হোম > প্রযুক্তি

বাংলাদেশি রবিনের ১ হাজার ৬০০ কোটি ডলারের কোম্পানি কিনছে মার্কিন ব্ল্যাকস্টোন

মার্কিন বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ব্ল্যাকস্টোনের নেতৃত্বাধীন একটি কনসোর্টিয়াম ডেটা সেন্টার কোম্পানি এয়ারট্রাঙ্ক কিনে নিচ্ছে। এই কোম্পানির মালিক অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী বাংলাদেশি রবিন খুদা। এই অধিগ্রহণ মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ২৪ বিলিয়ন (২ হাজার ৪০০ কোটি) অস্ট্রেলিয়ান ডলারে (১ হাজার ৬০০ কোটি মার্কিন ডলার)।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে সংশ্লিষ্ট দুটি সূত্রের বরাত দিয়েছে বলা হয়েছে, এয়ারট্রাঙ্ক কেনার অর্থ জোগাড় করতে ৫৫০ কোটি অস্ট্রেলীয় ডলার বা ৩৭০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ নিচ্ছে। এই ডেটা সেন্টার কোম্পানি কিনলে যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিটির এশিয়ায় বিনিয়োগ ও বাজার সম্প্রসারিত হবে। 

ব্ল্যাকস্টোন গত বুধবার বলেছে, তারা এয়ারট্রাঙ্ক কেনার জন্য কানাডিয়ান পেনশন প্ল্যান ইনভেস্টমেন্ট বোর্ডের (সিপিপি বিনিয়োগ) সঙ্গে অংশীদারত্বের ভিত্তিতে বিনিয়োগ করবে। এশিয়া–প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে এটিই হতে যাচ্ছে বৃহত্তম ডেটা সেন্টার ব্যবসা। 

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) সক্ষমতার চাহিদা বাড়ায় বিনিয়োগকারীরা এখন এই খাতে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান ডি–লজিক ডেটার তথ্য অনুসারে, এই অর্থায়ন প্যাকেজটি চলতি বছর এশিয়া–প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে দ্বিতীয় বৃহত্তম অধিগ্রহণ ঋণ হবে। 

সূত্র জানিয়েছে, তহবিলের মধ্যে ২০০ কোটি অস্ট্রেলীয় ডলার মেয়াদি ঋণ এবং ৩৫০ কোটি অস্ট্রেলীয় ডলার রিভলভিং ক্রেডিট সুবিধা রয়েছে। করপোরেট রিভলভিং ক্রেডিট সুবিধাগুলো সাধারণত একটি কোম্পানির প্রতিদিনের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য তারল্য সরবরাহে ব্যবহৃত হয়। 

এই ঋণ চুক্তির বিষয়ে অবশ্য ব্ল্যাকস্টোন কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। 

ক্রেডিট এগ্রিকোল, ডয়েচে ব্যাংক, মরগান স্ট্যানলি এবং জাপানের এমইউএফজিসহ ১০টিরও বেশি ব্যাংক এই ঋণ সিন্ডিকেটে অংশ নিচ্ছে বলে সূত্র জানিয়েছে। 

ক্রেডিট এগ্রিকোল, ডয়েচে ব্যাংক এবং এমইউএফজি এ ব্যাপারে মন্তব্য করতে অস্বীকার করেছে। মরগান স্ট্যানলি রয়টার্সের অনুরোধে সাড়া দেয়নি। 

একটি সূত্রের বরাত দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, অর্থায়ন চুক্তিতে ব্ল্যাকস্টোনের ইক্যুইটি (অংশ বা শেয়ার) থাকছে বিনিয়োগের ৫০ শতাংশ। সামগ্রিক চুক্তি মূল্যের মধ্যে এয়ারট্রাঙ্কের ঋণ এবং প্রতিশ্রুতিবদ্ধ প্রকল্পগুলোর জন্য মূলধন ব্যয়ের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকছে। 

সূত্র জানিয়েছে, কনসোর্টিয়ামের ক্রয়মূল্য, সুদ, কর, অবমূল্যায়ন এবং অ্যামরটাইজেশন বাদে এয়ারট্রাঙ্কের অনুমিত রাজস্বের ২০ গুণ হবে।

একটি সাধারণ অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে এই ঋণটি অত্যন্ত বাড়াবাড়ি বলে মনে হতে পারে। তবে ঋণদাতারা আগামী কয়েক বছরে এয়ারট্রাঙ্কের আনুমানিক প্রবৃদ্ধি এবং নগদ প্রবাহকে বিবেচনায় নিচ্ছে। 

এয়ারট্রাঙ্ক গত বছর ৩০টিরও বেশি ঋণদাতার কাছ থেকে প্রায় ৪৬০ কোটি অস্ট্রেলীয় ডলার ধার করেছে। অধিগ্রহণের পর সেই ঋণ রোল ওভার (স্থানান্তর) করা হবে বলে সূত্রটি জানিয়েছে। 

