতে হবে সবাইকে। তবেই মুক্তি মিলবে বেকারত্ব থেকে। বর্তমানে নারীদের অর্থনৈতিক ভাবে স্বাবলম্বী হওয়া খুবই জরুরি। সংসার সামলে ঘরে বসেই একজন নারী চাইলে তাঁর স্বপ্ন পূরণ করতে পারেন। আর এর জন্য প্রয়োজন মেধা, শ্রম ও আত্মবিশ্বাস।

স্বপ্ন মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে। তবে সময়ের সঙ্গে স্বপ্নগুলোও পাল্টে যায়। সেই পাল্টানো সময় থেকে বেরিয়ে এসেছেন মুক্তা। নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন একজন নারী উদ্যোক্তা হিসেবে। মুক্তার আশা, তাঁর তৈরি পণ্য দেশে–বিদেশে পরিচিতি পাবে। সব ধরনের হাতের তৈরি পণ্য যুক্ত হবে। আর এর মাধ্যমে কর্মসংস্থান হবে সুবিধাবঞ্চিত নারীদের।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তারেক রহমানের জন্য নির্ধারিত ফ্লাইটের দুই কেবিন ক্রুকে প্রত্যাহার

‘আমি তো মামলা করি না, ডাইরেক্ট ওয়ারেন্ট করাই’

কুকুর লেলিয়ে পুরুষ ফিলিস্তিনিকে ধর্ষণ—বিবিসির প্রতিবেদনে ইসরায়েলি কারাগারে নির্যাতনের চিত্র

ভালুকায় কারখানার শ্রমিকদের মহাসড়ক অবরোধ

পত্রিকা অফিসে হামলার গোয়েন্দা তথ্য ছিল, আমলে নেওয়া হয়নি: সালাহউদ্দিন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

আদালতের রায়ে ইতিহাস গড়লেন ইলন মাস্ক, সম্পদ ছাড়াল ৭০০ বিলিয়ন ডলার

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
টেসলার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইলন মাস্ক। ছবি: সংগৃহীত
টেসলার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইলন মাস্ক। ছবি: সংগৃহীত

পে প্যাকেজ বা বেতন-ভাতাসংক্রান্ত একটি মামলার রায়ের পর টেসলার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইলন মাস্কের সম্পদ গত শুক্রবার রাতে ৭৪৯ বিলিয়ন ডলারে গিয়ে ঠেকেছে।

ফোর্বসের বিলিয়নিয়ার ইনডেক্স অনুযায়ী, ডেলাওয়্যার সুপ্রিম কোর্ট মাস্কের ১৩৯ বিলিয়ন ডলার মূল্যের টেসলা স্টক অপশনগুলো পুনর্বহাল করার পরই তাঁর সম্পদে এই বিশাল উল্লম্ফন দেখা যায়।

উল্লেখ্য, গত বছর আদালত এই সুবিধাগুলো বাতিল করেছিলেন।

২০১৮ সালে মাস্কের যে বেতন প্যাকেজের মূল্য ৫৬ বিলিয়ন ডলার ছিল, সেটিই গত শুক্রবার ডেলাওয়্যার সুপ্রিম কোর্ট পুনর্বহাল করেন। এর দুই বছর আগে নিম্ন আদালত ওই পারিশ্রমিক চুক্তিকে ‘অবিশ্বাস্য’ আখ্যা দিয়ে বাতিল করেছিলেন।

সুপ্রিম কোর্ট রায়ে বলেছেন, ২০২৪ সালে দেওয়া যে সিদ্ধান্তে বেতনের প্যাকেজটি বাতিল করা হয়েছিল, তা সঠিক ছিল না এবং মাস্কের প্রতি অন্যায্য ছিল।

এর আগে চলতি সপ্তাহে মহাকাশ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্স শেয়ারবাজারে আসতে পারে—এমন প্রতিবেদনের পর মাস্কের সম্পদ ৬০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যায়। এর মধ্য দিয়ে তিনি ইতিহাসে প্রথম ব্যক্তি হিসেবে এই মাইলফলক স্পর্শ করেন।

