জাহীদ রেজা নূর

ভাষা ছাড়া কি মানুষ হয়? মানুষের সবচেয়ে জটিল সৃষ্টি হলো ভাষা। কোত্থেকে, কীভাবে এর জন্ম, তা নিয়ে কত গবেষণাই তো হলো। কত রকম মতবাদে ছেয়ে গেল বিজ্ঞান, পৃথিবী। কিন্তু সত্যিই কি পাওয়া গেল উত্তর?
আজ একটু আড্ডার ছলে ভাষা বিষয়ে কিছু কথা বলি। বাক্যগঠন, ধ্বনি উচ্চারণে নানা ধরনের বৈচিত্র্য আছে প্রতিটি ভাষায়। সেই সঙ্গে ভাষার সঙ্গে মিশে থাকে অতীত থেকে উঠে আসা সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার, ঐতিহ্য। কেউ যদি অন্য কারও ভাষা অনুবাদ করতে চায়, তাহলে সেই সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকারটা বুঝতে হবে। না হলে সে অনুবাদ হয়ে উঠবে কাটখোট্টা শব্দের কফিন। সংস্কৃতি না জানলে ভাষা শিক্ষা অপূর্ণ থেকে যায়।
কয়েকটি বিষয়কে আমরা এখানে আকর্ষণীয় করে তুলতে পারি। প্রথমেই জানার চেষ্টা করি, পৃথিবীর সবচেয়ে জটিল ভাষা হিসেবে যদি বেছে নিতে বলা হয়, তাহলে কোন ভাষাগুলোকে বেছে নিতে হবে। মানে, কোন ভাষাগুলো আসলে খুব জটিল?
হ্যাঁ, সে আলোচনার আগে আমাদের স্বীকার করে নিতে হবে, এখন পৃথিবীতে মোট ভাষার সংখ্যা সাত হাজারের এদিক-ওদিক। তবে বিশাল পৃথিবীর বেশির ভাগ মানুষ ভাবের আদানপ্রদান করে মূলত ২৩টি ভাষায়। আপনার ভাষা যে ভাষাগোষ্ঠীর অন্তর্গত, তার ওপর নির্ভর করবে কোন ভাষা আপনার কাছে সহজ বা জটিল লাগবে। আপনার ভাষাগোষ্ঠী কিংবা আপনার কাছাকাছি কোনো ভাষাগোষ্ঠীর ভাষা আপনার কাছে সহজ লাগবে। কিন্তু দূরের ভাষাগোষ্ঠীর ভাষাকে আপনার মনে হতে পারে জটিল। তাই সবচেয়ে কঠিন ভাষা নির্ধারণ করা সহজ কাজ নয়।
তবে বিজ্ঞানীরা ভেবে দেখেছেন, নিচের ছয়টি ভাষা শিখতে জান বেরিয়ে যায়। এদের খুব জটিল ভাষা হিসেবে নাম আছে। এরা হলো বাস্ক, এসকিমো, নাবাখো, চিপ্পেভা, তাবাসারান, চীনা।
কেন এদের জটিল বা কঠিন ভাষা বলা হয়, তা জানতে হলে একটু বইপত্র নিয়ে বসতে হবে আপনাকে। সবকিছুর সহজ সমাধান নেই। একটু তো কষ্ট করা দরকার।
দুই.
ভাষার মরে যাওয়া নিয়ে কথা না বলে কী করে জন্ম হলো ভাষার, তা নিয়ে কথা বলা যাক। কেউ যদি বলে, আরে, ভাষার সৃষ্টি তো হয়েছে এভাবে—তাহলে বুঝবেন গুল মারছে সে। এখনো ভাষাবিজ্ঞানীরা একেবারে নিখুঁতভাবে বলতে পারেননি, কী করে মানুষ কথা বলা শিখল; কী করে জন্ম হলো ভাষার।
তবে, কিছু কিছু অনুমান তো করেছেন বিজ্ঞানীরা। না হলে তাঁরা কী করে টিকে থাকবেন?
একসময় বলা হতো, পশুর ডাকের অনুকরণ করতে করতেই মানুষ তার ভাষা রপ্ত করেছে। ‘বৌ-ঔ তত্ত্ব’ নামে তা বিজ্ঞানী মহলে পরিচিত। বিজ্ঞানীরা বলেন, আগের কালে মানুষ কিছু আওয়াজ করতে শিখেছে পশুদের আদলে। নানা রকম আওয়াজ করে তারা পশুদের তাড়িয়ে দেওয়ার পথ খুঁজত। নানা রকম আওয়াজ করতে করতেই এক সময় একেকটা আওয়াজের একেকটা মানে দাঁড়িয়ে গেল। তারপর কথা বলতে শিখে গেল মানুষ।
কিন্তু এই তত্ত্ব অনুসরণ করতে গেলে বেশ কিছু ফাঁকফোকর বেরিয়ে আসবে। কত রকম ধ্বনি নিয়ে নিজের মনের ভাব প্রকাশ করে মানুষ। শুধু পশুর ডাক থেকে কি সে রকম শব্দ আবিষ্কার করা সম্ভব?
‘পুঃ পুঃ তত্ত্ব’ নামে আরেকটি তত্ত্ব নিয়েও মাথা ঘামিয়েছে মানুষ। এটা হচ্ছে যেকোনো ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় মানুষ যখন ‘আঃ’ ‘উঃ’ ইত্যাদি উচ্চারণ করে, সেগুলোই পরে পরিবর্তিত হয়ে সৃষ্টি করেছে ভাষার।
বিজ্ঞানীরা এ রকম একটা তত্ত্ব দাঁড় করিয়েছেন, ভালো কথা, কিন্তু আদতে কি এই উচ্ছ্বাস-মার্কা ধ্বনির মাধ্যমে ভাষার সৃষ্টি হতে পারে?
না হে; মন সায় দিচ্ছে না!
তবে কি ‘ডিং ডং তত্ত্ব’-কে আলিঙ্গন করব? এই তত্ত্ব বলছে, ধ্বনি আর অর্থের মধ্যে সম্পর্ক আছে। কোনো ঘটনা ঘটতে দেখলে আদিম মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে সাড়া দিত। এই সাড়া দেওয়ার সহজাত প্রবণতা থেকেই ধীরে ধীরে জন্ম নিয়েছে ভাষা।
‘ইয়ো হে হে’ বলে রয়েছে আরেকটি তত্ত্ব। শ্রমিকেরা যখন খুব কঠিন কোনো কাজ করে, তখন সবাই মিলে ছন্দোবদ্ধ কোনো আওয়াজ করে, সেই আওয়াজ থেকেই সৃষ্টি হয়েছে ভাষার। ওই যে ‘হেই সামাল ধান হো/কাস্তেতে দাও শাণহো/জান কবুল আর মান কবুল/আর দেব না আর দেব না রক্তে বোনা ধান মোদের প্রাণ হো।’ এর পর যে ‘হেই সামাল, হেই সামাল’ বলা হয়, তাতে এ রকম একটা সুরের সৃষ্টি হয়। বাড়ির পাইলিং করার সময়ও কেমন সুরে শ্রমিকেরা গান ধরেন, লক্ষ্য করেছেন? সেগুলো থেকেই ভাষার সৃষ্টি।
তবে তা নিয়েও রয়েছে সন্দেহ।
‘দেহভঙ্গির তত্ত্ব’ হচ্ছে পরের তত্ত্বটি। আমেরিকার মূল অধিবাসী, যাদের রেড ইন্ডিয়ান নামে এখন বলে মানুষ, তারা দেহভঙ্গি বা জেশ্চারের মাধ্যমে কথা বলত। সাংকেতিক ভাষায় হতো কথোপকথন। কিন্তু সেটা যে ভাষার উৎপত্তির রহস্য উন্মোচন করে দিচ্ছে, এটা মেনে নিতে কষ্ট হয়।
‘লা লা তত্ত্ব’টিও দারুণ। মানুষের প্রেম, ভালোবাসা, আনন্দানুভূতি থেকে নাকি সৃষ্টি হয়েছে ভাষার! লা লা লা লা লা! আরে ধুর! এটাও কি মেনে নেওয়া যায়? কোনো চিৎকার, সুরেলা আবেগ প্রকাশ কিংবা ভাবোচ্ছ্বাস থেকে কি ভাষার সৃষ্টি হতে পারে?
এ রকম নানা ধরনের তত্ত্ব ছিল আগে। হালে এর সঙ্গে আরও কিছু যুক্ত হয়েছে।
এই তত্ত্ব অনুসারে মানব জাতির জৈব ইতিহাস, আর সাংস্কৃতিক ইতিহাসের গভীরে ঢুঁ মারলে ভাষারহস্যের নাগাল পাওয়া যেতে পারে। প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণায় আমরা দেখেছি, মানুষ ও বনমানুষ একই গোত্রের। অর্থাৎ, লাখ লাখ বছর আগে মানুষ আর বনমানুষের পূর্বপুরুষ এক ছিল।
বিশ লাখ বছর আগে হোমো হাবিলিসরা বাস করত আফ্রিকায়। তাদের তৈরি কিছু যন্ত্রপাতি পাওয়া গেছে। সূক্ষ্ম নয়, কিন্তু যন্ত্র তো! নিজের হাতে তৈরি যন্ত্র! তার মানে পশু থেকে তারা তত দিনে মানুষ হওয়ার পথে পা বাড়িয়েছে। সে সময় যদি তারা কথা বলে ভাবের আদানপ্রদান করতে পারে, তবে তাকে প্রাক্-ভাষা নামে অভিহিত করাই ভালো।
যাদের আমরা বনমানুষ বলি, তাদের ডাক ছিল বদ্ধ, আর মানুষের ডাক মুক্ত। এই বদ্ধ থেকে লাখ লাখ বছর পার করে তার পর মুক্ত ভাষার সৃষ্টি হয়েছে। বনমানুষের ভাষা থেকে মানুষের ভাষা সৃষ্টি হওয়ার একটা বড় কারণ মানুষের সৃজনীশক্তি। আর একটা জরুরি কথা। চোখের সামনে নেই, সেটার বর্ণনা করতে পারে কেবল মানুষ। আর সেটা সে করে ভাষার সাহায্যে। চোখের সামনে যা নেই, তাকে বোঝানোর জন্য তো একটা নাম বা প্রতীকের দরকার। ভাষা দিয়েই কেবল তাকে চেনানো যায়। ভাষার আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো, একটা শব্দের সঙ্গে আরেকটা কিছু যোগ করে নতুন শব্দ তৈরি করা যায়। গাছ, আগাছা, গেছো—কতগুলো শব্দ তৈরি হয়ে গেল! আর হ্যাঁ, ভাষার মধ্যে তার ঐতিহ্যের সঞ্চালন হয়। মানবশিশু যখন জন্মায়, তখন সে কাঁদতে পারে, কিন্তু তার কোনো ভাষা থাকে না। সে বড় হতে থাকে, অনুকরণ করে করে ভাষা শিখে ফেলে।
নাহ! ঢের হয়েছে! জটিল হয়ে যাচ্ছে আড্ডাটা। একটু সহজ করা দরকার।
তিন.
পৃথিবীতে কত মানুষই তো লেখালেখির সঙ্গে জড়িত। সব ভাষাতেই প্রিয় লেখক আছেন। জনপ্রিয় লেখক আছেন। সেটা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তিতও হয়। বাংলা উপন্যাসে একসময় শরৎচন্দ্র ছিলেন জনপ্রিয়তার শিখরে, তাঁর জায়গা নিয়েছিলেন হুমায়ূন আহমেদ। এর পর কেউ একজন নিশ্চয়ই আসবেন। কিন্তু এমন অনেক লেখক আছেন, যাঁদের লেখা অন্য ভাষাভাষী মানুষও ভালোবেসে পড়েন। কখনো কখনো তাঁরা এতটাই পাঠকপ্রিয় হয়ে ওঠেন যে, তাঁদের লেখা অনুবাদ করার হিড়িক পড়ে যায়।
ইউনেসকো অনলাইনে একটা পরিসংখ্যান তুলে ধরেছে। তাতে কোন লেখকের বই সবচেয়ে বেশি অনূদিত হয়েছে, তা দেখা যায়। সেই তালিকায় সবার ওপরের নামটি হোমারের নয়, শেক্সপিয়ারের নয়, রবীন্দ্রনাথের নয়। সবার ওপরে আছেন আগাথা ক্রিস্টি। পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষায় ৭ হাজার ২৩৪টি অনুবাদ হয়েছে তাঁর। পরের নামটি জুল ভার্নের। তিনি আছেন ৪ হাজার ৭৫১টি অনুবাদ নিয়ে। অ্যাঁ, শেক্সপিয়ার কিন্তু আছেন তার পরেই; ৪ হাজার ২৯৬ জন অনুবাদ করেছেন তাঁকে। লাকি সেভেন হলেন ভ্লাদিমির ইলিচ লেনিন। তাঁর বইয়ের অনুবাদ হয়েছে ৩ হাজার ৫৯৩টি। শিশুসাহিত্যিকদের মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে হান্স ক্রিশ্চিয়ান আন্দেরসেন, তাঁর বইয়ের অনুবাদ হয়েছে ৩ হাজার ৫২০টি। তালিকায় আট নম্বর নামটি তাঁর। মার্ক টোয়েন আছেন ফেওদর দস্তইয়েভ্স্কির চেয়ে এক ধাপ এগিয়ে। ১৫ নম্বরে থাকা মার্ক টোয়েনের অনুবাদ হয়েছে ২ হাজার ৪৩১টি, বেদনার ঋষি দস্তইয়েভ্স্কির অনুবাদ হয়েছে ২ হাজার ৩৪২টি। বাকি নামগুলো বলছি না। তবে যে কেউ সেই ইনডেক্সটি দেখলে বালজাক, তলস্তয়, কাফকা, ডিকেন্সসহ প্রিয় লেখকদের নাম পেয়ে যাবেন। হ্যাঁ, কার্ল মার্ক্সের নাম না থাকার কোনো কারণ নেই।
চার.
ইন্টারনেটে সবচেয়ে জনপ্রিয় ভাষা কোনটি? কিংবা প্রথম দশটি ভাষা?
শুরুতেই কবুল করে নেওয়া দরকার, প্রথম ভাষাটি কোন ভাষা হতে পারে, সেটা আমি না বলে দিলেও যে কেউ অনুমান করে নিতে পারেন। হ্যাঁ, ইংরেজি। একসময় পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় উপনিবেশ করে নিজের ভাষাটাকে পোক্ত করে দিয়ে এসেছে তারা। ফলে এখন অন্তর্জালেও তাদের সদম্ভ উপস্থিতি। অন্তর্জালে যে লেখালেখি হয়, তার ৫২ শতাংশ হয় ইংরেজি ভাষায়।
এরপরই কিন্তু চীনা ভাষা। ২৬ দশমিক ৩ শতাংশ মানুষ এই ভাষায় অন্তর্জালে ভাবের আদানপ্রদান করে। আমরা সবাই জানি, আন্তর্জাতিকভাবে যুক্তরাষ্ট্র আর চীনের মধ্যে বেশ একটা ঝগড়া চলছে। পৃথিবীতে মোড়লি কে করবে, তা নিয়েই ঝগড়া। অন্তর্জালে ইংরেজি ভাষাভাষী তো শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, তাই নেটের যুদ্ধে ইংরেজির আধিপত্য থাকবে আরও অনেকটা সময় ধরে—এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই।
এর পরেই রয়েছে স্প্যানিশ ভাষা। ২০ দশমিক ৮ শতাংশ মানুষ লেখালেখি করে স্প্যানিশ ভাষায়। বোঝাই যায়, এই ভাষাভাষীদের মধ্যে লাতিন আমেরিকার রয়েছে বড় অবদান। ইতিহাসের কোনো এক কালে এই মহাদেশকে পদানত করেছিল স্পেন দেশের মানুষেরা, তার ক্ষত আজও বহন করছে মহাদেশটির মানুষ। এরপর রয়েছে যথাক্রমে আরবি, পর্তুগিজ, জাপানি, মালয়ি, রুশ, ফরাসি ও জার্মান ভাষা।
না, এই বিশাল জগতে বাংলাকে দেখা যাচ্ছে না। দেখা যাবে কী করে, বাঙালি তো বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ইংরেজিতেই মেইল করতে অভ্যস্ত। আলাপও চালায় ইংরেজিতে, অতএব…।

