জীবনে তো কম বাধা বিপত্তির মুখোমুখি হননি আফগানিস্তানের জাকিয়া খুদাদাদি। তবু কখনো দমে যাননি জাকিয়া। ২০২১ সালে আফগানিস্তানে তালেবান ক্ষমতায় আসার পর প্রথম নারী অ্যাথলেট হিসেবে আন্তর্জাতিক ইভেন্টে খেলেন তিনি। এবার তাঁর লক্ষ্য অনেক বড় কিছু।
নারীদের খেলাধুলায় অংশগ্রহণ এক রকম নিষিদ্ধ আফগানিস্তানে। বাধা পেরিয়ে এখন জাকিয়ার স্বপ্ন প্যারিসে কোনো পদক জেতা। প্যারিস অলিম্পিক শেষ হওয়ার পর ২৮ আগস্ট শুরু হচ্ছে প্যারিস প্যারালিম্পিক। প্যারালিম্পিকে জাকিয়া খেলবেন শরণার্থী দলের হয়ে। আফগানদের প্রতিনিধিত্ব করতে পারবেন না এই তায়কোয়ান্দো খেলোয়াড়। তবে তিনি যে অধিকার বঞ্চিত আফগান নারীদের বড় স্বপ্ন দেখানোর লক্ষ্যে এসেছেন প্যারিসে। বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েট প্রেসকে (এপি) দেওয়া সাক্ষাৎকারে জাকিয়া বলেন, ‘আমার জন্য এটা কঠিন। কারণ দেশের পতাকা নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চাই। কিন্তু আফগান নারীদের খেলাধুলা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সেই সম্ভাবনাটুকু শেষ। প্যারিসে এবার তাঁদের জন্য একটা পদক জিততে এসেছি। আফগান নারীদের শক্তি দেখাতে চাই আমি।’
১১ বছর বয়সে তায়কোয়ান্দোতে হাতেখড়ি হয়েছে বলে জানিয়েছেন জাকিয়া। জন্ম শহর হেরাতেই অনুশীলন শুরু করেন তিনি। পরিবারের সমর্থন এই তায়কোয়ান্দো খেলোয়াড়কে আরও অনুপ্রাণিত করেছে। তবে তাঁর লড়াইয়ে বাধা হয়ে দাঁড়ায় শারীরিক প্রতিবন্ধকতা। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন ‘হিউম্যান রাইটস ওয়াচ’ জানিয়েছে, প্রতিবন্ধীদের আফগান সমাজ থেকে প্রায়ই দূরে রাখা হয়। এক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী নারীরাই বেশি ভুক্তভোগী হয়ে থাকেন। একটি বাহু ছাড়াই জন্মগ্রহণ করা জাকিয়া বড় হয়েছেন এক হাত লুকিয়ে রেখে। এই প্রসঙ্গে এপিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আফগান এই তায়কোয়ান্দো খেলোয়াড় বলেন, ‘খেলোধুলায় আসার আগে বাহু দিয়ে নিজেকে অনেকবার রক্ষা করেছি। আস্তে আস্তে আমার বাহু দেখাতে শুরু করি। তবে এটা করতাম শুধু ক্লাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সময়।’
তালেবান সরকার মেয়েদের খেলাধুলাকে স্বীকৃতি না দেওয়ায় জাকিয়ার মতো কিমিয়া ইউসুফিও একই দুর্ভাগ্যের শিকার হয়েছেন। কিমিয়ার মা–বাবা
তালেবানপূর্ব শাসনামালে আফগানিস্তান থেকে পালিয়ে ইরানে চলে যান। ইরানেই জন্ম কিমিয়ার। ২৮ বছর বয়সী এই স্প্রিন্টারও প্যারিস অলিম্পিকে চেয়েছিলেন আফগানিস্তানের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করতে। তবে তাঁকে অনুমতি দেওয়া হয়নি। এপিকে কিমিয়া বলেন, ‘আমি আফগান মেয়েদের কণ্ঠস্বর হতে চেয়েছিলাম।’
২০ বছরের যুদ্ধ শেষে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো নিজেদের সরিয়ে নিলে ২০২১ সালের আগস্টে আফগানিস্তানের শাসক বনে যায় তালেবান। নতুন শাসকগোষ্ঠী আসার পর মাতৃভূমিতে একরকম অবরুদ্ধ হয়েছেন জাকিয়া। আন্তর্জাতিক বিমান চলাচল বন্ধ হয়ে যায় আফগানিস্তানে। এমন পরিস্থিতির মধ্যেই জাকিয়া কোনো রকমে আফগানিস্তান ছাড়েন এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অনুরোধে টোকিও প্যারালিম্পিকে আফগানিস্তানেরই প্রতিনিধিত্ব করেন।