Ajker Patrika

ভাষা নিয়ে ভাসা ভাসা কিছু কথা

জাহীদ রেজা নূর
ভাষা নিয়ে ভাসা ভাসা কিছু কথা

ভাষা ছাড়া কি মানুষ হয়? মানুষের সবচেয়ে জটিল সৃষ্টি হলো ভাষা। কোত্থেকে, কীভাবে এর জন্ম, তা নিয়ে কত গবেষণাই তো হলো। কত রকম মতবাদে ছেয়ে গেল বিজ্ঞান, পৃথিবী। কিন্তু সত্যিই কি পাওয়া গেল উত্তর?

আজ একটু আড্ডার ছলে ভাষা বিষয়ে কিছু কথা বলি। বাক্যগঠন, ধ্বনি উচ্চারণে নানা ধরনের বৈচিত্র্য আছে প্রতিটি ভাষায়। সেই সঙ্গে ভাষার সঙ্গে মিশে থাকে অতীত থেকে উঠে আসা সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার, ঐতিহ্য। কেউ যদি অন্য কারও ভাষা অনুবাদ করতে চায়, তাহলে সেই সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকারটা বুঝতে হবে। না হলে সে অনুবাদ হয়ে উঠবে কাটখোট্টা শব্দের কফিন। সংস্কৃতি না জানলে ভাষা শিক্ষা অপূর্ণ থেকে যায়। 

কয়েকটি বিষয়কে আমরা এখানে আকর্ষণীয় করে তুলতে পারি। প্রথমেই জানার চেষ্টা করি, পৃথিবীর সবচেয়ে জটিল ভাষা হিসেবে যদি বেছে নিতে বলা হয়, তাহলে কোন ভাষাগুলোকে বেছে নিতে হবে। মানে, কোন ভাষাগুলো আসলে খুব জটিল? 

হ্যাঁ, সে আলোচনার আগে আমাদের স্বীকার করে নিতে হবে, এখন পৃথিবীতে মোট ভাষার সংখ্যা সাত হাজারের এদিক-ওদিক। তবে বিশাল পৃথিবীর বেশির ভাগ মানুষ ভাবের আদানপ্রদান করে মূলত ২৩টি ভাষায়। আপনার ভাষা যে ভাষাগোষ্ঠীর অন্তর্গত, তার ওপর নির্ভর করবে কোন ভাষা আপনার কাছে সহজ বা জটিল লাগবে। আপনার ভাষাগোষ্ঠী কিংবা আপনার কাছাকাছি কোনো ভাষাগোষ্ঠীর ভাষা আপনার কাছে সহজ লাগবে। কিন্তু দূরের ভাষাগোষ্ঠীর ভাষাকে আপনার মনে হতে পারে জটিল। তাই সবচেয়ে কঠিন ভাষা নির্ধারণ করা সহজ কাজ নয়। 

তবে বিজ্ঞানীরা ভেবে দেখেছেন, নিচের ছয়টি ভাষা শিখতে জান বেরিয়ে যায়। এদের খুব জটিল ভাষা হিসেবে নাম আছে। এরা হলো বাস্ক, এসকিমো, নাবাখো, চিপ্পেভা, তাবাসারান, চীনা। 

কেন এদের জটিল বা কঠিন ভাষা বলা হয়, তা জানতে হলে একটু বইপত্র নিয়ে বসতে হবে আপনাকে। সবকিছুর সহজ সমাধান নেই। একটু তো কষ্ট করা দরকার। 

দুই. 
ভাষার মরে যাওয়া নিয়ে কথা না বলে কী করে জন্ম হলো ভাষার, তা নিয়ে কথা বলা যাক। কেউ যদি বলে, আরে, ভাষার সৃষ্টি তো হয়েছে এভাবে—তাহলে বুঝবেন গুল মারছে সে। এখনো ভাষাবিজ্ঞানীরা একেবারে নিখুঁতভাবে বলতে পারেননি, কী করে মানুষ কথা বলা শিখল; কী করে জন্ম হলো ভাষার। 

তবে, কিছু কিছু অনুমান তো করেছেন বিজ্ঞানীরা। না হলে তাঁরা কী করে টিকে থাকবেন? 

