Ajker Patrika

সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা বিল সংসদে পাস

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ০৯ মার্চ ২০২৪, ১২: ১৬
সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা বিল সংসদে পাস

দেশের সব প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিককে পেনশন ব্যবস্থার আওতায় আনতে জাতীয় সংসদে বিল পাস করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার ‘সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা বিল, ২০২৩’ জাতীয় সংসদে পাস হয়। এখন রাষ্ট্রপতি সম্মতি দিলে বিলটি আইনে পরিণত হবে।

আজ মঙ্গলবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বিলটি পাসের জন্য সংসদে তোলেন। পরে এটি কণ্ঠভোটে পাস হয়। এর আগে বিলের ওপর আনা জনমত যাচাই-বাছাই কমিটিতে প্রেরণ ও সংশোধনী প্রস্তাবগুলো নিষ্পত্তি করা হয়। পেনশন স্কিমে সরকারের কোনো অংশগ্রহণ নেই বলে দাবি করেন বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা। তাঁরা বলেন, এটা ব্যাংকের ডিপিএস স্কিমের মতো। গুঞ্জন আছে, সরকারের কি টাকার অভাব হয়েছে যে জনগণের কাছ থেকে টাকা নিয়ে চলবে?

বিলে যা আছে
বিলে বলা হয়েছে, জাতীয় পরিচয়পত্রকে ভিত্তি ধরে সর্বজনীন পেনশনের আওতায় ১৮ বছর বা তার বেশি বয়স থেকে ৫০ বছর বয়সী সব বাংলাদেশি নাগরিক অংশ নিতে পারবেন। বিশেষ বিবেচনায় পঞ্চাশোর্ধ্ব ব্যক্তিদেরও পেনশন স্কিমের আওতায় রাখার ব্যবস্থা হয়েছে। 

মাসিক পেনশন সুবিধা পেতে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর চাঁদাদাতাকে ধারাবাহিকভাবে কমপক্ষে ১০ বছর চাঁদা দিতে হবে বলে বিলে বলা আছে। ১০ বছর চাঁদা দেওয়া শেষে তিনি যে বয়সে উপনীত হবেন, সে বয়স থেকে আজীবন পেনশন পাবেন। বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশি কর্মীরাও এতে অংশ নিতে পারবেন।

এই চাঁদার হার কত হবে তা এখনো নির্ধারণ করা হয়নি। আইন হওয়ার পর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এটি নির্ধারণ করবে। মাসিক বা ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে চাঁদা দেওয়া যাবে এবং অগ্রিম ও কিস্তিতেও চাঁদা দেওয়ার সুযোগ থাকবে।

খসড়া আইনে বলা হয়েছে, চাঁদাদাতা ধারাবাহিকভাবে কমপক্ষে ১০ বছর চাঁদা দিলে মাসিক পেনশন পাবেন। চাঁদাদাতার বয়স ৬০ বছর পূর্তিতে পেনশন তহবিলে পুঞ্জীভূত মুনাফাসহ জমার বিপরীতে পেনশন দেওয়া হবে। একজন পেনশনার আজীবন পেনশন সুবিধা পাবেন।

সরকার গেজেট জারি করে বাধ্যতামূলক না করা পর্যন্ত এই পেনশন স্কিমে অংশগ্রহণ হবে ঐচ্ছিক।

বিলে বলা হয়েছে, পেনশনে থাকাকালীন কোনো ব্যক্তি ৭৫ বছর পূর্ণ হওয়ার আগে মারা গেলে তাঁর নমিনি অবশিষ্ট সময়ের জন্য (মূল পেনশনারের বয়স ৭৫ বছর পর্যন্ত) মাসিক পেনশন প্রাপ্য হবেন। চাঁদাদাতা কমপক্ষে ১০ বছর চাঁদা দেওয়ার আগে মারা গেলে জমাকৃত অর্থ মুনাফাসহ তাঁর নমিনিকে ফেরত দেওয়া হবে।

পেনশন তহবিলে জমা দেওয়া অর্থ কোনো পর্যায়ে এককালীন তোলার প্রয়োজন পড়লে চাঁদাদাতা আবেদন করলে জমা দেওয়া অর্থের সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ ঋণ হিসেবে তুলতে পারবেন, যা ফিসহ পরিশোধ করতে হবে। পেনশন থেকে পাওয়া অর্থ আয়করমুক্ত থাকবে। পেনশনের জন্য নির্ধারিত চাঁদা বিনিয়োগ হিসেবে গণ্য করে কর রেয়াতের জন্য বিবেচিত হবে। 

