সৈয়দা সাদিয়া শাহরীন

দুজনেরই প্রথম বিদেশভ্রমণ; যার ফলে আমাদের মধ্যে কাজ করছিল একটা আনন্দবোধ ও উত্তেজনা, তা কি অল্প কথায় বোঝানো যাবে? আমাদের ডেস্টিনেশন ছিল ভ্রমণপিয়াসীদের অন্যতম আকর্ষণীয় জায়গায়। এটাকে অনেকে বলে ‘ড্রিম প্লেস টু ভিজিট’। পেটের ভেতর থেকে প্রজাপতি সুড়সুড়ি দেওয়ার অনুভূতিটা নিশ্চয়ই অনেকের হয়? সত্যি কথা, তা আমারও হচ্ছিল। ভুবনেরও কি একই অনুভূতি হচ্ছিল? ওর উত্তেজনা যে আমার চেয়ে কম ছিল না, বরং বেশি, সেটা বেশ ভালোভাবেই টের পেয়েছিলাম।
মোটামুটি মাস তিনেক লাগিয়ে আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। যেভাবে যেখান দিয়ে পারি আমাদের স্বল্প আয় থেকে একটু একটু করে টাকা জমিয়েছি। এই কদিনে যে সিকিম সম্পর্কে অন্তর্জালে কত ঘাঁটাঘাঁটি করেছি, সেটার ইয়ত্তা নেই। কথা ছিল সঙ্গে কয়েকজন বন্ধুও যাবে। কিন্তু শেষ মুহূর্তে এসে বাকি রইলাম শুধু আমরা দুজন। মনটা খারাপ হয়ে গেল। কিন্তু আমরা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলাম, যাবই।
ভারতের ভিসাটা খুব সহজে পেয়ে গেলাম আমরা। এর আগেই ভুবন দিনক্ষণ ঠিক করে রেখেছিল। ভিসা পেয়ে ২১ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যার বাসের টিকিট কাটা হলো। যেহেতু তুষারপাত হয় এমন জায়গায় যাচ্ছি, তাই প্রস্তুতিটা তো ভিন্ন হবেই। যাওয়ার আগে একদিন বেরিয়ে পড়লাম কেনাকাটা করতে। ঘুরে ঘুরে শেষে বঙ্গবাজার থেকে দুটি জ্যাকেট কিনলাম, হুডিওয়ালা। হুডির কিনার ঘেঁষে পশমের সারি, আমার খুব পছন্দ। কিনলাম দুই সেট থার্মাল পোশাক। মাইনাসের তাপমাত্রা ঠেকাতে এটা অত্যন্ত জরুরি ছিল। নিজের জন্য এক জোড়া হাতমোজা কিনলাম। ভুবনের আগে থেকে ছিল বলে আর কেনা হয়নি। সাধ্যের মধ্যে সাধ পূরণ করার জন্য চলে গেলাম বসুন্ধরা সিটির উল্টো পাশে। সেখান থেকে দুই জোড়া বুট কিনলাম। মোটামুটি সব মিলিয়ে হাজার সাতেক টাকা খরচা হয়ে গিয়েছিল সেদিন। তবু আমরা খুশি ছিলাম। খুঁজে খুঁজে কম দামে ভালো জিনিস বের করতে পেরেছিলাম বলে!
দুটি স্যুটকেসে নতুন জিনিসগুলো ছাড়াও বাড়তি শীতের পোশাক নিয়ে নিয়েছিলাম। সপ্তাহখানেক ভ্রমণে থাকব বলে আমি নিজের জন্য নিয়েছিলাম তিন জোড়া মোজা। শীতের কাপড়ে মুড়ে থাকব বলে গয়নাগাটি নেওয়ার প্রয়োজন বোধ করিনি। সালোয়ার-কামিজও নিলাম শুধু এক সেট। বাকি সব প্যান্ট আর ফতুয়া বা টিউনিক টাইপ পোশাক, যেন ছোটাছুটির কাজটা সহজ হয়। ভুবনও জিনস নিল, চিনোস নিল আর ওর যা লাগে। শুকনো খাবার বলতে শুধু চিপস নিয়েছিলাম। যেগুলো না নিলেই নয়, সেই সব প্রসাধনী পুরে ফেললাম সঙ্গে। আর যদি কোথাও খামাখা অপেক্ষা করতে হয়, তাই ব্যাকপ্যাকটায় ভরে নিলাম প্রিয় কমিকস ‘বেসিক আলী’র দশম খণ্ড। সদ্যই বইমেলা থেকে কিনে এক বন্ধু উপহার দিয়েছিল। ভালো কথা, পাসপোর্ট আর যাবতীয় জরুরি কাগজপত্র হ্যান্ডব্যাগে আলাদা করে নিয়ে নিয়েছিলাম। যেখানে-সেখানে এগুলো বের করে দেখাতে হয়। হাতের কাছে রাখাই শ্রেয়। আরও গুরুত্বপূর্ণ, সিকিম ভ্রমণ করতে হলে অবশ্যই কমপক্ষে দশ কপি ভিসা, পাসপোর্টের ফটোকপি ও পাসপোর্ট সাইজের ছবি নিতে হয়। এগুলো ছাড়াও আমরা নিরাপত্তার জন্য বিয়ের কাবিননামার ফটোকপি নিয়েছিলাম। আর হ্যাঁ, সিকিমে জায়গায় জায়গায় অনুমতি লাগে ভ্রমণ করার জন্য। সে কারণেই এতগুলো কাগজপত্র আর ছবি সঙ্গে নিতে হয়।
শ্যামলী পরিবহনের বাস ছাড়ে ৬টায়, আরামবাগ থেকে। সেখান থেকে আমাদের নিয়ে যায় কল্যাণপুরের স্টপেজে। পরে আমরা উঠি মূল বাসে, যেটা আমাদের ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে পৌঁছে দেবে। মূল বাস ছাড়তে ছাড়তে প্রায় পৌনে ৮টা বেজে গেল। জ্যাম একদম পাইনি। বিশ মিনিটে সাভারের গেন্ডা অতিক্রম করে ফেলেছিলাম। কিন্তু যেতে যেতে একটা জায়গায় এসে জ্যামে আটকে গেলাম। কোথায় তা রাতের অন্ধকারে আন্দাজ করতে পারিনি। বাসের জানালা দিয়ে তাকাতেই দেখলাম বিশাল মাঠ। মোটামুটি দূরে দেখা গেল মঞ্চ বানিয়ে কোনো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হচ্ছে। ‘সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান’ শব্দটাই একমাত্র দেখতে পেলাম দূর থেকে। কিন্তু কীসের, সেটা আর দেখতে পারলাম না। ভাবলাম, হয়তো ভাষা দিবসের। কিন্তু অবাক হলাম মঞ্চের নৃত্যশিল্পীর নৃত্য দেখে। অশ্লীল ভঙ্গিতে ঢালিউড বা বলিউড স্টাইলে দাপাদাপি করছিলেন তিনি। ফেব্রুয়ারির ২১ তারিখে এমন ‘সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান’ আমার বোধগম্য হলো না। ভুবন কানে হেডফোন লাগিয়ে গান শুনছিল। ওকে ডেকে দেখাতেই কী একটা আনন্দ পেয়ে ফিক করে হেসে দিল। সঙ্গে আমিও। এমনিতেও আমার এ ধরনের নৃত্য ভালো লাগে না। দেশীয় ধাঁচের মুদ্রায়, মণিপুরি, ক্ল্যাসিক্যাল—এসব বান্ধবীকে নাচতে দেখে বড় হয়েছি। এগুলোই ভালোবেসেছি। যাই হোক, বাস আবার চলতে শুরু করে।
আসনটা এত পিচ্ছিল ছিল, একটু পর পর পিছলে পড়ে যাচ্ছিলাম। মেজাজ খারাপ হচ্ছিল। ঠিকমতো ঘুমাতে পারিনি। বাস ছাড়ার আগে বাবা-মা, শ্বশুর-শাশুড়ি এবং যাবতীয় দুশ্চিন্তাকারী আত্মীয়দের সঙ্গে ফোনালাপ সেরে নিয়েছিলাম। কিন্তু যেই না আমার একটু ঘুম ঘুম পেয়ে চোখ লাগছিল, ঠিক তখনই আমার ফোনটা বেজে উঠছিল। না ধরা পর্যন্ত ফোন বাজতেই থাকছিল। এই করে সারা রাত পার হয়ে গেল। ভোর সাড়ে ৬টায় আমরা পৌঁছলাম রংপুরের পাটগ্রামে। সীমান্ত এলাকা। বেশ অনেকক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়েছে শ্যামলীর সেখানকার বাস কাউন্টারে। সকাল ৯টার আগে সীমান্ত খুলবে না। ততক্ষণ পর্যন্ত তো অপেক্ষা করতেই হবে। তাই এই ফাঁকে সকালের নাশতাটা সেরে নিলাম আমরা। বাংলাদেশের ইমিগ্রেশন সেন্টারের কাজ সেরে ভারতে ঢুকতে ঢুকতে সকাল ১০টার মতো বেজে গেল। এরপর আবার ঘণ্টাখানেক সময় লাগল ভারতের ইমিগ্রেশন সেন্টারে। এর মধ্যে ভুবন তক্কে তক্কে ছিল সিকিমে যাওয়ার আরও মানুষ জোগাড় করতে। এমনিতে ফেসবুকে ভ্রমণ গ্রুপ থেকে দুজন জোগাড় হয়েছিল। কিন্তু তাঁরা পরদিন আমাদের সঙ্গে যোগ দেওয়ার কথা।
বাংলাদেশের ইমিগ্রেশন সেন্টারে বসে থেকে বেশ কয়েকজনের সঙ্গে আলাপ হয়ে যায়, যাঁরা সিকিমে যাবেন। এর মধ্যে প্রহর সাহা নামের পাকা পিচ্চিটার বাবা-মা আমাদের তাঁদের সঙ্গে নিতে চেয়েছিলেন। তাঁরা একদম আলাদা ঘুরবেন। কোনো দলের সঙ্গে না। শুধু পরিবার। তাঁরা রিসোর্টে থাকবেন। তাঁদের খরচাটা মনে হচ্ছিল একটু বেশি। তাঁরা আমাদের কাছ থেকে খরচ নিতেও আপত্তি করছিলেন। কিন্তু আমার মন সায় দিচ্ছিল না তাঁদের সঙ্গে যেতে। তবে প্রহর সাহাকে আমার বেশ পছন্দ হয়েছিল। ছয়-সাত বছরের মিষ্টি, গুলুগুলু একটা বাচ্চা।
মাঝরাতে বাস যখন বিরতিতে থেমেছিল, তখন সে হুড়মুড় করে লাফিয়ে উঠে বলেছিল, ‘আমরা কি গ্যাংটক চলে আসছি?’ ওর কথা শুনে বাসের সবাই খুব মজা পেয়েছিল। আরেকটা পরিবারের সঙ্গে কথা হয়েছিল। তাঁদের সঙ্গে দল বাঁধার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম আমরা। কিন্তু ইমিগ্রেশনের ঠেলা সামলাতে সামলাতে তাঁদের হারিয়ে ফেললাম। বাংলাদেশের সীমানা পার হওয়ার সময় এক আংকেলকে দেখলাম তাঁর নাম আগে না ডাকায় একটা লঙ্কাকাণ্ড বাঁধিয়ে দিলেন। সঙ্গে যোগ দিলেন তাঁর সঙ্গীরাও। ওই লাইনে দাঁড়িয়ে আকাশ ভাইদের সঙ্গে দেখা হলো। তখনো জানতাম না এরাই আমাদের বাকিটা ভ্রমণ বিনোদন দেবেন। একপর্যায়ে ভুবনকে ডেকে নিয়ে গেল ভারতের ইমিগ্রেশন সেন্টারে। আমি দেশের মাটিতে একা দাঁড়িয়ে কেমন জানি একটা অনুভূতি পাচ্ছিলাম। কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর আমার ডাক পড়ল। সব ঝামেলা শেষ করে যখন ঠিক ভারতের সীমানায় দাঁড়িয়ে আমার দেশটাকে দেখছিলাম, কেমন জানি এক অনুভূতি হচ্ছিল। বোঝাতে পারব না। খুব সুন্দর জায়গায় ঘুরতে যাচ্ছি জেনেও চোখটা ছলছল করে উঠেছিল। দেশকে যে কতটা ভালোবাসি, তা প্রতিমুহূর্তে টের পেয়েছিলাম এই ভ্রমণের সময়। হোক আমার দেশ নোংরা, যানজটে ভরা, দুর্নীতিতে সেরা; কিন্তু আমার দেশ আমি ভালোবাসি। এসব আবেগ ভাবতে ভাবতে বাসে উঠে বসলাম। শিলিগুড়ি যেতে হবে। বাসের সহকারীকে দেখলাম সিকিমে যাওয়া মানুষদের সঙ্গে আলাপ করতে। তাঁরা যাচ্ছিলেন শ্যামলী পরিবহনের প্যাকেজে। আমরা প্যাকেজ নিইনি খরচ কমাব বলে। কিন্তু দল তো খুঁজতেই হবে। দল ছাড়া সিকিমে যাওয়াটা ঝক্কি। ভুবনকে বললাম সহকারীর সঙ্গে কথা বলতে। ভুবন তাঁকে জিজ্ঞেস করায় আরেকজনকে পরিচয় করিয়ে দিলেন। মিলন ভাই।বাংলাদেশি। রংপুরের মানুষ। শ্যামলীর পক্ষ থেকে উনি সিকিম প্যাকেজের ভ্রমণকারীদের শিলিগুড়ি পৌঁছে দিতে যাচ্ছিলেন। যদিও আনন্দের ফাঁদে পড়ে পুরো ভ্রমণটাই আমাদের সঙ্গে কাটিয়েছেন পরে। মিলন ভাই আশা দিলেন, শিলিগুড়ি পৌঁছে অমর দার সঙ্গে কথা বলিয়ে দিলে উনি একটা ব্যবস্থা করবেন। অমর দা হচ্ছেন শ্যামলী প্যাকেজের গাইড। ওনার বাড়ি আসলে বাংলাদেশে। কিন্তু অভিমান করে শিলিগুড়িতে চলে গেছেন। দুই দেশের নাগরিকত্ব আছে তাঁর। আচ্ছা, তাঁর গল্প পরে কোথাও করব।
কোচবিহার, জলপাইগুড়ি ছাড়তে ছাড়তে চা-বাগানের সৌন্দর্য উপভোগ করে নিলাম। পথে একটু পর পর দেখলাম কালীমন্দির আর মদের দোকান! সিকিমে তো ফুটপাতে নিয়ে বিক্রি করে। হঠাৎ মনে হলো, নাটক-সিনেমায় দেখি ভারতীয় বাঙালিরা দুর্গাপূজা বেশি করে। অথচ এদিকে কালীমন্দির বেশি। সর্বসাকল্যে একটা মাত্র দুর্গা প্রতিমা দেখতে পেয়েছিলাম। শিলিগুড়ির পথে আবার হনুমানের মূর্তি আর মন্দির বেশি দেখলাম। বুঝলাম, একেক জায়গায় একেক ভগবানের প্রভাব বেশি। আরেকটা জিনিস নজর এড়াল না আমার। জলপাইগুড়ি পর্যন্ত সহজে মনে হচ্ছিল না বাংলাদেশ থেকে ভিন্ন কিছু। পার্থক্য এটুকু বের করতে পারলাম—তাদের ঘরবাড়িগুলো আমাদের চেয়ে খানিকটা খাটো মনে হলো; ওদের ট্রাকের নাক বোঁচা, আমাদেরগুলো চোখা; ট্রাকের গায়ে হিন্দিতে লেখা ‘জয় মাতা দি’ কিংবা বাংলায় লেখা ‘জয় মা দুর্গা বা কালী’, আমাদের যেমন লেখা থাকে ‘আল্লাহর দান’ টাইপ কথাবার্তা। এগুলো ভাবছিলাম আর সেই সঙ্গে তিস্তার মায়াভরা মুখ দেখছিলাম। যদিও আসল রূপ সিকিমের পথেই দেখা গেছে। কী যে মায়াময় এই নদী! ওহ্, ভারতের সীমানায় ঢুকেও কিন্তু বাংলাদেশের মোবাইল নেটওয়ার্ক পাচ্ছিলাম। ওই চেংড়াবান্ধা পর্যন্তই। কিন্তু ব্যাপারটা আমার খুব মজা লেগেছিল। বাবা অবশ্য আগে বলে দিয়েছিল, ‘নেটওয়ার্ক পাবি, পার হয়ে ফোন দিস।’ দিয়েছিলাম।
ঘণ্টা তিনেক সময় লাগল শিলিগুড়ি পৌঁছাতে। এই শহরটাকে বলা হয় জলপাইগুড়ি শহরের যমজ! তবে এর ৬২ ভাগ দার্জিলিংয়ে আর ৩৮ ভাগ অংশ পড়েছে জলপাইগুড়ি জেলায়। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে কলকাতার পরেই যে বড় শহরের নাম উঠে আসে, সেটা শিলিগুড়ি। বলা চলে, হিমালয়ের পাদদেশে শিলিগুড়ির অবস্থান। আর ওপরে সিকিম রাজ্য। শিলিগুড়ির মানুষ এভাবে স্থান নির্ধারণ করে—পাহাড়ের ওপরে আর পাহাড়ের নিচে। সিকিমের মানুষদের ওরা বলে ‘ওপরের লোক’!
(চলবে)