একসময় বলা হতো, পশুর ডাকের অনুকরণ করতে করতেই মানুষ তার ভাষা রপ্ত করেছে। ‘বৌ-ঔ তত্ত্ব’ নামে তা বিজ্ঞানী মহলে পরিচিত। বিজ্ঞানীরা বলেন, আগের কালে মানুষ কিছু আওয়াজ করতে শিখেছে পশুদের আদলে। নানা রকম আওয়াজ করে তারা পশুদের তাড়িয়ে দেওয়ার পথ খুঁজত। নানা রকম আওয়াজ করতে করতেই এক সময় একেকটা আওয়াজের একেকটা মানে দাঁড়িয়ে গেল। তারপর কথা বলতে শিখে গেল মানুষ। 

কিন্তু এই তত্ত্ব অনুসরণ করতে গেলে বেশ কিছু ফাঁকফোকর বেরিয়ে আসবে। কত রকম ধ্বনি নিয়ে নিজের মনের ভাব প্রকাশ করে মানুষ। শুধু পশুর ডাক থেকে কি সে রকম শব্দ আবিষ্কার করা সম্ভব? 

‘পুঃ পুঃ তত্ত্ব’ নামে আরেকটি তত্ত্ব নিয়েও মাথা ঘামিয়েছে মানুষ। এটা হচ্ছে যেকোনো ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় মানুষ যখন ‘আঃ’ ‘উঃ’ ইত্যাদি উচ্চারণ করে, সেগুলোই পরে পরিবর্তিত হয়ে সৃষ্টি করেছে ভাষার। 

বিজ্ঞানীরা এ রকম একটা তত্ত্ব দাঁড় করিয়েছেন, ভালো কথা, কিন্তু আদতে কি এই উচ্ছ্বাস-মার্কা ধ্বনির মাধ্যমে ভাষার সৃষ্টি হতে পারে? 

না হে; মন সায় দিচ্ছে না! 

তবে কি ‘ডিং ডং তত্ত্ব’-কে আলিঙ্গন করব? এই তত্ত্ব বলছে, ধ্বনি আর অর্থের মধ্যে সম্পর্ক আছে। কোনো ঘটনা ঘটতে দেখলে আদিম মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে সাড়া দিত। এই সাড়া দেওয়ার সহজাত প্রবণতা থেকেই ধীরে ধীরে জন্ম নিয়েছে ভাষা। 

‘ইয়ো হে হে’ বলে রয়েছে আরেকটি তত্ত্ব। শ্রমিকেরা যখন খুব কঠিন কোনো কাজ করে, তখন সবাই মিলে ছন্দোবদ্ধ কোনো আওয়াজ করে, সেই আওয়াজ থেকেই সৃষ্টি হয়েছে ভাষার। ওই যে ‘হেই সামাল ধান হো/কাস্তেতে দাও শাণহো/জান কবুল আর মান কবুল/আর দেব না আর দেব না রক্তে বোনা ধান মোদের প্রাণ হো।’ এর পর যে ‘হেই সামাল, হেই সামাল’ বলা হয়, তাতে এ রকম একটা সুরের সৃষ্টি হয়। বাড়ির পাইলিং করার সময়ও কেমন সুরে শ্রমিকেরা গান ধরেন, লক্ষ্য করেছেন? সেগুলো থেকেই ভাষার সৃষ্টি। 

তবে তা নিয়েও রয়েছে সন্দেহ। 

‘দেহভঙ্গির তত্ত্ব’ হচ্ছে পরের তত্ত্বটি। আমেরিকার মূল অধিবাসী, যাদের রেড ইন্ডিয়ান নামে এখন বলে মানুষ, তারা দেহভঙ্গি বা জেশ্চারের মাধ্যমে কথা বলত। সাংকেতিক ভাষায় হতো কথোপকথন। কিন্তু সেটা যে ভাষার উৎপত্তির রহস্য উন্মোচন করে দিচ্ছে, এটা মেনে নিতে কষ্ট হয়। 

‘লা লা তত্ত্ব’টিও দারুণ। মানুষের প্রেম, ভালোবাসা, আনন্দানুভূতি থেকে নাকি সৃষ্টি হয়েছে ভাষার! লা লা লা লা লা! আরে ধুর! এটাও কি মেনে নেওয়া যায়? কোনো চিৎকার, সুরেলা আবেগ প্রকাশ কিংবা ভাবোচ্ছ্বাস থেকে কি ভাষার সৃষ্টি হতে পারে? 