এদিকে গত নভেম্বরে টেসলার শেয়ারহোল্ডাররা আলাদাভাবে মাস্কের জন্য ১ ট্রিলিয়ন ডলারের একটি পারিশ্রমিক পরিকল্পনা অনুমোদন করেন।

এটি করপোরেট ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বেতন প্যাকেজ। বিনিয়োগকারীরা বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাতা টেসলাকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও রোবটিকসভিত্তিক এক শক্তিশালী প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরে মাস্কের পরিকল্পনার প্রতি সমর্থন জানান।

ফোর্বসের তালিকা অনুযায়ী, মাস্কের বর্তমান সম্পদমূল্য গুগলের সহপ্রতিষ্ঠাতা ল্যারি পেজের চেয়ে প্রায় ৫০০ বিলিয়ন ডলার বেশি। ল্যারি পেজ বর্তমানে বিশ্বের দ্বিতীয় ধনী ব্যক্তি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তারেক রহমানের জন্য নির্ধারিত ফ্লাইটের দুই কেবিন ক্রুকে প্রত্যাহার

‘আমি তো মামলা করি না, ডাইরেক্ট ওয়ারেন্ট করাই’

কুকুর লেলিয়ে পুরুষ ফিলিস্তিনিকে ধর্ষণ—বিবিসির প্রতিবেদনে ইসরায়েলি কারাগারে নির্যাতনের চিত্র

ভালুকায় কারখানার শ্রমিকদের মহাসড়ক অবরোধ

পত্রিকা অফিসে হামলার গোয়েন্দা তথ্য ছিল, আমলে নেওয়া হয়নি: সালাহউদ্দিন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

পুঁজিবাজারে নথি জমা এখন এক ক্লিকে

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
পুঁজিবাজারে নথি জমা এখন এক ক্লিকে

দীর্ঘদিন ধরে দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডগুলোর তথ্য জমা দেওয়ার প্রক্রিয়া ছিল জটিল ও সময়সাপেক্ষ। একই তথ্য বারবার ছাপিয়ে আলাদা স্টক এক্সচেঞ্জে জমা দিতে হতো। এ সমস্যার সমাধান হিসেবে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সম্প্রতি চালু করেছে সম্পূর্ণ অনলাইনভিত্তিক স্মার্ট সাবমিশন সিস্টেম (এসএসএস)।

নতুন এই সিস্টেমের মাধ্যমে কোম্পানি ও ফান্ডগুলো মূল্য সংবেদনশীল ঘোষণা, আর্থিক প্রতিবেদন ও অন্যান্য রেগুলেটরি ফাইলিং কাগজ ছাড়াই অনলাইনে জমা দিতে পারবে। এতে সময় ও খরচ কমার পাশাপাশি তথ্য ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা এবং ট্র্যাকিং ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।

ডিএসই সূত্র জানায়, ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে পরীক্ষামূলকভাবে চালু হওয়া এই প্ল্যাটফর্ম ধাপে ধাপে সম্প্রসারণ করা হয়েছে। সর্বশেষ দুটি নতুন মডিউল যুক্ত হওয়ায় এখন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে তথ্য একই ডিজিটাল গেটওয়ে দিয়ে জমা দেওয়া সম্ভব। ফলে দ্বৈত সাবমিশনের ঝামেলা প্রায় সম্পূর্ণভাবে শেষ হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএসইর চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম বলেন, এই উদ্যোগের মাধ্যমে কাগুজে নথির ওপর নির্ভরতা পুরোপুরি বন্ধ করা সম্ভব হয়েছে। ডিজিটাল সাবমিশন শুধু সুবিধার বিষয় নয়, এটি বাজার শৃঙ্খলা ও সময়ানুবর্তিতা নিশ্চিত করার একটি কাঠামোগত পরিবর্তন।

ডিএসই জানায়, চায়নিজ কনসোর্টিয়ামের সঙ্গে কাজ করে প্রশিক্ষণ ও সক্ষমতা বাড়ানোর পর সিস্টেমটি নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় তৈরি করা হয়েছে। এর ফলে ভবিষ্যতে বাজারের চাহিদা অনুযায়ী নতুন ফিচার যুক্ত করা সহজ হবে।