দুজনেরই প্রথম বিদেশভ্রমণ; যার ফলে আমাদের মধ্যে কাজ করছিল একটা আনন্দবোধ ও উত্তেজনা, তা কি অল্প কথায় বোঝানো যাবে? আমাদের ডেস্টিনেশন ছিল ভ্রমণপিয়াসীদের অন্যতম আকর্ষণীয় জায়গায়। এটাকে অনেকে বলে ‘ড্রিম প্লেস টু ভিজিট’। পেটের ভেতর থেকে প্রজাপতি সুড়সুড়ি দেওয়ার অনুভূতিটা নিশ্চয়ই অনেকের হয়? সত্যি কথা, তা আমারও হচ্ছিল। ভুবনেরও কি একই অনুভূতি হচ্ছিল? ওর উত্তেজনা যে আমার চেয়ে কম ছিল না, বরং বেশি, সেটা বেশ ভালোভাবেই টের পেয়েছিলাম।
মোটামুটি মাস তিনেক লাগিয়ে আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। যেভাবে যেখান দিয়ে পারি আমাদের স্বল্প আয় থেকে একটু একটু করে টাকা জমিয়েছি। এই কদিনে যে সিকিম সম্পর্কে অন্তর্জালে কত ঘাঁটাঘাঁটি করেছি, সেটার ইয়ত্তা নেই। কথা ছিল সঙ্গে কয়েকজন বন্ধুও যাবে। কিন্তু শেষ মুহূর্তে এসে বাকি রইলাম শুধু আমরা দুজন। মনটা খারাপ হয়ে গেল। কিন্তু আমরা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলাম, যাবই।
ভারতের ভিসাটা খুব সহজে পেয়ে গেলাম আমরা। এর আগেই ভুবন দিনক্ষণ ঠিক করে রেখেছিল। ভিসা পেয়ে ২১ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যার বাসের টিকিট কাটা হলো। যেহেতু তুষারপাত হয় এমন জায়গায় যাচ্ছি, তাই প্রস্তুতিটা তো ভিন্ন হবেই। যাওয়ার আগে একদিন বেরিয়ে পড়লাম কেনাকাটা করতে। ঘুরে ঘুরে শেষে বঙ্গবাজার থেকে দুটি জ্যাকেট কিনলাম, হুডিওয়ালা। হুডির কিনার ঘেঁষে পশমের সারি, আমার খুব পছন্দ। কিনলাম দুই সেট থার্মাল পোশাক। মাইনাসের তাপমাত্রা ঠেকাতে এটা অত্যন্ত জরুরি ছিল। নিজের জন্য এক জোড়া হাতমোজা কিনলাম। ভুবনের আগে থেকে ছিল বলে আর কেনা হয়নি। সাধ্যের মধ্যে সাধ পূরণ করার জন্য চলে গেলাম বসুন্ধরা সিটির উল্টো পাশে। সেখান থেকে দুই জোড়া বুট কিনলাম। মোটামুটি সব মিলিয়ে হাজার সাতেক টাকা খরচা হয়ে গিয়েছিল সেদিন। তবু আমরা খুশি ছিলাম। খুঁজে খুঁজে কম দামে ভালো জিনিস বের করতে পেরেছিলাম বলে!
দুটি স্যুটকেসে নতুন জিনিসগুলো ছাড়াও বাড়তি শীতের পোশাক নিয়ে নিয়েছিলাম। সপ্তাহখানেক ভ্রমণে থাকব বলে আমি নিজের জন্য নিয়েছিলাম তিন জোড়া মোজা। শীতের কাপড়ে মুড়ে থাকব বলে গয়নাগাটি নেওয়ার প্রয়োজন বোধ করিনি। সালোয়ার-কামিজও নিলাম শুধু এক সেট। বাকি সব প্যান্ট আর ফতুয়া বা টিউনিক টাইপ পোশাক, যেন ছোটাছুটির কাজটা সহজ হয়। ভুবনও জিনস নিল, চিনোস নিল আর ওর যা লাগে। শুকনো খাবার বলতে শুধু চিপস নিয়েছিলাম। যেগুলো না নিলেই নয়, সেই সব প্রসাধনী পুরে ফেললাম সঙ্গে। আর যদি কোথাও খামাখা অপেক্ষা করতে হয়, তাই ব্যাকপ্যাকটায় ভরে নিলাম প্রিয় কমিকস ‘বেসিক আলী’র দশম খণ্ড। সদ্যই বইমেলা থেকে কিনে এক বন্ধু উপহার দিয়েছিল। ভালো কথা, পাসপোর্ট আর যাবতীয় জরুরি কাগজপত্র হ্যান্ডব্যাগে আলাদা করে নিয়ে নিয়েছিলাম। যেখানে-সেখানে এগুলো বের করে দেখাতে হয়। হাতের কাছে রাখাই শ্রেয়। আরও গুরুত্বপূর্ণ, সিকিম ভ্রমণ করতে হলে অবশ্যই কমপক্ষে দশ কপি ভিসা, পাসপোর্টের ফটোকপি ও পাসপোর্ট সাইজের ছবি নিতে হয়। এগুলো ছাড়াও আমরা নিরাপত্তার জন্য বিয়ের কাবিননামার ফটোকপি নিয়েছিলাম। আর হ্যাঁ, সিকিমে জায়গায় জায়গায় অনুমতি লাগে ভ্রমণ করার জন্য। সে কারণেই এতগুলো কাগজপত্র আর ছবি সঙ্গে নিতে হয়।
শ্যামলী পরিবহনের বাস ছাড়ে ৬টায়, আরামবাগ থেকে। সেখান থেকে আমাদের নিয়ে যায় কল্যাণপুরের স্টপেজে। পরে আমরা উঠি মূল বাসে, যেটা আমাদের ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে পৌঁছে দেবে। মূল বাস ছাড়তে ছাড়তে প্রায় পৌনে ৮টা বেজে গেল। জ্যাম একদম পাইনি। বিশ মিনিটে সাভারের গেন্ডা অতিক্রম করে ফেলেছিলাম। কিন্তু যেতে যেতে একটা জায়গায় এসে জ্যামে আটকে গেলাম। কোথায় তা রাতের অন্ধকারে আন্দাজ করতে পারিনি। বাসের জানালা দিয়ে তাকাতেই দেখলাম বিশাল মাঠ। মোটামুটি দূরে দেখা গেল মঞ্চ বানিয়ে কোনো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হচ্ছে। ‘সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান’ শব্দটাই একমাত্র দেখতে পেলাম দূর থেকে। কিন্তু কীসের, সেটা আর দেখতে পারলাম না। ভাবলাম, হয়তো ভাষা দিবসের। কিন্তু অবাক হলাম মঞ্চের নৃত্যশিল্পীর নৃত্য দেখে। অশ্লীল ভঙ্গিতে ঢালিউড বা বলিউড স্টাইলে দাপাদাপি করছিলেন তিনি। ফেব্রুয়ারির ২১ তারিখে এমন ‘সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান’ আমার বোধগম্য হলো না। ভুবন কানে হেডফোন লাগিয়ে গান শুনছিল। ওকে ডেকে দেখাতেই কী একটা আনন্দ পেয়ে ফিক করে হেসে দিল। সঙ্গে আমিও। এমনিতেও আমার এ ধরনের নৃত্য ভালো লাগে না। দেশীয় ধাঁচের মুদ্রায়, মণিপুরি, ক্ল্যাসিক্যাল—এসব বান্ধবীকে নাচতে দেখে বড় হয়েছি। এগুলোই ভালোবেসেছি। যাই হোক, বাস আবার চলতে শুরু করে।
আসনটা এত পিচ্ছিল ছিল, একটু পর পর পিছলে পড়ে যাচ্ছিলাম। মেজাজ খারাপ হচ্ছিল। ঠিকমতো ঘুমাতে পারিনি। বাস ছাড়ার আগে বাবা-মা, শ্বশুর-শাশুড়ি এবং যাবতীয় দুশ্চিন্তাকারী আত্মীয়দের সঙ্গে ফোনালাপ সেরে নিয়েছিলাম। কিন্তু যেই না আমার একটু ঘুম ঘুম পেয়ে চোখ লাগছিল, ঠিক তখনই আমার ফোনটা বেজে উঠছিল। না ধরা পর্যন্ত ফোন বাজতেই থাকছিল। এই করে সারা রাত পার হয়ে গেল। ভোর সাড়ে ৬টায় আমরা পৌঁছলাম রংপুরের পাটগ্রামে। সীমান্ত এলাকা। বেশ অনেকক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়েছে শ্যামলীর সেখানকার বাস কাউন্টারে। সকাল ৯টার আগে সীমান্ত খুলবে না। ততক্ষণ পর্যন্ত তো অপেক্ষা করতেই হবে। তাই এই ফাঁকে সকালের নাশতাটা সেরে নিলাম আমরা। বাংলাদেশের ইমিগ্রেশন সেন্টারের কাজ সেরে ভারতে ঢুকতে ঢুকতে সকাল ১০টার মতো বেজে গেল। এরপর আবার ঘণ্টাখানেক সময় লাগল ভারতের ইমিগ্রেশন সেন্টারে। এর মধ্যে ভুবন তক্কে তক্কে ছিল সিকিমে যাওয়ার আরও মানুষ জোগাড় করতে। এমনিতে ফেসবুকে ভ্রমণ গ্রুপ থেকে দুজন জোগাড় হয়েছিল। কিন্তু তাঁরা পরদিন আমাদের সঙ্গে যোগ দেওয়ার কথা।
বাংলাদেশের ইমিগ্রেশন সেন্টারে বসে থেকে বেশ কয়েকজনের সঙ্গে আলাপ হয়ে যায়, যাঁরা সিকিমে যাবেন। এর মধ্যে প্রহর সাহা নামের পাকা পিচ্চিটার বাবা-মা আমাদের তাঁদের সঙ্গে নিতে চেয়েছিলেন। তাঁরা একদম আলাদা ঘুরবেন। কোনো দলের সঙ্গে না। শুধু পরিবার। তাঁরা রিসোর্টে থাকবেন। তাঁদের খরচাটা মনে হচ্ছিল একটু বেশি। তাঁরা আমাদের কাছ থেকে খরচ নিতেও আপত্তি করছিলেন। কিন্তু আমার মন সায় দিচ্ছিল না তাঁদের সঙ্গে যেতে। তবে প্রহর সাহাকে আমার বেশ পছন্দ হয়েছিল। ছয়-সাত বছরের মিষ্টি, গুলুগুলু একটা বাচ্চা।
মাঝরাতে বাস যখন বিরতিতে থেমেছিল, তখন সে হুড়মুড় করে লাফিয়ে উঠে বলেছিল, ‘আমরা কি গ্যাংটক চলে আসছি?’ ওর কথা শুনে বাসের সবাই খুব মজা পেয়েছিল। আরেকটা পরিবারের সঙ্গে কথা হয়েছিল। তাঁদের সঙ্গে দল বাঁধার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম আমরা। কিন্তু ইমিগ্রেশনের ঠেলা সামলাতে সামলাতে তাঁদের হারিয়ে ফেললাম। বাংলাদেশের সীমানা পার হওয়ার সময় এক আংকেলকে দেখলাম তাঁর নাম আগে না ডাকায় একটা লঙ্কাকাণ্ড বাঁধিয়ে দিলেন। সঙ্গে যোগ দিলেন তাঁর সঙ্গীরাও। ওই লাইনে দাঁড়িয়ে আকাশ ভাইদের সঙ্গে দেখা হলো। তখনো জানতাম না এরাই আমাদের বাকিটা ভ্রমণ বিনোদন দেবেন। একপর্যায়ে ভুবনকে ডেকে নিয়ে গেল ভারতের ইমিগ্রেশন সেন্টারে। আমি দেশের মাটিতে একা দাঁড়িয়ে কেমন জানি একটা অনুভূতি পাচ্ছিলাম। কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর আমার ডাক পড়ল। সব ঝামেলা শেষ করে যখন ঠিক ভারতের সীমানায় দাঁড়িয়ে আমার দেশটাকে দেখছিলাম, কেমন জানি এক অনুভূতি হচ্ছিল। বোঝাতে পারব না। খুব সুন্দর জায়গায় ঘুরতে যাচ্ছি জেনেও চোখটা ছলছল করে উঠেছিল। দেশকে যে কতটা ভালোবাসি, তা প্রতিমুহূর্তে টের পেয়েছিলাম এই ভ্রমণের সময়। হোক আমার দেশ নোংরা, যানজটে ভরা, দুর্নীতিতে সেরা; কিন্তু আমার দেশ আমি ভালোবাসি। এসব আবেগ ভাবতে ভাবতে বাসে উঠে বসলাম। শিলিগুড়ি যেতে হবে। বাসের সহকারীকে দেখলাম সিকিমে যাওয়া মানুষদের সঙ্গে আলাপ করতে। তাঁরা যাচ্ছিলেন শ্যামলী পরিবহনের প্যাকেজে। আমরা প্যাকেজ নিইনি খরচ কমাব বলে। কিন্তু দল তো খুঁজতেই হবে। দল ছাড়া সিকিমে যাওয়াটা ঝক্কি। ভুবনকে বললাম সহকারীর সঙ্গে কথা বলতে। ভুবন তাঁকে জিজ্ঞেস করায় আরেকজনকে পরিচয় করিয়ে দিলেন। মিলন ভাই।বাংলাদেশি। রংপুরের মানুষ। শ্যামলীর পক্ষ থেকে উনি সিকিম প্যাকেজের ভ্রমণকারীদের শিলিগুড়ি পৌঁছে দিতে যাচ্ছিলেন। যদিও আনন্দের ফাঁদে পড়ে পুরো ভ্রমণটাই আমাদের সঙ্গে কাটিয়েছেন পরে। মিলন ভাই আশা দিলেন, শিলিগুড়ি পৌঁছে অমর দার সঙ্গে কথা বলিয়ে দিলে উনি একটা ব্যবস্থা করবেন। অমর দা হচ্ছেন শ্যামলী প্যাকেজের গাইড। ওনার বাড়ি আসলে বাংলাদেশে। কিন্তু অভিমান করে শিলিগুড়িতে চলে গেছেন। দুই দেশের নাগরিকত্ব আছে তাঁর। আচ্ছা, তাঁর গল্প পরে কোথাও করব।
কোচবিহার, জলপাইগুড়ি ছাড়তে ছাড়তে চা-বাগানের সৌন্দর্য উপভোগ করে নিলাম। পথে একটু পর পর দেখলাম কালীমন্দির আর মদের দোকান! সিকিমে তো ফুটপাতে নিয়ে বিক্রি করে। হঠাৎ মনে হলো, নাটক-সিনেমায় দেখি ভারতীয় বাঙালিরা দুর্গাপূজা বেশি করে। অথচ এদিকে কালীমন্দির বেশি। সর্বসাকল্যে একটা মাত্র দুর্গা প্রতিমা দেখতে পেয়েছিলাম। শিলিগুড়ির পথে আবার হনুমানের মূর্তি আর মন্দির বেশি দেখলাম। বুঝলাম, একেক জায়গায় একেক ভগবানের প্রভাব বেশি। আরেকটা জিনিস নজর এড়াল না আমার। জলপাইগুড়ি পর্যন্ত সহজে মনে হচ্ছিল না বাংলাদেশ থেকে ভিন্ন কিছু। পার্থক্য এটুকু বের করতে পারলাম—তাদের ঘরবাড়িগুলো আমাদের চেয়ে খানিকটা খাটো মনে হলো; ওদের ট্রাকের নাক বোঁচা, আমাদেরগুলো চোখা; ট্রাকের গায়ে হিন্দিতে লেখা ‘জয় মাতা দি’ কিংবা বাংলায় লেখা ‘জয় মা দুর্গা বা কালী’, আমাদের যেমন লেখা থাকে ‘আল্লাহর দান’ টাইপ কথাবার্তা। এগুলো ভাবছিলাম আর সেই সঙ্গে তিস্তার মায়াভরা মুখ দেখছিলাম। যদিও আসল রূপ সিকিমের পথেই দেখা গেছে। কী যে মায়াময় এই নদী! ওহ্, ভারতের সীমানায় ঢুকেও কিন্তু বাংলাদেশের মোবাইল নেটওয়ার্ক পাচ্ছিলাম। ওই চেংড়াবান্ধা পর্যন্তই। কিন্তু ব্যাপারটা আমার খুব মজা লেগেছিল। বাবা অবশ্য আগে বলে দিয়েছিল, ‘নেটওয়ার্ক পাবি, পার হয়ে ফোন দিস।’ দিয়েছিলাম।
ঘণ্টা তিনেক সময় লাগল শিলিগুড়ি পৌঁছাতে। এই শহরটাকে বলা হয় জলপাইগুড়ি শহরের যমজ! তবে এর ৬২ ভাগ দার্জিলিংয়ে আর ৩৮ ভাগ অংশ পড়েছে জলপাইগুড়ি জেলায়। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে কলকাতার পরেই যে বড় শহরের নাম উঠে আসে, সেটা শিলিগুড়ি। বলা চলে, হিমালয়ের পাদদেশে শিলিগুড়ির অবস্থান। আর ওপরে সিকিম রাজ্য। শিলিগুড়ির মানুষ এভাবে স্থান নির্ধারণ করে—পাহাড়ের ওপরে আর পাহাড়ের নিচে। সিকিমের মানুষদের ওরা বলে ‘ওপরের লোক’!
(চলবে)
সৈয়দা সাদিয়া শাহরীন