এ রকম নানা ধরনের তত্ত্ব ছিল আগে। হালে এর সঙ্গে আরও কিছু যুক্ত হয়েছে। 

এই তত্ত্ব অনুসারে মানব জাতির জৈব ইতিহাস, আর সাংস্কৃতিক ইতিহাসের গভীরে ঢুঁ মারলে ভাষারহস্যের নাগাল পাওয়া যেতে পারে। প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণায় আমরা দেখেছি, মানুষ ও বনমানুষ একই গোত্রের। অর্থাৎ, লাখ লাখ বছর আগে মানুষ আর বনমানুষের পূর্বপুরুষ এক ছিল। 

বিশ লাখ বছর আগে হোমো হাবিলিসরা বাস করত আফ্রিকায়। তাদের তৈরি কিছু যন্ত্রপাতি পাওয়া গেছে। সূক্ষ্ম নয়, কিন্তু যন্ত্র তো! নিজের হাতে তৈরি যন্ত্র! তার মানে পশু থেকে তারা তত দিনে মানুষ হওয়ার পথে পা বাড়িয়েছে। সে সময় যদি তারা কথা বলে ভাবের আদানপ্রদান করতে পারে, তবে তাকে প্রাক্-ভাষা নামে অভিহিত করাই ভালো। 

যাদের আমরা বনমানুষ বলি, তাদের ডাক ছিল বদ্ধ, আর মানুষের ডাক মুক্ত। এই বদ্ধ থেকে লাখ লাখ বছর পার করে তার পর মুক্ত ভাষার সৃষ্টি হয়েছে। বনমানুষের ভাষা থেকে মানুষের ভাষা সৃষ্টি হওয়ার একটা বড় কারণ মানুষের সৃজনীশক্তি। আর একটা জরুরি কথা। চোখের সামনে নেই, সেটার বর্ণনা করতে পারে কেবল মানুষ। আর সেটা সে করে ভাষার সাহায্যে। চোখের সামনে যা নেই, তাকে বোঝানোর জন্য তো একটা নাম বা প্রতীকের দরকার। ভাষা দিয়েই কেবল তাকে চেনানো যায়। ভাষার আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো, একটা শব্দের সঙ্গে আরেকটা কিছু যোগ করে নতুন শব্দ তৈরি করা যায়। গাছ, আগাছা, গেছো—কতগুলো শব্দ তৈরি হয়ে গেল! আর হ্যাঁ, ভাষার মধ্যে তার ঐতিহ্যের সঞ্চালন হয়। মানবশিশু যখন জন্মায়, তখন সে কাঁদতে পারে, কিন্তু তার কোনো ভাষা থাকে না। সে বড় হতে থাকে, অনুকরণ করে করে ভাষা শিখে ফেলে। 

নাহ! ঢের হয়েছে! জটিল হয়ে যাচ্ছে আড্ডাটা। একটু সহজ করা দরকার। 

তিন. 
পৃথিবীতে কত মানুষই তো লেখালেখির সঙ্গে জড়িত। সব ভাষাতেই প্রিয় লেখক আছেন। জনপ্রিয় লেখক আছেন। সেটা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তিতও হয়। বাংলা উপন্যাসে একসময় শরৎচন্দ্র ছিলেন জনপ্রিয়তার শিখরে, তাঁর জায়গা নিয়েছিলেন হ‌ুমায়ূন আহমেদ। এর পর কেউ একজন নিশ্চয়ই আসবেন। কিন্তু এমন অনেক লেখক আছেন, যাঁদের লেখা অন্য ভাষাভাষী মানুষও ভালোবেসে পড়েন। কখনো কখনো তাঁরা এতটাই পাঠকপ্রিয় হয়ে ওঠেন যে, তাঁদের লেখা অনুবাদ করার হিড়িক পড়ে যায়। 