প্রযুক্তিগত দিক থেকে এর গুরুত্ব ব্যাখ্যা করে ডিএসইর প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা ড. মো. আসিফুর রহমান বলেন, একক ডিজিটাল সাবমিশন পয়েন্ট চালু হওয়ায় ম্যানুয়াল হস্তক্ষেপজনিত ভুল কমবে এবং তথ্য জমার প্রতিটি ধাপ ডিজিটালি যাচাইযোগ্য থাকবে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই উদ্যোগের প্রভাব শুধু স্টক এক্সচেঞ্জেই সীমাবদ্ধ থাকবে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তারেক রহমানের জন্য নির্ধারিত ফ্লাইটের দুই কেবিন ক্রুকে প্রত্যাহার

‘আমি তো মামলা করি না, ডাইরেক্ট ওয়ারেন্ট করাই’

কুকুর লেলিয়ে পুরুষ ফিলিস্তিনিকে ধর্ষণ—বিবিসির প্রতিবেদনে ইসরায়েলি কারাগারে নির্যাতনের চিত্র

ভালুকায় কারখানার শ্রমিকদের মহাসড়ক অবরোধ

পত্রিকা অফিসে হামলার গোয়েন্দা তথ্য ছিল, আমলে নেওয়া হয়নি: সালাহউদ্দিন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

দেশের প্রথম ‘ক্যাশলেস’ জেলা হতে যাচ্ছে কক্সবাজার

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। ছবি: আজকের পত্রিকা
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। ছবি: আজকের পত্রিকা

বাংলাদেশকে একটি ডিজিটাল ও নগদ লেনদেনমুক্ত (ক্যাশলেস) রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে বড় ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই মহাপরিকল্পনার অংশ হিসেবে পর্যটন নগরী কক্সবাজারকে দেশের প্রথম ‘ক্যাশলেস’ জেলা হিসেবে ঘোষণা করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

গতকাল শনিবার চট্টগ্রামে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর এই তথ্য জানান।

গভর্নর বলেন, ‘২০২৭ সালের মধ্যে দেশের অন্তত ৭৫ শতাংশ খুচরা লেনদেন ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে সম্পন্ন করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।’ তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে হলে দেশের প্রতিটি নাগরিকের হাতে ৬ হাজার থেকে ৭ হাজার টাকার মধ্যে স্মার্টফোন পৌঁছানো নিশ্চিত করতে হবে।’

চট্টগ্রাম অঞ্চলের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভূমিকা শীর্ষক এই সভায় গভর্নর চট্টগ্রামকে দেশের ‘অর্থনৈতিক লাইফলাইন’ হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, ‘প্রধান সমুদ্রবন্দর, রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (ইপিজেড), ভারী শিল্প এবং জ্বালানি অবকাঠামোর কেন্দ্রবিন্দু এই চট্টগ্রাম। সিঙ্গাপুর, দুবাই বা হংকংয়ের মতো চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক সংযোগ শক্তিশালী করতে হবে। তবেই এই অঞ্চলের ভূ-রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্ভাবনা পুরোপুরি কাজে লাগানো সম্ভব হবে।’

আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম সহজ করতে দেশের সব সমুদ্রবন্দর ও বিমানবন্দরে শিগগিরই ২৪ ঘণ্টা রিয়েল টাইম গ্রস সেটেলমেন্ট (আরটিজিএস) সিস্টেম চালু করা হবে বলে জানান গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। এটি একটি তাৎক্ষণিক ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার ব্যবস্থা যা বাণিজ্যের গতি বহুগুণ বাড়িয়ে দেবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