দুজনেরই প্রথম বিদেশভ্রমণ; যার ফলে আমাদের মধ্যে কাজ করছিল একটা আনন্দবোধ ও উত্তেজনা, তা কি অল্প কথায় বোঝানো যাবে? আমাদের ডেস্টিনেশন ছিল ভ্রমণপিয়াসীদের অন্যতম আকর্ষণীয় জায়গায়। এটাকে অনেকে বলে ‘ড্রিম প্লেস টু ভিজিট’। পেটের ভেতর থেকে প্রজাপতি সুড়সুড়ি দেওয়ার অনুভূতিটা নিশ্চয়ই অনেকের হয়? সত্যি কথা, তা আমারও হচ্ছিল। ভুবনেরও কি একই অনুভূতি হচ্ছিল? ওর উত্তেজনা যে আমার চেয়ে কম ছিল না, বরং বেশি, সেটা বেশ ভালোভাবেই টের পেয়েছিলাম।
মোটামুটি মাস তিনেক লাগিয়ে আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। যেভাবে যেখান দিয়ে পারি আমাদের স্বল্প আয় থেকে একটু একটু করে টাকা জমিয়েছি। এই কদিনে যে সিকিম সম্পর্কে অন্তর্জালে কত ঘাঁটাঘাঁটি করেছি, সেটার ইয়ত্তা নেই। কথা ছিল সঙ্গে কয়েকজন বন্ধুও যাবে। কিন্তু শেষ মুহূর্তে এসে বাকি রইলাম শুধু আমরা দুজন। মনটা খারাপ হয়ে গেল। কিন্তু আমরা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলাম, যাবই।
ভারতের ভিসাটা খুব সহজে পেয়ে গেলাম আমরা। এর আগেই ভুবন দিনক্ষণ ঠিক করে রেখেছিল। ভিসা পেয়ে ২১ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যার বাসের টিকিট কাটা হলো। যেহেতু তুষারপাত হয় এমন জায়গায় যাচ্ছি, তাই প্রস্তুতিটা তো ভিন্ন হবেই। যাওয়ার আগে একদিন বেরিয়ে পড়লাম কেনাকাটা করতে। ঘুরে ঘুরে শেষে বঙ্গবাজার থেকে দুটি জ্যাকেট কিনলাম, হুডিওয়ালা। হুডির কিনার ঘেঁষে পশমের সারি, আমার খুব পছন্দ। কিনলাম দুই সেট থার্মাল পোশাক। মাইনাসের তাপমাত্রা ঠেকাতে এটা অত্যন্ত জরুরি ছিল। নিজের জন্য এক জোড়া হাতমোজা কিনলাম। ভুবনের আগে থেকে ছিল বলে আর কেনা হয়নি। সাধ্যের মধ্যে সাধ পূরণ করার জন্য চলে গেলাম বসুন্ধরা সিটির উল্টো পাশে। সেখান থেকে দুই জোড়া বুট কিনলাম। মোটামুটি সব মিলিয়ে হাজার সাতেক টাকা খরচা হয়ে গিয়েছিল সেদিন। তবু আমরা খুশি ছিলাম। খুঁজে খুঁজে কম দামে ভালো জিনিস বের করতে পেরেছিলাম বলে!
দুটি স্যুটকেসে নতুন জিনিসগুলো ছাড়াও বাড়তি শীতের পোশাক নিয়ে নিয়েছিলাম। সপ্তাহখানেক ভ্রমণে থাকব বলে আমি নিজের জন্য নিয়েছিলাম তিন জোড়া মোজা। শীতের কাপড়ে মুড়ে থাকব বলে গয়নাগাটি নেওয়ার প্রয়োজন বোধ করিনি। সালোয়ার-কামিজও নিলাম শুধু এক সেট। বাকি সব প্যান্ট আর ফতুয়া বা টিউনিক টাইপ পোশাক, যেন ছোটাছুটির কাজটা সহজ হয়। ভুবনও জিনস নিল, চিনোস নিল আর ওর যা লাগে। শুকনো খাবার বলতে শুধু চিপস নিয়েছিলাম। যেগুলো না নিলেই নয়, সেই সব প্রসাধনী পুরে ফেললাম সঙ্গে। আর যদি কোথাও খামাখা অপেক্ষা করতে হয়, তাই ব্যাকপ্যাকটায় ভরে নিলাম প্রিয় কমিকস ‘বেসিক আলী’র দশম খণ্ড। সদ্যই বইমেলা থেকে কিনে এক বন্ধু উপহার দিয়েছিল। ভালো কথা, পাসপোর্ট আর যাবতীয় জরুরি কাগজপত্র হ্যান্ডব্যাগে আলাদা করে নিয়ে নিয়েছিলাম। যেখানে-সেখানে এগুলো বের করে দেখাতে হয়। হাতের কাছে রাখাই শ্রেয়। আরও গুরুত্বপূর্ণ, সিকিম ভ্রমণ করতে হলে অবশ্যই কমপক্ষে দশ কপি ভিসা, পাসপোর্টের ফটোকপি ও পাসপোর্ট সাইজের ছবি নিতে হয়। এগুলো ছাড়াও আমরা নিরাপত্তার জন্য বিয়ের কাবিননামার ফটোকপি নিয়েছিলাম। আর হ্যাঁ, সিকিমে জায়গায় জায়গায় অনুমতি লাগে ভ্রমণ করার জন্য। সে কারণেই এতগুলো কাগজপত্র আর ছবি সঙ্গে নিতে হয়।
শ্যামলী পরিবহনের বাস ছাড়ে ৬টায়, আরামবাগ থেকে। সেখান থেকে আমাদের নিয়ে যায় কল্যাণপুরের স্টপেজে। পরে আমরা উঠি মূল বাসে, যেটা আমাদের ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে পৌঁছে দেবে। মূল বাস ছাড়তে ছাড়তে প্রায় পৌনে ৮টা বেজে গেল। জ্যাম একদম পাইনি। বিশ মিনিটে সাভারের গেন্ডা অতিক্রম করে ফেলেছিলাম। কিন্তু যেতে যেতে একটা জায়গায় এসে জ্যামে আটকে গেলাম। কোথায় তা রাতের অন্ধকারে আন্দাজ করতে পারিনি। বাসের জানালা দিয়ে তাকাতেই দেখলাম বিশাল মাঠ। মোটামুটি দূরে দেখা গেল মঞ্চ বানিয়ে কোনো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হচ্ছে। ‘সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান’ শব্দটাই একমাত্র দেখতে পেলাম দূর থেকে। কিন্তু কীসের, সেটা আর দেখতে পারলাম না। ভাবলাম, হয়তো ভাষা দিবসের। কিন্তু অবাক হলাম মঞ্চের নৃত্যশিল্পীর নৃত্য দেখে। অশ্লীল ভঙ্গিতে ঢালিউড বা বলিউড স্টাইলে দাপাদাপি করছিলেন তিনি। ফেব্রুয়ারির ২১ তারিখে এমন ‘সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান’ আমার বোধগম্য হলো না। ভুবন কানে হেডফোন লাগিয়ে গান শুনছিল। ওকে ডেকে দেখাতেই কী একটা আনন্দ পেয়ে ফিক করে হেসে দিল। সঙ্গে আমিও। এমনিতেও আমার এ ধরনের নৃত্য ভালো লাগে না। দেশীয় ধাঁচের মুদ্রায়, মণিপুরি, ক্ল্যাসিক্যাল—এসব বান্ধবীকে নাচতে দেখে বড় হয়েছি। এগুলোই ভালোবেসেছি। যাই হোক, বাস আবার চলতে শুরু করে।
আসনটা এত পিচ্ছিল ছিল, একটু পর পর পিছলে পড়ে যাচ্ছিলাম। মেজাজ খারাপ হচ্ছিল। ঠিকমতো ঘুমাতে পারিনি। বাস ছাড়ার আগে বাবা-মা, শ্বশুর-শাশুড়ি এবং যাবতীয় দুশ্চিন্তাকারী আত্মীয়দের সঙ্গে ফোনালাপ সেরে নিয়েছিলাম। কিন্তু যেই না আমার একটু ঘুম ঘুম পেয়ে চোখ লাগছিল, ঠিক তখনই আমার ফোনটা বেজে উঠছিল। না ধরা পর্যন্ত ফোন বাজতেই থাকছিল। এই করে সারা রাত পার হয়ে গেল। ভোর সাড়ে ৬টায় আমরা পৌঁছলাম রংপুরের পাটগ্রামে। সীমান্ত এলাকা। বেশ অনেকক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়েছে শ্যামলীর সেখানকার বাস কাউন্টারে। সকাল ৯টার আগে সীমান্ত খুলবে না। ততক্ষণ পর্যন্ত তো অপেক্ষা করতেই হবে। তাই এই ফাঁকে সকালের নাশতাটা সেরে নিলাম আমরা। বাংলাদেশের ইমিগ্রেশন সেন্টারের কাজ সেরে ভারতে ঢুকতে ঢুকতে সকাল ১০টার মতো বেজে গেল। এরপর আবার ঘণ্টাখানেক সময় লাগল ভারতের ইমিগ্রেশন সেন্টারে। এর মধ্যে ভুবন তক্কে তক্কে ছিল সিকিমে যাওয়ার আরও মানুষ জোগাড় করতে। এমনিতে ফেসবুকে ভ্রমণ গ্রুপ থেকে দুজন জোগাড় হয়েছিল। কিন্তু তাঁরা পরদিন আমাদের সঙ্গে যোগ দেওয়ার কথা।
বাংলাদেশের ইমিগ্রেশন সেন্টারে বসে থেকে বেশ কয়েকজনের সঙ্গে আলাপ হয়ে যায়, যাঁরা সিকিমে যাবেন। এর মধ্যে প্রহর সাহা নামের পাকা পিচ্চিটার বাবা-মা আমাদের তাঁদের সঙ্গে নিতে চেয়েছিলেন। তাঁরা একদম আলাদা ঘুরবেন। কোনো দলের সঙ্গে না। শুধু পরিবার। তাঁরা রিসোর্টে থাকবেন। তাঁদের খরচাটা মনে হচ্ছিল একটু বেশি। তাঁরা আমাদের কাছ থেকে খরচ নিতেও আপত্তি করছিলেন। কিন্তু আমার মন সায় দিচ্ছিল না তাঁদের সঙ্গে যেতে। তবে প্রহর সাহাকে আমার বেশ পছন্দ হয়েছিল। ছয়-সাত বছরের মিষ্টি, গুলুগুলু একটা বাচ্চা।
মাঝরাতে বাস যখন বিরতিতে থেমেছিল, তখন সে হুড়মুড় করে লাফিয়ে উঠে বলেছিল, ‘আমরা কি গ্যাংটক চলে আসছি?’ ওর কথা শুনে বাসের সবাই খুব মজা পেয়েছিল। আরেকটা পরিবারের সঙ্গে কথা হয়েছিল। তাঁদের সঙ্গে দল বাঁধার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম আমরা। কিন্তু ইমিগ্রেশনের ঠেলা সামলাতে সামলাতে তাঁদের হারিয়ে ফেললাম। বাংলাদেশের সীমানা পার হওয়ার সময় এক আংকেলকে দেখলাম তাঁর নাম আগে না ডাকায় একটা লঙ্কাকাণ্ড বাঁধিয়ে দিলেন। সঙ্গে যোগ দিলেন তাঁর সঙ্গীরাও। ওই লাইনে দাঁড়িয়ে আকাশ ভাইদের সঙ্গে দেখা হলো। তখনো জানতাম না এরাই আমাদের বাকিটা ভ্রমণ বিনোদন দেবেন। একপর্যায়ে ভুবনকে ডেকে নিয়ে গেল ভারতের ইমিগ্রেশন সেন্টারে। আমি দেশের মাটিতে একা দাঁড়িয়ে কেমন জানি একটা অনুভূতি পাচ্ছিলাম। কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর আমার ডাক পড়ল। সব ঝামেলা শেষ করে যখন ঠিক ভারতের সীমানায় দাঁড়িয়ে আমার দেশটাকে দেখছিলাম, কেমন জানি এক অনুভূতি হচ্ছিল। বোঝাতে পারব না। খুব সুন্দর জায়গায় ঘুরতে যাচ্ছি জেনেও চোখটা ছলছল করে উঠেছিল। দেশকে যে কতটা ভালোবাসি, তা প্রতিমুহূর্তে টের পেয়েছিলাম এই ভ্রমণের সময়। হোক আমার দেশ নোংরা, যানজটে ভরা, দুর্নীতিতে সেরা; কিন্তু আমার দেশ আমি ভালোবাসি। এসব আবেগ ভাবতে ভাবতে বাসে উঠে বসলাম। শিলিগুড়ি যেতে হবে। বাসের সহকারীকে দেখলাম সিকিমে যাওয়া মানুষদের সঙ্গে আলাপ করতে। তাঁরা যাচ্ছিলেন শ্যামলী পরিবহনের প্যাকেজে। আমরা প্যাকেজ নিইনি খরচ কমাব বলে। কিন্তু দল তো খুঁজতেই হবে। দল ছাড়া সিকিমে যাওয়াটা ঝক্কি। ভুবনকে বললাম সহকারীর সঙ্গে কথা বলতে। ভুবন তাঁকে জিজ্ঞেস করায় আরেকজনকে পরিচয় করিয়ে দিলেন। মিলন ভাই।বাংলাদেশি। রংপুরের মানুষ। শ্যামলীর পক্ষ থেকে উনি সিকিম প্যাকেজের ভ্রমণকারীদের শিলিগুড়ি পৌঁছে দিতে যাচ্ছিলেন। যদিও আনন্দের ফাঁদে পড়ে পুরো ভ্রমণটাই আমাদের সঙ্গে কাটিয়েছেন পরে। মিলন ভাই আশা দিলেন, শিলিগুড়ি পৌঁছে অমর দার সঙ্গে কথা বলিয়ে দিলে উনি একটা ব্যবস্থা করবেন। অমর দা হচ্ছেন শ্যামলী প্যাকেজের গাইড। ওনার বাড়ি আসলে বাংলাদেশে। কিন্তু অভিমান করে শিলিগুড়িতে চলে গেছেন। দুই দেশের নাগরিকত্ব আছে তাঁর। আচ্ছা, তাঁর গল্প পরে কোথাও করব।
কোচবিহার, জলপাইগুড়ি ছাড়তে ছাড়তে চা-বাগানের সৌন্দর্য উপভোগ করে নিলাম। পথে একটু পর পর দেখলাম কালীমন্দির আর মদের দোকান! সিকিমে তো ফুটপাতে নিয়ে বিক্রি করে। হঠাৎ মনে হলো, নাটক-সিনেমায় দেখি ভারতীয় বাঙালিরা দুর্গাপূজা বেশি করে। অথচ এদিকে কালীমন্দির বেশি। সর্বসাকল্যে একটা মাত্র দুর্গা প্রতিমা দেখতে পেয়েছিলাম। শিলিগুড়ির পথে আবার হনুমানের মূর্তি আর মন্দির বেশি দেখলাম। বুঝলাম, একেক জায়গায় একেক ভগবানের প্রভাব বেশি। আরেকটা জিনিস নজর এড়াল না আমার। জলপাইগুড়ি পর্যন্ত সহজে মনে হচ্ছিল না বাংলাদেশ থেকে ভিন্ন কিছু। পার্থক্য এটুকু বের করতে পারলাম—তাদের ঘরবাড়িগুলো আমাদের চেয়ে খানিকটা খাটো মনে হলো; ওদের ট্রাকের নাক বোঁচা, আমাদেরগুলো চোখা; ট্রাকের গায়ে হিন্দিতে লেখা ‘জয় মাতা দি’ কিংবা বাংলায় লেখা ‘জয় মা দুর্গা বা কালী’, আমাদের যেমন লেখা থাকে ‘আল্লাহর দান’ টাইপ কথাবার্তা। এগুলো ভাবছিলাম আর সেই সঙ্গে তিস্তার মায়াভরা মুখ দেখছিলাম। যদিও আসল রূপ সিকিমের পথেই দেখা গেছে। কী যে মায়াময় এই নদী! ওহ্, ভারতের সীমানায় ঢুকেও কিন্তু বাংলাদেশের মোবাইল নেটওয়ার্ক পাচ্ছিলাম। ওই চেংড়াবান্ধা পর্যন্তই। কিন্তু ব্যাপারটা আমার খুব মজা লেগেছিল। বাবা অবশ্য আগে বলে দিয়েছিল, ‘নেটওয়ার্ক পাবি, পার হয়ে ফোন দিস।’ দিয়েছিলাম।
ঘণ্টা তিনেক সময় লাগল শিলিগুড়ি পৌঁছাতে। এই শহরটাকে বলা হয় জলপাইগুড়ি শহরের যমজ! তবে এর ৬২ ভাগ দার্জিলিংয়ে আর ৩৮ ভাগ অংশ পড়েছে জলপাইগুড়ি জেলায়। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে কলকাতার পরেই যে বড় শহরের নাম উঠে আসে, সেটা শিলিগুড়ি। বলা চলে, হিমালয়ের পাদদেশে শিলিগুড়ির অবস্থান। আর ওপরে সিকিম রাজ্য। শিলিগুড়ির মানুষ এভাবে স্থান নির্ধারণ করে—পাহাড়ের ওপরে আর পাহাড়ের নিচে। সিকিমের মানুষদের ওরা বলে ‘ওপরের লোক’!
(চলবে)