ইউনেসকো অনলাইনে একটা পরিসংখ্যান তুলে ধরেছে। তাতে কোন লেখকের বই সবচেয়ে বেশি অনূদিত হয়েছে, তা দেখা যায়। সেই তালিকায় সবার ওপরের নামটি হোমারের নয়, শেক্‌সপিয়ারের নয়, রবীন্দ্রনাথের নয়। সবার ওপরে আছেন আগাথা ক্রিস্টি। পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষায় ৭ হাজার ২৩৪টি অনুবাদ হয়েছে তাঁর। পরের নামটি জুল ভার্নের। তিনি আছেন ৪ হাজার ৭৫১টি অনুবাদ নিয়ে। অ্যাঁ, শেক্‌সপিয়ার কিন্তু আছেন তার পরেই; ৪ হাজার ২৯৬ জন অনুবাদ করেছেন তাঁকে। লাকি সেভেন হলেন ভ্লাদিমির ইলিচ লেনিন। তাঁর বইয়ের অনুবাদ হয়েছে ৩ হাজার ৫৯৩টি। শিশুসাহিত্যিকদের মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে হান্স ক্রিশ্চিয়ান আন্দেরসেন, তাঁর বইয়ের অনুবাদ হয়েছে ৩ হাজার ৫২০টি। তালিকায় আট নম্বর নামটি তাঁর। মার্ক টোয়েন আছেন ফেওদর দস্তইয়েভ্স্কির চেয়ে এক ধাপ এগিয়ে। ১৫ নম্বরে থাকা মার্ক টোয়েনের অনুবাদ হয়েছে ২ হাজার ৪৩১টি, বেদনার ঋষি দস্তইয়েভ্স্কির অনুবাদ হয়েছে ২ হাজার ৩৪২টি। বাকি নামগুলো বলছি না। তবে যে কেউ সেই ইনডেক্সটি দেখলে বালজাক, তলস্তয়, কাফকা, ডিকেন্সসহ প্রিয় লেখকদের নাম পেয়ে যাবেন। হ্যাঁ, কার্ল মার্ক্সের নাম না থাকার কোনো কারণ নেই। 

চার. 
ইন্টারনেটে সবচেয়ে জনপ্রিয় ভাষা কোনটি? কিংবা প্রথম দশটি ভাষা? 

শুরুতেই কবুল করে নেওয়া দরকার, প্রথম ভাষাটি কোন ভাষা হতে পারে, সেটা আমি না বলে দিলেও যে কেউ অনুমান করে নিতে পারেন। হ্যাঁ, ইংরেজি। একসময় পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় উপনিবেশ করে নিজের ভাষাটাকে পোক্ত করে দিয়ে এসেছে তারা। ফলে এখন অন্তর্জালেও তাদের সদম্ভ উপস্থিতি। অন্তর্জালে যে লেখালেখি হয়, তার ৫২ শতাংশ হয় ইংরেজি ভাষায়। 

এরপরই কিন্তু চীনা ভাষা। ২৬ দশমিক ৩ শতাংশ মানুষ এই ভাষায় অন্তর্জালে ভাবের আদানপ্রদান করে। আমরা সবাই জানি, আন্তর্জাতিকভাবে যুক্তরাষ্ট্র আর চীনের মধ্যে বেশ একটা ঝগড়া চলছে। পৃথিবীতে মোড়লি কে করবে, তা নিয়েই ঝগড়া। অন্তর্জালে ইংরেজি ভাষাভাষী তো শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, তাই নেটের যুদ্ধে ইংরেজির আধিপত্য থাকবে আরও অনেকটা সময় ধরে—এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। 

এর পরেই রয়েছে স্প্যানিশ ভাষা। ২০ দশমিক ৮ শতাংশ মানুষ লেখালেখি করে স্প্যানিশ ভাষায়। বোঝাই যায়, এই ভাষাভাষীদের মধ্যে লাতিন আমেরিকার রয়েছে বড় অবদান। ইতিহাসের কোনো এক কালে এই মহাদেশকে পদানত করেছিল স্পেন দেশের মানুষেরা, তার ক্ষত আজও বহন করছে মহাদেশটির মানুষ। এরপর রয়েছে যথাক্রমে আরবি, পর্তুগিজ, জাপানি, মালয়ি, রুশ, ফরাসি ও জার্মান ভাষা। 

না, এই বিশাল জগতে বাংলাকে দেখা যাচ্ছে না। দেখা যাবে কী করে, বাঙালি তো বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ইংরেজিতেই মেইল করতে অভ্যস্ত। আলাপও চালায় ইংরেজিতে, অতএব…।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আমাদের অর্জন অনেক

সম্পাদকীয়
আমাদের অর্জন অনেক

...এটা অনস্বীকার্য যে আমরা বিজয়ী। আমরা জয়ী আর শোষকেরা পরাজিত হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্বপ্ন সামনে রেখেই, তাঁদের ত্যাগকে স্বীকার করেই আমরা সংবিধানের সপ্তম অনুচ্ছেদে বলেছিলাম, ‘জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস’। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে তারা তাদের সরকার নির্ধারণ করবে।

