নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

প্রথমত আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদন ও অর্থনীতির বিশ্লেষকেরা ভারত মহাসাগরের দ্বীপ শ্রীলঙ্কার বিপর্যয়ের যেসব কারণ তুলে ধরছেন, সেগুলো বিবেচনা করলে দেখা যায়, বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এই ঝুঁকিগুলো সেভাবে নেই।
শ্রীলঙ্কায় অর্থনৈতিক ধ্বসের কারণ
- করোনার দুই বছরে পর্যটননির্ভর শ্রীলঙ্কান সরকারের রাজস্ব আয়ের খাতে ধস নেমেছে। পর্যটকদের ভ্রমণ বন্ধ থাকায় কার্যত এই খাত থেকে দেশটির আয় হয়নি। কিন্তু পর্যটক আকৃষ্ট করতে নানা প্রকল্পে আগে নেওয়া বিপুল পরিমাণ বিদেশি ঋণের কিস্তি ঠিকই পরিশোধ করতে হয়েছে।
- শিল্প উৎপাদনে ধস নেমেছে, রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্সও পৌঁছেছে তলানিতে। পাশাপাশি কর ও ভ্যাট কমানো, কৃষিতে রাসায়নিকের ব্যবহার শূন্যতে নামিয়ে আনার কারণে উৎপাদনের ঘাটতি, সব মিলিয়ে কিছু ভুল পরিকল্পনা আর মহামারিতে এই দশা হয়েছে দেশটির।
অন্যদিকে, বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার অর্থনীতির গতিপ্রকৃতি ভিন্ন।
- বাংলাদেশে খাদ্য উৎপাদন ঘাটতি নেই।
- বাংলাদেশের রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্সের পরিমাণ দিন দিন বাড়ছে। এখন পর্যন্ত কোন নিম্নমুখী দেখা যায়নি।
- আমাদের প্রধান খাদ্য আমদানি নির্ভর নয়।
- বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪৪ দশমিক ৪০ বিলিয়ন ডলার। আর শ্রীলঙ্কার রিজার্ভ ২ বিলিয়ন ডলারেরও কম।
- বাংলাদেশের বিদেশি ঋণও শ্রীলঙ্কার মতো মাথাপিছু এত বেশি নয়। বাংলাদেশের মাথাপিছু ঋণের পরিমাণ ২৯২.১১ যা শ্রীলঙ্কার মাথাপিছু ১৬৫০ ডলার।
অর্থাৎ শ্রীলঙ্কার মতো হওয়ার একটি কারণও নেই বাংলাদেশের।
দুই দেশের মেগা প্রকল্পের ব্যয় ও বাস্তবতা
চলতি বছরের শেষে পদ্মা সেতু চালু হবে, মেট্রোরেল, বঙ্গবন্ধু টানেলসহ আরও কয়েকটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলও চালু হবে এ বছরই। এসব প্রকল্প চালু হলে বাংলাদেশের উন্নয়নে নতুন মাত্রা যোগ হবে। বেড়ে যাবে মোট দেশজ উৎপাদন।
গত ১৫ বছরে শ্রীলঙ্কায় সমুদ্রবন্দর, বিমানবন্দর, রাস্তা এবং আরও নানা প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। রাজধানী কলম্বোর কাছেই সমুদ্র থেকে ভূমি উদ্ধার করে কলম্বো পোর্ট সিটি নামে আরেকটি শহর তৈরি করা হচ্ছে। এর কাজ শেষ হতে সময় লাগবে ২৫ বছর এবং বাজেট ধরা হয়েছে প্রায় দেড় বিলিয়ন ডলার। এই শহরটি হংকং, দুবাই ও সিঙ্গাপুরকে টেক্কা দেবে—এমন কথা বলা হচ্ছে। এ ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য বিভিন্ন উৎস থেকে শ্রীলঙ্কা ঋণ নিয়েছে, কিন্তু বিপুল অর্থ খরচ করা হলেও অনেক প্রকল্প অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক হয়নি।
গত এক দশকে চীনের কাছ থেকেই শ্রীলঙ্কা ঋণ নিয়েছে পাঁচ বিলিয়ন ডলার, যা তাদের মোট ঋণের ১০ শতাংশ।
অন্যদিকে বাংলাদেশের নেওয়া মেগা প্রকল্প পদ্মা সেতু, কর্ণফুলী টানেল, মেট্রো রেল, ঢাকার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র, রামপাল কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র, মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র, পায়রা সমুদ্রবন্দর, গভীর সমুদ্রবন্দর, এলএনজি টার্মিনাল বাস্তবায়ন করছে। তার একটাও অপ্রয়োজনীয় নয়; সবই গুরুত্বপূর্ণ। এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে সঙ্গে সঙ্গে রিটার্ন আসবে। দেশে বিনিয়োগ বাড়বে। কর্মসংস্থান হবে। জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাড়বে।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে বাংলাদেশের ছোট-বড় সব প্রকল্পেই কিন্তু বিশ্বব্যাংক, এডিবি, আইডিবি, জাইকাসহ অন্য উন্নয়ন সংস্থার ঋণ এবং নিজের অর্থ যোগ করেছে। এসব সংস্থার সুদের হার খুবই কম। অনেক বছর ধরে শোধ করা যায়। কোনো কোনো ঋণ অবশ্য পরবর্তী সময়ে অনুদান হিসেবে অন্য প্রকল্পেও দেয়। বিশেষ করে জাইকার বেশির ভাগ ঋণের ক্ষেত্রে এমনটা হয়ে থাকে।
অন্যদিকে শ্রীলঙ্কা চীনের কাছ থেকে সাপ্লায়ার্স ক্রেডিট (যে দেশ টাকা দেবে, সে দেশ থেকে পণ্য কেনা) ঋণ নিয়ে বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। প্রয়োজন নেই, এমন অনেক প্রকল্পও তারা করেছে। এসব প্রকল্পের সুদের হার অনেক বেশি। সেসব ঋণ সুদে-আসলে পরিশোধ করতে গিয়েই এখন বিপদে পড়েছে শ্রীলঙ্কা।
দুই দেশের রেমিট্যান্সের চিত্র
জানুয়ারিতে মাত্র ২৭ কোটি ১০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছে শ্রীলঙ্কায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের মার্চ মাসের তথ্য অনুযায়ী ১৮৬ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। গত ২০২০-২১ অর্থবছরে করোনা মহামারির মধ্যেও ২৪ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলারের রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী সোয়া কোটি বাংলাদেশি।
রপ্তানি আয়ের তুলনা
করোনা মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্যেও বাংলাদেশ রপ্তানি আয়ে চমক দেখিয়ে চলেছে। গত অর্থবছরে ১৭ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছিল। চলতি অর্থবছরের ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) প্রবৃদ্ধি হয়েছে তারও দ্বিগুণ ৩৩ দশমিক ৪১ শতাংশ। শ্রীলঙ্কায় রপ্তানি আয় তলানিতে নেমেছে। রেমিট্যান্সের অবস্থাও করুণ।
মার্চ মাসের রপ্তানি আয়ের তথ্য প্রকাশ করেছে বাংলাদেশের রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)। তাতে দেখা যায়, এই মাসে পণ্য রপ্তানি থেকে ৪ দশমিক ৭৬ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ।
জানুয়ারিতে শ্রীলঙ্কা পণ্য রপ্তানি থেকে আয় করেছে ১ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার।
অর্থাৎ করোনা শ্রীলঙ্কার রপ্তানি আয়ে ধস নামালেও বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ঘটেছে উল্টো। করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসার পর এই আয় এখন আরও বাড়ছে।
শ্রীলঙ্কার রিজার্ভ বনাম বাংলাদেশের রিজার্ভ
৪ এপ্রিল বাংলাদেশের রিজার্ভ ছিল ৪৪ দশমিক ৪০ বিলিয়ন ডলার। আর শ্রীলঙ্কার রিজার্ভ ২ বিলিয়ন ডলারেরও কম। গত জানুয়ারি মাস শেষে শ্রীলঙ্কার রিজার্ভ ছিল ২ দশমিক ৩৬ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ করোনার ধাক্কা শ্রীলঙ্কার রিজার্ভকে তলানিতে নিয়ে এলেও বাংলাদেশে তেমনটা হয়নি। সেটি বেড়েছে বহুলাংশে। মাঝে একবার ৪৮ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছিল।
অন্যদিকে করোনা মহামারি আসার পর থেকেই রিজার্ভ সংকটে ভুগছে শ্রীলঙ্কা। রিজার্ভ বাড়াতে গত বছরের মে মাসে সোয়াপ কারেন্সির মাধ্যমে বাংলাদেশের কাছে ২৫ কোটি ডলার ঋণ চেয়েছিল শ্রীলঙ্কা। বাংলাদেশ তা দিয়েছে। ওই ঋণ এখনো শোধ করেনি দেশটি। এরই মধ্যে আরও ২৫ কোটি ডলার চেয়েছে।
শ্রীলঙ্কায় কৃষিতে ব্যর্থতা বনাম বাংলাদেশে সাফল্য
২০১৯ সালে ক্ষমতাসীন হওয়ার পর শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসে দেশে অরগানিক কৃষি চালু করেন। তিনি কৃষিতে রাসায়নিক সার এবং কীটনাশক ব্যবহার নিষিদ্ধ করেন। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে দেশটিতে। চালের উৎপাদন কমে যায় ২০ শতাংশ পর্যন্ত। চাল উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ শ্রীলঙ্কা তখন প্রায় অর্ধ বিলিয়ন ডলারের চাল আমদানি করতে বাধ্য হয়। এর প্রভাবে ব্যাপকভাবে বেড়ে যায় পণ্যটির দাম।
অরগানিক কৃষির নেতিবাচক প্রভাব পড়ে দেশটির চা উৎপাদনেও। এই পণ্যটি রপ্তানিতেও দেখা দেয় নেতিবাচক প্রভাব।
অন্যদিকে বাংলাদেশ চাল উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ এবং উৎপাদন বছর বছর বাড়ছেই। এর মধ্যেও সরকার বেসরকারি পর্যায়ে চাল আমদানির অনুমতি দেওয়ার পর এই মুহূর্তে খাদ্যের মজুত ইতিহাসের সর্বোচ্চ পর্যায়ে।
বাংলাদেশে প্রচুর খাদ্য মজুত আছে। সরকারি গুদামগুলোতে মজুত অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি, ২০ লাখ টনের মতো। কয়েক বছর বাম্পার ফলন হওয়ায় মানুষের কাছেও প্রচুর ধান-চাল মজুত আছে। তাই খাদ্য নিয়ে এক-দুই বছর বাংলাদেশকে ভাবতে হচ্ছে না। মূল্যস্ফীতি শ্রীলঙ্কার মতো ২০ শতাংশে ওঠার কোনো কারণ নেই।

প্রথমত আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদন ও অর্থনীতির বিশ্লেষকেরা ভারত মহাসাগরের দ্বীপ শ্রীলঙ্কার বিপর্যয়ের যেসব কারণ তুলে ধরছেন, সেগুলো বিবেচনা করলে দেখা যায়, বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এই ঝুঁকিগুলো সেভাবে নেই।
শ্রীলঙ্কায় অর্থনৈতিক ধ্বসের কারণ
- করোনার দুই বছরে পর্যটননির্ভর শ্রীলঙ্কান সরকারের রাজস্ব আয়ের খাতে ধস নেমেছে। পর্যটকদের ভ্রমণ বন্ধ থাকায় কার্যত এই খাত থেকে দেশটির আয় হয়নি। কিন্তু পর্যটক আকৃষ্ট করতে নানা প্রকল্পে আগে নেওয়া বিপুল পরিমাণ বিদেশি ঋণের কিস্তি ঠিকই পরিশোধ করতে হয়েছে।