বিলে বলা হয়েছে, নিম্ন আয়সীমার নিচের নাগরিকদের অথবা অসচ্ছল চাঁদাদাতার ক্ষেত্রে পেনশন তহবিলে মাসিক চাঁদার একটি অংশ সরকার অনুদান হিসেবে দিতে পারবে।

বিলে সর্বজনীন পেনশন পদ্ধতিতে সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত অথবা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের অংশ নেওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে কর্মী ও প্রতিষ্ঠানের চাঁদার অংশ কর্তৃপক্ষ নির্ধারণ করবে। তবে সরকারি সিদ্ধান্ত না দেওয়া পর্যন্ত সরকারি ও আধা সরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ব্যক্তিরা এই পেনশন ব্যবস্থার আওতাবহির্ভূত থাকবেন। 

পেনশন কর্তৃপক্ষ গঠন
বিলে একটি জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ গঠনের বিধান রাখা হয়েছে। এই কর্তৃপক্ষে একজন নির্বাহী চেয়ারম্যান ও চারজন সদস্য থাকবেন। এঁদের নিয়োগ করবে সরকার।

বিলে ১৬ সদস্যের একটি পরিচালনা পর্ষদ গঠনের বিধান রাখা হয়েছে। এর চেয়ারম্যান হবেন অর্থমন্ত্রী। এ ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব, অর্থ বিভাগের সচিব, এনবিআর চেয়ারম্যান, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান, এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি, এমপ্লয়ার্স ফেডারেশনের সভাপতি, উইমেন চেম্বাস অব কমার্সের সভাপতি এর সদস্য হবেন। পরিচালনা পর্ষদের সদস্যসচিব হবেন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান।

বিলে বলা হয়েছে, বিধি দ্বারা নির্ধারিত এক বা একাধিক তফসিলি ব্যাংক জাতীয় পেনশন তহবিলের ব্যাংকার হিসেবে কাজ করবে। 

পেনশন স্কিমে সরকারের অংশগ্রহণ জানতে চায় বিরোধী দল
বিল পাসের আলোচনায় অংশ নিয়ে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মুজিবুল হক বলেন, বিলের কথাগুলো ভালো; কিন্তু এই পেনশন স্কিমে সরকারের অংশগ্রহণ কী? সরকারের কোনো অংশগ্রহণ নেই। এটা ব্যাংকের ডিপিএস স্কিমের মতো। গুঞ্জন আছে, সরকারের কি টাকার অভাব হয়েছে যে জনগণের কাছ থেকে টাকা নিয়ে চলবে?

টাকা পাচার, বিদেশে বাংলাদেশিদের বাড়ি কেনাসহ বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরে অর্থমন্ত্রীর সমালোচনা করে মুজিবুল হক বলেন, ‘অর্থমন্ত্রী কথা কম বলেন। বোবার শত্রু কম। কিন্তু অর্থমন্ত্রীর কানে কথা পৌঁছে কি না জানা নেই। তাঁর কোনো ফিডব্যাক, উদ্যোগ দেখা যায় না।’ 

জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম বলেন, এই বিল সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। সংবিধানে বলা হয়েছে, ‘সামাজিক নিরাপত্তার অধিকার, অর্থাৎ বেকারত্ব, ব্যাধি বা পঙ্গুত্বজনিত কিংবা বৈধব্য, মাতা-পিতাহীন বা বার্ধক্যজনিত কিংবা অনুরূপ অন্যান্য পরিস্থিতিজনিত আয়ত্তাতীত কারণে অভাবগ্রস্ততার ক্ষেত্রে সরকারি সাহায্য লাভের অধিকার৷’ মানুষের কাছ থেকে চাঁদা নিয়ে সরকার আবার ফেরত দেবে। এই বিল পাস করার কোনো সুযোগ নেই। 

জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারি বলেন, আপাতদৃষ্টে আইনটি ভালো। কিন্তু বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান যেভাবে প্রভিডেন্ট করে, এটি তার বাইরে কিছু বলে মনে হয় না। সরকার কী মুনাফা দেবে, তা পরিষ্কার নয়। তিনিও দাবি করেন, এই আইন সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। 