এগুলো নিয়ে কোনো বিতর্ক আছে বলে মনে করি না। কিন্তু বর্তমানে এটা কী হচ্ছে? যদি বলি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সঠিক পথে এগোচ্ছে না, তাহলে সেই না এগোনোর কারণটা কী, তা নিয়ে কেন অর্থপূর্ণ আলোচনা হচ্ছে না? আমি আপনাদের কাছে প্রশ্ন আকারেই উত্থাপন করছি। আমাদের অর্জন অনেক। আজ আমাদের গার্মেন্টসশিল্প বিশ্বে তৃতীয়। আমরা খুব দ্রুত দ্বিতীয় বা প্রথমের কাতারে চলে যাব। আমাদের লাখ লাখ ছেলে-মেয়ে বিদেশে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে দেশে টাকা পাঠাচ্ছে। প্রতিবছর কৃষির উৎপাদন বাড়ছে। কিন্তু এসবের পরেও কী হচ্ছে? বিলিয়ন বিলিয়ন টাকা বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে।

... পাকিস্তানিদের কথা আর কী বলব! আক্ষরিক অর্থেই তারা তখন আমাদের পা ধরেছিল। ‘তোমরা এদের ছেড়ে দাও, আমরা নিজের দেশে নিয়ে গিয়ে এদের বিচার করব।’ ১৯৫ জনকে আমরা চিহ্নিত করি তখন। বঙ্গবন্ধু তখন রাশিয়াতে ছিলেন, তারা সেখানে বঙ্গবন্ধুর কাছে লোক পাঠিয়েছে। বঙ্গবন্ধুকে বলেছে, ‘আপনারা যদি এ বিচার করেন তাহলে ভুট্টোর কল্লা থাকবে না। আমাদের কাছে ফেরত দিন, আমরা এদের বিচার করব।’ এটা সে সময় ‘লন্ডন টাইমস’-এ প্রকাশিত হয়েছে। একেবারে তারা আন্ডারটেকিং দিয়েছে, ‘ছেড়ে দিন, আমরা বিচার করব। আর কোনো সাক্ষী লাগলে তোমাদের ডেকে পাঠানো হবে।’ শিল্পকলা একাডেমির যে বিল্ডিং ভেঙে এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট হয়েছে, ওই বিল্ডিংয়ে ভর্তি ছিল স্টেটমেন্টগুলো। এগুলো কী হয়েছে, কে গুম করেছে, আমি জানি না। এর মধ্যে অনেক সরকার এসেছে, গেছে। তবে আমরা খুব পরিশ্রম করেই এগুলো সংগ্রহ করেছিলাম।

সূত্র: শারমিনুর নাহার কর্তৃক ড. কামাল হোসেনের সাক্ষাৎকার গ্রহণ; ‘সময় সমাজ ও রাজনীতির ভাষ্য’, পৃষ্ঠা: ৩১-৩২।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

এবার অক্সফোর্ডের বর্ষসেরা শব্দ ‘রেজ বেইট’—এর অর্থ কী

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২: ০৮
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

ইন্টারনেটে স্ক্রল করতে করতে এমন কিছু কনটেন্ট হঠাৎই চোখে পড়ে, যা দেখে মনে হয়—ইচ্ছে করেই আপনাকে রাগীয়ে তুলতে চাইছে! এই ধরনের প্ররোচনামূলক উপাদানকেই বলা হয় ‘রেজ বেইট’। অনলাইন দুনিয়ায় এর ব্যাপক বিস্তার ও প্রভাব বিবেচনায় নিয়ে অক্সফোর্ড ডিকশনারি ২০২৫ সালের ‘ওয়ার্ড অব দ্য ইয়ার’ হিসেবে এই শব্দটিকেই বেছে নিয়েছে।

অক্সফোর্ড জানিয়েছে, চলতি বছর ‘রেজ বেইট’ শব্দের ব্যবহার তিন গুণ বেড়েছে। এর মধ্য দিয়ে বোঝা যাচ্ছে, মানুষ এখন আগের চেয়ে দ্রুত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অ্যালগরিদম প্রভাবিত বিতর্কে জড়িয়ে পড়ছে। ক্ষুদ্র কোনো বিষয়ও মুহূর্তের মধ্যে রাগ, ক্ষোভ ও বিভাজন তৈরি করছে—যা মূলত এনগেজমেন্ট বাড়ানোর কৌশল।