এ ছাড়া, তৃণমূল পর্যায়ে বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এমএমই) এবং কৃষি খাতে পর্যাপ্ত ও সহজ শর্তে ঋণ নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন গভর্নর। জেলা ও তৃণমূল পর্যায়ে উৎপাদনশীল খাতের বিকাশকে ত্বরান্বিত করতে ব্যাংকগুলোকে আরও সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মো. মকবুল হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সভায় বিভিন্ন ব্যবসায়িক চেম্বার, ব্যাংকার, সরকারি সংস্থার প্রতিনিধি এবং শিক্ষাবিদ উপস্থিত ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তারেক রহমানের জন্য নির্ধারিত ফ্লাইটের দুই কেবিন ক্রুকে প্রত্যাহার

‘আমি তো মামলা করি না, ডাইরেক্ট ওয়ারেন্ট করাই’

কুকুর লেলিয়ে পুরুষ ফিলিস্তিনিকে ধর্ষণ—বিবিসির প্রতিবেদনে ইসরায়েলি কারাগারে নির্যাতনের চিত্র

ভালুকায় কারখানার শ্রমিকদের মহাসড়ক অবরোধ

পত্রিকা অফিসে হামলার গোয়েন্দা তথ্য ছিল, আমলে নেওয়া হয়নি: সালাহউদ্দিন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজের গ্র্যাচুইটি ফান্ড: কর্মকর্তার অবহেলায় ৬৫ লাখ টাকার ক্ষতি

  • ৩৩ মাস অব্যবহৃত পড়ে ছিল ফান্ডের অর্থ
  • অভিযুক্ত কর্মকর্তা আগাম স্বেচ্ছা অবসরে
  • দায়িত্বে অবহেলায় জরিমানা ১ লাখ টাকা
সবুর শুভ, চট্টগ্রাম 
প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজের গ্র্যাচুইটি ফান্ড: কর্মকর্তার অবহেলায় ৬৫ লাখ টাকার ক্ষতি

দেশের একমাত্র গাড়ি প্রস্তুত ও সংযোজনকারী রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডে কর্মচারীদের গ্র্যাচুইটি ফান্ড ব্যবস্থাপনায় দীর্ঘ ৩৩ মাসের অবহেলায় অন্তত ৬৫ লাখ টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। অথচ এই ক্ষতির দায়ে তদারকি কর্মকর্তার কাছ থেকে জরিমানা হিসেবে আদায় করা হয়েছে মাত্র ১ লাখ টাকা। বিশাল ক্ষতির বিপরীতে সামান্য দণ্ডে দায় নিষ্পত্তির ঘটনা প্রতিষ্ঠানটিতে প্রশ্ন ও সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।

ফান্ড দেখভালের অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা সহপ্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা জসিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলার প্রমাণ মিললেও তিনি শর্তসাপেক্ষে স্বেচ্ছায় অবসর নিয়ে দায়িত্বমুক্ত হয়েছেন। ২৫ ডিসেম্বর তাঁর অবসর কার্যকর হওয়ার কথা থাকলেও তিনি গত ৩১ আগস্ট থেকে আগাম অবসরে যান। ২১ জুলাই শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ ইস্পাত ও প্রকৌশল করপোরেশনের (বিএসইসি) কাছে তিনি স্বেচ্ছায় অবসরের আবেদন করেন এবং তাঁর অবসর মঞ্জুর করা হয়।

এ বিষয়ে জসিম উদ্দিন বলেন, আমি প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড এমপ্লয়িজ গ্র্যাচুইটি ফান্ড ট্রাস্টের সদস্য নই। অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে ফান্ডের দেখভাল করেছি। ডাবল বেনিফিট স্কিমের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার পর ভুলবশত তা রিনিউ করা হয়নি। দোষটা আসলে ব্যাংকের, বিষয়টি ব্যাংকের পক্ষ থেকে জানানো হয়নি। সে কারণে আমরা মুনাফা থেকে বঞ্চিত হয়েছি।

জসিম উদ্দিন আরও বলেন, গ্র্যাচুইটি ফান্ড পরিচালনার পূর্ণ দায় ট্রাস্টি বোর্ডের সাত সদস্যের। তারপরও আমার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়েছে, আমি তা মোকাবিলা করেছি এবং ১ লাখ টাকা জরিমানাও গুনেছি। এটি অনিচ্ছাকৃত একটি ভুল।

