ঢাকা: রওশন আরা রেনু তাঁর আসল নাম। ১৯৫৫ সালে রাজবাড়ি জেলার গোয়ালন্দে জন্মগ্রহণ করেন। ঢাকায় এসে মঞ্চ নাটকে অভিনয় করতেন। তারপর বিজ্ঞাপনে মডেলিং। একটি জন্মনিয়ন্ত্রণ পিলের বিজ্ঞাপনে মডেল হয়ে রোজিনা পরিচিতি পেতে শুরু করেন। ওই বিজ্ঞাপনটি সারাদেশের সিনেমা হলে চালানো হতো তখন।
রোজিনার সিনেমায় আসার গল্পটা বেশ সিনেম্যাটিক। ১৯৭৭ সাল। সংসদ ভবন এলাকায় পরিচালক কালীদাস ‘জানোয়ার’ সিনেমার শুটিং করছিলেন। এ খবর পেয়ে রোজিনা যান স্পটে। আগে কখনো সিনেমার শুটিং দেখেননি তিনি। ফলে প্রবল কৌতুহল ছিলো।
এগিয়ে গেলেন রোজিনা। ওই ছোট চরিত্রে কাজ করতে আগ্রহী হলেন। তাকে শার্ট-প্যান্ট দেওয়া হলো। তা পরলেন। দেওয়া হলো মেকাপ। সিনেমার ক্যামেরার সামনে ওটাই ছিল রোজিনার প্রথম কাজ।
শুটিং শেষ হওয়ার পর ফটোগ্রাফার হারুন রোজিনার বেশ কিছু ছবি তুললেন। সেই ছবি এ হাত ও হাত ঘুরে গিয়ে পড়ল ‘সাগর ভাসা’ সিনেমার প্রযোজকের হাতে। রোজিনার ছবি দেখে তিনি মুগ্ধ।
খবর পাঠালেন রোজিনাকে। প্রযোজকের সামনে অভিনয় করে দেখালেন রোজিনা। পছন্দ হলো। ‘সাগর ভাসা’ ছবিতে চঞ্চল মাহমুদের বিপরীতে অভিনয়ের জন্য কথাবার্তা চুড়ান্ত হলো। কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়ালো বসন্ত রোগ। বসন্তে আক্রান্ত হয়ে অনেকদিন ভুগলেন। দাগ পড়ে গেলো চেহারায়। কাজটি আর হলো না।
‘সাগর ভাসা’ সিনেমার সময় রোজিনাকে সবাই রেণু নামেই চিনতেন। পরিচালক মোহসীন তাঁর ‘আয়না’য় কাস্ট করার পর নাম দেন শায়লা। এ নাম নিয়েই বেশকিছু সিনেমায় কাজ করেন রোজিনা।
পরিচালক এ জে মিন্টুর ‘মিন্টু আমার নাম’ এ অভিনয়ের সময় তাঁর নাম হয় রোজিনা। কিন্তু যে সিনেমায় অভিনয়ের জন্য তাঁর এই নামবদল, সে সিনেমা থেকেও ছিটকে পড়েন শেষ পর্যন্ত। ওই সিনেমায় রোজিনার পরিবর্তে কাজ করেন ববিতা।
এরপর রোজিনা প্রযোজনায় আসেন। ‘জীবনধারা’, ‘দোলনা’র মতো জনপ্রিয় সিনেমার সফল প্রযোজক তিনি।
দেশের ২৩৬টি সিনেমায় অভিনয় করেছেন রোজিনা। ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও নেপালের যৌথ প্রযোজনার কাজ মিলিয়ে তাঁর মোট সিনেমার সংখ্যা ২৫২টি। সর্বশেষ অভিনয় করেছেন ২০০৫ সালে। কাজী নজরুল ইসলামের গল্প অবলম্বনে মতিন রহমানের ‘রাক্ষুসী’ সিনেমায়।
পাকিস্তানের সঙ্গে যৌথ প্রযোজনার সিনেমা ‘হাম সে হায় জামানা’ তে অভিনয় করে ১৯৮৬ সালে পান নিগার অ্যাওয়ার্ড। এ সিনেমায় রোজিনার নায়ক ছিলেন পাকিস্তানের জনপ্রিয় অভিনেতা নাদিম।