‘রেজ বেইট’ সব সময় যে বিপজ্জনক হবে, এমন নয়। কখনো এটি হতে পারে অদ্ভুত কোনো রেসিপি বা এমন ভিডিও যেখানে কেউ নিজের পোষা প্রাণী বা পরিবারের সদস্যকে মজার ছলে বিরক্ত করছে। তবে রাজনীতি ও জনপরিসরেও এখন এটি শক্তিশালী হাতিয়ার। কারণ প্ররোচিত ক্ষোভ ও প্রতিক্রিয়ার ঢেউ অনেক সময়ই রাজনৈতিক প্রচারণাকে আরও উসকে দেয়।

শুধু অক্সফোর্ড নয়, প্রায় সব বড় অভিধানই এবার ইন্টারনেট-সম্পর্কিত শব্দকেই ‘ওয়ার্ড অব দ্য ইয়ার’ হিসেবে বেছে নিয়েছে। এবার কলিন্স ডিকশনারির বেছে নেওয়া শব্দটি হলো ‘ভয়েস কোডিং’। যেখানে এআই ব্যবহার করে মানুষের ভাষাকে কম্পিউটার কোডে রূপান্তর করা হয়। অন্যদিকে ক্যামব্রিজ ডিকশনারি বেছে নিয়েছে ‘প্যারাসোশ্যাল’ শব্দটি, যা অনলাইনে অপরিচিত কারও সঙ্গে গড়ে ওঠা একতরফা সম্পর্ককে নির্দেশ করে।

গত বছর (২০২৪) অক্সফোর্ড বেছে নিয়েছিল ‘ব্রেইন রট’ শব্দটি, যা ছিল মূলত অবিরাম স্ক্রলিংয়ে মানসিক ক্লান্তির রূপকার্থ। অক্সফোর্ড ল্যাংগুয়েজেসের প্রেসিডেন্ট ক্যাসপার গ্র্যাথওহলের মতে, ‘রেজ বেইট’ এবং ‘ব্রেন রট’—দুটি শব্দই দেখায় কীভাবে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম আমাদের চিন্তা ও আচরণকে বদলে দিচ্ছে। একটি প্ররোচিত রাগ বাড়ায়, অন্যটি সেই রাগের মধ্যেই মানুষকে আবিষ্ট রাখে।

এ বছর অক্সফোর্ড সাধারণ মানুষের ভোটে ‘ওয়ার্ড অব দ্য ইয়ার’ নির্বাচন করেছে। সংক্ষিপ্ত তালিকায় ছিল আরও দুটি শব্দ—‘অরা ফার্মিং’ ও ‘বায়োহ্যাক’। আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব তৈরি করার কৌশলকে বোঝাতে ‘অরা ফার্মিং’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়, আর শারীরিক ও মানসিক সক্ষমতা বাড়াতে জীবনযাপনে প্রযুক্তিগত পরিবর্তন আনার প্রক্রিয়াকে বলা হয় ‘বায়োহ্যাক’।

শেষ পর্যন্ত ‘রেজ বেইট’ শব্দটিই জিতেছে—যে শব্দের মধ্য দিয়ে আজকের অনলাইন জীবনের রাগ, প্রতিক্রিয়া এবং ক্লান্তির বাস্তবতা সবচেয়ে স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রাষ্ট্রীয় সংস্কার করতে গিয়ে প্রাণ দিয়েছেন যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জেমস গারফিল্ড। ছবি: ব্রিটানিকা
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জেমস গারফিল্ড। ছবি: ব্রিটানিকা

উনিশ শতকের শেষভাগে মার্কিন ইতিহাসে এক ট্র্যাজিক অধ্যায় রচনা করেছিলেন প্রেসিডেন্ট জেমস এ. গারফিল্ড। ১৮৮১ সালের মার্চ মাসে শপথ গ্রহণের মাত্র চার মাসের মাথায় তিনি আততায়ীর গুলিতে আহত হন। পরবর্তীকালে চিকিৎসকের চরম অবহেলা ও অজ্ঞতার শিকার হয়ে সেপসিসে (সংক্রমণ) ভুগে মারা যান। সেই মর্মান্তিক ঘটনা, গারফিল্ডের জীবন ও তাঁর উত্তরাধিকার নিয়ে এবার নেটফ্লিক্স-এ আসছে চার পর্বের ড্রামা সিরিজ, ‘ডেথ বাই লাইটনিং’।

