১৯৪৮ সালের ভাষা আন্দোলনের কথা বিস্তারিতভাবে বলার আগে সেই ইতিহাস সৃষ্টিকারী সময়টিতে রাষ্ট্রভাষা নিয়ে যে আলোচনাগুলো হচ্ছিল, তার একটি অবয়ব তুলে আনা দরকার। উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার বিরুদ্ধে সর্বপ্রথম লেখক সম্প্রদায়ই প্রতিবাদ জানিয়েছিল। সে সময় বাঙালি-অবাঙালি নির্বিশেষে পূর্ব পাকিস্তানের মুসলিম নেতা...
এর মধ্যে দুই দিন হয়ে গেছে, কিন্তু দৃশ্যটা আমার মন থেকে সরছে না। একটা শিশুকে কোলে নিয়ে একজন মা দাঁড়িয়ে আছেন জলকামান থেকে ছোড়া প্রবল পানির তোড়ের সামনে। হতবিহ্বল শিশুটি ভয়ে আতঙ্কে জড়িয়ে ধরে আছে মাকে। পত্রিকার প্রথম পাতায় ছবিটি দেখে আমি থমকে গেলাম। আমি নিজে দীর্ঘদিন সাংবাদিকতা করেছি, রিপোর্টিং করেছি।
বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন আমাদের ‘বাংলা’ ভাষা দিয়েছে। ভাষা আন্দোলন এ ভূখণ্ডের জনগণের মাতৃভাষা হিসেবে ‘বাংলা’কে প্রতিষ্ঠিত করতে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে। আমরা তাই বাংলায় কথা বলি। শুধু তা-ই নয়, ভাষা আন্দোলন বাঙালি জাতির স্বাধিকার আন্দোলনের এক মহা মূলমন্ত্র, বড় হাতিয়ার হিসেবে পরিগণিত হয়েছে, প্রমাণিত হয়েছে।
সাধারণভাবে নতুন স্মৃতি পুরোনোকে মনে রাখা কঠিন করে তোলে। ফলে অনেক ক্ষেত্রে ভুলে যাওয়া খুব সাধারণ ও স্বাভাবিক একটি বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। এ বিষয়টি মস্তিষ্ক দ্বারা পরিচালিত হয়। আবার ইতিহাসের এমন এমন কিছু অধ্যায় মস্তিষ্কের কুঠরিতে এমনভাবে জায়গা করে নেয়, যা আর মানুষ ভুলতে পারে না।
আজ পবিত্র শবে বরাত। ১৪ শাবানের দিন শেষে আসা এ রাতটি ইসলামের দৃষ্টিতে অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ। ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যে বিশ্বজুড়েই মুসলমানরা এ রাত উদ্যাপন করে থাকেন। ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা এ রাতে দল বেঁধে মসজিদে গমন করেন এবং রাতজুড়ে আল্লাহর ইবাদতে মগ্ন হন।
বেশ কিছুদিন যাবৎ বিভিন্ন কলেজের ছাত্রদের মধ্যে সংঘর্ষ রীতিমতো উদ্বেগজনক অবস্থায় গিয়ে পৌঁছেছে। অনেক জায়গায়ই মাঝে মাঝে সংঘর্ষ হচ্ছে, সেসব টেলিভিশনের পর্দায় দেখেছি, খবরের কাগজে পড়েছি এবং নানা প্রত্যক্ষদর্শীর কাছ থেকে শুনেছি। কিন্তু ৯ ফেব্রুয়ারি আমি নিজেই প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে বেশ শঙ্কিত হয়েছি।
বাঙালি লোকসংস্কৃতির একটি অতিপরিচিত শব্দ হলো গাজন। গ্রাম-বাংলার অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি লোক-উৎসব গাজন। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পালনীয় এই উৎসবটির নাম কীভাবে গাজন হলো? আমরা কি জানি ঠিক কোন শব্দের সাদৃশ্যে এই উৎসবটির নাম গাজন রাখা হলো? আমরা জানি পচন বা গেঁজে ওঠা ফেনাকে বলে গাঁজন।
অন্তর্বর্তী সরকারের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার ভ্যালেন্টাইনস ডে নিয়ে যেন তামাশা না হয় সে কথা লিখেছেন তাঁর ফেসবুক পাতায়। ফেসবুক নিজস্ব, সুতরাং সেখানে যে কেউ তাঁর মনের কথা লিখতেই পারেন। কিন্তু এটাও স্বাধীনতার মতোই একটা ব্যাপার। স্ব-অধীনতা না থাকলে সেই স্বাধীনতা মূল্যহীন।
হিন্দি না উর্দু—জাতীয় ভাষা কোনটা হবে, এ নিয়ে বিতর্ক চলছিল দীর্ঘদিন ধরে। হিন্দু নেতারা চাইছিলেন হিন্দি হোক ভারতের জাতীয় ভাষা, আর মুসলমান নেতারা চাইছিলেন জাতীয় ভাষা হোক উর্দু। ভারত আর পাকিস্তানে দেশটা বাঁটোয়ারা হয়ে যাওয়ার অনেক আগের কথা সেটা। বাংলা প্রসঙ্গটি তখন সেভাবে আসেনি...
আগেই বলা হয়েছে, বাঙালি মুসলমানকে মুঘল আমলেও দেশের প্রশাসনিক কাজে যুক্ত করা হয়নি। বাইরে থেকে যাঁরা এসেছিলেন, তাঁরা এই অঞ্চলের হিন্দুদেরই দেশ শাসনে সঙ্গে নিয়েছিলেন। ফলে মুসলিম শাসকদের ইংরেজরা হটিয়ে দিলেও বাংলার গরিব মুসলমানদের তাতে কিছু আসে যায়নি।
এ মাস গেলেই পবিত্র রমজান মাস। দীর্ঘ এক মাস সংযমের পর আসবে পবিত্র ঈদ। তখনই আবার উঠবে বোরো, যা এখন আমাদের প্রধান ফসল। অর্থাৎ আগামী দুই-তিন মাস আমাদের অর্থনীতির জন্য ব্যস্ত সময়। গুরুত্বপূর্ণও বটে। এর আরেক কারণ, এই সময়টা আবার ২০২৪-২৫ অর্থবছরের শেষ ত্রৈমাসিক। এখন বেচাকেনায় মন্দা চলছে।
গাঙ্গুবাঈ কাঠিয়াওয়াড়ি গত শতাব্দীর সেই পঞ্চাশ-ষাটের দশকেই বুঝতে পেরেছিলেন শিক্ষার কোনো বিকল্প হয় না। যৌনকর্মীদের অধিকারের জন্য লড়াই করা, তাঁদের সন্তানদের শিক্ষা নিশ্চিতকরতে স্কুল-কলেজে গিয়ে কথা বলা—যেন সমাজে তারা মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে—এসব যুদ্ধ তিনি একাই করেছিলেন।
ভোর বা প্রভাতে উদ্বোধনী গান গেয়ে জনগণকে জাগানোর নামই প্রভাতফেরি। এটি প্রভাতফেরির আভিধানিক সংজ্ঞা। মূলত ২১ ফেব্রুয়ারি ভোরে গান গেয়ে ভাষাশহীদদের ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর যে যাত্রা, সেটিই আমাদের জন্য প্রভাতফেরি। ১৯৫৩ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি কাকডাকা ভোরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ছাত্রীরা অংশ নিয়েছিল...
‘ইটের বদলে পাটকেল/আর চোখের বদলে চোখ/পৃথিবীটা অন্ধ হয়তো হোক’—এই মন্ত্রেই যেন এখন সবাই চলছে। চারদিকে কেবল হিংসা আর হিংসা। চারদিকে সম্মিলিত কণ্ঠে অবিরত ঘোষণা আসছে—‘ওকে ঘৃণা জানাও’, ‘ওর গায়ে থুতু দাও’, ‘ওকে স্তব্ধ কর’, ‘ওকে দেশান্তরী কর’, ‘ওকে বিনাশ কর’। মানুষ এখন হিংসা ছাড়া যেন আর কিছুই চিন্তা করতে
পৃথিবীর প্রতিটি জাতির আত্মপরিচয়ের মাপকাঠি হচ্ছে জাতীয়তা আর প্রধান অনুষঙ্গ ভাষা। ভাষা দিয়েই জাতীয়তার পরিচয় নির্ধারণ করা যায়। বিশ্বের অগণিত জাতিসত্তার মানুষ কে কোন জাতীয়তার, সেটা নিরূপণ করা যায় ভাষার দ্বারাই। ভাষা মানুষের অবিচ্ছেদ্য এবং সার্বক্ষণিক সঙ্গী। ভাষাবিহীন মানুষ অচল।
একটি সমাজ যখন সংকটে পড়ে, তখন বুদ্ধিজীবীরা তার দিকনির্দেশক হয়ে ওঠেন। তাঁদের কাজ শুধু লিখে যাওয়া নয়; তাঁরা সমাজের আয়না, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী কণ্ঠ। কিন্তু আমাদের সময়ে? দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি
পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা কী হবে, সে প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা করলে প্রথমেই বলতে হবে, বাংলার রাজনীতিক, লেখক-বুদ্ধিজীবী কেউই বাংলাকে দেশটির একক রাষ্ট্রভাষা হিসেবে দাবি করেননি। পাকিস্তান রাষ্ট্রটি বিশেষ ভৌগোলিক-সাংস্কৃতিক বাস্তবতার কারণে একক রাষ্ট্রভাষার দেশ হিসেবে পরিচিত হতে পারে না।