ভাষা ছাড়া কি মানুষ হয়? মানুষের সবচেয়ে জটিল সৃষ্টি হলো ভাষা। কোত্থেকে, কীভাবে এর জন্ম, তা নিয়ে কত গবেষণাই তো হলো। কত রকম মতবাদে ছেয়ে গেল বিজ্ঞান, পৃথিবী। কিন্তু সত্যিই কি পাওয়া গেল উত্তর?
আজ একটু আড্ডার ছলে ভাষা বিষয়ে কিছু কথা বলি। বাক্যগঠন, ধ্বনি উচ্চারণে নানা ধরনের বৈচিত্র্য আছে প্রতিটি ভাষায়। সেই সঙ্গে ভাষার সঙ্গে মিশে থাকে অতীত থেকে উঠে আসা সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার, ঐতিহ্য। কেউ যদি অন্য কারও ভাষা অনুবাদ করতে চায়, তাহলে সেই সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকারটা বুঝতে হবে। না হলে সে অনুবাদ হয়ে উঠবে কাটখোট্টা শব্দের কফিন। সংস্কৃতি না জানলে ভাষা শিক্ষা অপূর্ণ থেকে যায়।
কয়েকটি বিষয়কে আমরা এখানে আকর্ষণীয় করে তুলতে পারি। প্রথমেই জানার চেষ্টা করি, পৃথিবীর সবচেয়ে জটিল ভাষা হিসেবে যদি বেছে নিতে বলা হয়, তাহলে কোন ভাষাগুলোকে বেছে নিতে হবে। মানে, কোন ভাষাগুলো আসলে খুব জটিল?
হ্যাঁ, সে আলোচনার আগে আমাদের স্বীকার করে নিতে হবে, এখন পৃথিবীতে মোট ভাষার সংখ্যা সাত হাজারের এদিক-ওদিক। তবে বিশাল পৃথিবীর বেশির ভাগ মানুষ ভাবের আদানপ্রদান করে মূলত ২৩টি ভাষায়। আপনার ভাষা যে ভাষাগোষ্ঠীর অন্তর্গত, তার ওপর নির্ভর করবে কোন ভাষা আপনার কাছে সহজ বা জটিল লাগবে। আপনার ভাষাগোষ্ঠী কিংবা আপনার কাছাকাছি কোনো ভাষাগোষ্ঠীর ভাষা আপনার কাছে সহজ লাগবে। কিন্তু দূরের ভাষাগোষ্ঠীর ভাষাকে আপনার মনে হতে পারে জটিল। তাই সবচেয়ে কঠিন ভাষা নির্ধারণ করা সহজ কাজ নয়।
তবে বিজ্ঞানীরা ভেবে দেখেছেন, নিচের ছয়টি ভাষা শিখতে জান বেরিয়ে যায়। এদের খুব জটিল ভাষা হিসেবে নাম আছে। এরা হলো বাস্ক, এসকিমো, নাবাখো, চিপ্পেভা, তাবাসারান, চীনা।
কেন এদের জটিল বা কঠিন ভাষা বলা হয়, তা জানতে হলে একটু বইপত্র নিয়ে বসতে হবে আপনাকে। সবকিছুর সহজ সমাধান নেই। একটু তো কষ্ট করা দরকার।
দুই.
ভাষার মরে যাওয়া নিয়ে কথা না বলে কী করে জন্ম হলো ভাষার, তা নিয়ে কথা বলা যাক। কেউ যদি বলে, আরে, ভাষার সৃষ্টি তো হয়েছে এভাবে—তাহলে বুঝবেন গুল মারছে সে। এখনো ভাষাবিজ্ঞানীরা একেবারে নিখুঁতভাবে বলতে পারেননি, কী করে মানুষ কথা বলা শিখল; কী করে জন্ম হলো ভাষার।
তবে, কিছু কিছু অনুমান তো করেছেন বিজ্ঞানীরা। না হলে তাঁরা কী করে টিকে থাকবেন?
একসময় বলা হতো, পশুর ডাকের অনুকরণ করতে করতেই মানুষ তার ভাষা রপ্ত করেছে। ‘বৌ-ঔ তত্ত্ব’ নামে তা বিজ্ঞানী মহলে পরিচিত। বিজ্ঞানীরা বলেন, আগের কালে মানুষ কিছু আওয়াজ করতে শিখেছে পশুদের আদলে। নানা রকম আওয়াজ করে তারা পশুদের তাড়িয়ে দেওয়ার পথ খুঁজত। নানা রকম আওয়াজ করতে করতেই এক সময় একেকটা আওয়াজের একেকটা মানে দাঁড়িয়ে গেল। তারপর কথা বলতে শিখে গেল মানুষ।
কিন্তু এই তত্ত্ব অনুসরণ করতে গেলে বেশ কিছু ফাঁকফোকর বেরিয়ে আসবে। কত রকম ধ্বনি নিয়ে নিজের মনের ভাব প্রকাশ করে মানুষ। শুধু পশুর ডাক থেকে কি সে রকম শব্দ আবিষ্কার করা সম্ভব?
‘পুঃ পুঃ তত্ত্ব’ নামে আরেকটি তত্ত্ব নিয়েও মাথা ঘামিয়েছে মানুষ। এটা হচ্ছে যেকোনো ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় মানুষ যখন ‘আঃ’ ‘উঃ’ ইত্যাদি উচ্চারণ করে, সেগুলোই পরে পরিবর্তিত হয়ে সৃষ্টি করেছে ভাষার।
বিজ্ঞানীরা এ রকম একটা তত্ত্ব দাঁড় করিয়েছেন, ভালো কথা, কিন্তু আদতে কি এই উচ্ছ্বাস-মার্কা ধ্বনির মাধ্যমে ভাষার সৃষ্টি হতে পারে?
না হে; মন সায় দিচ্ছে না!
তবে কি ‘ডিং ডং তত্ত্ব’-কে আলিঙ্গন করব? এই তত্ত্ব বলছে, ধ্বনি আর অর্থের মধ্যে সম্পর্ক আছে। কোনো ঘটনা ঘটতে দেখলে আদিম মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে সাড়া দিত। এই সাড়া দেওয়ার সহজাত প্রবণতা থেকেই ধীরে ধীরে জন্ম নিয়েছে ভাষা।
‘ইয়ো হে হে’ বলে রয়েছে আরেকটি তত্ত্ব। শ্রমিকেরা যখন খুব কঠিন কোনো কাজ করে, তখন সবাই মিলে ছন্দোবদ্ধ কোনো আওয়াজ করে, সেই আওয়াজ থেকেই সৃষ্টি হয়েছে ভাষার। ওই যে ‘হেই সামাল ধান হো/কাস্তেতে দাও শাণহো/জান কবুল আর মান কবুল/আর দেব না আর দেব না রক্তে বোনা ধান মোদের প্রাণ হো।’ এর পর যে ‘হেই সামাল, হেই সামাল’ বলা হয়, তাতে এ রকম একটা সুরের সৃষ্টি হয়। বাড়ির পাইলিং করার সময়ও কেমন সুরে শ্রমিকেরা গান ধরেন, লক্ষ্য করেছেন? সেগুলো থেকেই ভাষার সৃষ্টি।
তবে তা নিয়েও রয়েছে সন্দেহ।
‘দেহভঙ্গির তত্ত্ব’ হচ্ছে পরের তত্ত্বটি। আমেরিকার মূল অধিবাসী, যাদের রেড ইন্ডিয়ান নামে এখন বলে মানুষ, তারা দেহভঙ্গি বা জেশ্চারের মাধ্যমে কথা বলত। সাংকেতিক ভাষায় হতো কথোপকথন। কিন্তু সেটা যে ভাষার উৎপত্তির রহস্য উন্মোচন করে দিচ্ছে, এটা মেনে নিতে কষ্ট হয়।
‘লা লা তত্ত্ব’টিও দারুণ। মানুষের প্রেম, ভালোবাসা, আনন্দানুভূতি থেকে নাকি সৃষ্টি হয়েছে ভাষার! লা লা লা লা লা! আরে ধুর! এটাও কি মেনে নেওয়া যায়? কোনো চিৎকার, সুরেলা আবেগ প্রকাশ কিংবা ভাবোচ্ছ্বাস থেকে কি ভাষার সৃষ্টি হতে পারে?
এ রকম নানা ধরনের তত্ত্ব ছিল আগে। হালে এর সঙ্গে আরও কিছু যুক্ত হয়েছে।
এই তত্ত্ব অনুসারে মানব জাতির জৈব ইতিহাস, আর সাংস্কৃতিক ইতিহাসের গভীরে ঢুঁ মারলে ভাষারহস্যের নাগাল পাওয়া যেতে পারে। প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণায় আমরা দেখেছি, মানুষ ও বনমানুষ একই গোত্রের। অর্থাৎ, লাখ লাখ বছর আগে মানুষ আর বনমানুষের পূর্বপুরুষ এক ছিল।
বিশ লাখ বছর আগে হোমো হাবিলিসরা বাস করত আফ্রিকায়। তাদের তৈরি কিছু যন্ত্রপাতি পাওয়া গেছে। সূক্ষ্ম নয়, কিন্তু যন্ত্র তো! নিজের হাতে তৈরি যন্ত্র! তার মানে পশু থেকে তারা তত দিনে মানুষ হওয়ার পথে পা বাড়িয়েছে। সে সময় যদি তারা কথা বলে ভাবের আদানপ্রদান করতে পারে, তবে তাকে প্রাক্-ভাষা নামে অভিহিত করাই ভালো।
যাদের আমরা বনমানুষ বলি, তাদের ডাক ছিল বদ্ধ, আর মানুষের ডাক মুক্ত। এই বদ্ধ থেকে লাখ লাখ বছর পার করে তার পর মুক্ত ভাষার সৃষ্টি হয়েছে। বনমানুষের ভাষা থেকে মানুষের ভাষা সৃষ্টি হওয়ার একটা বড় কারণ মানুষের সৃজনীশক্তি। আর একটা জরুরি কথা। চোখের সামনে নেই, সেটার বর্ণনা করতে পারে কেবল মানুষ। আর সেটা সে করে ভাষার সাহায্যে। চোখের সামনে যা নেই, তাকে বোঝানোর জন্য তো একটা নাম বা প্রতীকের দরকার। ভাষা দিয়েই কেবল তাকে চেনানো যায়। ভাষার আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো, একটা শব্দের সঙ্গে আরেকটা কিছু যোগ করে নতুন শব্দ তৈরি করা যায়। গাছ, আগাছা, গেছো—কতগুলো শব্দ তৈরি হয়ে গেল! আর হ্যাঁ, ভাষার মধ্যে তার ঐতিহ্যের সঞ্চালন হয়। মানবশিশু যখন জন্মায়, তখন সে কাঁদতে পারে, কিন্তু তার কোনো ভাষা থাকে না। সে বড় হতে থাকে, অনুকরণ করে করে ভাষা শিখে ফেলে।
নাহ! ঢের হয়েছে! জটিল হয়ে যাচ্ছে আড্ডাটা। একটু সহজ করা দরকার।
তিন.
পৃথিবীতে কত মানুষই তো লেখালেখির সঙ্গে জড়িত। সব ভাষাতেই প্রিয় লেখক আছেন। জনপ্রিয় লেখক আছেন। সেটা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তিতও হয়। বাংলা উপন্যাসে একসময় শরৎচন্দ্র ছিলেন জনপ্রিয়তার শিখরে, তাঁর জায়গা নিয়েছিলেন হুমায়ূন আহমেদ। এর পর কেউ একজন নিশ্চয়ই আসবেন। কিন্তু এমন অনেক লেখক আছেন, যাঁদের লেখা অন্য ভাষাভাষী মানুষও ভালোবেসে পড়েন। কখনো কখনো তাঁরা এতটাই পাঠকপ্রিয় হয়ে ওঠেন যে, তাঁদের লেখা অনুবাদ করার হিড়িক পড়ে যায়।
ইউনেসকো অনলাইনে একটা পরিসংখ্যান তুলে ধরেছে। তাতে কোন লেখকের বই সবচেয়ে বেশি অনূদিত হয়েছে, তা দেখা যায়। সেই তালিকায় সবার ওপরের নামটি হোমারের নয়, শেক্সপিয়ারের নয়, রবীন্দ্রনাথের নয়। সবার ওপরে আছেন আগাথা ক্রিস্টি। পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষায় ৭ হাজার ২৩৪টি অনুবাদ হয়েছে তাঁর। পরের নামটি জুল ভার্নের। তিনি আছেন ৪ হাজার ৭৫১টি অনুবাদ নিয়ে। অ্যাঁ, শেক্সপিয়ার কিন্তু আছেন তার পরেই; ৪ হাজার ২৯৬ জন অনুবাদ করেছেন তাঁকে। লাকি সেভেন হলেন ভ্লাদিমির ইলিচ লেনিন। তাঁর বইয়ের অনুবাদ হয়েছে ৩ হাজার ৫৯৩টি। শিশুসাহিত্যিকদের মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে হান্স ক্রিশ্চিয়ান আন্দেরসেন, তাঁর বইয়ের অনুবাদ হয়েছে ৩ হাজার ৫২০টি। তালিকায় আট নম্বর নামটি তাঁর। মার্ক টোয়েন আছেন ফেওদর দস্তইয়েভ্স্কির চেয়ে এক ধাপ এগিয়ে। ১৫ নম্বরে থাকা মার্ক টোয়েনের অনুবাদ হয়েছে ২ হাজার ৪৩১টি, বেদনার ঋষি দস্তইয়েভ্স্কির অনুবাদ হয়েছে ২ হাজার ৩৪২টি। বাকি নামগুলো বলছি না। তবে যে কেউ সেই ইনডেক্সটি দেখলে বালজাক, তলস্তয়, কাফকা, ডিকেন্সসহ প্রিয় লেখকদের নাম পেয়ে যাবেন। হ্যাঁ, কার্ল মার্ক্সের নাম না থাকার কোনো কারণ নেই।
চার.
ইন্টারনেটে সবচেয়ে জনপ্রিয় ভাষা কোনটি? কিংবা প্রথম দশটি ভাষা?
শুরুতেই কবুল করে নেওয়া দরকার, প্রথম ভাষাটি কোন ভাষা হতে পারে, সেটা আমি না বলে দিলেও যে কেউ অনুমান করে নিতে পারেন। হ্যাঁ, ইংরেজি। একসময় পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় উপনিবেশ করে নিজের ভাষাটাকে পোক্ত করে দিয়ে এসেছে তারা। ফলে এখন অন্তর্জালেও তাদের সদম্ভ উপস্থিতি। অন্তর্জালে যে লেখালেখি হয়, তার ৫২ শতাংশ হয় ইংরেজি ভাষায়।
এরপরই কিন্তু চীনা ভাষা। ২৬ দশমিক ৩ শতাংশ মানুষ এই ভাষায় অন্তর্জালে ভাবের আদানপ্রদান করে। আমরা সবাই জানি, আন্তর্জাতিকভাবে যুক্তরাষ্ট্র আর চীনের মধ্যে বেশ একটা ঝগড়া চলছে। পৃথিবীতে মোড়লি কে করবে, তা নিয়েই ঝগড়া। অন্তর্জালে ইংরেজি ভাষাভাষী তো শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, তাই নেটের যুদ্ধে ইংরেজির আধিপত্য থাকবে আরও অনেকটা সময় ধরে—এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই।
এর পরেই রয়েছে স্প্যানিশ ভাষা। ২০ দশমিক ৮ শতাংশ মানুষ লেখালেখি করে স্প্যানিশ ভাষায়। বোঝাই যায়, এই ভাষাভাষীদের মধ্যে লাতিন আমেরিকার রয়েছে বড় অবদান। ইতিহাসের কোনো এক কালে এই মহাদেশকে পদানত করেছিল স্পেন দেশের মানুষেরা, তার ক্ষত আজও বহন করছে মহাদেশটির মানুষ। এরপর রয়েছে যথাক্রমে আরবি, পর্তুগিজ, জাপানি, মালয়ি, রুশ, ফরাসি ও জার্মান ভাষা।
না, এই বিশাল জগতে বাংলাকে দেখা যাচ্ছে না। দেখা যাবে কী করে, বাঙালি তো বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ইংরেজিতেই মেইল করতে অভ্যস্ত। আলাপও চালায় ইংরেজিতে, অতএব…।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর রেলস্টেশনের কাছেই রয়েছে একটি বধ্যভূমি। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে সহযোগীদের সহায়তায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী রহনপুর ও আশপাশের এলাকার মুক্তিযোদ্ধা এবং অনেক সাধারণ বাঙালিকে এই বধ্যভূমিতে বিভিন্ন সময় ধরে এনে হত্যা করে।
৩ দিন আগে
আমার সৌভাগ্য হয়েছিল আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ঘনিষ্ঠ হওয়ার। হাসান আজিজুল হকের সূত্রেই পরিচয় হয়েছিল তাঁর সঙ্গে। পরে তাঁর সঙ্গে প্রচুর আড্ডা দেওয়ার সুযোগ হয়েছিল। তিনি ছিলেন তুমুল আড্ডাবাজ মানুষ। আর তাঁর সঙ্গে জগৎ সংসারের যেকোনো বিষয়ে আলাপ করা যেত। এমন কোনো বিষয় নেই যাতে তাঁর আগ্রহ নেই।
৪ দিন আগে
১৯৭১ সালে পুরো বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন হয়েছিল ১৬ ডিসেম্বর। কিন্তু রাজধানীর মিরপুর তখনো শত্রুদের দখলে। পরের বছর জানুয়ারিতে শত্রুমুক্ত হলে একে একে সন্ধান পাওয়া যেতে থাকে বধ্যভূমিগুলোর। ঢাকায় সবচেয়ে বেশি বধ্যভূমি মিরপুর অঞ্চলে। আর মিরপুরের বধ্যভূমিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লাশ পাওয়া যায়...
৫ দিন আগে
আরব সাগরের রানি নামে পরিচিত কোচি একসময় ছিল বন্দর আর মসলার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। কয়েক শতাব্দী আগে এখানেই গড়ে উঠেছিল ইহুদিদের একটি নিবিড় জনগোষ্ঠী। সেই জনগোষ্ঠীর একজন ছিলেন সারা কোহেন। ২০০০ সাল থেকে এই দোকান চালাচ্ছেন থাহা। সারা জীবিত থাকাকালে তাঁর পক্ষ থেকে, আর ২০১৯ সালে সারা ৯৬
৮ দিন আগেসম্পাদকীয়

চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর রেলস্টেশনের কাছেই রয়েছে একটি বধ্যভূমি। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে সহযোগীদের সহায়তায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী রহনপুর ও আশপাশের এলাকার মুক্তিযোদ্ধা এবং অনেক সাধারণ বাঙালিকে এই বধ্যভূমিতে বিভিন্ন সময় ধরে এনে হত্যা করে। শহীদদের সংখ্যাটা প্রায় ১০ হাজার! রহনপুর সরকারি এ বি উচ্চবিদ্যালয়ে ছিল পাকিস্তানিদের ক্যাম্প। এখানেও শত শত মানুষকে ধরে এনে হত্যা করা হয়। বধ্যভূমির যে স্থানে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে, সেখানেই শহীদদের সম্মানে নির্মিত হয়েছে একটি স্মৃতিস্তম্ভ। এই বধ্যভূমিটি রহনপুর শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের গণকবর নামে পরিচিত।
ছবি: সংগৃহীত

চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর রেলস্টেশনের কাছেই রয়েছে একটি বধ্যভূমি। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে সহযোগীদের সহায়তায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী রহনপুর ও আশপাশের এলাকার মুক্তিযোদ্ধা এবং অনেক সাধারণ বাঙালিকে এই বধ্যভূমিতে বিভিন্ন সময় ধরে এনে হত্যা করে। শহীদদের সংখ্যাটা প্রায় ১০ হাজার! রহনপুর সরকারি এ বি উচ্চবিদ্যালয়ে ছিল পাকিস্তানিদের ক্যাম্প। এখানেও শত শত মানুষকে ধরে এনে হত্যা করা হয়। বধ্যভূমির যে স্থানে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে, সেখানেই শহীদদের সম্মানে নির্মিত হয়েছে একটি স্মৃতিস্তম্ভ। এই বধ্যভূমিটি রহনপুর শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের গণকবর নামে পরিচিত।
ছবি: সংগৃহীত

একসময় বলা হতো, পশুর ডাকের অনুকরণ করতে করতেই মানুষ তার ভাষা রপ্ত করেছে। ‘বৌ-ঔ তত্ত্ব’ নামে তা বিজ্ঞানী মহলে পরিচিত। বিজ্ঞানীরা বলেন, আগের কালে মানুষ কিছু আওয়াজ করতে শিখেছে পশুদের আদলে। নানা রকম আওয়াজ করে তারা পশুদের তাড়িয়ে দেওয়ার পথ খুঁজত। নানা রকম আওয়াজ করতে করতেই একসময় একেকটা আওয়াজের একেকটা মানে দা
১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২
আমার সৌভাগ্য হয়েছিল আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ঘনিষ্ঠ হওয়ার। হাসান আজিজুল হকের সূত্রেই পরিচয় হয়েছিল তাঁর সঙ্গে। পরে তাঁর সঙ্গে প্রচুর আড্ডা দেওয়ার সুযোগ হয়েছিল। তিনি ছিলেন তুমুল আড্ডাবাজ মানুষ। আর তাঁর সঙ্গে জগৎ সংসারের যেকোনো বিষয়ে আলাপ করা যেত। এমন কোনো বিষয় নেই যাতে তাঁর আগ্রহ নেই।
৪ দিন আগে
১৯৭১ সালে পুরো বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন হয়েছিল ১৬ ডিসেম্বর। কিন্তু রাজধানীর মিরপুর তখনো শত্রুদের দখলে। পরের বছর জানুয়ারিতে শত্রুমুক্ত হলে একে একে সন্ধান পাওয়া যেতে থাকে বধ্যভূমিগুলোর। ঢাকায় সবচেয়ে বেশি বধ্যভূমি মিরপুর অঞ্চলে। আর মিরপুরের বধ্যভূমিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লাশ পাওয়া যায়...
৫ দিন আগে
আরব সাগরের রানি নামে পরিচিত কোচি একসময় ছিল বন্দর আর মসলার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। কয়েক শতাব্দী আগে এখানেই গড়ে উঠেছিল ইহুদিদের একটি নিবিড় জনগোষ্ঠী। সেই জনগোষ্ঠীর একজন ছিলেন সারা কোহেন। ২০০০ সাল থেকে এই দোকান চালাচ্ছেন থাহা। সারা জীবিত থাকাকালে তাঁর পক্ষ থেকে, আর ২০১৯ সালে সারা ৯৬
৮ দিন আগেসম্পাদকীয়

আমার সৌভাগ্য হয়েছিল আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ঘনিষ্ঠ হওয়ার। হাসান আজিজুল হকের সূত্রেই পরিচয় হয়েছিল তাঁর সঙ্গে। পরে তাঁর সঙ্গে প্রচুর আড্ডা দেওয়ার সুযোগ হয়েছিল। তিনি ছিলেন তুমুল আড্ডাবাজ মানুষ। আর তাঁর সঙ্গে জগৎ সংসারের যেকোনো বিষয়ে আলাপ করা যেত। এমন কোনো বিষয় নেই যাতে তাঁর আগ্রহ নেই। তাঁর সাক্ষাৎকারে এমন কিছু প্রসঙ্গে আলাপ করেছি, যা হয়তো অত স্বচ্ছন্দে হাসান আজিজুল হকের সঙ্গে করতে পারতাম না। যেমন ধরেন যৌনতা-সংক্রান্ত প্রশ্নগুলো। তবে আড্ডাবাজ ব্যক্তিত্বের জন্যও তাঁর সাক্ষাৎকারটি হয়েছে অনেক প্রাণবন্ত। তাঁকে তো বাম ঘরানার লেখকই ধরা হয়, মার্ক্সবাদে তাঁর বিশ্বাস ছিল। তবে তিনি কিন্তু গোঁড়া মার্ক্সবাদী ছিলেন না।
আমি এ ব্যাপারটিও তাঁর সঙ্গে খোলাসা করার জন্য আলাপ করেছি। সোশ্যালিস্ট রিয়েলিজমের নামে একসময় একধরনের যান্ত্রিক মার্ক্সবাদ চর্চা হয়েছে সাহিত্যে। তিনি এর ঘোর বিরোধী ছিলেন। তিনি এ সাক্ষাৎকারেই বলেছেন, এ দেশের মার্ক্সবাদীদের অনেক জ্ঞান থাকলেও কাণ্ডজ্ঞান নেই। তিনি তাঁর লেখায় জীবনকে একেবারে ভেতর থেকে ধরার চেষ্টা করেছেন। অহেতুক শ্রমিকশ্রেণির জয়গান গাননি, লাল পতাকা ওঠাননি। আমার সাক্ষাৎকারে সেক্সের সঙ্গে ক্লাস পজিশনের সম্পর্ক নিয়ে কথা আছে। তিনি এও বলছেন, তাঁর চিলেকোঠার সেপাইয়ের রিকশাশ্রমিক হাড্ডি খিজির যে চরিত্র, তাকে তিনি মহান করে দেখাননি, শুধু শ্রমিকশ্রেণির বিজয়গাথা তিনি দেখাননি।
বরং হাড্ডি খিজির যে একটি লুম্পেন চরিত্র, তার ভেতর যে নানা জোচ্চুরি আছে, সেটাকেও দেখিয়েছেন। এই যে মানুষকে টোটালিটিতে দেখতে এবং দেখাতে পারা, এটাই আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের শক্তি।
তো এগুলো নিয়ে বিভিন্ন সময় কথা হতো তাঁর সঙ্গে, সেটাকেই আমি সাক্ষাৎকারে ধরতে চেষ্টা করেছি।
সূত্র: মঞ্জুরুল আজিম পলাশ কর্তৃক কথাসাহিত্যিক শাহাদুজ্জামানের সাক্ষাৎকার গ্রহণ, ‘দূরগামী কথার ভেতর’, পৃষ্ঠা: ২৭-২৮।