জাতীয় পাটির সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, শিয়ালের কাছে মুরগি বাগা রাখার মতো। মানুষ ব্যাংকে টাকা রাখবে আর ব্যাংক দেদার টাকা বিদেশে পাচার করবে। ব্যাংকগুলো মানুষের আস্থা হারিয়েছে। এক ব্যাংকের পরিচালক আরেক ব্যাংক থেকে টাকা নিচ্ছেন। ব্যাংকগুলো বারোভূঁইয়াদের কাছে চলে গেছে। সব সুবিধা পাচ্ছেন ঋণখেলাপিরা।

এ সময় বিদেশে টাকা পাচার নিয়ে একটি পত্রিকার প্রতিবেদনের তথ্য তুলে ধরে কাজী ফিরোজ বলেন, দেখার কেউ নেই। যারা টাকা পাচার করছে, তাদের উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। 

গণফোরামের সংসদ সদস্য মোকাব্বির খান বলেন, এই বিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ, চমৎকার উদ্যোগ। কিন্তু এই পেনশন ব্যবস্থায় সাধারণ মানুষের সাড়া পাওয়া যাবে না। কারণ, সরকারি চাকরিজীবীরা যেভাবে পেনশন পান, তার সঙ্গে অনেক কিছুই সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। মানুষ রিটার্ন কীভাবে পাবে, তা পরিষ্কার নয়। এটি অনেকটা ব্যাংকিং প্যাকেজের মতো। এই বিল পাসের আগে সাধারণ মানুষের মতামত নেওয়া উচিত। 

নিজের এক শিক্ষক ৩৬ বছর চাকরি করার পরেও এখনো পেনশনের টাকা তুলতে পারেননি বলে অভিযোগ করে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য রেজাউল করিম বাবলু বলেন, জনগণ পেনশনের টাকা জমা দেবে, কিন্তু তারা তো অফিসের বারান্দাই চেনে না। এই টাকার নিরাপত্তা কী? নতুন বিলে সেই নিশ্চয়তা নেই বলেও দাবি করেন তিনি। 

বাবলু বলেন, অফিসের পিয়ন, গার্ডরা পেনশন পেয়ে থাকেন। এমপিদের জন্য এমন ভাতা দেওয়ার জন্য সংসদে আগেও আলোচনা করেছিলেন বলেও জানান তিনি। বাবলু বলেন, যাঁরা একবার সংসদ সদস্য হিসেবে পদ লাভ করবেন, তাঁরা যেন আজীবন একটা পেনশন স্কিম পান। 

বিরোধী দলের সদস্যদের সমালোচনার জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, এই বিল আনার আগে অনেক আলোচনা করা হয়েছে। যাঁরা লিখিত মতামত দিয়েছিলেন, তাঁদের মতামত আমলে নেওয়া হয়েছে। সংসদীয় কমিটিতেও বিলটি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। বিলটি গ্রহণযোগ্যতা পাবে বিবেচনায় এটি সংসদে আনা হয়েছে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ওসমান হাদির ময়নাতদন্ত সম্পন্ন, সংসদ ভবনে জানাজার প্রস্তুতি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদির মরদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। আজ শনিবার বেলা ১১টা ৪০ মিনিটের দিকে রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের মর্গে এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।

আজ সকালে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের হিমঘর থেকে হাদির মরদেহ অ্যাম্বুলেন্স যোগে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজে নেওয়া হয়। এ সময় পুরো এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়। ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহটি পুনরায় জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের হিমঘরে ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

পরিবার ও ইনকিলাব মঞ্চ সূত্রে জানা গেছে, হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে মরদেহের গোসল সম্পন্ন করার পর তাঁকে জানাজার জন্য জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় নেওয়া হবে। পূর্বনির্ধারিত সময় অনুযায়ী, আজ দুপুর ২টায় তাঁর নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।

জানাজা উপলক্ষে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। জানাজা উপলক্ষে সংসদ ভবন ও আশপাশ এলাকায় পর্যাপ্ত পুলিশ এ বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। ডিএমপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, নিরাপত্তার স্বার্থে জানাজায় দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা ১ হাজার বডি ওর্ন ক্যামেরা ব্যবহার করবেন। পুরো এলাকা সিসিটিভি ও গোয়েন্দা নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে।

আগতদের কোনো ধরনের ব্যাগ বা ভারী বস্তু বহন না করতে অনুরোধ করা হয়েছে। এ ছাড়া সংসদ ভবন ও এর আশপাশ এলাকায় ড্রোন ওড়ানো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে প্রশাসন।