দুজনেরই প্রথম বিদেশভ্রমণ; যার ফলে আমাদের মধ্যে কাজ করছিল একটা আনন্দবোধ ও উত্তেজনা, তা কি অল্প কথায় বোঝানো যাবে? আমাদের ডেস্টিনেশন ছিল ভ্রমণপিয়াসীদের অন্যতম আকর্ষণীয় জায়গায়। এটাকে অনেকে বলে ‘ড্রিম প্লেস টু ভিজিট’। পেটের ভেতর থেকে প্রজাপতি সুড়সুড়ি দেওয়ার অনুভূতিটা নিশ্চয়ই অনেকের হয়? সত্যি কথা, তা আমারও হচ্ছিল। ভুবনেরও কি একই অনুভূতি হচ্ছিল? ওর উত্তেজনা যে আমার চেয়ে কম ছিল না, বরং বেশি, সেটা বেশ ভালোভাবেই টের পেয়েছিলাম।
মোটামুটি মাস তিনেক লাগিয়ে আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। যেভাবে যেখান দিয়ে পারি আমাদের স্বল্প আয় থেকে একটু একটু করে টাকা জমিয়েছি। এই কদিনে যে সিকিম সম্পর্কে অন্তর্জালে কত ঘাঁটাঘাঁটি করেছি, সেটার ইয়ত্তা নেই। কথা ছিল সঙ্গে কয়েকজন বন্ধুও যাবে। কিন্তু শেষ মুহূর্তে এসে বাকি রইলাম শুধু আমরা দুজন। মনটা খারাপ হয়ে গেল। কিন্তু আমরা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলাম, যাবই।
ভারতের ভিসাটা খুব সহজে পেয়ে গেলাম আমরা। এর আগেই ভুবন দিনক্ষণ ঠিক করে রেখেছিল। ভিসা পেয়ে ২১ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যার বাসের টিকিট কাটা হলো। যেহেতু তুষারপাত হয় এমন জায়গায় যাচ্ছি, তাই প্রস্তুতিটা তো ভিন্ন হবেই। যাওয়ার আগে একদিন বেরিয়ে পড়লাম কেনাকাটা করতে। ঘুরে ঘুরে শেষে বঙ্গবাজার থেকে দুটি জ্যাকেট কিনলাম, হুডিওয়ালা। হুডির কিনার ঘেঁষে পশমের সারি, আমার খুব পছন্দ। কিনলাম দুই সেট থার্মাল পোশাক। মাইনাসের তাপমাত্রা ঠেকাতে এটা অত্যন্ত জরুরি ছিল। নিজের জন্য এক জোড়া হাতমোজা কিনলাম। ভুবনের আগে থেকে ছিল বলে আর কেনা হয়নি। সাধ্যের মধ্যে সাধ পূরণ করার জন্য চলে গেলাম বসুন্ধরা সিটির উল্টো পাশে। সেখান থেকে দুই জোড়া বুট কিনলাম। মোটামুটি সব মিলিয়ে হাজার সাতেক টাকা খরচা হয়ে গিয়েছিল সেদিন। তবু আমরা খুশি ছিলাম। খুঁজে খুঁজে কম দামে ভালো জিনিস বের করতে পেরেছিলাম বলে!
দুটি স্যুটকেসে নতুন জিনিসগুলো ছাড়াও বাড়তি শীতের পোশাক নিয়ে নিয়েছিলাম। সপ্তাহখানেক ভ্রমণে থাকব বলে আমি নিজের জন্য নিয়েছিলাম তিন জোড়া মোজা। শীতের কাপড়ে মুড়ে থাকব বলে গয়নাগাটি নেওয়ার প্রয়োজন বোধ করিনি। সালোয়ার-কামিজও নিলাম শুধু এক সেট। বাকি সব প্যান্ট আর ফতুয়া বা টিউনিক টাইপ পোশাক, যেন ছোটাছুটির কাজটা সহজ হয়। ভুবনও জিনস নিল, চিনোস নিল আর ওর যা লাগে। শুকনো খাবার বলতে শুধু চিপস নিয়েছিলাম। যেগুলো না নিলেই নয়, সেই সব প্রসাধনী পুরে ফেললাম সঙ্গে। আর যদি কোথাও খামাখা অপেক্ষা করতে হয়, তাই ব্যাকপ্যাকটায় ভরে নিলাম প্রিয় কমিকস ‘বেসিক আলী’র দশম খণ্ড। সদ্যই বইমেলা থেকে কিনে এক বন্ধু উপহার দিয়েছিল। ভালো কথা, পাসপোর্ট আর যাবতীয় জরুরি কাগজপত্র হ্যান্ডব্যাগে আলাদা করে নিয়ে নিয়েছিলাম। যেখানে-সেখানে এগুলো বের করে দেখাতে হয়। হাতের কাছে রাখাই শ্রেয়। আরও গুরুত্বপূর্ণ, সিকিম ভ্রমণ করতে হলে অবশ্যই কমপক্ষে দশ কপি ভিসা, পাসপোর্টের ফটোকপি ও পাসপোর্ট সাইজের ছবি নিতে হয়। এগুলো ছাড়াও আমরা নিরাপত্তার জন্য বিয়ের কাবিননামার ফটোকপি নিয়েছিলাম। আর হ্যাঁ, সিকিমে জায়গায় জায়গায় অনুমতি লাগে ভ্রমণ করার জন্য। সে কারণেই এতগুলো কাগজপত্র আর ছবি সঙ্গে নিতে হয়।
শ্যামলী পরিবহনের বাস ছাড়ে ৬টায়, আরামবাগ থেকে। সেখান থেকে আমাদের নিয়ে যায় কল্যাণপুরের স্টপেজে। পরে আমরা উঠি মূল বাসে, যেটা আমাদের ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে পৌঁছে দেবে। মূল বাস ছাড়তে ছাড়তে প্রায় পৌনে ৮টা বেজে গেল। জ্যাম একদম পাইনি। বিশ মিনিটে সাভারের গেন্ডা অতিক্রম করে ফেলেছিলাম। কিন্তু যেতে যেতে একটা জায়গায় এসে জ্যামে আটকে গেলাম। কোথায় তা রাতের অন্ধকারে আন্দাজ করতে পারিনি। বাসের জানালা দিয়ে তাকাতেই দেখলাম বিশাল মাঠ। মোটামুটি দূরে দেখা গেল মঞ্চ বানিয়ে কোনো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হচ্ছে। ‘সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান’ শব্দটাই একমাত্র দেখতে পেলাম দূর থেকে। কিন্তু কীসের, সেটা আর দেখতে পারলাম না। ভাবলাম, হয়তো ভাষা দিবসের। কিন্তু অবাক হলাম মঞ্চের নৃত্যশিল্পীর নৃত্য দেখে। অশ্লীল ভঙ্গিতে ঢালিউড বা বলিউড স্টাইলে দাপাদাপি করছিলেন তিনি। ফেব্রুয়ারির ২১ তারিখে এমন ‘সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান’ আমার বোধগম্য হলো না। ভুবন কানে হেডফোন লাগিয়ে গান শুনছিল। ওকে ডেকে দেখাতেই কী একটা আনন্দ পেয়ে ফিক করে হেসে দিল। সঙ্গে আমিও। এমনিতেও আমার এ ধরনের নৃত্য ভালো লাগে না। দেশীয় ধাঁচের মুদ্রায়, মণিপুরি, ক্ল্যাসিক্যাল—এসব বান্ধবীকে নাচতে দেখে বড় হয়েছি। এগুলোই ভালোবেসেছি। যাই হোক, বাস আবার চলতে শুরু করে।
আসনটা এত পিচ্ছিল ছিল, একটু পর পর পিছলে পড়ে যাচ্ছিলাম। মেজাজ খারাপ হচ্ছিল। ঠিকমতো ঘুমাতে পারিনি। বাস ছাড়ার আগে বাবা-মা, শ্বশুর-শাশুড়ি এবং যাবতীয় দুশ্চিন্তাকারী আত্মীয়দের সঙ্গে ফোনালাপ সেরে নিয়েছিলাম। কিন্তু যেই না আমার একটু ঘুম ঘুম পেয়ে চোখ লাগছিল, ঠিক তখনই আমার ফোনটা বেজে উঠছিল। না ধরা পর্যন্ত ফোন বাজতেই থাকছিল। এই করে সারা রাত পার হয়ে গেল। ভোর সাড়ে ৬টায় আমরা পৌঁছলাম রংপুরের পাটগ্রামে। সীমান্ত এলাকা। বেশ অনেকক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়েছে শ্যামলীর সেখানকার বাস কাউন্টারে। সকাল ৯টার আগে সীমান্ত খুলবে না। ততক্ষণ পর্যন্ত তো অপেক্ষা করতেই হবে। তাই এই ফাঁকে সকালের নাশতাটা সেরে নিলাম আমরা। বাংলাদেশের ইমিগ্রেশন সেন্টারের কাজ সেরে ভারতে ঢুকতে ঢুকতে সকাল ১০টার মতো বেজে গেল। এরপর আবার ঘণ্টাখানেক সময় লাগল ভারতের ইমিগ্রেশন সেন্টারে। এর মধ্যে ভুবন তক্কে তক্কে ছিল সিকিমে যাওয়ার আরও মানুষ জোগাড় করতে। এমনিতে ফেসবুকে ভ্রমণ গ্রুপ থেকে দুজন জোগাড় হয়েছিল। কিন্তু তাঁরা পরদিন আমাদের সঙ্গে যোগ দেওয়ার কথা।
বাংলাদেশের ইমিগ্রেশন সেন্টারে বসে থেকে বেশ কয়েকজনের সঙ্গে আলাপ হয়ে যায়, যাঁরা সিকিমে যাবেন। এর মধ্যে প্রহর সাহা নামের পাকা পিচ্চিটার বাবা-মা আমাদের তাঁদের সঙ্গে নিতে চেয়েছিলেন। তাঁরা একদম আলাদা ঘুরবেন। কোনো দলের সঙ্গে না। শুধু পরিবার। তাঁরা রিসোর্টে থাকবেন। তাঁদের খরচাটা মনে হচ্ছিল একটু বেশি। তাঁরা আমাদের কাছ থেকে খরচ নিতেও আপত্তি করছিলেন। কিন্তু আমার মন সায় দিচ্ছিল না তাঁদের সঙ্গে যেতে। তবে প্রহর সাহাকে আমার বেশ পছন্দ হয়েছিল। ছয়-সাত বছরের মিষ্টি, গুলুগুলু একটা বাচ্চা।
মাঝরাতে বাস যখন বিরতিতে থেমেছিল, তখন সে হুড়মুড় করে লাফিয়ে উঠে বলেছিল, ‘আমরা কি গ্যাংটক চলে আসছি?’ ওর কথা শুনে বাসের সবাই খুব মজা পেয়েছিল। আরেকটা পরিবারের সঙ্গে কথা হয়েছিল। তাঁদের সঙ্গে দল বাঁধার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম আমরা। কিন্তু ইমিগ্রেশনের ঠেলা সামলাতে সামলাতে তাঁদের হারিয়ে ফেললাম। বাংলাদেশের সীমানা পার হওয়ার সময় এক আংকেলকে দেখলাম তাঁর নাম আগে না ডাকায় একটা লঙ্কাকাণ্ড বাঁধিয়ে দিলেন। সঙ্গে যোগ দিলেন তাঁর সঙ্গীরাও। ওই লাইনে দাঁড়িয়ে আকাশ ভাইদের সঙ্গে দেখা হলো। তখনো জানতাম না এরাই আমাদের বাকিটা ভ্রমণ বিনোদন দেবেন। একপর্যায়ে ভুবনকে ডেকে নিয়ে গেল ভারতের ইমিগ্রেশন সেন্টারে। আমি দেশের মাটিতে একা দাঁড়িয়ে কেমন জানি একটা অনুভূতি পাচ্ছিলাম। কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর আমার ডাক পড়ল। সব ঝামেলা শেষ করে যখন ঠিক ভারতের সীমানায় দাঁড়িয়ে আমার দেশটাকে দেখছিলাম, কেমন জানি এক অনুভূতি হচ্ছিল। বোঝাতে পারব না। খুব সুন্দর জায়গায় ঘুরতে যাচ্ছি জেনেও চোখটা ছলছল করে উঠেছিল। দেশকে যে কতটা ভালোবাসি, তা প্রতিমুহূর্তে টের পেয়েছিলাম এই ভ্রমণের সময়। হোক আমার দেশ নোংরা, যানজটে ভরা, দুর্নীতিতে সেরা; কিন্তু আমার দেশ আমি ভালোবাসি। এসব আবেগ ভাবতে ভাবতে বাসে উঠে বসলাম। শিলিগুড়ি যেতে হবে। বাসের সহকারীকে দেখলাম সিকিমে যাওয়া মানুষদের সঙ্গে আলাপ করতে। তাঁরা যাচ্ছিলেন শ্যামলী পরিবহনের প্যাকেজে। আমরা প্যাকেজ নিইনি খরচ কমাব বলে। কিন্তু দল তো খুঁজতেই হবে। দল ছাড়া সিকিমে যাওয়াটা ঝক্কি। ভুবনকে বললাম সহকারীর সঙ্গে কথা বলতে। ভুবন তাঁকে জিজ্ঞেস করায় আরেকজনকে পরিচয় করিয়ে দিলেন। মিলন ভাই।বাংলাদেশি। রংপুরের মানুষ। শ্যামলীর পক্ষ থেকে উনি সিকিম প্যাকেজের ভ্রমণকারীদের শিলিগুড়ি পৌঁছে দিতে যাচ্ছিলেন। যদিও আনন্দের ফাঁদে পড়ে পুরো ভ্রমণটাই আমাদের সঙ্গে কাটিয়েছেন পরে। মিলন ভাই আশা দিলেন, শিলিগুড়ি পৌঁছে অমর দার সঙ্গে কথা বলিয়ে দিলে উনি একটা ব্যবস্থা করবেন। অমর দা হচ্ছেন শ্যামলী প্যাকেজের গাইড। ওনার বাড়ি আসলে বাংলাদেশে। কিন্তু অভিমান করে শিলিগুড়িতে চলে গেছেন। দুই দেশের নাগরিকত্ব আছে তাঁর। আচ্ছা, তাঁর গল্প পরে কোথাও করব।
কোচবিহার, জলপাইগুড়ি ছাড়তে ছাড়তে চা-বাগানের সৌন্দর্য উপভোগ করে নিলাম। পথে একটু পর পর দেখলাম কালীমন্দির আর মদের দোকান! সিকিমে তো ফুটপাতে নিয়ে বিক্রি করে। হঠাৎ মনে হলো, নাটক-সিনেমায় দেখি ভারতীয় বাঙালিরা দুর্গাপূজা বেশি করে। অথচ এদিকে কালীমন্দির বেশি। সর্বসাকল্যে একটা মাত্র দুর্গা প্রতিমা দেখতে পেয়েছিলাম। শিলিগুড়ির পথে আবার হনুমানের মূর্তি আর মন্দির বেশি দেখলাম। বুঝলাম, একেক জায়গায় একেক ভগবানের প্রভাব বেশি। আরেকটা জিনিস নজর এড়াল না আমার। জলপাইগুড়ি পর্যন্ত সহজে মনে হচ্ছিল না বাংলাদেশ থেকে ভিন্ন কিছু। পার্থক্য এটুকু বের করতে পারলাম—তাদের ঘরবাড়িগুলো আমাদের চেয়ে খানিকটা খাটো মনে হলো; ওদের ট্রাকের নাক বোঁচা, আমাদেরগুলো চোখা; ট্রাকের গায়ে হিন্দিতে লেখা ‘জয় মাতা দি’ কিংবা বাংলায় লেখা ‘জয় মা দুর্গা বা কালী’, আমাদের যেমন লেখা থাকে ‘আল্লাহর দান’ টাইপ কথাবার্তা। এগুলো ভাবছিলাম আর সেই সঙ্গে তিস্তার মায়াভরা মুখ দেখছিলাম। যদিও আসল রূপ সিকিমের পথেই দেখা গেছে। কী যে মায়াময় এই নদী! ওহ্, ভারতের সীমানায় ঢুকেও কিন্তু বাংলাদেশের মোবাইল নেটওয়ার্ক পাচ্ছিলাম। ওই চেংড়াবান্ধা পর্যন্তই। কিন্তু ব্যাপারটা আমার খুব মজা লেগেছিল। বাবা অবশ্য আগে বলে দিয়েছিল, ‘নেটওয়ার্ক পাবি, পার হয়ে ফোন দিস।’ দিয়েছিলাম।
ঘণ্টা তিনেক সময় লাগল শিলিগুড়ি পৌঁছাতে। এই শহরটাকে বলা হয় জলপাইগুড়ি শহরের যমজ! তবে এর ৬২ ভাগ দার্জিলিংয়ে আর ৩৮ ভাগ অংশ পড়েছে জলপাইগুড়ি জেলায়। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে কলকাতার পরেই যে বড় শহরের নাম উঠে আসে, সেটা শিলিগুড়ি। বলা চলে, হিমালয়ের পাদদেশে শিলিগুড়ির অবস্থান। আর ওপরে সিকিম রাজ্য। শিলিগুড়ির মানুষ এভাবে স্থান নির্ধারণ করে—পাহাড়ের ওপরে আর পাহাড়ের নিচে। সিকিমের মানুষদের ওরা বলে ‘ওপরের লোক’!
(চলবে)

আমাদের সমাজে প্রচলিত এমন কিছু অভ্যাস আছে, যা সাধারণত নেতিবাচক চোখে দেখা হয় বা এড়িয়ে চলতে বলা হয়। কিন্তু আধুনিক গবেষণা এবং চিকিৎসাবিজ্ঞান প্রমাণ করেছে যে এই অভ্যাসগুলোর সবই ক্ষতিকর নয়; বরং কিছু অভ্যাস সুস্বাস্থ্য, মানসিক শান্তি ও সৃজনশীলতার জন্য অপরিহার্য। এবার জেনে নেওয়া যাক এমন কিছু ‘ভুল’ ধারণা এবং
৩৮ মিনিট আগে
বাড়ির ভেতরের রান্নাঘর, বেসিন বা বাথরুমে পাইপলাইনে আমরা অনেক কিছুই ফেলি। ঝামেলা এড়ানোর জন্য মূলত এ কাজ করা হয়। কিন্তু এই অবহেলা থেকে পাইপ লিক বা ব্লক হলে মেরামতের খরচ যেমন বেশি, তেমনি ঝামেলাও দীর্ঘস্থায়ী। তাই ড্রেন বা সিংক আবর্জনা ফেলার জায়গা হিসেবে ব্যবহার করা উচিত নয়। কিছু জিনিস যদি নিয়মিত পানির
৩ ঘণ্টা আগে
ডিসেম্বরের শুরু থেকে বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান লেগেই থাকে। বিয়ে, বড়দিন, বছর শেষের আয়োজন, বারবিকিউ পার্টিসহ যেকোনো অনুষ্ঠানে পরে যাওয়ার জন্য লাল রঙের পোশাক অনেকের কাছেই সেরা পছন্দ। লাল রং উৎসব, সাহস ও ভালোবাসার প্রতীক। এই রঙের পোশাক পরলে এমনিতেই উজ্জ্বল দেখায়। তাই এই রঙের পোশাকের সঙ্গে মেকআপ এমন...
৪ ঘণ্টা আগে
দাম্পত্য জীবনে সন্তানের পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হলে বেশির ভাগ সময় নজর যায় নারীর দিকে। চিকিৎসাবিজ্ঞানের মতে, সন্তান ধারণের ক্ষেত্রে পুরুষের ভূমিকা সমান গুরুত্বপূর্ণ। সাম্প্রতিক একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বজুড়ে পুরুষদের শুক্রাণুর সংখ্যা কমে আসছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দৈনন্দিন জীবনযাপন, দূষণ, মানসিক...
৮ ঘণ্টা আগেফিচার ডেস্ক

আমাদের সমাজে প্রচলিত এমন কিছু অভ্যাস আছে, যা সাধারণত নেতিবাচক চোখে দেখা হয় বা এড়িয়ে চলতে বলা হয়। কিন্তু আধুনিক গবেষণা এবং চিকিৎসাবিজ্ঞান প্রমাণ করেছে যে এই অভ্যাসগুলোর সবই ক্ষতিকর নয়; বরং কিছু অভ্যাস সুস্বাস্থ্য, মানসিক শান্তি ও সৃজনশীলতার জন্য অপরিহার্য। এবার জেনে নেওয়া যাক এমন কিছু ‘ভুল’ ধারণা এবং এর পেছনের উপকারী দিকগুলো।
ভিডিও গেম
ভিডিও গেম খেলাকে আমরা সমাজে নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখি। কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে, পরিমিত পরিমাণে ভিডিও গেম খেললে জ্ঞানের ক্ষমতা এবং মনোযোগ উন্নত হতে পারে। এমনকি চিকিৎসা ক্ষেত্রেও এর ব্যবহার রয়েছে।
কফি পান করা
কফি অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের উৎস। কফি পানকে অনেকে নেতিবাচক মনে করলেও, বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, এটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সরবরাহ করে। এমনকি পার্কিনসন রোগ, টাইপ-২ ডায়াবেটিস এবং নির্দিষ্ট কিছু ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে পারে। ২০১৭ সালে ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে প্রকাশিত একটি পর্যালোচনায় প্রায় ২০০ গবেষণা বিশ্লেষণ করে উপসংহারে পৌঁছানো হয়েছে যে গর্ভাবস্থা ছাড়া স্বাভাবিক মাত্রায় কফি পান নিরাপদ। পরিমাণ হতে হবে প্রতিদিন ৩-৪ কাপ। এমনকি এটি সামগ্রিক মৃত্যুর ঝুঁকি কমাতেও সাহায্য করতে পারে।
অলসতা বা বিরক্তিবোধ
বিরক্তিবোধ করা; যাকে আমরা বোরনেস বলি, একে নেতিবাচকভাবে দেখা হয়। কিন্তু এটি মস্তিষ্ককে ঘুরে বেড়ানোর এবং বিশ্রাম নেওয়ার সুযোগ দেয়। যেখান থেকে মূলত সৃজনশীলতা এবং নতুন ধারণার জন্ম দেয়। মেয়ো ক্লিনিকের মতে, শিশু ও প্রাপ্তবয়স্ক উভয়ের জন্য সামান্য বিরক্তি ভালো হতে পারে। এটি সৃজনশীলতা এবং সমস্যা সমাধানের উদ্দীপনা জোগায়, পাশাপাশি মস্তিষ্ককে রিচার্জের সময় দেয়।

আলু খাওয়া
আলু খাওয়াকে অনেকে খারাপ বলে মনে করেন। অথচ আলু পুষ্টি ও ফাইবারের ভান্ডার। আলু মূলত ভিটামিন, মিনারেল এবং ফাইবারে ভরপুর একটি সবজি; বিশেষ করে যখন খোসাসহ খাওয়া হয়। তবে হ্যাঁ, আলুর মূল সমস্যা এর রান্নার পদ্ধতিতে। আলু সাধারণত ফ্রেঞ্চ ফ্রাইয়ের মতো অতিরিক্ত ফ্যাটযুক্ত পদ্ধতিতে রান্নার কারণে অস্বাস্থ্যকর হিসেবে বিবেচিত হয়। কিন্তু সেদ্ধ, সেঁকা বা বাষ্পে তৈরি আলু অত্যন্ত স্বাস্থ্যকর। ইউসি ডেভিস হেলথ আমেরিকানদের বেশি বেশি আলু খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে।
অস্থির আচরণ
স্কুলজীবনে অস্থির হয়ে নড়াচড়া করার জন্য হয়তো অনেক বকা খেতে হয়েছে। বাড়িতে শিক্ষকেরা কমপ্লেনও করেন, আপনার শিশুটি খুব বেশি চঞ্চল। কিন্তু গবেষণা বলছে এই অভ্যাস শরীরের জন্য ভালো হতে পারে! মেয়ো ক্লিনিকের জেমস লেভিনের গবেষণা অনুসারে, যাঁরা অস্থিরভাবে নড়াচড়া করেন, তাঁরা প্রতিদিন প্রায় ৩৫০ কিলোক্যালোরি পর্যন্ত ক্যালরি বার্ন করতে পারেন। অন্যান্য গবেষণায় দেখা যায়, এটি ওজন নিয়ন্ত্রণে, মানসিক চাপ কমাতে এবং সম্ভবত দীর্ঘকাল বাঁচতে সাহায্য করতে পারে।

খারাপ মেজাজ ও কান্নাকাটি
সব সময় হাসিখুশি থাকার চেষ্টা মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। নেতিবাচক আবেগসহ সব ধরনের অনুভূতিকে স্বীকৃতি দেওয়া ভালো মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে নিয়ে যায়। যেমন কান্না পেলে কাঁদুন। কিংবা মেজাজ খারাপ হলে মনের কথা বলে ফেলুন। কান্না শুধু আবেগের স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া নয়, এটি স্বাস্থ্যকরও বটে। গবেষণায় দেখা গেছে, কান্নার মাধ্যমে অক্সিটোসিন এবং এন্ডোরফিন নির্গত হয়, যা শারীরিক ও মানসিক উভয় ব্যথা উপশম করতে পারে। তেমনই একাকিত্বকে নেতিবাচকভাবে দেখা হলেও, এটি মনোযোগ বৃদ্ধি করে, সৃজনশীলতা বাড়ায়, আত্ম-প্রতিফলন ঘটায় এবং সামাজিক শক্তিকে রিচার্জ করতে সাহায্য করে।
ফ্রিজে রাখা ফল ও সবজি
অনেকের ধারণা, টাটকা ফল ও সবজির চেয়ে ফ্রোজেন ফল ও সবজি কম পুষ্টিকর। কিন্তু এই ধারণা ভুল। ফল ও সবজিকে সর্বোচ্চ পরিপক্বতার সময়ে ‘ফ্ল্যাশ-ফ্রিজ’ করা হলে সেগুলোর প্রায় সব পুষ্টি উপাদান সংরক্ষিত থাকে। ইউনিভার্সিটি অব চেস্টারের গবেষণায় দেখা গেছে, তিনটির মধ্যে দুটির ক্ষেত্রে ফ্রোজেন উৎপাদনে ফ্রিজে রাখা সমপরিমাণ তাজা পণ্যের চেয়ে বেশি পুষ্টি ছিল।
সূর্যের আলো
অতিরিক্ত সূর্যালোকে থাকা ত্বকের ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ালেও, হাড়ের স্বাস্থ্য এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার জন্য অপরিহার্য ভিটামিন ডি উৎপাদন করতে নিয়মিত, পরিমিত সূর্যরশ্মি গ্রহণ প্রয়োজন। ওয়েবএমডির মতে, অবস্থানের ওপর নির্ভর করে প্রতিদিন সাধারণত ৫-৩০ মিনিট সূর্যের আলো শরীরে লাগানো উপকারী এবং নিরাপদ।
সূত্র: মেয়ো ক্লিনিক, শো বিজ ডেইলি

আমাদের সমাজে প্রচলিত এমন কিছু অভ্যাস আছে, যা সাধারণত নেতিবাচক চোখে দেখা হয় বা এড়িয়ে চলতে বলা হয়। কিন্তু আধুনিক গবেষণা এবং চিকিৎসাবিজ্ঞান প্রমাণ করেছে যে এই অভ্যাসগুলোর সবই ক্ষতিকর নয়; বরং কিছু অভ্যাস সুস্বাস্থ্য, মানসিক শান্তি ও সৃজনশীলতার জন্য অপরিহার্য। এবার জেনে নেওয়া যাক এমন কিছু ‘ভুল’ ধারণা এবং এর পেছনের উপকারী দিকগুলো।
ভিডিও গেম
ভিডিও গেম খেলাকে আমরা সমাজে নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখি। কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে, পরিমিত পরিমাণে ভিডিও গেম খেললে জ্ঞানের ক্ষমতা এবং মনোযোগ উন্নত হতে পারে। এমনকি চিকিৎসা ক্ষেত্রেও এর ব্যবহার রয়েছে।
কফি পান করা
কফি অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের উৎস। কফি পানকে অনেকে নেতিবাচক মনে করলেও, বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, এটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সরবরাহ করে। এমনকি পার্কিনসন রোগ, টাইপ-২ ডায়াবেটিস এবং নির্দিষ্ট কিছু ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে পারে। ২০১৭ সালে ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে প্রকাশিত একটি পর্যালোচনায় প্রায় ২০০ গবেষণা বিশ্লেষণ করে উপসংহারে পৌঁছানো হয়েছে যে গর্ভাবস্থা ছাড়া স্বাভাবিক মাত্রায় কফি পান নিরাপদ। পরিমাণ হতে হবে প্রতিদিন ৩-৪ কাপ। এমনকি এটি সামগ্রিক মৃত্যুর ঝুঁকি কমাতেও সাহায্য করতে পারে।
অলসতা বা বিরক্তিবোধ
বিরক্তিবোধ করা; যাকে আমরা বোরনেস বলি, একে নেতিবাচকভাবে দেখা হয়। কিন্তু এটি মস্তিষ্ককে ঘুরে বেড়ানোর এবং বিশ্রাম নেওয়ার সুযোগ দেয়। যেখান থেকে মূলত সৃজনশীলতা এবং নতুন ধারণার জন্ম দেয়। মেয়ো ক্লিনিকের মতে, শিশু ও প্রাপ্তবয়স্ক উভয়ের জন্য সামান্য বিরক্তি ভালো হতে পারে। এটি সৃজনশীলতা এবং সমস্যা সমাধানের উদ্দীপনা জোগায়, পাশাপাশি মস্তিষ্ককে রিচার্জের সময় দেয়।

আলু খাওয়া
আলু খাওয়াকে অনেকে খারাপ বলে মনে করেন। অথচ আলু পুষ্টি ও ফাইবারের ভান্ডার। আলু মূলত ভিটামিন, মিনারেল এবং ফাইবারে ভরপুর একটি সবজি; বিশেষ করে যখন খোসাসহ খাওয়া হয়। তবে হ্যাঁ, আলুর মূল সমস্যা এর রান্নার পদ্ধতিতে। আলু সাধারণত ফ্রেঞ্চ ফ্রাইয়ের মতো অতিরিক্ত ফ্যাটযুক্ত পদ্ধতিতে রান্নার কারণে অস্বাস্থ্যকর হিসেবে বিবেচিত হয়। কিন্তু সেদ্ধ, সেঁকা বা বাষ্পে তৈরি আলু অত্যন্ত স্বাস্থ্যকর। ইউসি ডেভিস হেলথ আমেরিকানদের বেশি বেশি আলু খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে।
অস্থির আচরণ
স্কুলজীবনে অস্থির হয়ে নড়াচড়া করার জন্য হয়তো অনেক বকা খেতে হয়েছে। বাড়িতে শিক্ষকেরা কমপ্লেনও করেন, আপনার শিশুটি খুব বেশি চঞ্চল। কিন্তু গবেষণা বলছে এই অভ্যাস শরীরের জন্য ভালো হতে পারে! মেয়ো ক্লিনিকের জেমস লেভিনের গবেষণা অনুসারে, যাঁরা অস্থিরভাবে নড়াচড়া করেন, তাঁরা প্রতিদিন প্রায় ৩৫০ কিলোক্যালোরি পর্যন্ত ক্যালরি বার্ন করতে পারেন। অন্যান্য গবেষণায় দেখা যায়, এটি ওজন নিয়ন্ত্রণে, মানসিক চাপ কমাতে এবং সম্ভবত দীর্ঘকাল বাঁচতে সাহায্য করতে পারে।

খারাপ মেজাজ ও কান্নাকাটি
সব সময় হাসিখুশি থাকার চেষ্টা মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। নেতিবাচক আবেগসহ সব ধরনের অনুভূতিকে স্বীকৃতি দেওয়া ভালো মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে নিয়ে যায়। যেমন কান্না পেলে কাঁদুন। কিংবা মেজাজ খারাপ হলে মনের কথা বলে ফেলুন। কান্না শুধু আবেগের স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া নয়, এটি স্বাস্থ্যকরও বটে। গবেষণায় দেখা গেছে, কান্নার মাধ্যমে অক্সিটোসিন এবং এন্ডোরফিন নির্গত হয়, যা শারীরিক ও মানসিক উভয় ব্যথা উপশম করতে পারে। তেমনই একাকিত্বকে নেতিবাচকভাবে দেখা হলেও, এটি মনোযোগ বৃদ্ধি করে, সৃজনশীলতা বাড়ায়, আত্ম-প্রতিফলন ঘটায় এবং সামাজিক শক্তিকে রিচার্জ করতে সাহায্য করে।
ফ্রিজে রাখা ফল ও সবজি
অনেকের ধারণা, টাটকা ফল ও সবজির চেয়ে ফ্রোজেন ফল ও সবজি কম পুষ্টিকর। কিন্তু এই ধারণা ভুল। ফল ও সবজিকে সর্বোচ্চ পরিপক্বতার সময়ে ‘ফ্ল্যাশ-ফ্রিজ’ করা হলে সেগুলোর প্রায় সব পুষ্টি উপাদান সংরক্ষিত থাকে। ইউনিভার্সিটি অব চেস্টারের গবেষণায় দেখা গেছে, তিনটির মধ্যে দুটির ক্ষেত্রে ফ্রোজেন উৎপাদনে ফ্রিজে রাখা সমপরিমাণ তাজা পণ্যের চেয়ে বেশি পুষ্টি ছিল।
সূর্যের আলো
অতিরিক্ত সূর্যালোকে থাকা ত্বকের ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ালেও, হাড়ের স্বাস্থ্য এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার জন্য অপরিহার্য ভিটামিন ডি উৎপাদন করতে নিয়মিত, পরিমিত সূর্যরশ্মি গ্রহণ প্রয়োজন। ওয়েবএমডির মতে, অবস্থানের ওপর নির্ভর করে প্রতিদিন সাধারণত ৫-৩০ মিনিট সূর্যের আলো শরীরে লাগানো উপকারী এবং নিরাপদ।
সূত্র: মেয়ো ক্লিনিক, শো বিজ ডেইলি