আমার সৌভাগ্য হয়েছিল আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ঘনিষ্ঠ হওয়ার। হাসান আজিজুল হকের সূত্রেই পরিচয় হয়েছিল তাঁর সঙ্গে। পরে তাঁর সঙ্গে প্রচুর আড্ডা দেওয়ার সুযোগ হয়েছিল। তিনি ছিলেন তুমুল আড্ডাবাজ মানুষ। আর তাঁর সঙ্গে জগৎ সংসারের যেকোনো বিষয়ে আলাপ করা যেত। এমন কোনো বিষয় নেই যাতে তাঁর আগ্রহ নেই। তাঁর সাক্ষাৎকারে এমন কিছু প্রসঙ্গে আলাপ করেছি, যা হয়তো অত স্বচ্ছন্দে হাসান আজিজুল হকের সঙ্গে করতে পারতাম না। যেমন ধরেন যৌনতা-সংক্রান্ত প্রশ্নগুলো। তবে আড্ডাবাজ ব্যক্তিত্বের জন্যও তাঁর সাক্ষাৎকারটি হয়েছে অনেক প্রাণবন্ত। তাঁকে তো বাম ঘরানার লেখকই ধরা হয়, মার্ক্সবাদে তাঁর বিশ্বাস ছিল। তবে তিনি কিন্তু গোঁড়া মার্ক্সবাদী ছিলেন না।
আমি এ ব্যাপারটিও তাঁর সঙ্গে খোলাসা করার জন্য আলাপ করেছি। সোশ্যালিস্ট রিয়েলিজমের নামে একসময় একধরনের যান্ত্রিক মার্ক্সবাদ চর্চা হয়েছে সাহিত্যে। তিনি এর ঘোর বিরোধী ছিলেন। তিনি এ সাক্ষাৎকারেই বলেছেন, এ দেশের মার্ক্সবাদীদের অনেক জ্ঞান থাকলেও কাণ্ডজ্ঞান নেই। তিনি তাঁর লেখায় জীবনকে একেবারে ভেতর থেকে ধরার চেষ্টা করেছেন। অহেতুক শ্রমিকশ্রেণির জয়গান গাননি, লাল পতাকা ওঠাননি। আমার সাক্ষাৎকারে সেক্সের সঙ্গে ক্লাস পজিশনের সম্পর্ক নিয়ে কথা আছে। তিনি এও বলছেন, তাঁর চিলেকোঠার সেপাইয়ের রিকশাশ্রমিক হাড্ডি খিজির যে চরিত্র, তাকে তিনি মহান করে দেখাননি, শুধু শ্রমিকশ্রেণির বিজয়গাথা তিনি দেখাননি।
বরং হাড্ডি খিজির যে একটি লুম্পেন চরিত্র, তার ভেতর যে নানা জোচ্চুরি আছে, সেটাকেও দেখিয়েছেন। এই যে মানুষকে টোটালিটিতে দেখতে এবং দেখাতে পারা, এটাই আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের শক্তি।
তো এগুলো নিয়ে বিভিন্ন সময় কথা হতো তাঁর সঙ্গে, সেটাকেই আমি সাক্ষাৎকারে ধরতে চেষ্টা করেছি।
সূত্র: মঞ্জুরুল আজিম পলাশ কর্তৃক কথাসাহিত্যিক শাহাদুজ্জামানের সাক্ষাৎকার গ্রহণ, ‘দূরগামী কথার ভেতর’, পৃষ্ঠা: ২৭-২৮।

একসময় বলা হতো, পশুর ডাকের অনুকরণ করতে করতেই মানুষ তার ভাষা রপ্ত করেছে। ‘বৌ-ঔ তত্ত্ব’ নামে তা বিজ্ঞানী মহলে পরিচিত। বিজ্ঞানীরা বলেন, আগের কালে মানুষ কিছু আওয়াজ করতে শিখেছে পশুদের আদলে। নানা রকম আওয়াজ করে তারা পশুদের তাড়িয়ে দেওয়ার পথ খুঁজত। নানা রকম আওয়াজ করতে করতেই একসময় একেকটা আওয়াজের একেকটা মানে দা
১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২
চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর রেলস্টেশনের কাছেই রয়েছে একটি বধ্যভূমি। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে সহযোগীদের সহায়তায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী রহনপুর ও আশপাশের এলাকার মুক্তিযোদ্ধা এবং অনেক সাধারণ বাঙালিকে এই বধ্যভূমিতে বিভিন্ন সময় ধরে এনে হত্যা করে।
৩ দিন আগে
১৯৭১ সালে পুরো বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন হয়েছিল ১৬ ডিসেম্বর। কিন্তু রাজধানীর মিরপুর তখনো শত্রুদের দখলে। পরের বছর জানুয়ারিতে শত্রুমুক্ত হলে একে একে সন্ধান পাওয়া যেতে থাকে বধ্যভূমিগুলোর। ঢাকায় সবচেয়ে বেশি বধ্যভূমি মিরপুর অঞ্চলে। আর মিরপুরের বধ্যভূমিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লাশ পাওয়া যায়...
৫ দিন আগে
আরব সাগরের রানি নামে পরিচিত কোচি একসময় ছিল বন্দর আর মসলার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। কয়েক শতাব্দী আগে এখানেই গড়ে উঠেছিল ইহুদিদের একটি নিবিড় জনগোষ্ঠী। সেই জনগোষ্ঠীর একজন ছিলেন সারা কোহেন। ২০০০ সাল থেকে এই দোকান চালাচ্ছেন থাহা। সারা জীবিত থাকাকালে তাঁর পক্ষ থেকে, আর ২০১৯ সালে সারা ৯৬
৮ দিন আগেসম্পাদকীয়

১৯৭১ সালে পুরো বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন হয়েছিল ১৬ ডিসেম্বর। কিন্তু রাজধানীর মিরপুর তখনো শত্রুদের দখলে। পরের বছর জানুয়ারিতে শত্রুমুক্ত হলে একে একে সন্ধান পাওয়া যেতে থাকে বধ্যভূমিগুলোর। ঢাকায় সবচেয়ে বেশি বধ্যভূমি মিরপুর অঞ্চলে। আর মিরপুরের বধ্যভূমিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লাশ পাওয়া যায় শিয়ালবাড়ি এলাকায়। মিরপুরের প্রশিকা ভবন থেকে কমার্স কলেজের দিকে যেতে একটি কালভার্ট ছিল। এখন যদিও রাস্তার মাঝে ঢাকা পড়েছে। সেখানেই ৬০টি বস্তায় প্রায় ৩৫০টি মাথার খুলি পাওয়া গিয়েছিল। সৈয়দ আলী জামে মসজিদের পাশের কুয়ায় পাওয়া গিয়েছিল অসংখ্য লাশ। ৬ নম্বর লেনের শেষ প্রান্তের মাঠে স্তূপাকারে পড়ে থাকা দুই শতাধিক লাশ শিয়ালবাড়ি গণকবরে কবর দেওয়া হয়। এটি ছিল ১০ কাঠা জমির ওপর। বেশির ভাগই দখল হয়ে গেছে। যেটুকু অংশ বাকি আছে, তা বর্তমানে মাতবরবাড়ি পারিবারিক কবরস্থান। শিয়ালবাড়ির যেসব কুয়ায় শহীদদের লাশ পাওয়া গিয়েছিল, সেখানে এখন বহুতল ভবন, কারখানা, শপিং মল।
তথ্য ও ছবি: মিরপুরের ১০টি বধ্যভূমি, মিরাজ মিজু

১৯৭১ সালে পুরো বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন হয়েছিল ১৬ ডিসেম্বর। কিন্তু রাজধানীর মিরপুর তখনো শত্রুদের দখলে। পরের বছর জানুয়ারিতে শত্রুমুক্ত হলে একে একে সন্ধান পাওয়া যেতে থাকে বধ্যভূমিগুলোর। ঢাকায় সবচেয়ে বেশি বধ্যভূমি মিরপুর অঞ্চলে। আর মিরপুরের বধ্যভূমিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লাশ পাওয়া যায় শিয়ালবাড়ি এলাকায়। মিরপুরের প্রশিকা ভবন থেকে কমার্স কলেজের দিকে যেতে একটি কালভার্ট ছিল। এখন যদিও রাস্তার মাঝে ঢাকা পড়েছে। সেখানেই ৬০টি বস্তায় প্রায় ৩৫০টি মাথার খুলি পাওয়া গিয়েছিল। সৈয়দ আলী জামে মসজিদের পাশের কুয়ায় পাওয়া গিয়েছিল অসংখ্য লাশ। ৬ নম্বর লেনের শেষ প্রান্তের মাঠে স্তূপাকারে পড়ে থাকা দুই শতাধিক লাশ শিয়ালবাড়ি গণকবরে কবর দেওয়া হয়। এটি ছিল ১০ কাঠা জমির ওপর। বেশির ভাগই দখল হয়ে গেছে। যেটুকু অংশ বাকি আছে, তা বর্তমানে মাতবরবাড়ি পারিবারিক কবরস্থান। শিয়ালবাড়ির যেসব কুয়ায় শহীদদের লাশ পাওয়া গিয়েছিল, সেখানে এখন বহুতল ভবন, কারখানা, শপিং মল।
তথ্য ও ছবি: মিরপুরের ১০টি বধ্যভূমি, মিরাজ মিজু