প্রেসিডেন্টের উত্থান ও প্রগতিশীল এজেন্ডা

১৮৮০ সালে আমেরিকা এক কঠিন সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়েছিল। সদ্য দাসপ্রথা বিলুপ্তির পর আফ্রিকান-আমেরিকানরা কি নাগরিক হিসেবে পূর্ণ অধিকার পাবেন? নাকি রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সরকারি চাকরি বণ্টনের সেই দীর্ঘদিনের দুর্নীতিগ্রস্ত ‘পচে যাওয়ার ব্যবস্থা’ অব্যাহত থাকবে? রিপাবলিকান ন্যাশনাল কনভেনশনে ওহাইও-এর জনপ্রিয় কংগ্রেসম্যান জেমস গারফিল্ড এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খোঁজার আহ্বান জানান। দারিদ্র্য থেকে উঠে আসা, গৃহযুদ্ধে অসামান্য বীরত্ব দেখানো এই কমান্ডার নভেম্বরে দেশের ২০ তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।

প্রেসিডেন্ট হিসেবে গারফিল্ড উচ্চাভিলাষী এজেন্ডা নিয়ে কাজ শুরু করেন। এর মধ্যে ছিল: মার্কিন নৌবাহিনীর আধুনিকীকরণ, লাতিন আমেরিকার সঙ্গে বাণিজ্য বাড়ানো এবং বিশেষত নাগরিক অধিকারের পক্ষে জোরালো সওয়াল করা। তিনি সাবেক ক্রীতদাস ফ্রেডরিক ডগলাসকে ডিস্ট্রিক্ট অব কলাম্বিয়ার রেকর্ডার অব ডিডস পদে নিযুক্ত করেন। একজন আফ্রিকান-আমেরিকানের জন্য প্রথম সারির একটি কেন্দ্রীয় পদ পাওয়ার বিরল ঘটনা ছিল এটি।

হত্যার নেপথ্যে

১৮৮১ সালের ২ জুলাই ওয়াশিংটন ডিসি-র রেলওয়ে স্টেশনে চার্লস এল. গুইটো নামক এক মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তি গারফিল্ডকে গুলি করে। গুইটো তার জীবনকাল ধরে একজন ব্যর্থ আইনজীবী, সাংবাদিক, ধর্মপ্রচারক এবং ফ্রি লাভ কমিউনের সদস্য হিসেবে এক ব্যর্থ অ্যাকটিভিস্ট ছিলেন। তা সত্ত্বেও, তিনি বিশ্বাস করতেন, ঈশ্বর তাকে মহৎ উদ্দেশ্যের জন্য সৃষ্টি করেছেন। গারফিল্ডের মনোনয়নের পর তিনি তাঁর সমর্থনের বিনিময়ে প্যারিসে গুরুত্বপূর্ণ কনস্যুলার পদ দাবি করে হোয়াইট হাউসে ধরনা করতেন। প্রেসিডেন্ট ‘প্যাট্রোনেজ সিস্টেম’-এর ঘোর বিরোধী হওয়ায় তাঁকে প্রত্যাখ্যান করা হয়। প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পরই গুইটো সিদ্ধান্ত নেন—গারফিল্ডকে হত্যা করে ভাইস প্রেসিডেন্ট চেস্টার এ. আর্থারকে ক্ষমতায় আনার ‘ঈশ্বর প্রদত্ত নির্দেশ’ তাঁর ওপর বর্তেছে।

আসল খুনি কে?

লেখক ক্যান্ডিস মিলার্ড তাঁর বেস্ট সেলিং বই ডেসটিনি অব দ্য রিপাবলিক-এ তুলে ধরেছেন, গারফিল্ডের মৃত্যুর প্রধান কারণ ছিল চিকিৎসার চরম অব্যবস্থা। ড. উইলফ্রেড ব্লিস নামক দাম্ভিক চিকিৎসক গারফিল্ডের চিকিৎসার দায়িত্ব নেন। তিনি ব্রিটিশ সার্জন জোসেফ লিস্টার কর্তৃক প্রবর্তিত আধুনিক অ্যান্টিসেপটিক পদ্ধতিকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করেন। ব্লিস জীবাণুমুক্ত নয় এমন যন্ত্র এবং খালি হাত ব্যবহার করে প্রেসিডেন্টের মেরুদণ্ডের কাছে থাকা গুলিটি খুঁজে বের করার চেষ্টা করেন। এর ফলে সংক্রমণ (সেপসিস) ছড়িয়ে পড়ে। এমনকি, গুলি খুঁজতে আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল তাঁর সদ্য আবিষ্কৃত প্রারম্ভিক মেটাল ডিটেক্টর ব্যবহার করেছিলেন, কিন্তু ব্লিসের অসহযোগিতার কারণে সেটিও ব্যর্থ হয়। শট নেওয়ার প্রায় আশি দিন পর প্রেসিডেন্ট মারা যান এবং এই মৃত্যুর সম্পূর্ণ দায় ড. ব্লিসের ওপর বর্তায়।

রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব

প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরও গারফিল্ডকে নিউইয়র্কের প্রভাবশালী রিপাবলিকান সিনেটর রোসকো কনকলিং-এর বিরোধিতা মোকাবিলা করতে হয়েছিল। কনকলিং প্যাট্রোনেজ সিস্টেমের সমর্থক ছিলেন এবং গারফিল্ডের প্রগতিশীল ভাবধারা পছন্দ করতেন না। মাকোভস্কি বিবিসিকে জানান, এই সিরিজের মূল আকর্ষণ হলো ইতিহাসের সেই ‘যদি’ প্রশ্নটি—যদি প্রেসিডেন্ট গারফিল্ড বেঁচে থাকতেন, তবে তিনি হয়তো আমেরিকার অন্যতম সেরা প্রেসিডেন্ট হতে পারতেন। মাকোভস্কির মতে, ‘গারফিল্ডের অসাধারণ মেধা ছিল। তাঁকে যে আজ ইতিহাসে একটি অস্পষ্ট পাদটীকা হিসেবে স্থান দেওয়া হয়, তা এক ট্র্যাজেডি।’

অভিনেতা মাইকেল শ্যানন গারফিল্ডের ‘ঐশ্বর্য ও মর্যাদা, বিশেষ করে তাঁর শালীনতা’ অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে ফুটিয়ে তুলেছেন বলে মন্তব্য করেছেন লেখক মিলার্ড।

গারফিল্ডের উত্তরাধিকার ও আইন সংস্কার

মাত্র ৪৯ বছর বয়সে গারফিল্ডের মৃত্যু পুরো জাতিকে নাড়িয়ে দেয় এবং দেশজুড়ে সরকারি চাকরি সংস্কারের দাবি জোরালো হয়। জনগণের ক্ষোভের কারণেই ভাইস প্রেসিডেন্ট চেস্টার এ. আর্থার, যিনি একসময় প্যাট্রোনেজ সিস্টেমের সমর্থক হিসেবে পরিচিত ছিলেন, তিনিই ১৮৮৩ সালে ‘পেন্ডলটন অ্যাক্ট’-এ স্বাক্ষর করেন। এই আইনের মাধ্যমে সরকারি চাকরিতে ‘যোগ্যতা-ভিত্তিক’ নিয়োগের নীতি শুরু হয়, যা মার্কিন সরকারি আমলাতন্ত্রের পেশাদারি নিশ্চিত করার পথ দেখায়। এইভাবে, এক মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ড আমেরিকার শাসনব্যবস্থার ইতিহাসে এক স্থায়ী প্রগতিশীল পরিবর্তন এনে দেয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জল্লাদখানা বধ্যভূমি

সম্পাদকীয়
জল্লাদখানা বধ্যভূমি

ঢাকার মিরপুর ১০ নম্বর সেকশনের ডি-ব্লকের বধ্যভূমিটি ‘জল্লাদখানা বধ্যভূমি’ নামে পরিচিত। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী, রাজাকার, আলবদর ও বিহারিরা এখানে বাঙালিদের ধরে এনে হত্যা করত। মিরপুর খালের পাশে এক নির্জন এলাকায় দুটি পয়োনিষ্কাশন ট্যাংকের ওপর ছিল একটি পরিত্যক্ত পাম্পহাউস। ঘাতকেরা এ জায়গাকে বেছে নিয়েছিল বধ্যভূমি হিসেবে।

স্বাধীনতার পরপরই এই বধ্যভূমির সন্ধান যখন পাওয়া যায়, তখন প্রত্যক্ষদর্শীরা সেখানে অসংখ্য বাঙালির কঙ্কাল দেখতে পান। স্থানীয় জনগণ জল্লাদখানার পাশে সে কঙ্কালগুলো দাফন করেন। এ পাম্পহাউসের ভেতরে উঁচু এক বেদিতে লেখা ছিল ‘জল্লাদখানা’। এখানে অনেক বাঙালিকে জবাই করে হত্যা করা হয়েছিল।

তথ্য: সংগ্রামের নোটবুক

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত