হোম > অর্থনীতি

ব্যাংকে গড়াচ্ছে সঞ্চয়পত্রের টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

বিভিন্ন সঞ্চয়পত্রের সরকারনির্ধারিত বর্তমান সুদহার সর্বোচ্চ ১১ শতাংশ। অপরদিকে ব্যাংকের ঋণ ও আমাতের সুদহার যথাক্রমে ১৮ শতাংশ ও ১৫ শতাংশের কাছাকাছি। আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বেলায় ঋণের সুদহার দাঁড়িয়েছে ২০-২২ শতাংশে। অর্থাৎ সঞ্চয়পত্রে সুদহার তুলনামূলক কম হওয়ায় সঞ্চয়ধারীর মুনাফাও কম হচ্ছে। এই বাস্তবতায় সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োজিত অর্থ এখন তুলে নিচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। তাঁরা এখন বেশি লাভের আশায় সেই অর্থ ব্যাংকের আমানত হিসেবে খাটাচ্ছেন। সঞ্চয়পত্র ভেঙে টাকা ব্যাংকে স্থানান্তরের প্রভাব পড়েছে সঞ্চয়পত্রের স্থিতিতে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, বিক্রির চাপ বাড়ায় এক বছরে সঞ্চয়পত্রে ঋণাত্মক স্থিতি দাঁড়িয়েছে ২১ হাজার ১২৪ কোটি টাকা।

মূলত গত অর্থবছরের শুরু থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনায় স্মার্ট পদ্ধতিতে ব্যাংকের সুদহারে ৯ শতাংশের সর্বোচ্চ সীমা তুলে দেওয়া হয়। এরপর ধাপে ধাপে বাড়তে থাকে সুদহার। এই ঊর্ধ্বমুখী পরিস্থিতিতেই চলতি বছরের মে থেকে সুদহার নির্ধারণের পদ্ধতিটি বাজারভিত্তিক হয়। এতেই চলতে থাকে ব্যাংকের ঋণ ও আমানতের সুদহার। একই পথ অনুসরণ করে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোও।

এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, ব্যাংকের তারল্যসংকটে আমানতের চাহিদা বেড়ে গেছে। অনেক ব্যাংক উচ্চ হারে আমানত সংগ্রহ করছে; যা সঞ্চয়পত্রের চেয়ে ৪-৫ টাকা বেশি। তাই বেশি সুদ পেতে সঞ্চয়পত্র ভেঙে গ্রাহক ব্যাংকে টাকা রাখতে বাড়তি আগ্রহ পাচ্ছেন। এতে ব্যাংক আমানত বাড়ছে। বিপরীতক্রমে সঞ্চয়পত্রে ভাটা পড়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, বিদায়ী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম দুই মাস (জুলাই-আগস্ট) সঞ্চয়পত্র নিট বিক্রি ৫ হাজার ৫৬২ কোটি টাকা ইতিবাচক ছিল। তবে এরপর থেকে নিট বিক্রি ঋণাত্মক হতে থাকে। সেপ্টেম্বরে ঋণাত্মক হয় ১৪৭ কোটি, অক্টোবরে ১ হাজার ৪০ কোটি, নভেম্বরে ১ হাজার ৫৫৪ কোটি এবং ডিসেম্বরে ২ হাজার ২০৪ কোটি টাকা। জানুয়ারিতেও একই ধারা অব্যাহত থাকে, যার ঋণাত্মক স্থিতি দাঁড়ায় ১ হাজার ২৮৭ কোটিতে। পরে সেটি ফেব্রুয়ারিতে ১ হাজার ৫৪১ কোটি এবং মার্চে ৩ হাজার ৬৫৩ কোটি, এপ্রিলে ২ হাজার ১০৩ কোটি এবং মে মাসে ঋণাত্মক স্থিতি ছিল ৩ হাজার ৯৪ কোটি ৭১ লাখ টাকা।

এর বিপরীতে চলতি বছরের মার্চে ব্যাংকে আমানতের পরিমাণ ছিল ১৬ লাখ ৭৫ হাজার কোটি টাকা; যা এপ্রিলে ১৬ লাখ ৮১ হাজার কোটি, মে মাসে ১৭ লাখ ১ হাজার কোটি এবং জুন মাসে আমানতের পরিমাণ দাঁড়ায় ১৭ লাখ ৪২ হাজার কোটি টাকায়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গবেষণা বিভাগের কর্মকর্তা নুরুন্নাহার বেগম বলেন, একসময় সারি ধরে মানুষ সঞ্চয়পত্র কিনতেন; এখন তা উল্টে গেছে। সারি ধরে মানুষ এখন সঞ্চয়পত্র ভেঙে টাকা তুলে নিয়ে রাখছেন ব্যাংকে। কারণ, সঞ্চয়পত্রের তুলনায় ব্যাংকে কমপক্ষে ৪-৫ টাকা বেশি সুদ পাওয়া যায়। এ ছাড়া শর্তের বেড়াজালেও নতুন গ্রাহক সঞ্চয়পত্র কিনতে আগ্রহ হারাচ্ছেন। এতে সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমছে, আর ব্যাংকের আমানত বাড়ছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, সদ্য বিদায়ী অর্থবছরের জুন মাসে সঞ্চয়পত্র নিট বিক্রি ঋণাত্মক হয়েছে ৩ হাজার ৩৮১ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। অর্থাৎ বিক্রির চেয়ে আগের আসল ও সুদ বাবদ ৩ হাজার ৩৮১ কোটি ৪৩ লাখ টাকা বেশি পরিশোধ করতে হয়েছে সরকারকে। অন্যদিকে মানুষ নতুন বিনিয়োগ তো করছেই না; বরং আগের সঞ্চয়পত্রের বিনিয়োগও নবায়ন না করে ভেঙে ফেলছে। ফলে এর পেছনে সরকারের খরচ বেড়েছে। তবে ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুন মাসে সঞ্চয়পত্র নিট বিক্রির ধারা নেতিবাচক ২৬৭ কোটি ২৩ লাখ টাকা।

আরও খবর পড়ুন:

তেল-পেঁয়াজে দাম বাড়তি, সবজিতে ফিরছে স্বস্তি

উত্তরা ব্যাংকের ২৫০তম শাখার উদ্বোধন

টানা চার মাস কমল রপ্তানি আয়

৯ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিল সিগারেট কোম্পানি

১২তম জাতীয় এসএমই পণ্য মেলা শুরু রোববার

প্রশান্ত মহাসাগরে দুই প্রকল্পের অনুমোদন দিল এডিবি-বিশ্বব্যাংক

এক ব্যক্তি ও তিন প্রতিষ্ঠানকে ১৬ কোটি টাকা জরিমানা

১৪টি বন্ধ পাটকল বেসরকারি খাতে, আরও হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে: বাণিজ্য উপদেষ্টা

মেট্রো রেলস্টেশনে ৯টি সুপারস্টোর চালু করবে এমজিআই

জনতা ব্যাংক পিএলসির ৮৬৬তম বোর্ড সভা অনুষ্ঠিত