একসময় বলা হতো, পশুর ডাকের অনুকরণ করতে করতেই মানুষ তার ভাষা রপ্ত করেছে। ‘বৌ-ঔ তত্ত্ব’ নামে তা বিজ্ঞানী মহলে পরিচিত। বিজ্ঞানীরা বলেন, আগের কালে মানুষ কিছু আওয়াজ করতে শিখেছে পশুদের আদলে। নানা রকম আওয়াজ করে তারা পশুদের তাড়িয়ে দেওয়ার পথ খুঁজত। নানা রকম আওয়াজ করতে করতেই একসময় একেকটা আওয়াজের একেকটা মানে দা
১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২
চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর রেলস্টেশনের কাছেই রয়েছে একটি বধ্যভূমি। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে সহযোগীদের সহায়তায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী রহনপুর ও আশপাশের এলাকার মুক্তিযোদ্ধা এবং অনেক সাধারণ বাঙালিকে এই বধ্যভূমিতে বিভিন্ন সময় ধরে এনে হত্যা করে।
৩ দিন আগে
আমার সৌভাগ্য হয়েছিল আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ঘনিষ্ঠ হওয়ার। হাসান আজিজুল হকের সূত্রেই পরিচয় হয়েছিল তাঁর সঙ্গে। পরে তাঁর সঙ্গে প্রচুর আড্ডা দেওয়ার সুযোগ হয়েছিল। তিনি ছিলেন তুমুল আড্ডাবাজ মানুষ। আর তাঁর সঙ্গে জগৎ সংসারের যেকোনো বিষয়ে আলাপ করা যেত। এমন কোনো বিষয় নেই যাতে তাঁর আগ্রহ নেই।
৪ দিন আগে
আরব সাগরের রানি নামে পরিচিত কোচি একসময় ছিল বন্দর আর মসলার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। কয়েক শতাব্দী আগে এখানেই গড়ে উঠেছিল ইহুদিদের একটি নিবিড় জনগোষ্ঠী। সেই জনগোষ্ঠীর একজন ছিলেন সারা কোহেন। ২০০০ সাল থেকে এই দোকান চালাচ্ছেন থাহা। সারা জীবিত থাকাকালে তাঁর পক্ষ থেকে, আর ২০১৯ সালে সারা ৯৬
৮ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

দক্ষিণ ভারতের কোচি শহরের সরু, নুড়ি-পাথর বিছানো রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ চোখে পড়ে ছোট্ট একটি ফলক। তাতে লেখা, ‘সারা কোহেনের বাড়ি।’ জনাকীর্ণ এই রাস্তাটির নাম জু টাউন। কয়েক দশক আগেও এখানকার প্রায় প্রতিটি বাড়িতে বসবাস করত ইহুদি পরিবার। প্রাচীন সামগ্রী, পারস্যের কার্পেট আর মসলার দোকানে ঠাসা এই এলাকাই একসময় পরিচিত ছিল কোচির ইহুদি পাড়া হিসেবে।
এই রাস্তাতেই রয়েছে থাহা ইব্রাহিমের দোকান। কোচির শেষ ইহুদি নকশার দোকান। এক তপ্ত দুপুরে কয়েকজন মার্কিন পর্যটক দোকানে ঢুকতেই দেখা গেল, ৫৫ বছর বয়সী থাহা মনোযোগ দিয়ে একটি কিপ্পা (ইহুদি পুরুষদের ঐতিহ্যবাহী ছোট, বৃত্তাকার টুপি যা তারা ঈশ্বরকে সম্মান জানাতে এবং নিজেদের ধর্মীয় পরিচয় প্রকাশ করতে পরে থাকে) সেলাই করছেন। দোকানের দেয়ালে ঝোলানো একটি ছবির সামনে পর্যটকেরা ভিড় জমালেন। ছবিটি ২০১৩ সালের। তৎকালীন ব্রিটিশ যুবরাজ (বর্তমানে রাজা) চার্লস জু টাউনের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলছেন।
ছবির দিকে আঙুল তুলে থাহা বললেন, ‘ওই ইনিই সারা আন্টি।’ এরপর যোগ করলেন, ‘এটা ছিল সারা কোহেনের বাড়ি ও তাঁর সেলাইয়ের দোকান।’
আরব সাগরের রানি নামে পরিচিত কোচি একসময় ছিল বন্দর আর মসলার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। কয়েক শতাব্দী আগে এখানেই গড়ে উঠেছিল ইহুদিদের একটি নিবিড় জনগোষ্ঠী। সেই জনগোষ্ঠীর একজন ছিলেন সারা কোহেন। ২০০০ সাল থেকে এই দোকান চালাচ্ছেন থাহা। সারা জীবিত থাকাকালে তাঁর পক্ষ থেকে, আর ২০১৯ সালে সারা ৯৬ বছর বয়সে মারা যাওয়ার পর পুরোপুরি দায়িত্ব নেন তিনি।
থাহা বলেন, ‘আমি ছিলাম তাঁর ছেলের মতো। নিজের মায়ের চেয়েও বেশি সময় তাঁর দেখাশোনা করেছি। আমি তাঁর জন্য কোশার (ইহুদিদের এক ধরনের খাবার) আর মাছ কিনে আনতাম। সময় কাটাতাম আর দোকান বন্ধ করার পরই কেবল ফিরতাম।’
এক ইহুদি নারী আর ভিন্ন সামাজিক ও অর্থনৈতিক পটভূমির এক মুসলমান পুরুষের এই বন্ধুত্ব প্রায় চার দশক ধরে টিকে ছিল। মৃত্যুর আগে সারা তাঁর দোকানটি থাহার নামে উইল করে যান। থাহা প্রতিজ্ঞা করেন, জু টাউনে তিনি সারার স্মৃতি আর ঐতিহ্য বাঁচিয়ে রাখবেন। যেখানে আঠারো শতকে প্রায় আড়াই হাজার ইহুদি বাস করতেন, সেখানে এখন কেবল একজন অবশিষ্ট। থাহা বলেন, ‘এক দিক থেকে, এখানকার ইহুদি সম্প্রদায় যাতে বিস্মৃত না হয়, আমিও সেই চেষ্টাই করছি।’
কেরালায় ইহুদিদের আগমনের সবচেয়ে প্রচলিত কাহিনি বাইবেলের ওল্ড টেস্টামেন্টে উল্লিখিত রাজা সোলোমনের সময়ের, প্রায় দুই হাজার বছর আগেকার। প্রথমে তাঁরা মালাবার উপকূলে ক্রাঙ্গানোরে, বর্তমান কোডুঙ্গাল্লুরের কাছে প্রাচীন বন্দরের আশপাশে বণিক হিসেবে বসতি গড়েন। পরে তাঁরা কোচিতে চলে আসেন। এই প্রাচীন বসতির কারণে তাঁরা পরিচিত হন মালাবারি ইহুদি নামে।
এর বহু পরে, ১৫৯২ সালে, স্প্যানিশ নিপীড়ন থেকে পালিয়ে আসা সেফার্ডিক ইহুদিরা কেরালায় পৌঁছান। পর্তুগাল, তুরস্ক আর বাগদাদ হয়ে তাঁরা কোচিতে বসতি গড়ে তোলেন এবং পরিচিত হন পারাদেসি বা বিদেশি ইহুদি নামে। মালাবারি ও পারাদেসি—এই দুই ধারার মানুষ মিলেই পরিচিত হন কোচিন ইহুদি নামে।

পর্তুগিজ, আরব, ব্রিটিশ আর ওলন্দাজদের দীর্ঘদিনের বাণিজ্যকেন্দ্র কোচিতে তাঁরা রাজাদের সুরক্ষায় নিরাপদে বসবাস করতেন। বিশ শতকের গোড়ায় সারা কোহেনের জন্ম। তখন জু টাউন ছিল প্রাণবন্ত। সারা আর তাঁর স্বামী জ্যাকব—যাঁর জন্মও এখানেই—১৯৪৪ সালে বিয়ে করেন।
আশির দশকের গোড়ায় আচমকাই থাহার সঙ্গে কোহেন দম্পতির পরিচয় হয়। তেরো বছর বয়সে স্কুল ছেড়ে দেওয়া থাহা তখন পর্যটকদের কাছে পোস্টকার্ড বিক্রি করে জীবিকা চালাতেন। জু টাউনে আসা পর্যটকেরা নিয়মিতই যেতেন পারাদেসি সিনাগগে, যা ১৫৬৮ সালে কোচিনের রাজার দেওয়া জমিতে নির্মিত।
থাহা বলেন, ‘তখন প্রচুর পর্যটক আসত আর আমি সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পোস্টকার্ড বেচতাম।’ এক রোববার, যে গুদামঘরে থাহা পোস্টকার্ড রাখতেন, তার মালিক না আসায় জ্যাকব তাঁকে তাঁদের বাড়িতে জায়গা দেন। সারা এতে খুশি ছিলেন না। থাহার মনে আছে, প্রায় তিন বছর তিনি তাঁর সঙ্গে তেমন কথা বলেননি।
ইব্রাহিম থাহা বলেন, ‘মাঝে মাঝে আমি তাঁর স্বামীর ছোটখাটো কাজ করে দিতাম। অথবা যখন তাঁদের জানালার বাইরে থেকে টিভিতে ক্রিকেট দেখতাম, তিনি আমাকে ভেতরে আসতে বলতেন।’ একদিন সারা তাঁকে সিনাগগের জন্য একটি কুশন কভার সেলাই করতে সাহায্য করতে বলেন। তখনই বোঝা যায়, থাহার মধ্যে সেলাই ও নকশার সহজাত দক্ষতা আছে। সম্ভবত দরজি বাবাকে ছোটবেলা থেকে সাহায্য করার ফলেই। তিনি বলেন, ‘আমি যে নকশা আঁকতে আর সেলাই করতে পারি, তা জানতামই না।’
উনিশ বছর বয়সে থাহা সারাকে সাহায্য করেন তাঁদের বৈঠকখানা থেকে ‘সারার হস্ত-সেলাই’ নামে একটি দোকান খুলতে। দোকানটি আজও সেই নামেই পরিচিত। সেখানে বিক্রি হতো কিপ্পাহ, চাল্লাহ কভার আর মেনোরাহ। তিনি বলেন, ‘তিনিই আমাকে সব শিখিয়েছেন।’
এই বন্ধুত্ব নিয়ে থাহা বেশ দার্শনিক। তিনি বলেন, ‘জু টাউনে ইহুদি আর মুসলমানেরা একে অপরের সঙ্গে তেমন মিশতেন না। তাঁরা একে অপরের প্রতি সন্দিহান ছিলেন। কিন্তু সারা আন্টি আর জ্যাকব আংকেল কখনোই আমাকে বহিরাগত মনে করতে দেননি, যদিও আমাদের পটভূমি আলাদা ছিল।’