প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ সূত্রে জানা যায়, কর্মচারীদের জন্য গঠিত ‘প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড এমপ্লয়িজ গ্র্যাচুইটি ফান্ড ট্রাস্ট’-এর ২ কোটি টাকা ২০১২ সালের ২৪ জুলাই জনতা ব্যাংকের শেখ মুজিব রোড (আগ্রাবাদ) শাখায় ডাবল বেনিফিট স্কিমে জমা রাখা হয়। ছয় বছর মেয়াদি এ স্কিমে সুদের হার ছিল ১২ দশমিক ৬৩ শতাংশ। মেয়াদ শেষে ২০১৮ সালের ২৪ জুলাই সুদে-আসলে টাকার পরিমাণ দাঁড়ায় ৩ কোটি ৭৯ লাখ ৫৮ হাজার টাকা।

কিন্তু মেয়াদ শেষ হওয়ার পরবর্তী ৩৩ মাস ওই অর্থ একইভাবে ব্যাংকে পড়ে থাকে। এ সময়ে না প্রগতি কর্তৃপক্ষ উদ্যোগ নেয়, না ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ফান্ডের মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে জানায়। এতে সম্ভাব্য মুনাফা হারিয়ে প্রতিষ্ঠানের ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করা হয় ৯৩ লাখ ৯৪ হাজার ৬১০ টাকা।

ঘটনাটি ধরা পড়ার পর ফান্ড তদারকির দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা জসিম উদ্দিনের কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়। ২০২৩ সালের ১ মার্চ দেওয়া তাঁর ব্যাখ্যা কর্তৃপক্ষ গ্রহণযোগ্য মনে করেনি। পরবর্তী সময়ে ১১ এপ্রিল প্রগতির তিন কর্মকর্তাকে নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন বিভাগীয় প্রশাসনিক প্রধান মো. নুর হোসেন। সদস্য হিসেবে ছিলেন সহপ্রধান হিসাবরক্ষক গোলাম রাব্বি মোহাম্মদ সাদাত হোসেন এবং হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মো. খায়রুল বাশার।

তদন্ত কমিটির সুপারিশে জনতা ব্যাংকের কাছে ৩৩ মাসের মুনাফা দাবি করা হয়। দেনদরবারের পর ব্যাংক সঞ্চয়ী বেনিফিটের আওতায় ২৮ লাখ টাকা পরিশোধ করে। জসিম উদ্দিনের কাছ থেকে আদায় করা জরিমানার ১ লাখ টাকা যোগ করে মোট উদ্ধার হয় ২৯ লাখ টাকা। ফলে এখনো অনাদায়ী থেকে যায় ৬৪ লাখ ৯৪ হাজার ৬১০ টাকা।

এ বিষয়ে জনতা ব্যাংক আগ্রাবাদ শাখার ব্যবস্থাপক মো. সানাউল্লাহ বলেন, ডাবল বেনিফিট স্কিমের মেয়াদ শেষে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে নবায়ন হয় না। এ কারণে ওই সময়ের বেনিফিট পাওয়ার সুযোগ ছিল না। ২৮ লাখ টাকা পরিশোধের বিষয়ে তিনি জানান, বিষয়টি তাঁর আগের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপকের সময়কার সিদ্ধান্ত।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তারেক রহমানের জন্য নির্ধারিত ফ্লাইটের দুই কেবিন ক্রুকে প্রত্যাহার

‘আমি তো মামলা করি না, ডাইরেক্ট ওয়ারেন্ট করাই’

কুকুর লেলিয়ে পুরুষ ফিলিস্তিনিকে ধর্ষণ—বিবিসির প্রতিবেদনে ইসরায়েলি কারাগারে নির্যাতনের চিত্র

ভালুকায় কারখানার শ্রমিকদের মহাসড়ক অবরোধ

পত্রিকা অফিসে হামলার গোয়েন্দা তথ্য ছিল, আমলে নেওয়া হয়নি: সালাহউদ্দিন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত