হোম > সারা দেশ > ফরিদপুর

একটি বার্তার অপেক্ষায় মোবাইল হাতে অপেক্ষা করছেন জিম্মি নাবিক তারিকুলের বাবা

ফরিদপুর প্রতিনিধি

কখন আসবে ছেলের পাঠানো বার্তা। সেই আশায় সারাক্ষণ মোবাইল হাতে নিয়েই বসে আছেন বাবা। তাঁর পাশেই বসে মাঝে মাঝে মোবাইলে উঁকি দিচ্ছেন আর বিলাপ করছেন মা। কিন্তু এখন আর বার্তা আসছে না। তবুও মোবাইল ফোনটি হাত থেকে রাখছেন না। এভাবেই ছেলে ফিরে আশার অপেক্ষায় রয়েছেন সোমালিয়ায় জলদস্যুদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশি নাবিক মো. তারিকুল ইসলামের বাবা-মা। 

তারিকুল ইসলাম ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের ছকড়িকান্দি গ্রামের একটি বেসরকারি কোম্পানির অবসরপ্রাপ্ত দেলোয়ার হোসেনের (৬৫) পুত্র। আজ বুধবার বিকেলে তাঁর বাড়িতে গেলে মোবাইল হাতে নিয়ে এভাবেই ছেলের অপেক্ষায় থাকতে দেখা যায় বাবা দেলোয়ার হোসেন ও মা হাসিনা বেগমকে (৬২)। ঘরের একপাশে বসে কাপাকাপা হাতে একে ওকে ফোন দিয়ে নাতির খোঁজ নিচ্ছেন বৃদ্ধ দাদি কুলসুমা বেগমও।

জলদস্যুদের হাতে আক্রমণের পরে গতকাল মঙ্গলবার দুপুর দেড়টার দিকে বাবার হোয়াটসঅ্যাপে প্রথম একটি বার্তা পাঠায় তারিকুল ইসলাম। সেই বার্তায় লেখা ছিল, ‘আব্বু মাফ কইরেন আমাকে। দোয়া করেন আমাদের জন্য।’ পরে বিকেল ৪টার দিকে জাহাজের নম্বর দিয়ে লিখে পাঠান ‘আমরা জিম্মি হয়েছি, শক্ত থাইকেন, দোয়া করবেন।’ এরপর আর তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেনি বলে তাঁর বাবা জানান।

বাবা দেলোয়ার হোসেন অশ্রুসিক্ত চোখে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমার ছেলে প্রথম টেক্সট দিয়ে বলে আব্বু আমাকে মাফ কইরেন। ওতো কখনো আমাকে এভাবে বলে নাই। তখনই বুঝতে পারি, নিশ্চয় কোনো বিপদের মধ্যে আছে। আমাকে আবার লিখে ঠিক আছে, টেনশন কইরেন না, দোয়া করেন।’

দেলোয়ার হোসেন অভিযোগ করে বলেন, ‘এ ঘটনার পরে আমরা এস আর কোম্পানির অফিশিয়াল নম্বরে যোগাযোগ করতে থাকি কিন্তু কেউ রিসিভ করে না। আজ সকালে একটি বাচ্চা মেয়ে রিসিভ করে বলে এটা কোনো কোম্পানির নাম্বার না। অথচ তারা এই নাম্বার দিয়ে মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করে থাকে। এখন পর্যন্ত কোম্পানির মালিকপক্ষ বা কোনো লোকজন আমাদের সঙ্গে যোগাযোগও করছেন না।’ 

তিনি বলেন, সরকারের কাছে আমার আকুল আবেদন, আমার ছেলেকেসহ জিম্মি হওয়া সকলকে যত দ্রুত সম্ভব দেশে ফিরিয়ে আনা হোক। সরকার এবং শীপের মালিকসহ সকলে মিলেমিশে আমাদের বাচ্চাদের দ্রুত ফিরিয়ে আনার দাবি জানাচ্ছি।