থাহার বাবা-মা এই সম্পর্কে আপত্তি করেননি। তাঁরা দেখেছিলেন, কোহেন পরিবার তাঁদের ছেলেকে জীবনের একটি উদ্দেশ্য খুঁজে পেতে সাহায্য করছে। কিন্তু এই ঘনিষ্ঠতার সময়েই কোচির ইহুদি জনসংখ্যা দ্রুত কমতে থাকে। চল্লিশের দশকে যেখানে ছিল প্রায় ২৫০ জন, নব্বইয়ের দশকে তা নেমে আসে ২০ জনে। এখন মাত্র একজন আছেন—৬৭ বছর বয়সী কিথ হ্যালেগুয়া।
১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর অনেক পরিবার সেখানে চলে যায়। কেরালার ইহুদিদের ওপর ডক্টরেট থিসিস করা আনা জাখারিয়াস বলেন, ‘কোচিন ইহুদিরা হয়তো স্বদেশে ফিরে যাওয়ার ধারণায় ইসরায়েলে গিয়েছিলেন। তবে উন্নত জীবনের আকর্ষণের মতো অর্থনৈতিক কারণও ছিল। তাঁরা এটাও অনুভব করেছিলেন যে কেরালায় উপযুক্ত জীবনসঙ্গীর অভাব ছিল।’
ধর্মীয় নিপীড়ন কখনোই তাঁদের কোচি ছাড়ার কারণ ছিল না। শহরটি শত শত বছর ধরে তাঁদের স্বাগত জানিয়েছে। কিছু বয়স্ক ইহুদি থেকে গিয়েছিলেন, যাঁদের মধ্যে নিঃসন্তান কোহেন দম্পতিও ছিলেন। ১৯৯৯ সালে জ্যাকব মারা যাওয়ার আগে থাহাকে সারার দেখাশোনার দায়িত্ব দিয়ে যান। তখন থাহা বিবাহিত, তিন সন্তানের জনক।
থাহা বলেন, ‘আমি জ্যাকব আংকেলকে বলেছিলাম, সারা আন্টি যদি আমাকে সুযোগ দেন, তবে আমি তাঁর দেখাশোনা করব। আমি তাঁকে সুযোগ দিতে বলেছিলাম, কারণ ইসলামে মৃতপ্রায় ব্যক্তির শেষ ইচ্ছা পূরণ করা গুরুত্বপূর্ণ। না করলে পাপ হয়।’
সারার স্বাস্থ্যের অবনতি হলে থাহা তাঁর পরিবারকে জু টাউনের কাছাকাছি নিয়ে আসেন। সারা মারা গেলে তিনি তাঁর কফিনের জন্য স্টার অব ডেভিড (ইসরায়েলি পতাকায় অঙ্কিত তারকা) আঁকা একটি কফিন কভার তৈরি করান। আজও তিনি নিয়মিত ইহুদি কবরস্থানে তাঁর সমাধিতে যান। প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক কোচি ঘুরতে আসেন। তাঁদের মধ্যে অনেক ইহুদিও থাকেন। আনা জাখারিয়াস বলেন, ‘বিশ্বজুড়ে ইহুদিরা জু টাউনে আসেন এক ধরনের আপন অনুভব করার জন্য।’
তিনি বলেন, এখানকার ইহুদিরা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু সমাজের মধ্যেও নিজেদের পরিচয় বজায় রেখেছিলেন। একই সঙ্গে সমাজের সঙ্গে মিশে গিয়েছিলেন। স্থানীয় ভাষা মালয়ালমই ছিল তাঁদের দৈনন্দিন ভাষা। থাহা যেভাবে সারা কোহেনের ঐতিহ্য আগলে রেখেছেন, তা তাঁকে মুগ্ধ করে। তিনি বলেন, ‘একজন মুসলমান কীভাবে এক ইহুদি নারীর যত্ন নিয়েছেন, তা দৃষ্টান্তস্বরূপ। তিনি এখনো সারা-র ধর্মীয় ঐতিহ্যগুলো বজায় রেখেছেন।’
থাহা দোকানটিকে ঠিক সেভাবেই রেখেছেন, যেমনটি সারা চালাতেন। ইহুদিদের সাব্বাথ উপলক্ষে তিনি শনিবার দোকান বন্ধ রাখেন। ইব্রাহিম থাহা আরও বলেন, ‘আমি ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা মুসলমান, কিন্তু সারা আন্টির জন্য এটা খুব জরুরি ছিল বলে আমি শুক্রবার সন্ধ্যায় একটি প্রদীপ জ্বালাই। কারণ, এই ক্ষণ সাব্বাথের শুরু হওয়াকে চিহ্নিত করে। এই বিষয়টি আমার কাছে এটা ধর্ম সংক্রান্ত নয়, পুরোটাই মানবিক।’
বিবিসি থেকে অনূদিত

দক্ষিণ ভারতের কোচি শহরের সরু, নুড়ি-পাথর বিছানো রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ চোখে পড়ে ছোট্ট একটি ফলক। তাতে লেখা, ‘সারা কোহেনের বাড়ি।’ জনাকীর্ণ এই রাস্তাটির নাম জু টাউন। কয়েক দশক আগেও এখানকার প্রায় প্রতিটি বাড়িতে বসবাস করত ইহুদি পরিবার। প্রাচীন সামগ্রী, পারস্যের কার্পেট আর মসলার দোকানে ঠাসা এই এলাকাই একসময় পরিচিত ছিল কোচির ইহুদি পাড়া হিসেবে।
এই রাস্তাতেই রয়েছে থাহা ইব্রাহিমের দোকান। কোচির শেষ ইহুদি নকশার দোকান। এক তপ্ত দুপুরে কয়েকজন মার্কিন পর্যটক দোকানে ঢুকতেই দেখা গেল, ৫৫ বছর বয়সী থাহা মনোযোগ দিয়ে একটি কিপ্পা (ইহুদি পুরুষদের ঐতিহ্যবাহী ছোট, বৃত্তাকার টুপি যা তারা ঈশ্বরকে সম্মান জানাতে এবং নিজেদের ধর্মীয় পরিচয় প্রকাশ করতে পরে থাকে) সেলাই করছেন। দোকানের দেয়ালে ঝোলানো একটি ছবির সামনে পর্যটকেরা ভিড় জমালেন। ছবিটি ২০১৩ সালের। তৎকালীন ব্রিটিশ যুবরাজ (বর্তমানে রাজা) চার্লস জু টাউনের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলছেন।
ছবির দিকে আঙুল তুলে থাহা বললেন, ‘ওই ইনিই সারা আন্টি।’ এরপর যোগ করলেন, ‘এটা ছিল সারা কোহেনের বাড়ি ও তাঁর সেলাইয়ের দোকান।’
আরব সাগরের রানি নামে পরিচিত কোচি একসময় ছিল বন্দর আর মসলার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। কয়েক শতাব্দী আগে এখানেই গড়ে উঠেছিল ইহুদিদের একটি নিবিড় জনগোষ্ঠী। সেই জনগোষ্ঠীর একজন ছিলেন সারা কোহেন। ২০০০ সাল থেকে এই দোকান চালাচ্ছেন থাহা। সারা জীবিত থাকাকালে তাঁর পক্ষ থেকে, আর ২০১৯ সালে সারা ৯৬ বছর বয়সে মারা যাওয়ার পর পুরোপুরি দায়িত্ব নেন তিনি।
থাহা বলেন, ‘আমি ছিলাম তাঁর ছেলের মতো। নিজের মায়ের চেয়েও বেশি সময় তাঁর দেখাশোনা করেছি। আমি তাঁর জন্য কোশার (ইহুদিদের এক ধরনের খাবার) আর মাছ কিনে আনতাম। সময় কাটাতাম আর দোকান বন্ধ করার পরই কেবল ফিরতাম।’
এক ইহুদি নারী আর ভিন্ন সামাজিক ও অর্থনৈতিক পটভূমির এক মুসলমান পুরুষের এই বন্ধুত্ব প্রায় চার দশক ধরে টিকে ছিল। মৃত্যুর আগে সারা তাঁর দোকানটি থাহার নামে উইল করে যান। থাহা প্রতিজ্ঞা করেন, জু টাউনে তিনি সারার স্মৃতি আর ঐতিহ্য বাঁচিয়ে রাখবেন। যেখানে আঠারো শতকে প্রায় আড়াই হাজার ইহুদি বাস করতেন, সেখানে এখন কেবল একজন অবশিষ্ট। থাহা বলেন, ‘এক দিক থেকে, এখানকার ইহুদি সম্প্রদায় যাতে বিস্মৃত না হয়, আমিও সেই চেষ্টাই করছি।’
কেরালায় ইহুদিদের আগমনের সবচেয়ে প্রচলিত কাহিনি বাইবেলের ওল্ড টেস্টামেন্টে উল্লিখিত রাজা সোলোমনের সময়ের, প্রায় দুই হাজার বছর আগেকার। প্রথমে তাঁরা মালাবার উপকূলে ক্রাঙ্গানোরে, বর্তমান কোডুঙ্গাল্লুরের কাছে প্রাচীন বন্দরের আশপাশে বণিক হিসেবে বসতি গড়েন। পরে তাঁরা কোচিতে চলে আসেন। এই প্রাচীন বসতির কারণে তাঁরা পরিচিত হন মালাবারি ইহুদি নামে।
এর বহু পরে, ১৫৯২ সালে, স্প্যানিশ নিপীড়ন থেকে পালিয়ে আসা সেফার্ডিক ইহুদিরা কেরালায় পৌঁছান। পর্তুগাল, তুরস্ক আর বাগদাদ হয়ে তাঁরা কোচিতে বসতি গড়ে তোলেন এবং পরিচিত হন পারাদেসি বা বিদেশি ইহুদি নামে। মালাবারি ও পারাদেসি—এই দুই ধারার মানুষ মিলেই পরিচিত হন কোচিন ইহুদি নামে।

