হোম > খেলা > অন্য খেলা

‘এত দিনেও খেলার ভালো পরিবেশ পাইনি’

জহির উদ্দিন মিশু, ঢাকা

৪৫তম দাবা অলিম্পিয়াডে ভালো করেনি বাংলাদেশ। তবে আট ম্যাচের সাতটিতে জিতে আলো ছড়িয়েছেন রানী হামিদ। সোমবার হাঙ্গেরি থেকে দেশের বিমান ধরার আগে সৌরভ ছড়ানো আসর আর ক্যারিয়ারের এপিঠ-ওপিঠ নিয়ে গল্পের ঝাঁপি খুলে বসেন দাবার রানি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জহির উদ্দিন মিশু

প্রশ্ন: সেই ১৯৮৪ থেকে শুরু। দাবার সঙ্গে আপনার বন্ধনটা প্রায় ৪০ বছরের। কীভাবে খেলাটার প্রেমে পড়লেন?
রানী হামিদ: একদিন আমার স্বামী এসে বলল, পেপারে নিউজ দেখলাম। তুমি খেলবা নাকি। আমি তো পুরোপুরি গৃহিণী, চার বাচ্চার মা। কীভাবে কী করি। ও খুব করে বলল। শেষ পর্যন্ত আর চুপ থাকতে পারিনি। সে সময় জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ জেতা ডা. আকমল হোসেন ছিলেন আমার প্রতিবেশী এবং ওনার মিসেস ছিলেন আমার ক্লাসফ্রেন্ডের বড় বোন, ওনাদের সঙ্গে বিষয়টি খোলামেলা আলাপ করলাম। এরপর একটা সময় মনে হলো, যাই না একবার, দেখি কী হয়। তারাও খুব সহযোগিতা করলেন। এরপর খেলতে গেলাম। সেই যে শুরু, আর ছাড়তে পারলাম না।

প্রশ্ন: দীর্ঘ ক্যারিয়ার রাঙাতে পরিবার, মা-বাবা থেকে কতটা উৎসাহ বা সমর্থন পেয়েছেন?
রানী: আমার বাবাও দাবা খেলতেন। ছোটবেলা থেকে তাঁকে নিয়মিত দাবা খেলতে দেখতাম। তখন দাবা খেলার আমাদের কোনো অনুমতি ছিল না। তখন আউটডোর গেমস খেলার কথা বলা হতো। এই বাইরে যাও, দৌড়াও, ফুটবল খেলো, ক্রিকেট খেলো, ব্যাডমিন্টন খেলো...যা ইচ্ছে তাই খেলো, কিন্তু দাবা নয়। তখন এই বিষয়টাও প্রচলিত ছিল, বুড়োরা শুধু দাবা খেলবে, বসে বসে খেলা তো। এখন প্রেক্ষাপট উল্টো। এখন তো বুড়োরা বলে, এটা বাচ্চাদের খেলা। হ্যাঁ, এটা ঠিক, আমি কোনো দিনও আজকের রানী হামিদ হতে পারতাম না, যদি পরিবার থেকে সমর্থন না পেতাম।

প্রশ্ন: দেশের হয়ে প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ জেতার পরের কোনো স্মৃতি মনে আছে?
রানী: হ্যাঁ, মনে তো আছেই। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরের কথা। তখন এতটা মাতামাতি ছিল না। আমরাও কোনোরকমে খেলে যাচ্ছিলাম। আর তখন পাকিস্তানের চ্যাম্পিয়নকে আমি হারিয়ে দিই। পুরো হলরুমে তালি পড়ে ৷ দেশ থেকেও অনেক প্রশংসা শুনতে পাই। আসলে ওই স্মৃতি ওই দিনটা কখনো ভুলতে পারব না।

প্রশ্ন: এবার হাঙ্গেরিতে দলগত পারফরম্যান্স বাজে হলো। কিন্তু আপনি খেলেছেন সত্যিকারের রানীর মতো—আট ম্যাচে সাত জয়। এই অনুভূতি কেমন?
রানী: আসলে আমি নিজেও অবাক। ভুল করিনি, এলোমেলো খেলিনি, এভাবে জিতলাম একের পর এক ম্যাচ। তবে এটা ঠিক, এখানকার আবহাওয়াটা ভালো ছিল। ঠান্ডার দেশ, মাথাটাও ঠান্ডা ছিল। বাংলাদেশে গরমে মাথাও গরম হয়ে যায়। বিদ্যুৎ থাকে না অনেক সময়। ফেডারেশনে ছোট একটা রুম। আমরা তো একটা বড় রুমও পাই না। এত বছর ধরে দাবা খেলছি ঠিকই, খেলার একটা ভালো জায়গা পাই না। খেলার সুন্দর একটা পরিবেশ পাই না। তাই অনেক সময় ভুল হয়ে যায়, হেরে যাই। আমি যেদিন হারলাম, সেদিন এখানেও খুব গরম পড়েছিল। রুমের এসি হঠাৎ কাজ করছিল না। আমার টিম ক্যাপ্টেন বলল, ও নিজে বেশ কয়েকবার পানি দিয়ে হাতমুখ ধুয়েছে। দেশেও এটা হয়। আর একটা বাজে অভ্যাসও আমার আছে; সেটা হলো, কিছু না দেখে হুট করে চাল দেওয়া। বুড়ো হয়েছি বলে না। আগে থেকেই এটা হয়ে আসছে।

প্রশ্ন: আজ বা কাল আপনাকেও বিদায় বলতে হবে। যাঁরা এখনো তরুণ, তাঁদের নিয়ে, বাংলাদেশে দাবার ভবিষ্যৎ বিষয়ে কতটা আশাবাদী?
রানী: তাহসিন, নীড়—এদের সম্ভাবনা রয়েছে। এখন কথা হলো, খেলাটার পেছনে কে কতটুকু সময় দেয়, সেটাই বড় বিষয়। তাদের নিয়ে আশা করাই যায়। তা ছাড়া তারা সব ধরনের সাপোর্টও পাচ্ছে। আনসার, নৌবাহিনী থেকে সাপোর্ট পাচ্ছে। আশা করা যায়, দু-চার বছরের মধ্যে দারুণ কয়েকজন দাবাড়ু পাব আমরা। এই দু-চার বছরের মধ্যে যদি ইতিবাচক কিছু দেখতে না পাই, তাহলে মনে হয়, বাংলাদেশ আর কোনো দিন দাবায় এগোবে না।

প্রশ্ন: বয়সের ঘড়ি ছুটছে, সঙ্গে আপনিও। এরই মধ্যে আশিটি বসন্ত পার করেছেন। আর কত দিন দাবার বোর্ডটা আগলে রাখতে চান?
রানী: শরীর যত দিন চলবে। শরীর না চললে তো তারাও (ফেডারেশন) আমাকে এই দূরদেশে আনবে না। এবারও তারা আনতে ভয় পাচ্ছিল। কী করি না করি, বিশাল অঙ্কের একটা বিমা করেছে, যাতে অসুস্থ হলে এখানে সেবা পাই (...হাসি)। আসলে আমি নিজেও শঙ্কিত ছিলাম পারব কি না। যাক, আল্লাহর রহমতে পেরেছি। এখানে এসে খেললাম, ছোটাছুটি করলাম, বৃষ্টিতে ভিজলাম—সবকিছু ঠিকঠাকভাবেই শেষ হলো।

প্রশ্ন: তাহলে আপনাকে পরের অলিম্পিয়াডেও দেখতে পাব?
রানী: শরীরের অবস্থা দেখে তো বুঝতে পারছি না। দেখা যাক কী হয়। শরীর ঠিক থাকলে ইনশা আল্লাহ চেষ্টা চালিয়ে যাব। খেলা তো আর ছাড়ছি না। যতক্ষণ শরীর ভালো আছে, চলবে।

প্রশ্ন: যারা দাবায় আসতে চায় কিংবা এই খেলাকে পেশা ও নেশা হিসেবে নিতে চায়, তাদের জন্য কী পরামর্শ?
রানী: প্রথম পরামর্শ তাদের অভিভাবকদের জন্য। অভিভাবকদের অবশ্যই ধৈর্য ধরতে হবে, অপেক্ষা করতে হবে। অনেক সময় অভিভাবকদের জ্বালায় বাচ্চারা খেলা ছেড়ে দেয়। কারণ, হারলেই তারা রাগ করে, বকাঝকা করে। দেখুন, হারতে তো হবেই। নতুন যারা আসবে, তারা কি ধরেই জিততে পারবে। এখন তো খুব সহজ হয়ে গেছে খেলাটা। এখন তারা ইন্টারনেটে দেখতে পায়, শিখতে পায়, বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা যখন খেলে, তাদের খেলা দেখতে পায়। আবার মফস্বলের অনেকে জানেও না কীভাবে খেলতে হয়। যেমন একজন ফেসবুকে লিখেছে, আমার ছেলে অলিম্পিয়াডে খেলতে চায়। কিন্তু তার এই ধারণাটা হয়তো নেই যে অলিম্পিয়াডে খেলতে হলে যে তাকে আগে দেশে খেলতে হবে, জাতীয় পর্যায়ে খেলতে হবে। তবে গ্রামে-গঞ্জে দাবা খেলাটা কিন্তু আছে। তারা যখন সংবাদপত্রে দেখে আমরা খেলছি, তখন তাদেরও ইচ্ছা হয়। কিন্তু এখানে সাংগঠনিক দুর্বলতা আছে। আমার মনে হয়, এখনো তৃণমূল পর্যায়ে ঠিকমতো জোর দেওয়া হয় না।

ফাইনালে পারলেন না জুমার-ঊর্মি

আন্তর্জাতিক ব্যাডমিন্টনে সোনার লড়াইয়ে বাংলাদেশের জুমার-ঊর্মি

আমিরুলদের ৬০ লাখ টাকা পুরস্কার, সমস্যার কথা বলতে চান ক্রীড়া উপদেষ্টাকে

এক বছরে তিতাসের জোড়া শিরোপা

‘আগে জানত না, বিশ্বকাপের পর এখন বাংলাদেশকে সবাই চেনে’

আমিরুলের পঞ্চম হ্যাটট্রিক, বিশ্বকাপে বাংলাদেশের শিরোপা

ভালো করেও আমিরুলদের অনিশ্চয়তা

আমিরুলের হ্যাটট্রিকে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ঘুরে দাঁড়ানো জয়

ওমানের জালে বাংলাদেশের ১৩ গোল, আমিরুল-রকির হ্যাটট্রিক

ফ্রান্সের বিপক্ষে লড়াই করেও পারল না বাংলাদেশ