তারিকুল ইসলাম বর্তমানে এসআর কোম্পানির আব্দুল্লাহ নামক জাহাজে থার্ড অফিসার হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। গত বছরের ডিসেম্বরে তিনি এই কোম্পানিতে যোগদান করেন। এর আগে ২০১৭ সালের দিকে চায়না কোম্পানির একটি জাহাজে প্রথম চাকরি শুরু করেন। সে গ্রামের প্রাইমারি স্কুল শেষ করে ঢাকার মিরপুরে ড. শহিদুল্লাহ স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি ও এইচএসসি শেষ করে ২০১৫ সালে চট্টগ্রাম মেরিন একাডেমিতে ভর্তি হন। পরে চাকরিতে যান। এরপর ২০১৯ সালের ২৫ ডিসেম্বর নাটোরের নুসরাত জাহান যুথিকে বিয়ে করেন। তাঁর এক বছর বয়সী তানজিনা নামে এক কন্যা সন্তান রয়েছে।

এভাবেই এ প্রতিবেদকের কাছে ছেলের স্মৃতিচারণ করেন বৃদ্ধ মা হাসিনা বেগম। তাঁর মা জানান, সাত বছর বয়স থেকে কখনো নামাজ-রোজা কামাই করেনি তারেক। এমন একটি ছেলের এমন দুর্দশার খবরে বারবার হুহু করে কেঁদে উঠছেন তাঁর মা। ছেলের ছবি দেখে কান্না করছেন আর তাদের ফিরিয়ে আনার জন্য সরকারের কাছে বার্তা পৌঁছে দেওয়ার অনুরোধ করছেন। 

অশ্রুসিক্ত চোখে হাসিনা বেগম বলেন, যখন জানতে পারি ওদের ডাকাতে ধরছে তখন আমার বুকের ভেতর ব্যথায় কুকড়ে ওঠে। আমার তারেক কি অবস্থায় আছে জানিনা। ও কোনো দিন বিপদ দেখে নাই। ও এমন বিপদে পড়বে কোনো দিন কল্পনাও করি নাই। ওর কথা মনে উঠলে বুকের ভেতর ব্যাথ্যা করে উঠে। সরকারের কাছে আমার আকুল আবেদন, ওদের দ্রুত ফিরিয়ে আনুক। 

পরিবারের তিন ভাইবোনের মধ্যে সকলের ছোট তারিকুল ইসলাম। বড় ভাই হাসান শেখ সব সময় বাবা-মায়ের খোঁজ খবর নিচ্ছেন। ছোট ভাইয়ের বিষয়েও খোঁজ নিয়ে বাবা-মাকে জানাচ্ছেন। সর্বশেষ গত নভেম্বরে বাড়িতে আসেন। পয়লা ডিসেম্বরে চট্টগ্রাম গিয়ে ওই কোম্পানিতে যোগদান করেন। এটাই ছিল ওই জাহাজে তার প্রথম যাত্রা। 

স্থানীয়রা জানান, তারেকরা দুই ভাই খুবই নম্র এবং ভদ্র ছেলে। ছোট বেলা থেকেই তারেক মেধাবী ছিলেন।

আরও পড়ুন:–

 

শহীদ জিয়ার কবরের পূর্ব পাশে খোঁড়া হচ্ছে নতুন কবর

খালেদা জিয়ার জানাজা: যেসব পথে নিয়ন্ত্রিত থাকবে যান চলাচল

রাষ্ট্রীয় শোক: ঢাকায় ৩ দিন আতশবাজি, পটকা ফোটানো নিষিদ্ধ

খালেদা জিয়ার জানাজায় অংশ নিতে বাড়ানো হলো মেট্রোরেলের ট্রিপ

হাদি হত্যা মামলা: সিবিউন-সঞ্জয়ের তৃতীয় দফায় রিমান্ড, ফয়সাল নামে আরও একজন রিমান্ডে

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে জাবিতে জাতীয়তাবাদী শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী ফোরামের কালো ব্যাজ ধারণ

রাজধানীর রামপুরায় অটোরিকশার ধাক্কায় বৃদ্ধের মৃত্যু

গয়েশ্বর চন্দ্রের আসনে বিএনপির বিদ্রোহী তিন বড় নেতাসহ ১৬ প্রার্থী, শক্ত লড়াইয়ের আভাস

খালেদা জিয়ার মৃত্যুর খবর শুনে এভারকেয়ারের সামনে ভিড়, পুলিশের ব্যারিকেড

হারিয়ে যাওয়া কনাই নদ উদ্ধার উদ্‌যাপন