বিক্রয় প্রক্রিয়া চলাকালীন এয়ারট্রাঙ্কের বাজারমূল্য বৃদ্ধি পায়। এই প্রক্রিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় গত মার্চে। যেখানে এআইয়ের ক্রমবর্ধমান ব্যবহারের কারণে এই কোম্পানির আরও বেশি সক্ষমতার ডেটা সেন্টার দরকার। 

সিপিপি ইনভেস্টমেন্ট বুধবার একটি বিবৃতিতে বলেছে, চুক্তিটি চূড়ান্ত হওয়ার পর এয়ারট্রাঙ্ক ১২ শতাংশ শেয়ার নিজেদের কাছে রেখে দেব।

এয়ারট্রাঙ্কের প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রধান নির্বাহী রবিন খুদা। বিক্রির পরও সিডনি–ভিত্তিক এই কোম্পানির নেতৃত্বে তিনিই থাকবেন। চুক্তিটি চূড়ান্ত হওয়ার পরে একটি অনির্দিষ্ট অংশীদারত্ব থাকবে তাঁর। 

৪৫ বছর বয়সী রবিন খুদা ১৮ বছর বয়সে সিডনির ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজিতে অ্যাকাউন্টিং কোর্স করার জন্য বাংলাদেশ থেকে অস্ট্রেলিয়া যান। এক দশকেরও কম সময়ের মধ্যে ২ হাজার ৪০০ কোটি অস্ট্রেলীয় ডলারের ডেটা সেন্টার ব্যবসা গড়ে তোলেন তিনি। 

লিঙ্কডইনে একটি পোস্টে রবিন খুদা লেখেন, ‘আমাদের যাত্রা কখনই সহজ ছিল না, আমরা অনেক প্রতিকূলতার মুখোমুখি হয়েছি এবং আমরা সব সময় শক্তিশালী ছিলাম এবং ক্রমে আরও ঝুঁকি মোকাবিলায় সক্ষমতা অর্জন করেছি।’ 

ব্যবসা বাঁচাতে অবসরকালীন সঞ্চয় খরচ করার কথা স্বীকার করে রবিন খুদা বলেন, নিজেকে দেউলিয়া ঘোষণার কথাও চিন্তা করেছিলেন।

গত মার্চে অস্ট্রেলিয়ান ফিন্যান্সিয়াল রিভিউ বিজনেস সামিটে তিনি বলেছিলেন, ‘সেটি ছিল ২০১৬ সালের ক্রিসমাস। আমাকে ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরের মধ্যে প্রথম ডেটা সেন্টার সরবরাহ করতে হয়েছিল...আমরা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিলাম যখন আমাদের অর্থ ফুরিয়ে গিয়েছিল। এমনকি আমি আমার পেনশন তহবিল থেকে টাকা নিয়েছিলাম।’ 

তিনি বলেন, ‘আমি এমনকি আমার আইনজীবীকে ফোন করেছিলাম এবং বলেছিলাম যে আমার দেউলিয়া ঘোষণার জন্য পরামর্শ দরকার।’ 

লিঙ্কডইন প্রোফাইল অনুযায়ী, রবিন খুদা ডেটা সেন্টার অপারেটর নেক্সটডিসি (NXT. AX)–এ তিন বছর কাজ করেছেন। সেখানে ডেপুটি সিইও এবং নির্বাহী পরিচালক হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করেন। তবে মোবাইল পেমেন্ট ফার্ম মিন্ট ওয়্যারলেসে ছয় মাস চাকরি করেই সিইও পদ ছাড়েন।

আরও খবর পড়ুন:

চর্চা ‘লার্নিং থ্রো প্র্যাকটিস’ধারণাকে প্রাধান্য দেয়

মিরর ব্যাকটেরিয়া কি আধুনিক পৃথিবীর নতুন মারণাস্ত্র

অনলাইনে কেনাকাটার নিরাপদ উপায়

গুগলের নতুন ফিচার: সাধারণ হেডফোনই হবে রিয়েল–টাইম অনুবাদক

ডিজিটাল উদ্যোক্তা প্রকল্প: পাঁচ বছরে অর্ধেক কাজ, ব্যয় বাড়ল ১৭৮ কোটি

যুক্তরাষ্ট্রে মাকে হত্যার পর ছেলের আত্মহত্যা, চ্যাটজিপিটির বিরুদ্ধে অভিযোগ পরিবারের

মিসড কল মেসেজ ও ছবি থেকে অ্যানিমেশনসহ যেসব ফিচার আনল হোয়াটসঅ্যাপ

অস্ট্রেলিয়ায় ২ লাখ অ্যাকাউন্ট বন্ধ: ‘এটা কাজ করছে না ব্রো’— প্রধানমন্ত্রীকে কটাক্ষ জেন-জি’দের

সকালে ঘুম ভেঙে অস্ট্রেলিয়ার লাখো শিশু দেখবে তাদের ‘আইডি’ উধাও

ভারতে ১৭.৫ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে মাইক্রোসফট