দুজনেরই প্রথম বিদেশভ্রমণ; যার ফলে আমাদের মধ্যে কাজ করছিল একটা আনন্দবোধ ও উত্তেজনা, তা কি অল্প কথায় বোঝানো যাবে? আমাদের ডেস্টিনেশন ছিল ভ্রমণপিয়াসীদের অন্যতম আকর্ষণীয় জায়গায়। এটাকে অনেকে বলে ‘ড্রিম প্লেস টু ভিজিট’। পেটের ভেতর থেকে প্রজাপতি সুড়সুড়ি দেওয়ার অনুভূতিটা নিশ্চয়ই অনেকের হয়? সত্যি কথা, তা আমার
১১ অক্টোবর ২০২২
বাড়ির ভেতরের রান্নাঘর, বেসিন বা বাথরুমে পাইপলাইনে আমরা অনেক কিছুই ফেলি। ঝামেলা এড়ানোর জন্য মূলত এ কাজ করা হয়। কিন্তু এই অবহেলা থেকে পাইপ লিক বা ব্লক হলে মেরামতের খরচ যেমন বেশি, তেমনি ঝামেলাও দীর্ঘস্থায়ী। তাই ড্রেন বা সিংক আবর্জনা ফেলার জায়গা হিসেবে ব্যবহার করা উচিত নয়। কিছু জিনিস যদি নিয়মিত পানির
৩ ঘণ্টা আগে
ডিসেম্বরের শুরু থেকে বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান লেগেই থাকে। বিয়ে, বড়দিন, বছর শেষের আয়োজন, বারবিকিউ পার্টিসহ যেকোনো অনুষ্ঠানে পরে যাওয়ার জন্য লাল রঙের পোশাক অনেকের কাছেই সেরা পছন্দ। লাল রং উৎসব, সাহস ও ভালোবাসার প্রতীক। এই রঙের পোশাক পরলে এমনিতেই উজ্জ্বল দেখায়। তাই এই রঙের পোশাকের সঙ্গে মেকআপ এমন...
৪ ঘণ্টা আগে
দাম্পত্য জীবনে সন্তানের পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হলে বেশির ভাগ সময় নজর যায় নারীর দিকে। চিকিৎসাবিজ্ঞানের মতে, সন্তান ধারণের ক্ষেত্রে পুরুষের ভূমিকা সমান গুরুত্বপূর্ণ। সাম্প্রতিক একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বজুড়ে পুরুষদের শুক্রাণুর সংখ্যা কমে আসছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দৈনন্দিন জীবনযাপন, দূষণ, মানসিক...
৮ ঘণ্টা আগেফিচার ডেস্ক

বাড়ির ভেতরের রান্নাঘর, বেসিন বা বাথরুমে পাইপলাইনে আমরা অনেক কিছুই ফেলি। ঝামেলা এড়ানোর জন্য মূলত এ কাজ করা হয়। কিন্তু এই অবহেলা থেকে পাইপ লিক বা ব্লক হলে মেরামতের খরচ যেমন বেশি, তেমনি ঝামেলাও দীর্ঘস্থায়ী। তাই ড্রেন বা সিংক আবর্জনা ফেলার জায়গা হিসেবে ব্যবহার করা উচিত নয়। কিছু জিনিস যদি নিয়মিত পানির সঙ্গে ড্রেনে ফেলেন, সেগুলো সহজে পাইপ বন্ধ করে দিতে পারে আপনার অজান্তে।
বাড়তি রান্নার তেল
বড় ভুল হলো ব্যবহার শেষে গরম অবস্থায় অতিরিক্ত তেল সিংকে ঢেলে দেওয়া। গরম অবস্থায় তরল থাকলেও পাইপের ভেতরে ঠান্ডা পরিবেশে তেল দ্রুত শক্ত হয়ে যায়। সময়ের সঙ্গে এই স্তর মোটা হয় এবং এর সঙ্গে অন্য খাবারের কণা আটকে পাইপ পুরোপুরি জ্যাম হয়ে যায়। ব্যবহার শেষে তেল একটি বোতলে জমিয়ে রাখতে পারেন। পরবর্তী সময়ে তা বোতলসহ ময়লার ঝুরিতে ফেলে দেওয়া নিরাপদ।
কফির গুঁড়া
অনেকেই ভাবেন কফির গুঁড়া এত সূক্ষ্ম যে সিংকে ফেললে কোনো ক্ষতি হবে না। কিন্তু পানি লাগলে এটি দলা পাকিয়ে ঘন পুরু স্তর তৈরি করে, যা পাইপের বাঁক বা জোড়ায় গিয়ে আটকে যায়। ধীরে ধীরে এই স্তর শক্ত হয়ে ব্লক সৃষ্টি করে। কফির গুঁড়া ডাস্টবিনে ফেলাই ভালো অথবা সার হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
রাসায়নিক ড্রেন ক্লিনার
শোনা যায়, ব্লক খুলতে এগুলো খুব কার্যকর। কিন্তু একই সঙ্গে এগুলো পাইপের শত্রুও বটে। বেশির ভাগ ক্লিনারে বিশেষ ধরনের রাসায়নিক থাকে, যা ব্লক খুললেও প্লাস্টিক বা ধাতব পাইপের আবরণের ক্ষতি করে। দীর্ঘ মেয়াদে লিক বা পাইপ ফেটে যাওয়ার ঝুঁকি সৃষ্টি হয়। পরিবেশের জন্যও এগুলো ক্ষতিকর। প্রয়োজন হলে পাইপের ব্লক খুলতে বেকিং সোডা ও ভিনেগারের মতো প্রাকৃতিক মিশ্রণ নিরাপদ।
বিড়ালের লিটার
প্যাকেটে ‘ফ্লাশেবল’ লেখা থাকলেও এগুলো কখনোই টয়লেটে ফেলা উচিত নয়। বিড়ালের লিটার সাধারণত ক্লে, সিলিকা বা জেল জাতীয় উপাদানে তৈরি, যা পানি পেলেই ফুলে ওঠে এবং শক্ত দলা তৈরি করে। পাইপে ঢোকার পর এগুলো দ্রুত ব্লক সৃষ্টি করে। পাশাপাশি এতে থাকা ব্যাকটেরিয়া ও পরজীবী পানির উৎসও দূষিত করতে পারে।
বাড়তি ওষুধ
পুরোনো বা বাড়তি ওষুধ টয়লেটে ফেললে সেগুলো ব্লক সৃষ্টি করে না বটে; কিন্তু সেটা না করলেও এগুলো পরিবেশের জন্য বিপজ্জনক। পানি শোধনাগারগুলো এ ধরনের রাসায়নিক ফিল্টার করতে পারে না। ফলে ওষুধের উপাদান নদী, হ্রদ এবং ভূগর্ভস্থ পানিতে মিশে গিয়ে ক্ষতি করে। অপ্রয়োজনীয় ওষুধ নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলে দেওয়া ভালো।
আঁশযুক্ত খাবার
ভাত, নুডলস, পাস্তা বা পাউরুটির মতো খাবার পানিতে ফুলে আঠালো মণ্ড তৈরি করে এবং পাইপে আটকে যায়। ভুট্টার খোসার মতো আঁশযুক্ত খাবার সহজে পচে না এবং পাইপের বাঁকে জট বেঁধে ব্লক সৃষ্টি করে।
ডিমের খোসা
ডিমের ভাঙা খোসা ভঙ্গুর হলেও পাইপে গিয়ে এগুলো বেশ সমস্যা সৃষ্টি করে। খোসার ভাঙা অংশ অনেকটা বালুর মতো এবং তেল বা খাবারের কণার সঙ্গে মিশে শক্ত সিমেন্টের মতো স্তর তৈরি করে।
রং
বাড়ির রঙে থাকা রাসায়নিক পাইপের ক্ষতি করতে পারে। পাশাপাশি ড্রেনে গেলে এসব রাসায়নিক পানি দূষিত করে। তাই ব্যবহার শেষে রং কখনোই সিংক বা টয়লেটে ঢালবেন না। লেবেলে দেওয়া নির্দেশনা অনুযায়ী সেগুলো ফেলা উচিত।
ফলের স্টিকার
ফলের গায়ে থাকা ছোট স্টিকারগুলো খুব শক্তভাবে লেগে থাকে। ড্রেনে গেলে এগুলো পানি শোধনাগারের ফিল্টারে আটকে থাকে ও পাইপে বাধা তৈরি করে। স্টিকারগুলো আলাদা করে ডাস্টবিনে ফেলে দেওয়া নিরাপদ।
ফল বা খাবারের শক্ত বিচি
পাইপ কোনোভাবেই ফলের শক্ত বিচি বা হাড়ের মতো শক্ত জিনিস সামলানোর মতো করে তৈরি নয়। এগুলো গারবেজ ডিস্পোজারকেও ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে এবং পাইপের ভেতর মারাত্মক জ্যাম তৈরি করে।
বাড়ির পাইপলাইন সচল রাখতে নিয়মিত পরিষ্কার ও সঠিক ব্যবহারের কোনো বিকল্প নেই। সামান্য সচেতনতা হাজার টাকার ক্ষতি থেকে বাঁচাতে পারে।
সূত্র: ভিএন এক্সপ্রেস

বাড়ির ভেতরের রান্নাঘর, বেসিন বা বাথরুমে পাইপলাইনে আমরা অনেক কিছুই ফেলি। ঝামেলা এড়ানোর জন্য মূলত এ কাজ করা হয়। কিন্তু এই অবহেলা থেকে পাইপ লিক বা ব্লক হলে মেরামতের খরচ যেমন বেশি, তেমনি ঝামেলাও দীর্ঘস্থায়ী। তাই ড্রেন বা সিংক আবর্জনা ফেলার জায়গা হিসেবে ব্যবহার করা উচিত নয়। কিছু জিনিস যদি নিয়মিত পানির সঙ্গে ড্রেনে ফেলেন, সেগুলো সহজে পাইপ বন্ধ করে দিতে পারে আপনার অজান্তে।
বাড়তি রান্নার তেল
বড় ভুল হলো ব্যবহার শেষে গরম অবস্থায় অতিরিক্ত তেল সিংকে ঢেলে দেওয়া। গরম অবস্থায় তরল থাকলেও পাইপের ভেতরে ঠান্ডা পরিবেশে তেল দ্রুত শক্ত হয়ে যায়। সময়ের সঙ্গে এই স্তর মোটা হয় এবং এর সঙ্গে অন্য খাবারের কণা আটকে পাইপ পুরোপুরি জ্যাম হয়ে যায়। ব্যবহার শেষে তেল একটি বোতলে জমিয়ে রাখতে পারেন। পরবর্তী সময়ে তা বোতলসহ ময়লার ঝুরিতে ফেলে দেওয়া নিরাপদ।
কফির গুঁড়া
অনেকেই ভাবেন কফির গুঁড়া এত সূক্ষ্ম যে সিংকে ফেললে কোনো ক্ষতি হবে না। কিন্তু পানি লাগলে এটি দলা পাকিয়ে ঘন পুরু স্তর তৈরি করে, যা পাইপের বাঁক বা জোড়ায় গিয়ে আটকে যায়। ধীরে ধীরে এই স্তর শক্ত হয়ে ব্লক সৃষ্টি করে। কফির গুঁড়া ডাস্টবিনে ফেলাই ভালো অথবা সার হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
রাসায়নিক ড্রেন ক্লিনার
শোনা যায়, ব্লক খুলতে এগুলো খুব কার্যকর। কিন্তু একই সঙ্গে এগুলো পাইপের শত্রুও বটে। বেশির ভাগ ক্লিনারে বিশেষ ধরনের রাসায়নিক থাকে, যা ব্লক খুললেও প্লাস্টিক বা ধাতব পাইপের আবরণের ক্ষতি করে। দীর্ঘ মেয়াদে লিক বা পাইপ ফেটে যাওয়ার ঝুঁকি সৃষ্টি হয়। পরিবেশের জন্যও এগুলো ক্ষতিকর। প্রয়োজন হলে পাইপের ব্লক খুলতে বেকিং সোডা ও ভিনেগারের মতো প্রাকৃতিক মিশ্রণ নিরাপদ।
বিড়ালের লিটার
প্যাকেটে ‘ফ্লাশেবল’ লেখা থাকলেও এগুলো কখনোই টয়লেটে ফেলা উচিত নয়। বিড়ালের লিটার সাধারণত ক্লে, সিলিকা বা জেল জাতীয় উপাদানে তৈরি, যা পানি পেলেই ফুলে ওঠে এবং শক্ত দলা তৈরি করে। পাইপে ঢোকার পর এগুলো দ্রুত ব্লক সৃষ্টি করে। পাশাপাশি এতে থাকা ব্যাকটেরিয়া ও পরজীবী পানির উৎসও দূষিত করতে পারে।
বাড়তি ওষুধ
পুরোনো বা বাড়তি ওষুধ টয়লেটে ফেললে সেগুলো ব্লক সৃষ্টি করে না বটে; কিন্তু সেটা না করলেও এগুলো পরিবেশের জন্য বিপজ্জনক। পানি শোধনাগারগুলো এ ধরনের রাসায়নিক ফিল্টার করতে পারে না। ফলে ওষুধের উপাদান নদী, হ্রদ এবং ভূগর্ভস্থ পানিতে মিশে গিয়ে ক্ষতি করে। অপ্রয়োজনীয় ওষুধ নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলে দেওয়া ভালো।
আঁশযুক্ত খাবার
ভাত, নুডলস, পাস্তা বা পাউরুটির মতো খাবার পানিতে ফুলে আঠালো মণ্ড তৈরি করে এবং পাইপে আটকে যায়। ভুট্টার খোসার মতো আঁশযুক্ত খাবার সহজে পচে না এবং পাইপের বাঁকে জট বেঁধে ব্লক সৃষ্টি করে।
ডিমের খোসা
ডিমের ভাঙা খোসা ভঙ্গুর হলেও পাইপে গিয়ে এগুলো বেশ সমস্যা সৃষ্টি করে। খোসার ভাঙা অংশ অনেকটা বালুর মতো এবং তেল বা খাবারের কণার সঙ্গে মিশে শক্ত সিমেন্টের মতো স্তর তৈরি করে।
রং
বাড়ির রঙে থাকা রাসায়নিক পাইপের ক্ষতি করতে পারে। পাশাপাশি ড্রেনে গেলে এসব রাসায়নিক পানি দূষিত করে। তাই ব্যবহার শেষে রং কখনোই সিংক বা টয়লেটে ঢালবেন না। লেবেলে দেওয়া নির্দেশনা অনুযায়ী সেগুলো ফেলা উচিত।
ফলের স্টিকার
ফলের গায়ে থাকা ছোট স্টিকারগুলো খুব শক্তভাবে লেগে থাকে। ড্রেনে গেলে এগুলো পানি শোধনাগারের ফিল্টারে আটকে থাকে ও পাইপে বাধা তৈরি করে। স্টিকারগুলো আলাদা করে ডাস্টবিনে ফেলে দেওয়া নিরাপদ।
ফল বা খাবারের শক্ত বিচি
পাইপ কোনোভাবেই ফলের শক্ত বিচি বা হাড়ের মতো শক্ত জিনিস সামলানোর মতো করে তৈরি নয়। এগুলো গারবেজ ডিস্পোজারকেও ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে এবং পাইপের ভেতর মারাত্মক জ্যাম তৈরি করে।
বাড়ির পাইপলাইন সচল রাখতে নিয়মিত পরিষ্কার ও সঠিক ব্যবহারের কোনো বিকল্প নেই। সামান্য সচেতনতা হাজার টাকার ক্ষতি থেকে বাঁচাতে পারে।
সূত্র: ভিএন এক্সপ্রেস