পর্তুগিজ, আরব, ব্রিটিশ আর ওলন্দাজদের দীর্ঘদিনের বাণিজ্যকেন্দ্র কোচিতে তাঁরা রাজাদের সুরক্ষায় নিরাপদে বসবাস করতেন। বিশ শতকের গোড়ায় সারা কোহেনের জন্ম। তখন জু টাউন ছিল প্রাণবন্ত। সারা আর তাঁর স্বামী জ্যাকব—যাঁর জন্মও এখানেই—১৯৪৪ সালে বিয়ে করেন।
আশির দশকের গোড়ায় আচমকাই থাহার সঙ্গে কোহেন দম্পতির পরিচয় হয়। তেরো বছর বয়সে স্কুল ছেড়ে দেওয়া থাহা তখন পর্যটকদের কাছে পোস্টকার্ড বিক্রি করে জীবিকা চালাতেন। জু টাউনে আসা পর্যটকেরা নিয়মিতই যেতেন পারাদেসি সিনাগগে, যা ১৫৬৮ সালে কোচিনের রাজার দেওয়া জমিতে নির্মিত।
থাহা বলেন, ‘তখন প্রচুর পর্যটক আসত আর আমি সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পোস্টকার্ড বেচতাম।’ এক রোববার, যে গুদামঘরে থাহা পোস্টকার্ড রাখতেন, তার মালিক না আসায় জ্যাকব তাঁকে তাঁদের বাড়িতে জায়গা দেন। সারা এতে খুশি ছিলেন না। থাহার মনে আছে, প্রায় তিন বছর তিনি তাঁর সঙ্গে তেমন কথা বলেননি।
ইব্রাহিম থাহা বলেন, ‘মাঝে মাঝে আমি তাঁর স্বামীর ছোটখাটো কাজ করে দিতাম। অথবা যখন তাঁদের জানালার বাইরে থেকে টিভিতে ক্রিকেট দেখতাম, তিনি আমাকে ভেতরে আসতে বলতেন।’ একদিন সারা তাঁকে সিনাগগের জন্য একটি কুশন কভার সেলাই করতে সাহায্য করতে বলেন। তখনই বোঝা যায়, থাহার মধ্যে সেলাই ও নকশার সহজাত দক্ষতা আছে। সম্ভবত দরজি বাবাকে ছোটবেলা থেকে সাহায্য করার ফলেই। তিনি বলেন, ‘আমি যে নকশা আঁকতে আর সেলাই করতে পারি, তা জানতামই না।’
উনিশ বছর বয়সে থাহা সারাকে সাহায্য করেন তাঁদের বৈঠকখানা থেকে ‘সারার হস্ত-সেলাই’ নামে একটি দোকান খুলতে। দোকানটি আজও সেই নামেই পরিচিত। সেখানে বিক্রি হতো কিপ্পাহ, চাল্লাহ কভার আর মেনোরাহ। তিনি বলেন, ‘তিনিই আমাকে সব শিখিয়েছেন।’
এই বন্ধুত্ব নিয়ে থাহা বেশ দার্শনিক। তিনি বলেন, ‘জু টাউনে ইহুদি আর মুসলমানেরা একে অপরের সঙ্গে তেমন মিশতেন না। তাঁরা একে অপরের প্রতি সন্দিহান ছিলেন। কিন্তু সারা আন্টি আর জ্যাকব আংকেল কখনোই আমাকে বহিরাগত মনে করতে দেননি, যদিও আমাদের পটভূমি আলাদা ছিল।’

থাহার বাবা-মা এই সম্পর্কে আপত্তি করেননি। তাঁরা দেখেছিলেন, কোহেন পরিবার তাঁদের ছেলেকে জীবনের একটি উদ্দেশ্য খুঁজে পেতে সাহায্য করছে। কিন্তু এই ঘনিষ্ঠতার সময়েই কোচির ইহুদি জনসংখ্যা দ্রুত কমতে থাকে। চল্লিশের দশকে যেখানে ছিল প্রায় ২৫০ জন, নব্বইয়ের দশকে তা নেমে আসে ২০ জনে। এখন মাত্র একজন আছেন—৬৭ বছর বয়সী কিথ হ্যালেগুয়া।
১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর অনেক পরিবার সেখানে চলে যায়। কেরালার ইহুদিদের ওপর ডক্টরেট থিসিস করা আনা জাখারিয়াস বলেন, ‘কোচিন ইহুদিরা হয়তো স্বদেশে ফিরে যাওয়ার ধারণায় ইসরায়েলে গিয়েছিলেন। তবে উন্নত জীবনের আকর্ষণের মতো অর্থনৈতিক কারণও ছিল। তাঁরা এটাও অনুভব করেছিলেন যে কেরালায় উপযুক্ত জীবনসঙ্গীর অভাব ছিল।’
ধর্মীয় নিপীড়ন কখনোই তাঁদের কোচি ছাড়ার কারণ ছিল না। শহরটি শত শত বছর ধরে তাঁদের স্বাগত জানিয়েছে। কিছু বয়স্ক ইহুদি থেকে গিয়েছিলেন, যাঁদের মধ্যে নিঃসন্তান কোহেন দম্পতিও ছিলেন। ১৯৯৯ সালে জ্যাকব মারা যাওয়ার আগে থাহাকে সারার দেখাশোনার দায়িত্ব দিয়ে যান। তখন থাহা বিবাহিত, তিন সন্তানের জনক।
থাহা বলেন, ‘আমি জ্যাকব আংকেলকে বলেছিলাম, সারা আন্টি যদি আমাকে সুযোগ দেন, তবে আমি তাঁর দেখাশোনা করব। আমি তাঁকে সুযোগ দিতে বলেছিলাম, কারণ ইসলামে মৃতপ্রায় ব্যক্তির শেষ ইচ্ছা পূরণ করা গুরুত্বপূর্ণ। না করলে পাপ হয়।’
সারার স্বাস্থ্যের অবনতি হলে থাহা তাঁর পরিবারকে জু টাউনের কাছাকাছি নিয়ে আসেন। সারা মারা গেলে তিনি তাঁর কফিনের জন্য স্টার অব ডেভিড (ইসরায়েলি পতাকায় অঙ্কিত তারকা) আঁকা একটি কফিন কভার তৈরি করান। আজও তিনি নিয়মিত ইহুদি কবরস্থানে তাঁর সমাধিতে যান। প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক কোচি ঘুরতে আসেন। তাঁদের মধ্যে অনেক ইহুদিও থাকেন। আনা জাখারিয়াস বলেন, ‘বিশ্বজুড়ে ইহুদিরা জু টাউনে আসেন এক ধরনের আপন অনুভব করার জন্য।’
তিনি বলেন, এখানকার ইহুদিরা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু সমাজের মধ্যেও নিজেদের পরিচয় বজায় রেখেছিলেন। একই সঙ্গে সমাজের সঙ্গে মিশে গিয়েছিলেন। স্থানীয় ভাষা মালয়ালমই ছিল তাঁদের দৈনন্দিন ভাষা। থাহা যেভাবে সারা কোহেনের ঐতিহ্য আগলে রেখেছেন, তা তাঁকে মুগ্ধ করে। তিনি বলেন, ‘একজন মুসলমান কীভাবে এক ইহুদি নারীর যত্ন নিয়েছেন, তা দৃষ্টান্তস্বরূপ। তিনি এখনো সারা-র ধর্মীয় ঐতিহ্যগুলো বজায় রেখেছেন।’
থাহা দোকানটিকে ঠিক সেভাবেই রেখেছেন, যেমনটি সারা চালাতেন। ইহুদিদের সাব্বাথ উপলক্ষে তিনি শনিবার দোকান বন্ধ রাখেন। ইব্রাহিম থাহা আরও বলেন, ‘আমি ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা মুসলমান, কিন্তু সারা আন্টির জন্য এটা খুব জরুরি ছিল বলে আমি শুক্রবার সন্ধ্যায় একটি প্রদীপ জ্বালাই। কারণ, এই ক্ষণ সাব্বাথের শুরু হওয়াকে চিহ্নিত করে। এই বিষয়টি আমার কাছে এটা ধর্ম সংক্রান্ত নয়, পুরোটাই মানবিক।’
বিবিসি থেকে অনূদিত

একসময় বলা হতো, পশুর ডাকের অনুকরণ করতে করতেই মানুষ তার ভাষা রপ্ত করেছে। ‘বৌ-ঔ তত্ত্ব’ নামে তা বিজ্ঞানী মহলে পরিচিত। বিজ্ঞানীরা বলেন, আগের কালে মানুষ কিছু আওয়াজ করতে শিখেছে পশুদের আদলে। নানা রকম আওয়াজ করে তারা পশুদের তাড়িয়ে দেওয়ার পথ খুঁজত। নানা রকম আওয়াজ করতে করতেই একসময় একেকটা আওয়াজের একেকটা মানে দা
১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২
চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর রেলস্টেশনের কাছেই রয়েছে একটি বধ্যভূমি। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে সহযোগীদের সহায়তায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী রহনপুর ও আশপাশের এলাকার মুক্তিযোদ্ধা এবং অনেক সাধারণ বাঙালিকে এই বধ্যভূমিতে বিভিন্ন সময় ধরে এনে হত্যা করে।
৩ দিন আগে
আমার সৌভাগ্য হয়েছিল আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ঘনিষ্ঠ হওয়ার। হাসান আজিজুল হকের সূত্রেই পরিচয় হয়েছিল তাঁর সঙ্গে। পরে তাঁর সঙ্গে প্রচুর আড্ডা দেওয়ার সুযোগ হয়েছিল। তিনি ছিলেন তুমুল আড্ডাবাজ মানুষ। আর তাঁর সঙ্গে জগৎ সংসারের যেকোনো বিষয়ে আলাপ করা যেত। এমন কোনো বিষয় নেই যাতে তাঁর আগ্রহ নেই।
৪ দিন আগে
১৯৭১ সালে পুরো বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন হয়েছিল ১৬ ডিসেম্বর। কিন্তু রাজধানীর মিরপুর তখনো শত্রুদের দখলে। পরের বছর জানুয়ারিতে শত্রুমুক্ত হলে একে একে সন্ধান পাওয়া যেতে থাকে বধ্যভূমিগুলোর। ঢাকায় সবচেয়ে বেশি বধ্যভূমি মিরপুর অঞ্চলে। আর মিরপুরের বধ্যভূমিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লাশ পাওয়া যায়...
৫ দিন আগে