হোম > সারা দেশ > রাজশাহী

র‍্যাবের হেফাজতে মৃত্যু: যুগ্ম সচিবের মামলা নিয়ে পুলিশের কথা বলতে মানা

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

র‍্যাবের হেফাজতে ভূমি অফিসের কর্মচারী সুলতানা জেসমিন (৩৮) মারা যাওয়ার আগে যুগ্ম সচিব মো. এনামুল হক তাঁর বিরুদ্ধে যে মামলা করেছেন, তার অগ্রগতি নিয়ে কোনো কথা বলছে না পুলিশ। এই বিষয়ে কথা বলার ক্ষেত্রে ঊর্ধ্বতনরা নিষেধ করে রেখেছেন বলে জানিয়েছেন মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। 

রাজশাহী নগরীর রাজপাড়া থানায় ২৩ মার্চ বিকেলে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে এই মামলা করেন স্থানীয় সরকারের বিভাগীয় পরিচালক মো. এনামুল হক। মামলাটির তদন্ত করছেন থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সুভাষ চন্দ্র বর্মন। এই মামলার ২ নম্বর আসামি ছিলেন জেসমিন। আর প্রধান আসামি মো. আল-আমিন নামের এক ব্যক্তি। যার বাড়ি চাঁদপুর। 

মামলার বাদী এনামুল হক আজকের পত্রিকাকে বলেছিলেন, প্রধান আসামি আল-আমিন গ্রেপ্তার হলেই নানা প্রশ্নের উত্তর মিলবে। বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজপাড়া থানায় গেলে তদন্ত কর্মকর্তা সুভাষ চন্দ্র বর্মন বলেন, এই মামলার বিষয়ে কথা বলতে ঊর্ধ্বতনরা নিষেধ করেছেন। যা বলার তা বলবেন রাজশাহী নগর পুলিশের (আরএমপি) মুখপাত্র রফিকুল আলম। তিনি রফিকুল আলমের সঙ্গেই কথা বলার পরামর্শ দেন। 

একই পরামর্শ দেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) দায়িত্বে থাকা পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) রুহুল আমিন। জানতে চাইলে আরএমপির মুখপাত্র অতিরিক্ত উপকমিশনার রফিকুল আলম বলেন, ‘এই মামলাটা এখন আদালতে বিচারাধীন বিষয়। এটা নিয়ে কোনো কথা বলা যাবে না।’ মামলার তদন্তে র‍্যাব সহায়তা করছে কি না জানতে চাইলে তিনি একই মন্তব্য করেন। 

যুগ্ম সচিব মো. এনামুল হকের মৌখিক অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ২২ মার্চ সকালে নওগাঁর ভূমি অফিসের কর্মচারী জেসমিনকে আটক করে র‍্যাব-৫ এর রাজশাহীর একটি দল। সেদিনই তাকে প্রথমে নওগাঁয় এবং পরে রাজশাহীতে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ২৪ মার্চ র‍্যাবের হেফাজতেই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জেসমিন মারা যান। তার মাথায় এবং হাতে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। জেসমিন আটকের পরদিন ২৩ মার্চ তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করেন এনামুল। 

এজাহারে তিনি দাবি করেন, মামলার অপর আসামি আল-আমিন ও জেসমিন তাঁর নামে ফেসবুক আইডি খুলে এবং দাপ্তরিক কাজের ছবি ব্যবহার করে প্রতারণা করছিলেন। 

কিন্তু মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্টরা গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলতে চাচ্ছেন না বলে তদন্তের প্রকৃত বাস্তবতা কী-তা নিয়ে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, আলোচিত মামলাটি নিয়ে নিষ্ক্রিয় রয়েছে পুলিশ। এভাবে সময়ক্ষেপণ করা হচ্ছে। 
 
মামলার এজাহারে এনামুল হক অভিযোগ করেছেন, গত ১৯ মার্চ সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টার মধ্যে আসামিরা রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের সামনে চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন। কিন্তু মামলা দায়েরের সময় এনামুল হক প্রয়োজনীয় প্রামাণিক পুলিশকে দিয়েছেন কি না তা নিয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে। 

রাজশাহীর আইনজীবী হাবিবুর রহমান বলেন, যদি সামাজিক কোনো মাধ্যমে অপরাধ সংঘটিত হয়ে থাকে, সে ক্ষেত্রে তার স্ক্রিন শর্ট, অডিওর মাধ্যমে হলে অডিওভিজ্যুয়াল গ্যাজেট, ভিডিও মাধ্যমে হলে ভিডিও কনটেন্টসহ আনুষঙ্গিক তথ্য প্রমাণাদি এজাহারের সঙ্গে অবশ্যই যুক্ত করতে হবে। বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের সামনে যেহেতু অফিস সময়ে অপরাধ সংঘটনের কথা বলা হয়েছে; সে ক্ষেত্রে সিসিটিভি ফুটেজেও আসামিদের অবস্থান ও অপরাধ কর্মকাণ্ড শনাক্ত হওয়ার কথা। আসলেই কী কী প্রমাণ আছে তা জানানো উচিত।  

এদিকে কাল শুক্রবার রাজশাহীর জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আবুল হাসনাত বেগের নেতৃত্বে একদল আইনজীবী ঘটনাস্থল নওগাঁ যাবেন বলে জানা গেছে। জেসমিনকে তুলে নেওয়া থেকে শুরু করে পরবর্তী ৪ ঘণ্টায় তাঁকে কোথায় রাখা হয়েছিল, প্রত্যক্ষদর্শী এবং এই বিষয়ে সুলতানা জেসমিনের স্বজন, অফিসের সহকর্মী ছাড়াও নওগাঁ সদর হাসপাতালের চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলবেন তারা। রাজশাহী ফিরে তাঁরা একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করবেন। 

মৃত্যুর পর স্বজনেরা অভিযোগ করেছেন, নির্যাতনের কারণে জেসমিনের মৃত্যু হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন প্রকাশের পরই। আগামী ৫ এপ্রিলের মধ্যে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন হাইকোর্টে জমা দেওয়ার নির্দেশ রয়েছে। তবে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত প্রতিবেদন প্রস্তুত হয়নি বলে জানিয়েছেন মরদেহের ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক ও রাজশাহী মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. কফিল উদ্দিন। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি বলে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনও প্রস্তুত হয়নি। প্রতিবেদন প্রস্তুত হলে এ বিষয়ে গণমাধ্যমকে জানানো হবে।

আরও খবর পড়ুন:

গভীর নলকূপ খনন: বরেন্দ্রজুড়ে শত শত মৃত্যুকূপ

শিশু সাজিদের শেষ বিদায়ে হাজারো মানুষের ঢল

আমার একটা কলিজা হারায় ফেলছি, বিচার চাই: সাজিদের বাবা

প্রাথমিকে শতভাগ বই, মাধ্যমিকে এল অর্ধেক

সব চেষ্টা—আকুতি বিফলে, মায়ের কোলে মৃত সাজিদ

শিশু সাজিদ মারা গেছে

শিশু সাজিদকে উদ্ধার, নেওয়া হয়েছে হাসপাতালে

শিশু সাজিদের বাঁচার আশা নেই, বন্ধ করা হয়েছে অক্সিজেন

বাড়ির পাশে পরিত্যক্ত ৩ গর্ত, শাস্তি চান সাজিদের মা

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আট দিনব্যাপী বইমেলা শুরু