দুজনেরই প্রথম বিদেশভ্রমণ; যার ফলে আমাদের মধ্যে কাজ করছিল একটা আনন্দবোধ ও উত্তেজনা, তা কি অল্প কথায় বোঝানো যাবে? আমাদের ডেস্টিনেশন ছিল ভ্রমণপিয়াসীদের অন্যতম আকর্ষণীয় জায়গায়। এটাকে অনেকে বলে ‘ড্রিম প্লেস টু ভিজিট’। পেটের ভেতর থেকে প্রজাপতি সুড়সুড়ি দেওয়ার অনুভূতিটা নিশ্চয়ই অনেকের হয়? সত্যি কথা, তা আমার
১১ অক্টোবর ২০২২
আমাদের সমাজে প্রচলিত এমন কিছু অভ্যাস আছে, যা সাধারণত নেতিবাচক চোখে দেখা হয় বা এড়িয়ে চলতে বলা হয়। কিন্তু আধুনিক গবেষণা এবং চিকিৎসাবিজ্ঞান প্রমাণ করেছে যে এই অভ্যাসগুলোর সবই ক্ষতিকর নয়; বরং কিছু অভ্যাস সুস্বাস্থ্য, মানসিক শান্তি ও সৃজনশীলতার জন্য অপরিহার্য। এবার জেনে নেওয়া যাক এমন কিছু ‘ভুল’ ধারণা এবং
৩৮ মিনিট আগে
ডিসেম্বরের শুরু থেকে বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান লেগেই থাকে। বিয়ে, বড়দিন, বছর শেষের আয়োজন, বারবিকিউ পার্টিসহ যেকোনো অনুষ্ঠানে পরে যাওয়ার জন্য লাল রঙের পোশাক অনেকের কাছেই সেরা পছন্দ। লাল রং উৎসব, সাহস ও ভালোবাসার প্রতীক। এই রঙের পোশাক পরলে এমনিতেই উজ্জ্বল দেখায়। তাই এই রঙের পোশাকের সঙ্গে মেকআপ এমন...
৪ ঘণ্টা আগে
দাম্পত্য জীবনে সন্তানের পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হলে বেশির ভাগ সময় নজর যায় নারীর দিকে। চিকিৎসাবিজ্ঞানের মতে, সন্তান ধারণের ক্ষেত্রে পুরুষের ভূমিকা সমান গুরুত্বপূর্ণ। সাম্প্রতিক একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বজুড়ে পুরুষদের শুক্রাণুর সংখ্যা কমে আসছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দৈনন্দিন জীবনযাপন, দূষণ, মানসিক...
৮ ঘণ্টা আগেফারিয়া রহমান খান

ডিসেম্বরের শুরু থেকে বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান লেগেই থাকে। বিয়ে, বড়দিন, বছর শেষের আয়োজন, বারবিকিউ পার্টিসহ যেকোনো অনুষ্ঠানে পরে যাওয়ার জন্য লাল রঙের পোশাক অনেকের কাছেই সেরা পছন্দ। লাল রং উৎসব, সাহস ও ভালোবাসার প্রতীক। এই রঙের পোশাক পরলে এমনিতেই উজ্জ্বল দেখায়। তাই এই রঙের পোশাকের সঙ্গে মেকআপ এমন হওয়া জরুরি, যাতে পুরো লুকটা বিগড়ে না যায়।
লাল রঙের পোশাকের সঙ্গে যেভাবে মেকআপ করা যেতে পারে–
লাল পোশাকে ত্বকের খুঁত খুব সহজেই চোখে পড়ে, তাই নিখুঁত বেস তৈরি করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনার ত্বকের রং ফরসা হলে ফাউন্ডেশনের বদলে টিন্টেড ময়েশ্চারাইজারই যথেষ্ট। তা না হলে ভালো ব্র্যান্ডের কালার কারেক্টর ও মানসম্মত ফাউন্ডেশন ব্যবহার করে ত্বকের দাগ ও অন্যান্য খুঁত ঢেকে ফেলুন। শোভন সাহা, কসমেটোলজিস্ট, স্বত্বাধিকারী, শোভন মেকওভার
ন্যুড গ্লো লুক
লাল পোশাক যেহেতু নিজেই উজ্জ্বল ও আকর্ষণীয়, তাই এর সঙ্গে একটি ভারসাম্যপূর্ণ লুকের জন্য খুব হালকা মেকআপই ভালো মানায়। ভারী ফাউন্ডেশনের বদলে টিন্টেড ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করলে ত্বকের সতেজ ও প্রাকৃতিক আভা বজায় থাকে। গালে হালকা ব্রোঞ্জিং পাউডার ও চোখে ন্যাচারাল আইশ্যাডো ও মাসকারা ব্যবহার করুন। লুকটি সম্পূর্ণ করতে ঠোঁটে দিন শিয়ার লিপজেল বা ন্যুড শেডের লিপস্টিক।
ক্ল্যাসিক রেড-অন-রেড
লাল পোশাকের সঙ্গে একই শেডের লাল লিপস্টিক একটি ক্ল্যাসিক কম্বিনেশন। দিনের সাজে হালকা মেকআপ, ব্রাউন পেনসিল লাইনার ও রোজি রেড ব্লাসন ব্যবহার করুন। রাতের সাজে ফাউন্ডেশন বেস, উইংড আইলাইনার ও ফলস ল্যাশ ব্যবহার করে লুকে আনুন আভিজাত্য।
ওল্ড-স্কুল-গ্ল্যামার লুক
এই লুকের জন্য কন্সিলার ও ফাউন্ডেশন দিয়ে বেস তৈরি করুন। চোখের মেকআপে ন্যাচারাল টোনের আইশ্যাডো দিন, উইং-টিপড লাইনার তৈরি করে মাসকারা ব্যবহার করুন। ঠোঁটে দিন বোল্ড লাল লিপস্টিক বা শিয়ার রেড লিপ গ্লস।
স্মোকি আই
রাতের মেকআপে চোখকে প্রাধান্য দিতে মুখ ও ঠোঁটের সাজে ব্যবহার করুন ন্যুড শেড। বিবি ক্রিম বা টিন্টেড ময়েশ্চারাইজার দিয়ে বেস তৈরি করুন। চোখের সাজে কন্সিলার, পেনসিল ও জেল লাইনারের পরে পাউডার শ্যাডো দিয়ে মেটালিক-স্মোকি একটা লুক তৈরি করুন।

ফান অ্যান্ড ফ্লার্টি লুক
ক্যাজুয়াল ও ফান লুক পেতে বেস হিসেবে টিন্টেড ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন। চোখে ন্যুড শ্যাডো ও পেনসিল লাইনার দিন। চোখের মেকআপ ন্যূনতম রেখে ভল্যুমিনাস আইল্যাশ ব্যবহার করুন। গালে হালকা ব্লাসন দিন, তবে হাইলাইট করবেন না। ঠোঁটের জন্য টিন্টেড লিপ গ্লস বা শিয়ার পিংক লিপস্টিকই যথেষ্ট।
ঠোঁট ও নখ
খুব গ্ল্যামারাস লুক না চাইলে বা লুকে ভারসাম্য রাখতে ঠোঁটে সব সময় ন্যুড শেডের লিপস্টিক বা টিন্টেড লিপ গ্লস ব্যবহার করাই ভালো। সাজের সঙ্গে ভারসাম্য বজায় রাখতে নখের সাজে লাল রঙের নেইল পলিশ এড়িয়ে ন্যুড শেড বা ফ্রেঞ্চ মেনিকিউর বেছে নিতে পারেন, যা একটি ক্ল্যাসিক ও মার্জিত লুক দেবে।
চুল
লাল পোশাকের সঙ্গে চুলের সাজ একেবারেই সাধারণ রাখুন। খুব বেশি জাঁকজমকপূর্ণ খোঁপা বা টাইট কার্ল না করে হালকা কার্ল করা চুল বা খোলা চুল বেছে নিতে পারেন, যা আপনার মুখকে সুন্দরভাবে ফ্রেম করবে। খেয়াল রাখবেন, চুলের সাজ যেন আপনার সাজের মূল আকর্ষণ না হয় বা আপনার মুখমণ্ডল থেকে মনোযোগ সরিয়ে না দেয়। সাধারণ চুলের স্টাইলই আপনার পুরো সাজকে মার্জিত করে মেকআপকে হাইলাইট করবে।
চোখ বা ঠোঁট; যেকোনো একটিকে ফোকাল পয়েন্টে রাখুন
আকর্ষণীয় দেখাতে খুব ভারী মেকআপ বা গাঢ় রং ব্যবহার করা থেকে অবশ্যই বিরত থাকুন। সাধারণ নিয়ম হিসেবে মুখের সব ফোকাল পয়েন্ট না বেছে, শুধু একটি অংশ হাইলাইট করার কৌশল বেছে নিন। এই একটি ফোকাল পয়েন্ট হতে পারে আপনার চোখ অথবা ঠোঁট; কিন্তু কখনই দুটি একসঙ্গে নয়। এভাবে মেকআপ করলে সহজেই একটি ক্ল্যাসিক ও মার্জিত লুক পাবেন।

ডিসেম্বরের শুরু থেকে বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান লেগেই থাকে। বিয়ে, বড়দিন, বছর শেষের আয়োজন, বারবিকিউ পার্টিসহ যেকোনো অনুষ্ঠানে পরে যাওয়ার জন্য লাল রঙের পোশাক অনেকের কাছেই সেরা পছন্দ। লাল রং উৎসব, সাহস ও ভালোবাসার প্রতীক। এই রঙের পোশাক পরলে এমনিতেই উজ্জ্বল দেখায়। তাই এই রঙের পোশাকের সঙ্গে মেকআপ এমন হওয়া জরুরি, যাতে পুরো লুকটা বিগড়ে না যায়।
লাল রঙের পোশাকের সঙ্গে যেভাবে মেকআপ করা যেতে পারে–
লাল পোশাকে ত্বকের খুঁত খুব সহজেই চোখে পড়ে, তাই নিখুঁত বেস তৈরি করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনার ত্বকের রং ফরসা হলে ফাউন্ডেশনের বদলে টিন্টেড ময়েশ্চারাইজারই যথেষ্ট। তা না হলে ভালো ব্র্যান্ডের কালার কারেক্টর ও মানসম্মত ফাউন্ডেশন ব্যবহার করে ত্বকের দাগ ও অন্যান্য খুঁত ঢেকে ফেলুন। শোভন সাহা, কসমেটোলজিস্ট, স্বত্বাধিকারী, শোভন মেকওভার
ন্যুড গ্লো লুক
লাল পোশাক যেহেতু নিজেই উজ্জ্বল ও আকর্ষণীয়, তাই এর সঙ্গে একটি ভারসাম্যপূর্ণ লুকের জন্য খুব হালকা মেকআপই ভালো মানায়। ভারী ফাউন্ডেশনের বদলে টিন্টেড ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করলে ত্বকের সতেজ ও প্রাকৃতিক আভা বজায় থাকে। গালে হালকা ব্রোঞ্জিং পাউডার ও চোখে ন্যাচারাল আইশ্যাডো ও মাসকারা ব্যবহার করুন। লুকটি সম্পূর্ণ করতে ঠোঁটে দিন শিয়ার লিপজেল বা ন্যুড শেডের লিপস্টিক।
ক্ল্যাসিক রেড-অন-রেড
লাল পোশাকের সঙ্গে একই শেডের লাল লিপস্টিক একটি ক্ল্যাসিক কম্বিনেশন। দিনের সাজে হালকা মেকআপ, ব্রাউন পেনসিল লাইনার ও রোজি রেড ব্লাসন ব্যবহার করুন। রাতের সাজে ফাউন্ডেশন বেস, উইংড আইলাইনার ও ফলস ল্যাশ ব্যবহার করে লুকে আনুন আভিজাত্য।
ওল্ড-স্কুল-গ্ল্যামার লুক
এই লুকের জন্য কন্সিলার ও ফাউন্ডেশন দিয়ে বেস তৈরি করুন। চোখের মেকআপে ন্যাচারাল টোনের আইশ্যাডো দিন, উইং-টিপড লাইনার তৈরি করে মাসকারা ব্যবহার করুন। ঠোঁটে দিন বোল্ড লাল লিপস্টিক বা শিয়ার রেড লিপ গ্লস।
স্মোকি আই
রাতের মেকআপে চোখকে প্রাধান্য দিতে মুখ ও ঠোঁটের সাজে ব্যবহার করুন ন্যুড শেড। বিবি ক্রিম বা টিন্টেড ময়েশ্চারাইজার দিয়ে বেস তৈরি করুন। চোখের সাজে কন্সিলার, পেনসিল ও জেল লাইনারের পরে পাউডার শ্যাডো দিয়ে মেটালিক-স্মোকি একটা লুক তৈরি করুন।

ফান অ্যান্ড ফ্লার্টি লুক
ক্যাজুয়াল ও ফান লুক পেতে বেস হিসেবে টিন্টেড ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন। চোখে ন্যুড শ্যাডো ও পেনসিল লাইনার দিন। চোখের মেকআপ ন্যূনতম রেখে ভল্যুমিনাস আইল্যাশ ব্যবহার করুন। গালে হালকা ব্লাসন দিন, তবে হাইলাইট করবেন না। ঠোঁটের জন্য টিন্টেড লিপ গ্লস বা শিয়ার পিংক লিপস্টিকই যথেষ্ট।
ঠোঁট ও নখ
খুব গ্ল্যামারাস লুক না চাইলে বা লুকে ভারসাম্য রাখতে ঠোঁটে সব সময় ন্যুড শেডের লিপস্টিক বা টিন্টেড লিপ গ্লস ব্যবহার করাই ভালো। সাজের সঙ্গে ভারসাম্য বজায় রাখতে নখের সাজে লাল রঙের নেইল পলিশ এড়িয়ে ন্যুড শেড বা ফ্রেঞ্চ মেনিকিউর বেছে নিতে পারেন, যা একটি ক্ল্যাসিক ও মার্জিত লুক দেবে।
চুল
লাল পোশাকের সঙ্গে চুলের সাজ একেবারেই সাধারণ রাখুন। খুব বেশি জাঁকজমকপূর্ণ খোঁপা বা টাইট কার্ল না করে হালকা কার্ল করা চুল বা খোলা চুল বেছে নিতে পারেন, যা আপনার মুখকে সুন্দরভাবে ফ্রেম করবে। খেয়াল রাখবেন, চুলের সাজ যেন আপনার সাজের মূল আকর্ষণ না হয় বা আপনার মুখমণ্ডল থেকে মনোযোগ সরিয়ে না দেয়। সাধারণ চুলের স্টাইলই আপনার পুরো সাজকে মার্জিত করে মেকআপকে হাইলাইট করবে।
চোখ বা ঠোঁট; যেকোনো একটিকে ফোকাল পয়েন্টে রাখুন
আকর্ষণীয় দেখাতে খুব ভারী মেকআপ বা গাঢ় রং ব্যবহার করা থেকে অবশ্যই বিরত থাকুন। সাধারণ নিয়ম হিসেবে মুখের সব ফোকাল পয়েন্ট না বেছে, শুধু একটি অংশ হাইলাইট করার কৌশল বেছে নিন। এই একটি ফোকাল পয়েন্ট হতে পারে আপনার চোখ অথবা ঠোঁট; কিন্তু কখনই দুটি একসঙ্গে নয়। এভাবে মেকআপ করলে সহজেই একটি ক্ল্যাসিক ও মার্জিত লুক পাবেন।

দুজনেরই প্রথম বিদেশভ্রমণ; যার ফলে আমাদের মধ্যে কাজ করছিল একটা আনন্দবোধ ও উত্তেজনা, তা কি অল্প কথায় বোঝানো যাবে? আমাদের ডেস্টিনেশন ছিল ভ্রমণপিয়াসীদের অন্যতম আকর্ষণীয় জায়গায়। এটাকে অনেকে বলে ‘ড্রিম প্লেস টু ভিজিট’। পেটের ভেতর থেকে প্রজাপতি সুড়সুড়ি দেওয়ার অনুভূতিটা নিশ্চয়ই অনেকের হয়? সত্যি কথা, তা আমার
১১ অক্টোবর ২০২২
আমাদের সমাজে প্রচলিত এমন কিছু অভ্যাস আছে, যা সাধারণত নেতিবাচক চোখে দেখা হয় বা এড়িয়ে চলতে বলা হয়। কিন্তু আধুনিক গবেষণা এবং চিকিৎসাবিজ্ঞান প্রমাণ করেছে যে এই অভ্যাসগুলোর সবই ক্ষতিকর নয়; বরং কিছু অভ্যাস সুস্বাস্থ্য, মানসিক শান্তি ও সৃজনশীলতার জন্য অপরিহার্য। এবার জেনে নেওয়া যাক এমন কিছু ‘ভুল’ ধারণা এবং
৩৮ মিনিট আগে
বাড়ির ভেতরের রান্নাঘর, বেসিন বা বাথরুমে পাইপলাইনে আমরা অনেক কিছুই ফেলি। ঝামেলা এড়ানোর জন্য মূলত এ কাজ করা হয়। কিন্তু এই অবহেলা থেকে পাইপ লিক বা ব্লক হলে মেরামতের খরচ যেমন বেশি, তেমনি ঝামেলাও দীর্ঘস্থায়ী। তাই ড্রেন বা সিংক আবর্জনা ফেলার জায়গা হিসেবে ব্যবহার করা উচিত নয়। কিছু জিনিস যদি নিয়মিত পানির
৩ ঘণ্টা আগে
দাম্পত্য জীবনে সন্তানের পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হলে বেশির ভাগ সময় নজর যায় নারীর দিকে। চিকিৎসাবিজ্ঞানের মতে, সন্তান ধারণের ক্ষেত্রে পুরুষের ভূমিকা সমান গুরুত্বপূর্ণ। সাম্প্রতিক একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বজুড়ে পুরুষদের শুক্রাণুর সংখ্যা কমে আসছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দৈনন্দিন জীবনযাপন, দূষণ, মানসিক...
৮ ঘণ্টা আগেফিচার ডেস্ক, ঢাকা

দাম্পত্য জীবনে সন্তানের পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হলে বেশির ভাগ সময় নজর যায় নারীর দিকে। অথচ চিকিৎসাবিজ্ঞানের মতে, সন্তান ধারণের ক্ষেত্রে পুরুষের ভূমিকা সমান গুরুত্বপূর্ণ। সাম্প্রতিক একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বজুড়ে পুরুষদের শুক্রাণুর সংখ্যা কমে আসছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দৈনন্দিন জীবনযাপন, দূষণ, মানসিক চাপ ও অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস এ সমস্যার বড় কারণ।
ভারতের ইয়েলো ফার্টিলিটির প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. ঈশা নান্দাল জানিয়েছেন, পুরুষের খাবার, ঘুম, কাজের ধরন, শরীরচর্চা ও বিশ্রামের অভ্যাস সরাসরি প্রভাব ফেলে হরমোনের ভারসাম্য ও শুক্রাণু উৎপাদনে। তাঁর মতে, অনেক সময় ছোট ভুলগুলোই শুক্রাণুর গুণগত মান নষ্ট করে দেয়। সুখবর হচ্ছে, এ ভুলগুলোর বেশির ভাগই পরিবর্তনযোগ্য।
প্রজনন বিশেষজ্ঞদের মতে, ৭টি অভ্যাস পুরুষের উর্বরতা কমিয়ে দিতে পারে।
দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপ
মানসিক চাপ বা স্ট্রেস শরীরে কর্টিসল হরমোনের পরিমাণ বাড়ায়। এই হরমোনটি টেস্টোস্টেরন কমিয়ে দেয় এবং শুক্রাণু উৎপাদন ব্যাহত করে। যেহেতু একটি শুক্রাণু তৈরি হতে ৭০-৯০ দিন সময় লাগে, তাই কয়েক মাসের কাজের চাপ বা মানসিক অস্থিরতাও এটি তৈরির প্রক্রিয়া ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। এ থেকে রক্ষা পেতে বিশেষজ্ঞরা নিয়মিত ধ্যান, গভীর শ্বাসপ্রশ্বাস, পর্যাপ্ত ঘুম এবং শান্ত পরিবেশে সময় কাটানোর পরামর্শ দেন।
অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস
অ্যান্টি-অক্সিডেন্টসমৃদ্ধ খাবার শরীরের কোষের সুরক্ষা দেয় এবং পুরুষের প্রজননক্ষমতা উন্নত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বিশেষ করে বাদাম, আঙুর, শস্যদানা, সবুজ শাকসবজি, বিভিন্ন ধরনের বীজ ও ফল শুক্রাণুর গুণগত মান, ঘনত্ব ও গতিশীলতা বাড়াতে সাহায্য করে। এসব খাবারে থাকা ভিটামিন সি, ই, জিংক, সেলেনিয়াম এবং পলিফেনল শরীরের ফ্রি র্যাডিক্যাল কমিয়ে শুক্রাণুকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে। অন্যদিকে অতিরিক্ত কফি খাওয়া, নিয়মিত জাংকফুড, মিষ্টি নাশতা বা অত্যধিক চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়া শরীরে প্রদাহ বাড়ায় এবং হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে। এসব খাবার শুক্রাণুর গতিশীলতা কমিয়ে দেয়, শক্তি কেড়ে নেয় এবং কখনো কখনো শুক্রাণুর সংখ্যা কমিয়ে দিতে পারে।
অতিরিক্ত তাপ ও অতিরিক্ত ব্যায়াম
শুক্রাণু তাপ সংবেদনশীল। কোলে ল্যাপটপ রাখা, খুব আঁটসাঁট পোশাক, গাড়ির গরম সিট, স্টিম বাথ টেস্টিকলের তাপমাত্রা বাড়িয়ে শুক্রাণু উৎপাদনে বাধা দেয়। আবার হালকা থেকে মাঝারি মাত্রার ব্যায়াম উপকারী হলেও অতিরিক্ত ব্যায়াম শরীরের স্বাভাবিক টেস্টোস্টেরন কমিয়ে দেয়, ফলে শুক্রাণু উৎপাদন বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
ধূমপান, অ্যালকোহল ও নেশাজাতীয় দ্রব্য
ডা. নান্দাল জানান, তামাক, অ্যালকোহল ও মাদকদ্রব্য শুক্রাণুর আকার, সংখ্যা ও গতিশীলতা নষ্ট করে। এমনকি মাঝেমধ্যে ব্যবহারেরও নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব অভ্যাস কমানো বা সম্পূর্ণ বাদ দিলে কয়েক সপ্তাহ বা কয়েক মাসের মধ্যেই শুক্রাণু তৈরির অবস্থা উন্নত হয়।
স্বাস্থ্য সমস্যা উপেক্ষা করা
ভ্যারিকোসিল, ডায়াবেটিস, স্থূলতা, দীর্ঘস্থায়ী সংক্রমণ ও থাইরয়েড সমস্যা থাকলে অনেক সময় লক্ষণ দেখা দেওয়া ছাড়াই পুরুষের শুক্রাণু কমে যাওয়ার সমস্যা দেখা দেয়। অনেক পুরুষ প্রকৃতিগত কারণেই এসব শারীরিক সমস্যাকে ছোট মনে করে বা দেরিতে চিকিৎসা নেয়। কিন্তু এসব সমস্যার শুরুতে পরীক্ষা, দ্রুত নির্ণয় ও চিকিৎসা সন্তান গ্রহণের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়।
পরিবেশগত দূষণ ও রাসায়নিকের প্রভাব
কীটনাশক, ভারী ধাতু, প্লাস্টিকের রাসায়নিক, বায়ুদূষণ ও শিল্পকারখানার রাসায়নিক শুক্রাণুর গুণগত মান নষ্ট করে। যদিও পুরোপুরি এড়ানো যায় না, তবে বিপিএ মুক্ত বোতল, জৈব খাবার বা কম রাসায়নিকযুক্ত বিকল্প ব্যবহার করলে এ ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়।
আগে থেকেই বীর্য পরীক্ষা না করানো
আগে বীর্য পরীক্ষা সাধারণত শেষ ধাপ হিসেবে ধরা হতো। এখন চিকিৎসকেরা পরিবার গঠনের পরিকল্পনা থাকলে পুরুষদের আগেই পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দেন। সহজ ও ব্যথামুক্ত এই পরীক্ষায় পুরুষের প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায় এবং সমস্যা থাকলে দ্রুত শনাক্ত করা সম্ভব হয়।
সুষম খাদ্য, পর্যাপ্ত ঘুম, মানসিক চাপ কমানো, ধূমপান ও অ্যালকোহল ত্যাগ, পরিবেশগত বিষাক্ততা কমানো এবং সময়মতো স্বাস্থ্য পরীক্ষা এসবই পুরুষদের উর্বরতা ভালো রাখতে বড় ভূমিকা রাখে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সন্তান নেওয়ার আগে পুরুষের স্বাস্থ্যকে সমান গুরুত্ব দিলে দীর্ঘমেয়াদি প্রজনন স্বাস্থ্য আরও শক্তিশালী হয়।
সূত্র: হেলথশট

দাম্পত্য জীবনে সন্তানের পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হলে বেশির ভাগ সময় নজর যায় নারীর দিকে। অথচ চিকিৎসাবিজ্ঞানের মতে, সন্তান ধারণের ক্ষেত্রে পুরুষের ভূমিকা সমান গুরুত্বপূর্ণ। সাম্প্রতিক একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বজুড়ে পুরুষদের শুক্রাণুর সংখ্যা কমে আসছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দৈনন্দিন জীবনযাপন, দূষণ, মানসিক চাপ ও অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস এ সমস্যার বড় কারণ।
ভারতের ইয়েলো ফার্টিলিটির প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. ঈশা নান্দাল জানিয়েছেন, পুরুষের খাবার, ঘুম, কাজের ধরন, শরীরচর্চা ও বিশ্রামের অভ্যাস সরাসরি প্রভাব ফেলে হরমোনের ভারসাম্য ও শুক্রাণু উৎপাদনে। তাঁর মতে, অনেক সময় ছোট ভুলগুলোই শুক্রাণুর গুণগত মান নষ্ট করে দেয়। সুখবর হচ্ছে, এ ভুলগুলোর বেশির ভাগই পরিবর্তনযোগ্য।
প্রজনন বিশেষজ্ঞদের মতে, ৭টি অভ্যাস পুরুষের উর্বরতা কমিয়ে দিতে পারে।
দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপ
মানসিক চাপ বা স্ট্রেস শরীরে কর্টিসল হরমোনের পরিমাণ বাড়ায়। এই হরমোনটি টেস্টোস্টেরন কমিয়ে দেয় এবং শুক্রাণু উৎপাদন ব্যাহত করে। যেহেতু একটি শুক্রাণু তৈরি হতে ৭০-৯০ দিন সময় লাগে, তাই কয়েক মাসের কাজের চাপ বা মানসিক অস্থিরতাও এটি তৈরির প্রক্রিয়া ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। এ থেকে রক্ষা পেতে বিশেষজ্ঞরা নিয়মিত ধ্যান, গভীর শ্বাসপ্রশ্বাস, পর্যাপ্ত ঘুম এবং শান্ত পরিবেশে সময় কাটানোর পরামর্শ দেন।
অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস
অ্যান্টি-অক্সিডেন্টসমৃদ্ধ খাবার শরীরের কোষের সুরক্ষা দেয় এবং পুরুষের প্রজননক্ষমতা উন্নত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বিশেষ করে বাদাম, আঙুর, শস্যদানা, সবুজ শাকসবজি, বিভিন্ন ধরনের বীজ ও ফল শুক্রাণুর গুণগত মান, ঘনত্ব ও গতিশীলতা বাড়াতে সাহায্য করে। এসব খাবারে থাকা ভিটামিন সি, ই, জিংক, সেলেনিয়াম এবং পলিফেনল শরীরের ফ্রি র্যাডিক্যাল কমিয়ে শুক্রাণুকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে। অন্যদিকে অতিরিক্ত কফি খাওয়া, নিয়মিত জাংকফুড, মিষ্টি নাশতা বা অত্যধিক চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়া শরীরে প্রদাহ বাড়ায় এবং হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে। এসব খাবার শুক্রাণুর গতিশীলতা কমিয়ে দেয়, শক্তি কেড়ে নেয় এবং কখনো কখনো শুক্রাণুর সংখ্যা কমিয়ে দিতে পারে।
অতিরিক্ত তাপ ও অতিরিক্ত ব্যায়াম
শুক্রাণু তাপ সংবেদনশীল। কোলে ল্যাপটপ রাখা, খুব আঁটসাঁট পোশাক, গাড়ির গরম সিট, স্টিম বাথ টেস্টিকলের তাপমাত্রা বাড়িয়ে শুক্রাণু উৎপাদনে বাধা দেয়। আবার হালকা থেকে মাঝারি মাত্রার ব্যায়াম উপকারী হলেও অতিরিক্ত ব্যায়াম শরীরের স্বাভাবিক টেস্টোস্টেরন কমিয়ে দেয়, ফলে শুক্রাণু উৎপাদন বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
ধূমপান, অ্যালকোহল ও নেশাজাতীয় দ্রব্য
ডা. নান্দাল জানান, তামাক, অ্যালকোহল ও মাদকদ্রব্য শুক্রাণুর আকার, সংখ্যা ও গতিশীলতা নষ্ট করে। এমনকি মাঝেমধ্যে ব্যবহারেরও নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব অভ্যাস কমানো বা সম্পূর্ণ বাদ দিলে কয়েক সপ্তাহ বা কয়েক মাসের মধ্যেই শুক্রাণু তৈরির অবস্থা উন্নত হয়।
স্বাস্থ্য সমস্যা উপেক্ষা করা
ভ্যারিকোসিল, ডায়াবেটিস, স্থূলতা, দীর্ঘস্থায়ী সংক্রমণ ও থাইরয়েড সমস্যা থাকলে অনেক সময় লক্ষণ দেখা দেওয়া ছাড়াই পুরুষের শুক্রাণু কমে যাওয়ার সমস্যা দেখা দেয়। অনেক পুরুষ প্রকৃতিগত কারণেই এসব শারীরিক সমস্যাকে ছোট মনে করে বা দেরিতে চিকিৎসা নেয়। কিন্তু এসব সমস্যার শুরুতে পরীক্ষা, দ্রুত নির্ণয় ও চিকিৎসা সন্তান গ্রহণের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়।
পরিবেশগত দূষণ ও রাসায়নিকের প্রভাব
কীটনাশক, ভারী ধাতু, প্লাস্টিকের রাসায়নিক, বায়ুদূষণ ও শিল্পকারখানার রাসায়নিক শুক্রাণুর গুণগত মান নষ্ট করে। যদিও পুরোপুরি এড়ানো যায় না, তবে বিপিএ মুক্ত বোতল, জৈব খাবার বা কম রাসায়নিকযুক্ত বিকল্প ব্যবহার করলে এ ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়।
আগে থেকেই বীর্য পরীক্ষা না করানো
আগে বীর্য পরীক্ষা সাধারণত শেষ ধাপ হিসেবে ধরা হতো। এখন চিকিৎসকেরা পরিবার গঠনের পরিকল্পনা থাকলে পুরুষদের আগেই পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দেন। সহজ ও ব্যথামুক্ত এই পরীক্ষায় পুরুষের প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায় এবং সমস্যা থাকলে দ্রুত শনাক্ত করা সম্ভব হয়।
সুষম খাদ্য, পর্যাপ্ত ঘুম, মানসিক চাপ কমানো, ধূমপান ও অ্যালকোহল ত্যাগ, পরিবেশগত বিষাক্ততা কমানো এবং সময়মতো স্বাস্থ্য পরীক্ষা এসবই পুরুষদের উর্বরতা ভালো রাখতে বড় ভূমিকা রাখে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সন্তান নেওয়ার আগে পুরুষের স্বাস্থ্যকে সমান গুরুত্ব দিলে দীর্ঘমেয়াদি প্রজনন স্বাস্থ্য আরও শক্তিশালী হয়।
সূত্র: হেলথশট

দুজনেরই প্রথম বিদেশভ্রমণ; যার ফলে আমাদের মধ্যে কাজ করছিল একটা আনন্দবোধ ও উত্তেজনা, তা কি অল্প কথায় বোঝানো যাবে? আমাদের ডেস্টিনেশন ছিল ভ্রমণপিয়াসীদের অন্যতম আকর্ষণীয় জায়গায়। এটাকে অনেকে বলে ‘ড্রিম প্লেস টু ভিজিট’। পেটের ভেতর থেকে প্রজাপতি সুড়সুড়ি দেওয়ার অনুভূতিটা নিশ্চয়ই অনেকের হয়? সত্যি কথা, তা আমার
১১ অক্টোবর ২০২২
আমাদের সমাজে প্রচলিত এমন কিছু অভ্যাস আছে, যা সাধারণত নেতিবাচক চোখে দেখা হয় বা এড়িয়ে চলতে বলা হয়। কিন্তু আধুনিক গবেষণা এবং চিকিৎসাবিজ্ঞান প্রমাণ করেছে যে এই অভ্যাসগুলোর সবই ক্ষতিকর নয়; বরং কিছু অভ্যাস সুস্বাস্থ্য, মানসিক শান্তি ও সৃজনশীলতার জন্য অপরিহার্য। এবার জেনে নেওয়া যাক এমন কিছু ‘ভুল’ ধারণা এবং
৩৮ মিনিট আগে
বাড়ির ভেতরের রান্নাঘর, বেসিন বা বাথরুমে পাইপলাইনে আমরা অনেক কিছুই ফেলি। ঝামেলা এড়ানোর জন্য মূলত এ কাজ করা হয়। কিন্তু এই অবহেলা থেকে পাইপ লিক বা ব্লক হলে মেরামতের খরচ যেমন বেশি, তেমনি ঝামেলাও দীর্ঘস্থায়ী। তাই ড্রেন বা সিংক আবর্জনা ফেলার জায়গা হিসেবে ব্যবহার করা উচিত নয়। কিছু জিনিস যদি নিয়মিত পানির
৩ ঘণ্টা আগে
ডিসেম্বরের শুরু থেকে বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান লেগেই থাকে। বিয়ে, বড়দিন, বছর শেষের আয়োজন, বারবিকিউ পার্টিসহ যেকোনো অনুষ্ঠানে পরে যাওয়ার জন্য লাল রঙের পোশাক অনেকের কাছেই সেরা পছন্দ। লাল রং উৎসব, সাহস ও ভালোবাসার প্রতীক। এই রঙের পোশাক পরলে এমনিতেই উজ্জ্বল দেখায়। তাই এই রঙের পোশাকের সঙ্গে মেকআপ এমন...
৪ ঘণ্টা আগে