- শিল্প উৎপাদনে ধস নেমেছে, রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্সও পৌঁছেছে তলানিতে। পাশাপাশি কর ও ভ্যাট কমানো, কৃষিতে রাসায়নিকের ব্যবহার শূন্যতে নামিয়ে আনার কারণে উৎপাদনের ঘাটতি, সব মিলিয়ে কিছু ভুল পরিকল্পনা আর মহামারিতে এই দশা হয়েছে দেশটির।
অন্যদিকে, বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার অর্থনীতির গতিপ্রকৃতি ভিন্ন।
- বাংলাদেশে খাদ্য উৎপাদন ঘাটতি নেই।
- বাংলাদেশের রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্সের পরিমাণ দিন দিন বাড়ছে। এখন পর্যন্ত কোন নিম্নমুখী দেখা যায়নি।
- আমাদের প্রধান খাদ্য আমদানি নির্ভর নয়।
- বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪৪ দশমিক ৪০ বিলিয়ন ডলার। আর শ্রীলঙ্কার রিজার্ভ ২ বিলিয়ন ডলারেরও কম।
- বাংলাদেশের বিদেশি ঋণও শ্রীলঙ্কার মতো মাথাপিছু এত বেশি নয়। বাংলাদেশের মাথাপিছু ঋণের পরিমাণ ২৯২.১১ যা শ্রীলঙ্কার মাথাপিছু ১৬৫০ ডলার।
অর্থাৎ শ্রীলঙ্কার মতো হওয়ার একটি কারণও নেই বাংলাদেশের।
দুই দেশের মেগা প্রকল্পের ব্যয় ও বাস্তবতা
চলতি বছরের শেষে পদ্মা সেতু চালু হবে, মেট্রোরেল, বঙ্গবন্ধু টানেলসহ আরও কয়েকটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলও চালু হবে এ বছরই। এসব প্রকল্প চালু হলে বাংলাদেশের উন্নয়নে নতুন মাত্রা যোগ হবে। বেড়ে যাবে মোট দেশজ উৎপাদন।
গত ১৫ বছরে শ্রীলঙ্কায় সমুদ্রবন্দর, বিমানবন্দর, রাস্তা এবং আরও নানা প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। রাজধানী কলম্বোর কাছেই সমুদ্র থেকে ভূমি উদ্ধার করে কলম্বো পোর্ট সিটি নামে আরেকটি শহর তৈরি করা হচ্ছে। এর কাজ শেষ হতে সময় লাগবে ২৫ বছর এবং বাজেট ধরা হয়েছে প্রায় দেড় বিলিয়ন ডলার। এই শহরটি হংকং, দুবাই ও সিঙ্গাপুরকে টেক্কা দেবে—এমন কথা বলা হচ্ছে। এ ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য বিভিন্ন উৎস থেকে শ্রীলঙ্কা ঋণ নিয়েছে, কিন্তু বিপুল অর্থ খরচ করা হলেও অনেক প্রকল্প অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক হয়নি।
গত এক দশকে চীনের কাছ থেকেই শ্রীলঙ্কা ঋণ নিয়েছে পাঁচ বিলিয়ন ডলার, যা তাদের মোট ঋণের ১০ শতাংশ।
অন্যদিকে বাংলাদেশের নেওয়া মেগা প্রকল্প পদ্মা সেতু, কর্ণফুলী টানেল, মেট্রো রেল, ঢাকার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র, রামপাল কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র, মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র, পায়রা সমুদ্রবন্দর, গভীর সমুদ্রবন্দর, এলএনজি টার্মিনাল বাস্তবায়ন করছে। তার একটাও অপ্রয়োজনীয় নয়; সবই গুরুত্বপূর্ণ। এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে সঙ্গে সঙ্গে রিটার্ন আসবে। দেশে বিনিয়োগ বাড়বে। কর্মসংস্থান হবে। জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাড়বে।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে বাংলাদেশের ছোট-বড় সব প্রকল্পেই কিন্তু বিশ্বব্যাংক, এডিবি, আইডিবি, জাইকাসহ অন্য উন্নয়ন সংস্থার ঋণ এবং নিজের অর্থ যোগ করেছে। এসব সংস্থার সুদের হার খুবই কম। অনেক বছর ধরে শোধ করা যায়। কোনো কোনো ঋণ অবশ্য পরবর্তী সময়ে অনুদান হিসেবে অন্য প্রকল্পেও দেয়। বিশেষ করে জাইকার বেশির ভাগ ঋণের ক্ষেত্রে এমনটা হয়ে থাকে।
অন্যদিকে শ্রীলঙ্কা চীনের কাছ থেকে সাপ্লায়ার্স ক্রেডিট (যে দেশ টাকা দেবে, সে দেশ থেকে পণ্য কেনা) ঋণ নিয়ে বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। প্রয়োজন নেই, এমন অনেক প্রকল্পও তারা করেছে। এসব প্রকল্পের সুদের হার অনেক বেশি। সেসব ঋণ সুদে-আসলে পরিশোধ করতে গিয়েই এখন বিপদে পড়েছে শ্রীলঙ্কা।
দুই দেশের রেমিট্যান্সের চিত্র
জানুয়ারিতে মাত্র ২৭ কোটি ১০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছে শ্রীলঙ্কায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের মার্চ মাসের তথ্য অনুযায়ী ১৮৬ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। গত ২০২০-২১ অর্থবছরে করোনা মহামারির মধ্যেও ২৪ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলারের রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী সোয়া কোটি বাংলাদেশি।
রপ্তানি আয়ের তুলনা
করোনা মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্যেও বাংলাদেশ রপ্তানি আয়ে চমক দেখিয়ে চলেছে। গত অর্থবছরে ১৭ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছিল। চলতি অর্থবছরের ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) প্রবৃদ্ধি হয়েছে তারও দ্বিগুণ ৩৩ দশমিক ৪১ শতাংশ। শ্রীলঙ্কায় রপ্তানি আয় তলানিতে নেমেছে। রেমিট্যান্সের অবস্থাও করুণ।
মার্চ মাসের রপ্তানি আয়ের তথ্য প্রকাশ করেছে বাংলাদেশের রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)। তাতে দেখা যায়, এই মাসে পণ্য রপ্তানি থেকে ৪ দশমিক ৭৬ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ।
জানুয়ারিতে শ্রীলঙ্কা পণ্য রপ্তানি থেকে আয় করেছে ১ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার।
অর্থাৎ করোনা শ্রীলঙ্কার রপ্তানি আয়ে ধস নামালেও বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ঘটেছে উল্টো। করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসার পর এই আয় এখন আরও বাড়ছে।
শ্রীলঙ্কার রিজার্ভ বনাম বাংলাদেশের রিজার্ভ
৪ এপ্রিল বাংলাদেশের রিজার্ভ ছিল ৪৪ দশমিক ৪০ বিলিয়ন ডলার। আর শ্রীলঙ্কার রিজার্ভ ২ বিলিয়ন ডলারেরও কম। গত জানুয়ারি মাস শেষে শ্রীলঙ্কার রিজার্ভ ছিল ২ দশমিক ৩৬ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ করোনার ধাক্কা শ্রীলঙ্কার রিজার্ভকে তলানিতে নিয়ে এলেও বাংলাদেশে তেমনটা হয়নি। সেটি বেড়েছে বহুলাংশে। মাঝে একবার ৪৮ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছিল।
অন্যদিকে করোনা মহামারি আসার পর থেকেই রিজার্ভ সংকটে ভুগছে শ্রীলঙ্কা। রিজার্ভ বাড়াতে গত বছরের মে মাসে সোয়াপ কারেন্সির মাধ্যমে বাংলাদেশের কাছে ২৫ কোটি ডলার ঋণ চেয়েছিল শ্রীলঙ্কা। বাংলাদেশ তা দিয়েছে। ওই ঋণ এখনো শোধ করেনি দেশটি। এরই মধ্যে আরও ২৫ কোটি ডলার চেয়েছে।
শ্রীলঙ্কায় কৃষিতে ব্যর্থতা বনাম বাংলাদেশে সাফল্য
২০১৯ সালে ক্ষমতাসীন হওয়ার পর শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসে দেশে অরগানিক কৃষি চালু করেন। তিনি কৃষিতে রাসায়নিক সার এবং কীটনাশক ব্যবহার নিষিদ্ধ করেন। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে দেশটিতে। চালের উৎপাদন কমে যায় ২০ শতাংশ পর্যন্ত। চাল উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ শ্রীলঙ্কা তখন প্রায় অর্ধ বিলিয়ন ডলারের চাল আমদানি করতে বাধ্য হয়। এর প্রভাবে ব্যাপকভাবে বেড়ে যায় পণ্যটির দাম।
অরগানিক কৃষির নেতিবাচক প্রভাব পড়ে দেশটির চা উৎপাদনেও। এই পণ্যটি রপ্তানিতেও দেখা দেয় নেতিবাচক প্রভাব।
অন্যদিকে বাংলাদেশ চাল উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ এবং উৎপাদন বছর বছর বাড়ছেই। এর মধ্যেও সরকার বেসরকারি পর্যায়ে চাল আমদানির অনুমতি দেওয়ার পর এই মুহূর্তে খাদ্যের মজুত ইতিহাসের সর্বোচ্চ পর্যায়ে।
বাংলাদেশে প্রচুর খাদ্য মজুত আছে। সরকারি গুদামগুলোতে মজুত অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি, ২০ লাখ টনের মতো। কয়েক বছর বাম্পার ফলন হওয়ায় মানুষের কাছেও প্রচুর ধান-চাল মজুত আছে। তাই খাদ্য নিয়ে এক-দুই বছর বাংলাদেশকে ভাবতে হচ্ছে না। মূল্যস্ফীতি শ্রীলঙ্কার মতো ২০ শতাংশে ওঠার কোনো কারণ নেই।

তিনবারের প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার প্রয়াণে তাঁর জ্যেষ্ঠ পুত্র এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে গভীর শোক ও সমবেদনা জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
৫ ঘণ্টা আগে
পোস্টে প্রেস সচিব লিখেছেন, ‘শহীদ বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুর পর থেকে আমার মনে হচ্ছে তিনি (মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর) ভীষণ একা হয়ে পড়েছেন। একত্রে এই দুই নেতা আমাদের রাজনৈতিক ইতিহাসের অন্যতম এক সম্মানিত ও নির্ভরযোগ্য অংশীদারিত্বের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন। সহমর্মিতা এবং নীরবে ধৈর্য ধরার ক্ষমতার...
৭ ঘণ্টা আগে
জেলা বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব মাহমুদুল হক সানু জানান, রাজধানীতে নিজ বাসায় বর্ষীয়ান এ রাজনীতিকের মৃত্যু হয়েছে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার বাদ জোহর টাঙ্গাইল শহরের বিন্দুবাসিনী সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে মরহুমের নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।
৮ ঘণ্টা আগে
সদ্য সমাপ্ত ২০২৫ সালে সারা দেশে অন্তত ৪২৮টি গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে, যা ২০২৪ সালের তুলনায় দ্বিগুণের বেশি। ২০২৪ সালে গণপিটুনির ১৬৯টি ঘটনায় নিহত হয়েছিল ১৪৬ জন এবং আহত ছিল ১২৬ জন। আর ২০২৫ সালে গণপিটুনিতে ১৬৬ জন নিহত হয়েছে, আহত হয়েছে ৪৬০ জন। ২২০ জনকে আহতাবস্থায় পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে। গণপিটুনির ঘটনায় আহত
৯ ঘণ্টা আগে