ওসমান হাদির শেষ বিদায়ে শ্রদ্ধা জানাতে সকাল থেকেই সংসদ ভবন এলাকায় সাধারণ মানুষের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হাদির জানাজায় অংশ নিতে সংসদ এলাকায় জনস্রোত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২: ৪২
হাদির জানাজায় অংশ নিতে সংসদ এলাকায় ভিড় বাড়ছে। ছবি: আজকের পত্রিকা।
হাদির জানাজায় অংশ নিতে সংসদ এলাকায় ভিড় বাড়ছে। ছবি: আজকের পত্রিকা।

ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদির নামাজে জানাজা আজ শনিবার দুপুর ২টায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় অনুষ্ঠিত হবে। জানাজায় অংশ নিতে এরই মধ্যে সংসদ ভবন এলাকায় মানুষজন জড়ো হতে শুরু করেছে।

আজ শনিবার সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, জাতীয় সংসদ এলাকা ও মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ বিভিন্ন বয়স ও শ্রেণি-পেশার মানুষ জড়ো হয়েছে। এ সময় অনেককে স্লোগান দিতে দেখা যায়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেও অবস্থানে দেখা গেছে।

মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পর সকাল সাড়ে ১০টায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ভেতরে প্রবেশের অনুমতি দেয়। এ সময় চীন থেকে আনা ৮টি আর্চওয়ে গেট দিয়ে হাজারো সাধারণ মানুষ সারিবদ্ধভাবে দক্ষিণ প্লাজায় প্রবেশ করেন।

জানাজায় অংশ নিতে সকাল থেকেই মিছিল নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী এবং সাধারণ মানুষ সংসদ ভবন প্রাঙ্গণে জড়ো হতে শুরু করেছেন।

জানাজা উপলক্ষে সংসদ ভবন ও আশপাশ এলাকায় পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করেছে ডিএমপি। নিরাপত্তার স্বার্থে জানাজায় দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা ১ হাজারটি বডি ওর্ন ক্যামেরা ব্যবহার করবেন বলে জানিয়েছে তারা। এছাড়াও পুরো এলাকা সিসিটিভি ও গোয়েন্দা নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে।

সংসদ ভবন এলাকায় কড়া সতর্কতায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ছবি: আজকের পত্রিকা
সংসদ ভবন এলাকায় কড়া সতর্কতায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ছবি: আজকের পত্রিকা

ওসমান হাদির জানাজায় বিপুলসংখ্যক মানুষের সমাগম হতে পারে বিবেচনা করে ট্রাফিক বিভাগ থেকেও যাতায়াতের ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা ও শৃঙ্খলা বজায় রাখার আহ্বান জানানো হয়েছে।

এদিকে ওসমান হাদির মরদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। আজ সকালে মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট থেকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের মর্গে নেওয়া হয়। ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ আবার হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে নেওয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, ওসমান হাদির জানাজা বেলা আড়াইটায় অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। পরে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টা ২০ মিনিটে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, শনিবার বেলা আড়াইটার পরিবর্তে বেলা ২টায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় শহীদ ওসমান হাদির জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।

সংসদ ভবন এলাকায় কড়া সতর্কতায় বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ছবি: আজকের পত্রিকা
সংসদ ভবন এলাকায় কড়া সতর্কতায় বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ছবি: আজকের পত্রিকা

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ওসমান হাদির জানাজায় যাঁরা অংশ নিতে আসবেন, তাঁরা কোনো প্রকার ব‍্যাগ বা ভারী বস্তু বহন না করার জন‍্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা যাচ্ছে। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে সংসদ ভবন ও এর আশপাশ এলাকায় ড্রোন ওড়ানো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।

দক্ষিণ প্লাজায় জানাজা শেষে ওসমান হাদিকে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সমাধির পাশে দাফন করা হবে। দাফনের জন্য স্থানটি প্রস্তুত করা হচ্ছে। সেখানেও সকাল থেকে মানুষজন জড়ো হচ্ছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সোশ্যাল মিডিয়ায় সহিংসতার উসকানিমূলক পোস্টে রিপোর্ট করা যাবে হোয়াটসঅ্যাপ ও ই-মেইলে

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২: ২৮
সোশ্যাল মিডিয়ায় সহিংসতার উসকানিমূলক পোস্টে রিপোর্ট করা যাবে হোয়াটসঅ্যাপ ও ই-মেইলে

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সন্ত্রাস-সহিংসতার উসকানিমূলক আহ্বান-সংবলিত পোস্টের বিষয়ে তথ্য দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে জাতীয় সাইবার সুরক্ষা এজেন্সি। এ জন্য হোয়াটসঅ্যাপ ও ই-মেইল আইডি চালু করা হয়েছে।

আজ শনিবার থেকে সেখানে রিপোর্ট (অভিযোগ ও তথ্য) করা যাবে বলে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, হোয়াটসঅ্যাপে এবং ই-মেইলে প্রাপ্ত অভিযোগগুলো জাতীয় সাইবার সুরক্ষা এজেন্সি প্রাথমিক যাচাই-বাছাইয়ের পর বিটিআরসির (বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন) মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্মগুলোতে রিপোর্ট করবে।

যে নম্বর এবং ই-মেইলে রিপোর্ট করা যাবে—

হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর: 01308332592,

ই-মেইল: [email protected]

উল্লেখ্য, সরকার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কোনো পোস্ট ‘ডাউন’ করতে অর্থাৎ সরিয়ে দিতে পারে না। সরকার শুধু যৌক্তিক কারণ তুলে ধরে সহিংসতার সঙ্গে সম্পর্কিত পোস্টগুলো সংশ্লিষ্ট প্ল্যাটফর্মের কাছে রিপোর্ট করতে পারে।

বিদ্বেষমূলক বক্তব্য, যা সরাসরি সহিংসতা ঘটায় কিংবা সহিংসতার ডাক দেয়, সেগুলো সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করা জাতীয় সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫ অনুযায়ী দণ্ডনীয় অপরাধ।

জাতীয় সাইবার সুরক্ষা এজেন্সি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে সহিংসতা কিংবা অস্থিতিশীলতা তৈরির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছে। পাশাপাশি দেশ এবং নাগরিকের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তার ব্যাপারে সচেতন হতে জনসাধারণকে অনুরোধ জানিয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার রাতে ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুর পর থেকে একাধিক সংবাদমাধ্যম ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। সামাজিক যোগাযোগ প্ল্যাটফর্মে বিভিন্ন পোস্টের মাধ্যমে এসব সহিংসতার উসকানি দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। এর পরিপ্রেক্ষিতে সহিংসতায় উসকানিমূলক পোস্টের বিষয়ে তথ্য দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে জাতীয় সাইবার সুরক্ষা এজেন্সি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হাদিকে হত্যা ও পরবর্তী সহিংসতার সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায়বিচার নিশ্চিতের আহ্বান অ্যামনেস্টির

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ০৯
হাদিকে হত্যা ও পরবর্তী সহিংসতার সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায়বিচার নিশ্চিতের আহ্বান  অ্যামনেস্টির

ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদি হত্যাকাণ্ড এবং পরবর্তী সময়ে সংঘটিত সহিংসতার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। এসব ঘটনায় দ্রুত, পূর্ণাঙ্গ, স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত নিশ্চিত করতে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।

গতকাল শুক্রবার রাত ১২টা ২৬ মিনিটে এক্স হ্যান্ডলে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সাউথ এশিয়া রিজিওনাল অফিসের অ্যাকাউন্ট থেকে একটি পোস্টে এ আহ্বান জানানো হয়।

পোস্টটিতে মানবাধিকার সংস্থাটি বলেছে, হাদি হত্যাকাণ্ডের পরবর্তী সময়টিতে সহিংসতায় প্রথম আলো, ডেইলি স্টার ও ছায়ানট-এর কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে এবং নিউ এজ-এর সম্পাদক নুরুল কবির হয়রানির শিকার হয়েছেন।

এ ছাড়া ময়মনসিংহের ভালুকায় ধর্ম অবমাননার অভিযোগে হিন্দু পোশাকশ্রমিক দীপু চন্দ্র দাসকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায়ও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সংস্থাটি।

সহিংসতার তীব্র নিন্দা জানিয়ে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের পক্ষ থেকে বলা হয়, এসব কর্মকাণ্ডে মানুষ আহত হয়েছেন, সম্পদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এবং প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে। অন্তর্বর্তী সরকারকে অবিলম্বে এমন সহিংসতা ও হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের ন্যায্য বিচারের আওতায় আনতে হবে। এ ক্ষেত্রে মৃত্যুদণ্ডের আশ্রয় না নিয়ে আইনসম্মত ও ন্যায়সঙ্গত প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত