হোম > নারী

২১ বছর বয়সেই ব্যবসায় বাজিমাত, দুই বছরে বিক্রি আড়াই কোটির বেশি

মুহাম্মদ শফিকুর রহমান 

তাবাসসুম মোস্তফা রাফা। ছবি: সংগৃহীত

‘তখন তোমার একুশ বছর বোধ হয়...’ আরতি মুখোপাধ্যায়ের কণ্ঠে সেই কালজয়ী গানটা মনে আছে নিশ্চয়। তাবাসসুম মোস্তফা রাফার গল্পটা শুনে সেই গানের কথা মনে পড়ে। বয়স মাত্র ২১। এ বয়সেই প্রেম ও ব্যবসা—দুটোতেই সফল। ১২ সদস্যের দল নিয়ে পরিচালনা করেন ‘শপিং স্টল’ নামে একটি অনলাইন শপ। লিখেছেন মুহাম্মদ শফিকুর রহমান

পরিবার

নরসিংদীর মেয়ে রাফার পরিবারে আছেন বাবা, মা, ছোট ভাই ও স্বামী। নরসিংদী সরকারি কলেজের মার্কেটিং বিভাগে স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষে পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন পণ্য বিক্রির কাজ শুরু করেন। মা-বাবা কখনো এসব করতে নিষেধ করেননি; বরং দিয়েছেন সাহস, ভালোবাসা ও সমর্থন। আর্থিক হোক বা মানসিক— প্রতিটি প্রয়োজনে পুরো পরিবার ছিল রাফার পাশে।

শপিং স্টল

২০২৩ সালে শপিং স্টল নামে অনলাইন ব্যবসা শুরু করেন রাফা। একেবারে ছোট পরিসরে। ধীরে ধীরে তাঁর সঙ্গে যোগ দেন আরও ১২ জন। তৈরি হয় পরিবারের বাইরে আরেকটি পরিবার। এই পুরো দলের বেতন ও অন্যান্য খরচ মিলিয়ে প্রতি মাসে ব্যয় হয় লাখ টাকার বেশি।

শপিং স্টল নামে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামে পণ্য বিক্রি করেন রাফা। আছে নিজের ওয়েবসাইট। শুরু থেকে এখন পর্যন্ত এই অনলাইন স্টল থেকে বিক্রি হয়েছে আড়াই কোটি টাকার বেশি পণ্য!

৫ হাজার দিয়ে শুরু

রাফা নতুন কিছু শিখতে পছন্দ করেন। শেখার আনন্দে তিনি ডিজিটাল মার্কেটিং কোর্স করেন। টুকটাক যা আয় করতেন, সবই জমিয়ে রাখতেন। এই জমানো টাকা ৫ হাজার হলে নিজেই উদ্যোক্তা হওয়ার পথে পা বাড়ান। শুরুতে পাশে পেলেন ভালোবাসার মানুষ স্বামীকে। শুধু টাকাপয়সা দিয়েই নয়, সব ধরনের সহায়তা দিয়েছেন তাঁর স্বামী। রাফা বলছিলেন, ‘কঠিন সময়ে তিনি ছিলেন আমার সবচেয়ে বড় সহায় ও সাহসের উৎস।’ রাফার স্বামী নিজেও একজন ব্যবসায়ী। ২৬ বছর বয়সে তিনিও একজন সফল মানুষ।

স্বামীর সাহসেই স্বপ্ন ছুঁয়েছেন

মাত্র ২১ বছর বয়সে লাখোপতি উদ্যোক্তা হবেন, মাস শেষে লাখ টাকা কর্মচারীদের বেতন দেবেন—এসব রাফার কল্পনায়ও ছিল না। ২০২৪ সালে রাফার বিয়ে হলেও তাঁর ব্যবসায় স্বামীর বিনিয়োগ ও সহযোগিতা শুরু হয়েছিল আরও আগে। প্রেমে যেমন ছিল গভীরতা, ঠিক তেমনি ছিল পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও স্বপ্ন দেখার সাহস। রাফা আজ যে জায়গায় দাঁড়িয়ে, তার পেছনে স্বামীর বিশ্বাস ও অবিচল সমর্থন অন্যতম ভিত্তি বলেই মনে করেন তিনি।

চীন টু ঢাকা

চীন থেকে ঢাকায় পণ্য আমদানি করা একজন শিক্ষার্থীর জন্য কঠিন হলেও রাফার ক্ষেত্রে তেমনটা হয়নি। চীনে তাঁর পরিবারের তিন সদস্য এ বিষয়ে তাঁকে সহায়তা করেছেন। চীন থেকে রাফা মূলত মেয়েদের ব্যবহৃত পণ্য; যেমন বিভিন্ন গয়না, ব্যাগ, মেকআপ, জুতা আর সাজসজ্জার উপকরণ আমদানি করেন। তরুণেরা তাঁর প্রধান ক্রেতা।

অদম্য রাফা

দুই লাখ টাকার কাচের বোতল। এর মধ্যে লক্ষাধিক টাকা কাস্টমারের কাছ থেকে অগ্রিম নেওয়া ছিল। বোতল একদিন হাতে এল ঠিকই; তবে হাতে গোনা দু-একটি ভালো। আর সব ভাঙা। হাল ছাড়লেন না রাফা। পুরো বিষয়টি মিটিয়ে ফেললেন দ্রুত। রাফা জানান, উদ্যোক্তা হতে গেলে বাধা আসবে। হাল ছেড়ে দিলে চলবে না।

ডিজিটাল মার্কেটিং

রাফার পেজের অনুসারী এখন প্রায় সোয়া লাখ। বিক্রি কোটি টাকা। সবকিছুর পেছনে যে অনলাইন মার্কেটিং সাপোর্ট, তা রাফা দিয়েছেন। অভিজ্ঞতা থেকেই তাঁর উপলব্ধি, অনলাইনে ব্যবসা শুরু করার আগে একজন দক্ষ ডিজিটাল মার্কেটার হওয়া জরুরি। এইচএসসি পাসের পর বন্ধুরা যখন কোচিং নিয়ে ব্যস্ত, তখন রাফা লাখ টাকা ব্যয় করে ১৩টি বিভিন্ন কোর্স শেষ করেন। কোর্সগুলো রাফার ব্যবসার গতি বাড়িয়েছে অনেক।

সাফল্যের নেপথ্যে

নিজের কাজের প্রতি খুব আন্তরিক রাফা। প্রতিদিন তিনি অফিস করেন। গত কয়েক বছরে এক দিনও অফিস বাদ দেননি তিনি। ব্যবসা ভালো-মন্দ যা-ই হোক, লেগে থাকতে হবে। রাফা মনে করেন, এত অল্প সময়ে সাফল্যের অন্যতম কারণ এটাই।

যেতে চান অনেক দূর

রাফার স্বপ্ন, ঢাকার বড় বড় শপিং মলে নিজের শোরুম চালু করবেন একদিন। এতে ব্যবসা তো হবেই, হবে কর্মসংস্থানের সুযোগ। শুধু নিজের জন্য নয়, সমাজের অনেক মানুষের জীবনে পরিবর্তন আনাই তাঁর লক্ষ্য।

আরও খবর পড়ুন:

দিলরুবা হক মিলি: বনরক্ষী এক নারীর গল্প

অতীতের আলো, বর্তমানের অন্ধকার

জন্মনিবন্ধন করতে বাবার এনআইডি বা তথ্য বাধ্যতামূলক নয়

নারী আন্তর্জাতিক পেশাদার বক্সিংয়ে হিজাব, নিরাপত্তা নাকি প্রথা

পরিবেশ নিয়ে সরব দুই অভিনেত্রী

বিস্মৃত ছবিতে সামনে এল ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে নারীদের নেতৃত্ব

‘সচেতনতার অভাব ও সামাজিক কাঠামোর বৈষম্য নারীদের এগিয়ে যেতে বাধা দিচ্ছে’

‘নারীর সাফল্য অনেক পুরুষকে শঙ্কিত করে, এই শঙ্কাই সহিংসতা বাড়িয়ে দিচ্ছে’

রীমার ‘আয়নাবিবির গহনা’

শ্বশুর-শাশুড়ি বা অন্য কেউ স্বামীর হয়ে তালাক দিতে পারেন না